সম্মানিত দ্বীন ইসলামই ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারিত হওয়ার ব্যাপারে সঠিক ফায়সালা প্রদান করেছে।

সম্মানিত দ্বীন ইসলামই ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারিত হওয়ার ব্যাপারে সঠিক ফায়সালা প্রদান করেছে।

 নাস্তিকদের আপত্তি ৫ : হাদিস দাবি করে, মানব ভ্রুণ ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে তা নির্ধারিত হয় ১২০ দিন পর (Sahih Bukhari 8:77:594, 4:55:550 Sahih Muslim 33:6397)! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিষেকের সময়ই সন্তানের লিঙ্গ (sex)  নির্ধারন হয়ে যায়! এম্ব্রাইয়োলজির এমন অপব্যাখ্যা আপনার কাছে কি ধারনার জন্ম দেয়?

খণ্ডন : মায়ের রেহেমে মানব সন্তানের লিঙ্গ কি হবে অর্থাৎ ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে - এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

 عَنْ حَضْرِتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَكَّلَ بِالرَّحِمِ مَلَكًا يَقُولُ يَا رَبِّ نُطْفَةٌ، يَا رَبِّ عَلَقَةٌ، يَا رَبِّ مُضْغَةٌ‏.‏ فَاِذَا اَرَادَ اَنْ يَقْضِيَ خَلْقَهُ قَالَ اَذَكَرٌ اَمْ اُنْثَى شَقِيٌّ اَمْ سَعِيدٌ فَمَا الرِّزْقُ وَالاَجَلُ فَيُكْتَبُ فِي بَطْنِ اُمِّهِ‏‏.

অর্থ : “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি মায়ের রেহেমে একজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম মোতায়েন করেন। হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে মহান রব তায়ালা! এখনো তো ভ্রুণ মাত্র। হে মহান রব তায়ালা! এখন জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। হে মহান রব তায়ালা! এবার গোশতপি-ে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমার মহান রব তায়ালা! (সন্তানটি) ছেলে না মেয়ে হবে, পাপী না নেককার, রিযিক্ব কি পরিমাণ ও আয়ুষ্কাল কত হবে? অতএব এভাবে তার তাক্বদীর মায়ের রেহেমে লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুল আম্বিয়া : হাদীছ শরীফ নং ৩০৮৭)

অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ حَدَّثَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ قَالَ اِنَّ اَحَدَكُمْ يُـجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ اُمِّهِ اَرْبَعِينَ يَوْمًا، ثُـمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُـمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُـمَّ يَبْعَثُ اللهُ مَلَكًا، فَيُؤْمَرُ بِاَرْبَعِ كَلِمَاتٍ، وَيُقَالُ لَهُ اكْتُبْ عَمَلَهُ وَرِزْقَهُ وَاَجَلَهُ وَشَقِىٌّ اَوْ سَعِيْدٌ ثُـمَّ يُنْفَخُ فِيْهِ الرُّوْحُ.‏

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি ‘সত্যবাদী’ এবং ‘সত্যবাদী বলে স্বীকৃত’ তিনি আমাদের নিকট পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয়ই আপনাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মাতৃগর্ভে ৪০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে ৪০ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা গোশতপিণ্ডে পরিণত হয়ে (আগের মত ৪০ দিন) থাকে। এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠান এবং চারটি বিষয়ে আদেশ দেন যে, তার (শিশুর) আমল, রিযিক্ব, আয়ুষ্কাল ও ভালো না মন্দ সব লিপিবদ্ধ করুন। অতঃপর তার মধ্যে রূহ ফুঁঁকে দেয়া হয়।” (বুখারী শরীফ)

এই হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা যে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে তা হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি ইচ্ছা করেন অর্থাৎ ভ্রুণটিকে পূর্ণতা দান করে শিশুরূপে ভূমিষ্ট করাবেন। তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা তার তাক্বদীর বা ভাগ্যলিপি লিপিবদ্ধ করান। অর্থাৎ ভ্রুণটি ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে, তার রিযিক কি হবে, কত দিন বেঁচে থাকবে, কোথায় মারা যাবে ইত্যাদি বিষয়গুলোর একটি আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটানো হয় মাত্র। আর এই অবস্থার সৃষ্টি হয় ভ্রুণের মুদগা দশা সৃষ্টি হওয়ার পর। 

