পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ঈমানী কুওয়্যত বৃদ্ধিকারী মুবারক মু’জিযা ও নিদর্শনসমূহ-৬

 

কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ঈমানী কুওয়্যত বৃদ্ধিকারী মুবারক মুজিযা ও নিদর্শনসমূহ (০৬)

-সাইয়্যিদুনা হযরত শাফিউল উমাম আলাইহিস সালাম

 যিনি খালিক যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ  

 অর্থ: তিনি পবিত্র ওহী মুবারক ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না। (পবিত্র সূরা নজম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)।

তাই নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন মুবারক।

 নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মু’জিযা শরীফ মানবদেহের ৩৬০টি অস্থি সংযোগের বিস্ময়কর বর্ণনা

 ১) পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

حَدَّثَنَا حَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو تَوْبَةَ الرَّبِيعُ بْنُ نَافِعٍ، حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ، - يَعْنِي ابْنَ سَلاَّمٍ - عَنْ زَيْدٍ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَلاَّمٍ، يَقُولُ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ فَرُّوخَ، أَنَّهُ سَمِعَ عَائِشَةَ، تَقُولُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّهُ خُلِقَ كُلُّ إِنْسَانٍ مِنْ بَنِي آدَمَ عَلَى سِتِّينَ وَثَلاَثِمَائَةِ مَفْصِلٍ فَمَنْ كَبَّرَ اللَّهَ وَحَمِدَ اللَّهَ وَهَلَّلَ اللَّهَ وَسَبَّحَ اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ اللَّهَ وَعَزَلَ حَجَرًا عَنْ طَرِيقِ النَّاسِ أَوْ شَوْكَةً أَوْ عَظْمًا عَنْ طَرِيقِ النَّاسِ وَأَمَرَ بِمَعْرُوفٍ أَوْ نَهَى عَنْ مُنْكَرٍ عَدَدَ تِلْكَ السِّتِّينَ وَالثَّلاَثِمِائَةِ السُّلاَمَى فَإِنَّهُ يَمْشِي يَوْمَئِذٍ وَقَدْ زَحْزَحَ نَفْسَهُ عَنِ النَّارِ " . قَالَ أَبُو تَوْبَةَ وَرُبَّمَا قَالَ " يُمْسِي " .

অর্থ: উম্মুল মুমিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আদম সন্তান উনাদের প্রত্যেককে সৃষ্টি করা হয়েছে ৩৬০টি সন্ধি (মাফছিল) বা সংযোগের উপর ভিত্তি করে। অতঃপর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার বড়ত্ব ঘোষণা করেন, উনার প্রশংসা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার তাহলিল পাঠ করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার তাছবীহ পাঠ করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মাগফিরাত কামনা করেন, মানুষের চলাচলের রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা, হাড়ের টুকরা (কষ্টদায়ক বস্তু) সরিয়ে দেন এবং সৎ কাজে আদেশ করেন, অসৎ কাজে নিষেধ করেন এবং (এই সমস্ত নেককাজগুলি এত সংখ্যক করেন যা) গণনায় ঐ ৩৬০টি সংযোগের (সুলামা) সমান সংখ্যক হয়, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই সেই দিন (ক্বিয়ামতের দিন) জাহান্নাম থেকে নিজেকে (নিরাপদ দূরত্বে) সরানো অবস্থায় পদচারণা রত থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, কিতাবুয যাকাত, হাদীছ শরীফ নং- ২১৯৯)

২) পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْمَرْوَزِيُّ، قَالَ حَدَّثَنِي عَلِيُّ بْنُ حُسَيْنٍ، حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ، قَالَ سَمِعْتُ أَبِي بُرَيْدَةَ، يَقُولُ سَمِعْتُ

رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " فِي الإِنْسَانِ ثَلاَثُمِائَةٍ وَسِتُّونَ مَفْصِلاً فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ مِنْهُ بِصَدَقَةٍ " 

قَالُوا وَمَنْ يُطِيقُ ذَلِكَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَالَ " النُّخَاعَةُ فِي الْمَسْجِدِ تَدْفِنُهَا وَالشَّىْءُ تُنَحِّيهِ عَنِ الطَّرِيقِ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُكَ .

 অর্থ: হযরত বুরাইদা ইবনে হাসিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “একজন মানুষের দেহে ৩৬০টি সন্ধি (মাফছিল) বা সংযোগ রয়েছে। যার প্রত্যেকটির জন্য ছদক্বা করা কর্তব্য। উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ আমল করতে কোন ব্যক্তি সক্ষম! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উত্তর মুবারক করলেন, “এ রকম আমল হতে পারে- মসজিদে কোন শ্লেষ্মা মাটিতে পুঁতে ফেলা, রাস্তা থেকে কোনো কিছু সরিয়ে দেয়া, আর যদি এমন কোনো কাজ না পাওয়া যায় তাহলে পূর্বাহ্নে ২ রাকায়াত নামায অর্থাৎ চাশতের দুই রাকায়াত নামায পড়াই তার জন্য যথেষ্ট। (কিতাবুল আদব, আবূ দাঊদ শরীফ-হাদীছ শরীফ নং ৫২২২)

৩) পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ‏: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ، قَالَ‏: حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَظُنُّهُ رَفَعَهُ، شَكَّ لَيْثٌ، قَالَ‏: فِي ابْنِ آدَمَ سِتُّونَ وَثَلاَثُمِئَةِ سُلاَمَى، أَوْ عَظْمٍ، أَوْ مَفْصِلٍ، عَلَى كُلِّ وَاحِدٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ صَدَقَةٌ، كُلُّ كَلِمَةٍ طَيْبَةٍ صَدَقَةٌ، وَعَوْنُ الرَّجُلِ أَخَاهُ صَدَقَةٌ، وَالشَّرْبَةُ مِنَ الْمَاءِ يَسْقِيهَا صَدَقَةٌ، وَإِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ صَدَقَةٌ‏.

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক আদম সন্তান উনাদের মাঝে ৩৬০টি সন্ধি (سُلاَمَى সুলামা, عَظْمٍ আযম, مَفْصِل মাফছিল) বা সংযোগ রয়েছে। যার প্রত্যেকটির জন্য প্রতিদিন ১টি করে ছদক্বা নির্দিষ্ট আছে। প্রত্যেক ভালো কথাই একটি ছদক্বা। কোনো ব্যক্তি তার ভাইকে সহযোগিতা করলে সেটাও একটি ছদক্বা। এক ঢোক পানি পান করালেও একটি ছদক্বা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরালেও একটি ছদক্বা। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

৪) অনুরূপ হাদীছ শরীফ উম্মুল মুমিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকেও বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রতিদিন সকালে আপনাদের প্রত্যেকটি সন্ধি বা সংযোগের জন্য একটি করে ছদক্বার আমল রয়েছে। প্রত্যেক তাসবীহ একটি ছদক্বা, প্রত্যেক তাহমীদ একটি ছদক্বা, প্রত্যেক তাহলীল একটি ছদক্বা, প্রত্যেক তাকবীর একটি ছদক্বা, সৎ কাজের আদেশ দেয়া একটি ছদক্বা, অসৎ কাজের নিষেধ করা একটি ছদক্বা। যদিও পূর্বাহ্নে ২ রাকায়াত নামায অর্থাৎ চাশতের দুই রাকায়াত নামায আদায় করলেই ঐ ছদক্বা পরিপূর্ণ হওয়ার জন্যে যথেষ্ট।

উপরোক্ত সম্মানিত হাদীছ শরীফ অনুসারে  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, মানবদেহের মধ্যে ৩৬০টি গীট, সন্ধি, গিরা বা সংযোগ রয়েছে। অর্থাৎ এই ৩৬০টি সংযোগের মাধ্যমে মানবদেহ সৃষ্টি করা হয়েছে।

নিম্নোক্ত  শব্দ মুবারক দ্বারা হাড়ের সন্ধি বা সংযোগের বিষয়টি বুঝানো হয়েছে।

مَفْصِلٍ (মাফছিল)- শাব্দিক অর্থ- গীট, গ্রন্থি, গিরা, সংযোগ।

سُلاَمَى (সুলামা)- শাব্দিক অর্থ-আঙ্গুল বা পায়ের পাতার অস্থি এবং অস্থির অনুরূপ সংযোগ।

  সন্ধি বা সংযোগ কি:

মানবদেহের ২০৬টি হাড় আছে। দুই বা ততোধিক হাড় বা তরুণাস্থি যেখানে মিলিত হয় তাকেই সন্ধি বা সংযোগ বলা যায়। পেশী সঞ্চালনের মাধ্যমে সংযোগগুলো দিয়েই হাড়গুলি নড়াচড়া করতে পারে। 

 একটি আদর্শ সন্ধি বা সংযোগের কাজ: 

(১) মানবদেহের আকৃতি ও গঠনকে সংযুক্ত রাখে।  

(২) নড়াচড়া করার সক্ষমতা দান করে। সংযোগ না থাকলে নড়াচড়া করা যেতো না। 

(৩) হাড়ের বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে।

সন্ধি বা সংযোগের প্রকার:

গঠন এবং সংযোগের নড়াচড়া অনুসারে মূলত: তিনভাগে ভাগ করা হয়।

 ১) অনড়ণক্ষম ও ফাইব্রাস (তন্তুময়): যেমন-মাথার খুঁলি, দাঁত। শিশু জন্মের সময় নরম থাকে। পরবর্তীতে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে পরষ্পরকে ধরে রাখে। ফলে মানুষের মগজ সুরক্ষিত থাকে।

 ২) কিছুটা নড়ণক্ষম ও কার্টিলেগিনাস (তরুণাস্থিময়): যেমন- বক্ষপিজর ও মেরুদ-। বক্ষপিঞ্জরের মাধ্যমে ফুসফুস, হৃৎপিন্ড, যকৃত, অগ্নাশয়, পিত্তথলী, পাকস্থলী ইত্যাদি মূল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুরক্ষিত রাখে এবং মানবদেহকে সামনে-পিছনে, ডানে-বামে ঝুকতে সহায়তা করে।

৩) সম্পূর্ণ নড়ণক্ষম ও সাইনোভিয়াল (তরল রস ও পর্দাযুক্ত): যেমন- হাত-পা ইত্যাদি। চলাফেরা, উঠা-বসা, শোয়া, সকল ধরনের নড়াচড়া এই সংযোগগুলোর মাধ্যমে সম্ভব হয়।

এই সাইনোভিয়াল সংযোগ আবার ছয় রকম হয়:

(১) পিভট: ঘাড় এবং হাতের কনুই। মাথা ডানে বামে ঘুরাতে; হাত ঘুরাতে ব্যবহৃত হয়।

(২) বল ও ছকেট: কাঁধ ও শ্রোণী। হাত-পা সঞ্চালন করতে ব্যবহৃত হয়।

(৩) কন্ডিলয়েড বা ইলিপ্স আকৃতির: চোয়াল, আঙ্গুল। আঙ্গুল বাঁকাতে, বস্তু ধরতে ব্যবহৃত হয়।

 (৪) কব্জা বা হিঞ্জ: হাটু ও কনুই এর উর্ধ্ব বাহু। হাত-পা ভাঁজ করতে, কোন কিছু তুলতে ও হাটতে ব্যবহৃত হয়।

 (৫) গ্লাইডিং বা সমতলীয়: মেরুদ-, কব্জি, পায়ের গোড়ালি। দেহ, হাত, পা ইত্যাদি ডানে বামে ঘুরাতে ব্যবহৃত হয়। 

 (৬) স্যাডেল বা জিন আকৃতির: হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল। বৃদ্ধাঙ্গুল নাড়াতে, কোনো কিছু ধরতে। 


সন্ধি বা সংযোগ সংখ্যা:

 ১৪১৭ হিজরী (১৯৯৫ ঈসায়ী) সালের পূর্বে ধারণা করা হতো যে, মানবদেহে ৩৪০টি সংযোগ আছে। পরবর্তীতে ১৪১৭ হিজরী (১৯৯৫ ঈসায়ী) সালে একটি বৈজ্ঞানিক সংস্থা প্রমাণ করে যে, কানের অভ্যন্তরে ১০টি সংযোগ আছে, যা কার্টিল্যাগিনাস তরুণাস্থিময় পদার্থ দিয়ে গঠিত। দুই কানে ২০টি সংযোগ রয়েছে। ফলে সর্বমোট সংযোগ সংখ্যা হয় ৩৬০টি। কিছু মুসলিম এবং পশ্চিমা বিজ্ঞানী যারা প্রমাণ করতে এবং প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে যে, মানবদেহে ৩৬০টি গ্রন্থি বা সংযোগ রয়েছে। যেমন- ড. জগলুল আন নাজ্জার (সুন্নাহ এ্যান্ড সাইন্স) ড. হামীদ আহমদ হামীদ (দ্যা জার্নি অফ ফেইথ ইনসাইড দ্যা হিউম্যান বডি) উল্লেখযোগ্য।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১৪০০ বছর পূর্বে মানবদেহে ৩৬০টি সংযোগের কথা হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেছেন। অথচ তখন ডাক্তার হোক বা মানব শরীরবিদ্যার সর্বোচ্চ পারদর্শী হোক কোনো মানুষেরই এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। কাজেই এ বিষয়টি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুযিযা শরীফ উনার অন্তর্ভূক্ত।

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাদের ব্যাখ্যা: কেনো ছদক্বা করা উচিত?

মানব সন্তানকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে: এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ

 অর্থ: নিশ্চয়ই আমরা অর্থাৎ আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম আকৃতি বা দৈহিক গঠনে। (পবিত্র সূরা ত্বীন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৪)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাশারীয় ছূরত মুবারকে দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ মুবারক রেখেছেন। এছাড়া একটি শিশু প্রাথমিক অবস্থায় মায়ের জঠোরে মুহম্মদী বরকতময় সূরতে অবস্থান করেন। সুবহানাল্লাহ!! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলাতেই মানবদেহ উত্তম দৈহিক গঠন লাভ করেছে। এই গঠনের মূল ভিত্তিই হচ্ছে দেহের অভ্যন্তরে অস্থি ও তাদের মধ্যকার সংযোগ।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে এই সংযোগ না থাকলে মানুষ তার সুন্দর গঠন ধরে রাখতে পারতো না, নড়াচড়া করতে পারতো না, সর্বোপরি অন্যান্য সৃষ্টির উপরে শ্রেষ্ঠত্ব সেটা কোনোক্রমেই অর্জন করতে পারতো না। এ কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফে মানবদেহের ৩৬০টি সংযোগের কথা উল্লেখ করেছেন। যা উনার একটি মুযিযা শরীফ। আবার প্রত্যেকটি সংযোগের জন্য শুকরিয়া আদায় স্বরূপ ছদক্বা করার কথা উল্লেখ করেছেন যা মূলত: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণেই যে আমরা সংযোগগুলো প্রাপ্ত হয়েছি সে কারণে শুকরিয়া স্বরূপ খুশি প্রকাশ বা ফাল্ইয়াফরহু প্রকাশ করা। সুবহানাল্লাহ!!

পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ঈমানী কুওয়্যত বৃদ্ধিকারী মুবারক মু’জিযা ও নিদর্শনসমূহ -৫

 


পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ঈমানী কুওয়্যত বৃদ্ধিকারী মুবারক মুজিযা ও নিদর্শনসমূহ (০৫)

-সাইয়্যিদুনা হযরত শাফিউল উমাম আলাইহিস সালাম

 মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِي هَذَا الْقُرْآنِ مِن كُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

 অর্থ: আমি পবিত্র এ কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মানুষের জন্যে সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি, যাতে তারা অনুধাবন করে। (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে এমনকিছু  ওয়াক্বিয়া এবং ঐতিহাসিক তত্ত্ব ও তথ্য বর্ণনা করেছেন যা মানবরচিত ঐতিহাসিক তথ্যের মধ্যে বিরল।

 পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে আদ ও ইরাম জাতির ওয়াক্বিয়া:

 মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আল ফজর শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,

أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ الَّتِي لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِي الْبِلَادِ

 অর্থ: আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আপনার পালনকর্তা আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কি আচরণ করেছিলেন, যারা ছিলো উঁচু উঁচু স্তম্ভওয়ালা এবং যাদের সমান শক্তি ও বলবীর্যে সারা বিশ্বের শহরসমূহে কোন লোক সৃজিত হয়নি। (পবিত্র সূরা আল ফজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬-৮)

এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আদ জাতির অন্তর্ভুক্ত ইরাম নামক একটি গোত্র বা শহরের কথা বলা হয়েছে। এখানে إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ উনার অর্থ- ইরাম জাতি যারা ইমাদ বা বড় বড়, উঁচু উঁচু স্তম্ভওয়ালা। এ নামে কোন শহর/জাতির বিষয়ে কোন ইতিহাস গ্রন্থে পাওয়া যায়না।

 ইরাম শহরের অস্তিত্ব:

১৯৭৩ সালে উত্তর পশ্চিম সিরিয়ার প্রাচীন শহর ইবলা খনন করা হয়। এ শহরটি ৪৫০০ বছরের পুরনো। ধ্বসংস্তূপ এর মধ্যে রাজপ্রাসাদের গ্রন্থাগার থেকে প্রায় ২৫০০ মাটির ফলকে লিখিত প্রাচীনলিপি পাওয়া যায়।

যাতে সেমিটিক ভাষায় বিভিন্ন বিষয় লিপিবদ্ধ রয়েছে। এসব বিষয় থেকে বুঝা যায়, ইবলা শহরটি মিশর এবং মেসোপটোমিয়া সভ্যতাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো এবং সেখানে ইবলা শহর বিশ্বের কোন কোন শহরের থেকে বাণিজ্য করতো তারও উল্লেখ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ‘ইরাম শহরের নামও রয়েছে। যা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার সাথে মিদলে যায়।

 উঁচু স্তম্ভওয়ালা শহরের সন্ধান:

 পরবর্তীতে ১৯৯২ ঈসায়ী সালে স্যাটেলাইট ছবির কাফিলা চলার পথের মিলনস্থল থেকে ‘রুব আল খ¦লি মরুভূমির শেষ প্রান্তে দক্ষিণ-পশ্চিম ওমানে অবস্থিত বালু রাশির গভীরে নিমজ্জিত একটি সমৃদ্ধ শহরের সন্ধান পাওয়া যায়।

হারানো শহরের বর্ণনা:

 শহরটি বেদুঈনদের ভাষায় ঊবার বা ওয়াবার নামে পরিচিত ছিলো যা ওমানের সালালাহ বন্দর থেকে উত্তরে বর্তমান শীছর এলাকায় অবস্থিত। শহরটি ১২মিটার ধূলার নীচে নিমজ্জিত আছে। যা পরিমাণে কয়েক হাজার টন।

শহরটি  উঁচু উঁচু খাম বা পিলার দিয়ে তৈরী করা। যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আদের ইরাম জাতির সাথে মিলে যায় এবং শহরটি ৯০ সেন্টিমিটার চওড়া দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিলো। প্রাচীর এর সাথে ৮টি এবং ভেতরে ০১টি মোট ৯টি উঁচু টাওয়ারের সন্ধান পাওয়া যায়। শহরটির গঠন প্রকৃতি নিচের চিত্রে দেখানো হলো-


নগরবাসীর সমৃদ্ধির উৎস:

 তাদের সমৃদ্ধির মূলে ছিলো অত্যন্ত দামী এক প্রকার সুগন্ধি যা স্বর্ণের দামে বিক্রি হতো। ধ্বংসস্তূপ থেকে এই সুগন্ধি তৈরীর মাটির পাত্র পাওয়া গেছে।

গ্রীকদের বিভিন্ন লিখনীতে পাওয়া যায়, আদরামী হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী জাতি। যারা মসলা ও সুগন্ধির ব্যবসা করতো। এই সুগন্ধি (লবান, ধুনো) একটি বিশেষ উদ্ভিদ (বসেলিয়া সেকরা) এর কষ থেকে তৈরী করা হতো।

স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে রামলাত আস-সাবআতাইন অঞ্চলের আশে-পাশে অনেক প্রাচীন নালা, খাল এবং বাঁধ এর অস্তিত্ব বুঝা যায় যা ২০০০০০ জনবসতির সেচ কাজে ব্যবহৃত হতো। অর্থাৎ মারিব এবং হাদরামউত এর মধ্যবর্তী অঞ্চল সুগন্ধি তৈরীর উদ্ভিদ চাষ করা হতো। এই সুগন্ধি ও মসলা স্থল ও সমুদ্রপথে সারাবিশ্বে রফতানী হতো।

 কথিত আছে, সেবারাণী বিলকিস তিনি এই শহর থেকে সুগন্ধি সংগ্রহ করতেন। যা হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনাকে তিনি হাদিয়া করেছিলেন।

আরো আশ্চর্যের বিষয় হাদরামউত এর রাজধানী সাবওয়াহ খনন করে বিশাল বিশাল আকৃতির অনেক বড় বড় চমৎকার সব দালান এবং গোলাকৃতির উঁচু উঁচু স্তম্ভ পাওয়া গেছে যা অন্য কোথাও দেখা যায়নি। যাতে বুঝা যায় তাদের পূর্বপুরুষ আদ জাতির থেকে বড় বড় দালান তৈরীর পদ্ধতি শিখেছে। সূরা শুয়ারা ১২৮-১২৯

 একারণে ঐতিহাসিকগণ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন যে, এই শহরের পার্শ্ববর্তী ইয়েমেনের হাদরামউত حضرموتঅঞ্চলের অধিবাসীগণ আদ জাতির বংশধর। (চিত্র: ম্যাপ)

যাদেরকে হাদরামী (حضرمي) বলা হয়। এখানে হা- উপসর্গ এবং ই অনুসর্গ বাদ দিলে হয় ‘আদরাম যা মূলত: ‘আদ-ই ইরাম অর্থাৎ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত আদ জাতির ইরাম গোত্রের বিষয়টি ইঙ্গিত করে। আরো উল্লেখ করার মতো বিষয় হযরত হুদ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র রওযা শরীফও এই অঞ্চলে অবস্থিত। (চিত্র: মাযার শরীফ) ম্যাপে সেটা দেখানো হলো।

 আদ ও ইরাম জাতির পতন:

 হযরত হুদ আলাইহিস সালাম তাদেরকে সতর্ক করেছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করার জন্য সূরা শুয়ারা ১৩১-১৩৫

কিন্তু তারা উনার নসীহত মুবারককে কর্ণপাত করেনি ফলে মহান আল্লাহ পাক তাদেরকে আসমানী গযবে ধূলিষ্যাৎ করে দেন। (সূরা আল হাক্ক ৬-৭)

খননকার্য থেকে স্পষ্ট অনুধাবন করা যায় যে, বিশাল আকৃতির ধূলিঝড়ের (আহকাফ) আঘাতে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং রুব আল খালি বালুময় পাহাড় থেকে আগত হাজার হাজার টন বালুরাশির নিচে জীবন্ত নিমজ্জিত হয়।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ৭ রাত ৮ দিনব্যাপী এই ধূলিঝড়ের বর্ণনা ‘আহকাফ শব্দ মুবারক দিয়ে করা হয়েছে। (পবিত্র সূরা আহকাফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪-এ)

একমাত্র পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ ছাড়া ইতিহাসের পাতায় কোথাও তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি প্রচলিত বাইবেল এবং তাওরাত শরীফে আদ জাতি ও ইরাম শহরের কোনো উল্লেখ নাই। অথচ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে তাদের শক্তিশালী বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ কয়েকবার করা হয়েছে।

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে দেড় হাজার বছর পূর্বেই এর নাম উল্লেখ রয়েছে। যা আবিষ্কৃত হয়েছে মাত্র ৪৩ বছর আগে।

আরও শিক্ষনীয়, বর্তমানে যারা শানের খিলাফ করছে তারাও মুজাদ্দিদে আযম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার দোয়ার উসীলায় আদ ও ইরাম জাতির মতো ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে ও হবে। (সুবহানাল্লাহ)