গবেষণা
কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
মহান আল্লাহ পাক উনার অসীম
শুকরিয়া ও রহমত যে তিনি আমাদেরকে নিয়ত করে কবর বা মাযার শরীফ জিয়ারত এর উপর তৃতীয়
ফতওয়া প্রকাশ করার তাওফিক দান করেছেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সকল ক্ষেত্রেই
পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস
শরীফ মোতাবেক সমাধান প্রদান ও গ্রহণ করতে হবে। আর এজন্য ছহীহ্ ইলম অর্জন করা
প্রয়োজন। কেননা মনগড়া মত প্রকাশ যেমন গুমরাহী, জেনেশুনে পালন না করে তা গোপন
রাখা তার চেয়েও বেশী গুমরাহী।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে-
عن
ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من س ئل عن
علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من نار ( رواه احمد ابو داؤد ترمذى ابن ماجه عن انس(
অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যে
ব্যক্তি তার জানা ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে তা গোপন রাখলো কিয়ামতের দিন তাকে
আগুনের লাগাম পড়িয়ে দেয়া হবে”। (আহমদ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ,
ইবনে মাজাতে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত)
উপরোক্ত
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার থেকে এটাই বুঝা যাচ্ছে যে, ইলম গোপন রাখা অথবা পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার ভুল বা মনগড়া ব্যাখ্যা করা গুমরাহী। ক্বিল্লতে ইলম ক্বিল্লতে ফাহম (কম
জ্ঞান কম বুঝ) এর জন্য আজকাল একদল লোক বিশেষ করে ইবনে তাইমিয়া ও তার সমর্থকরা নিয়ত
করে মাযার জিয়ারতের জন্য সফর করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভুল বা মনগড়া
ব্যাখ্যা করে থাকে। এমনকি ইবনে তাইমিয়া তার ‘ফতওয়ায়ে কুররাতে’ নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওজা শরীফও
নিয়ত করে জিয়ারতের জন্য সফর করা নিষেধ করেছে। (অথচ তাদের ব্যক্তিগত আমল ছিল এর
বিরোধী) তারা এ ব্যাপারে নিম্নোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে বর্ণনা করে থাকে-
عن ابى سعيد ن الخدرى
(رض) قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تشد
الرحال الاالى ثلاثة مساجد مسجد الحرام والمسجد الاقصى ومسجدى هذا (متفق عليه)
অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন তিন মসজিদ ছাড়া সফর করো না, মসজিদুল
হারাম, মসজিদুল আক্বছা ও আমার এই মসজিদ।
অথচ
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ কবর বা মাযার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা
সংক্রান্ত নয়, এটা মসজিদে সফর করা সম্পর্কিত। আমাদের ফতওয়ার বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক।
উক্ত
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় নিম্নোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
عن انس بن مالك (رض) قال
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاة الرجل فى بيته
بصلاو وصلاته فى مسجد القبا ئل بخس وعشرين صلاة وسلائه فى المسجد الذى يجمع فيه بخمس ماءة صلاة وصلائه فى المسجد الاقصى بخمسين الف صلاة وصلائه فى مجدى بخمسين الف صلاة وصلائه فى المسجد الجرام بماءة الف صلاة (ابن مجه مشكوة(
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ রসুলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি যদি ঘরে নামায পড়ে
তবে তার এক নামাযে এক নামাযের সওয়াব পাবে। আর যদি পাঞ্জেগানা মসজিদে নামায পড়ে তবে
এক নামাযে পঁচিশ নামাযের সমান সওয়াব পাবে। আর যদি জুমুআর মসজিদে এক নামায পড়ে তবে
পাঁচশ নামাযের সওয়াব পাবে আর যদি পবিত্র মসজিদুল আক্বছা শরীফ উনার মধ্যে এক নামায
পড়ে তবে পঞ্চাশ হাজার নামাযের সওয়াব পাবে। আর পবিত্র মসজিদুল নববী শরীফ উনার মধ্যে
যদি এক নামায পড়ে তবেও পঞ্চাশ হাজার নামাযের সওয়াব পাবে। এবং যদি পবিত্র ক্বাবা
শরীফ উনার বরকতময় স্থানে এক নামায পড়ে তবে এক লাখ নামাযের সওয়াব পাবে। (ইবনে
মাযাহ শরীফ,
মিশকাত শরীফ)
তাই আমরা এখানে বিস্তারিত
দলীল-আদীল্লাসহ নিয়ত করে কবর বা মাযার শরীফ জিয়ারত করার জন্য সফর করার উপর ফতওয়া
প্রকাশ করলাম।
কবর
জিয়ারত সম্বন্ধে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
عن بريدة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت نهيتكم محن زبارة القبور فزوروها (مسلم شريف(
অর্থঃ হযরত বুরহিদাহ্
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযরত রসুলে পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমি
তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পারো। (মুসলিম
শরীফ শরীফ)
(১) অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
عن ابن مسعودان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: كنت نهيتكم عن زيارة
العبور فزو روها فائها نزهد فى الدئيا وتذكرة الاخرة (ابن ماجة(
অর্থঃ হযরত ইবনে মসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযরত
রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, আমি
তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা তা করতে পার। কেননা এটা
দুনিয়ার আসক্তিকে কমায় এবং আখিরাতকে স্মরণ করায়। (ইবনে মাযাহ শরীফ)
(৩) কবর জিয়ারতের বৈধতা প্রসঙ্গে
বিভিন্ন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়, আর এ সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার ব্যাখ্যা হাফিযে হাদীছ আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
দিয়েছেন এভাবে-
اعلم ان استحباب زيارة القبور قد ثبت بهذه الا حاديث ال جال والنساء جميعا وقداختلفوا فى النساء
(فتح البارى فى شرح البخارى (৩॥১১৮)
অর্থঃ- “জেনে
রাখুন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা এ সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রায়
অনুযায়ী মোস্তাহাব প্রমাণিত, তবে মহিলাদের ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। (ফতহুল বারী ফি
শরহে বুখারী শরীফ ৩য় খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা)
(৪) আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
ويزيارة القبور اى لا باس بهابل تندب.
অর্থঃ কবর জিয়ারত এতে কোন অসুবিধা নেই, বরং এটা
মোস্তাহাব। (ফতওয়ায়ে শামী)
(৫)
زبارة القبور مستحبة للرجال (فقه السنة (১॥৪৯৯)
অর্থঃ পুরুষের জন্য কবর
জিয়ারত করা মোস্তাহাব। (ফিক্বহুস সুন্নাহ্, ১ম খন্ড পৃঃ ৪৯৯)
(৬) আল্লামা ইবনে আবেদীন
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وفيه يستحب ان يزور شهداء جبل احد لماروى ابن ابى شيبة ان النبى صلى الله عليه وسلم كان ياء تى قبور الشهداء باحد على رأس كل حول فيقول السلام عليكم بما صبر تم فنعم عقبس الدار (شامس ج- ২. ص(৬৪৬)
অর্থঃ “উহুদ পাহাড়ের
শহীদগণ উনাদের (কবর) জিয়ারত করা মোস্তাহাব। ইবনে শায়বা হতে বর্ণিত আছে যে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতি
বৎসরান্তে উহুদ জিহাদে শহীদগণ উনাদের (কবর) জিয়ারত করতে আসতেন। অতঃপর তিনি বলতেন,আপনাদের
প্রতি সালাম, যেমন আপনারা ধৈর্য্য ধারণ করেছিলেন তেমনি পরকালে উত্তম বাসস্থান লাভ করেছেন।”
(৭) বর্ণিত আছে যে, পরবর্তীতে
খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও আমিরুল মু’মিনীন
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই ধারাকে বজায় রেখেছিলেন। (উমদাতুল
ফিক্বাহ)
(৮) বিখ্যাত হাদীছ বিশারদ আল্লামা
বদরুদ্দিন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন,
لان السيدة فاطمة رضى الله تعالى عنها كانت تزور قبر حمز كل جمعة وكائت عائشة رضيا لله عنها تزور قبر اخيها عبد الرحمن بمكة كذا (عمدة القارى فى شرح
بخارى(
অর্থঃ সাইয়্যিদাহ্ হযরত
যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি প্রতি শুক্রবার হযরত হামযাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনার কবর জিয়ারত করতে যেতেন, অনুরূপভাবে হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি স্বীয় ভ্রাতা
আবদুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবর জিয়ারত করার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফ
উনার বরকতময় স্থানে যেতেন। (উমদাতুল ক্বারী ফি শরহে বুখারী শরীফ)
উপরোক্ত
বর্ণনা থেকে এ ফতওয়াই স্পষ্ট প্রমাণিত যে, নিয়ত করে মাযার শরীফ জিয়ারত করা
সম্পূর্ণ জায়িয।
(৯) অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে উল্লেখ আছে-
عن محمد بن النعمان يرفع الحديث الى النبى صلى الله عليه وسلم قال من زارقبر ابوبه او احدهما فى كل
جمعة غفر له وكتب برا (رواه بيهقى(
অর্থঃ “তাবিয়ী হযরত
মুহম্মদ বিন নোমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে
ব্যক্তি প্রত্যেক ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা জুমুয়াবার আপন মা-বাপের অথবা উনাদের মধ্যে
একজনের কবর জিয়ারত করবে,
তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং মা-বাপের সাথে
সদ্ব্যব্যবহারকারী বলে লেখা হবে।” (বায়হাকী শরীফ)
এই
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও এককভাবে কবর জিয়ারত করার কথা বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি
উনার মাতা-পিতার কবর জিয়ারত করতে যাবে সে বাড়ী থেকে নিয়ত করেই রওয়ানা হবে অর্থাৎ
জিয়ারতকারী একমাত্র কবর জিয়ারত করার জন্যই কবরস্থানে গমন করবে। আর এ ক্ষেত্রে দূর
বা নিকট এর কোন পার্থক্য নাই। নিকটের যে হুকুম, দূরেরও একই হুকুম।
(১০) আল্লামা আবদুর রহমান যাফিরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
ولا فرق فى الزيارة بين كون المقابو قريبة او بعيدة (كتاب فقه على مزاهبا ربعاء ج-১ ص ৫৪)
অর্থঃ “কবর জিয়ারতের
ক্ষেত্রে নিকট ও দূরের কোন পার্থক্য নাই।” (কিতাবুল ফিক্বাহ আলা মাযাহিবিল আরবা
১ম খন্ড ৫৪০ পৃঃ)
(১১) আল্লামা ইবনে আবিদীন
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
ندب الزيارة وان بعد محلها (شامى ج-৪ ص ৬৪৬)
অর্থঃ “দূরবর্তী স্থানেও
(কবর) জিয়ারতের জন্য গমন করা মোস্তাহাব।” (শামী ২য় খন্ড ২৪২ পৃঃ)
(১২) মাওলানা আশরাফ আলী থানভী
ছাহেব বলেন, পুরুষদের জন্য কবর জিয়ারত করা মোস্তাহাব। জিয়ারত করার অর্থ দেখাশুনা। সপ্তাহে
অন্ততঃ একদিন কবর জিয়ারত করা উচিৎ। সেই দিন ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা জুমুয়াবার হওয়াই
সবচেয়ে ভাল। বুযূর্গানে দ্বীন উনাদের কবর জিয়ারত করার জন্য সফরে যাওয়াও দুরস্ত আছে”। (ইমদাদুল
ফতওয়া)
(১৩) হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি
আলাইহি যিনি শাফিয়ী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা তিনি যখন কোন মাসআলা সমস্যার সমাধানে
বিব্রতকর অবস্থায় পড়তেন তখন আলমে ইসলামীর সর্বশ্রেষ্ঠ ইমামে আ’যম ইমাম
আবু হানিফা নোমান বিন সাবেত কুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ উনার মধ্যে
এসে জিয়ারত করে তথায় দু’রাকাত নামায পড়তেন। এরপর হযরত ইমামে আ’যম ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উসিলা দিয়ে মহান
আল্লাহ পাক উনার দরবারে হযরত ইমাম শাফেয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমস্যা জানাতেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দোয়া
কবুল করতেন অর্থাৎ মাসআলার যে সমস্যার জালে আবদ্ধ হয়ে তিনি সেখানে যেতেন ইমামে আ’যম
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উসিলার বরকতে তা খুলে যেত। অতঃপর স্বীয় স্থানে
প্রত্যাবর্তন করতেন।
উল্লেখ্য, ইমাম
শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ আগমন শুরু হত ফিলিস্তিন হতে, আর এই
সূদুর ফিলিস্তিন থেকে আগমনের একমাত্র নিয়ত ছিল মাযার জিয়ারত করা। অন্য কোন
উদ্দেশ্যে বাগদাদ এসে মাযার জিয়ারত করা নয় (আন্ নাসিয়াতুলিল ওহাবী)
(১৪) এ প্রসঙ্গে ইমাম শাফিয়ী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
انى لا بترك بابى حنبفة واجء ى الى
قبره فاذا عرضت لى حاجة
صليت ركعبين وسا: لت الله
تعالى عند قبرة فتقضى سريعا (معدمة شامى ج-১ ص (৫৫)
অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি হযরত ইমাম
আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বরকত হাসিল করি। যখন আমার কোন সমস্যা
দেখা দেয় আমি উনার মাযার শরীফে এসে প্রথমে দু’রাকাত নামায আদায় করি। অতঃপর উনার
উসিলা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সমস্যা সমাধানের জন্য প্রার্থনা করি। তা অতি
তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যায়। (মুকাদ্দিমা, শামী ১ম
খ- ৫৫ পৃষ্ঠা)
(১৫-১৬) শায়েখ হযরত ওলীউদ্দীন ইরাকী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন আমার পিতা জয়নুদ্দীন ইরাকী এবং শায়েখ আব্দুর রহমান
ইবনে রজব হাসলী, হযরত ইব্রাহীম খলীল আলাইহিস সালাম উনার জিয়ারতে বলেছিলেন; যখন
শহরের নিকটবর্তী হলেন তখন ইবনে রজব বলতে লাগলেন, আমি খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম
উনার মসজিদে নামায পড়ার নিয়ত করে নিলাম যেন জিয়ারতের নিয়ত না থাকে। আমার পিতা
বললেন, আপনিতো নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুমের বিপরীত আমল
করলেন। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, তিন
মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের জন্য সফর করা যায় না; অথচ আপনি চতুর্থ এক মসজিদের নিয়ত
করলেন আর আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
হুকুমের উপর আমল করেছি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, তোমরা কবর জিয়ারত করতে থাকবে। এমন
কোন হাদীছ শরীফ নেই যাতে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের কবরকে বাদ দেয়া
হয়েছে। সুতরাং আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
হুকুম মোতাবেক আমল করেছি। (ফাযায়েলে হজ্জ, যুরক্বানী)
(১৭) এছাড়াও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন
রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ উনাদের কবর জিয়ারতের সুস্পষ্ট ও যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
ইমামে রব্বানী, আফযালুল
আউলিয়া শায়েখ আহমদ সিরহিন্দী ফারুকী মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল
হিন্দ, হাবীবুল্লাহ ইমামুত্ তরীকত হযরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতী আজমিরী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার মাযার শরীফ জিযারত করতে গিয়েছিলেন। আর এতে জিয়ারত ভিন্ন অন্য কোন উদ্দেশ্য
ছিল না। (সীরাতে মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি)
হযরত উমর
ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শামদেশ হতে উট সওয়ার শুধু রওজায়ে পাক
উনার মধ্যে উনার সালাম জানানোর জন্য পাঠিয়ে দিতেন।
ইহুদীদের
বিখ্যাত পন্ডিত হযরত কা’ব ইবনে আহবার যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন হযরত ওমর ইবনে খত্তাব আলাইহিস সালাম
তিনি আনন্দিত হয়ে উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা মুবারক জিয়ারতের জন্য মদীনা শরীফ আসতে
বলেন, তিনি এটা কবুল করে মদীনা শরীফ উনার মধ্যে এসেছিলেন।
একটি
বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যে,
কবর বা মাযার জিয়ারত করতে গিয়ে যাতে পবিত্র শরীয়ত উনার
বিরোধী কোন কার্যকলাপ সংঘঠিত না হয়। এটা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য। পবিত্র শরীয়ত
উনার বিরোধী কার্যকলাপ বলতে- কবরস্থানে বা মাযার শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে সিজদা করা, গান
বাজনা করা, মহিলা-পুরুষের বেপর্দা চলাফেরা ইত্যাদি এসমস্ত কার্যকলাপ মূলতঃই হারাম। কোথাও
যদি পবিত্র শরীয়ত উনার বিরোধী কার্যকলাপ হয়ই এজন্য কবর বা মাযার শরীফ জিয়ারত হতে
লোকদেরকে বিরত করা বা মাযার শরীফ উনার বিরুদ্ধে কোন প্রকার ফতওয়া দেয়া যাবে না বরং
যাতে ঐ সমস্ত মাযার শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র শরীয়ত উনার বিরোধী কাজ সংঘঠিত না হয়
সেদিকে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে।
(১৮) এ প্রসঙ্গে হাফিযে হাদীছ
আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
ولاتترك لما يحصل عندها من منكراتو مفاسد كختلاط الرجال با لنساء وغير ذلك لان القربات لا تترك لمثل ذلك بل على
الانسان فعلها و انكار البدع بل وازالتها ان امكن
(درالمختار ج-৬ ص ৬৪৬. باكستان
অর্থঃ এবং সেখানে যদি
পবিত্র শরীয়ত উনার বিরোধী কাজ পরিলক্ষিত হয়, যেমন মহিলা-পুরুষের একত্র মিশ্রণ, তথাপি
কবর জিয়ারত ত্যাগ করা যাবে না বরং মানুষের এরূপ নব উদ্ভাবিত (বিদয়াত) কাজকে দূর
করতে হবে। (দুররুল মুখতার ২য় খ-, ২৪২ পৃঃ)
বর্তমানে
মাযার শরীফ জিয়ারতের ব্যাপারে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে যে, কিছু
সংখ্যক লোক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মাযার শরীফ উনার নামে নামে অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এ
সমস্ত হীন চক্রান্তকারীদের দৌরাত্ম্য এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে যে, যেখানে
কবরের চিহ্ন মাত্র নাই সেখানে কৃত্রিম কবর বানিয়ে মানুষের ঈমানকে হরণ করার কাজে
মেতে উঠেছে। খোঁজখবর নিলে জানা যাবে যে, এ সমস্ত মাযার শরীফ-এর কোন
ভিত্তিই নেই। (বিশেষ করে বটতলায়ই এই শয়তান ভণ্ডদের গায়েবী (?) মাযার শরীফ পাওয়া যায়) তাই এ সমস্ত ক্ষেত্রে কাজ হলো
প্রকৃত মাযার শরীফ শনাক্ত করে তার তদারক করা, আর যেগুলোর মৌলিকত্ব নেই অর্থাৎ
কৃত্রিম, তার উচ্ছেদ করে শয়তানী শিকড় উৎপাটন করা।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার তারকিবী জওয়াব:
لا تسدالرحال الاالى ثلاثة
مساجه.
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে
উরদু/ফারসী হবে ..........
তবে এই
উরদু/ফারসী হবে ..........
খাছ না আম এ ব্যাপারে
আলিমদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। কেউ কেউ বলেছেন এটা আম এ ‘মত
পোষণকারীদের অভি মত যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে এর অর্থ হয় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও ভ্রমণ করা জায়েয নেই। এমনকি ইলম অর্জনের, ব্যবসা-বাণিজ্য, ইসলাম
প্রচার ও অন্যান্য সমস্ত প্রকার ভ্রমনই বাদ হয়ে যায়। যা অসম্ভব এবং পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বিরোধী।
তাই সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক
ও বাতিল। আর যদি দ্বিতীয় মত অর্থাৎ
কে গ্রহণ করা হয় তাহলে এর
অর্থ হবে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হুকুম সম্পূর্ণরূপে মসজিদের মধ্যেই
সীমাবদ্ধ। তখন এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মর্ম হবে-
لاتشد الرقال لالمسجد الاالى ثلاثة مساجد مسجد الحرام مسجد الاقصاى ومسجدى هذا.
অর্থঃ কোন মসজিদের জন্য
ভ্রমন করা জায়েয নয় কিন্তু তিন মসজিদ ব্যতীত। মসজিদুল হারাম, মসজিদুল
আকসা ও আমার মসজিদ। অতএব এখানে বলতে যে একান্তভাবে মসজিদের জন্যই খাস তা প্রমাণিত।
(১৯) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওজা শরীফ জিয়ারত অশেষ বরকত
ও সওয়াবের কাজ। এটা মোস্তাহাব কাজগুলির মধ্যে সর্বোত্তম মোস্তাহাব বরং ওয়াজিবের
নিকটবর্তী। এজন্য সফর করাও মুস্তাহাব। হানাফী, মালিকী, শাফেয়ী, হাম্বলী
মাযহাবের সকলেই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। আল্লামা সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ
ব্যাপারে কওলী ও ফেলী মতামত একত্রে নকল করেছেন। (মাআরেফে মাদানিয়া)
২০,২১) নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عن خرج حتى ياتى هزا المسجد مسجد قباء فصلى فيه كان عدل عمرة (نسىء مسندا حمد(
অর্থঃ যে ব্যক্তি মসজিদে
কোবায় এসে দু’রাকাত নামায পড়বে সে এক ওমরার সওয়াব পাবে।
(২২,২৩) অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে উল্লেখ আছে,
عن ابن عمر قال كان النبى صلى الله عليه وسلم يانى مسجد قياء كل سبت حاشيا و راكبا فيصلى فيه ركعبين (متفق عليه(
অর্থঃ হযরত ইবনে উমর
আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
হযরত নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
প্রত্যেক ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার কুবার মসজিদে গমন করতেন হেঁটে অথবা সওয়ার হয়ে
এবং ওখানে দু’রাকাত নামায পড়তেন। (মুত্তাফাক আলাইহে)
উপরোক্ত
পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় হতে এটা সুস্পষ্ট যে, প্রথমোক্ত তিন মসজিদ ছাড়াও চতুর্থ
মসজিদ- মসজিদে কোবায় ফযীলত হাসিলের জন্য নিয়ত করে সফর করা জায়িয বরং সুন্নত মুবারক
উনার অন্তর্ভূক্ত।
(২৪-২৬) আমাদের আঁকা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
عن ابن عمو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صليالله عليه وسلم من زار
قبرى وجبت له شفاعتى (جمع صغير- ১৭১ شفاء لسقام- ২ وفاء الوفاج- ২ ص ৩৯৪)
অর্থঃ হযরত ইবনে উমর
আলাইহিস সালাম উনার হতে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি
আমার রওজা শরীফ জিয়ারত করলো তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল। (জামে ছগীর
পৃঃ ১৭১, শিফাউস সিকাম পৃঃ ২, ওফাউল ওফা পৃঃ ৩৯৪)
(২৭-৩০)
عن ابن عمر مر فوعا
من صج فزار قبرى بعد موقى كان كمن زارنى فى صياتى
(رواهما البيهقى فى شعب الايمان والمكوة) شفاء السقام ص ২ وفاء الوفاج- ২ص ৩৯৮)
অর্থঃ হযরত ইবনে উমর
আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে
ব্যক্তি আমার মউতের পরে হজ্জ করে আমার জিয়ারত করলো সে হবে ঐ ব্যক্তির মত যে আমার জীবদ্দশায়
আমার জিয়ারত করেছে। (বায়হাকী শোয়বুল ঈমান, মিশকাত, শিফাউস সিকাম,
ওফাউল ওফা)
(৩১,৩২)
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من زارفى فى المرينة حستبا كان فى جوارى وكتن شقيعا يوم القبامة (جامع صغير ص ১৭১ معالم دارا لحجره ص ا. ২)
অর্থঃ হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে ব্যক্তি কেবল মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আমার জিয়ারত মুবারক উনার উদ্দেশ্যে আসবে ও জিয়ারত
করবে (কিয়ামতের দিন) সে আমার পার্শ্বে থাকবে। আর সেদিন আমি তার জন্য শাফায়াত করব। (জামে
সগীর পৃঃ ১৭১,
মুয়ালিম দারুল হিজরাত পৃঃ ১০২)
(৩৩,৩৪)
عن اببن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من جاء نى زامرا
لا يهمه الا زيارة كان حقا على ان اكون له مشفيعا
يوم العمامة (شفاء سقام وفاء الوفا
অর্থঃ হযরত ইবনে উমর
আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে আমার
জিয়ারতের জন্য আসবে,
এ ব্যতীত আর কোন উদ্দেশ্যই থাকবে না কিয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশ
করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। (শিফাউস সিকাম, ওফাউল ওফা)
(৩৫)
عن انس رضى الله تعالى عنه قال لما خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم من متة
اظلم منها كل شئ ولما
دخل المدينة اضاء منها كل شى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا مدينة بها قبرى وبها بيتى وحق على كل مسلم
ريارتها (مسكوه سريف(
অর্থঃ হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে হিজরতের
জন্য বাহির হন, সেখানকার সমস্ত কিছু অত্যন্ত অন্ধকার হয়ে যায়। এবং যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার
মধ্যে প্রবেশ করেন তথাকার সমস্ত কিছু উজ্জ্বল হয়ে যায়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পবিত্র মদীনা শরীফ আমার ঘর, আর আমার
পবিত্র রওযা শরীফও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যেই হবে। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিৎ উনার
জিয়ারত করা। (মিশকাত শরীফ)
(৩৬,৩৭)
عن ابن عباس رضى الله تعلى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من حج
الى متة ثم فصد نى فى مسجدى كتب له حجتان مبرورفان (وفاء الوفا جلد-২ ص ১. ৪ جزب القلوب ص ১৯৪)
অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে ব্যক্তি পবিত্র হজ্জ মুবারক
আদায়ের জন্য পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বরকতময় স্থানে যায়, অতঃপর
জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আমার মসজিদে আসে তাহলে সে দুটি কবুলকৃত হজ্জের সওয়াব পাবে।
সুবহানাল্লাহ! (ওফাউল ওফা পৃঃ ৪০১, জজবুল কুলুব পৃঃ ১৯৪)
উপরে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ
শরীফসমূহে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
রওজা মুবারক জিয়ারত করার জন্য তাকীদ ও উৎসাহিত করা হয়েছে।
(৩৮, ৩৯) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من حج البيت
ولح يزرنى فقد جقانى (شفاء السقام ج-২ ص ৩৯৮)
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ্
ইবনে উমর আলাহিস সালাম উনার হতে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে
ব্যক্তি পবিত্র হজ্ব মুবারক সম্পাদন করলো কিন্তু আমার পবিত্র রওজা শরীফ জিয়ারত
করলো না সে আমার উপর জুলুম করলো। (শিফাউল সিকাম পৃঃ ২৭, ওফাউল ওফা ২য় খ- ৩৯৮ পৃঃ)
উপরোক্ত
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যারা পবিত্র হজ্জ মুবারক উনার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা শরীফ নিয়ত করে জিয়ারতের জন্য
সফর করেনা তাদের ভৎর্সনা করা হয়েছে।
(৪০)
শায়খুল হাদীছ হযরত মাওলানা জাকারিয়া কান্দুলুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন,
خاص خاص شحیرون کی مساجد
کی نیت کن کر سفر
کرنا حدیث مذکوره باال کی
روسے جائز نھیی ھے جیسا
کے ھمارے زمانہ میی دستور ھے کہ دیلی
کی جمع مسجد می رمضان
شر یف کا اخری معۃ پر ھنے کی نیت سے لوگ
بمیئی اور کاکۃ سے اتے ھے حالانکے برجائز نھی (فضائل حج ص১৪১)
খাছ খাছ
শহরের বিশেষ বিশেষ মসজিদে নামায পড়ার জন্য নিয়ত করে সফর করা পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন আজকাল একটা প্রথা হয়েছে লোকেরা কলকাতা ও বোম্বে
হতে দিল্লী জামে মসজিদে রমযান শরীফ উনার আখিরী জুমুয়া পড়ার নিয়ত করে চলে আসে। (ফাজায়েলে
হজ্জ, ১৪১ পৃষ্ঠা)
(৪১-৪৩) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন,
لاينبعى للمصلى ان يشد رحاله الى مسجد ينبعى فيه الصلاة عير المسجد الحرام والمسجد الاقصى ومسجدى هذا (مسند احمر فتحع البلوى معارف ملسن(
অর্থঃ মুসুল্লির জন্য উচিৎ
নয় যে, সে মসজিদে হারাম,
মসজিদে আকসা ও আমার এই মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে নামায
পড়ার জন্য সফর করে। (মুসনদে আহমদ, ফতহুল বারী, মা আরিফুস সুনান)
উক্ত
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহম্মদ ইউসুফ বিন নূরী তিনি বলেন,
دهب جمرة الامة الى ان ريارة قبر صلى الله عليه وسلم اعظع القريات- والسفر اليها جامزبل مندوب مسروعيتها محل اجماع بلانزته (معارف السنن، شرح ترمذى ج ৩ ص ৩২৯)
অর্থঃ জমহুর উম্মতের মাযহাব হলো- পবিত্র
রওজা মুবারক জিয়ারত করা উত্তম ইবাদত, আর নিয়ত করে সফর করা শুধু জায়েযই
নয় বরং মোস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত এতে কোন প্রকার অসুবিধা নাই। (মা
আরিফুস সুনান,
শরহে তিরমিযী, খণ্ড ৩, ৩২৯ পৃষ্ঠা)
(৪৪,৪৫) لا تشد الرحال
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা
সাধারণভাবে সফর নিষিদ্ধ হওয়া বুঝায় না। কেননা কোন কোন সফর ওয়াজিব যেমন- পবিত্র
হজ্জ উনার নিয়তে সফর করা,
জিহাদের জন্য সফর, ইলম অর্জনের জন্য সফর, হিজরতের
জন্য সফর এবং আরোও অন্যান্য সফর সকলের ঐ মতে জায়েয হয়। তা হলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওজা মুবারক
জিয়ারত কি করে নাজায়েয হবে?
(ফতহুল বারী ৩য় খন্ড, ৫০ পৃষ্ঠা, উমদাতুল
ক্বারী ৮ খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা)
(৪৬)
হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী ছাহেব বলেন,
لاتشد الرحال
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওজা শরীফ
জিয়ারত নিষিদ্ধ হওয়ার দলীল হতে পারে না। কেননা অন্যান্য পবিত্র হাদীছ শরীফ এটা
পরিস্কার করে দিয়েছে যে,
কোন মসজিদে নামায পড়ার নিয়তে সফর করা যাবেনা তিন মসজিদ
ছাড়া। কেননা (এ তিন মসজিদ ব্যতীত) অন্যান্য মসজিদের ক্ষেত্রে অধিক সওয়াবের কোন
অঙ্গীকার নাই। আবার কেউ কেউ এ জন্য নিষেধ করে থাকেন যে, সেখানে
লোক জমায়েত হয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে উল্লেখ আছে-
لا تجعلوا قبرعيدا
অর্থঃ ‘তোমরা
আমার পবিত্র রওজা শরীফ উনাকে উৎস বের বা ঈদের স্থান বানাইওনা’- এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনাকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। কিন্তু ওখানে না কোন নির্র্দিষ্ট সময়
আছে না কোন গুরুত্ব আছে। আর ঈদের মধ্যে এ দুই বিষয়ই পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ বলেন
যে, খাইরুল কুরুনের মধ্যে এ সফর ছিল না কিন্তু এ দলীল ও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা সাইয়্যিদেনা
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি উচ্চ মর্যাদার তাবেয়ী ছিলেন, তিনি
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওজা শরীফ
উনার মাঝে সালাম পৌঁছানোর জন্য শাম দেশ হতে নিয়ত করে দূত প্রেরণ করতেন, কিন্তু
এতে কেউ কোন প্রকার আপত্তি করেননি। তাই এটা এক ধরনের ইজমা হিসেবে পরিগণিত। যখন
অন্য জনের তরফ হতে সালাম পৌঁছানো জায়েয হয় তা হলে নিজের তরফ হতে সালাম পেশ করার
জন্য সফর করা উত্তম জায়েয। (বাওয়াদে উন্ নাওয়াদের পৃঃ ৪৬০)
এ হতে
বুঝা যাচ্ছে যে, নামায পড়া ব্যতীত একমাত্র শুধু জিয়ারতের উদ্দেশ্যে নিয়ত করে সফর করা শুধু
জায়েযই নয় বরং মোস্তাহাব। আর এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার উৎসাহব্যঞ্জক উক্তি রয়েছে।
(৪৭) পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
বর্ণিত আছে-
عن رجل من ال الخطاب
عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من زرانى متعمدا كان فى جدارى يوم العيامة ومن سكن المدينة وصبس على بلاها كنت له شهيدا شفيعا يوم القيامة ومن ماب فى احدالحرمين بعتة الله من الا
منين يوم القيامة (مشكواه شريف(
অর্থঃ খাত্তাব পরিবারের এক
ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
হতে বর্ণনা করেন,
তিনি বলেছেন, যে স্বেচ্ছায় আমার জিয়ারতের
উদ্দেশ্যে আগমন করে আমার জিয়ারত করবে, পরকাল দিবসে সে আমার পাশে থাকবে।
আর যে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে বাস করবে এবং উহার বালা মসিবত ও কষ্টে ধৈর্য্য
অবলম্বন করবে কিয়ামত উনার দিন আমি তার জন্য সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব। আর যে দুই
পবিত্র হেরেম শরীফ উনার কোন একটিতে মৃত্যুবরণ করবে পরকাল দিবসে তাকে মহান আল্লাহ্
তায়ালা উনার নিরাপত্তা প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত কয়ে উঠাবেন। (মিশকাত শরীফ)
(৪৮) আল্লামা মুহম্মদ হাসান শাহ্
মোহাজেরে মক্কি তিনি বলেন,
لاتشر الرحال এই পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন-
والمعنى كا افاد
فى الا حيا انه لا تشرالرحال المسجد من المساجد الا لهذه الثلاثة لمافيها من المضا عفة خلاف بقية المساجد فا نها منساوية فى ذلك فلا يرد انه قد تشدالرحال لغير ذلك كصلا رحم وتعلم علم و زيارة المشاهر كقبر النى صلى الله عليو وسلم وقبر الخليل عليه وسلم وساعر الا ءمة.
অর্থঃ এর মর্ম হলো
জীবিতদের জন্য ফায়দাদায়ক। বরকত হাসিলের জন্য এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র সফর করা বিধেয়
নয়। কেননা বাকী মসজিদগুলো বরকতের দিক দিয়ে সমান। এ ছাড়া অপরাপর স্থানে সফর করা
নিষেধ নয় যেমন- আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনের জন্য, ইলম অর্জনের জন্য, বুযূর্গগণ
উনাদের জিয়ারতের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওজা মোবারক, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার
মাযার জিয়ারত ও
সমস্ত ইমামগণ উনার মাযারসমূহ
জিয়ারত করা নিষিদ্ধ নয়।
(৪৯)
جائز است بلکے مندوب و بعض قبریب الواب گفۃ اند روایات کتیرہ صحیحہ مریح درین باب وارد شدہ است جیلے ازین روایات ملا علی قاری رحمۃ اللہ علیہ درمناسک خود وسودی
دروفاء الوفاء اوردہ لست ودر حلاصۃ الوفاء اور دہ است کی از روایات مشورہ ثابت است کی
حضرت عمر بن عبد العزیز رحمۃ اللہ علیہ برسال دو کس
برائے ابلکغ سلام بر روضہء
منورہ نبویہ
علی صاحبھا الصلوات و الخیۃ
می فرستادنر- (فتاوی دار العلوم کتاب الحج(
অর্থঃ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার পবিত্র রওজা শরীফ জিয়ারত করা জায়িয বরং মোস্তাহাব। কোন কোন রেওয়ায়েতে
ওয়াজিবের নিকটবর্তী বলে উল্লেখ আছে। অধিকাংশ বর্ণনায় একে ছহীহ্ বলা হয়েছে। এ
রেওয়ায়েত অনুযায়ী মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মানাসেক, সামহুদী
উনার ওফাউল ওফা কিতাবে আর খোলাসাতুল ওফা কিতাবে মশহুর রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ওমর
ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রতি বৎসর দুই জন ব্যক্তিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওজা শরীফ উনার মধ্যে সালাম
পৌঁছানোর জন্য প্রেরণ করতেন। (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম-কিতাবুল হজ্ব)
(৫০-৫২) ইমাম ইবনে হাযম
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে জীবনে একবার কবর জিয়ারত করা ওয়াজিব। আইনী৪/৭৬, ফতহুল মুলহীম ২/৫১, বজলুল মজহুদ ৪/২১৪)
তবে কেউ কেউ
لا تشد الرحال الا الى ثلاثة المساجد الخ.
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উল্লেখ করে কবর জিয়ারতকে নিষেধ করে থাকে, মূলতঃ
কবর জিয়ারতের সাথে এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোন সম্পর্কই নাই।
(৫৩) ইমামুল মোহাদ্দেসীন শায়েখ
আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শরহে সূয়ুতী কিতাবে لاتشد الرحال সম্বন্ধে বলেছেন যে, এটা শুধু
মসজিদের জন্যই খাছ।
(৫৪) হাফিযে হাদীছ শায়েখ আল্লামা
ইবনে হাযার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
ان المراد حكم المسجد فقط وانه لا تشد
الرحال الى مسجد من مسجد
للصلاة فيه غير هذه الثلاثة واما قصد عيرالمساجد لزيارة
صالح او قريب او صاحب
او طلب علم او محجارة
او نزهة فلا يدخل فى النهيى.
لاتشد الرحال এ হুকুমের উদ্দেশ্য হলো
শুধু মসজিদের সাথে সস্পৃক্ত। এ মসজিদত্রয় ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে নামাযের জন্য সফর
করা নিষিদ্ধ। তবে যদি মসজিদ ব্যতীত সালেহগণের (কবর) জিয়ারত, জীবিতগণের
সাথে সাক্ষাৎ, ইলম অর্জন, ব্যবসায় ও ভ্রমনের জন্য সফর করে তা এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হুকুমের
অন্তর্ভুক্ত হবে না। (ফতহুল বারী ৩য় খন্ড, ৬৫
পৃষ্ঠা)
(৫৫-৫৭) বিখ্যাত ফক্বিহ ও
মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেন-
فى شرح مسلم للنورى قال ابو محمد يحرم شد الرحال الى غير الثلاثة وهو غلط وفى احياء ذهب بعض العلماء الى الاستد لال به على المنع من الرحلة لزيارة المشاهد وقبور العلماء والصالحين وما تبين لى ان الامر
كذلك يل الزيارة ما موربها
لخبر كنت نهيتكم عن زيارة
القبور فزوروها والحديث انهاورد نهيا عن الشد يغير الثلاثة من المساجد لتماثلها بل لا
بلد الا وفيها مسجد فلا معنى للر حلة الى مسجد اخر واما المشاهد فلا تسارى بل بركة
زياوتها على قدر درجانهم عنر الله ثم ليت شعرى هل يمنع هذا القاء ل من
شد الرحل لقبور الا نبياء كابر اهبم وموساى ويحيى والمنع من ذلكفى غاية الا حالة واذا جوز ذلك لقبور الانبياء والا ولياء فى معناهم فلا يعبد ان يكون ذلك من اغراض الر حلة كما ان زيارة العلماء فى الحياة مر قاة
فى شرح مشكوة ج-২، ض ১৯
অর্থঃ হযরত ইমাম নববী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শরহে মুসলিম কিতাবে বর্ণিত আছে, আবু
মুহম্মদ বলেছেন, তিন মসজিদ ব্যতীত সফর করা হারাম এটা ঠিক নয়। ইহ্ইয়াউল উলুম কিতাবে
উল্লেখ আছে, কিছু সংখ্যক আলিম বরকতময় স্থানসমূহ আলেম ও বুযূর্গগণের কবর জিয়ারত করার
উদ্দেশ্যে সফর করাকে নিষেধ করে থাকেন। কিন্তু আমার বিশ্লেষণাত্মক মত হলো এর
নির্দেশ অনুরূপ নয়;
বরং জিয়ারতের হুকুম রয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
উল্লেখ আছে,
نت ئهيتكم عن زيارة القبور قزوروها.
ঐ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য
সব মসজিদে শুধু নামায পড়ার জন্য নিষেধ করার কারণ হলো বাকী মসজিদগুলো সওয়াবের দিক
দিয়ে সমান। কিন্তু বরকতময় স্থানসমূহ এক সমান নয়; বরং মর্তবা ও মর্যাদা অনুসারে
মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ঐগুলোর বরকত বিভিন্ন। এসব নিষেধকারীরা কি আম্বিয়া
আলাইহিস সালামগণ উনাদের মাযার যেমন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত
মুসা আলাইহিস সালাম,
হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম উনাদের কবর মোবারক এবং অনুরূপ
যত প্রকার সফর আছে তা হতেও নিষেধ করতে সমর্থ হবে না। (মিরকাত শরীফ, শরহে মিশকাত)
(৫৮) শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেস
দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
و بعضے از علما گفتۃ اند کہ سخن
در مسا جداست یعنی در مسجدے دیگر جزاین مساجد سفر جائز نبود اما مو اضع دیگر زاین مساجد خارج اذ مفھوم این کلام است-
অর্থঃ কতক আলেমের মতে, এখানে
মসজিদের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের দিকে ভ্রমণ করা
জায়েয নহে, মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র ভ্রমন এ হুকুমের অন্তর্ভূক্ত নহে। (আশআতুল লোমআত ১ম
খন্ড ৩২৪ পৃঃ)
(৫৯) শায়েখ আবুল হাসান নূরুদ্দীন সিন্ধি لا تشد الرحال এর ব্যাখ্যায়
বলেন,
والمعنى لا ينبغى
شد الرحال والسغر من بين
المسادد الا الى ثلاثة مسادد واماالسفر للعلم
وزيارة العلماء والصلحاء وللتجارة ونحوذلك ففير داخل فى حين المنع وكذا زيارة المساجد الاخير بلا سغر كزيارة مسجد قباء لا هل المدينة غير داخل فى حين
النهى.
অর্থঃ এর অর্থ হলো তিন
মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে (অপ্রয়োজনে নামায পড়ার জন্য) সফর করা যাবেনা। কিন্তু
যদি ইলম অর্জনের জন্য,
আলেম ও ছালেহগণের (কবর) জিয়ারতের জন্য ও ব্যবসা বাণিজ্যের
জন্য সফর করা হয় তাহলে এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। অনুরূপ মদীনাবাসীদের জন্য
মসজিদে কুবাতে গেলে এ নিষিদ্ধতা প্রযোজ্য হবে না। (হাশিয়ায়ে সিন্ধি ২য় খন্ড ৩৮
পৃঃ)
(৬০) শায়খুল হাদীছ হযরত মাওলানা
যাকারিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কতক আলিম এ পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, পবিত্র রওজায়ে পাক উনার নিয়তে সফর করাও নিষিদ্ধ; যেতে হবে
পবিত্র মসজিদে নববী উনার নিয়তে। অবশ্য সেখানে পৌঁছলে পবিত্র রওজা শরীফ উনার জিয়ারত
করাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামগণ উনাদের অভিমত হচ্ছে শুধু নিয়ত
করে কোন মসজিদে সফর করতে হলে এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য মসজিদের নিয়ত করে যাওয়া
নাজায়েয। হ্যাঁ, এর অর্থ এ নয় যে,
এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য যে কোন সফর নাজায়েয। বরং পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন আবার
অনুমতি দিচ্ছি, জিয়ারত করতে পারো। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আম্বিয়া আলাইহিস সালাম ও আওলিয়ায়ে
কিরামগণের মাজারে জিয়ারতের জন্য সফর, করা সম্পূর্ণরূপে জায়েয। তাছাড়া
বিভিন্ন সূত্রে জিহাদের সফর, ইলম অর্জনের জন্য সফর, হিজরতের জন্য সফর ব্যবসায়ের জন্য
সফর, তাবলিগী সফর ইত্যাদির জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। (ফাজায়েলে হজ্ব)
(৬১) হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম
গাজ্জালি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সফরকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন, তার
মধ্যে একটি হলো ইবাদত সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সফর। যেমন হজ্জ এবং জ্বিহাদে যোগদানের
জন্য নবী আলাইহিস সালাম,
ছহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাবেঈনগণ
এবং ওলীআল্লাহ্গণ উনাদের মাযার শরীফ
জিয়ারতের জন্য এবং ধার্মিক আলিম ও
বুযূর্গগণের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য দেশ বিদেশ সফর করা। কেননা উনাদের চেহারা মোবারক
দর্শন করা ইবাদতের মধ্যে গণ্য হয় এবং উনাদের নেক দোয়ার মধ্যে যথেষ্ট বরকত নিহিত
রয়েছে। উনাদের দর্শন লাভের উপকারিতা সমূহের মধ্যে একটি উপকারিতা এই যে, উনাদের
দরবারে গমন করলে উনাদের আচার ব্যবহার ও কার্যকলাপের অনুসরণ করতে স্বভাবতঃ ইচ্ছা
হয়। এ কারণে বুযূর্গ লোকদের দর্শন লাভ করাকে ইবাদতের মধ্যে গণ্য করা হয়। আবার এটা
ইবাদতের বীজস্বরূপও বটে। তদুপরি জীবিত ওলীআল্লাহ্গণ উনাদের মহামূল্য বাণী যখন তার
ধর্ম পথের সহায়ক হয়,
তখন ওলী আল্লাহ্গণকে দর্শনের সার্থকতা ও উপকারিতা বহুগুণে
বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সুতরাং ইচ্ছাপূর্বক নিয়ত করে বুযূর্গানে দ্বীনের মজলিসে এবং
কবরস্থানে গমন করা জায়েয আছে। আর হযরত রসুলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন-
ثة مساجد الخ لا تشدوا الرحال الا الى ثلا.
অর্থঃ “মক্কা
মুআয্যমা, মদীনা মুনাওয়ারাহ্ এবং বায়তুল মুকাদ্দাস ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে
সফর করোনা।” এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা পরিস্কারভাবে এটাই প্রমানিত হয় যে, এ তিন
মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদ এবং মজলিসকে বরকত তথা কল্যাণের উপলক্ষ মনে করবে না। এ
তিন মসজিদ ভিন্ন আর সমস্ত মসজিদের মর্যাদাই সমান। কিন্তু জীবিত আলিম ও বুজুর্গ
লোকদের মজলিসে গমণপূর্বক উনাদের সাহচর্য অবলম্বন যেমন এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
অন্তর্ভূক্ত নয়, তদ্রুপ পরলোকগত ওলামায়ে কিরাম এবং বুযূর্গানে দ্বীনের কবরস্থান জিয়ারত করাও এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ এ নিষেধ হাদীছ দ্বারা জীবিত উলামায়ে
কিরামগণ উনাদের সভায় গমন করা যেমন নিষিদ্ধ হয় নাই তদ্রুপ মৃত বুযূর্গানে দ্বীনের
কবর জিয়ারত করাও নিষিদ্ধ হয়নি। সুতরাং এ উদ্দেশ্যে সফর করা আম্বিয়ায়ে কিরাম এবং
ওলীআল্লাহ্গণ উনাদের কবরস্থানে গমন করা জায়েয আছে। (কিমিয়ায়ে সাআ’দাত)
(৬২) কোন কোন শাফিয়ী আলেম এ
ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন। শায়েখ আল্লামা ইবনে আবেদীন হানাফী উনার রচিত ‘শামী’ কিতাবে এ
প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন,
ومنع منه بعض اأمة الشافعية الا لزيارة صلى الله علية وسلم قياساعلى منع الرحلة لغير المسجد الثلاثة ورده الغزالى بوضوح القرق فان ما عدا تلك المسجد الثلاثة مستوية فى الفضل، فلافاء دة الرحلة اليها. (شامى، جلد-২، صقحه- ২৪৪.)
অর্থঃ কোন কোন শাফেয়ী ইমাম
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জিয়ারত ব্যতীত তিন মসজিদ এর উপর
কিয়াস করে অন্যান্য কবর জিয়ারতে নিষেধ করেন, ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি তাদের এই বক্তব্যকে প্রতিহত
করে বলেন- এ তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য সব মসজিদ মর্যাদার দিক দিয়া বরাবর বিধায়
অন্যান্য মসজিদ সমূহে ভ্রমন করা প্রয়োজননি।
(৬৩) বিখ্যাত মুহাদ্দিস জয়নুদ্দীন
ইরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
من احسن محال الحديث ان المراد منه حكم المسجد فقط، وانه لا تشد الرحال الى مسجد من المسجد غير هذه الثالاثة واما قصد غير المسجد غير هذه الثالاثة واما قصد غير المسجد من الراحلة فى طلب العلم وزيرة الصالحين والاخوان والتجارة والتنزه ونحوه ذلك فليس ذاخلافيه (اعلاء السنن، ج-ه
صفحه-০১)
অর্থঃ ‘তিন
মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও ভ্রমন করো না’- এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
ব্যবহারের উত্তম যথোপযুক্ত স্থান হল শুধু
মসজিদ। তবে যদি মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র ভ্রমনের ইচ্ছা করে যেমন- ইলম অন্বেষণ, বুযূর্গগণ
উনাদের সহিত (মৃতও যদি হয়),
আত্বীয়-স্বজনদের সহিত সাক্ষাৎ, ব্যবসায়ের
জন্য বা প্রমোদ ভ্রমনের জন্য বা অনুরূপ যত ভ্রমন আছে তা এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
অন্তর্ভুক্ত নয়। এখন প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে নিয়ত করে অর্থাৎ অন্য কোন উদ্দেশ্য
ব্যতীত শুধু কবর জিয়ারত করার নিয়তে ভ্রমন করা জায়েয কিনা? আমরা
পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে,
আমাদের সর্বাঙ্গীন আমলের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক
উনার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। এস্থলে যদি কোন প্রকার অসাবধানতা অবলম্বন করা হয়
তাহলে পদস্খলন নিশ্চিত।
(৬৪) পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
উল্লেখ আছে,
عن ابى هريرة (رض) قال
زار النبى صلى عليه وسلم قبرامه فبكى وابكى من حوله فقال استأذنت ربى فى استغفر لها فلم يؤذن لى واستأذنت فى ان ازورقبر ها فاذن لى فزور، ا القبور
فانها تزكرا لموت. (مسلم شريف(
অর্থঃ হযরত আবু হুরায়রা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার
পত্রি রওযা শরীফ জিয়ারত করতে গেলেন, তখন তিনি নিজে কাঁদলেন আর উনার
চতুর্দিকের লোকদেরকে কাঁদালেন, অতঃপর বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট উনার
ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি (মহান আল্লাহ পাক) আমাকে
উহার অনুমতি দিলেন না। অতঃপর আমি উনার রওযা শরীফ জিয়ারত করার অনুমতি চাইলাম আর
আমাকে উহার অনুমতি দেয়া হলো। সুতরাং তোমরা কবর সমূহ জিয়ারত করবে। কেননা উহা
মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়। (মুসলিম শরীফ)
(৬৫) একটি বিষয়ে লক্ষণীয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এ পবিত্র হাদীছ
শরীফ বর্ণনা করেন,
তখন তিনি মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ছিলেন আর এটা ইতিহাস
উল্লেখিত বর্ণনা যে,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন আবওয়া নামক স্থানে যখন তিনি ৬ষ্ঠ
বৎসরে পদার্পন করেন। আর সেখানেই উনাকে সমাহিত করা হয়। আবওয়া পবিত্র মক্কা শরীফ হতে
পবিত্র মদীনা শরীফগামী পথের পার্শ্বস্থ কিনানা’র বানু দা মবা এলাকায়, আল জুহফা
হতে প্রায় ২৩ মাইল দূরে অবস্থিত একটি স্থান। কারও কারও মতে এ নামটি ছিল আসলে
সেখানে অবস্থিত একটি পাহাড়ের। কথিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম নিজ
পিত্রালয় পবিত্র মদীনা শরীফ হতে পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরবার পথে এ স্থানে মারা যান
এবং এ খানেই উনাকে কবর দেয়া হয়। কিন্তু কারও কারও মতে উনাকে পবিত্র মক্কা শরীফ
উনার বরকতময় স্থানে কবর দেয়া হয়েছিল। (তাবারী ১ম খন্ড ৯৮০ পৃঃ)
আবওয়া
হোক বা পবিত্র মক্কা শরীফ হোক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আম্মাজান আলাইহিস সালাম উনাদের প্রতি
সুধারণা রাখাই উত্তম। উনার পবিত্র রওজা শরীফ যে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার হতে অনেক
দূরে ছিল তাতে কোন সন্দেহ নাই। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই দীর্ঘপথ (যদি আবওয়া হয় তবে প্রায় ২৩ মাইল, আর যদি
পবিত্র মক্কা শরীফ ধরা হয় তাহলে প্রায় ২০০ মাইল) একমাত্র উনার আম্মাজান আলাইহাস
সালাম উনার রওজা শরীফ জিয়ারত করার নিয়তে গমন করেছিলেন অন্য কোন কারণে নয়।
(৬৬-৭৮) এছাড়াও নুরুল ইযাহ, মারাকিউল
ফালাহ্, ইলাউস সুনান,
দুররুল মুখতার, ইমদাতুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে
দেওবন্দ, শরহে মুসলিম ইমাম নববী,
আইনী, তানজিমুল ইশতাত, ফতহুল মুলহীম ইত্যাদি কিতাবে কবর
জিয়ারত মুস্তাহাব বলে উল্লেখ আছে। এ সমস্ত কিতাবের কোথাও নিয়ত করে কবর জিয়ারত
নিষেধ করা হইনি।
মহিলাদের
কবর জিয়ারতের হুকুম :
‘নূরুল ইযাহ’ কিতাবে
উল্লেখ আছে-
ندب زيارتها للر جال والنساء.
অর্থঃ ‘পুরুষ ও
মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা মোস্তাহাব।’ (নূরুল ইযাহ, ১৯৯ পৃষ্ঠা)
এ হতে বুঝা যায় যে, পুরুষের
জন্য কবর জিয়ারত করা মোস্তাহাব, কিন্তু মহিলাদের ব্যাপারে কোন কোন কিতাবে জায়েয লিখলেও
বর্তমান যামানার পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ আলিমগণ মাকরূহ বা হারাম বলে আখ্যায়িত
করেছেন।
‘হাশিয়ায়ে তাহতাবী’ কিতাবে
মহিলাদের জন্য কবর জিয়ারত করা হারাম বলে উল্লেখ আছে। অনুরূপ বর্ণনা ‘মারাকিউল
ফালাহ’ কিতাবে ও
রয়েছে।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও
ফক্বিহ্ মাহমুদ বিন আহমদ বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
وحاصل الحلام انها تكره للنساء بل تحرم فى هذا الزمان لا سيما نساء مسهر لان خروحهن على وجه في فساد
وفتنة.
অর্থঃ- সারকথা এই যে, মহিলাদের
জন্য কবর জিয়ারত মকরূহ বরং বর্তমান যামানায় হারাম। বিশেষ করে শহরের মেয়েদের জন্য।
কেননা তারা যখন বের হয় তাতে তাদের উলঙ্গপনার কারণে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া ‘সিরাজুল
ওহ্হাজ’ কিতাবে
আছে-
وأماالنساء اذا اردن زيارة القبور ان كان ذلك لتجديد الحذن والبكاء والندب كما جرت به عادتهن فلاتحبوز لهن الزيارة وعليه يحمل الحديث الصحيح لعن الله زامرات الفبور. (مراقى الفلاح، ص ا৪- ৩৪০)
অর্থঃ যখন মেয়েরা কবর
জিয়ারত করার ইচ্ছা করে,
এ জন্য তার পূর্ব চিন্তা নবায়িত হবে এবং যদি ক্রন্দন করে ও
অঘাত করে (বুক চাপড়ায়) যেরূপ তাদের মধ্যে অভ্যাসগতভাবে চলে আসছে তাহলে তাদের জন্য
কবর জিয়ারত করা জায়েয নাই
(হারাম) এবং এসমস্ত (মহিলাদের) জন্যই এ ছহীহ্ পবিত্র হাদীছ শরীফ প্রতিপন্ন
যে, যে সমস্ত মহিলারা কবর জিয়ারত করে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। (মারাকিউল
ফালাহ্, ৩৪০-৪১ পৃষ্ঠা)
মুহাক্কিকগণের অভিমত হলো-
ال ولا يجوز للنساعرج الاذن خاص بال زيارة القبور (اعلاء السنن(
অর্থঃ কবর জিয়ারতে যে
অনুমতি প্রদান করা হয়েছে তা পুরুষের জন্য খাছ, মহিলাদের জন্য জায়েয নাই। (ইলাউস
সুনান)
হযরত আবু হুরায়রা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ
আছে-
لعن الله زامرات القبور
অর্থঃ মহিলা কবর
জিয়ারতকারীদের প্রতি মহান আল্লাহ্ তায়ালা উনার লা’নত। ইহা মসনদে আহমদ, ইবনে মাযাহ
ও তিরমিযী শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ আছে। মহিলারা যদি পবিত্র শরীয়ত উনার বিরোধী
কার্যকলাপ যেমন মাতম করা,
ক্রন্দন করা, বুক চাপড়ানো, বেপর্দা
ইত্যাদি সমস্ত প্রকার দোষত্রুটি হতে বিরত থাকে তাহলে এতে অর্থাৎ মহিলাদের জন্য কবর
জিয়ারতের ক্ষেত্রে কোন প্রকার দোষ নাই। এটা ফতওয়ায়ে শামী, মারাফিউল ফালাহ্, শরহে সুন্নাহ, মিরকাত ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে।
তবে
বর্তমান ফিৎনার যুগে কোন অবস্থাতেই মহিলাদের জন্য বাইরে পদচারণা না করাই উত্তম ও
অধিক সওয়াবের কাজ। যেরূপ বর্তমানে মহিলাদের জন্য মসজিদে জামাতে শরীক হওয়া আইনসিদ্ধ
নয় (মাকরূহ তাহরীমী)। এটা মারাকিউল ফালাহ্ ও গায়াতুল আওতার কিতাবে
উল্লেখ আছে।
উপরোক্ত
নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রমাণিত হলো যে, নিয়ত করে কবর বা মাযার শরীফ
জিয়ারত করার জন্য সফর করা মুস্তাহাব, বরং সুন্নতে রসুল। চার মাযহাবের
ইমামগণ উনাদের মত,
আর এর উপরই ফতওয়া। এর বিপরীত কোন মত ও ফতওয়া গ্রহণীয় নয়।
[ বিঃদ্রঃ- ফতওয়ার কলেবর বৃদ্ধির
আশঙ্কায় অনেক এবারত উল্লেখ না করে শুধু অনুবাদ দেয়া হলো।]