মেরুদণ্ড ও বক্ষপাঁজরের মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে মাউন বা নুত্বফা উৎপাদনের বিষয়টি বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। একটা সময় আসবে যখন বিজ্ঞানের আরো অগ্রগতি সাধিত হবে তখন বিজ্ঞান অপকটে এই বিষয়টি স্বীকার করে নিতে অবশ্যই বাধ্য হবে।

মেরুদণ্ড ও বক্ষপাঁজরের মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে মাউন বা নুত্বফা উৎপাদনের বিষয়টি বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। একটা সময় আসবে যখন বিজ্ঞানের আরো অগ্রগতি সাধিত হবে তখন বিজ্ঞান অপকটে এই বিষয়টি স্বীকার করে নিতে অবশ্যই বাধ্য হবে।

নাস্তিকদের আপত্তি ১ : মানুষের শুক্রানুউৎপন্ন হয় শূক্রাশয়(Testes)থেকে যা অন্ডথলির (Scrotum) ভেতর অবস্থিত। কিন্তু কুরান দাবী করে তা উৎপন্ন হয় মেরুদন্ড (backbone) এবং পাজরের হাড়ের (ribs) মধ্যস্থল থেকে (Quran 86:5-7)! এধরনের তথ্য কি আপনার কাছে বিজ্ঞানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে হয়?

নাস্তিকদের আপত্তি ২ : “মুসলিমদের দাবি, কুরানের আয়াত বীর্য উৎপন্ন হয় মেরুদন্ড (backbone) এবং পাজরের হাড়ের (ribs) মধ্যস্থল থেকে (Quran 86:5-7) প্রকৃতপক্ষে ÔTestesÕ  এর ভ্রুণ অবস্থার অবস্থান বোঝানো হয়েছে! কিন্তু প্রথমত, যেহেতু ভ্রুণ অবস্থায় বীর্য উৎপন্ন হয়না, তাই এমন ব্যাখ্যার কোন ভিত্তিই থাকে না। দ্বিতীয়ত, একটা Undescended testis কখনোই Ribs এবং Backbone এর মধ্যবর্তি অবস্থানে থাকে না! তবে এমন মিথ্যার অবতারনা কেন?

The testis develops in the lumbar region on the dorsal abdominal wall. Later they descend into the scrotum through the inguinal canal, which begins during the 2nd month of foetal life

নাস্তিকদের আপত্তি ৩ : “নিচের কোন আয়াতটি আল্লাহর থেকে আসলে সঠিক বোধ হত বলুন তো? 

১) অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে, সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে, যা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে।

২) অতএব, মানুষের দেখা উচিত কোন উৎস থেকে সে সৃজিত হয়েছে, সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত শুক্রানু (যা উৎপন্ন হয় পুরুষের শুক্রাশয় থেকে) এবং নারীর জড়ায়ুতে সংরক্ষিত ডিম্বানুর মিলনের মাধ্যমে। (Quran 86:5-7)

যদি আপনার উত্তর ২ নং হয় তবে আল্লাহকে Ôall knowingÕ (Quran 34:26বলার কোন কারন থাকে কি?”

খণ্ডন : মানুষের শুক্রাণু কখনোই শুক্রাশয়ে উৎপন্ন হয় না। বরং শুক্রাশয় শুক্রাণুর সঞ্চয়াগার। আর তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মানুষের শুক্রাণু শুক্রাশয়ে উৎপন্ন হয় মর্মে কোন আয়াত শরীফ বর্ণিত হয়নি। বরং পবিত্র কুরআন শরীফ (Quran 86:5-7)  উনার মধ্যে মেরুদ- ও বক্ষপাঁজরের মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে পানি বা নুত্বফা উৎপাদিত হওয়ার বর্ণনা রয়েছে, যা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই উৎপাদিত হয়।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَلْيَنظُرِ الْاِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ. خُلِقَ مِنْ مَّاءٍ دَافِقٍ. يَـخْرُجُ مِنْ بَۢيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ.

অর্থ : “অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃষ্টি হয়েছে। সে সৃষ্টি হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে। এটা উৎপাদিত হয় মেরুদ- ও বক্ষপাঁজরের মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে।” (পবিত্র সূরা ত্বারিক শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫-৭)

অত্র আয়াত শরীফত্রয় উনাদের বরাত দিয়ে নাস্তিকরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত مَاءٌ ‘মাউন’ শব্দ মুবারক উনার অর্থ তারা ‘শুক্রাণু’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। কিন্তু مَاءٌ ‘মাউন’ শব্দ মুবারক উনার সাথে কোন পুরুষবাচক বিশেষণ ব্যবহার করা হয়নি যে, যার কারণে এখানে مَاءٌ ‘মাউন’ শব্দ মুবারক উনার অর্থ ‘শুক্রাণু’ নিতে হবে। বরং এখানে مَاءٌ ‘মাউন’ শব্দ মুবারক পুরুষ ও মহিলা উভয়ের দিকেই সম্বন্ধ জ্ঞাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ جَاءَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ اِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ اِنَّ اللهَ لاَ يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ، فَهَلْ عَلَى الْمَرْاَةِ مِنْ غُسْلٍ اِذَا احْتَلَمَتْ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم اِذَا رَاَتِ الْمَاءَ ‏.‏ فَغَطَّتْ أُمُّ سَلَمَةَ ـ تَعْنِي وَجْهَهَا ـ وَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ وَتَحْتَلِمُ الْمَرْاَةُ قَالَ نَعَمْ تَرِبَتْ يَمِينُكِ فَبِمَ يُشْبِهُهَا وَلَدُهَا.‏‏

অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এসে বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি হক্ব কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। মহিলাদের ইহতিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে কি গোসল করতে হবে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ, যখন সে নুতফা দেখতে পাবে। তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম তিনি (লজ্জায়) উনার মুখ মুবারক ঢেকে নিয়ে বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহিলাদেরও ইহতিলাম হয় কি?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ, (বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন) তোমার ডান হাতে মাটি পড়ুক! (তা না হলে) তাদের সন্তান মায়ের আকৃতি পায় কিভাবে?” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

আর তাই তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে-

{خُلِقَ مِنْ مَاءٍ دَافِقٍ} يعني: الـمني؛ يـخرج دَفقًا من الرجل ومن الـمرأة، فيتولد منهما الولد بإذن الله، عز وجل

অর্থ : “ خُلِقَ مِنْ مَاءٍ دَافِقٍ মানে বীর্য। এটি বের হয় পুরুষ ও মহিলাদের থেকে। উভয়ের বীর্যের সংমিশ্রণে মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা মুবারক-এ শিশুর জন্ম হয়।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর) 

عن ابن عباس: { يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ } صلب الرجل وترائب المرأة، أصفر رقيق، لا يكون الولد إلا منهما.

অর্থ : “ ‘ছুল্ব্’ হচ্ছে পুরুষের থেকে আর ‘তারায়িব’ মহিলাদের থেকে। যা হলদে পাতলা। উভয়ের সংমিশ্রণ ব্যতীত সন্তান হয় না।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর) 

যেহেতু গণ্ডমূর্খ নাস্তিকরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে مَاءٌ ‘মাউন’ শব্দ মুবারক উনার অর্থ ‘শুক্রাণু’ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাই তারা বলছে, মানুষের শুক্রাণু উৎপন্ন হয় শুক্রাশয় থেকে যা অ-থলির ভেতর অবস্থিত। তাহলে মহিলাদের থেকে উৎপন্ন مَاءٌ ‘মাউন’ কোথায় উৎপন্ন হয় আর কোন থলিতে থাকে? তার ব্যাখ্যা কি তাদের কাছে আদৌ আছে? আর মানুষের জন্মে কি শুধু পিতারই ভূমিকা রয়েছে? এর মাধ্যমে নাস্তিকরা মূলতঃ মায়ের ভূমিকাকে অস্বীকার করছে।

বস্তুত مَاءٌ ‘মাউন’ শুক্রাশয় থেকে উৎপন্ন হয় না, বরং পুরুষের ক্ষেত্রে صُلْبٌ ‘ছুলব্’ অর্থাৎ মেরুদ- থেকে مَاءٌ ‘মাউন’ উৎপন্ন হয়ে শুক্রাশয়ে জমা হয়। আর মহিলাদের ক্ষেত্রে تَرَائِبٌ ‘তারায়িব’ অর্থাৎ বক্ষপাঁজর থেকে উৎপন্ন হয়।

আর তাই صُلْبٌ ‘ছুলব্’ ও تَرَائِبٌ ‘তারায়িব’ শব্দ মুবারক উনাদের ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে-

ثني عبد الله بن النُّعمان الـحُدَانيّ أنه سمع عكرِمة يقول:(يَـخْرُجُ مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ) قال: صُلْب الرجل، وترائب الـمرأة.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ বিন নু’মান হুদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে শুনেছেন, يَـخْرُجُ مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ এখানে ‘ছুল্ব্’ পুরুষের ক্ষেত্রে আর ‘তারায়িব’ মহিলাদের ক্ষেত্রে।” (তাফসীরে জারীর তাবারী) 

يَـخْرُجُ صفة اخرى لـماء مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ صلب الرجل أى ظهره قال فى الصراح الصلب الشديد باعتبار الشدة سـمى الظهر صلبا وَالتَّرائِبِ ط أى ترائب الـمرأة فى القاموس الترائب عظام الصدر أو ما ولى الترقوتين أو ما بين الثديين والترقوتين أو لربع أضلاع من يـمين الصدر واربع من يسرته أو لليدان والرجلان والعينان أو موضع القلادة

অর্থ : “‘এটা নির্গত হয় মেরুদ- ও বক্ষপাঁজরের মধ্য থেকে’ - এখানে ‘ছুল্ব্’ পুরুষের ক্ষেত্রে যার অর্থ মেরুদ-। সুরাহ তার অভিধানে লিখেছেন, ‘ছুল্ব্’ অর্থ সুদৃঢ়। মেরুদ-কে ‘ছুল্ব্’ বলা হয় এই দৃঢ়তার কারণেই। আর ‘তারায়িব’ মহিলাদের ক্ষেত্রে। ‘কামুস’ অভিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তারায়িব’ অর্থ বক্ষাস্থি অথবা ওই সব হাড় যেগুলো মিলিত হয়েছে কণ্ঠদেশের অস্থির সঙ্গে। কিংবা ওই হাড়, যা অবস্থিত কণ্ঠের হাড় ও বুকের মাঝখানে, বা বুকের দু’পাশের চারটি করে পঞ্জরাস্থি। অথবা দুই হাত, দুই পা ও চক্ষুযুগল। কিংবা হাসুলি ব্যবহৃত হওয়ার স্থান।” (তাফসীরে মাযহারী)

عن ابن عباس(الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ) قال: الترائب: موضع القِلادة .

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তারায়িব’ হচ্ছে গলার হার লাগোনার স্থান।” (তাফসীরে জারীর তাবারী)

عن أبي رجاء، قال: سُئل عكرِمة عن الترائب، فقال: هذه، ووضع يده على صدره بين ثدييه.

অর্থ : “হযরত আবূ রাযা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ‘তারায়িব’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে উত্তরে বলেন, এখানে। উনার হাত দু’বক্ষের মাঝখানে রাখেন।” (তাফসীরে জারীর তাবারী)

সুতরাং صُلْبٌ ‘ছুলব্’ ও تَرَائِبٌ ‘তারায়িব’ শব্দ মুবারক উনাদের ব্যাখ্যায় বুঝা যাচ্ছে যে, صُلْبٌ ‘ছুলব্’ পুরুষের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ মেরুদ- আর تَرَائِبٌ ‘তারায়িব’ মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ বক্ষাস্থি বা উরঃফলক (sternum)।

পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই বলা হচ্ছে-

مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ

অর্থ : “মেরুদ- ও বক্ষপাঁজরের মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে।”

এখানে বলা হয়নি-

مِنْ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ

অর্থ : “মেরুদণ্ড ও বক্ষপাঁজর থেকে।”

আর তাই অত্র আয়াত শরীফ দ্বারা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে বক্ষাস্থি ও মেরুদ- উভয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চল থেকে مَاءٌ ‘মাউন’ উৎপাদন হওয়ার বিষয়টি বুঝানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে-

يخرج من بين الصلب والترائب (من بين صلب الرجل وترائب المرأة وهي عظام صدرها ولو صح أن النطفة تتولد من فضل الهضم الرابع وتنفصل عن جميع الأعضاء حتى تستعد لأن يتولد منها مثل تلك الأعضاء ومقرها عروق ملتف بعضها بالبعض عند البيضتين فلا شك أن الدماغ أعظم الأعضاء معونة في توليدها ولذلك تشبهه ويسرع الإفراط في الجماع بالضعف فيه ولو خليفة وهو النخاع وهو في الصلب وشعب كثيرة نازلة إلى الترائب وهما أقرب إلى أوعية المني فلذلك خصا بالذكر وقرىء الصلب بفتحتين و الصلب بضمتين وفيه لغة رابعة وهي صالب

অর্থ : “চতুর্থ পর্যায়ের পরিপাকের পর সর্বোন্নত স্তরের অণু থেকে প্রস্তুত হয় নুত্বফা, নির্গত হয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো থেকে খিঁচে-খিঁচে। সে কারণেই এর দ্বারা পরিগঠিত হয় অনুরূপ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। অ-কোষ দু’টোর সূক্ষ তন্ত্রীসমূহ নুত্বফার অবস্থানস্থল। নুত্বফা সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে মস্তিষ্ক। তাই অত্যধিক নির্জনবাস ডেকে আনে মস্তিষ্ক-দৌর্বল্য। আর দ্বিতীয় দফায় মগজ নুত্বফা সৃষ্টিতে সময় নেয়। তখন তার অবস্থানস্থল হয় মেরুদণ্ড। তাই এখানে বলা হয়েছে - এটা নির্গত হয় মেরুদ- ও পঞ্জরাস্থির মধ্যভাগ থেকে।” (তাফসীরে বায়যাবী) 

মানুষের শরীরের এমন কিছু থলি আছে যেখানে বিভিন্ন তরল সঞ্চিত বা জমা হয়। কিন্তু সঞ্চিত বা জমা হওয়ার কারণে উক্ত থলিকে সংশ্লিষ্ট তরলের উৎপাদন স্থল বলা হয় না। যেমন-

পিত্ত : “পিত্ত এক প্রকার দেহাভ্যন্তরীণ ক্ষরণ যা তৈল বা স্নেহ জাতীয় খাদ্যের পরিপাকে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর বর্ণ পীতাভ-সবুজ এবং স্বাদ তিক্ত। পিত্ত দেহের একটি প্রধান অঙ্গ যকৃতে উৎপন্ন হয়, অতঃপর পিত্তথলীতে ঘনীভূত হয় ও সঞ্চিত থাকে। পিত্তথলি থেকে এটি পিত্ত নালীর মধ্য দিয়ে পরিপাকতন্ত্রের ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে এবং খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে।” (https://bn.wikipedia.org/wiki/পিত্ত)

মূত্র বা প্রস্রাব (ছোট ইস্তিঞ্জা) : “নেফ্রনের বিভিন্ন অংশের সক্রিয়তার ফলে দেহের পক্ষে ক্ষতিকারক অথবা অপ্রয়োজনীয় জৈব ও অজৈব পদার্থ দিয়ে তৈরী স্বল্প অম্ল-ধর্মী ও সামান্য হলুদ বা বর্ণহীন তরল তৈরী হয়ে গোবিনী দিয়ে গিয়ে সাময়িকভাবে মূত্রাশয়ে সঞ্চিত হয় এবং পরে মূত্রনালী দিয়ে দেহের বাইরে নির্গত হয় তাকে মূত্র বলে।” (Dorland's Medical Dictionary)

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, পিত্ত ও মূত্র যদিও যথাক্রমে পিত্তথলী ও মূত্রাশয়ে সঞ্চিত হয় কিন্তু পিত্তথলী ও মূত্রাশয় যথাক্রমে পিত্ত ও মূত্রের উৎপাদন স্থল নয়। বরং পিত্ত উৎপাদন হয় যকৃতে আর মূত্র বৃক্কে। একইভাবে পুরুষের দেহে مَاءٌ ‘মাউন’ صُلْبٌ ‘ছুলব্’ অর্থাৎ মেরুদ- থেকে উৎপন্ন হয়ে শুক্রাশয় বা অ-থলিতে সঞ্চিত ও পরিপুষ্ট হয় বলে শুক্রাশয় বা অ-থলিকে কোন ভাবেই শুক্রাণুর উৎপাদন স্থল বলা যাবে না। পুরুষের দেহে যেভাবে مَاءٌ ‘মাউন’ উৎপাদিত হয় ঠিক সেভাবে মহিলাদের দেহেও مَاءٌ ‘মাউন’ উৎপাদিত হয়, তবে তা صُلْبٌ ‘ছুলব্’ অর্থাৎ মেরুদ- থেকে নয় বরং تَرَائِبٌ ‘তারায়িব’ অর্থাৎ বক্ষপাঁজর থেকে। আর মহিলাদের উক্ত مَاءٌ ‘মাউন’ উৎপাদিত হয়ে কোন থলিতে জমা হয় না।

শিশুতুল্য বিজ্ঞান পিত্ত ও মূত্র উৎপাদনের বিষয়টি আবিষ্কার করতে পারলেও এখন পর্যন্ত নুত্বফা উৎপাদনের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেনি। কিন্তু শিশুতুল্য বিজ্ঞান যা জানে না তার দায় বিজ্ঞানের। নাস্তিকরা যা বুঝে না তার ব্যর্থতা নাস্তিকদের। অথচ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রকাশ করে পূর্ণ জ্ঞান-প্রযুক্তি-কৌশল। তাই দায় বা ব্যর্থতা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নেই। এ সমস্ত নেতিবাচক বিষয় থেকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সম্পূর্ণ মুক্ত।

মানুষ মুখ দ্বারা খাদ্য গ্রহণ করে। অতঃপর পাচন ক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তা পাকস্থলীতেই জমা থাকে। ভক্ষিত খাদ্য-দ্রব্য পাকস্থলীতে জমা থাকে বলে কোন নাস্তিককে আজ পর্যন্ত বলতে শোনা গেল না পাকস্থলীতে খাবার উৎপাদন হয়। কিন্তু তারাই আবার বলছে শুক্রাশয়ে শুক্রাণু উৎপাদন হয়। কি হাস্যকর ব্যাপার! 

এছাড়াও সাধারণভাবে সন্তান জন্মগ্রহণ করে মাতৃগর্ভে। কিন্তু মাতৃগর্ভ ছাড়া মায়ের উদরের যেকোন স্থানেও সন্তান জন্মলাভ করতে পারে। নিচের লিঙ্ক দ্রষ্টব্য। 

http://news.bbc.co.uk/2/hi/health/2932608.stm

https://www.news24.com/SouthAfrica/News/SAs-miracle-liver-baby-20030523

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَخْلُقُكُمْ فِي بُطُوْنِ أُمَّهَاتِكُمْ

অর্থ : “তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মায়ের উদরে।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি بُطُوْنِ ‘বুত্বুন’ শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন যার অর্থ উদর (ধনফড়সবহ)। আর উদর বলতে বুকের নিচের পুরো অংশটুকুকেই বুঝায়, যেখানে পাকস্থলী, গর্ভাশয়, মূত্রাশয়, মলাশয় ইত্যাদি রয়েছে।

তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি মৌমাছির পাকস্থলী বুঝাতেও بُطُوْنِ ‘বুত্বুন’ শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

يَـخْرُ‌جُ مِنْ بُطُوْنِـهَا شَرَ‌ابٌ مُّـخْتَلِفٌ اَلْوَانُهُ

অর্থ : “তার (মৌমাছির) পেট হতে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯)

যেহেতু সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন (বরং তিনিই সৃষ্টি করেন) যে, মানুষের মাতৃগর্ভ বা গর্ভাশয়ের বাইরেও বাচ্চা জন্মলাভ করবে তাই তিনি কখনোই মাতৃগর্ভ (ড়িসন) এর আরবী প্রতিশব্দ رحم শব্দটি ব্যবহার করেনি।

বরং তিনি ব্যবহার করেছেন تَـحْمِلُ كُلُّ اُنْثٰى যার অর্থ ‘প্রত্যেক নারী যা ধারণ করে’।

এই বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَللهُ يَعْلَمُ مَا تَـحْمِلُ كُلُّ اُنْثٰى وَمَا تَغِيْضُ الْاَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ ۖ وَكُلُّ شَيْءٍ عِندَهُ بِـمِقْدَارٍ

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন প্রত্যেক নারী যা ধারণ করে এবং যা সঙ্কুচিত ও বর্ধিত হয়। এবং উনার কাছে প্রত্যেক বস্তুরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে।” (পবিত্র সূরা র’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮) 

অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত প্রতিটি বর্ণনাই ধ্রুব সত্য। কিন্তু বিজ্ঞান এখনো শিশুতুল্য আর নাস্তিকরা গণ্ডমূর্খ। তাই তাদের অপূর্ণতাকে ঢাকার দায় কখনোই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম নিবে না। বরং তাদেরকে তাদের অপরগতা স্বীকার করতে হবে।

যেহেতু পুরুষের ক্ষেত্রে মাউন উৎপাদনের পরে একটি থলিতে জমা হয় আর মহিলাদের ক্ষেত্রে উৎপাদনের পরে কোন থলিতে জমা হয় না। তাই চরম ও পরম হিকমতওয়ালা মহান আল্লাহ পাক তিনি উৎপাদন স্থলের বর্ণনা দিয়েছেন তবে সঞ্চিত বা জমাকৃত স্থানের কোন বর্ণনা দেননি। যদি সঞ্চিত বা জমাকৃত স্থানটিই প্রকৃতপক্ষে উৎপাদন স্থল হতো তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরিই বর্ণনা দিতেন।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ مَنْ يَضْمَنْ لِىْ مَا بَيْنَ لَـحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ اَضْمَنْ لَهُ الْـجَنَّةَ‏.

অর্থ : “হযরত সাহ্ল ইব্নে সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দু’উরুর মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান)-এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার।” (বুখারী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৬৪৭৪)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ না উল্লেখ করে বরং সরাসরি بَيْنَ رِجْلَيْهِ উল্লেখ করতে পারতেন। যেহেতু مَّاءٍ دَافِقٍ ‘সবেগে স্খলিত পানি’ শুক্রাশয়ে উৎপন্ন হয় না এবং তা শুধুমাত্র শুক্রাণু নয় বরং পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মেরুদ- ও বক্ষাস্থির মধ্যভাগ থেকে উৎপন্ন মাউন তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি بَيْنَ رِجْلَيْهِ উল্লেখ না করে বরং بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ উল্লেখ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, শুক্রাণু শুক্রাশয়ে উৎপন্ন হয় না বরং মেরুদ- এবং বক্ষপাঁজরের মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে পুরুষ ও মহিলাদের মাউন উৎপন্ন হয়। যা তথাকথিত শিশু তুল্য বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। আর গণ্ড-মূর্খ নাস্তিকরা যেহেতু ইসলাম বিদ্বেষী তাই তারাও বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না।

কিন্তু গণ্ড-মূর্খ নাস্তিকদের বুঝাতে গিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ (abdomen)| উনার কোন ধরণের অপব্যাখ্যা দাঁড় করানো মুসলমানের উচিত নয়।

মানব শরীরে কিছু অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি যেমন পিটুইটারি গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি, প্যারা-থাইরয়েড গ্রন্থি ইত্যাদি যারা বিভিন্ন হরমোন বা প্রাণরস তৈরি করে। এই হরমোন শরীরে পরিবহনের জন্য কোন নালী নেই। বরং ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই হরমোন রক্তের প্রবাহে নির্দিষ্ট অঙ্গে পৌঁছায়।

কোন মুসলমান, বিজ্ঞানের এই কথার কোন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা কারণ খুঁজতে যায়নি বা এ নিয়ে কোন ওজর-আপত্তিও তুলেনি। শুধু বিজ্ঞান বলেছে আর বিশ্বাস করে নিয়েছে। কিন্তু কেন? মুসলমানরা বিনা দলীলে কোন প্রকার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তলব ব্যতিরেকেই এই ধরণের বক্তব্যকে স্বীকার করে নিতে পারে! অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মানব শরীরে মাউন উৎপত্তির বিষয়ে নাস্তিকরা যখন আপত্তি তুললো তখন সেই মুসলমানই নানান যুক্তি-তর্কের অবতারণা করে বিজ্ঞানকে সমুচ্চে ধারণের চেষ্টায় ব্রতী হয়। নাঊযুবিল্লাহ!

বস্তুত বিজ্ঞান হচ্ছে শিশু তুল্য। সে এখনো হামাগুড়ি দিচ্ছে। তার অনেক বিষয়েই এখনো কোন জ্ঞানই নেই। আর তাই টেনিসন বলেছে-

“বিজ্ঞান এগিয়ে চলে সত্য, কিন্তু খুব ধীরে এগোয়। একটা জায়গা থেকে আর একটা জায়গায় হামাগুড়ি দিয়ে চলে।”

মেরুদণ্ড ও বক্ষপাঁজরের মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে মাউন বা নুত্বফা উৎপাদনের বিষয়টি বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। একটা সময় আসবে যখন বিজ্ঞানের আরো অগ্রগতি সাধিত হবে তখন বিজ্ঞান অপকটে এই বিষয়টি স্বীকার করে নিতে অবশ্যই বাধ্য হবে। কিন্তু তাই বলে এই বিষয়টি বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, বরং সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা প্রথমে বিজ্ঞান বুঝতে না পারলেও পরবর্তীতে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে।

আর তাই বিজ্ঞান দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে বিশ্লেষণ করা নিতান্তই মূর্খতার শামিল। বরং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অকাট্ট ও অভ্রান্ত দলীলের আলোকে বিজ্ঞান গবেষণা করতে হবে। তবেই বিজ্ঞান হবে সমৃদ্ধশীল এবং এর মাধ্যম দিয়ে বিজ্ঞান সর্বোচ্চ সোপানে উপনীত হতে পারবে।


0 Comments: