জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ২ নং )

জুমুয়ার নামায ফরজে আইন ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া 
গবেষণা কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফRelated image

           গত সংখ্যায় আমরা জুমুয়ার নামায ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াছাপিয়েছিলাম কিন্তু ফতওয়াটি সম্পূর্ণ না হওয়ায় ধারাবাহিকভাবে ছাপাতে হচ্ছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় অংশ জুমুয়ার ছানী আযানের আহকামের ফতওয়া। যেহেতু অনেকে গত সংখ্যাটি নাও পেতে পারেন, সেজন্য গত সংখ্যার দলীলগুলি বাদে মূল ফতওয়াটি আবারো ছাপানো হলো, যাতে করে সবার পক্ষে অন্ততঃ মূল ফতওয়াটি জানা সম্ভব হয়, আর দলীলসমূহ পেতে হলে পূর্বের সংখ্যা সংগ্রহ করা জরুরী।           মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফপত্রিকায় মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ উনার গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যথাক্রমে সুন্নতী টুপি, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা এবং প্রাণির ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হবার ফতওয়া প্রকাশের পর পঞ্চম ফতওয়া হিসেবে জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করতে পারায়  মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে অশেষ শুকরিয়া। 
 (ولله الحمد)
আমাদের প্রতিটি ফতওয়াই বিস্তারীত দলীল-আদিল্লাহসহ নির্ভরযোগ্য কিতাব উনাদের বরাত দিয়ে প্রকাশ করা হয়। অথচ প্রত্যেকটি ফতওয়াতেই আরো অনেক দলীল দেয়া যেত, কিন্তু পত্রিকার কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় ও সময়ের অভাবে সবগুলি দলীল দেয়া হয়নি।       
অবশ্য ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরো অধিক দলীলের দ্বারা বিস্তারীতভাবে প্রতিটি ফতওয়াই প্রকাশের সামর্থ আমাদের আছে।
 (انشاء الله تعالى)
জুমুয়ার ইতিহাস
 (يوم الجمعة) ইয়াওমুল জুমুয়াএ দিনটি মুসলমানদের সমাবেশের দিন। তাই এ দিনকে (يوم الجمعة) বা সমবেত হবার দিন বলা হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল ও সমস্ত  আলমকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন। এ  ছয় দিনের শেষ দিন ছিল জুমুয়ার দিন।        মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রতি সপ্তাহে মানব জাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্য এ দিন রেখেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইহুদীরা يوم السبت ইয়াওমুস সাবতি অর্থাৎ শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন ধার্য করে নেয় এবং খৃস্টানরা يوم الاحد ইয়াওমুল আহাদি অর্থাৎ রোববারকে তাদের সমাবেশের দিন নির্ধারণ করে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি দয়া করে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবারকে সমাবেশের দিন হিসাবে গ্রহণ করার তাওফীক দান করেন।
আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগে অর্থাৎ ইসলাম উনার পূর্ব যুগে ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবারকে
يوم العروبة ইয়াওমুল আরুবা বলা হত। আরবের মক্কা শরীফ উনার মধ্যে সর্ব প্রথম কাব ইবনে লুঈ, আবার কেউ কেউ বলেন, কুসাই ইবনে কিলাব-এর নাম (يوم الجمعة) ইয়াওমুল জুমুয়া রাখেন।         উক্ত জুমুয়ার দিনে কুরাঈশদের সমাবেশ হত। এবং সেখানে কাব ইবনে লুঈ ভাষণ দিতেন। অবশ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, এ দিন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে তৈরীর জন্য কাঁদামাটি জমা করা হয়েছিল বলে এ দিনের নাম জুমুয়া রাখা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, এ দিন হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহিস সালাম উনার বেহেস্তে প্রথম সাক্ষাত ঘটেছিল, তাই এ দিনকে ইয়ামুল জুমুয়া বলা হয়। আবার কেউ বলেন, এ দিনেই দুনিয়ায় আসার পর বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার পর পুণরায় সাক্ষাত ঘটেছিল, তাই এদিনকে ইয়াওমুল জুমুয়া বলা হয় এবং এ দিনই বিচারের জন্য হাশরের ময়দানে সকলকে একত্রিত করা হবে ইত্যাদি। মূলতঃ নামকরণের কারণ যাই হোক না কেন এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পূর্ব নির্ধারিত। কাব ইবনে লুঈ বা কুসাই ইবনে কিলাব পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবে এটার ফযিলত ও বুযূর্গী অনুধাবন করে ইয়ামুল আরুবাকে ইয়ামুল জুমুয়া নামকরণ করেন। অথবা উনারা যে এদিন একত্রিত হতো বিধায় ঐ দিনকে ইয়ামুল জুমুয়া বলা হয়।     হযরত কাব ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইবনে সিরীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বর্ণনা করেন, সর্ব প্রথম পবিত্র মদীনা শরীফ উনার আনসারগণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক পৌঁছারও পূর্বে নিজস্বভাবেই সপ্তাহে একটি দিনে সমষ্টিগতভাবে ইবাদত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এবং সে মতে উনারা ইহুদীদের ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার ও খৃষ্টানদের ইয়াওমুল আহাদি বা রোববারকে বাদ দিয়ে ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবারকে জুমুয়ার দিন হিসাবে বেছে নেন এবং বনী বায়জা নামক অঞ্চলে হযরত আসয়াদ ইবনে জুরারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইমামতিতে প্রথম জুমুয়ার নামায পড়েন। এ নামাযে ৪০ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। (মুসনদে আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজা, ইবনে হাব্বান, আবদ ইবনে হুমাইদ, আব্দুর রাজ্জাক, বায়হাকী)     
জুমুয়ার নামায মূলতঃ ফরজ হয় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিযরত মুবারক করার পূর্বে।     যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সংবাদ পবিত্র মক্কা শরীফ উনার চারিপাশে ছড়িয়ে পড়ল, তখন পবিত্র মদীনাবাসী দুই প্রধান গোত্র আওস এবং খায়রাজ-এর ৬ অথবা ৮ জন লোক মহান আল্লাহ পাক উনার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য হজ্জের মৌসুমে পবিত্র মক্কা শরীফ আগমন করেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করেন।         পরবর্তী হজ্জ মৌসুমে মোট বারজন লোক রাতের অন্ধকারে আকাবা নামক নির্জন স্থানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বাইয়াত গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যান এবং উনারা পরবর্তীতে আবার পুনরায় সাক্ষাৎ করার ওয়াদা করে পবিত্র মদীনা শরীফ চলে যান। এটাকে আকাবায়ে উলা বলে এবং পূর্ব ওয়াদামতে পরবর্তী হজ্জ মৌসুমে দুই গোত্রের মোট ৭৫ জন লোক সেই পূর্বের আকাবা নামক নির্জন স্থানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং দীর্ঘ আলোচনার পর সকলে বাইয়াত গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যান। এটাকে আকাবায়ে ছানী বলে।        
(এখানে উল্লেখ্য যে, কেউ কেউ বলে থাকেন, পরবর্তীতে ৭০ জন লোক মুসলমান হয়েছেন। মূলতঃ এ মত শুদ্ধ নয়। পবিত্র বুখারী শরীফ কিতাব উনার মধ্যে মোট ৭৫ জন লোক মুসলমান হয়েছেন বলে উল্লেখ আছে) যাই হোক উক্ত ৭৫ জন পবিত্র ইসলাম গ্রহণের পর উনাদের অনুরোধে উনাদেরকে ধর্মীয় ইবাদত বন্দিগী, নামায, মাসয়ালা-মাসায়েল, পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দেয়ার জন্যে উনাদের সাথে হযরত মুছয়াব ইবনে উমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উনাদের মুয়াল্লিম হিসাবে নিযুক্ত করে দেন এবং উনারা পবিত্র মদীনা শরীফ ফিরে যান।      
সুতরাং আকাবায়ে ছানীর ওয়াদা মুতাবেক পবিত্র মক্কা শরীফবাসী মুসলমানগণ হিজরতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং হজ্জের পর মুসলমানদের একদল পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে হিযরত করেন। পর্যায়ক্রমে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।    
জুমুয়া ফরজ হবার পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হবার পূর্বে মদীনাবাসী মুসলমানগণ একত্রিত হয়ে আলোচনা করলেন যে, ইহুদী ও নাসারাদের একটি সাপ্তাহিক দিন রয়েছে। আমাদেরও একটি সাপ্তাহিক বিশেষ দিন নির্ধারণ করা উচিত। তখন উনারা সর্বসম্মত মতে জুমুয়ার দিনকেই ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করেন।      উক্ত আলোচনার কিছুদিন পরেই মহান আল্লাহ পাক তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে দিয়ে জুমুয়ার নামায ফরজ করে দেন।
يا ايهاالذين امنوا اذانودى للصلوة من يوم الجمعة الخ-
অর্থঃ- যখন জুমুয়ার দিন নামাযের জন্য ডাকা হয়। তখন তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরের দিকে ধাবমান হও।”          
যখন এ পবিত্র আয়াত শরীফখানা অবতীর্ণ হয়, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মুসলমানদের মোয়াল্লেম হযরত মুছয়াব ইবনে উমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট পত্রের মাধ্যমে জুমুয়ার নামায পড়ার আদেশ দেন। পত্র পেয়ে পবিত্র মদীনাবাসী মুসলমানগণ হযরত মুছয়াব ইবনে উমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইমামতিতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সর্বপ্রথম জুমুয়া কায়েম করেন এবং সে নামাযে সর্বমোট বারজন লোক শরীক হন। (তিবরানী শরীফ, দারে কুৎনী)
সুতরাং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সর্বপ্রথম জুমুয়ার নামায কায়েম হয় এবং এটাই স্বীকৃত সর্বপ্রথম জুমুয়ার নামায।     
অতঃপর কিছুদিন পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ শরীফ উনার বরকতয় স্থানে হিজরত করেন। হিজরতের পথে কোবায় ১৪ দিন অবস্থানের পর ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা শুক্রবার দিন পুনঃ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে রওয়ানা হন। এবং পথিমধ্যে জুমুয়ার নামাযের সময় হয়ে যায়, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বনী সালিম গোত্রের বতনে ওয়াদিতে জীবনের প্রথম জুমুয়ার নামায আদায় করেন। সে নামাযে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ১০০ জন লোক শরীক হন। যেমন সিরত গ্রন্থেরবিশ্ববিখ্যাত কিতাব আছাহ্যুছ ছিয়ার উনার ১০৮নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়-
قبا  سے جمعہ کے روز  اپ روانہ ھو ئے اور بنی سالم کی مسجد مین جو بطن وادی مین ھے- پھلا جمعہ اپ نے ادا فرمایا-  اس جمعہ مین ایک سو صحابی اپ کی جماعت مین شریک تھے- (اصح السیر صفہ ১০৮)
অর্থঃ- (হিজরতের পথে) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোবা হতে জুমুয়ার দিন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বরকতময় স্থানে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে বতনে ওয়াদি নামক স্থানে বনী সালেমের মসজিদে জীবনের সর্বপ্রথম জুমুয়ার নামায আদায় করেন। যে জুমুয়ায় উনার সঙ্গে সর্বমোট ১০০ জন ছাহাবী শরীক হন। (আছাহুস সিয়ার-১০৮ পৃষ্ঠা)  
জুমুয়ার উক্তরূপ ইতিহাস নিম্নে বর্ণিত সমস্ত কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-  (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে হাক্কানী, তাফসীরে কামালাইন, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে খাযেন বাগবী, তাফসীরে মাদারেক, তাফসীরে বায়যাবী, তাফসীরে মায়ারেফুল কুরআন, ফাতহুল বারী, আবু দাউদ, মসনদে আহমদ, ইবনে মাযাহ, তিবরানী, বায়হাকী, দারে কুৎনী, সিরাতে ইবনে হেসাম, সিরাতে হালাবী, সিরাতুন্নবী, যাদুল মায়াদ, মাদারে যুন নবুওয়াত ইত্যাদি কিতাবসমূহ)
জুমুয়ার নামাযের ফাযায়েল
(১)
عن ابى هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من اغتسل يوم الجمعة غسل الجنابة ثم رأح فكانما قرب بدنة ومن راح فى الساعة الثانية فكانما قرب بقرة ومن راح فى الساعة الثالثة فكانماقرب كبثا رقرن ومن راح فى الساع الرابعة فكا نما قرب دجاجة ومن راح فى الساعة الخامسة فكانما قرب بيضة فاذاخرج الامام حضرت الملائكة يستمعون الذكر. (متفق عليه) بخارى ضريف ج صفه ১২১)
অনুবাদ- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীর, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি জুমুয়ার দিন গোছল করে জানাবাত (অপবিত্রতা) থেকে পবিত্র হওয়ার উদ্দেশ্যে এবং জুমুয়ার নামাযে সর্বপ্রথম গমন করে, সে যেন একটি উটকে কুরবানী ক্বওল। যে ব্যক্তি এরপর রওনা করে মসদিদে আসে সে যেন একটি গাভী কুরবানী ক্বওল। তৃতীয় যে ব্যক্তি গমন করবে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী ক্বওল। চতুর্থ যে গমন ক্বওল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী ক্বওল। পঞ্চম যে গমন ক্বওল সে যেন একটি ডিম কুরবানী ক্বওল (দান করার সমতুল্য ছওয়াব পাবে)। পরে ইমাম সাহেব যখন খুৎবা প্রদানের জন্য বের হন, তখন হযরত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা কাজ বন্ধ করে যিকির (খুৎবা) শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন। (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ ১২১পৃঃ)
(২)
عن ابى لبابة بن عبد المنذر قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الا يام واعظمها عند الله وهوا عظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطرفيه خمس خلال خلق الله فيه ادم واهبظ الله فيه ادم الى الارض وفيه توفى الله ادم وفيه ساعة لايسئال العبد فيها شيا الا اعطاه مالم سيئال حراما وفيه تقوم الساعة مامن ملك مقرب ولاسماء ولاارض ولا رياح ولا جبال ولا بحرالا هو مشفق من يوم الجمعة. رواه ابن ماجة واحمد مشكوة صفه ১২০.
অনুবাদ- হযরত আবু লুবাবাহু ইবনে মুনজির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, জুমুয়ার দিন হলো দিনসমূহের সরদার। মহান আল্লাহ পাক তিনি জুমুয়ার দিনকে অধীক সন্মান দান করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জুমুয়ার দিনের মর্যাদা বা সম্মান ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চেয়ে অনেক বেশী। আরো পাঁচটি বিশেষ কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি জুমুয়ার দিনকে এতো ইজ্জত দান করেছেন। যেমন তা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি এ জুমুয়ার দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন। আর এ পবিত্র দিনেই উনাকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আর এ দিনেই উনাকে দুনিয়া থেকে নিয়েছেন (ইন্তেকাল করেছেন)। আর এ জুমুয়ার দিনেই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট যেই বান্দা যা চায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে তা থেকে মাহরূম করেন না, যদি সে হারাম কোন জিনিস না চায়। আর এ দিনেই কিয়ামত কায়েম হবে। আর এ জুমুয়ার দিন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটতম ফেরেশ্তাগণ এবং আসমানসমূহ, যমীন, বাতাস, পাহাড়-পর্বত এবং নদী-নালা, সাগর সকলেই জুমুয়া আদায়কারী নেককারগণের জন্য অনুগ্রহ পরায়ন দয়াশীল হয়ে দোয়া করা ব্যতীত আর কিছুই করেন না। (বা দয়াশীল হন) (ইবনে মাযাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, পৃঃ ১২০)।
(৩)
عن ابى هريرة خير يوم طلعت عليه الشمس يوم الجمعة فيه خلق اذم وفيه ادخل الجنة وفيه اخرج منها ولا تقوم الساعة الافى يوم الجمعة.
অনুবাদ- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, উত্তম দিন যার উপর সূর্য উদিত হয় তা হলো জুমুয়ার দিন। আর জুমুয়ার দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং ঐ দিনেই উনাকে বেহেস্তে প্রবেশ করানো হয়েছে। এবং ঐ দিনেই উনাকে বেহেস্ত থেকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে। আর জুমুয়ার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (মুসলিম শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, তিরমিজী শরীফ)
(৪)
عن ابى هريرة من توضأ فاحسن الوضوء ثم اتى الجمعه فا ستمع وائصت غفرله مابينه وبين الجمعه وزيادة ثلثه ايام ومن مسى احصى فقد لغا- مسلم شريف.
অনুবাদ- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- যে ব্যক্তি উত্তমভাবে ওযূ করে জুমুয়ার নামায আদায় করার জন্য মসজিদে আসে এবং মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনেছে এবং চুপ করে বসে থেকেছে, তাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মাফ করে দিয়েছেন। তার এক জুমুয়ার থেকে পরবর্তী জুমুয়ার মধ্যেকার গুণাহসমূহ এবং তার জন্য তিন দিনের সন্মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর যে ব্যক্তি মসজিদে যেয়ে একটি কথা বা কংকর স্পর্শ ক্বওল সে যেন একটি (আমলে কাছির) খারাপ কাজ করলো। (মুসলিম শরীফ)
(৫)
 عن سلمان الفارسى رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم يغتسل رجل يوم الجمعة ويتطهر مااستطاع من طهرويد هن من ذهنه اوبمس من طيب بيته ثم يخرج فلايفرق بين اثنين ثم يسلى ماكتب له ثم ينصت اذا تكلم الامام الا غفر له ما بينه وما بين الجمعة الا خراى. بخارى شريف صغه ১২১-
অনুবাদ- হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- যে ব্যক্তি জুমুয়ার (নামাযের) পূর্বে গোসল করবে, সাধ্যানুযায়ী পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা হাসিল করবে এবং তৈল ব্যবহার করবে অথবা নিজ ঘরে যদি সুগন্ধির ব্যবস্থা থাকে তবে তা ব্যবহার করবে, তারপর মসজিদে উপস্থিত হয়ে যেখানে স্থান পায়ে সেখানেই বসে পড়বে, কাউকেও কষ্ট দিয়ে মধ্যস্থলে বসবেনা, তারপর সাধ্যানুযায়ী নামায পড়বে, আর ইমামের খুৎবা দানকালে চুপ থাকবে। তবে তার পূর্বের এক সপ্তাহের গুণাহ মহান আল্লাহ পাক তিনি মাফ  করে দেবেন বা মাফ হয়ে যাবে। (বুখারী শরীফ, পৃঃ-১২১)

জুমুয়ার নামায তরককারীর শাস্তি
(১)
 عن ابى هويرة رضى الله تعالى عنه لينتهين اقوام عن ودعهم الجمعات اوليختمن الله على قلوبهم ثم ليكون من الفافلين. مسلم شريف وبذل المجهود صفه ১৫৩.
অনুবাদ- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, নিশ্চয়ই অবজ্ঞা করে যে সম্প্রদায় জুমুয়ার নামায থেকে ফিরে থাকে, তাদের ক্বলবে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিশ্চয়ই মহর মেরে দেবেন। অতঃপর তারা অবশ্যই গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।(মুসলিম শরীফ ও বজলুল মজহুদ পৃঃ ১৫৩)
(২)
عن ابى الجعد الضمرى وكائت له صحبة ان رسول الله عليه وسلم قال من ترك ثلاثجمع تهاو نابها طبع الله على قلبه- ابوداود ج صفه ১৫৮.
অনুবাদ- হযরত আবু জাদিল জুমরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একজন ছাহাবী ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- যে ব্যক্তি অহঙ্কার বা অবজ্ঞা করে পরপর তিন জুমুয়া ছেড়ে দেয় অর্থাৎ না পড়ে তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ক্বলবের উপর মহর মেরে দেবেন। (আবু দাউদ শরীফ ১ম জিঃ ১৫৮ পৃঃ) (৩)
হযরত ইবনে উমর আলাইহিস সালাম এবং হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, আমার ইচ্ছা হয় যে, আমার ইমামতি অন্য কাউকে দিয়ে (যারা বিনা ওজরে জুমুয়া ছেড়ে দেয়) জুমুয়া তরককারীদের ঘর-বাড়ী জ্বালাইয়া দিয়ে আসি। (মিশকাত শরীফ)
عن ابن عباس وعن ابن عمر من ترك ثلاث جمعات من غير عذر كتت من المنافقين- عن جابر من ترك جمعة من غير ضرورة كتب منا فقافى كتاب لا يمحمى ولا يبدل- احمدبن حنبل ج صغه ২৮৯-
(৪)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যে বিনা কারণে তিন জুমুয়া পরিত্যাগ করলে সে মুনাফিকদের অর্ন্তভূক্ত হয়ে যাবে।     
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, যে ব্যক্তি বিনা ওজরে জুমুয়ার নামায তরক করে, তার নাম মোনাফেকের দপ্তরে লিখিত হবে। এটা অপরিবর্তনীয়। (মুসনদে আহমদ)
(৫)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত যে, তিনি উক্ত ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, যে দিবসে রোজা রাখে ও রাত্রিতে তাহাজ্জুদ পড়ে কিন্তু জামায়াত ও জুমুয়ায় উপস্থিত হয় না। তার উত্তরে তিনি বলেছেন যে, উক্ত ব্যক্তি দোযখে যাবে।

জুমুয়ার নামায ফরজে আইন হওয়ার দলীল

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সুরা জুমুয়া শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ياايهالذين امنوا اذاتودى لصلوة من يوم الجمعة- الخ.
          অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ, যখন জুমুয়ার দিনে তোমাদেরকে নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির উনার দিকে ধাবিত হও। সমস্ত ফকীহগণ এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন প্রমাণ করেন। নিম্নে পবিত্র তাফসীর শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ফিকাহ শরীফ ও পবিত্র ফতওয়া উনাদের কিতাব হতে জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন ও তার দলীল পেশ করা হলো।
(১)
اعلم ان صلوة الجمعة من قروض الا عيان فيجب على من جمع العقل والبلوغ والحرية الذكران والاقامة اذالم يكن له عذر فمن تر كها استحق الوعيد. تفسير خازن يغوى.
অর্থঃ- জেনে রাখ যে, জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। সুতরাং বুদ্ধিমান, বয়ঃপ্রাপ্ত, স্বাধীন, পুরুষ, মুকীম এবং যাদের শরীয়তসম্মত কোন ওজর নেই তাদের প্রতি জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। যে এটা তরক করবে সে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে। (তাফসীরে খাযেন বাগবী)
(২)
صلوة الجمعة قريضة محكمة جاهدها كاقر بالا جماع- عينى فى شرح بخارى.
অর্থঃ- জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। এটার অস্বীকারকারী কাফির, এতে সকলেই একমত। (আইনী ফি শরহে বুখারী)
(৩)
اعلم ان الجمعة قريضة محكمة بالكتاب والسنة والا جماع وبكفر جاهدها- (فبح القدير)
অর্থঃ- স্মরণ রাখ যে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র ইজমা শরীফ দ্বারা জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন প্রমাণিত হয়েছে। যে এটা অস্বীকার করবে, সে কাফির হবে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
(৪)
اعلم ان الجمعة قريضة فريضة محكمة لا يسح تر كها ويكفر جاهدها تثبت فريضتها بالكتاب والسنة والا جماع الا مة. (كفاية) ودرالمنتقه.
অর্থঃ- অবগত হও যে, জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। এটা ত্যাগ করার সাধ্য নেই। এটা অস্বীকারকারী কাফির হবে। এটা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ দ্বারা প্রামণিত। (কিফায়া, দুররুল মোন্তাকা)
(৫)
هى فرض عين يكفر جاهدها لثبوتها لالدليل القطعى. (درالمختار)
অর্থঃ- জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। এটাকে অস্বীকার করলে কাফির হবে। যেহেতু এটা দলীলে কেৎয়ী দ্বারা প্রমাণিত।” (দুররুল মুখতার)         
উপরোক্ত দলীল-আদীল্লাহ দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন। এটা অস্বীকার করলে কাফির হবে এবং আলস্যবসতঃ ত্যাগ করলে কবীরা গুনাহ হবে। (তাফসীরে খাজেন মাদারেক, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে বায়যাবী, ওমদাতুল কারী, ফাতহুল বারী, আলমগীরী, বাহরুর রায়েক, তাতার খানিয়া, বাদায়েউস সানায়ে ইত্যাদি) আরো অনেক কিতাবসমূহে জুমুয়ার নামায ফরজে আইন বলে উল্লেখ আছে।
জুমুয়ার শর্তসমূহ :
          জুমুয়ার নামায ফরজে আইন হওয়ার জন্য প্রধানতঃ দুটি শর্ত পুরণ হওয়া প্রয়োজন। (এক) জুমুয়া ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ অর্থাৎ কাদের উপর জুমুয়া ফরজ তার বর্ণনা। (দুই) জুমুয়া সহীহ হওয়ার শর্তসমূহ অর্থাৎ কোন স্থানে কখন কিভাবে জুমুয়া সহীহ হবে, তার বর্ণনা। (এক) জুমুয়া ফরজ হবার শর্তসমূহ :
(১) مردهونا - পুরুষ হওয়া সুতরাং মেয়ে লোকের উপর জুমুয়া ফরজ নয়। এবং মেয়েলোকের নামাযের জামাতে শরীক হওয়াই মাকরূহ তাহরীমী। (গায়াতুল আওতার, আইনী ইত্যাদি)
(২) ازادهونا -আযাদ বা স্বাধীন হওয়া, কারণ ক্রীতদাস বা গোলামের উপর জুমুয়া ফরজ নয়। তবে মনীব বা মালিকের অনুমতিক্রমে আদায় করে নিলে আদায় হয়ে যাবে।
(৩) مقيم هونا - মুকীম, অর্থাৎ মুসাফির না হওয়া, কেননা মুসাফিরের উপর জুমুয়া ফরজ নয়। মুসাফির ঐ ব্যক্তিকে বলে যে ৪৮ মাইল দূরে যাবার নিয়ত করে সফর করে।      যদিও মুসাফিরের উপর জুমুয়া ফরজ নয়, তবে সে যদি জুমুয়ার নামায আদায় করে নেয় তবে আদায় হয়ে যাবে। এবং তার ইমামতি করাও জায়েয হবে।
 (৪) بالغ هونا - বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া, কারণ নাবালেগ বা অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের উপর জুমুয়ার নামায ফরজ নয়।
(৫) تندرستهونا - সুস্থ হওয়া, অর্থাৎ এতটুকু অসুস্থ না থাকা যে, নামাযে আসতেই অক্ষম। যেমন ন্যাংড়া, অন্ধ অথবা খুব অসুস্থ বা বৃদ্ধ ইত্যাদি। তবে যদি ল্যাংড়া ও অন্ধকে মসজিদে পৌঁছানোর জন্য কোন লোক থাকে আর সে জুমুয়া আদায় করে নেয় তবে তার জুমুয়া আদায় হয়ে যাবে।
(৬) جماعت ترک کرنے کے عذر نہ رھنا  জামাত ত্যাগ করার ওজরসমূহ না থাকা। যেমন- ঝড়, তুফান, মুষলধারে বৃষ্টি, চোর-ডাকাতের ভয়, রাস্তা নিরাপদ না থাকা এবং এমন রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকা, যাকে সেবা করার মত অন্য লোক উপস্থিত নেই এবং সে জুমুয়ায় চলে আসলে রোগীর মৃত্যুর আশংকা আছে ইত্যাদি। এবং তারা যদি জুমুয়া আদায় করে নেয় তবে দুরস্ত হবে।

(দুই)
জুমুয়া সহীহ হওয়ার শর্তসমূহ

 (১) امام رهنا - ইমাম বা খতীব থাকা, অন্যান্য নামাযের জন্য যে উপযুক্ত জুমুয়ার নামাযের ইমামতির জন্যও সে উপযুক্ত হবে। সুতরাং মুসাফির, রোগী ও গোলামের ইমামতিও জায়েয।
(২) جماعت هونا - জামাত হওয়া আমাদের হানাফী মাযহাব মতে ইমাম ব্যতীত তিনজন মোক্তাদী হওয়া জামায়াতের জন্য শর্ত। এবং খুৎবার শুরু থেকে প্রথম রাকায়াতের সিজদা পর্যন্ত তিনজন মোক্তাদী উপস্থিত থাকতে হবে। অবশ্য সিজদা করার পর মোক্তাদী চলে গেলে জুমুয়া সহীহ হবে।
(৩) ظهروقت هون - যোহর নামাযের সময় হওয়া, যোহর ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে ও শেষ হবার পরে জুমুয়ার নামায পড়লে জুমুয়া সহীহ বা দুরস্ত হবে না। অর্থাৎ যোহর ওয়াক্তের মধ্যেই জুমুয়া পড়তে হবে।
(৪) خطبه هونا - খুৎবা হওয়া, অর্থাৎ জুমুয়ার ফরজ নামাযের পূর্বে খতীব মুসল্লীদের দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আরবীতে কমপক্ষে এক তাসবীহ পরিমাণ পাঠ করবে। খুৎবা কমপক্ষে এক তাসবীহ পরিমাণ পাঠ করা ওয়াজিব। নামাযের পরে খুৎবা পড়লে জুমুয়ার নামায ছহীহ হবে না। খুৎবা যোহর ওয়াক্তের মধ্যে হওয়া বাঞ্চনীয়। যোহর ওয়াক্তের পূর্বে বা পরে খুৎবা পাঠ করলে জুমুয়া ছহীহ হবে না।
 (৫) اذن عما رهنا - জনসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকা, অর্থাৎ যে স্থানে জুমুয়ার নামায পড়া হবে, সে স্থানে সকলের প্রবেশাধিকার থাকা চাই।
(শহরের ব্যাখ্যা)
(৬) شهرهونا (শহরের ব্যাখ্যা-মিছর) অর্থাৎ শহর হওয়া, শহর বা মিছরের তারীফ বা ব্যাখ্যা ইমাম মুজতাহিদগণ উনারা ইজতেহাদ করে মিছর বা শহরের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাই আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম উনাদের মধ্যে শহরের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন ইখতিলাফ বা মতভেদ দেখা যায়। যেমন শহরের ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন-
(১) শহর ঐ স্থানকে বলে, যেখানে সর্ব প্রকার পেশার লোক বাস করে এবং প্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র পাওয়া যায়।
(২) কেউ বলেন- শহর ঐ স্থানকে বলে, যে স্থানে দশ হাজার লোক অথবা দশ হাজার সৈন্য বাস করে। (৩) আবার কেউ বলেন- শহর ঐ স্থানকে বলে, যেখানে এত পরিমাণ লোক বাস করে, যদি তাদেরকে শত্রু আক্রমন করে, তবে তারা শত্রুর মোকাবেলা করতে সক্ষম।
(৪) আর হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
كل موضح له امير وقاض ينفذ الا حكام ويقيم الحدود.
          মিছর বা শহর ঐ স্থানকে বলে, যেখানে আমীর ও বিচারপতি রয়েছে এবং ইসলামী আহকাম ও হদ কেসাস জারী আছে এটা জাহেরে রেওয়ায়েত।
আর হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
لواجمعوا اكبر مساجدهم لم يسعهم ذالك فهو مصرجامع- عليه الفترى اكشر الفقهاء الحنفيه.
          মিছরে জামে বা শহর ঐ স্থানকে বলে, যেখানকার সমস্ত লোক তাদের স্থানীয় বড় মসজিদে একত্রিত হলে স্থান সঙ্কুলান হয় না। এ ক্বওল বা ব্যাখ্যার উপরই হানাফী মাযহাবের অধিকাংশ ফকীহগণ উনারা ফতওয়া দিয়েছেন এবং এটা তারজীহ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ক্বওল এবং অধিকাংশ হানাফী মাযহাবের বিখ্যাতও নির্ভরযোগ্য ফতওয়া ও ফিকাহ উনাদের কিতাবে মিছর বা শহরের ব্যাখ্যায় এ বড় মসজিদের ক্বওলকেই উল্লেখ করা হয়। সুতরাং আমাদের দেশের গ্রামগুলি বড় মসজিদের ক্বওল মতে শরয়ী শহরের অর্ন্তভূক্ত। কেননা শরয়ী শহরের সাথে প্রচলিতভাবে আমরা যেগুলোকে শহর বলি, তার কোনই সম্পর্ক নেই। যেমন আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকার তুলনায় জেলা শহরগুলো কোন শহরই নয়। একইভাবে ইউরোপ, আমেরিকার শহরগুলোর তুলনায় ঢাকাও কোন শহরই নয়। সুতরাং প্রকৃত পক্ষে শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে কোনটা শহর আর কোনটা শহর নয় সেটাই ধর্তব্য।
গ্রামের ব্যাখ্যা
          কারণ প্রকৃতপক্ষে শরীয়ত উনার মধ্যে قرية বা গ্রাম বলে ঐ স্থানকে, যে স্থানের ঘর-বাড়ীগুলি বিচ্ছিন্ন, লোক বসতি একেবারে কম, লোক বসতির স্থানগুলি একটার থেকে অপরটার দূরত্ব অনেক বেশী এবং ঐ স্থানগুলোতে কোন প্রকার আইন-কানুন, বিচার-আচার, শাসন, প্রশাসন কিছুই বিদ্যমান নেই এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যায় না।
          উপরোক্ত গ্রামের ব্যাখ্যার সাথে আমাদের গ্রামগুলির কোন প্রকার মিল বা সম্পর্ক নেই। এবং আমাদের দেশের গ্রামগুলি সে পর্যায়ে পড়ে না। যদিও প্রচলিত ভাষায় আমরা গ্রাম বলে থাকি কিন্তু এটা শরীয়ত উনার মধ্যে শহরের অর্ন্তভূক্ত। অর্থাৎ শরয়ী শহর। সুতরাং আমাদের দেশের গ্রামগুলিতে জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন এবং দুঈদের নামায পড়া ওয়াজিব।
তারজীহ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত কওলের বিপরীত আমল করা হারাম
এখন যেহেতু মিছর বা শহরের ব্যাখ্যায় আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমামগণ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। সুতরাং এখন আমরা কোন্ মতের উপর আমল করব। জাহেরে রেওয়ায়েতের উপর, না প্রাধান্যপ্রাপ্ত কওলের উপর?
জাহেরে রেওয়ায়েতের বিপরীত মতকে যদি প্রাধান্য বা তারজীহ দেয়া হয়, তখন তারজীহপ্রাপ্ত ক্বওলকে বাদ দিয়ে জাহেরে রেওয়ায়েতের উপর আমল করা হারাম। আর যদি জাহেরে রেওয়ায়েতের বিপরীত মতকে প্রাধান্য দেয়া না হয় তখন জাহেরে রেওয়ায়েতের উপরই আমল করতে হবে।
নিম্নে প্রাধান্যপ্রাপ্ত কওলের বিপরীত আমল করা হারাম হওয়ার দলীল বর্ণনা করা হলো-
قد تقلوا الا جماع على ذالك ففى الفتارى الكبرى للمحقق اين حجر المكى قال لا يجل لهما الحكم والا فتاء بغيرا الر اجح لانه اتباع للهوى- وهو حرام اجماعا. شرح عقود رسم المفتى صفه .
অর্থাৎ মতভেদযুক্ত মাসয়ালায় প্রাধান্যপ্রাপ্ত কওলের উপর ফতওয়া হওয়ার ব্যাপারে ফকীহগণ একমত পোষণ করেন। মুহাক্কিক ইবনে হাযর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়ায়ে কোবরা কিতাবে বর্ণিত আছে যে, ফকীহগণ উনাদের মতে ইখতিলাফযুক্ত মাসয়ালায় দুই বা ততোধিক ক্বওলের প্রাধান্যপ্রাপ্ত ক্বওল ব্যতীত যে কোন ক্বওল দ্বারা ফতওয়া দেয়া বা আমল করা নাযায়েয। হযরত ইমাম কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা হতে এটা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, মুজতাহিদ বা মুকাল্লিদের জন্য প্রাধান্যপ্রাপ্ত কওলের বিপরীত হুকুম বা ফতওয়া দেয়া হালাল নয়। এটাতে স্বীয় নফসের অনুসরণ করা হয় যা সমস্ত ফকীহগণ উনাদের মতে হারাম। (শরহে উকুদে রসমুল মুফতী পৃঃ ৩)   
সুতরাং প্রাধান্যপ্রাপ্ত ক্বওল অর্থাৎ বড় মসজিদের ক্বওলই শহরের পুর্ণাঙ্গ এবং উত্তম ব্যাখ্যা, এর বিপরীত কোন ব্যাখ্যাই গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়াও বর্তমানে পৃথিবীর কোথাও পূর্ণ ইসলামী আহকাম বা হদকেসাস কায়েম নেই এবং ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত বা অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহে যেখানে আমীর, কাজী, ইসলামী আহকাম, হদকেসাস কোনটাই নেই এবং হদকেসাস কায়েম করার ক্ষমতাও তাদের নেই, তবে কি সেখানকার মুসলমানগণ জুমুয়ার নামায আদায় করবেন না? অথচ সেখানকার শহরগুলো আমাদের ঢাকা শহরের চেয়েও বড় এবং বহু উন্নত। সুতরাং বড় মসজিদের ক্বওল অনুযায়ী সেখানেও জুমুয়া পড়া ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। সুতরাং আমীর, কাজীর মতকে যদি আমরা গ্রহণ করি তাহলে পৃথিবীর কোথাও জুমুয়ার নামায পড়া জায়েয হবে না। এমনকি আমাদের দেশের শহরগুলিতেও জুমুয়া জায়েয হবে না। অথচ যারা এ মতের দাবীদার অর্থাৎ যারা বলে হদকেসাস জারী না থাকলে জুমুয়া হবে না, তারাই আবার যখন ঢাকায় অথবা অন্যান্য শহরে যান তখন ঠিকই জুমুয়া পড়ে থাকেন। যাদের কথার সাথে আমলের কোন প্রকার মিল নেই তাদের ফতওয়া কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
          মূলতঃ বড় মসজিদের ক্বওল মোতাবেক আমাদের দেশের গ্রামগুলোতে জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব এবং জাহেরে রেওয়ায়েত এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সমস্ত ক্বওলের উপর এটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
প্রাধান্যপ্রাপ্ত কওলের নিদর্শন
          বড় মসজিদের ক্বওল যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত ক্বওল তার প্রমাণ কি? তারজীহ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ক্বওল কাকে বলে এবং তার নিদর্শন কি? দুই বা ততোধিক মতভেদযুক্ত মাসয়ালায় ইমামগণ উনারা যে কওলের উপর ফতওয়া দেন ওটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত ক্বওল। প্রাধান্যপ্রাপ্ত কওলের নিদর্শন নিম্নোক্ত দেয়া হলো-
واما العلامات للا فتاء فقوله وعليه الفتاوى وبه يفتى وبه نا خذ وعليه الا عتماد- وعليه عمل اليوم وعليه عمل الامة- وهوالصحبح وهو الاصح ......... نلفظ الفتاوى اكدى من لفظ الضحيح- والاسح والاشبه وغيرها. شرح عقود رسم المفتى صفه ৩২.
অর্থাৎ প্রাধান্যপ্রাপ্ত ক্বওলটিকে ফিক্বাহবিদগণ উনারা এভাবে চিহ্নিত করেন- এটার উপরই ফতওয়া। এটাই আমরা গ্রহণ করি, এটার উপরই নির্ভর, এটার উপরই যামানার আমল বা উম্মতের আমল, এটাই ছহীহ বা অকাট্য। তন্মধ্যে প্রথমটি অর্থাৎ عليه الفتاوى এটার উপরই ফতওয়াকথাটি অন্যান্য সব কথার উপর বেশী তাকিদপূর্ণ। (শরহে উকুদে রসমুল মুফতী, পৃঃ ৩২)
সুতরাং মিছরের ব্যাখ্যায় বড় মসজিদের ক্বওলকে
عليه الفتاوى اكثر الفقهاء وهو الصحيح.
বলে। অর্থাৎ বড় মসজিদের কওলের উপরই অধিকাংশ ফকীহগণের ফতওয়া এবং এটাই ছহীহ বলে প্রাধান্য দেয়া হয়।
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা
হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারই কথা
          অনেকে মনে করে থাকেন যে, হানাফী মাযহাব বলতে শুধু হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথাকেই বুঝায়, মূলতঃ এটা শুদ্ধ নয়। কারণ যেসকল মাসায়েলে হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শিষ্যগণ, যেমন হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে দ্বিমত করেছেন, ওটাকে মুতাবার তবকার ফকীহগণ উনারা প্রাধান্য দিয়ে থাকলে ওটা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযহাব বলেই গণ্য হবে এবং হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা মুবারক উনারই অর্ন্তভূক্ত। যেমন শরহে উকুদে রসমুল মুফতী’  উনার ১৬নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-
فائه روى عن جميح اصحابه من الكباركابى يوسفه (رح) ومحمد (رح) وزفر (رح) والحسن (رح) انهم قالوا ماقلنا فى مسئلة قولا الا وهو روايتنا عن ابى حيفة واقسموا علية.
অর্থাৎ হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম যুফার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মত, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রধান শিষ্যগণ কসম করে বলেন যে, আমরা যে কোন মাসয়ালায় যে কোন কথা বলেছি ওটা হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হতেই বর্ণনা করেছি।
          অতএব বড় মসজিদের ক্বওল হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বওলেরই অন্তর্ভুক্ত। উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনা থেকে আমরা এটা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে, যেখানে বড় মসজিদের ক্বওল পাওয়া যাবে, সেখানে জুমুয়া পড়া ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। এবং মিছরের ব্যাখ্যায় বড় মসজিদের ক্বওলেই গ্রহণযোগ্য, এটার বিপরীত মত গ্রহণ করা নাযায়েয ও হারাম।
বড় মসজিদ উনার পরিমাপ
          হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, শহর ঐ স্থানকে বলে, তথাকার সমস্ত লোক যাদের উপর জুমুয়ার নামায পড়া ফরজ তারা সকলে স্থানীয় বড় মসজিদে একত্রিত হলে স্থান সঙ্কুলান হয় না।
সুতরাং এখন বড় মসজিদ কাকে বলে তার পরিমাপ কি? তা আমাদের জানা প্রয়োজন, কারণ এই বড় মসজিদের মাপ না জানার কারণেই অনেকে বড় মসজিদের ক্বওল নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন।         পৃথিবীতে এমন মসজিদও রয়েছে, যা দুই তিন গ্রামের লোক একত্রিত হলেও মসজিদ ভরবে না, আবার এমন মসজিদও রয়েছে যা এক গ্রামের এক তৃতীয়াংশ লোকই ভরে যাবে।   অতএব, এখানে বড় মসজিদ বলতে নিম্মোক্ত পরিমাপের মসজিদকেই বুঝান হয়েছে-
وفى حاشية المدنى عن جواهر الفتاوى ان قاض خان سئل عن ذالك- فقال اختليفوا فيه فقدره بعضهم بيتين ذراعاء ربعضهم قال ان كاتت اربعين ذراعا قهى كبيرة والاقصغيرة هذا هواالمختار- وان المختار فى تقدير الكبيره اربعون ذراعا- (شامى- درالمختارفى شرح- ردالمحتارج صفه ৫৮৫)
অর্থাৎ হাশিয়ায়ে মাদানীকিতাব উনার মধ্যে জাওয়াহিরুল ফতওয়া কিতাব থেকে বর্ণনা করা হয় যে, কাজীখানকে বড় মসজিদের পরিমাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এটার মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, বড় মসজিদের পরিমাপ হলো ষাট গজ। আবার কেউ কেউ বলেন, যদি চল্লিশ গজ হয় তবে সেটা বড় মসজিদ এবং এটার ছোট হলে ছোট মসজিদ, তম্মধ্যে দ্বিতীয় ক্বওল অর্থাৎ চল্লিশ গজই গ্রহণযোগ্য। সুতরাং গ্রহণযোগ্য ক্বওল মোতাবেক বড় মসজিদের পরিমাপ হলো চল্লিশ গজ। (শামী, দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার ১ম জিঃ পৃঃ ৫৮৫) এবং রোকনুদ্দীন ফি শরহে ইমাদুদ্দীন কিতাব উনার মধ্যে ওটার নিম্নরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে-
مختار قول کے بموجب چالیس گز شر عی کی مقدار بری مسجد شمار کی جائیگی- تواس حساب سے ھمارے زمانہ مروجہ قطعی گزسے بری مسجد پچیش گز کی ھوئی- (رکن الدین فی شرح عماد الدین صفہ ১২২، رسالئے دینیات
অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য ক্বওল মোতাবেক শরয়ী মাপ অনুযায়ী ৪০ গজ বড় মসজিদ ধরা হয়। এবং শরীয়ত উনার মধ্যে ১০ গিরায় ১ গজ ধরা হয়। সুতরাং উক্ত হিসাব মতে আমাদের যামানায় প্রচলিত গজ অনুযায়ী বড় মসজিদ ২৫ গজ ধরা হয় অর্থাৎ ৫০ হাত। (রুকনুদ্দীন ফি শরহে ইমাদুদ্দীন, পৃঃ ১২২, রেসালায়ে দীনিয়াত) সুতরাং ৫০ হাত দীর্ঘ কাতারে যতজন লোক নেয় ততজন লোকে যে মসজিদ ভরে যায় সেটাই বড় মসজিদ এবং এ পরিমাণ লোক যে স্থানে বসবাস করে, সেটাই শরয়ী শহর।           সুতরাং যতজন লোক উক্ত পরিমাপের বড় মসজিদে প্রবেশ করলে বড় মসজিদ ভরে যাবে ততজন লোক যদি কোন গ্রামে বাস করে (তারা নামাযী বা বেনামাযী, স্থানীয় বা বহিরাগত যাই হোক না কেন) উক্ত গ্রাম শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে শহরের অন্তর্ভুক্ত। অতএব উক্ত গ্রামে জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। এখন যদি উক্ত গ্রামের জুমুয়ার নামাযে ইমাম ব্যতীত তিন জন লোক উপস্থিত হয় আর তারা জুমুয়ার নামায আদায় করে নেয়, তবে জুমুয়ার নামায আদায় হয়ে যাবে। কেননা সমস্ত লোক মসজিদে উপস্থিত হওয়া শর্ত নয় এবং উক্ত পরিমাপের বড় মসজিদও গ্রামে থাকা শর্ত নয়। মূলতঃ উক্ত বড় মসজিদে যতজন লোক প্রবেশ করলে স্থান সঙ্কুলান হয়না ততসংখ্যক লোক গ্রামে থাকা শর্ত। অবশ্য জন্মগতভাবে ঐ স্থানের হওয়া সত্বেও যারা চাকরী, ব্যবসা বা অন্যান্য কারণে অন্যস্থানে বসবাস করে, তারা ধর্তব্যের বাইরে। আবার যারা অন্যস্থান থেকে এসে উক্তস্থানে বসবাস করে তাদেরকে ঐ এলাকার হিসাবে ধরতে হবে। সুতরাং যারা বলে গ্রামে জুমুয়া জায়েয নয়, তাদের কথা সত্যই বটে। আমরাও বলি, গ্রামে জুমুয়া জায়েয নয়। তবে জানতে হবে আমাদের দেশের গ্রামগুলো শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে গ্রাম কিনা এবং শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে গ্রাম কাকে বলে? (গ্রামের ব্যাখ্যা আমরা পূর্বেই দিয়েছি) সুতরাং শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে আমাদের দেশের গ্রামগুলো শহরের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ শরয়ী শহর। সুতরাং আমাদের দেশের গ্রামগুলোতে বড় মসজিদের অকাট্য ক্বওল অনুযায়ী জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। অলস্যবশতঃ তরক করলে কবীরাহ গুণাহ হবে।
কাফির রাষ্ট্রে জুমুয়া জায়েয হওয়ার অকাট্য দলীল:
উপরোক্ত জুমুয়ার ইতিহাস হতে আমরা স্পষ্টই জানতে পারলাম যে, হযরত মুছয়াব ইবনে ওমায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন যথাক্রমে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ও বতনে ওয়াদিত উনার মধ্যে পবিত্র জুমুয়ার নামায আদায় করেন তখন সে স্থানদ্বয়ে মুসলমানের সংখ্যা খুব কমই ছিল, কাফেরের সংখ্যাই বেশী ছিল। এবং সেখানে তখনও পর্যন্ত ইসলামী হদ, কেসাস কায়েম ছিলনা। এবং তখন হদ, কেসাস কায়েম করার প্রশ্নই ওঠেনা। সুতরাং যারা বলে থাকে, কাফির রাষ্ট্রে অথবা যে স্থানে হদ কেসাস জারী নেই, সেখানে জুমুয়া জায়েয হবে না, তাদের এ বক্তব্য অবান্তর প্রমাণিত হলো।      
মুলতঃ কাফির রাষ্ট্রে ও যেখানে হদ, কেসাস জারী নেই সেখানেও জুমুয়ার নামায জায়েয ও ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। যদি সেখানে বড় মসজিদের ক্বওল পাওয়া যায়। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সরাসরি মিছরের ব্যাখ্যা নেই, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে- 
لاجمعة ولا تشريق ولافطر ولا اضحى الا فى مصر جامع اومدينة عظيمة.
অর্থঃ- শহর ছাড়া জুমুয়া, তাকবীরে তাশরীক এবং দুই ঈদের নামায জায়েয নেই। এখানে উল্লেখ্য যে, যদিও এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে (মিছর) শহর ছাড়া তাকবীরে তাশরীক হবেনা, কিন্তু অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে শুধু জুমুয়া ও ঈদের নামাযের কথা উল্লেখ আছে। তাই আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, মুজতাহিদগণ শুধুমাত্র জুমুয়া ও ঈদের জন্য (মিছর) অর্থাৎ শহরের শর্ত আরোপ করেছেন। কেননা জুমুয়ার নামাযের জন্য যে সকল শর্ত দেওয়া হয়েছে, দুই ঈদের নামাযের জন্যও সে সকল শর্ত প্রযোজ্য, তবে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান যেমন- জুমুয়ার খুৎবা ওয়াজিব এবং তা নামাযের পূর্বে পড়তে হয় আর দুই ঈদের খুৎবা পাঠ করা সুন্নত আর তা পাঠ করতে হয় নামাযর পরে। এবং জুমুয়ার নামায হলো ফরজে আইন, আর দুই ঈদের নামায আমাদের হানাফী মাযহাব মতে ওয়াজিব।      সুতরাং আমাদের হানাফী মাযহাব মতে তাকবীরে তাশরীকের জন্য (মিছর) শহর শর্ত নয়। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়- হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম আবু ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে ৯ই যিলহজ্জ ফজর হতে ১৩ই যিলহজ্জ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাযের পর কমপক্ষে একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব তিনবার বলা মুস্তাহাব। চাই সে পুরুষ হোক অথবা মহীলা, আজাদ হোক অথবা গোলাম, মুক্বীম হোক অথবা মুসাফির, একা নামায পড়ুক অথবা জামায়াতে, গ্রামে থাকুক কিংবা শহরে সকলের জন্যই উক্ত ২৩ ওয়াক্তের ফরজ নামাযের পরে কমপক্ষে একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব তিনবার বলা মুস্তাহাব। তবে মহিলারা চুপে চুপে তাকবীর পড়বে, এবং এটাই সর্বসম্মত মত। সুতরাং এটা দ্বারা তাকবীরে তাশরীকের জন্য মিছরের শর্তবাতিল বলে গণ্য হবে। (আলমগীরি, শামী, হেদায়া, মাজমাউল আনহোর, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার, তাহতাবী, মারাফিউল ফালাহ, বাহরুর রায়েক, নুরুল ইযাহ ইত্যাদি কিতাবসমূহ)          
এখন মিছর বা শহরের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইমাম, মুজতাহিদগণ এবং হানাফী মাযহাবের ইমাম, মুজতাহিদগণ মিছর বা শহরের বিভিন্ন তারীফ বা ব্যাখ্যা করেছেন তার মধ্যে হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত অর্থাৎ বড় মসজিদের ক্বওলকে সমস্ত ব্যাখ্যা বা তারিফের উপর তারজীহ বা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।          
সুতরাং যেখানে বড় মসজিদের ক্বওল পাওয়া যাবে সেখানেই জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। চাই তা কাফির রাষ্ট্রে হোক অথবা হদ কেসাস কায়েম না থাকুক। নিম্নে কাফির রাষ্ট্রে জুমুয়া পড়া জায়িয হবার দলীল পেশ করা হলো- 
ثم المشائخ قالوالوكان الكافر ولى بلدة فيجب على مسلمين تلك البلدة ان يقسم الجمعة ريسقط سرط الامام عنهم والا انه يجب عليهم طلب امام مسلم. (اوكان اربعه
অর্থঃ- ফকীহ মাশায়েখগণ বলেন যে, দেশের রাজা যদি কাফিরও হয়, তবে সে দেশের মুসলমানদের সেখানে জুমুয়ার নামায পড়া ফরজ। সুতরাং তাদের উপর থেকে বাদশাহর শর্ত উঠে যাবে। তবে তাদের জন্য একজন মুসলমান ইমাম তালাশ করা ওয়াজিব। (আরকানে আরবা)
اور معراض الدرایہ مین مبسوط سے منقول ھے اگر حاکم کفار ھون تو مسلمان کو قائم کرنا جمعہ کا درست ھے- اور مسلمان کے رضامندی سے قاضی بھی قاضی ھو جانیگا- (مبسوط-غیاۃ الاوطار)
  অর্থঃ- মিরাজুদ দেরায়াকিতাবে যাহেরে রেওয়ায়েতের কিতাব মাবছুতহতে বর্ণিত আছে যে, কাফির রাষ্ট্রেও মুসলমানদের জন্য জুমুয়া পড়া জায়েয (ফরজ) ও সেখানে মুসল্লীগণের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজী বা খতীব নির্বাচিত হবেন। (মাবছুত, গায়াতুল আওতার)      
এছাড়াও নিম্নোক্ত হানাফী মাযহাবের বড় বড় ফিকাহর কিতাবে কাফির রাষ্ট্রে জুমুয়া পড়া ফরজ ও জায়েয বলে উল্লেখ রয়েছে। যেমন- (জামিউর রুমুজ, শামী, জামিউল ফুছুলীন, আলমগীরী, ফতওয়ায়ে বাযযাযিয়া ৩য় খন্ড, মাজমাউল ফতওয়া, হাশিয়ায়ে শামী ইত্যাদি) আরো অনেক কিতাবসমূহ।
উপরোক্ত কিতাবসমূহের বরাত দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, কাফির রাষ্ট্রে জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব। এটার নিষেধকারীগণ গুমরাহের অর্ন্তভূক্ত। যেমন ওমদাতুর রেয়ায়াকিতাবে উল্লেখ আছে-
من افتى بسقوط الجمعة لفائد شرط السلطان فقد ضل واضل.
অর্থাৎ বাদশাহর শর্ত পাওয়া যায় না বলে (অর্থাৎ কাফির রাষ্ট্রে) যারা জুমুয়া পড়া নাজায়েয ফতওয়া দেয়, তারা নিজেরাও গুমরাহ এবং অপরকেও গুমরাহ করছে।” (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)
আজকাল কিছু লোক কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহাম অর্থাৎ কম জ্ঞান কম বুঝের কারণে আমাদের দেশের গ্রামগুলোতে জুমুয়ার নামায ও দুই ঈদের নামায পড়া নাজায়েয বলে এবং কোন কোন স্থানে জুমুয়ার নামায ও দুই ঈদের নামায পড়তে বাধাও দিয়ে থাকে। মূলতঃ এটা তাদের  মূর্খতা ও অজ্ঞতাপ্রসূত এবং সম্পূর্ণ নফসানিয়াত। কারণ ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে গ্রাম কাকে বলে? এবং শহরের বিস্তারিত ব্যাখ্যা তাদের জানা নেই; তাই তারা উক্তরূপ বক্তব্য পেশ করে থাকে। মূলতঃ তাদের উক্ত ফতওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।    
অনেকে বলে থাকে যে, ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোবায় ১৪ দিন অবস্থানকালে গ্রামের কারণে জুমুয়ার নামায আদায় করেননি।
এর জবাবে বলা যায়, যারা এ কথা বলে তারা প্রকৃতপক্ষে মূল ঘটনা জানে না, কেননা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোবার থেকে রওয়ানা হয়ে পথিমধ্যে বনি সালেম গোত্রের বর্তনে ওয়াদিতে জুমুয়ার নামায আদায় করেন। বর্তনে ওয়াদিও পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরেই অবস্থিত ছিল। সুতরাং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফ উনার বাইরেও জুমুয়া আদায় করেছেন, যা প্রচলিত অর্থে গ্রামেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলো। কিন্তু ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ওটা শরয়ী শহরের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। অনেকে আবার বলেন যে, কোন কোন আলেম নাকি ইংরেজ অধীনে ভারতবর্ষ একটি মুসলিম দেশ বলে জুমুয়া ফরযে আইন বলেছিলেন। এর উত্তরেও বলা যায় যে, যেহেতু মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, সে হিসাবে অবশ্যই মুসলিম দেশ, যদিও সরকার অমুসলিম ছিল। আর কাফির রাষ্ট্রেও যে জুমুয়া ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব তা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি।           সুতরাং যারা জুমুয়ার নামায ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ করে, তারা প্রকৃতপক্ষে শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য বুঝেনা, কেননা প্রচলিত শহর ও গ্রামের সাথে শরয়ী গ্রাম ও শহরের কোনই সম্পর্ক নেই। আর শরয়ী শহর ও গ্রামের ব্যাখ্যাসহ বিস্তারীত দলীল-আদিল্লাসহ আমরা উল্লেখ করেছি। কাজেই এ সম্বন্ধে আর কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। এবং একমাত্র বড় মসজিদের ক্বওলই হলো শরয়ী গ্রাম ও শহরের পার্থক্য অর্থাৎ যেখানে বড় মসজিদের ক্বওল পাওয়া যাবে, সেটাই শরয়ী শহরের অন্তর্ভুক্ত হবে। সুতরাং কেউ যদি প্রচলিত শহরে না যাবার কসম করে তবে প্রচলিত শহরে গেলে কছমের কাফফারা দিতে হবে, কিন্তু শরয়ী শহরে গেলে অবশ্যই কাফফারা দিতে হবে না। একইভাবে যদি শরয়ী শহরে না যাবার কসম করে তখনই শুধুমাত্র শরয়ী শহরে গেলে কাফফারা দিতে হবে।        অতএব, আমাদের প্রকাশিত মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকার ফতওয়া বিভাগে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে আমাদের দেশের গ্রামগুলোসহ পৃথিবীর যে সমস্থ স্থানে বড় মসজিদের ক্বওল পাওয়া যাবে সে সবগুলো স্থানও শরয়ী শহরের অর্ন্তভূক্ত, এবং ঐ সমস্ত স্থানগুলোতে জুমুয়ার নামায পড়া ফরজে আইন ও দুই ঈদের নামায পড়া ওয়াজিব প্রমাণ করা হলো।
ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহকাম
(احكام ثائى اذان)
  মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
بنى الاسلام على خمس () شهادة ان لااله الا الله وان محمدا عبده ورسوله () اقام الصلاة () صوم رمضان () ايتاء الزكاوة () والحج.
অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম উনার ভিত্তি পাঁচটি। যথা- (১) পবিত্র কালিমা শরীফ (২) নামায কায়েম করা (৩) পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা রাখা (৪) যাকাত আদায় করা (৫) পবিত্র হজ্জ সম্পাদন করা।    পবিত্র কালিমা শরীফ অর্থাৎ পবিত্র ঈমান উনার পরই সর্বধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো নামায এবং প্রত্যেক ওয়াক্তের ফরজ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্বাদাহ। আবার প্রত্যেক মসজিদে জামায়াতের পূর্বে আযান দেয়াও সুন্নতে মুয়াক্বাদাহ। তরক করলে ওয়াজিব তরকের গুণাহ হবে। সুতরাং আযানের গুরুত্ব তাৎপর্য, রহমত, খায়ের, বরকত সম্বন্ধে বলার অপেক্ষা রাখেনা। কেননা এ ব্যাপারে আমরা সবাই কম বেশি জানি। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের যুগ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিশ্বের সর্বত্র জুমুয়ার নামাযে দুটি আযান দেয়া হয়। একটি ওয়াক্ত হওয়ার কিছু সময় পরে মসজিদের বাইরে (এখানে উল্লেখ্য যে, জুমুয়ার প্রথম আযানসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযান মসজিদের বাইরে দেয়াই সুন্নত এবং মসজিদের ভিতরে দেয়া মাকরূহে তানযীহী।) এবং অপরটি খুৎবার পূর্বে মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে ইমাম ছাহেবের সামনে। যাকে, ছানী  আযান বলে।     এ ছানী আযান অর্থাৎ জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান সম্পর্কে কিছু সংখ্যক আলেম নামধারী ব্যক্তি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার অনুসারী মুসলমানদের মধ্যে, “কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহমঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অপব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তারা বলে থাকে যে, জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান সুন্নাত উনার খেলাফ ও বিদয়াত এবং মসজিদের ভিতরে দেয়া মাকরূহে তাহরীমী। তাদের দলীল হলো- যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় এবং হযরত আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর আলাইহিস সালাম উনার যামানায় একটি মাত্র আযান প্রচলিত ছিলো যা মসজিদের দরজায় দেয়া হতো। সুতরাং পরবর্তিতে যে একটি আযান বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং মসজিদের ভিতরে দেয়া হয়, উভয়ই বিদয়াত ও মাকরূহ তাহরীমী। তাদের একথার জবাবে বলতে হয়, ইসলামী শরীয়ত উনার দলীলের ভিত্তি হলো চারটি- (১) পবিত্র কুরআন শরীফ (২) পবিত্র হাদীছ শরীফ (৩) পবিত্র ইজমা শরীফ (৪) পবিত্র কিয়াস শরীফ। সুতরাং কোন ফতওয়া দিতে হলে বা শরীয়তী কোন মাসয়ালার ফয়সালা করতে হলে উপরোক্ত ৪টিই বিবেচনা করতে হবে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ পবিত্র, ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস উনার দৃষ্টিতে বলতে হবে।      আর যেহেতু জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার ব্যাপারে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেহেতু উক্ত পবিত্র ইজমা শরীফ উনার বিপরীতে শুধুমাত্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একটি পবিত্র আয়াত শরীফ বা কোন একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা ফতওয়া দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ ইসলামী শরীয়ত উনার হুকুম আহকাম প্রনয়নের ক্ষেত্রে হুজ্জত (দলীল) এ ধরণের কোন হুজ্জতের বিপরীতে যদি কোন নাসিখ বা রদকৃত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ বা পবিত্র হাদীছ শরীফ পেশ করা হয় তবে তা গ্রহণযোগ্য হবেনা। কাজেই তারা তাদের বক্তব্যের পক্ষে যে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসাবে পেশ করে থাকে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ মানসুখ বা রদকৃত বিধায় পবিত্র ইজমা শরীফ উনার উপরই আমল করতে হবে। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতিটি পবিত্র আয়াত শরীফ এবং প্রতিটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার হযরত ইমাম মুজতাহিদগণ উনারা কোন বিষয় বা মাসয়ালার উপর ইজতিহাদ করার সময় ঐ সম্পর্কিত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ, পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মতামত ইত্যাদি সমস্ত কিছু বিবেচনা করে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বা কিয়াস সাবিত করেছেন। যা বর্তমানে খুবই কঠিন। যেহেতু এর অনেক কিছুই বর্তমানে পাওয়া দুস্কর।  
কাজেই উনাদের যে সমস্ত পবিত্র কিয়াস উনাদের উপর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বিশেষভাবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তথা হযরত খোলাফায়ে রাশেদীনগণ যে সমস্ত পবিত্র ইজমা শরীফ প্রতিষ্ঠিত করেছেন তা মানা সমস্ত মুসলমানদের জন্য ফরজ। সুতরাং যেখানে জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার ব্যাপারে হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা পবিত্র ইজমা শরীফ প্রতিষ্ঠিত এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার হযরত ইমাম মুজতাহিদগণ উনারা একমত যে, ছানী আযান হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র ইজমা শরীফ উনার মাধ্যমে সাব্যস্ত করেছেন এবং এটা মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে দিতে হবে। সেখানে দ্বিমত পোষণ করা, ইখতিলাফ করা বা বেদয়াত ও মাকরূহ তাহরীমী বলা সম্পূর্ণ নাজায়েয, হারাম ও কুফরী। কাজেই জুমুয়ার ছানী আযান এবং তা মসজিদের ভিতরে দেয়া হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত মুবারক। এবং এটার উপর সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার সমস্ত ইমাম মুজতাহিদগণ উনার ইজমা প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং এটা সুন্নতে মুয়াক্বাদাহ এবং তরক করা ওয়াজিব তরকের গুণাহ হবে। আর অস্বীকার করলে কুফরী হবে।

ছানী আযানের উৎপত্তি ও ইজমায়ে ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
         
মসজিদের ভিতরে ছানী আযান দেয়ার ব্যাপারে হযরত ছাহাবায়ে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার ইমামগণ হতেও একই মত পরিলক্ষিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদের সময়ে জুমুয়ার নামাযে একটিমাত্র আযানের প্রচলন ছিল, যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
حدثنا احمدبن منيع حدثنا حماذبن خالد الخياط عن ابن ابى ذئب عن الزهرى عن السائب بن يزيد قال: كان الاذان على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر- اذاخرج الامام- واذا اقيمت الصلاة- فلما كان عثمان زاد النداء الثالث على الزوراء.
আহমদ ইবনে মুনী-হাম্মাদ ইবনে খালেদ আল খাইয়্যাত্ব হতে, তিনি ইবনে আবী যিব হতে, তিনি জুহুরী হতে তিনি ছাহাবী হযরত সাইব ইবনে ইয়াজিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন। সাইব ইবনে ইয়াজিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদের সময় একটিমাত্র আযানের প্রচলন ছিল। (আর ওটা ছিল) যখন ইমাম (হুজরা হতে) বের হতেন, এর পর নামাযের ইক্বামত দেয়া হতো, অতঃপর হযরত ওছমান আলাইহিস সালাম (খিলাফতে আসীন হবার পর) যাওরানামক স্থানে তৃতীয় আযান বৃদ্ধি করেন। (উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার রাবীগণ ইক্বামতকেও আযান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার আযানকে তৃতীয় আযান বলেছেন) হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে হাসান সহীহ বলেছেন। শব্দের সামান্য তারতম্য করে হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম ইবনে মাযাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ খানা স্ব-স্ব কিতাব মুবারক উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। 
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
عن السائب بن يزيد قال كان يؤذن بين يدى رسول الله صلى الله عليه وسلم اذاجلس على المنبر يوم الجمعة على باب المسجد وابى بكر وعمر.
হযরত সাইব ইবনে ইয়াযিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন জুমুয়ার দিন মিম্বর শরীফ উনার মধ্যে বসতেন তখন উনার উপস্থিতিতে মসজিদ উনার দরজার উপর আযান দেয়া হতো, অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার (খিলাফত) কালেও দেয়া হতো।(আবু দাউদ শরীফ ১ম খন্ড, ২৮৫ পৃঃ)           উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আমিরুল মুমিনীন হযরত উছমান ইবনে আফফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতের পূর্বে মসজিদের ভিতরে ইমামের সম্মূখে ইক্বামত ভিন্ন অন্য কোন আযান এর প্রচলন ছিল না, তাছাড়া জুমুয়ার দিন বাইরেও কোন আযান দেয়া হতো না, তখন একটিমাত্র আযান ছিল, আর ওটা দেয়া হতো মসজিদের দরজার উপর বা সন্নিকটে। এ আযানের পরেই ইক্বামত দিয়ে খুৎবা শুরু হয়ে যেত। এটার সীমাবদ্ধতা ছিল ২৪ হিজরী পর্যন্ত। হযরত উছমান ইবনে আফফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ২৪ হিজরীর পহেলা মহররম শরীফ খিলাফতে আসীন হন। তিনি খলীফা হয়ে যে সমস্ত বিধিবিধানের প্রচলন করেন, তার মধ্যে অন্যতম জুমুয়ার নামাযে মসজিদের বাইরে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে একটি বাজারের যাওরা” (তুলনা মুলক উঁচু) নামক স্থানে অতিরিক্ত আযানের ব্যবস্থা করা।         এ আযানের উৎস হলো কিছু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ওছমান আলাইহিস সালাম উনাকে অবহিত করলেন যে, ব্যস্ততার কারণে অনেকের পক্ষেই আযানের পূর্বে (রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়কার আযান) মসজিদে আসা সম্ভব হয়না। তাই সতর্কতা মূলক মসজিদের বাইরে আর একটি আযানের ব্যবস্থা করা হলে কেমন হয়? তখন হযরত ওছমান ইবনে আফফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বুযর্গ ছাহাবী উনাদের নিয়ে পরামর্শ করে তৃতীয় আযানের ব্যবস্থা করেন। যা বর্তমানে প্রথম আযানরূপে দেখা যায়। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়কার আযানকে মসজিদের ভিতরে ইমামের সম্মুখে নিয়ে আসেন, তখন হতেই এটা ছানী  আযান হিসেবে পরিগণিত। যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে খাযেন তাফসীরে মাদারেক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
فلما كان عثمان وكثر الناس زاد النذاء الثانى على الزوراء.
অতঃপর হযরত ওছমান আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা হওয়ার পর লোকজনের সংখ্যা আধিক্যতার কারণে যাওরা নামক স্থানে জুমুয়ার দ্বিতীয় আযান (বর্তমানে প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন। এবং পবিত্র বুখারী শরীফ উনার শরাহ ফয়জুল বারী কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
والظاهر ان الاذان الثانى هوالاول انتقل الى ذاخل المسجد.
প্রকাশ থাকে যে, ছানী আযান, যা প্রথম আযান ছিল (দরজার উপর দেয়া হতো) অতঃপর স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের ভিতরে নেয়া হয়।
এটা ছিল আমীরুল মুমিনীন হযরত ওছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম উনার ইজতিহাদ। অবস্থার প্রেক্ষিতে ও প্রয়োজনীয়তায় এ ধরনের ক্বিয়াস ও ইজতিহাদ রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশনা। যেমন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইয়েমেনের গর্ভনর করে পাঠানোর প্রাক্কালে বলেছিলেন-
بم تقضى يا معاذ- ؟ فقال بكتاب الله، فان لم تجد؟ قال بسنة رسول الله، فان لم تجد، قال اجتهد براى، فقال الحمد الله الذى وفق رسول رسول الله بمايرضى به رسوله. (مشكواة)
          “হে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার নিকট (কোন মোকদ্দমা আসলে) কিভাবে তা ফায়সালা করবে? হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবের দ্বারা, যদি ওটাতে না পাও তাহলে? মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নাহ শরীফ দ্বারা, অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন যদি ওটাতেও না পাও তাহলে? আমি কিতাব ও সুন্নাহর ভিত্তিতে ইজতিহাদ করে রায় দেবো। এ উত্তর শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দূতকে এ যোগ্যতা দান করেছেন যাতে উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তনি সন্তুষ্ট হন।
          এটা হতে স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, মুসলমানদের কল্যানার্থে ও ইসলামী অনুশাসনে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার অক্ষুন্নতার ক্ষেত্রে সমস্ত ইজতিহাদই অনুসরণ করা অবস্থার ভিত্তিতে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত।         হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি যখন অন্য আরও একটি আযানের প্রচলন করেন ও প্রচলিত আযানকে ইমামের সম্মুখে মসজিদের ভিতর দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, তখন প্রায় সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা জীবিত ছিলেন। অথচ কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি। আর এটারই নাম ইজমা।
الاجماع: ইজমা শব্দের লোগাতী অর্থ হলো-
الاتفاق ঐক্যমত। আর ইসলামী শরীয়ত উনার বিধান অনুযায়ী ইজমার অর্থ হলো-
اتفاق مجتهدين صالحين امة محمد صلى الله عليه وسلم عصر واحد على امر قولى وفعلى.
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের সালেহ মুজতাহিদগণ উনাদের একই সময়ে কোন কথা বা কাজের মধ্যে ঐক্যমত পোষণ করাই হলো ইজমা। (নূরুল আনোয়ার ফি শরহিল মানার)
এটা হতে প্রমাণিত হলো যে, মুজতাহিদ উনাদেরকে সালেহীনগণ উনাদের অন্তর্ভূক্ত হতে হবে, আদেল হতে হবে, সুন্নাতের পূর্ণ পাবন্দ হতে হবে, ছগীরাহ গুণাহ হতেও বেঁচে থাকার চেষ্টা থাকতে হবে।       কোন বিদয়াতী ও হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তির ইজতিহাদ কবুলযোগ্য নয়।
যেমন বর্তমানে আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনেকে ছবি তোলার কাজে লিপ্ত। এ ধরনের কোন আলেম বাহ্যিক দৃষ্টিতে সে যতই ইলমের দাবিদার হোক না কেন, সে যদি কোন শরয়ী মাসয়ালার ইজতিহাদ করে তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং ''مجتهدين صالحين'' দ্বারা বিদয়াতী ও ফাসেক, তথা উলামায়ে ছুদের ইজতিহাদ বাতিল বলে গণ্য হবে । (اركان اجماع) ইজমার রোকনসমূহঃ ইজমার রোকন দুইটি। (এক) (عزيمت) আযীমত। (দুই) (رخصت) রোখসত। ইজমায়ে আযীমতের সংজ্ঞা ঃ ইজমায়ে আযীমত হলো মুজতাহিদ ইজতিহাদ করার পর তার যুগের কেউ যদি যে কথা বা কাজের উপর ইজতিহাদ করা হয়েছে সে বিষয়ে কোন দ্বিমত পোষণ না করে, অর্থাৎ সকলেই তা শরীয়তের হুকুম হিসেবে মেনে নেয়। যেমন এটা বলে যে, আমরা সকলেই এটা মেনে নিলাম, অথবা ওটা যদি "فعلى" ফেলী হয়, তাহলে সকলেই ঐ কাজ করতে শুরু করে দেয়। এ প্রকার ইজমার মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী হলো হযরত ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজমা। এটার হুকুম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ও মুতাওয়াত উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মতই হুজ্জত।
কেউ যদি এ ধরণের ইজমাকে অর্থাৎ ইজমায়ে আযীমতকে অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। এটার উদাহরণ হলো যেমন- হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতের ব্যাপারে সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ইজমা।
          অনুরূপভাবে আমাদের আলোচ্য বিষয় জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সামনে দেয়ার হুকুমের ব্যাপারে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের সর্বসম্মতি রায়। এ হুকুম জারী হবার পর হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সময়কালে কোন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এ ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন এমন কোন প্রমাণ নেই। পরবর্তিতে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার কোন ইমাম উনারা ইখতিলাফ করেছেন তারও কোন প্রমাণ নেই।         
ফল কথা হলো, মসজিদের ভিতরে ইমামের সম্মুখে ছানী আযান দেয়া ইজমায়ে আযীমত দ্বারা সাব্যস্ত আর যে ব্যক্তি ইজমায়ে আযীমতকে অস্বীকার করলো, সে কুফরী করলো।
ইজমায়ে রোখসতের সংজ্ঞাঃ ইজমায়ে রোখসত হলো ইজতিহাদের বিষয় নিয়ে মুজতাহিদগণ উনাদের মধ্যে ইখতিলাফ তথা মতানৈক্য হওয়া। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের কোন বিষয়ে ইমামগণ উনাদের মধ্যে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হওয়া। কোন মুজতাহিদ কোন বিষয়ে মত প্রকাশের পর অন্য কোন মুজতাহিদ সে বিষয়ে মত প্রকাশ করা, না করা বা চুপ করে থাকা এটাকে ইজমায়ে সুকুতীও বলা হয়। আমাদের নিকট ইজমায়ে রোখসত বা সুকুতী গ্রহণযোগ্য। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এটার বিপরীত মত প্রকাশ করেছেন।       
আহকামে শরীয়ত উনার দিক নির্দেশনা ও তার ফয়সালার ক্ষেত্রে ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ঐক্যমত্যতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ করেছেন-
كنتم خيرامة اخر جت للناس الخ-
হযরত ইমাম ইবনে সালাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন-
وقيل اتفاق المفسرين على انه وارد فى اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم.
হযরত মুফাসসিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, এ পবিত্র আয়াত শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্রাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র ইজমা শরীফ অস্বীকার করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরকে অস্বীকার করারই নামান্তর।         
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ومن يشاقق الرسول من بعد ماتبين له الهدى وبتبع غير سبيل الئومنين نوله ماتولى الخ.
যে, কারো নিকট হেদায়েত বিকশিত হবার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করবে, আর মুমিনদের পথ থেকে ভিন্ন পথের অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে। হযরত শায়খ আহমদ ইবনে আবু সাঈদ মোল্লা জিয়ুন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পবিত্র তাফসীর শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন-
فجعلت مخالفة المؤمنين مثل مخالفة الرسول فيكون اجماعهم كخبير الرسول حجة قطعية.
          এ পবিত্র আয়াত শরীফ মুমিনদের বিরোধীতাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অতএব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মত তাদের পবিত্র ইজমা শরীফও অকাট্য ও প্রামান্য দলীল বলে পরিগণিত হবে। (নুরুল আনোয়ার)    
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ে পবিত্র ইজমা শরীফ উনার প্রয়োজনীয়তা ছিলনা। পবিত্র ইজমা উনার প্রচলন ও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের যুগে। এ পবিত্র আয়াত শরীফ যেহেতু উনাদের সময়কালে নাযিল হয়েছে তাই হযরত ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরই এটার খাছ লক্ষ্যস্থল। অন্যান্যদের জন্য আম। অতএব হযরত ছাহাবায়ে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের কোন বিষয়ের পবিত্র ইজমা শরীফ উনাকে কেউ যদি অস্বীকার করে, তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অস্বীকার করার মতই হুকুম হবে।      মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
محمد الرسول الله والذين معه اشداء على الكفار رحماء بينهم البخ...
হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, আর উনার সঙ্গীগণ কাফিরদের জন্য ভীতসন্ত্রস্তকারী এবং নিজেদের মধ্যে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল। (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ, ২৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
كذالك جعلناكم امة رسطا لتكنوا شهداء على الناس.
          একইভাবে তোমাদেরকে আমি ন্যায় পরায়ন (মধ্যস্ততাকারী) উম্মত হিসেবে সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা (কিয়ামত দিবসে) অন্যান্য উম্মতের সাক্ষী হতে পার।
হযরত ইমাম ইবনুছ সালাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মোকাদ্দিমায়ে ইবনুছ সালাহ কিতাবে এবং হযরত মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নুরুল আনোয়ার কিতাবে এটা দ্বারা হযরত ছাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ সাবেত করেছেন।    
হযরত মায়মুন ইবনে মাহরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كان ابو بكر اذا ورد عليه الخصم نظر فى كتاب الله- فان وجد فيه ما يقضى بينهم قضى به- وان لم يكن فى الكتاب وعلم من الرسول الله صلى الله عليه وسلم فى ذلك الامر سنة قضى بها- فان اعياه خرج فسئال المسلمين- وقال اتانى كذا وكذا فهل علمتم ان رسول الله صلى الله عليه وسلم تضى فى ذلك بقضاء؟ قربما اجماع اليه النفر كلهم يذكر من رسول الله صلى الله عليه وسلم فيه قضاء فيقول ابو بكر الحمد لله- الذى حعل فينا من يحفط على نبينا فان اعياه ان يجد بفيه سنة من رسول الله صلى الله عليه وسلم جمع رؤس الناس وخيارهم قا ستشارهم فاذا اجمع رأيهم على امر قضى به. (حجة لله اليالغه-৩৫০-)
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার রীতি এই ছিল যে, উনার নিকট কোন মামলা আসলে প্রথমে মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব মুবারক উনার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেন। ওটাতে পেলে ওটার দ্বারাই ফয়সালা করতেন। কিতাবুল্লা শরীফ উনার মধ্যে না পেলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নাত উনার প্রতি খুঁজতেন এবং ওটা দ্বারা ফয়সালা করতেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও যদি না পেতেন তাহলে বাইরে চলে আসতেন এবং হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে বলতেন আমার কাছে অনুরূপ মামলা এসেছে আপনাদের এটা জানা আছে কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ ব্যাপারে কি রকম ফয়সালা করেছেন? অতঃপর অনেক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা একত্রিত হতেন এবং সকলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেভাবে ফয়সালা মুবারক করেছেন সে মুতাবেক বর্ণনা দিতেন। হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি তখন বলতেন- সমস্ত প্রশংসা ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার, যিনি আমাদের মাঝে এ সমস্ত লোকদের সৃষ্টি করেছেন, যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফসমূহ স্মরণ রাখে। অতঃপর ওটাতেও যদি না পেতেন তবে হযরত বুযূর্গ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেন এবং উনাদের সাথে পরামর্শ করতেন, যখন উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ প্রতিষ্ঠিত হতো তখন সে অনুযায়ী বিচারকার্য ফয়সালা করতেন। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা শরীফ ১/৩৬০-১)       
ছানী  আযান মসজিদের ভিতরে দেয়া যাবেনা একথা মোটেই ঠিক নয়, কেননা অবস্থার প্রেক্ষাপটে এমন অনেক মাসয়ালাই আছে যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ে প্রচলিত ছিল, কিন্তু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের খিলাফতকালে তা বাতিল হয়ে গেছে। যেমন মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামায পড়া। এটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ে প্রচলিত ছিল, কিন্তু হযরত উমর ইবনে খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফতে আসীন হয়ে মহিলাদেরকে মসজিদে এসে জামায়াতে নামায পড়া নিষেধ করে দেন।    
অতঃপর মহিলারা উম্মুল মুমিনীন হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ পেশ করলে তিনি বললেন, তোমাদের এখন বেপর্দার যে অবস্থা হয়েছে, তা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখতেন তাহলে তিনিও তোমাদেরকে মসজিদে যাওয়া নিষেধ করে যেতেন।         
অনুরূপভাবে যদিও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ে একটিমাত্র আযানের প্রচলন ছিল, হযরত ওছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি অবস্থার পরিবর্তন হেতু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের পরামর্শক্রমে মসজিদের বাইরে আরেকটি আযানের ব্যবস্থা এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়কার আযানকে (যা দরজায় দেয়া হতো) মসজিদের ভিতরে ইমাম ছাহেব উনার সম্মুখে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। সে হতে আজ পর্যন্ত এ নিয়মেই জুমুয়ার আযান দেয়ার রীতি চলে আসছে।          
সুতরাং হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উদ্ভাবিত কোন বিষয় অনুসরণ করা আমাদের জন্য সর্বতভাবেই ওয়াজিব যেমনিভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করা ওয়াজিব। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
فعليكم بسنتى وسنة خلفاء الرا شدين المهدين.
তোমরা আমার ও আমার হেদায়েতপ্রাপ্ত হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের (উদ্ভাবিত) পবিত্র সুন্নাত উনাদেরকে আঁকড়িয়ে ধরো।     
সুতরাং উপরোল্লিখিত দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, জুমুয়ার ছানী  আযানের প্রচলন ও তা মসজিদের ভিতরে দেয়া ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত এবং সুন্নতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভূক্ত। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
الاذان الثالث هو الاول جودا اذا كانت مشر وعيته با جتهاد عثمان وموافقه سائر الصحابة له بالسكوت وعدم الا نكار فضار اجماعا- (حاشيه ابود شريف- عينى شرح البخارى)
অর্থঃ- তৃতীয় আযান এটাই মূলতঃ প্রথম আযান, (তৃতীয় এ জন্য বলা হয় যে, ইক্বামতকেও আযান বলা হয়) যা হযরত ওছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ইজতিহাদের দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়। (যখন হযরত ওছমান আলাইহিস সালাম তিনি দ্বিতীয় আরেকটি আযানের প্রচলন করেন) তখন প্রায় সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারাই এটা জ্ঞাত ছিলেন এবং সকলেই নিশ্চুপ ছিলেন। কেউ এটার প্রতিবাদ না করার কারণে এর উপর ইজমায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।           সুতরাং উক্ত পবিত্র ইজমা শরীফ উনার উপর আমল করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলার উপর ওয়াজিব। যে ব্যক্তি উক্ত পবিত্র ইজমা শরীফ উনাকে অস্বীকার করলো সে কুফরী করলো। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
فيكون الا حماع حجة يكفر جاحده كالكتاب والسنة. (تفسير احمدى)
ইজমায়ে আযীমত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মতই একটি অকাট্য দলীল, যে ওটাকে অস্বীকার করলো, মূলতঃ সে কুফরী করলো। ফলকথা হলো- পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযান ও জুমুয়ার প্রথম আযান মসজিদের বাইরে দেয়া সুন্নত (মসজিদের ভিতরে দেয়া মাকরূহে তানযীহী আর শুধুমাত্র জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে ইমামের সম্মুখে দেয়া সুন্নতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। যা  হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের উপর পরিপূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন!
যে সমস্ত বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য পবিত্র তাফসীর শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শরাহ, পবিত্র ফতওয়া শরীফ ও পবিত্র ফিকাহ শরীফ উনাদের কিতাবসমূহে জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে ইমাম ছাহেব উনার সম্মুখে মিম্বরের নিকটে দেয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে। নিম্নে তার দলীলসমূহ উল্লেখ করা হলো-

ছানী আযানের অকাট্য দলীলসমূহ:
(১-২)
وقد كان الاذان فى عهد النبى صلى الله عليه وسلم فى الجمعه كسانر الاذان فى مؤذن واحد- اذا جلس على المنبر- ةكذالك كان يفعل عمر رضى الله عنه ثم زاد عثمان اذانا ثانيا على الزوراء حتى كثر الناس يالمدينة- بين يدى الامام تحت المنبر. (تفسير احكام القران للجصاص ج صفه. ، احكام القران لشفيغ ج صفه ৬১)
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় থেকে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকাল পর্যন্ত জুমুয়ার নামাযে অন্যান্য নামাযের আযানের ন্যায় একটি মাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। অতঃপর হযরত উছমান যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থিত যাওরানামক স্থানে দ্বিতীয় আরেকটি আযান (বর্তমানের প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন। এবং প্রথম আযানটি (বর্তমানের দ্বিতীয় আযান) মিম্বরের নিকটে ইমামের সম্মুখে দেয়া শুরু করেন। (তাফসীরে আহকামুল কুরআন, ৫ম জিঃ, পৃঃ ৬০, আহকামুল কুরআন ৫ জিঃ পৃঃ ৬১)
(৩)
وقد كان الاذان على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم كمافى سائر الصلوات يؤذن واحد اذا جلس النبى على المنبر وكذالك كان يفعل ابوبكر وعمر رضى الله عنهما- ثم زاد عثمان رضى الله عنه اذانا ثانيا يؤذنون بمد يتة السلام ويعد اذان المنار بين يدى الامام تحت المتبر- (تفسير الجمامع الاحكام القران للقرطبى ج ১৮ صفه ১০০)
অর্থঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় জুমুয়ার পাঁচ ওয়াক্ত আযানের ন্যায় একটি মাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মিম্বর শরীফ উনার মধ্যে বসার পর দেয়া হতো। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাহিস সালাম ও হযরত উমর ইবনে খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদের পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। অতঃপর হযরত ওছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দ্বিতীয় আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন এবং দ্বিতীয় আযানটি অর্থাৎ মিনারের আযানের পর ইমাম ছাহেব উনার সম্মুখে মিম্বরের নিকট প্রথম আযান দেয়া শুরু করেন। (আহকামুল কুরআন লিলকুরতুবী ১৮ জিঃ পৃঃ ১০০)
(৪)
وقد كان لر سول الله صلى الله عليه وسلم مؤذن واحد فكان اذا جلس على المنبر اذن على باب المسجد- فاذا انزل رسول رسول الله صلى الله عليه وسلم اقامة الصلاة- ثم كان ابو بكر وعمر على ذالك حتى اذا كان عثمان وكشر الناس زاذ مؤذتا اخر- فامر با لتاذين الا ولى على داره التى تسمى زوراء فاذا جلس على المنبر اذن مؤذن الثانى بين يدى المنبر. (تفسير روح المعانى ج ১৪ صفه ৯৮)
অর্থঃ- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় একটিমাত্র আযান প্রচলিত ছিল, যা তিনি পবিত্র মিম্বর শরীফ উনার মধ্যে বসার পর দরজায় দেয়া হতো। অতঃপর যখন তিনি মিম্বর হতে নামাযের জন্য দাঁড়াতেন তখন নামাযের জন্য ইক্বামত দেয়া হতো। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনাদের পর্যন্ত একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। হযরত ওসমান আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফতে আসীন হবার পর লোকসংখ্যার আধিক্যের কারণে দ্বিতীয় আরেকটি আযান (বর্তমানে প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন, অতঃপর প্রথম আযানটি যাওরানামক স্থানে দেয়ার হুকুম দেন দ্বিতীয় আযানটি মিম্বরে বসার পর মিম্বরের সম্মুখে দেয়ার আদেশ দেন। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ১৪ জিঃ পৃঃ ৯৮)
(৫)
اى اذا اذن المؤذن بين يدى الامام وهوعلى المنبر فى يوم الجمعة للصلاة- فاتركوا البيغ واسعو لتسمعوا مو عظة الامام فى خطبته. (تفسير مراغى ج ১০ صغه ১০৩)
অর্থঃ- যখন জুমুয়ার দিন নামাযের জন্য ইমাম মিম্বরে বসার পর মুয়াজ্জিন তার সম্মুখে আযান দিবে, তখন তোমরা বেচাকেনা বন্ধ করে দাও এবং ইমাম ছাহেব উনার খুৎবা শুনার জন্য ধাবমান হও। (তাফসীরে মোরাগী জিঃ ১০ পৃঃ ১০৩)
(৬)
وكان عمر رضى الله عنه امران يؤذن فى السوق ليقوم الناس عن سوقهم فاذا اجتمعوا اذن فى المسجد- فجعله عثمان رض الله عنه اذا نين فى المسجد. (تفسير سراج المنير ج صفه ২৮৫)
অর্থঃ- হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি বাজারে আযান দেয়ার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন যাতে করে মুসল্লীগণ বাজার হতে এসে নামায আদায় করতে পারে। অতঃপর মুছল্লীগণ একত্রিত হলে মসজিদের ভিতর আযান (ইক্বামত) দেয়া হতো। অতঃপর হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনি মসজিদের ভিতরে দুইটি আযানের প্রচলন করেন। (এটার দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, খতীব ছাহেব উনার সামনের আযান অর্থাৎ ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার নিয়ম হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনিই জারী করেন। (তাফসীরে সিরাজুল মুনীর ৪র্থ খন্ড ২৮৫ পৃঃ)
 (৭)
اور دوسری اذان خطبے کے وقت منبر کے سامنے ھوتی ھے- اور تیسری اذان یھی منارہ و الی ھے (تفسیر مظھری ج১৩ صفہ ২৮১)              
 অর্থঃ- ছানী আযান খুৎবার পূর্বে মিম্বরের সম্মুখে হবে এবং তৃতীয় আযান যা মিনারের উপর দেয়া হতো (তৃতীয় এজন্য বলা হয়, কারণ ইক্বামতকেও আযান বলা হয়) মূলতঃ ওটাই প্রথম আযান। (তাফসীরে মাযহারী ১৩ জিঃ পৃঃ ২৮১)
(৮)
نودی سے مراد قران مین وہ اذان ھے جو نزول ایت کے وقت تھی یعنی جو امام کے سامنے ھوتی ھے کیو نکہ اس سے پھلی اذان بعد کر حضرت عثمان کے عھدمین صحابہ کے اجماع سے مقرر ھوا ھے (تفسیر عثمانی ج ২৮ صفہ ৭১৮)               
অর্থঃ- পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নুদিয়া শব্দ দ্বারা ঐ আযানকেই বুঝানো হয়েছে, যে আযান পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হবার সময় ছিল অর্থাৎ বর্তমানে যে আযান ইমামের সামনে দেয়া হয়। কেননা ওটার পূর্বে যে আযানটি দেয়া হয় ওটা হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার সময় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ উনার দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়। (তাফসীরে ওসমানী ২৮ পারা, ৭১৮ পৃঃ)
(৯-১০)
اذا نودی- اس سے خطیب اور منبر کے سامنے کی اذان جمعہ مراد ھے کیونکہ اس اسے پھلے کی اذان انحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کے زمانہ مین زائج نھین ھوئی تھی- وہ تو  حضرت عثمان علیہ السلام کے دور  خلافت میں جب لوگ زیادہ ھو گئے اور کارویار اور مشاغل برہ  گئے- تو صحابہ کے مشورہ سے  پھلے اذان کا اضافہ کیاگیا جو مقام "زوراء" پر چرہ کر کھا جاتی تھی- اور چونکہ سب صحابہ کا اس پر اجماع ھو گیا پس وہ خلیفہء راشد کی سنت ھے- (تفسیر کمالین ج صفہ ৪৪২)
অর্থঃ- (ইযা নুদিয়া) এটা দ্বারা জুমুয়ার দিন খতীব ও মিম্বরের সামনে যে আযান দেয়া হয় তাই উদ্দেশ্য। কেননা বর্তমানের প্রথম আযান নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় প্রচলিত ছিল না। ওটা হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার খেলাফতকালে লোকসংখ্যার আধিক্য ও কাজ-কর্মের ব্যস্ততার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের পরামর্শক্রমে বৃদ্ধি করা হয় এবং ওটা যাওরানামক স্থানে দেয়া হতো। যেহেতু এটার উপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এটা সুন্নতে খোলাফায়ে রাশেদ অর্থাৎ হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত মুবারক। (তাফসীরে কামালাঈন জিঃ ৪ পৃঃ ৭৭, তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন জিঃ ৮ পৃঃ ৪৪২)
(১১-১২)
والظاهر انه كان لمطلق الاعلام لخصوص الانصات نعم لمازيد الاذان الاول كان الذى يدى الخطيت للاتصات- (فشح البارى فى شرح البخارى ج صفه ৩৯৩، اعلاء السنن ج صفه ৬৯)
অর্থঃ- প্রকাশ থাকে যে, নিশ্চয়ই (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়কার) আযান সাধারণতঃ মানুষদেরকে নামায ও খুৎবার সংবাদ জানানোর জন্যই দেয়া হতো (তাই ওটা মসজিদের বাইরে দেয়া হতো যাতে সকলে নামায ও খুৎবায় অংশগ্রহণ করতে পারে) যখন ওটার পূর্বে আরো একটি আযান বৃদ্ধি করা হলো তখন খতীবের সামনের আযানটি মূলতঃ মসজিদে উপস্থিত লোকদের চুপ হবার উদ্দেশ্যে দেয়া হয় (তাই ছানী আযান মসজিদের ভিতরেই দেয়া হয়) (ফতহুল বারী শরহে বুখারী জিঃ ২ পৃঃ ৩৯৩, ইলাউস সুনান জিঃ ৮ পৃঃ ৬৯)
(১৩)
كان الاذان فى عهد النبى صلى الله عليه وسلم وصاحبيه واحذا ولعله كان خارج المسجد- فاذا كثر الناس زاد عثمان رضى الله عنه اذانا اخر على الزوراء خارج المسجد الميتتع الناس عن اليغ والشراء- والظاهر ان الاذان الثانى هو الاول انتقل الى داجل المسجد- (فيض البارى فى شرح البخارى ج صله ৩৩৫)
অর্থঃ- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার খেলাফতকাল পর্যন্ত একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল, আর সম্ভবত ওটা মসজিদের বাইরে দেয়া হতো, অতঃপর হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনি লোকসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মসজিদের বাইরে যাওরানামক স্থানে আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন যাতে করে মানুষ আযান শুনে বেচাকেনা বন্ধ করে (নামাযে অংশগ্রহণ করতে পারে) প্রকাশ থাকে যে, ছানী  আযান যা মুলে প্রথম আযান ছিল ওটা (মসজিদের বাইর হতে) স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের ভিতরে নিয়ে আসা হয়। (ফয়জুল বারী শরহে বুখারী জিঃ ২ পৃঃ ৩৩৫)
(১৪)
وكان الاذان على عهد رسول الله صلى الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر اذانين يوم الجمعة اى اذان واقامة- وزد النداء الثالث على الزوراء- وامر بالاذان الاول ارج المسجد ليسمع الناس ثم الا ذان (يعنى الثانى) بين يديه. مر قاة فى شرح مشكواة ج صفه ২৬৫)
অর্থ- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পর্যন্ত দুইটি আযান প্রচলিত ছিল অর্থাৎ আযান ও ইক্বামত (ইক্বামতকেও আযান বলা হয়) হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনি যাওরানামক স্থানে তৃতীয় আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন এবং তার প্রবর্তিত আযানটি (বর্তমানের প্রথম আযান) মসজিদের বাইরে দেয়ার হুকুম দেন, যাতে করে মানুষ আযান শুনতে পায়। অতঃপর (বর্তমানের দ্বিতীয়) আযান (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়কার প্রথম আযানটি) তার সামনে দেয়ার হুকুম দেন। (এটার দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, ছানী আযান মসজিদের ভিতরে ইমামের সামনে দেয়া হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনারই প্রবর্তিত সুন্নাত মুবারক।) (মিরকাত শরহে মিশকাত জিঃ ৩ পৃঃ ২৬৪।)
(১৫)
 فظن العوام بك كثير من اهل العلم ان هذا الاذان فيكون امام الخطيب مواجهة فجعلوا معام المؤذن فى مواجهة الخطيب. (شرح الجامع الصحيح ج صفه ৩৯৩)
অর্থঃ- আহলে ইলমদের অধিকাংশের মত হলো ছানী আযান খতীব ছাহেব উনার সামনে হবে, সুতরাং মুয়াজ্জিন খতীবের সম্মুখে দাঁড়াবে। (শরহে জামেউস ছহীহ জিঃ ২ পৃঃ ৩৯৩)
 (১৬)
فان جلس علی المنبر اذن بین یدی الامام طحاوی فرماتے ھین کہ جو اذان منبر کے سامنے دبجاتی ھے وہ مراد ھے- (معدن الحقائق فی شرح کنز الدقائق ج صفہ ১৭৪)                
অর্থঃ- অতঃপর যখন ইমাম মিম্বরে বসবে তখন ইমাম ছহেব উনার সামনে আযান দেবে। হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেন, এটা দ্বারা মিম্বরের সামনের আযানকেই বুঝান হয়েছে। (মাদানুল হাকায়েক জিঃ ১ পৃঃ ১৭৪)
(১৭)
وقال الطحاوى الحنفى يجب السعى وبكرة البيع عند اذان المنبر- (فتاوحى عالمكيرى ج صفه ৭৭)
অর্থঃ-হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- মিম্বরের নিকট আযান দেয়ার সময় সায়ী (তাড়াতাড়ি) করা ওয়াজিব ও বেচাকেনা নিষিদ্ধ। (এটা দ্বারা বুঝা যায় ছানী আযান মসজিদের ভিতরেই দিতে হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী জিঃ ১ পৃঃ ৮৮)
(১৮-১৯)
ويؤذن ئاتيا بين يديه اى الخطيب- (شامى- بذائع الصنائع)
অর্থঃ- ছানী আযান খতীব ছাহেব উনার সামনে দিতে হবে। (এখানে খতীব ছাহেব উনার সামনে দ্বারা মসজিদের ভিতরকেই বুঝান হয়েছে। (শামী বাদায়েউস্ সানায়ে)
 (২০-২২)
مؤذن اذان دے ذوسر   ی بار سامنے خطیب کے- غایۃ الموطار ج صفہ ৩৮، در المختار، القھستنی)
অর্থঃ- মুয়াজ্জিন দ্বিতীয়বার (অর্থাৎ ছানী) আযান খতীব ছাহেব উনার সামনেই দেবে। (গয়াতুল আওতার জিঃ ১ পৃঃ ৩৮০, দুররুল মুখতার, আল কাহেসতানী)
 (২৩-২৬)
واذا صعد الامام المنبر وجلس ويؤذنون ثانيا بين يدى الخطيب- (هدايه ج صفه ১৫৪، ردالمحتار ج صفه. ৭৭، عينى شرح هذايه ج صفه ১৪-، الجو هرة النيره صفه ১১৮)
অর্থঃ- ইমাম ছাহেব যখন মিম্বরে উঠে বসবেন তখন মুয়াজ্জিন তার সামনে আযান দেবে। (কাজেই ইমাম ছাহেব উনার সম্মুখে আযান দেয়ার অর্থ হলো মসজিদের ভিতরে আযান দেয়া) (হিদায়া জিঃ ১ পৃঃ ১৫৪, রদ্দুল মোহতার জিঃ ১ পৃঃ ৭৭০, আইনী শরহে হিদায়া জিঃ ১ পৃঃ ১০১৪, আল জাওহারাতুন নাইয়ারা পৃঃ১১৮।)
 (২৭-২৮)
اذان الثانى الذى يكون بين يدى المنبرلائه لم يكن فى زمنه عليه السلام- بحرالرائق ج صفه ১৫৬, هدايه مع الدرايه ج صفه ১৭১)
অর্থঃ- ছানী আযান যা মিম্বরের সম্মুখে দেয়া হয়, কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় এটা ছিল না। (অর্থাৎ মিম্বরের সামনে দেয়া হতো না) (বাহরুর রায়েক জিঃ ২ পৃঃ ১৫৬, হেদায়া মায়াদ দেরায়া জিঃ ১ পৃঃ ১৭১।)
 (২৯-৩০)
وقال ابو جعفر الطحاوى الحنافى وكان المعتبر هو الاذان الثانى عند المنير بين يدى الخطيب- (فتح القدير ج صفه ১২০، مراقى الفلاح ج صفه ২৮২)
অর্থঃ হানাফী মাযহাবের একজন শ্রেষ্ঠ ইমাম হযরত আবু জাফর তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- নির্ভরযোগ্য মত হলো জুমুয়ার দিন খতীব ছাহেব উনার সামনে মিম্বরের নিকট যখন খুৎবার জন্য আযান দেবে, তখন হতে মসজিদের দিকে তাড়াতাড়ি যাওয়া ওয়াজিব। (ফাতহুল ক্বাদীর জিঃ ২, পৃঃ ১২০, মারাকিউল ফালাহ জিঃ ২, পৃঃ ২৮২)
 (৩১)
اذا جلس الامام على المتبر اذن المؤذن بين يديه الاذان اليثانى للتوارث. (حلبيئ كبيرصفه ৫৬১)
অর্থঃ- ইমাম সাহেব মিম্বরে বসার পর মুয়াজ্জিন তার সামনে ছানী আযান দেবে। এ নিয়ম বহু পূর্ব হতেই চলে আসছে। (হালবিয়ে কবীর পৃঃ ৫৬১)
 (৩২-৩৩)
اذاجلس الامام على المنتر اذن اذن اذانا ثانيا بين يديه اى بين الجهتين المسمتين لميمن المنبر او الامام. (جامع الرموز- اعلاء السنن ج صفه ৬৯)
অর্থঃ- ইমাম মিম্বরে বসার পর মুয়াজ্জিন ছানী আযান দেবে তার সামনে অর্থাৎ মিম্বর অথবা ইমাম ছাহেব উনার ডানে। (জামেউর রুমূজ, এলাউস সুনান জিঃ ৮ পৃঃ ৬৯)
 (৩৪-৩৮)
واذاجلس على المنبر اذن ثانيا بين يديه اى المنبر. (شرح وقاية ج صفه ১৭৪- شرح النقاية صفه ২৯৭ شرح السقاية ج صفه ২৮৩ فتاوحى شريعت صفه ৮৪- اسلامى فقه ج صفه ১২৯)
অর্থঃ- যখন ইমাম মিম্বরে বসবে তখন তার সামনে অর্থাৎ মিম্বরের সম্মুখে ছানী আযান দেবে। (শরহে বেকায়া জিঃ ১ পৃঃ ১৭৪, শরহে নেকায়া পৃঃ ২৯৭, শরহে সেকায়া জিঃ ১ পৃঃ ২৮৩, ফতওয়ায়ে শরীয়ত পৃঃ ৮৪, ইসলামী ফেকাহ জিঃ ১ পৃঃ ১২৯)
 (৩৯)
المشهور الن الا ذان فى عهد النبى صلى الله عليه وسلم كان واحد اوخارج المسجد عند الشروع فى الخطبة وكذالك فى عهد الشيخين ثم قرر عثمان اذانا اخر قبل الشروع فى الخطبة خارج المسجد على الز وراء حين كثر المسلمون- وهذا الاذان كان قبل الاذان بين يدى الخطيب بعد الزوال فانتقل الاذان الذى كان فى عهده عليه السلام الى داخل المجد هذا هوالصحيح. (العرف الشذى ج صفه ১১৬)
অর্থঃ- জুমুয়ার ছানী আযানের ব্যাপারে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বর্ণনা এই যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উরার পর্যন্ত জুমুয়ার জন্য একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল যা খুৎবা শুরু করার সময় মসজিদের বাইরে দেয়া হতো। অতঃপর হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার সময় যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে মুসলমান উনাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তখন খুৎবার আযানের পূর্বে যাওরা নামক স্থানে আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন, যা সূর্য হেলার পর পরই দেয়া হতো। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়কার আযানটি (বর্তমানের ছানী আযান) স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের বাইরে থেকে ভিতরে নিয়ে আসেন আর এই বর্ণনাটিই সবচেয়ে সঠিক ও বিশুদ্ধ বর্ণনা। (আল ওরফুশ শাজী জিঃ ১ পৃঃ ১১৬)
উপরোক্ত কিতাবের বরাত দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়া হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনিই চালু করেন, আর তখন কেউ ওটার বিরোধিতা করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই বিধায় এটার উপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
 (৪০)
والمر اد بالنداء هو الاذان النثانى الذى يكون بين يدى المطيب عند المنبر- (اعلاء السنن ج صفه ১৭)
অর্থঃ- নেদার দ্বারা মূলতঃ ছানী আযানকেই বুঝান হয়েছে, যা খতীবের সম্মুখে মিম্বরের নিকটে দেয়া হয়। (ইলাউস সুনান জিঃ ৮ পৃঃ ১৭)
(৪১-৪৩)
جب امجامج منبر پر اکر بیہ جائے تو منبر کے سامنے کھا رے  ھو کر مؤذن اذان دے- (قدوری صفہ ৪৮ علم الفقہ ج১১ صفہ ৮১)
অর্থঃ- ইমাম ছাহেব মিম্বরে এসে বসার পর মুয়াজ্জিন মিম্বরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আযান দেবে। (কুদুরী পৃঃ ৪৮, ইলমুল ফিকাহ জিঃ ২ পৃঃ ৮১, বেহেস্তী জিওর জিঃ ১১ পৃঃ ৮১)
(৪৪)
چنانچہ جمعہ کی اذان ثانی کا اندرون مسجدھی تعامل ھے کیونکہ اس صرف حاضرین تک اواز پھنچا نا مقصود ھے- احسن الفتاوی ج صفہ ২৯৪)
 অর্থঃ- সুতরাং জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়াই স্বীকৃত, কেননা ছানী আযানের দ্বারা মসজিদে উপস্থিত সকলে আওয়াজ শুনাই উদ্দেশ্য। (আহসানুল ফতওয়া জিঃ ২ পৃঃ ২৯৪)
(৪৫-৪৭)   
اذان خطبہء جمعہ سامنے منبر کے مسجد کے اندر جیسا کہ جملئہ بلاد اسلام وحر مین شریفین مین ھوتی ھے بلاکر اھت درست ھے اور مراقی الفلاح اور طحاوی مین اس اذان میں قید عند المنبر مصرحا مذکور ھے- جس سے یہ امر بخوبی ثابت ھے کہ ھمارے فقھاء کا مطلب و بین یدی سے یھی ھے کہ مسجد مین منبر کے قریب یہ اطان ھونا مسنون ھے- پس اسکو بدعت کھنا سخت جرائت اور مخالفت فقھاء  حنفیہ کی ھے- (عزیز الفتاوے ج صفہ ২৭০، کفایۃ- نھایۃ)
 অর্থঃ- জুমুয়ার দিনে খুৎবার আযান সমস্ত ইসলামী রাষ্ট্রসমূহ ও পবিত্র হারামাইন শারীফাইন উনার ন্যায় মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সামনে দেয়া বিনা মাকরূহে জায়িয। মারাকিউল ফালাহ, তাহাবী ইত্যাদি কিতাবে ছানী  আযান মিম্বরের নিকট দেয়ার কথা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যা দ্বারা এই হুকুমটি সাব্যস্ত হয় যে, আমাদের ফকীহগণ উনাদের উদ্দেশ্য بين يدى দ্বারা এটাই  যে, ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে দেয়া পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অর্ন্তভূক্ত। সুতরাং ওটাকে বেদয়াত বলা কঠিন গুনাহ এবং প্রকাশ্যভাবে হানাফী ফক্বীহ উনাদের বিরোধিতা করা। (আযীযুল ফতওয়া জিঃ ১ পৃঃ ২৭০, কেফায়া, নেহায়া)
 (৪৮)
یہ امر تو محقق ھے کہ اذان ثانی یوم الحمعۃ ی داخل مسجد جائز ھے- باکہ یھی متوارث- و لہ اذانان اذان خارج المسجد اذان بعدہ بین یدی المنبر اذا  جلس الخطیب امداد الفتاوی ج صفہ ১৭৪)
 অর্থঃ- জুমুয়ার দিন ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়াই সঠিক কাজ। বরং এভাবেই পূর্ব হতে প্রচলিত। (যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়) হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সময় দুইটি আযান প্রচলিত ছিল। একটি মসজিদের বাইরে, অপরটি খতীব ছাহেব মিম্বরে বসার পর উনার সামনে দেয়া হতো। (ইমদাদুল ফতওয়া জিঃ ১ পৃঃ ৭০)
(৪৯)
جمعہ کی اذان ثانی حنفیہ کے نزدیک مسجد مین منبر کے  پاس ھونا سنت-کیونکہ تمام کتب ققئہ معتبرہ مین اس اذان منبر کے پاس خطیب کے سامنے ھونے کو لکھا ھے- (فتاوئے دار العلوم دیوبند ج صفہ ২৬৩)
অর্থঃ জুময়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে দেয়া হানাপি মাযহাবের ইমামদের নিকট সুন্নত। কেননা সমস্ত নির্ভরযোগ্য ফিকাহ কিতাবে জুমুয়ার ছানী আযান মিম্বরের নিকট খতীবের সামনে দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ জিঃ১ পৃঃ ২৬৩)
فدل على ان الاذان الثانى محله عندا المنبر وهو المر اد بين يديه- اعلاء السنن ج صفه ২৯.
অর্থঃ- সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, জুমুয়ার ছানী আযানের স্থান হলো মিম্বরের নিকটে খতীব ছাহেব উনার সামনে। (ইলাউস সুনান জিঃ ৮ পৃঃ ২৯) ৫১-৫২)
اذا جلس الامام  علی المنبر اذن بین یدیہ و اقیم بعد  تمام الخطبۃ بذلک جری التوارث (فتاوے عالمگیری ج صفہ ৭৭، عین الھدایۃ ج صفہ ২৫৮)
অর্থঃ- ইমাম ছাহেব মিম্বরে বসার পর তার সামনে মিম্বরের নিকট আযান দেবে এবং খুৎবা শেষে ইক্বামত দেবে। এ নিয়ম পূর্ব হতেই প্রচলিত। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জিঃ ৭৭ পৃঃ, আইনুল হেদায়া জিঃ ১ পৃঃ ৬৫৮)
উপরোল্লেখিত কিতাবসমূহের বরাত দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, জুমুয়ার ছানী  আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সম্মুখে দেয়া হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনিই জারী করেন, এবং এটার উপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত, সুতরাং এটা সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম। এটাকে বিদয়াত ও মাকরূহ তাহরীমী বলা সম্পূর্ণ নাজায়েয, হারাম ও কুফরী।