পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত ঈমানী কুওয়্যত বৃদ্ধিকারী মুবারক মু’জিযা ও নিদর্শনসমূহ (০৫)
-সাইয়্যিদুনা হযরত শাফিউল উমাম
আলাইহিস সালাম
وَلَقَدْ ضَرَبْنَا
لِلنَّاسِ فِي هَذَا الْقُرْآنِ
مِن كُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّهُمْ
يَتَذَكَّرُونَ
মহান
আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে এমনকিছু ওয়াক্বিয়া এবং ঐতিহাসিক তত্ত্ব ও তথ্য বর্ণনা করেছেন
যা মানবরচিত ঐতিহাসিক তথ্যের মধ্যে বিরল।
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ الَّتِي لَمْ يُخْلَقْ
مِثْلُهَا فِي الْبِلَادِ
এই
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আদ জাতির অন্তর্ভুক্ত ইরাম নামক একটি গোত্র বা শহরের কথা
বলা হয়েছে। এখানে إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ
উনার অর্থ- ইরাম জাতি যারা ইমাদ বা বড় বড়, উঁচু উঁচু স্তম্ভওয়ালা। এ নামে কোন শহর/জাতির
বিষয়ে কোন ইতিহাস গ্রন্থে পাওয়া যায়না।
১৯৭৩ সালে উত্তর পশ্চিম সিরিয়ার প্রাচীন শহর ইবলা খনন করা হয়। এ শহরটি ৪৫০০ বছরের পুরনো। ধ্বসংস্তূপ এর মধ্যে রাজপ্রাসাদের গ্রন্থাগার থেকে প্রায় ২৫০০ মাটির ফলকে লিখিত প্রাচীনলিপি পাওয়া যায়।
যাতে সেমিটিক ভাষায় বিভিন্ন বিষয় লিপিবদ্ধ রয়েছে। এসব বিষয় থেকে বুঝা যায়, ইবলা শহরটি মিশর এবং মেসোপটোমিয়া সভ্যতাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো এবং সেখানে ইবলা শহর বিশ্বের কোন কোন শহরের থেকে বাণিজ্য করতো তারও উল্লেখ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ‘ইরাম’ শহরের নামও রয়েছে। যা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার সাথে মিদলে যায়।শহরটি উঁচু উঁচু খাম বা পিলার দিয়ে তৈরী করা। যা পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আদের ইরাম জাতির সাথে মিলে যায় এবং শহরটি ৯০ সেন্টিমিটার
চওড়া দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিলো। প্রাচীর এর সাথে ৮টি এবং ভেতরে ০১টি মোট ৯টি উঁচু টাওয়ারের
সন্ধান পাওয়া যায়। শহরটির গঠন প্রকৃতি নিচের চিত্রে দেখানো হলো-
তাদের সমৃদ্ধির মূলে ছিলো অত্যন্ত দামী এক প্রকার সুগন্ধি যা স্বর্ণের দামে বিক্রি হতো। ধ্বংসস্তূপ থেকে এই সুগন্ধি তৈরীর মাটির পাত্র পাওয়া গেছে।
গ্রীকদের বিভিন্ন লিখনীতে পাওয়া যায়, আদরামী হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী জাতি। যারা মসলা ও সুগন্ধির ব্যবসা করতো। এই সুগন্ধি (লবান, ধুনো) একটি বিশেষ উদ্ভিদ (বসেলিয়া সেকরা) এর কষ থেকে তৈরী করা হতো।স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে রামলাত আস-সাবআ’তাইন অঞ্চলের আশে-পাশে অনেক প্রাচীন নালা, খাল এবং বাঁধ এর অস্তিত্ব বুঝা যায় যা ২০০০০০ জনবসতির সেচ কাজে ব্যবহৃত হতো। অর্থাৎ মা’রিব এবং হাদরামউত এর মধ্যবর্তী অঞ্চল সুগন্ধি তৈরীর উদ্ভিদ চাষ করা হতো। এই সুগন্ধি ও মসলা স্থল ও সমুদ্রপথে সারাবিশ্বে রফতানী হতো।আরো
আশ্চর্যের বিষয় হাদরামউত এর রাজধানী সাবওয়াহ খনন করে বিশাল বিশাল আকৃতির অনেক বড় বড়
চমৎকার সব দালান এবং গোলাকৃতির উঁচু উঁচু স্তম্ভ পাওয়া গেছে যা অন্য কোথাও দেখা যায়নি।
যাতে বুঝা যায় তাদের পূর্বপুরুষ আদ জাতির থেকে বড় বড় দালান তৈরীর পদ্ধতি শিখেছে। সূরা
শুয়ারা ১২৮-১২৯
কিন্তু
তারা উনার নসীহত মুবারককে কর্ণপাত করেনি ফলে মহান আল্লাহ পাক তাদেরকে আসমানী গযবে ধূলিষ্যাৎ
করে দেন। (সূরা আল হাক্ক ৬-৭)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ৭ রাত ৮ দিনব্যাপী এই ধূলিঝড়ের বর্ণনা ‘আহকাফ’ শব্দ মুবারক দিয়ে করা হয়েছে। (পবিত্র সূরা আহকাফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪-এ)
একমাত্র
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ ছাড়া ইতিহাসের পাতায় কোথাও তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি
প্রচলিত বাইবেল এবং তাওরাত শরীফে আদ জাতি ও ইরাম শহরের কোনো উল্লেখ নাই। অথচ পবিত্র
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে তাদের শক্তিশালী বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ কয়েকবার করা হয়েছে।
পবিত্র
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে দেড় হাজার বছর পূর্বেই এর নাম উল্লেখ রয়েছে। যা আবিষ্কৃত
হয়েছে মাত্র ৪৩ বছর আগে।
আরও
শিক্ষনীয়, বর্তমানে যারা শানের খিলাফ করছে তারাও মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার দোয়ার
উসীলায় আদ ও ইরাম জাতির মতো ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে ও হবে। (সুবহানাল্লাহ)
0 Comments:
Post a Comment