সুওয়াল : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিসের পাত্রে পানি পান করতেন?
জাওয়াব : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম কাঠের পেয়ালায় পানি পান করতেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ
রয়েছে-
عن
ثابت قال اخرج الينا انس بن مالك قدح خشب غليظا مضبيا بحديد فقال يا ثابت هذا قدح
رسول الله صلى الله عليه وسلم. (ترمذى شريف)
অর্থঃ- সাবেত বলেন, হযরত আনাস বিন মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একটি মোটা কাঠের পেয়ালা, (যার মুখে লোহার পাতের বেড়ী ছিল) বের করে আমাদেরকে দেখালেন এবং বললেন, হে সাবেত,
এটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পেয়ালা।” (তিরমিযী শরীফ)
জাওয়াব : শুধুমাত্র চামড়ার মুজার উপর মসেহ্ করা জায়েয। ফক্বিহগণের মতে সাধারণ কাপড়ের
মুজার উপর মসেহ্ করা জায়েয নেই। সাধারণ কাপড়ের মুজার উপর মসেহ্ করে নামায পড়লে
নামায আদায় হবেনা। তবে যদি সেটা কাপড়ের মুজা হয়, যা না
বেধে রাখলে স্বাভাবিকভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারে, ধুলা
প্রবেশ না করে,
সাধারণভাবে পানি প্রবেশ না করে এবং জুতা ব্যতিরেকেই যা পরে
রাস্তায় চলাচল করা যায়, এমন মোটা কাপড়ের মুজার উপর মসেহ্ করা
জায়েয। (হেদায়া, ফতহুল ক্বাদীর, আইনী, আলমগীরী)
আবা-১৮
সুওয়াল : আমরা কয়েকজন আপনাদের পত্রিকায় লেখা দিয়েছিলাম এবং কিছু কবিতাও পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তার কোনটাই ছাপানো হয়নি। তার কারণ জানালে আমরা খুশি হবো।
জাওয়াব : প্রথমতঃ লেখাটি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ ভিত্তিক হতে হবে। যা সম্পূর্ণরূপে
আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মোতাবেক হবে। এছাড়া লেখাটি স্বীকৃত মানের
হতে হবে। অর্থাৎ এর গঠনশৈলী, বিন্যাস, ভাষার
প্রাঞ্জলতা,
সাবলীলতা, গতিশীলতা, ধারাবাহিকতা
ইত্যাদি বজায় রাখতে হবে। এরকম মানের হলেই আমাদের পক্ষ থেকে যেকোন লেখা প্রকাশ করা
সম্ভব,
অন্যথায় নয়।
আবা-১৮
জাওয়াব : পায়খানায় প্রবেশের পূর্বে হাতে যদি এমন আংটি অথবা তাবিজ থাকে, যার মধ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম লেখা অথবা এমন তসবীহ্, যাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক লেখা রয়েছে, তা খুলে
রেখে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশের সময় বাম পা, বের
হওয়ার সময় ডান পা দিয়ে বের হতে হয়। প্রবেশ করার সময় “আল্লাহুম্মা
ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবিস ওয়াল খাবাইস পড়তে হয়, আর বের
হয়ে “গুফরানাকা আল্ হামদুলিল্লা হিল্লাযি আযহাবা আন্নিল আযা ওয়া আফানী পড়তে হয়। (ফতওয়ায়ে
আলমগীরী,
ফতওয়ায়ে নূরুল ইজাহ)
আবা-১৮
সুওয়াল : মুরগী যবেহ করার সময় যদি মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে ঐ মুরগীর গোস্ত খাওয়া সম্পর্কে মহাসম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে কোন
নিষেধ আছে কি?
জাওয়াব: মুরগী যবেহ করার সময় যদি মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে যবেহ-এর সুন্নাত আদায় না হওয়ার কারণে মাকরূহ্ তানযীহী হবে। কিন্তু গোস্ত
খাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই, গোস্ত খাওয়া সম্পূর্ণরূপে হালাল
হবে।
জাওয়াব : তামাক বা বিড়ি-সিগারেট পান করা সর্বসম্মত মতানুযায়ী মাকরূহ্ তাহরীমী। আর যে
ইমাম এ ধরণের মাকরূহ্ তাহরীমী কাজে লিপ্ত তার পিছনে নামায পড়াও মাকরূহ্ হবে। এ
ধরণের ইমামকে ইমামতি থেকে বাদ দেয়া উচিত। তবে বাদ দেয়ার আগে তাকে অবশ্যই সংশোধনের
কোশেশ করা উচিত। সংশোধিত হলে বহাল রাখতে হবে, অন্যথায়
অবশ্যই বাদ দিতে হবে। (দুররে সামীন, শরবুদ দু’খান, মাজালিসুল আবরার, ফতওয়া আশরাফিয়া, ফতওয়ায়ে আযিযী, ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
আবা-১৮
সুওয়াল: আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ফতওয়া দিয়েছেন- হরতাল, লংমার্চ ইত্যাদি নাজায়েয। যদি হরতাল, লংমার্চ ইত্যাদি নাজায়েযই হয়, তবে যারা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত তথা দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধিতা করে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা কিরূপ ব্যবস্থা নিব?
জাওয়াব: আমরা লংমার্চ হরতাল ইত্যাদি হারাম হওয়া সম্পর্কে যে ফতওয়া দিয়েছি, তা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অকাট্য দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে
দিয়েছি,
কোন মনগড়া ফতওয়া নয়। যারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী
এবং যারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে বক্তব্য মন্তব্য পেশ করে থাকে বা
কিছু লিখে থাকে,
তাদের শাস্তি অবশ্যই দিতে হবে। তবে তা ইসলামী শরীয়তসম্মত
পদ্ধতিতে হতে হবে। বিধর্মীদের কোন প্রবর্তিত আইন বা পদ্ধতি অনুযায়ী করা যাবেনা।
আবা-১৮
জাওয়াব : পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ومن
وقر على صاحب بدعة فقد اعانا على هدم الاسلام.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কোন বিদয়াতী ব্যক্তিকে সম্মান করে, সে যেন দ্বীন
ইসলাম উনাকে ধ্বংস সাধনে সাহায্য করলো।” (মিশকাত
শরীফ)
ফাসিক ব্যক্তিও বিদয়াতী ব্যক্তিকে সালাম দেয়া
ও সম্মান দেখানো মাকরূহ্। তাই কোন মুত্তাকী ব্যক্তির জন্য কোন ফাসিক ও বিদয়াতীকে সালাম দেয়া জায়েয নেই। তবে হিদায়াতের
জন্য জায়েয আছে। (শামী, কিমিয়ায়ে সাআদাত, ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
আবা-১৭
জাওয়াব : এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই পতিত হবে। চাই তালাক রাগবসত দেয়া হোক বা
হাসিমুখে দেয়া হোক অথবা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় দেয়া হোক, তাতে তিন
তালাক পতিত হবে। হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম
মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম
আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম সুফীয়ান সাওরি রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনারা এক সঙ্গে তিন তালাম দিলে তিন তালাকের-ই মত পোষণ করেছেন। হযরত
ইমাম নখঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম
দারুকুত্বনী রহমতুল্লাহি আলাইহি; হযরত ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি
আলাইহি এ মতের উপরই ফতওয়া দিয়েছেন। ফতহুল ক্বাদীর, আলমগীরী, শামী,
আইনী, বাহরুর রায়েক ইত্যাদি সমস্ত
ফিক্বহের কিতাবেই এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে তিন তালাকের মতই পোষণ করা হয়েছে। তিন
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিনা হিলায় গ্রহণ করা হারাম। হিলা হলো- তালাকের পর ইদ্দত
পালন শেষে স্ত্রীকে অন্যত্র বিবাহ দিয়ে এরপর দ্বিতীয় স্বামী, স্বামী-স্ত্রী ব্যবহারের পর ছেড়ে দিলে (তালাক দিলে) ইদ্দতের পর প্রথম স্বামী
বিবাহ করতে পারবে, অন্যথায় জায়েয নেই। (তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে রুহুল মা’আনী, তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে
কবীর, তাফসীরে খাজেন বাগবী, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে মবসুত লি সুরুখসী, ফতহুল
ক্বাদীর,
বেনায়া, আলমগীরী ইত্যাদি)
সুওয়াল : হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি
কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন?
