তাহাজ্জুদ
নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া
[গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ]
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন
উনার এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে গবেষণা
কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে “মাসিক আল
বাইয়্যিনাত” প্রত্রিকায় যথাক্রমে টুপি, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুময়ার নামায ফরজে আইন ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া,
মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী
এবং “কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয়” সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর
অষ্টম ফতওয়া হিসাবে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ
পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
গত রমযান
মাসেও আমরা “তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী” শিরোনামে সংক্ষিপ্তভাবে একটি
হ্যান্ডবিল প্রকাশ করেছিলাম, তাতে বিস্তারিতভাবে সব কিছুর বর্ণনা ও দলীল দেয়ার অবকাশ না
থাকায় এবং অনেক স্থানে রমযানে প্রথম থেকেই তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া জারী
হওয়ায় অনেকের পক্ষে বা স্থানে হঠাৎ করে তাহাজ্জুদের নামায জামায়াতে পড়া বন্ধ করা
বা বাদ দিতে সংকোচ দেখা দেয়ায়। (কেননা আমাদের উদ্দেশ ও লক্ষ্য কোন ব্যক্তি, সমাজ, গোষ্ঠি
বা রাষ্ট্রকে বেকায়দায় ফেলা বা বিভ্রান্ত করা অথবা লজ্জা দিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করা
নয় বরং আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সকলে যেন হিদায়েত পায় অর্থাৎ ছহীহ বুঝ ও
সমঝের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার মতে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথ মুবারক-এ চলতে পারে)।
আমরা
উপরোক্ত সকল দিক বিবেচনা করে রমযান মাসের পূর্বে বিস্তারিত বর্ণনা ও দলীল-আদিল্লার
মাধ্যমে এই ফতওয়া প্রকাশ করলাম। যেহেতু বেশিরভাগ স্থানে পবিত্র রমযান মাসেই
শুধুমাত্র তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া হয়। কাজেই
সকলে যেন পবিত্র রমযান মাস উনার পূর্বেই এ সম্বন্ধে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন।
কেননা আমরা যে ফতওয়াই প্রকাশ করি না কেন, সবগুলিই শরঈ দলীলের ভিত্তিতে এবং
বিশেষভাবে হানাফী মাযহাব মোতাবেক প্রকাশ করা হয়, এ সম্পর্কে যদি কারো দ্বিমত থাকে, তবে তাকে
আমরা তা দলীলের মাধ্যমে খণ্ডানোর আহ্বান জানাই এবং শরীয়ত মোতাবেক যার দলীল বেশি
শক্তিশালী বলে বিবেচিত হবে,
সেটাই সকলে মানতে বাধ্য থাকবে যা ইসলামী বিধান। অথচ তা না
করে ফিৎনা-ফাসাদ,
মারামারী, কাটাকাটী করে কোন কিছু ফয়সালা সম্ভব নয়, আজ তাই
দেখা যায়, দলীলের মাধ্যমে না পারলে বা দুনিয়াবী স্বার্থহানী হলে গলাবাজী বা গায়ের জোর
খাটাতে যা সম্পূর্ণ হারাম,
নাজায়িয। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ শুকরিয়া যে, আজ পর্যন্ত
আমরা শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা
শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের ভিত্তিতে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লা উনার মাধ্যমে যে
সমস্ত ফতওয়া প্রকাশ করেছি বা আমাদের পত্রিকায় ও আমাদের রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ওয়াজ মাহফিলে যে সমস্ত সুওয়াল-জাওয়াব
দেয়া হয়েছে, তার কোনটিই কারো পক্ষে খন্ডন সম্ভব হয়নি এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও সম্ভব হবে
না।
তাহাজ্জুদ
নামায জামায়াতে পড়ার আহ্কাম :
মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল
আলামীন উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান,
وما
اتاكم الرسول فخذوه وما نهى كم عنه فا نتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ- “আখিরী
রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে
এসেছেন, তা আঁকড়িয়ে ধরো এবং যার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তার থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহ পাক
উনাকে ভয় করো, নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দানকারী।”
কাজেই
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এটা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, কোন
মুসলমান মনগড়া কোন আমল করতে পারবেনা, তার মাথার তালু হতে পায়ের তলা
পর্যন্ত, হায়াত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাকে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস
শরীফ উনাদের অনুযায়ী আমল করার কোশেশ করে যেতে হবে, এর বাইরে এক কদমও ফেলা তার জন্য
জায়েয হবে না। কারণ, আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার অনুসারীদের মূল ভিত্তি
বা দলীলই হলো উপরোক্ত চারটি।
সুতরাং
পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা
শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে যা রয়েছে তাই আমল
করতে হবে ও বলতে হবে,
যা নেই তা আমল করা যাবে না, বলাও যাবে না অর্থাৎ ইসলামী শরীয়ত
উনার দৃষ্টিতে পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার বিপরীত কোন আমল বাড়ানোও
যাবে না, কমানোও যাবে না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
عن
انس بن مالك رضى الله عنه قال- جاء ثلائة رهط الى ازواج النبى صلى الله عليه وسلم-
يسئلون عن عبادة النبى صلى الله عليه وسلم- فلما اخبروا بها كانهم تقالواها.
فقالوا اين نحن من النبى صلى الله عليه وسلم وقد غفرالله له ما تقدم من ذنيه وما
تأخرا فقال احدهم اما انا فا صلى الليل ابدا، وقال الاخر انا اصوم الدهر ولا افطر،
وقال الاخر انا اعتزل النساء فلا اتزوج ابدا فجاء النبى صلى الله عليه وسلم اليهم
فقال- انتم الذين قلتم كذا وكذا؟ اما والله انى لا خشا كم لله واتقاكم له لكنى
اصوم رافطر واصلى وارقد راتزج النساء. فقال النبى صلى الله عليه وسلم ذالك من
سنتى. فمن رغب عن سنتى فليس منى. (مشكوت شريف)
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে
মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
তিনজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আসলেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন।
তাদেরকে যখন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আমল-ইবাদত মুবারক সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হলো, তখন
উনারা নিজেদের আমলগুলো কম মনে করলেন এবং বললেন মহান আল্লাহ্ পাক উনার, মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদের পূর্বের ও পরের সমস্ত গুনাহ খাতা ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদের
মধ্যে একজন বললেন,
আমি সারারাত্র নামায পড়ব একটুও ঘুমাব না। আরেকজন বললেন, আমি সারা
বৎসর রোজা রাখবো একদিনও ভাঙ্গব না। আরেক জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বললেন,
আমি বিয়ে-শাদী করবনা, স্ত্রীদের নিকট যাব না। এমন সময়
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের নিকট এসে উপস্থিত হন এবং বলেন, (হে হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) আপনারাই কি এরূপ কথা বলেছেন যে, সারারাত্র
নামায পড়বেন, সারাজীবন রোজা রাখবেন এবং বিবাহ করবেননা। তখন উনারা বললেন, হ্যাঁ
আমরা এগুলো বলেছি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
সাবধান! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি
আপনাদের চেয়ে সব চাইতে বেশী মহান আল্লাহ পাক উনাকে বেশী ভয় করি এবং আপনাদের চেয়ে আমি বেশী মুত্তাকী
পরহেযগার। তথাপি আমি রাত্রে নামায পড়ি, আবার ঘুমাই, রোজা
রাখি ও ভঙ্গ করি এবং আমি বিবাহ করেছি। এটাই আমার সুন্নাত মুবারক, সুতরাং
যে আমার সুন্নাহ মুবারক হতে ফিরে যাবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। (মিশকাত
শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে তাফরীত এবং ইফরাত অর্থাৎ বাড়ানো ও কমানোর অধিকার কাউকে
দেয়া হয়নি। কাজেই আমাদের কোন আমল করতে হলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার আদর্শের ভিত্তিতে করতে হবে, কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলাদের
জন্য ওয়াজিব।
এ
প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে,
قل اطيعو الله واطيعوا الرسول.
অর্থঃ- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন,
তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের (ইতায়াত) অনুসরণ কর।”
আর
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لايؤمن احدكم حتى يكون هواء طبع لما جنت به.
অর্থঃ- “তোমরা
ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের নফস
(প্রবৃত্তিকে) আমি যে আদর্শ (শরীয়ত) নিয়ে এসেছি তার অনুগত না করবে”।
অন্য
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
لا
يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين.
অর্থঃ- “তোমরা
আমাকে (হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে) যতক্ষণ পর্যন্ত
তোমাদের পিতা-মাতা,
ছেলে-সন্তান এবং অন্য হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, এমনকি
তোমাদের ধন-সম্পদ,
জীবন (জান-মাল) ইত্যাদি সব কিছু থেকে বেশী মহব্বত করতে না
পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ মো’মেন হতে পারবেনা।”
কাজেই
আমাদেরকে সর্ববস্থায় সর্বকাজে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতকে প্রাধান্য দিতে হবে। আর নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতের দাবি ঐ
ব্যক্তিই করতে পারে,
যে সুন্নত মুবারক উনার পূর্ণ অনুসরণ করে।
কেননা পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
من
احب سنتى فقد احبنى ومن احبنى كان معى فى جنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহব্বত
করলো, সে মূলতঃ আমাকেই মুহব্বত করলো। সুতরাং যে ব্যক্তি আমাকে মুহব্বত করবে, সে আমার
সাথে জান্নাতে থাকবে।”
উপরোক্ত পবিত্র
হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্ণ
অনুসরণ-অনুকরণকারী ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতী। আর আমরা মুসলমানগণ যত ইবাদত করে থাকি, তারও মূল
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো জান্নাত (যেহেতু জান্নাতে আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি)। অতএব, ইবাদতের
মাধ্যমে ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে যাওয়া যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ইবাদতগুলো
রসূলের সুন্নতের ভিত্তিতে না হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফ উনার
মধ্যে ইরশাদ করেন,
قل
انكنتم تحبون الله فاتبعونى يحبب كم الله ويغفر لكم ذنو بكم والله غفور رحيم.
অর্থঃ- “হে আমার হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার
ভালবাসা চাও, তবে আমার (রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) অনুসরণ-অনুকরণ কর, তবে মহান
আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করে দিবেন, মহান আল্লাহ
পাক তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
সুতরাং
উপরোক্ত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই
প্রতিয়মান হয় যে,
আমাদের ইবাদত, মোয়ামেলাত, মোয়াশেরাত, আক্বায়েদ, তাসাউফ
ইত্যাদিসহ প্রত্যেকটি আমল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নাহ শরীফ
অর্থাৎ আদর্শের ভিত্তিতে হতে হবে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ
শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী করতে হবে। এর বাইরে কোন কথা
বা আমল গ্রহণযোগ্য হবে না। অথচ আজকাল তথাকথিত কিছু নামধারী আলেম দুনিয়াবী কিছু
স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে অনেক নাজায়েয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াসহ হারাম কাজগুলোও
নির্দিধায় করে যাচ্ছে,
যার কারণে সাধারণ মু’মিন মুসলমানগণ আজ দিশেহারা, বিভ্রান্ত।
আর এ দিশেহারা, বিভ্রান্ত মানুষদেরকে সিরাতুল মোস্তাকীম দেখানোর লক্ষ্যে এবং দুনিয়ালোভী
উলামায়ে ‘ছূ’দের হাত হতে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান ও আমলকে হিফাজতের লক্ষ্যে মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ
শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রতিষ্টিত ও
পৃষ্ঠপোষকতায় ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এর ফতওয়া বিভাগ প্রতি সংখ্যায় অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য অসংখ্য
দলীল-আদীল্লার ভিত্তিতে একটি করে ফতওয়া প্রকাশ করে থাকে। যাতে করে সাধারণ
মুসলমানগণ সত্যকে জানতে ও উপলব্ধি করতে পারেন এবং দুনিয়ালোভী ওলামায়ে ‘ছূ’ যাদের
সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হুঁশিয়ারবাণী উচ্চারিত হয়েছে, তাদের
থেকে নিজের ঈমান ও আমলকে হিফাজত করতে পারেন। এই দুনিয়া লোভী উলামায়ে ‘সূ’ সব সময়ই
ছিল এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তাদের উদ্দেশ্য হলো দুনিয়ার ধন-সম্পদ অর্জন করা, যার
কারণে দেখা যায় তারা দুনিয়ার সামান্য কিছু সম্পদের জন্য হারামকে হালাল বলে এবং
হালালকে হারাম বলে থাকে এবং নাজায়েয বিদয়াত ও শরীয়ত বিরোধী কাজগুলোও তারা নিজে
করতে ও অপরকে করাতে কুক্তাবোধ করে না।
আর এ
সমস্ত দুনিয়ালোভী উলামায়ে ‘সূ’দের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়,
صنفان
من امتى اذا صلحوا صلحوا الناس. اذا فسدوا فسد وا الناس الامراء والفقهاء.
অর্থঃ- “আমার
উম্মতের মধ্যে দুই দল,
তারা যদি ঠিক থাকে তবে আমার উম্মতরাও ঠিক থাকবে। আর তারা
যদি বিভ্রান্ত হয়ে যায়,
তবে আমার উম্মতরাও বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। একদল হলো রাজা-বাদশা, দ্বিতীয়
দল হলো আলেম সম্প্রদায়”।
কারণ
রাজা-বাদশারা যেভাবে দেশ পরিচালনা করবে, জনগণ সেভাবেই সাধারণতঃ চলবে। আর
যারা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর জ্ঞান হতে বঞ্ছিত, তারা
সাধারণতঃ আলেমদের অনুসরণ করে থাকে। তাই দেখা যায় কোন আলেম যখন শরীয়ত বিরোধী কোন
কাজ করে, তখন সাধারণ মানুষ মনে করে থাকে আলেম সাহেব যেহেতু এ কাজটি করেছেন, সেহেতু
এটা জায়েযই হবে, তখন তারাও সেই কাজটি করা শুরু করে দেয়।
মূলতঃ
আলেমদের উসীলায় মানুষ হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। আবার সেই আলেমদের উসীলায়ই মানুষ গোমরাহে
নিপতিত হয়। অর্থাৎ যারা ওলামায়ে হক্ব তাদের উসীলায় মানুষ হক্ব পথ খুঁজে পায়, আর যারা উলামায়ে
‘সূ’ দুনিয়ালোভী আলেম,
তারা মানুষদেরকে গোমরাহীর দিকে ঠেলে দেয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
উল্লেখ করা হয়, একদিন এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বললেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কারা? নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
ان خير الخيار خيار العلماء.
অর্থঃ- “মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো
ওলামায়ে হক্ব। অর্থাৎ হক্বানী আলিমগণ।” সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, মানুষের
মধ্যে নিকৃষ্ট কারা?
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
ان شر الشرار شرا رالعلماء.
অর্থঃ- “মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট হলো
ওলামায়ে ‘ছূ’ অর্থাৎ দুনিয়ালোভী আলেমরা।” (নাউযুবিল্লাহ্)
উপরোক্ত
হাদীছ শরীফ হতে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, আলিম দুই প্রকার- উলামায়ে হক্ব ও
উলামায়ে ‘সূ’। উলামায়ে হক্ব তারাই যারা ঈমান ও আমল রক্ষার জন্য দুনিয়ার সকল কিছু ত্যাগ
করতে প্রস্তুত, এমনকি নিজের জান দিতেও প্রস্তুত।
আর
ওলামায়ে ‘সূ’ তারাই, যারা দুনিয়া হাছিলের লক্ষ্যে নিজের ঈমান-আমল বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।
কাজেই
আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে,
আমরা উলামায়ে হক্বদের অনুসরণ করছি না উলামায়ে ‘সূ’দের
অনুসরণ করছি। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
انظروا عمن تأخذون دينكم. (ترمذى شريف)
অর্থঃ- “তোমরা লক্ষ্য করে দেখ, কার নিকট
হতে তোমরা দ্বীন (নসীহত) গ্রহণ করছ”। (তিরমিযি শরীফ)
কাজেই
প্রথমে আমাদের আলেম চিনতে হবে, তারপর তিনি যদি হক্বানী আলেম হন, তবেই
উনার ওয়াজ শুনা যাবে,
উনার হাতে বাইয়্যাত হওয়া যাবে এবং উনাকে অনুসরণ করা যাবে।
এখন পবিত্র
কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে কোন ব্যক্তি হক্বানী আলেম এবং কোন
ব্যক্তি দুনিয়াদার আলেম,
সেটা আমাদের জানতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ্
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক ফরমান,
انما يخش الله من عبأده العلماء.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মহান
আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করে”।
এ পবিত্র
আয়াত শরীফ উনার তাফসীর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি
আলাইহিমম উনাকে। তিনি এর তাফসীর মুবারক করে বলেন, “যার ভিতর যতবেশী খোদাভীতি থাকবে, সে
ব্যক্তি ততবড় আলেম”। সুবাহানাল্লাহ!
আলেমদের
মধ্যে যেহেতু খোদাভীতি রয়েছে, সেহেতু তাদের পক্ষে কোন প্রকার পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ
শরীফ বিরোধী কাজ করা সম্ভব নয়। সুতরাং যারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ
শরীফ উনার উপর প্রতিষ্ঠিত,
তারাই হক্বানী আলেম। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
উল্লেখ করা হয়, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত কা’ব ইবনে
আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাকে প্রশ্ন করেছিলেন,
ومن ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون.
অর্থঃ-
আলেম কে? তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ইলম অনুযায়ী আমল করে, সে ব্যক্তিই আলেম”। অর্থাৎ
যারা ইলম (অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা
ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ) অনুযায়ী আমল করবে, সে ব্যক্তিই আলেমে হক্ব। আর এর
বিপরীত যারা করবে,
তারা উলামায়ে ‘সূ’ (দুনিয়াদার আলেম)।
হক্বানী
আলেম উনাদের আরো একটি লক্ষণ হলো- উনারা কখনো ভুলের উপর কায়েম থাকবে না। কারণ মানুষ
মাত্রই ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। যেমন বলা হয়,
ان الانسان مر كب من الخطاء والتسيان.
অর্থঃ- “মানুষ
ভুল-ক্রটি যুক্ত”।
এখন কোন ব্যক্তি হয়তো
অজ্ঞতাবশতঃ কোন ভুল করে ফেললো অন্য কেউ তার ভুল ধরিয়ে দেয়ার সাথে সাথে যদি সে তা
মেনে নেয এবং ভুল সংশোধন করে নেয়, বুঝতে হবে লোকটি হক্কানী। কেননা এক মুসলমানের ভুল আরেক
মুসলমান ধরিয়ে দেয়া তার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
المؤ من مرأة المؤمن.
অর্থঃ- “এক মু’মিন আরেক
মু’মিনের আয়নাস্বরূপ”। আমরা গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া
জামিয়া শরীফ উনার পক্ষ হতে উপরোক্ত কর্তব্য যথাযথ পালনের লক্ষ্যে সমাজের মধ্যে যে
সকল হারাম নাজায়েয,
বিদয়াত, কুফরী, শেরেকী কাজগুলো প্রচলিত রয়েছে, অকাট্য ও
নির্ভরযোগ্য দলীলের মাধ্যমে তার মূলোৎপাটন করে ছহীহ্ ও সঠিক ফতওয়া প্রকাশ করে
থাকি। তাতে যদি একটি মানুষও সঠিক পথের সন্ধান পায় এবং হারাম, নাজায়েয, বিদয়াত, কুফরী, শেরেকী
ইত্যাদি কাজ হতে ফিরে যায়,
তাতেই আমাদের প্রচেষ্টা স্বার্থক হবে বলে আমরা আশা রাখি।
যাই হোক
এখন মূল আলোচনায় আসা যাক। আজাকাল কোন কোন স্থানে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়তে
দেখা যায়। বিশেষ করে রমযান মাসে বেশী দেখা যায়। অথচ আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া
অনুযায়ী তাহাজ্জুদ নামায ইমামের সহিত চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্
তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যেয়াহ্। চাই রমযান মাসে হোক অথবা গায়রে রমযানে, এর উপর
মুসলমানদের ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যেমন
কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
ولا
يصلى الوتر ولا التطوع بجماعة فى غير شهر رمضان اى يكره ذالك لوعلى سبيل التد اعى
و عليه اجماع المسلمين. (الجو هرة النيرة صله ১২৮)
অর্থঃ- “রমযান মাস ব্যতীত বিতর নামায ও
নফল নামায জামায়াতে পড়োনা কেননা ঘোষণা দিয়ে নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্
তাহরীমী এবং এটার উপর মুসলমানদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” (আলজাওহারাতুন
নাইয়্যারাহ্, পৃঃ ১২৮)
কেউ কেউ
বলে থাকে, উপরোক্ত ইবারতে এবং আরো অনেক ইবারতে রমযান মাস ছাড়া নফল নামায জামায়াতে
পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
কাজেই
কেউ যদি তাহাজ্জুদ নামায রমযান মাসে জামায়াতে পড়ে, তবে মাকরূহ্ হবে কেন?
এর জবাব
হলো- যারা একথা বলে থাকে,
তারা উপরোক্ত কিতাবের ইবারতের ব্যাখ্যা বুঝতে সক্ষম হননি।
কারণ রমযান মাসে যে নফল নামায জামায়াতে পড়া জায়েয বলা হয়েছে, তা হলো
তারাবীর নামায। এ প্রসঙ্গে কিতাবে
উল্লেখ করা হয়,
جن عبارت مین رمضان مین جماعت کے ساتھ تطوع، نفلں
اور قیام کے الفاظ ھین ان سے تراویح مراد ھے- (احسن الفتاوی ج 3، صلہ 474)
অর্থঃ- “যে সকল ইবারতে রমযান মাসে নফল
নামায মাকরূহ্ নয় বলে উল্লেখ আছে, উক্ত নফল নামাযের দ্বারা তারাবীহ্ নামাযকেই বুঝানো হয়েছে।” (আহ্সানুল
ফতওয়া, ৩য় জিঃ পৃঃ ৪৭৪)
উ ক্ত
কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়,
اسلئے کہ بجز تراویح کے
دوسرے نوافل کی جمعات رمضان مین حضرات صحابہء کرام رضی اللہ عنہ اور تابعین و ائمہ
دین سے ثابت نھین بلکہ اسکے خلاف ترک جماعت پراجماع ھے.
অর্থঃ- “একারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা পবিত্র রমযান মাসে তারাবীহ্ ব্যতীত
অন্য কোন নফল নামায জামায়াতে আদায় করেননি। বরং রমযান মাসে তারাবীহ্ ব্যতীত
অন্যান্য নফল নামায নাজায়েয হওয়ার উপরই সকলে একমত।”
এখন কেউ
প্রশ্ন করতে পারেন,
তারাবীহ্ নামায তো নফল নয়, তাহলে তাতাওয়ায়া শব্দ দ্বারা
তারাবীহ্ কি করে বুঝা যায়?
এখানে
লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে,
সকল নামাযই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। ১. ফরয নামায, ২. নফল
নামায।
নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার জন্য কোন ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্বাদাহ্, সুন্নতে যায়েদাহ্, মোস্তাহাব
নামায ছিল না। ইমাম-মুজতাহিদগণ ইজতিহাদ করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নফল নামাযগুলো তাক্বীদ অনুযায়ী আমাদের জন্য কোনটা ওয়াজিব
যেমন- ঈদাইনের নামায,
কোনটা সুন্নতে মুয়াক্বাদাহ্ যেমন- তারাবীহ্, ফজরের
পূর্বের, জোহরের পূর্বের ও পরের,
মাগরিবের ও এশার পরের সুন্নত নামাযসমূহ। কোনটা সুন্নতে
যায়েদা যেমন- আছরের পূর্বের এবং এশার পূর্বের চার রাকায়াত সুন্নত নামায। কোনটা
মোস্তাহাব যেমন- আওয়াবীন,
চাশত, শব-ই-বরাত, শব-ই-ক্বদর ইত্যাদি ভাগে ভাগ করেছেন। তাই একমাত্র ফরয নামায
ব্যতীত সকল নামাযগুলোই মূলতঃ নফল নামাযের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু আহকামের দিক দিয়ে
কোনট ওয়াজিব, মুয়াক্বাদাহ,
যায়েদাহ, মুস্তাহাবের অন্তর্ভূক্ত।
স্বয়ং
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তারাবীহ্ নামাযকে (تطوع) নফল বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
جعل الله صيامه فريضة وقيام ليله تطوع.
(بيهقى شريف)
অর্থ “তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক
তিনি রমযানের রোযাকে ফরয করেছেন এবং ক্বিয়ামুল লাইলকে (অর্থাৎ তারাবীহ নামাযকে) নফল
(সুন্নতে মুয়াক্বাদাহ্) করেছেন।” (বায়হাক্বী শরীফ)
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, রমযান মাসে যে নফল নামায জামায়াতে
পড়ার আদেশ রয়েছে,
তা হলো তারাবীহ নামায। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত যে, ক্বিয়ামুল
লাইল অর্থ- তারাবীর নামায। যারা ক্বিয়ামুল লাইলকে তাহাজ্জুদ নামায বলে থাকেন, তাদের
কথা শুদ্ধ নয়। কেননা কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
حضرت
محدثین رحمۃ اللہ علیہھم کی اکثریت بھی قیام
للیل سے تراویح مراد لیتے ھین. (ھدایہ، فتح القدیر، مبسوط، بدائع، احسن الفتاوی)
অর্থঃ- “হযরত মুহাদ্দিছীন রহমতুল্লাহি
আলাইহিম উনাদের অধিকাংশই “ক্বিয়ামুল লাইল”
দ্বারা তারাবীহকে বুঝিয়েছেন”। (হেদায়া, ফতহুল ক্বাদির,
মাবছূত, বাদায়ে, আহসানুল ফতওয়া)
সুতরাং পবিত্র
রমযান মাসে যে নফল নামায জামায়াতে পড়া জায়েয বলা হয়, তাহলো তারাবীর নামায। সুতরাং
আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো- রমাযান মাসে তারাবীর নামায জামায়াতে পড়া
সুন্নতে মুয়াক্বায়ায়ে ক্বিফায়া, বিতির নামায রমযান মাসে জামায়াতে পড়া মোস্তাহাব, রমযানের
বাইরে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তানযীহী এবং সালাতুল কুসূফ (সূর্যগ্রহণ) সালাতুল
ইস্তেস্কা (বৃষ্টির) নামায রমযান মাসে হোক অথবা গায়রে রমযানে হোক জামায়াতে আদায়
করা সুন্নতে যায়েদাহ্।
উল্লেখিত
নফল নামাযগুলো জামায়াতে আদায় জায়েয ও শরীয়তসম্মত বরং সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং
তাহাজ্জুদ নামায,
চাশ্ত, আওয়াবীন, শব-ই-ক্বদর ও শব-ই-বরাত ইত্যাদি সকল নফল নামাযসমূহ জামায়াতে
আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ও বেদয়াতে সাইয়্যেয়াহ্। কেননা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে
তাবেয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদদের কেউ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ছেন বলে কোন প্রমাণ কেউ পেশ
করতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
قال
شيخ القاسم الحنفى- التنفل يجماعة مكروه لا نه لو كان مستحبا لكانت افضل كا
لمكتزبات- ولو كائت افضل لكان المتهجدون القا نمون بالليل يجتمعون فيصلون بجدون
القانمون بالليل يجتمعون فصلون بجماعة طلبا للفضيلة- فلما لميرو ذالك عن رسول الله
صلى الله عليه وسلم والصحابة رضوان الله عليهم اجمعين- (المبسوط للسر خسر. ج ২ صفه ১৪৪،
ما ثبت بالسنة صفه ৮৮.)
অর্থঃ- শায়খুল কাসেম হানাফী বলেন, “নফল
নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। কেননা যদি নফল নামায জামায়াতে পড়া মোস্তাহাব
ও ফযীলতের কারণ হতো,
তবে অবশ্যই যারা রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে থাকে, তারা
ফযীলত অর্জনের লক্ষ্যে একত্রিত হয়ে জামায়াতে আদায় করতেন। অথচ নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়েছেন বলে দেখা যায় না।” (মাবছূত
সারাখসী, মাছাবাতা বিসসুন্নাহ্)
সুতরাং
তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্
তাহরীমী ও বেদয়াতে সাইয়্যেয়াহ্।
অনেকে
মনে করেন যে, পবিত্র রমযান মাসে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করে অনেক ফযীলত হাছিল
করা যাবে, মূলতঃ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করলে ফযীলত তো পাওয়া যাবেই না বরং
সে গুণাহ্গার হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যেভাবে ইবাদত করার জন্য বলেছেন, তার
বিপরীত করে কিভাবে ফযীলতের আশা করা যায়? যেমন কেউ যদি মুসাফির অবস্থায় কছর
নামায দু’রাকায়াতের পরিবর্তে বেশী ফযীলত পাওয়ার জন্য চার রাকায়াত আদায় করে, তবে সে
কি ফযীলত অর্জন করতে পারবে?
কখনো নয় বরং তার কবীরাহ্ গুণাহ্ হবে এবং তার উক্ত নামায
দোহরানো ওয়াজিব হবে। কেননা সে মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুমের খেলাফ কাজ করলো। তেমনিভাবে
তাজাজ্জুদ তথা নফল নামায যেখানে হানাফী মাযহাব মোতাবেক ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে আদায়
করা মাকরূহ্ তাহরীমী ও বেদয়াতে সাইয়্যিয়াহ সেখানে এরূপ একটি বেদয়াত কাজ করে আমরা
কি করে ফযীলতের আশা করতে পারি। অথচ এরূপ বেদয়াত সম্পর্কেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বলেন,
كل
بدعة ضلالة كل ضلالة فى النار. (مشكوة شريف)
অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদয়াতই গুমরাহী এবং
প্রত্যেক গুমরাহই জাহান্নামী”। (মিশকাত শরীফ)
এখন কেউ
কেউ বলতে পারেন, অতীতে বা বর্তমানে অনেক পীর সাহেব, মুফতী সাহেব, মোফাচ্ছের
সাহেব, মোহাদ্দেস সাহেব,
মাওলানা সাহেব, হাফেজ সাহেব, ক্বারী
সাহেব, ওয়ায়েজ, ইসলামী চিন্তাবিদ,
ইসলামী রাজনৈতিক নেতা, আলেম, জালেম, সূফী, দরবেশ
প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ তাহাজ্জুদের নামায জামায়াতে পড়েছেন বা পড়তে বলেছেন, পড়েন বা
পড়তে বলেন, তাদের সম্পর্কে ফায়সালা কি?
মূলতঃ এর
জবাবে সংক্ষেপে এতটুকু বললেই চলে যে, সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত- কোন
ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোককে দলীল বা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে না, যতক্ষণ
পর্যন্ত না সে ব্যক্তি,
সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোক পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস উনাদের উপর কায়েম না থাকবে। অর্থাৎ যে কেউ সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম উনার খেদমত করলেই যে সে ইসলামের আদর্শ বা দলীল বলে গণ্য হবে, তা নয়।
যেখানে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া অসংখ্য, অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদীল্লার
ভিত্তিতে মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ প্রমাণিত। সেখানে বিনা দলীলে
এটাকে জায়েয বলা গুমরাহী ছাড়া কিছুই নয়।
সুতরাং
মোটকথা হলো- হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মুতাবিক তারাবীহ্, ইস্তেস্কা, কুসূফ
উনাদের নামায জামায়াতে পড়া জায়েয। আর তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামায জামায়াতে পড়া
মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্, যদি ইমাম ব্যতীত চারজন মুক্তাদী
হয়, ঘোষণা দিয়ে পড়ুক আর বিনা ঘোষণায় পড়ুক, কারণ ঘোষণা অর্থাৎ (بالتداعى) এর অর্থ হলো- ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদী ইক্তেদা করা, আর তিনজন
ইক্তেদা করার মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মাকরূহ্ হবে। কেউ কেউ বলেন, মাকরূহ্
হবে না। আর দু’একজন ইক্তেদা করলে মাকরূহ্ হবে না।
যে সকল
কিতাবে নফল নামায ও তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ বলে উল্লেখ রয়েছে, নিম্নে ফতওয়া ও ফিক্বাহের কিতাবসমূহ হতে তার নির্ভরযোগ্য ও
অকাট্য দলীল-আদীল্লা পেশ করা হলো-
(১-৫)
ولا
يصلى الوتر ولا التطوع بجماعة خارج رمضان اى يكره ذالك لو على سبيل التد اعى- ان
يقتدى اربعة بواحد- اما لو اتدى واحد او اثنان بوا حد لا يكره واذا اقتدى ثلثة
بواحد اختلف فيه. (ردالمحتار ج ১ صفه ৬৬৩، درالمختار، شامى ج১ صفه ৭৪১، غاية الاوطار ج১ صفه ২৫৭، القهستانى)
অর্থঃ- রমযান মাস ব্যতীত বিতর নামায ও নফল নামায
জামায়াতে পড় মাকরূহ্ তাহরীমী, যদি ইমাম ব্যতীত চারজন মুক্তাদী ইক্তেদা করে এবং ঘোষণা দিয়ে
করা হয়। আর যদি একজন অথবা দুইজন ইক্তেদা করে তবে কেউ কেউ বলেন মাকরূহ্, কেউ কেউ
বলেন মাকরূহ্ নয়। (অবশ্য চারজন মুক্তাদী হলে সর্বসম্মতিক্রমেই মাকরূহ্ তাহরীমী ) (রদ্দুল মোহতার ১ম জিঃ পৃঃ ৬৬৩, দুররুল মোখতার,
শামী ১ম জিঃ পৃ. ৭৪১, গায়াতুল
আওতার ১ম জিঃ পৃ ঃ২৫৭, আল কুহেস্তানী)
তাশরীহ : কেউ কেউ বলতে পারেন যে, এখানে রমযান মাসে নফল নামায জামায়াতে পড়তে নিষেধ করা হয়নি? এখানে
উল্লেখ্য যে, আমরা পূর্বেই অত্র ফতওয়ার ভূমিকায় দলীলসহকারে প্রমাণ করেছি যে, যে সকল
কিতাবসমূহে রমযান মাসে নফল নামায জামায়াতে পড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে, তা হলো-
তারাবীহ নামায। সুতরাং তাদের মূল বক্তব্য হলো, তারাবীহ্ নামায ব্যতীত রমযান
মাসেও কোন নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্
তাহরীমী।
মোটকথা আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো- তারাবীহ নামায
রমযান মাসে জামায়াতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্বাদায়ে কিফায়া এবং বিতর রমযান মাসে
জামায়াতে পড়া মোস্তাহাব,
গায়রে রমযানে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তানযীহী এবং এস্তেস্কা ও
কুসূফের (সূর্যগ্রহণ) নামায রমযান বা গায়রে রমাযান সব সময় জামায়াতের সাথে পড়া
সুন্নতে যায়েদার অন্তর্ভূক্ত। এটা ব্যতীত সকল নফল নামায যেমন- তাহাজ্জুদের নামায, শবে
ক্বদর, শবে বরাত, খূসুফ (চন্দ্রগ্রহণ) ইত্যাদি। ঘোষণা দিয়ে ইমাম ব্যতীত চারজন মুসল্লীসহ
জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ও বেদয়াতে সাইয়্যেয়াহ্। চাই রমযান মাসে হোক
অথবা রমযান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে হোক। এর উপর হানাফী মাযহাবের সকল ইমাম, মুজতাহিদগণ
একমত।
(৬-১০)
ان
التطوع يالجماعة اذا كان على سبيل التد اعى يكره- وفى الاصل للصدر الشهيد اما اذا
صلوا بجماعة يغير اذان واقامة فى نا حية المسجد لا يكره- رقال شمس الائمة الحلوانى
ان كان سوى الامام ثلائة لايكره بالاتفاق وفى الاربغ اختلف المشائخ والاصح انه
يكره. (فتاوى العالمكيريه ج১ صفه ৮৩،
خلاصة الفتاوى ج১ صفه ১৫৪،
بحرالرائق ج১ صفه ৩৪৫،
منحة الخالق ج১ صفه ৩৪৫،
شرح المنية)
অর্থঃ- “নিশ্চয়
ঘোষণা দিয়ে নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়া মাকরূহ্
তাহরীমী ।”
সদরুশ
শহীদ তার কিতাবুল আসলে উল্লেখ করেন যে, যদি আযান ও ইক্বামত ব্যতীত
মসজিদের কোন এক কোণায় নফল নামায জামায়াতে আদায় করে, তবে মাকরূহ্ হবে না।
এর
ব্যখ্যায় শামসুল আইম্মা (হালওয়ালী) রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, যদি ইমাম
ব্যতীত তিনজন মুক্তাদী হয়,
তবে সকলের মতে মাকরূহ্ হবে না। আর চারজনের বেলায় মাশায়েখদের
মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। তবে অধিক সহীহ মত হলো- ইমাম ব্যতীত চারজন মুক্তাদী হলে
মাকরূহ্ তাহরীমী হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জিঃ পৃঃ ৮৩, খোলাসাতুল
ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ১৫৪,
বাহরুর রায়েক ১ম জিঃ পৃঃ ৩৪৫, মিনহাতুল খালিক্ব ১ম জিঃ পৃঃ ৩৪৫, শরহে
মুনিয়া)
(১১-১২)
وقال
فى الاصل لا يصلى التطوع فى الجماعة ما خلاقيام رمضان وكسوف الثمس- (المبسو ط للسر
خى ج ২ صفه ৩৭،
كتاب الاصل المعروف بالميسوط ج ১ صفه ৩৭১)
অর্থঃ- কিতাবুল আসলে উল্লেখ রয়েছে, তারাবীহ্, কুসূফ
(সূর্য গ্রহণ)-এর নামায ব্যতীত নফল নামায জামায়াতে পড়োনা। (মাবসুত লিস সারাখসী ২য়
জিঃ পৃঃ ৩৭, কিতাবুল আসল ১ম জিঃ পৃঃ ৩৭১)
(১৩)
ولايصلى
التطوع بجماعة الافى شهر رمضان وعن شمس الائمة السرخسى ان التطوع بالجماعة ائما
يكره- اذا كان على سبيل التدا عى امالو اقتدى واحد بواحد او ائنان بواحذ لا يكره
واذا افتدى ثلاثة بواحد اختلف فيه- وان اقتدى اربعة بواحد كره اتفاقا. (الفتاوى
التاتار خانيه ج ১ صفه ৬৩৬)
অর্থঃ- রমযান মাস ব্যতীত (অর্থাৎ তারাবীহ্ নামায
ব্যতীত) নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়োনা, হযরত শামসূল আইম্মা সারাখসী
রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বর্ণনা করেন, নিশ্চয় নফল নামায জামায়াতে পড়া
মাকরূহ্ তাহরীমী, যখন
ঘোষণা দিয়ে পড়া হবে। সুতরাং যদি ইমামের সাথে একজন অথবা দু’জন
এক্তেদা করে, তবে মাকরূহ্ হবেনা,
তিনজন এক্তেদা করার মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, তবে
চারজন এক্তেদা করলে সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ্ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া ১ম
জিঃ পৃঃ ৬৩৬)
(১৪)
ولا
تصلى نافلة فى جماعة الا قيام رمضان وصلاة الكسوف. (بدائع الصنائع فى ترتيب
الشرائع ج১ صفه ২৮০)
অর্থঃ- তোমরা তারাবীহ্, কুসূফ
(সূর্য গ্রহণ)-এর নামায ব্যতীত কোন নফল নামায জামায়াতে পড়োনা। (বাদায়েউছ ছানায়ে ফি
তারতীবিশ শারায়ে ১ম জিঃ পৃঃ ২৮০)
(১৫-১৬)
فهل
تكره الصلوة فى التطوع جماعة ماخلاقيام رمضان وسلاة كسوف الشمس؟ قال نعم (كتابب
الاصل المغروف بالمبسوط ج১ صفه ৪৪৩،
فتح القدير ج১ صفه ৪৩৯)
অর্থঃ- তারাবীহ্, কুসূফ
(সূর্য গ্রহণ)-এর নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায জামায়াতে আদায় করা কি মাকরূহ্
তাহরীমী? মোসান্নেফ বলেন,
হ্যাঁ। (অর্থাৎ মাকরূহ্
তাহরীমী) (কিতাবুল আসল মারুফ বিল মাব্সূত ১ম জিঃ পৃঃ ৪৪৩, ফতহুল
ক্বাদীর ১ম জিঃ পৃঃ ৪৩৯)
(১৭)
والجماعة
فى النفل فى عبر شر نبح مكروهة فا لا حتياط تر كها فى الر تر خارج رمضان- وعن شمس
الائمة- ان هذا فبما كان على سبيلى التداعى- امالو اقتدى واحد بواحد او اثنان
بواحد لا يكره- واذا اقتدى اربعة بواحد كره اتفاقا. (حاشية الطحطاوى على مراقى
الفلاح صفه ২৫৬)
অর্থঃ- তারাবীহ্ ব্যতীত
নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। রমযান মাস ব্যতীত বিতর নামায জামায়াতে না
পড়াই উত্তম। শামসুল আইম্মা রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, নিশ্চয়
নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্। সুতরাং যদি একজন অথবা দু’জন
ইমামের সাথে ইক্তেদা করে,
তবে মাকরূহ্ হবে না। যখন চারজন ইক্তেদা করবে, তখন
সকলের নিকটে মাকরূহ্ তাহরীমী । (হাশিয়ায়ে
তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্ পৃঃ২৫৬)
(১৮)
ولا
يصلى الوتر ولا التطوع بجماعة فى غير شهر رمضان اى يكره ذالك لو على سبيل التد اعى
وعليه اجماع المسلمين. (الجوهرة النيرة شرح مختصر القدورى صفه ১২৮)
অর্থঃ- রমযান মাসের বিতর ও তারাবীহ্ ব্যতীত কোন
নফল নামায জামায়াতে পড়োনা,
কেননা ওটা মাকরূহ্ তাহরীমী
যদি ঘোষণা দিয়ে পড়া হয়। এটার উপর সকল মুসলমান একমত। (আল জাওহারাতুন
নাইয়্যারা পৃঃ১২৮)
(১৯-২২)
ولا
يصلى التطوع بجماعة الا فى شهر رسضان- وعن شمس الا ئمة السر خسى ان التطوع
بالجماعة انما يكره اذا كان على سبيل التداعى- امالو اقتدى ثلثة بواحد اختلف فيه
وان اقتدى اربعة بواحد كره اتفاقا. (خلاصة الفتاوى مع مجموعة الفتاوى ج১ صفه ১৫৩، عينى شرح هدايه ج১ صفه ৮৩৭، شرح النقاية لملا على قارى ج ১ صفه ২৪২، شرح الالياس)
অর্থঃ- রমযান মাস ব্যতীত
(অর্থাৎ তারাবীহ্ ব্যতীত) নফল নামায জামায়াতে পড়োনা। হযরত শামসুল আইম্মা সারাখসী
রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন,
নিশ্চয়ই নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। সুতরাং যদি ইমামের সাথে একজন অথবা দু’জন ইক্তেদা
করে, তবে মাকরূহ্ হবে না। যখন তিনজন ইক্তেদা করবে, তখন মাকরূহ্ হওয়ার মধ্যে মতভেদ
রয়েছে। আর যদি চারজন ইক্তেদা করে, তবে সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ্ তাহরীমী হবে। (খোলাসাতুল ফতওয়া
মায়া মাজমূয়াতুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ১৫৩, আইনী শরহে হেদায়া ২য় জিঃ পৃঃ ৮৩৭, শরহে
নেক্বায়া লি মোল্লা আলী ক্বারী ১ম জিঃ পৃঃ ২৪২, শরহে ইলিয়াস)
(২৩-২৪)
وقال
الحلبىرح- واعلم ان النفل بالجماعة على سبيل للاداعى مكروه- ماعدا التراويح- وسلوة
الكسوف والاستسقاء- فعلم ان كلامن الرغائب ليلة اول جمعة من رجب- وصلوة البرأة-
وصلاة العدر ليلة السبع والعشرين من رمضان با لدما عة بدعة مكروهة. (اشباه
والنظائر ج১ صغه ২১৯،
شرح المنية)
অর্থঃ- ইমাম হালাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন,
জেনে রাখ! নিশ্চয়ই নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া
মাকরূহ্ তাহরীমী,
তবে তারাবীহ্, সূর্য গ্রহণ (কুসূফ) ও ইস্তেস্কার
(বৃষ্টির) নামায ব্যতীত। সুতরাং সালাতুল রাগায়িব (অর্থাৎ রজব মাসের প্রথম জুময়ার
রাত্রের নামায), শবে বরাতের রাত্রের নফল নামায এবং শবে ক্বদরের রাত্রের নফল নামায জামায়াতে
পড়াও মাকরূহ্ তাহরীমী ও বেদয়াতে সাইয়্যেয়াহ্। (আশবাহ ওয়ান নাযায়ের ১ম জিঃ
পৃঃ২১৯, শরহুল মুনিয়া)
(২৫-২৮)
اذا
صلوا التراويح ثم اراد وا ان يصلوها ثانيا يصلون فرادى لا بجما عة- لان الثائية
تطوع مطلق والتطوع المطلق بجماعة مكروه. (فتاوى عالمكيريه ج১ صفه ১১৬، فتاوى تاتارخانيه، يدائح الصنائح ج১ صفه ২৯০، بحر الرائق ج ২ صفه ৬৮)
অর্থঃ- কেউ তারাবীহ্ আদায় করার পর যদি পুনরায় তারাবীহ নামায
আদায় করতে চায়, তবে জামায়াতে না পড়ে একাকি পড়বে, কেননা পুনরায় সে যেই নামায পড়বে
সেটা তার জন্য মূলতঃ নফল হবে, আর নফল নামায সাধারণতঃ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী । (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জিঃ পৃঃ ১১৬, তাতার খানিয়া,
বাদায়েউছ ছানায়ে ১ম জিঃ পৃঃ ২৯০, বাহ্রুর রায়েক ২য় জিঃ পৃঃ ৬৮)
(২৯)
لا
يقام شئ من التطوع بجماعة ما خلا التراويح فى رمضان وكسوف الشمس= (والا ستسقاء)
(فتاوى تاتار خانيه ج ২ صفه ৮৫)
অর্থঃ- তারাবীহ্, কুসূফ ও
ইস্তেস্কার নামায ব্যতীত কোন নফল নামায জামায়াতে পড়োনা। (তাতার খানিয়া ২য় জিঃ
পৃঃ ৮৫)
(৩০-৩১)
وقال
علامة الطحطاوىرح- الجماعة سنة عين الافى التراويح فا نها فيها سنة كفا يتو وتر
رمضان فا ئها فيه مستحبة واما ةتر غيره ةتطوعد فمكروهة فيهما على سبيل التداغى-
(طحطاوى صله ১৫৬، كتاب الغقه على مذاهب الاربعة ج১ صفه ৩৩৭)
অর্থঃ- ইমাম তাহতাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহিম তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত-এর ফরয নামায জামায়াতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্বাদা।
তারাবীহ জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্বাদায়ে কিফায়া। আর রমযান মাসে বিতর নামায জামায়াতে
পড়া মোস্তাহাব। সুতরাং রমযান মাসের তারাবীহ্ ও বিতর ব্যতীত অন্যান্য নফল নামায
ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী
। (তাহ্তাবী পৃঃ ১৫৬,
কিতাবুল ফিক্বাহ্ ১ম জিঃ পৃঃ ৩৩৭)
(৩২)
وقال
الشيخ الحلبى اداء النفل بجماعة على سبيل التداعى مكروه- الا ما استئنى كصلوة
الترااويح- (الاشباه والنظائر ج১ صغه ২১৯)
অর্থঃ- হযরত শায়খ হালাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, নফল
নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্
তাহরীমী,
তবে তারাবীহ্ (কুসূফ ও ইস্তেস্কা) ব্যতীত। (আশাবাহ ওয়ান
নাযায়ের ১ম জিঃ পৃঃ২১৯)
(৩৩-৩৫)
ان
النفل بجماعۃ علی سبیل التد اعی یکرہ. فتاوے بزازیہ ج4 صفہ 29، خلاصۃ الفتاوی ج1
صفہ 63، فتاوے ھندیۃ ج1 صفہ 128)
অর্থঃ- নিশ্চয়ই নফল নামায
ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে বায্যাযিয়া ৪র্থ জিঃ পৃঃ ২৯, খোলাসাতুল
ফত্ওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ৬৩,
ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১ম জিঃ পৃঃ ১২৮)
(৩৬)
ان
الجماعة فى النو افل خلاف الاصلا- والا داء على خلاف الاصل لا يخلو عن الكراهة-
فالجماعة فى النو افل مكروهة- لا يخفى انه صلى الله عليه وسلمخ كان يصلى السنن
والرواتب منفر دافى بيته- وكذا لوتر- كما دلت عليه الا حاديث المذكورة فى ابواب
الوتر والسنن. (اعلاء السنن ج১ صفه ৭৮)
অর্থঃ- নিশ্চয়ই নফল নামায
জামায়াতে পড়া ভিত্তিহীন,
আর এরূপ ভিত্তিহীন জামায়াত আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী
হতে খালী নয় (অর্থাৎ মাকরূহ্
তাহরীমী)। সুতরাং নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। এটা স্পষ্ট যে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি সুন্নত নামায ও নফল নামায এমনকি বিতির নিজ ঘরে একাকি পড়তেন, এটার
প্রমাণ সুন্নত ও বিতির অধ্যায়ে উল্লিখিত হাদীছ শরীফসমূহে রয়েছে। (ইলাউস্ সুনান ৭ম
জিঃ পৃঃ ৭৮)
(৩৭)
فتكره
الجماعة فى النواقل لكو نها خلاف السنة المؤكدة وخلاف عمل الخلفاء الصحابة- فائهم
لم يصلوا الرواتب من السنن والنفل المطلق فى جماعة قط. (اعلاء السنن ج ৭ صفه ৭৮)
অর্থঃ- নফল নামায জামায়াতে
পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা এটা সুন্নতে মুয়াক্বাদার বিপরীত এবং হযরত
খোলাফা-ই-রাশেদ্বীন,
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের
আমলেরও বিপরীত। কেননা উনারা কখনও নফল নামায জামায়াতে পড়েননি। (ইলাউস সুনান ৭ম জিঃ
পৃঃ ৭৮)
(৩৮)
الجماعۃ
فی التھجد الذی ھی نافلۃ بدعۃ قطعا یعنی لوگون کو بلاکر تھجد کی نماز مین جماعت کرنا مکروہ ھے اور بلا
تداعی یعنی بلائے کے بغیر ایک دو ادمی یا تین اتفاقا تھجد پرھنے والے کی اقتدا کرین
تو مکروہ نھین. نماز تھجد با جماعت قطاعا بدعت عے. (حاشیہء شرح وقایہ لفاضل چلپی)
অর্থঃ- তাহাজ্জুদ নামায
জামায়াতে পড়া বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্, কেননা ওটা নফলের অন্তর্ভূক্ত।
অর্থাৎ লোকদেরকে ডেকে (ঘোষণা দিয়ে) তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী।
আর ঘোষণা ব্যতীত যদি উর্দ্ধে তিনজন মুক্তাদী তাহাজ্জুদ আদায়কারীর পিছনে ঘটনাক্রমে
এক্তেদা করে ফেলে,
তবে মাকরূহ্ হবে না। (চারজন হলে মাকরূহ্ তাহরীমী
হবে) আর তাহাজ্জুদ নামায (ঘোষণা দিয়ে) জামায়াতের সাথে আদায় করা বেদয়াতে
সাইয়্যেয়াহ্। (হাশিয়ায়ে শরহে বেকায়া লি ফাজেল চলপী)
(৩৯)
جماعت
در غماز تهجد بتداعى مكروه است وبغير تدا عى كه اتفاقا يك دو كس يا سه كسى اقتدى
در تهجد غما يند مكروه نيست- التداعى بان يقتدى اربعة بواحد كما فق الدرر.
(مجموعهء فتاوى سعدية صفه ৭২)
অর্থঃ- ঘোষণা দিয়ে
তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী, তবে ঘোষণা ব্যতীত ইমামের সাথে যদি
তিনজন তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ে, তবে মাকরূহ্ হবে না। আর ঘোষণা
দেয়ার অর্থ হলো ইমামের সাথে চার মুসল্লী ইক্তেদা করা। (যেটা সম্পূর্ণই মাকরূহ্
তাহরীমী) অনুরূপ দুরার কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে। (ফতওয়ায়ে সা’দিয়াহ্
পৃঃ ৭২)
(৪০-৪১)
قال
الشيخ ابو القاسم الحنفى من متأخرى علماء مصر- التنفل يجماعة مكروه- لانه لو كان
مستحبا لكانت افضل كالمكنوبات- ولو كانت افضل لكان المتهجدون القائمون بالليل
يجتمعون فيصلون بجماعة طلبا للغضيلة فلما لم يروذا لك عن رسول الله صلى عليه وسلم
والضحابة رضوان الله عليهم اجمعين- علم انه لا فضل فى ذالك- (المبسو ط للسر خسى ج ২ صغه ১৪৪،
ماثبت بالسنة صغه ৮৮)
অর্থঃ- হযরত শায়খ আবুল কাসেম হানাফী রহমতুল্লাহি
আলাইহিম যিনি মিসরের ওলামায়ে মুতাআখখেরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের অন্তর্ভূক্ত
তিনি বলেন, নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্
তাহরীমী । কেননা এটা যদি মুস্তাহাব হতো এবং পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের ন্যায়
ফযীলতপূর্ণ হতো, তবে যারা রাত্রে তাহাজ্জুদ নামায পড়েন। তারা
ফযীলত অর্জনের লক্ষ্যে জামায়াতে তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন। সুতরাং যেহেতু
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ উনাদের মধ্যে এরূপ আমল (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া) পরিলক্ষিত
হয়না, সেহেতু বুঝা গেল যে,
তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ার মধ্যে কোনই ফযীলত নেই (বরং
মাকরূহ্ তাহরীমী )। (মাবছূত লিস সারাখসী
২য় জিঃ পৃঃ ১৪৪, মাছাবাতা বিচ্ছুন্নাহ্ পৃঃ ৮৮)
(৪২-৪৬)
الاقتدء
فى الوتر خارج رمضان يكره- قال الرملى ويوثر بجماعة فى رسضان فقط- ان الكر اهة
كراهة تنزية. (بحرالر ائق ج১ صفه ৩৪৫ منحة الخالق- عينى شرح هداية- خلاصة
الفتاوى ج১ صفه ১৫৩- مراقى الفلاح صفه ২৫৬.
অর্থঃ- রমযান মাস ব্যতীত বিতর নামায জামায়াতে পড়া
মাকরূহ্। রমলী বলেন,
শুধুমাত্র রমযান মাসেই বিতর নামায জামায়াতে পড়া যাবে। আর
নিশ্চয়ই (রমযান মাস ব্যতীত) বিতর নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তানযীহী’র
অন্তর্ভূক্ত। (বাহরুর রায়েক ১ম জিঃ পৃঃ ৩৪৫, মিনহাতুল খালিক, আইনী
শরহে হেদায়া, খোলাসাতুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ১৫৩, মারাকিউল ফালাহ্ পৃঃ ২৫৬)
(৪৭-৫৪)
ولا
يصلى الوتر بجماعة فى غبر شهر رمضان عليه اجماع المسلمين. (هدايه مح الدراية ج১ صفه ১৫১، فتح القدير ج১ صفه ৪০৯، شرح الياس، شرح النقاية، كفاية، احسن المسائل
صفة ৪৫، قدورى صفه ৫২،
علم الفقه ج১ صفه ২২৩)
অর্থঃ-
বিতর নামায রমযান মাস ব্যতীত জামায়াতে পড়া যাবে না। এটার উপর সমস্ত মুসলমান
একমত। (হেদায়া মায়াদ দেরায়া ১ম জিঃ পৃঃ ১৫১, ফতহুল ক্বাদীর ১ম জিঃ পৃঃ৪০৯, শরহে
ইলিয়াস, শরহুন নেক্বায়া,
কেফায়া, আহ্সানুল মাসায়িল পৃঃ ৪৫, কূদুরী পৃঃ ৫২, এলমুল
ফিক্বাহ্ ২য় জিঃ পৃঃ ২২৩)
(৫৫-৬১)
افسوس
صد کہ جن بدعتون کا دوسرے سلسلون مین نام
ونشان تک نھین پایا جاتا وہ اس طریقۃ علیہ (مشائخ نقشبندیہ) مین نمودار ھوگیء ھین کہ
نماز تھجد کو جماعت سے ادا کرتے ھین. اور گردونواح سے اس وقت لوگ تھجد کے و اسطے
جمع ھو جاتے ھین اور بری جمعت سے ادا کرتے ھین اور یہ علم مکروہ ھے بکراھت تحریمی.
(مکتوبات امام ربانی ج1 صفہ 144، فتاوی سراجیہ، غیاشیہ، شافعیۃ، نھایۃ، ضیاء، شرح
الشمائل)
অর্থঃ- আফসুস শত আফসুস এজন্য যে, যে সকল
বিদয়াতের চিহ্ন পর্যন্ত অন্যান্য সিলসিলায় দেখা যায়না, তা এই নকশবন্দীয়া
তরীকার কারো কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, এলাকার আনাচ কানাচ হতে লোক
একত্রিত হয়ে বড় জামায়াতের সাথে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে থাকে, যেটা
মাকরূহ্ তাহরীমীর অন্তর্ভূক্ত। (মাকতুবাতে
ইমাম রাব্বানী ১ম জিঃ পৃঃ ১৪৪, ফতওয়ায়ে সিরাজিয়া, গিয়াছিয়া, শাফিয়াহ্, নেহায়া, কিতাবুজজিয়া, শরহে
শামায়েল)
(৬২)
نفل
باجماعت نہ پرھئی چاھئے کہ صحیح بھی ھے کہ جماعت نفل بتداعی مکروہ ھے. اور تفسیر
تداعی کی یہ ھے کہ چار مقتدی جماعت مین ھون یہ باتفاق مکروہ ھے اور تین مقتدی ھون
تو اس مین خلاف ھے اور ایک یا دو مقتدی ھون تو کراھت تھین. (فتاوے دار العلوم دیوبند
ج1 صفہ 241)
অর্থঃ- নফল নামায জামায়াতে
পড়া উচিৎ নয়, কেননা সহীহ মত এটাই যে,
নফল নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। আর
ঘোষণা দেয়ার অর্থ হলো- চারজন মুসল্লী জামায়াতে শরীক হওয়া, এটা
সর্বসম্মতিক্রমেই মাকরূহ্ তাহরীমী। আর ইমাম ব্যতীত তিনজন মুক্তাদী হলে মাকরূহ্
হওয়ার মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। একজন অথবা দু’জন মুক্তাদী হলে মাকরূহ্ হবে না।
(ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১ম জিঃ পৃঃ ২৪১)
(৬৩)
اور
جماعت سے ادا کرنا تھجد کا مکروہ ھے اگر بتداعی ھون. (عزیز الفتاوی ج1 صفہ240)
অর্থঃ- তাহাজ্জুদ নামায
ঘোষণা দিয়ে (অর্থাৎ ইমাম ব্যতীত চার মুক্তাদীসহ) জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্
তাহরীমী। (আযীযুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ২৪০)
(৬৪)
سوال
:- علاوہ رمضان شریف کے نوافل و تھجد باجماعت جائز ھے یا نھین؟
جواب :- نماز تھجد جماعت کے ساتھ پرھنا بتداعی مکروہ ھے. اور ان حضرت
صلی اللہ علیہ وسلم نے جو رمضان کی تین
راتون مین بجماعت نماز پرھی ھے وہ تراویح کی نماز تھی. علامہ شامی کی تحقیق سے یھی
ظاھر ھوتا ھے. (فتاوے دیوبند ج 4 صفہ 220)
অর্থঃ- প্রশ্নঃ রমযান মাস
ব্যতীত নফল এবং তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া জায়েয আছে কি?
উত্তরঃ তাহাজ্জুদ নামায
ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসের তিন রাত্র যে নামায জামায়াতের
সাথে আদায় করেছেন,
তা হলো- তারাবীহ্ নামায, আল্লামা শামীর বর্ণনায়ও এটাই
প্রমাণিত হয়। (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ৪র্থ জিঃ পৃঃ ২২০)
(৬৫)
ماہ
رمضان المبارک مین تداعی کے ساتھ وتر اور تراویح جائز ھے اور مشروع و مسنون- اور
باقی نوافل سوائے تراویح کے رمضانن شریف مین بھی تداعی کے ساتھ مکروہ ھے. (فتاوے دیوبند
ج4 صفہ 223)
অর্থঃ- পবিত রমযান মাসে ঘোষণা দিয়ে বিতির ও
তারাবীহ্ জামায়াতে পড়া জায়েয, শরীয়তসম্মত ও সুন্নত এবং অন্যান্য নফল নামাযসমূহ তারাবীহ্
(বিতর, ইস্তেস্কা, কুসূফ) ব্যতীত রমযান মাসেও ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ।
(ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ৪র্থ জিঃ পৃঃ২২৩)
(৬৬-৬৮)
سوال
:- شب قدر- شب معراج- شب برات و غیرہ جیسی راتون مین مسجدون مین جمع ھو کر نوافل اور و ظائف پرھنا کیسا ھے؟
جواب
:. احیاء ان لیالی کا مستحب ھے یہ راتین عند اللہ بھت متبرک ھین. ان مین جتنی
عبادت کی جائے بھت زیادہ باعث اجر ھے. لیکن
نوافل باجماعت نہ پرھنی چاھین کیونہ یہ بدعت و مکروہ ھے- (غنیۃ المسلی ج 1 صفہ
411، فتاوے دیوبند ج4 صفہ 224، فتاوی محمودیہ ج 2 صفہ160)
অর্থঃ- প্রশ্নঃ শবে ক্বদর, শবে মে’রাজ, শবে বরাত
ইত্যাদি রাতসমূহে মসজিদে একত্রিত হয়ে নফল নামায ও ওযীফা পাঠ করা কি?
উত্তরঃ ঐ রাতসমূহে জাগ্রত
থাকা মোস্তাহাব। এই রাতসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট বহু বরকতময়, ঐ
রাতসমূহে যত বেশী ইবাদত করা যাবে, ততই ফযীলত অর্জন করা যাবে। কিন্তু নফল নামায জামায়াতে পড়া
উচিত নয়। কেননা এটা বিদয়াতে সাইয়্যেয়াহ্ ও মাকরূহ্ তাহরীমী। (গুনিয়াতুল মুসল্লী ১ম
জিঃ পৃঃ ৪১১, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ৪র্থ জিঃ পৃঃ ২২৪, ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ২য় জিঃ পৃঃ ১৬০)
(৬৯)
سوال
:. بلا اھتمام نوافل کے جماعت علاوہ تراویح جائز یا نھین. اور اس مین ادمیون کی کچھ
تعداد شرط ھے یا نھین ؟
جواب:.
فی الدر مختار. ولا یصلی الوتر و لا التطوع بجماعۃ خارج رمضان ای یکرہ ذالک لو علی
سبیل التد اعی بان یقتدی اربعۃ بواحد. ان روایت سے معلوم ھوا کہ صورت مسئولہ مین اگر
مقتدی ایک یا دو ھون تو کراھت نھین اور اگر چار ھون تو مکروہ ھے. (امداد الفتاوی
ج1 صفہ 85)
অর্থঃ- প্রশ্নঃ তারাবীহ্ নামায ব্যতীত অন্যান্য নফল
নামায ঘোষণা ব্যতীত জামায়াতে পড়া জায়েয কিনা এবং কোন সংখ্যা শর্ত আছে কি?
উত্তরঃ দুররুল মোখতার
কিতাবে আছে, রমযান মাস ব্যতীত নফল নামায জামায়াতে পড়না, কেননা নফল নামায ঘোষণা দিয়ে
জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী। যদি চারজন
মুক্তাদী জামায়াতে শরীক হয়। উল্লেখিত কিতাবের ইবারত হতে জানা গেল যে, প্রশ্নে
উল্লেখিত অবস্থায় যদি মুক্তাদী একজন অথবা দু’জন হয়, তবে
মাকরূহ্ হবে না। আর যদি চারজন মুক্তাদী হয়, তবে মাকরূহ্ তাহরীমী
হবে। (ইমদাদুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ৮৫)
(৭০)
نفل
کی جماعت کرنا جبکہ چار مقتدی ھون تو اتفاقا مکروہ ھے اور تین مقتدی ھو تو کراھت مین
اختلاف ھے (امدادالا حکام ج 1 صفہ 519)
অর্থঃ- চারজন মুক্তাদীসহ
নফল নামায জামায়াতে পড়া সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ্ তাহরীমী এবং তিনজন মুক্তাদী হলে
মাকরূহ্ হওয়ার মধ্যে মতভেদ রয়েছে। (ইমদাদুল আহকাম ১ম জিঃ পৃঃ ৫১৯)
(৭১-৭২)
سوال
:- بعض قصبات مین رواج ھے کہ رمضان شریف مین حفاظ نمار تھجد مین باھم قران شریف
سنتے اور سناتے ھین اور دوچار ادمی اور بھی جماعت مین شریک ھو جاتے ھین اور ایک
دوسرے کے گھر جاکر جگاتے ھین اور کسی روز بے اطلاع سب مسجد مین جمع ہو جاتے ھین.
سویہ جماعت درست ھے یا نھین؟
جواب:.
نوافل کی جماعت تھجد ھو یا غیر تھجد سوانے تراویح و کسوف و استسقاء کے اگر چار
مقتدی ھون تو حنفیہ کے نزدیک مکروہ تحریمی ھے. خواہ خود جمع ھون خواہ بطلب اوین
اور تین مین خلاف ھے. اور دو مین کراھت نھین (فتاوے رشیدیہ کامل مبوب صفہ 299،
فتاوے رحیمیہ ج 1 صفہ 179)
অর্থঃ- প্রশ্নঃ কোন কোন গ্রামে প্রচলিত রয়েছে যে, কোন কোন
হাফেয সাহেব তাহাজ্জুদ নামাযে একজন অপরজনকে কুরআন শরীফ শুনায় এবং দু’চারজন
লোকও জামায়াতে শরীক হয় এবং একজন অপরজনের ঘরে গিয়ে ঘুম থেকে উঠায় এবং কোন কোন দিন
বিনা ঘোষণায় সকলে মসজিদে একত্রিত হয়ে যায়। সুতরাং এরূপ জামায়াত জায়েয আছে কিনা?
উত্তরঃ
নফল নামায চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে পড়া তাহাজ্জুদ হোক অথবা অন্যান্য নফল নামায
হোক, তারাবীহ্, কুসূফ, ইস্তেস্কা ব্যতীত আমাদের হানাফী মাযহাব মোতাবেক মাকরূহ্ তাহরীমী। চাই নিজে নিজে আসুক অথবা ডেকে আনা
হোক। তবে তিন মুক্তাদী হলে মাকরূহ্ হওয়ার মধ্যে মতভেদ রয়েছে এবং দু’একজন হলে
মাকরূহ্ হবে না। (ফতওয়ায়ে রশীদিয়া পৃঃ ২৯৯, ফতওয়ায়ে রহীমিয়া ১ম জিঃ পৃঃ ১৭৯)
(৭৩-৭৪)
سوال
:- نوافل کو باجماعت ادا کرنا اور بالخصوص رمضان مین تھجد اور اوابین کو جماعت سے پرھنا
جائز ھے یا نھین؟
جواب:.
جماعت نوافل کی سوائے ان مواقع کے حدیث سے ثابت ھین مکروہ تحریمی ھے. فقہ مین لکھا
ھے اگر بتداعی ھون اور مراد تداعی سے چار
ادمی مقتدی کا ھونا ھے. پس جماعت صلاۃ کسوف، تراویح. استسقاء کی درست ھے اور باقی
سب مکروہ ھے. (فتاوے رحیمیۃ ج1 صفہ 179، علم الفقہ ج2 صفہ 223)
অর্থঃ- প্রশ্নঃ নফল নামায
জামায়াতে আদায় করা,
বিশেষ করে রমযান মাসে তাহাজ্জুদ এবং আওয়াবীন নামায জামায়াতে
পড়া জায়েয বা নাজায়েয?
উত্তরঃ হাদীছ শরীফ দ্বারা
যে সকল নফল নামায জামায়াতে পড়া প্রমাণিত রয়েছে, তা ব্যতীত অন্য নফল নামায
জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। ফিক্বাহ কিতাবে লিখা রয়েছে, যদি
ঘোষণা দিয়ে পড়া হয়,
আর ঘোষণা দেওয়ার অর্থ হলো চারজন মুক্তাদী জামায়াতে শরীক
হওয়া। সুতরাং কুসূফ (সূর্য গ্রহণ) তারাবীহ্ ও ইস্তেস্কার নামায জামায়াতে পড়া জায়েয
(এবং হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত) এ ছাড়া অন্যান্য সকল নফল নামাযেই জামায়াতে পড়া
মাকরূহ্ তাহরীমী । (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ্ ১ম
জিঃ পৃঃ ১৭৯, ইলমুল ফিক্বাহ্ ২য় জিঃ পৃঃ ২২৩)
(৭৫)
مذھب
حنفی مین امام کے علاوہ چار مقتدی ھون تو یہ جماعت بالاتفاق مکروہ ھے. اور مقتدی تین
ھون تو کراھت مین اختلاف ھے. ایک یادو مقتدیون کے ساتھ جماعت اگرچہ بلا کراھت جائز مگر اس مین بھی
جماعت کی فضیلت اور ثواب نھین. (احسن الفتاوی ج 3 صفہ 469)
অর্থঃ- হানাফী মাযহাব
মোতাবেক ইমাম ব্যতীত চারজন মুক্তাদী জামায়াতে শরীক হলে উক্ত জামায়াত
সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ্ তাহরীমী হবে। আর যদি মুক্তাদী তিনজন হয়, তবে
মাকরূহ্ হওয়ার মধ্যে মতভেদ আছে। দু’একজন মুক্তাদী হলে যদিও বিনা
মাকরূহে জায়েয কিন্তু ওটার মধ্যে জামায়াতের ফযীলত ও সাওয়াব পাওয়া যাবে না। (আহসানুল
ফতওয়া ৩য় জিঃ পৃঃ ৪৬৯)
(৭৬)
سوال
:- تھجد کی نمز باجماعت ادا کرنا کیسا ے؟
جواب:.
یہ بھی علی سبیل التد اعی مکروہ ھے. (فتاوے محمودیہ ج 2 صفہ 160)
অর্থঃ- প্রশ্নঃ তাহাজ্জুদ
নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা কি?
উত্তর- তাহাজ্জুদ নামায
ঘোষণা দিয়ে (অর্থাৎ চারজন মুক্তাদীসহ) জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী । (ফতওয়ায়ে
মাহমুদীয়া ২য় জিঃ পৃঃ১ ৬০)
সুতরাং
উপরোক্ত আলোচনা ও বিস্তারিত দলীল-আদিল্লার দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তাহাজ্জুদের
নামায রমযান মাসে বা গায়ের রমযান মাসে, ঘোষণা দিয়ে হোক বা বিনা ঘোষণায়
হোক ইমামসহ চারজন মুক্তাদী জামায়াতের সাথে আদায় করা, সম্পূর্ণ মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ্ এবং তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়ার মধ্যে কোনই ফযীলত নেই। কেননা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে
তাবেয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের কেউ তাহাজ্জুদ নামায জায়ায়াতে পড়েছেন বলে কেউ প্রমাণ পেশ
করতে পারবেনা। কাজেই কেউ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দাবিদার হলে তাকে অবশ্যই
উপরোক্ত ফতওয়া মেনে আমল করতে হবে, নয়তো দলীলের মাধ্যমে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ
শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনার মাধ্যমে খন্ডাতে হবে।
তবে আমাদের বিশ্বাস যেহেতু আমরা নির্ভরযোগ্য
কিতাবের মাধ্যমে বিস্তারিত দলীলের মাধ্যমে ফতওয়া পেশ করেছি। সুতরাং কারো দ্বারাই
এই ফতওয়া খন্ডান সম্ভব হবে না ইনশাআল্লাহ্। মহান আল্লাহ পাক
আমাদের সকলকে ছহীহভাবে আমল করার তাওফিক দিন। (আমীন)!