আর অন্য একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

سَـمِعَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَقُوْلُ الشَّقِىُّ مَنْ شَقِىَ فِي بَطْنِ اُمِّهِ وَالسَّعِيْدُ مَنْ وُعِظَ بِغَيْرِهِ فَاَتَى رَجُلًا مِنْ اَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَالُ لَهُ حُذَيْفَةُ بْنُ اَسِيدٍ الْغِفَارِيُّ فَحَدَّثَهُ بِذَلِكَ مِنْ قَوْلِ ابْنِ مَسْعُودٍ فَقَالَ وَكَيْفَ يَشْقَى رَجُلٌ بِغَيْرِ عَمَلٍ فَقَالَ لَهُ الرَّجُلُ اَتَعْجَبُ مِنْ ذَلِكَ فَاِنِّي سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ ‏اِذَا مَرَّ بِالنُّطْفَةِ ثِنْتَانِ وَاَرْبَعُونَ لَيْلَةً بَعَثَ اللهُ اِلَيْهَا مَلَكًا فَصَوَّرَهَا وَخَلَقَ سـَمْعَهَا وَبَصَرَهَا وَجِلْدَهَا وَلَـحْمَهَا وَعِظَامَهَا ثُـمَّ قَالَ يَا رَبِّ اَذَكَرٌ اَمْ اُنْثٰى فَيَقْضِى رَبُّكَ مَا شَاءَ وَيَكْتُبُ الْمَلَكُ ثُـمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ اَجَلُهُ.‏ فَيَقُوْلُ رَبُّكَ مَا شَاءَ وَيَكْتُبُ الْمَلَكُ ثُـمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ رِزْقُهُ‏.‏ فَيَقْضِى رَبُّكَ مَا شَاءَ وَيَكْتُبُ الْمَلَكُ ثُـمَّ يَـخْرُجُ الْمَلَكُ بِالصَّحِيفَةِ فِىْ يَدِهِ فَلَا يَزِيْدُ عَلٰى مَا اُمِرَ وَلَا يَنْقُصُ‏.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দুর্ভাগা সে লোক, যে তার মায়ের গর্ভ হতে দুর্ভাগা আর সৌভাগ্যবান লোক সে, যে অন্যের নিকট হতে উপদেশ লাভ করে। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্য থেকে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যাঁকে হুযাইফাহ্ ইবনু আসীদ আল গিফারী বলা হয়, তিনি উনার কাছে আসলেন। তখন তিনি উনার নিকট হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা বর্ণনা করলেন এবং বললেন, আমলহীন কোন লোক কিভাবে দুর্ভাগ্যবান হতে পারে? অতঃপর তিনি (হযরত হুযাইফাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনাকে বললেন, আপনি কি এতে আশ্চর্য হচ্ছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন (মাতৃগর্ভে) নুত্বফার উপর ৪২ দিন অতিবাহিত হয় তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করেন। তিনি ওটাকে (নুত্বফাকে) একটি রূপ দান করেন, তার কান, চোখ, চামড়া, গোশ্ত ও হাড় সৃষ্টি করে দেন। তারপর ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমাদের রব তায়ালা! সেটা কি পুরুষ, না মহিলা হবে? তখন আপনার মহান রব তায়ালা যা চান সিদ্ধান্ত মুবারক দেন এবং ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম তিনি আদেশ মুবারক অনুসারে তা লিখে ফেলেন। তারপর তিনি বলতে থাকেন, হে আমাদের রব তায়ালা! তার জীবিকা কি হবে? তখন আপনার মহান রব তায়ালা উনার মর্জি মুবারক অনুযায়ী ফায়সালা মুবারক করেন এবং ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম তিনি তা লিপিবদ্ধ করেন। এরপর ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম তিনি উনার হাতে একটি লিপিবদ্ধ কিতাব নিয়ে বের হন। তিনি এটাকে বৃদ্ধিও করেন না এবং ঘাটতিও করেন না।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুত তকদীর)

আবার অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ حُذَيْفَةَ بْنِ اَسِيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَدْخُلُ الْمَلَكُ عَلَى النُّطْفَةِ بَعْدَ مَا تَسْتَقِرُّ فِي الرَّحِمِ بِأَرْبَعِينَ اَوْ خَـمْسَةٍ وَاَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً فَيَقُوْلُ يَا رَبِّ اَشَقِيٌّ اَوْ سَعِيدٌ فَيُكْتَبَانِ فَيَقُولُ اَىْ رَبِّ اَذَكَرٌ اَوْ اُنْثٰى فَيُكْتَبَانِ وَيُكْتَبُ عَمَلُهُ وَاَثَرُهُ وَاَجَلُهُ وَرِزْقُهُ ثُـمَّ تُطْوَى الصُّحُفُ فَلَا يُزَادُ فِيْهَا وَلَا يُنْقَصُ‏.

অর্থ : “হযরত হুযাইফাহ্ ইবনে আসীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে মারফূ সূত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জরায়ুতে ৪০ অথবা ৪৫ দিন নুত্বফা জমা থাকার পর সেখানে ফেরেশ্তা গমন করেন। অতঃপর তিনি বলতে থাকেন, হে আমার মহান রব তায়ালা! সে কি হতভাগা না সৌভাগ্যবান? তখন উভয়টাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। তারপর তিনি বলতে থাকেন, হে আমার মহান রব তায়ালা! সে কি পুরুষ না মহিলা? তখন আদেশ মুবারক অনুসারে উভয়টা লিপিবদ্ধ করা হয়। তার আমল, আচরণ, মৃত্যুক্ষণ ও জীবনোপকরণ লিপিবদ্ধ করা হয়। তারপর ফলকটিকে পেঁচিয়ে দেয়া হয়। তাতে কোন অতিরিক্ত করা হবে না এবং ঘাটতিও হবে না।” (মুসলিম শরীফ)

সুতরাং উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাহলো, নুত্বফা যখন ৪০-৪৫ দিন অতিক্রম করে মুদগা বা গোশতপি-ে পরিণত হয় তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম উনাকে প্রেরণ করেন। তিনি ওটাকে (নুত্বফাকে) একটি রূপ দান করেন, তার কান, চোখ, চামড়া, গোশ্ত ও হাড় সৃষ্টি করে দেন। অর্থাৎ ভ্রুণটি আরো কিছু ধাপ অতিক্রম করার মাধ্যমে একটি অবস্থায় উপনীত হয়। সুতরাং এই অবস্থায় উপনীত হয়ে আরো কিছু দিন অতিবাহিত হয়। তারপর ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমাদের রব তায়ালা! সেটা কি পুরুষ, না মহিলা হবে? তখন আপনার মহান রব তায়ালা যা চান সিদ্ধান্ত মুবারক দেন এবং ফেরেশ্তা আলাইহিস সালাম তিনি আদেশ মুবারক অনুসারে তা লিখে ফেলেন।

সুতরাং দেখা গেল, ৪০-৪৫ দিন অতিক্রম করার আরো কিছু দিন পরে ভ্রুণটির লিঙ্গের বিষয়টির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটানো হয় - তার উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র।

আর ১২০ দিন পরে ভ্রুণে রূহ ফুঁকে দেয়া প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنِ النَّبِىْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّ الرُّوْحَ تُنْفَخُ فِيْهِ بَعْدَ مِائَةَ وَعِشْرُوْنَ لَيْلَةً

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, ১২০ দিন পর ভ্রুণে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ১৪১ পৃষ্ঠা)

মূলতঃ নিষেকের সময়ই যে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারিত হয়ে যায়, এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ ثَوْبَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ مَوْلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدَّثَهُ قَالَ كُنْتُ قَائِمًا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَ حَبْرٌ مِنْ اَحْبَارِ الْيَهُودِ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا مُـحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.‏ فَدَفَعْتُهُ دَفْعَةً كَادَ يُصْرَعُ مِنْهَا فَقَالَ لِـمَ تَدْفَعُنِي فَقُلْتُ اَلَا تَقُوْلُ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.‏ فَقَالَ الْيَهُودِيُّ اِنَّـمَا نَدْعُوهُ بِاسْـمِهِ الَّذِي سَـمَّاهُ بِهِ اَهْلُهُ.‏ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏ اِنَّ اسْـمِي مُـحَمَّدٌ الَّذِي سَـمَّانِي بِهِ اَهْلِي.‏ فَقَالَ الْيَهُودِيُّ جِئْتُ اَسْاَلُكَ.‏ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَيَنْفَعُكَ شَىْءٌ اِنْ حَدَّثْتُكَ.‏ قَالَ اَسْـمَعُ بِاُذُنَىَّ فَنَكَتَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعُودٍ مَعَهُ.‏ فَقَالَ سَلْ.‏ فَقَالَ الْيَهُودِيُّ اَيْنَ يَكُونُ النَّاسُ يَوْمَ تُبَدَّلُ الاَرْضُ غَيْرَ الاَرْضِ وَالسَّمَوَاتُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُمْ فِي الظُّلْمَةِ دُونَ الْـجِسْرِ.‏ قَالَ فَمَنْ اَوَّلُ النَّاسِ اِجَازَةً قَالَ‏ فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِينَ.‏ قَالَ الْيَهُودِيُّ فَمَا تُـحْفَتُهُمْ حِينَ يَدْخُلُونَ الْـجَنَّةَ قَالَ‏ زِيَادَةُ كَبِدِ النُّونِ‏ قَالَ فَمَا غِذَاؤُهُمْ عَلَى اِثْرِهَا قَالَ‏ يُنْحَرُ لَـهُمْ ثَوْرُ الْـجَنَّةِ الَّذِي كَانَ يَأْكُلُ مِنْ اَطْرَافِهَا.‏ قَالَ فَمَا شَرَابُهُمْ عَلَيْهِ قَالَ‏ مِنْ عَيْنٍ فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيْلًا.‏ قَالَ صَدَقْتَ.‏ قَالَ وَجِئْتُ اَسْاَلُكَ عَنْ شَىْءٍ لاَ يَعْلَمُهُ اَحَدٌ مِنْ اَهْلِ الاَرْضِ اِلاَ نَبِيٌّ اَوْ رَجُلٌ اَوْ رَجُلاَنِ.‏ قَالَ يَنْفَعُكَ اِنْ حَدَّثْتُكَ.‏ قَالَ اَسْـمَعُ بِاُذُنَىَّ.‏ قَالَ جِئْتُ اَسْاَلُكَ عَنِ الْوَلَدِ قَالَ مَاءُ الرَّجُلِ اَبْيَضُ وَمَاءُ الْمَرْاَةِ اَصْفَرُ فَاِذَا اجْتَمَعَا فَعَلَا مَنِيُّ الرَّجُلِ مَنِيَّ الْمَرْاَةِ اَذْكَرَا بِاِذْنِ اللهِ وَاِذَا عَلَا مَنِيُّ الْمَرْاَةِ مَنِيَّ الرَّجُلِ آنَثَا بِاِذْنِ اللهِ.‏ قَالَ الْيَهُودِيُّ لَقَدْ صَدَقْتَ وَاِنَّكَ لَنَبِيٌّ ثُمَّ انْصَرَفَ فَذَهَبَ.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَدْ سَاَلَنِي هَذَا عَنِ الَّذِي سَاَلَنِي عَنْهُ وَمَا لِي عِلْمٌ بِشَىْءٍ مِنْهُ حَتَّى اَتَانِيَ اللهُ بِهِ.‏

অর্থ : “হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাশে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমতবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে এসে উনার নাম মুবারক সরাসরি মুখে সম্বোধন করে উনাকে একজন ইয়াহুদী আলিম সালাম দিল। হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উক্ত ইয়াহুদীকে পিছন থেকে ধাক্কা দিলেন যাতে পড়ে যায়। তখন ইয়াহুদী বললো, আপনি আমাকে ধাক্কা দিলেন কেন? প্রতুত্তোরে হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে সম্বোধন করলে না কেন? ইয়াহুদী বললো, উনাকে আমরা সেরূপই সম্বোধন করে থাকি যা আমরা আমাদের পরিবারের কাছে থেকে শুনে থাকি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমার নাম মুবারক মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা আমার পরিবারের পক্ষ থেকে রাখা হয়েছে। ইয়াহুদী আলিম বলল, আমি কিছু জানতে এসেছি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে বললেন, তোমার কী লাভ হবে, যদি আমি তোমাকে কিছু বলি? সে বলল, আমি আমার কান পেতে শুনব। এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হাত মুবারকের লাঠি মুবারক দ্বারা একটি দাগ টানলেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, সুওয়াল করতে পার। তখন ইয়াহুদী আলিম সুওয়াল করলো, যখন পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হয়ে যাবে তখন মানুষ কোথায় থাকবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সমস্ত মানুষ পুলসিরাতের পাশে অন্ধকারে অবস্থান করবে। ইয়াহুদী পুনরায় সুওয়াল করলো, কারা প্রথম পুলসিরাত পার হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, গরীবরা প্রথম পুলসিরাত পার হবে। ইয়াহুদী সুওয়াল করলো, জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর সর্বপ্রথম তাদেরকে কী খাবার পরিবেশন করা হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মাছের কলিজা। ইয়াহুদী পুনরায় সুওয়াল করল, এরপর কী পরিবেশন করা হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এরপর জান্নাতীদের জন্য জান্নাতে পালিত গরুর গোশত পরিবেশন করা হবে। এরপর ইয়াহুদী সুওয়াল করল, খাওয়ার পর পানীয় কী কী পরিবেশন করা হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সালসাবীল নামক ঝর্ণার পানি। ইয়াহুদী বলল, আপনি ঠিক বলেছেন। সে আরো বলল যে, আমি আপনার কাছে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছি যা নবী ছাড়া পৃথিবীর কোন অধিবাসী জানে না অথবা একজন কি দুজন লোক ছাড়া। তিনি বললেন, আমি যদি তোমাকে তা বলে দেই তবে তোমার কি কোন উপকার হবে? সে বলল, আমি আমার কান পেতে শুনব। ইয়াহুদী তখন বলল, আমি শিশু সম্পর্কে জানতে এসেছি! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পুরুষের নুত্বফা সাদাটে এবং নারীর নুত্বফা হলুদ হয়। যখন এ দুটি মিলিত হয় এবং পুরুষের নুত্বফা নারীর নুত্বফার ওপর আধিপত্যশালী হয় তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক অনুযায়ী পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করে। আর যখন নারীর নুত্বফা পুরুষের নুত্বফার ওপর আধিপত্যশালী হয়, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক অনুযায়ী কন্যা সন্তান জন্মলাভ করে। ইয়াহুদী আলিম বলল, আপনি সত্য বলেছেন এবং আপনি সত্য নবী। অতপর ইয়াহুদী আলিম চলে গেল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (বিনয় প্রকাশার্থে ও উম্মতকে শিক্ষা দানের লক্ষ্যে) ইরশাদ মুবারক করেন, আমাকে সে যা যা সুওয়াল করল মহান আল্লাহ পাক তিনি না জানানো ছাড়া আমার জানা ছিল না।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল হায়েজ)

উপরের পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে বুঝা যাচ্ছে যে, নিষেকের সময় ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারিত হয়। আর এই বিষয়টি সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে- মায়ের গর্ভে মানব ভ্রুণ তৈরি হওয়ার সময় বাবার কাছ থেকে আসা Y (ওয়াই) ক্রোমোজোমের দ্বারা নির্ধারিত হয় নবজাতক ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। এই Y (ওয়াই) ক্রোমোজোমের কার্যকারিতা শুরু হতে কিছুদিন সময় লাগে। সময়ের পরিমাণটা প্রায় ৮ সপ্তাহ। এই সময়টায় মায়ের গর্ভে ভ্রুণের ছেলে ও মেয়ের বৈশিষ্ট্য একইসাথে অভিন্নরূপে বিকাশ পেতে থাকে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, তখন ভ্রুণের মাঝে পুরুষালী বৈশিষ্ট্যের খোঁজ পাওয়া মুশকিল। ওই দশায় সব ভ্রুণই যেন মেয়ে ভ্রুণ, ক্রোমোজোম যাই হোক না কেন!

সাধারণভাবে ভ্রুণের গোনাড দৃশ্যমান হয় ভ্রুণের বিকাশের ৮ সপ্তাহের মাথায়। ভ্রুণ বিকাশের সাথে সাথে লিঙ্গ যখন বিকশিত হয় তখন প্রথম দিকে লিঙ্গে ছেলে ও মেয়ে আলাদাভাবে না হয়ে উভয়ের বৈশিষ্ট্য একত্রে বিকশিত হতে থাকে। এই পার্থক্যহীন অবস্থাটাকে বলা হয় ‘অভিন্ন গোনাড’। এ অবস্থায় ছেলে ও মেয়ের যৌনতা-সংশ্লিষ্ট অঙ্গসমূহের মাঝে কোনো পার্থক্য থাকে না। এই সমন্বিত অবস্থাটা চলতে থাকে কয়েক সপ্তাহ।

অষ্টম সপ্তাহের মাথায় সংশ্লিষ্ট কোষ লিঙ্গ নির্ধারণের কাজ শুরু করে। এর পরে পুরুষ হওয়ার জৈবিক সংকেত মেয়েলী বৈশিষ্ট্য ও গঠনকে বিকশিত হতে বাধা প্রদান (block করে দেয়।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, তথাকথিত বিজ্ঞান যদিও বলছে যে, নিষেকের সময়ই সন্তানের লিঙ্গ (sex)  নির্ধারণ হয়ে যায়। কিন্তু তথাকথিত বিজ্ঞান বাহ্যিকভাবে তা কোনভাবেই দেখাতে পারবে না। কেননা এই লিঙ্গ নির্ধারণ হয় সেক্স ক্রমোজোম অনুযায়ী, বাহ্যিকভাবে তা প্রকাশই পায় না।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলামই ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারিত হওয়ার ব্যাপারে সঠিক ফায়সালা প্রদান করেছে।


0 Comments: