কদমবুছী
ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র-
মুহম্মদিয়া
জামিয়া শরীফ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ
রাব্বুল আ’লামীন উনার এবং অসংখ্য
দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে গবেষণা
কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে “মাসিক আল
বাইয়্যিনাত” প্রত্রিকায় যথাক্রমে টুপি, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামায ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে
ফতওয়া ও মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমীর ফতওয়া প্রকাশ
করার পর সপ্তম ফতওয়া হিসাবে “কদমবুছী ও তার
প্রাসঙ্গিক বিষয়” সম্পর্কে ফতওয়া
প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
“কদমবুছী” সম্পর্কে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেকের নিকট
সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা প্রচলিত যে,
কদমবুছী
অর্থ ‘পা’য়ে হাত দিয়ে সালাম করা এবং এ ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকেই
বিভ্রান্ত হয়েছে বা হয়। কেননা তারা মনে করে সালামের সাথে ‘পা’য়ে হাত দেয়ার
সম্পর্ক কি? আবার অনেকে এ বিভ্রান্তির
সুযোগে ইচ্ছাকৃতভাবে বা ছহীহ্ ইলমের অভাবে প্রচার করে বা করেছে যে, কদমবুছী করা সম্পূর্ণ বিধর্মী প্রথা, বিশেষভাবে যা হিন্দুদের সাষ্ঠাঙ্গের প্রণাম বা
পদধুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থাৎ গায়রুল্লাহ্ তথা মানুষের নিকট মাথা নত করার
কারণে রুকু-সিজদার সমতুল্য বিধায় শেরেক,
কুফরী, সুতরাং সম্পূর্ণ নাযায়েয-হারাম। অথচ কদমবুছী
করা সম্পূর্ণ জায়েয তথা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও বুযুর্গানে
দ্বীন উনাদের সুন্নত। কোন মুসলিম দাবীদার তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের
অনুসারীর নিকট কোন কিছু জায়েয, হালাল বা নাজায়েয, হারামের জন্য সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার
দৃষ্টিতে ফয়সালা প্রয়োজন। যার ভিত্তি হলো পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র
হাদীছ
শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস
শরীফ। অর্থাৎ কারো পক্ষেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নামে মনগড়া কিছু বলা, করা,
চলা
বা প্রচার করা সম্ভব নয়। কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত কেউ ইসলামী শরীয়ত প্রণেতা বা আদর্শ নয় এবং দলীলের
ক্ষেত্রেও উপরোক্ত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র
ইজমা
শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ ব্যতীত কোন দলীল নেই। সুতরাং জায়েয, নাজায়েয প্রমাণের জন্য দলীলের প্রয়োজন, এজন্য আমরা দলীলের দ্বারা প্রমাণ করবো, কদমবুছী করা সম্পূর্ণ জায়েয ও সুন্নত। কাজেই
সকলের উক্ত বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে,
সহীহ্
বুঝ ও সমঝের উদ্দেশ্যে আমাদের এ ফতওয়ার প্রকাশ।
কদমবুছীর সাথে সালামের মূলতঃ কোন
সম্পর্ক নেই, কেননা দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রথা। সালাম দেয়ার এক হুকুম, আর কদমবুছী করার অন্য হুকুম। সালাম দেয়া নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নত
মুবারক উনার অন্তর্ভূক্ত, যা উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য ক্ষেত্রবিশেষ বাদে দেয়া সুন্নত ও জাওয়াব দেয়া
ওয়াজিব। অথচ আদব-বরকত, মহব্বত-তা’যীম, শ্রদ্ধা-ভক্তি তথা
আনুগত্যের নিদর্শনস্বরূপ যেহেতু কদমবুছী করা হয়। সেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে কাউকে কদমবুছী করার প্রশ্নই আসে না, কিন্তু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা ঠিকই নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদম মুবারক
উনার মধ্যে বুছা দিয়েছেন অর্থাৎ পদচুম্বন করেছেন এবং পরবর্তীতে মর্যাদার তারতম্যের
কারণে সকল হযরত বুযুর্গানে দ্বীন উনারাই কদমবুছী নিয়েছেন বা করেছেন। কাজেই মুরীদের
জন্য পীর সাহেব উনাকে, ছাত্রদের জন্য
ওস্তাদকে, সন্তানের জন্য পিতা-মাতাকে, ছোটদের জন্য বড়দেরকে কদমবুছী করা শরীয়ত
অনুযায়ী সম্পূর্ণ জায়েয ও সুন্নত। ইসলাম
যেহেতু একটি পরিপূর্ণ দ্বীন। তাই সমস্ত বিষয়েরই দিক নিদের্শণা ইসলামে আছে। সুতরাং
পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিয় তথা আন্তর্জাতিকভঅবে পরস্পর দেখা
সাক্ষাতের ব্যাপারে তাযীম-তাকরীম, আচার-ব্যবহার, আলাপ-আলোচনা, আনুষ্ঠানিকতা ইত্যাদির সুস্পষ্ট নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম অবশ্যই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার
মধ্যে থাকবে। কাজেই প্রত্যেকেরই কর্তব্য সেই অনুযায়ী চলা তথা আমল করা। যেমন দেখা
সাক্ষাতের সময় প্রথমে সালাম দেয়া, তারপর মোছাফাহা
করা, তারপর প্রয়োজনে মোয়ানাক্বা
(কোলাকুলী) করা এবং সব শেষে যে বেশী বুযুর্গ,
তাঁকে
কদমবুছী করা।
সম্মানিত ইসলাম একটি
পরিপূর্ণ দ্বীন। সম্মানিত ইসলাম
উনার মধ্যে এমন কোন বিষয় নেই, যা ইসলামী শরীয়ত
উনার মধ্যে বর্ণনা করা হয়নি। একটি মানুষের হায়াত হতে মউত পর্যন্ত, মাথার তালু হতে পায়ের তলা পর্যন্ত এক কথায়
একটি মানুষকে পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত ও আল্লাহ পাক উনার হাবীব,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ
হতে হলে যা দরকার, তার প্রতিটিই
পুঙ্খাণুপুঙ্খভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র
ইজমা
শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। আর তাই মহান আল্লাহ পাক
রাব্বুল আ’লামীন তিনি ইরশাদ মুবারক
ফরমান,
اليوم
الكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيت لكم الاسلام دينا. (مائده
অর্থঃ- “আজ আমি তোমাদের
দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম
এবং দ্বীন ইসলাম উনাকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে পছন্দ করলাম।”
অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ
উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
كل فى كتاب مبين- وفى ايات اخرى- مافرتنا
فى الكتاب من شيئ.
অর্থঃ- “সবকিছুই এ স্পষ্ট
কিতাবে রয়েছে।”
অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ
উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, “এ কিতাবে কোন
বিষয়ের বর্ণনাই পরিত্যাগ করা হয়নি।”
অর্থাৎ
সকল বিষয়েই বর্ণনা করা হয়েছে। এমনিভাবে
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وعن
جابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه نسمع احاديث من يهود تعجبنا افترى ان
نكتب تعضها- فقال امتهو كون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى؟ لقد جئتكم بها بيضاء
نقيه ولو كان موسى حياما وسعه الا اتباعى. (رواه احمد وبيهقى فى شعب الايمان)
অর্থঃ- হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে
বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত ওমর
ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন,
আমরা
ইহুদীদের অনেক ধর্মীয় কাহিনী, কথাবার্তা, নিয়মকানুন ইত্যাদি শ্রবণ করে থাকি, যা আমাদের নিকট ভাল লাগে। আমরা ওটার থেকে কিছু
লিখে রাখতে পারবো কি? তখন নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত
বা বিভ্রান্ত রয়েছ? যেভাবে ইহুদী
নাসারাগণ বিভ্রান্ত রয়েছে? মহান আল্লাহ পাক
উনার কসম, আমি তোমাদের নিকট সম্পূর্ণ
পরিষ্কার ও পরিপূর্ণ দ্বীন এনেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম যদি এখন থাকতেন, তাহলে উনাকেও আমার দ্বীন অনুসরণ করতে হতো।”
উপরোক্ত পবিত্র কুরআন শরীফ
ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, সম্মানিত ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন এবং এ
দ্বীনে প্রতিটি বিষয়েরই সুষ্ঠ ও সঠিক ফায়সালা রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলমের
অভাবে ও সঠিক, সহীহ্ বুঝ না
থাকার কারণে এক কথায় কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে সম্মানিত ইসলাম
উনার কিছু কিছু বিষয়ে অহেতুক দ্বন্দের সৃষ্টি করে থাকে। তবে এ দ্বন্দের আরো একটি
প্রধান কারণ হলো- “নফসের তাবেদারী”। যার উজ্জল উদাহরণ হলো- বর্তমানে যে সকল লোক ছবি সংক্রান্ত
বিষয়ে জড়িত। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি আঁকা, তোলা,
রাখা
ইত্যাদি স্পষ্ট হারাম হওয়া সত্বেও নফসের তাবেদারী করে নিজের দোষ ধামাচাপা দেয়ার
জন্য কেউ কেউ বলে থাকে, বর্তমানে আধুনিক
যুগে ছবি তোলার প্রয়োজন রয়েছে। আর সঙ্গত কারণেই নানাবিধ মতবিরোধের সৃষ্টি করে। তবে
এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, ইসলামী শরীয়ত উনার
কোন বিষয়ে হক্কানী উলামায়ে কিরাম উনাদের মধ্যে বিন্দুমাত্রও দ্বন্দ নেই, যত দ্বন্দ উলামায়ে “ছূ” অর্থাৎ দুনিয়াদার
আলেমদের মধ্যে। কেননা তারা দ্বীনকে বিক্রি করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লুটার জন্য
জায়গা বিশেষে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী বক্তব্য পেশ করে
থাকে। আর তাই এদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হুঁশিয়ারবাণী উচ্চারিত
হয়েছে, اشد الناس عذابا
يوم القيامة عالم لم ينتفح بعلمه.
অর্থঃ- “ক্বিয়ামত দিবসে
মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা অধিক শাস্তি ভোগ করবে, যে তার অর্জিত ইলমের দ্বারা উপকারিতা অর্জন
করতে পারেনি।” (অর্থাৎ ইলম
অনুযায়ী আমল করেনি।)
তবে এখানে বিশেষভাবে
উল্লেখ্য যে, হক্ব ও নাহক্বের
দ্বন্দ ক্বিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে এবং হক্বের তুলনায় নাহক্বের দল সব সময়ই ভারী
থাকবে। তবে যারা হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি। আর যারা
নাহক্বে দৃঢ় থাকবে, তাদের স্থান
অবশ্যই জাহান্নাম।
যেমন, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
بدئ
الا سلام غريبا وسيعيد كما بدء فطوب للغرباء- (مشكوة
অর্থঃ- “ইসলাম অল্পসংখ্যক
লোকের দ্বারা শুরু হয়েছে এবং অল্পসংখ্যক লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সুতরাং সেই
অল্পসংখ্যক লোকের জন্যই সুসংবাদ।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ستفترق
امتى على ثلاث وسبعين قرقة كلهم فى النار الا ملت واحده- قالوامن هى رسوا لله صلى
الله عليه وسلم قال- ما انا عليه واصحابى (مشكوة شريف)
অর্থঃ- “অতি শীঘ্রই আমার
উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত বাকী ৭২টি দলই জাহান্নামী হবে।” হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুগণ উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, যে দলটি জান্নাতে
যাবে, সে দলটি কোন দল ইয়া
রাসূলল্লাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, “আমি এবং আমার হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত ও পথে যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে
(তারাই জান্নাতী)। (মিশকাত শরীফ)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে,
لايزال
طائفة من امتى منصورين على الحق لا يضرهم من خزلهم.
অর্থঃ- “আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল সব সময় হক্ব উনার উপর কায়েম
থাকবে, তাদেরকে কেউ ক্ষতি করতে
পারবে না।”
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা
এটাই বুঝা গেল যে, মুসলমানদের মধ্যে
একটি দল সদা সর্বদাই হক্ব মত ও হক্ব পথর উনাদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং তারা
সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করবে, যদিও তারা সংখ্যায়
কম হোক না কেন।”
কেননা মহান আল্লাহ পাক পবিত্র
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
كم من فئة قليلة غلبت فئة كشيرة با ذن الله.
অর্থঃ- “মহান আল্লাহ পাক
উনার নির্দেশ মুবারক মুতাবিক ছোট দল বড় দলের উপর বিজয়ী হয়ে থাকে।”
সুতরাং আমাদের প্রত্যেকেরই
উচিত নফসের তাবেদারী পরিত্যাগ করে,
হিংসা-বিদ্বেষ
ভুলে গিয়ে হক্ব মত ও হক্ব পথ উনাদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা।
যাই হোক আমাদের মূল আলোচনা
অর্থাৎ কদমবুছীর আলোচনায় আসা যাক।
কদম
শব্দের অর্থ হলো ‘পা’। আর ‘বুছী’ শব্দটি ফার্সী যার
অর্থ হলো চুম্বন করা। সুতরাং কদমবুছীর অর্থ দাঁড়ায় পা চুম্বন বা পদ চুম্বন করা। হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদম মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিতেন
এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা একজন অপরজনের কদমবুছী
করেছেন। তবে অবশ্যই উক্ত কদমবুছী তা’যীম, মুহব্বত ও বরকত হাছীলের লক্ষ্যেই করেছেন, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার দৃষ্টিতে ফক্বীহগণ ফতওয়া দেন যে,
পীর-বুযুর্গ, পরহেযগার আলেম, ওস্তাদ, মুরুব্বী,
পিতা-মাতা
ও ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সন্মানের অধিকারী, এরূপ ব্যক্তিদের কদমবুছী করা সুন্নত, সুন্নতে ছাহাবা ও তাবেয়ীনদের অন্তর্ভূক্ত।
কদমবুছীর ন্যায় উপরোক্ত ব্যক্তিদের দস্তবুছী অর্থাৎ হাত চুম্বন করাও সুন্নতের
অন্তর্ভূক্ত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়াও দুররুল মোখতার ও
রদ্দুল মোহতার কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
বুছা
(চুম্বন) ১২ প্রকার।
যথা- (১) কুফরী বুছা, যেমন যমীনকে তা’যীমের জন্য (আযীম অর্থাৎ বড় জেনে) বুছা (চুম্বন) দেয়া। (২) হারাম বুছা, যেমন যমীনকে তাহিয়্যাতের (মুবারকবাদীর) জন্য
বুছা (চুম্বন) দেয়া। (৩) মাকরূহ্ বুছা,
যেমন
আলেম এবং আদেল ভিন্ন অন্যকে বুছা দেয়া। (৪) বিদয়াতে মোবাহ্ বুছা, যেমন ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, রুটিতে বুছা দেয়া। কেউ কেউ ওটাকে হাসান
(উৎকৃষ্ট) বলেছেন। (৫) বেদয়াতে হাসানা বুছা,
যেমন
কুরআন শরীফকে বুছা দেয়া। হযরত ওসমান আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার
মধ্যে বুছা দিয়ে মুখে স্পর্শ করতেন এবং হযরত ওমর ফারুক আলাইহিস সালাম প্রতিদিন
প্রত্যুষে কুরআন শরীফ হাতে নিয়ে বুছা দিতেন এবং বলতেন, “এটা আমার পালনকর্তার হুকুমনামা।” (৬) দিয়ানাতের বুছা (দ্বীনদারীর বুছা), যেমন হজরে আসওয়াদকে বুছা দেয়া, পবিত্র
কা’বা শরীফ উনার চৌকাঠে বুছা দেয়া। (৭) শাহ্ওয়াতের (কাম ভাবের)
বুছা, যেমন স্বীয়-স্ত্রীর বা বাঁদীর
মুখে বুছা দেয়া। (৮) মোওয়াদ্দাতের বুছা,
যেমন
সন্তানের গালে বুছা দেয়া। (৯) রহমতের বুছা,
যেমন
মাতা-পিতার মস্তকে বুছা দেয়া (১০) শাফায়াতের বুছা, যেমন ভাইয়ের কপালে বুছা দেয়া। (১১) তাহিয়্যাতের বুছা, যেমন মু’মিনের হাত বুছা
দেয়া। (১২) সুন্নত বুছা, যেমন আলেম এবং
আদেলের হাত বুছা দেয়া।
হাক্কানী আলেমগণ
উনাদের ফযীলত :
বিশেষ করে আউলিয়ায়ে
কিরাম ও হক্কানী উলামায়ে কিরাম উনাদের যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করা অর্থাৎ উপযুক্ত সন্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্যই অবশ্য
কর্তব্য। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
العلماء
ورثة الانبياء.
অর্থঃ- “হক্কানী আলেমগণ
নবীগণ উনাদের উত্তরাধিকারী।”
তাই হযরত নবী-রসূল
আলাইহিমুস সালাম উনাদের ন্যায় হক্কানী উলামায়ে কিরামগণ উনারাও সন্মানের অধিকারী। এ
প্রসঙ্গে ‘দায়লামী শরীফ’ উনার মধ্যে একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ অধিক
প্রনিধানযোগ্য ও অনুসরণীয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
الشيخ
لقومه كالنبى فى امته. (ديلمى شريف
অর্থঃ- “পীর ছাহেব, হক্কানী আলেম উনার সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন, যেমন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা
উম্মতের মধ্যে।”
আর তাই মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি বলেন,
من
اكرم عالما فكاغما اكر سبعين نبيا، ومن اكرممتعلما فكاغما اكرم سبعين شهيدا.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কোন
আলেম উনাকে সন্মান করলো, সে যেন সত্তরজন
নবী আলাইহিস সালাম উনাদেরকে সন্মান করলো। আর যে ব্যক্তি কোন তলিবে ইলমকে সন্মান
করলো, সে যেন সত্তরজন শহীদ উনাকে
সন্মান করলো।” নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন,
من
زار عالما فكاغما زارنى، ومن زارنى فقد زارالله ومن زارالله فقد غفرله.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কোন
আলেমের সাথে সাক্ষাত করলো, সে যেন আমার সাথেই
সাক্ষাত করলো। আর যে আমার সাথে সাক্ষাত করলো,
সে
যেন মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাক্ষাত করলো। আর যে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে
সাক্ষাত করলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে
ক্ষমা করে দেবেন।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো
উল্লেখ করা হয়,
من
صلى خلف عالم فكاغما صلى خلف نبى ومن صلى خلف نبى فقد غفرله.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কোন
আলেমের পেছনে নামায পড়লো, সে যেন হযরত নবী
আলাইহিমুস সালাম উনার পেছনে নামায পড়লো। আর যে ব্যক্তি হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম
উনার পেছনে নামায পড়লো, মহান আল্লাহ পাক
তিনি তাকে ক্ষমা করবেন।”
সুতরাং উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত
আলোচনা দ্বারা বুঝা যায় যে, হক্কানী আলেম, পীর-মাশায়েখদের যথাযথ তা’যীম সন্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্যই জরুরী। তবে
অবশ্যই ইসলামী শরীয়ত উনার খেলাফ সন্মান করা যাবে না। অর্থাৎ সন্মান দেখাতে গিয়ে
সিজদা ইত্যাদি ইসলামী শরীয়ত উনার খেলাফ কাজ করা সম্পূর্ণই হারাম।
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম
রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হক্কানী আলেমদের সন্মান ও দস্তবুছীর ফযীলত সম্পর্কে ইমামুল
আইম্মা হযরত ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শক্বর রহমতুল্লাহি আলাইহি ইসরারুল আউলিয়া
কিতাবে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন,
পৃথিবীর ইতিহাসে যালিম
বাদশা (শাসক) হিসাবে খ্যাত হাজ্জাজ ইবনে ইউসূফ, যিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে হরকত সংযোজন করায়েছিলেন।
তার ইন্তেকালের পর এক ব্যক্তি তাকে স্বপে¦
দেখে
জিজ্ঞাসা করে যে, হে হাজ্জাজ ইবনে
ইউসূফ! আপনি তো দুনিয়ায় যালিম অত্যাচারী শাসক ছিলেন। আপনার ইন্তেকালের পর মহান আল্লাহ
পাক তিনি আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করলেন?
হাজ্জাজ
ইবনে ইউসূফ জবাব দেয়, মহান আল্লাহ পাক
তিনি আমাকে একটি আমলের উছীলায় ক্ষমা করেছেন। প্রশ্ন করা হলো কোন সেই আমল? যে আমলের উছীলায় আপনি নাযাত পেয়ে গেলেন? তখন হাজ্জাজ ইবনে ইউসূফ বললেন, আমি একদিন খালেছ নিয়তে মহান আল্লাহ পাক উনার
সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার দরবারে গিয়েছিলাম এবং মহব্বতে উনার হাত মোবারকে বুছা (চুম্বন)
দিয়েছিলাম। আমার ইন্তেকালের পর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “হে হাজ্জাজ ইবনে ইউসূফ! তুমি দুনিয়াতে আমার
ওলী হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার হাতে মহব্বতে বুছা (চুম্বন) দিয়েছিলে,
তাই
এ উছীলায় আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।”
সুবহানাল্লাহ!
কাজেই যেখানে কদমবুছী, দস্তবুছী ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত
এবং সুন্নাতে ছাহাবা হিসাবে সাব্যস্ত,
সেখানে
এটাকে বিদয়াত ও শিরক বলা গুমরাহী ব্যতীত আর কিছুই নয়। তবে হ্যাঁ, যারা এ জায়েয কদমবুছীর সঙ্গে নাজায়েয বিদয়াত ও
শিরক মিশ্রিত করে তাদের সে নাজায়েয,
বিদয়াত
ও শিরক উনার বিরোধিতা করা যেতে পারে এবং করতে হবে, তাই বলে মূল কদমবুছীকে নাজায়েয ও বিদয়াত বলা আদৌ শরীয়ত
সম্মত নয় বরং মূর্খতারই পরিচায়ক। কাজেই আমাদের উচিত সমাজ থেকে নাজায়েয, বিদয়াত ও শিরকের মূলোৎপাটন করে সুন্নতকে নিজের
মধ্যে ও অপরের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করার কোশেশ করা।
সুন্নতের গুরুত্ব
ও ফায়ায়েল:
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ
সুন্নতের বহু গুরুত্ব ও ফাযায়েল বর্ণিত হয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
উল্লেখ করা হয়,
من
احب سنتى فقد احبنى ومن احبنى كان معى فى جنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার
সুন্নাহকে মুহব্বত করলো, সে মূলতঃ আমাকেই মুহব্বত
করলো। যে আমাকে মুহব্বত করবে, সে আমার সাথে
জান্নাতে থাকবে।”
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من تمسك بسنتى عند فسباد امتى فله
اجرمأت الشهيد. অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিৎনার সময় আমার একটি সুন্নত
মুবারক পালন করবে, তাকে একশত শহীদের
ছওয়াব দান করা হবে।”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
আরো বর্ণিত রয়েছে যে,
كل
امتى يدخلون الجنة الامن ابى قالوا وم ابى يا رسول الله صلى عليه وسلم قال- منن
اطاعنى فقد دخل الجنة ومن عصانى فقدابى.
