শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহর বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহরের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ৩ নং )


আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহরের নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল-আদিল্লাসমূহ

(ধারাবাহিক)
            কোন স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতভেদের কারণে অথবা কোন স্থান নিঃসন্দেহে শরয়ী শহর, কিন্তু তাতে একাধিক মসজিদে জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতভেদের কারণেই ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইজতিহাদ করতঃ জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত আখিরী যোহর বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রআদায় করার ফতওয়া দেন।
            মূলতঃ আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহরসম্পর্কে কিতাবে ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের দুপ্রকার মত পরিলক্ষিত হয় যথাঃ (১) ওয়াজিব, (২) মুস্তাহাব বা মুস্তাহ্সান।
(১) যে স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট সন্দেহ রয়েছে, সেখানে জুমুয়া আদায় করা হলে, জুমুয়ার পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহর নামায পড়া ওয়াজিব।
            (২) যে স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ নেই, সেখানে এক শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতভেদ থাকার কারণে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্য চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রনামায পড়া মুস্তাহাব বা মুস্তাহসান।
যেমন, এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
[১-৬]
وذكر فى النهر انه لاينبغى التردد فى ندبها على القول يجوز التعدد خروجا عن الخلاف اه وفى شرح الباقانى هو الصحيح وبالجملة فقد ثبت انه ينبغى الاتيان بهذه الاربع بعد الجمعة، لكن بقى الكلام فى تحقيق انه واجب او مندوب؟ قال المقدسى ذكر ابن الشحنة عن جده التصريح بالندب، وبحث فيه بانه ينبغى ان يكون عند مجرد التوهم، اما عند قيام الشك والاشتباه فى صحة الجمعة فالظاهر الوجوب، ونقل عن شيخه ابن الهمام مايقيده. (رد المختار- شامى جص১৪৬- النهر- شرح الباقانى، منحة الخالق جص ১৪৩)
অর্থঃ- আন্ নহরুল্ ফায়িক”-এ উল্লেখ আছে, একই শহরে একাধিক জুমুয়া জায়েয একথা স্বীকার করলেও ইখতিলাফী মাসয়ালায় সন্দেহ দূর করার জন্য আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া যে মুস্তাহাব হবে, এতে সন্দেহ করা উচিৎ নয়।শরহুল্ বাক্বানীতে লিখিত আছে, এটাই ছহীহ্ মত। মূলকথা এই যে, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়াই উচিত। কিন্তু এখন বিবেচনার বিষয় হচ্ছে যে, আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র ওয়াজিব না মুস্তাহাব?
 (সমস্যার সমাধানে) মুকাদ্দাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ইবনে শিহনা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দাদা হতে তা (আখিরী যোহ্র) মুস্তাহাব হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন যে, মনের সংশয়-দুশ্চিন্তা নিবারণের জন্য (আখিরী যোহ্র) পড়া মুস্তাহাব হবে। তবে জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে অধিক সন্দেহ হলে (অর্থাৎ শহর বা অন্যান্য শর্তের প্রতি সন্দেহ হলে) ফতওয়াগ্রাহ্যমতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া ওয়াজিব হবে। অতঃপর তিনি তাঁর শাইখ আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে আখিরী যোহ্র ওয়াজিব হওয়ার মত প্রকাশ করেছেন।
(রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, আন্ নহরুল্ ফায়িক, শরহুল্ বাক্বানী, মিনহাতুল খালিক্ব ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহ্র তত্ত্ব ২২ পৃষ্ঠা)
            উল্লিখিত ইবারত থেকে প্রমাণীত হলো যে, ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ক্ষেত্র বিশেষে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহর পড়া ওয়াজিব। অর্থাৎ যে স্থানে জুমুয়া জায়েয বা ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে প্রবল সন্দেহ রয়েছে, সেখানে আখিরী যোহ্রপড়া ওয়াজিব। আর যেস্থানে সন্দেহ নেই, (তবে মতভেদ থাকায়) সেখানে আখিরী যোহ্রপড়া মুস্তাহাব, মুস্তাহসান, আওলা ও আফযল, জায়েয তো অবশ্যই।
            নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর, হাদীস শরীফের শরাহ্, ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ থেকে পর্যায়ক্রমে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রসম্পর্কিত দলীল-আদিল্লা সমূহ উল্লেখ করা হলো-
আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর সমূহের বর্ণনা
মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا اذا نودى للصلوة من يوم الجمعة فاسعوا الى ذكر الله وذروا البيع- ذلكم خيرلكم ان كنتم تعلمون- فاذا قضيت الصلاة فانتشروا فى الارض وابعغوا من فضل الله واذكروا الله كثيرا لعلكم تفلحون- واذا راو تجارة او لهوان انفضوا اليها وتركوك قائما- قل ماعند الله خير من اللهو ومن التجارة والله خير الرازقين.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! জুমুয়ার দিন যখন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা আল্লাহ্ পাক-এর যিকির বা স্মরণের (খুত্ববাহ্ ও নামাযের) দিকে ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য অতীব উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর যখন নামায শেষ হয় তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি তালাশ কর ও আল্লাহ্ পাক-এর অধিক পরিমাণে যিকির (স্মরণ) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। তারা যখন ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়া কৌতুক (খেল-তামাশা) দেখে তখন আপনাকে (খুত্ববায়) দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে তারা সেদিকে ছুটে যায়। (হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, আল্লাহ্ পাক-এর কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক (খেল-তামাশা) ও ব্যবসা অপেক্ষা উত্তম। আর আল্লাহ্ পাকই সর্বোত্তম রিযিকদাতা।” (সূরাতুল জুমুয়া/ ৯, ১০, ১১)
            উক্ত আয়াত সমূহের ব্যাখ্যায় বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর সমূহে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রওয়াজিব বলা হয়েছে। নিম্নে তাফসীর সমূহের দলীল উল্লেখ করা হলো।
[৭-৯]
ومما ينبغى ان يعلم انه كما شرط لوجوب الجمعة الشروط الستة المذكورة كذلك يشترط لصحة ادائها ستة اخرى المصر او فنائه والسلطان او نائبه ووقت الظهر والخطبة والجماعة والاذن العام ولايصح اداء الجمعة بدونها وقد طال الكلام فى زماتنا بين ايدى الانام فى وجد ان الشرطين الاولين لان فى معنى المصر اختلاف فقيل فيه امير وفيه قاض ينفذ الاحكام ويقيم الحدود وقيل مالايسع اكبر مساجده اهله والمعنى الاول لايوجد الا نادرا وان كان المعنى الثانى المختار منهما يوجد فى اكثر المواضع وفى السلطان او نائبه لاندرى شرط الحضور ام يكفى الاذن وان كان كلام صاحب عدم الحضور ولهذا افترقوا فرقا مختلفا فقيل منهم من تركوا الجمعة اصلا وطائفة اكتفوابها فقط وبعضهم ادوا الظهر فى منزلهم ثم سعوا الى الجمعة واكثرهم داموا على ادائها اولا علما منهم بانها من اكبر شعائر الاسلام والتزموا بعدها اداء الظهر لكثرة الشكوك فى شانها وغلبة الاوهام وان كان لايجوز الجمع بين الفرضين عند اهل الاسلام. (تفسيرات احمدية ص ৪৭৭)
অর্থঃ- এটা জানা আবশ্যক যে, জুমুয়া ওয়াজিব হওয়ার জন্য যেরূপ ছয়টি শর্ত রয়েছে, জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার জন্যও আরো ছয়টি শর্ত আছে। (১) শহর বা শহরতলি হওয়া, (২) বাদশা বা বাদশার প্রতিনিধি হওয়া, (৩)  যোহ্রের নামাযের ওয়াক্ত হওয়া (৪) খুত্ববাহ্  (দুটি) পাঠ করা, (৫) জামায়াত, (ইমাম ব্যতীত তিনজন মুক্তাদী) উপস্থিত থাকা, (৬) ইযনে আম অর্থাৎ জুমুয়ার স্থানে নামাযের জন্য আসতে কারো পক্ষে কোন নিষেধ না থাকা। এ ছয়টি শর্ত ছাড়া জুমুয়ার নামায ছহীহ্ (শুদ্ধ) হবে না। বর্তমানে প্রথম দুটি শর্ত পাওয়া যায় কিনা, এবিষয়ে ইখতিলাফ বা মতভেদ রয়েছে। যেহেতু মিছর’-শব্দের অর্থে ইখতিলাফ হয়েছে। কোন আলিম বলেন, “যে স্থানে একজন আমীর ও একজন কাজী থাকেন, যারা শরীয়তের আহকাম ও হদসমূহ জারী করেন, তাকে মিছর বা শহর বলে। আবার কেউ কেউ বলেন, যে স্থানে তথাকার অধিবাসীদের বড়মসজিদে স্থান সঙ্কুলান হয় না, তাই মিছর বা শহর।
            যদিও দ্বিতীয় মতটি প্রাধান্য প্রাপ্ত মত। এ অনুযায়ী অনেক স্থানকেই মিছর বা শহর বলা যায়, তারপরেও প্রথম মতানুযায়ী অনেক স্থানকেই মিছর বলা যায় না। জানা নেই যে, (জুমুয়ার স্থানে) সুলতান বা বাদশাহের উপস্থিত হওয়ার শর্ত নাকি অনুমতিতেই চলবে? যদিও তাফসীরুল কাশ্শাফ-এর লিখক-এর ভাষ্যমতে বুঝা যায় যে, বাদশাহের অনুপস্থিতিতে অনুমতি নেয়া ওয়াজিব। এ সমস্ত বিবিধ কারণে হানাফী আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অল্প সংখ্যক জুমুয়া ত্যাগ করেছেন, কিছু লোক শুধু জুমুয়া পড়েন, কতকলোক তাদের বাড়ীতে যোহ্র পড়ে এরপর জুমুয়া পড়তে যান। আর অধিকাংশ আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ জুমুয়াকে শিয়ারুল ইসলাম বা ইসলামের বিশেষ শিয়ার ধারণায় সর্বদা প্রথমে জুমুয়া পড়েন। অতঃপর জুমুয়ার পরে ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রপড়া লাযিম (ওয়াজিব) করে নেন, জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত সন্দেহ-সংশয় থাকার কারণে। যদিও মুসলমানগণের নিকট দুই ফরয একত্রিত করে পড়া জায়েয নেই।
            (তাফসীরাতু আহমদিয়্যাহ ৪৭৭ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২১, ২২ ও ২৩ পৃষ্ঠা, তাহকীকুল মাসায়িল)
[১০-১১]
قال ابن همام اذا اشتبه على الناس وجود شرائط الجمعة ينبغى ان يصلى اربعا بعد الجمعة ينوى بها اخر فرض ظهر ادركت وقته ولم اود بعد فان لم يصح الجمعة وقعت ظهره فرضا وان صحت كانت نفلا. (التفسير المظهرى جص ২৯৩. تفسير ضياء القران جص ২৩৮)
অর্থঃ- হযরতুল্ আল্লামা ইবনু হুমাম রহমুতল্লাহি আলাইহি বলেন, কোন স্থানে জুমুয়ার (ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে) শর্ত পাওয়ার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সন্দেহ হলে, জুমুয়ার নামাযের পর যুহ্রের আখিরী ফরযএর নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়া উচিৎ(ওয়াজিব)। নিয়তঃ আমি উহার (যুহরের) ওয়াক্ত পেয়েছি, কিন্তু এখনো আদায় করিনি।এ অবস্থায় যদি জুমুয়া ছহীহ্ না হয়, তবে যুহরের ফরয আদায় হবে। আর যদি জুমুয়া ছহীহ্ হয়, তবে ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রনফল হবে।
(আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৯ম জিঃ ২৯৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরু দ্বিয়াউল্ কুরআন ৫ম জিঃ ২৩৮ পৃষ্ঠা)
[১২]
উর্দু কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- আল্লামা ইবনু হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, কোন স্থানে জুমুয়ার ছহীহ্ হওয়ার শর্ত সমূহ্ পরিপূর্ণ না পাওয়া গেলে, সেস্থানে জুমুয়া নামাযের পরে চার রাকায়াত (আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র) নামায পড়া উচিৎ। নিয়ত হচ্ছেঃ اخرى فرض ظهر অর্থাৎ যুহরের আখিরী ফরযযার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এখনো আদায় করিনি, তাই আদায় করছি।যদি জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার শর্ত পরিপূর্ণ ভাবে উপস্থিত থাকে তবে তা নফল হবে। আর যদি জুমুয়ার শর্ত অসম্পূর্ণ থাকে তবে তা সেদিনের যোহরের (ফরয) নামাযের মধ্যে গণ্য হবে। (তাফসীরু দ্বিয়াউল্ কুরআন, ৫ম জিঃ ২৩৮ পৃষ্ঠা)
আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য হাদীস শরীফের শরাহ্ সমূহের বর্ণনা
[১৩-২২]
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من ادرك من الجمعة ركعة فليصل اليها اخرى ومن فاتته الركعتان فليصل اربعا او قال الظهر. (الدار قطنى- مشكوة شريف ص. ১২৩ مرقاة- شرح الطيبى- التعليق الصبيح- اللمعات- اشعة اللمعات- مظاهرحق- تنظيم الاشتات- مراة المناجيح)
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে জুমুয়ার নামাযের এক রাকায়াত পেল সে যেন এর সাথে দ্বিতীয় রাকায়াত যোগ করে। আর যার দুরাকায়াতই ফউত হয়ে গেছে সে যেন চার রাকায়াত পড়ে অথবা বলেছেন, সে যেন যোহ্র পড়ে।
             (মিশকাত শরীফ ১২৪ পৃষ্ঠা, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তানযীমুল্ আশতাত, মিরয়াতুল মানাজীহ্, আদ্ দারু কুত্বনী)
            অত্র হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের বিশ্ববিখ্যাত, বিশ্ব সমাদৃত, সর্বজন মান্য অন্যতম শরাহ মিরকাত শরীফে উল্লেখ আছে যে,
[২৩-২৪]
واختلفوا فى حد المصر اختلافا كثيرا قل مايتفق وقوعه فى بلد ولذا قالوا فى كل موضع وقع الشك فى جواز الجمعة ينبغى ان يصلى اربعا بعد الجمعة ينوى بها اخر فرض ادركت وقته ولم اؤده بعد فان لم تصح الجمعة وقعت ظهره وان صحت وكان عليه ظهر يسقط عنه والا فنفل- (مرقاة جص২৭৪)
অর্থঃ- হানাফী মাযহাবের আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মিছর বা শহরের পরিচয়ে অনেক ইখতিলাফ করেছেন, যা শহরের মধ্যে খুব কমই পাওয়া যায়। সেজন্য তাঁরা বলেছেন যে, যে স্থানে জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, সেখানে জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত আখিরী ফরযের নিয়তে নামায পড়া উচিৎ। নিয়ত হল- আমি যার ওয়াক্ত পেয়েছি, কিন্তু এখনো আদায় করিনি।যদি জুমুয়ার নামায ছহীহ্ না হয়, তবে এর দ্বারা ওয়াক্তিয়া যোহরের নামায আদায় হয়ে যাবে। আর যদি জুমুয়া ছহীহ্ হয়, তবে তাঁর পূর্বেকার যোহ্র নামাযের কাযা হবে। কিন্তু যদি কাযা না থাকে তবে তা নফলে পরিগণিত হবে।
(মিরকাত ৩য় জিঃ ২৭৪ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ১৭ পৃষ্ঠা)
আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বর্ণনা
[২৫-২৭]
واذا اشتبه على الانسان ذلك ينبغى ان يصلى اربعا بعد الجمعة ينوى بها اخر فرض ادركت وقته ولم اؤده بعد فان لم تصح الجمعة وقعت ظهره وان صحت كانت نفلا .... وكذا اذا تعددت الجمعة وشك فى ان جمعته سابقه اولا ينبغى ان يصلى ماقلنا. (فتح القدير جص২৫. البحر الرائق جص ১৪২)
অর্থঃ- যে স্থান লোকদের কাছে শহর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ যুক্ত সেথায় জুমুয়ার নামাযের পরে আখিরী ফরযএর নিয়তে চার রাকায়াত (ইহতিয়াতুয্ যোহ্র) নামায পড়া উচিৎ (ওয়াজিব)। যদি জুমুয়া ছহীহ্ না হয়, তবে যোহরের ফরয আদায় হবে। আর যদি জুমুয়া ছহীহ্ (শুদ্ধ) হয়, তবে (উক্ত চার রাকায়াত) নফলে পরিণত হবে। ............ অনুরূপভাবে যে শহরে একাধিক জুমুয়া পড়া হয়, কিন্তু সন্দেহ থেকে যায় জানা না যাওয়ার জন্য যে, কোন মসজিদে প্রথমে জুমুয়া পড়া হয়েছে। এমন স্থানে চার রাকায়াত(ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র) নামায পড়া মুস্তাহাব।” (ফতহুল ক্বাদীর ২য় জিঃ ২৫ পৃষ্ঠা, আল্ বাহরুর রাইক ২য় জিঃ ১৪২ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ১৬ পৃষ্ঠা)
[২৮-৩৭]
ونقل المقدسى عن المحيط كل موضع وقع الشك فى كونه مصرا ينبغى لهم ان يصلوا بعد الجمعة اربعا بتية الظهر احتياطا حتى انه لولم تقع الجمعة موقعها يخرجون عن عهدة فرض الوقت باداء الظهر ومثله فى الكافى. (رد المحتار- شامى جص ১৪৬، محيط- كافى- عينى شرح هداية جص১০১৬، منحة الخالق جص ১৪৩- مجموعة الفتاوى جص ১৭১- فتاوى فيض الرسول جص ৪১৯- مجمع الانهر جص ১৬৭)
অর্থঃ- মুক্বাদ্দাসী রহমতুল্লাহি আলাইহিমুহীত্ব থেকে বর্ণনা করেছেন, যে স্থান মিছর বা শহর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহযুক্ত ঐ স্থানে জুমুয়ার নামাযের পর ইহ্তিযাতুয্ যোহ্র-এর নিয়তে চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়ে নেয়া উচিৎ। কেননা, যদি জুমুয়া ছহীহ্ না হয়, তাহলে ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র আদায় করার কারণে ঐ সময়কার ফরয নিশ্চিত ভাবে আদায় হয়ে যাবে। অনুরূপ কাফী নামক কিতাবেও উল্লেখ আছে।
            (রদ্দুল্ মুহ্তার, ‘শামী২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, আলমুহীত্ব, আল কাফী, আইনী শরহে হিদায়া ১ম জিঃ ১০১৬ পৃষ্ঠা, মিনহাতুল্ খালিক ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, মাজমূয়াতুল ফাতাওয়া ১ম জিঃ ১৭১ পৃষ্ঠা, ফাতাওয়ায়ে ফাইদুর রসূল ১ম জিঃ ৪১৯ পৃষ্ঠা, মাজমাউল আনহুর ১ম জিঃ ১৬৭ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২২ পৃষ্ঠা)
[৩৮-৪৫]
وفى القنية لما ابتلى اهل مروباقامة الجمعتين فيها مع اختلاف العلماء فى جوازهما امر ائمتهم بالاربع بعدها حتما احتياطا اه ونقله كثير من شراح الهداية وغيرها وتداولوه- (رد المحتار- شامى جص১৪৬، قنية، شرح الهداية- منحة الخالق جص ১৪৩- فتاوى فيض الرسول جص ৪১৯- مجمع الانهر جص১৬৭)
অর্থঃ- কিনইয়ানামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, যখন শহরবাসীগণ এক শহরে দুস্থানে জুমুয়া পড়তে লাগলেন, একাধিক জুমুয়া এক শহরে জায়েয হওয়ার ব্যাপারে উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহিমগণের ইখতিলাফ থাকা সত্ত্বেও। তখন সেখানকার ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁদেরকে ইহ্তিয়াতের জন্য জুমুয়ার পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্রওয়াজিব হিসেবে ফতওয়া দিলেন। হিদায়া এবং অন্যান্য অনেক ব্যাখ্যাকার ধারাবাহিকভাবে উপরোক্ত উক্তি ব্যক্ত করেছেন।
            (রদ্দুল্ মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, আল্ কিনইয়া, শরহুল্ হিদায়া, মিনহাতুল্ খালিক ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, ফাতাওয়ায়ে ফাইদুর রসূল ১ম জিঃ ৪১৯ পৃষ্ঠা, মাজমাউল আনহুর ১ম জিঃ ১৬৭ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২২ পৃষ্ঠা)
[৪৬-৫০]
وفى الظهيرية واكثر مشايخ بخارى عليه ليخرج عن العهدة بيقين. (رد المحتار- شامى جص ১৪৬، ظهيرية، منحة الخالف جص ১৪৩)
অর্থঃ- যহীরিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে, বুখারাবাসী অধিকাংশ মাশাইখ বা ফক্বীহ আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ নিশ্চিতভাবে ফরয আদায় হওয়ার জন্য এরকম সন্দেহস্থলে আখিরী যোহ্রওয়াজিব বলেছেন।
            (রদ্দুল্ মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, আয যহীরিয়া, মিনহাতুল খালিক ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২২ পৃষ্ঠা)
[৫১-৫৫]
نقل المقدسى عن الفتح انه ينبغى ان يصلى اربعا ينوى بها اخر فرض ادركت وقته ولم اؤده ان تردد فى كونه مصرا او تعددت الجمعة، وذكر مثله عن المحقق ابن جرباش- (رد المختار- شامى جص ১৪৬- فتح القدير، منحة الخالق جص১৪৩)
অর্থঃ- মুকাদ্দসী রহমতুল্লাহি আলাইহি ফতহুল্ ক্বাদীরথেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আখিরী ফরযএর নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়া উচিৎ। সেই স্থানে, যে স্থানে শহর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ আছে অথবা যে একই শহরে একাধিক জুমুয়া আদায় হয়ে থাকে। অতঃপর মুক্বাদ্দাসীরহমতুল্লাহি আলাইহি  মুহাক্কিক ইবনে জিরবাশরহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে অনুরূপ ব্যক্ত করেছেন।
            (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, ফতহুল ক্বদীর, মিনহাতুল খালিক ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২২ পৃষ্ঠা)
[৫৬-৫৮]
وبالجملة فقد ثبت انه ينبغى الاتيان بهذى الاربع بعد الجمعة. (رد المحتار- شامى جص১৪৬)
অর্থঃ- মূলকথা হচ্ছে, উপরোক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হলো যে, জুমুয়ার নামাযের পরে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্রপড়াই উচিৎ।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২৩ পৃষ্ঠা)
[৫৯-৬৩]
اما عند قيام الشك والاشتباه فى صحة الجمعة فالظاهر الوجوب، ونقل من شيخه ابن الهمام مايفيده. (رد المحتار- شامى جص ১৪৬- منحة الخالق جص ১৪৩. فتاوى فيض الرسول جص ৪১৯)
অর্থঃ- জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে অধিক সন্দেহ হলে (অর্থাৎ শহর বা অন্যান্য শর্তের প্রতি সন্দেহ হলে) ফতওয়া গ্রাহ্যমতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রপড়া ওয়াজিব হবে। অতপর তিনি তাঁর শাইখ আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে আখিরী যোহ্রওয়াজিব হওয়ার মত প্রকাশ করেছেন।
            (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, মিনহাতুল খালিক ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, ফাতাওয়ায়ে ফাইর্দু রসূল ১ম জিঃ ৪১৯ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২৩ পৃষ্ঠা)
[৬৪-৬৬]
وعن هذا وعن الاختلاف فى المصر قالوا فى كل موضع وقع الشك فى جواز الجمعة ينبغى ان يصلى اربع ركعات وينوى الظهر حتى لو لم تقع الجمعة موقعها يخرج عن عهدة فرض الوقت بيقين كذا فى الكافى. (كبيرى ص ৫১২، الكافى)
অর্থঃ- এক শহরে একাধিক জুমুয়া জায়েয কিনা ও শহরের পরিচয় কি, এ ব্যাপারে আলিমগণের মতানৈক্য হয়েছে। সেজন্য ফকীহ্ আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন, যে সকল স্থানে জুমুয়া হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ হয়, সেখানে আখিরী যোহ্রএর নিয়তে চার রাকায়াত যুহর পড়াই উচিৎ। যদি সে স্থানে জুমুয়া ফরয না হয়ে থাকে, তবে প্রত্যেকের উপর যে যুহরের নামায ফরয ছিল, নিশ্চিতভাবে তাই আদায় হবে।” (কবীরী ৫১২ পৃষ্ঠা, আল্ কাফী, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ১৬ পৃষ্ঠা)
[৬৭-৭২]
ثم فى كل موضع وقع الشك فى جواز الجمعة لوقوع الشك فى المصر اوغيره واقام اهله الجمعة ينبغى ان يصلوا بعد الجمعة اربع ركعات وينووا بها الظهر حتى لولم تقع الجمعة موقعها يخرج عن عهدة فرض الوقت بيقين كذا فى الكافى وهكذا فى المحيط ثم اختلفوا فى نيتها قيل ينوى اخرظهر عليه وهو الاحسن والاحوط ان يقول نويت اخرظهر ادركت وقته ولم اصله بعد كذا فى القنية. (الفتاوى العالمكيرية جص ১৪৫. الكافى- المحيط- القنية- احسن الفتاوى جص ১৪০)
অর্থঃ- যে স্থানে জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে, শহর বা জুমুয়ার অন্যান্য শর্তের প্রতি সন্দেহের কারণে, আর সেস্থানের অধিবাসীগণ জুমুয়া পড়েন। এমতাবস্থায় তাদেরকে জুমুয়ার পরে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র-এর নিয়তে পড়ে নেয়াই উচিৎ। কেননা যদি সে স্থানে জুমুয়া জায়েয না হয়, তবে তার উপর যে ওয়াক্তিয়া ফরয ছিল, তা নিশ্চিত আদায় হবে। যেমনটি আল্ কাফীতে আছে। অনুরূপভাবে আল মুহীত্বনামক কিতাবেও আছে। আখিরী যোহ্র’-এর নিয়তে ইখতিলাফ রয়েছে; কেউ বলেন, اخرظهر বলে নিয়ত করবে। আর এটাই উত্তম ও জানাশুনা যে, নিয়ত করতে বলবেنويت اخرظهر ادركت وقته ولم اصله بعد.
অর্থাৎ আমি আখিরী যোহ্রের নামাযের নিয়ত করছি, যার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এখনো নামায আদায় করিনি। অনুরূপভাবে আল্ কিন্ইয়াতে উল্লেখ আছে।
            (আল্ ফাতাওয়াল্ আলমগীরিয়াহ্ ১ম জিঃ ১৪৫ পৃষ্ঠা, আল্কাফী, আল্ কিন্ইয়া, আল্ মুহীত্ব, আহসানুল্ ফাতাওয়া ৪র্থ জিঃ ১৪০ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ১৭ পৃষ্ঠা)
[৭৩-৭৪]
كل موضع وقع الشك فى كونه مصرا ينبغى لهم ان يصلوا بعد الجمعة اربعا بنية الظهر احتياطا (محيط)
অর্থঃ- যে স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকে, সে স্থানের অধিবাসীদের সাবধানতার জন্য জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত নামায আখিরী যোহ্রের নিয়তে পড়তে হবে।” (মুহীত্ব, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ১৮ পৃষ্ঠা)
[৭৫-৭৬]
واذا وقع الشك فى صحة اداء الجمعة لفقد بعض الشرائط ينبغى ان يصلى بعد الجمعة اربع ركعات احتياطا ولو بالحرمين الشريفين- (شرح النقاية جص ২৯০)
অর্থঃ- কোন শর্ত পাওয়া না যাওয়ার কারণে জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিলে, জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহর পড়ে নেয়াই উচিৎ। যদিও হারামাইন শরীফাইন-এ হোক না কেন।” (শরহুন নিক্বায়া ১ম জিঃ ২৯০ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ১৮ পৃষ্ঠা)
[৭৭-৭৯]
فى القنية ولما ابتلى اهل مرو باقامة الجمعتين بها مع اختلاف العلماء فى جوازهما ..... امر ائمتهم باداء الاربع بعد الجمعة حتما احتياطا. (البحر الرائق جص ১৪২- القنيةمجموعة الفتاوى جص ১৭২)
অর্থ- কিনইয়ানামক কিতাবে আছে যে, যখন মরববাসী লোকগণ একই শহরে দুস্থানে জুমুয়া পড়তে লাগলেন, একাধিক মসজিদে জুমুয়া পড়া জায়েয হওয়ার বিষয়ে উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইখতিলাফ থাকার পরেও। তখন ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ জুমুয়ার নামাযের পর ইহতিয়াতের জন্য চার রাকায়াত নামায আদায করা ওয়াজিব হিসেবে ফতওয়া দেন।” (আল বাহরুর রাইক্ব ২য় জিঃ ১৪২ পৃষ্ঠা, আল কিনইয়া, মাজমূয়াতুল ফাতাওয়া ১ম জিঃ ১৭২ পৃষ্ঠা)
[৮০-৮১]
 (فوله قيل بصلوة اربع) اى بوجوب ذلك. (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح جص ৩২৭)
অর্থঃ- “(কোন কোন ফক্বীহ চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র সম্পর্কে বলেছেন) উহা চার রাকায়াত আখিরী যোহ্রওয়াজিব।
(হাশিয়াতুত্ ত্বহত্বাবী আলা মারাকিইল ফালাহ ১ম জিঃ ৩২৭ পৃষ্ঠা, আখেরে জোহ্র তত্ত্ব ৩৮ পৃষ্ঠা)
[৮২]
الحنفية قالوا تعدد الامكن التى تصح فيها الجمعة لا يضرا ولوسبق احدها الاخر فى الصلاة على الصحيح ولكن اذا علم يقينا من يصلى الجمعة فى مسجد ان غيره سبقه من المصلى فى مساجد الاخرى فانه يجب عليه ان يصلى اربع ركعات بنية اخرظهر بتسليمة واحدة- والافضل ان يصيلها فى منزله حتى لايعتقد العامة انها فرض، وقد عرفت ان الواجب عند الحنفية اقل من الفرض- (كتاب الفقه على المذاهب الاربعة جص ৩৮৬)
অর্থঃ- হানাফী ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন, এক স্থানে একাধিক জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হবে, এতে কোন অসুবিধা নেই। যদিও এক মসজিদ অপর মসজিদের চেয়ে নামায ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে অগ্রগণ্য হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি কোন মসজিদে নামায পড়ল আর এ ব্যাপারে সে দৃঢ়তার সাথে জানতে পারলো যে, অপর কোন মসজিদের মুসল্লী (নামাযী)গণ পূর্বে নামায পড়ে ফেলেছেন। তবে, এ অবস্থায় তার উপর আখিরী যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত নামায এক সালামে পড়া ওয়াজিব। উক্ত নামায বাড়ীতেই পড়া উত্তম যাতে সাধারণ মানুষ এটা ফরয ইতিকাদ (বিশ্বাস) না করে। আর এখানে ওয়াজিব বলতে হানাফীগণের মতে ফরযের থেকে কম হুকুম সম্পন্ন বুঝবে।” (কিতাবুল্ ফিক্বহি আলাল্ মাযাহিবিল্ আরবায়াহ ১ম জিঃ ৩৮৬ পৃষ্ঠা)
[৮৩-৮৫]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ লিখেছেন যে, জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়ে নেয়াই উত্তম। কেউ কেউ জুমুয়ার নামায আদায় করার পূর্বে পড়ার কথা লিখেছেন। এই চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের নামায জুমুয়ার দিন (জুমুয়ার নামাযের পর) পড়া জরুরী (বা ওয়াজিব)। এই নামায ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের নিয়তে পড়তে হবে। এমনটি আলমগীরীতে লিখা আছে।
            (ফাতাওয়ায়ে আযীযী ৪৭৪ পৃষ্ঠা, বাহারে শরীয়ত ৪র্থ জিঃ ৭৭ পৃষ্ঠা, আলমগীরী)
[৮৬]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- মূল বক্তব্য হচ্ছে, (জুমুয়ার নামাযের পর) চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র বা আখিরী যোহ্র-এর নামায পড়া জরুরী (ওয়াজিব)।” (ফাতাওয়ায়ে আযীযী ৪৭৫ পৃষ্ঠা)
[৮৭]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- শহরের পরিচিতির মধ্যে অনেক ইখতিলাফ বিদ্যমান। যখন কোন গ্রাম শরয়ী শহর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিবে, তখন জুমুয়ার নামাযের পর ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়া উচিৎ। নিয়ত হচ্ছে,
نويت ان اصلى اخر الظهر الذى ادركت وقته ولم يسقط بعد عنى.
আমি আখিরী যোহ্র নামায পড়ার নিয়ত করছি, যার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এরপর এখনো আদায় করিনি।আর প্রত্যেক রাকায়াতেই সূরাতুল্ ফাতিহাএর সাথে অন্য একটি সূরা মিলাতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে আব্দুল হাই লখনবী মাজমূয়াহ২২৩ পৃষ্ঠা)
[৮৮-৮৯]
صغيرى مين هى وعن الاختلاف فى المصر قالوا فى كل موضع وقع الشك فى جواز الجمعة ينبغى ان يصلى اربع ركعات بنية اخر الظهر ادركت وقته ولم يسقط بعد عنى. (فتاوى عبد الحى (مجموعة) ص ২২৩- صغيرى)
অর্থঃ- ছগীরীতে রয়েছে- মিছর বা শহরের সংজ্ঞা নিয়ে ইখতিলাফ বিদ্ধমান। এজন্য উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন, যে স্থানে জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে, সেখানে আখিরী যোহ্র এর নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়ে নেয়াই উচিৎ। নিয়ত হলো ادركت وقته ولم يسقط بعد عنى. আমি যার ওয়াক্ত   পেয়েছি, কিন্তু এখনো আদায় করিনি।” (ফাতাওয়ায়ে আব্দুল হাই (মাজমূয়াহ) ২২৩ পৃষ্ঠা, ছগীরী)
[৯০-৯৩)
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- যদিও উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মাঝে আখিরী যোহ্র জায়েয ও নাজায়েয হওয়ার ব্যাপারে অনেক মতানৈক্য হয়েছে, তথাপিও ফতওয়ায়ে শামীর মুছান্নিফ অনেক বাদ-প্রতিবাদের পর আখিরী যোহ্র পড়ার ব্যবস্থা যুক্তিপূর্ণ দলীল দ্বারা সাব্যস্ত করেছেন। এমনকি জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে প্রবল সন্দেহ হলে (জুমুয়ার পর) আখিরী যোহ্র পড়া ওয়াজিব লিখেছেন।” (মাজমূয়াতুল ফতওয়া ১ম জিঃ ৩২২ পৃষ্ঠা, রদ্দুল মুহতার, শামী, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২০ পৃষ্ঠা)
[৯৪-৯৫]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- মূল কথা এই যে, যে স্থানে জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হয়, যেমন বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে। কেননা এরূপ স্থানে পরিপূর্ণভাবে শহরের কোন পরিচিতিই পাওয়া যায়না। কোন কারণ ছাড়া, জিদ ছাড়াই অন্তরের ভক্তি নিয়ে এক এক গ্রামে দুতিন স্থানে জুমুয়া আদায় করা হয়। তাই এমন জায়গায় চার রাকায়াত আখিরী যোহ্রের নামায পড়া ওয়াজিব। ফরযের নিয়ত করাই জরুরী, তবেই আদায় হবে যোহ্রের ফরয।” (মাজমূয়াতুল ফতওয়া ১ম জিঃ ৩২২ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ৩১, ৩২ পৃষ্ঠা)
[৯৬-৯৭]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “(একই শহরে একাধিক মসজিদে) জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে, মতভেদ থাকার কারণে সে স্থানে চার রাকায়াত (আখিরী যোহ্র) পড়া মুস্তাহাব। কিন্তু কোন স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে অধিক সন্দেহ হলে, সে অবস্থায় সেখানে (আখিরী যোহ্র) পড়া ওয়াজিব। রদ্দুল মুহতার ১ম জিঃ ৫৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।” (ফাতাওয়ায়ে ফাইদুর রসূল ১ম জিঃ ৪১৯ পৃষ্ঠা, রদ্দুল মুহতার)
            উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ্ সম্বলিত বিশদ আলোচনা থেকে স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হলো যে, কোন স্থানে জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে অথবা শহর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল সন্দেহ দেখা দিলে, সেই স্থানে জুমুয়ার নামায আদায় করার পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের নামায পড়ে নেয়া ওয়াজিব, জরুরী বা অবশ্য কর্তব্য। (অসমাপ্ত)

0 Comments: