নছীহতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম -(১ম খণ্ড)২য় অংশ-সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফযীলত মুবারক-পর্ব-৬.২

সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফযীলত মুবারক-২য় অংশ-পর্ব-৬.২

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,

قُلْ لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى وَمَنْ يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نزِدْ لَه فِيهَا حُسْنًا إِنَّ اللهَ غَفُورٌ شَكُورٌ (۲۳) سورة الشورى

(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাচ্ছি না, নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজন (আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম) উনাদেরকে মুহাব্বত মুবারক করা ব্যতীত। আর যে ব্যক্তি (এই) নেক কাজ করবে আমি (মহান আল্লাহ পাক) তার নেকীগুলো দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিবো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল এবং নেক কাজে প্রতিদান দানকারী। [সূরা শূরা শরীফ: ২৩]

উপরোক্ত আয়াত শরীফে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে যে বিনিময় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে এই বিনিময় চাওয়ার বিষয়টি মূলত স্বাভাবিক নয়, চাইলে তা দেয়া কুল কায়িনাতের কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে যেহেতু সমস্ত মুসলমানদেরকে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিল করতে হবে তাই সকলের দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বিনিময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত, তা'যীম-তাকরীম করার জন্য পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদেরকে আদেশ মুবারক করেছেন তেমনিভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফেও উনাদেরকে যারা মুহাব্বত করবেন, অনুসরণ করবেন, তা'যীম-তাকরীম করবেন উনাদেরকে অনেক ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা হাছিলের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে।

আর পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحِبُّوا اللهَ لِمَا يَغْلُوكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ وَأَحِبُّوْنِي لِحُبِّ اللَّهِ وَأَحِبُّوا أَهْلَ بَيْتِي لِحْتِي. رواه ترمذى والحاكم والطبراني والبيهقى وجامع الاحاديث وجمع الجوامع للسيوتي وكنز العمال والجامع الاصول من احاديث الرسول وفضائل الصحابة واحمد ابن حنبل)

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহাব্বত করো যেহেতু তিনি স্বীয় অনুগ্রহে তোমাদেরকে রিযিক দান করেন এবং তোমরা আমাকে মুহাব্বত করো মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহাব্বত করার জন্য এবং আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করো আমাকে মুহাব্বত করার জন্য।

[তিরমিযী, ত্ববারানী, বাইহাক্বী শরীফ ইত্যাদি)

তাহলে দেখা যাচ্ছে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করলে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহাব্বত করা হয় আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহাব্বত করা হলে মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহাব্বত করা হয়। আর মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহাব্বত করা হলে ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী লাভ করা সম্ভব হবে। সুবহানাল্লাহ।

হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বতকারীদের সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلَي عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اتَّبَتُكُمْ عَلَى الصِّرَاطِ أَشَدُّكُمْ حُبًّا لِأَهْلِ بَيْنِي وَلِأَصْحَابِي. ابن عدى والديلمي والصواعق المحرقة وكنز العمال)

হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের মধ্যে তারাই সঠিক পথের উপর দৃঢ় থাকতে পারবে, যারা আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে সর্বাধিক মুহাব্বত করবে। সুবহানাল্লাহ! [দায়লামী ও কানযুল উম্মাল শরীফ ইত্যাদি]

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي مِنْ بَعْدِي. (مشكوة)

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে ব্যক্তি আমার পরে আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ। [মিশকাত শরীফ, মুস্তাদরাকে হাকিম শরীফ ৩/৩৫২, মাজমাউয যাওয়ায়িদ শরীফ ৯/১৭৪ ইত্যাদি)

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عن حَضْرَتْ عَلَى عَلَيْهِ السَّلامُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعَةٌ أَنَا لَهُمْ شَفِيعٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُكْرِمُ لِذُرِّيَتِي وَالْقَاضِي لَهُمْ حَوَائِجَهُمْ وَالسَّاعِى لَهُمْ فِي أُمُورِهِمْ عِنْدَ مَا اضْطَرُّوا إِلَيْهِ وَالْمُحِبُّ لَهُمْ بِقَلْبِهِ وَلِسَانِهِ.

হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি কিয়ামতের দিন চার শ্রেণীর লোকদের জন্য সুপারিশ করবো। এক, যারা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মান করবে। দুই, যারা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মালী তথা আর্থিকভাবে খিদমতের আনজাম দিবে। তিন, যারা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জান দিয়ে তথা শারীরিকভাবে খিদমতের আনজাম দিবে। চার, যারা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে অন্তরে মুহাব্বত করবে এবং জবানে উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করবে। [জামিউল আহাদীছ ৪/২২৯, জামউল জাওয়ামি, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৭/১১, দায়লামী শরীফ]

অর্থাৎ হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যারা সর্বদিক থেকে মুহাব্বত করবেন উনারা দুনিয়াতে সঠিক পথে থাকতে পারবেন এবং কিয়ামতের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত বা সুপারিশ মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, 

عن حضرت ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ الله تعالى عنه قال قال النبي صل اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُبُّ آل محمد صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا خَيْرٌ مِّنْ عبادة سنةٍ وَمَنْ مَاتَ عَلَيْهِ دخل الجنَّة، (مفتاح النجاة)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, একদিন সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করা সারা বছর ইবাদত-বন্দেগী করার চেয়েও উত্তম। আর যে উনাদের পবিত্র মুহাব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুবহানাল্লাহ। [মিফতাহুন নাজাহ]

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت جرير بن عبد الله البجَلِي رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَاتَ على حب آل مُحَمَّدٍ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ شَهِيدًا، أَلا وَمَنْ مَاتَ عَلَى حُبِّ ال مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مَغْفُورًا له. أَلا وَمَنْ مَاتَ عَلَى حب آل مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ ثَالِبًا، أَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلَى حب آلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مُؤْمِنًا مُسْتَكْمِل الْإِيْمَانِ. أَلا وَمَنْ مَاتَ عَلَى حُبِّ آلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

ومن مات بشره ملك الموت بالجنة ثم منكر ونكير الا. الجنة كما ترف الْعَرُوسُ إلى بيت زوجها الا وَمَنْ مَاتَ على حب آل محمد صلى الله عليه وسلم فتح الله له في قبره نابين إلى الجنَّة، ألا ومن مات على حب الى محمد صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ اللَّهُ قَبْرَهُ مَزَارَ ملائِكَةِ الرَّحْمَةِ، أَلا وَمَنْ مَاتَ عَلى حُبِّ آلِ مُحَمَّدٍ صلى الله . بعض ال وَمَنْ مَاتَ على ومسلم مات على السنة والجماعة الا و م جاء يوم الْقِيَامَةِ مَكْتُوبًا بَيْنَ عَيْنَيْهِ أَيسَ عليه وسلم . مُحَمَّدٍ صلى الله من رَحْمَةِ اللَّهِ أَلا وَمَنْ مَاتَ عَلَى بَعْضٍ آلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ كَافِرًا أَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلَى بُعْضٍ آلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَشْمُ رَائِحَةِ الْجَنَّةِ.

হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি শহীদ হিসাবে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান। যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান। যিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি তওবাকারী হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান। যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সাবধান। যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন,

উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম, হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশতের সুসংবাদ মুবারক দিবেন। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে নববধূকে সাজিয়ে তার স্বামীর ঘরে নেয়া হয়। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, উনার কবরে সম্মানিত জান্নাতের দিকে দু'টি দরজা খুলে দেয়া হবে। সাবধান! যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন। সাবধান। যিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন, তিনি আহলু সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্কাঈদের উপর ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! আর যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, কিয়ামতের দিন তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে যে, সে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রহমত থেকে বঞ্চিত। নাউযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। নাউযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে সম্মানিত জান্নাত উনার ঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না। নাউযুবিল্লাহ! [তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রুহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাখরীজু আহাদীছুল কাশশাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫]

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করবেন,

• তিনি শহীদী মৃত্যু পাবেন।

• তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন।

• তিনি তওবাকারী হিসেবে ইন্তেকাল করবেন।

• তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার হিসেবে ইন্তেকাল করবেন।

• উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম, হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশতের সুসংবাদ মুবারক দিবেন।

• উনাকে নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে

• উনার কবরে সম্মানিত জান্নাত উনার দিক থেকে দু'টি দরজা খুলে দেয়া হবে।

• মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন।

• তিনি সম্মানিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বাইদের উপরই ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ।

হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারকে ইন্তেকাল করলে উপরোক্ত নিয়ামতসমূহ লাভ করা যায়; কেউ যদি জীবিত অবস্থায় হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত না করে, উনাদের খিদমত মুবারকের আনজাম না দেয়, তাহলে সে কি ইন্তেকালের সময় উনাদের মুহাব্বত অন্তরে রাখতে পারবে? কখনোই নয়। হ্যাঁ, যদি জীবিত অবস্থায় হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করে, উনাদের খিদমত মুবারকের আনজাম দেয়, তাহলে তার জন্য উভয়কালেই কামিয়াবী থাকবে। সে ইন্তেকালের সময়ও উনাদের মুহাব্বত অন্তরে রাখতে পারবে। ইনশাআল্লাহ।

আর যারা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুমহান মর্যাদা-সম্মান মুবারক রক্ষা করবে না, উনাদেরকে মুহাব্বত করবে না বরং উনাদের প্রতি অসম্মান বা বেয়াদবীমূলক আচরণ করবে, উনাদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে; তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। তারা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত হবে, ঈমানহারা হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং পরকালে তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। নাউযুবিল্লাহ।

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ أَبِي سَعِيدِدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَبْغَضَنَا أَهْلَ الْبَيْتِ فَهُوَ مُنَافِقٌ.

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যারা আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিরোধিতা করে, উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা মুনাফিক।

[দুররুল মানছুর ১৩/১৫১, ফাযায়িলু ছাহাবা লিআহমদ ইবনে হাম্বল ২/৬৬১, আর রিয়াদুন নাম্বরা ১/৩৬২, যখায়েরুল উকবা ১/১৮]

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-

لَوْ أَنَّ رَجُلًا صَعِدَ بَيْنَ الرَّكْنِ وَالْمَقَامِ فَصَلَّى وَصَامَ ثُمَّ مَاتَ وَهُوَ مبْغِضُ لِأَهْلِ بَيْتِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ النَّارَ.

যদি কোনো ব্যক্তি সম্মানিত রুকনে ইয়ামিন ও পবিত্র মাক্কামে ইবরাহীমে আরোহণ করে অতঃপর সে নামায পড়ে এবং রোযা রাখে কিন্তু সে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করে, চু-চেরা কীল-কাল করে তবে সে নিশ্চিত জাহান্নামে প্রবেশ করবে। নাউযুবিল্লাহ!

[তাফসীরে রুহুল বয়ান]

উপরোক্ত বর্ণনাগুলো থেকে বুঝা যায় যে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার পরিণাম কতো ভয়াবহ!

অতএব, সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ঈমান আনা, উনাদেরকে মুহাব্বত করা, তা'যীম-তাকরীম করা, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারকের আনজাম দেয়া। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে ছহীহ সমঝ দান করুন এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের আদর্শ মুতাবিক জীবন গড়ে হাক্বীক্বী মুসলমান হওয়ার তাওফীক দান করুন। (আমীন)












নছীহতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম -(১ম খণ্ড)১ম অংশ-সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফযীলত মুবারক-পর্ব-৬.১

সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফযীলত মুবারক-১ম অংশ-পর্ব-৬.১

১১ই ফিলরুদ শরীফ, ১৪৪১ হিজরী (ইয়াওমুল খমীস)

খলিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ٣٣) سورة الاحزاب

নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে অর্থাৎ উনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! [সূরা আহযাব শরীফ: ৩৩]

এই আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতার কথা ঘোষণা মুবারক করেছেন। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,

فَأَنَا وَأَهْلُ بَيْنِي مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوبِ. (رواه ترمذی، طبرانی، بیهقی)

আমি এবং আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, আমরা সকলেই যুনুব তথা সমস্ত প্রকার কবীরা-ছগীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূতপবিত্র। সুবহানাল্লাহ! [তিরমিযী, ত্ববারানী, বাইহাকী শরীফ]

উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফ থেকে বুঝা যায় যে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল পবিত্রতার অধিকারী। এখানে আরও ফিকিরের বিষয় হলো, হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন মা'ছুম (নিষ্পাপ) ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হচ্ছেন মাহফুয (সংরক্ষিত) আর হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারক হলো মুত্বহহার-মুত্বহহির (পূতপবিত্র ও পবিত্রতা দানকারী)।

জানা আবশ্যক যে, সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা কারা? এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

عَنْ حَضْرَتْ أُمِّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلامُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَّلَ عَلَى الْحَسَنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَالْحُسَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَعَلِيّ عَلَيْهِ السَّلامُ وَفَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلامُ كِسَاءٌ ، ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ هُؤُلَاءِ أَهْلُ بَيْتِي وَخَاصَّتِيْ اِذْهَبْ عَنْهُمُ الرِّجْسَ وَطَهِّرْهُمْ تَطْهِيرًا ، فَقَالَتْ حَضْرَتْ أُمُّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَأَنَا مَعَهُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ : مَكَانُكِ إِنَّكِ إِلَيَّ خَيْرٌ. (رواه الترمذى، هذا حديث حسن صحيح)

হযরত উম্মুল মু'মিনীন আস সাদিসা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুছ ছানী হযরত হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে, ইমামুছ ছালিছ হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে, ইমামুল আউওয়াল হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে এবং হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে একখানা চাদর মুবারকে আবৃত করে নিলেন। অতঃপর বললেন, আয় বারে ইলাহী! উনারা আমার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং আমার খাছ ব্যক্তিত্ব। উনাদের থেকে সব অপবিত্রতা দূর করুন এবং উনাদেরকে পবিত্র করার মত পবিত্র করুন। তখন উম্মুল মু'মিনীন হযরত আস সাদিসা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমিও উনাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, আপনার অবস্থান আমার নিকট আরও উত্তম। [তিরমিযী শরীফ]

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা কারা? যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের খিদমত মুবারক করা আমাদের জন্য আবশ্যক (ফরয-ওয়াজিব করা হয়েছে)। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম, হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং উনার পূতপবিত্র সম্মানিত সন্তানদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনারা হলেন আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! [ত্ববারানী শরীফ]

বিশিষ্ট রাবী হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, হে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবার কারা? হযরত উম্মাহাতুল মু'মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ কি উনার পরিবার নয়? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই উনারা আহলু বাইত শরীফের অন্তর্ভুক্ত। উনার পরিবার হচ্ছেন, উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর যাদের জন্য সদকা গ্রহণ করা হারাম। তিনি বললেন, উনারা কারা? তিনি বলেন, উনারা হচ্ছেন- হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার বংশধর, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার বংশধর, হযরত জাফর আলাইহিস সালাম উনার বংশধর, হযরত আকীল আলাইহিস সালাম উনার বংশধর। তিনি বললেন, উনাদের সকলের জন্য কি সদকা গ্রহণ হারাম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। [মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম শরীফ]

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম, হযরত জাফর আলাইহিস সালাম, হযরত আকীল আলাইহিস সালাম, হযরত হারিছ বিন আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনারাসহ উনাদের বংশধরগণও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম তথা সম্মানিত পরিবার-পরিজন আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

স্মর্তব্য যে, সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্তর হচ্ছে তিনটি।

১ম স্তরে রয়েছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত ওয়ালিদাইন শরীফাইন তথা আব্বা ও আম্মা আলাইহিমাস সালাম।

২য় স্তরে রয়েছেন, সম্মানিতা হযরত উম্মাহাতুল মু'মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম।

৩য় স্তরে রয়েছেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আবনা (পুত্র) আলাইহিমুস সালাম ও সম্মানিতা বানাত (কন্যা) আলাইহিন্নাস সালাম।

মূলত, এই তিন স্তরে যাঁরা রয়েছেন উনারা এবং উনাদের সম্মানিত আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম সকলেই এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পরিবারে যাঁরা ছিলেন প্রত্যেকেই সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখ্য যে, শিয়াদের আক্বীদা হচ্ছে, সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন পাঁচ জন তথা পাক পাঞ্জাতন। উনারা হলেন- ১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২. সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ আন নুরুর রবিয়া হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম ৩. সাইয়্যিদুনা ইমামুল আউওয়াল হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম ৪. সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম ৫. সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম।

কিন্তু যারা সুন্নি দাবিদার উনারাও বছরের পর বছর ধরে এই সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র উপরোক্ত ৫ জন উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক, সাওয়ানেহ উমরী মুবারকই আলোচনা করে আসছেন। আর অন্যান্য হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিষয়গুলো ছিল আলোচনার বাইরে। কিন্তু আমরা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে দেখতে পাই মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা তওবা শরীফের ১২৮ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,

لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوْفٌ رَّحِيمٌ (۱۲۸) سورة التوبة

তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ মুবারক এনেছেন। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার জন্য বেদনাদায়ক। তিনি তোমাদের ভালাই চান। মু'মিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়ালু।

আর পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমত মুবারক উনাকে একশত ভাগে বিভক্ত করেন। ৯৯ ভাগ রহমত মুবারক উনার নিকট রেখে বাকী ১ ভাগ রহমত মুবারককে আবার ১০০ ভাগে বিভক্ত করেন। আর সেখান থেকে ৯৯ ভাগ রহমত মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেন এবং ১ ভাগ রহমত মুবারক গোটা মাখলুকাতের মাঝে বন্টন করে দেন। [বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ]

ফিকিরের বিষয় হলো, একভাগ রহমত মুবারক সমস্ত মাখলুকাতের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে এক যাররা পরিমাণ রহমত মুবারক লাভ করার কারণে আমরা একে অপরকে মুহাব্বত করি। এমনকি এই মুহাব্বত মানুষ থেকে শুরু করে একটা ক্ষুদ্রতম প্রাণীর মাঝেও পরিলক্ষিত হয়। আমরা এই মুহাব্বতের কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একজন থেকে অপরজনকে আলাদা করতে পারিনা। তাহলে যিনি সমস্ত রহমত মুবারকের মালিক তিনি কিভাবে উনার পরিবারের একজন থেকে অপরজনকে আলাদা করে দেখতে পারেন! মূলত, এভাবে চিন্তা করাটাও উনার শান মুবারক উনার খিলাফ তথা কুফরী হবে। মূলত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারের সকল সদস্যগণই সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে অসংখ্যভাবে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফাযায়িল ফযীলত গুরুত্ব তাৎপর্য সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا (۵۶) سورة الاحزاب

নিশ্চয়ই খলিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করে থাকেন। কাজেই হে ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার পবিত্রতম নূরানী শান মুবারকে দরূদ শরীফ পাঠ করো এবং সালাম দেয়ার যথার্থ নিয়মে সালাম দাও। [সূরা আহযাব শরীফ: ৫৬]

এই আয়াত শরীফের তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে-

বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত কা'ব বিন উজরাতা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কিভাবে আপনার মুবারক শানে দরূদ শরীফ পাঠ করবো? তখন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি উনাকে দরূদে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পাঠ করে শুনিয়েছেন।

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.

উল্লেখ্য যে, বর্ণিত 'দরূদে ইবরাহীম' শরীফ সাধারণভাবে পবিত্র নামাযের মধ্যেই পাঠ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাহলে এ থেকে বুঝা যায় যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই পবিত্র নামাযের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাথে উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস উনাদের শানেও দরূদ শরীফ পাঠ করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।

অর্থাৎ হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর দরূদ শরীফ পাঠ না করলে নামায পূর্ণরূপে আদায় হয় না। উনাদের প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করা ইবাদত এবং দোয়া পরিপূর্ণ ও কবুল হওয়ার প্রধান উসীলা। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,

عَنْ حَضْرَتْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَجَلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَأَهْلُ بَيْتِي شَجَرَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَأَغْصَانُهَا فِي الدِّيْنِ فَمَنْ تَمَسَّكَ دِيْنًا إِتَّخَذَ رَبَّهُ سَبِيلًا.

হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল বাযালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি এবং আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হলাম পবিত্র জান্নাত উনার একটি বৃক্ষ। পবিত্র দ্বীন ইসলাম হচ্ছে উহার শাখা। যে ব্যক্তি পবিত্র দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে, সে ব্যক্তিই মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাওয়ার সঠিক পথ পেয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!

[তাফসীরে রুহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে কবীর]

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ أَبِي ذَرٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ وَهُوَ أَخِذْ بِبَابِ الْكَعْبَةِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ أَلَّا إِنَّ مَثَلَ أَهْلِ بَيْتِي فِيْكُمْ مَثَلُ سَفِينَةِ نُوحٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَمَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا هَلَكَ رواه أحمد والحاكم والطبراني ومسند الشهاب وجامع الاحاديث وجمع الجوامع أو الجامع الكبير للسيوتي وكنز العمال)

হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহ আনহু তিনি বর্ণনা করেন। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, সাবধান! নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে আমার হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মেছাল হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতী মুবারকের ন্যায়। যারা কিশতী মুবারকে আরোহণ করেছেন উনারা নাজাত লাভ করেছেন আর যারা আরোহণ করেনি তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। [আহমাদ শরীফ, তবারানী শরীফ]

অর্থাৎ যারা হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করবে এবং উনাদের অনুসরণ করবে তারাই নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! আর যারা হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করবে না, উনাদের অনুসরণ করবে না তারা নাজাত লাভ করতে পারবে না। নাঊযুবিল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী 'খোম' নামক পানির নালার নিকট দাঁড়িয়ে আমাদেরকে খুতবা মুবারক প্রদান করলেন। প্রথমে মহান আল্লাহ পাক উনার হামদ ও ছানা মুবারক বর্ণনা করলেন, এরপর নছীহত মুবারক করলেন। অতঃপর বললেন, "সাবধান! হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি একজন নবী ও রসূল, অচিরেই আমার নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার দূত (হযরত মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম) আসবেন। তখন আমি আমার রব তায়ালা উনার পবিত্র আহবানে সাড়া দিব। আমি আপনাদের মাঝে দু'টি মূল্যবান নিয়ামত মুবারক রেখে যাচ্ছি। তন্মধ্যে প্রথম নিয়ামত মুবারক হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব। উনার মধ্যে রয়েছে পবিত্র হিদায়েত ও নূর। অতএব, আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবকে খুব মজদ্ভুতভাবে আঁকড়ে ধরুন এবং দৃঢ়তার সাথে উনার বিধি-বিধান মেনে চলুন।" (বর্ণনাকারী বলেন,) মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব শরীফের নির্দেশনাবলী দৃঢ়ভাবে মেনে চলার জন্য তিনি খুব বেশি উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করলেন। অতঃপর বললেন, "দ্বিতীয় নিয়ামত মুবারক হলো- আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। আমি আপনাদেরকে আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিশেষভাবে সতর্ক তথা নছীহত করছি। আমি আপনাদেরকে আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিশেষভাবে সতর্ক তথা নছীহত করছি। [মুসলিম শরীফ]

অন্যত্র পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّتِهِ يَوْمَ عَرَفَةَ وَهُوَ عَلَى نَاقَتِهِ الْقَصْوَاءِ يَخْطُبُ فَسَمِعْتُهُ يَقُوْلُ يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا كِتَابَ اللهِ وَعِتْرَتِي أَهْلَ بَيْتِي. (رواه ترمذى وابن ماجه والطبراني وجامع الاحاديث وجمع الجوامع أو الجامع الكبير للسيوتي وكنز العمال و الجامع الاصول من احاديث الرسول)

হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হজ্জের সময় আরাফার দিন কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর উপর আরোহণ করা অবস্থায় খুতবা দিতে দেখলাম। অতঃপর উনাকে বলতে শুনলাম, হে মানব জাতি। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে এমন নিয়ামত রেখে যাচ্ছি; যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনো গোমরাহ হবে না। প্রথম হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব। আর দ্বিতীয় হলো, আমার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ত্ববারানী শরীফ ইত্যাদি]

অর্থাৎ আখেরী যামানার ফিতনা ফাসাদ থেকে নাজাত লাভের একমাত্র উপায় হলো হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা তথা অনুসরণ অনুকরণ করা, জীবনের সকল ক্ষেত্রে উনাদেরকে আদর্শ রূপে গ্রহণ করা। উনাদের অনুসরণ করতে হলে উনাদের সম্পর্কে জানতে হবে, আলোচনা করতে হবে। যে যাকে মুহাব্বত করে তার আলোচনাই অধিক করে। তাই উনাদের আলোচনা করলে, উনাদের আদর্শ মুবারক গ্রহণ করলেই উনাদের প্রতি মুহাব্বত বুঝা যাবে। অন্যথায় মুহাব্বত বুঝা যাবে না।

বলা হয়ে থাকে, মুহাব্বতে তিতাটাও মিষ্টি হয়ে যায়। কেউ যখন হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করবে তখন উনাদের আদর্শ মুবারকও পালন করতে ভালো লাগবে। আর উনাদের প্রতি মুহাব্বত না থাকলে অন্য দিকে রুজু হয়ে যাবে, ফলে উনাদের আদর্শ মুবারকও গ্রহণ করা হবে না। বর্তমান যামানায় দেখা যায়, মানুষ ফাসিক-ফুজ্জার, কাফির-মুশরিকদের আদর্শ নিয়ে ব্যাতিব্যস্ত। মুসলমানগণ হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের আদর্শ মুবারক উনার অনুসরণ করা থেকে দূরে সরে গেছে। আসলে উনাদের মুহাব্বত ও অনুসরণের প্রতি গুরুত্ব বর্তমান যামানার নামসর্বস্ব মুসলমানদের অন্তরে নেই বলেই তাদের ঈমানী শক্তিও নেই। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلِيَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أسَاسُ الْإِسْلَامِ حُبِّى وَحُبُّ أَهْلِ بَيْتِي. (رواه تاريخ دمشق وجامع الاحاديث وجمع الجوامع او الجامع الكبير للسيوتي وكنز العمال)

দ্বীন ইসলাম উনার মূল ভিত্তি-ই হলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারক। [তারীখে দামেশক, জামেউল আহাদীছ, জামিউল কাবীর লিস সুয়ূতী, কানযুল উম্মাল ইত্যাদি]

অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ أَبِي لَيْلَى رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ نَفْسِهِ وَأَهْلِي اَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَهْلِهِ وَ عِتْرَتِيْ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ عِتْرَتِهِ وَذَاتِي أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ ذَاتِهِ. (معجم الاوسط)

হযরত আবু লায়লা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। কোনো বান্দা ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষন পর্যন্ত না তার নফস থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশি মুহাব্বত করতে পারবে এবং তার পরিবার থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারকে অধিক মুহাব্বত করবে এবং তার বংশধর যারা আছে তাদের থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারকে অধিক মুহাব্বত করবে এবং উনার জাত বা সত্তা মুবারককে তার নিজের সত্তা থেকে থেকে বেশি মুহাব্বত করবে। [মু'জামুল আওসাত্ব]

এ থেকে প্রতিভাত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে এবং পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে হলে উনাকে আমাদের নিজ সত্তা, পরিবার, বংশধর থেকেও বেশি মুহাব্বত করার পাশাপাশি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও সর্বক্ষেত্রে অধিক মুহাব্বত করতে হবে। কেননা উনাদেরকে মুহাব্বত করা ব্যতীত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী মুহাব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা এবং মু'মিন হওয়া কখনোই সম্ভব হবে না। পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلِي عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَهْلُ بَيْتِي أَمَانٌ لِأَهْلِ الْأَرْضِ كَمَا أَنَّ النُّجُوْمَ أَمَانٌ لِأَهْلِ السَّمَاءِ فَوَيْلٌ لِمَنْ خَذَلَهُمْ وَعَانَدَهُمْ.

সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত যমীনবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী যেমন তারকারাজিরা আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং যারা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে দূরে সরে যাবে, মানহানী করবে এবং উনাদের বিরোধিতা করবে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ! [তারতীবুল আমালী ১/২০০, আল ঈমা ৫/১৭৮] অপর বর্ণনায় রয়েছে,

النُّجُومُ أَمَانٌ لِأَهْلِ السَّمَاءِ وَأَهْلُ بَيْتِيْ آمَانٌ لِأَهْلِ الْأَرْضِ فَإِذَا ذَهَبَ أَهْلُ بَيْتِي ذَهَبَ أَهْلُ الْأَرْضِ.

তারকারাজিরা আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। আর আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন যমীনবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। যখন আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বিদায় নিবেন, তখন সমস্ত যমীনবাসী সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

[ফাদ্বায়িলুছ ছাহাবাহ ২/৬৭১, আছ ছওয়ায়িকুল মুহরিক্কহ ২/৬৭৫, আল মু'জাম ১/৪০৪, মিরক্কাত শরীফ ৯/৩৯৮৮, যাখায়িরুল 'উকবাহ ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭]

প্রকৃতপক্ষে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন তারকারাজিসহ আসমানবাসী-যমীনবাসী, সমস্ত কুল কায়িনাতের জন্য নিরাপত্তাদানকারী। সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উসীলায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত কায়িনাতবাসী নিরাপত্তা লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! উক্ত হাদীছ শরীফ হতে আরো বুঝা যায় যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত সবসময় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা অবস্থান মুবারক করবেন। আর উনাদের সম্মানার্থেই ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত কায়িনাত টিকে থাকবে। অতঃপর যখনই উনারা দুনিয়ার যমীন থেকে বিদায় নিবেন, তখনই সমস্ত কায়িনাত ধ্বংস হয়ে যাবে। পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

اجْعَلُوا أَهْلَ بَيْتِي مِنْكُمْ مَكَانَ الرَّأْسِ مِنَ الْجَسَدِ وَمَكَانَ الْعَيْنَيْنِ مِنَ الرَّأْسِ وَلَا يَهْتَدِى الرَّأْسِ إِلَّا بِالْعَيْنَيْنِ. (رواه البيهقي في شعب الايمان)

শরীর থেকে মাথার স্থান ও মাথা থেকে দুই চোখের স্থান যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন তোমরা আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করো। যেমন দুই চোখ ব্যতীত মাথা সঠিক পথে চলতে পারে না। সুবহানাল্লাহ! [বাইহাক্বী শরীফ]

এভাবে আরো অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ক্বওল শরীফে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,

إِنَّا أَهْلُ الْبَيْتِ لَا يُقَاسُ بِنَا أَحَدٌ مَنْ قَاسَ بِنَا أَحَدًا فَقَدْ كَفَرَ.

নিশ্চয়ই আমরা সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো ক্বিয়াস বা তুলনা করা যাবে না। যে ব্যক্তি আমাদের সাথে অন্য কাউকে তুলনা করবে, সে কুফরী করবে।

অর্থাৎ উনারা হচ্ছেন আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ, উনাদের সাথে কারো তুলনা করা যায় না। সুবহানাল্লাহ! উনারাই হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে হাছিল করার একমাত্র উসীলা বা মাধ্যম। উনারা ব্যতীত খলিব্ধ মালিক রব মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে হাছিল করার দ্বিতীয় কোনো উসীলা বা মাধ্যম নেই। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,

نَحْنُ أَلُ بَيْتِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (نَحْنُ أَهْلُ بَيْتِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) وَنَحْنُ الْوَسِيْلَةُ إِلَى اللَّهِ وَلَا وَسِيْلَةَ إِلَى اللَّهِ إِلَّا عَنْ غَيْرِ طَرِيْقِنَا أَوْ مِنْ سِوَانًا.

আমরা সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাওয়ার একমাত্র উসীলা মুবারক। আমাদের পথ বা আমরা ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে পাওয়ার দ্বিতীয় কোনো উসীলা বা মাধ্যম নেই। সুবহানাল্লাহ! [শরহে আক্বাইদে ত্বহাবী]

মূলকথা হলো, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত না করা পর্যন্ত কেউ হাক্বীক্বী মু'মিন হতে পারবে না। উনাদের মুহাব্বতই ঈমান। উনাদের মুহাব্বত ব্যতীত ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। আর মুহাব্বত তখনই অন্তরে জাগ্রত হবে যখন সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক সম্পর্কে জানা হবে, আলোচনা করা হবে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় উনাদের অসামান্য অবদান, অকল্পনীয় ত্যাগ তিতিক্ষার কথা স্মরণ হবে। ফিকির করলে দেখা যায়, কারো আলোচনা করতে করতে কিংবা শুনতে শুনতেও অন্তরে মুহাব্বত চলে আসে। আবার দেখা যায়, যে যাকে মুহাব্বত করে তার আলোচনাই সে বেশি করে। যত বেশি উনাদের আলোচনা করা হবে তত বেশি মুহাব্বত অন্তরে পয়দা হবে। তাই হাক্বীক্বী মু'মিন হতে হলে আমাদেরকে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জীবনী মুবারক সম্পর্কে বেশি বেশি আলোচনা করে, উনাদের সম্পর্কে জেনে সেই অনুযায়ী নিজেদের জীবনে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। উনাদের আদর্শ মুবারক নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে না পারলে কোনো কামিয়াবী থাকবে না। অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হলো, মুসলমানদের গাফিলতির কারণে, দ্বীন থেকে সরে যাওয়ার কারণে, দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহামূল্যবান ইতিহাস মুবারক গায়েব হয়ে গিয়েছে। কাফির মুশরিকরা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জীবন ইতিহাস গায়েব করে ফেলেছে কারণ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও পবিত্র দ্বীন ইসলামের বিরোধীতা করা। কেননা মুসলমানগণ যদি উনাদের জীবন ইতিহাস জানে তাহলে উনাদের ঈমানী কুওওয়াত বৃদ্ধি পাবে। কোনোভাবেই যাতে মুসলমানদের ঈমানী কুওওয়াত বৃদ্ধি না পায় কাফির-মুশরিক, ইহুদীরা সুদূর অতীতকাল হতে সেই চেষ্টাই চালিয়ে এসেছে, এখনও তাদের এসব ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। তাদের ষড়যন্ত্র ও অনুসরণ থেকে মুসলিম উম্মাহকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই পবিত্র হাদীছ শরীফ-এর কথা অনুযায়ী চলতে হবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَدِبُوا أَوْلَادَكُمْ عَلَى ثَلَاثِ خِصَالٍ حُبِّ نَبِيِّكُمْ وَحُبِّ أَهْلِ بَيْتِهِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنَ.

সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে যথাযথ শিক্ষা প্রদান করো।

১. তোমাদের যিনি নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহাব্বত মুবারক,

২. উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারক এবং

৩. পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত। সুবহানাল্লাহ!

[আল ফাতহুল কাবীর লিস সুয়ূত্বী ১/৫৭, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২/৮৯, দায়লামী শরীফ ইত্যাদি]

এই পবিত্র হাদীছ শরীফে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক পিতা-মাতার উপর স্বীয় সন্তানদেরকে তিনটি বিষয় শিক্ষা দেয়া ফরয করে দিয়েছেন। এখানে প্রথমেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহাব্বত মুবারক শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তারপর উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহাব্বত মুবারক শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর সর্বশেষ বলা হয়েছে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শিক্ষা দেয়ার কথা। সুবহানাল্লাহ!

প্রথমোক্ত দুইটি বিষয় হচ্ছে সরাসরি সম্মানিত ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত। আর শেষোক্ত বিষয়টি আমলের সাথে সম্পৃক্ত। প্রথমোক্ত দুইটি বিষয় শিক্ষার মাধ্যমে ঈমান লাভ হবে। আর শেষোক্ত বিষয়টি শিক্ষার মাধ্যমে আমল সুন্দর হবে। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কারো ঈমান পরিশুদ্ধ না থাকলে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাতসহ সমস্ত আমলই বরবাদ হয়ে যাবে। আর ঈমান ঠিক থাকলে, আমলে কিছু ত্রুটি থাকলেও সে এক সময় নাজাত পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর যেহেতু সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা ঈমানের মূল; তাই কারো অন্তরে যদি উনাদের মুহাব্বত মুবারক থাকে, নিঃসন্দেহে সে নাজাত পাবে। যদিও তার আমলে কিছু ত্রুটি থাকুক না কেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই উনাদের মুহাব্বত ও অনুসরণের জন্য উনাদের জীবনী মুবারক সম্পর্কে জানা জরুরী। অন্যথায় উনাদেরকে মুহাব্বত করা আদৌ সম্ভব নয়। সুতরাং প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য ফরয ওয়াজিব হচ্ছে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক এবং বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে নিজেরা শিক্ষা গ্রহণ করে স্বীয় সন্তানদেরকে শিক্ষা দেয়া এবং এর পাশাপাশি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দাবী জানানো।




















নছীহতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম -(১ম খণ্ড)নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনে উনার আনুগত্য করা ফরয-পর্ব-৫

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনে উনার আনুগত্য করা ফরয-পর্ব-৫

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا ﴿۲۵﴾ وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا ﴿٢٦﴾ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُمْ مِّنَ اللَّهِ فَضْلًا كَبِيرًا (٢٧) سورة الاحزاب

হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে উপস্থিত বা হাযির-নাযির, সুসংবাদ প্রদানকারী, সতর্ককারী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমে উনার দিকে আহবানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপ রূপে প্রেরণ করেছি। আপনি মু'মিনদেরকে এ বিষয়ে সুসংবাদ প্রদান করুন যে, (আপনি) উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বিরাট অনুগ্রহ। [সূরা আহযাব শরীফ: ৪৫-৪৭]

আর পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ رَبِيعَةَ الْجُرَشِيِّ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقِيلَ لَهُ لِتَنَّمْ عَيْنُكَ وَلِتَسْمَعْ أُذُنُكَ وَلِيَعْقِلْ قَلْبُكَ قَالَ فَنَامَتْ عَيْنَى وَ سَمِعَتْ أَذْنَايَ وَعَقَلَ قَلْبِي قَالَ فَقِيْلَ لِي سَيِّدٌ بَنَى دَارًا فَصَنَعَ فِيْهَا مَأْدُبَةً وَأَرْسَلَ دَاعِيًا فَمَنْ أَجَابَ الدَّاعِيَ دَخَلَ الدَّارَ وَأَكَلَ

مِنَ الْمَأْدُبَةِ وَرَضِيَ عَنْهُ السَّيِّدُ وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّاعِيَ لَمْ يَدْخُلِ الدَّارَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنَ الْمَأْدُبَةِ وَسَخَطَ عَلَيْهِ السَّيِّدُ قَالَ فَاللَّهُ السَّيِّدُ وَ مُحَمَّدٌ النَّاعِي وَالدَّارُ الْإِسْلَامُ وَالْمَأْدُبَةُ الْجَنَّةُ. (رواه الدارمي)

হযরত রবিয়াতাল জুরাশি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কতিপয় হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলা হলো, আপনার চোখ মুবারক যেন ঘুমিয়ে থাকেন, আপনার কান মুবারক যেন শুনতে থাকেন, আপনার অন্তর মুবারক যেন বুঝতে থাকেন। তিনি বললেন, অতঃপর আমার চক্ষু মুবারক ঘুমিয়ে রইলেন, আমার কর্ণদ্বয় মুবারক শুনতে থাকলেন এবং আমার অন্তর মুবারক উপলব্ধি করতে থাকলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমাকে বলা হলো, একজন সাইয়্যিদ (বাড়ির মালিক) তিনি একটি বাড়ি তৈরী করলেন। সেখানে তিনি খাবারের আয়োজন করলেন এবং একজন আহবানকারী প্রেরণ করলেন। অতঃপর যে ব্যক্তি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিবে, সেই ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করবে এবং খাদ্য খাবে এবং যিনি সাইয়্যিদ (বাড়ির মালিক) তিনি তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। আর যে ব্যক্তি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিবে না, সে ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করবে না এবং খাদ্যও খাবে না। সাইয়্যিদ তিনি তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন "সাইয়্যিদ", আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন "আহবানকারী”, এবং ঘর হচ্ছে 'ইসলাম', আর খাবার হচ্ছে "জান্নাত”। সুবহানাল্লাহ! [দারিমী শরীফ]

উপরোক্ত আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফ দ্বারা যে বিষয়টি বোঝানো হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারকেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দিকে আহবানকারী। যারা উনার সম্মানিত দাওয়াত মুবারক গ্রহণ করে পরিপূর্ণভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ করবেন, উনারাই জান্নাত উনার মধ্যে প্রবেশ করে জান্নাতী নিয়ামত মুবারক ভোগ করতে পারবেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করাই হলো, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার আনুগত্য করা। সুবহানাল্লাহ! কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

مَنْ يُطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيْظًا (۸۰) سورة النساء

যে ব্যক্তি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করল, সে মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনারই আনুগত্য করল। আর যারা (আনুগত্য করা থেকে) ফিরে যাবে, আমি আপনাকে তাদের হিফাযতকারী হিসেবে পাঠাইনি। [সূরা নিসা শরীফ: ৮০]

অর্থাৎ যারা আনুগত্য না করে ফিরে যাবে তাদের কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করা হবেনা। প্রসঙ্গত, পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে কয়েকজন লোক আসলেন, তিনি উনাদেরকে এক আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দিলেন, (অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন)

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَدْرُوْنَ الْإِيْمَانُ بِاللَّهِ وَحْدَهُ قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ شَهَادَةُ إِلَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. (متفق عليه)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কি জানেন, এক আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান কি? (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই সর্বাধিক জ্ঞাত। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এক আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান হচ্ছে সাক্ষ্য দেয়া যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। [বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ]

অতএব, কেউ যদি শুধু "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলে তাহলে এক আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনা শুদ্ধ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত "মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)" না বলবে। অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করা ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার প্রকৃত আনুগত্য করাও হবে না।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ لَا يَسْمَعُ بِيْ أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِي وَلَا نَصْرَانِي ثُمَّ يَمُوْتُ وَلَمْ يُؤْمِنُ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ. (رواه مسلم)

হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কসম। ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার, যার কুদরতি হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে। এই উম্মতের যে কেউ হোক অথবা ইহুদী অথবা নাছারা যেই আমার কথা শুনে অতঃপর আমি যা নিয়ে এসেছি সে বিষয়ের প্রতি ঈমান না এনে মারা যায়; সে অবশ্যই জাহান্নামী হবে। নাউযুবিল্লাহ! [মুসলিম শরীফ]

মূলত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনা এবং উনাকে মুহাব্বত করে উনার আনুগত্য করা ব্যতীত কেউ মু'মিনে কামিল হতে পারবে না।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ. (متفق عليه)

হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমাকে তার নিজের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি এমনকি সমস্ত মানুষ হতে অধিক মুহাব্বত না করবে। [বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ]

অপরদিকে যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট থাকবে অর্থাৎ উনার আনীত দ্বীন ইসলাম উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে, সেই ব্যক্তিই ঈমান উনার স্বাদ লাভ করবে অর্থাৎ সে ব্যক্তিই মু'মিনে কামিল হতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاقَ طَعْمَ الْإِيْمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَسُوْلًا . (رواه مسلم)

হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঐ ব্যক্তিই ঈমান উনার স্বাদ পেয়েছে; যে ব্যক্তি মহান রব্বুল আলামীন উনাকে রব হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে, সম্মানিত ইসলাম উনাকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে।

[মুসলিম শরীফ]

উল্লেখ্য, যখন বলা হবে, 'মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি ঈমান আনলাম বা উনাদেরকে বিশ্বাস করলাম' তখন মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতিটি বিষয় বিনা চু-চেরায় মেনে নিতে হবে এবং সে বিষয়গুলোর উপর আমল করতে হবে। কেননা, মানুষ যখন কাউকে বিশ্বাস করে তখন (যাকে বিশ্বাস করে) সে ব্যক্তি যা বলে, সেটাই সে বিশ্বাস করে মেনে নেয়। যে বিষয় থেকে নিষেধ করে, সে বিষয় থেকে বিরত থাকে। সুতরাং যারা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে বিশ্বাস করবেন, উনারা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তর্জ-তরীক্বা মুবারক ব্যতীত অন্য কারো তর্জ-তরীক্কা গ্রহণ করবেন না।

সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের প্রতি ঈমান এনে উনাদের অনুসরণ করবে সে ইহকাল ও পরকালে ফায়দা লাভ করবে। আর যে উনাদের মধ্যে একজনকে অস্বীকার করবে, সে কুফরী করবে, ফলে তাকে জাহান্নামের আযাব ভোগ করতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!

কুফরীর শাস্তি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা কাহাফ শরীফ-এর ২৯ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,

وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا ، وَإِنْ يَسْتَغِيْثُوْا يُغَاثُوْا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ ، بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا (٢٩) سورة الكهف

আপনি বলুন, সত্য তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সুতরাং যার ইচ্ছা সে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে কুফরী করুক। নিশ্চয়ই আমি যালিমদের জন্য জাহান্নামের আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি। তাদেরকে আগুনের তাবু বেষ্টন করে নিবে। যখন তারা পানি চাবে, তাদেরকে (শাস্তির কারণে তাদের শরীর থেকে নির্গত) গলিত পুঁজের ন্যায় পানি দেয়া হবে। যা তাদের চেহারাকে জ্বালিয়ে দিবে। কতইনা নিকৃষ্ট পানীয় এবং কতইনা নিকৃষ্ট আবাসস্থল!

অর্থাৎ যারা কুফরী করবে, তারাই যালিম সাব্যস্ত হবে। তাদের জন্য থাকবে জাহান্নামে আগুনের তাবু। যখন তারা পানি চাবে, তখন আযাবের কারণে তাদের শরীর থেকে নির্গত গলিত পুঁজের ন্যায় পানি তাদেরকে দেয়া হবে। যা তাদের চেহারাকে জ্বালিয়ে দিবে। নাঊযুবিল্লাহ!

আর মু'মিনদের প্রতিদান সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন,

بَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ (۲۵) سورة البقرة

আপনি উনাদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন যারা ঈমান এনেছেন এবং আমলে ছলেহ করেছেন। নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার নিম্নদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হয়। [সূরা বাক্কারা শরীফ: ২৫]

কাজেই, সমস্ত উম্মাহর জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ব্যতীত যা কিছু রয়েছে সবকিছুর মুহাব্বত ত্যাগ করে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি হাক্বীক্বীভাবে ঈমান এনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ আনুগত্য করা। তাহলেই হাক্বীক্বী মু'মিন হওয়া এবং দুনিয়া ও আখিরাতে খায়ের-বরকত, সম্মান-ইজ্জত, মুহাব্বত-মা'রিফত, কুরবত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিল করা সম্ভব হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে মু'মিনে কামিল হওয়ার তাওফীক দান করুন। (আমীন)










নছীহতে উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম -(১ম খণ্ড)নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা ফরয -পর্ব-৪

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা ফরয-পর্ব-৪

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُوْلِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ﴿۲۱﴾ سورة الاحزاب

অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক। [সূরা আহযাব শরীফ: ২১]

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের জন্য কী আদর্শ মুবারক নিয়ে এসেছেন বা তিনি উম্মতকে কি আদর্শ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لَقَدْ مَنَّ الله عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْ عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوْا مِنْ

قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ (١٦٢) سورة آل عمران

নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক মু'মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে একজন রসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফ সমূহ তিলাওয়াত করে শুনান এবং তাদের অন্তর সমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে ছিল অর্থাৎ হিদায়েতের উপর ছিল না। [সূরা আলে ইমরান শরীফ: ১৬৪]

অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বান্দা-বান্দী উম্মতগণকে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম শরীফ তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন, তাদের অন্তর ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ করেছেন এবং তাদেরকে কিতাব এবং হিকমত মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি এই আদর্শ মুবারক নিয়েই মহান আল্লাহ পাক উনার ইহসান স্বরূপ মু'মিনদের মাঝে প্রেরিত হয়েছেন। তিনি যা কিছু জানিয়েছেন, শিক্ষা দান করেছেন সে সমস্ত বিষয়ই হচ্ছে উনার আদর্শ মুবারক। উনার সমস্ত আদর্শ মুবারকের সম্মিলিত রূপই হচ্ছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম।

আর সামগ্রিকভাবে এই আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (۷) سورة الحشر

রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে আদর্শ মুবারক নিয়ে এসেছেন অর্থাৎ যে শরীয়ত বা বিধান নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়িয়ে ধরো এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো। তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। [সূরা হাশর শরীফ: ৭]

এই আয়াত শরীফে বলা হয়েছে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার জন্য। উম্মতের জন্য যে বিষয়গুলো ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, সুন্নতে যায়িদাহ, মুস্তাহাব প্রত্যেকটি বিষয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক বা সুন্নাহ শরীফ। তিনি যে বিষয়কে যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবে গ্রহণ করা বা পালন করাই উম্মতের জন্য ফরয এবং সেভাবে পালন করলেই হাক্বীক্বীভাবে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা হবে।

তাই এই আয়াত শরীফ-এর উপর ভিত্তি করে ইমাম-মুজতাহিদগণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারকের মধ্য থেকে আমলের গুরুত্ব বুঝে কোনোটাকে ফরয, কোনোটাকে ওয়াজিব, কোনোটাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, কোনোটাকে সুন্নতে যায়িদাহ, কোনোটাকে মুস্তাহাব সাব্যস্ত করেছেন। এই আয়াত শরীফ-এর উপর যা আমল করা ফরয ছিল তা আমল করা হয়ে গেছে। নতুন করে সুন্নতকে ফরয সাব্যস্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষ সাধারণভাবে সুন্নত বলতে বুঝে থাকে সুন্নতে যায়িদাহ, মুস্তাহাব ও নফল। এই আয়াত শরীফ দ্বারা এইসব আমলকে ফরয সাব্যস্ত করা ইজমার পরিপন্থি অর্থাৎ ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের ইজমার বিরোধিতা করার নামান্তর।

এ বিষয়ে আল বাইয়ি‍্যনাত শরীফের ৩য় সংখ্যা ৪৪ পৃষ্ঠায় ফতওয়া বিভাগে এসেছে, "প্রকৃত জ্ঞানী তো তারাই, যারা ফরযকে ফরয, ওয়াজিবকে ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদাকে মুয়াক্কাদা, যায়িদাকে যায়িদা এবং মুস্তাহাবকে মুস্তাহাব হিসেবে মেনে নিবে। জানা আবশ্যক যে, মুস্তাহাবকে যদি আমলের জন্য তাকিদ দেয়া হয়, তা কখনোই ওয়াজিব হবে না। ইহার বাহিরে যারা মত পোষণ করবে তারা সীমা লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত হবে।"

এছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,

وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ (۷۸) سورة الحج 

তিনি তোমাদের দ্বীনের মধ্যে কোনো কিছু কঠিন করেননি। [সূরা হজ্জ শরীফ: ৭৮]

আর পবিত্র হাদীছ শরীফে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ الدِّينَ يُسْرُ وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ. (رواه البخاري)

হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই দ্বীন হচ্ছে সহজ। কেউ যেন দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে, তাহলে তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। [বুখারী শরীফ]

সুতরাং সুন্নতকে ফরয সাব্যস্ত করলে দ্বীনকে কঠিন করে ফেলা হবে বা দ্বীনের মধ্যে কাঠিন্যতা আরোপ করা হবে এবং অনেক সমস্যার সৃষ্টি হবে। যেমন, কারো যদি যে কোনো কারণ বশত কোনো সুন্নত তরক হয়ে যায় তাতে কোনো গুনাহ হবে না কিন্তু সুন্নত ফরয সাব্যস্ত হলে তখন তা তরক করলে কবীরা গুনাহ হবে। এজন্য ইমাম-মুজতাহিদগণ আমলের প্রতি গুরুত্বারোপ করে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, সুন্নতে যায়িদাহ, মুস্তাহাব ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগে আমলকে বিভক্ত করেছেন। তাই উনাদের ইজমা মেনে নেয়া আবশ্যক।

এছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ (۷۷) سورة المائدة

তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। [সূরা মায়িদা শরীফ: ৭৭]

মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যেখানে দ্বীন বা শরীয়ত কঠিন করেননি সেখানে আমরা কিভাবে সহজটাকে কঠিন করতে পারি? এটা দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হবে, যা উচিত নয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদের সবাইকে দ্বীনের সহীহ-সমঝ দান করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক যথাসাধ্য অনুসরণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহাব্বত মুবারক অর্জন করার ও হকের উপর ইস্তেকামত থাকার তাওফীক দান করেন। (আমীন)