খতনা কখনোই বর্বরচিত প্রথা নয়, বরং মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ উনাদের হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায় যে, শরীরের অবাঞ্চিত পশম পরিষ্কার করা, গোঁফ খাটো করা, নখ কাটার মতো খতনা করাও একটি স্বভাবজাত বিষয়। এটি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার একটি শিআর তথা নির্দশন।
নাস্তিকদের আপত্তি ৭ : "ইসলাম কেন খতনা‘র (নারী পুরুষ উভয়ের) মত এমন একটা বর্বরচিত প্রথা কে চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় (Abu Dawud 41:5251)?
http://answering-islam.org/Sharia/fem_circumcision.html"
খণ্ডন : খতনা কখনোই বর্বরচিত প্রথা নয়, বরং স্বাস্থ্য সম্মত ও বৈজ্ঞানিক প্রথা। আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিধান অনুযায়ী পুরুষের জন্য খতনা করা আবশ্যক, যা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার একটি শিআর তথা নির্দশন। তবে মহিলাদের খতনা করা কোন আবশ্যকীয় বিষয় নয়। বরং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নারীদের খতনা করাকে সম্মান ও মর্যাদার বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চাইলে নারীরাও খতনা করতে পারে। এতে পুরুষের মত কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهُ قَالَ الْفِطْرَةُ خَـمْسٌ الِاخْتِتَانُ وَالِاسْتِحْدَادُ وَقَصُّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيْمُ الاَظْفَارِ وَنَتْفُ الاِبْطِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, স্বভাবজাত বিষয় ৫ টি। খাতনা করা, অবাঞ্চিত পশম পরিষ্কার করা, গোঁফ খাটো করা, নখ কাটা।” (মুসলিম শরীফ: কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীছ শরীফ নং ৪৮৫; নাসাঈ শরীফ: কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীছ শরীফ নং ৯)
খতনা আমাদের সমাজে মুসলমানী বলে পরিচিত। শিশ্নের সামনের বা মাথার দিকে যে উদ্বৃত্ত ত্বক শিশ্নের সংবেদনশীল অংশকে ঢেকে রাখে, এ উদ্বৃত্ত ত্বক কেটে ফেলে দেয়াই খতনা বা মুসলমানী। প্রতিটি মুসলিম পরিবারেই ছেলে শিশু একটু বড় হলেই তার খতনা বা মুসলমানী করানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। আমাদের মুসলিম সমাজে খতনা বা মুসলমানী করানোর সংস্কৃতি শত শত বছর ধরে চলে আসছে। এটি একটি মহান সুন্নত মুবারক। সর্বপ্রথম এ সুন্নত মুবারক পালন করেছেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার পর সব নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাও এ সুন্নত মুবারক পালন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ يَـحْيَى بْنِ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ كَانَ اِبْرَاهِيمُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوَّلَ النَّاسِ اَضَافَ الضَّيْفَ وَاَوَّلَ النَّاسِ قَصَّ شَارِبَهُ وَقَلَّمَ اَظْفَارَهُ وَاسْتَحَدَّ وَاَوَّلَ النَّاسِ اخْتَتَنَ وَاَوَّلَ النَّاسِ رَاَى الشَّيْبَ فَقَالَ يَا رَبِّ مَا هَذَا؟ فَقَالَ الْوَقَارُ. قَالَ رَبِّ زِدْنِي وَقَارًا.
অর্থ : “হযরত ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত, হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিই প্রথম মেহমানদারী করেছেন এবং তিনিই প্রথম গোঁফ ছেটেছেন, নখ কেটেছেন এবং ক্ষুর ব্যবহার করেছেন এবং তিনিই প্রথম খতনা করেছেন। আর তিনিই প্রথম বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়েছেন অতঃপর তিনি বললেন, আয় বারে ইলাহী! এটা কী? মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, মর্যাদা। হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দু‘আ করলেন, আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন।” (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : হাদীছ শরীফ নং ২৬৪৬৭)
যখন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি খতনা করেন তখন উনার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اخْتَتَنَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَهْوَ ابْنُ ثَـمَانِيْنَ سَنَةً بِالْقَدُّوْمِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি সূত্রধরদের অস্ত্র দিয়ে নিজের খাত্না করেছিলেন যখন উনার বয়স ছিল আশি বছর।” (বুখারী শরীফ : ৩৩৫৬)
খতনা করানো কেন প্রয়োজন : ধর্মীয় কারণে মুসলমানরা খতনা করিয়ে থাকে। এছাড়াও কিছু রোগ যেমন ফাইমোসিস, প্যারাফাইমোসিস হলে খতনা বা মুসলমানী করাতে হয়।
ফাইমোসিস হলো শিশ্নের মাথার দিকের চামড়া/ত্বক এমনভাবে মূত্রনালীকে ঢেকে রাখে, যার কারণে ছোট ইস্তিঞ্জা বা প্রস্রাব ঠিকমতো বের করতে পারে না। ছোট ইস্তিঞ্জা বের হতে না পেরে শিশ্নের মাথা ফুলে উঠে এবং ব্যাথা করতে থাকে। এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে ছোট ইস্তিঞ্জায় ইনফেকশন, এমনকি কিডনি অকেজোও হতে পারে।
প্যারাফাইমোসিস হলো অনেক সময় শিশ্নের মাথার দিকের চামড়া উল্টে গিয়ে শক্ত হয়ে যায়। যার ফলে চামড়াকে আর সামনে ও পেছনের দিকে নাড়াচাড়া করা যায় না। এক্ষেত্রে মাথার দিকে ফুলে যায় এবং রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়।
উভয় ক্ষেত্রেই জরুরি ভিত্তিতে খতনা করানো প্রয়োজন।
অনেক সময় ছোট শিশুদের শিশ্ন প্যান্টের চেইনের সঙ্গে আটকে যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতেও অনেক সময় খতনা করানো হয়।
যে সকল ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় : যেসব শিশুর শিশ্নে অস্বাভাবিকতা আছে; যেমন ছোট ইস্তিঞ্জার নালী শিশ্নের মাথায় না থেকে নিচের দিকে থাকে। যাকে হাইপোস্পেডিয়াসিস এবং এপিস্পেডিয়াসিস বলা হয়। যদি শিশ্নের মাথায় বক্রতা সৃষ্টি হয় (করোডি) অথবা শিশ্ন দ্ব্যার্থবোধক হয় তবে পুনর্গঠনমূলক অপারেশনের জন্য শিশ্নত্বক প্রয়োজন। তখন শিশুদের খতনা করানো যায় না। যেসব শিশু ৮ মাস পূর্ণ হওয়ার পূর্বে জন্মগ্রহণ করে (তাদেরকে বালপ্রৌঢ় বলা হয়) বা যাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে না, তাদের খতনা বিলম্বে করতে হয়। যদি কোনো শিশুর বা বয়োপ্রাপ্তের পারিবারিক ইতিহাসের কোনো সদস্যের রক্তপাত জনিত ডিসঅর্ডার (হিমোফিলিয়া) থাকে, তবে তার রক্ত স্বাভাবিকভাবে জমাট বাধবে কিনা, তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই খতনা করা জরুরী।
মাতৃগর্ভে সন্তানের শিশ্নের উদ্বৃত্ত ত্বকের প্রয়োজনীয়তা : মাতৃগর্ভে শিশুর ৪ মাস বয়সের মধ্যে শিশ্নের ত্বক সম্মুখের উদ্বৃত্ত ত্বকসহ উপর হতে আবৃত করতে আরম্ভ করে ঠিক নিম্নের মধ্যস্থলে লম্বালম্বি মুড়ে সমস্ত শিশ্নকে আবৃত করে ফেলে। এই সময় শিশ্নমু- ও উদ্বৃত্ত ত্বক একত্রে মুড়ে সংযুক্ত থাকে। পরে এই দুইয়ের মধ্যে এক প্রকারের disquamating cell সৃষ্টি হয়। অতঃপর এদের মধ্যে squamous cell-এর আবির্ভাব হয়। ক্রমে ক্রমে এতে কিছু কিছু কোষ নষ্ট হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাঁকা স্থানের সৃষ্টি করে। এই ক্ষুদ্র ফাঁকা স্থানগুলো পরস্পর একটি অপরটির সাথে মিলিত হয়ে ক্রমশঃ বড় হতে থাকে এবং শিশ্নমু- হতে উদ্বৃত্ত ত্বককে পৃথক হওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত এরা লেগে থাকে- পৃথক হয় না।
