সুওয়াল - কোন মসজিদ কমিটি উপযুক্ত ইমাম বাদ দিয়ে অনুপযুক্ত ইমাম স্থির করল অথবা বিশুদ্ধকারী ও মুত্তাকী ব্যক্তি থাকতে ফাসেক ও অশুদ্ধ ক্বারীর পিছনে নামায আদায় করলো, এতে নামাযের কোন ত্রুটি হবে কিনা জানাবেন?
জাওয়াব - যদি অনুপযুক্ত ও অশুদ্ধকারী ইমাম হয়, তবে উপযুক্ত লোক পিছনে থাকার কারণে নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর ইমামের ক্বিরাত শুদ্ধ, কিন্তু তার আমলের কারণে সে যদি ফাসেকের অন্তর্ভূক্ত হয়, তবে তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহ্রীমি হবে। (মিশকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
আবা-২৮
সুওয়াল - কোন মুসল্লি জুমুয়ার সুন্নাত বা কাবলাল জুমুয়া আরম্ভ করল, এমন সময় ইমাম খুৎবা পাঠ শুরু করল। তখন মুসল্লির করণীয় কি?
জাওয়াব - হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
اذا خرج الا مام فلا صلاة ولاكلام.
অর্থঃ-“ যখন ইমাম (হুজরা হতে) বের হয়, তখন কোন প্রকার নামাযও নেই কথাও নেই।”
এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীন-ই-কিরামগণ বলেন,
اذاخرج الامام فلا صلواة واذا صعدا لمنبر فلاكلام.
অর্থঃ- “যখন ইমাম হুজরা হতে বের হয়, তখন কোন নামায পড়া নিষেধ। আর যখন তিনি মিম্বরে দাঁড়ান অর্থাৎ খুৎবা আরম্ভ করেন, তখন থেকে কথা বলা নিষেধ।”
তবে উল্লেখিত মুসল্লির সম্পর্কে ইমামগণের দু’টি মত রয়েছে- (এক) যদি তৃতীয় রাকায়াত শুরু না করে, তবে দুই রাকায়াত পড়ে বসে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদশরীফ, দোয়া মাছুরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে। আর তৃতীয় রাকায়াত শুরু করলে চতুর্থ রাকায়াত পুরা করে নামায শেষ করবে।
(দুই) চার রাকায়াত পড়েই নামায শেষ করবে। (উপরোক্ত দুটি মতই সহীহ্, যে কোন একটি আমল করলেই চলবে।) (আলমগীরী, কাফী, সিরাজুল ওয়াহ্হাজ, তাহ্তাবী, মুয়াত্তা, ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
আবা-২৮
জাওয়াব - যদি কেউ তার স্ত্রীকে ‘মা’ বলে ডাকে এবং সাথে তালাকের নিয়ত করে, তবে এক তালাক বাইন হবে। আর জেহারের নিয়তে বললে কাফ্ফারা দিতে হবে। কাফ্ফারা হলো একটি গোলাম আযাদ করা অথবা ধারাবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখা অথবা ৬০ জন দরিদ্রকে আহার করানো। আর যদি স্ত্রীকে এমনিই ‘মা’ বলে, তবে উহা মাকরূহ্ হবে।
আর যদি খেদমতের দিক হতে তুলনা করে বলে, তবে জায়েয আছে, কিন্তু না বলাই উত্তম। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া, শরহে বেক্বায়া)
আবা-২৮
সুওয়াল - বিধর্মীদের সাথে লেনদেন তথা তাদের দোকানপাট থেকে দৈনন্দিনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী যথা- গোস্ত, মাছ, চাল, ডাল, তরি-তরকারী এবং তাদের পাকানো মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার ইত্যাদি ক্রয় জায়েয হবে কি? দলীলসহ জানতে চাই।
জাওয়াব - আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে সূরা হুজরাতের ১০ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
انما المؤمنون اخوة.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।” আর হাদীছ শরীফে আছে-
المسلم اخ المسلم.
অর্থঃ- “এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই।” কাজেই মুসলমানগণ যখন মাল-সামানা যেমন- চাল, ডাল, মাছ, গোস্ত, তেল, লবণ, মরিচ অথবা তৈরিকৃত খাদ্যদ্রব্য, যেমন-মিষ্টি, ছানা, সন্দেশ ইত্যাদি অথবা অন্যান্য দ্রব্য-সামগ্রী (যা খাদ্যের অন্তর্ভূক্ত নয়) ক্রয় করবে, তখন তার দায়িত্ব হবে প্রথমেই সেটা কোন মুসলমানের দোকান থেকে খরিদ করা। কারণ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হালাল খাওয়া ফরজ। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন-
ياايها الناس كلوا مما فى الارض حلالا طيبا ولا تتبعوا خطوات الشيطان انه لكم عدو مبين.
অর্থঃ- “হে লোকসকল! তোমরা খাদ্য গ্রহণ কর জমিন হতে, যা হালাল ও পবিত্র। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাক্বারাহ্ ১৬৮) আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة.
অর্থঃ- “হালাল কামাই করা অন্যান্য ফরজের পরে ফরজ।”
উল্লিখিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের আলোকে এটাই পরিস্ফুটিত হয় যে, মুসলমানদের জন্য হালাল কামাই করা ফরজ। তাই মুসলমান ব্যবসায়ীগণ হালাল কামাইয়ের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের জন্য উচিত, পণ্য দ্রব্য ক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ী মুসলমানকে সাহয্য করা। এটা হবে নেক কাজে সাহায্য করার শামিল। মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফ-এ তিনি ইরশাদ করেন,
تعاونوا على البر والنقوى.
অর্থঃ- “তোমরা নেকী ও পরহেজগারীর মধ্যে পরস্পর সাহায্য- সহযোগীতা কর।” (সূরা মায়েদা/২) আর হাদীছ শরীফে আছে-
والله فى عون العبد ماكان العبدفى عون اخيه.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দাকে সাহায্য করেন, যতক্ষণ বান্দা তার অপর ভাইকে সাহায্য করে থাকে।”
অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ, সে যখন কোন খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য-সামগ্রী ক্রয় করবে, তখন তা প্রথমেই মুসলমান ব্যবসায়ীগণের নিকট তালাশ করবে, সেখানে পেলে, সেখান থেকেই ক্রয় করতে হবে। আর যদি সেখানে না পাওয়া যায়, তবে বিধর্মী ব্যবসায়ীদের থেকে সেটা খরিদ করতে পারবে, যদি সেটা অত্যাবশ্যকীয় হয়। আর যদি এমন হয় যে, তা না কিনলেও চলে, তবে না কেনাই উত্তম। আরো লক্ষণীয় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য যে সকল খাদ্য-সামগ্রী খাওয়া জায়েয রয়েছে, সে সমস্ত খাদ্য-সামগ্রী যদি বিধর্মীদের মাধ্যমে তৈরি হয়। যেমন- মিষ্টি, ছানা, দধি ইত্যাদি এবং তার মধ্যে যদি নাপাকী (যা মুসলমানদের জন্য খাওয়া জায়েয নেই। যেমন গবর, চনা শুকরের চর্বি ইত্যাদি) থাকার সম্ভবনা থাকে, তবে তা খাওয়া জায়েয নেই। আর যদি নাপাকী নাও থাকে, তথাপিও তা খাওয়া তাক্বওয়ার খিলাফ।
জানা আবশ্যক যে, বিধর্মীদের সাথে লেনদেন তথা তাদের দোকানপাট থেকে পণ্য-দ্রব্য এবং নাপাকী মিশ্রিত ব্যতীত তৈরীকৃত খাদ্য-সামগ্রী বেচা-কেনা জায়েয থাকলেও তাদের সাথে আন্তরিকভাবে মহব্বত বা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা কোন মতেই জায়েয নেই বরং হারাম। কুরআন শরীফে এরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক বলেন,
ياايها الذين امنوا لا تتخذوا عدوى وعدوكم.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে (কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাসারা ইত্যাদি) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না।” (সূরা মুমতাহেনাহ্, আয়াত নং-১)
এবং সূরা ইমরানের ১১৮ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
يا ايها الذين امنوا لا تتخذوا بطانة من دوتكم.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুসলমান ব্যতীত কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না।”
আবা-২৮
জাওয়াব - পেশাব করার সুন্নাত তরীকাঃ যখন পেশাবের হাজত হবে, তখন কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে ঢিলা-কুলুখ ও পানি সাথে নিয়ে যাবে, (যদি ইস্তেঞ্জাখানায় ঢিলা-কুলুখ ও পানি না থাকে) আর ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশের পূর্বে বিস্মিল্লাহ্ বলে দোয়া পড়ে প্রবেশ করবে। পর্দার স্থান খোলার পূর্বে মনে মনে বিসমিল্লাহ্ বলে কাপড় খুলবে এবং ইস্তেঞ্জা হয়ে গেলে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে বিস্মিল্লাহ্ বলে লজ্জাস্থান ঢেকে ফেলবে। আর পুরুষ হলে- পুরুষলিঙ্গ বাম হাত দিয়ে ধরে প্রস্রাব করবে। ইস্তেঞ্জাখানা থেকে বের হয়ে দোয়া পড়বে। দাঁড়িয়ে এবং ক্বিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করে ইস্তেঞ্জা করবে না। উঁচু স্থানে বসে নীচু স্থানের দিকে প্রস্রাব করতে বসবে। বাতাসের দিকে মুখ করে বসবে না। শক্ত স্থানে পেশাব করবে না। অন্যথায় পেশাবের ছিটা শরীরে বা কাপড়ে লাগার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের নিয়মঃ পুরুষরা প্রস্রাবান্তে বাম হাতে ঢিলা-কুলুখ নিয়ে মুত্র নালীর অগ্রভাগে ধরবে। মূত্র নালীর অগ্রভাগের ভিজা দূর না হওয়া পর্যন্ত বেজোড় সংখ্যক ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করবে। ঢিলা-কুলুখ ও পানি ডান পার্শ্বে রাখবে। ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করার সময় এত্মিনানের জন্য কেউ ইচ্ছে করলে হাঁটা-হাঁটি করতে পারে বা উঠা বসা করতে পারে অথবা কাশি ইত্যাদি দিতে পারে, প্রস্রাব ঝড়া বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত। প্রস্রাবান্তে ঢিলা-কুলুখ নিয়ে পাক হওয়ার জন্য চেষ্টা করাকে ইস্তেবরা বলা হয়। এটা পুরুষের জন্য ওয়াজিব ও ফরজের অন্তর্ভূক্ত, আর মেয়েদের জন্য মোস্তাহাব। অবশ্যই হাঁটা-হাঁটির সময় পর্দার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে ও শালীনতা বজায় রাখতে হবে। আর প্রত্যেক ব্যাপারে বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখা আফজল। প্রস্রাব ঝড়া বা পড়া বন্ধ হওয়ার পরে পানি ব্যবহার করতে হবে। প্রথমে উভয় হাত তিনবার ধুয়ে লজ্জাস্থান তিনবার ধৌত করবে। অথবা হাত না ধুয়েও শুধু লজ্জাস্থান ধৌত করতে পারে। সর্বশেষে হাত ধুয়ে দাঁড়াবে।
পেশাবে মেয়েদের ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই। মেয়েরা পেশাব করার পর কিছুক্ষণ বিলম্ব করে পানি ব্যবহার করবে এবং কাপড় দিয়ে ভিজা স্থান মুছে অর্থাৎ ইস্তেনক্বা করে ইস্তেঞ্জাখানা থেকে বের হয়ে আসবে।
পায়খানা করার সুন্নাত তরীকাঃ- যখন পায়খানার হাজত হবে, তখন মাথা ঢেকে বিস্মিল্লাহ্ বলে ও দোয়া পড়ে ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশ করবে। যদি ইস্তেঞ্জাখানায় ঢিলা-কুলুখ ও পানির ব্যবস্থা না থাকে, তবে ঢিলা-কুলুখ ও পানি সাথে নিয়ে যাবে এবং বসার পূর্বে মনে মনে বিস্মিল্লাহ্ বলে কাপড় উঠায়ে বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে ফারাগাত মত বসবে। পানি ও কুলুখ ডান পার্শ্বে রাখবে। ইস্তেঞ্জা করা শেষ হয়ে গেলে ঢিলা-কুলুখ ও পানি ব্যবহার করবে।
ঢিলা-কুলুখ ও পানি ব্যবহারের নিয়ম ঃ- পুরুষের জন্য শীত ও গ্রীষ্ম উভয়কালে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের জন্য পৃথক পৃথক নিয়ম রয়েছে। শীতকালে প্রথম ঢিলা পিছন হতে মুছে সামনে নিবে, দ্বিতীয় ঢিলা সামনে থেকে মুছে পিছনে নিবে এবং তৃতীয় ঢিলা পিছন থেকে মুছে সামনে নিবে। আর গ্রীষ্মকালে প্রথম ঢিলা সামনে থেকে মুছে পিছনে নিবে, দ্বিতীয় ঢিলা পিছন থেকে মুছে সামনে নিবে এবং তৃতীয় ঢিলা সামনে থেকে মুছে পিছনে নিবে। আর মেয়েদের জন্য শীত ও গ্রীষ্ম উভয়কালে প্রথমঢিলা সামনে থেকে মুছে পিছনে নিবে, দ্বিতীয় ঢিলা পিছন থেকে মুছে সামনে নিবে এবং তৃতীয় ঢিলা সামনে থেকে মুছে পিছনে নিবে।
পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য বেজোড় সংখ্যক (৩,৫,৭ ইত্যাদি) ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সুন¦ত। ঢিলা-কুলুখ ছোট হলে তা একবারেই ব্যবহার করতে হবে, আর যদি বড় হয় তাহলে সতর্কতা অবলম্বন করে একাধিকবার ব্যবহার করা যেতে পারে। ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করার পূর্বে যে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করবে, সেটাকে “উস্কুত আন জিকরিল্লাহ্” বলে তিনবার টোকা দিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
পানি ব্যবহার করার নিয়মঃ- পায়খানার জন্য ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করার পর উভয় হাত তিনবার ভাল করে পানি দ্বারা ধৌত করবে। অতঃপর পায়খানার স্থান বেজোড় সংখ্যকবার উত্তমভাবে ধৌত করবে। অতঃপর পুণরায় উভয়হাত ধৌত করে পূর্বে বর্ণিত নিয়ম মোতাবেক পেশাবের জন্য ঢিলা-কুলুখ ও পানি ব্যবহার করবে।
ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সুন্নতে মুয়াক্কাদার অন্তর্ভূক্ত। পুরুষেরা এক, দুই বা তিন অঙ্গুলি অর্থাৎ মধ্যমা অনামিকা ও কনিষ্ঠা দ্বারা শৌচ কার্য্য সমাধা করতে পারে। তবে যত কম অঙ্গুলি ব্যবহার করে শৌচ করবে, ততই উত্তম। অঙ্গুলির পেট দ্বারা আড়াআড়িভাবে শৌচ করবে। তর্জনী (শাহাদাত), বৃদ্ধাঙ্গুলি ও হাতের তালুর দ্বারা শৌচ কার্য করবে না, এটাই আফজল। অঙ্গুলির নখ এবং হাতের পৃষ্ঠ দ্বারা শৌচ কাজ করলে অর্শ্ব রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মহিলাগণ দু’ভাগে বিভক্ত। যারা বাকেরাহ বা অবিবাহিতা তারা হাতের তালু দিয়ে শৌচ কার্য সমাধা করবে। এটাই আফজল, অন্যথায় অঙ্গুলি ব্যবহারের মাধ্যমেও করতে পারে। আর যারা সায়েবা বা বিবাহিতা তারা দু’অঙ্গুলি বা তিন অঙ্গুলি দিয়ে শৌচ কার্য সমাধা করবে। অর্থাৎ মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা। এক অঙ্গুলি দিয়ে না করা আফজল। আর রোজাদার পুরুষ-মহিলা উভয়েই পানি ব্যবহারের সাথে সাথে নেকড়া দিয়ে ভিজা স্থান মুছে ফেলবে, যাকে ইস্তেনক্বা বলা হয়। অতঃপর উঠে ইস্তেঞ্জখানা ত্যাগ করবে। সাধারণতঃ ইস্তেনক্বা করা মোস্তাহাব। আর রোজা ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ইস্তেনক্বা করা ফরজ-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত।
দোয়াঃ- ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশ করার পূর্বে “বিস্মিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবছি ওয়াল খাবায়িছ” -এ দোয়া পড়ে সেন্ডেল ব্যবহার করে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
আর বের হয়ে “গুফরানাকা আল্হামদুলিল্লাহি আযহাবা আন্নিল আযা ওয়া আফানি” -এ দোয়া পড়বে এবং বের হওয়ার সময় ডান পা আগে দিয়ে বের হবে। (আলমগীরি,শামী, মারাকিউল ফালাহ্, বাহরুর রায়েক, জামিউর রুমুস, শরহে বেক্বায়াহ, দূররুল মুখতার,জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ, শরহে মুলতাক্বা মাজালিসুল আবরার, তাবিনুল হাক্বায়েক, সগিরী, কবিরী, হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, মাজমাউল আনহোর।) আবা-২৮
সুওয়ালঃ- জনৈক মাওলানা সাহেব বলেন যে, চুরি-ডাকাতি, যেনা-ব্যাভিচার, গান-বাজনা ইত্যাদি, বান্দা আল্লাহ্ পাক-এর হুকুমে করে থাকে। তার যুক্তি হলো আল্লাহ্ তায়ালার হুকুম ব্যতীত পৃথিবীতে কোন কিছু সংঘটিত হতে পারে না। যদি আল্লাহ্ তায়ালারই হুকুমে সংঘটিত না হতো, তবে আল্লাহ্ পাক তাকে এসব হারাম কাজ করা থেকে বিরত রাখেন না কেন? আরো বলেন যে, তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস করতে হয়। তাই এসব কাজ বান্দার তাক্বদীরেরই লেখা। এটার সঠিক সমাধান দিয়ে ধন্য করবেন।
জাওয়াব - আপনার উপরোক্ত প্রশ্নটির বক্তব্য তিন ভাগে বিভক্ত- (ক) সমস্ত কাজ মহান আল্লাহ্ পাক উনার হুকুমেই হয়, এমন কি হারাম বা অবৈধ কাজও।
(খ) হারাম কাজে মহান আল্লাহ্ পাক উনার সমর্থন যদি না থাকত, তবে তিনি বান্দাদেরকে হারাম থেকে বিরত রাখেন না কেন?
(গ) তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাসের অর্থই হচ্ছে- মহান আল্লাহ্ পাক উনার বান্দাদেরকে চোর-ডাকাত, যিনাকার, শরাবখোর ইত্যাদি হিসেবে তৈরি করেন।
(ক) চুরি-ডাকাতি, যেনা-ব্যভিচার, গান-বাজনা ইত্যাদি কাজ বান্দাাহ্ মহান আল্লাহ্ পাক উনার হুকুমে করে, এরূপ বলা কুফুরী। মহান আল্লাহ্ পাক উনার হুকুম ছাড়া পৃথিবীতে কোন কাজ সংঘটিত হয় না, এটা বিশুদ্ধ কথা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
وما تسقط من ورقة الا يعلمها ولا حبة فى ظلمات الارض ولا رطب ولا يابس الا فى كتاب مبين.
অর্থঃ- মহান আল্লাহ্ পাক উনার জানা ব্যতীত গাছের কোন পাতা ঝড়ে না বা পড়ে না। আর কোন বীজও যমিনের অন্ধকারে পতিত হয় না এবং কোন ভিজা ও শুকনা জিনিষও পতিত হয় না। (এসব কিছুই) প্রকাশ্য কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। (সূরা-আনআম, আয়াত নং-৫৯)
তবে তার অর্থ এ নয় যে, হারাম কাজ অর্থাৎ চুরি-ডাকাতি, যেনা-ব্যাভিচার, গান-বাজনা ইত্যাদি বান্দা মহান আল্লাহ্ পাক উনার হুকুমে করে থাকে। বরং এর অর্থ হচ্ছে-
ان الله على كل شيئ قدير.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সমস্ত বিষয়ের উপর সর্ব শক্তিমান।” (সূরা বাক্বারাহ, আয়াত নং-২০)
মূলতঃ মানুষ হারাম কাজগুলি করে থাকে নফ্সের তাড়নায় ও শয়তানের ওসওয়াসায়। যার মধ্যে মহান আল্লাহ্ পাক উনার কোন মদদ বা সাহায্য থাকে না। আর মানুষ যখন ভাল কাজ করে, তখন আল্লাহ্ পাক তিনি তাকে গায়েবী মদদ করে থাকেন। সে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন,
وما اصابك من حسنة فمن الله.
অর্থঃ- “(হে লোক সকল) তোমাদের প্রতি যে কল্যাণ বা হাসানাহ পৌঁছে, তা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে। অর্থাৎ বান্দাদের প্রতি যে ভালাই বা খায়ের পৌঁছে থাকে, তা শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার রহ্মতের কারণেই পৌঁছে থাকে।” আর মন্দ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন,
وما اصابك من سينة فمن نفسك.
অর্থঃ- “(হে লোক সকল) তোমদের প্রতি যে মন্দ পৌঁছে বা উপস্থিত হয়, তা তোমাদের নিজের (বদ আমলের) কারণে।” (সূরা নিসা, আয়াত নং-৭৯)
তিনি আরো বলেন,
ظهر الفساد فى البر والبحر بما كسبت ايدى الناس.
অর্থঃ- “স্থলভাগে ও পানি ভাগে যে সমস্ত ফিৎনা-ফাসাদ প্রকাশিত হয়, তা মানুষের হাতের কামাই অর্থাৎ বদ্ আমলের কারণ।” (সূরা রুম, আয়াত নং-৪১)
আক্বায়েদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে- যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর রহ্মতকে কোন হারাম কাজের সাথে সংযুক্ত করে, যেমন-যদি কেউ বলে যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার রহ্মতে বান্দা চুরি করে, শরাব পান করে ইত্যাদি, তাহলে সে কাফেরের অন্তর্ভূক্ত হবে।
(খ) মহান আল্লাহ্ পাক উনার বান্দাকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন না কেন, এ কথা বলাটাও কুফুরী। কেননা আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে বলেন,
الذى خلق الموت والحيوة ليبلوكم ايكم احسن عملا.
অর্থঃ-“যিনি (আল্লাহ্ পাক) মউত ও হায়াতকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, তোমাদের মধ্যে আমলে কে উত্তম।” (সূরা মূলুক, আয়াত নং-২)
তিনি আরো বলেন-
وهديناه النجدين.
অর্থঃ- “আমি তাঁকে (তোমাদেরকে) উভয়পথ (ভাল-মন্দ) প্রদর্শন করেছি।” (সূরা বালাদ, আয়াত নং-১০)
আল্লাহ্ পাক আরো বলেন-
فالهمها فجورها وتقواها.
অর্থঃ- “অতঃপর আমি তাকে (তোমাদেরকে) নেক বা তাক্ওয়া, বদী বা পাপ সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছি।” (সূরা শামস্, আয়াত/৮)
উপরোক্ত আয়াত সমূহের আলোকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি মানুষকে ভাল-মন্দ উভয় পথ প্রদর্শন করেছেন এবং হায়াত-মউত সৃষ্টি করেছেন, কে আমলে উত্তম বা অধম তা পরীক্ষা করার জন্য। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক বান্দাদেরকে আমল করার ব্যাপারে এখতিয়ার দিয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি নেক কাজ করবে, মহান আল্লাহ্ পাক তাকে রহ্মত বর্ষণ করবেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন-
ان رحمة الله قريب من المحسنين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক উনার রহ্মত নেককারগণের প্রতি।” (সূরা আ’রাফ, আয়াত নং-৫৬)
আর যারা বদ্ কাজ করে, তাদেরকে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি মদদ বা সাহায্য করেন না। কারণ তারা শাস্তির উপযুক্ত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন,
ان الفجار لفى جحيم.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই পাপী ব্যক্তিরা জাহান্নামে থাকবে।” (সূরা ইনফিতর, আয়াত নং-১৪)
যেহেতু মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য কে আমলে উত্তম বা অধম, আর জানিয়ে দিয়েছেন- কোনটি ভাল, কোনটি মন্দ। সেহেতু মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বান্দাকে এখ্তিয়ার দিয়েছেন আমল করার ব্যাপারে। অতএব বান্দাকে হারাম কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখার প্রশ্নই উঠে না।
(গ) হ্যাঁ, ঈমানে মুফাস্সালে রয়েছে-
والقدر خيره وشره من الله تعالى.
অর্থঃ- “অর্থাৎ তাক্বদীরের ভাল-মন্দ মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে।”
এর অর্থ হচ্ছে যেমন- ধনী-গরীব, সুস্থ-অসুস্থ, অবসর-ব্যস্ততা, সুখ-দুঃখ, কৃতকার্যতা, অকৃতকার্যতা ইত্যাদি তক্ব্দীরের অন্তর্ভূক্ত, এটা মেনে নিতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন-
عسى ان تكر هوا شينا وهو خير لكم وعسى ان تحبوا شيئا وهو شر لكم والله يعلم وانتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “সম্ভবতঃ তোমরা যা খারাপ মনে কর সেটাই তোমাদের জন্য ভাল, আর যা ভাল মনে কর সেটাই তোমাদের জন্য মন্দ। মহান আল্লাহ্ পাক তিনিই জানেন কোনটি ভাল এবং কোনটি মন্দ, তোমরা জাননা।” (সূরা বাক্বারাহ্-২১৬)
হাক্বীক্বতে মহান আল্লাহ্ পাক বান্দার খারাপ চান না কিন্তু বান্দা না বুঝার কারণে নফ্সের তাড়নায় ও শয়তানের ওসওয়াসায় নিজেরা খারাপ করে থাকে। অর্থাৎ কোনটি ভাল, কোনটি ভাল নয় তা মানুষের জানা নেই। একমাত্র মহান আল্লাহ্ পাক তিনিই তা জানেন। তাই মানুষের জীবনে এ ধরণের যা কিছুই সংঘটিত হোক না কেন সেটা তাকে মেনে নিতে হবে। সেটা তার ভালোর জন্য, যা তাক্বদীরের অন্তর্ভূক্ত। এর অর্থ এই নয় যে, চুরি-ডাকাতি, যেনা-ব্যাভিচার, গান-বাজনা ইত্যাদি পাপ কাজ করার জন্য আল্লাহ্ পাক তার তাক্বদীরে লিখে দিয়েছেন।
তাক্বদীরের অর্থ হচ্ছে- মহান আল্লাহ্ পাক উনার ইল্মে আছে বা রয়েছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কোন ব্যক্তিকে জান্নাতী বা জাহান্নামী হিসেবে, নেককার বা বদ্কার হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেননি। বরং মহান আল্লাহ্ পাক উনার ইল্মে রয়েছে কে জান্নাতি হবে, কে জাহান্নামী হবে, কে নেককার হবে, কে বদ্কার হবে। যেহেতু মহান আল্লাহ্ পাক
عالم الغيب والشهادة
অর্থঃ- দৃশ্য-অদৃশ্য সব বিষয় সম্পর্কে অবহিত।
মূলতঃ সকল মানুষকে সম্মানিত করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন-
لقد كرمنا بنى ادم
অর্থঃ- “আমি বণী আদমকে সম্মানিত করেছি।” (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং-৭০)
তিনি আরো বলেন-
ولكم فى الارض مشتقرومتاع الى حين.
অর্থঃ- “তোমাদের জন্য জমিনে নির্দিষ্ট অবস্থান এবং সম্পদ ভোগ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।”
উপরোক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা এটাই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বান্দাদেরকে সম্মান দান করেছেন এবং জমিনে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত অবস্থান করার জন্য সময় দিয়েছেন। আর এ সময়ে বান্দা কি আমল করবে সে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন,
قل ان كنتم تحبون الله فا تبعونى يحببكم الله وغفرلكم ذنوبكم والله غفور الرحيم.
অর্থঃ- “(হে রাসূল) আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত পেতে চাও বা মহব্বত কর, তাহলে তোমরা আমার অনুসরণ কর। তবেই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তোমাদের মহব্বত করবেন এবং তিনি তোমাদের গুণাহ্ খাতা ক্ষমা করবেন, আর মহান আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং-৩১)
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন-
يا ايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة ولا تتبعوا خطوات الشيطان انه لكم عدو مبين.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাক্বারাহ্, আয়াত নং-২০৮)
উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদেরকে উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অনুসরণ ও অনুকরণ করতে বলেছেন এবং ইসলামে পরিপূর্ণ দাখিল হতে বলেছেন। আরো বলেছেন, যেন শয়তানের কোনরূপ অনুসরণ না করা হয়।
আর হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে-
كل مولود يولدعلى الفطرة فابويه يهودانه اوينصر انه اوبمجسائه. (بخارى شريف)
অর্থঃ- “প্রত্যেক আদম সন্তান ফিত্রাতের উপরে অর্র্থাৎ ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা (আত্মীয়-স্বজন, সঙ্গী-সাথী ও প্রতিবেশী ইত্যাদি) তাকে ইহুদী-খৃষ্টান, অগ্নি-উপাসক (নাস্তিক, কাফির, মুরতাদ, চোর,-ডাকাত, যেনাকার, শরাবখোর ইত্যাদি) বানিয়ে দেয়।
হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “আল্লাহ্ পাক প্রত্যেক বান্দাকে ঈমান ও ইসলামের উপরে জন্মদান করেন। তার পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ইত্যাদিগণ তার ঈমান, আমল-আখলাক, স্বভাব-চরিত্র নষ্ট করে থাকে।”
অতএব উপরোক্ত আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি উনার বান্দাকে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মতে মত এবং উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়ার জন্য আদেশ করেছেন এবং শয়তানের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু বান্দা নফ্সের তাড়নায় এবং শয়তানের ওসওয়াসায় হারাম ও কুফরী কাজ (চুরি-ডাকাতি, যেনা-ব্যাভিচার, শরাব পান, কুফরী-শেরেকী ইত্যাদি) করে থাকে। কাজেই কেউ যদি বলে মহান আল্লাহ্ পাক উনার হুকুমে বান্দা হারাম ও কুফুরী-শেরেকী কাজ করে, তাহলে সে কাট্টা কাফিরের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।
আবা-২৮
সুওয়াল - কোন বাড়ীতে মানুষ মারা গেলে নাকি ৩/৪দিন পর্যন্ত সেই বাড়ীতে চুলা জ্বালানো বা কোন কিছু রান্না করা যায়না। অনেক জায়গায় দেখা যায়- মৃতের আত্মীয়-স্বজন অপরের বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া করে থাকে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত, দলীলসহ জানায়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব - শরীয়তের মাসয়ালা হলো- যদি কোন আত্মীয়-স্বজন ইন্তেকাল করে, তবে তিন দিন শোক পালন করা জায়েয। কাজেই শোক পালনার্থে তিন দিন চুলা না জ্বালানো, কিম্বা পাক না করার এখতিয়ার রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, পাক করা বা চুলা জ্বালানো যাবেনা। ইচ্ছে করলে বা জরুরত হলে চুলা জ্বালানো বা পাক করা উভয়ই জায়েয রয়েছে। যদি প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজন শোকের তিন দিন খাদ্য পৌঁছায়, তবে পাক করা বা চুলা জ্বালানোর জরুরত নেই। আর যদি এমন কোন আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশী না থাকে যারা খাদ্য পৌঁছাবে, তাহলে পাক করে খাওয়া-দাওয়া করা জায়েয রয়েছে।
অতএব, এ শর্তারোপ করা কখনো শরীয়তসম্মত হবেনা যে, আত্মীয়-স্বজন ইন্তেকাল করলে ৩/৪ দিন যাবৎ চুলা জ্বালানো, পাক করা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি করা যাবেনা।
আর একমাত্র স্বামী ইন্তেকাল করলে স্ত্রীর জন্য চার মাস দশ দিন শোক প্রকাশ করার আদেশ রয়েছে। এছাড়া অন্যকোন আত্মীয়-স্বজন ইন্তেকাল করলে তিন দিনের বেশী শোক প্রকাশ করা হারাম।
উল্লেখ্য যে, যদি কোন ব্যক্তি ইন্তেকাল করার কারণে তার পরিবার-পরিজন এমন বেকারার বা শোকাহত হয়ে পড়ে যে, তাদের পক্ষে পাক করে খাওয়া-দাওয়া করা কোন মতেই সম্ভব নয়, তখন আত্মীয়য়স্বজন বা প্রতিবেশী যারা রয়েছে, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে তাদের তওফিক আন্দাজ মাইয়্যিতের পরিবার-পরিজনদের জন্য তিন দিনের খাবারের ব্যবস্থা করা। (শরহে বেকায়া, আইনুল হেদায়া, বেনায়া ইত্যাদি)
প্রশ্নঃ- মাথা মুন্ডানো কি সুন্নাত? অনেকে বলেন, এটা শুধু হজ্বের ক্ষেত্রে, আসলে কোন্টি ঠিক?
উত্তরঃ- ফতওয়া তাতারখানিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে ফতওয়া আলমগীরীতে বলা হয়েছে যে, ইমাম তোহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- মাথা মুন্ডানো সুন্নাত। প্রতি সপ্তাহে মুন্ডানো মুস্তাহাব। আবূ দাউদ শরীফে আছে, হযরত আলী আলাইহিস সালাম সব সময় মাথা মুন্ডাতেন। (আবু দাউদ ৩৩ পৃঃ, ফতওয়া আলমগীরী ৫/৩৫৭)
এখন জানার বিষয় হলো- চুলের সুন্নত তরীকা কি? আত্ তাওহীদের উক্ত উত্তর কতটুকু শুদ্ধ হয়েছে? বিস্তারিত জানাবেন।
জাওয়াব - মাসিক আত্ তাওহীদ পত্রিকায় যে উত্তর দেয়া হয়েছে, তাতে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে। অর্থাৎ প্রশ্ন মোতাবেক উত্তর হয়নি। কারণ সাধারণতঃ সুন্নত বলতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতকে বুঝানো হয়। আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের সুন্নতকে সুন্নতে ছাহাবা বলা হয়। উপরোক্ত প্রশ্নে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আর উত্তর দেয়া হয়েছে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের সুন্নত সম্পর্কে।
উপরোক্ত প্রশ্নের সঠিক জাওয়াব হচ্ছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াতে তাইয়্যিবায় মাত্র একবার হজ্ব করেছেন, আর চারবার ওমরা করেছেন। আর এই হজ্ব ও ওমরা পালন করার সময়ই তিনি মাথা মুন্ডন করেছেন। এছাড়া অন্যকোন সময় মাথা মোবারক মুন্ডন করেননি। এমনকি খোলাফা-ই-রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের মধ্যে একমাত্র হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মাথা মোবারক মুন্ডন করতেন। যার কারণে উনার চুল মোবারক সব সময় ছোট থাকতো।
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উনার চুল মোবারক ছোট রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাব দিয়েছিলেন যে, “আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “গোসলের সময় একটি চুলও যদি শুকনা থাকে, তাহলে গোসল শুদ্ধ হবেনা। আর আমার মাথার চুল যেহেতু খুব ঘন, সেহেতু সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য আমি আমার চুল ছোট রাখি।”
আল্লাহ পাক উনার রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণতঃ তিন তরীক্বায় চুল মোবারক রাখতেন। যেমন- জুম্মা, লিম্মা এবং ওফ্রা। অর্থাৎ কানের লতি মোবারক বরাবর, কানের লতি ও কাঁধ মোবারকের মাঝামাঝি, আর কাঁধ মোবারকের কাছাকাছি কিন্তু কাঁধ মোবারক স্পর্শ করেনি। এছাড়াও কখনো কখনো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কান মোবারকের মাঝামাঝি করে চুল মোবারক রাখতেন। যাকে আরবীতে নিছফু উযুনাইহে বলা হয়।
অনেকে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা ও বর্ণনার কারণ না বুঝা ও না জানার দরুন মনগড়া উক্তি করে থাকে। হাদীছ শরীফখানা হচ্ছে-
دعاللمحلقين ثلثا وللمقصرين مرة واحدة.
অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুল মুন্ডনকারীদের জন্য তিনবার দোয়া করেছেন। আর যারা চুল ছোট করে, তাদের জন্য একবার দোয়া করেছেন।
এ হাদীছ শরীফখানা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজীদের জন্য বলেছেন। অর্থাৎ হজ্বের মধ্যে চুল ছোট করা ওয়াজিব। আর আল্লাহ পাক উনার রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরা পালন করার সময় চুল মোবারক মুন্ডন করেছেন। যদিও হজ্ব এবং ওমরার সময় শুধু চুল ছোট করাই ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত। যেহেতু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরার সময় চুল মোবারক মুন্ডন করেছেন, সেহেতু হজ্ব ও ওমরায় চুল মুন্ডন করা সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
অতএব, যেসব হাজী সাহেবগণ চুল মুন্ডন করেন, তাঁরা ওয়াজিব আদায় করার সাথে সাথে সুন্নতও আদায় করে থাকেন। আর এ সুন্নত আদায় করার কারণেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের জন্য তিনবার দোয়া করেছেন। আর যাঁরা শুধু চুল ছোট করেন অর্থাৎ শুধু ওয়াজিব আদায় করেন, সুন্নত আদায় করেন না, তাদের জন্য একবার দোয়া করেছেন।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক উনার রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই বাবরী চুল রাখতেন। আর বাবরী চুল রাখাই দায়েমী সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। আর চুল ছোট রাখা ও মুন্ডন করা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত, যাকে সুন্নতে সাহাবা বলা হয়। চুল মুন্ডন করার ক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত হচ্ছে- শুধুমাত্র হজ্ব ও ওমরা পালন করার সময়।
আবা-২৮
জিজ্ঞাসাঃ- আখিরী যুহর কি? কখন এটি পড়তে হয়? ইসলামের প্রথম তিন যামানায় এর অস্তিত্ব ছিল কি?
