শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহর বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহরের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ২ নং )

 
শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহরের আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, আখিরী রসূল, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া পেশ করার পর ২০তম ফতওয়া হিসেবে শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া  দেয়ার কারণ
সুন্নতের মূর্ত প্রতীক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, সারা জাহান থেকে কুফরী, শেরেকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছুদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ করা হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
            তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার উদ্দ্যেশ্য বা মাকছুদও ঠিক তাই। কেননা অনেকেই আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রেরআহকাম সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। উপরক্ত কিছু বিদ্য়াতী ও ওহাবী মৌলভী আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রসম্পর্কে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যার ফলে অনেকেই আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রসম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে যেরূপ ব্যর্থ হয়; তদ্রুপ ব্যর্থ হয় তা আমলে বাস্তবায়ন করতে।
            যেমন, বিদয়াতী, ওহাবীরা বলে থাকে যে, আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র বলতে শরীয়তে কোন নামায নেই। আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রপড়া বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।” (নাউযুবিল্লাহ্ িমিন যালিক।)
সুতরাং সাধারণ মুসলমানগণ যেন ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরসম্পর্কে সঠিক আক্বীদা রাখতে পারে এবং উক্ত আমলকে জায়েয বা মুস্তাহাব মনে করে আমলে বাস্তবায়ন করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দী হাছিল করতে পারে, সাথে সাথে যারা ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরসম্পর্কে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তারা যেন বিভ্রান্তি থেকে হিদায়েতের উপর আসতে পারে, “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহরসম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়াদেয়ার এটাই মূলতঃ প্রধান কারণ।
আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহর নামায কাকে বলে এবং তা পড়তে হয় কেন?
জুমুয়ার দিন জুমুয়ার নামাযের ফরয আদায়ের পর চার রাকায়াত বাদাল জুমুয়া আদায় করার পর যোহরের নিয়তে চার রাকায়াত নামায আদায় করাকে শরীয়তে ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরবলে।
ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রধানতঃ দুটি কারণেই জুমুয়ার দিন জুমুয়ার নামায আদায় করার পর চার রাকায়াত আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহরপড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রথম কারণ- মিছর বা শহরের ব্যাখ্যায় ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মধ্যে ইখতিলাফ বা মতভেদ হওয়ায়।
দ্বিতীয় কারণ- ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মধ্যে এক শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতভেদ হওয়ায়।অর্থাৎ হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়া হলো-
এক শহরে দুই মসজিদে জুমুয়া জায়েয হবেনা, যদি দুই মসজিদের মাঝখানে বড় নদী না থাকে। তিনি আরো বলেন, .......” শহর যদি অত্যাধিক বড় হয় তবে সেখানে দুই মসজিদে জুমুয়া জায়েয হবে, তবে ততোধিক মসজিদ হলে জুমুয়া জায়েয হবেনা।
আর হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়া হলো-
বিনা শর্তে এক শহরে একাধিক স্থানে জুমুয়া জায়েয। মূলতঃ এটা ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন। এজন্যে ইমাম সারাখসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইমাম আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ছহীহ মত হলো- এক শহরে দুই বা ততোধিক মসজিদে জুমুয়া পড়া জায়েয। তিনি বলেন, আমরা এমতটিকেই গ্রহণ করেছি।
উল্লিখিত ইখতিলাফ বা মতভেদের কারণেই ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইজতিহাদ করতঃ জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরআদায় করার ফতওয়া দেন।
মূলতঃ ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরসম্পর্কে ফিক্বাহের কিতাব সমূহে ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের দুপ্রকার মত পরিলক্ষিত হয়। যথা- (১) ওয়াজিব, (২) মুস্তাহাব বা মুস্তাহসান।
যে স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট সন্দেহ রয়েছে, সেখানে জুমুয়া আদায় করা হলে, জুমুয়ার পর চার রাকায়াত ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরপড়া ওয়াজিব।
আর যে স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই সেখানে (এক শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতভেদ থাকার কারণে) ইহতিয়াত বা সাবধানতার জন্য চার রাকায়াত ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরপড়া মুস্তাহাব বা মুস্তাহসান। যেমন, এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে,
واكثرهم داموا على ادائها اولا علماء منهم بانها من اكبر شعائر الاسلام والتزموا بعدها اداء الظهر لكثرة الشكوك فى شانها وغلبة الاوهام.
অর্থ: অধিকাংশ ফক্বীহ আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ জুমুয়ার নামাযকে শরীয়তের প্রধান অঙ্গ মনে করে সর্বদাই প্রথমে জুমুয়া আদায় করেন, অতঃপর জুমুয়ার নামাযে একাধিক সন্দেহ বিরাজমান থাকায় জুমুয়ার পর যোহরপড়াকে লাযিম বা ওয়াজিব মনে করতেন।” (তাফসীরে আহমদী ৭০৮ পৃষ্ঠা)
মাওলানা আব্দুল হাই লাখনবী ছাহেব মজমুয়ায়ে ফতওয়া১ম খ-ের ৩২২ পৃষ্ঠায় লিখেন,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থ: “... শামী প্রনেতা অনেক বাহাছ-মুবাহাছা ও তাহক্বীকের পর এটাই প্রমাণ করেন যে, জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হলে আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহর পড়া ওয়াজিব।
আর ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব ছগীরীকিতাবে উল্লেখ আছে,
لان الموضع وان كان مصرا بلا شبهة ولكن بقى الشبهة جواز التعدد وعدمه وان الصحيح والمتعمد جواز التعدد للضرورة للفتاوى لايمنع الشريعة الاحتياط للتقوى.
অর্থ: ধরা যাক, কোন স্থান নিঃসন্দেহে শরয়ী শহর কিন্তু তিদাদে মসজিদ অর্থাৎ এক শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়ার নামায জায়েয হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ অবশ্যই রয়ে যায়। জরুরতে ঐরূপ একস্থানে একাধিক মসজিদে ফতওয়া মতে জুমুয়া জায়েয থাকলেও তাক্বওয়ার জন্য ইহতিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করতঃ (চার রাকায়াত আখিরী যোহর পড়া) শরীয়ত বিরোধী নয় (বরং মুস্তাহাব বা মুস্তাহসান)।
যেমন, এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের অন্যতম কিতাব শরহে বিকায়াতেউল্লেখ আছে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থাৎ জুমুয়ার নামাযের পর বিনা জামায়াতে চার রাকায়াত আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহর পড়া মুস্তাহসান।
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মতে ক্ষেত্র বিশেষে ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরপড়া ওয়াজিব। আর যেস্থানে সন্দেহ নেই, (তবে মতভেদ থাকায়) সেখানে আখিরী যোহরপড়া মুস্তাহাব, মুস্তাহসান, আওলা ও আফযল, জায়েয তো অবশ্যই।
অতএব, ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাবসমূহে এরূপ সুস্পষ্টভাবে ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরেরকথা উল্লেখ থাকার পরও যারা বলে যে, “আখিরী যোহরবলতে শরীয়তে কোন নামায নেই, এটা পড়া নাজায়েয ও বিদয়াত।
তারা যদি জেনে-শুনে এরূপ বলে থাকে তবে তারা নিশ্চিত রূপেই গোমরাহ ও শরীয়ত অস্বীকারকারী। আর যদি তারা না জেনে বলে থাকে তবেও তারা চরম জাহিল ও গোমরাহ। কেননা বিনা তাহক্বীকে শরীয়তের কোন বিষয়ে মন্তব্য করা জিহালত ও গোমরাহী বৈ কিছুই নয়।
মূলতঃ এ নামাযের কথা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও শরীয়তের আরেক দলীল ইজমা ও ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহের কিতাবে সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে। কাজেই আখিরী যোহর শরীয়তে নাই বলা ইজমা ও ক্বিয়াসকেঅস্বীকার করারই নামান্তর। যা সুস্পষ্ট কুফরী। কেননা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার ন্যায় ইজমা ও ক্বিয়াসকে মানাও ফরয-ওয়াজিব।
যেহেতু শরীয়তের দলীল হচ্ছে- ৪টি অর্থাৎ (১) কুরআন শরীফ (২) হাদীছ শরীফ (৩) ইজমা (৪) ক্বিয়াস।
নি¤œ এ সম্পর্কে বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা করা হলো-
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের দৃষ্টিতে ইসলামী শরীয়তের উছূল
আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো, শরীয়তের কোন বিষয়ের মীমাংসা বা ফায়সালা করতে হলে তা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতেই করতে হবে। এর বাইরে কোন কথা বা কাজ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, শরীয়তের ভিত্তি বা দলীলই হলো উপরোক্ত চারটি।
এ প্রসঙ্গে উছূলের কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
اصول الشرع ثلثة القران والحديث والاجماع ورابعها القياس.
অর্থ: মূলত: শরীয়তের ভিত্তি হলো তিনটি। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা এবং চতুর্থ হলো- ক্বিয়াস।” (নূরুল আনওয়ার)

(৪)
ক্বিয়াস
যে বিষয়ে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট কোন কিছু বলা হয়নি, সে বিষয়ে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ হুকুম সাবিত করতে হবে। অবস্থার প্রেক্ষিতে ও প্রয়োজনীয়তায় এ ধরণের ইজতিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই নির্দেশ মুবারক। যেমন, কালামে পাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, فاعتبروا ياولى الابصار.
অর্থ: হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা গবেষণা কর।” (পবিত্র সূরা হাশর/২)
আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ইয়েমেনের গভর্নর করে পাঠানোর প্রাক্কালে বলেছিলেন-
بم تقضى يامعاذ؟ فقال بكتاب الله فان لم تجد؟ قال بسنة رسول الله فان لم تجد قال اجتهد برائى فقال الحمد لله الذى وفق رسول رسول الله بما يرضى به رسوله.
অর্থ: হে মুয়ায! তোমার নিকট কোন মুকাদ্দমা আসলে কিভাবে তা ফায়সালা করবে? হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবের দ্বারা। যদি তাতে না পাও তাহলে? মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নাহ দ্বারা। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, যদি তাতেও না পাও তাহলে? আমি কিতাব ও সুন্নাহ শরীফ উনার ভিত্তিতে ইজতিহাদ করে রায় দিবো। এ উত্তর শুনে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার, যিনি উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দূতকে এ যোগ্যতা দান করেছেন, যাতে উনার রসূল সন্তুষ্ট হন।” (মিশকাত, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী, আত তালীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত)
ক্বিয়াস মূলতঃ নতুন কোন বিষয় নয়, বরং স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও ক্বিয়াস করেছেন। তার প্রমাণ নি¤œাক্ত হাদীছ শরীফ-
عن ابن عباس رضى الله عنه قال اتى رجل الى النبى صلى الله عليه وسلم فقال ان اختى نذرت ان تحج وانها ماتت فقال النبى صلى الله عليه وسلم لو كان عليها دين اكنت فاقضيه قال نعم قال فاقض دين الله فهو احق بالقضاء.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন- ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার ভগ্নি হজ্জ করার মানত করেছিলেন। কিন্তু আদায় করার পূর্বেই তিনি ইন্তিকাল করেছেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমার ভগ্নির উপর কারো ঋণ থাকলে তুমি তা আদায় করতে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার হক্ব আদায় কর। কেননা এটা আদায় করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারাও ক্বিয়াস করে সমস্যার সমাধান করতেন। যেমন, হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
ان ابا بكر رضى الله عنه اذا تراب به قضية لم يجد فى كتاب الله اصلا ولا فى السنة اثرا فقال اجتهد برائئ فان نكن صوابا فمن الله وان يكن فمنى استغفر الله.
অর্থ: হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার নিকট যখন কোন মুকাদ্দমা আসতো, প্রথমে কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফ প্রতি নজর দিতেন, সেখানে যদি কোন নির্দেশনা না পেতেন, তাহলে নিজের রায় অনুযায়ী ক্বিয়াস করে নিতেন। যদি সঠিক মতে পৌঁছতেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার পুরস্কার আশা করতেন। আর যদি ভুল হতো, তাহলে ক্ষমা চাইতেন।” (তাবাকাতু ইবনে সাদ)
অনুরূপ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নীতি ছিল যে, তিনি ফায়সালা করার ক্ষেত্রে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ শরীফ উনার পর হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ও হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রায়ের প্রতি নজর দিতেন, সেখানেও না পাওয়া গেলে বলতেন, فيه برائى (অথাৎ নিজের রায় মোতাবেক ফায়সালা করতেন)। (সুলানুদ দারিমী, মুসতাদরিকে হাকিম)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, ক্বিয়াস শুধু শরীয়তের অকাট্য দলীলই নয় বরং ক্বিয়াসের মাধ্যমে মাসয়ালা ছাবিত করা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের খাছ সুন্নতেরও অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং ক্বিয়াসের অনুসরণ করাও আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। শুধু তাই নয়, ক্বিয়াসের প্রতি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতগণকে উৎসাহিতও করেছেন। নি¤œর হাদীছ শরীফ থেকে তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا حكم الحاكم فاجتهد واصاب فله اجران واذا حكم فاجتهد فاخطا فله اجر واحد.
অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে। রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যখন কোন ফায়সালাকারী ফায়সালা করবে, সে যদি কামিয়াব হয়, দ্বিগুণ ছাওয়াব পাবে। আর যদি সে ভুল করে, তাহলে একগুণ ছাওয়াব পাবে।” (বুখারী শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা টো স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, ক্বিয়াস কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ সমর্থিত ও ফযীলতের কারণ এবং তা শরীয়তের অকাট্য দলীলরূপে পরিগণিত।
সুতরাং ক্বিয়াস অনুসরণ করার অর্থই হলো- কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ উনাদেরকে অনুসরণ করা। আর ক্বিয়াসের বিরোধিতা করা, কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ অস্বীকার করারই নামান্তর।
ক্বিয়াসের প্রকারভেদ
ক্বিয়াস দুপ্রকার- (১) হক্ব ক্বিয়াস, (২) বাতিল ক্বিয়াস।
হক্ব ক্বিয়াসের সংজ্ঞা : মুজতাহিদ ক্বিয়াস করার সময় যদি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ক্বিয়াস করেন, তাহলে তাকে হক্ব ক্বিয়াস বলে।
হক্ব ক্বিয়াসের উদাহরণ
(১) মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
حرمت عليكم امهاتكم وبناتكم.
অর্থ: তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে, তোমাদের মাতা ও কন্যাদেরকে।” (সূরা নিসা/২৩)
এখানে امهات শব্দের দ্বারা মাতাকে বিবাহ করা হারাম বুঝায়। শরীয়তে নানী, দাদী বা নাতনীকে বিবাহ করা হারাম, কিন্তু কুরআন শরীফ বা হাদীছ শরীফ উনার কোথাও নানী, দাদী বা নাতনীকে বিবাহ করা হারাম তার প্রকাশ্য কোন ইবারত নেই।
সুতরাং যারা ক্বিয়াসকে অস্বীকার করে বা কুরআন শরীফ-হাদীছ শরীফ ব্যতীত অন্য কোন ইজতিহাদী করল গ্রহণ করতে নারাজ, তারা এ ব্যাপারে কি মত গ্রহণ করবে? ক্বিয়াস অস্বীকার করে নানী, দাদী ও নাতনীকে বিবাহ করবে? নাকি ক্বিয়াস স্বীকার করে হারাম হতে নিজকে রক্ষা করবে?
স্মর্তব্য যে, উক্ত আয়াতের امهات শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত, তাই মুজতাহিদ তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মাতার সাথে ক্বিয়াস করে উর্ধ্বতন যত নারী রয়েছে, যেমন- নানী, দাদী, তার মা, তার মা প্রমূখ বেং بناتكم দিয়ে নি¤œ সারীর যত নারী রয়েছে, যেমন- মেয়ে, তার মেয়ে (নাতনী) তার মেয়ে (প্রো নাতনী) প্রমূখ সকলকেই বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, যারা মাযহাব মানে না, তারা নিশ্চয়ই এই রায় মেনে নিয়ে মাযহাবী হয়ে আছে, কেননা এটা হানাফী, মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী চার মাযহাবেরই রায়। তাই এখন যদি কেউ ক্বিয়াসকে অস্বীকার করে ও মাযহাবের বিরুদ্ধে মত পোষণ করে, তা হঠকারিতা বৈ আর কিছুই নয়।
বাতিল ক্বিয়াসের সংজ্ঞা : বাতিল ক্বিয়াস হলো- ক্বিয়াসকারী যদি মনগড়াভাবে কুরআন শরীফ- হাদীছ শরীফ উনার খেলাফ কোন ক্বিয়াস করে, তা বাতিল ক্বিয়াস হিসেবে পরিগণিত হবে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
من قال فى القران برايه فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ উনার (তাফসীরে) স্বীয় রায় অনুযায়ী কথা বলে, সে তার অবস্থানকে যেন দোযখে নির্ধারণ করে নেয়।” (তিরমিযী শরীফ)
বাতিল ক্বিয়াসের উদাহরণ
কিছু সংখ্যক লোক বলে থাকে যে, মুস্তাহাব আমলের ভিতর বিদয়াত প্রবেশ করলে মুস্তাহাব আমলকে ছেড়ে দিতে হবে, এটাও বাতিল ক্বিয়াস হিসেবে পরিগণিত। এর দলীল হলো- আশুরার রোযা।
প্রথমত: আশুরার রোযা ১০ই মুহররম একটি রাখার নিয়ম ছিল, কিন্তু যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা বললেন যে, ইহুদীরাও ১০ই মুহররম একটি রোযা রেখে থাকে, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
صوموا يوم عاشورأ وخالفوا فيه اليهود وصوموا قبله يوما وبعده يوما.
অর্থ: তোমরা আশুরার দিন রোযা রাখ এবং তার পূর্বে একদিন বা পরে একদিন রোযা রেখে ইহুদীদের খেলাফ কর।” (মিশকাত)
এখানে বিদয়াত তো দূরের কথা, তাশাব্বুহ বা হারাম হওয়া সত্বেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আশুরার রোযাকে বাদ দিলেন না, বরং মূল আমলকে ঠিক রেখে তার তাশাব্বুহ দূর করে দিলেন আরেকটি রোযা রাকার নির্দেশ দিয়ে। সুতরাং উক্ত মত পোষণকারীদের ক্বিয়াস দলীল বহির্ভুত এবং বাতিল ক্বিয়াস হিসেবে পরিগণিত।
আর এ ধরণের কোন ক্বিয়াসের উপর যদি কখনো ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে সে ইৎমাও বাতিল ইজমা হিসেবে পরিগণিত।
কাজেই আমাদের কোন বিষয়ের শরয়ী ফায়সালা করতে হলে, প্রথমে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারাই তা করতে হবে। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যদি তার সুস্পষ্ট বিধান না পাওয়া যায়, তবে ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দ্বারা তার ফায়সালা করতে হবে। কেননা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের দলীলের ভিত্তিই হলো উক্ত চারটি, এর বাইরে কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়।
আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহর সম্পর্কে ইমাম-মুকতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের ক্বিয়াস
স্মর্তব্য যে, ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরের মাসয়ালাটিও ক্বিয়াস মাসয়ালা, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ নিম্মোক্ত হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ক্বিয়াস করতঃ
ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরপড়ার ফতওয়া দেন। হাদীছ শরীফ খানা হলো-
عن نعمان بربشير رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم .... فمن اتقى الشبهة استبرا لدينه وعرضه ومن وقع فى الشبهة وقع فى الحرام.
অর্থ: হযরত নুমান ইবনে বশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ....... যে ব্যক্তি সন্দেহ থেকে বাঁচল, সে উনার দ্বীন ও সম্মানকে রক্ষা করলো। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত হলো, সে হারামে লিপ্ত হলো।” (মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)
ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উক্ত হাদীছ শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে শুধু যে, “ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহর”-এর ফায়সালা দিয়েছেন তা নয় বরং উক্ত হাদীছ শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে আরো বহু গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা তারা ফায়সালা করেছেন।
নি¤œ ফিক্বাহের কিতাব হতে কতিপয় মাসয়ালা উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা হলো-
১। আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়ায়ে শামী”-এর ১ম খ- ৫২৯ পৃষ্ঠায় লিখেন, والا اخذ بالاقل- الخ.
অর্থাৎ নামায কত রাকায়াত পড়েছে, তিন রাকায়াত না চার রাকায়াত যদি তা স্থির করতে না পারে, তবে কম সংখ্যাটি ধরে অর্থাৎ তিন রাকায়াত হয়েছে ধারণা করতঃ আরেক রাকায়াত তার সাথে মিলাবে এবং পরে সিজদায়ে সাহু দিবে।
২। ইমামুল আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
فيمن فاتته صلاة واشتبهت عليه انه يصلى الخمس ليتقن اى لانه لايمكنه تعيين هذه الفائتة الابذالك.
অর্থাৎ যে ব্যক্তির এক ওয়াক্ত নামায কাযা হয়েছে, আর সে কোন ওয়াক্ত কামা হয়েছে, তা নির্ধারণ করতে না পারে তবে তাকে সন্দেহ হতে বাঁচার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই আদায় করতে হবে। কেননা এয়াড়া নিশ্চিতরূপে বা নিসন্দেহে উক্ত নামায আদায় করা সম্ভব নয়।” (ফতওয়ায়ে শামী ১ম জিঃ ২৯২ পৃষ্ঠা)
৩। আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়ায়ে শামী১ম জিঃ ৩০৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
ولو ادرك القوم فى الصلاة ولا يدر فرض ام تراويح ينوى الفرض فان هم فيه صح والا تقع نفلا.
অর্থাৎ কেউ জামায়াতে শরীক হলো, কিন্তু তার জানা নেই এই জামায়াত ফরযের না তারাবীহ-এর, এমতাবস্থায় সে ফরযের নিয়ত করবে। যদি জামায়াত ফরযের হয়ে থাকে তবে তার ফরয আদায় হয়ে যাবে। নচেৎ তা নফল হিসেবে গণ্য হবে।
৪। ফিক্বাহের কিতাব সমূহে উল্লেখ আছে যে, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা উল্লিখিত হাদীছ শরীফ উনার উপর ভিত্তি করেই উমরী কাযানামায আদায়ের কথা বলেছেন। অর্থাৎ কারো নামায কাযা আছে কি নাই? এরূপ সন্দেহে যদি পতিত হয় তবে কাযা আদায় করাই উত্তম। এ প্রসঙ্গে আল্লামা শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়ায়ে শামী”-এর ১ম জিঃ ৮৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
...... ولذا قال بعضهم فيمن يقضى صلاة عمره مع انه لم يفته مبنها شئ لا يكره لانه اخذ بالاحتياط.
অর্থাৎ “....... উক্ত হাদীছ শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে অনেকেই বলেছেন যে, যে ব্যক্তির কোন নামায কাযা হয়নি, সে ব্যক্তি যদি উমরী কাযা আদায় করে তবে মাকরূহ হবেনা (বরং আফযল)। কেননা সে তা ইহতিয়াত বা নিঃসন্দেহভাবে কাজ সম্পন্ন করলো।
অর্থাৎ উনার অজান্তে যদি কোন নামায কাযা থেকেই থাকে, তবে উমরী কাযা আদায় করার ফলে তা আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কোন নামায কাযা না থাকে তবে উমরী কাযা নফলে পরিণত হয়ে যাবে।
ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা যেরূপ উক্ত হাদীছ শরীফ উনার উপর ক্বিয়াস করে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা গুলো বের করেছেন; ঠিক তদ্রুপ ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরএর ফায়সালাও উক্ত হাদীছ শরীফ উনার উপর ক্বিয়াস করেই দিয়েছেন। যেন মুছল্লীগণ জুমুয়া ও যোহরের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ফরয নিঃসন্দেহ ভাবে আদায় করতে পারে। তাই ইমাম-মুজতাহিদগণ ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহর”-এর ফায়সালায় উল্লেখ করে বলেন যে,
"كل موضع وقع الشك فى جواز الجمعة لوقوع الشك المصر اوغيره واقام اهله الجمعة ينبغى ان يصلوا بعد الجمعة فى اربع ركعات وينوى بها الظهر حتى لولم تقع الجمعة موقعها يخرج عن عهدة فرض الوقت بيقين.
অর্থ: যে স্থান শহর ইত্যাদি হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে, যার ফলে জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হয়। আর সেখানকার অধিবাসীগণ জুমুয়া আদায় করে নেয়। তবে তাদেরকে জুমুয়ার পর চারি রাকায়াত যোহরের নিয়তে পড়া চাই। কেননা যদি জুমুয়া জায়েয না হয় তবে নিশ্চিতরূপে ওয়াক্তিয়া ফরয যা তার উপর ফরয ছিল আদায় হয়ে যাবে।” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, মুহীত, কাফী)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, “ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরশরীয়তের অন্যতম দলীল ক্বিয়াস দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত। মূলতঃ ফক্বীহগণ জুমুয়া ও যোহরের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ফরযের কথা বিবেচনা করেই উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতে ক্বিয়াস করে ইহতিয়াতুয যোহর বা আখিরী যোহরেরবিধান দিয়েছেন।
সুতরাং আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয যোহরনামায শরীয়তে নেই বলা শরীয়তের অন্যতম একটি দলীল ক্বিয়াসকে অস্বীকার করার নামান্তর যা সুস্পষ্ট কুফরী।
কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার দৃষ্টিতে নামাযের আহকাম ও ফাযায়েল-ফযীলত
ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে পাঁচটি। তন্মধ্যে নামায অন্যতম একটি ভিত্তি। কালিমা তথা ঈমান বা আক্বীদার পরই যার স্থান। প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য নামায আদায় করা ফরযে আইন। কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এই নামায সম্পর্কে অসংখ্য নির্দেশ এবং ফাযায়েল-ফযীলতের কথা বর্ণিত রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
واقيموا الصلوة واتوا الزكوة وماتقدموا لانفسكم من خير تجدوه عند الله ان الله بما تعملون بصير.
অর্থ: তোমরা নামায কায়েম (প্রতিষ্ঠা) কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজেদের জন্য পূর্বে যে ভাল কাজ প্রেরণ করবে, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে তা পাবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যক্ষ করেন তোমরা যা আমল কর।” (সূরাতুল বাক্বারা/১১০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
فاقيموا الصلوة ان الصلوة كانت على المؤمنين كتبا موقوتا.
অর্থ: তোমরা নামায কায়েম (প্রতিষ্ঠা কর)। নিশ্চয়ই নামায মুমিনগণ উনাদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (আদায় করা) ফরয।” (সূরাতুন নিসা/১০৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
قل لعبادى الذين امنوا يقيموا الصلوة وينفقوا مما رزقناهم سرا وعلانية من قبل ان يأتى يوم لابيع فيه ولاخلال.
অর্থ: হে নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার বান্দাগণকে বলে দিন, যাঁরা ঈমান এনেছে, তারা নামায কায়েম রাখুক এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে গোপন ও প্রকাশ্যে (সৎ পথে) ব্যয় করুক। সেইদিন আসার পূর্বে যেদিন কোন বেচা-কেনা এবং বন্ধুত্ব হবেনা।” (সূরাতু ইবরাহীম/৩১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
يايها الذين امنوا اركعوا واسجدوا واعبدوا ربكم وافعلوا الخير لعلكم تفلحون.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকু কর, সিজদাহ কর, তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর এবং সৎ (নেক) কাজ কর। যাতে তোমরা কামিয়াব হবে।” (সূরাতুল হজ্জ/৭৭)
فاقيموا الصلوة واتوا الزكوة واعتصموا بالله هو مولكم فنعم المؤلى ونعم النصير.
অর্থ: তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে (সন্তুষ্টি পাওয়ার মত ও পথকে) মজবুত ভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মাওলা বা অভিভাবক। অতএব তিনি সর্বোত্তম অভিভাবক এবং সর্বোৎকৃষ্ট সাহায্যকারী।” (সূরাতুল হজ্জ/৭৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
واقيموا الصلوة واتوا الزكوة واطيعوا الرسول لعلكم ترحمون.
অর্থ: তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য কর। যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে।” (সূরাতুন নূর/৫৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
منيبين اليه واتقوة واقيموا الصلوة ولاتكونوا من المشركين.
অর্থ: তোমরা সবাই মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হও এবং উনাকেই ভয় কর। আ নামায কায়েম কর। মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” (সূরাতুর রুম/৩১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
فاقيموا الصلوة واتوا الزكوة واطيعوا الله ورسوله والله خبير بما تعملون.
অর্থ: তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য কর। তোমরা যা কর সে বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ণ খবর রাখেন।” (সূরাতুল মুজাদালাহ/১৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
واقيموا الصلوة واتوا الزكوة واقرضوا الله قرضا حسنا وما تقذموا لانفسكم من خير تجدوه عند الله هو خيرا واعظم اجرا واستغفروا الله ان الله غفور رحيم.
অর্থ: তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু।” (সূরাতুল মুযযাম্মিল/২০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
فصل لربك وانحر.
অর্থ: সুতরাং হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার প্রভূর সন্তুষ্টির জন্য নামায আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।” (সূরাতুল কাউসার/২)
নামায হচ্ছে একটি ফরয ইবাদত। আর এটা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির বা স্মরণের উত্তম মাধ্যম। মূলত: শরীয়তের প্রত্যেকটি আদেশ নিষেধ যথাযথভাবে মেনে চলাই মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির। সুতরাং নামাযও মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির।
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
اننى انا الله لا اله الا انا فاعبدنى واقم الصلوة لذكرى.
অর্থ: আমিই মহান আল্লাহ পাক, আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। অতএব তুমি আমার ইবাদত কর। আর আমার যিকিরের (বা স্মরণের) জন্য নামায কায়েম কর।” (সূরা ত্ব-হা/১৪)
নামাযের মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত, বরকত, ছাকীনাহ বা শান্তি লাভ করে থাকে। যেমন, কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে,
واقيموا الصلوة واتوا الزكوة واطيعوا الرسول لعلكم ترحمون.
অর্থ: তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য কর। যাতে তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও।” (সূরাতুন নূর/৫৬)
নামায প্রত্যেকটি মানুষকেই সমস্ত প্রকার খারাপ, অশ্লীল, অশালীন, কুকাজ, অকাজ, বেহায়াপনা এক কথায় সকল গুণাহের কাজ থেকে বিরত রাখে। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
واقيموا الصلوة ان الصلوة ان الصلوة تنهى عن الفحشاء والمنكر.
অর্থ: তোমরা নামায কায়েম কর। নিশ্চয়ই নামায সর্বপ্রকার অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরাতুল আনকাবূত/৪৫)
এছাড়াও অসংখ্য আয়াতে কারীমায় নামাযের অসংখ্যা গুরুত্ব, ফাযায়েল-ফযীলত বর্ণিত রয়েছে। এখন আমরা সংক্ষিপ্তভাবে হাদীছ শরীফ উনার আলোকে নামাযের ফাযায়েল-ফযীলত আলোচনা করব। যাতে নামায সম্পর্কিত গুরুত্ব বুঝে মানুষ নামাযের প্রতি যত্মবান হয়ে উঠে। হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
امرت ان اقاتل الناس حتى يقولوا لا اله الا الله ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكوة فاذا فعلوا ذلك عصموا منى دمائهم واموالهم الا بحقها وحسابهم على الله.
অর্থ: আমি মানুষদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি যতক্ষণ না তারা বলবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত আদায় করবে। এই কাজগুলো করলে আমার পক্ষ থেকে তারা তাদের রক্ত (জান) এবং মালের নিরাপত্তা লাভ করবে। তবে ঐ গুলোর অন্য কোন হক্ব থাকলে তা ভিন্ন, এবং তাদের হিসাব মহান আল্লাহ পাক উনার জিম্মায় থাকবে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে যে,
ان عمربن الخطاب رضى الله عنه كتب الى عماله ان اهم امركم عندى الصلوة فمن حفظها وحفظ عليها حفظ دينه ومن ضيعها فهولما سواها اضيع.
অর্থ: হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতের সময় কর্মকর্তাগণ উনাদের উদ্দেশ্যে লিখে পাঠালেন যে, তোমাদের যাবতীয় ব্যাপারের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নামায কায়েম করা। যে নামাযকে হিফাযত করে এবং তা হিফাযতের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করে, সে তার দ্বীনকে রক্ষা করে। আর যে তা বিনষ্ট করে সে এই নামায ছাড়াও অন্যান্য সবকিছু অধিক নষ্ট করে।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি)
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে যে,
مروا الصبى بالصلاة واذا بلغ سبع سنين فاذا بلغ عشر سنين فاضربوه عليها.
অর্থ: তোমরা বালক-বালিকাদেরকে নামাযের আদেশ দাও, যখন তাদের বয়স সাত বছরে উপনীত হয়। আর যখন দশ বছর বয়সে পৌঁছে, তখন নামাযের জন্য (নামায না পড়লে) প্রহার কর।” (আবূ দাউদ শরীফ)
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الصلوات الخمس والجمعة الى الجمعة ورمضان الى رمضان مكفرات لما بينهن اذا اجتنبت الكبائر.
অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুয়া থেকে অপর জুমুয়া এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান কাফফারা হয় সে সকল গুণাহর জন্য, যা তার মধ্যবর্তী সময় সংঘঠিত হয়, যখন কবীরা গুণাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
عن جابر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بين العبد وبين الكفر ترك الصلوة.
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, বান্দা এবং কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হল নামায ত্যাগ। (অর্থাৎ প্রকৃতবান্দা কুফরী সাদৃশ্য নামায ত্যাগকরতে পারেনা)” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ নামায হল ঈমান রক্ষার প্রাচীর স্বরূপ। তাই, নামায ত্যাগ করলে কুফরীতে পতিত হতে বিলম্ব হয় না।
عن ابى ذر رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم خرج زمن الشتاء والورق يتهافت فاخذ بغصنين من شجرة قال فجعل ذالك الورق يتهافت قال فقال ياابا ذر قلت لبيك يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان العبد المسلم ليصلى الصلوة يريد بها وجه الله فتهافت عنه ذنوبه كما تهافت هذا الورق عن هذه الشجرة.
অর্থ: হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নবী করীম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা শীতকালে বের হলেন, আর তখন গাছের পাতা ঝরছিল। এসময় তিনি একটি গাছ থেকে দুটি ডাল ধরে নাড়া দিলেন। রাবী বলেন, সেই পাতা আরো ঝরতে লাগল। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে ডাকলেন, হে আবূ যর! আমি উত্তর দিলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি উপস্থিত আছি। তিনি (রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই যখন মুসলমান বান্দা নামায পড়ে আর নিয়ত থাকে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির, তখন তার গুণাহসমূহ ঝরতে থাকে যেভাবে এই গাছ থেকে পাতাসমূহ ঝরে পরছে। (মুসনাদু আহমদ ইবনে হাম্বল, মিশকাত শরীফ)
عن ابن مسعود رضى الله عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال لقوم يتخلفون عن الجمعة لقد هممت ان امر رجلا يصلى بالناس ثم احرق على رجال يتخلقون عن الجمعة بيوتهم. (مسلم شريف- مشكوة شريف)
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নবী করীম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদল লোক সম্পর্কে বলেছেন, যারা জুমুয়ার নামায থেকে সরে থাকত আমি নিশ্চিতভাবে ইচ্ছা করি যে, আমি কাউকে আদেশ করব, সে আমার স্থলে লোকদের ইমামতী করবে আর আমি গিয়ে সে সকল লোকদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিব। যারা জুমুয়ার নামায থেকে দূরে সরে থাকে অর্থাৎ যারা জুমুয়ার নামায পড়ে না।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ উনার দৃষ্টিতে জুমুয়ার নামাযের আহকাম ও ফযীলত
জুমুয়ার নামাযের নির্দেশ ও ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
يايها الذين امنوا اذا نودى للصلوة من يوم الجمعة فاسعوا الى ذكر الله وذروا البيع ذلكم خيرلكم ان كنتم تعلمون.
অর্থ: হে ঈমানদার বান্দাহগণ! জুমুয়ার দিনে যখন নামাযের জন্য আহবান করা (আযান দেয়া) হয়, তখন মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির বা স্মরণের (নামায ও খুত্ববাহর) দিকে ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা পরিত্যাগ কর। এটা তোমাদের জন্য অতীব উত্তম, মঙ্গলময়, যদি তোমরা বুঝে থাক।” (সূরা জুমুয়াহ/৯)
عن ابى هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من اغتسل يوم الجمعة غسل الجنابة ثم راح فكانما قرب بدنة ومن راح فى الساعة الثانية فكانما قرب بقرة ومن راح فى الساعة الثالثة فكانما قرب كبش اقرن ومن راح فى الساعة الرابعة فكانما قرب دجاجة ومن راح فى الساعة الخامسة فكانما قرب بيضة فاذا خرج الامام حضرت الملائكة يستمعون الذكر.
অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- যে ব্য্যক্তি জুমুয়ার দিন গোসল করে জানাবাত (অপবিত্রতা) থেকে পবিত্র হওয়ার উদ্দেশ্যে এবং জুমুয়ার নামাযে সর্ব প্রথম গমন করে, সে যেন একটি উটকে কুরবানী করল। যে ব্য্যক্তি এরপর রওনা করে মসজিদে আসে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় যে ব্যক্তি গমন করবে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ যে গমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল (দান করার সমতুল্য ছাওয়াব পাবে) পরে ইমাম ছাহেব যখন খুত্ববাহ প্রদানের জন্য বের হন, তখন ফেরেশতাগণ কাজ বন্ধ করে যিকির (খুত্ববাহ) শোনার জন্য হাযির হয়ে থাকেন।” (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ ১২১ পৃষ্ঠা)
عن ابى لبابة بن عبد المنذر قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهواعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه ادم واهبط الله فيه ادم الى الارض وفيه توفى الله ادم وفيه ساعة الايسئال العبد فيها شيئا الا اعطاه مالم يسئال حراما وفيه تقوم الساعة مامن ملك مقرب ولاسماء ولاارض ولارياح ولا جبال ولا بحر الا هو مشفق من يوم الجمعة.
অর্থ: হযরত আবু লুবাবাহ ইবনে মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, জুমুয়ার দিন হলো দিনসমূহের সরদার। মহান আল্লাহ পাক তিনি জুমুয়ার দিনকে অধিক সম্মান দান করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জুমুয়ার দিনের মর্যাদা বা সম্মান ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চেয়ে অনেক বেশি। আরো পাঁচটি বিশেষ কারণে মহান আল্লাহ পাক জুমুয়ার দিনকে এতো ইজ্জত দান করেছেন। যেমন তা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি এ জুমুয়ার দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন। আর এ পবিত্র দিনেই উনাকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আর এ দিনেই উনাকে দুনিয়া থেকে নিয়েছেন (ইন্তিকাল দান করেছেন)। আর এ জুমুয়ার দিনেই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট যেই বান্দা যা চায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে তা থেকে মাহরূম করেন না, যদি সে হারাম কোন জিনিস না চায়। আর এ দিনেই কিয়ামত কায়িম হবে। আর এ জুমুয়ার দিন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটতম ফিরিশতাগণ এবং আসমানসমূহ, যমীন, বাতাস, পাহাড়-পর্বত এবং নদী-নালা, সাগর সকলেই জুমুয়া আদায়কারী নেককারগণ উনাদের জন্য অনুগ্রহ পরায়ণ- দয়াশীল হয়ে দোয়া করা ব্যতীত আর কিছুই করেন না (বা দয়াশীল হন)।” (ইবনু মাজাহ, মুসনাদু আহমদ ইবনে হাম্বল, মিশকাত পৃষ্ঠা ১২০)
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه خير يوم طلعت عليه الشمس يوم الجمعة فيه خلق ادم وفيه ادخل الجنة وفيه اخرج منها ولا تقوم الساعة الا فى يوم الجمعة.
অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ করেন যে, উত্তম দিন যার উপর সূর্য উদিত হয় তা হলো জুমুয়ার দিন। আর জুমুয়ার দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ঐ দিনেই উনাকে বেহেশতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং ঐ দিনেই উনাকে বেহেশত থেকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে। আর জুমুয়ার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।” (মুসলিম শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফ)
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه من توضأ فاحسن الوضوء ثم اتى الجمعة فاستمع وانصت غفرله مابينه وبين الجمعة وزيادة ثلثة ايام ومن مس الحصى فقدلغا.
অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অজু করে জুমুয়ার নামায আদায় করার জন্য মসজিদে এসেছে এবং মনোযোগ সহকারে খুত্ববাহ শুনেছে এবং চুপ করে বসে থেকেছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি মাফ তাকে করে দিয়েছেন, তার এক জুমুয়ার থেকে পরবর্তী জুমুয়ার মধ্যেকার গুণাহসমূহ এবং তার জন্য তিন দিনের সম্মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে একটি কথা বা কংকর স্পর্শ করল সে যেন একটি (আমলে কাছীর) খারাপ কাজ করল।” (মুসলিম শরীফ)
عن سلمان الفارسى رضى الله عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم لايغتسل رجل يوم الجمعة ويتطهر ما استطاع من طهر ويدهن من دهنه اويمس من طيب بيته ثم يخرج فلا يفرق بين اثنين ثم يصلى ماكتب له ثم ينصت اذا تكلم الامام الا غفر له ما بينه ومابين الجمعة الاخرى.
অর্থ: হযরত সালমান ফারিসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেনছে, যে ব্যক্তি জুমুয়ার (নামাযের) পূর্বে গোসল করবে, সাধ্যানুযায়ী পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা হাছিল করবে এবং তৈল ব্যবহার করবে অথবা নিজ ঘরে যদি সুগন্ধির ব্যবস্থা থাকে তবে তা ব্যবহার করবে, তারপর মসজিদে উপস্থিত হয়ে যেখানে স্থান পায় সেখানেই বসে পড়বে, কাউকেও কষ্ট দিয়ে মধ্যস্থলে বসবেনা, তারপর সাধ্যানুযায়ী নামায পড়বে, আর ইমামের খুত্ববাহ দানকালে চুপ থাকবে। তবে তার পূর্বের এক সপ্তাহের গুণাহ মহান আল্লাহ পাক মাফ করে দিবেন বা মাফ হয়ে যাবে।” (বুখারী শরীফ ১২১ পৃষ্ঠা)
জুমুয়ার নামায তরককারীর শাস্তি
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه لينتهين اقوام عن ودعهم الجمعات اوليختمن الله على قلوبهم ثم ليكون من الغافلين.
অর্থ: হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, নিশ্চয়ই অবজ্ঞা করে যে সম্প্রদায় জুমুয়ার নামায থেকে ফিরে থাকে, তাদের ক্বলবে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি নিশ্চয়ই মহর মেরে দিবেন। অতঃপর তারা অবশ্যই গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” (মুসলিম শরীফ ১ম জিঃ ২৮৪ পৃষ্ঠা, বযলুল মজহুদ ১৫৩ পৃষ্ঠা)
عن ابى الجعد الضمرى وكانت له صحبة ان رسول الله عليه وسلم قال من ترك ثلاث جمع تهاونا بها طبع الله على قلبه.
অর্থ: হযরত আবুলজাদ দামিরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একজন ছাহাবাীয়া ছিলেন তিনি বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যে ব্যক্তি ইংকার বা অবজ্ঞা করে পরপর তিন জুমুয়া ছেড়ে দেয় অর্থাৎ না পড়ে তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ক্বলবের উপর মহর মেরে দিবেন।” (আবু দাউদ শরীফ ১ম জিঃ ১৫৮ পৃষ্ঠা)
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের হতে বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার ইচ্ছা হয় যে আমার ইমামতি অন্য কাউকে দিয়ে (যারা বিনা ওজরে জুমুয়া ছেড়ে দেয়) জুমুয়া তরককারীদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে আসি।” (মিশকাত শরীফ)
عن ابن عباس رضى الله عنه وعن ابن عمر رضى الله عنه من ترك ثلاث جمعات من غير عذر كتب من المنافقين-
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের থেকে বর্ণিত। উনারা বলেন, “যে বিনা কারণে তিন জুমুয়া পরিত্যাগ করলো সে মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
عن جابر رضى الله تعالى عنه من ترك جمعة من غير ضرورة كتب منافقا فى كتاب لا يمحى ولا يبدل-
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, “যে ব্যক্তি বিনা ওজরে জুমুয়ার নামায তরক করে, তার নাম মুনাফিকের দপ্তরে লিখিত হবে এটা অপরিবর্তনীয়।” (মুসনাদু আহমদ ইবনে হাম্বল)
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত যে, তিনি উক্ত ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, যে দিবসে রোযা রাখে ও রাত্রিতে তাহাজ্জুদ পড়ে কিন্তু জামায়াত ও জুমুয়ায় উপস্থিত হয় না। তার উত্তরে তিনি বলেছেন যে, উক্ত ব্যক্তি দোযখে যাবে।
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা ফতওয়া দেন যে, জুমুয়ার নামায আদায় করা ফরযে আইন। যেমন, এ প্রসঙ্গে তাফসীরে খাযেন ও বাগবীকিতাবে উল্লেখ আছে যে,
اعلم ان صلوة الجمعة من فروض الاعيان- فيجب على من جمع العقل والبلوغ والحرية والذكران والا قامة اذا لم يكن له عذر فمن تركها استحق الوعيد.
অর্থ: জেনে রাখ যে, জুমুয়ার নামায পড়া ফরযে আইন। সুতরাং বুদ্ধিমান, বয়ঃপ্রাপ্ত, স্বাধীন, পুরুষ, মুকীম এবং যাদের শরীয়ত সম্মত কোন ওজর নেই তাদের প্রতি জুমুয়ার নামায পড়া ফরযে আইন। যে এটা তরক করবে সে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে।
অনুরূপ আইনী বি শরহিল বুখারী, ফতহুল ক্বদীর, ক্বিফায়া, দুররুল মুনতাক্বা, দুররুল মুখতার সহ আরো অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবেই জুমুয়ার নামাযকে ফরযে আইন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব, জুমুয়া ও যোহরের ন্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয যেন কারো জিম্মায় অনাদায় না থাকে। তাই ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা ক্ষেত্র বিশেষে অর্থাৎ যে স্থান শহর ইত্যাদি হওয়ার ব্যাপারে প্রবল সন্দেহ রয়েছে যে স্থানে আখিরী যোহর পড়াকে ওয়াজিব বলে ফতওয়া দিয়েছেন। আর যে স্থান শহর ইত্যাদি হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ নেই সে স্থানেই ইহতিয়াত বা সাবধানতার জন্য আখিরী যোহর পড়া মুস্তাহাব ও মুস্তাহাসান। জায়েয তো অবশ্যই। (অসমাপ্ত)

0 Comments: