মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবীতে উনার নির্ধারিত পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটান। যখন যেখানে যেভাবে ইচ্ছা মুবারক করেন তখন সেখানে সেভাবে বৃষ্টিপাত ঘটান। ফলে কোথাও বন্যা হতে পারে কিংবা কোথাও খরা হতে পারে কিংবা কোথাও স্বাভাবিক থাকতে পারে। এমনকি মরু অঞ্চলেও বন্যা হতে পারে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবীতে উনার নির্ধারিত পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটান। যখন যেখানে যেভাবে ইচ্ছা মুবারক করেন তখন সেখানে সেভাবে বৃষ্টিপাত ঘটান। ফলে কোথাও বন্যা হতে পারে কিংবা কোথাও খরা হতে পারে কিংবা কোথাও স্বাভাবিক থাকতে পারে। এমনকি মরু অঞ্চলেও বন্যা হতে পারে। 

 নাস্তিকদের আপত্তি ১৩ : Quran 43:11  অনুসারে আল্লাহ পৃথিবিতে পরিমিত পরিমান বৃষ্টিপাত ঘটান! তাহলে আপনি কিভাবে বন্যা হওয়ার বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করবেন? এটা কি এই নয় যে, বৃষ্টিপাত বিহিন মরু অঞ্চলে থাকার ফলে কুরান রচয়িতার প্রবল ধরনের ধ্বংসাত্মক বৃষ্টিপাত সম্বন্ধে কোন ধারনাই ছিলো না?

খণ্ডণ : নাস্তিকদের আপত্তি থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, উল্লেখিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে “পরিমিত পরিমাণ” অর্থবোধক আরবী قَدَرٍ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হলেও উক্ত আরবী শব্দ মুবারক ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক। কেননা “পরিমিত পরিমাণ” বিষয়টিই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কোন বিষয়ের প্রকৃত “পরিমিত পরিমাণ” কতটুকু? সেটা কে নির্ধারণ করে বা করা হয়েছে? সেটা সর্বাবস্থায় আদর্শ কিনা? কিংবা অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিবর্তনশীল কিনা? ইত্যাদি নানান ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের অবকাশ রয়েছে।

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالَّذِي نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَاَنْشَرْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا ۚ كَذٰلِكَ تُـخْرَجُوْنَ.

অর্থ : “আর যিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন নির্ধারিত পরিমাণ, তারপর তদ্দারা মৃত ভূখ-কে সঞ্জীবিত করি। তোমরা এভাবে উত্থিত হবে।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِى الْاَرْضِ  ۖ  وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ بِهٖ لَقَادِرُوْنَ.

অর্থ : “আর আমি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকি নির্ধারিত পরিমাণ, তারপর আমি তাকে মাটিতে সংরক্ষণ করি। আর নিঃসন্দেহে আমি তা সরিয়ে নিতেও সক্ষম।” (পবিত্র সূরা মু’মিনূন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)

অত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে বর্ণিত قَدَرٍ শব্দ মুবারক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আরো ৫ খানা আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, উক্ত শব্দ মুবারক উনার অর্থ “পরিমিত পরিমাণ” গ্রহণ করে নাস্তিকরা নিজেরাই বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। এখানে মুসলমানদের বিভ্রান্ত হওয়ার কিছুই নেই। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন আবার তিনিই বন্যা/খরা প্রদান করেন।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَفَرَاَيْتُمُ الْمَاءَ الَّذِىْ تَشْرَبُوْنَ. اَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَـحْنُ الْمُنْزِلُوْنَ.

অর্থ : “তোমরা যে পানি পান করো, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরাই কি তা মেঘ থেকে নামিয়ে আনো, না আমি বর্ষণ করি?” (পবিত্র সূরা ওয়াক্বিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৮-৬৯)

وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِهٖ فَلَبِثَ فِيْهِمْ اَلْفَ سَنَةٍ اِلَّا خَـمْسِيْنَ عَامًا فَاَخَذَهُمُ الطُّوْفَانُ وَهُمْ ظَالِمُوْنَ.

অর্থ : “আমি হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। তিনি তাদের মধ্যে ৯৫০ বছর অবস্থান মুবারক করেছিলেন। অতঃপর তাদেরকে মহাপ্লাবণ গ্রাস করেছিল। তারা ছিল পাপী।” (পবিত্র সূরা আনকাবূত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪)

قَدْ كَانَ لِسَبَإٍ فِىْ مَسْكَنِهِمْ اٰيَةٌ  ۖ جَنَّتَانِ عَنْ يَّـمِيْنٍ وَشِـمَالٍ  ۖ  كُلُوْا مِن رِّزْقِ رَبِّكُمْ وَاشْكُرُوْا لَهٗ ۚ بَلْدَةٌ طَيِّبَةٌ وَرَبٌّ غَفُوْرٌ. فَاَعْرَضُوْا فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ سَيْلَ الْعَرِمِ وَبَدَّلْنَاهُم بِـجَنَّتَيْهِمْ جَنَّتَيْنِ ذَوَاتَـىْ اُكُلٍ خَـمْطٍ وَاَثْلٍ وَشَيْءٍ مِّنْ سِدْرٍ قَلِيْلٍ. ذٰلِكَ جَزَيْنَاهُمْ بِـمَا كَفَرُوْا  ۖ  وَهَلْ نُـجَازِىْ اِلَّا الْكَفُوْرَ.

অর্থ : “সাবার অধিবাসীদের জন্যে তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন-দুটি উদ্যান, একটি ডানদিকে, একটি বামদিকে। তোমরা তোমাদের মহান রব তায়ালা উনার রিযিক খাও এবং উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। স্বাস্থ্যকর শহর এবং ক্ষমাশীল মহান রব তায়ালা। অতঃপর তারা অবাধ্যতা করলো ফলে আমি তাদের উপর প্রেরণ করলাম প্রবল বন্যা। আর তাদের উদ্যানদ্বয়কে পরিবর্তন করে দিলাম এমন দুই উদ্যানে, যাতে উদগত হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ এবং সামান্য কুলবৃক্ষ। এটা ছিল কুফরীর কারণে তাদের প্রতি আমার শাস্তি। আমি অকৃতজ্ঞ ব্যতীত কাউকে শাস্তি দেই না।” (পবিত্র সূরা সাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫-১৭)

আবার পাপীদের শাস্তি দেয়ার বিষয়টির ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا اَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْ عَنْ كَثِيْرٍ.

অর্থ : “তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِـمَا كَسَبَتْ اَيْدِى النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِىْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ

অর্থ : “যমীনে ও পানিতে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি পাপীদেরকে শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে যেমন বিভিন্ন বিপদ-আপদের অন্যতম বন্যা প্রদান করে থাকেন। তেমনি মানুষকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যেও নানান বিপদ-আপদের সম্মুখিন করে দেন।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْـخَوْفِ وَالْـجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ  وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ

অর্থ : “আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো ভয়, ক্ষুধা, মাল-জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে ছবরকারীদের জন্য সুসংবাদ।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৫)

সুতরাং বৃষ্টি, বন্যা বা খরা ইত্যাদি সব কিছুই কখনো পরীক্ষা করার জন্য কখনোবা পাপীদের কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ। তাই কখনো কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে কম বৃষ্টি হতে পারে ফলে খরা দেখা দিতে পারে আবার বেশি বৃষ্টিও হতে পারে ফলে বন্যা দেখা দিতে পারে। আর এই বিষয়গুলো একচ্ছত্রভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনিই নির্ধারণ করে থাকেন।

এজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ.

অর্থ : “আর আমার নিকট প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার রয়েছে। আমি নির্ধারিত পরিমাণেই তা নাযিল করি। ” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

এই নির্ধারিত পরিমাণ হচ্ছে “মহান আল্লাহ পাক উনার যতটুকু ইচ্ছা মুবারক ততটুকু”। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَوْ بَسَطَ اللهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهٖ لَبَغَوْا فِى الْاَرْضِ وَلٰكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَاءُ ۚ اِنَّهُ بِعِبَادِهٖ خَبِيْرٌ بَصِيْرٌ.

অর্থ : “যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দাদেরকে রিযিক বাড়িয়ে দিতেন তাহলে তারা পৃথিবীতে বিদ্রোহ করতো। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ নাযিল করেন। নিশ্চয়ই তিনি উনার বান্দাদের প্রতি পূর্ণ ওয়াকিফহাল ও সবকিছু দেখেন।” (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭)

 সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১ কিংবা পবিত্র সূরা মু’মিনূন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮ উনাদের মধ্যে বর্ণিত-

نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ/ اَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ

অর্থাৎ “আর যিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন নির্ধারিত পরিমাণ/ আর আমি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকি নির্ধারিত পরিমাণ” দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার যতটুকু ইচ্ছা মুবারক ততটুকু বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন। তাই যখন যেখানে যেভাবে ইচ্ছা মুবারক করেন সেখানে সেভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন। কোথাও খরা সৃষ্টি করতে চাইলে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন কিংবা কোথাও বন্যা সৃষ্টি করেন অথবা কোথাও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঘটান।

যদি পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় দ্বারা “পরিমিত পরিমাণ” বুঝানো হতো তাহলে পৃথিবীতে আলাদাভাবে বৃষ্টির মৌসুম বা বর্ষাকাল (rainy seasonনামীয় কোন শব্দের বা মৌসুমের উদ্ভব ঘটতো না। ফলে প্রতিটি মৌসুমই হতো বৃষ্টির মৌসুম বা বর্ষাকাল। গ্রীষ্ককাল বা শীতকাল বলে কোন ঋতুই থাকতো না। যেহেতু প্রতিদিনই বাষ্পীভবনের মাধ্যমে যমীন/পানিপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে পানি উড়ে যাচ্ছে, তাই যমীনে প্রতিদিনই পানির প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। তাই প্রতিদিনই বৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে না। বরং বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি হয়, এমনকি অনেক সময় চারপাশ পানিতে তলিয়ে যায়। আবার অনেক সময় বর্ষাকাল শুরু হয়ে গেলেও বৃষ্টির নাম-নিশানাও খুঁজে পাওয়া যায়। সে তুলনায় শীতকাল একেবারেই বৃষ্টিহীন থাকে। আবার মরু অঞ্চলেও প্রবল বন্যার সৃষ্টি হয়, যেমনটি ১৯৪১ সালে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।

যেহেতু পবিত্র সূরা মু’মিনূন শরীফ উনার ১৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ মোট বৃষ্টিপাতকে উপস্থাপন করছে তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি এখানে বহুবচন اَنْزَلْنَا ‘মোট নাযিলকৃত’ শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন। সুতরাং পৃথিবীতে যতবার বৃষ্টিপাত ঘটে তত বারই কিছু পানি ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে চলে যায়। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১ উনার মধ্যে একবচন نَزَّلَ ‘বার বার নাযিলকৃত’ শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন এবং অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষাংশে كَذٰلِكَ تُـخْرَجُوْنَ ‘তোমরা এভাবে উত্থিত হবে’ উল্লেখ করেছেন। যাদ্বারা বৃষ্টিপাতের সাথে বাষ্পীভবনের সমানুপাতিক সর্ম্পকের ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।

কথিত বিজ্ঞান বৃষ্টিপাতের সাথে বাষ্পীভবনের এই সম্পর্ককে স্বীকার করে নিয়েছে।  যেহেতু বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় পানি অণু শক্তি শোষণ করে তরল অবস্থা থেকে বায়বীয় অবস্থায় পরিবর্তীত হয়। অন্য দিকে বায়ুম-ল থেকে যমীনে পানি পতিত হওয়া হলো বৃষ্টিপাত। ফলে পৃথিবীর মোট বৃষ্টিপাত ও মোট বাষ্পীভবন সমান। কেননা সময়ের সাথে সাথে, গড় আদ্রতা স্থির থাকে। তাই পানিচক্র (বাষ্পীভবন হওয়া ও পরে বৃষ্টিপাত ঘটা) সবসময় চলমান ও ভারসাম্যপূর্ণ। ফলশ্রুতিতে বৃষ্টিপাতের সময় ও বাষ্পীভবনের সময় কোন অতিরিক্ত পানির আবির্ভাব ঘটে না বা পানির ঘাটতিও হয় না। ফলে পৃথিবীর মোট বৃষ্টিপাত ও মোট বাষ্পীভবন সমান থাকে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ উনার ১১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ (Quran 43:11 অনুসারে মহান আল্লাহ পাক তিনি পৃথিবীতে উনার নির্ধারিত পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটান। যখন যেখানে যেভাবে ইচ্ছা মুবারক করেন তখন সেখানে সেভাবে বৃষ্টিপাত ঘটান। ফলে কোথাও বন্যা হতে পারে কিংবা কোথাও খরা হতে পারে কিংবা কোথাও স্বাভাবিক থাকতে পারে। এমনকি মরু অঞ্চলেও বন্যা হতে পারে। তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীতে যে পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়, সে পরিমাণ পানি বৃষ্টি আকারে নিচে নেমে আসে।


 শিলা আকাশে অবস্থিত মেঘমালা থেকেই নিক্ষিপ্ত হয়। তবে উপরের শীতল অবস্থার কারণে উক্ত মেঘ ঘনীভূত হয়ে বরফ/শিলার অবস্থা ধারণ করে এবং জমে জমে পাহাড় সদৃশ হয় বলে একে পাহাড় বা শিলাস্তুপ বলা হয়েছে। বস্তুত সেটা মেঘ।

  শিলা আকাশে অবস্থিত মেঘমালা থেকেই নিক্ষিপ্ত হয়। তবে উপরের শীতল অবস্থার কারণে উক্ত মেঘ ঘনীভূত হয়ে বরফ/শিলার অবস্থা ধারণ করে এবং জমে জমে পাহাড় সদৃশ হয় বলে একে পাহাড় বা শিলাস্তুপ বলা হয়েছে। বস্তুত সেটা মেঘ।

নাস্তিকদের আপত্তি ১২ : শিলা (Hailকি আকাশে অবস্থিত কোন শিলাস্তুপ (sky mountains/ heaven mountains থেকে নিক্ষিপ্ত হয় (Quran 24:43) ?

Hail forms in cumulonimbus clouds when supercooled water droplets freeze on contact with condensation nuclei. http://en.wikipedia.org/wiki/Hail#Formation

খণ্ডণ : শিলা আকাশে অবস্থিত মেঘমালা থেকেই নিক্ষিপ্ত হয়। তবে উপরের শীতল অবস্থার কারণে উক্ত মেঘ ঘনীভূত হয়ে বরফ/শিলার অবস্থা ধারণ করে এবং জমে জমে পাহাড় সদৃশ হয় বলে একে পাহাড় বা শিলাস্তুপ বলা হয়েছে। বস্তুত সেটা মেঘ।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُزْجِىْ سَحَابًا ثُـمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهُ ثُـمَّ يَـجْعَلُهُ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يـَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهٖ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مِن جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ بَۢـرَدٍ فَيُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَاءُ وَيَصْرِفُهُ عَنْ مَّنْ يَّشَاءُ  ۖ  يَكَادُ سَنَا بَرْقِهٖ يَذْهَبُ بِالْاَبْصَارِ.

অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে (অর্থাৎ আপনি দেখেন যে), মহান আল্লাহ পাক তিনি মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর আপনি দেখেন যে, তার মধ্য থেকে বৃষ্টি নির্গত হয়। আর তিনি আকাশস্থিত ঠা-ার পাহাড় থেকে শিলা বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা সরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎ ঝলক যেন তার দৃষ্টিশক্তিকে বিলীন করে দিতে চায়।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)

অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত جِبَالٍ ‘পাহাড় বা স্তুপ’ আকৃতিগত দিক দিয়ে পাহাড়ের মতো কিন্তু এই পাহাড় পাথর থেকে নয়; বরং তা পুঞ্জীভূত মেঘমালা ঠা-া হয়ে শিলায় পরিণত হওয়া শিলাস্তুপ বহন করে উলম্বভাবে উৎপত্তি লাভ করে।

পুঞ্জীভূত মেঘমালা ঠাণ্ডা হয়ে শিলায় পরিণত হচ্ছে আর সেই শিলাগুলো উলম্বভাবে জমা হচ্ছে বলেই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ بَۢـرَدٍ এমন পাহাড় যা ঠাণ্ডা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে আকাশে শিলাস্তুপ বা শিলার পাহাড় আগে থেকেই গড়ে উঠেছে আর সেখানে থেকে বৃষ্টির সময় শিলা নেমে আসে। যদি শিলাস্তুপ বা শিলার পাহাড় আগে থেকেই গড়ে উঠতো তাহলে সেখান থেকে বৃষ্টির সময় শিলা নেমে আসার কথা বলার কোন কারণ থাকতো না। বরং শিলা বৃষ্টির সময় ছাড়াও অন্যান্য যে কোন সময়েই নেমে আসার কথা।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, যমীনে যেমন পাথর জমে জমে পাহাড় সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি বৃষ্টির পূর্বে ঠা-ায় মেঘ পুঞ্জীভূত হয়ে শিলা গঠনের পর, সেই শিলা জমে জমে পাহাড় আকৃতি সৃষ্টি হয় বিধায় তাকে جِبَالٍ শব্দ মুবারক দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ বাহ্যিক অবয়বের কারণে جِبَالٍ শব্দ মুবারক ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা পাহাড় নয়। যেমনিভাবে বালিয়াড়ি প্রকৃতপক্ষে কোন বালি বা বালুর পাহাড় নয়, বরং ক্ষণস্থায়ীভাবে তৈরী একটি অন্যতম ভূমিরূপ, যা বায়ুপ্রবাহ দ্বারা বালুকারাশি এক স্থান থেকে সরে গিয়ে অন্য স্থানে সঞ্চিত হয়ে কালক্রমে উচ্চ ও দীর্ঘ বালুকার স্তুপ সৃষ্টি হয়। মরু অঞ্চল ও সমুদ্র উপকুলে বালিয়াড়ি দেখা যায়। তাই বলে কেউই নাস্তিকীয় যুক্তি দিয়ে বলে না যে, মরু অঞ্চল বা সমুদ্র উপকুলের পাহাড়কে বালিয়াড়ি বলে।

আবার بَرَدٍ শব্দ মুবারক ‘ঠাণ্ডা বা শীতল’ অর্থে আরো ২ খানা আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যেও বর্ণিত রয়েছে-

قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ

অর্থ : “আমি বললাম, হে আগুন! তুমি হযরত ইবরাহীম আলাইহি উনার উপর শীতল ও শান্তিদায়ক হয়ে যাও।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯)

لَّا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا

অর্থ : “তারা সেখানে শীতলতার স্বাদ গ্রহণ করবে না এবং পানীয় আস্বাদন করবে না।” (পবিত্র সূরা নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)

এ ব্যাপারে তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে-

قال ابنُ عبَّاس أخْبَرَ اللهُ أنَّ فِي السَّمَاءِ جِبَالاً مِنْ بَرَدٍ ومفعولُ الإنزالِ محذوفٌ تقديرهُ وينَزِّلُ اللهُ من جبالٍ بَرَدَ فيها واستغنَى عن ذكرِ المفعول للدلالة عليه ومِن الأُولَى لابتداء الغايةِ لأن ابتداءَ الإنزالِ من السَّماء والثانية للتبعيضِ لأن ما يُنْزِلُهُ اللهُ بعض تلك الجبالِ التي في السَّماء والثالثةُ لتبيين الجنسِ لأن جنسَ تلك الجبالِ البَرَدَ كما تقولُ خَاتَمٌ مِن حديدٍ. تفسير القرآن العظيم الـمنسوب للإمام الطبراني

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সংবাদ দিয়েছেন আসমানে ঠা-ার পাহাড় আছে। এই বাক্যটি উহ্য মাফউল হয়েছে। যার ব্যাখ্যা হলো, মহান আল্লাহ পাক এমন পাহাড় হতে নাযিল করেন, যেখানে ঠা-ার পাহাড় আছে। এটা মাফউলের উপর দালালত করেছে। এটা শুরু থেকে শেষ এ কারণে যে এটা প্রথমে আসমান থেকে নাযিল করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত যেভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, ঐ সকল পাহাড় যা মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করেছেন। আর তৃতীয়ত ঐ সকল পাহাড় যা প্রাকৃতিকভাবেই ঠান্ডা। যেমনটা বলা হয়ে থাকে; লোহার আংটি।” (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম লি ইমামিত ত্ববারানী) 

সুতরাং মেঘমালা থেকে যেমন বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। তেমনি মেঘমালা যখন ঠাণ্ডায় আরো ঘনীভূত হয়ে শিলায় পরিণত হয়ে যায়, তখন সে শিলাগুলো জমে জমে একটি শিলাস্তুপের আকৃতি ধারণ করে। কিন্তু তাই বলে এই কথা বলার কোন যুক্তিই নেই যে, শিলা আকাশে অবস্থিত কোন শিলাস্তুপ থেকে নিক্ষিপ্ত হয়। বরং শিলাস্তুপ মেঘমালারই একটি শীতলায়িত রূপ। অর্থাৎ শিলা অধিক ঘনীভূত মেঘ থেকেই বর্ষিত হয়।


সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে ঘনিভূত হয়ে যে মেঘ ও পরবর্তীতে বৃষ্টি তৈরি হয় তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে! নাঊযূবিল্লাহ মিন যালিক!

সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে ঘনিভূত হয়ে যে মেঘ ও পরবর্তীতে বৃষ্টি তৈরি হয় তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে! নাঊযূবিল্লাহ মিন যালিক!

 নাস্তিকদের আপত্তি ১১ : কুরানে প্রতিটা আয়াত (Quran 7:57, 13:17, 15:22, 23:18, 24:43, 25:48-49, 30:24, 30:48, 35:9, 39:21, 45:5, 50:9-11, 56:68, 78:14-15নির্দেশ করে, বৃষ্টিপাত হয় সরাসরি আকাশ থেকে নয়তো আল্লাহ থেকে! সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে ঘনিভূত হয়ে যে মেঘ ও পরবর্তীতে বৃষ্টি তৈরি হয় তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে! এর থেকে কি কুরআনের রচয়িতার অজ্ঞতা প্রকাশিত হয় না?

খণ্ডণ : সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে ঘনিভূত হয়ে যে মেঘ ও পরবর্তীতে বৃষ্টি তৈরি হয় তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে! নাঊযূবিল্লাহ মিন যালিক!

অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই বাষ্পীভবনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَللهُ الَّذِى يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهُ فِى السَّمَاءِ كَيْفَ يَشَاءُ وَيـَجْعَلُهُ كِسَفًا فَتَرَى الْوَدْقَ يَـخْرُجُ مِنْ خِلَالِهِ  ۖ  فَاِذَا اَصَابَ بِهٖ مَنْ يَّشَاءُ مِنْ عِبَادِهٖ اِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُوْنَ.

অর্থ : “তিনি মহান আল্লাহ পাক যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর তা মেঘ সঞ্চার করে, অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং একে তিনি স্তরে স্তরে করেন। ফলে তোমরা দেখতে পাও তার মধ্য থেকে বৃষ্টি বেরিয়ে আসছে। অতঃপর তিনি উনার বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاللهُ الَّذِىْ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيْرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ اِلٰى بَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَحْيَيْنَا بِهِ الْاَرْضَ بَعْدَ مَوْتِـهَا ۚ كَذٰلِكَ النُّشُوْرُ.

অর্থ : “আর তিনি মহান আল্লাহ পাক যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। ফলে এটি মেঘমালা সঞ্চালিত করে। অতঃপর আমি তা মৃত ভূখ-ের দিকে পরিচালিত করি। ফলে তার দ্বারা সে  ভূখ-কে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই। এমনিভাবে হবে পুনরুত্থান।” (পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে يُرْسِلُ الرِّيَاحَ ‘বায়ু প্রেরণ’ করার কথা বলার পর বলা হচ্ছে- فَتُثِيرُ سَحَابًا ‘মেঘ সঞ্চার করে’। অর্থাৎ যে বায়ু প্রেরণ করা হয়েছে তা মেঘ সঞ্চার করে। সুতরাং এখানে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো স্পষ্ট করে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াকে উল্লেখ করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَهُوَ الَّذِىْ يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَىْ رَحْـمَتِهِ  ۖ حَتّٰى اِذَا اَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَنْزَلْنَا بِهِ الْمَاءَ فَأَخْرَجْنَا بِهٖ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۚ كَذٰلِكَ نُـخْرِجُ الْمَوْتٰى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ.

অর্থ : “তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ণ মেঘমালা বহন করে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে মৃত শহরের দিকে পাঠিয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর এর সাহায্যে উৎপন্ন করি সব রকমের ফল-ফসল। এমনিভাবে আমি মৃতকে বের করে আনি, যাতে তোমরা স্মরণ করো।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَهُوَ الَّذِىْ اَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَىْ رَحْـمَتِهِ ۚ وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً طَهُوْرًا. لِّنُحْيِىَ بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا وَنُسْقِيَهُ مِـمَّا خَلَقْنَا اَنْعَامًا وَاَنَاسِىَّ كَثِيْرًا.

অর্থ : “তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। আর আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি। তদ্দারা মৃত ভূখ-কে সঞ্জীবিত করার জন্যে এবং আমার সৃষ্ট বহুসংখ্যক গবাদিপশুর ও মানুষের পিপাসা নিবারণের জন্যে।” (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮-৪৯)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে বায়ু/বাতাস কেমন তার বর্ণনা দিতে গিয়ে الرِّيَاحَ بُشْرًا ‘সুসংবাদবাহী বাতাস’ প্রেরণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ এমন বায়ু যা সুসংবাদবাহী।

আর পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার আয়াত শরীফ উনার পরবর্তী অংশে حَتّٰى اِذَا اَقَلَّتْ سَحَابًا ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না মেঘ সৃষ্টি হয়’ উল্লেখ করার মাধ্যমে নিঃসন্দেহে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটি উপস্থাপন করা হয়েছে।

অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন পানিধার থেকে পানি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে মেঘ সৃষ্টির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র আরো সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَاَسْقَيْنَاكُمُوْهُ وَمَا اَنْتُمْ لَهُ بِـخَازِنِيْنَ.

অর্থ : “আমি উর্বরতা সঞ্চারক বা বৃষ্টিপূর্ণ বায়ু পরিচালনা করি, অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, তখন তোমাদেরকে তা পান করাই। আর তোমরা তার কোষাধ্যক্ষ নও।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২২)

আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ ‘উর্বরতা সঞ্চারক বা বৃষ্টিপূর্ণ বায়ু’ পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এমন বায়ু যা বৃষ্টিকে ধারণ করে। এটি নিঃসন্দেহে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার নির্দেশক।

এছাড়াও মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَنْزَلْنَا مِنَ الْمُعْصِرَاتِ مَاءً ثَجَّاجًا.

অর্থ : “আমি পানিপূর্ণ মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি।” (পবিত্র সূরা নাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪)

আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে مُعْصِرَاتِ ‘পানিপূর্ণ/বৃষ্টিপূর্ণ মেঘ’ বলা হয়েছে। মেঘ তো নিজে নিজে পানিপূর্ণ হতে পারে না। অবশ্যই বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি উপরে উঠতে হয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা রূম শরীফ ও পবিত্র সূরা ফাত্বির শরীফ উনাদের মধ্যে বায়ু প্রেরণের মাধ্যমে মেঘ সৃষ্টির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এই বায়ু কি ধরণের তা অত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে বর্ণিত নেই। আর পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ, পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ ও পবিত্র সূরা হিজর শরীফ উনাদের মধ্যে সেই বায়ু কোন ধরণের তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- এই বায়ু সুসংবাদবাহী ও উর্বরতা সঞ্চারক বা বৃষ্টিপূর্ণ বায়ু, যদ্দারা বৃষ্টিপাত ঘটে। সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবেই বাষ্পীভবনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

যেহেতু দিনে-রাতে ২৪ ঘন্টাই বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটি চলমান থাকে। কিন্তু বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র সূর্যতাপের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বায়ু প্রেরণের বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে। কেননা রাতের বেলায় তো আর সূর্যতাপে বাষ্পীভবন হয় না, তখন তো সূর্যই অপ্রকাশিত থাকে কিন্তু বাষ্পীভবন ঠিকই চলতে থাকে।

আবার মেরুতেও বাষ্পীভবন হয়। কিন্তু উত্তর মেরুতে ২১ মার্চ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর (১৮৭ দিন) অবিরত পুরোটাই দিন ও গ্রীষ্মকাল আর দক্ষিণ মেরুতে এই সময়টাতে (১৮৭ দিন) অবিরত পুরোটাই রাত ও শীতকাল।

বিপরীতভাবে দক্ষিণ মেরুতে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ মার্চ (১৭৮ দিন) অবিরত পুরোটাই দিন ও গ্রীষ্মকাল আর উত্তর মেরুতে এই সময়টাতে (১৭৮ দিন) অবিরত পুরোটাই রাত ও শীতকাল।

তাহলে দক্ষিণ মেরুতে ১৮৭টি দিন ও উত্তর মেরুতে ১৭৮টি দিন, যখন পুরোটাই রাত থাকে তখন সূর্যালোক আসে কোথা থেকে? কিন্তু বাষ্পীভবন তো ঠিকই হচ্ছে।   

এছাড়াও উত্তর মেরুতে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ০ক্ক সেন্টিগ্রেড (৩২ক্ক ফারেনহাইট) আর এই সময়ে দক্ষিণ মেরুতে শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৫৮ক্ক সেন্টিগ্রেড (মাইনাস ৭২ক্ক ফারেনহাইট)।

আবার দক্ষিণ মেরুতে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ২৬ক্ক সেন্টিগ্রেড (১৫ক্ক ফারেনহাইট) আর এই সময়ে উত্তর মেরুতে শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৩৪ক্ক সেন্টিগ্রেড (মাইনাস ২৯ক্ক ফারেনহাইট)।

তাহলে যার যার গ্রীষ্মকালে যখন উত্তর মেরুতে গড় তাপমাত্রা ০ক্ক সেন্টিগ্রেড (৩২ক্ক ফারেনহাইট) আর দক্ষিণ মেরুতে গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২৬ক্ক সেন্টিগ্রেড (১৫ক্ক ফারেনহাইট), তখন এত নি¤œ তাপমাত্রায় সূর্যতাপে পানি বাষ্প তৈরী করে কিভাবে? 

(Avevi †giæ‡ZI ev®úxfeb nq| wKš‘ DËi †giæ‡Z 21 gvP© †_‡K 23 †m‡Þ¤^i (187 w`b) AweiZ cy‡ivUvB w`b I MÖx®§Kvj Avi `wÿY †giæ‡Z GB mgqUv‡Z (187 w`b) AweiZ cy‡ivUvB ivZ I kxZKvj|

wecixZfv‡e `wÿY †giæ‡Z 23 †m‡Þ¤^i †_‡K 21 gvP© (178 w`b) AweiZ cy‡ivUvB w`b I MÖx®§Kvj Avi DËi †giæ‡Z GB mgqUv‡Z (178 w`b) AweiZ cy‡ivUvB ivZ I kxZKvj|

Zvn‡j `wÿY †giæ‡Z 187wU w`b I DËi †giæ‡Z 178wU w`b, hLb cy‡ivUvB ivZ _v‡K ZLb m~h©v‡jvK Av‡m †Kv_v †_‡K? wKš‘ ev®úxfeb †Zv wVKB n‡”Q|  

GQvovI DËi †giæ‡Z MÖx®§Kv‡j Mo ZvcgvÎv _v‡K 0° †mw›U‡MÖW (32° dv‡ibnvBU) Avi GB mg‡q `wÿY †giæ‡Z kxZKv‡j Mo ZvcgvÎv _v‡K gvBbvm 58° †mw›U‡MÖW (gvBbvm 72° dv‡ibnvBU)|

Avevi `wÿY †giæ‡Z MÖx®§Kv‡j Mo ZvcgvÎv _v‡K gvBbvm 26° †mw›U‡MÖW (15° dv‡ibnvBU) Avi GB mg‡q DËi †giæ‡Z kxZKv‡j Mo ZvcgvÎv _v‡K gvBbvm 34° †mw›U‡MÖW (gvBbvm 29° dv‡ibnvBU)|

Zvn‡j hvi hvi MÖx®§Kv‡j hLb DËi †giæ‡Z Mo ZvcgvÎv 0° †mw›U‡MÖW (32° dv‡ibnvBU) Avi `wÿY †giæ‡Z Mo ZvcgvÎv gvBbvm 26° †mw›U‡MÖW (15° dv‡ibnvBU), ZLb GZ wb¤œ ZvcgvÎvq m~h©Zv‡c cvwb ev®ú ˆZix K‡i wKfv‡e?) 

বাস্তবতা হচ্ছে দিনে বেলায় হোক বা রাতের বেলায়, সূর্যালোক থাকুন চাই ছায়া বা অন্ধকার থাকুন, বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে। তবে শক্তি বেশি পেলে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াটি তরান্বিত হয় আর সূর্যালোক অধিকতর শক্তির একটি ভাল উৎস। কারণ সূর্যালোক বস্তুকে উত্তপ্ত করে এবং উচ্চ তাপমাত্রা দ্রুত বাষ্পীভবন সৃষ্টি করে। অর্থাৎ সূর্যালোক বেশি থাকলে বেশি বাষ্পীভবন ঘটে। কিন্তু সূর্যালোকই বাষ্পীভবনের একমাত্র উৎস নয়। কেননা সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতেও বাষ্পীভবন ঘটে।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি সূর্যতাপের কথা উল্লেখ না করে বরং মেঘ সঞ্চারকারী বায়ু প্রেরণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। আর এই বায়ু উর্বরতা সঞ্চারক বা বৃষ্টিপূর্ণ বায়ু বিধায়, একে সুসংবাদবাহী বায়ু বলে উল্লেখ করেছেন, যা বৃষ্টির পূর্বে প্রেরণ করে থাকেন।

এছাড়াও সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে উঠলেও তা ঘনীভূত হয়ে সব সময়ে মেঘ সৃষ্টি করে না। যদি সূর্যতাপে পানি বাষ্প হয়ে ঊর্ধ্বাকাশে উঠলেই ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি হতো ও পরবর্তীতে বৃষ্টি হতো, তাহলে প্রতিদিনই বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিদিন তো বৃষ্টি হয় না। বরং একটি মৌসুমে বৃষ্টিপাত বেশি হয় আরেকটি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হয় বা বৃষ্টিহীন থাকে।

আর এই জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِى الْاَرْضِ  ۖ  وَاِنَّا عَلٰى ذَهَابٍ بِهٖ لَقَادِرُوْنَ.

অর্থ : “আর আমি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকি নির্ধারিত পরিমাণ, তারপর আমি তাকে মাটিতে সংরক্ষণ করি। আর নিঃসন্দেহ আমি তা সরিয়ে নিতেও সক্ষম।” (পবিত্র সূরা মু’মিনূন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالَّذِي نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَاَنْشَرْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا ۚ كَذٰلِكَ تُـخْرَجُوْنَ.

অর্থ : “আর যিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন নির্ধারিত পরিমাণ, তারপর তদ্দারা মৃত ভূখ-কে সঞ্জীবিত করি। তোমরা এভাবে উত্থিত হবে।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)

পবিত্র কুরআন শরীফ এমন সময়ে বাষ্পীভবনের বিষয়টি প্রকাশ করেছেন যখন বিজ্ঞান ছিল এ ব্যাপারে নিতান্তই অজ্ঞ। বিজ্ঞান মাত্র কিছুদিন আগে বাষ্পীভবনের বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হয়েছে। তাই বিজ্ঞান স্বীকার করেছে যে, ছোট মেঘখ-কে বাতাস যখন ধাক্কা দেয় তখন “বৃষ্টিবাহী মেঘপুঞ্জ” (Cumulonimbus) নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে তৈরি হতে শুরু করে। ছোট ছোট মেঘখ- একসাথে মিলিত হয়ে বড় মেঘমালায় পরিণত হয়। (The Atmosphere, Anthes and others, p. 268-269, Ges Elements of Meteorology, Miller and Thompson, p. 141)

আর যখন ছোট ছোট মেঘখ- একত্রে মিলিত হয় তখন তা উঁচু হয়ে যায়। উড্ডয়মান বাতাসের গতি মেঘের আকার বৃদ্ধি করে মেঘকে স্তুপীকৃত করতে সাহায্য করে। এই মেঘের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে মেঘটি বায়ুম-লের অধিকতর ঠা-া স্থানের দিকে বিস্তৃৃতি লাভ করে সেখানে পানির ফোঁটা ও বরফের সৃষ্টি করে এবং তা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এরপর যখনই এগুলো অধিক ওজন বিশিষ্ট হয়ে যায় তখন বাতাস আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে, মেঘমালা থেকে তা বৃষ্টি ও শিলা হিসেবে বর্ষিত হয়। (The Atmosphere, Anthes and others, p. 269, Ges Elements of Meteorology, Miller and Thompson, pp. 141-142)

এজন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يُزْجِىْ سَحَابًا ثُـمَّ يُؤَلِّفُ بَيْنَهُ ثُـمَّ يَـجْعَلُهُ رُكَامًا فَتَرَى الْوَدْقَ يـَخْرُجُ مِنْ خِلَالِهٖ وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاءِ مِن جِبَالٍ فِيْهَا مِنْ بَۢـرَدٍ فَيُصِيْبُ بِهٖ مَنْ يَّشَاءُ وَيَصْرِفُهُ عَنْ مَّنْ يَّشَاءُ  ۖ  يَكَادُ سَنَا بَرْقِهٖ يَذْهَبُ بِالْاَبْصَارِ.

অর্থ : “আপনি কি দেখেন না যে (অর্থাৎ আপনি দেখেন যে), মহান আল্লাহ পাক তিনি মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর আপনি দেখেন যে, তার মধ্য থেকে বৃষ্টি নির্গত হয়। আর তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলা বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা সরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎ ঝলক যেন তার দৃষ্টিশক্তিকে বিলীন করে দিতে চায়।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘আকাশ থেকে’ বৃষ্টি বর্ষণের আলোচনা দ্বারা একটি ধ্রুব সত্যকে উন্মোচিত করে দিয়েছেন যে- বৃষ্টি আকাশ থেকেই বর্ষিত হয়, যমীন থেকে নয়। যেমন বীজের অঙ্কুরোদগম যমীন থেকে হয়, আকাশ থেকে নয়। চাঁদ-সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয়, পশ্চিম দিকে নয়। অথচ সপ্তম শতকে পবিত্র কুরআন শরীফ অসাধারণ ও চমৎকার বর্ণনাশৈলীর মাধ্যমে পানিচক্রের বিবরণ দিয়ে বিশ্ববাসীকে যখন বিস্ময়াভিভূত করে, তখনও ‘বিজ্ঞানমনষ্ক’ দাবীদার পবিত্র কুরআন শরীফ বিরোধী নাস্তিকদের পূর্ব প্রজন্ম পানিচক্র নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করতো। যেমন ইউনিভার্সালিস এনসাইক্লোপিডিয়ায় জি গাসটানী ও বি ব্লাভোক্স প্রাচীনকালের পানিচক্র বিষয়ক মতবাদগুলো নিয়ে আলোচনায় বলেছে, প্লেটো বিশ্বাস করতো যে, মাটির নিচে কোন গভীর সুড়ঙ্গপথ দিয়ে পানি মাটির নিচ থেকে সাগরে ফিরে আসে। একে প্লেটোর যুগে “টারটারুস” বলা হতো। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এ মতবাদের অনেক সমর্থক ছিলো এবং তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে ডেসকার্টেস। আর ঊনবিংশ শতাব্দীতে এরিস্টোটল মনে করতো যে, পাহাড়ের ঠান্ডা গভীর গুহায় পানি ঘনীভূত হয় এবং মাটি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হ্রদ ঝর্ণাগুলোকে পানি সরবরাহ করে। এ মতবাদ সেনেকা (১ম শতাব্দী) ও ভলগার এবং আরো অনেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত পোষণ করতো।

কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ اَرَاَيْتُمْ اِنْ اَصْبَحَ مَاؤُكُمْ غَوْرًا فَمَنْ يَّأْتِيْكُم بِـمَاءٍ مَّعِيْنٍ.

অর্থ : “আপনি বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা?” (পবিত্র সূরা মূলক শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ভূগর্ভের গভীরে চলে যাওয়া পানি কখনোই পানির স্রোতধারা অর্থাৎ সাগর,  হ্রদ, ঝর্ণা ইত্যাদিতে প্রবাহিত হতে পারে না।

 আর মহান আল্লাহ পাক তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করান। কেননা মেঘের সৃষ্টি হলেই তা থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয় না। মেঘ সৃষ্টি হওয়ার পরও তা ছিন্ন-বিছিন্ন হয়ে যেতে পারে। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَفَرَاَيْتُمُ الْمَاءَ الَّذِىْ تَشْرَبُوْنَ. اَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْهُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَـحْنُ الْمُنْزِلُوْنَ.

অর্থ : “তোমরা যে পানি পান করো, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরাই কি তা মেঘ থেকে নামিয়ে আনো, না আমি বর্ষণ করি?” (পবিত্র সূরা ওয়াক্বিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৮-৬৯)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার মহান ক্ষমতা এবং সৃষ্ট জীবের প্রতি মহাকরুণার বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই বৃষ্টি বর্ষণকে একটি নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ اَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا ۚ وَمِـمَّا يُوْقِدُوْنَ عَلَيْهِ فِى النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ اَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهُ ۚ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللهُ الْـحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَاَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً  ۖ  وَاَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِى الْاَرْضِ ۚ كَذٰلِكَ يَضْرِبُ اللهُ الْاَمْثَالَ.

অর্থ : “তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর স্রোতধারা প্রবাহিত হতে থাকে নিজ নিজ পরিমাণ অনুযায়ী আর খরস্রোত বয়ে নিয়ে যায় ফেঁপে ওঠা ফেনার রাশি। আর অলঙ্কার অথবা তৈজসপত্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে যে বস্তুকে আগুনে উত্তপ্ত করে, তাতেও তেমনি ফেনারাশি থাকে। এইভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত প্রদান করেন। অতএব, ফেনা তো শুকিয়ে নিঃশেষ হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এইভাবে নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন।” (পবিত্র সূরা র’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَلَكَهُ يَنَابِيْعَ فِى الْاَرْضِ ثُـمَّ يُـخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا مُّـخْتَلِفًا اَلْوَانُهُ ثُـمَّ يَهِيْجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُـمَّ يَـجْعَلُهُ حُطَامًا ۚ اِنَّ فِى ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِاُوْلِى الْاَلْبَابِ.

অর্থ : “আপনি কি দেখেননি যে (অর্থাৎ আপনি দেখেছেন যে), মহান আল্লাহ পাক তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর সে পানিকে যমীনে স্রোতরূপে প্রবাহিত করেন। এরপর তার দ্বারা তিনি বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন। অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা হলদে হয়ে যেতে দেখতে পাও। এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয়ই এতে বোধশক্তি-সম্পন্নদের জন্যে উপদেশ রয়েছে।” (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

এর মাধ্যমে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত বৃষ্টি বর্ষণের প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেই প্রকাশিত হলো। অতএব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অসম্পূর্ণ পানিচক্র বর্ণনা করা হয়েছে- দাবীদারদের অকাট্য মিথ্যাচারীতাও প্রমাণিত হলো।

আর বৃষ্টি বর্ষনের প্রক্রিয়াটি, যা একটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় তা বোধশক্তি-সম্পন্ন মানুষরাই উপলব্ধি করতে পারবে। কিন্তু নাস্তিকরা যেহেতু বোধশক্তিহীন প্রাণী তাদের পক্ষে এই বিষয়ে উপলব্ধি করা কখনোই সম্ভব নয়।


পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পিঁপড়া সম্পর্কে বর্ণিত প্রতিটি বিষয়ই ধ্রুব সত্য। পিঁপড়ারা শব্দের মাধ্যমে যেমন তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে তেমনি রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীকে আলাদাভাবে চিনতেও পারে।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পিঁপড়া সম্পর্কে বর্ণিত প্রতিটি বিষয়ই ধ্রুব সত্য। পিঁপড়ারা শব্দের মাধ্যমে যেমন তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে তেমনি রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীকে আলাদাভাবে চিনতেও পারে।

নাস্তিকদের আপত্তি ১০ : "কুরান দাবি করে (Quran 27:18-19), পিপিলিকারাও কথা বলতে পারে যা পড়ে রূপকথা ছাড়া কিছু মনে হয় না (e.g. an ant being able to distinguish between Solomon and a soldier)! কেননা তাদের কমুনিকেশন ঘটে প্রধানত chemical signals  এর মাধ্যমে! তাহলে উক্ত তথ্যের ভিত্তি কোথায়?

http://en.wikipedia.org/wiki/Ants#Communication"

খণ্ডণ : পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পিঁপড়াদের নিজেদের মধ্যে কথোপোকথন ও উন্নত বার্তা বিনিময়ের বর্ণনা দেখে গ-মূর্খ নাস্তিকদের কাছে তা রূপকথা বলে মনে হচ্ছে। নাঊযূবিল্লাহ! বাস্তবিক অর্থে নাস্তিকদের বক্তব্য অন্ধের হাতি দর্শনের মতো।

বস্তুত পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিই চাই তারা আকাশে উড়ন্ত প্রাণী হোক, বা পানিতে বসবাস করুক কিংবা স্থলে বসবাস করুক, তাদের নিজস্ব কায়দা ও পদ্ধতিতে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ বা তথ্য আদান-প্রদান করে। মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যকার এই যোগাযোগ ভিন্ন। মানুষ যে পদ্ধতিতে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে অন্য প্রাণী বা উদ্ভিদ সেই একই পদ্ধতিতে যোগাযোগ করে না। তাদের যোগাযোগের ধরণ আলাদা। তবে সব যোগাযোগেরই একটি মৌলিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকে এবং সেটি হলো প্রাপকের কাছে বার্তা পৌঁছানো।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা দাবি করছে বহু অন্যান্য জীব জন্তুও এমন কিছু শব্দ তৈরি করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে যা আসলে মানুষের কথার মতই। এই গবেষণায় উঠে এসেছে বহু জীবজন্তু নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করতে জটিল শব্দ তৈরি করে। এমনকি শিস জাতীয় শব্দের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে তারা। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, তিমি, নেকড়ে, ব্যাঙ ও বহু পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীদের গলার আওয়াজ পরীক্ষা করে গবেষকরা জানিয়েছে এই সমস্ত প্রাণীরা মানুষের মতই একই পদ্ধতিতে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে সক্ষম। এই গবেষণা জানাচ্ছে সম্ভবত অনান্য প্রাণীদের কথোপকথন পদ্ধতির সঙ্গে মানুষের কথোপকথনের মধ্যে কোনও মিসিং লিঙ্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছে যে, এমন অনেক প্রজাতির মাছ আছে যারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টির জন্যে কিংবা বাইরের কোন বিপদের আশঙ্কা থাকলে শব্দ সৃষ্টি করে।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَحُشِرَ لِسُلَيْمَانَ جُنُوْدُهٗ مِنَ الْـجِنِّ وَالْاِنْسِ وَالطَّيْرِ فَهُمْ يُوْزَعُوْنَ. حَتّٰىٓ اِذَا اَتَوْا عَلٰى وَادِ النَّمْلِ قَالَتْ نَـمْلَةٌ يَّآ اَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوْا مَسَاكِنَكُمْ لَا يَـحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُوْدُهٗ وَهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ.

অর্থ : “হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম উনার সামনে উনার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হলো। জ্বিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হলো। যখন উনারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছালেন, তখন এক স্ত্রী পিপীলিকা বললো, হে পিপীলিকার দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করো। অন্যথায় হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবেন।” (পবিত্র সূরা নামল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭-১৮)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি قَالَتْ “বলেছিল” শব্দ মুবারক ব্যবহার করেছেন বিধায় নাস্তিকরা ধারণা করছে যে, পিঁপড়ারা বুঝি মানুষের মতোই কথা বলে তাদের তথ্য আদান-প্রদান করে। কিন্তু এই قَالَتْ “বলেছিল” শব্দ মুবারক ব্যবহার দ্বারা পিঁপড়াদের মানুষের মতো কথা বলা বুঝায় না, বরং পিঁপড়ারা যে তাদের নিজেদের মধ্যে শব্দ দিয়ে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে তার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

পিঁপড়াদের জীবন পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষ পূর্বে কিছুই জানতো না। পিঁপড়াদের সম্পর্কে গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের জীবন সাথে যে সকল প্রাণী ও কীট-পতঙ্গের অধিকতর সাদৃশ্য আছে, সেটা হল, পিঁপড়া। (Bert Hölldobler and Edward O. Wilson, The Ants (Cambridge: Harvard University Press: 1990)

কেননা, পিঁপড়া মানুষের মত মৃতদেহ দাফন করে। তাদের মধ্যে শ্রম বিন্যাস রয়েছে। তারা গল্পের জন্য কোন কোন সময় এক সাথে অবস্থান করে। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তাদের রয়েছে অগ্রিম যোগাযোগ পদ্ধতি। দ্রব্য বিনিময়ের জন্য তাদের বাজার বসে। তারা শীতকালের জন্য খাদ্য দ্রব্য গুদামজাত করে। খাদ্য শস্যের মুকুল বের হলে ও মুকুলিত অবস্থায় রেখে দিলে যদি শস্যটি পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখনই তারা মুকুলটির গোড়া কেটে দেয়। তাদের গুদামজাতকৃত শস্যদানা যদি বৃষ্টির কারণে ভিজে যায়, তখন তারা এটাকে রোদে নিয়ে শুকায় এবং শুকানোর পর পুনরায় ভেতরে নিয়ে আসে। (Ibid., 244)

আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, নাস্তিকদের প্রদত্ত ইন্টানেটের লিঙ্কটির (http://en.wikipedia.org/wiki/Ants#Communication) আর্টিক্যালেও পিঁপড়াদের শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগের তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে- ÒAnts communicate with each other using pheromones, sounds, and touch.Ó (Jackson DE, Ratnieks FL (August 2006). "Communication in ants". Current Biology. 16 (15): R570–4.)

অর্থাৎ পিঁপড়ারা পরস্পরের সাথে ফেরোমোন, শব্দ ও স্পর্শ দ্বারা যোগাযোগ করে।

উক্ত আর্টিক্যালে আরো বলা হয়েছে যে,ÒSome ants produce sounds by stridulation, using the gaster segments and their mandibles. Sounds may be used to communicate with colony members or with other species.Ó (Hickling R, Brown RL (October 2000). "Analysis of acoustic communication by ants". The Journal of the Acoustical Society of America. 108 (4): 1920–9; Roces F, Hölldobler B (1996). "Use of stridulation in foraging leaf-cutting ants: Mechanical support during cutting or short-range recruitment signal?". Behavioral Ecology and Sociobiology. 39 (5): 293–299)

অর্থাৎ কিছু পিঁপড়া gaster segment ও ম্যান্ডিবলের মাধ্যমে শব্দ উৎপাদন করতে পারে। এই শব্দ বসতির অন্যান্য সদস্য কিংবা অন্য প্রজাতির পিঁপড়ার সাথে যোগাযোগ রক্ষার্থে ব্যবহার করতে পারে।  

কিন্তু নাস্তিকরা শুধুমাত্র pheromone ‘ফেরোমোন’ অর্থাৎ chemical signals-এর বিষয়টি উল্লেখ করে sound বা শব্দের বিষয়টিকে গোপন রেখেছে। অর্থাৎ তারা ধোঁকাবাজী করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের ধোঁকাবাজী ফাঁস হয়ে গেল। 

আবার যেহেতু যোগাযোগের বার্তার সারকথাই হলো নিজের বা সকলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন সাধন করা কিংবা এ উন্নয়ন সাধনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো। পৃথিবীতে মানুষসহ কোন সৃষ্টি বা প্রাণই নিজেকে অনিষ্ট করার জন্য অন্যের সাথে যোগাযোগ করে না; যোগাযোগ করে থাকে নিজের বা নিজেদের উন্নয়নকে তরান্বিত করার জন্য। তাই যোগাযোগ এবং উন্নয়নের মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে।

আর এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত পিঁপড়াদের ক্ষেত্রে উন্নয়নের বিষয়টি হচ্ছে- হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম উনার ও উনার বাহিনীর দ্বারা অজ্ঞাতসারে পিঁপড়াদেরকে পিষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা। 

মানুষ যেমন শব্দ দিয়ে কথা বলে, সে রকম পিঁপড়াও শব্দ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে, যা বিজ্ঞানীরা মাত্র কিছুকাল পূর্বে আবিস্কার করেছে। অথচ পূর্বে বিজ্ঞানীরা মনে করতো যে, পিঁপড়া কোন শব্দ করতে পারেন না এবং তাদের শব্দ শোনারও ক্ষমতা নেই।

আর পিঁপড়া ছাড়া অন্য প্রাণীরাও যে শব্দ দিয়ে যোগাযোগ বা তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে তার একটি উদাহরণ হচ্ছে কুমির।

পানিতে বসবাসকারী প্রাণীর মধ্যে কুমির চোখ, স্পর্শ ও গন্ধ দ্বারা বার্তা বহন করতে পারেন। কিন্তু যোগাযোগের ক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপায় হচ্ছে শব্দ। কুমিরের ভোকাল কর্ড বা কণ্ঠনালী নেই কিন্তু তারা অবিশ্বাস্যভাবে বিস্তৃত উপায়ে শব্দ করতে পারে যেমন- হিস্হিস্ ধ্বনী করতে পারে, খক্খকানি দিতে পারে, ঘোঁৎ ঘোঁৎ করতে পারে, গোঁ গোঁ শব্দ করতে পারে, গুরুগম্ভীর গর্জন করতে পারে। আর এই শব্দ উৎপাদন কুমিরের প্রজাতি, বয়স, আকার, লিঙ্গ এবং প্রকরণের উপর নির্ভরশীল। স্বতন্ত্র মানুষের যেমন স্বতন্ত্র কণ্ঠ এবং বক্তৃতা পদ্ধতি রয়েছে ঠিক তেমনি কুমিরের স্বর, তীব্রতা এবং ডাক দেয়ার ভঙ্গিতে পার্থক্য ঘটতে পারে। কুমির সাধারণভাবে বিপদের সম্মুখিন হলে, দুঃখের সংকেত পাঠাতে, ডিম ফোটানোর জন্য ডাকতে, সংস্পর্শের জন্য ডাকতে কিংবা পূর্বরাগের উদ্দেশ্য গুরুগম্ভীর গর্জনের জন্য শব্দ ব্যবহার করে থাকে। কিছু প্রজাতি কণ্ঠস্বর শব্দ দ্বারা বিশের অধিক বিভিন্ন বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে।

পানিতে বসবাসকারী কিছু কিছু মাছও শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে। মাছ সাধারণত ঘোঁৎ ঘোঁৎ, কিচিরমিচির ও ফট্ফট্ শব্দ উৎপাদন করতে পারে। বেশিরভাগ মাছই এত কম তীব্রতায় শব্দ উৎপন্ন করে যে ডুবুরীরা তা শুনতে পায় না। তবে কিছু প্রজাতির মাছ রয়েছে যারা মানুষের শ্রাব্য সীমার মধ্যে শব্দ উৎপাদন করতে পারে। যেমন গ্রান্ড ফিস তাদের দাঁতে দাঁতে ঘষে শব্দ উৎপন্ন করে থাকে। বড় আকৃতির জিউফিস, নাসাউ ও ব্লাক গ্রুপার যখন সচকিত হয় বা কোণঠাসা হয় তখন বিকট গম্ভীর গর্জন করতে পারে। জিউফিসকে পূর্বরাগের উদ্দেশ্যেও এমন বিকট গম্ভীর গর্জন করতে শোনা যায়। তবে পুরুষ জিউফিস পূর্বরাগের উদ্দেশ্যে স্ত্রী জিউফিসকে আকৃষ্ট করতে কিচিরমিচির শব্দও করে থাকে। শত্রুর আক্রমন প্রতিহত করা ছাড়াও জিউফিসের মতো পূর্বরাগের উদ্দেশ্যে ডেমসেলফিস বিকট গম্ভীর গর্জন করে। 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, পানির নিচের প্রাণীরাও শব্দ দিয়ে যোগাযোগ করে থাকে। তাহলে পিঁপড়াদের শব্দ দিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার বর্ণনা দেখে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হওয়ার কোন কারণই নেই। বরং এই আচরণ নাস্তিকদের চরম মূর্খতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। 

শব্দ উৎপাদন ছাড়াও পিঁপড়া ফেরোমোনের প্রতি সংবেদনশীল এবং এর দ্বারা তারা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে। মানুষের গা থেকেও ফেরোমোন নিঃসৃত হয়। আর তাই হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম উনার জিসিম মুবারক থেকে নিঃসৃত ফেরোমোন সিগনেচার দিয়ে স্ত্রী পিঁপড়াটি উনাকে চিনতে পেরেছিল, যেভাবে কুকুর প্রতিটি মানুষকে চিনতে পারে। 

তাহলে জানা গেল যে, Òan ant being able to distinguish between Solomon and a soldierÓ  এই তথ্যের ভিত্তি নাস্তিকদের প্রদত্ত ইন্টারনেট লিঙ্কেই রয়েছে।

এছাড়াও স্ত্রী পিঁপড়া আগাম বিপদ অনুধাবন করে সংকেত দিতে পারে। অর্থাৎ তাদের এতটুকু বুদ্ধিমত্তা আছে যে তারা বিপদ আগে থেকেই আঁচ করতে পারে।

সাধারণত মানুষের আগে জীবজন্তু ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম বার্তা পায়। পৃথিবী কেঁপে উঠার অনেক আগেই এরা বুঝতে পারে ভূমিকম্প আসছে। দীর্ঘদিনের প্রচলিত এই ধারণার প্রমাণ বিজ্ঞানীরাও পেয়েছে। তাই তারা জীবজন্তু কিভাবে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা পায় বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছে, পিঁপড়ারা ২.০ তীব্রতারও ভূমিকম্প বুঝতে পারে।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত স্ত্রী পিঁপড়াটি হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম উনার ও উনার বাহিনীর পায়ের আঘাতের ফলে সৃষ্ট ভূকম্পন অনুভব করতে পেরেছিল বিধায় দলের অন্যান্য পিঁপড়াদের কাছে সংকেত পাঠিয়েছিল- 

يَآ اَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوْا مَسَاكِنَكُمْ لَا يَـحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُوْدُهٗ وَهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ.

অর্থ : “হে পিপীলিকার দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করো। অন্যথায় হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবেন।” (পবিত্র সূরা নামল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)

সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পিঁপড়া সম্পর্কে বর্ণিত প্রতিটি বিষয়ই ধ্রুব সত্য। পিঁপড়ারা শব্দের মাধ্যমে যেমন তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে তেমনি রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীকে আলাদাভাবে চিনতেও পারে। আর এর মাধ্যমে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিকদের ধোঁকাবাজীও উন্মোচিত হলো।


বাস্তবিক অর্থেই যমযমের পানিতে রয়েছে অলৌকিক ব্যাপার যা যেকোন রোগের প্রতিকার করতে সক্ষম।

 বাস্তবিক অর্থেই যমযমের পানিতে রয়েছে অলৌকিক ব্যাপার যা যেকোন রোগের প্রতিকার করতে সক্ষম।  

নাস্তিকদের আপত্তি ৯ : "মুহম্মদ দাবী করেছেন, জমজমের পানিতে (Islamic holy water) রয়েছে এক অলৌকিক ব্যাপার যা যেকোন রোগের প্রতিকার করতে সক্ষম! কিন্তু এতে রয়েছে খুবই উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক (প্রায় তিন গুণ) এবং নাইট্রেট লেভেল, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া! আল্লাহ কি তার অনুসারীদের মাঝে এভাবে বিষকৃয়া ঘটাতে চান?

http://www.webcitation.org/query?url=http://www.sundayobserver.lk/2005/01/30/fea36.html&date=2011-05-07

http://www.webcitation.org/query?url=http://www.bbc.co.uk/news/uk-england-london-13267205&date=2011-05-07

http://www.webcitation.org/query?url=http://en.wikipedia.org/wiki/Arsenic_poisoning&date=2011-05-07"

খণ্ডণ : বাস্তবিক অর্থেই যমযমের পানিতে রয়েছে অলৌকিক ব্যাপার যা যেকোন রোগের প্রতিকার করতে সক্ষম।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- 

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّـهَا مُبَارَكَةٌ اِنَّـهَا طَعَامُ طُعْمٍ وَشِفَاءُ سُقْمٍ

অর্থ : “হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয় তা (যমযমের পানি) বরকতপূর্ণ। তা তৃপ্তিকর খাদ্য এবং রোগ নিরাময়ের ঔষধ।” (জামিউছ ছগীর লিত তবারানী ২৯৫, বাযযার ৩৯২৯)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُوْلُ مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ.

অর্থ : “হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যমযমের পানি যে নিয়্যতে পান করা হবে সে নিয়্যত পূর্ণ হওয়ায় ফলপ্রসূ।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩০৬২)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাত মুবারক ও ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ আসেন এবং ৩০ দিন শুধুমাত্র যমযমের পানি পান করেই বেঁচে ছিলেন। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার শুধু ক্ষুধা এবং তৃষ্ণাই মেটাননি, বরং তিনি মোটা হয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

قَالَ فَأَتَيْتُ مَكَّةَ فَتَضَعَّفْتُ رَجُلاً مِنْهُمْ فَقُلْتُ أَيْنَ هَذَا الَّذِي تَدْعُونَهُ الصَّابِئَ؟ فَأَشَارَ إِلَيَّ فَقَالَ الصَّابِئَ فَمَالَ عَلَيَّ أَهْلُ الْوَادِي بِكُلِّ مَدَرَةٍ وَعَظْمٍ حَتَّى خَرَرْتُ مَغْشِيًّا عَلَيَّ قَالَ فَارْتَفَعْتُ حِينَ ارْتَفَعْتُ كَأَنِّي نُصُبٌ أَحْمَرُ قَالَ فَأَتَيْتُ زَمْزَمَ فَغَسَلْتُ عَنِّي الدِّمَاءَ وَشَرِبْتُ مِنْ مَائِهَا وَلَقَدْ لَبِثْتُ يَا ابْنَ أَخِي ثَلاَثِينَ بَيْنَ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ مَا كَانَ لِي طَعَامٌ إِلاَّ مَاءُ زَمْزَمَ فَسَمِنْتُ حَتَّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِي وَمَا وَجَدْتُ عَلَى كَبِدِي سُخْفَةَ جُوعٍ قَالَ فَبَيْنَا أَهْلُ مَكَّةَ فِي لَيْلَةٍ قَمْرَاءَ إِضْحِيَانَ إِذْ ضُرِبَ عَلَى أَسْمِخَتِهِمْ فَمَا يَطُوفُ بِالْبَيْتِ أَحَدٌ وَامْرَأَتَيْنِ مِنْهُمْ تَدْعُوَانِ إِسَافًا وَنَائِلَةَ قَالَ فَأَتَتَا عَلَيَّ فِي طَوَافِهِمَا فَقُلْتُ أَنْكِحَا أَحَدَهُمَا الأُخْرَى قَالَ فَمَا تَنَاهَتَا عَنْ قَوْلِهِمَا قَالَ فَأَتَتَا عَلَيَّ فَقُلْتُ هَنٌ مِثْلُ الْخَشَبَةِ غَيْرَ أَنِّي لاَ أَكْنِي فَانْطَلَقَتَا تُوَلْوِلاَنِ وَتَقُولاَنِ لَوْ كَانَ هَا هُنَا أَحَدٌ مِنْ أَنْفَارِنَا قَالَ فَاسْتَقْبَلَهُمَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ وَهُمَا هَابِطَانِ قَالَ مَا لَكُمَا؟ قَالَتَا الصَّابِئُ بَيْنَ الْكَعْبَةِ وَأَسْتَارِهَا قَالَ مَا قَالَ لَكُمَا؟ قَالَتَا إِنَّهُ قَالَ لَنَا كَلِمَةً تَمْلأُ الْفَمَ وَجَاءَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى اسْتَلَمَ الْحَجَرَ وَطَافَ بِالْبَيْتِ هُوَ وَصَاحِبُهُ ثُمَّ صَلَّى فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ قَالَ أَبُو ذَرٍّ فَكُنْتُ أَنَا أَوَّلُ مَنْ حَيَّاهُ بِتَحِيَّةِ الإِسْلاَمِ قَالَ فَقُلْتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ وَعَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ ثُمَّ قَالَ مَنْ أَنْتَ؟ قَالَ قُلْتُ مِنْ غِفَارٍ قَالَ فَأَهْوَى بِيَدِهِ فَوَضَعَ أَصَابِعَهُ عَلَى جَبْهَتِهِ فَقُلْتُ فِي نَفْسِي كَرِهَ أَنِ انْتَمَيْتُ إِلَى غِفَارٍ فَذَهَبْتُ آخُذُ بِيَدِهِ فَقَدَعَنِي صَاحِبُهُ وَكَانَ أَعْلَمَ بِهِ مِنِّي ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ ثُمَّ قَالَ مَتَى كُنْتَ هَا هُنَا؟ قَالَ قُلْتُ قَدْ كُنْتُ هَا هُنَا مُنْذُ ثَلاَثِينَ بَيْنَ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ قَالَ فَمَنْ كَانَ يُطْعِمُكَ قَالَ قُلْتُ مَا كَانَ لِي طَعَامٌ إِلاَّ مَاءُ زَمْزَمَ فَسَمِنْتُ حَتَّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِي وَمَا أَجِدُ عَلَى كَبِدِي سُخْفَةَ جُوعٍ قَالَ إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ.

অর্থ: “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি পবিত্র মক্কা শরীফ আসলাম এবং তাদের এক জীর্ণ লোককে উদ্দেশ্য করে বললাম, তিনি কোথায় যাঁকে তোমরা সাবী (বিধর্মী) বলে ডাক? সে আমার দিকে ইঙ্গিত করল এবং বলল, এ-ই সাবী। এরপর পবিত্র মক্কা শরীফ পর্বতের ব্যক্তিরা ঢেলা ও হাড়সহ আমার উপর চড়াও হলো, এমনকি আমি অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়লাম। তিনি বললেন, যখন আমি উঠলাম তখন লাল মূর্তির (অর্থাৎ রক্তের ঢল) অবস্থায় উঠলাম। তিনি বলেন, তারপর আমি যমযম কূপের নিকট এসে আমার রক্ত ধুয়ে নিলাম। তারপর তার পানি পান করলাম। হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমি সেখানে ৩০ রাত-দিন অবস্থান করেছিলাম। সে সময় যমযমের পানি ব্যতীত আমার নিকট কোন খাবার ছিল না। এরপর আমি এমন মোটা হয়ে গেলাম যে, আমার পেটের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে গেল। আমি আমার অন্তরে ক্ষুধার যাতনা বুঝতে পারিনি। তিনি বললেন, ইতোমধ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীরা যখন এক উজ্জ্বল গভীর রাতে ঘুমিয়ে পড়ল, তখন কেউ বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করছিল না। সে সময় তাদের মধ্য থেকে দু’জন মহিলা ইসাফা ও নায়িলাকে ডাকছিল। তিনি বললেন, তারা তাওয়াফ করতে করতে আমার নিকট এসে উপস্থিত হল। আমি বললাম, তাদের একজনকে অপরজনের সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ করো। তিনি বললেন, তবুও তারা তাদের কথা হতে বিচ্ছিন্ন হলো না। তিনি বলেন, তারা আবার আমার সামনে দিয়ে আসলো। আমি অধৈর্য হয়ে বললাম, গুপ্তাঙ্গ কাষ্ঠের ন্যায়। এখানে আমি ইশারা ইঙ্গিত না করে স্পষ্টভাবেই বললাম। এতে তারা অভিসম্পাত করতে করতে ফিরে চলল আর বলতে লাগল, যদি এখানে আমাদের লোকদের মাঝে কেউ থাকতো (তাহলে এ দুষ্টকে উপযুক্ত শাস্তি দিত)! পথিমধ্যে উভয় নারীর সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ও সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে দেখা হলো। তখন উনারা উভয়ে উঁচুভূমি থেকে নীচে নামছিলেন। তিনি তাদের দু’জনকেই সুওয়াল করলেন, কী হয়েছে তোমাদের? তারা বলল, পবিত্র কা’বা শরীফ ও উনার পর্দার মধ্যস্থলে এ বিধর্মী আছে। তিনি সুওয়াল করলেন, তিনি তোমাদের কী বলেছেন? তারা বলল, সে এমন কথা বলেছে যাতে মুখ ভরে যায় (মুখে বলা ঠিক না)। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে উনার সাথীসহ হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং পবিত্র বাইতুল্লাহ্ শরীফ তাওয়াফ করে ছলাত আদায় করলেন। যখন তিনি উনার ছলাত আদায় শেষ করলেন তখন হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি প্রথম লোক, যে উনাকে ইসলামী শরয়ী নিয়মে সালাম জানিয়ে বললাম, আস্সালামু ‘আলাইকা ইয়া রসূলুল্লাহ্! অতঃপর তিনি জানতে চাইলেন, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি গিফার সম্প্রদায়ের ব্যক্তি। তিনি বললেন, তারপর তিনি উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাহ (মহাসম্মানিত হাত) মুবারক ঝুকালেন এবং উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাহ (মহাসম্মানিত হাত) মুবারক উনার মহাসম্মানিত নূরুশ শক্ব (মহাসম্মানিত আঙ্গুল) মুবারকগুলো কপালে রাখলেন। আমি ধারণা করলাম, গিফার সম্প্রদায়ের প্রতি আমার সম্পর্ককে তিনি পছন্দ করছেন না। তারপর আমি উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাহ (মহাসম্মানিত হাত) মুবারক ধরতে চাইলাম। উনার সাথী আমাকে বাধা দিলেন। তিনি উনাকে আমার তুলনায় বহু বেশী ভাল জানতেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলে দেখলেন এবং আমাকে প্রতি সুওয়াল মুবারক করলেন, আপনি কতদিন যাবৎ এখানে অবস্থান করছেন? আমি বললাম, আমি এখানে ৩০টি রাত্র-দিন যাবৎ আছি। তিনি বললেন, আপনাকে কে খাদ্য দিত? আমি বললাম, যমযম কূপের পানি ব্যতীত আমার জন্য অন্য কোন খাদ্য ছিল না। এ পানি পান করেই আমি স্থূলদেহী হয়ে গেছি, এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে এবং আমি কখনো ক্ষুধার কোন দূর্বলতা বুঝতে পারিনি। তিনি বললেন, এ পানি অতিশয় বরকতময় ও প্রাচুর্যময় এবং তা অন্যান্য খাবারের মতো তা পেট পূর্ণ করে দেয়।” (মুসলিম শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৪৭৩)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে যে কয়টি বিষয় সুস্পষ্ট তাহলো-

১.হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি টানা ৩০ দিন যমযমের পানি পান করেছেন।

২.এই ৩০ দিন তিনি অন্য কোন খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করেননি।

৩.এই ৩০ দিনে উনার কোন ক্ষুধা জনিত দূর্বলতা অনুভূত হয়নি।

৪.এই ৩০ দিনে তিনি শীর্ণকায় না হয়ে বরং স্থূলদেহী অর্থাৎ মোটা-সোটা হয়েছিলেন। উনার পেটের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছিল।

অপরপক্ষে মানুষের শরীরে যখন মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক জমা হয়। তখন তা কিডনীর মাধ্যমে ছোট ইস্তিঞ্জার সাথে বের হয়ে যেতে না পেরে চুল ও নখে জমতে থাকে। এভাবেই দিনের পর দিন গড়াতে গড়াতে মানবদেহে এ নীরব ঘাতকের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

মানুষের শরীরে আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার যে লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায় তাহলো-

ত্বকের উপসর্গ : 

১. ত্বক শক্ত, খসখসে ও মোটা হয়ে যায়। যাকে কেরাটোসিস বলা হয়। 

২. হাত পায়ের তালুতে ফুসকুড়ির মত ছোট ছোট শক্ত গোটার মত দাগ দেখা যায়। 

৩. হাত পায়ের তালুতে কালো দাগ পড়ে, চামড়ার রঙও কালো হয়ে যায়।

৪. বুকে পিঠে কিংবা বাহুতে স্পটেড পিগমেনটেশন দেখা দিতে পারে।

৫. কারো কারো হাত পায়ের চামড়া পুরু হয়ে যায় আঙুল বেঁকে যায়। পায়ে আঙুলের মাথায় পচন ধরতে পারে।

৬. হাত পায়ের চামড়া শক্ত হয়ে ফেটে যায়। 

৭. হাত পা ক্রমশ অসাড় হয়ে পড়ে, কর্মশক্তি হ্রাস পায়।

৮. দীর্ঘদিন ঠাণ্ডা ও কাশি লেগে থাকা। 

৯. শরীরে জ্বালা পোড়া বেড়ে যায়।

পরিপাকতন্ত্রের উপসর্গ : 

১. গলা খসখসে ও শুকিয়ে যায় এবং পিপাসা বৃদ্ধি পায়। 

২. গলা জ্বালা করে, বমি বমি ভাব হয়। 

৩. আক্রান্ত রোগীর জিহ্বা, মাড়ি ও ঠোঁটে মিউকাস, মেমব্রেন ও মেলানোসিস হতে পারে। 

৪. রোগী পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করে।

৫. ছোট ইস্তিঞ্জা খুব কম হয় অথবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

৬. বড় ইস্তিঞ্জার সময় ইস্তিঞ্জার রাস্তায় প্রচ- যন্ত্রণা হয়, প্রদাহ হয় এবং রক্ত মিশ্রিত পাতলা ইস্তিঞ্জা হয়।

৭. দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে না।

৮. মুখম-লের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়, চোখ কোঠরাগত হয় এবং দেহের গোশতপেশীর খিচুনী হয়।

আর্সেনিক রোগের চূড়ান্ত লক্ষণ : 

১. রক্তশূন্যতা হয়, শ্রবণশক্তি কমে যায়।

২. ত্বক, মুত্রথলি, শ্বাসনালী, কিডনী ও যকৃতের ক্যান্সার হতে পারে।

৩. হৃদপি-ের দাহ হয়। এমনকি হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নাইট্রেট বিষাক্ততার উপসর্গ :

অধিক পরিমাণে নাইট্রেট গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই নাইট্রেট বিষাক্ততার লক্ষণ শরীরে পরিলক্ষিত হয়। সাধারণভাবে নাইট্রেট বিষাক্ততার লক্ষণগুলো হলো- দ্রুত কিন্তু দূর্বল নাড়ী স্পন্দন, পেশী কম্পন, দ্রুত অগভীর শ্বাস (tachypnea),  নীলাভ-ধূসর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি, অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ (ptylism),  বিষন্নতা, দূর্বলতা, অস্থিতিশীল চলনভঙ্গি, অসংলগ্ন আচরণ, ঘন ঘন ছোট ইস্তিঞ্জার বেগ এবং শরীরের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা। যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে এই অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যেতে থাকে, ফলে রোগীকে শয্যাশায়ী বা অচেতনাবস্থার দিকে ঠেলে দেয় এমনকি রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে। সচরাচরভাবে শরীরে নাইট্রেট বিষাক্ততার লক্ষণ প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।

আর ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগগুলো হলো- আমাশয়, টাইফয়েড, কলেরা, কাশি, ডিপথেরিয়া, নিউমোনিয়া, যক্ষা, ধনুষ্টঙ্কার, মেনিনজাইটিস ও গনোরিয়া।

এখন হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি টানা ৩০ দিন শুধুমাত্র যমযমের পানিই পান করে বেঁচে ছিলেন অন্য কোন খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করেননি। অথচ উনার শরীরে কোন প্রকার আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার লক্ষণ বা নাইট্রেট বিষাক্ততার লক্ষণ কিংবা ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ লক্ষণও প্রকাশ পায়নি। যমযমের পানিতে যদি খুবই উচ্চ মাত্রার আর্সেনিক ও নাইট্রেট, এবং অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতিই থেকে থাকে তাহলে উক্ত ৩টি বিষয়ের বিষাক্ততার লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পাওয়ার কথা। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, যমযমের পানিতে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কোন পদার্থ বা বস্তুর উপস্থিতি কখনোই ছিল না, আজো নেই এবং কখনোই থাকা সম্ভব নয়।

সুতরাং যমযমের পানির ব্যাপারে যবন, ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্য, নৌদস্যু, বৃটিশরা যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে তা নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্য প্রণোদিত। পৃথিবীর অন্যান্য ল্যাবরেটরীতেও যমযমের পানি পরীক্ষা করা হয়েছে কিন্তু এতে কোন ক্ষতিকারক কোন বস্তু কেউই পায়নি। আর তাই এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কাট্টা মুসলিম বিদ্বেষী, যবন, ম্লেচ্ছ, অস্পৃশ্য, নৌদস্যু, বৃটিশরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই মিথ্যাচার করেছে।  

কেননা যমযমের পানি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানি। আর এই পানি সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশর্কীয় উপাদান সমৃদ্ধ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُ مَاءٍ عَلٰى وَجْهِ الْاَرْضِ مَاءُ زَمْزَمَ فِيْهِ طَعَامٌ مِنَ الطُّعْمِ وَشِفَاءٌ مِنَ السُّقْمِ وَشَرُّ مَاءٍ عَلٰى وَجْهِ الاَرْضِ مَاءٌ بِوَادِي بَرَهُوتٍ بَقِيَّةُ حَضْرَمَوْتَ كَرِجْلِ الْـجَرَادِ مِنَ الْـهَوَامِّ يُصْبِحُ يَتَدَفَّقُ وَيُـمْسِي لَا بَلالَ بِـهَا.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পৃথিবীর বুকে সর্বশ্রেষ্ঠ পানি হল যমযমের পানি। তাতে রয়েছে তৃপ্তির খাদ্য এবং ব্যাধির আরোগ্য।” (মু’জামুল আওসাত লিত ত্ববারানী ৩৯১২, ৮১২৯; মু’জামুল কবীর লিত ত্ববারানী ৩য় খ- ৩০৮ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ১১০০৪)

যমযমের পানি নিঃসন্দেহে অন্যান্য যে কোন পানি থেকে স্বাতন্ত্র। কেননা সাধারণ পানির তুলনায় যমযমের পানির মধ্যে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সামান্য বেশী থাকার কারণেই এই পানি শুধু যে পিপাসা মেটায় তা নয় বরং এটি ক্ষুধাও নিবারণ করে। ফলে পানকারীর ক্লান্ত শরীরকে সতেজ ও সজীব করে তোলে।

কিন্তু এর চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, যমযমের পানিতে রয়েছে ফ্লোরাইড। আর ফ্লোরাইডে রয়েছে জীবানুনাশক ক্ষমতা। আর তাই যমযমের পানি পানের জন্য সর্বোত্তম।

তাছাড়া যমযমের পানি কিছুটা আলাদা স্বাদযুক্ত, বর্ণ ও গন্ধহীন। সাধারণত যমযম কূপের পানির ঢ়ঐ এর মান ৭.৯-৮.০ হয়ে থাকে। যা এই পানির অ্যালকালাইন বা ক্ষারীয় হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। অন্যদিকে সাধারণত আমরা যেসব পানি পান করি তার ঢ়ঐ মান থাকে ৭.০।

এক গবেষণায় দেখা যায় যে, অ্যালকালাইন সমৃদ্ধ পানি মানুষের পাকস্থলী নিঃসৃত এনজাইম ‘পেপসিন’ এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এই এনজাইমটি মানুষের শরীরে এসিড রিফ্লাক্স ডিজিজ সৃষ্টির জন্য দায়ী অন্যতম প্রধান এনজাইম।

অন্য আরেকটি পরীক্ষায় দেখা যায় যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত কলোস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখতে ক্ষারীয় পানি বেশ কার্যকরী।

পরীক্ষায় আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, যমযমের পানি শরীরের রক্তের লোহিত কণিকা (RBC), শ্বেত কণিকা (WBC)  ও অনুচক্রিকার (platelets)  সংখ্যা বৃদ্ধি করে; রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এমনকি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের (detoxify)  করে দেয়।

সুতরাং যমযমের পানিতে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কোন পদার্থ বা বস্তুর উপস্থিতি সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব।

এছাড়াও যমযমের পানি শুধু হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিই পান করেনি বরং যমযম কূপ উৎপত্তি লাভ করার পর থেকে যতদিন প্রকাশিত অবস্থায় ছিল এবং পুনঃরুদ্ধারের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষ এই কূপের পানি পান করেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। কারোই কখনো কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়নি।

এই কোটি কোটি মানুষের মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সহ মুসলমানরাও যেমন ছিলেন তেমনি পৃথিবীর নিকৃষ্ট কাফির আবূ জাহিল, আবূ লাহাব, ওতবা, শায়বা, মুগীরা সহ অন্যান্য কাফিররাও ছিল।

যমযমের পানি পান করে কোন মুসলমান যেমন কোন প্রকার বিষাক্ততায় আক্রান্ত হননি, হচ্ছেন না ও হবেনও না। ঠিক তেমনি কোন কাফিরও কোন প্রকার বিষাক্ততায় আক্রান্ত হয়নি, হচ্ছে না ও হবেও না। বরং যমযমের পানি পান ছেড়ে দেয়ায় পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনারা পায়ের রোগে আক্রান্ত হন।

এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যখন দ্রুতগতির প্রসঙ্গ আসতো তখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনারা  দ্রুততম হতেন এবং যখন কুস্তির প্রসঙ্গ আসতো তখন উনারাই সবচেয়ে শক্তিশালী হতেন। কিন্তু যখনই উনারা যমযম কূপের পানি পান করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তখন উনারা উনাদের পায়ের রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছিলেন।” (..............................)

যমযমের পানি পানের পরিমাণ দ্বারা যারা মুনাফিক্ব তাদেরকে চিহ্নিত করা যায়। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-  

عَنْ حَضْرِتْ مُـحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ اَبِـيْ بَكْرٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ كُنْتُ عِنْدَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ جَالِسًا فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ مِنْ اَيْنَ جِئْتَ قَالَ مِنْ زَمْزَمَ‏ قَالَ فَشَرِبْتَ مِنْهَا كَمَا يَنْبَغِي قَالَ وَكَيْفَ قَالَ اِذَا شَرِبْتَ مِنْهَا فَاسْتَقْبِلِ الْكَعْبَةَ وَاذْكُرِ اسْمَ اللهِ وَتَنَفَّسْ ثَلَاثًا وَتَضَلَّعْ مِنْهَا فَاِذَا فَرَغْتَ فَاحْمَدِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَاِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ اِنَّ اٰيَةَ مَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْمُنَافِقِيْنَ اَنَّـهُمْ لَا يَتَضَلَّعُوْنَ مِنْ زَمْزَمَ‏.‏

অর্থ : “হযরত মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান বিন আবূ বাকর (মাকবুল) রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। আমি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এক ব্যক্তি উনার নিকট এলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তুমি কোথা থেকে এসেছো? সে বললো যমযমের নিকট থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তা থেকে প্রয়োজনমত পান করেছ? সে বললো, তা কিরূপে? তিনি বললেন, তুমি তা থেকে পান করার সময় কিবলামুখী হবে, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক স্মরণ করবে, তিনবার নিঃশ্বাস নিবে এবং তৃপ্তি সহকারে পান করবে। পানি পান শেষে তুমি মহামহিম আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করবে। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,  আমাদের ও মুনাফিক্বদের মধ্যে নিদর্শন এই যে, তারা তৃপ্তি সহকারে যমযমের পানি পান করে না।” (ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুল হজ্জ : হাদীছ শরীফ নং ৩০৬১)

সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, একমাত্র মুনাফিক্বরাই যমযমের পানি নিয়ে বাকবিতণ্ডা করে থাকে। আর নাস্তিকরা হচ্ছে মুনাফিক্ব শ্রেণীর জীব। তাই তারাই যমযমের পানি নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে থাকে।