গর্ভ ধারণের সময়কাল ও দুগ্ধপানের সময়কাল একত্রিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, আলাদাভাবে গর্ভ ধারণের সময়কাল ও দুগ্ধপানের সময়কাল বর্ণিত হয়নি।

গর্ভ ধারণের সময়কাল ও দুগ্ধপানের সময়কাল একত্রিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, আলাদাভাবে গর্ভ ধারণের সময়কাল ও দুগ্ধপানের সময়কাল বর্ণিত হয়নি।

 নাস্তিকদের আপত্তি ৬ : "Quran 46:15 অনুসারে সন্তান গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে সময় লাগে ৩০ মাস আর Quran 31:14 অনুসারে স্তন্য ছাড়তে লাগে ২৪ মাস, অর্থাৎ শূধুমাত্র গর্ভে ধারনে প্রয়োজন পড়ছে ৬ মাস! মুসলিমদের দাবি ‘যেহেতু ৬ মাস বয়স হলেই একটি ফিটাস ভূমিষ্ট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে এখানে তাই বোঝানো হচ্ছে’! কিন্তু উক্ত আয়াতে স্বাভাবিক গর্ভধারনে যে ৬ মাস লাগছে তাই দেখিয়েছে (অর্থাৎ এখানে সর্বনিন্ম সময়ের উল্লেখ হচ্ছে না)! তাহলে এধরনের গোজামিল খোজার অর্থ কি?

Nowadays with advanced neonatal facilities it is just possible for a small proportion of babies born at 24 weeks' (6 months) gestation to survive, albeit with severe disabilities in many cases. In Muhammed's day no babies could have survived at so premature an age, and the Qur'an is wildly inaccurate about the duration of a normal pregnancy."

খণ্ডন : মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَوَصَّيْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ اِحْسَانًا. حَـمَلَتْهُ اُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا. وَحَـمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُوْنَ شَهْرًا. 

অর্থ : “আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার দুগ্ধপান ছাড়াতে লেগেছে ত্রিশ মাস।” (পবিত্র সূরা আহক্বাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে গর্ভ ধারণের সময়কাল ও দুগ্ধপানের সময়কাল একত্রিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, আলাদাভাবে গর্ভ ধারণের সময়কাল ও দুগ্ধপানের সময়কাল বর্ণিত হয়নি।

তবে অন্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুগ্ধপানের সময়কাল নির্ধারণ করে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَوَصَّيْنَا الْاِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَـمَلَتْهُ اُمُّهُ وَهْنًا عَلٰى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ

অর্থ : “আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুগ্ধপান ছাড়ানো দু বছরে হয়।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪)

এই আয়াত শরীফ দ্বারাও সুনির্ধারিতভাবে দুগ্ধপানের সময়কাল বর্ণিত হয়নি বরং এখানে বলা হয়েছে দুগ্ধপান ছাড়ানো হয় দু’বছরে। অর্থাৎ দু’বছরের আগে দুগ্ধপান ছাড়ানো যাবে কিনা কিংবা দু’বছরের বেশি পান করানো যাবে কিনা তা সুস্পষ্ট করে বর্ণনা দেয়া হয়নি। 

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে দুগ্ধপানের সময়সীমা সম্পর্কে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা মুবারক করেন-

وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ اَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ. لِمَنْ اَرَادَ اَنْ يُـتِمَّ الرَّضَاعَةَ.

অর্থ : “আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩৩)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত كَامِلَيْنِ ‘কামিলাইন’ শব্দ মুবারক দ্বারা মূলত দুগ্ধপানের সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও সন্তানের দু’বছরের মধ্যেই পিতা-মাতা নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শক্রমে দুগ্ধপান ছাড়িয়ে নিলেও যেহেতু পিতা-মাতার কোন পাপ নেই, যা এই আয়াত শরীফ উনার শেষাংশে বর্ণিত আছে-

فَاِنْ اَرَادَا فِصَالًا عَنْ تَرَاضٍ مِّنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا.

অর্থ : “তারপর যদি পিতা-মাতা ইচ্ছা করে, তাহলে দু’বছরের ভিতরেই নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শক্রমে দুগ্ধপান ছাড়িয়ে দিতে পারে, তাতে তাদের কোন পাপ নেই।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩৩)

তাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, দুগ্ধপানের সর্বোচ্চ সময়সীমা দু’বছর। তবে পিতা-মাতা নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শক্রমে দুগ্ধপান আগেও ছাড়িয়ে দিতে পারবে কিন্তু ২ বছর বা ২৪ মাসের বেশি দুগ্ধপান করাতে পারবে না।

তাহলে গর্ভধারণেরও নিশ্চয়ই একটি সময়সীমা অর্থাৎ সর্বনি¤œ সময়সীমা ও সর্বোচ্চ সময়সীমা রয়েছে। এই বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَللهُ يَعْلَمُ مَا تَـحْمِلُ كُلُّ أُنثٰى وَمَا تَغِيْضُ الْاَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ ۖ وَكُلُّ شَيْءٍ عِندَهُ بِـمِقْدَارٍ

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন প্রত্যেক নারী যা ধারণ করে এবং যা সঙ্কুচিত ও বর্ধিত হয়। এবং উনার কাছে প্রত্যেক বস্তুরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে।” (পবিত্র সূরা র’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮) 

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে غِيْضُ الْاَرْحَامُ ‘গিদুল আরহাম’ শব্দ মুবারক দ্বারা ৯ মাসের কম গর্ভাবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর زْدَادُ ‘যিয়াদাত’ শব্দ মুবারক দ্বারা ৯ মাসের অধিক গর্ভাবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

যেহেতু দুগ্ধপানের সর্বোচ্চ সময়সীমা হচ্ছে দু’বছর (২৪ মাস), আর গর্ভে ধারণ করতে ও দুগ্ধপান ছাড়াতে সময় লাগে ৩০ মাস। তাই সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র সূরা আহক্বাফ শরীফ উনার ১৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন, গর্ভে ধারণের সর্বনিম্ন সময়সীমা হচ্ছে ৬ মাস। কেননা, পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২৩৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে দুগ্ধপানের সর্বোচ্চ সময়কাল পূর্ণ দু’বছর নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং এখানে (পবিত্র সূরা আহক্বাফ শরীফ উনার ১৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ) গর্ভধারণ ও দুগ্ধপান উভয়ের সময়কাল বর্ণিত হয়েছে ৩০ মাস। অতএব দুগ্ধপানের দু’বছর (২৪ মাস) বাদ দিলে গর্ভধারণের জন্য ৬ মাসই অবশিষ্ট থাকে। সুতরাং এটিই হলো গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময়কাল।

আবার রঈসুল মুফাসসীর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন-

إذا حملت تسعة أشهر أرضعت إحدى وعشرين شهرا، وإن حملت ستة أشهر أرضعت أربعة وعشرين شهرا.

অর্থ : “যদি গর্ভকাল ৯ মাস হয় তাহলে দুগ্ধপান করবে ২১ মাস আর যদি গর্ভকাল ৬ মাস হয় তাহলে দুগ্ধপান করবে ২৪ মাস।”

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, দুগ্ধপানের সময়কাল ২৪ মাস বা দু’বছরের অধিক হতে পারে না, একইভাবে গর্ভকালের সর্বনিস্ন সময়সীমা হচ্ছে ৬ মাস।

এই বিষয়টি ছকের মাধ্যমে নিম্নে দেখানো হলো-

M‡f© aviY Kvj

M‡f© aviY I `y»cv‡bi †gvU mgqKvj

`y»cvb Kvj

me©wb¤œ mgqmxgv

6 gvm

M‡f© aviY I `y»cvb GKwÎZfv‡e 30 gvm

m‡e©v”P mgqKvj

24 gvm

m‡e©v”P mgqKvj

9 gvm

me©wb¤œ mgqmxgv

21 gvm



এ বিষয়ে (গর্ভকালের সর্বনিম্ন সময়সীমা ৬ মাস) সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহাস সালাম উনার খিলাফতকালে জনৈক মহিলার গর্ভ থেকে ৬ মাসে সন্তান ভূমিষ্ট হয়ে গেলে তিনি একে অবৈধ গর্ভ সাব্যস্ত করে শাস্তির আদেশ জারী করেন। কেননা, সাধারণ নিয়ম ছিল ৯ মাস আর সর্বনিম্ন ৭ মাসে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি এই সংবাদ অবগত হয়ে খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহাস সালাম উনাকে শাস্তি কার্যকর করতে বারণ করেন এবং পবিত্র সূরা আহক্বাফ শরীফ উনার ১৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২৩৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মাধ্যমে প্রমাণ দেখান যে, গর্ভকালের সর্বনিম্ন সময়সীমা হচ্ছে ৬ মাস। খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার যুক্তি প্রমাণ গ্রহণ করে শাস্তির আদেশ প্রত্যাহার করে নেন।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ উনার ১৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ‘সন্তানের স্তন্য ছাড়তে লাগে ২৪ মাস’ - এ ধরনের কোন বর্ণনা প্রদান করা হয়নি, যা গণ্ডমূর্খ নাস্তিকরা উদ্ধৃত করেছে। বরং অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যা পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২৩৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এই ২৪ মাসকে দুগ্ধপানের সর্বোচ্চ সময়সীমা বুঝানো হয়েছে। যেহেতু দুগ্ধপানের সর্বোচ্চ সময়সীমা হচ্ছে ২৪ মাস। তাই পবিত্র সূরা আহক্বাফ শরীফ উনার ১৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মাণ হয় যে, গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময়সীমা হচ্ছে ৬ মাস। অর্থাৎ প্রত্যেকটি বিষয়ই সুস্পষ্ট, এখানে কোন ধরনের গোজামিলের অস্তিত্বই নেই।

যেহেতু নাস্তিকরা হচ্ছে চরম পর্যায়ের মূর্খ ও চরম ইসলাম বিদ্বেষী। তাই তারা তাদের বিদ্বেষী ও ছিদ্রেন্বষী অন্তর দিয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করার ব্যর্থ চেষ্টা করে থাকে। এদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

هُوَ الَّذِيْ اَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ اٰيَاتٌ مُّـحْكَمَاتٌ هُنَّ اُمُّ الْكِتَابِ وَاُخَرُ مُتَشَابِـهَاتٌ ۖ فَاَمَّا الَّذِيْنَ فِي قُلُوْبِـهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيْلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيْلَهُ اِلَّا اللهُ ۗ وَالرَّاسِخُوْنَ فِي الْعِلْمِ يَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّا اُوْلُو الْاَلْبَابِ ◌

 অর্থ : “তিনিই আপনার প্রতি কিতাব মুবারক নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত শরীফ রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাব মুবারক উনার আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, উনারা বলেন, আমরা উনার প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের বর তা‘য়ালা উনার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্ন যারা উনারা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭) 


0 Comments: