নিশ্চয়ই চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই এদের শরীর থেকে তাদের পাচিত খাদ্যবস্তু ও রক্তের মধ্যবর্তী বস্তু থেকে নিঃসৃত দুধ যা পানকারীদের জন্য উপাদেয়।
নাস্তিকদের আপত্তি ৫ : “গাভির দুধ কি দেহাভ্যন্তরে অবস্থিত রক্ত এবং গোবর থেকে নিঃসৃত হয় (Quran 16:66)?Ó
খণ্ডণ : মহান আল্লাহ পাক তিনি গাভীর দুধ সৃষ্টি সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِنَّ لَكُمْ فِي الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةً نُسْقِيكُمْ مِـمَّا فِي بُطُوْنِهِ مِنْ بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِلشَّارِبِيْنَ
অর্থ : “নিশ্চয়ই চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই এদের শরীর থেকে তাদের পাচিত খাদ্যবস্তু ও রক্তের মধ্যবর্তী বস্তু থেকে নিঃসৃত দুধ যা পানকারীদের জন্য উপাদেয়।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৬)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ৫ খানা শব্দ মুবারক বিশ্লেষণ করলেই আমরা বুঝতে সক্ষম হবো গাভীর দুগ্ধ কোন্ উপাদান থেকে তৈরী হয়। উক্ত ৫ খানা শব্দ মুবারক হচ্ছে-
১) مِنْ بَيْنِ ‘এদের মধ্যবর্তী উপাদান বা বস্তু থেকে’, ২) فَرْثٍ ‘পাচিত খাদ্যবস্তু’, ৩) وَ ‘এবং’ ৪) دَمٍ ‘রক্ত’।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত فَرْثٍ ও دَمٍ এর মধ্যবর্তী উপাদান বা বস্তু থেকেই মূলত গাভীর দুগ্ধ তৈরী হয়। এখানে فَرْثٍ ও دَمٍ থেকেই দুগ্ধ তৈরী হয়- এ কথা বলা হয়নি বরং বলা হয়েছে فَرْثٍ ও دَمٍ এর মধ্যবর্তী উপাদান বা বস্তু থেকেই মূলত গাভীর দুগ্ধ তৈরী হয়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্য একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَـخْرُجُ مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ
অর্থ : “এটা নির্গত হয় মেরুদ- ও বক্ষপাজরের মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে।” (পবিত্র সূরা ত্বারিক শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
এখানে الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ দ্বারা এটা বুঝানো হয়নি যে, মেরুদ- ও বক্ষপাজর- এই দুই স্থান থেকে বরং বুঝানো হয়েছে মেরুদ- ও বক্ষপাজর- এই দুই অবস্থানের মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে। ঠিক একইভাবে فَرْثٍ وَدَمٍ দ্বারা এটা বুঝানো হয়নি যে, পাচিত খাদ্যবস্তু ও রক্ত- এই দুই বস্তু থেকে বরং বুঝানো হয়েছে পাচিত খাদ্যবস্তু ও রক্ত- এই বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী উপাদান বা বস্তু থেকে।
সুতরাং গাভীর দুগ্ধ তৈরী হয় فَرْثٍ বা পাচিত খাদ্যবস্তু ও دَمٍ বা রক্ত- এই বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী উপাদান বা বস্তু থেকে। فَرْثٍ বা পাচিত খাদ্যবস্তু ও دَمٍ বা রক্ত- এই বস্তুদ্বয় থেকে নয়। অর্থাৎ فَرْثٍ বা পাচিত খাদ্যবস্তু ও دَمٍ বা রক্ত- এই বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী এমন একটি উপাদান বা বস্তু সৃষ্টি হয়, সেটা থেকেই দুগ্ধ তৈরী হয়।
গরু, মহিষ, উট, ছাগল, দুম্বা, উট ইত্যাদি দুগ্ধ প্রদানকারী প্রাণী ঘাস ও তৃণলতাদি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। এরা যেহেতু জাবরকাটা প্রাণী বা রোমন্থক প্রাণী তাই এরা খাবারগুলো না চিবিয়ে গিলে ফেলে পরে বিশ্রামের সময় সে খাবার পেট থেকে মুখে এনে চিবিয়ে চিবিয়ে খায়। খাবারগুলি পেট থেকে মুখের মধ্যে এনে চিবিয়ে খাওয়ার জন্য এদের বিশেষ ধরণের পাচনতন্ত্র আছে। এদের পাকস্থলীতে চারটি কক্ষ আছে (১) উদর (২) জালবৎ থলি (৩) বহুভাঁজ থলি ও (৪) প্রকৃত পাকস্থলী। তবে উটের তৃতীয় কক্ষটি নেই। অর্থাৎ উটের তিনটি কক্ষ থাকে। রোমন্থক প্রাণীরা যখন তাদের খাবার গিলে ফেলে তখন তা পাকস্থলীর প্রথম কক্ষে যায়। এটা সব থেকে বড় কক্ষ। খাদ্যদ্রব্য এই স্তরে বড় বড় দলার আকারে থাকে। এখানে খাবারগুলো ভিজে নরম হয়। তারপর চলে যায় দ্বিতীয় কক্ষে। এই কক্ষে খাবারগুলো আরো ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হয়।
জাবর কাটার সময় উদগীরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যবস্তু মুখের মধ্যে চলে আসে। চিবানো হয়ে গেলে চর্বিত খাদ্যবস্তু চলে যায় তৃতীয় কক্ষে। তারপর সেখান থেকে আসল পাকস্থলী বা চতুর্থ কক্ষে। ওখানেই পাচন ক্রিয়া সংঘটিত হয়। বিভিন্ন পাচক রসের ক্রিয়ার ফলে ভক্ষিত খাদ্যবস্তুগুলো ছোট ছোট কতায় পরিণত হয়। তখন পাচন প্রক্রিয়াধীন এই অর্ধ তরল (semi liquid) খাদ্যবস্তু ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছে। সেখানেও কিছু পরিবর্তনের পরে ক্ষুদ্রান্ত্রের গাত্র অতিক্রম করে মূল পুষ্টি উপাদান রক্তে পৌঁছে যায়। মোট ভক্ষিত খাদ্যবস্তুগুলোর বেশিরভাগই ক্ষুদ্রান্ত্রে পাচিত হয়ে যায়। অতঃপর অবশিষ্ট খাদ্যবস্তু বৃহদান্ত্রে পৌঁছে, সেখানে মূলত শোষণ ও পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে খাদ্যবস্তু হতে সর্বশেষ সার বস্তু শরীরে শোষিত হয়ে যায়। তাই সর্বশেষ বস্তু হিসেবে মলাশয়ে গোবর সঞ্চিত হয় যা যথাসময়ে শরীর থেকে নিঃসৃত হয়ে যায়।
ক্ষুদ্রান্ত্রের গাত্র অতিক্রম করে মূল পুষ্টি উপাদান রক্তে পৌঁছার পর রক্ত সে পুষ্টি উপাদান শরীরের সকল কোষকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদিসহ সরবরাহ করে এবং কোষ থেকে দূষিত পদার্থ গ্রহণ করে প্রশ্বাস ও মূত্রের মাধ্যমে পরিত্যাগ করে। সুতরাং পুষ্টিকর বস্তুগুলো রক্তে প্রবাহিত হয়। যে সমস্ত গ্রন্থি (যেমন দুধের বাট, পিটুইটারী) দুধ সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে সেগুলোর কোষসমূহও তাদের প্রয়োজনীয় বস্তুগুলো রক্তের মাধ্যমেই পেয়ে থাকে। এমনিভাবে দুধের মাখন, চিনি, ভিটামিন, প্রোটিন ইত্যাদি রক্ত দ্বারা সরবরাহ করা হয়। রক্তের এ বস্তুগুলো খাদ্য থেকে আসে আর রক্ত দুধের প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে সেসব গ্রন্থি থেকে চলে যায়। সুতরাং পাচিত খাদ্যবস্তু ও রক্তের মধ্যবর্তী অবস্থা থেকেই দুধের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
bs |
Lv`¨ MÖnY |
i³ |
1 |
cvK¯’jx‡Z
Lv`¨e¯‘ cvP‡bi gva¨‡g ¶z`ª ¶z`ª KZvq iƒcvšÍi |
i³ msenb Z‡š¿i
gva¨‡g cvK¯’jxmn mviv kix‡i i³ msenb |
2 |
¶z`ªv‡š¿ Aa©
cvwPZ Lv`¨e¯‘ ms‡kølYc~e©K Lv`¨ mvi i‡³ ¯’vbvšÍi |
cvP‡bi gva¨‡g
iƒcvšÍwiZ Lv`¨ mvi i‡³ MÖnY I `y» Drcv`Kvix MÖwš’mn mKj †Kv‡l msenb |
3 |
Aewkó Lv`¨e¯‘
c~Y© ms‡køl‡Yi Rb¨ e„n`v‡š¿ DcbxZ |
`y» Drcv`Kvix
MÖwš’ KZ…©K `y» Drcv`b |
4 |
e„n`v‡š¿ Aewkó
Lv`¨e¯‘ n‡Z me©‡kl mvi e¯‘ kix‡i †kvlY |
e„° KZ…©K †iPb
cÖwµqvi gva¨‡g i‡³ Dcw¯’Z kix‡ii AcÖ‡qvRbxq e¯‘ wb®‹vkb |
5 |
me©‡kl Drcv`
wn‡m‡e †Mvei Drcv`b |
me©‡kl Drcv`
wn‡m‡e g~Î Drcv`b |
১.পাকস্থলীতে খাদ্যবস্তু পাচনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কতায় রূপান্তর---- রক্ত সংবহন তন্ত্রের মাধ্যমে পাকস্থলীসহ সারা শরীরে রক্ত সংবহন
২.ক্ষুদ্রান্ত্রে অর্ধ পাচিত খাদ্যবস্তু সংশ্লেষণপূর্বক খাদ্য সার রক্তে স্থানান্তর---- পাচনের মাধ্যমে রূপান্তরিত খাদ্য সার রক্তে গ্রহণ ও দুগ্ধ উৎপাদকারী গ্রন্থিসহ সকল কোষে সংবহন
৩.অবশিষ্ট খাদ্যবস্তু পূর্ণ সংশ্লেষণের জন্য বৃহদান্ত্রে উপনীত----- দুগ্ধ উৎপাদকারী গ্রন্থি কর্তৃক দুগ্ধ উৎপাদন
৪.বৃহদান্ত্রে অবশিষ্ট খাদ্যবস্তু হতে সর্বশেষ সার বস্তু শরীরে শোষণ বৃক্ক কর্তৃক রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তে উপস্থিত শরীরের অপ্রয়োজনীয় বস্তু নিষ্কাশন
৫.সর্বশেষ উৎপাদ হিসেবে গোবর উৎপাদন--- সর্বশেষ উৎপাদ হিসেবে মূত্র উৎপাদন
উপরের ছক থেকে দেখা যাচ্ছে যে, গোবর ও রক্তের মধ্যবর্তী অবস্থা বলে কোন কিছুই নেই।
পাচিত খাদ্যবস্তু ও রক্তের মাঝখান দিয়ে পরিষ্কার দুধ বের করা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهُ قَالَ اِذا استقر العلف في الكرش صار اَسفله فرثا واَعلاه دما واَوسطه لبنا فيجري الدم في العروق واللبن في الضرع ويبقى الفرث كما هو
অর্থ : “হযরত আব্দুুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, জন্তুর ভক্ষিত ঘাস তার পাকস্থলীতে একত্রিত হলে তা সিদ্ধ করে। পাকস্থলীর এই ক্রিয়ার ফলে খাদ্যের অবশিষ্টাংশ নীচে বসে যায় এবং দুধ উপরে থেকে যায়। দুধের উপর থাকে রক্ত। এরপর যকৃত এই তিন প্রকার বস্তুকে পৃথকভাবে তাদের স্থানে ভাগ করে দেয়, রক্ত পৃথক করে রগের মধ্যে চালায় এবং দুধ পৃথক করে রগের মধ্যে চালায় এবং দুধ পৃথক করে জন্তুর স্তনে পৌঁছে দেয়। এখন পাকস্থলীতে শুধু অবশিষ্টাংশ থেকে যায়।” (মাআরেফুল কুরআন, বাংলা সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৭৪৬)
فَرْثٍ শব্দ মুবারক উনার অর্থ মলমূত্র/গোবর নয় বরং পাচিত খাদ্যবস্তু :
আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত فَرْثٍ শব্দ মুবারক উনার অর্থ কখনোই মলমূত্র/গোবর নয় বরং فَرْثٍ শব্দ মুবারক উনার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পাচিত খাদ্যবস্তু। কেননা, আরবী روث শব্দ সাধারণভাবে মলমূত্র/গোবর অর্থ প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
যেহেতু পরিপাক ক্রিয়ার সর্বশেষ উৎপাদ হচ্ছে গোবর, যা শরীরের প্রয়োজন নেই বিধায় শরীর থেকে নিঃসৃত হয়ে যায়। তাই গোবর ও রক্তের মধ্যবর্তী কোন অবস্থা থেকে নয় বরং পাচিত খাদ্যবস্তু ও রক্তের মধ্যবর্তী অবস্থা থেকেই দুগ্ধ উৎপাদিত হয়।
0 Comments:
Post a Comment