শবে বরাতের আমল সম্পর্কে ইবনে মাজাহ শরীফের হাদীস নিয়ে সালাফীদের আপত্তির জবাব



শবে বরাতের আমল সম্পর্কে ইবনে মাজাহ


 শরীফের হাদীস নিয়ে সালাফীদের আপত্তির 


জবাব



শবে বরাত বা লাইলাতুন নিছফী মিন শাবান এর বিরোধীতা করতে আহলে হদস বা লা’মাযহাবীরা যে হাদীস শরীফের বিরোধীতা করে সেটা নিয়ে আজ আলোকপাত করবো। অকাট্য দলীল দ্বারা শবে বরাতের ফযীলত উপস্থাপিত হবে ইনশা আল্লাহ।

“মিশকাত শরীফ”-এর ১১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا من مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر. رواه ابن ماجه.

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের আগমন ঘটে তখন ওই রাতে তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করে জাগ্রত থাকবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে। কেননা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ওই শবে বরাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নিকটবর্তী আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি অপরিমিত রিযিক দিয়ে দিব এবং কোন বিপদে বিপন্ন ব্যক্তি আছ কি? যাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব। সাবধান! সাবধান! এভাবেই মহান আল্লাহ পাক ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ ১/১৪৪: হাদীস ১৩৮৮, ইবনে হিব্বান: হাদীস ১৩৮৮, বায়হাকী শুয়াবুল ঈমনি ৫/৪৫৪: হাদীস ৩৮২২, মিশকাতুল মাসাবীহ ২/২৪৫ : হাদীস ১২৩৩, দায়লামী শরীফ ১/২৫৯: হাদীস ১০০৭, তারগীভ ওয়াত তারহীব ২/৭৫: হাদীস ১৫৫, বায়হাক্বী – ফযায়েলে ওয়াক্ত ১/১২২ : হাদীস ২৪, জামেউস সগীল লি সুয়ুতী : হাদীষ ১৬৬৫,  মিসবাহুল জুজাহ : হাদীস ৪৯১, কানযুল উম্মাল ১২/৩১৪ : ৩৫১৭৭,  উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ১১/৮২, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াহ ৩/৩০০,  মিরকাত ৩য় খ-, ১৯৫-১৯৬, মিরয়াতুল মানাজিহ ৩য় খ- ২৯৩-২৯৪-২৯৫, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত ৪/২১২)

উক্ত হাদীস শরীফের রাবীগন হচ্ছেন:

১) খলীফাতুল মুসলিমিন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু: জলীল ক্বদর সাহাবী।
২) হযরত মুয়াবিয়া বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহ বলেন, তিনি বিশ্বস্ত রাবীদের অর্ন্তভুক্ত ছিলেন, এবং নির্ভরযোগ্য ছিলেন। (তাহযীবুত তাহযীব ২/১৯৬)
৩) হযরত ইব্রাহিম বিন মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি: তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন। (মিযানুল এতেদাল)
৪) হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দ্বয়ীফ বলেছেন। ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মাতরুক বলেছেন। কিন্তু ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বড় ফক্বীহ ও ইরাকের কাজী বলে উল্লেখ করেছেন। (মিযানুল এতেদাল ৪/৫০৩) সিয়া সিত্তার অন্যতম ইমাম হযরত আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি মদীনা শরীফের মুফতী ছিলেন। (তাহযীবুত যাহযীব ১২/২৭, মিযানুল এতেদাল ৪/৪৬১)
৫) আব্দুর রাজ্জাক ইবনু হাম্মাম ইবনে নাফে রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হাদীস শরীফের বড় নির্ভরযোগ্য রাবী বলেছেন। (তাজকিরাতুল হুফফাজ ১/৩৬৪)
৬) হযরত হাসান বিল আলী আল খালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি- হযরত খতীব বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য এবং হাফিজে হাদীস ছিলেন। (তারীখে বাগদাদ ৭/৪২৫) হযরত ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য এবং হাফিজে হাদীস ছিলেন। (তাহজীবুত তাহজীব ২/৩০২)


উক্ত হাদীস শরীফে সালাফীদের আপত্তি হচ্ছে চতুর্থ রাবী হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিয়ে। হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিন্তু য্যথাক্রমে কাজী, ফকীহ এবং মুফতী ছিলেন। সালাফীদের আপত্তির প্রেক্ষিতে বিষয়গুলো পর্যালোচনা না করলেই নয়। মুসলমান শাষন আমলে একজন ক্বাজী হওয়ার যোগ্যতা সে বিষয়ে না বললেই না। একজন ক্বাজীর প্রধান বৈশিষ্ঠই হচ্ছে সর্বোচ্চ তাক্বওয়া। সেই সাথে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা কিয়াস সর্ম্পকে অগাধ জ্ঞান। যিনি কাজী তিনি অবশ্যই আদীল বা চরম ন্যায়পরায়ন হবেন। শুধু তাই না একজন কাজীর কুরআন শরীফের ৬৬৬৬ টি আয়াত শরীফের আদেশ সূচক ১০০০ আয়াত শরীফ , নিষেধ সূচক ১০০০ আয়াত শরীফ, ওয়াদা সূচক ১০০০ আয়াত শরীফ, ভীতি সূচক ১০০০ আয়াত শরীফ, ঘটনা সূচক ১০০০ আয়াত শরীফ, উপদেশ মূলক ১০০০ আয়াত শরীফ, হালাল সূচক ২৫০ টা আয়াত শরীফ, হারাম বিষয়ে ২৫০ টা আয়াত শরীফ, তাজবীহ সংক্রান্ত ১০০ টি আয়াত শরীফ, বিবিধ বিষয়ে ৬৬ টি আয়াত শরীফ এর প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা হুকুম সর্ম্পকে পূর্ণরূপে অবহিত থাকতে হবে। এবং কয়েক হাজার হাদীস শরীফের হাফিজ হবেন। এবং প্রতিটা বিষয়ে অত্যান্ত সত্যবাদী হবেন। যেহেতু তিনি বিচারক সেহেতু উনার যোগ্যতার মাপকাঠি সহজেই অনুমেয়। (দলীলঃ সমূহ ফিক্বহের কিতাব) সহজেই বোঝা যাচ্ছে একজন কাজী মাতরূক বা পরিত্যজ্য ব্যাক্তি হতে পারেন না। তাহলে ৭০ হাজার হাদীসের হাফিজ ( মিযানুল এতেদাল ৪/৪৬১) এবং একজন ক্বাজী হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি যে রাবী হিসাবে সিকাহ সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রইলো না। 
হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শুধু ক্বাজীই ছিলেন না তিনি ছিলেন ফকীহ। (মিযানুল এতেদাল ৪/৫০৩)

