গবেষণা
কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল
আলামীন উনার দরবারে অশেষ শুকরিয়া এ জন্য যে, তিনি আমাদেরকে “গবেষণা
কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার পক্ষ হতে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার ফতওয়া
বিভাগে যথাক্রমে টুপি,
অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়্যত করে মাযার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও
তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া ও জুমুয়ার নামায ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে
ফতওয়া প্রকাশের পর ৬ষ্ঠ ফতওয়া হিসাবে “মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে
নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী”-এর ফতওয়া প্রকাশ করার তৌফিক দান করেছেন।
আমরা
কিছুদিন পূর্বে “মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী” শিরোনাম
দিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে একটি হ্যান্ডবিল (লিফলেট) প্রকাশ করেছিলাম এবং তাতেও পরবর্তীতে
প্রয়োজন সাপেক্ষে বিস্তারিতভাবে ফতওয়া প্রকাশ করার উল্লেখ ছিল।
অবশ্য
আমরা মনে করেছিলাম,
আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার অনুসারী, হক্ব
তালাশী, সত্যান্বেষী ব্যক্তিগণের নিকট আমাদের এই সংক্ষিপ্ত হ্যান্ডবিলই হক্ব মানা
অর্থাৎ মাকরূহ্ তাহরীমী থেকে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট হবে এবং হয়েছেও তাই অর্থাৎ
প্রায় অনেক স্থানেই সত্যান্বেষী মহিলাগণ জামায়াতে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তথাপি
আমাদের সমাজের কিছু নামধারী তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদ হিসাবে পরিচয় দানকারী
ব্যক্তিবর্গ নিজেদেরকে সুন্নী অর্থাৎ আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী দাবী
করা সত্বেও ব্যক্তি তথা দুনিয়াবী স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষে পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার কয়েকটি পবিত্র আয়াত শরীফ
উনার ও কয়েকটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভুল, মনগড়া
বানোয়াট, বিভ্রান্তিমূলক অপব্যাখ্যা করে; সরলপ্রাণ
মুসলমানদের মধ্যে ফিৎনার সৃষ্টি করছে এবং মসজিদে পুরুষের সাথে সাথে
মহিলাদের জামায়াত কায়েম করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা আমাদের হানাফী মাযহাব মোতাবেক
সম্পূর্ণ মাকরূহ্ তাহরীমী।
সুতরাং সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে উক্ত বিভ্রান্তিমূলক
বানোয়াটি ও মাকরূহ্ তাহরীমী থেকে ফিরিয়ে এনে সহীহ ও হক্ব মত, হক্ব পথ
প্রদর্শনের লক্ষ্যে আমাদের এ ফতওয়া প্রকাশের প্রচেষ্টা।
কেননা
মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ادخلوا فى السلم كافة.
অর্থঃ- “তোমরা
পরিপূর্ণভাবে দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ কর।”
আর দ্বীন
ইসলাম সর্বোতভাবেই নিন্মোক্ত চারটি জিনিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেগুলোর
বাইরে দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কোন বিষয়ই গ্রহণযোগ্য নয়। আর তা হলো- যেমন কিতাবে
উল্লেখ করা হয়,
اصول
الشرح هلهة- القران- الحة- الاجماع ورابعها القياس (نورالانوار، اصول الشاشى
অর্থঃ- “শরীয়তের
দলীল মোট চারটি (১) কুরআন শরীফ (২) হাদীছ শরীফ (৩) ইজমা ও (৪) ক্বিয়াস।
কেউ কেউ
বলে থাকে- মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত, জুমুয়া ও
জামায়াতের আদেশ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই করেছেন। কাজেই জুমুয়া ও জামায়াত
যদি শুধু পুরুষের জন্য হয়,
তবে নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি সবই শুধুমাত্র পুরুষের জন্য হবে?
তার জবাব
হলো- আমাদের জেনে রাখা দরকার যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতিটি পবিত্র আয়াত শরীফই ব্যাখ্যা
সাপেক্ষ। আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোন পবিত্র
আয়াত শরীফ উনার প্রথম ব্যাখ্যা হলো অপর একটি পবিত্র আয়াত শরীফ। যেমন কিতাবে উল্লেখ
করা হয়,
ان تعض القران يفسر بعض تعضا.
অর্থঃ- “পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার এক পবিত্র আয়াত শরীফ অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
মুবারক।”
পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার আরেকটি তাফসীর মুবারক হলো পবিত্র হাদীছ শরীফ। আর উক্ত পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
ব্যাখ্যা হলো পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ। কাজেই যে বিষয়ে পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণনা না পাওয়া যাবে, তাকে স্পষ্টভাবে বুঝার জন্য পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার দিকে লক্ষ্য করতে হবে।
যদি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনর মধ্যে স্পষ্ট বর্ণনা না পাওয়া যায়, তবে পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে। কারণ পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার এমন অনেক বিষয়ই উল্লেখ রয়েছে, যা পবিত্র হাদীছ শরীফ ব্যতীত বুঝা
সম্ভব নয়। আবার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা
পবিত্র ইজমা শরীফ, পবিত্র
কিয়াস শরীফ ব্যতীত বুঝা সম্ভব নয়। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ
উনার মধ্যে শুধু নামায পড়ার কথা বলা হয়েছে কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে
কোথাও কত ওয়াক্ত পড়তে হবে,
কত রাকায়াত পড়তে হবে, তা বর্ণনা করা হয়নি। আবার পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে যদিও কত ওয়াক্ত নামায পড়তে হবে এবং কোন নামায কত রাকায়াত পড়তে হবে, তা
বর্ণনা করা হয়েছে কিন্তু কোনটা ফরজ, কোনটা ওয়াজিব, কোনটা
সুন্নতে মুয়াক্বাদা,
কোনটা মোস্তাহাব বা নফল, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে তা স্পষ্ট উল্লেখ নেই। বরং হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ
পবিত্র ইজমা শরীফ,
পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ তাকিদ
অনুযায়ী ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্বাদা,
মুস্তাহাব ও নফলে বিভক্ত করেছেন।
সুতরাং পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে যদিও নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত, জুমুয়া, জামায়াত
ইত্যাদির আদেশ মুবারক নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই পাওয়া যায়, কিন্তু পবিত্র হাদীছ
শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে এ ব্যাপারে নারী-পুরুষের
মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্যও পরিলক্ষিত হয়। যেমন- পুরুষের নামাযে আযন ও ইকামত রয়েছে, নারীদের
তা নেই। পুরুষদের পবিত্র সূরা শরীফ, পবিত্র ক্বিরায়াত শরীফ পড়তে হয় আওয়াজ করে
(মাগরীব, ইশা ও ফজর)। কিন্তু নারীদের চুপে চুপে পড়তে হয়। এমনিভাবে নারী-পুরুষে হাত
বাঁধায় ভিন্নতা, রুকু, সিজদায় ভিন্নতা,
বসায় ভিন্নতা। অনুরূপভাবে পুরুষদের জন্য জুমুয়া ফরজে আইন, ঈদের
নামায ওয়াজিব (হানাফী মাযহাবে) এবং জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্বাদা কিন্তু মহিলাদের
জন্য তা নয়। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও উল্লেখ নেই যে, মহিলাদেরকে
জুমুয়া, ঈদ ও জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাকিদ করা হয়েছে। আর তাই সকল ফিকাহের
বিশ্ববিখ্যাত কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে, জুমুয়া, ঈদ ও
জামায়াত শুধু পুরুষদের জন্য।
যেমন তাফসীরে
খাযেন ও তাফসীরে বাগবীতে উল্লেখ করা হয়েছে,
ااعلم
ان صلوة الجمعة من فروض الاعيان- على من جمع العقل والباوغ رالحربه والذكران
والاقامة.
অর্থঃ- “জেনে রাখ যে, জুমুয়ার
নামায পড়া ফরজে আইন,
তাদের জন্য যারা বুদ্ধিমান, বয়ঃপ্রাপ্ত, স্বাধীন
পুরুষ ও মুকীম।”
অনুরূপভাবে ফাতহুল ক্বাদীর, আলমগীরী, বাহরুর
রায়েক ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবেই উল্লেখ রয়েছে। এমনিভাবে সকল ফিকাহের কিতাবে উল্লেখ
রয়েছে যে, জুমুয়ার নামায ফরজ হওয়ার জন্য যে শর্ত, ঈদের নামায ওয়াজিব হওয়ার জন্যও
সেই একই শর্ত। অর্থাৎ পুরুষদের জন্যই ঈদের নামায ওয়াজিব, নারীদের
জন্য নয়।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সময় হতেই উল্লেখিত ইবাদতসমূহে নারী-পুরুষের মধ্যে ভিন্নতা বা পার্থক্য। এ পার্থক্য নতুন কোন বিষয় নয়। বরং
চৌদ্দশত বৎসর পূর্বের। কাজেই চৌদ্দশত বৎসর পর নারী পুরুষে কোন পার্থক্য নেই বলার
মত দুঃসাহস কাউকে দেয়া হয়নি।
এমনিভাবে
শুধু নামায বা জামায়াতেই নয়, বরং প্রায় ইবাদতেই নারী-পুরুষে পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
فاذاقضيت
الصلوة فانبشروا فى الارض وابتغوا من فضل الله.
অর্থঃ- “যখন
নামায আদায় হয়ে যায়,
তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং রিযিক তালাশ কর।”
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার
মধ্যেও নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে যমীনে ছড়িয়ে পড়তে বলা হয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ পাক
তিনিই আবার অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
وقرن فى بيوتكن.
অর্থঃ- “তোমরা নারীরা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাক।”
আর হালাল
রিযিক অর্জন করা একমাত্র পুরুষেরই দায়িত্ব। নারীদেরকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি বরং
নারীদেরকে ঘরে আবদ্ধ হয়ে থাকতে বলা হয়েছে। কাজেই এ বিষয়েও আমরা নারী পুরুষে
পার্থক্য দেখতে পাই।
এমনিভাবে
নারীরা কখনও দেশের রাষ্ট্র প্রধান হতে পারবে না। কেননা পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
لايفلح قوم امر هم امرأه (نسائ شريف
অর্থঃ- “ঐ
সম্প্রদায় কোন সফলতা অর্জন করতে পারবে না, যে সম্প্রদায়ের নেতা হবে মহিলা।”
সুতরাং উপরোক্ত বিস্তারিত
আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, নারী-পুরুষের উপরোল্লিখিত
পার্থক্য পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস
শরীফ সমর্থিত এবং যারা বলে উল্লিখিত ইবাদতে নারী-পুরুষে কোন পার্থক্য নেই, তারা
নিতান্তই অজ্ঞ, জাহেল। এবং এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত যে, শুধুমাত্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কয়েকটি পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের
দ্বারা মহিলাদের জুমুয়া ও জামায়াতে উপস্থিত হওয়া জায়েয বলা গোমরাহী ব্যতীত কিছুই
নয়।
প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার হাকীকতঃ
কেউ কেউ বলে থাকে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় মহিলারা
মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়তেন এবং এখনও মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ উনাদের মহিলাগণ
জামায়াতে উপস্থিত হন,
তবে এর ফায়সালা কি?
এর জবাব
হলো- শরীয়তে এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় ছিলনা কিন্তু হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সময় তা উৎপত্তি লাভ করে। যেমন
“জুমুয়ার ছানী আযান”
এ ছানী আযান সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা। হযরত উসমান যূন নূরাইন
আলাইহিস সালাম তিনি মুসলমান ও দ্বীন ইসলাম উনার বৃহত্তর স্বার্থে ইজতিহাদ করতঃ
উক্ত ছানী আযানের প্রথা চালু করেন এবং এর উপর সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণ উনাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুরূপভাবে যদিও প্রথম যুগে ইসলাম ও
মুসলমানদের বৃহত্তর স্বার্থে মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল কিন্তু
হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং
পরবর্তীতে ইমাম-মুজতাহিদগণ মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে
নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেন এবং এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত।
কেননা
প্রথম যুগে মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়ার কারণ সম্পর্কে কিতাবে
উল্লেখ করা হয়,
حضرت
امام طحاوی رحمۃ اللہ علیہ کھتے ھین کہ یہ حکم ابتداء اسلام مین دشمنون کی نظر مین
مسلمانون کی کثرت و شوکت کے اظھار کیلئے تھا- عینی کھتے ھین کہ اس وقت فتنون سے بھی
امن تھا اب یہ بات نھین رھین- (معارف مد فیہ شرح ترمذی)
অর্থঃ- হযরত ইমাম তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “মহিলাদের ইসলাম উনার প্রথম যুগে জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার
অনুমতি প্রদান করার কারণ হলো, বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমানদের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি
করা” (মায়ারিফে মাদানী)।
হযরত ইমাম
আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, (শুধু তাই নয়) সে যুগ ফিৎনা, ফাসাদ
হতেও সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল,
কিন্তু বর্তমানে তার কোন কারণই অবশিষ্ট নেই। এবং শুরুহাতের
(ব্যাখ্যার) অধিকাংশ কিতাবেই প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার কারণ
হিসেবে তা’লীম বা ইলম অর্জন করাকেই উল্লেখ করা হয়েছে। এবং তা আরো স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বুখারী
শরীফ উনার ৯১৫নং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
বর্ণনা দ্বারা। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়,
হযরত উম্মে আতিয়া আলাইহিস সালাম উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “ঈদের দিন
আমাদেরকে বের হওয়ার আদেশ দেয়া হতো, আমরা কুমারী মেয়েদেরকে, এমনকি
ঋতুবর্তী মহিলাদেরকেও ঘর থেকে বের করতাম। অতঃপর পুরুষদের পেছনে থেকে তাদের
তাকবীরের সাথে সাথে তাকবীর পড়তাম এবং তাদের দোয়ার সাথে সাথে আমরাও ঐ দিনের বরকত ও
পবিত্রতা লাভের আশায় দোয়া করতাম।” এ পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে এবং অন্যান্য
আরো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে যে, ঋতুবর্তী
মহিলাগণও ঈদগাহে উপস্থিত হতো। অথচ ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ঋতুবর্তী মহিলাদের
জন্য নামায সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং তাদের ঈদগাহে বা জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি
যদি শুধুমাত্র নামাযের জন্য হতো, তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ ঈদগাহে উপস্থিত হতোনা। মূলতঃ প্রথম
যুগে নামাযসহ সকল অনুষ্ঠানাদিতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়ার মুখ্য উদ্যেশ্য ছিল, তা’লীম
গ্রহণ করা।
তদুপরি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন এবং সে সময় ফিৎনার আশংকা কল্পনাও করা যায় না। তথাপি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদেরকে
সুসজ্জিতভাবে, সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন এবং তিনি আরো বলেন, “সুগন্ধি
ব্যবহারকারীনী মহিলা যিনাকারীনী।” আরো ইরশাদ মুবারক করা হয়, “যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে, সে যেন
ফরজ গোসলের ন্যায় গোসল করে আমার সাথে নামাযে আসে।” শুধু তাই নয়, সাথে
সাথে পর্দারও গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই দেখা যায়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজরের নামায এত
অন্ধকার থাকতে শেষ করতেন যে, মহিলাগণ নামায পড়ে যখন চলে যেতেন, তখন
তাদেরকে স্পষ্টভাবে চেনা যেত না। আর এ পর্দার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়েই
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মসজিদে
নববী উনার এ দরজাটি যদি মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিতাম, তবে খুবই
উত্তম হতো। অর্থাৎ পর্দার জন্য খুবই সুবিধা হতো।”
কিন্তু বর্তমান যামানায়
ঐরূপ ব্যবস্থা বা কঠোরতা কল্পনাও করা যায় না। আর এদিকে লক্ষ্য করেই
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসংখ্য পবিত্র
হাদীছ শরীফে উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “মহিলাদের
মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে গোপন প্রকোষ্টে নামায পড়া সর্বোত্তম।” সুতরাং
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মহিলাদের প্রথম যুগে জামায়াত বা
ঈদগাহে অথবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার একমাত্র উদ্ধেশ্য ছিল, তা’লীম
গ্রহণ করা। আর আমরা প্রথমেই উল্লেখ করেছি, আমাদের দলীল হলো- পবিত্র
কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ। কোন দেশ, ব্যক্তি
আমাদের দলীল নয়। কাজেই যেখানে মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্
তাহরীমী, এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে এ ইজমার বিরোধিতা করে
মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের অনুসরণ করা মোটেও জায়েয হবে না।
পর্দার গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ
মহান আল্লাহ পাক তিনি
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক ফরমান,
وقرن
فى بيوتكن ولا تبرجن تبر ج الجاهلية الاولى.
অর্থঃ- (হে মহিলাগণ) “তোমরা
তোমাদের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক, জাহিলিয়াত যুগের মেয়েদের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করোনা।”
অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ
উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
فاذاسئلتمواهن
متاعا فا سئلوا هن من وراء الحجاب.
অর্থঃ- “যখন
তোমরা মহিলাদের নিকট কোন জিনিস চাও, তখন পর্দার আড়াল হতে চাও।”
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বলেন,
االمرأة
عوره فاذا خرجت استشر فهاالشيطان.
অর্থঃ- “মেয়েলোক
হলো আবৃত থাকার বস্তু। যখনই তারা বেপর্দায় রাস্তায় বের হয়, শয়তান
উঁকি-ঝুকি মারে তাদের দ্বারা পাপ কাজ সংঘঠিত করার জন্য।”
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়,
لعنه الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থঃ- “দেখনেওয়ালা
আর দেখানেওয়ালী উভয়ের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লানত।”
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়, একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন হযরত সালমা আলাইহিস
সালাম ও হযরত মায়মুনা আলাইহিস সালাম
উনাদেরসহ বসা ছিলেন। এমন সময় একজন অন্ধ ছাহাবী হযরত উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি আসতে লাগলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আপনারা
ভেতরে চলে যান।” তখন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বললেন, ‘ইয়া
রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি
অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখছেন না।‘ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘তিনি
যদিও অন্ধ কিন্তু আপনারাতো অন্ধ নন, আপনারা কি উনাকে দেখছনা?”
এ পবিত্র হাদীছ
শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, কোন পুরুষ বেগানা মহিলাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া যেরূপ কবিরা
গুণাহ্, তদ্রূপ মহিলারাও বেগানা পুরুষের দিকে দৃষ্টি দেয়া কবীরা গুণাহ্।
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়, হযরত উমর
ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি একদিন উনার মেয়ে উম্মুল মু’মিনীন
হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসা ছিলেন। এমন সময় উনার একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ
মনে পড়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি দৌঁড় দেন এবং দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় যেহেতু
তিনি সাধারণ লোকের চেয়ে কিছু লম্বা ছিলেন, সেহেতু দরজার চৌকাঠে উনার মাথা
মুবারক লেগে মাথা ফেটে যায়,
তিনি এ অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার-এ নববী শরীফ
উনার মধ্যে আসলেন। উনার কপাল মুবারক থেকে ঝর ঝর করে রক্ত পড়তে লাগলো। মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে উমর ফারুক আলাইহিস সালাম! কে
আপনার মাথায় আঘাত করলো?”
তখন হযরত উমর ফারুক আলাহিস সালাম তিনি বলেন, “ইয়া
রাসুলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আরবের বুকে এমন কোন সন্তান
জন্মগ্রহণ করেনি,
যে উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার মাথায় আঘাত করতে পারে। তবে
আপনার একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ আমার মাথায় আঘাত করেছে।” তখন
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি বলেন, “হে উমর ফারুক আলাইহি সালাম! কোন সেই
হাদীছ শরীফ? যে পবিত্র
হাদীছ শরীফ আপনার মাথায় আঘাত করেছে।” তখন হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম
তিনি বলেন, আপনি বলেছেন,
لايخلون رجل بامراة الا كان ثالثهما الشيطان.
অর্থঃ- “কোন
বেগানা পুরুষ যেন কোন বেগানা মহিলাদের সাথে নিরিবিলিতে একত্রিত না হয়, কেননা তখন তাদের তৃতীয় বন্ধু হয়
শয়তান।”
যেহেতু আমি আমার মেয়ে হযরত হাফসা আলাইহাস
সালাম উনার সাথে বসা ছিলাম। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে দৌড় দিয়ে দরজা দিয়ে
বের হওয়ার সময় চৌকাঠে মাথা লেগে মাথা ফেটে যায়। এবার চিন্তা ফিকির করেন, হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম আলাইহিস সালামগণ উনারা পর্দার কতটুকু গুরুত্ব দিতেন।
আর এ
পর্দার গুরুত্বের জন্যই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদের ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম ও অধিক ফযীলতপূর্ণ বলে উৎসাহ
প্রদান করেন। আর তাই দেখা যায় পর্দা ফরজ হওয়ার পূর্বে মহিলাগণ যেভাবে মসজিদে যেতেন
কিন্তু পর্দা ফরজ হওয়ার পর ক্রমেই তা কমতে থাকে।
মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার উৎসাহ ও ফযীলত:
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن ام سلمة قالت- قال رسول الله صلى الله
عليه وسلم خير مساجد النساء قعربيوتهن. (سنن الكبرىه رواه احمد، موطامالك
অর্থঃ- হযরত উম্মে সালমা আলাইহিস
সালাম হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহিলাদের
জন্য উত্তম মসজিদ হলো তার ঘরের গোপন প্রোকষ্ঠ।” (সুনানুল কোবরা শরীফ, আহমদ শরীফ,
মুয়াত্তা ইমাম মালেক শরীফ)
অন্য পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
عن عبد الله عن النبى صلى الله عليه
وسلم- ماصلت امراة صلاة احب الى الله من صلاتها فى اشد بيتها ظلمة. (سنن الكبرى
للبيهقى
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহিলাদের
অন্ধকার কুঠরীর নামায মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক প্রিয়।” (সুনানুল
কোবরা লিল বায়হাক্বী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়,
عن عبد الله عن النبى صلى الله عليه
وسلم- صلاة المرأفى بيتها افضل من صلاتها فى حجرتها وصلاتها فى مخدعها افضل من
صلاتها فى بيتها. (ابودود)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহিলাদের
ঘরে নামায পড়া, বারান্দায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম এবং সাধারণ ঘরে নামায পড়ার চেয়ে গোপন
প্রকোষ্ঠে নামায পড়া সর্বোত্তম।” (আবূ দাউদ শরীফ)
কেউ
কেউ এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, দেখুন এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মসজিদের উল্লেখ নেই, তাই তুলনাহীনভাবে মসজিদ শ্রেষ্ঠ।
এটা তাদের সম্পূর্ণ মনগড়া ও বিভ্রান্তিমূলক ব্যাখ্যা। কেননা, তারা এমন
একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফও পেশ করতে পারবে
না, যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহিলাদের মসজিদে নামায পড়া উত্তম বলা হয়েছে।
অথচ নিম্মোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহে মহিলাদের মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে গোপন
প্রকোষ্ঠে নামায পড়া উত্তম বলা হয়েছে। এ পবিত্র
হাদীছ শরীফগুলো কি তাদের চোখে
পড়েনা?
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়,
عن عائشة قال النبى صلى الله عليه وسلم-
لان تصلى المراة فى بيتها خير من ان تصلى فى حجرتها- ولان تصلى فى حجر تها خيرلها
خير لها من ان تصلى فى الدار- ولان تصلى فى الدار خير لها من ان تصلى فى المسجد.
(سئن الكبرى للبيهقى
অর্থঃ- হযরত ছিদ্দীকা
আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন
মহিলার জন্য তার খাছ ঘরে নামায পড়া সাধারণ ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম এবং সাধারণ
ঘরে নামায পড়া বাইরের ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম এবং বাইরের ঘরে নামায পড়া মসজিদে
নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।”
(সুনানুল কোবরা লিল বায়হাক্বী) অন্য পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
عن ام حميد قالت- يارسول الله صلى الله
عليه وسلم انا نحب الصلاة معك فيمنعنا ازراجنا- فقال رسول الله صلى الله صلاتكن فى
بيوتكن خير من صلاتكن فى دوركن وصلاكم فى دوركن افضل من صلا ئكن فى مسجد الجماعة.
(سنن الكبرى، الجوهرالنقى
অর্থঃ- হযরত উম্মে হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা মহিলারা আপনার সাথে নামায পড়তে ইচ্ছুক কিন্তু আমাদের
স্বামীরা আমাদেরকে নিষেধ করেন। অতঃপর সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “তোমাদের জন্য সাধারণ ঘরে নামায
পড়ার চেয়ে, খাছ ঘরে নামায পড়া উত্তম এবং সাধারণ ঘরে নামায পড়া মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার
চেয়ে সর্বোত্তম।”
(সুনানুল কোবরা শরীফ, জাওহারুন
নক্বী শরীফ)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি স্বামী কর্তৃক মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার নিষেধকে সমর্থন করেন। যদি তিনি
সমর্থন না করতেন,
তবে অবশ্য তিনি বলতেন, বাঁধা দেয়া ঠিক হবে না। এর দ্বারা
এটাই প্রমাণিত হয় যে,
মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা নাজায়েয নয় বরং জায়েয।
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়,
عن
ام حميد- انها جائت الى النبى صلى الله عليه وسلم فقالت يا رسول الله صلى الله
عليه وسلم- انى احب الصلاة معك فقال النبيى- قد علمت انك تحبين الصلاة معى- وسلاتك
فى بيتك خير من صلاتك فى حجرتك وصلاتك فى دارك خير من صلاتط فى مسجد قومك- وصلاتط
فى مسجد قومط قومط خير من صلاتط فى مسدى- (رواه احمد، ابن حبان- طبرانى)
অর্থঃ- হযরত উম্মে হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা উনার হতে বর্ণিত। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি আপনার সাথে নামায পড়তে অধিক
আগ্রহী। অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “অবশ্যই
আমি জানি তুমি আমার সাথে নামায পড়তে ভালবাস বা অধিক আগ্রহী। কিন্তু তোমার, আমার
মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে তোমার গোত্রের মসজিদে নামায পড়া উত্তম এবং গোত্রের মসজিদে
নামায পড়ার চেয়ে হুজরায় নামায পড়া আরো উত্তম এবং হুজরায় নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায
পড়া সর্বোত্তম।”
(আহমদ শরীফ, ইবনে হাব্বান শরীফ, তিবরানী শরীফ)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মসজিদে নামায পড়ার
চেয়ে ঘরে নামায পড়া উত্তম বলেছেন। যেখানে ঘরে নামায পড়া আল্লাহ পাক উনার রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নামায পড়ার
চেয়ে উত্তম, সেখানে অন্য মসজিদে নামায পড়তে যাওয়া কি করে ফযীলতের আশা করা যায়? অথচ মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এক রাকায়াত নামায পড়া লক্ষ রাকায়াত নামাযের চেয়েও
সর্বোত্তম। কাজেই যদি জামায়াতের ফযীলতের জন্য মহিলাদের মসজিদে আসার অনুমতি দেয়া
হতো, তবে ঘরে নামায পড়া হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম বলা হতো না। মূলতঃ এর দ্বারা
এটাই বুঝা যায় যে,
মহিলাদের মসজিদে বা ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি ইলম অর্জনের জন্যই
দেয়া হয়েছিল।
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ রয়েছে যে,
عن
ابى عمرو شيبائى- انه رأى عبد الله يخرج النساء من المسجديوم الجمعه- ويقول- اخرجن
الى بيوتكن خير لكن- (رواه طبرنى
অর্থঃ- হযরত আবু উমর
শায়বানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি
দেখেছেন হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জুমুয়ার দিন মহিলাদেরকে
মসজিদ হতে একথা বলে বের করে দিতেন যে, “হে মহিলারা! তোমারা তোমাদের ঘরে
চলে যাও, কারণ নামাযের জন্য তোমাদের ঘরই উত্তম।” (তিবরানী শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র
হাদীছ শরীফসমূহের আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার জন্য কার্যতঃ উৎসাহ প্রদান করেননি
বরং ঘরে নামায পড়ার বহু ফযীলতও বর্ণনা করেছেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
উল্লেখ করা হয়,
عن
ابن عمر- عن النبى صلى الله عليه وسلم- صلاة المراة تفضل على صلاتها فى الجمع خمسا
وعشرين درجة= مسند الفردوس الديلمى شريف ج ৬ صفه ৩৮৯)
অর্থঃ- “মহিলাদের
মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে একা নামায পড়ায় ২৫ গুণ বেশী ফযীলত পাওয়া যায়।” (দায়লমী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৩৮৯) যেখানে ঘরে একাকি নামায পড়ায় ২৫ গুণ ফযীলত, সেখানে
মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়ার হেতু কি, তা আমাদের বোধগম্য হয় না। হযরত
উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞা ও
হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার সমর্থন পর্দার গুরুত্ব ও মহিলাদের ঘরে
নামায পড়ার উৎসাহ ও ফযীলতপূর্ণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দিকে লক্ষ্য রেখে আমীরুল মু’মিনীন
হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি ইজতেহাদ করতঃ মহিলাদেরকে মসজিদে এসে জামায়াতে
নামায পড়তে নিষেধ করে দেন। তখন মহিলারা হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার নিকট
গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন, তখন হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “যদি নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
তোমাদেরকে এ অবস্থায় পেতেন,
যে অবস্থায় হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি পেয়েছেন, তবে
অবশ্য তিনিও তোমাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন।”
হযরত
ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার এ কথা মুবারক
উনার আসল অর্থ হলো- হযরত উমর ফারুক
আলাইহিস সালাম তিনি যা করেছেন, ঠিকই করেছেন। অর্থাৎ আমি এটাকে পূর্ণ সমর্থন করি। আর এটাকে
সমর্থন করার অর্থই হলো,
মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা।
কাজেই
যেখানে হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের
দৃষ্টিতে ইজতেহাদ করতঃ মহিলাদের মসজিদে উপস্থিত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, সেখানে
এর বিরোধিতা করে প্রথম যুগের দোহাই দিয়ে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া সম্পূর্ণ পবিত্র
কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
عليكم
بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهدين (مشكوة شريف
অর্থঃ- “তোমাদের
জন্য আমার সুন্নত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত অবশ্যই পালনীয়।” (মিশকাত শরীফ)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়
যে, মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার অর্থই হলো এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার হুকুমকে অস্বীকার করা। আর পৃথিবীতে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় ছিলনা কিন্তু হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময় তা উৎপত্তি লাভ করে। যেমন
জুমুয়ার ছানী আযান,
তা হযরত ওসমান আলাইহিস সালাম উনার সময় উৎপত্তি লাভ করে, এমনিভাবে
মহিলারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় মসজিদে যেতেন
কিন্তু হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার সময় তা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যেটা আমরা
পূর্বেও উল্লেখ করেছি। আর খোলাফায়ে রাশেদীন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের
হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধও আমাদের জন্য অবশ্যই অনুসরণীয়। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন,
اصحابى كل كاالنجوم باى هم اقتدبتم اهتديتم.
অর্থঃ- “আমার
প্রত্যেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা তারকা সাদৃশ্য, তাদের যে
কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে,
হিদায়েত পেয়ে যাবে।” এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা বুঝা যায় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতিটি কথা, প্রতিটি কাজ অনুসরণযোগ্য। কেননা উনার অনুসরণ করার অর্থই হলো, মহান
আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করা। আর উনাদের হুকুমকে অস্বীকার করার অর্থই হলো
মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুমকে অস্বীকার করা। আর বিশেষ করে হযরত উমর
ফারুক আলাহিস সালাম উনার ফাযায়েল ফযীলত যেটা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। উনার সম্পর্কে পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
افضل الناس بعد الانبياء حضرت ابو بكر ثم
عمر رضى الله تعالى عنهما.
অর্থঃ- “নবীদের
পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম অতঃপর হযরত উমর ফারুক
আলাইহিস সালাম।”
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়,
لوكان بعدى نبى لكان عمرابن الخطاب.
অর্থঃ- “যদি আমার
পরে কেউ নবী হতো তবে হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনিই নবী হতেন।” অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফে বলা হয়,
الحق ينطق على لسان عمرو.
অর্থঃ- “স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র যবান
মুবারক দিয়ে কথা বলেন।” অর্থাৎ
হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার কথা মুবারক সমর্থনে মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশটিরও
বেশী পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত উমর
ফারুক আলাইহিস সালাম উনাকে দেখলে শয়তানের মাথা খারাপ হয়ে যেত, কোন্
রাস্তা দিয়ে সে পালাবে।”
যে হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার এত ফযীলত ও মর্যাদা, উনার
পক্ষে কি করে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরোধিতা করা
সম্ভব? এটা কল্পনাও করা যায় না।
কাজেই
হযরত ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা
জারি করেছেন, তা অবশ্যই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ সমর্থিত ও আমাদের
অনুসরণীয় আর হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি এটাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। উনার
সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
خذوا نصف الدين كم من هذه الحميرة.
অর্থঃ- “তোমরা
অর্ধেক দ্বীন গ্রহণ করবে হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে।”
অথচ
আমাদের সমাজেরই কিছু জাহিল কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, হযরত
ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি কখনো মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেননি। তাদের উক্ত
বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা। আর তাদের এ চির সত্যকে অস্বীকার করার কারণ দু’টির একটি
তো অবশ্যই হবে- (১) তারা এ ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ, তাই তারা মিথ্যা প্রলাপ বকছে। (২)
তারা মনে করে হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞাকে মিথ্যা প্রমাণিত
করতে পারলে তাদের পক্ষে মসজিদে যেতে আর কোন বাধা নিষেধ থাকবে না। মূলতঃ এতে তারা
মোটেও সফলকাম হবেনা।
হযরত উমর
ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি যে মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন, নিম্নে
বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে তার দলীলসমূহ পেশ করা হলো-
ولقد نهى عمر رضى الله عنه
المنساء عن الخروج الى المساجد فشكون الى عائشة رضى الله عنها- فقالت لو علم النبى
صلى الله عليه وسلم مما علم عمر رضى الله عنه مااذن لكن فى الخروج- (فتح القدبر ج ১ صفه ৩১৪، دارالعلوم ديوبند، فتاو..رحيمية)
অর্থঃ- হযরত উমর ফারুক
আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন, তখন
মহিলারা হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেন। তখন হযরত
ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম
তিনি তোমাদের এখন যে অবস্থায় দেখছেন, এরূপ অবস্থায় যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখতেন, তবে
তোমাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিতেন না।” (ফাতহুল ক্বাদির, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ফতওয়ায়ে রহিমীয়া)
أنحضرت
صلی اللہ علیہ وسلم کیوقت مین عورتون نے
جماعت مین حاضر ھوتی تھین- حضرت عمر فارق علیہ السلام نے عور تون کو مسجدون مین
جانے سے منع فرمایا- عور تون نے انکی شکایت
ام المؤمنین حضرت عائشۃ علیہا السلام سے کی-أپ نے جواب دیا کہ اگر انحضرت
صلی اللہ علیہ وسلم کو وہ حال معلوم ھوتا
جو حضرت عمر فاروق علیہ السلام کو معلوم ھوا- تو تمکو اجازت مسجد مین جانے کی نہ دیتے-
(غایۃ الاوطار ج 1 صفہ 236، طحطاوی، شامی- دار المختار، رد المحتار، عین الھدایہ-
فتاوے ھندیہ- ھدایہ- نھایہ)
অর্থঃ- নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে মহিলারা জামায়াতে
উপস্থিত হতো, (পরবর্তীতে) হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে জামায়াতে আসতে নিষেধ
করেছেন, তখন মহিলারা হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন, তখন হযরত
ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম
তিনি তোমাদের যে অবস্থা অবগত হয়েছেন, তা যদি নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবগত হতেন, তবে
তিনিও তোমাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিতেন না।” (গায়াতুল
আওতার, তাহতাবী,
শামী, দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার,
ফতওয়ায়ে হিন্দীয়া, আইনুল
হেদায়া, নেহায়া,
হেদায়া)
আর হযরত
উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞাকে যে, হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার
পূর্ণ সমর্থ করেছেন,
তা পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যেও উল্লেখ আছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে,
لوان
رسول الله صلى الله عليه وسلم رأى ما احد ثت النساء لمنعهن. (ابودؤد- تخارى، مسلم)
অর্থঃ- “যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
মহিলাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন, তবে অবশ্যই নিষেধ করতেন।” (আবু দাউদ
শরীফ, বুখারী শরীফ,
মুসলিম শরীফ)
সুতরাং উপরোক্ত কিতাবসমূহের আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, হযরত উমর
ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন এবং হযরত ছিদ্দীকা
আলাইহাস সালাম তিনি তা পূর্ণ সমর্থন করেন এবং এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হলো যে, যারা বলে
হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি নিষেধ করেননি- তারা হয় অজ্ঞ, জাহিল
অথবা নিরেট মিথ্যাবাদী।
ইজমায়ে
উম্মতঃ
আর
পরবর্তীতে ইমাম, মুজতাহিদগণ পর্দার গুরুত্ব মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার উৎসাহ ও ফযীলতপূর্ণ পবিত্র
হাদীছ শরীফ ও হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞা ও হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস
সালাম উনার সমর্থনের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ কেউ বিনা শর্তে মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া
দেন, আর কেউ শর্ত সাপেক্ষে মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেন তবে হানাফী মাযহাবের সকল
ইমামগণ উনারাই বিনা শর্তে মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেন এবং উক্ত ফতওয়ার উপর উম্মতের
ইজমা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা লাভ করে, বিশেষ করে হানাফী মাযহাবের ইমাম মুজতাহিদদের মধ্যে। যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়,
قد اجمعت الامة على كراهة خروج النساء
الى الجماعة. (امداد الاحكام
অর্থঃ “মহিলাদের
জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
(ইমদাদুল আহকাম)
কাজেই
যেখানে বিশ্বের অসংখ্য ইমাম, মুজতাহিদ মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নাজায়েয অর্থাৎ মাকরূহ্ তাহরীমী
ফতওয়া দেন, সেখানে এর বিরোধিতা করে এটাকে জায়েয বলা গোমরাহী ছাড়া কিছুই নয়। আর এদের
ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ ফরমান,
ومن
يشاقق الرسول من بعد ماتبين له الهدى ويتبغ غير سبيل المؤمنين نوله مانولى الخ.
অর্থঃ- “যে কারো
নিকট হেদায়েত বিকশিত হবার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
বিরুদ্ধাচরণ করবে,
আর মু’মিনদের পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ করবে, আমি তাকে
সেদিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে।”
হযরত শায়খ
আহমদ ইবনে আবু সাঈদ মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পবিত্র তাফসীর
মুবারক উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন,
فجعلت
مخالفة المؤمنين مشل مخالفة الرسول فيكرن اجماعهم كخبر الرسول حجة قطعية.
অর্থঃ- “এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মু’মিনদের
বিরোধীতাকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অতএব নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মতো তাদের পবিত্র ইজমা শরীফও অকাট্য এবং প্রামান্য দলীল বলে পরিগণিত হবে।
(নুরুল আনোয়ার)
উপরোক্ত পবিত্র
আয়াত শরীফ ও উনার পবিত্র তাফসীর মুবারক দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম
মুজতাহিদগণ উনাদের মতের বিরোধিতা করার অর্থ হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করা, যা
স্পষ্টই গোমরাহী। আর এটাও যেনে রাখা দরকার যে, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা যে ফতওয়া দিয়েছেন, তা পবিত্র
কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার বিপরীত নয় বরং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ
ভিত্তিক। তাই ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “আমার কোন
কথা যদি তোমরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনাদের খেলাফ পাও, তবে তা প্রাচীরে ছুড়ে ফেলে দিও। এর অর্থ হলো- উনার কোন
কথাই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খেলাফ ছিলনা। কারণ তিনি ছিলেন
হাকিমে হাদীছ অর্থাৎ পৃথিবীর সকল পবিত্র
হাদীছ শরীফই উনার মুখস্ত ছিল। কাজেই ভুল হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। তাই দেখা যায়, পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ অগণিত
ইমাম-মুজতাহিদ, আলেম-মুহাদ্দিস, মুফাচ্ছির-মুহাক্কিক,
মুদাক্কিক এবং পৃথিবীর অধিকাংশ লোক যুগ যুগ ধরে সর্বশ্রেষ্ট
মাযহাব হানাফী মাযহাবের অনুসরণ করে আসছে এবং অনেকেই হানাফী মাযহাবের অন্তর্ভূক্ত
হতে পেরে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে
অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
কিতাবে
আরো উল্লেখ রয়েছে,
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম যখন পৃথিবীতে তাশরীফ আনবেন, তখন উনি
যে ইজতেহাদ করবেন,
উনার সেই ইজতেহাদকৃত মাসয়ালাগুলো হানাফী মাযহাবের মাসয়ালার
সাথে হুবহু মিলে যাবে।
এবার
চিন্তা করে দেখুন,
হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইজতিহাদ
কত সুক্ষ্ম। আর হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে হযরত ইমাম
শাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
الناس كلهم عيال ابى حسبفة فى الفقه.
অর্থঃ- “সমস্ত
মানুষ ইলমে ফিকাহর দিক দিয়ে হযরত ইমাম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট
সন্তান তুল্য।” (তারিখে বাগদাদ মানাকেবে আবু হানীফা ইলাউস সুনান)
কাজেই পবিত্র
কুরআন শরীফ, পবিত্র
হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা
শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের কোন মাসয়ালার বিরোধিতা করা (সেটা যে কোন মাযহাবেরই হোক
না কেন) মূলতঃ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই
বিরোধিতা করা। সুতরাং মূলকথা হলো, মহিলাদের মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার উপর উম্মতের
ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বে তা অনুসৃত হয়ে আসছে। পবিত্র
ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ যেহেতু পবিত্র কুরআন শরীফ ও
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই অন্তর্ভূক্ত ও সমর্থিত, সেহেতু
উক্ত ইজমাকে অস্বীকার করা বা মু’মিনদের প্রচলিত পথের বিরোধিতা করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে
প্রকাশ্য গোমরাহী।
নিম্নে মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার
দলীলসমূহ পেশ করা হলো-
মহিলাদের
জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী
উনার অকাট্য দলীলসমূহ । (১-৩)
قال
صاحب الهدايه- ويكر لهن حضورالجماعت يعنى الشراب منهن- وقوله الجماعة يتناول الجمع
والاعياد والكسوف والا ستسقاء- قال اصحابنالان فى خروجهن خوف الفتنة وهو سبب
للحرام وما يقضى الى الحرام فهو حرام فعلى هذا قولهم يكره مرادهم يحرم (عمدة القارى شرح البخارى ج ه صفه ১৫২،
فتح المللهم شرح مسلم ج ২ صفه ৪২৮، تفهيم المسلم ج ১৪ صفه ২১)
অর্থঃ- ‘হেদায়া’ কিতাবের
লেখক তিনি বলেন,
‘যুবতী মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী।’ তিনি আরো
বলেন, ‘জামায়াত বলতে এখানে (পাঁচ ওয়াক্তসহ) জুমুয়া, ঈদাইন, কুসূফ, ইস্তেস্কা
ইত্যাদি সবই অন্তর্ভূক্ত।’
আমাদের ফকীহগণ উনারা বলেন, কেননা
তাদের (মাহিলাদের) জামায়াতের জন্য বের হওয়ায় ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে, আর ফিৎনা
হারামের অন্তর্ভূক্ত,
আর যা হারাম কাজে সহায়তা করে তাও হারাম, এ কারণেই
ফকীহ্গণ মাকরূহ্ তাহরীমীর দ্বারা মূলতঃ মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
হওয়াই উদ্দেশ্য। (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃঃ ১৫৬, ফাতহুল মুলহিম,
শরহে মসলিম ২য় জিঃ পৃঃ ৪২৮, তাফহীমুল মুসলিম ১৪ জিঃ পৃঃ ২১)
(৪-৫)
ومنعهن
المتأخرون عن الخروج فعن ابن م صلاتها فى حجرتها وصلاتها فى مخدعها افضل من صلاتها
فى بيتها- هذا يدل على ان مرضى الشرع ان لا تخرجن الى المساجد- (فيض البارى شرح
البخارى ج ২ صفه ৩২২، بذل المجهود شرح ابود ؤد)
অর্থঃ- উলামায়ে মুতাআখখিরীণগণ
উনারা মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ বলে মত প্রকাশ করেন। কেননা হযরত
ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে মরফূ হাদীছ হিসাবে বর্ণিত রয়েছে যে, মহিলাদের
হুজরায় নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম এবং ঘরের চেয়ে গোপন প্রকোষ্ট
সর্বোত্তম।
উপরোক্ত পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার আলোকে পবিত্র শরীয়ত এ মতেই ব্যক্ত করে যে, মহিলাগণ
জামায়াতের জন্য মসজিদে যাবে না। (ফায়জুল বারী শরহে বুখারী ২য় জিঃ পৃঃ ৩২২, বযলুল মাযহুদ শরহে আবু দাউদ)
(৬)
امام
حضرت طحاوی رحمۃ اللہ علیہ کھتے ھین کہ یہ حکم ابتداء اسلام مین دشمنون کی نظر مین
مسلمانون کی کثرت وشوکت کے اظھار کیلنے تھا- عینی گھتے ھین کہ اس وقت فتنون سے امن
بھی تھا اب یہ بات نھ30/09/2018
অর্থঃ- ইমাম তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইসলাম উনার প্রথম যুগে মহিলাদের জামায়াতে যাওয়ার অনুমতি
প্রদান করার কারণ হলো বেদ্বীনদের সম্মুখে মুসলমানদের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি
করা। হযরত আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সে যুগ ফিৎনা ফাসাদ থেকে সম্পূর্ণ
নিরাপদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা একেবারেই বিপরীত। ‘বাদায়’ কিতাবের
লেখক বলেন, যুবতী মহিলাদের (পাঁচ ওয়াক্তসহ) জুমুয়া, ঈদাইন ইত্যাদিতে যোগদান করার
অনুমতি নেই, কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, (হে মহিলাগণ!) তোমরা ঘরের মধ্যে
আবদ্ধ থাক। এ ছাড়াও
মহিলাদের ঘর হতে
বের হওয়ার মধ্যে ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে।” (মায়ারিফে মাদানিয়াহ, শরহে তিরমিযী ৮ম জিঃ পৃঃ ১০৮)
(৭-৮)
وجب
على الامام اونائبه منعهن من ذالك- قال المظهر- فيه دليل على جواز خروجهن الى
المساجد للصلاة- لكن فى زماننا مكروه- عمم المتأخرون المنغ للعجائز والشراب فى
الصلوات كلها (سنن النسائ شرح امام السيوطى ج ২ صفه ২৮২، مر قاة شرح مشكوة ج ৩ صفه ৫৭- ৬৭)
অর্থঃ- ইমাম অথবা তার
প্রতিনিধির জন্য জরুরী যেন মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে আসতে নিষেধ করে। হযরত
মাযহার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যদিও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা
মহিলাদের (প্রথম যুগে) মসজিদে যাওয়া প্রমাণিত কিন্তু আমাদের সময়ে তা মাকরূহ্ তাহরীমী, (কেননা)
যুবতী ও বৃদ্ধা মহিলাদের যে কোন নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে
একমত পোষণ করেছেন। (সুনানে নাসাই শরহে ইমামুস সুইয়ুতী ২য় জিঃ পৃঃ ২৮২, মিরকাত শরহে মিশকাত ৩য় জিঃ পৃঃ ৫৭, ৬৭)
(৯-১১)
ودرين
زمان مكروه است برامدن زنان برائى جماعت ازجهت فساد زمان- وتستر بجال زنان اولى
است. (اشعة للمعات شرح مشكوة ج১ صفه ৪৬২،
مظاهرحق شرح مشكوة، لمعات شرح مشكوة
অর্থঃ- বর্তমান সময়ে
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী, সময়ের
পরিবর্তনের কারণে। মহিলাদের সর্ব অবস্থায় পর্দায় (ঘরে) থাকা সর্বোত্তম। (আশয়াতুল
লুময়াত শরহে মিশকাত ১ম জিঃ পৃঃ ৪৬২, মোযাহেরে হক্ব, লোময়াত শরহে মিশকাত)
(১২-১৩)
بھر
حال جمھور کے نزدیک شابہ کو نہ ھی جمعہ و عیدین کیلنے خروج کی اجازت ھے اور نہ ھی کسی
اور نماز کیلئے- لقو لہ تعالی و قرن فی بیوتکن- وجہ یھی ھے کہ انکا خروج فتنہ کا
سبب ھے چنا نچہہ علماء متاخرین کا فتوی اسی پر ھے کہ اس زمانہ مین انکا مساجد کی
طرف نکلنا درست نھین- درس ترمذی ج2 صفہ 321 معارف السنن ج 4 صفہ 445)
অর্থঃ- জুমহুর ওলামায়ে
কিরামদের নিকট যুবতী মহিলাদের যেমনিভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া
নিষিদ্ধ, তদ্রূপ জুমুয়া ও ঈদাইনে ও নিষিদ্ধ, কেননা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, তোমরা
মহিলাগণ ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক। শুধু তাই নয়, তাদের বের হওয়ার মধ্যে ফিৎনার
আশঙ্কা রয়েছে। তাই ওলামায়ে মুতাআখ্খেরীনগণের ফতওয়া হলো মহিলাদের জামায়াতের জন্য
মসজিদে যাওয়া নাযায়েয (হোক যুবতী অথবা বৃদ্ধা) (দরসে তিরমিযী ২য় জিঃ পৃঃ ৩২১, মায়ারিফে সুনান ৪র্থ জিঃ পৃঃ ৪৪৫)
(১৪-১৮)
ريكره
لهن حضور الجاعة بعنى الشواب منهن- وافتى المشائخرون بمنعها اى العجوز من حضور
الصلوات كلها كالشابة= (اوجز المسالك شرح موطامالك ج৪ صفه ১০৬، البرهان، ليل المارب، شرح الكبير، التوشيح)
অর্থঃ- যুবতী মহিলাদের
জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী। উলামায়ে মুতাআখখীরীনগণ উনাদের ফতওয়া হলো বৃদ্ধাদেরও
যুবতী মহিলাদের ন্যায় মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ যে কোন নামাযেই হোক না কেন। (আওযাযুল
মাসালিক শরহে মুয়াত্বায়ে মালিক ৪র্থ জিঃ পৃঃ ১০৬, আল বুরহান,
নাইলুল মায়ারিব, শরহুল কবীর, আত্তাওশীহ।)
(১৯-২০)
دل الحديثان الا ولان على كون صلوة
المرأة فى غير المسجد افضل منها فى المسجد- وبكره لهن حضور الجماعة يعنى الشواب
منهن واختار المتاخرون كراهن خروج العجائز ايضاليلا اوكان نهارا= (اعلاءالسنن ج ৪ صفه ২৩১،
مجمع الزوائد).
অর্থঃ- প্রথমোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফদ্বয় দ্বারা
এটাই প্রমাণিত হয় যে,
মহিলাদের মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম।
(কেননা) মহিলাদের (যুবতী) জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী। আর
উলামায়ে মুতাআখখীরীনগণ উনাদের ফতওয়া হলো বৃদ্ধাদের জন্যও রাত্রে হোক অথবা দিনে
মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী। (ইলাউস সুনান ৪র্থ জিঃ পৃঃ ২৪১, মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ)
(২১-২৩)
سألت اباخيفة= عن النساء هل يرخص لهن فى
حضور المساجد؟ فقال العجوز تخرج للعثاء والفجر ولا تخرج لغير هما- والشابة لا تخرج
فى شئ من ذالك=
وقال
ابو يوسف- والعجرز تخرج فى صلوات كلها- والفتاوى اليوم على الكراهة فى كل الصلاوات
لظهور الفساد= (تاتارخانيه ج ১ صفه ৬ك২، خلاصة الفتاوى ج১ صفه ১৫৫، بدائع الصنائع ১ج
صفه ১৫৭)
অর্থঃ- মহিলাদের মসজিদে
যাওয়ার ব্যাপারে ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যুবতী
মহিলাগণ কোন নামাযেই তা যে কোন সময়েই হোক না কেন বের হতে পারবে না। (অর্থাৎ মসজিদে
জামায়াতে উপস্থিত হতে পারবে না) আর বৃদ্ধা মহিলাগণ ফজর ও ইশার নামায ব্যতীত কোন
নামাযেই উপস্থিত হতে পারবে না। হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বৃদ্ধা মহিলাগণ প্রত্যেক নামাযের
জামায়াতে উপস্থিত হতে পারবে। (কিন্তু ওলামায়ে মুতাআখখীরীগণ উনাদের ফতওয়া হলো)
বর্তমানে যুবতী হোক অথবা বৃদ্ধা উভয়ের জন্যই প্রত্যেক নামাযের জামায়াতে উপস্থিত
হওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী ফিৎনা প্রকাশ পাওয়ার কারণে। (তাতারখানিয়া ১ম জিঃ পৃঃ ৬২৮, খোলাছাতুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ১৫৫, বাদায়েউস সানায়ে ১ম জিঃ পৃঃ ১৫৭)
(২৪-২৯)
اور
مکروہ ھے حاضر ھونا عورتون کا جماعت مین اگرچہ حاضر ھونا جمعہ مین اور عید مین- یعنی اگرچہ برھی عورت ھو یاجوان بسبب خرابی
زمانہ- اسلئے متأخرین نے فتوی دیا کہ عور تون کا نکلنا جمععتون مین مكروہ
ھے- (غایۃ
الوطار ج1 صفہ 263، درا المختار ج1 صفہ 383، طحطاوی، شامی، رد المحتار ج1 صفہ 529، شرح التنویر)
অর্থঃ- মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমুয়া ও
ঈদের নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী, যদিও
প্রাপ্তা বয়স্কা ও বৃদ্ধা হোক সময়ের পরিবর্তনের কারণে। তাই ওলামায়ে মুতাআখখীরীনগণ
ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী। (গায়াতুল আওতার ১ম জিঃ
পৃঃ২৬৩, দুররুল মুখতার ১ম জিঃ পৃঃ ৩৮৩, তাহ্তাবী, শামী,
রদ্দুল মুহতার ১ম জিঃ পৃঃ ৫২৯, শরহে তানবীর)
(৩০-৩৮)
ويكره
لهن حضور الجماعة يعنى الشراب منهن ولا باس للعجوز- والفتاوى اليوم على كراهة
حضورهن فى الصلاوات كلهنا- (عينى شرح هذابه ج ১ صفه ৭৩৯، هدايه معالدرايه ج১ صفه ১২৬، المبسو ط للسرخىج ১ صفه ৪১،
فتح القدير ১ج صفه ৩১৭،
عالمكيريه، نهايه، عناية، الكفايه ১ج صفه ৩১৭،
نورالهدايه ১ج صفه ১০১)
অর্থঃ- “যুবতী মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে
নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী,
বৃদ্ধাদের কোন নিষেধ নেই। কিন্তু বর্তমানে পরবর্তী আলেমদের
ফতওয়া মোতাবেক যুবতী ও বৃদ্ধা উভয়ের জন্য যে কোন নামাযে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী।” (আইনী শরহে হিদায়া ১ম জিঃ পৃঃ ৭৩৯, হিদায়া মায়াদ্ দিরায়া ১ম জিঃ পৃঃ
১২৬, মাবসূত লিস্সারাখসী ২য় জিঃ পৃঃ ৪১, ফতহুল কাদীর ১ম জিঃ পৃঃ ৩১৭, আলমগীরী,
নিহায়া, ইনায়া, কিফাইয়া ১ম জিঃ পৃঃ ৩১৭, নূরুল হেদায়া ১মজিঃ পৃঃ ১০১)
(৩৯-৪২)
و
یکرہ لھن حضور الجماعۃ- یعنی مکروہ ھے عوز تون کو حاضر ھونا جماعتون مین- جوان
عورتین ھو- اور متاخرین مشائخ کا فتوی عجائز کو بھی جملہء اوقات مین منع پرھے- نہ
اوقات روزانہ اور نہ عبد گاہ مین- (عین الھدایہ ج1 صفہ 458، کافی، تبیین، فتاوے ھندیہ
ج1 صفہ 132)
অর্থঃ- প্রাপ্তা বয়স্কা
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী এবং মুতাআখ্খেরীনদের মত হলো
বৃদ্ধাদেরও যে কোন সময় যে কোন নামাযে উপস্থিত হওয়া নিষেধ। (আইনুল হিদায়া ১ম জিঃ
পৃঃ ৪৫৮, কাফী,
তাব্য়ীন, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১ম জিঃ পৃঃ১৩২)
(৪৩-৪৭)
ولايحضرن
الجماعة- لقوله تعالى وقرن فى بيو تكن- وقال النبى صلى الله عليه وسلم- صلاتها فى
قعر بيتها افضل من صلاتها فى صحن دارها وصلاتها فى صحن دارها- افضل من صلاتها فى
مسجدها- وبير تهن خيرلهن- لا يؤمن الفتنة من خروج هن اطلقه- فشمل الشابة والعجوز
وصلاة النهاريه ولليمية- والفتوى اليوم على الكر اهة فى الصلاوات كلها=
(البحرالرائق شرح كنزلدقائق ১ج صفبه ১৪৩،
احسن المنسائل صفه ৩৯، منحة الخالق، المجمع الائهر)
অর্থঃ- মহান আল্লাহ পাক
তিনি বলেন, মহিলাগণ তোমরা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি বলেন, “মহিলাদের মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে ঘরের বারান্দায় নামায পড়া উত্তম এবং ঘরের বারান্দায়
নামায পড়ার চেয়ে ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়া সর্বোত্তম। তাই মহিলাগণ জামায়াতে
উপস্থিত হবে না, প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা, রাত্রে হোক অথবা দিনে, কারণ
সাধারণতঃ তাদের বের হওয়া ফেৎনার থেকে নিরাপদ নয়। তাই পরবর্তী ফকীহ্দের ফতওয়া হলো
প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা প্রত্যেক নামাযে উপস্থিত হওয়াই মাকরূহ্ তাহ্রীমী।
(বাহরুর রায়েক শরহে কানজুদ দাক্বায়েক্ব ১ম জিঃ পৃঃ ৩৫৮, মাদানুল হাকায়েক ১ম জিঃ পৃঃ ১৪৩, আহসানুল মাসায়েল পৃঃ ৩৮, মিনহাতুল খালিক,
আল মাজ্মাউল আন্হুর)
(৪৮-৫০)
اور
مکروہ ھے جوان عورتون کاپنجو اقتہ کی جماعت مین حضر ھونا- امام اعظم اور صاحبین کا
تو بہ قول ھے کہ جوان عورت جماعت سے روکی جانے- مگر برھی جماعت مین جا سکتی ھے اور اس مین بھی امام
اعظم اور صاحبین کہ خلاف ھے- امام صاحب ظھر اور عصر اور جمعہ مین منع کرتے ھین اور
صاحبین مطلقا اجازت دیتے ھین- مگر قول متاخرین کا ساتھ منع کے کل کے خلاف ھے- نھر الفائق مین ھے کہ یہ قول بھی امام
صاحب ھی سے ماخوذ ھے- (شرح وقایۃ ج صفہ 108، شرح السقایہ ج 1 صفہ 187، نھر الفائق)
অর্থঃ- প্রাপ্তা বয়স্কা
মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া, মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে ইমামে আ’যম
রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি একমত। মতবিরোধ শুধুমাত্র
বৃদ্ধাদের বেলায়,
ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বৃদ্ধা
মহিলাগণ যোহর, আছর ও জুমুয়ায় উপস্থিত হতে পারবে না, সাহেবাইন বলেন সকল নামাযেই
উপস্থিত হতে পারবে। কিন্তু মুতাআখ্খেরীন ফকীহগণ উনারা এর বিপরীত মত প্রকাশ করেন
অর্থাৎ প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়াই
মাকরূহ্ তাহ্রীমী। ‘নহরুল ফায়েক’
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, মুতাআখ্খেরীন উনাদের উক্ত মত ইমাম
আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকেই নেওয়া হয়। (শরহে বিকায়া ১ম জিঃ পৃঃ ১০৮, শরহে সেকায়া ১ম জিঃ পৃঃ ১৮৭, নহরুল ফায়েক।
(৫১-৫৪)
ويكره
للنساء حضور الجماعة يعنى الشواب منهن لمافيه خوف الفتنة- والفتاوى، اليوم على
الكراهة فى الصلاوات كلهالظهور الفسق فى هدا الزمان. (الجوهرة النيرة صفه ৭৮،
مراقىالفلاح صفه ২০৫، محيط، قدورى صفه ৩৬)
অর্থঃ- প্রাপ্তা বয়স্কা
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে আসা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। ফিৎনার আশঙ্কায়। বর্তমান
যামানায় ফাসেকী প্রকাশ পাওয়ার কারণে উলামায়ে মুতাআখ্খেরীনগণ উনারা ফতওয়া দেন যে, প্রাপ্তা
বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা উভয়ের জন্য যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্
তাহ্রীমী। (আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ পৃঃ ৭৮, মারাকিউল ফালাহ পৃঃ ২০৫, মুহীত্ব, কুদূরী পৃঃ ৩৬)
(৫৫-৫৭)
ان
وجوھات کی بناپر حضرات فقھاء کرام نے بھی فتوی دیا کہ عورتون کو مسجد مین جانا مکروہ
ھے خواہ پنجواقۃ نمازون کی جماعت کیلئے جانین یا جمعہ اور عید کی نماز کیلئے- یہ حکم
عام ھے حرم شریف ھون یا مسجد نبوی ھون ھندوستان مین ھون یا عربستان سب کیلئے یھی حکم ھے- (فتاوی رحیمیہ ج 1 صفہ 173، فتاوئے نعیمیہ
صفہ 35، طریق الاسلام ج 7 صفہ 33)
অর্থঃ- (আলোচিত) উপরোক্ত
কারণে পরবর্তী ফকীহ্গণ রহমতুল্লাহি আলাইহি ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের
পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, ঈদসহ যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী। এ ফতওয়া সকল
স্থানের জন্যই প্রযোজ্য অর্থাৎ চাই হেরেম শরীফে হোক অথবা মসজিদে নববীতে।
হিন্দুস্থানে হোক অথবা আরব দেশে সকল স্থানেই মাকরূহ্ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে
রহীমিয়াহ্ ১ম জিঃ পৃঃ ১৭৩, ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ্ পৃঃ ৩৫, তরীকুল ইসলাম ৭ম জিঃ পৃঃ ৩৩)
(৫৮-৬১)
عورتون
كو مسجد مين جانا اور عيدين وغيره كى جماعت مين شريك هونا مكروه هى اور ان حضرت
صلى الله عليه وسل كى زمائه مين عورتون كا سجد مين انا اور بعد مين كمائت هو جاتا
حديث مين موجود هى- جسكى طرف درمختار مين اشاره كياكيا= (عزيزالفتاوى ج ১ صفه ২১৩،
فتاوى دارالعلوم ديويند ৩ ج
صفه ৪৯، مشارق الائوار صفه ১৩৭،
امداد الاحكام ১ج صفه
(৪২৫)
অর্থঃ- মহিলাদের মসজিদে
গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সময় মহিলাদের মসজিদে আসা এবং পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া পবিত্র হাদীছ
শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। এর প্রতি ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবে ইঙ্গিত রয়েছে। (আযীযুল
ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ২১৩, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ৩য় জিঃ পৃঃ ৪৯, মাশারিকুল আনওয়ার পৃঃ ১৩৭, ইমদাদুল আহ্কাম ১ম জিঃ পৃঃ ৪২৫)
(৬২-৬৪)
عورتون
کے لئے جماعت مین شریک ھونا مکروہ تحریمی ھے یکرہ حضرھن الجماعت و لو لجمعۃ و عید
ولو عجوزا لیلا- (احسن الفتاوی ج 1 صفہ 283، کفایۃ المفتی ج 3 صفہ 244، بھشتی زیور
ج 7 صفہ 29)
অর্থঃ- (প্রাপ্তা বয়স্কা)
মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। বৃদ্ধা মহিলাদের রাত্রে
হলেও জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী। (আহসানুল ফতওয়া ৩য় জিঃ পৃঃ ২৮৩, কিফায়াতুল মুফতী ৩য় জিঃ পৃঃ ২৪৪, বেহেস্তী জিওর ৭ম জিঃ পৃঃ ২৯)
(৬৫)
الفتاوى
فى ز مننا على انهن لا تخرجن وان كن عجائز الى الجماعات لا فى لليل ولا فى النهار
لغلية الفتنة= (فتاوى محموديه ج ২ صفه ২৩৯)
অর্থঃ- বর্তমান যামানার
ফতওয়া হলো- মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ, যদিও
বৃদ্ধা হোক না কেন। রাত্রে হোক অথবা দিনে (প্রত্যেক অবস্থায়ই) ফিৎনার আশঙ্কায় মাকরূহ্
তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে মাহমূদিয়াহ্ ২য় জিঃ পৃঃ ২৩৯)
সুতরাং উপরোক্ত নির্ভযোগ্য, অকাট্য ও বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা
এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, (১) পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ বাইরে কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। (২)
প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল তা’লীম
গ্রহণ করা। (৩) মহিলাদের ঘরে নামায পড়ায় অধিক ফযীলত। (৪) হযরত উমর ফারুক আলাইহিস
সালাম মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন ও হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি সেটা
পূর্ণ সমর্থন করেন। (৫) পরবর্তিতে হানাফী মাযহাব উনার ইমাম-মুজতাহিদগণ বিনা শর্তে মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী
ফতওয়া দেন এবং এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
কাজেই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি যেন আমাদের সকলকে হক্ব মত ও
হক্ব পথে কায়েম রাখেন এবং উক্ত ফতওয়া মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও
উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ মারেফত ও মহব্বত
হাছিল করার তাওফিক দান করেন। (আমীন)