অর্থঃ- “আমার প্রত্যেক
উম্মতই জান্নাতে যাবে। তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত,
যে
আমাকে অস্বীকার করেছে।” জিজ্ঞাসা করা হলো
কে অস্বীকার করেছে হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম?
মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করেছে, সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার অনুসরণ করেনি
(বরং নাফরমানী করেছে) সেই আমাকে অস্বীকার করেছে।”
তাই সুন্নতের গুরুত্ব ও
তাৎপর্য বুঝাতে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
عليكم
بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهدينن. تمسكوابها وعضوا عليهابالتواجذ.
অর্থঃ- “তোমাদের জন্য আমার
সুন্নত মুবারক ও আমার হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীন উনাদের সুন্নতগুলো অবশ্যই
পালনীয়। তোমরা তা মাড়ীর দাঁত দিয়ে শক্ত করে আকড়িয়ে ধর।” (মিশকাত শরীফ)
কেননা সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণ ব্যতীত
মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ সন্তুষ্টি অর্জন করা অসম্ভব ব্যাপার। আর তাই মহান আল্লাহ
পাক তিনি কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ ফরমান,
قل انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحبب كم
الله ويغفر لكم ذنةبكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “হে আমার হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (আপনার উম্মতদেরকে) বলে দিন, তারা যদি আমার মুহব্বত অর্জন করতে চায় তবে যেন
আপনাকে অনুসরণ করে। তাহলে আমি তাদেরকে মুহব্বত করব এবং তাদের গুণাহখাতা ক্ষমা করব, মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা
এটাই বুঝা গেল যে, সুন্নত অনুসরণের
যথেষ্ট গুরুত্ব ও ফাযায়েল পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে
বর্ণিত হয়েছে, যা বলার অপেক্ষাই
রাখেনা। তাই কদমবুছী ও দস্তবুছী করা যেহেতু সুন্নত এবং সহীহ্ পবিত্র হাদীছ শরীফ
দ্বারা প্রমাণিত, সেহেতু সুন্নত
মুবারক উনাদের ফযীলত ও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পীর-বুযুর্গ, হক্কানী আলেম, পিতা-মাতা, মুরুব্বী ও সম্মানিত
ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সন্মানের অধিকারী এরূপ ব্যক্তিদের কদমবুছী বরং
দস্তবুছী ইত্যাদি করা যাবে এবং ফুকাহায়ে কিরাম উনাদের কেউ এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেননি
বরং সকলেই সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয ও সুন্নত ফতওয়া দিয়েছেন। (যার দলীলসমূহ একটু পরেই
আমরা পেশ করব ইনশাআল্লাহ)
তা’যীমী সিজদার আহকাম :
তবে হ্যাঁ, ফক্বীহ্গণ বলেছেন, উক্ত কদমবুছী ও দস্তবুছী ইত্যাদি খাহেশাতের
সাথে করা যাবেনা, ফক্বীহগণ এটাকে
মাকরূহ্ তাহরীমী বলেছেন। তবে তা’যীম-তাকরীম, মুহব্বত ও বরকত লাভের আশায় করে থাকলে অবশ্যই
জায়েয ও সুন্নত। ফক্বীহ্গণ আরো বলেন,
যদি
কেউ উল্লেখিত ব্যক্তিদের কদমবুছী করার সময় (রুকু, সিজদার নিয়তে) রুকু,
সিজদার
ন্যায় মাথা ঝুকায়, তবে স্পষ্ট শিরক ও
কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। তবে হ্যাঁ, যদি রুকু সিজদার
নিয়ত না থাকে এবং কদমবুছীর সময় অনিচ্ছা সত্বে সামান্য মাথা ঝুকে তবে তাতে শিরক হবে
না। কারন রুকু, সিজদা সর্বতোভাবেই
নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
انما الاعمال بالنيات.
অর্থঃ “নিশ্চয়ই কর্মের
ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।”
আর আমাদের এটাও জেনে রাখা
দরকার। যে মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয
এবং প্রকাশ্য শিরক-এর অন্তর্ভূক্ত। চাই সিজদায়ে তা’যীমী হোক অথবা সিজদায়ে উবূদিয়া। অথবা তাহিয়্যার (পবিত্রতার) জন্যই সিজদা করা
হোক না কেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কাউকে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সিজদা
করা যেরূপ হারাম ও শিরক-এর অন্তর্ভূক্ত,
তদ্রুপ
কোন ব্যক্তিকে তা’যীমের জন্য তা’যীমী সিজদা করা সবই হারাম ও পবিত্রতার জন্য তাহিয়্যার সিজদা
করাও ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয কুফরী শিরিকের
অন্তর্ভুক্ত। কেউ কেউ বলে থাকে, সিজদায়ে তা’যীমী ইত্যাদি যদি হারাম হয়, তবে মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা
করার জন্য ইবলিসকে আদেশ করলেন কেন?
এবং
হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার পিতা-মাতাকে সিজদা করলেন কেন? এর জবাবে এতটুকু বললেই যথেষ্ঠ যে, এটা হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইউসূফ
আলাইহিস সালাম উনার দ্বীন নয়, এটা হলো দ্বীন
ইসলাম অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীয়ত। আর এ শরীয়তে তা’যীমী সিজদা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। যারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইউসূফ
আলাইহিস সালাম উনার দ্বীনের অনুসরণ করে তা’যীমী সিজদা
ইত্যাদি জায়েয করার অপচেষ্টা চালায়,
তাদের
প্রতি আমাদের প্রশ্ন হলো- তবে কি আপনারা আপন বোনকে বিবাহ করবেন? হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ধর্মে তো এটা
জায়েয ছিল, কিন্তু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম
ধর্মে এটা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয। সুতরাং সিজদায়ে তা’যীমী, উবূদিয়া, তাহিয়্যাহ ইত্যাদি সবই হারাম। অতএব মহান আল্লাহ
পাক ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা করা সম্পূর্ণ শিরক ও কুফরী। আর শিরক সম্পর্কে মহান আল্লাহ
পাক তিনি কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান,
ان الشرك لظلم عظيم.
অর্থঃ “নিশ্চয়ই শিরক সবচেয়ে বড় গুণাহ্।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন,
سنتان
مو جبتان- قالوا وما موجبتان- قال- من مات يشرك با لله فدخل النار- ومن مات لا
يشرك با لله فدخل الجنة.
অর্থঃ- “দু’টি জিনিস ওয়াজিব হয়ে গেল।’ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, কি ওয়াজিব হলো?
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি শিরক করা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলো, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। আর যে শিরক
করে মারা গেল, তার জন্য
জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেল।”
কাজেই আমাদের ভালো করে মনে
রাখতে হবে যে, একমাত্র মহান আল্লাহ
পাক তিনি ব্যতীত কারো সম্মুখে সিজদার নিয়তে মাথা নত করা সম্পূর্ণই হারাম। এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়। একবার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কেউ কেউ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবারে নববী শরীফ উনার মধ্যে এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! গাছপালা, পশুপাখি, কিটপতঙ্গ সকলেই আপনাকে সিজদা করে, কাজেই আমরাও আপনাকে সিজদা করতে চাই। নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
لوكنت
امر احدا ان يسجد لا حد لامرت المرأة ان تسجد لزوجها.
অর্থঃ- “আমি যদি মানুষ
মানুষকে সিজদা করার অনুমতি প্রদান করতাম,
তবে
স্ত্রীদেরকে আদেশ করতাম, তারা যেন তাদের
স্বামীকে সিজদা করে” (কিন্তু মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত কাউকে সিজদা করা সম্পূর্ণ
হারাম)।
তবে আমাদের সমাজের কিছু
লোক তারা মনে করে থাকে, কারো সামনে মাথা
নিচু করলেই বুঝি সিজদা হয়ে গেল, এটা তাদের
একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। কেননা সিজদা সর্বতোভাবেই নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। যদি
শুধুমাত্র মাথা নিচু করলেই সিজদা হয়,
তবে
যারা মাটি কাটার সময় মাথা নিচু করে,
তারা
শিরক করছে? এবং ঘর ঝাড়ু, গর্ত খোঁড়া, ধান বুননের সময় মাথা নিচু করে শিরক করছেন? কিন্তু কেউই এগুলোকে শিরক বলবেন না, কারণ এ কাজগুলির সময় তাদের সিজদার নিয়ত থাকে
না। একটি ঘটনা পড়লে আমরা এ ব্যাপারটি আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবো যে, শুধুমাত্র মাথা নিচু করলেই সিজদা হয় না বরং
নিয়ত থাকা শর্ত। কিতাবে উল্লেখ করা হয়- এক মাওলানা সাহেব বিদেশ হতে সদ্য পাশ করে
এসেছেন। সে যখন তার গ্রামের বাড়িতে গেল,
বাড়িতে
যাওয়ার পথে দেখল কৃষকরা ক্ষেতের মধ্যে ধানের চারা রোপন করছে। যেহেতু ক্ষেতের মধ্যে
পানি ও কাদায় ভর্তি, তাই উপড় হয়ে মাথা
নিচু করে ধানের চারা রোপন করছিল। মাওলানা সাহেব কৃষকদের এ অবস্থা দেখে বলতে লাগলেন, আস্তাগফিরুল্লাহ! শেরেক করে করে ধান রোপন করার
কারণেই তো ফসলে বরকত হয় না। সেই কৃষকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যে মোটামুটি আলেম। মাওলানা সাহেবের উক্ত ফতওয়া
যখন সে শুনলো, তখন সে বললো, মাওলানা ছাহেব! আাপনার ফতওয়াটি গুরুত্বপূর্ণ মনে
হচ্ছে। তাই আপনি ফতওয়াটি লিখিতভাবে দিলে হয়ত আমরা এ শিরক হতে বেঁচে থাকতে পারবো।
মাওলানা সাহেব যখন তার পকেট হতে কাগজ ও কলম বের করতে লাগলেন, ঘটনাক্রমে কলমখানা তার হাত হতে মাটিতে পড়ে
যায়। মাওলানা ছাহেব (মাটি হতে কলমটি উঠাবার সময় মাথা নিচু করতে হয়) যখনই কলম
উঠাবার সময় মাথা নিচু করলেন, তখন সেই কৃষক
বললেন, আস্তাগফিরুল্লাহ্! শিরক
করে করে ফতওয়া দিলে সে ফতওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। তখন মাওলানা সাহেব বুঝতে পারলেন যে, শুধুমাত্র মাথা ঝুকালেই সিজদা হয় না, বরং নিয়ত থাকা শর্ত। তাই ফুকাহায়ে ক্বিরাম বলেন,
যদি
সিজদার নিয়তে মাথা ঝুকানো হয়, তবে তা সম্পূর্ণ
হারাম। আর যদি অনিচ্ছা সত্বেও কদমবুছী করার সময় মাথা কিছুটা ঝুকে যায়, তবে তা কদমবুছীরই অন্তর্ভূক্ত, তা সিজদার অন্তর্ভূক্ত নয়। কদমবুছী করার সময়
মাথা ঝুকানো সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
“কদমবুছীর
সময় মাথা ঝুকানো মূলতঃ উদ্দেশ্য নয়। কারো সন্মানার্থে ইচ্ছাকৃত সিজদার ন্যায় মাথা
ঝুকানো নাজায়েয। তাই, সিজদার নিয়ত
ব্যতীত মাথা ঝুকানো নিষেধ নয় এবং স্থান বিশেষে এর থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। যেমন
কোন বস্তু উঠাবার সময়, রাখার সময়, দেখার সময় ইত্যাদি কারণে স্থান বিশেষে মাথা
নিচু করতে হয়। অথচ উপরোক্ত কারণে মাথা ঝুকানোকে কেউ নাজায়েয বলেন না, কারণ সিজদার নিয়ত করে তা করা হয় না।” (রদ্দুল মুহতার, মুহীত, যাহেদী, শেফালিকাজি আয়াজ, মকতুবাতে ইমাম রব্বানী, আহসানুল ফতওয়া, জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্) সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত
হয় যে, শুধুমাত্র মাথা ঝুকালেই
সিজদা বা রুকু হয় না বরং সিজদা বা রুকুর নিয়ত থাকতে হবে এবং রুকু সিজদার নিয়তে
কারো সন্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে মাথা ঝুকানো সম্পূর্ণ হারাম। কিন্তু কদমবুছী করার
সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি মাথা কিছুটা ঝুকে যায়, তবে তা কদমবুছীর মধ্যেই ধর্তব্য। তবে মাথা সোজা রাখার
যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। এখানে বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য এই যে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের সময় কদমবুছী করার নিয়ম ছিল, সরাসরি মুখ দিয়ে পায়ে বুছা (চুম্বন) দেয়া।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ এ পদ্ধতিতেই কদমবুছী করতেন। তবে
পরবর্তী আলেমগণ ইজতেহাদ করতঃ ফতওয়া দেন যে,
সরাসরী
পায়ে বুছা না দিয়ে হাত দিয়ে পা স্পর্শ করে উক্ত হাতে বুছা দেবে। তবে কেউ যদি উঁচু
জায়গায় থাকে এবং কদমবুছী করার সময় মাথা নিচু না হয়, তবে সরাসরী কদমে বুছা দেয়া যাবে। ফক্বীহগণের উক্তরূপে
কদমবুছী করার ফতওয়া দেয়ার কারণ হলো,
তাতে
সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বে না এবং মাথা রুকু সিজদার ন্যায় সামনের দিকে
ঝুকবে না। তাই কেউ যদি উল্লেখিত ব্যক্তিদের পা নিজের হাতে স্পর্শ করে, উক্ত হাতে বুছা (চুম্বন) দেয়, তবে সে কদমবুছীর পূর্ণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে
এবং তার কদমবুছীর সুন্নতও আদায় হয়ে যাবে। যেমন কিতাবে লিখা হয়, কেউ যদি মক্কা শরীফে গিয়ে সরাসরী মুখ দিয়ে
হজরে আসওয়াদ বুছা (চুম্বন) দিতে না পারে,
তবে
যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করে হাতে বুছা (চুম্বন) দেয় অথবা দূর হতে হাতের ইশারায় বুছা
দেয় অথবা লাঠী দ্বারা স্পর্শ করে লাঠীতে বুছা দিলেও সে হজরে আসওয়াদ বুছা দেওয়ার
পূর্ণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে (ইনশাআল্লাহ)।
সুতরাং উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা এটা
দিবালোকের ন্যায় স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে,
হক্কানী
পীর-বুযুর্গ, আলেম, দ্বীনদার পরহেযগার মুরুব্বী, পিতা-মাতা এবং ইসলামী শরীয়ত উনাদের দৃষ্টিতে
সন্মানের অধিকারী এরূপ ব্যক্তিদের তা’যীম ইত্যাদি সবই
জায়েয ও সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। এ ব্যাপারে ইমাম, মুজতাহিদ উনাদের মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই। তবে খাহেশাতের সাথে
হলে মাকরূহ্ তাহরীমী ও সিজদার নিয়তে মাথা ঝুকানো সম্পূর্ণ হারাম ও শিরকের
অন্তর্ভূক্ত।
কাজেই আমাদের প্রত্যেকেরই
উচিত, ইসলামী শরীয়ত উনাদের সীমা
অতিক্রম না করে বরং ইমলামী শরীয়ত উনার সীমার মধ্যে থেকে ফরজ, ওয়াজিব,
সুন্নতে
মুয়াক্বাদার পাশাপাশি সুন্নতে যায়েদা,
মুস্তাহাব
ও নফলগুলোও আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
খাস মারেফত ও মুহব্বত অর্জন করা। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উনার খাছ সন্তুষ্টি
দান করুন ও হক্ব মত হক্ব পথে কায়েম রাখুন। আমীন!
কদমবুছী, দস্তবুছী ইত্যাদি যে জায়েয ও সুন্নত তা নিন্মে
পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার শরাহ্, ফিক্বাহ, ও ফতওয়ার বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব
হতে তার অকাট্য দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করা হলো:
(১-৩)
عن
انس بن مالك- اخذ النبى صلى الله عليه وسلمابراهيم فقبله رشمه. (بخارى شريف ج ২ صفه ৮৮৬،
فتح البارى ج ১. صفه ৪২৭، عمدة القارى شرح بخارىج ৬৬ صفه ৯৮)
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (নিজ ছেলে) হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস
সালাম উনাকে ধরে চুম্বন খেয়েছেন এবং ঘ্রাণ নিয়েছেন। (বুখারী শরীফ, জিঃ ২য় পৃঃ ৮৮৬, ফতহুল বারী, জিঃ ১০ পৃঃ ৪২৭, ওমদাতুল ক্বারী শরহে
বুখারী, জিঃ ২২ পৃঃ ৯৮)
বুখারী
শরীফ কিতাব উনার হাশিয়ায় আরো উল্লেখ করা হয়,
(৪)
يجوز
تقبيل الولد الصغير فى كل عضو منه وكذا الكبير عند اكثر العلماء مالم يكن عورة- ان
رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يقيل فاطمة وكذا كان ابو بكر يقبل ابنته عائشة.
(حاشيهء يخرى شريف ج ২ صفه ৮৮৬)
অর্থঃ- অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম উনাদের নিকট
মেয়ে লোক ব্যতীত (বেগানা), ছোট বাচ্চাদের
প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চুম্বন করা জায়েয,
অনুরূপভাবে
বড়দেরকেও। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম
উনাকে চুম্বন করেছেন। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উনার
মেয়ে হযরত উম্মুল মু’মিমীন হযরত ছিদ্দীকা
আলাইহাস সালাম উনাকে চুম্বন করেছেন। (হাশিয়ায়ে বুখারী শরীফ, জিঃ ২য় পৃঃ ৮৮৬)
(৫-৮)
قبل
التقبيل على خمسة اوجه- (১) قبلة
المودة للولد على الخد- (২) وقبلة
الرحمة لوالدبه على الرأس (৩) وقبلة
الشفقة لا خيه على الجبهته- (৪) وقبلة
الشفقة لا خيه على الجبهته- (৫) وقبلة
الشهوة لا مرأته اوامته على الفم- (৪) وقبلة
التحية للمؤمنين على اليد. (حاشيهء ابودود ج ৪ صفه ৭০৯،
حاشيهء ابن ماجه صفه، ২৭০،
اشعة للمعات ج ৪ صفه ২১، مظاهر حق)
অর্থঃ- বলা হয় যে, (বুছা) চুম্বন পাঁচ প্রকার- (১) ছেলেকে মহব্বতের কারণে গালে বুছা
(চুম্বন) দেয়া। (২) পিতা-মাতাকে রহমতের (দয়ার) দৃষ্টিতে মাথায়বুছা (চুম্বন) দেয়া।
(৩) ভাইকে মেহেরবাণীর দৃষ্টিতে কপালেবুছা (চুম্বন) দেয়া। (৫) নেককার মু’মিন উনাদেরকে আদব ও বরকতের জন্য হাতেবুছা (চুম্বন) দেয়া। (এটাকে
দস্তবুছী (হস্ত চুম্বন)ও বলা হয়) (হাশিয়ায়ে আবু দাউদ শরীফ জিঃ ২ পৃঃ ৭০৯, ইবনে মাজাহ পৃঃ ২৭০, আশয়াতুল লোময়াত জিঃ ৪ পৃঃ
২১, মোযাহেরে হক্ব)
(৯-১৫)
عن
عائشة- قالت- قدم زيد بن حارثة المدينة ورسول الله صلى الله عليه وسلم فى بيتى-
فاتاه فققرع الباب- فقام اليه رسول الله صلى الله عليه وسلم عريائايجر ثوبه- والله
ما رأيه عريانا قبله ولا بعده- فاعتنقه وقبله. (ترمذى شريف ج ২ صفه ৯৮، فتح البارى ج ১১ صفه. ৬، تحفة الاحوذى ج ৭ صفه ৫২৩،
مشكوة، مرقاة، اشعة للمنعات، مظاهرحق، اعلاء السئن ج ১৭ صفه ৪২)
অর্থঃ- হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, “হযরত যায়েদ ইবনে
হারেছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনায়
আসলেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি আমার ঘরে ছিলেন। তিনি এসে দরজার কড়া নাড়লেন, তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি অনাবৃত শরীর মোবারকে (অর্থাৎ শরীর মোবারকে লুঙ্গী ব্যতীত কোন
কাপড় ছিল না) নিজের চাদর মোবারক টানতে টানতে (অর্থাৎ চাদর মোবারক দিয়ে শরীর মোবারক
ঢাকতে ঢাকতে) উনার নিকট উপস্থিত হলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম আমি এর পূর্বে ও
পরে কখনো উনাকে অনাবৃত অবস্থায় দেখিনি। অতঃপর তিনি তার সাথে মোয়ানেকা করলেন ও তাকে
বুছা (চুম্বন) দিলেন।” (তিরমীযী শরীফ জিঃ
২ পৃঃ ৯৮, ফতহুল বারী জিঃ ১১
পৃঃ ৬০, তোহ্ফাতুল
আহ্ওয়াযী জিঃ ৭ পৃঃ ৫২৩, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, ইলাউস সুনান জিঃ ১৭ পৃঃ
৪২৫)
(১৬-২৪)
عن صفوانبن عسال-
ان قوما من اليهود قبلوا يد النبى صلى الله عليه وسلم ورجليه- (ابودرد شريف، نسائى
شريف، مستدرك حاكم، تر مذى شريف ج ২ صفه ৯৮، اين ماجه صفه، ২৭، فتح البارى ج ১১ صفه ৫৭،
تحفة الاحوذى ج ৭ صفه ৫২৫، مصف ابن ابى شيبه ج ৮ صفه ৫৬২،
اعلاء السني ج ১৭ صفه ৪২৬)
অর্থঃ- হযরত ছাফওয়ান ইবনে আস্যাল
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদীদের একদল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উভয় হাত ও পা মোবারক বুছা (চুম্বন)
দিয়েছেন। তিরমিযী এ হাদীছ শরীফ উনাকে হাসান-সহীহ্ বলেছেন। (আবু দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মোস্তাদরেকে হাকিম,
তিরমিযী
শরীফ, জিঃ ২য় পৃঃ ৯৮, ইবনে মাজাহ,পৃঃ ২৭০, ফাতহুল বারী জিঃ
১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭
পৃঃ ৫২৫, মোছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা, জিঃ ৭ পৃঃ ৫৬২, ইলাউস সুনান জিঃ ১৭ পৃঃ ৪২৬)
(২৫-৩২)
عن
وازع بن زترع عن جدهاوكان فى وقد عبد القيس قال لماقد مناالمد ينة فجعلنا نتبادر
من وراحلنا فنقبل يد رسول الله صلى الله عليه وسلم ورجله.(ستن ابودود ج
২ صفه ৭০৯،
بذل المجهود ج ৬ صفه ৩২৮،فتح
البارى ج ১১ صفه ৫৭،
مشكوة شريف، مرقاة ج ৯ صفه ৮০،
اشعة للمعات، مظاهرحق، اعلاء السنن ج ১৭ صفه৪২৬)
অর্থঃ- হযরত ওয়াযে ইবনে যারে উনার দাদা হতে
বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা আব্দুল কায়স
গোত্রে থাকা অবস্থায় যখন মদীনা শরীফ আসতাম,
তখন
আমরা সাওয়ারী হতে তাড়াতাড়ী অবতরন করে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত ও পা মোবারক বুছা (চুম্বন) দিতাম। (আবু
দাউদ শরীফ জিঃ ২ পৃঃ ৭০৯, বযলুল মাজহুদ জিঃ
৬ পৃঃ ৩২৮, ফতহুল বারী জিঃ ১১
পৃঃ ৫৭, মিশকাত শরীফ, মিরকাত জিঃ ৭ পৃঃ ৮০, আশয়াতুল লোমাত, মুযাহিরে হক্ব, ইলাউস সুনান জিঃ ১৭ পৃঃ
৪২৬)
(৩৩-৩৯)
عن
عبد الله بن عمر- قال- فدنونا من النبى صلى الله عليه وسلم- فقبلنا يدبه- (ابودرد
شريف، ابن ماجه، بذل المجهود ج৬ صفه ৩২৭،
مصف ابن ابى شيتة ج৮ صفه ৫৬২ كتاب الاصل، ادب المفر دللبخارى)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমরা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটবর্তী হলাম এবং উনার হাত
মোবারক বুছা (চুম্বন) দিলাম। (আবু দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ, বযলুল মাযহুদ জিঃ ৬ পৃঃ
৩২৭, মোছান্নেফ ইবনে
আবী শায়বা জিঃ ৮ পৃঃ ৫৬২, কিতাবুল আছল, আদাবুল মোফ্রাদ লিল
বুখারী)
(৪০-৪১)
عن
بريدة- قال- فائذن لى اقبل يديك ورجليك- فاذن له اى فى تقبيل يديه ورجليه-
فقبلهما.(نسيم الريض شرح الشفاء لقاضى عياض ج ৩ صفه ৫০، الاذكار للنووى)
অর্থঃ- হযরত বোরাইদাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন (গাছের সিজদা দেয়ার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর) আমি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! আমাকে আপনার উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দিন। তখন
উনাকে উভয় হাত ও পা মোবারকে বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি দেয়া হলে- তিনি সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
উভয় হাত ও পা মুবারকে বুছা (চুম্বন) দিলেন। (নাসীমুর রিয়াজ শরহে কাজ্বী আয়াজ
জিঃ ৩ পৃঃ ৫০, কিতাবুল আযকার
লিন্ নববী)
(৪২-৪৭)
عن
عائشة رضى الله تعالى عنها- كانت اذا دخلت عليه قام اليها فاخذ يدها فقبلها-
واجلسها فى مجلسه وكان اذا دخل عليها قامت اليه فخذت بيده فقبلته واجلته فى
مجلسها- (ابودود شريف، مشكوة شريف، مرقات شريف ج৯ صفه ৮০، اشعة للمعات، مظاهرحق، اعلاءالسنن ج ১৭ صفه ৪৩৬)
অর্থঃ- হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেকে
বর্ণিত, হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম যখন
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যেতেন, তখন তিনি উনাকে দাঁড়িয়ে হাতে বুছা দিয়ে নিজের
স্থানে বসাতেন এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি যখন হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট যেতেন, তখন তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হাত মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়ে
নিজের স্থানে বসাতেন। (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ,
মিরকাত শরীফ জিঃ ৯ পৃঃ ৮০,
আশয়াতুল লোময়াত, মোযাহেরে হক্ব, ইলাউস সুনান জিঃ ১৭ পৃঃ
৪৩৬)
(৪৮-৪৯)
عن زيدبن
ثابت انه قبل يد انس- واخرج ايضاان عليا قبل يد العباس ورجله- (فتح البارى شرح
بخارى ج ১১ صفه৫৭، تحفة الاحوذى شرح ترمذى ج৭ صفه ৫২৮)
অর্থঃ- হযরত যায়দ ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুা এর হাত মুবারকে
বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন। তিনি এটাও বর্ণনা করেন যে, হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত
আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত ও পা মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন। (ফতহুল
বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী
শরহে তিরমিযী জিঃ ৭ পৃঃ৫২৮)
(৫০-৫১)
قبل
ابو لبابة وكعب بن مالك وصاحياه يد النبى صلى الله عليه وسلم. (فتح البارى ج১১ صفه ৫৬، الدلائل التيهقى)
অর্থঃ- হযরত আবু লোবাবাহ ও কা’ব ইবনে মালিক ও উনার দুই সঙ্গি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন।
(ফাতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৬,
দালায়েল লিল্ বায়হাক্বী)
(৫২-৫৩)
وقبل زيد
بن ثابت يدابن عباس حين اخذ ابن عباس بركابه. (فتح البارى ج ১১ صفه ৫৬ طبرانى شريف)
অর্থঃ- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার (ঘোড়ার) লাগাম ধরে থাকা অবস্থায় হযরত যায়দ ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার হাত মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন। (ফাতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ
৫৬, তিবরানী শরীফ)
(৫৪-৫৫)
عن
جابر- ان عمر رضى الله تعالى عنه قام على النبى صلى الله عليه وسلم فقبل يده. (فتح
البارى ج ১১ صفه ৫৬، تحفة الاحوذى شرح ترمذى ج ৭ صفه ৫২৭)
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
হতে বর্ণিত হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (সম্মানার্থে) দাঁড়াতেন, অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মোবারক বুছা (চুম্বন) দিতেন। (ফতহুল
বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল
আহ্ওয়াযী শরহে তিরমিযী জিঃ ৭ পৃঃ ৫২৮)
(৫৬-৬১)
عن تميم بن سلمة-قال- لماقدم عمر الشام
استقبله ابو عبيدبن الجراح فصافه قبل يده فكان تميم يقول تقبيل اليد سنة.(مسند
امام احمد بن حنبل ج৩ صفه ৪০৪،
فتح البارى ج ১১ صفه ৫৭، تحفة الاحوذى ج৭ صفه ৫২৮، مصف بن ابى شيبة ج ৮ صفه ৫৬২ سنن الكبرى للبيهقى ج৭ صفه ১০১، طبرائى شريف)
অর্থঃ- হযরত তামীম ইবনে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
হযরত
ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি যখন শাম দেশে আসতেন, হযরত আবু ওবাইদা ইবনুল জাররাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে স্বাগত
জানাতেন ও তার সাথে মোছাফাহা করতেন এবং দস্ত (হাত) বুছা (চুম্বন) দিতেন। হযরত
তামীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
দস্তবুছী
সুন্নত। (মসনদে আহমদ জিঃ ৩ পৃঃ ৪০৪, ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭, পৃঃ ৫২৮, মোসান্নেফ ইবনে আবী শায়বা
জিঃ ৮, পৃঃ৫৬২, সুনানুল কোবরালিল
বায়হাক্বী জিঃ ৭ পৃঃ ১০১, তিবরানী শরীফ।
(৬২-৬৫)
ان
رجلا اتى النبى صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم امرنى
شيئا ازداد به يقينا- فقال اذهب الى تلك الشجرة فاد عها- فذثب اليها- فقال ان رسول
الله صلى الله عليه وسلم يدعوك- فجائت حتى سلمت على النبى صلى الله عليه وسلم-
فقال لهاارجعى فرجعت- ثم اذن له فقبل رأسه ورجليه- اخرجه حاكم فى صيح الاسناد.
(مستدرك حاكم، فتح البارى ج১১ صفه ৫৭،
تحفة الاحوذى ج ৭ صفه ৫২৮ الكلام
المبين صفه ১৪৬)
অর্থঃ- এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার নিকট এসে বলল ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে এমন কোন
বিষয়ে আদেশ করেন, যা আমার বিশ্বাসকে
আরো বৃদ্ধি করবে। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে বললেন, “তুমি ঐ গাছটিকে ডেকে আনো।” অতঃপর সে গাছটির নিকটে গিয়ে বললো, নিশ্চয়ই রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি তোমাকে ডেকেছেন। সুতরাং গাছটি এসে
আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম করলো। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে চলে যেতে বললেন, গাছটি তখন চলে গেল। অতঃপর ঐ ব্যক্তি অনুমতি
স্বাপেক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মাথা মোবারক ও উভয় কদম (পা) মোবারক বুছা (চুম্বন) দিল। হাকিম এ হাদীছ শরীফখানা
সহীহ্ সনদে বর্ণনা করেন। (মোস্তাদরেকে হাকিম, ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭
পৃঃ ৫২৮, আল কালামুল মুবীন
পৃঃ ১৪৬)
(৬৬)
روى
عن النبى صلى الله عليه وسلم كان يقبل فاطمة- ريقول اجدمنها ريح الجنة- وقبل
ابوبكر رأس عائشه- وقال صلى الله عليه وسلم من قبل رجل امه فكاغما قبل عتبة الجنة.
(مبسوط للسرخسى ج ১০ صفه ১৪৯)
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
হতে বর্ণিত, তিনি হযরত যাহরা আলাইহাস
সালাম উনাকে বুছা (চুম্বন) দিতেন এবং বলতেন,
“আমি
তার থেকে বেহেস্তের সুঘ্রান পাই।” এবং হযরত আবু বকর
ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার মাথায় বুছা
(চুম্বন) দিতেন। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি তার
মায়ের কদমবুছা দিল, (অর্থাৎ পা চুম্বন
করল) সে ব্যক্তি মূলতঃ বেহেস্তের চৌকাঠের উপর চুম্বন করলো। (মাবছুত লিস্
সারাখ্সী জিঃ ১০ পৃঃ ১৪৯) (৬৭-৬৮)
عن
طلحة- قال- قبل خيشمة يدى وقال الك قبل طلحة يدى- (مصنف ابن ابى شيتة ج ৮ صفه ৫৬২،
طبقات ابن سعد ج ৬ صفه ২০১)
অর্থঃ- হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত খায়শামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার হাতে বুছা
(চুম্বন) দেন এবং হযরত মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
আমার হাতে বুছা (চুম্বন) দেন। (মোছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা জিঃ ৮ পৃঃ ৫৬২, তাবাকাতে ইবনে সা’দ জিঃ ৬, পৃঃ ২০১)
(৬৯)
حضرت کعب بن مالک رضی اللہ تعالی عنہ سے روایت ھے
کہ جب نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم انکے پاس تشریف لیگئے تو اپ نے انحضرت صلی اللہ
علیہ وسلم کا دست مبارک اپنے ھاتون سے تھا ما اور اسکویوسہ دیا- (طبرانی شریف)
অর্থঃ- হযরত কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উনার নিকটে তাশরীফ আনতেন, তখন তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হাত মোবারক নিজ হাতে ধরে তাতে বুছা
(চুম্বন) দিয়েছেন। (তিবরানী শরীফ)
(৭০)
حضرت سلمۃ بن الاکوع رضی اللہ تعالی عنہ سے روایت
ھے- انھون نے فرما یا کہ مین نے رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کے دست مبارک پربیعت
کی- مین نے اپ کی دست مبارک کو بوسہ دیا تو اپنے مجھے منع نھین فرمایا- (معجم اوسط
للطبرانی)
অর্থঃ- হযরত সালমা ইবনে আক্ওয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত
মোবারকে বাইয়াত গ্রহণ করেছি এবং উনার হাত মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছি। কিন্তু তিনি
আমাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করেননি। (মো’জামে আওসাত
লিততিবরানী)
(৭১)
حضرت ابو سفیان کے مناقب مین لکھا ھے حضرت عباس
رضی اللہ عنہ نے فرمایا کہ مین نے اپکے قدم مبارک کو بوسہ دیا- (مستدرک حاکم ج3 صفہ254)
অর্থঃ- হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার “মানাক্বিবে” বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
আমি
উনার কদম মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিয়েছি। (মোস্তাদরেকে হাকিম জিঃ ৩ পৃঃ ২৫৪)
(৭২)
حضرت ابو وائل سے روایت ھے کہ ابو وائل کبھی گاؤن
مین جاتے اور چندروز غائب رھتے جب وابس اکر حضرت عاصم رضی اللہ تعالی عنہ کے ساتھ
ملتے تو انکے ھاتھ کو ہوسہ دیتے تھے- (طبقات ابن سعد ج6 صفہ224)
অর্থঃ- হযরত আবু ওয়ায়েল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি কখনো কখনো
গ্রামে যেতেন এবং কিছুদিন সেখানে অবস্থান করতেন, যখন গ্রাম থেকে ফিরে হযরত আছেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার সাথে সাক্ষাৎ করতেন, তখন উনার হাতে
বুছা (চুম্বন) দিতেন। (তাবাকাতে ইবনে সা’দ জিঃ ৬, পৃঃ ২২৪)
(৭৩)
حضرت یحیی ابن حارث رضی اللہ تعالی عنہ الذماری سے
روایت ھے انھون نے فرمایا ھے کہ مین واثلہ بن اسقع رضی اللہ تعالی عنہ سےملا تو ان
سے کھا کہ اپکے اس ھاتھ نے رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم کے دست مبارک پر بیعت کی ھے
انھون نے فرمایا کہ ھان مین نے عرض کیا تو اپ اپنا ھاتھ مجھےدیجئے کہ مین اسکو بوسہ
دون- انھون نے مبری درخواست منظور کرلی- مین نے انکے ھاتھ کو بوسہ دیا- (طبرانی
شریف)
অর্থঃ- হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে হারিস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যখন ওয়াছিলা ইবনে আসক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার সাথে সাক্ষাৎ করি, তখন উনাকে বললাম, আপনার এ হাত তো রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মোবারকে বাইয়াত গ্রহণ করেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি তখন আরজ করলাম তবে আপনার হাতখানা আমাকে দিন, আমি বুছা (চুম্বন) দেব। তিনি আমার আরজ গ্রহণ
করলেন, আমি উনার হাতে বুছা
(চুম্বন) দিলাম। (তিবরানী শরীফ)
(৭৪-৭৬)
حضرت شعبی رضی اللہ تعالی عنہ سے روایت ھے- کہ ایک
مرتبہ حضرت زید بن ثابت گھورے پرسوارھونے تو حضرت ابن عباس رضی اللہ تعالی نے
(بطور تعظیم و اکرام کے) انکی رکاب تھامی حضرت زید بن ثابت رضی اللہ تعالی عنہ نے منع کیا کہ-ائے رسول اللہ صلی اللہ علیہ
وسلم کے چچا زاد بھائی- اپ ابسانہ کرے- مگر حضرت ابن عباس رضی اللہ تعالی عنہ
অর্থঃ- হযরত শো’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা হযরত যায়দ ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঘোড়ার উপর
চড়লেন, তখন হযরত ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সন্মানার্থে উনার ঘোড়ার লাগাম ধরলেন। হযরত
যায়দ ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিষেধ করলেন ও বললেন, হে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার চাচাত ভাই, আপনি এরূপ করবেন
না। কিন্তু হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমরা আমাদের আলেমগণের সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করার
জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। (তখন) হযরত যায়দ ইবনে সাবিত
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার হাত মোবারকে বুছা (চুম্বন) দিলেন এবং বললেন, আমরা
আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইত শরীফ উনাদের সাথে এরূপ ব্যবহার
করার আদেশ পেয়েছি। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ সহীহ্ সনদে বর্ণিত হয়েছে। (মোস্তাদরেকে
হাকিম, মাবসূত লিস্ সারাখসী জিঃ
১৬ পৃঃ ৭৩, আল্ ইছাবাহ্)
(৭৭)
حضرت ابو بکر بن محمد بن عمر سے روایت ھے- انھون
نے کھا کہ مین ایک روز حضرت ابوبکر بن مجاھد کی خدمت مین حاضر تھا- حضرت شبلی اس
مجلس مین تشریف لائے- تو ابو بکر بن مجاھد کھرے ھونے اور ان سے کھا کہ میرے سردار
اپ شبلی گے ساتھ
یہ معاملہ کرتے ھین?
حضرت ابو بکر بن مجاھدنے فرمایا کہ مین نے انکے ساتھ وہ معاملہ کیا جو میرے
ایک خواب مین رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم
نے انکے ساتھ کیاتھا- کہ شبلی اپ کی خدمت مین حاضر ھونے
تو أنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم سے عرض کیا کہ
اپ شبلی کے ساتھ
یہ معاملہ فرماتے ھین تواپ صلی اللہ علیہ وسلم نے فرمایا کہ یہ اپنی نماز کے
بعد یہ ایت پرھا کرتے ھین-
لقد جائکم رسول من انفسکم- الخ- اور اسکے بعد مجھ پر صلوۃ وسلام بھیجتے ھین- ( عمل
الیوم و للیل لابن السنی)
অর্থঃ- হযরত মুহম্মদ ইবনে ওমর আলাইহিস সালাম
উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন হযরত
আবু বক্বর ইবনে মুজাহিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম, হযরত শিবলী সে মজলিসে উপস্থিত হলেন। তখন হযরত
আবু বক্বর ইবনে মুজাহিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাঁড়ালেন এবং উনার সাথে
মোয়ানেক্বা করলেন ও উনার কপালে বুছা (চুম্বন) দিলেন। আমি উনাকে বললাম, হে আমার সরদার! আপনি হযরত শিবলীর সাথে এরূপ
ব্যবহার করলেন কেন? তখন হযরত আবু
বক্বর ইবনে মুজাহিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি বললেন, আমি তার সাথে
সেরূপ ব্যবহারই করলাম, যেরূপ ব্যবহার আমি
স্বপে¦ সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার সাথে করতে দেখেছি।
(অর্থাৎ আমি স্বপে¦ দেখেছি) যে, হযরত শিবলী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেদমতে উপস্থিত হলেন, তখন হুযূর পুর নূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তার কপালে বুছা (চুম্বন) দেন। আমি তখন আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া
সাল্লাম আপনি উনার সাথে এরূপ ব্যবহার করলেন?
তখন
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “সে তার নামাযের পরে এ আয়াত শরীফ পাঠ করে
لقد
جاءكم رسول .. الح
এবং এরপর আমার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করে।
(আমালুল ইয়াউম ওয়াল্ লাইল)
(৭৮)
حافظ ابو موسی مدینی نے حضرت سفیان سے روایت کیاھے
کہ انھون نے ایک مجلس مین بیان کیا کہ عالم اور سلطان عادل کی دست بوسی سنت ھے- اس
مجلس مین حضرت عبد اللہ بن مبارک موجود تھے وہ کھرے ھونے اور انکے سر کو بوسہ رے کر
کھا کہ اس سنت پر عمل کرنے کیلئے اس سے اچھا موقع کھان ملے گا (الکرامتو التقبیل
لشیخ محمد عابد سندھی)
অর্থঃ- হযরত সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
হতে বর্ণিত। তিনি এক মজলিসে বয়ান করেছেন যে,
আলেম
এবং ইনসাফগার খলীফার হাতবুছা (চুম্বন) দেয়া সুন্নত। সে মসলিসে হযরত আব্দুল্লাহ্
ইবনে মোবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উপস্থিত
ছিলেন, তিনি দাঁড়িয়ে উনার
মাথাবুছা (চুম্বন) দিয়ে বলেন, এ সুন্নতের উপর
আমল করার জন্য এর চেয়ে উত্তম সুযোগ কোথায় পাওয়া যাবে। (আল কিরামাতু ওয়াত্ তাক্ববীল
লিশ্ শায়েখ আবেদ সিন্ধী)
(৭৯)
امام مسلم بن حجاج کا واقعہ جو امام بخاری کے ساتھ
پیش ایا کہ امام مسلم رحمۃ اللہ علیہ نے امام بخاری رحمۃ اللہ علیہ کی پیشانی کو
بوسہ دیا اور قدم بوسی کا ارادہ کیا- یہ کتب حدیث ورجال مین معروف و مشھور ھے- (الکرامۃ
والتقبیل)
অর্থঃ- ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার সম্পর্কিত ঘটনা। অর্থাৎ ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম বুখারী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কপালে বুছা (চুম্বন) দিয়েছেন এবং কদমবুছী (পা চুম্বন)
করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। এ ঘটনা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব ও রিজাল শাস্ত্রে
পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। (আল কিরামাতু ওয়াত্ তাক্ববীল)
(৮০)
تمام روایات سے ثابت ھوا کہ علماء ومشائخ اور
دینی شرف رکھنے و الے حضرات کی دست بوسی بلکہ قدم بوسی بھی نیز پیشانی و غیرہ- پر
بوسہ دینا سنت اور تعامل صحابہ وتابعین سے بلا کسی نکیر کے ثابت ھے- (الکرامۃ و
التقبیل للشیخ عابد سندھی)
অর্থঃ- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সকল বর্ণনা
দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়ে যে, দ্বীনদার, আলেম,
পীর
ও বুযর্গদের দস্তবুছী (হাত চুম্বন),
কদমবুছী
(পা চুম্বন) এমন কি কপালে বুছা (চুম্বন) দেওয়াও সুন্নত এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ও তাবিয়ীনদের আমল হিসাবে বিনা প্রশ্নে তা প্রমাণিত। (আল কিরামাতু
ওয়াত্ তাক্ববীল লিশ্ শায়েখ আবেদ সিন্ধী)
(৮১-৮২)
و احدیث یدل علی جواز التبیل الید والرجل- و قال الا بھری: انما کرھھا مالک اذا کانت
علی وجہ القربۃ الی اللہ لدینہ اولعلمہ اولشرفہ فان ذالک جائز- (فتح الباری شرح
البخاری ج11 صفہ57، تحفۃ الاحوذی شرح ترمذی ج7 صفہ528)
অর্থঃ- দস্তবুছী (হাত চুম্বন), কদমবুছী (পা চুম্বন) জায়িয হওয়া হাদীছ শরীফ
দ্বারা প্রমাণিত। আবহুরী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মালেক
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এটাকে মাকরূহ বলেছেন, যদি নাকি বড়ত্ব ও তাকাব্বুরীর জন্য করা হয় আর যদি আল্লাহ
পাক উনার নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে কোন দ্বীনদার, আলেম ও সন্মানিত ব্যক্তির দস্তবুছী ও কদমবুছী ইত্যাদি করা
হয়, তবে তা নিশ্চয় জায়িয।
(ফাতহুল বারী জিঃ ১১, পৃঃ ৫৭, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী জিঃ ৭ পৃঃ ৫২৮)
(৮৩-৮৪)
لايكره
التقبيل لزهد وعلم ةكبر سن- قال النووى:- تقبيل يدا لغير ان كان لعلمه وزهده
وديانته وحوذلك من الامور الدينية لم يكره يل بستحب. (فبح البارى ج ১১ صفه ৫৭،
مر قاة شرح مشكوة ج ৯ صفه ৭৬)
অর্থঃ- বুযর্গ, আলেম ও মুরব্বীদেরকে বুছা দেয়া মাকরূহ নয়। হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি বলেন, দ্বীনদার, পরহেযগারী ও ইলম ইত্যাদির সন্মানার্থে অপরের
হাতবুছা দেয়া (অর্থাৎ দস্তবুছী) মাকরূহ্ নয় বরং মুস্তাহাব। (ফতহুল বারী জিঃ ১১ পৃঃ
৫৭, মেরকাত শরহে মিশকাত জিঃ ৯, পৃঃ ৭৬)
(৮৫-৮৬)
و بوسہ دادن دست عالم متورع راجائزاست- و بعضے گفتہ
اند مستحب است- اگر بردست عالم یا سلطان بوسہ دھد ازجھت علم و عدالت واعزاز دین لا
بأس بہ است اگر بجھت غرض دنیوی کند مکروہ است- ودر بعضے احادیث بوسیدن بعضے ازصحابہ
پانے ان سرور صلی اللہ علیہ وسلم امدہ-
ومختار ھمین است معانقہ و تقبیل در قدوم از سفر جائزاست بے کراھت- (اشعۃ
للمعات شرح مشکوۃ ج4 صفہ23، مظاھ حق ج4 صفہ60)
অর্থঃ- পরহেযগার আলেম উনার দস্তবুছী (হাত
চুম্বন) জায়েয এবং কেউ কেউ বলেন, মোস্তাহাব। যদি
আলেম ও ইনসাফগার খলীফার হাত ইলম, ইনসাফ ও দ্বীনের
সন্মানার্থে বুছা (চুম্বন) দেয়, তাতে কোন নিষেধ
নেই। তবে দুনীয়াবী স্বার্থ সিদ্ধীর লক্ষ্যে হলে অবশ্যই মাকরূহ্ এবং হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কর্তৃক সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কদম মোবারক বুছা দেয়ার বর্ণনা এসেছে।
সুতরাং গ্রহণযোগ্য মত এটাই যে, সফর থেকে ফিরে এসে
সাক্ষাতের সময় মোয়ানেকা (কোলাকুলি) ও (তাক্ববীল) বুছা (অর্থাৎ কদমবুছী ইত্যাদি)
দেয়া জায়েয, মাকরূহ্ নয়। (আশয়াতুল
লোময়াত শরহে মিশকাত জিঃ ৪ পৃঃ ২৩, মোজাহেরে হক্ব জিঃ
৪ পৃঃ ৬০)
(৮৭)
نعم:
فيه دليل على جواز التقبيل والا عتناق على وجه المحبة والشوق والاستحسان والترحم
ولا نقول بكراهته. (اعلاء السنن ج ১৭ صفه ৪২৬)
অর্থঃ- হ্যাঁ, মহব্বত-ভালবাসা,
অনুগ্রহ-দয়া
ইত্যাদির কারণে তাক্ববীল (অর্থাৎ কদমবুছী,
দস্তবুছী
ইত্যাদি) মোয়ানেকা জায়েয হওয়া হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত এবং আমরা তা মাকরূহ্
বলিনা। (ইলাউস্ সুনান জিঃ১৭ পৃঃ৪২৬)
(৮৮-৯৫)
طلب
من عالم اوز اهد ان يد فغ اليه قدمه ويمكنه من قدمه ليقبله اجابه- وقيل لا يرخص
فيه- وفى ردالمحتار- قوله اجبه لما اخرده الحاكم- ثم اذن له فقبل راسه ورجليه-
(شامى ج ৫ صفه ৩৭৮، درالمختار، ردالمحتار، شرتبلالى، غاية
الاوطار، عالمكيرى ج ৫ صفه ৪০৪ اشعة
للمعات، قنية)
অর্থঃ যদি কেউ কোন আলেম অথবা বুযর্গ উনার নিকট
দরখাস্ত করে যে, আপনার পা আমাকে
দিন আমি বুছা (চুম্বন) দেব, তখন উনার এ
দরখাস্ত কবুল করা জায়েয। কেউ কেউ জায়েয নেই বলে মত প্রকাশ করেন। শামী কিতাবে
জায়েযকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং দলীল হিসাবে মোস্তাদরেকে হাকিম এ পবিত্র হাদীছ
শরীফ উল্লেখ করেন যে, এক ব্যক্তি নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা ও কদম
মোবারক বুছা (চুম্বন) দেয়ার অনুমতি চাইলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এ ব্যাপারে
অনুমতি প্রদান করেন। (শামী জিঃ ৫ পৃঃ ৩৭৮,
দুররুল
মোখতার, রদ্দুল মোহতার, শরাম্বলালী, গায়াতুল আওতার,
আলমগীরী
জিঃ ৫ পৃঃ ৪০৪, আশয়্যাতুল লোময়াত, কুনিয়া)
(৯৬-১০১)
وكره
تحريما قهستانى تقبيل الرجل فمالرجل اويده- عند لقاء او وداع وهذا لو عن ضهوة
واماعلى وجه البر فجائز عند الكل. لوالقبلة على وده المبرة دون الشهوة جاز بالا
جماع ان التقبيل على سبيل البربلا شهوة جائز
بالاجماع. (تاتارخانيه، المحيط، عينى، الحقائق، قهستانى، احسن الفتاوى ج১ صفه ৩৯৬)
অর্থঃ - কোহেস্তানী কিতাবে সাক্ষাৎ অথবা
বিদায়ের সময় একজন অপরজনের (পুরুষ) মুখ,
হাত
ইত্যাদি বুছা (চুম্বন) দেওয়া মাকরূহ্ বলা হয়েছে, যদি নাকি খাহেশাতের সাথে হয়। আর যদি নেক দৃষ্টিতে (তা’যীমের জন্য হাত,
মুখ, পা ইত্যাদি) বুছা (চুম্বন) দেওয়া হয়, তবে সকলের নিকটেই জায়েয। নিশ্চয় যদি (হাত, কদম,
মুখ
ইত্যাদি) খাহেশাতের সাথে বুছা (চুম্বন) না দেয় বরং নেকী হাসীলের লক্ষ্যে বুছা
(চুম্বন) দেয়, তবে
সর্বসম্মতীক্রমে জায়েয। (তাতারখানিয়া,
মুহীত্ব, আইনী,
আল্
হাকায়েক, কোহেস্তানী, আহ্সানুল ফতওয়া জিঃ ১ পৃঃ ৩৯৩)
(১০২-১০৪)
ويكره
ان يقبل الرجل فم الرجل اويده اوسيأ منه- فى قول ابى حيفة ومحمد وقال ابو يوسف
لايأس بالتقبيل والمعانقه فان كانت المعانقة من فوق قميص اوجبة اوكائت القبلة على
وجه المسرة دون الشهوةجاز عند الكل- (فتاوئ قاضى خن بر حاشيا، عالمبكرى ج ৩ صفه ৪৪৪،بدائع
الصناشغ جه صفه ১২৪)
অর্থঃ- হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে একজন অপরজনের মুখ, হাত অথবা শরীরে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বুছা
(চুম্বন) দেয়া মাকরূহ্ এবং ইমাম আবু ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে তাক্ববীল
(অর্থাৎ কারো হাত, কদম, মুখ ইত্যাদি) বুছা (চুম্বন) দেওয়া ও মোয়ানেকা
করা মাকরূহ্ নয় এবং তাক্ববীল (অর্থাৎ হাত,
কদম, মুখ ইত্যাদি) খাহেশাতের জন্য বুছা না দেয় বরং
সন্মানার্থে বুছা (চুম্বন) দেয়, তবে সকলের নিকটেই
জায়েয। (কাজীখান, হাশিয়ায়ে আলমগীরী
জিঃ৩ পৃঃ৪৪৪, বাদায়েউস সানায়ে
জিঃ৫ পৃঃ১২৪)
(১০৫)
فتاوی قاضی خان کی اخری عبارت سے معلوم ھوا کہ
مسئلہء تقبیل و معانقہ مین جو اختلاف امام ابو حنیفۃ رحمۃ اللہ علیہ و محمد رحمۃ
اللہ علیہ کا نقل کیا جاتا ھے وہ اس صورت مین ھے جس مین خطرہ شھوۃ کا یامشا بھت اسکی
پانی ورنہ معانقہ اور تقبیل تینون ائمہ کے نزدیک جائز ھے- (جواھر الفقہ ج1 صفہ196)
অর্থঃ-
ফতওয়ায়ে কাযীখান কিতাবের শেষোক্ত ইবারত দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে, তাক্ববীল (অর্থাৎ কারো হাত, কদম,
মুখ
ইত্যাদি) বুছা দেয়া ও মোয়ানেকার যে ইখতিলাফ হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের হতে বর্ণিত হয়েছে,
তা
মূলতঃ খাহেশাত ও অনুরূপ কারণেই। যদি খাহেশাতের জন্য না হয়, তবে তিন ইমামের নিকটেই দস্তবুছী, কদমবুছী ইত্যাদি ও মোয়ানেকা জায়েয।
(জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ জিঃ১ পৃঃ১৯৬)
(১০৬-১০৭)
پس صحیح جواز تقبیل قدم فی نفسہ ھے اور فقھاء کے
منع کو عارض مفسدہ پر محمول کیا جائیگا- (امداد الفتاوی ج5 صفہ345، مواعظ اشرفیہ)
অর্থঃ- সুতরাং সহীহ্ মত হলো- মূল কদমবুছী
জায়েয এবং ফক্বীহ্দের নিষেধাজ্ঞা শরীয়তের খেলাফ কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। (অর্থাৎ
খাহেশাত, রুকু, সিজদার নিয়তে মাথা ঝুকানো ইত্যাদির কারণে)
(ইমদাদুল ফতওয়া জিঃ ৫ পৃঃ ৩৪৫, মাওয়ায়েজ
আশ্রাফিয়া)
(১০৮)
تعظیم و تبرک کے طور پر عالم، متقی، سلطان عادل،
اور حاکم متدین کے ھاتھون کو بوسہ دینے مین کوتی ھضائقہ نھین- (فتاوے عبد الحی صفہ430)
অর্থঃ- দ্বীনদার, পরহেযগার আলেম,
ইনসাফগার
খলীফা, ন্যায় বিচারকের হাতবুছা
(চুম্বন) দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই (মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই পৃঃ ৪৩০)
(১০৯-১১০)
عالم دین کے قدمون پر بوسہ دینا سنت ھے اور قدمون
پرسررکھنا جھالت ھے- (احکام شریعت ج3 صفہ184، تحقیق المسائل)
অর্থঃ দ্বীনদার, পরহেযগার আলেমের কদমবুছী করা সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত এবং
(সিজদার নিয়তে) মাথা ঝুকানো জিহালত (হারাম)। (আহকামে শরীয়ত জিঃ ৩ পৃঃ ১৮৪, তাহক্বীকুল মাসায়েল)
(১১১)
سوال : کسی شخص کی تعظیم کوکھرا ھو جانا اور پاؤن
پکرنا اور چومنا تعظیما درست ھے یا نھین؟
جواب : تعظیم دندار کو کھرا ھونا درست ھے اور پاؤن
چومنا اسے ھی شخص کا بھی درست ھے حدیث سے ثابت ھے (فتاوئے رشیدیہ کامل صفہ459)
অর্থঃ- প্রশ্নঃ কারো সন্মানার্থে দাঁড়ানো এবং
সন্মানার্থে কদমবুছী করা জায়েয, না জায়েয নয়?
উত্তরঃ দ্বীনদার আলেমদের সন্মানার্থে দাঁড়ানো
জায়েয এবং উনাদের কদমবুছী করাও জায়েয,
পবিত্র
হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। (ফতওয়ায়ে রশীদিয়া কামেল পৃঃ৪৫৯)
(১১২)
عالم و والدین کی تقبیل ید ورجل جائز ھے مگر
انحناء مثل رکوع حرام ھے- (امداد الاحکام ج1 صفہ 135)
অর্থঃ- আলেম, পিতা, মাতার দস্তবুছী
(হাত চুম্বন) এবং কদমবুছী (পা চুম্বন) করা জায়েয, তবে রুকুর ন্যায় (নিয়ত করে মাথা ঝুকানো) হারাম। (ইমদাদুল
আহ্কাম জিঃ ১ পৃঃ ১৩৫)
(১১৩)
جو ضخص واجب الاکرام ھو اسکی قدم بوسی کی اجازت ھے-
لیکن اعتقاد مین غلو نہ ھو اور سجدہ کی ھینت نہ ھونے پانے- (فتاوے محمودیہ ج1 صفہ175)
অর্থঃ- (শরীয়তের দৃষ্টিতে) যিনি সন্মানের অধিকারী, উনার কদমবুছী করার অনুমতি রয়েছে, তবে আক্বীদা শুদ্ধ রাখতে হবে এবং সেজদার ন্যায়
যেন না হয়। (ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া জিঃ ১ পৃঃ ১৭৫)
(১১৪)
پس مختصر بات یھی ھے کہ سنت رسول اللہ صلی اللہ
علیہ وسلم اور تعامل صحابہ مین اسکی جوحد منقول ھے اسکو اسی حدپر رکھا جائے- تو
بلاشبہ دست بوسی قدم بوسی معانقہ مصافحہ سب جائز بلکہ سنت و مستحب ھین- (جواھر
الفقہ ج1 صفہ202)
অর্থঃ সুতরাং সংক্ষিপ্ত কথা হলো যে, পবিত্র হাদীছ
শরীফ ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের আমলের দ্বারা এর
(অর্থাৎ কদমবুছীর) যেই সীমা বর্ণনা করা হয়েছে, আমাদের এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা
উচিত। তবে নিঃসন্দেহে দস্তবুছী (হাত চুম্বন) কদমবুছী (পা চুম্বন), মোয়ানেকা, মোছাফাহা
সবই জায়েয বরং সুন্নত ও মোস্তাহাবের অন্তর্ভূক্ত। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্ জিঃ ১ পৃঃ ২০২)
তবে অবশ্যই দস্তবুছী ও কদমবুছী
শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে যারা তা’যীম-তাকরীম অর্থাৎ সন্মানের অধিকারী উনাদের জন্যই প্রযোজ্য।
যেমন- শায়েখ মুহম্মদ আবেদ সিন্ধি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
(১১৫-১১৬)
تغظیم وتکریم کیلئے دست بوسی یاقدم بوسی صرف ان
لوگون کی جائز ھے- جو عالم صالح یاسلطان عادل یا کونی دینی شرف و بزرگی رکھتا ھون-
انکے سوا و وسرون کیلئے جائز نھین حرام ھے- کیونکہ نصوص حدیث سے اسکا جواز صرف
دینی شرافت و فضیلت رکھنے و الون کیلئے ثابت ھے انکے سوا دوسرون کیلئے ثابت نھین-
البتہ علمی و دینی شرف رکنے والون کیلئے دست بوسی بلکہ پا بوسی بھی قوی روایات
حدیث سے ثابت ھے- (جواھر الفقہ ج1 صفہ185، الکرامۃ و النقبیل)
অর্থঃ- দস্তবুছী অথবা কদমবুছী শুধুমাত্র তাদের
জন্যই- জায়েয যারা আলেম, পরহেযগার, ন্যায়পরায়ন খলীফা অথবা শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে
সন্মানের অধিকারী উনাদেরকে ব্যতীত অন্য কারো কদমবুছী ইত্যাদি করা জায়েয নেই। বরং
সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা এটা শুধু শরীয়ত উনার
দৃষ্টিতে তা’যীম-তাকরীমের অধিকারী, এরূপ ব্যক্তিদের জন্যই প্রমাণিত, অন্যদের জন্য নয়। সুতরাং আলেম, দ্বীনদার এবং শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সন্মানের
অধিকারীদের দস্তবুছী বরং কদমবুছীও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মজবুত বর্ণনা দ্বারা
প্রমাণিত। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ জিঃ ১ পৃঃ ১৮৫, আল কিরামাতু ওয়াত্ তাক্ববীল) কেউ কেউ কদমবুছীর বিরুদ্ধে
নিম্মোক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকেন।
(১১৭)
عن انس بن مالك قال قال رجل
يارسول الله صلى الله عليه وسلم الرجل منا يلقى اخاه وصديفه اينحنى له قال لا قال
افبلتزمه ويقبله قال لا قال فيا خذبيده ريصا فحه قال نعم- (ترمذى شريف ج ২ صفه ৯৭)
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
এক
ব্যক্তি বললো ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কারো সাথে যদি তার
ভাই অথবা বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ হয়, তবে কি তার
সন্মানার্থে আমরা মাথা ঝুকাব? নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “না”। বলা হলো, তবে কি মোয়ানেক্বা এবং বুছা দেব? বলেন,
“না”। বলা হলো, তবে কি মোছাফাহা
করবো? নূরে মুজাসসাম,
হাবূবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হ্যা”। (তিরমিযী শরীফ
জিঃ২ পৃঃ৯৭) এ পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার ব্যাখ্যায় শায়েখ মুহম্মদ আবেদ সিন্ধী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
یہ حدیث ان لوگون پر محمو ھے جن مین مذکور الصدر
اوصاف ثلثہ مین سے کوی وصف نہ ھون اس کے ساتھ یہ معاملہ معانقہ اور تقبیل نہ کیا
جائے صرف مصافحہ کافی ھے اور قرینہ اسکا خودوہ سوال ھے جو حدیث مین مذكور
ھے
کیونکہ سائل نے یہ
نپھین چوچھا کہ ہرے عالم یا بزرگ سے ملین توکیا کرین؟ بلکہ سوال عام دوسبت یا بھای
کا کیاھے جسکے جواب مین اپ نے معانقہ اور تقبیل کو منع فرمایا= (الکرامۃ و التقبیل-
جواھر الفقہ(
অর্থঃ- উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ তাদের
জন্যই প্রযোজ্য, যাদের উপরোল্লিখিত
গুণাবলী না থাকবে (অর্থাৎ সে যদি আলেম,
ইনসাফ্গার
বাদশা, দ্বীণদার বুযুর্গ ব্যক্তি না
হন) তার সাথে মোয়ানেক্বা অথবা দস্তবুছী,
কদমবুছী
ইত্যাদি করা যাবেনা, শুধুমাত্র
মোছাফাহাই যথেষ্ঠ। এর প্রমাণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উল্লেখিত প্রশ্নই, কেননা প্রশ্নকারী একথা বলেননি যে, কোন বড় আলেম, বুযুর্গ লোকের সাথে সাক্ষাত হলে কি করব? বরং সাধারণ লোক অর্থাৎ কোন ভাই, বন্ধু ইত্যাদির কথাই বলেছেন। যার উত্তরে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাথে
মোয়ানেকা, দস্তবুছী, কদমবুছী ইত্যাদি করতে নিষেধ করেছেন।
সুতরাং উপরোক্ত ব্যাখ্যা
দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, তিরমিযী শরীফ উনার
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মূলতঃ আমলোক অর্থাৎ সাধারণ লোকদের দস্তবুছী, কদমবুছী ইত্যাদি করতে নিষেধ করা হয়েছে, আলেম,
আদেল, বুযুর্গ ব্যক্তিদের দস্তবুছী, কদমবুছী ইত্যাদি করার আদেশ রয়েছে। অর্থাৎ
উনাদের দস্তবুছী, কদমবুছী জায়েয ও
সুন্নত। সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ,
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার শরাহ্, ফিক্বাহ ও ফতওয়াসহ
নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের দলীল দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, কদমবুছী,
দস্তবুছী
স্থান, কাল, পাত্র বিশেষে শুধু জায়েযই নয়, সুন্নতে ছাহাবা, সুন্নতে বুযুর্গানে দ্বীন। কাজেই কদমবুছীকে বেদয়াত, শেরেকী,
কুফরী
ইত্যাদি বলা প্রকৃতপক্ষে কোন হালালকে হারাম বলার ন্যায় কুফরী হবে, যা থেকে পরহেয করা আমাদের সকলের কর্তব্য ও
ওয়াজিব এবং অবস্থা বিশেষে সকলেরই কদমবুছী করা বা নেয়া সুন্নতে ছাহাবা, সুন্নতে তাবেঈন ও সুন্নতে বুযুর্গানে দ্বীন।