গবেষণা
কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন উনার এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া
জামিয়া শরীফ উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” প্রত্রিকায়
যথাক্রমে টুপি, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুময়ার নামায ফরজে আইন ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া,
মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী
সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে
পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
প্রকাশ করার পর নবম ফতওয়া হিসাবে “ফরজ নামাযের পর মুনাজাত ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে অসংখ্য
শুকরিয়া। মূলতঃ আমাদের আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মোতাবেক ফরজ নামাযের
পরব্যতীতও, যে কোন সময়ে (তারাবীহ,
আযান, জানাযা, ঈদাঈন) হাত তুলে মুনাজাত করা ক্বাওলী ও ফে’লী উভয়
প্রকার পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা মোস্তাহাব প্রমাণিত, যা ফতওয়ার
প্রায় কিতাবেই উল্লেখ রয়েছে। আর তাই
সারাবিশ্বের মুসলমানগণ চিরাচরিতভাবে ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাকী বা সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করে
আসছেন। এবং এ ব্যাপারে অধিকাংশ মুহাক্কিক, ইমাম, মুজতাহিদ
ও ফক্বীহ্গণ একমত পোষণ করেছেন।
অথচ
আজকাল কিছুসংখ্যক আশাদ্দুদ দরজার জাহিল লোক, তাদের ইলম ও সঠিক বুঝের স্বল্পতার
কারণে এবং সমাজের মধ্যে নিজেদের প্রভাব সৃষ্টির লক্ষ্যে উল্লেখিত মুনাজাতকে বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে এতে মোটেও সন্দেহ নেই যে, তাদের
উক্ত বক্তব্য বা অপপ্রচার সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর
ও কল্পনা প্রসূত। কারণ মুনাজাত বিরোধীদের হোতা তার বক্তব্য বা অপপ্রচারের স্বপক্ষে
নির্ভরযোগ্য ও মজবূত কোন দলীলই পেশ করতে পারেনি, সে শুধু যল্পনা-কল্পনারই অনুসরণ
করেছে। মুনাজাত বিরোধীরা তাদের ফিৎনাকে দায়েমীভাবে জারী রাখার লক্ষ্যে এবং তাদের
বক্তব্যের স্বপক্ষে যে ভিত্তিহীন ও আজগুবী এক দলীল পেশ করেছে, তাহলো-
ফরজ নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিত ভাবে
মুনাজাত করা যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার ফে’ল বা আমল তা কোন সহীহ্ ফে’লী হাদীছ শরীফে বর্ণিত নেই, সুতরাং এটা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।
মুনাজাত বিরোধীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের জিজ্ঞাসা- কোন আমলের স্বপক্ষে
সহীহ্ ফে’লী হাদীছ শরীফ না থাকলেই যে, তা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ হবে, এরূপ দলীল পেলেন কোথায়? আপনাদের
এ বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন সহীহ্ হাদীছ শরীফ রয়েছে কি? মোটেও
নেই। যদি তাই হয়,
তবে মুনাজাত সম্পর্কে আপনাদের উক্ত বক্তব্যও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ ও হারামের অন্তর্ভূক্ত নয় কি?
প্রকৃতপক্ষে
মুনাজাত বিরোধীদের উক্ত বক্তব্যের দ্বারা এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তারা পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার উসূল সম্পর্কে চরম পর্যায়ের জাহিল। কেননা সর্বসম্মত ও গ্রহণযোগ্য
উসূল হলো- কোন আমলকে ফরজ,
ওয়াজিব সাবিত করতে হলে, তা সহীহ্ বা হাসান পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার দ্বারাই তা করতে হবে। অনুরূপ কোন আমলকে হারাম বা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্
সাবিত করতে হলেও,
তার স্বপক্ষে সহীহ্ ও হাসান পবিত্র হাদীছ শরীফ থাকতে
হবে।
মূলকথা
হলো- ইসলামী শরীয়ত উনার কোন আহ্কাম সাবিত করতে হলে, তা শুধুমাত্র সহীহ্ ও হাসান
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতেই তা করতে হবে। কিন্তু কোন আমলকে মোস্তাহাব প্রমাণ
করতে হলে, শুধুমাত্র সহীহ্ বা হাসান পবিত্র হাদীছ শরীফ ভিত্তিতে করতে হবে, এরূপ কোন
শর্ত আরোপ করা হয়েছে বলে কোথায়ও উল্লেখ নেই। বরং বর্ণিত রয়েছে যে, কোন
আমলকে মোস্তাহাব প্রমাণ করার জন্য জঈফ পবিত্র হাদীছ শরীফই (যা মওজু নয়) যথেষ্ট।
এবং এমন বিষয়- যে সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার স্পষ্ট কোন
আদেশ বা নিষেধ নেই,
তা মোবাহ্ কাজের অন্তর্ভূক্ত।
এখন
মুনাজাত বিরোধীদের নিকট আমাদের সুওয়াল হলো- ফরজ নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে
মুনাজাত করা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ (হারাম)। আপনারা এ হুকুম সাবিত করলেন কোন পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার ভিত্তিতে?
সহীহ, না হাসান, না জঈফ? মূলতঃ মুনাজাত বিরোধীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে উল্লেখিত
তিন প্রকার পবিত্র হাদীছ শরীফ তো দূরের কথা, এমন একখানা মওজু পবিত্র হাদীছ
শরীফও (যা শরীয়তে পরিত্যাজ্য) পেশ করতে পারবে না, যাতে ফরজ নামাযের পর হাত তুলে
সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি তাই হয়, তবে
উল্লেখিত উসূল মোতাবেক ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত কখনো হারাম হতে
পারেনা। বরং মোস্তাহাব ও জায়েয, কেননা উল্লেখিত মুনাজাতের স্বপক্ষে সহীহ, হাসান, জঈফ, ক্বাওলী, ফে’লী
সবধরণের পবিত্র হাদীছ শরীফই রয়েছে। এর বিপরীত মত যারা পোষণ করা মূলতঃ পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার সর্বসম্মত উসূলকেই অস্বীকার করার শামিল। কাজেই উল্লেখিত মুনাজাত বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ হওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। তবে ফিৎনাবাজ ও বিদয়াতী ফিরক্বার পক্ষ
হতে এরূপ প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তবে মুনাজাত বিরোধীদের এটাও জেনে
রাখা দরকার যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফে’ল বা আমল
দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয়কে বিদয়াত বা হারাম বলা
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ করারই নামান্তর।
আর যারা এরূপ করবে,
তাদের স্থান অবশ্যই জাহান্নাম। মূলকথা হলো- ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উল্লেখিত শরীয়ত উনার চার
দলীলের ভিত্তিতেই মুস্তাহাব ও জায়েয প্রমাণিত। আর মুনাজাত বিরোধীদের বক্তব্য
সম্পূর্ণই দলীলহীন,
বিভ্রান্তিকর ও কল্পনা প্রসূত।
আমরা
আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার অত্র ফতওয়ায় পর্যায়ক্রমে মুনাজাত
বিরোধীদের উত্থাপিত অবান্তর ও আজগুবী উক্তিগুলো পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ
শরীফ, পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস উনার দৃষ্টিতে খন্ডন করে তার
দলীলভিত্তিক সঠিক শরঈ ফায়সালা পাঠক সম্মুখে তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ্। যাতে করে
সত্যান্বেষী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার অনুসারীগণ মুনাজাত সম্পর্কে সঠিক
তত্ত্ব ও তথ্য লাভ করতে পারেন। এবং মুনাজাত বিরোধীরাও যেন নিজেদের ভুল সংশোধন করতঃ
সঠিক মত ও পথের অনুসরণ করতে পারে।
(احكام المناجات)
মুনাজাতের আহ্কাম মুনাজাত
শব্দটি নাজা ইউনাজী,
মুনাজাতান আরবী শব্দ বাবে মুফায়ালাতুন হতে উদ্ভুত। মুনাজাত শব্দটির লোগাতি বা আভিধানিক অর্থ হলো-
চুপে চুপে কথা বলা। আর এস্তেলাহি বা প্রচলিত অর্থ হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট
আজেজি-এনকেসারী বা অনুনয়-বিনয়ের সাথে কিছু প্রার্থনা করা। এখানে উল্লেখ্য যে, মুনাজাতকে
দোয়াও বলা হয়। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন উনার কালাম পাক উনার মধ্যে
ইরশাদ মুবারক ফরমান,
اذا
سألك عبادى عنى فائى قريب اجيب دعوة الداع اذا دعانى. (سورة البقرة ১৮৬)
অর্থঃ- “হে হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে আপনাকে প্রশ্ন
করে, (তখন আপনি বলুন) নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকটবর্তী। যখন কেউ আমার নিকট দোয়া করে বা
আমাকে ডাকে, তখন আমি তার দোয়া কবুল করি বা তার ডাকে সাড়া দেই।” (সুরা
বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৬)
আর পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
الدعاء مخ العبادة
(ترمذى شريف)
অর্থঃ- “দোয়া বা
মুনাজাত হলো ইবাদতের মূল বা সারবস্তু।” (তিরমীযী শরীফ)
দোয়া বা
মুনাজাত সেই ইবাদতেরই মূল বা সারবস্তু, যেই ইবাদতের জন্য মানুষ এবং জ্বিনকে
সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وماخلقت
الجن والانس الاليعبدون. (سورة الذاريات ايت ৫৬)
অর্থঃ- “আমি
জ্বিন ও ইনসান (মানুষকে) সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য। (পবিত্র সুরা
আয্যারিয়াত শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ-৫৬)
অথচ যে
দোয়া বা মুনাজাতকে বান্দার ইবাদতের মূল বা সারবস্তু বলা হয়েছে, সেই দোয়া
বা মুনাজাত সম্পর্কেই আমাদের সমাজের তথা সারাবিশ্বের কিছু জেহালতসম্পন্ন লোক
কম জ্ঞান
ও কম বুঝের কারণে ফিৎনা বা মতবিরোধ
সৃষ্টি করছে। মুনাজাত বিরোধীদের মূল
বক্তব্য হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফরজ নামাযের পর হাত
তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন বলে কোন সহীহ্ ফে’লী হাদীছ শরীফ বর্ণিত নেই, তাই এটা
বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।
মুনাজাত
বিরোধীদের এ বক্তব্যের দ্বারা প্রধানতঃ দু’টি বিষয়ই স্পষ্ট হয়ে উঠে- প্রথমতঃ
তাদের বক্তব্যে এটাই বুঝায় যে, উক্ত মুনাজাত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফে’ল (আমল)
দ্বারা প্রমাণিত নেই,
কাজেই এটা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্। দ্বিতীয়তঃ এ মুনাজাতের
স্বপক্ষে কোন সহীহ্ হাদীছ শরীফ বর্ণিত নেই, সুতরাং এ মুনাজাত নাজায়েয ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্।
মুনাজাত
বিরোধীদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমেই বলতে হয় যে, মূলতঃ মুনাজাত বিরোধীগণ বিদয়াতের
সঠিক সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ। কারণ মুনাজাত বিরোধীগণ বিদয়াতের
যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন,
তা মোটেও শুদ্ধ হয়নি। কেননা তাদের উক্ত ব্যাখ্যা
নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত ইমাম, মুজতাহিদ, ফক্বীহ্ ও মুহাদ্দিসগণ উনাদের দেয়া ব্যাখ্যার সম্পূর্ণ
বিপরীত। তাই বিদয়াত সম্পর্কে মুনাজাত বিরোধীদের দেয়া ব্যাখ্যা মোটেও গ্রহণযোগ্য
নয়। আর বিদয়াত সম্পর্কে সঠিক ধারণা না
থাকার কারণেই উক্ত মুনাজাতকে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বলেছে। কাজেই প্রথমে আমাদেরকে বিদয়াতের
সঠিক সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা অনুধাবন করতে হবে। আর তখনই স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, উক্ত
মুনাজাত মোটেও বিদয়াত নয়।
বিদয়াতের
পরিচয়
উসূলের
কিতাবে উল্লেখ রয়েছ যে,
اصول،
لمشرع ثلثة القران- الحديث- الاجماع ورابعها القياس- (نور الانوار)
অর্থঃ- “মূলতঃ ইসলামী শরীয়ত উনার ভিত্তি
হলো তিনটি। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ এবং চতুর্থ হলো- পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।” (নুরুল আনোয়ার)
মহান
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ومااتاكم
الرسول فخذوه ونهاكم عنه فانتهوا واتقو الله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ- “মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি যে সম্মানিত শরীয়ত
নিয়ে এসেছেন, তা আঁকড়িয়ে ধরো এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাকো এবং মহান আল্লাহ
পাক উনাকে ভয় করো,
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।”
আর পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
تركت
فيكم امرين لن تضلوا ما تمكتم بهما كتاب الله وسنتى. (مشكوة شريف)
অর্থঃ- “তোমাদের জন্য আমি দু’টি জিনিস
রেখে গেলাম, এ দু’টি জিনিসকে যদি তোমরা আঁকড়িয়ে ধর (অনুসরণ কর), তবে তোমরা কখনো গোমরাহ হবে না।
একটি হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ, অন্যটি
হলো- আমার সুন্নত (পবিত্র হাদীছ শরীফ)।” (মিশকাত শরীফ)
কাজেই
আমাদের কোন বিষয়ের শরঈ ফায়সালা করতে হলে, প্রথমে পবিত্র কুরআন শরীফ ও
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাই তা করতে হবে। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে যদি তার সুস্পষ্ট বিধান না পাওয়া যায়, তবে পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দ্বারা তার ফায়সালা করতে হবে। কেননা আহ্লে
সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনাদের দলীলের ভিত্তিই হলো উক্ত চারটি, এর বাইরে
কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব বিদয়াতের ব্যাপারেও শরঈ ফায়সালার জন্য আমাদেরকে
উপরোক্ত চারটির ভিত্তিতেই করতে হবে। মনগড়া ক্বিয়াসের ভিত্তিতে কখনো তার মীমাংসা
হতে পারে না, বরং ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের প্রথম জানতে হবে বিদয়াত
শব্দের অর্থ কি? বিদয়াত কাকে বলে?
এবং কত প্রকার ও কি কি?
বিদয়াতের
লোগাতী অর্থ বিদয়াতের লোগাতী অর্থ হচ্ছে-
بدعة=
دين مين كوئى ئيئ بات يائى رسم نكلنا تيادستوريارسم، رواج (مسباح اللغات ص ৬২.
অর্থঃ- “দ্বীন
সম্পর্কে কোন নতুন কথা বা নতুন প্রথার উদ্ভব ঘটানো, নতুন নিয়ম-কানুন ও রেওয়াজ
প্রতিষ্ঠা করা।”
(মিস্বাহুল লোগাত) বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস
ও ফক্বীহ্ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন,
والبدعة
فى الاصل احداث امر لم يكن فى زمان رسول الله صلى الله عليه وسلم. (عمدة القاوى)
অর্থঃ- “প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত হলো- এমন
জিনিসের আবির্ভাব,
যার নমুনা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা।” (ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী)
হযরত
ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন,
وفى
الشرع احداث مالم يكن فى عهد رسول الل صلى الله عليه وسلم. (شرح مسلم)
অর্থঃ- “ইসলামী শরীয়ত
মোতাবেক বিদয়াত হচ্ছে- এমনসব নব আবিস্কৃত জিনিসের নাম, যা নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা।” (শরহে
মুসলিম লিন নববী)
হযরত
শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি লিখেছেন,
بدانكه
هرحيز ييدا شده بعد از ييغمبر عليه السلام بدعت است. (شعة للمعات)
অর্থঃ- “জেনে রাখ, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে উদ্ভব ঘটেছে এমন প্রত্যেক
কাজই বিদয়াত।” (আশআতুল লুমআত)
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, বিদয়াত হলো, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর হতে
ক্বিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভাবিত প্রত্যেক নতুন বিষয়। এখন তা ‘খায়রুল
কুরুনে’ও হতে পারে অথবা তার পরেও হতে পারে।
বিদয়াতের
ব্যাখ্যা
এ
প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
বিশ্বখ্যাত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব ‘মিশকাত শরীফ’ উনার
শরাহ ‘মিরকাত শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
قال
الشافعى رحمة الله مااحدث لمايخالف الكتاب اوالسنة او الاثر او الاجماع فهو ضلالة-
وما احدث لمالا يخالف شيأكما ذكر فليس بمذموم- (مرقات شرح مشكوة ج ১ صفه ১৮৯)
অর্থঃ- “ইমাম
শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে নব উদ্ভাবিত কাজ পবিত্র কুরআন
শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ (অর্থাৎ হযরত ছাহাবা-ই কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের আমল বা ক্বওল
শরীফ) অথবা পবিত্র ইজমা শরীফ উনারে বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত, সেটাই
গুমরাহী ও নিকৃষ্ট। আর যে নব উদ্ভাবিত কাজ উল্লেখিত কোনটির বিপরীত বা বিরুদ্ধ নয়, তা মন্দ
বা নাজায়েয নয়। (মিরকাত শরহে মিশকাত শরীফ, ১ম জিঃ পৃঃ ১৮৯)
ইমাম
শারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিই
যে নিকৃষ্ট বা নিষিদ্ধ হবে,
তার কোন যুক্তি নেই। (আনওয়ারে কুদসিয়্যাহ্)
অথচ
আজকাল কিছু জাহেল লোক সকল বিদয়াতকেই (নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি) গুমরাহী বলে থাকে এবং
দলীল হিসাবে তারা নিম্মোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে। যেমন পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار.
অর্থঃ- “প্রত্যেক
বিদয়াতই গুমরাহী,
আর প্রত্যেক গুমরাহ লোকই জাহান্নামে যাবে।”
অথচ তার ব্যাখ্যা সম্পর্কে তারা নেহায়েতই অজ্ঞ। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
ব্যাখ্যায় ‘মিশকাত শরীফ’ উনার শরাহ্ ‘মিরকাত শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
قوله
كل بدعة ضلالة قال فى الازهار اى كل بدعة سيئة ضلالة.
অর্থঃ- “সাহেবে
মিরকাত হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আল আজহার” নামক
কিতাবে
كل بدعة ضلالة
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার এ
অংশটুকুর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে,
اى كل
بدعة سيئة ضلالة
অর্থাৎ সকল বিদয়াতে সাইয়্যিয়াই গোমরাহী।
আর
তাই শায়খ ইব্রাহীম হালবী রহমতুল্লাহি তিনি
আলাইহি বলেন,
وعدم
النقل عن النبى صلى الله عليه وسلم وعن الصحابة والتابعين رضى الله عنهم وكونه
بدعة لا ينافى كونه حسنا. (كبيرى شرح منية المصلى صفه ২৫১)
অর্থঃ- নতুন উদ্ভাবিত কোন
কাজ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীনগণ উনাদের নিকট হতে
প্রমাণিত না থাকলে অথবা উক্ত কাজের প্রতি বিদয়াত শব্দ আরোপিত হলেই যে, তা মন্দ
বা গুমরাহী একথা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং তা ভালও হতে পারে। (কবীরী শরহে মুনিয়াতুল
মুছল্লী পৃঃ ২৫১) হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত
ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিও উনার ইহ্ইয়াউল উলুম কিতাব উনার ২য় খন্ড ২৬
পৃষ্ঠায় অনুরূপ মন্তব্য করেন। কেউ কেউ
আবার হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত নিন্মোক্ত হাদীছ শরীফখানা
পেশ করে বলেন যে,
সকল বিদয়াতই পরিত্যাজ্য। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من احدث فى امرنا هذا هذا ماليس منه فهورد.
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করবে, যার
ভিত্তি এ দ্বীনে নেই,
সেটা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।”
এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ ওসমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন,
قوله
ماليس منه يدل على ان الا مور التى لها اصل من الكتاب او من سنة رسول الله صلى
الله عليه وسلم او من الخلفاء الراشدين اوتعا هل عامة اسلف او الاجتها دالمعتبر
بشروط، المستند الى النصوص لا تسمى يدعة شرعية لاى (يدعة سية) فان هذه الا صول
كلها من الدين- (فتح الملهم شرح المسلم ج ২ صفه ৪০৭)
অর্থঃ- পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার উক্ত শব্দ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, যে সকল দ্বীনী কাজের সনদ পবিত্র কুরআন
শরীফ অথবা পবিত্র হাদীছ শরীফ বা হযরত খোলাফা-ই-রাশেদীন উনাদের সুন্নত অথবা
বুযুর্গানে দ্বীনের পারস্পরিক কার্যকলাপ অথবা গ্রহণযোগ্য শর্তাদীসহ ইসলামী শরীয়ত
উনাদের স্পষ্ট দলীলসমূহের ভিত্তিতে যে ইজতিহাদ করা হয়েছে, তার
মধ্যে পাওয়া যায়,
তবে সেগুলোকে নিকৃষ্ট বিদয়াত (বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্) বলা
যাবেনা। কারণ এ ভিত্তিসমূহ দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত। (ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম, ২য় জিঃ পৃঃ ৪০৭)
অতএব, যে সকল
কাজ উল্লেখিত ভিত্তিসমূহের উপর প্রতিষ্ঠিত, তা সম্মানিত দ্বীন অর্থাৎ সম্মানিত
ইসলামী শরীয়ত উনার অন্তর্ভূক্ত বলেই বিবেচিত হবে। অনুরূপ মোযাহেরে হক্ব ১ম খন্ড ৭০
পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার -- শব্দ ব্যবহৃত
হয়েছে- উদ্দেশ্য এই যে,
যে সকল কাজ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ বিরুদ্ধ
নয়, সেগুলোকে বিদয়াতের গন্ডি বহির্ভূত করে রাখা। কারণ এ সকল কাজ নতুন উদ্ভুত হলেও গোমরাহী
বা নিকৃষ্ট নয়। কেউ কেউ আবার মাহ্বুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, কাউয়্যুমে
আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ক্বাওল শরীফ উনার
ভুল ব্যাখ্যা করে বলে থাকেন যে, বিদয়াত বলতেই গোমরাহী। কেননা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “আমি কোন বিদয়াতের মধ্যেই নূর দেখিনা, তা বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ই হোক বা বিদয়াতে হাসানাই হোক।”
অথচ হযরত
মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার উক্ত ক্বাওলটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। অর্থাৎ উনি এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আমল অর্থাৎ সুন্নত মুবারক উনার মধ্যে যে নূর রয়েছে, তা অন্য কারো আমলের মধ্যে নেই, এটাইতো
স্বাভাবিক। কেননা সুন্নতের মধ্যে যে নূর রয়েছে, তা বিদয়াতের মধ্যে কখনো পাওয়া
সম্ভব নয়। আর তাই তিনি বলেছেন, “আমি কোন বিদয়াতের মধ্যেই নূর দেখিনা।”
অর্থাৎ
সুন্নত মুবারক উনার ন্যায় নূর দেখিনা। অবশ্য হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উপরোক্ত কথার দ্বারা বিদয়াতে হাসানা যে পরিত্যাজ্য তা
বুঝায় না। কেননা উনি নিজেও অনেক বিদয়াতে হাসানা আমল করেছেন ও আমলে উৎসাহিত করেছেন, যেমন
তাসাউফের সমস্ত তরীক্বাগুলো। যেহেতু “খাইরুল কুরুনে” তাসাউফের
মাকামাতগুলো বর্তমান তরীক্বাগুলোর ন্যায় সুবিন্যস্ত আকারে সন্নিবেশিত ছিল না। অথচ
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাসাউফের বেশীরভাগ তরীক্বার সংস্কার
সাধন করেন। বিশেষভাবে নকশবন্দীয়া তরীক্বাকে আরো বিস্তারিত ও ব্যাপক সংস্কার সাধনের
মাধ্যমে নকশবন্দীয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া নামক তরীক্বার প্রবর্তন করেন এবং নিজে এই সকল
তরীক্বার মাকামের বিন্যাস,
হাল-অবস্থা বর্ণনা করে মুরীদ-মোতাকেদগণকে তালীম-তালকীন দিয়ে
গেছেন। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনে এরকম আরো অনেক ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়, যার
দ্বারা প্রমাণ হয় যে,
উনি বিদয়াতে হাসানা কাজকে কখনও পরিত্যাগ করেননি বা করতে
বলেননি। কাজেই যারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বাওল
শরীফ উনার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে প্রচারে লিপ্ত, তারাই আবার উনার অন্যান্য বিদয়াতে
হাসানা আমলগুলো সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। সুতরাং বিদয়াতে হাসানা অবশ্যই
গ্রহণযোগ্য, আর বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। উল্লেখিত
আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, বিদয়াত মাত্রই পরিত্যাজ্য নয় এবং
সকল বিদয়াতই গুমরাহী নয়। যদি তাই হতো, তবে তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া
জায়েয হতো না। কেননা এটাকেও বিদয়াত বলা হয়েছে, অর্থাৎ উত্তম বিদয়াত।
এখন মূল
বিষয় হলো- এ নব আবিস্কৃত জিনিসের কোনটি ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে গ্রহণযোগ্য আর
কোনটি ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে পরিত্যাজ্য, তা নির্ণয় করা।
বিদয়াতের শ্রেণী বিভাগ
হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ ইসলামী শরীয়ত উনার বিধান অনুযায়ী বিদয়াতকে প্রথমতঃ দু’ভাগে
বিভক্ত করেছেন-
১। বিদয়াতে ই’তেক্বাদী, অর্থাৎ
আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিদয়াত।
২। বিদয়াতে আ’মালী, অর্থাৎ
কর্মগত বিদয়াত।
(১) বিদয়াতে ই’তেক্বাদী
বা আক্বীদাগত বিদয়াত হলো- যে সমস্ত আক্বীদা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ
শরীফ মূলনীতির বহির্ভূত। মূলতঃ এ আক্বীদাগত বিদয়াতের সবটাই হারামের পর্যায়ভূক্ত এবং
অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
যেমন-
খারেজী, মু’তাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরকার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরকার ন্যায় আক্বীদা
পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।
(২) বিদয়াতে আ’মালী বা
কর্মগত বিদয়াত প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত- (ক) বিদয়াতে হাসানা, (খ) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।
(ক) বিদয়াতে হাসানা আবার
তিন
প্রকার-
(১) বিদয়াতে ওয়াজিব, (২) বিদয়াতে
মোস্তাহাব ও (৩) বিদয়াতে মোবাহ্। আর এ বিদয়াতে হাসানাহ্ সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من
سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجرمن عمل بها من بعده. (رواة مسلم)
অর্থঃ- “যে কেউ
দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য
সে সাওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার
সাওয়াবও সে পাবে।”
(মুসলিম শরীফ)
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে বিদয়াতে হাসানাকে বিদয়াত
লিদ্দ্বীন বলা হয়।
(খ) আর বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ দু’প্রকার- (১) বিদয়াতে হারাম, (২) বিদয়াতে মাকরূহ্।
এই বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من
احدث فى امرنا هذا ماليس منه فهورد. (مشكوة شريف)
অর্থঃ- “যে
ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিসের প্রবর্তন করবে, যার
ভিত্তি এ দ্বীনে নেই তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (মিশকাত শরীফ)
আর এ বিদয়াত
সম্পর্কেই ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار.
অর্থঃ- “প্রত্যেক
বিদয়াতই (সাইয়্যিয়াহ্) গুমরাহী আর প্রত্যেক গোমরাহ ব্যক্তিই জাহান্নামী।”
উল্লেখিত
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকে বিদয়াত ফিদ্দ্বীন বলা হয়। মূলকথা হলো- যা নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পর নতুন উদ্ভব হয় এবং তা দ্বীনের সাহায্য করে থাকে অথবা
সাহায্যকারী না হলেও দ্বীনের কোন ক্ষতি করে না, সেটাই বিদয়াত লিদ্দ্বীন অর্থাৎ বিদয়াতে
হাসানা। আর যে নতুন বিষয় উদ্ভব হওয়ার কারণে দ্বীনের কিছুমাত্রও ক্ষতি হয়, তবে
সেটাই হবে বিদয়াত ফিদ্দ্বীন অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।
উল্লেখিত
আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিদয়াত বলতেই পরিত্যাজ্য নয়।
অর্থাৎ যেই নতুন উদ্ভাবিত কাজ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ
শরীফ, পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনার বিপরীত তা অবশ্যই
বর্জনীয়। আর সেটাই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বা হারামের অন্তর্ভূক্ত, যদিও তা “কুরুনে
সালাসার” মধ্যে উদ্ভাবিত হোক না কেন। আর যেই নতুন উদ্ভাবিত কাজ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অনুকুলে তা অবশ্যই
জায়েয এবং উত্তম,
আর এটাকেই বিদয়াতে হাসানাহ্ বলা হয়। যদিও তা ‘কুরুনে
সালাসার’ পরে উদ্ভাবিত হোক না কেন।
বিদয়াতে হাসানা ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্-এর
বিশ্লেষণ :
নিম্নে বিদয়াতে হাসানা ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়ার উদাহরণভিত্তিক ব্যাখ্যা দেয়া হলো- ১। বিদয়াতে ওয়াজিবঃ যা পালন না করলে
ইসলামের ক্ষতি বা সংকট হবে,
যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ
শরীফ কাগজে কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করা, পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার জের, জবর, পেশ দেওয়া, মাদ্রাসা নির্মাণ করা,
নাহু সরফ, উসুল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কিতাব লিখা ও পড়া। ২। বিদয়াতে
মোস্তাহাবঃ যা ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে নিষেধ নেই এবং তা সমস্ত মুসলমানগণ ভাল মনে
করে সাওয়াবের নিয়তে করে থাকেন, যেমন- তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া, মুসাফিরখানা, ইবাদতখানা
লঙ্গরখানা, খানকা শরীফ ইত্যাদি জনহিতকর কাজ করা। খতিবের সম্মুখে আযান দেওয়া, রমযান
মাসে বিত্র নামায জামায়াতে আদায় করা
ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
ما
راه الناس حسنا فهو عندا لله حسنا- لا تجتمع امتى على الضلالة. (مشكوة)
অর্থঃ- “লোকে যা
ভাল মনে করে তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটও ভাল। আমার উম্মতগণ কখনো গুমরাহীর মধ্যে
একমত হবে না।” (মিশকাত শরীফ)
৩। বিদয়াতে মোবাহ্ঃ
ঐ সমস্ত নতুন কাজ যা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে নিষেধ নেই, যেমন-
পোলাও, বিরিয়ানী, বুট, মুড়ী, পিয়াঁজো ইত্যাদি খাদ্য খাওয়া, ট্রেন, গাড়ী, প্লেন ইত্যাদি যান-বাহনে চড়া।
৪। বিদয়াতে হারামঃ
যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপন্থী বা ওয়াজিব আমলগুলি
ধ্বংসের কারণ। যেমন- ইয়াহুদী, নাসারা ও ভন্ড ফকিরদের কু-প্রথা বা আক্বীদাসমূহ।
৫। বিদয়াতে মাকরূহ্ঃ যার
দ্বারা কোন পবিত্র সুন্নত মুবারক কাজ বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন- বিধর্মীদের পোশাক
পরিধান করা, টাই পরিধান করা এবং বিধর্মীদের অনুসরণ করা ইত্যাদি। কেননা হাদীছ শরীফে রয়েছে,
قال
رسول الله صلى الله عليه وسلم- ما احدث قوم بدعة الارفع مثلها من السنة فتمسك بسنة
خير من احداث بدعة. (رواه احمد)
অর্থঃ- নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যখনই কোন
ক্বওম একটি বিদয়াতের উদ্ভব ঘটায়েছে, তখনই একটি সুন্নত মুবারক লোপ
পেয়েছে। সুতরাং একটি সুন্নত মুবারক উনার আমল করা (যদিও ওটা ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর
হয়) একটি বিদয়াত উদ্ভব করা হতে উত্তম (যদিও ওটা বিদয়াতে হাসানা হয়)।” (মুসনদে আহমদ)
বিদয়াতের অনুরূপ ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা নিন্মোক্ত কিতাবসমূহেও রয়েছে। যেমন- বুখারী শরীফ উনার
শরাহ ফাতহুল মুবীন,
হাশিয়ায়ে মিশকাত, আশয়াতুল লুমুয়াত, লুমুয়াত, ফতওয়ায়ে
শামী, ইশবাউল কালাম,
আসমাওয়াল লোগাত, হুসনুল মাকাছেদ ইত্যাদি আরো অনেক
কিতাবসমূহে।
কাজেই
মুনাজাত বিরোধীগণ বিদয়াতের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন অর্থাৎ বলেছেন যে, প্রত্যেক
নতুন আবিস্কৃত জিনিস যা দ্বীনের কোনরূপ সাহায্য করেনা, তাই বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ। যদি তাই হয়,
তবে আমাদের সমাজে নতুন এমন অনেক জিনিসই প্রচলিত রয়েছে, যা না
হলে দ্বীনের মোটেও ক্ষতি হবেনা। যেমন- মসজিদে মিহাব ব্যবহার করা, মিনারা
ব্যবহার করা, ট্রেন, গাড়ী, প্লেনে চড়া, চশমা ইত্যাদি ব্যবহার করা। মুনাজাত বিরোধীগণের দেয়া ব্যাখ্যা মতে এগুলোও কি বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহর অন্তর্ভূক্ত হয়না? কাজেই দ্বীনের সাহায্যকারী না হলেই যে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্
হবে তা নয়। বরং এমন বিদয়াত যা দ্বীনের সাহায্যও করে না এবং কোন প্রকার ক্ষতিও
করেনা, তা বিদয়াতে মোবাহ্। তবে সুক্ষ্মভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, বিদয়াতে
মোবাহ্ও অনেক ক্ষেত্রে দ্বীনের সাহায্য করে থাকে। যেমন- প্লেনের কারণে আমরা অল্প
সময়ের মধ্যে হজ্বব্রত পালন করতে পারি। পোলাও-বিরানী ইত্যাদি খাদ্য খেলে স্বাস্থ্য
ভাল থাকে, আর স্বাস্থ্য ভাল থাকলে ইবাদত-বন্দেগী সঠিকভাবে করা যায়। এগুলো কি দ্বীনের
সাহায্যকারী নয়?
কেউ কেউ
আবার বলে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর
আবিস্কৃত প্রত্যেক নতুন জিনিসই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।
অথচ এটা
মোটেও শুদ্ধ নয়। কেননা যদি তাই হতো, তবে আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন
অনেক নতুন বিষয় রয়েছে,
যা অবশ্যই পরিত্যাগ করা জরুরী হয়ে পড়তো। যেমন-
(ক) বর্তমানে
যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসায় ইলম শিক্ষা দেওয়া হয়, সেই পদ্ধতি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু
করে “খাইরুল ক্বুরুন”
পর্যন্ত কারো সময়ই ছিলনা।
(খ)
বর্তমানে আমরা যে নাহু সরফ শিক্ষা করে থাকি, তাও “খাইরুল
ক্বুরুনে” ছিল না।
(গ)
বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে তারাবীহ্র
নামায পড়ে থাকি,
এ পদ্ধতিও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়
ছিলনা।
(ঘ)
বর্তমানে আমরা মসজিদে জামায়াতের জন্য যে সময় নির্ধারণ করে থাকি, তাও
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিল না।
(ঙ)
বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে জুময়ার সানী আজান দিয়ে থাকি, এ পদ্ধতি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা।
(চ)
বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে ওয়াজ মাহ্ফিল করে থাকি, ঐরূপ পদ্ধতিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াজ মাহফিল
করেননি।
(ছ)
বর্তমানে আমরা যে পোলাও,
বিরিয়ানী কোর্মা, বুট, মূড়ী, পিয়াঁজো
খেয়ে থাকি, তা কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেয়েছিলেন?
(জ)
বর্তমানে আমরা যে সকল যান-বাহনে চড়ে থাকি, যেমন- গাড়ী, ট্রেন, প্লেন, রকেট, রিক্সা, জাহাজ
ইত্যাদি। পবিত্র হজ্বব্রত পালন করি এবং বিদেশ ভ্রমনে যাই, তা কি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিল? তিনি কি ঐগুলোতে চড়েছিলেন? কখনো নয়।
তবে আপনারা ঐগুলোতে চড়া হতে বিরত থাকেন কি?
(ঝ)
বর্তমানে মানুষ যে সকল খাট-পালঙ্ক, সোকেস- আলমারী, চেয়ার-সোফা
ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে,
তা কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যবহার করেছিলেন? কখনো নয়।
আপনারা এগুলোর ব্যবহার হতে বিরত থাকেন কি?
(ঞ)
বর্তমানে বিয়ে-শাদীতে যে কাবিননামা করা হয়, তা কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়
ছিল? নিশ্চয়ই না। তবে আপনারা এগুলোকে বিদয়াত ফতওয়া দেন না কেন?
(ত)
বর্তমানে যে সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি মানুষ ব্যবহার করছে, যেমন-
ফ্যান, ঘড়ি, চশমা, মাইক ইত্যাদি,
এগুলো কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়
ছিল? নিশ্চয়ই না। আপনারা কি এগুলো ব্যবহার হতে বিরত থাকেন?
(থ)
বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসার জন্য চাঁদা আদায় করা হয়, যেমন
সদকা, ফিৎরা, যাকাত, কোরবানীর চামড়া,
মান্নতের টাকা ইত্যাদি এবং যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসা তৈরী করা
হয়েছে, তা যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা। তদ্রুপ ‘খায়রুল
কুরুনেও’ ছিলনা। তাহলে আপনারা কি এর থেকে হিফাজতে আছেন? এমনিভাবে আরো অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা নূরে
মুজাসসম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা “খায়রুল
কুরুনে” ছিল না কিন্তু আমরা তা দায়েমীভাবে করছি।
সুতরাং
মূলকথা হলো- বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ তাকেই বলে, যার ভিত্তি শরীয়তে নেই এবং তা
দ্বীন ধ্বংসে সাহায্য করে। বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ যদি এটাই হয়ে থাকে, তবে ফরজ নামাযের
পর সম্মিলিত মুনাজাত কি করে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ হতে পারে? যার
স্বপক্ষে ক্বাওলী,
ফে’লী উভয় প্রকার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রমাণ রয়েছে এবং যার স্বয়ং নমুনা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ও
ছিল।
মূলতঃ
ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা
নতুন আবিস্কৃত কোন বিষয় নয়,
বরং স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
ক্বাওল এবং ফে’ল দ্বারা মোস্তাহাব প্রমাণিত এবং তামাম বিশ্বের মুসলমানগণ চিরাচরিতভাবে তা
মোস্তাহাব জেনে আমল করে আসছেন। এবং আমাদের অসংখ্য বুযুর্গ ফক্বীহ্গণ এটাকে
মোস্তাহাব ফতওয়া দিয়েছেন,
যা নির্ভরযোগ্য অনেক ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। এতসব
প্রমাণ বিদ্যমান থাকা সত্বেও এটাকে কি করে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বলা হলো? মূলতঃ
এটা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, মুনাজাত বিরোধীগণ আসলে দ্বীনের সহীহ্ বুঝ হতে সম্পূর্ণই মাহরুম।
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من ير دالله به خير بفقه فى الدين.
অর্থঃ- “মহান আল্লাহ
পাক তিনি যার ভাল চান,
তাকে দ্বীনের বুঝ দান করে থাকেন।”
অতএব, দ্বীনের
বুঝ যাদের মধ্যে নেই,
তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। মুনাজাত বিরোধীদের অবস্থাও হয়েছে
ঠিক তাই। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
والله يختص بر حمته من يشاء.
অর্থঃ- “মহান আল্লাহ
পাক তিনি যাকে ইচ্ছা, তাকেঁ খাস রহমত দান করে থাকেন।”
জঈফ হাদীছ শরীফ মুস্তাহাব প্রমাণে যথেষ্টঃ
মুনাজাত বিরোধীদের বক্তব্য
হলো- সম্মিলিতভাবে ফরজ নামাযের পর মুনাজাতের পক্ষে সহীহ্ ফে’লী পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত নেই, কাজেই এটা বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্।
তাদের
উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমেই বলতে হয় যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার পক্ষে
কোন সহীহ্ ফে’লী হাদীছ শরীফ বর্ণিত নেই এটা সত্য কথা, তবে জঈফ হাদীছ শরীফ তো রয়েছে।
যেমন মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বায় উল্লেখ রয়েছে,
عن
الاسود العامرى عن ابيه قال صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر- فلما سلم
انصرف ورفع يديه ودعا.
অর্থঃ- “হযরত
আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি উনার পিতা হতে বর্ণনা
করেন। উনার পিতা বলেন- আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ফজর নামায পড়লাম। যখন তিনি নামাযের সালাম ফিরালেন, ঘুরে
বসলেন এবং উভয় হাত মোবারক উঠিয়ে মুনাজাত করলেন।”
উক্ত পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যে সমস্ত বিষয় রয়েছে তাহলো- হযরত আসওয়াদ আমীরী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা, তিনি বলেছেন,
صليت الفجر
অর্থঃ- “আমি
ফরজ নামায পড়েছি।”
এর
দ্বারা ফরজ নামায সাবেত হলো, অন্য কোন নফল নামায এটা হতে “এস্তেছ্না” হলো।
দ্বিতীয়তঃ বলা হয়েছে। এটা হতে বুঝা গেল, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারি নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একা
ছিলেন না, কেননা মাসয়ালা হলো ইমামের সাথে মুক্তাদী যদি একজন হয়, তাহলে তো
মুক্তাদী ইমামের সাথে দাঁড়াবে। আর সাথে দাঁড়ালে তো হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সুতরাং
শব্দ দ্বারা বুঝা গেল,
জামায়াতে একাধিক মুক্তাদী ছিল, তাই তিনি
মুক্তাদীগণের দিকে মুখ মোবারক ফিরিয়ে বসেছেন। এখন
মুনাজাত বিরোধীরা এ প্রশ্ন করতে পারে, যদি অধিক সংখ্যক মুক্তাদীই থাকবে
তাহলে অপরাপর কেউ এ পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেননি কেন? আমরা এ
প্রশ্নের দু’টি উত্তর দেব। প্রথমতঃ হয়তো অন্য কেউ এ ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হননি, তাই
বর্ণনা করেননি। দ্বিতীয়তঃ কেন বর্ণনা করেননি, এটাই যদি মূখ্য হতো তবে খবরে
ওয়াহেদ প্রসঙ্গটা আসতো না। এ প্রসঙ্গে আমরা
انما الاعمال بالنيات
এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনাকে দলীল হিসেবে পেশ করবো। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ হযরত ওমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ব্যতীত অপর কেউ বর্ণনা করেননি। এটা স্মরণ রাখতে হবে যে, এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বর্ণনা করেছেন এক বিশেষ ঘটনা প্রসঙ্গে। যার দ্বারা বুঝা যায় যে, তখন নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত উমর
আলাইহিস সালাম তিনি ছাড়াও আরো অনেকে ছিলেন। কেননা এটা কোন ব্যক্তিগত প্রশ্নের
উত্তর ছিলনা। তাছাড়া সমস্ত ব্যাপারে সমস্ত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুগণ উনাদের বর্ণনা নেই বলেই হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ
উনাদের পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার তারতম্য দেখা যায়। যেমন হযরত আবু হুরায়রা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, ৫৩৭৪টি পবিত্র হাদীছ শরীফ, অপরদিকে
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আজীবনের সাথী হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেছেন মাত্র ১৪২টি পবিত্র
হাদীছ শরীফ। এ তারতম্য কেন?
এর অর্থ সকলেই সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেননি।
সুতরাং এ ব্যাপারে মুনাজাত বিরোধীদের বক্তব্য সম্পূর্ণই অযৌক্তিক প্রমাণিত হলো। অতএব মূলকথা হলো- উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ
শরীফখানা যদিও জঈফ,
তবে আমাদের হানাফী মাযহাবের সকল ইমামগণের সর্বসম্মত মত হলো-
জঈফ হাদীছ শরীফ মোস্তাহাব প্রমাণের জন্য যথেষ্ট এবং তা ফযীলতের জন্য আমল করাও
জায়েয। বিশ্ববিখ্যাত ফক্বীহ্ ইমাম
ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, জঈফ হাদীছ শরীফ দ্বারা মোস্তাহাব
প্রমাণিত হয়। এবং জঈফ হাদীছ শরীফ ফযীলত অর্জন করার জন্য আমল করাও জায়েয, এ
সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়- হযরত ইমাম ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বলেন,
الضعيف
غير الموضوع يعمل به فى فضائل الاعمال. (فتح القدير)
অর্থঃ- “জঈফ
হাদীছ যা মওজু নয়,
তা ফযীলত অর্জনের জন্য আমল করা জায়েয।” (ফতহুল ক্বাদীর) বিশ্ববিখ্যাত
মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ্ হযরত ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
الضعيف
يعمل به فى فضائل الا عمال اتفاقا. (الموضوعة الكبير صفه ১০৮)
অর্থঃ- “সকলেই একমত যে, জঈফ
হাদীছ শরীফ ফযীলত হাছিল করার জন্য আমল করা জায়েয আছে।” (আল
মওজুআতুল কাবীর পৃঃ ১০৮)
শুধু
তাই নয়, জঈফ হাদীছ শরীফ যদি বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণনা করা হয়, তাহলে তা
হাসান লি গায়রিহির দরজায় পৌঁছে যায় এবং এটা তখন আহ্কাম ও আক্বাইদের দলীল হিসেবে
গ্রহণযোগ্য হবে।
এ
প্রসঙ্গে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন,
ويعمل
با لضعيف ايضافى الاحكام اذا كان فيه احتياط. (تدريب الراوى صفه ২৯৯)
অর্থঃ- জঈফ হাদীছ শরীফ আহকামের
জন্য গ্রহণযোগ্য,
যখন ওতে সাবধানতা অবলম্বন করা হবে অর্থাৎ যখন হাসান লি
গায়রিহি হবে। (তাদরীবুর রাবী, ২৯৯ পৃষ্ঠা)
এমনকি
যেক্ষেত্রে জঈফ হাদীছ শরীফ পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ক্বিয়াস
হালাল নয়। আর তাই ইমামগণ প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত রায়ের উপর জঈফ হাদীছ শরীকে
প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন হযরত ইমাম আবু হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
قال
ابو خيفة- الخبر الضعيف عن رسول الله صلى الله عليه وسلم اولى من القياس، ولا يحل
القياس مع موجوده. (مقدمةء اعلاء السنن -৫৯
অর্থঃ- “নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত পবিত্র
হাদীছ শরীফ, যদিও তা রাবীদের কারণে জঈফ হয়, ওটা ক্বিয়াস হতে উত্তম।
যেক্ষেত্রে জঈফ হাদীছ শরীফ পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ক্বিয়াস
হালাল নয়।” (মুকাদ্দিমায়ে ইলাউস সুনাস, পৃঃ ৫৯)
এখানে
উল্লেখ্য যে, ক্বিয়াসকে জঈফ হাদীছ শরীফের উপর প্রাধান্য দেয়া তো দূরের কথা, হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের কথার উপরও ক্বিয়াসকে প্রাধান্য দেয়া
যাবে না। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল ফাত্তাহ্
রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,
قال
عبد الفتاح- بل اختلف ساداتنا الحنفية فيما اذا تعارض قول الصحابى والقياس فايما
يقدم؟ قال فخرا الاسلام البزدوى اقوال الصحابة مقده على القياس. (اعلاءالسئن صفه ৫৯)
অর্থঃ- “হানাফীগণের
মধ্যে এ ব্যাপারে ইখতিলাফ রয়েছে যে, যদি হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ক্বাওল ও ক্বিয়াসের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে
কোনটা প্রাধান্য পাবে?
এর জবাবে হযরত ফখরুল ইসলাম বাযদুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ক্বাওলই প্রাধান্য পাবে।” (মুকাদ্দিমায়ে ইলাউস সুনান, পৃঃ ৫৯)
উল্লেখিত
আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, জঈফ হাদীছ শরীফসমূহ শরীয়তে অবশ্যই
গ্রহনযোগ্য এবং তা ফযীলত হাসিল করার জন্য আমল করাও জায়েয। সুতরাং হযরত আসওয়াদ
আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে ফযীলত
অর্জনের লক্ষ্যে,
ফরজ নামাযের পর
মুনাজাত করা জায়েয ও মোস্তাহাব প্রমাণিত হয়। তাছাড়াও কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে
রদ বা খন্ডন করতে হলে অন্ততঃপক্ষে তার বিপরীতে এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সমকক্ষ
কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ পেশ করতে হবে। মুনাজাত বিরোধীগণ পারবেন কি? হযরত
আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
হতে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ন্যায় এমন একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ পেশ করতে, যাতে ফরজ
নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে নিষেধ করা হয়েছে? জঈফ
হাদীছ শরীফতো দূরের কথা,
মওজু হাদীছও পেশ করতে পারবেন না। যদি তাই না পারেন, তবে কি
করে বলেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্? সুতরাং
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই বুঝা গেল যে, জঈফ হাদীছ শরীফ মোস্তাহাব প্রমাণ
করার জন্য যথেষ্ট এবং ফযীলত হাসিলের জন্য জঈফ হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল করাও জায়েয।
কাজেই ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা মোস্তাহাব ও জায়েয, বিদয়াত
মোটেও নয়। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ফরজ নামাযের পর
সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে নিষেধ করা হয়েছে, এরূপ কোন মওজু হাদীছ মুনাজাত
বিরোধীগণ একটিও পেশ করতে পারবেন না। (যদিও মওজু হাদীছ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়)। বরং
মুনাজাতের পক্ষেই শতশত প্রমাণ রয়েছে। তাহলে এটা বিদয়াত হলো কি করে? কারণ বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ তো তাকেই বলে,
যা দ্বীনের সামান্যতম ক্ষতিও করে থাকে। উক্ত মুনাজাতের
কারণে দ্বীনের কি ক্ষতি হলো? বরং দ্বীনের সাহায্যকারীই বটে। মূলতঃ মুনাজাত বিরোধীদের এ
বক্তব্য মনগড়া, বানোয়াট ও মিথ্যা বৈ কিছুই নয়। এক্ষেত্রে মুনাজাত বিরোধীগণ বলে থাকেন যে, হযরত
আসওয়াদ আমেরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
হতে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা প্রমাণিত হয়না।
কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শব্দগুলো একবচনে ব্যবহৃত হয়েছে। কাজেই এর দ্বারা নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুগণের মুনাজাত করা বুঝায় না। আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সর্বক্ষেত্রে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ
করতেন না, অনুরূপ এখানেও করেননি। যদি অনুসরণ করতেন, তবে তা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে উল্লেখ থাকতো। মুনাজাত
বিরোধীদের উক্ত বক্তব্যের জবাব হলো- হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুগণ অনেকক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করেননি একথা
সম্পূর্ণই অজ্ঞতাপ্রসূত। কারণ সর্বক্ষেত্রেই ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুগণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
অনুসরণ করেছেন। তবে যেক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
সাল্লাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পক্ষ হতে কোন বিষয়ে অনুসরণ না করার নির্দেশ রয়েছে, তা
ব্যতীত সকলক্ষেত্রেই অনুসরণ করতেন। তবে নিষেধকৃত বিষয় আমল না করাটাও
অনুসরণ-অনুকরণের অন্তর্ভূক্ত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
রয়েছে, একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জুতা মুবারকসহ মসজিদে নামায
পড়ছিলেন, এমন সময় হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম তিনি এসে বললেন, “ইয়া
রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার জুতা মোবারক উনার মধ্যে
নাপাকি রয়েছে।” তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
জুতা মোবারক খুলে ফেললেন। সাথে সাথে উপস্থিত সকল হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণও জুতা খুলে ফেললেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “এ হুকুম
তোমাদের জন্য নয়,
এটা আমার জন্যে খাস।” এখানে আরো উল্লেখ্য যে,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যা করতে দেখতেন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণও তাই করতেন। আর যা বর্জন করতেন, উনারাও
তাই বর্জন করতেন,
কখনো কি ও কেন প্রশ্ন করতেন না। যেমন- হযরত ইমাম বুখারী
রহমতুল্লাহি আলাইহি,
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে
বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি
স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতেন, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ উনারাও স্বর্ণের আংটি বানিয়ে ব্যবহার করা শুরু করলেন। যখন স্বর্ণ ব্যবহার
পুরুষের জন্য সম্পূর্ণ হারাম হওয়ার কারণে নূরে
মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আংটিটি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন
এবং বললেন, “আমি আর কখনও এটা ব্যবহার করবো না।” তখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারাও সকলেই উনাদের আংটিগুলো খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।
এটাই ছিল হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণের নমুনা। এরকম হাজারো লাখো ঘটনার
দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সর্ব
ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন। কেবলমাত্র যেসব
ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে,
ঐ নিষেধ মানাও অনুসরণ-অনুকরণের অন্তর্ভূক্ত।
কাজেই
মুনাজাত বিরোধীরা কি এরকম একটি ঘটনাও দেখাতে পারবেন, যেখানে নিষেধাজ্ঞা ব্যতীত হযরত
ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ করেননি বা মুনাজাতে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে হাত উঠাতে নিষেধ করেছেন?
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে হুকুম না দেয়া সত্বেও নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণের লক্ষ্যে সকলেই
জুতা ও আংটি মোবারক খুলে ফেললেন। এটাই যদি হতে পারে, তবে যেখানে ফরজ নামাযের পর দোয়া
কবুল হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এবং সম্মিলিতভাবে দোয়া কবুল হয় বলে সহীহ্ ক্বাওলী পবিত্র
হাদীছ শরীফ রয়েছে এবং যেখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং হাত মোবারক উঠালেন, সেখানে উপস্থিত হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা হাত উঠাননি এরূপ ধারণা তারাই করতে পারে- যাদের, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে কতটুকু অনুসরণ-অনুকরণ করতেন, সে
সম্পর্কে মোটেও ইলম নেই এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের মান-মর্যাদা সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ ও
মূর্খ।
কাজেই পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার ইবারত দ্বারা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের হাত না
উঠানো যতটুকু প্রমাণিত হয়,
তার চেয়ে বেশী প্রমাণিত হয় হাত উঠানোর। কারণ পবিত্র পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বলা হয়নি যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাত মোবারক উঠালেন কিন্তু আমরা
হাত উঠাইনি। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ যে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ অনুকরণ করতেন, নিম্নে
তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হলো-
(১) রোম সম্রাট একবার তার এক দূতকে পাঠালেন পবিত্র
মদীনা শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য। দূত সাক্ষাত করে
ফিরে গিয়ে বললেন- হে সম্রাট! উনারা এমন এক জাতি, উনাদের
সাথে যুদ্ধ করে কখনো জয়লাভ করা সম্ভব নয়। কারণ উনারা উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কল্পণাতীতভাবে
অনুসরণ-অনুকরণ, তা’যীম-তাকরীম করেন। উনাদেরকে যদি বলা হয় আগুণে ঝাঁপ দেয়ার জন্যে, উনারা
তৎক্ষণাৎ আগুণে ঝাপ দেয়ার জন্য প্রস্তুত। উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুখ মোবারক থেকে থুথু ফেলার সাথে সাথে
উনারা সেটা ধরে খেয়ে ফেলেন। ওযুর কুলি করা পানি মাটিতে পড়ার পূর্বেই সেটাকে শরীরে
মেখে ফেলেন।
(২) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর আলাইহাস
সালাম তিনি মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওফাত মুবারক গ্রহণ করার পর একদিন এক রাস্তা
দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হঠাৎ করে মাথাটা নিচু করে দিলেন। ওনার সঙ্গি-সাথীগণ
বললেন, হুযূর! আপনি মাথা নিচু করলেন কেন? এখানে মাথা নিচু করার তো কোন কারণ
দেখছিনা। তখন হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “আমি মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এ রাস্তা দিয়ে একদিন সফরে যাচ্ছিলাম। সফরে যাওয়ার পথে ঠিক এ
জায়গায় একটি গাছ ছিল,
গাছের একটি ডালা নিচু হয়ে রাস্তার উপর দিয়ে গিয়েছিল। নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা
মোবারকের সাথে ডালাটি লাগার সম্ভবনা থাকায়, তিনি মাথা মোবারক নিচু করে ডালাটি
অতিক্রম করেছিলেন। যদিও এখন সেই ডালাটি নেই, তথাপি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
অনুসরণের লক্ষ্যে আমি আমার মাথা নিচু করে দিলাম। (সুব্হানাল্লাহ্)
(৩) হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রথমে কদু খাওয়া
পছন্দ করতেন না। একদিন তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এক দর্জি ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
বাড়ীতে দাওয়াত খেতে গেলেন। সেখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে এক পেয়ালা কদু মিশ্রিত গোশ্তের তরকারী দেওয়া হলো।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সে
পেয়ালা মুবারক হতে কদুর টুকরোগুলো বেছে বেছে খাচ্ছিলেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এভাবে কদু
খেতে দেখে, তখন হতে কদুর প্রতি আমার মহব্বত পয়দা হয়ে গেল। আমি জীবনে যতদিন হায়াত পেয়েছি, সবসময় কদু খাওয়ার চেষ্টা করতাম।
কাজেই
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে কতটুকু
অনুসরণ-অনুকরণ, তা’যীম-তাকরীম করতেন,
তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
সুতরাং
উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, ফরজ
নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা মোস্তাহাব। যেহেতু এটা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফে’ল (আমল)
দ্বারা প্রমাণিত। (অসমাপ্ত)