অ্যালকোহলের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণই বেশি, আর তাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত তা হারাম ঘোষণা করেছে।
নাস্তিকদের আপত্তি ১০ : অ্যালকোহল সহ অন্যান্য নেশার দ্রব্য ইসলামে কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ (হারাম) (Quran 5:90-91 Sahih Muslim 4962, 4228 Sahih Bukhari 8:81:764-768 Abu Dawud 38:4469) কিন্তু পরিমিত অ্যালকোহল গ্রহনের প্রচুর ভালো দিক (সাস্থ্যগত) থাকায় এটা কে সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা কোথায়?
1 Lower mortality rates
http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1111/j.1530-0277.2010.01286.x/abstract
http://www.time.com/time/magazine/article/0,9171,2017200,00.html
2 Lower risk of heart disease and stroke
http://stroke.ahajournals.org/content/39/11/2936.full
http://circ.ahajournals.org/content/102/5/500.abstract
http://circ.ahajournals.org/content/102/5/494.abstract
3 Lower risk of diabetes
http://www.reuters.com/article/2010/04/27/us-drinking-diabetes-idUSTRE63Q43920100427
4 Lower risk of suffering from rheumatoid arthritis
http://edition.cnn.com/2010/HEALTH/07/27/drinking.rheumatoid.arthritis/index.html#fbid=XGFBTvQDW97&wom=false
5 Lower risk of osteoporosis (brittle bones)
http://www.telegraph.co.uk/health/healthnews/6014310/Beer-could-stop-bones-going-brittle.html
6 Lower risk of suffering from depression
http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19686521
http://www.time.com/time/health/article/0,8599,1928187,00.html?iid=sphere-inline-sidebar
খণ্ডন : অ্যালকোহল গ্রহণের কিছু স্বাস্থ্যগত ভালো দিক থাকতে পারে। যেমন অ্যালকোহল পানে সাময়িক আনন্দ লাভ হয়, সাময়িকভাবে শক্তিও কিছুটা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে কিছুটা লাবণ্যও সৃষ্টি হয়। তবে এই নগণ্য ভালো দিকের চেয়ে মন্দ দিকের পরিমাণ এত বিস্তৃত ও গভীর, যা অন্য কোন বস্তুতেই সচরাচর পরিলক্ষিত হয় না। অ্যালকোহলের প্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মানুষের হজমশক্তি বিনষ্ট হয়ে যায়, খাদ্যস্পৃহা কমে যায়, চেহারা বিকৃত হয়ে পড়ে, স্নায়ু দূর্বল হয়ে যায়। সামগ্রিকভাবে শারীরিক সক্ষমতার উপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সর্বোপরি মদপান মানুষকে মনুষত্বহীন করে দেয়। আর এই যৌক্তিক কারণেই অ্যালকোহল সহ অন্যান্য নেশার দ্রব্য ইসলামে কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ (হারাম)।
মানুষ যতক্ষণ নেশাগ্রস্ত থাকে ততক্ষণ তার জ্ঞান-বুদ্ধি কোন কাজই করতে পারে না। কিন্তু অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে, মদের অভ্যাস মানুষের বোধশক্তিকেও দূর্বল করে দেয়। যার প্রভাব চৈতন্য ফিরে পাবার পরেও ক্রিয়াশীল থাকে। অনেক সময় এতে মানুষ পাগলও হয়ে যায়। চিকিৎসাবিদগণের সবাই একমত যে, অ্যালকোহল কখনো শরীরের অংশে পরিণত হয় না, বরং মদ্যপানের পরে সেটি অপরিবর্তীতভাবে পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে দ্রুত শোষিত হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং এতে শরীরে রক্তও সৃষ্টি হয় না; রক্তে মিশে যাওয়ার ফলে রক্তের মধ্যে একটি সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় মাত্র। ফলে সাময়িকভাবে শক্তির সামান্য আধিক্য অনুভূত হয়। কিন্তু হঠাৎ রক্তের এ উত্তেজনা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বস্তুত মদ এত ক্ষতিকর যে, এটি মানুষকে সম্পূর্ণরূপে অপ্রকৃতিস্থ করে ফেলে, ফলে সমাজে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃঙ্খলা-চুরি, লুটতরাজ, রাহাজানি, খুন, সম্ভ্রমহরণ ইত্যাদি। যা পাশ্চাত্য সমাজে মহামারি আকার ধারণ করেছে শুধু মদ্যপানের ব্যাপকতার কারণে।
এ কারণে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
ام الفواحش و ام الـخبائث
অর্থ : “শরাব সমস্ত মন্দ ও অশ্লীলতার জননী।”
অথচ মদ্যপান করলে স্বাস্থ্যও ভালো হয়। আর এই বিষয়টিই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২১৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন এভাবে-
يَسْاَلُونَكَ عَنِ الْـخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيْهِمَا اِثْـمٌ كَبِيْرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْـمُهُمَا اَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ۗ
অর্থ : “ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৯)
অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মানুষের জন্যে মদের মধ্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি মদের কিছু উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন, তাই বিভিন্ন সময়ে এর কিছু উপকারিতা বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে।
যেমন- অপর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ সংক্রান্ত হৃদরোগে (স্কেমিক হার্ট ডিজিজ) মদ কিছুটা সুরক্ষা দেয়ার তথ্য পেয়েছে গবেষকেরা। অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিকের ক্ষেত্রে সুরক্ষার একটি সম্ভাবনার কথা বলা হয়। তবে এই দুটি ক্ষেত্রে যে পরিসংখ্যান তারা পেয়েছে, তা যৎসামান্য।
গবেষকরা বলছে, নারী, পুরুষ সবারই পরিমিত পরিমাণে মদ পান করা ভাল। সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের বেশি অ্যালকোহল পান করা উচিত নয়। সপ্তাহে তিন-চার দিনেই তা পান করা উচিত। আর কোনও কোনও দিন উচিত মদপান মুক্ত থাকা।
অর্থাৎ সাধারণভাবে সপ্তাহে ১৪ ইউনিট পর্যন্ত মদ্যপানকে ‘পরিমিত’ বলা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, পরিমিত মদ্যপান কি বিপদমুক্ত? এর সোজাসুজি জবাব হলো- ‘না’। কারণ এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে মদ্যপানের উপকারিতা নিয়ে জরিপের ফল অনেক ক্ষেত্রেই পরস্পরবিরোধী।
বৃটেনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকায় বলা হয় সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের কম নিয়মিত মদ্যপান করলে তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি হবে নিম্ন মাত্রার।
অর্থাৎ এখানে ক্ষতির দিকটি স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। যদিও সেটা কথিত পরিমিত পরিমাণের কম।
আবার কিছু গবেষণায় বলা হয়, দিনে দুই ইউনিট পর্যন্ত লাল ওয়াইন পান করা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু এ নিয়ে অন্যান্য কিছু বৈজ্ঞানিকের সংশয় আছে।
বৃটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়, পরিমিত মদ্যপান স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি ঠেকাতে পারে।
এর বিপরীতে অন্য এক জরিপে বলা হয়, পরিমিত মদ্যপানও ডেমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
পরস্পরবিরোধী এসব জরিপের উপর কোন আস্থা রাখাই কঠিন।
আর তাই বিশেষজ্ঞের মতে মদ্যপানের কোন নিরাপদ মাত্রাই নেই। কেননা অ্যালকোহল পান করলে মানুষের রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যার ফলে স্মৃতি লোপ পেতে পারে। এতে ডেমেনশিয়ার ঝুঁকি ৩ গুণ বেড়ে যায় বলে ফ্রান্সের একটি জরিপে বলা হয়। আরেকটি জরিপে বলা হয়, প্রতি সপ্তাহে ১৮ ইউনিটের বেশি যারা পান করেন তাদের আয়ু চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
সার্কুলেশন নামক জার্নালে প্রকাশিত ২০১৬ সালের একটি গবেষণা রিভিউ অনুসারে, এক রাতে ৬-৯টি ককটেল সেবন হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার/রক্তনালির ঘটনার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়।
অতএব, মদ্যপানের কোন ‘নিরাপদ সীমা’ বা ‘পরিমিত পরিমাণ’ আছে কিনা সেটাও একটি প্রশ্ন। এতদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিবেদনে পরিমিত মদপানে ঝুঁকি নেই বলা হলেও ২০১৮ সালের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে যে, মদপানের কোনো নিরাপদ সীমা নেই। হার্ভার্ড টি.এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণা প্রধান এলিজাবেথ মোস্তফস্কি বলে, ‘অ্যালকোহলের প্রভাবে হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের ঝুঁকি কতটুকু বৃদ্ধি পাবে তা নির্ভর করছে পানকারী কতটুকু ও কতবার পান করছে তার উপর।’
আর তাই বৃটেনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছে, যে কোন মাত্রার অ্যালকোহল পানের কিছু না কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে।
বস্তুত মদ মানেই ক্ষতি। মদের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। মদ পান করলে ক্ষতি হবেই। গবেষকরা একসুরে এসব কথা স্বীকার করে নিয়েছে। গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ নামের বৈশ্বিক উদ্যোগের গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে। আমেরিকার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস এই বৈশ্বিক উদ্যোগের প্রধান কার্যালয় হিসেবে কাজ করেছে। গবেষণায় অর্থায়ন করেছে আমেরিকার বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে প্রতি তিনজনে একজন মদ পান করে। অপরিণত বয়সে মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিতার জন্য সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস মদ্যপান। প্রতিবছর ২৮ লাখ মানুষ মারা যায় মদের কারণে। (২৩ আগস্ট ২০১৮) মদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বৃটেন ভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট’র প্রবন্ধেও এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৯০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ১৯৫টি দেশে মদের ব্যবহার, অসুস্থতা ও মৃত্যুর তথ্য এতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে গবেষকেরা বলেছে, মদের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। প্রবন্ধে বলা হয়, ডেনমার্কের মানুষ সবচেয়ে বেশি মদ পান করে। সবচেয়ে কম মদ পান করা দেশগুলোর তালিকায় আছে মুসলিম দেশগুলো। ইসলামে মদ পান হারাম।
এই বৈশ্বিক উদ্যোগের সঙ্গে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) অসংক্রামক ব্যাধি বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলিয়া নাহিদও রয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মদ সরাসরি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়, এটা ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এই প্রথমবারের মতো বিশ্বের গবেষকেরা এক সুরে বলছে, মদের কোনো গ্রহণযোগ্য মাত্রা নেই।’
গবেষকেরা বলছে, ১৫-৪৯ বছর বয়সী মানুষের ১০টি মৃত্যুর মধ্যে একটি ঘটে মদের কারণে। নিয়মিত মদ্যপান শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। মদে অভ্যস্ত মানুষ সহিংস হয় এবং অনেক সময় নিজের ক্ষতি করে। বিশ্বব্যাপী মানুষ কী পরিমাণ মদ পান করে, সেই হিসাব বের করতে গবেষকেরা ৬৯৪টি পূর্ববর্তী গবেষণা পর্যালোচনা করে। এছাড়া মদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নির্ণয়ের জন্য আরও ৫৯২টি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব পর্যালোচনা শেষে গবেষকেরা বলছে, ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্যান্সারে মৃত্যুর পেছনে প্রধান কারণ মদ্যপান।
২০১৬ সালের বৈশ্বিক তথ্যে দেখা গেছে, ২.২% নারী ও ৬.৮% পুরুষের অপরিণত বয়সে মৃত্যুর কারণ মূলত মদ্যপান। ১৫-৪৯ বছর বয়সীদের প্রধান মৃত্যুঝুঁকি ছিল মদসংশ্লিষ্ট কারণ। এছাড়া ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ২৭% নারী এবং ১৯% পুরুষ মারা যায় মদ্যপানসংশ্লিষ্ট ক্যান্সারের কারণে।
অর্থাৎ মদ বা অ্যালকোহল পানে ক্যান্সার সহ দেহে নানান রকমের মরনঘাতী রোগ দেখা দেয়।
পৃথিবীতে সবচেয়ে ক্ষতিকর মাদক কোনটি? এর উত্তরে বৃটেনের বিজ্ঞানীরা বলছে, অ্যালকোহল হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ মাদক। এটি হেরোইন, কোকেন কিংবা তামাক-এর চেয়েও ক্ষতিকর মাদক। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো সহ আরও অনেক দেশ আছে যেখানে মদ্যপান বৈধ। অন্যদিকে হেরোইন কিংবা কোকেনের সামান্য পরিমাণও কারও কাছে পাওয়া গেলে পুলিশি জেরায় তার অবস্থা একেবারে নাজেহাল। তবে বৃটিশ বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে, মদ্যপানের ফলে যে কেবল মদ্যপায়ীই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়, এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সামাজিক পর্যায় পর্যন্তও এবং এই ক্ষতির পরিমাণ হেরোইন কিংবা কোকেনের চেয়ে অনেক বেশি। বৃটেনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট সায়েন্টিফিক কমিটি অন ড্রাগস বা আইএসসিডি এবং ইউরোপীয়ান মনিটরিং সেন্টার ফর ড্রাগস অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডিকশন বা ইএমসিডিডিএ, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণাতে বের হয়ে এসেছে এই তথ্য।
বিজ্ঞানীরা এই গবেষণায় দেখার চেষ্টা করে যে সেবনকারীর জন্য এবং অপরের জন্য মাদক কতটুকু ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে সেবনকারীর ৯টি বিষয় এবং অপরের জন্য ৭টি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়। গবেষণা শেষে দেখা যায়, ১০০ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭২ নম্বর পেয়েছে অ্যালকোহল বা মদ। এরপর হেরোইন ৫৫ ও ক্র্যাক ৫৪ নম্বর পেয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। কোকেন এবং তামাকের অবস্থান পঞ্চম এবং ষষ্ঠ।
গবেষকদলের প্রধান প্রফেসর ডেভিড নাট বলে, “এটা বিশেষভাবে লক্ষ্য করার মত যে অ্যালকোহল এবং তামাকের মত বৈধ মাদক ক্ষতির দিক থেকে অনেক এগিয়ে। তার মানে অবৈধ মাদকের মত এসব বৈধ মাদকও কোন অংশেই কম ক্ষতিকর নয়।”
সুতরাং চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা সুস্পষ্ট যে, মদ্যপানের কোন ‘নিরাপদ সীমা’ বা ‘পরিমিত পরিমাণ’ বলে কিছুই নেই। আর তাই মদ্যপানের ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী।
একজন জার্মান চিকিৎসক বলেছে, “যারা মদ্যপানে অভ্যস্ত তারা ৪০ বছর বয়সে ৬০ বছরের বৃদ্ধের মতো অকর্মণ্য হয়ে পড়ে এবং তাদের শরীরের গঠন এত হাল্কা হয়ে যায় যে, ৬০ বছরের বৃদ্ধেরও তেমনটি হয় না।” যেসব শিরা ও ধমনীর মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে মদ্যপানের দরুণ সেগুলো শক্ত ও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দ্রুতগতিতে বার্ধক্য এগিয়ে আসতে থাকে।
যক্ষা রোগটি মদ্যপানেরই একটি বিশেষ পরিণতি। ইউরোপের শহরাঞ্চলে যক্ষার আধিক্যের কারণও অতিমাত্রা মদ্যপান। যখন থেকে ইউরোপে মদ্যপানের আধিক্য দেখা দিয়েছে, তখন থেকে সেখানে যক্ষার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সাধারণভাবে মদ্যপানের দ্বারা মানুষের গলদেশ এবং শ্বাসনালীরও প্রচুর ক্ষতি সাধিত হয়। ফলে স্বর মোটা হয়ে যায় এবং স্থায়ী কফ হয়ে থাকে, তারই ফলে শেষ পর্যন্ত যক্ষা রোগের সৃষ্টি হয়।
এছাড়াও সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত মদ বা অ্যালকোহল পানের মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগ হচ্ছে ভারনিক্স করসাকফ সিনড্রোম বা সাইকোসিস। এ রোগে রোগীর স্মৃতিশক্তি কমে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, রোগী উল্টোপাল্টা কথা বলে, আত্মীয়-স্বজনকে সন্দেহ করে, একা একা কথা বলে, শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে চলাফেরা করতে পারে না। মূলত অ্যালকোহল শরীরের ভিটামিন বি১ এর শোষণ কমিয়ে দেয় বলেই এমন হয়।
মদ বা অ্যালকোহল পানে যৌনশক্তি ধীরে ধীরে কমে যায়। পৌরষত্বের প্রধান হরমোন হলো টেস্টোস্টেরন। মদ বা অ্যালকোহল পানে পুরুষের রক্তে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে যায়। এই হরমোন কমে যায় বলে শারিরীক মেলা মেশায় পুরুষদের আগ্রহ কমে যায়। স্পার্মের গুণগত মান ও পরিমাণ দুটোই কমতে থাকে, ফলে পুরুষদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় এবং বংশপরম্পরায় মস্তিষ্কের বা অন্যান্য অংগের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে সন্তান হবার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
মদ বা অ্যালকোহল পানে নারীদের ও সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। তাদেরও শারিরীক মেলামেশার আগ্রহ কমতে থাকে। গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল পান করলে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে সন্তান ভূমিষ্ট হবার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।
অ্যালকোহলের প্রভাবে গর্ভজাত সন্তানের বুদ্ধি কম হয়, শারিরীক গঠন ব্যহত হয়। একে ‘ফিটাল অ্যালকোহল সিনড্রম’ বলে। তাছাড়া গর্ভের প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত মদ পানে গর্ভের সন্তানের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এসব কারণেই দেখা যায় বিশ্বের অমুসলিম দেশগুলোতে মদ পানের হার বেশি হওয়ায় তাদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কম।
এ ধরনের আরো বহুবিধ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি মদ্যপানের ফলে তৈরি হয়। আর তাই জেনে-বুঝে মুসলমানদের ক্ষতি সাধনের জন্য এই নিকৃষ্টতম অস্ত্রটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃতও হয়েছে। কিন্তু শত্রুপক্ষ এতে সফলতা লাভ করতে পারেনি।
যেমন ফ্রান্সের জনৈক বিশিষ্ট প-িত হেনরী তার লিখিত গ্রন্থ “খাওয়াতির ও সাওয়ানিহ ফিল ইসলাম” এ লিখেছে- “প্রাচ্যবাসীকে সমূলে উৎখাত করার জন্য সবচেয়ে মারত্মক অস্ত্র এবং মুসলমানদেরকে খতম করার জন্য নির্মিত দুধারী তলোয়ার ছিল এই শরাব (অ্যালকোহল)। আমরা আলজিরিয়ার বিরুদ্ধে এ অস্ত্রটি ব্যবহার করেছি। কিন্তু ইসলামী শরীয়ত আমাদের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আমাদের ব্যবহৃত অস্ত্রে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়নি; ফলে তাদের বংশ বেড়েই চলেছে। এরাও যদি আমাদের সেই উপঢৌকন গ্রহণ করে নিত, যেভাবে তাদের একটি বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠি তা গ্রহণ করে নিয়েছে, তাহলে তারাও আমাদের কাছে পদানত ও অপদস্ত হয়ে পড়তো। আজ যাদের ঘরে আমাদের সরবরাহকৃত শরাবের প্রবাহ বইছে, তারা আমাদের কাছে এতই নিকৃষ্ট ও পদদলিত হয়ে গিয়েছে যে, তারা মাথাটি পর্যন্ত তুলতে পারছে না।”
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
اِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ اَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ
অর্থ : “শয়তান শরাব ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি করতে চায়।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯১)
অথচ সেই ষড়যন্ত্রের জাল এখনো মুসলমানদের উপর বিস্তার করে রেখেছে কাফির-মুশরিকরা। সরাসরি মদ্যপানে অভ্যস্ত করতে পারেনি এমন মুসলমানদের কব্জা করার জন্য তাদের কূটচাল হচ্ছে বিভিন্ন মনলোভা মোড়কে কোমল পানীয়/ এনার্জি ড্রিংক। এ সমস্ত কোমল পানীয়তে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল ও বিষাক্ত ক্যামিকেল থাকায় এসব খেয়ে শিশু কিশোররা সহ উড়তি বয়সের তরুণরা নানান স্বাস্থ্য জটিলতা, কিডনি রোগ, পাকস্থলী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
জনৈক বৃটিশ আইনজ্ঞ ব্যান্টাম লিখে- “ইসলামী শরীয়তের অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এও একটি বৈশিষ্ট্য যে, এতে মদ্যপান নিষিদ্ধ। আমরা দেখেছি, আফ্রিকার লোকেরা যখন এর ব্যবহার শুরু করে তখন থেকেই তাদের বংশে ‘উন্মাদনা’ সংক্রমিত হতে শুরু করেছে। আর ইউরোপের যেসব লোক এই পদার্থটিতে চুমুক কষতে শুরু করেছে, তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিরও বিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। কাজেই আফ্রিকার লোকদের জন্য যেমন এর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন, তেমনি ইউরোপের লোকদের জন্যও এ জন্য কঠিন শাস্তির বিধান করা দরকার।”
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, অ্যালকোহলের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণই বেশি, আর তাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত তা হারাম ঘোষণা করেছে।
0 Comments:
Post a Comment