জাওয়াব : হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা
শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তাইছিরুল উসুল, ইয়াম্বু, ইবনে খালকান, বোস্তানুল মুহাদ্দিসিন, ইকদুল জিদ ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত
আছে।
আবা-১৮
জাওয়াব : হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পীর ছাহেব ছিলেন হযরত শায়খ আবু আলি ফারমুদী রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত শায়খ আবু ইউসুফ হামদানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার পীর ভাই এবং ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত্ ত্বরীক্বত হযরত ইমাম আবুল কাসিম কুশাইরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দাদা পীর
ছাহেব।
আবা-১৮
সুওয়াল : হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি
কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন?
জাওয়াব : হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা
শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। তাইছিরুল উসুল, ইয়াম্বু, ইবনে খালকান, বোস্তানুল মুহাদ্দিসিন, ইকদুল জিদ ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত
আছে।
আবা-১৮
জাওয়াব : হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পীর ছাহেব ছিলেন হযরত শায়খ আবু আলি ফারমুদী রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত শায়খ আবু ইউসুফ হামদানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার পীর ভাই এবং ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত্ ত্বরীক্বত হযরত ইমাম আবুল কাসিম কুশাইরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দাদা পীর
ছাহেব।
আবা-১৭
জাওয়াব : মাগরীব নামাযের ওয়াক্ত হানাফী মাযহাব অনুযায়ী সূর্যাস্তের পর লাল রং (শফক্কে
আহমার) শেষ হয়ে যে সাদা রং (শফক্কে আরইয়াজ) প্রকাশ পায়, তা মিটে
যেয়ে অন্ধকার আসা পর্যন্ত থাকে। আর ঘন্টা হিসাবে মাগরীবের সময় সূর্য ডুবার পর থেকে
প্রায় ১ ঘন্টা ১০ মিনিট পর্যন্ত থাকে। এর মধ্যে নামায
পড়লে কাজার নিয়ত করতে হবেনা। তবে আলস্য করে দেরি করে নামায পড়া ভাল নয়। (আইনুল
হিদায়া,
শরহে বিকায়া)
আবা-১৮
জাওয়াব : মাটি জাতীয় পরিবস্তুর দ্বারা তায়াম্মুম করতে হয়। ধুলা-বালি, সুরকী,
পাথর, চুন, সুরমা, হরিতাল গন্ধক, লাল মাটি, এটেল মাটি, সাদা মাটি,
দোআঁশ মাটি, লোনাময় যমীনের লবনের উপর, পাথর,
পাঁকা ইট, মেটে চাড়া, পোড়া মাটি,
মাটির বাসন, ঘটি-বাটি, কলসি, পাতিল,
পাথর বা মাটির দেওয়ালে, চীনা
মাটির বর্তনের উপর যদি মাটি জাতীয় পদার্থের লেপ থাকে, কিন্তু
কাঁচের লেপ থাকলে জায়েয নেই। (তাতারখানিয়া, আলমগীরী, বাহরুর রায়েক, শরহে বেকায়া ইত্যাদি)
আবা-১৮
সুওয়াল : অনেকে দেখা যায়, লাল রুমাল দিয়ে পাগড়ী বাঁধে এবং
নামাযের ইমামতী করে। এ ধরণের ইমামের পেছনে
নামায পড়লে নামাযের কোন ক্ষতি হবে কি?
জাওয়াব : হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মিশকাত
শরীফ’ উনার শরাহ্ মিরকাত শরীফ কিতাবে লিখেছেন, লাল কাপড়
যদি এমন হয়, যার সম্পূর্ণই লাল,
তাহলে ওটা পুরুষের জন্য হারাম হবে। আর যদি অধিকাংশ লাল হয়, তাহলে
মাকরূহ্ হবে। এ মাসয়ালা অনুযায়ী লাল (অধিকাংশ) কাপড়ের রুমাল পরিধান করে বা পাগড়ী
বেঁধে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী হবে এবং এ ধরণের ইমামের পেছনে নামায পড়লে
নামায মাকরূহ্ হবে।
একবার এক লোক লাল কাপড় পরিহিত অবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম দিয়েছিল, কিন্তু
তিনি সালামের জাওয়াব দেননি। আর একবার উটের হাওদায় লাল কাপড় বিছানো হয়েছিল, কিন্তু
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাতেও বসেননি। সেটা উঠিয়ে তারপর
বসেছেন। (সিরাতুন নবী)
আবা-১৭
জামিয়ার
প্রশ্ন : রাজারবাগের ..... (হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা) তিনি
জাওয়াহিরুল ফিকাহ্ উনার ১ম খন্ড-২০২ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে দলীল পেশ করেছেন যে, পায়ে
চুম্বন করা সুন্নত। আশা করি এ ব্যাপারে শরীয়তের দৃষ্টিতে সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।
জামিয়ার
উত্তর : পায়ে চুম্বন বা কদমবুচির ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে উভয়
প্রকার মোটামুটি দলীল পাওয়া যায়। তবে “ফতওয়া” যেহেতু
স্থান কাল পাত্র ভেদে পার্থক্য হয়ে থাকে, তাই বর্তমান দ্বীনী অজ্ঞতা ও
মুর্খতার যুগে সার্বিক বিবেচনায় কদমবুচি না করা বা করতে না দেওয়াই ইসলামী আইনের
চূড়ান্ত ফয়সালা বা ফত্ওয়া।
উল্লেখ্য যে,
কদমবুচি ইত্যাদি জায়েযের জন্য উক্ত পীর সাহেব ক্বিবলা যে
কিতাবের হাওলা দিয়েছেন,
সেই কিতাবেই উহা নাজায়েয ও মাকরূহ হওয়ার কারণগুলো উল্লেখিত
হয়েছে। (জওয়াহিরুল ফিকাহ্ উনার ১৯৯-২০০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য) যা বর্তমান যুগের
প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ বাস্তব ও প্রযোজ্য হওয়ার দাবী রাখে।
এখন আমার সুওয়াল হলো- উপরোক্ত পত্রিকার জাওয়াব ঠিক হয়েছে কিনা এবং আপনাদের
মাসিক আল বাইয়িনাত পত্রিকায় কদম বূছী সম্পর্কে শুধু একটি কিতাবের দলীলই কি পেশ করা
হয়েছে? আর জাওয়াহিরুল ফিক্বাহে কি সত্যই কদমবূছী নাজায়েয বলা হয়েছে? সঠিক
উত্তরদানে আজ্ঞা হয়।
জাওয়াব : তথাকথিত মাসিক আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ তাদের উক্ত বক্তব্যে
মূলতঃ প্রতারনারই আশ্রয় নিয়েছে। কেননা তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, আল
বাইয়্যিনাত পত্রিকা কর্তৃপক্ষ কদমবূছী সুন্নত হওয়া প্রসঙ্গে শুধুমাত্র জাওয়াহিরুল
ফিক্বাহের দলীলই পেশ করেছেন। অথচ আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১২তম সংখ্যায় কদমবূছী ও
তার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে উক্ত কিতাব ছাড়াও পবিত্র হাদীছ শরীফ ও তার শরাহ্, ফতওয়া ও
ফিক্বাহের নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব হতে ১১৭ খানা দলীল দ্বারা ফতওয়া দেওয়া
হয়েছে। যেমন- বুখারী শরীফ,
আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী
শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মুস্তাদরেকে হাকিম,
বায়হাক্বী শরীফ, তিবরানী শরীফ, ওমদাতুল
ক্বারী, ফতহুল বারী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী শরহে তিরমিযী, মিরকাত শরহে মিশকাত, বযলুল
মাযহুদ শরহে আবূ দাউদ,
আশয়্যাতুল লোময়াত, মাবছূত, বাদায়েউস
সুনায়ে, কাজ্বীখান, তাতারখানিয়া,
মুহিত্ব ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবসমূহ।
এখানে
আরো উল্লেখ্য যে,
তথাকথিত আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ যে সিলসিলার অনুসারী, তাদের সে
সিলসিলাভূক্ত কিতাব ইম্দাদুল ফতওয়া, ইমদাদুল আহ্কাম, ফতওয়ায়ে
রশীদিয়া, মাওয়ায়েজে আশ্রাফিয়া,
আহসানুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে মাহমুদীয়া ইত্যাদিতেও
কদমবূছী করা জায়েয ও সুন্নত বলা হয়েছে।
অতএব, এটা
স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে,
কদমবূছী সম্পর্কে “আল জামিয়ার” উক্ত
বক্তব্য স্ববিরোধীতারই শামিল। আর তাদের মত যারা নিজেদের সিলসিলার ফতওয়ার বিরুদ্ধে
ফতওয়া দেয়, তাদের হিদায়েতের জন্যই আমাদের ফতওয়াগুলোতে সেই সিলসিলাভূক্ত কিতাবের হাওলা দেয়া
হয়ে থাকে। নচেৎ তাদের উক্ত কিতাবের হাওলা দেয়া আমাদের মোটেও প্রয়োজন ছিলনা। কারণ
আমাদের প্রতিটি ফতওয়ার স্বপক্ষে তাদের কিতাব ছাড়াও অন্যান্য অসংখ্য দলীল পেশ করা
হয় এবং আরো দলীল আমাদের নিকট মওজুদ আছে, যা প্রয়োজনে অবশ্যই পেশ করা যাবে
(ইনশাআল্লাহ)।
সুতরাং
প্রমাণিত হলো যে,
মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকাতে কদমবূছী সুন্নত হওয়া
সম্পর্কে শুধুমাত্র একটি মাত্র কিতাবের হাওলা দেয়া হয়নি। বরং এ ক্ষেত্রে তথাকথিত
আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষদের ধোকা দেয়ার জন্যই এ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।
তথাকথিত আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ আরো লিখেছে- “জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ” কিতাব উনার ১৯৯-২০০ পৃষ্ঠায় কদমবুছী নাজায়েয ও মাকরূহ্ হওয়ার কারণগুলো বর্ণিত
হয়েছে-” আর এ সূত্র ধরেই তারা সুন্নত কদমবূছীকে নাজায়েয প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা
চালিয়েছে।
হক্বপন্থী পাঠকবৃন্দ! উক্ত কিতাবের উক্ত পৃষ্ঠায় কারণগুলো বর্ণিত হয়েছে ঠিক, তাই বলে
উক্ত কারণ বা বক্তব্য দ্বারা মূল কদমবূছী কখনো নাজায়েয প্রমাণিত হয়না। বরং
কারণগুলো উল্লেখ করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো- কদমবূছীর সময় যেন কোন নাজায়েয কাজ
সংঘঠিত না হয়। আর এ কারণগুলো শুধুমাত্র কদমবূছীর জন্যই বলা হয়নি বরং মুছাফাহা ও
মুয়ানাক্বার ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে। তবে কি তাদের নিকট মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করাও
নাজায়েয ও মাকরূহ্?
এবার উক্ত কিতাবে বর্ণিত কারণগুলো বিশ্লেষণ করা যাক-
(১) সিজদার
নিয়তে মাথা ঝুকানোঃ- মহান আল্লাহ পাক
ব্যতীত কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই বরং সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।
তবে
কদমবূছী করার সময় অনিচ্ছা সত্বেও যদি মাথা কিছুটা নিচু হয়ে যায়, তবে তাতে
দোষ হবেনা। এটা জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্তেও উল্লেখ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে আমাদের ফতওয়ায়
দলীল ভিত্তিক বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
(২)
তাকাব্বুরী পয়দা হওয়াঃ- যাকে কদমবূছী করা হবে, তার মধ্যে যেন তাকাব্বুরী পয়দা না
হয়। কদমবূছী মূলতঃ দ্বীনদার, পরহেযগার, বুযুর্গ আলেম বা সম্মানিত ব্যক্তিকেই করার ইজাযত রয়েছে।
অতএব, যিনি উক্ত গুণে গুণান্বিত, উনার মধ্যে তাকাব্বুরী পয়দা হবে কি করে? তবে যে
দুনিয়াদার আলেম নামধারী,
তার মধ্যে তাকাব্বুরী পয়দা হওয়া স্বাভাবিক, তাই তাকে
কদমবূছী করা নাজায়েয হবে। কারণ সে সম্মানের উপযুক্ত নয়। আর কার মধ্যে তাকাব্বুরী
পয়দা হলো, কার মধ্যে হলো না,
সেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে বুঝা কখনো সম্ভব নয়, তাই
আমভাবে কদমবূছীকে নাজায়েয বলা যাবে না।
(৩)
কদমবূছী করার সময় কাউকে কষ্ট দেয়াঃ- এখানে কষ্ট বলতে এটাই বুঝানো হয়েছে যে, কাউকে
ঠেলে বা উপর দিয়ে গিয়ে কদমবূছী করা। এরূপ কষ্ট দেওয়া নাজায়েয, তাই বলে
কদমবূছী নাজায়েয হতে পারেনা।
(৪) রসম
(রেওয়াজ) করে নেয়া,
অর্থাৎ আবশ্যকীয় মনে করাঃ- এখানে আবশ্যকীয় বা জরুরী বলতে
ফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্বাদা মনে করাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কদমবূছী করাকে
ফরজ, ওয়াজিব মনে করা যাবেনা। কেননা সুন্নতকে ফরজ-ওয়াজিব মনে করা হারাম। সুতরাং যে
ব্যক্তি কদমবূছীকে ফরজের ন্যায় মনে করবে, তার আক্বীদাকে সংশোধন করতে হবে।
কেননা আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য উসূল হলো- মুস্তাহাব বা সুন্নতে যায়েদার মধ্যে বিদয়াত
বা নাজায়েয কাজ প্রবেশ করলে বিদয়াত ও নাজায়েয কাজকে দূর করে দিতে হবে এবং
মুস্তাহাবকে তার স্থানে বহাল রাখতে হবে। অতএব, কদমবূছীকে ফরজ-ওয়াজিব বলা হয়নি
বরং সকল কিতাবেই সুন্নত বলা হয়েছে। এবং যার ইচ্ছে, সে সুন্নত পালনের লক্ষ্যে কদমবূছী
করে, আর যার ইচ্ছে সে করেনা,
তাই বলে তাকে তিরস্কার বা তাকীদ দেয়া হয়না।
তাছাড়া যিনি হক্বানী আলেম, আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের দরবার শরীফ-এ ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ
কাজ সংঘঠিত হওয়া অসম্ভব। কেননা, তিনি উনার মুরীদ, মুতাক্বেদ ও অনুসারীগণকে অবশ্যই
উল্লেখিত নাজায়েয ও ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ হতে বিরত রাখবেন এবং কদমবূছী করার
সঠিক পদ্ধতি শিক্ষা দিবেন। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, উক্ত কিতাবে কারণগুলো উল্লেখ করার
উদ্দেশ্য হলো- নাজায়েয বা ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ কাজগুলো জানিয়ে দেওয়া। এরূপ
অনেক কারণ বা ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ কাজের কথা আমাদের ফতওয়াতেও উল্লেখ রয়েছে।
মূলতঃ জাওয়াহিরুল ফিক্বাহের বক্তব্য কখনোই মূল কদমবূছী বা দাস্তবূছীর বিপক্ষে
নয়। বরং উক্ত কিতাবে এটাকে সুন্নত প্রমাণ করা হয়েছে এবং কদমবূছী সম্পর্কে দীর্ঘ
আলোচনার পর নিম্মোক্ত সিদ্ধান্ত পেশ করা হয়েছে-
پس
مختصر با بھی ھے کہ سنت رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم اور تعامل صحابہ مین اسکی
جوحد منقول ھے اسکو اسی حدپر رکھا جائے. تو بلاشبہ دست بوسی قدم بوسی معانقہ جواھر
الفقہ ج1 صفہ 202)
অর্থঃ- সুতরাং সংক্ষিপ্ত
কথা হলো যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের আমলের দ্বারা এর (অর্থাৎ কদমবূছীর) যেই সীমা
বর্ণনা করা হয়েছে,
আমাদের এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। তবে নিঃসন্দেহে
দাস্তবূছী (হাত চুম্বন) কদমবূছী (পা চুম্বন), মোয়ানেকা, মোসাফাহা
সবই জায়েয বরং সুন্নত ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভূক্ত। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্ জিঃ ১
পৃঃ ২০২)
অতএব, যে কদমবূছী অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম প্রমাণিত, তা বিনা দলীলে শুধুমাত্র দ্বীনী
মূর্খতার অজুহাতে নাজায়েয প্রমাণ করার চেষ্টা করা, তাদের জিহালতকে আরো পরিস্ফুটিত
করে তোলে। এটাও জেনে রাখা উচিত যে, আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ দ্বীনের
ব্যাপারে মূর্খ হলেও সাধারণ মুসলমান দ্বীনের ব্যাপারে ততটা মূর্খ নয়। কাজেই এ
ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ নিশ্চিত থাকতে পারে।
তথাকথিত আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ আরো লিখেছে- “কদমবূছীর ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে
উভয় প্রকার মোটামুটি দলীল পাওয়া যায় ---।”
হ্যাঁ, কদমবূছীর
বিপক্ষেও দলীল থাকতে পারে,
তবে বিপক্ষে দলীল থাকলেই যে তা গ্রহণযোগ্য হবে তা নয়, বরং
পক্ষে-বিপক্ষে যখন দলীল পেশ করা হবে, তখন যার দলীলের সংখ্যা বেশী ও
অধীক নির্ভরযোগ্য,
তারটাই গ্রহণ করতে হবে। সঙ্গত কারণেই বলতে হয়, তথাকথিত
আল জামিয়া কর্তৃপক্ষ যদি কদমবূছীকে নাজায়িয প্রমাণ করতে চায়, তবে
তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে, আমরা সুন্নত প্রমাণে যে দলীলসমূহ পেশ করেছি, তার
চেয়েও বেশী সংখ্যক ও অধিক নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা। নতুবা তাদের ফতওয়া
মোটেও গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
هاتوابرهانكم انكنتم صادقين.
অর্থঃ- “যদি
তোমরা সত্যবাদী হও,
তবে দলীল পেশ কর।”
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কদমবূছী, দাস্তবূছী ইত্যাদি জায়েয ও সুন্নত হওয়ার স্বপক্ষে আমরা “মাসিক আল
বাইয়্যিনাত” পত্রিকাতে
বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব হতে সর্বমোট ১১৭টি দলীল পেশ করা হয়েছে।
সুতরাং বিস্তারিত জানতে হলে- হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের
আতঙ্ক ও বর্তমান মিথ্যাচারিতার যুগে সত্যের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকার
৩য় বর্ষ ৫ম ও ৬ষ্ট অর্থাৎ ১২তম সংখ্যার “কদমবূছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পড়ে দেখুন।
আবা-১৭লিংক - কদম বুছি ফতোয়া - https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_641.html