একজন ফক্বীহর যোগ্যতা সর্ম্পকে ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীকত হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্যটাই যথেষ্ঠ, 
 *انما الفقيه الزاهد فى الد نيا الراغب فى الا خرة البصير بذنبه المدائم على عبادة ربه الورع الكف عن اعراض المسلمين العفيف عن اموالهم النا صح لجماعتهم.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ফক্বীহ (হাক্বীক্বী আলিম) ঐ ব্যক্তি যিনি দুনিয়া থেকে বিরাগ, আখিরাতের দিকে ঝুকে রয়েছেন, গুণাহ থেকে সতর্ক, সর্বদা ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল, পরহিযগার, মুসলমানদের মান-সম্ভ্রম নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং অধীনস্থ লোকদেরকে নছীহত করেন। (তাফসীরে কবীর)
সূতরাং ফক্বীহ হিসাবে হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি কেমন ব্যাক্তিত্ব ছিলেন নতুন করে বলার অবকাশই রাখে না। 
এছাড়ও হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্ম্পকে বিখ্যাত ইমাম হযরত আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি মদীনা শরীফের মুফতী ছিলেন। (তাহযীবুত যাহযীব ১২/২৭, মিযানুল এতেদাল ৪/৪৬১)
আর একজন মুফতী বা ফতোয়াদান কারীর বৈশিষ্ঠ সর্ম্পকে হাফিজে হাদীস হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহ , ফতোয়াদানকারী বা মুফতীকে অবশ্যই ইলমে লাদুন্নী বা খোদায়ী প্রদত্ত জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। (আল ইতকান ফি উলুমিল কুরআন)
সূতরাং সহজেই বলা যায় হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ বিশেষ গুনাবলীর অধিকারী ছিলেন। আর মদীনা শরীফের একজন মুফতীর কি পরিমান যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন সেটা আক্বল সম্পন্ন ব্যাক্তি মাত্রই বুঝতে পারার কথা।
তাই রাবী হিসাবে উনাকে মাতরূক বলার আগে অবশ্যই হুশিয়ার হতে হবে। হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মোটেও মাতরূক ছিলেন না। তিনি একজন যোগ্য হাদীস বিশারদ ও সেইসাথে ক্বাজী, ফক্বীহ ও মুফতী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ।

ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাদের কিতাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হল ঃ
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ينزل ربنا تبارك وتعالى في كل ليلة إلى سماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول من يدعوني فأستجيب له ومن يسألني فأعطيه ومن يستغفرني فأغفرله. (أخرجه البخاري ومسلم) 
অর্থ ঃ আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , আমাদের রব তা‘আলা প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন ও বলতে থাকেন, কে আছ আমার কাছে দু‘আ করবে আমি কবুল করব। কে আছ আমার কাছে চাইবে আমি দান করব। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারী শরীফ: হাদীস ১০৯৪, মুসলিম শরীফ : হাদীস ১৮০৮)

সূতরাং বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের হাদীস শরীফ দ্বারা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত শবে বরাতের হাদীস শরীফখানাও সমর্থন পেলো। অতএব বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের হাদীস শরীফ দ্বারা শবে বরাতের হাদীস শরীফ শক্তিশালী হলো।

এ ছাড়া মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া ৭/৪১২ এ উল্লেখ আছে , “এ হাদীস শরীফের সমর্থনে শাহেদ হাদীস বিদ্যমান। ফলে হাদীস শরীফটির মৌলিকত¦ স্বীকৃত। ”
এছাড়াও এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার অন্যতম বিশুদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ সিয়া সিত্তার অন্যতম কিতাব “ইবনে মাজাহ শরীফ” শরীফ উনার মধ্যে অর্ধ শা’বানের তথা শবে বরাত সম্পর্কে একটি বাবও আনা হয়েছে। যেমন, “ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর ১০০ পৃষ্ঠায় বাবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে,
باب ماجاء فى ليلة النصف من شعبان
এখন কথা হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা শবে বরাতের যদি অস্তিত্বই না থাকতো তবে হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এ প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায় রচনা করলেন কেন ? এবং সে বাবে এই হাদীস শরীফ বর্ণনা করলেন কেন? হাফিজে হাদীস ইমাম হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কি সালাফীদের চাইতে হাদীস কম বুঝতেন ? নাউযুবিল্লাহ।


ইবনে মাজাহ শরীফ বিশ্লেষনে অনেক ইমাম অনেক মতামত ও চুচেরা বিশ্লেষন করেছেন। কিন্তু কেউই উক্ত হাদীস শরীফ এর ব্যাপারে জাল বা মওজু বলেন নাই। সূতারাং অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমান হলো শবে বরাত সম্পর্কে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীস শরীফ খানা সহীহ। এবং সালাফীদের সকল আপত্তির উপশমও হবে আশাকরি। 
ইবনে তাইমিয়ার ‘মজমুয়ায়ে ফতোয়া’ থেকে শবে বরাতের আমলের দলীল


ইবনে তাইমিয়ার ‘মজমুয়ায়ে ফতোয়া’ থেকে শবে

 বরাতের আমলের দলীল



সালাফীদের মূল গুরু ইবনে তাইমিয়াও শবে বরাতের ফযীলত ও রাতের আমল স্বীকার করেছে। অথচ উত্তসূরি বর্তমান সালাফীরা শবে বরাতের বিরোধীতায় দিনরাত মশগুল।
আসুন দেখা যাক ইবনে তাইমিয়া তার ‘মাজমুয়ায়ে ফতোয়া’ কিতাবে শবে বরাত বিষয়ে কি বলেছে,

وَأَمَّا لَيْلَةُ النِّصْفِ فَقَدْ رُوِيَ فِي فَضْلِهَا أَحَادِيثُ وَآثَارٌ وَنُقِلَ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْ السَّلَفِ أَنَّهُمْ كَانُوا يُصَلُّونَ فِيهَا
অর্থ: মূলকথা শবে বরাতের মর্যাদা হাদীস শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত আছে। এ রাতের নামাজের ব্যাপারে অনেক ফযীলত বর্ণিত আছে। সলফে সালেহীনগন এ রাতে নামায আদায় করতেন।”
(দলীল: মজমুয়ায়ে ফতোয়া ২৩ তম খন্ড ১৩২ পৃষ্ঠা)


ইবনে তাইমিয়ার কিতাব থেকে যা বোঝা গেলো,
১) শবে বরাতের অস্তিত্ব আছে।
২) শবে বরাত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
৩) এ রাত জেগে নামাজ বা ইবাদত করার অনেক ফযিলত রয়েছে।
৪) সলফে সালেহীনগন এ রাতে ইবাদত বন্দেগী করতেন।


সূতরাং যারা শবে বরাত অস্বীকার কারী তারা মূলত সলফে সালেফীনদের পথতো বটেই নিজেদের গুরু ইবনে তাইমিয়ার পথ থেকেও খারীজ।
মক্কা শরীফে মসজিদুল হারাম শরীফে শবে বরাতে সারা রাত ইবাদত বন্দেগী হতো


মক্কা শরীফে মসজিদুল হারাম শরীফে শবে বরাতে

 সারা রাত ইবাদত বন্দেগী হতো



মুহম্মদ ইবনে ইসহাক আল মক্কী আল ফাকেহী রহমতুল্লাহি অালাইহি (ওফাত ২৭২) মক্কা মদীনায় যে শবে বরাত পালন হতো তা তদীয় আখবারে মক্কা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন:

"وأهل مكة فيما مضى إلى اليوم إذا كان ليلة النصف من شعبان ، خرج عامة الرجال والنساء إلى المسجد ، فصلوا ، وطافوا ، وأحيوا ليلتهم حتى الصباح بالقراءة في المسجد الحرام ، حتى يختموا القرآن كله ، ويصلوا ، ومن صلى منهم تلك الليلة مائة ركعة يقرأ في كل ركعة بـ الحمد ، و قل هو الله أحد عشر مرات ، وأخذوا من ماء زمزم تلك الليلة ، فشربوه ، واغتسلوا به ، وخبؤوه عندهم للمرضى ، يبتغون بذلك البركة في هذه الليلة ، ويروى فيه أحاديث كثيرة" (أخبار مكة للفاكهي أبو عبد الله محمد بن إسحاق بن العباس المكي الفاكهي
অর্থ: অতীত থেকে বর্তমানকাল মক্কাবাসী নারী পুরুষগণ শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে মসজিদে গমন করেন অতঃপর নামায আদায় করেনতাওয়াফ করেনমসজিদে হারামে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে সারা রাত জেগে থাকেনএমনকি তারা পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করেন। আর যারা একশ রাকাআত নামায আদায় করেন তারা প্রত্যেক রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে দশবার সূরা এখলাস তিলাওয়াত করেন। যমযমের পানি পান করেনএর দ্বারা গোসল করেন এবং অসুস্থদের জন্য তা জমা করে রাখেন। এসব আমলের মাধ্যমে তারা উক্ত রাতের বরকত অন্বেষণ করে থাকেন। (আখবারে মক্কা ৩ খন্ড ৮৪ পৃষ্ঠা)

২৭২ হিজরীতে হযরত ইমাম ফাকেহী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওফাত সন। অর্থাৎ তিনি নববী যুগের অনেক কাছের একজন মানুষ। তিনি বর্ণনা করছেন অতীত থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত মক্কা শরীফের নারী পুরষগন শবে বরাত পালন করতেন অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে এই আমল চলে আসছে। শুধু তাই নয় পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফেও এ রাতে ইবাদত হতো। 

বাতিলদের কাছে প্রশ্ন যদি এই আমল বিদয়াত হতো তাহলে সেই সোনালী যুগে কেউ এই আমলে বিরোধীতা করেছে কি? 
তাহলে আজ ১৪০০ বছর পর এসে কারা এর বিরোধীতা করছেকারা বিরোধীতা করে নব্য মতবাদ প্রচার করছেযারা শবে বরাতের বিরোধী তারা বিদয়াতি তার নব্য শয়তান। তারা চায় না মানুষ নেক আমল করে বিশেষ রাতে রহমত লাভ করুক।
শবে বরাতের পক্ষে সালাফীদের অন্যতম মুরুব্বী মুহম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিনের ফতোয়া

শবে বরাতের পক্ষে সালাফীদের অন্যতম মুরুব্বী মুহম্মাদ বিন 

সালেহ আল-উসাইমিনের ফতোয়া


সালাফীদের অন্যতম মুরুব্বী মুহম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন শবে বরাতের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছে।


ومن هذا الباب ليلة النصف من شعبان روي في فضلها أحاديث ومن السلف من يخصها بالقيام ومن العلماء من السلف وغيرهم من أنكر فضلها وطعن في الأحاديث الواردة فيها، لكن الذي عليه كثير من أهل العلم أو أكثرهم على تفضيلها
অর্থ: মূল কথা শবে বরাতের ফযিলতের ব্যাপারে অনেক হাদীস রয়েছে। তবে কেউ শবে বরাতের ফযিলতের ব্যাপারে হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করেছে (ওহাবীরা)। আর অধিকাংশ আলেম পবিত্র শবে বরাতের ফযিলতকে স্বীকার করেছেন। (মজমুয়ায়ে ফতোয়া ওয়া রাসায়েল ইবনে উসাইমিন ৭ম খন্ড ২০৫ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত ফতোয়া থেকে জানা গেলো,১) পবিত্র শবে বরাতের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ আছে।
২) অধিকাংশ (সকল) উলামায়ে কিরাম পবিত্র শবে বরাতের ফযিলত স্বীকার করেছেন।
যারা ফযিলত অস্বীকার করেছে তারা অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের বিরোধীতা করেছেসেকারনে যারা শবে বরাত অস্বীকার করেছে তাদের ভিত্তিহীন দাবি গ্রহনযোগ্য নয়। 
সূতরাং যেহেতু পবিত্র শবে বরাত সর্ম্পকে সহীহ হাদীছ শরীফ রয়েছেআর উলামায়ে কিরাম শবে বরাতের ফযিলতের বিষয়ে আমল করেছেন তাই সকলের উচিত শবে বরাতের ফযিলত হাসিল করা। ইবাদত বন্দেগী করে আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করা
শবে বরাতের হাদীস শরীফ একদম সহীহ এ  বিষয়ে সবাই একমত


শবে বরাতের হাদীস শরীফ একদম সহীহ এ

 বিষয়ে সবাই একমত


সহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা শবে বরাত প্রমাণিত। রেজালবিদগন সনদ সহীহ হওয়ার ব্যাপারে একমত। বিশ্ব বিখ্যাত হাদীছ শরীফের কিতাব “ইবনে হিব্বানে” সহীহ সনদ সহ বর্ণনা করেছেন, 



أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُعَافَى الْعَابِدُ بِصَيْدَا ، وَابْنُ قُتَيْبَةَ وَغَيْرُهُ ، قَالُوا : حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ خَالِدٍ الأَزْرَقُ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو خُلَيْدٍ عُتْبَةُ بْنُ حَمَّادٍ ، عَنِ الأَوْزَاعِيِّ ، وَابْنِ ثَوْبَانَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ مَكْحُولٍ ، عَنْ مَالِكِ بْنِ يُخَامِرَ ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلاَّ لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ

অর্থ: হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, মধ্য শাবানের রাতে মহান আল্লাহ পাক রহমতের ভান্ডার নিয়ে সকল সৃষ্টির প্রতি বিশেষ ভূমিকায় অবর্তীণ হন এবং মুশরিক অথবা হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (দলীল: সুনানে ইবনে হিব্বান- হাদীস ৫৬৩৬, মুজামুল কবীর লি তাবরানী ১৬৬৩৯, মুজামুল আওসাত লি তাবরানী ৬৭৭৬, সুনানে ইবনে মাজাহ ১৩৯০, শুয়াবুল ঈমান ৩৫৫২, হুলয়িতুল আওলিয়া ৫/১৯১)

পবিত্র এই হাদীছ শরীফ সম্পর্কে বিখ্যাত রিজাল বিশারদ আল্লামা হযরত নূরউদ্দীন ইবনে হাজার হায়ছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “মাযমাউয যাওয়ায়েদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়েদ” কিতাবে বলেছেন,



وعن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال:
"يطلع الله إلى جميع خلقه ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه، إلا لمشرك، أو مشاحن".
رواه الطبراني في الكبير والأوسط ورجالهما ثقات


হাদীস শরীফখানা উল্লেখ করে বলেছেন, “ইমাম তাবরানী উনার মুজামুল কবীর ও আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। হাদীস শরীফের সকল রাবী সেকাহ। (মাযমাউয যাওয়ায়েদ ওয়া মানবাউল ফাওয়ায়েদ ৬/১২৬ : হাদীছ নম্বর ১২৯৬০)

বিখ্যাত ইমাম হযরত মুনযিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আত তারগীব ওয়াত তারহীব” গ্রন্থে উক্ত হাদীছ উল্লেখ পূর্বক বলেছেন,




ইমাম হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সহীহ হিসাবে উনার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব – হাদীছ নম্বর ১৫৪৪)

ইমাম মুনযিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্ত গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন এই কিতাবে যে হাদীছ শরীফ “ওয়া আন” দ্বারা শুরু সেকল হাদীছ শরীফ সমূহ সনদ সহীহ। উক্ত হাদীছ শরীফখানা তিনি ওয়া আন দিয়েই শুরু করেছেন।

বর্তমানে যারা শবে বরাত অস্বীকার করে তাদের মূল গুরু  সালাফী লা’মাযহাবীদের অন্যতম ইমাম, নাছির উদ্দীন আলবানী তার “সিলসিলাতু আহাদীসি আস সহীহা” কিতাবে পবিত্র শবে বরাতের হাদীস শরীফকে সহীহ বলে উল্লেখ করে লিখেছে,  



حديث صحيح ، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا و هم معاذ
ابن جبل و أبو ثعلبة الخشني و عبد الله بن عمرو و أبي موسى الأشعري و أبي هريرة
و أبي بكر الصديق و عوف ابن مالك و عائشة .
أما حديث معاذ فيرويه مكحول عن مالك بن يخامر عنه مرفوعا به

“ 
হাদীসটি সহীহ। কেননা একদল সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বিভিন্ন সূত্রে নিসফে শাবানের মর্যদা ওপর একাধিক হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে। বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারনে হাদীস শরীফটি মজবুতি লাভ করেছে। যে সকল সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে উনারা হলেনহযরত মু'আয ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আবু সালাবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহহযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুহযরত আবু মূসা আল আশ'আরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুহযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহুহযরত আউফ বিন মালেক রদ্বিয়াল্লাহু আনহুহযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা। এছাড়াও অনেক আকাবীর সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুগন হাদীস শরীফ বর্ণনা করেরন। (দলীল: সিলসিলাতু আহাদীসি আস সহীহা ৩য় খন্ড ১৩৫ পৃষ্ঠা: হাদীস নম্বর ১১৪৪ মূল কিতাবের স্ক্যন কপি দেয়া হলো)
সূতরাং প্রমাণ হলো উক্ত হাদীছ শরীফ সহীহ। এখান যারা এমন সহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকার করবে এবং শবে বরাতের বিরোধীতা করবে তাদের জন্য বলতে হবে উক্ত হাদীছ শরীফেই তাদের ফয়সালা বলা আছে। তারা হচ্ছে মুশরিক অথবা হিংসুক। এদের নছীবে শবে বরাত জুটবে না।

শবে বরাত সম্পর্কে হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ একদম সহীহ
শবে বরাত সম্পর্কে হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ একদম সহীহ


পবিত্র শবে বরাত প্রসঙ্গে অসংখ্য সহীহ হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে। এত ব্যাপক সংখ্যক বর্ণনার ফলে লা’মাযহাবীদের গুরুরাও হাদীস শরীফ গুলোকে সহীহ বলতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও কিছু কুয়োর ব্যাঙ সালাফীহাদীস শরীফ সর্ম্পেকে অজ্ঞ হওয়ার করনে সহীহ হাদীস সমূহের বিরোধিতা করে। আসুন তাদের একটা বিরোধিতার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া যাক-
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,
عن حضرت ابى موسى الاشعرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن رواه ابن ماجه ورواه احمد. عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله تعالى عنه وفى رواية الا اثنين مشاحن وقاتل نفس.
অর্থ: “হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যেনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেনঅর্ধ শা’বানের রাত্রি তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নাযিল হন এবং উনার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন তবে মুশরিক এবং বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করেন না। কিন্তু হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এটাকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর উনার অপর এক রেওওয়ায়েত রয়েছেদু’ব্যক্তি ব্যতীত। যথা- বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তি এবং মানুষ হত্যাকারী ব্যতীত সকলকেই ক্ষমা করা হয়।” (ইবনে মাজাহ পৃষ্ঠা ১০১: হাদীস ১৩৯০বায়হাকী শুয়াইবুল ঈমান ৩/৩৮২: হাদীস ৩৮৩৫মিসবাহুল জুজাহ ১/৪৪২: হাদীস ৪৮৭মিশকাতুল মাছাবীহ ১১৫ পৃষ্ঠা: হাদীস ১৩০৬আত তাগরীব ওয়াত তারহীব ৪/২৪০কানযুল উম্মাল ১২/৩১৫: হাদীস ৩৫১৮২মাযমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫: হাদীস ১২৯৬০জামেউস সগীর : হাদীস ২৭০০ফাযায়েলে ওয়াক্ত লি বায়হাকী ১/১৩২: হাদীস ২৯জামিউল মাসানিদ ওয়াল সুনান লি ইবনে কাছীর : হাদীস ১৩০৭৬)
উক্ত হাদীস শরীফের সনদ নিম্নরূপঃ
১) হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু- তিনি ছিলেন বিখ্যাত ফক্বীহ সাহাবী। 
২) হযরত দ্বাহাক বিন আব্দুর রহমান ইবনে আয়যব রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি বলেনতিনি ছিলেন তৃতীয় তবকার ছেকাহ রাবী। এছাড়া তিনি একজন তাবেয়ীও ছিলেন। (তাহযীবুত তাহযীব ৪/৩৯২মিযানুল ইতিদাল ২/৩২৪)
৩) হযরত দ্বাহাক বিন আয়মন রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি বলেনতিনি অপরিচিত। (তাহযীবুত তাহযীব ৪/৪৮৯)
৪) হযরত ওলীদ বিন মসলিম আল কুরাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি- হযরত ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্ম্পেকে বলেনতিনি হচ্ছেন নির্ভরযোগ্য এবং অধিক হাদীস শরীফ বর্ণনাকারী। (তাহযীবুত তাহযীব ১১/১৩৪)
৫) হযরত রাশেদ ইবনু সায়ীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি- উনার সর্ম্পেকে ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি বলেনতিনি ছিলেন দশম তবকার ছিকাহ রাবী।” (তাহযীবুত তাহযীব ৩/১৯৬)

সালাফীরা উক্ত সনদের তৃতীয় বর্ণনাকারী হযরত দ্বাহাক বিন আয়মান রহমতুল্লাহি আলইহি উনার কারনে হাদীস শরীফকে অস্বীকার করতে চায়। এখানে ফিকিরের বিষয় হচ্ছে উক্ত রাবী ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি উনার কাছে অপরিচিত হলেও সিয়া সিত্তার ইমাম হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে অপরিচিত ছিলেন না। ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিলাদত ২০৯ হিজরীতে আর রাবী ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি উনার বিলাদত ৮৫২ হিজরীতে। সূতরাং (৮৫২-২০৯)= ৬৪৩ বছর আগের ইমাম হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে উক্ত রাবীর খবর ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি থেকে ভালো জানার কথা। সূতরাং উক্ত রাবীকে ঢালাও ভাবে মাজহুল বা অপরিচিত বলা মোটেও ঠিক হবে না।
উক্ত হাদীস শরীফ সর্ম্পেকে লা’মাযহাবীদের ইমাম মোবারকপুরী উল্লেখ করেছে,
رواه لبن ماجه من حديث ابي موسي الاشعري باسناد لا بأس به
ইমাম মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনউক্ত হাদীস শরীফ খানা ইমাম হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন। উক্ত হাদীস শরীফের সনদটির মধ্যে কোন অসুবিধা নেই।” (তুহফাতুল আহওয়াজী ৩/৪৪১)
তাছাড়া উক্ত হাদীস শরীফ কমপক্ষে ১০ টা সনদে বর্ণিত হয়েছে। যা হাদীস শরীফকে শাহেদ হাদীস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আহলে হাদীস লা’মাযহাবীদের অন্যতম পুজনীয় নাসির উদ্দীন আলবানী উক্ত হাদীস শরীফ সর্ম্পেকে বলেছে,ورواه ابن ماجه بلفظه من حديث أبي مويي الاشعري : صحيح لغيره 
হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক বর্ণিত হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণিত হাদীস শরীফ খানা সহীহ লি গাইরিহী। (দলীলঃ সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩ খন্ড: হাদীস ২৭৬৮)
এবার আসুন সহীহ লিগাইরিহী কাকে বলে জেনে নিই,-

ছহীহ লিগাইরিহীঃ এটা হাসান লিযাতিহী হাদীছ শরীফরে অনুরূপ। ছহীহ হাদীছ শরীফ-এর কোন রাবীর মধ্যে স্বরণ শক্তি কছিুটা কম থাকে। তবে সইে অভাব বা ত্রুটিটুকু অন্যান্য উপায়ে এবং অধকি রওিয়ায়তে দ্বারা পুরণ হয়ে যায়। মোট কথাউহার সমর্থনে বহু রিওয়ায়েত বর্ণিত থাকায় তাহার ত্রুটি ক্ষতপিুরণ হয়ে গেছে। এরূপ হাদীছ শরীফকে ছহীহ লিগাইরিহী। (তাদরীবুর রাবীমিজানুল আখবার)

লা’মাযহাবীদের গুরুরাই উক্ত হাদীস শরীফকে সহীহ বলে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে সনদে কোন অসুবিধা নেই তাহলে এখন কুয়ার ব্যং লা’মাযহাবীরা কোন সাহসে এই হাদীস শরীফের বিরোধিতা করে ?
রেজাল শাস্ত্রের কিতাব ছাড়াও উইকিপিডিয়া সূত্রমতে শবে বরাতের হাদীস শরীফ সহীহ

রেজাল শাস্ত্রের কিতাব ছাড়াও উইকিপিডিয়া সূত্রমতে শবে বরাতের হাদীস শরীফ সহীহ



হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেনযখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের আগমন ঘটে তখন ওই রাতে তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করে জাগ্রত থাকবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে। কেননানিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ওই শবে বরাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নিকটবর্তী আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেনকোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছ কিযাকে আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কিযাকে আমি অপরিমিত রিযিক দিয়ে দিব এবং কোন বিপদে বিপন্ন ব্যক্তি আছ কিযাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব। সাবধান! সাবধান! এভাবেই মহান আল্লাহ পাক ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ ১/১৪৪: হাদীস ১৩৮৮ইবনে হিব্বান: হাদীস ১৩৮৮বায়হাকী শুয়াবুল ঈমনি ৫/৪৫৪: হাদীস ৩৮২২মিশকাতুল মাসাবীহ ২/২৪৫ : হাদীস ১২৩৩দায়লামী শরীফ ১/২৫৯: হাদীস ১০০৭তারগীভ ওয়াত তারহীব ২/৭৫: হাদীস ১৫৫বায়হাক্বী – ফযায়েলে ওয়াক্ত ১/১২২ : হাদীস ২৪জামেউস সগীল লি সুয়ুতী : হাদীষ ১৬৬৫মিসবাহুল জুজাহ : হাদীস ৪৯১কানযুল উম্মাল ১২/৩১৪ : ৩৫১৭৭উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ১১/৮২মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াহ ৩/৩০০মিরকাত ৩য় খ-১৯৫-১৯৬মিরয়াতুল মানাজিহ ৩য় খ- ২৯৩-২৯৪-২৯৫লুময়াতআশয়াতুল লুময়াত ৪/২১২)
সালাফীরা এই হাদীছ শরীফ মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য এই হাদীছ শরীফের একজন রাবী রয়েছে যার নাম “হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি”। উনাকে সালাফীরা মানে না। যে কারনে হাদীছ শরীফটি তারা জাল বলে। অথচ ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহির বিখ্যাত কিতাব সিয়ারু আলামীন নুবালামিযানুল এতেদাল .... হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহির তাহযীবুত তাহযীব কিতাবে উনাকে অনেক বড় ফক্বীহ বলেছেনসেই সাথে ইরাকের কাজী হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মদীনা শরীফের মুফতী বলে আখ্যায়িত করেছেন। (সিয়ারু আলামীন নুবালা ১৩/৩৭৪)
মজার বিষয় উইকিপিডিয়াতেও উনার সম্পর্কে তথ্য দেয়া হয়েছেযেটার স্কিনশট দেয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ আছে,
الفقيه الكبير قاضي العراق. قال أبو داود: كان مفتي أهل المدينة. وروى معن عن مالك بن أنس قال: "قال لي أبو جعفر المنصور: يا مالك من بقي بالمدينة من المشيخة؟ قلت: ابن أبي ذئب، وابن أبي سبرة، وابن أبي سلمة الماجشون
অর্থ: তিনি ছিলেন বড় ফক্বীহইরাকের কাজী। ইমাম আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন তিনি মদীনা শরীফের মুফতী ছিলেন। ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো মদীনা শরীফের মাশায়েখদের মধ্যে কে কে জীবত আছেনউত্তরে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন ইবনু আবী জীবইবনে আবী সাবরাহইবনু আবী সালমাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম।  উইকিপিডিয়া সূত্র
দেখা যাচ্ছে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে ইবনু আবী সাবরাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি মদীনা শরীফের জীবিত মাশায়েখদের মধ্যে অন্যতম। 

এতবড় একজন বিখ্যাত আলেম ও ব্যাক্তিত্বকে কোন সাহসে সালাফীরা ইনকার করে???
পবিত্র শবে বরাত রাতে করণীয় আমলসমূহ

পবিত্র শবে বরাত রাতে করণীয় আমলসমূহ


শবে বরাতের আমল
পবিত্র বরাত রাতে খাছভাবে ইবাদত-বন্দেগীদোয়া-ইস্তিগফার ও দিনে রোযা রাখা ইত্যাদির নির্দেশ মুবারক পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ-এ রয়েছে। পবিত্র শবে বরাতে কোন্ কোন্ ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ-এ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُوْمُوا لَيْلَهَا وَصُوْمُوا يَوْمَهَا فَاِنَّ اللهَ يَنْزِلُ فِيْهَا لِغُرُوْبِ الشَّمْسِ اِلَى سَـمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُوْلُ اَلاَ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَاَغْفِرَ لَهُ اَلاَ مِنْ مُسْتَرْزِقٌ فَاَرْزُقَهُ اَلاَ مِنْ مُبْتَلًى فَاُعَافِيَهُ اَلاَ كَذَا اَلاَ كَذَا حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ.অর্থ : “আসাদুল্লাহিল গালিব হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনমহান আল্লাহ পাকের হাবীবহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেনযখন পবিত্র শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত বরবতপূর্ণ রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উক্ত বরকতপূর্ণ রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেনকোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কিআমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কিআমি তাকে রিযিক দান করবো। কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কিআমি তার মুছিবত দূর করে দিবো। এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (দলীলঃ ইবনে মাজাহ ১/১৪৪: হাদীস ১৩৮৮ইবনে হিব্বান: হাদীস ১৩৮৮বায়হাকী শুয়াবুল ঈমনি ৫/৪৫৪: হাদীস ৩৮২২মিশকাতুল মাসাবীহ ২/২৪৫ : হাদীস ১২৩৩)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ-এর সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হলোউক্ত রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং দিনে রোযা রাখতে হবে যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক বান্দা-বান্দীকে ক্ষমা করে স্বীয় সন্তুষ্টি মুবারক দান করবেন। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র শবে বরাত শরীফ মধ্যে যেসব ইবাদত করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-
১) ছলাতুল বরাত : পবিত্র শবে বরাতে ৪১০১২ রাকায়াত সুন্নত নামায পড়া যেতে পারে।
২) ছলাতুত তাসবীহ : অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ আদায় করবেযার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।
ছলাতুত্ তাসবীহ” ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال للعباس بن عبد الـمطلب عليه السلام يا عباس يا عماه الا اعطيك الا امنحك الا اخبرك الا افعل بك عشر خصال اذا انت فعلت ذلك غفر الله لك ذنبك اوله واخره قديـمه وحديثه خطأه وعمده صغيره وكبيره سره وعلانيته ان تصلى اربع ركعات ... ان استطعت ان تصليها فى كل يوم مرة فافعل فان لـم تفعل ففى كل جـمعة مرة فان لـم تفعل ففى كل سنة مرة فان لـم تفعل ففى عمرك مرة.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আমার পিতা) হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে বলেন, ‘হে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম! হে আমার চাচা! আমি কি আপনাকে দিবোনাআমি কি আপনাকে দান করবোনাআমি কি আপনাকে বলবোনাআমি কি আপনার সাথে করবোনা দশটি কাজ? (অর্থাৎ শিক্ষা দিবোনা দশটি তাস্বীহ) যখন আপনি তা আমল করবেন মহান আল্লাহ পাক আপনার প্রথম গুণাহশেষ গুণাহপুরাতন গুণাহনতুন গুণাহঅনিচ্ছাকৃত গুণাহইচ্ছাকৃত গুণাহছোট গুণাহবড় গুণাহগোপন গুণাহপ্রকাশ্য গুণাহ ইত্যাদি সমস্ত গুণাহ-খতা ক্ষমা করে দিবেন। আপনি (ছলাতুত তাসবীহ) চার রাকায়াত নামায পড়বেন। .... যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন একবার এ নামায আপনি পড়বেন। যদি সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে একবারতাও যদি সম্ভব না হয় তবে বছরে একবারতাও যদি সম্ভব না হয় তবে জীবনে অন্ততঃ একবার এ নামায আপনি পড়বেন।” (আবূ দাঊদ শরীফইবনে মাজাহ শরীফবায়হাকী ফী দাওয়াতিল কবীর শরীফতিরমিযী শরীফমিশকাত শরীফ)
উল্লেখ্য, ‘ছলাতুত্ তাসবীহ’ আদায়ের নিয়ম হলো- 

প্রথমতঃ এই বলে নিয়ত করতে হবে যে, “আমি ছলাতুত তাসবীহ চার রাকায়াত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখী হয়ে আদায় করছি।”
নিয়ত :
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلّىَ للهِ تَعَالـٰى اَرْبَعَ رَكعَاتِ صَلٰوةُ التَّسْبِيْح سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالـٰى مُتَوَجّهًا اِلـٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ
অতঃপর তাকবীরে তাহ্রীমা বেঁধে ছানা পাঠ করতে হবেছানা পাঠ করে সূরা ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বেই ১৫ বার নিম্নোক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে-

سُبْحَانَ اللهِ وَالْـحَمْدُ للهِ وَلَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ

উচ্চারণ : “সুব্হানাল্লাহি ওয়ালহাম্দু লিল্লাহি ওয়ালা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।”
অতঃপর সূরা ক্বিরায়াত পাঠ করে রুকতে যাওয়ার পূর্বে ১০ বার,
রুকতে গিয়ে রুকর তাসবীহ পাঠ করার পর ১০ বার,
রুক থেকে উঠে(ক্বওমায়) সিজদায় যাওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে ১০ বার,
অতঃপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করার পরে ১০ বার, 
সিজদা থেকে উঠে দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার পূর্বে(জলসায়) বসে ১০ বার,
অতঃপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করার পরে ১০ বার
অর্থাৎ এরূপভাবে প্রতি রাকায়াতে ৭৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে। 

অতঃপর পরবর্তী রাকায়াতের জন্য দাঁড়াতে হবে। দাঁড়িয়ে প্রথমেই ১৫ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে।
তারপর প্রথম রাকায়াতের মতোই উক্ত তাসবীহগুলো আদায় করতে হবে। অর্থাৎ চার রাকায়াত নামাযে মোট ৩০০ বার উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে।

জরুরী মাসয়ালা : ছলাতুত তাসবীহ আদায়কালীন হাতে তাসবীহ নিয়ে গণনা করা মাকরূহ। অঙ্গুলী টিপে টিপে তাসবীহগুলো গণনা করতে হবে। কোন স্থানে তাসবীহ পড়তে ভুলে গেলে পরবর্তী তাসবীহ পাঠের সময় তা আদায় করে নিতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে ক্বওমায় (রুরু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায়) ও জলসায় (দু’ সিজদার মধ্যবর্তী বসা অবস্থায়) উক্ত তাসবীহ আদায় করা যাবেনা। যেমনসূরা-ক্বিরায়াত পাঠের পূর্বে তাসবীহ ভুলে গেলে তা ক্বিরায়াতের পর আদায় করতে হবে। ক্বিরায়াতের পর তাসবীহ ভুলে গেলে রুকতে আদায় করতে হবে।
রুকুতে তাসবীহ ভুলে গেলে উক্ত তাসবীহ ক্বওমায় আদায় না করে প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। ক্বওমায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও প্রথম সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে।
প্রথম সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে তা জলসায় আদায় না করে দ্বিতীয় সিজদাতে গিয়ে আদায় করতে হবে। জলসায় তাসবীহ ভুলে গেলে তাও দ্বিতীয় সিজদায় আদায় করতে হবে।
আর দ্বিতীয় সিজদাতে তাসবীহ ভুলে গেলে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করার পূর্বে আদায় করে নিতে হবে।
আর ভুলে যাওয়া তাসবীহ প্রত্যেক স্থানে নির্ধারিত তাসবীহ আদায় করার পর আদায় করতে হবে।

৩) ছলাতুত তাহাজ্জুদ : অতঃপর তাহাজ্জুদের নামায পড়া যাবেযা দ্বারা মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য হাছিল হয়। সুবহানাল্লাহ!
৪) পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত : পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা যেতে পারেযার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমল। সুবহাল্লাহ!
৫) পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ : পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা যাবেযার দ্বারা মহান আল্লাহ পাকের হাবীবসাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনখাতামুন্ নাবিয়্যীনহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। সুবহানাল্লাহ!
৬) যিকির-আযকার : যিকির-আযকার করা যায়যার দ্বারা দিল ইছলাহ (পরিশুদ্ধ) হয়। সুবহানাল্লাহ!
কবর যিয়ারত : কবরস্থান যিয়ারত করা যেতে পারেযার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারারাত্র ব্যয় করে দেয়া জায়িয হবেনা। সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোন কবরস্থান যিয়ারত করেই চলে আসতে হবে।
৭) দান-ছদকা : গরীব-মিসকীনকে দান-ছদকা করা যেতে পারে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়ানো যেতে পারেযার দ্বারা হাবীবুল্লাহ (আল্লাহ পাকের বন্ধু) হওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ!
৮) হালুয়া-রুটি বা গোশত রুটি পাকানো : পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে হালুয়া-রুটি অথবা অন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরী করা ইসলামী শরীয়ত দৃষ্টিতে নাজায়িয নয়। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে বিশেষ করে আমাদের দেশ ও আশেপাশের দেশসমূহে যে রুটি-হালুয়ার ব্যাপক প্রচলন রয়েছে তার পিছনে ইতিহাস রয়েছে।
ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছেপূর্ববর্তী যামানায় যখন বর্তমানের মতো বাজারবন্দরহোটেল-রেঁস্তরা ইত্যাদি সর্বত্র ছিলনা। তখন মানুষ সাধারণত সরাইখানালঙ্গরখানামুসাফিরখানা ইত্যাদিতে ছফর অবস্থায় প্রয়োজনে রাত্রিযাপন করতেন। অর্থাৎ মুসাফিরগণ তাদের ছফর অবস্থায় চলার পথে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের ঘর-বাড়ি না পেলে সাধারণত সরাইখানামুসাফিরখানা ও লঙ্গরখানায় রাত্রিযাপন করতেন। আর এ সমস্ত মুসাফিরখানালঙ্গরখানা ও সরাইখানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত থাকতেন তারাই মুসাফিরদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। বিশেষ করে মুসাফিরগণ পবিত্র শবে বরাতে যখন উল্লিখিত স্থানসমূহে রাত্রি যাপন করতেন তাদের মধ্যে অনেকেই রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতেন ও দিনে রোযা রাখতেন। যার কারণে উল্লিখিত স্থানসমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ খাবারের ব্যবস্থা করতেন যাতে মুসাফিরদের রাত্রে ইবাদত-বন্দেগী করতে ও দিনে রোযা রাখতে অসুবিধা না হয়। আর যেহেতু হালুয়া-রুটি ও গোশ্ত-রুটি খাওয়া সুন্নত সেহেতু তারা হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটির ব্যবস্থা করতেন। এছাড়াও আরবীয় এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য রুটি-হালুয়া বা রুটি-গোশ্ত। তারা ভাতমাছ ইত্যাদি খেতে অভ্যস্ত নয়। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির প্রচলন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ্যকোন আমলের ক্ষেত্রেই বদ রসম বা বদ প্রথার অনুসরণ করা জায়িয নেই। এখন মাসয়ালা হচ্ছে- কেউ যদি পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রসম-রেওয়াজ না করে বা নিজের ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে উক্ত হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা করে তাহলে তা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িয নয় বরং কেউ যদি তার নিজের ইবাদত-বন্দেগী ঠিক রেখে অন্যান্যদের জন্য যারা রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করবে ও দিনে রোযা রাখবে তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালনের সুবিধার্থে হালুয়া-রুটি বা গোশ্ত-রুটি অথবা আমাদের দেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহের কোন প্রকারের খাদ্যের ব্যবস্থা করে তা অবশ্যই অশেষ ফযীলত ও নেকীর কারণ হবে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا ايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الـجنة بسلام.অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনমহান আল্লাহ পাকের হাবীবহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেনহে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন করোমানুষকে খাদ্য খাওয়াওআত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়ো তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফইবনে মাজাহ শরীফদারিমী শরীফ)
তবে সতর্ক থাকতে হবে যেএই কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যাতে এমন পরিশ্রম তথা এমন সময় ব্যয় না হয় যাতে করে কারো পবিত্র শবে বরাতে ইবাদতে ঘাটতি হয়। আরো সতর্ক থাকতে হবে যেখাদ্য বিতরণ যেনো আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো অভাবগ্রস্তদের প্রাধান্য দেয়া হয়।
৯) দু’আ-ইস্তিগফার : মহান আল্লাহ পাকের নিকট দু’আ করতে হবেযার কারণে মহান আল্লাহ পাক খুশি হবেন ও নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করতে হবেযার মাধ্যমে বান্দার সমস্ত গুণাহ-খতা মাফ হয়ে মহান আল্লাহ পাক খালিছ সন্তুষ্টি মুবারক অর্জিত হয়। অর্থাৎ পবিত্র শ’বে বরাতের বারাকাতফুয়ূজাতনিয়ামতরহমতমাগফিরাত ও নাজাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যেঅনেক স্থানে দেখা যায় যেলোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলত মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে পবিত্র শবে বরাতে দু’আ কবুল করার যে প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহ্ ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর পবিত্র বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননাপবিত্র হাদীছ শরীফ-এ স্পষ্টই বলা হয়েছে যে-

حتى يطلع الفجر
অর্থ : “ফজর বা ছুবহ্ ছাদিক পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক দু’আ কবুল করেন।” (মিশকাত ২/২৪৫ : হাদীস ১২৩৩)
অতএবসবার উচিত হবে মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা।
পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে সমাজের এক শ্রেণীর আলিম সারারাত ওয়াজ মাহফিল করে থাকে। যদিও পবিত্র বরাতের রাতে ওয়াজ-নছীহত করার আদেশও নেই আবার নিষেধও করা হয়নি। তবে এ রাতে দু’আ কবুল হওয়ার ও ইবাদত বন্দেগী করার কথাই পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ ব্যক্ত হয়েছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনখাতামুন নাবিয়্যীনরহমতুল্লিল আলামীনহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِـىْ خَـمْسِ لَيَالٍ اَوَّلِ لَيْلَةٍ مّنْ رَجَبٍ وَلَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَلَيْلَتَا الْعِيْدَيْنِ وَلَيْلَةِ الْقَدْرِ الْـمُبَارَكَةِ.

অর্থ : “নিশ্চয়ই দু’আ পাঁচ রাত্রিতে কবুল হয়। পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাসের পহেলা রাত্রিপবিত্র শা’বান মাসের ১৪ই তারিখ দিবাগত রাত্রিদুই ঈদের (পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আদ্বহা) দুই রাত্রি এবং পবিত্র ক্বদর রাত্রি।” ( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪/৩১৭ : হাদীছ ৭৯২৮মা ছাবাতা বিসসুন্নাহআমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন যে-
ليلة البراءة هى ليلة العفو والكرم، ليلة التوبة والندم، ليلة الذكر والصلوة، ليلة الصدقات والـخيرات، ليلة الدعاء والزيارة، ليلة الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم، ليلة تلاواة القران الكريـم.অর্থ : “পবিত্র বরাত রাত্র হলো ক্ষমা ও দয়ার রাত্রতওবা ও লজ্জিত হওয়ার রাত্রযিকর ও নামাযের রাত্রছদক্বা ও খয়রাতের রাত্রদু’আ ও যিয়ারতের রাত্রপবিত্র দুরূদ শরীফ তথা পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করার রাত্র এবং পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার রাত্র।”
কাজেইপবিত্র বরাতের বরকতপূর্ণ রাতে যেহেতু ওয়াজ নছীহতের আদেশও করা হয়নি এবং নিষেধও করা হয়নিতাই মুছল্লীদেরকে পবিত্র বরাত রাতের ফযীলত ও ইবাদত-বন্দেগীর নিয়ম-কানুনতর্জ-তরীক্বা বাতিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ওয়াজ-নছীহত করা অবশ্যই জায়িয। তাই বলেসারারাত্র ওয়াজ করে মুছল্লীদেরকে নামাযতিলাওয়াতযিক্র-আযকারদু’আ-মুনাজাত ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগী হতে মাহরূম করা কখনোই ইসলামী শরীয়ত সম্মত নয়। বরং তা পবিত্র হাদীছ শরীফের খিলাফ। শুধু তাই নয় এতে হক্কুল ইবাদও নষ্ট করা হয়। আর হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা কবীরা গুণাহর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ওয়াজ বছরের যেকোন দিনেই করা যায়। কিন্তু পবিত্র বরাতের রাত্র বছরে মাত্র একবারই পাওয়া যায়। যদি কেউ পরবর্তী বছর হায়াতে থাকে তবেই সে পবিত্র বরাতের রাত্র পাবে। কাজেই এ মহামূল্যবান রাত্রকে শুধুমাত্র ওয়াজ করে ও শুনে অতিবাহিত করে দেয়া সুন্নতের খিলাফ। আর সম্মানিত সুন্নতের খিলাফ কাজ করে মহান আল্লাহ পাক ও হাবীবহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রিযামন্দী বা সন্তুষ্টি কস্মিনকালেও হাছিল করা সম্ভব নয়।
মূলকথা হলোবরাত রাত্র মূলত ইবাদত-বন্দেগীর রাত্রসারা রাত্র ওয়াজ করে ইবাদত বন্দেগীতে বিঘ্ন ঘটানো এবং মানুষদেরকে ইবাদত থেকে মাহরূম করা সম্পূর্ণই সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের খিলাফ। এ ধরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র্র করে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষেরা আতশবাজি করে থাকে। সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা শরীয়ত সম্মত নয়। আতশবাজি দ্বীন ইসলামের কোন শেয়ার নয়। প্রকৃতপক্ষে আতশবাজি হিন্দু ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথার অন্তর্র্ভুক্ত। তাই মুসলমানের জন্য এসব করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারকযে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফআবূ দাঊদ শরীফ)
কাজেইমুসলমানদের জন্য শুধু পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করেই নয় বরং কোন অবস্থাতেই আতশবাজিসহ বিধর্মী-বিজাতীয়দের কোন আমল করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
পবিত্র শবে বরাত হচ্ছে মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের রাত। অর্থাৎ পবিত্র শবে বরাত-এ ইবাদত-বন্দেগী করে ও পরবর্তী দিনে রোযা রেখে মহান আল্লাহ পাক ও হাবীবহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করাই মূল উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ পাক মাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।