সমাধানঃ- ইসলামে আখিরী যুহর বলতে স্বতন্ত্র কোন ইবাদত নেই। তবে কোন স্থানে জুমা শুদ্ধ হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে কারো সন্দেহের উদ্রেক হলে, উদাহরণ স্বরূপ এমন স্থান যা শহর বা শহরতলী নয় কিংবা এত বড় গ্রাম নয়, যেখানে বিচারক, চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রভৃতি রয়েছেন অর্থাৎ অজপাড়া গাঁ, সেখানে কেউ জুমা পড়ে সন্দেহে পতিত হলে ফিক্বাহ্ শাস্ত্রবিদগণ তাকে যুহরের নামাযও পড়ে নিতে বলেছেন। এ ধরণের অবস্থায় উলামায়ে কিরামের সাথে যোগাযোগ করে সন্দেহ মুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। শুধুমাত্র অনুমানের উপর নির্ভর করে জুমুয়ার পরে যুহরের নামায পড়া জায়েয নেই। কেননা এতে জুমা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে, যা নিতান্তই অগ্রহনীয়। সোনালী তিন যামানায় জুমার পরে যুহরের নামায পড়ার রীতি ছিলনা। (হালবী কবীর-৫৫২ পৃঃ, আহসানুল ফাতওয়া ৩/৪৮৬, মাজমুয়ায়ে ফতওয়া, কিতাবুস্ সালাত-২০৩ পৃঃ)
মুঈনুল ইসলাম পত্রিকায় প্রদত্ত আখিরী যোহর সম্পর্কিত এই সমাধান যথার্থ কিনা? নির্ভরযোগ্য দলীলসহ জানায়ে উপকৃত করবেন।
জাওয়াব - আখিরী যোহর বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহর সম্পর্কে “মুঈনুল ইসলামের” বক্তব্য শুধু অশুদ্ধই নয়, বরং মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। যা অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ, ফক্বীহ্গণের এবং সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত, বিশ্ববিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত ও বিরুদ্ধ মত। নিম্নে মুঈনুল ইসলামের আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যগুলোকে পর্যায়ক্রমে খন্ডন করা হলো-
প্রথমতঃ- উক্ত পত্রিকায় প্রথমেই বলা হয়েছে যে, “ইসলামে আখিরী যুহর বলতে স্বতন্ত্র কোন ইবাদত নেই।”
এ প্রসঙ্গে বলতে হয় যে, ‘মুঈনুল ইসলামের’ উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই অশুদ্ধ ও জিহালতপূর্ণ। কারণ আমরা ইসলাম বলতে মূলতঃ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকেই বুঝে থাকি। অর্থাৎ কোন বিষয় ইসলাম বা শরীয়তসম্মত হওয়ার মাপকাঠি হলো- উপরোক্ত চারটি বিষয়। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে আখিরী যোহর বা এহ্তিয়াতুয্ যোহর অবশ্যই ইসলামের অর্ন্তভূক্ত। কেননা, যদিও কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে সরাসরি আখিরী যোহরের কথা উল্লেখ নেই, কিন্তু ইজমা ও ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহের অধ্যায়ে তা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যেমন ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “মারাক্বিউল ফালাহ্তে” উল্লেখ আছে যে,
قوله بصلاة اربع بنية اخر ظهر عليه هو الاحسن. (صفه ৩২৬)
অর্থঃ- মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আখিরী যোহরের নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়ে নেয়া সর্বোত্তম। (পৃষ্ঠা-৩২৬)
আর মুঈনুল ইসলামের উপরোক্ত বক্তব্যের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইজমা-ক্বিয়াস ইসলামের অন্তর্ভূক্ত নয়। অর্থাৎ “আখিরী যুহর নামে স্বতন্ত্র কোন ইবাদত ইসলামে নেই।” একথা বলার অর্থই হলো- ইজমা-ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহ্ শাস্ত্রকে অস্বীকার করা। যেটা বিদ্য়াত ও গোমরাহীর লক্ষণ।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, আখিরী যোহর ইসলাম বা শরীয়তসম্মত ইবাদত।
দ্বিতীয়তঃ- উক্ত পত্রিকায় বলা হয়েছে, “তবে ......... এমন স্থান যা শহর কিংবা শহরতলী নয় কিংবা এতবড় গ্রাম নয়, যেখানে বিচারক, চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রভৃতি রয়েছেন অর্থাৎ অজপাড়া গাঁ, সেখানে কেউ জুমা পড়ে সন্দেহে পতিত হলে ফিক্বাহ্ শাস্ত্রবিদগণ তাকে যুহরের নামাযও পড়ে নিতে বলেছেন।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, “মুঈনুল ইসলামের” উপরোক্ত বক্তব্যখানি সরাসরি ফিক্বাহ্ শাস্ত্রবিদগণের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়ার শামিল। কারণ যে স্থান শহর বা শহরতলী নয়, সেস্থানে তো জুমুয়া পড়াই জায়েয না। আর কোন ফিক্বাহ্ শাস্ত্রবিদই উক্ত স্থানে জুমুয়া জায়েয বলেননি। কাজেই যেখানে জুমুয়াই জায়েয না, সেখানে আখিরী যোহর পড়তে বলার স্বার্থকতা কোথায়?
তাছাড়া আখিরী যোহরের নির্দেশ শুধুমাত্র কোন স্থান শহর হওয়া বা না হওয়ার সন্দেহের কারণে দেওয়া হয়নি। বরং ইমাম-মুজতাহিদগণ মূলত আখিরী যোহর বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহর পড়ার আদেশ এ কারণেই দিয়েছেন যে, যেহেতু ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, এক শহরে একের অধিক জায়গায় জুমুয়ার নামায পড়া জায়েয নেই। তবে শহর যদি বড় হয় এবং শহরের মধ্যখান দিয়ে যদি নদী-নালা প্রবাহিত হয়ে থাকে, তাহলে এক শহরে একের অধিক স্থানে জুমুয়া পড়া জায়েয। আর ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, এক শহরে একের অধিক স্থানে জুমুয়া বিনা শর্তে জায়েয এবং এটার উপরই ফতওয়া।
উপরোক্ত ইখতিলাফ বা মতভেদের কারণে পরবর্তী ইমাম-মুজতাহিদ বা ফক্বীহ্গণ ইজতিহাদ করতঃ ফতওয়া দেন যে, ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যে জুমুয়ার নামায আদায় করার পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহর বা আখিরী যোহরের নিয়তে পড়া উত্তম। যেমন বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব “শরহে বেকায়াতে” উল্লেখ আছে যে,
ঊদূ লেখা ঢুকবে.....................................................................................
অর্থঃ- জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত (আখিরী) যোহর পড়তে হবে কিনা? ফতওয়ায়ে শামী কিতাবে পড়াকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, ঘরের ভিতর চুপে চুপে পড়ে নিবে। আর ওস্তাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, জুমুয়ার পর বিনা জামায়াতে চার রাকায়াত (এহ্তিয়াতুয্ যোহর) পড়া মোস্তাহ্সান (উত্তম)। ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-১৭২ উর্দূ শরাহ্)
ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “রদ্দুল মোহ্তারে” উল্লেখ আছে যে,
كل موضح وقع الشك فى كونه مضرا او تعدوت الجمعة ينبغى لهم ان يصلوا بعد الجمعة اربعابنية الظهر احتياطا. (ج২ صفه ১৪৫)
অর্থঃ- যে স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে অথবা এক শহরে একের অধিক স্থানে জুমুয়া জায়েয হওয়া না হওয়ার মতবিরোধের কারণে সন্দেহ দেখা দেয়, সেস্থানে জুমুয়ার নামাযের পর আখিরী যোহরের নিয়তে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যে চার রাকায়াত নামায পড়ে নেয়া উচিত।
উক্ত কিতাবে আরো বলা হয়েছে যে,
لما تبتلى اهل مرو با قامة الجمعتين فيها مع اختلاف العلماء فى جوازهما امر ائمة هم بالاربعة بعد ها احتياطا- لايمنع الشريعة الاحتياط للتقوى.
অর্থঃ- যখন ইমামগণ একের অধিক স্থানে জুমুয়া জায়েয হবার ব্যাপারে আলেমগণের মতবিরোধ জানতে পারলেন, তখন ইমামগণ জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহর পড়ার হুকুম দেন। কেননা শরীয়তে তাকওয়ার জন্যে সাবধানতা অবলম্বন করতে নিষেধ করা হয়নি। (২য় জিঃ পৃষ্ঠা-১৪৫)
এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইব্নে আবেদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ফতওয়ায়ে শামী’ কিতাবে বলেন,
قلت على انه لو سلم ضعفه فالحزوج عن حلافه اولى فكيف مع خلاف هئلاء الائمة وفى الحديث متفق عليه فمن اتقى الشبهة استبرأ لدينه وعرضه- ولذا قال بعضهم فيما يقضى صلاه عمره مع انه لم يفته منها شئ لا يكره لانه اخذ با لا حتياط.
অর্থঃ- আমি বলি, এক স্থানে একাধিক মসজিদে জুমুয়া নাজায়েয হওয়ার দলীল জঈফ হলেও যেহেতু এটাতে ইমামগণ মতভেদ করেছেন, সেহেতু চার রাকায়াত এহ্তিয়াতুয্ যোহর পড়ে নেওয়াই উত্তম।
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ শরীফ-এর হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে, যে ব্যক্তি সন্দেহ হতে বাঁচল, সে তার দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করলো। এর উপর ভিত্তি করে কোন কোন ফক্বীহ্ ফতওয়া দেন যে, যে ব্যক্তির নামায কাযা হয়নি, এমন ব্যক্তিও যদি উমরী কাযা আদায় করে, তবে মাকরূহ্ হবেনা। কেননা সে ওটা এহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যে পড়েছে।
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ব বিখ্যাত কিতাবসমূহের বরাত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্যে জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত আখিরী যোহর পড়ে নেওয়া জায়েয ও মোস্তাহ্সান (উত্তম)। এটাকে নাজায়েয বলা গোমরাহীর নামান্তর।
তৃতীয়তঃ- উক্ত পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, “সোনালী তিন যামানায় জুমুয়ার পরে যুহরের নামায পড়ার রীতি ছিলনা।”
এর জবাব হলো- মূলতঃ কোন বিষয় সোনালী তিন যুগে পাওয়া না গেলেই যে তা নাজায়েয, এরূপ কোন দলীল কেউ পেশ করতে পারবে কি? যদি কোন বিষয় জায়েয হওয়ার জন্যে সোনালী তিন যুগকে শর্ত করা হয়, তবে খতমে বুখারীর মাহ্ফিল, বার্ষিক ফুযালা সম্মেলন ইত্যাদি জায়েয হয় কি করে? সেগুলো কি উক্ত তিন যামানায় ছিল?
মোট কথা হলো- কোন বিষয় জায়েয হওয়া না হওয়ার মাপকাঠি হলো- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস, এখন তা যে যুগেই উৎপত্তি লাভ করুক না কেন।
কেননা সোনালী তিন যুগেই ৭২টি বাতিল ফেরকা (যেমন- রাফেজী, খারেজী, শিয়া ইত্যাদি) উৎপত্তি লাভ করেছে, তবে কি তারা অনুসরণীয়? কখনোই নয়, বরং সোনালী তিন যুগে উৎপত্তি লাভ করা সত্বেও তারা বাতিল ও গোমরাহ্।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আখিরী যোহর সম্পর্কে “মাসিক মুঈনুল ইসলামের” বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, আপত্তিকর ও জিহালতপূর্ণ। কারণ অসংখ্য দলীলের দ্বারা প্রমাণিত যে, আখিরী যোহর বা এহ্তিয়াতুয্ যোহর পড়া জায়েয ও মোস্তাহ্সান।
উপরোক্ত দলীল ছাড়াও নিম্নোক্ত কিতাবে আখিরী যোহর পড়া জায়েয বলা হয়েছে-
ফতওয়ায়ে আলমগীরী, বাহ্রুর রায়েক, মুহীত্ব, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, কাফী, দুররুল মোখতার, আইনী, ক্বিনইয়া, গায়াতুল আওতার, কবীরী, ছগীরী, কিতাবুল ফিক্বাহ্ আলা মাযাহিবিল আরবা, শরহুন নেক্বায়া, ফতহুল ক্বাদীর, ফতওয়ায়ে আযীযী, বাহারে শরীয়ত, ইলমুল ফিক্বাহ্, রুকনুদ্দীন, ফতওয়ায়ে আমিনিয়া ইত্যাদি।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১০তম সংখ্যা পাঠ করুন। যেখানে অসংখ্য দলীল দ্বারা আখিরী যোহর পড়া জায়েয প্রমাণ করা হয়েছে।
আবা-২৮
শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহর বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহরের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-
প্রশ্নঃ- ভোটের সংজ্ঞা কি? শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট পাওয়ার উপযুক্ত কে? কোন ফাসেক ব্যক্তিকে ভোট দিলে কি রকম অপরাধ হবে?
উত্তরঃ- ভোট অর্থ কোন ব্যক্তি সম্পর্কে তার যোগ্যতা ও বিশ্বস্ততার বিষয় সাক্ষ্য প্রদান করা। জাতির নিতান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনকল্পে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার কাজটা ভোটের মাধ্যমেই সমাধা করা হয়। সেমতে ভোটরূপ সাক্ষ্যটি বিবেচনার সাথে প্রয়োগ করা অত্যান্ত জরুরী। যদি কেউ জেনেশুনে কোন চরিত্রহীন বা অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়, তবে সে ব্যক্তি প্রথমতঃ একটি গুরুত্বপূর্ণ আমানতের খেয়ানত করলো, যা শরীয়তের বিচারে কবীরাগুণাহ্। দ্বিতীয়তঃ তার ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যতগুলো অন্যায় কাজ করবে, সেসব অন্যায়ের ভাগীদার ভোট দাতাকে হতে হবে। এ কারনে দ্বীন ও শরীয়তের পরিপূর্ণ মাত্রায় অনুগত নয়, এরূপ ব্যক্তিকে ভোট দেয়া ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এখন আমার প্রশ্ন হলো- উক্ত উত্তরে ভোটকে আমানত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ বলে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। আর অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়া আমানতকে খেয়ানত করা ও কবীরা গুণাহের কারণ বলা হয়েছে। উক্ত উত্তর কতটুকু শুদ্ধ হয়েছে, তা দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব - মাসিক মদীনার উক্ত উত্তর সম্পূর্ণই কুফরী হয়েছে। কারণ হারাম কাজে উৎসাহিত করা, তাক্বীদ দেয়া ও হারাম কাজ না করাকে কবীরা গুণাহে আখ্যায়িত করা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। উত্তর তো সম্পূর্ণই কুফরী হয়েছে, আর প্রশ্নকারীর প্রশ্নও শুদ্ধ হয়নি। কারণ-
(১) গণতন্ত্র হচ্ছে- বিধর্মী (ইহুদী-নাসারা)দের প্রবর্তিত পদ্ধতি, যা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত নয়। গণতন্ত্রের ইংরেজী হচ্ছে- উবসড়পৎধপু যা এসেছে গ্রীক উবসড়ং এবং কৎধঃড়ং থেকে। ‘ডেমস’ অর্থ জনগণ এবং ‘ক্রেটস’ অর্থ শাসন। আবার বাংলায় ‘গণ’ অর্থ জনগণ এবং ‘তন্ত্র’ অর্থ নিয়মনীতি বা পদ্ধতি। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণের নিয়ম-কানুন বা পদ্ধতি অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা বা সরকার পরিচালনা করা হয়।
অথচ আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা মায়েদার ৪৯নং আয়াত শরীফে বলেন, “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারে আল্লাহ্ পাক যা নাযিল করেছেন, সে অনুযায়ী ফায়সালা করুন এবং তাদের নফসের অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আপনার প্রতি যা নাযিল করেছেন, যেন তার কোন নির্দেশ থেকে তারা আপনাকে বিচ্যুত করতে না পারে বা কোন আদেশ সম্পর্কে ফিৎনায় ফেলতে না পারে। অতঃপর যদি তারা ফিরে যায়, তবে জেনে রাখুন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি চেয়েছেন তাদেরকে তাদের কোন গুণাহের শাস্তি দিবেন এবং নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে অধিকাংশই ফাসেকের অন্তর্ভূক্ত।”
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা বাক্বারার ১২০নং আয়াত শরীফে আরো বলেন, “(হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়েত। আপনার কাছে ইল্ম (কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার ও ইসলাম) আসার পর যদি তাদের (বিধর্মীদের) নফ্সের (নিয়ম-পদ্ধতি) অনুসরণ করেন, তবে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আপনার জন্য কোন ওলী বা সাহায্যকারী নেই বা পাবেন না।”
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭নং আয়াত শরীফে আরো বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক যা নাযিল করেছেন, সে অনুযায়ী যারা হুকুম বা ফায়সালা করে না, তারাই কাফির, জালেম ও ফাসেক।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ্ পাক উনার হুকুম মোতাবেক আমল করতে হবে। অন্যথায় মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে যেমন সাহায্য ও অভিভাবক পাওয়া যাবেনা, তদ্রুপ ঈমানদার হিসাবেও থাকা যাবেনা।
শরীয়তে অর্থাৎ ইসলামে গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন সম্পূর্ণই হারাম। যা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এর সূরা ইমরানের ১৯নং আয়াত শরীফে বলেন, “নিশ্চয়ই ইসলামই একমাত্র মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট মনোনীত দ্বীন।”
উক্ত সূরার ৮৫নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্যকোন ধর্ম বা নিয়ম-নীতি তালাশ (অনুসরণ) করে, তার থেকে তা কখনই গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে।”
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন, “তিনিই (আল্লাহ্ পাক) যিনি তার রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে হিদায়েত ও দ্বীনে হক্বসহ পাঠিয়েছেন, যেন সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দান করেন। অর্থাৎ সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দেন। আর সাক্ষ্যদাতা হিসেবে মহান আল্লাহ্ পাক তিনিই যথেষ্ট।”
আর এ প্রসঙ্গে আহ্মদ ও বায়হাক্বী শরীফে হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করা হয়েছে- তিনি বলেন, একদিন হযরত ওমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা ইহুদীদের নিকট থেকে কিছু কথা শুনি, যাতে আর্শ্চয্যবোধ করি, তার থেকে কিছু কি আমরা লিখে রাখবো? তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনারা কি ইহুদী-নাসারাদের মত (ইসলাম সম্পর্কে) দ্বিধাগ্রস্থ রয়েছে? নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল দ্বীন নিয়ে এসেছি। এমনকি ইহুদীদের নবী হযরত মুসা আলাইহিস সালামও যদি জীবিত থাকতেন, তবে উনার উপরও আমার দ্বীন মানা ওয়াজিব হতো।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা এ কথাই স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট একমাত্র ইসলামই গ্রহণযোগ্য, অন্যকোন ধর্ম বা নিয়ম-নীতি, পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়। আর ইসলাম ব্যতীত অন্যকোন নিয়ম-নীতি গ্রহণ করার অর্থই হচ্ছে- ইসলাম সম্বন্ধে দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া। আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় অন্য কোন নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণও যদি হায়াতে থাকতেন, তাহলে উনাদের উপর মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে নাযিলকৃত কিতাব অনুযায়ী আমল না করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মোতাবেক আমল করাই ওয়াজিব হতো।
তাহলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা সাধারণ উম্মত, তাদের পক্ষে এটা কি করে সম্ভব বা জায়েয হবে যে, তারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর নাযিলকৃত দ্বীন ইসলামকে ত্যাগ করে ইহুদী-নাসারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজুসী-মুশরিক তথা বিধর্মীদের মনগড়া প্রবর্তিত পদ্ধতি যেমন- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্র-মন্ত্র ও মতবাদের অনুসরণ ও আমল করে এবং অন্যান্যগণকেও অনুসরণ ও আমল করার জন্য তাক্বীদ ও উৎসাহ প্রদান করে এবং এটাও বলে যে, তা (গণতন্ত্র ইত্যাদি) না করা কবীরা গুণাহের কারণ।
একইভাবে ভোট প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, “এটা আমানত- যা খেয়ানত করা কবীরা গুণাহের অন্তর্ভূক্ত।”
অথচ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস যা আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দলীল। তার যেকোন একটা দিয়েও কোন ব্যক্তির পক্ষে ক্বিয়ামত পর্যন্ত এটা প্রমাণ করা সম্ভব হবেনা যে, গণতন্ত্রে প্রচলিত নির্বাচনে দেয় ভোট শরীয়তের দৃষ্টিতে আমানত। এটা বলা সম্পূর্ণ কুফরী হয়েছে।
আরো বলা হয়েছে, ভোট সাক্ষ্যস্বরূপ। অথচ এটাও শরীয়তের দৃষ্টিতে সাক্ষ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়না। তথাপিও যদি আমরা মাসিক মদীনার কথা মোতাবেক সাক্ষ্য হিসেবে ধরে নেই, তাতেও কুফরী হয়ে যায়। কেননা নির্বাচনে পুরুষ ও মহিলার ভোটের মান সমান বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ গণতন্ত্রে মহিলার সাক্ষ্য, পুরুষের সাক্ষ্যের সমান বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা বাক্বারার ২৮২নং আয়াত শরীফে বলেন, “তোমরা পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী দাঁড় করাও। যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া যায়, তবে একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলার সাক্ষ্য গ্রহণ কর। অর্থাৎ ইসলামে দু’জন মহিলার সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান। কিন্তু গণতন্ত্রে একজন মহিলার সাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান। যা সম্পূর্ণ কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের খিলাফ।
গণতন্ত্রই যেখানে হারাম, সেখানে কি করে কোন মুসলমানের পক্ষে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের খিলাফ আমল করার জন্য অন্যান্য মুসলমানদেরকে তাক্বীদ দেয়া ও উৎসাহিত করা যেতে পারে?
উল্লেখ্য, ইসলামে গণতন্ত্র হারাম হওয়া সম্পর্কে আমরা কিছুদিন পূর্বে একটা হ্যান্ডবিল ছাপিয়েছিলাম, যা আল বাইয়্যিনাতের ২৬তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে হুবহু ছাপানো হয়েছে, তা সংগ্রহ করে পড়ুন। আরো বিস্তারিত জানতে হলে অপেক্ষায় থাকুন অতি শীঘ্রই আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ফতওয়া বিভাগে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করবো ইন্শাআল্লাহ্।
আবা-২৮
গণতন্ত্র করা
হারাম ফতোয়া । লিংক-