জন্মের পর শিশুর শিশ্নের অগ্রভাগের এই উদ্বৃত্ত ত্বককে শিশ্নমুণ্ড- হতে ছাড়ানো যায় না। শীঘ্রই স্টেরয়েড হরমোনের সাহায্যে শিশ্নমুণ্ডেও সাথে উদ্বৃত্ত ত্বকের আটকানো কোষগুলো বিনষ্ট সাধন হেতু ক্রমশ উদ্বৃত্ত ত্বক শিশ্নমুণ্ড- হতে সম্পূর্ণ আলগা হয়ে যায়। স্টেরয়েড হরমোনের অভাব হেতু কখনও কখনও অল্প বিস্তর শিশ্নমুণ্ডের সাথে ত্বক আটকানো অবস্থায় থেকে যায়। অর্থাৎ স্টেরয়েড হরমোনের ক্রিয়ার তারতম্যের উপর উদ্বৃত্ত ত্বকের শিশ্নমু- হতে পৃথক হওয়া নির্ভর করে। এমনকি কখনও কখনও আদৌ পৃথক হয় না।
সাধারণভাবে মাতৃগর্ভে শিশ্নমুণ্ড উদ্বৃত্ত ত্বক দ্বারা ঢাকা থাকা অপার করুণাময় মহান আল্লাহ পাক উনার এক বিশেষ করুণা। কেননা মাতৃগর্ভে শিশুর শিশ্নমুণ্ড যদি উন্মুক্ত থাকতো তাহলে গর্ভস্থ এ্যামনিওটিক ফ্লুইড (সাধারণভাবে যাকে বাংলায় পানিমুচি বলা হয়)-এর দীর্ঘ সংস্পর্শে তা সহজেই নষ্ট হয়ে যেত। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই সংবেদনশীল বস্তুটি প্রথম থেকেই শিশু ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত ত্বকাবৃত্ত করে সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করেছেন।
শিশ্নমুণ্ডের উপরের পর্দার ঝিল্লীর প্রকারভেদ সম্পর্কে শরীরতত্ত্ববিদগণের অধিকাংশের অভিমত উভয়ের উপরিস্থিত ঝিল্লী প্রকৃতপক্ষে মিউকাস মেমব্রেন নয় এবং উভয় পর্দার মধ্যে রূপান্তরিত ঘর্ম নির্গমনী দানা বিন্যাসিত, যার দ্বারা এক প্রকার সাদা সাদা ছেদলা (smegma) প্রস্তুত হয়ে থাকে। এটি অত্যন্ত দূর্গন্ধময়। অবশ্য অণুবীক্ষন যন্ত্রের সাহায্যে উদ্বৃত্ত ত্বক বা শিশ্নমু-ের কোন অংশ হতে নির্গমনী গ্রন্থি বা যোগাযোগ পর্দা পাওয়া সম্ভব হয়নি।
উদ্বৃত্ত ত্বকের অপকারিতা : গর্ভস্থ সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও ভূমিষ্ট হওয়ার পরে এই উদ্বৃত্ত ত্বক অপরিচ্ছন্নতার সৃষ্টি করে বিধায় তা অপসারণই বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত তো বটেই।
১. উদ্বৃত্ত ত্বকের নিচে সৃষ্ট অসহনীয় দূর্গন্ধময় এই ছেদলা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একমাত্র কুরুচি সম্পন্ন মানুষই এই ধরণের নোংরা বস্তু নিজের দেহে সঞ্চিত করে বহন করতে পারে। যাদের উদ্বৃত্ত ত্বক শিশ্নমু- হতে আলগা থাকে তারা এই ছেদলা পরিষ্কার করতে পারলেও বার বার পরিষ্কার করাটা আসলেই অসম্ভব বটে। আর যাদের উদ্বৃত্ত ত্বক শিশ্নমু- হতে আলগা নয় বা আংশিক আলগা তাদের পরিষ্কার করাটাই অসম্ভব। যার ফলে ক্রমাগত এই ছেদলা শিশ্নমু-ের চারধারে জমে এমন শক্ত পদার্থের সৃষ্টি করে যার ফলে শিশ্নমু-ের সংবেদনশীলতা হ্রাস পায়।
২. উদ্বৃত্ত ত্বকের মুখ অত্যন্ত অপরিসর হলে ছোট ইস্তিঞ্জা ফোঁটা ফোঁটা হয়। ফলে ছোট ইস্তিঞ্জা সম্মুখের চাপে উদ্বৃত্ত ত্বকের ভিতরে শিশ্নমুণ্ডের চারদিকে (উদ্বৃত্ত ত্বক শিশ্নমুণ্ড হতে আংশিক আলগা বা লেগে থাকলে) সঞ্চিত হয়ে ফুলে বেলুনের মত মোটা হয় এবং কষ্টে সৃষ্টে চেপে চেপে অধিক্ষণ ধরে বের করতে হয়। ছোট ইস্তিঞ্জার ক্ষতিকর পদার্থের এই দীর্ঘ বার বার আঘাতে সংবদেনশীল শিশ্নমুণ্ডের অল্প বিস্তর ক্ষতি হতে থাকে। এর ফলে অনেক সময় শিশ্নমুণ্ড শুকিয়ে কালো বর্ণ ধারণ করার প্রমাণও পাওয়া যায়। (ত্বকচ্ছেদ (খতনা) ও যৌন ব্যাধি : ডাঃ মাহতাব উদ্দীন)
৩. উদ্বৃত্ত ত্বক বিভিন্ন জীবাণুর আশ্রয়স্থলও বটে। সমস্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে যে, উদ্বৃত্ত ত্বক গণোরিয়া, উপদংশগর্মি ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হতে সাহায্য করে। আর এই জন্য খতনাবিহীন ব্যক্তি অনেক সময় এই রোগে আক্রান্ত হয়। মাদ্রাজ ভিনিরিয়াল বিভাগ হতে প্রমাণিত হয়েছে যে, উদ্বৃত্ত ত্বক ছেদন (খতনা) দ্বারা ১৫-২০%-এর অধিক ক্ষেত্রে গণোরিয়া প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
৪. খতনাবিহীন ব্যক্তির উদ্বৃত্ত ত্বকের অভ্যন্তরে আশ্রয়কৃত গণোরিয়ার জীবাণু স্বভাবতই জরায়ুকে সংযোজিত হয়ে নারীর জীবনকে বিপন্ন ও দুবির্ষহ করে তোলে।
ইউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূত্রনালীর প্রদাহ শিশুদের বেশী হয় এবং এতে কিডনির সমস্যা, জ্বর ও রক্তের ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি খতনা মরণব্যাধি এইডস ও যৌনরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। সাধারণ অর্থে শিশ্নের ক্যান্সার হলো অপরিচ্ছন্নতার ব্যাধি। শিশ্নের শীর্ষে ঘা হয়ে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে একসময় ক্যান্সারে রূপ নেয়, এমন রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, খতনা করানো পুরুষের চেয়ে খতনা না করানো পুরুষ এ ধরনের ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
৫. খতনাবিহীন ব্যক্তির দাম্পত্য জীবনে সমস্যা ৩ ধরণের-
ক) যাদের বলপূর্বক শিশ্নমু- উন্মুক্ত হয় তাদের প্রতিবার নির্জনবাস হেতু উদ্বৃত্ত ত্বকের অগ্রভাগ কেটে বা চিরে যায়। ক্ষত সেরে গেলে উক্ত স্থানটি একটু শক্ত হয়, এরূপে বার বার ক্ষত-বিক্ষত হয়ে কালের আবর্তে ত্বক শক্ত ও মোটা হয়ে শিশ্নমু- আদৌ খোলে না। এই পুরাতন ক্ষত সর্বদা ছেদলা দ্বারা সিক্ত থাকায় ক্যান্সার হওয়ার পথ সুগম হয়।
খ) যাদের শিশ্নমু- উন্মুক্ত হয় না তাদের প্রতিবার নির্জনবাসকালে প্রতিপক্ষের দুর্গতির শেষ থাকে না। উদ্বৃত্ত ত্বক একত্রে পুঞ্জিভুত হয়ে প্রতিপক্ষের আনন্দের কারণের বদলে আঘাতের কারণ বেশি হয়। এরূপ অস্বাভাবিক কারণে যোনিদ্বার ক্ষতে আক্রান্ত হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।
গ) যাদের শিশ্নমুণ্ড আংশিক উন্মুক্ত হয় তাদের প্রতিবার নির্জনবাসকালে হঠাৎ সমস্ত উদ্বৃত্ত ত্বক শিশ্নমুণ্ডের একবারে পিছনে এসে পড়ে এবং আংটির মতো আঁটকে ধরে। এতে সাধারণত রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়ে ক্রমশঃ শিশ্নমুণ্ড ফুলে মোটা হতে থাকে। ফোলা যত বেশি হতে থাকে বেষ্টনীর বন্ধন ততই আঁটকে যেতে থাকে। এই বেদনাময় অবস্থা হতে নিষ্কৃতি লাভের জন্য আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে টেনে ছেড়ার চেষ্টা করে। অপারগ হলে চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।
খতনার বৈজ্ঞানিক সুফল বা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা : পুরুষের খতনাকে আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করে। খতনার দ্বারা শরীর অধিক পাক-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে। খতনা করালে শিশুদের মূত্রপথের সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়। এর ফলে ছোট ইস্তিঞ্জার জ্বালাপোড়া, জ্বর, খাবারে অনীহা এবং স্বাস্থ্য ভালো না হওয়া ইত্যাদি রোগ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে খতনা করালে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজাতীয় (ব্যাকটেরিয়া) রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। খতনার দ্বারা শিশ্নের অগ্র ত্বকে যে তরল জমে নোংরা অবস্থার সৃষ্টি করে, তা থেকে রেহাই পেতে পারে, ফলে শিশ্নের ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় ও যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে।
এ ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেড় হাজার বছর আগে খতনার কথা বলেছেন, ব্যাপক গবেষণা শেষে আজকের আধুনিক বিজ্ঞান স্বীকার করেছে, খতনার ব্যাপক উপকারিতা আছে।
খতনার সুফল নিয়ে অস্ট্রেলীয় মেডিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. ব্রায়ান মরিসের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, যেসব বালকের খতনা করা হয়নি, তাদের অপেক্ষাকৃত কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালির ইনফেকশন ৪-১০ গুণ বেশি হয়। তার মতে, খতনার মাধ্যমে অন্তত এক-চতুর্থাংশ মূত্রনালীর ইনফেকশন হ্রাস করা যায়।
ওয়াশিংটনের সোলজার মেডিক্যাল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. বিজবেল বলে, ‘আমি প্রথমে খতনার বিরোধী ছিলাম, পরে দীর্ঘ গবেষণার ফলে প্রমাণিত হলো যে মূত্রথলি ও মূত্রনালিবিষয়ক অনেক জটিল রোগের সমাধান হলো খতনা।’
ডা. রুবসন তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করে, ১৯৩০ থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার মানুষ আমেরিকায় মূত্রনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে কেবল ১০ জন খতনাকৃত রয়েছে, বাকি সব খতনাবিহীন ব্যক্তি।
খতনা করে শিশ্নের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু খতনার কারণেই এ ক্যান্সার মুসলমান ও ইয়াহুদী-খৃস্টানদের মধ্যে নেই বললেই চলে। শিশ্নের মাথার বাড়তি চামড়ার নিচে এক ধরনের সাদা পদার্থ জমে, এটিই শিশ্নের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
যৌনবিজ্ঞানীরা বহুকাল আগে থেকেই বলে আসছে যে, পুরুষের খতনা করালে স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায়। এতে নির্জনবাসে অধিক আনন্দ উপভোগ করে নারী-পুরুষ উভয়ই। বর্তমানে ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ ইউরোপেও প্রচুর পরিমাণে খতনা করানো হয়। সেখানে গুরুত্বের সঙ্গে এটা দেখা হয়।
এছাড়াও শিশ্নের মাথায় প্রদাহ, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া করলেও খতনা করালে তা সেরে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুরুষের খতনা এইচআইভি বা এইডস প্রতিরোধে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে, এটি আংশিক সুরক্ষা দেয়। আফ্রিকার যেসব দেশে খতনার হার বেশি, সেসব দেশে এইডসের হার তুলনামূলক কম।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, খতনা কোন বর্বরোচিত প্রথা নয় বরং বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত প্রথা। অথচ প্রাচীন গ্রীক ও রোমীয় সভ্যতার জনগণ শিশ্নত্বককে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করতো এবং শিশ্নত্বকচ্ছেদন বা খতনার বিরোধিতা করতো।
হেলেনীয় সভ্যতার মানুষেরা খতনাকে বীভৎস আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে দেখতো। | (Jewish Encyclopedia: Circumcision: In Apocryphal and Rabbinical Literature)
রোমান সাম্রাজ্যে খতনাকে একটি বর্বর ও ঘৃণ্য প্রথা হিসেবে গণ্য করা হতো। রোমান বাণিজ্যদূত টিটাস ফ্লাভিউস ক্লিমেন্সকে নিজের খতনা করে ইহুদী ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার অপরাধে রোমান সিনেট মৃত্যুদণ্ড দেয়।
আর এদের ধারাবাহিকতায় গণ্ডমূর্খ ও ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকরাও খতনার বিজ্ঞান প্রমাণিত বহুবিদ স্বাস্থ্য উপকারিতা সত্ত্বেও বিরোধিতায় মত্ত রয়েছে।
নারীর খতনা : পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বা অঞ্চলে নারীদের খতনা নিয়ে নানা রকম বাড়াবাড়ি, কুসংস্কার, বর্বরতা ও বিভৎসতার দায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপর বর্তাবে না। যারা এসব অনাচার-বর্বরতা করছে তারা সেটা করছে আঞ্চলিক কুপ্রথার দোহাই দিয়ে। কিন্তু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কোন আঞ্চলিক কুপ্রথাকে কখনোই প্রশ্রয় দেয়নি, বরং মূলোৎপাটন করেছে। যেমন- তৎকালীন আরবে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। এই চরম অমানবিক প্রথাকে একমাত্র সম্মানিত দ্বীন ইসলামই চিরতরে বিলুপ্ত করে দিয়ে কন্যা সন্তানকে শুধু বেঁচে থাকার অধিকারই ফিরিয়ে দেয়নি বরং সমাজের প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত কালে যখন মিশর মুসলমানদের করায়াত্ত হলো তখন সেখানে প্রতি বছর নীল নদের পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে, প্রবাহ জারী রাখার জন্য প্রতি বছর একজন করে কুমারী নারীকে সাজিয়ে-গুজিয়ে নীল নদে বলি দেয়ার কুপ্রথা একমাত্র সম্মানিত দ্বীন ইসলামই চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে।
এমন জঘন্য সব কুপ্রথাকে যখন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম চিরতরে যমীন থেকে মিটিয়ে দিয়ে নারী জাতির মুক্তির পথ উন্মুক্ত করেছেন। তখন নাস্তিক্যবাদীরা কোথায় ছিল? তারা কি কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল এই সমস্ত বর্বরতাকে রোধ করার জন্য? বাস্তবতা হচ্ছে, এসব ব্যাপারে তাদের কোন কার্যক্রমই নেই, বন্য জীবজন্তুর মতো চিৎকার-চেঁচামেচি করা ছাড়া তাদের কোন কাজই নেই। অথচ সেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপারেই অপবাদ আরোপ করছে গ-মূর্খ ও চরম ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদীরা। নাঊযুবিল্লাহ!
বস্তুত মহিলাদের খতনা করার বিধান এমনিই প্রযোজ্য হয়নি, এর পেছনেও প্রজ্ঞা রয়েছে এবং এটা অনেক সুফল বয়ে আনে। ইতিহাসে পাওয়া যায়, তৎকালীন আরবে এটি প্রচলিত ছিল। আরবের পরিবেশ শুষ্ক হওয়ার কারণে সেখানকার মহিলাদের জরায়ুর উপরিভাগ হতো খুবই রুক্ষ ও মোটা। তাছাড়া সতিচ্ছদের পর্দা ছিন্ন না হলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। তাই তৎকালীন আরবের সতিচ্ছদের পর্দা ছিন্ন করার জন্য মহিলাদের খতনা করার প্রথা চালু ছিল।
নারীদের স্বাভাবিক খতনার উপকারিতা আছে বিধায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম অনুমোদন প্রদান করেছেন। যেমন-
১. খতনাবিহীন মহিলাদের ক্ষেত্রে ল্যাবিয়া মাইনরার নিঃসরণ জমা হয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে, এবং তা এই অস্বস্তিকর গন্ধ বাড়াতে থাকে যা যোনী অথবা মূত্রনালীতে ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।
২. খতনা ভগাঙ্কুরের অত্যধিক সংবেদনশীলতা হ্রাস করে। এই অধিক সংবেদনশীলতার ফলে উত্তেজিত অবস্থায় এটি তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে যেতে পারে, যা স্বামীর জন্য বিশেষ করে নির্জনবাসের সময় খুবই অস্বস্তিকর।
৩. খতনা করার আরেকটি সুবিধা হলো এটি ভগাঙ্কুরের উদ্দীপনায় বাধা দেয়। এই উদ্দীপনা এটাকে এত লম্বা করে দেয় যে, ব্যাথার সৃষ্টি করে।
৪. ভগাঙ্কুরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী খিঁচুনী হওয়া খতনার দ্বারা প্রতিহত হয়।
৫. খতনা মহিলাদের মাত্রাতিরিক্ত যৌনাকাঙ্খা হ্রাস করে।
৬. মূত্র-ঘটিত রোগ সংক্রমণ হ্রাস করে।
৭. প্রজনন প্রক্রিয়ায় রোগ সংক্রমণের ঘটনা হ্রাস করে। (লিওয়া আল-ইসলাম ম্যাগাজিন, সংখ্যা ৮ ও ১০-এ প্রকাশিত সিত্তুল বানাত খালিদ নাম্নী একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কৃর্তক লিখিত “খিতানুল-বানাত রু’য়াহ সিহহিয়্যাহ” (স্বাস্থ্য বিবেচনায় মহিলাদের খতনা) নামক আর্টিক্যাল থেকে সংগৃহীত)
সিত্তুল বানাত খালিদ “খিতানুল-বানাত রু’য়াহ সিহহিয়্যাহ” নামক আর্টিকেলে আরো বলেন, “আমাদের নিকট মহিলাদের খতনা করা হলো সর্বোপরি ইসলামের প্রতি আনুগত্য, যা একে উৎসাহিত করে, ফিতরাতের অংশ ও সুন্নত বলে আখ্যা দেয়। ইসলামের পরিধি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, এবং এতে যা আছে সবকিছুতেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে এমনকি স্বাস্থ্যের দিক দিয়েও। যদি এর কল্যাণ এখন না দেখা যায়, তাহলে তা ভবিষ্যতে আবিষ্কার হবে। এমনটিই ঘটেছে পুরুষদের খতনার ব্যাপারে- বিশ্ব এখন এর সুফল জানে এবং কয়েকটি বিরোধী গোষ্ঠী ছাড়া এটি সব জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।”
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, নারীদের স্বাভাবিক খতনায় উপকারিতা রয়েছে। তবে তা নারীদের জন্য পুরুষের মতো অত্যাবর্শকীয় নয়। আর তাই দেখা যায়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্তৃক নারীদের খতনার সাধারণ অনুমোদন মুবারক উনার উল্লেখ পাওয়া গেলেও সরাসরি কোন আদেশ মুবারক উনার উল্লেখ পাওয়া যায় না।
আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ شَدَّادِ بْنِ اَوْسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْـخِتَانُ سُنَّةٌ لِلرِّجَالِ وَمَكْرَمَةٌ لِلنِّسَاءِ.
অর্থ : “হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, খতনা পুরুষের জন্য সুন্নত আর মহিলাদের জন্য মর্যাদা।” (মু’জামুল কবীর লিত ত্ববারানী ৭ম খ- ২৭৩ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ৭১১২)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ الْـخِتَانُ سُنَّةٌ لِلرِّجَالِ وَمَكْرُمَةٌ لِلنِّسَاءِ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। খতনা পুরুষের জন্য সুন্নত আর মহিলাদের জন্য মর্যাদা।” (সুনানে বায়হাকী কুবরা : হাদীছ শরীফ নং ১৭৩৪৪)
তাই ইমাম হযরত আহমাদ রাহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “এটা পুরুষদের জন্য অধিক জরুরী তবে মহিলাদের জন্য এত জরুরী নয়।” (আল মুগনী ১/৭০)
অর্থাৎ পুরুষের মতো মহিলাদের খতনা করা কোন আবশ্যকীয় বিষয় নয়। বরং নারীদের খতনা করাকে সম্মান ও মর্যাদার বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চাইলে নারীরাও খতনা করতে পারে, করলে এটা জায়িয হবে।
কিন্তু এই কীভাবে খতনা করতে হবে এই ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ عَطِيَّةَ الاَنْصَارِيَّةِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا اَنَّ امْرَاَةً كَانَتْ تَـخْتِنُ بِالْمَدِيْنَةِ فَقَالَ لَـهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تُنْهِكِي فَاِنَّ ذٰلِكَ اَحْظَى لِلْمَرْاَةِ وَاَحَبُّ اِلَى الْبَعْلِ.
অর্থ : “হযরত উম্মে আতিয়্যাহ আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। পবিত্র মদীনা শরীফ-এ এক মহিলা নারীদের খতনা করাতেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি অতিরঞ্জন করবেন না বা গভীর করে কাটবেন না। কারণ তা মেয়েলোকের জন্য অধিকতর আরামদায়ক এবং স্বামীর জন্য অতি পছন্দনীয়।” (আবূ দাঊদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৫২৭১, সুনানে বায়হাকী কুবরা : হাদীছ শরীফ নং ১৭৩৩৮)
অন্য বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, “কিছু অংশ কাটো এবং অতিরিক্ত করো না।”
অত্র হাদীছ শরীফদ্বয় দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, কোন প্রকার বাড়াবাড়ি না করার শর্তে নারীদের খতনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নারীদের খতনার অনুমোদনের বিধান মূলত অত্র হাদীছ শরীফ (Abu Dawud 41:5251) থেকে গৃহীত হয়নি। বরং বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের ছহীহ হাদীছ শরীফ থেকে এ রায় দেওয়া হয়েছে।
আর ফিক্বহের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- মহিলাদের খতনা করা হয় মূত্রনালীর প্রবেশদ্বারের বাইরে থাকা চামড়ার একটি ছোট অংশ কাটার মাধ্যমে যা দেখতে অনেকটা মোরগের ঝুঁটির মতো। সুন্নত হলো এর সম্পূর্ণ অংশ না কেটে কিছু অংশ কাটা। (আল মায়সুয়া’হ আল ফিকহিয়্যাহ ১৯/২৮)
যেহেতু প্রয়োজনে মহিলাদের খতনা করা উত্তম কিন্তু জরুরী কিছু নয় এবং এই কাজে বাড়াবাড়ি, অতিরঞ্জন বা গভীর করে কাটা ইত্যাদি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই মহিলাদের খতনা করতে বাধ্য করা যাবে না। আর কুপ্রথা, কুসংস্কার, বাড়াবাড়ি, বর্বরতা ও বিভৎসতার সংশ্লেষ থাকলে তো সেটা অবশ্যই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নিষিদ্ধ।
এছাড়াও বয়োঃবৃদ্ধি জনিত কারণে বিবাহিত জীবনের এক পর্যায়ে ল্যাবিয়া বড় হয়ে ঝুলে পড়ে। তখন হাঁটাচলা করার সময় এগুলো একে অপরকে স্পর্শ করে, ঘষা লাগে, ত্বকে জ্বালা করে এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথা সৃষ্টি করে। নির্জনবাসের সময়ও একই জিনিস ঘটতে পারে। তাই এ অবস্থায় প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে এই কষ্ট নিবারণের নাম ল্যাবিওপ্লাস্টি। অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম নারীদের খতনার বিষয়টি উন্মুক্ত রেখে তাদের প্রতি বড় ইহসান করেছেন।
সুতরাং নারীদের খতনা যদি মধ্যমপন্থা অর্থাৎ ইসলাম সম্মত পন্থা অবলম্বন করে করা হয়, তাহলে এতে খারাপ বা ক্ষতিকর কিছুই থাকে না। কিন্তু যদি খতনা করতে গিয়ে গভীরভাবে কেটে ফেলা হয়, এতে নানাবিধ ক্ষতি হয়। যা বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে করে থাকে, যার সাথে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কোন যোগসাজস নেই।
তাই এ ব্যাপারে মহিলাদের মতামত নেওয়াই ভালো। যদি ভগাঙ্কুর বড় হয়, তাহলে এর কিছু অংশ কাটা যেতে পারে, অন্যথায় এটা না করলেও চলে। একেকজনের ভগাঙ্কুরের আকারে পার্থক্য থাকে এবং উষ্ণ আবহাওয়া ও শীতল আবহাওয়ার কারণেও পার্থক্য দেখা দিতে পারে।
অনেকে দাবী করে যে, মহিলাদের খতনা কামহীনতা সৃষ্টি করে। ড. গাওয়াবি তাদের মতামত খ-ন করে বলেন যে, খতনাকৃত মহিলা ও খতনাবিহীন মহিলার মধ্যে তুলনামূলক এমন কোনো ভালো পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এই দাবীটি করা হয় না।
কাম-অনাসক্তিতার অনেক কারণ রয়েছে। ফেরাউনের আমলের খতনা পদ্ধতিতে তারা সম্পূর্ণ ভগাঙ্কুরই কেটে ফেলতো। এটিই কামহীনতা সৃষ্টি করে। কিন্তু এটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশিত খতনা পদ্ধতির সাথে সাংঘর্ষিক। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যথার্থই ইরশাদ মুবারক করেছেন, “একেবারে কেটে ফেলো না।” অথচ ওই সময়ের চিকিৎসাবিজ্ঞান এই স্পর্শকাতর অঙ্গ ও এর স্নায়ু সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতো না। (লিওয়া আল-ইসলাম ম্যাগাজিন)
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, খতনা কখনোই বর্বরচিত প্রথা নয়, বরং মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ উনাদের হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায় যে, শরীরের অবাঞ্চিত পশম পরিষ্কার করা, গোঁফ খাটো করা, নখ কাটার মতো খতনা করাও একটি স্বভাবজাত বিষয়। এটি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার একটি শিআর তথা নির্দশন। যা নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সম্মত ও বৈজ্ঞানিক প্রথা। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিধান অনুযায়ী পুরুষের জন্য খতনা করা আবশ্যক হলেও মহিলাদের খতনা করা কোন আবশ্যকীয় বিষয় নয়। বরং মু’জামুল কবীর লিত ত্ববারানী, সুনানে বায়হাকী কুবরা সহ আরো অন্যান্য হাদীছ শরীফ দ্বারা নারীদের খতনা সম্মান ও মর্যাদার বিষয় বলে প্রমাণিত। তাই গভীর করে না কাটার শর্তে চাইলে নারীরাও খতনা করতে পারেন।
0 Comments:
Post a Comment