মহান আল্লাহ পাক উনার একত্বতা নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দালীলিক জাওয়াবনাস্তিকদের আপত্তি ১ : মহান আল্লাহ পাক প্রকৃতপক্ষে কতজন? একজন (Quran 40:62) নাকি অনেক (Quran 21:7, 23:14)!
নাস্তিকদের আপত্তি ২ : সৃষ্টিকর্তা কতজন? অনেক (Quran
23:14, 37:125 l-khāliqīna means the Creators) নাকি এক (Quran 39:62, 40:62, 6:102, 13:16)!
নাস্তিকদের আপত্তি ৩ : সৃষ্টিকর্তা আসলে কতজন যে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের মাঝে অন্যতম (Quran 23:14,
37:125 l-khāliqīna means the Creators)?
নাস্তিকদের আপত্তি ৪ : মহান আল্লাহ পাক তিনিই কি মানব সভ্যতার জন্যে একমাত্র রক্ষাকর্তা (Quran
32:4, 18:86, 18:102, 9:116) নাকি তিনি একাই নন (Quran
41:30-31, 5:55, 9:71)?
খণ্ডণ : মহান আল্লাহ পাক তিনি এক এবং একক। এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে।
বস্তুত নাস্তিকদের অবস্থা হচ্ছে আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নেয়ার মতো। তাদের আপত্তির প্রেক্ষিতেই তাদের ইলমের দৌড় সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার একত্বতা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বিভিন্ন আয়াত শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রকাশ করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ لَّا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۖ فَاَنّٰـى تُؤْفَكُوْنَ ◌
অর্থ : “তিনি মহান আল্লাহ পাক, তোমাদের রব তায়ালা, সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছো?” (পবিত্র সূরা মু’মিন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি তো বিভ্রান্তি থেকে উদ্ধারের জন্য স্পষ্ট করেই বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত যদি আরো সৃষ্টিকর্তা কিংবা ইলাহ থাকতো তাহলে তাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়ে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যেত।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَوْ كَانَ فِيْهِمَا اٰلِـهَةٌ اِلَّا اللهُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ◌
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আসমান ও যমীনে যদি অন্য কোন ইলাহ থাকতো, তবে উভয়ে ধ্বংস হয়ে যেতো। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে সম্মানিত আরশ উনার অধিপতি মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২২)
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার একত্বতা প্রকাশের জন্য একখানা পূর্ণ সূরা শরীফও নাযিল করেছেন-
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ◌ اَللهُ الصَّمَدُ ◌ لَـمْ يَلِدْ وَلَـمْ يُوْلَدْ ◌ وَلَـمْ يَكُن لَّه كُفُوًا اَحَدٌ ◌
অর্থ : “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, খালিক্ব, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি এক। মহান আল্লাহ পাক তিনি বেনিয়াজ অর্থাৎ তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। উনার থেকে কেউ জন্মগ্রহণ করেননি এবং তিনিও কারও থেকে জন্মগ্রহণ করেননি। উনার সমকক্ষ কেউ নেই।” (পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ)
সুতরাং সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে, মহান আল্লাহ তিনি এক ও একক। এরপরেও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজের ব্যাপারে কোথাও একবচন ব্যবহার করেছেন আবার কোথাও বহুবচন ব্যবহার করেছেন। আবার কোথাও একই আয়াত শরীফ উনার মধ্যে একবচন ও বহুবচন উভয়টি ব্যবহার করেছেন। এই বহুবচন ব্যবহারের কারণ নিয়েই নি¤েœ আলোচনা করা হলো-
১) মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক এবং সব বিষয়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অভিব্যক্তি প্রকাশ করা : মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষা হচ্ছে খাঁটি ও বিশুদ্ধ আরবী ভাষা।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَهٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِيْنٌ
অর্থ : “আর পবিত্র কুরআন শরীফ সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।” (পবিত্র সূরা নাহল্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
সুতরাং অনন্য ও অসাধারণ বাকরীতি এবং অনুপম অলংকার ও সাহিত্য গুণসম্পন্ন আরবী ভাষাই হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষা। আর তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক-এ যে, উত্তম পুরুষ বা বক্তাপক্ষের কোথাও একবচনের সর্বনাম, কোথাও বহুবচনের সর্বনাম এবং কোথাও একবচন ও বহুবচনের সর্বনাম পাশাপাশি ব্যবহার হয়েছে, তা আরবী বাকরীতি ও অলংকারসম্মত বৈকি।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সবদিক থেকে এক অদ্বিতীয় ও ‘লা-শারীক’-এই বিবেচনায় উনার ব্যাপারে একবচনের সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে। আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি হলেন সর্বময় গুণের অধিকারী অর্থাৎ একের ভেতর অনেকগুলো বিশেষ গুণ এবং এক-একটি গুণের এক-এক রকম রূপ আছে। তাই তিনি কখনো واحد ওয়াহিদ, আবার কখনো احد আহাদ। অর্থাৎ তিনি একের মধ্যে বহু তথা একক। তাই তিনি কখনো নিজেকে اَنَا ‘আমি’ বলেছেন, আবার কখনো نَـحْنُ ‘আমরা’ বলেছেন।
সাধারণত আরবী ভাষায় সম্মানিত ব্যক্তিত্ব উনার মর্যাদা প্রকাশার্থে উনার সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় বুঝাতে বহুবচনের ব্যবহার সুপরিচিত। তাই এটিকে আরবী ভাষাবিদগণ ‘বহুবচন’ না বলে ‘সম্মানজ্ঞাপক একবচনের সর্বনাম’ বলেছেন। উনাদের ভাষায় এর নাম হলো : ضمير العظمة، نون العظمة، ضمير الـمتكلم الـمعظم نفسه، ضمير الـمتكلم الواحد الـمطاع، لفظ الـمتكلم الـمطاع ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে ব্যবহৃত এই সর্বনাম ব্যবহারের একটি উদ্দেশ্য হলো উনার শান মুবারক এবং সব বিষয়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অভিব্যক্তি প্রকাশ করা।
যেমন- আদেশ মুবারক ও নিষেধাজ্ঞা মুবারক বিষয়ক পবিত্র আয়াত শরীফ-
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْا اِلَّا اِبْلِيْسَ اَبٰـى)
سورة طه: ١١٦(When We
said to the angels, "Prostrate yourselves to Adam", they prostrated
themselves, but not Iblis: he refused. (20: 116)
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْا اِلَّا اِبْلِيْسَ قَالَ اَاَسْجُدُ
لِمَنْ خَلَقْتَ طِيْنًا )سورة الاسراء:
٦١(
Behold! We said to the angels: "Bow down unto Adam":
They bowed down except Iblis: He said, "Shall I bow down to one whom Thou
didst create from clay?" (17: 61)
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْا اِلَّا اِبْلِيْسَ اَبٰـى
وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ )سورة البقرة: ٣٤(
And behold, We said to the angels: "Bow down to Adam"
and they bowed down. Not so Iblis: he refused and was haughty: He was of those
who reject Faith. (2: 34)
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْا اِلَّا اِبْلِيْسَ كَانَ
مِنَ الْـجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ اَمْرِ رَبِّهِ اَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ
أَوْلِيَاءَ مِن دُوْنِـي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ بِئْسَ لِلظَّالِمِيْنَ بَدَلًا )
سورة الكهف: ٥٠(
وَقُلْنَا يَا اٰدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْـجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ
شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِيْنَ)
سورة البقرة: ٣٥(
قُلْنَا اهْبِطُوْا مِنْهَا جَـمِيْعًا فَاِمَّا يَاْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن
تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَـحْزَنُوْنَ )سورة البقرة: ٣٨(
قُلْنَا يَا نَارُ كُوْنِـي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ) سورة الانبياء:
٦٩(
وَقُلْنَا مِن بَعْدِهِ لِبَنِي اِسْرَائِيْلَ اسْكُنُوا الْاَرْضَ فَاِذَا جَاءَ
وَعْدُ الْاٰخِرَةِ جِئْنَا بِكُمْ لَفِيْفًا )سورة الاسراء: ١٠٤(
وَرَفَعْنَا
فَوْقَهُمُ الطُّوْرَ بِـمِيْثَاقِهِمْ وَقُلْنَا لَـهُمُ ادْخُلُوا الْبَابَ
سُجَّدًا وَقُلْنَا لَـهُمْ لَا تَعْدُوْا فِي
السَّبْتِ وَاَخَذْنَا مِنْهُم مِّيْثَاقًا غَلِيْظًا) سورة النساء: ١٥٤(
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এ সৃষ্টিজগতের পরিচালনার জন্য কারো মুখাপেক্ষী নন বরং সবাই উনার মুখাপেক্ষী। আর এ জন্যই তিনি পৃথিবীর রাজা-বাদশাহদের মতো নন, যাদের প্রয়োজন হয় উযীর বা মন্ত্রীর এবং বিভিন্ন বাহিনীর। মহান আল্লাহ পাক তিনি হলেন কুল কায়িনাতের খ¦ালিক্ব বা সৃষ্টিকর্তা ও রব বা প্রতিপালনকারী। উনার শান মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّـمَا اَمْرُهُ اِذَا اَرَادَ شَيْئًا اَنْ يَّقُوْلَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ ◌
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা মুবারক করেন, তখন কেবল বলেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়।” (পবিত্র সূরা ইয়াসীন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন একটি কার্য সম্পাদনের ইচ্ছা মুবারক পোষণ করলে كُنْ ‘হও’ বললেই তা হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। তারপরও মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার তাকউয়ীনী হুকুম মুবারক কার্যকর করার জন্য কর্মনির্বাহকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিযুক্ত রেখেছেন। বস্তুত মহান আল্লাহ পাক তিনি বিভিন্ন হিকমত ও উদ্দেশ্যে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সৃষ্টি করেছেন এবং উনাদেরকে বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত রেখেছেন। উনাদের নিজস্ব কোনো ইচ্ছা বা ইখতিয়ার নেই। উনারা কেবল মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মুবারক তামীল করেন। উনাদেরকে যে কাজেরই নির্দেশ মুবারক প্রদান করা হয় সেটাকেই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আঞ্জাম দেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্ট এবং উনার পূর্ণ আজ্ঞাবহ ও নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ার কারণে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কথা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে বহুবচনে সর্বনামের ব্যবহার মহান আল্লাহ পাক উনার নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অভিব্যক্তিই প্রকাশ করে এবং এতে উনার গৌরব ও মহিমাই ফুটে উঠে।
মহান আল্লাহ পাক উনার যাঁরা বান্দা উনাদেরকে নিয়েই তিনি ‘আমরা’। এখানে হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে আমরা কি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা নই? হ্যাঁ, মৌখিক স্বীকৃতিতে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা। কিন্তু কার্য্যগতভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা হওয়া সহজ বিষয় নয়। কার্য্যগতভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা হলে তখনই মহান আল্লাহ পাক উনার ‘আমরা’ দলের সদস্য হওয়া যায়।
একটি মোমবাতির আলো দিয়ে হাজার বাতি আলোকিত করা যায়, তাতে প্রথম মোমবাতিটির আলো একটুও কমবেও না, বাড়বেও না। হাজার বাতির আলোর নাম ‘আমরা’ আলো - কিন্তু বহুবচন ব্যবহার হলেও আলো আসলে এক এবং অদ্বিতীয়। হাজারের মধ্যেও তিনি, অগণিতের মধ্যেও তিনি, আবার একের মধ্যেও তিনি। এই অসীম ও অপরিমেয় গুণাবলীর জন্য বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনোই দ্বৈত বা দ্বিবচন ব্যবহার করেননি। কারণ বহুবচন যেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার মর্যাদা ও গুণসমূহের মাহাত্ম্যকে প্রকাশ করে, দ্বিবচনাত্মক শব্দ সেখানে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাকেই (দুই) নির্দেশ করে, যা থেকে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র।
এছাড়াও পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كُنْتُ كَنْزَا مُـخْفِيًّا فَاَحْبَبْتُ اَنْ اُعْرَفَ فَخَلَقْتُ الْـخَلْقَ لاُعْرَفَ.
অর্থ : “আমি গুপ্ত ছিলাম। যখন আমার মুহব্বত হলো যে, আমি প্রকাশিত হই, তখনই আমি সৃষ্টি করলাম সৃষ্টির যিনি মূল (আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে।” (সিররুল আসরার, আল মাকাসিদুল হাসানা ৮৩৮, কাশফূল খিফা/২০১৩, আসনাল মুত্বালিব/১১১০, তমীযুত তীব/১০৪৫, আসরারুল মারফুআ/৩৩৫, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ ১/১৪৮, আদ দুরারুল মুন্তাছিরা/৩৩০, আত্ তায্কিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা/১৩৬)
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু গুপ্ত ছিলেন। তাই তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির মাধ্যমে “আমরা” রূপে প্রকাশিত হয়ে সৃষ্টির মধ্যে উনার তাওহীদ বা একত্বতা প্রকাশ করেছেন।
২) উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন বচনভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটানো : মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে ব্যবহৃত বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহারের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন বচনভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটানো। কেননা বহুবচন ব্যবহারের ফলে বালাগাতের পরিভাষায় الالتفات ‘ইলতিফাত’ এবং التفنن ‘তাফান্নুুন’ নামক দুটি সৌন্দর্য তৈরি হয়। ইলতিফাত হলো বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে বক্তব্যের যমীর বা সর্বনামের ধারা পরিবর্তন করা। এর বিভিন্ন ধরণ ও প্রকার রয়েছে।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে যেখানেই মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে সেখানেই এর পূর্বে বা পরে মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে ইসমে যাহির কিংবা যমীরে ওয়াহিদ গায়িব তথা অন্যপক্ষের একবচনের সর্বনাম কিংবা ওয়াহিদ মুতাকাল্লিম তথা বক্তাপক্ষের একবচনের সর্বনাম ব্যবহার হয়েছে। এতে যেমন ইলতিফাত-এর সৌন্দর্য এসেছে তেমনি গৌরব ও সম্মানার্থে একবচনের জায়গায় বহুবচনের রূপ ব্যবহারের বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়েছে।
প্রতিটি ইলতিফাত-এর স্থানগত সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি নিজস্ব সৌন্দর্যও রয়েছে। যেমন আকস্মিক ধারা পরিবর্তন দ্বারা ‘তাফান্নুন’ ও বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়, ফলে শ্রোতা সচকিত হয়ে বিষয়বস্তুর প্রতি অধিকতর মনোযোগী হয়। সেই সাথে কালাম ইজাযপূর্ণ ও সুসংক্ষিপ্ত হয়। তাছাড়া ইলতিফাত দ্বারা উদ্দিষ্ট ভাব ও মর্মটি ইঙ্গিতে প্রকাশ করা হয়। আর ইঙ্গিতময়তা প্রত্যক্ষ ভাষণের চেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে থাকে।
৩) মুসনাদের প্রতি বা সম্বন্ধকৃত বিষয়ের প্রতি শ্রোতার অন্তরে সমীহবোধ জাগ্রত করা : মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে ব্যবহৃত বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহারের আরেকটি হিকমত হলো মুতাকাল্লিম বা বক্তাপক্ষের বহুবচন ব্যবহারের একাধিক অভিব্যক্তি রয়েছে। যেমন, ইসনাদ কিংবা ইযাফাতের মাধ্যমে বহুবচনের সর্বনামের দিকে সম্বন্ধকৃত বিষয়ের প্রতি শ্রোতার অন্তরে সমীহবোধ জাগ্রত করা। মুসনাদের প্রতি ইহতিমাম ও যতœ প্রদর্শন করা। মুসনাদের বিশেষত্ব প্রকাশ করা। আদিষ্ট বিষয়ের প্রতি সম্বোধিত ব্যক্তির অন্তরে অধিকতর গুরুত্ববোধ সৃষ্টি করা এবং কোনো কিছুর ভয়াবহতা তুলে ধরা। অথবা কোনো কিছু শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনিই করতে পারেন, এই ইখতিছাছ ও বিশেষায়ণ ইত্যাদি ভাব ও মর্মের উপস্থাপন করা। যেমন -
وَاِنْ
كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِّـمَّا نَزَّلْنَا عَلٰى عَبْدِنَا
فَاْتُوْا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا
شُهَدَاءَكُم مِّن دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ
صَادِقِيْنَ) سورة البقرة:
٢٣(
وَالَّذِينَ كَذَّبُوا
بِآَيَاتِنَا) سورة الأعراف: ٧)
وَمَنْ رَزَقْنَاهُ
مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا) سورة النحل: ١٦)
إِنَّا أَعْتَدْنَا
لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا) سورة الكهف: ١٨)
فَإِذَا قَرَأْنَاهُ
فَاتَّبِعْ قُرْآَنَهُ) سورة القيامة: ١٨)
وَاللَّهُ الَّذِي
أَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ إِلَى بَلَدٍ مَيِّتٍ)
سورة
الفاطر:٩)
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ
رُسُلٌ مِنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوا عَلَى مَا كُذِّبُوا وَأُوذُوا حَتَّى أَتَاهُمْ نَصْرُنَا)
سورة
الأنعام: ٦)
অর্থাৎ এখানে এমন একটি আবহ বা অবস্থা তৈরি হয় যেন মহান আল্লাহ পাক উনার ‘সম্মানজ্ঞাপক একবচনের সর্বনাম’-এর মাধ্যমে আপন মহিমায় আত্মপ্রকাশ করেছেন। ফলে শ্রোতাগণের উপর মহিমা ও গৌরবের এমন তাজাল্লীর বিচ্ছুরণ হয় যা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ভাব ও গুঢ়রহস্যকে তাদের অন্তরের গভীর অনুভূতির সাথে পূর্ণ একাত্ম করে দেয়।
উপরোক্ত কারণসমূহ ছাড়াও শব্দগত, অর্থগত এবং প্রসঙ্গের পারিপার্শ্বিকতার সূক্ষ্ম বিচারেও বহুবচনরূপী সর্বনাম ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন-
وَلَوْ شِئْنَا لَآَتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا وَلَكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّي لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ (سورة السجدة: ٣٢)
وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ وَأُمْلِي لَهُمْ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ (سورة الأعراف:٧)
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে ব্যবহৃত বহুবচনের সর্বনাম সম্মানার্থে বহুবচন, সংখ্যাবাচক বহুবচন নয়।
‘সম্মানজ্ঞাপক একবচনের সর্বনাম’-এর তরজমা বা অনুবাদ :
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে ব্যবহৃত বহুবচনবাচক সর্বনামের অনুবাদ যদি বাংলায় বহুবচনের ‘আমরা’ ‘আমাদের’ দ্বারা করা হয় তা হবে শাব্দিক অনুবাদ। এতে আরবীর শব্দ-গৌরব, অলংকার ও ব্যঞ্জনা উঠে আসবে না। অধিকন্তু এতে বাংলাভাষী সাধারণ পাঠকের অন্তরে ঈমান-আক্বীদাগত ত্রুটি তো তৈরি হবেই পাশাপাশি প্রকাশরীতি অস্বাভাবিক হওয়ায় পাঠকের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু বাংলা তরজমায় যদি ‘আমি’ (যাতে ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুসারে কিছুটা হলেও সম্মানার্থ রয়েছে) প্রয়োগ করা হয়, তবে মূল আরবীর পূর্ণ ভাব ও আবেদন প্রকাশ না পেলেও ঈমান-আক্বীদাগত ত্রুটি ও পাঠকের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। এসব কারণে সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে রচিত তরজমাতুল কুরআনে আলোচিত বহুবচনবাচক শব্দ মুবারক উনার বাংলা অনুবাদ ‘আমি’ করাই উত্তম।
তদুপরি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনুবাদের ক্ষেত্রে যে বহুবাচক We বা “আমরা” ব্যবহার করা হয় সেটাকে বলা হয় Royal বা রাজকীয় We (আমরা)। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো রাজা বা কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বলে- “আমরা এই অধ্যাদেশ জারি করছি যে” অথবা “আমরা এই বিষয়টিতে সন্তুষ্ট নই”, তখন সেটা রাজকীয় সর্বনাম “আমরা” ব্যবহৃত হয়। এখানে রাজা একজন মাত্র ব্যক্তি যে নিজেই অধ্যাদেশ জারি করছে বা সে নিজেই সন্তুষ্ট নয়। অথচ নিজের জন্য সে “আমি” ব্যবহার করার পরিবর্তে “আমরা” সর্বনাম ব্যবহার করছে। এই আমরা দিয়ে বহুবচন বুঝায় না; বরং বক্তার সম্মান এবং মর্যাদাগত অবস্থান তুলে ধরার জন্য এই সর্বনাম ব্যবহার করা হয়।
বাংলাসহ ইংরেজি, ফার্সি, হিব্রু, আরবী ইত্যাদি অনেক ভাষাতেই এই রাজকীয় “আমরা” সর্বনামের ব্যবহার রয়েছে। এটি ভাষার একটি মর্যাদাগত দিক। ইংরেজি ব্যাকরণের নিয়মানুযায়ী, কর্তা একবচন হলে ক্রিয়াও একবচন হবে। অতএব, He is বা She is এর মতো You is হওয়ার কথা যখন You দিয়ে কেবল তুমি বা আপনি অর্থাৎ একজন মাত্র ব্যক্তিকে বুঝায়। কিন্তু You দিয়ে যখন তোমরা বা আপনারা বুঝায়, তখনই কেবল ব্যাকরণ অনুযায়ী, You are হওয়ার কথা। অথচ are ক্রিয়াটি বহুবাচক তোমরা এর জন্য হলেও তুমি বা আপনি অর্থে You সর্বনামের সাথেও আমরা বহুবাচক are ব্যবহার করি।
একই কথা প্রযোজ্য I এর ক্ষেত্রে। অর্থাৎ ব্যাকরণের নিয়মে I am না হয়ে I is হওয়ার কথা। কিন্তু প্রচলিত ইংরেজিতে I এর সাথে am ব্যবহার করা হয়। মোটকথা, তুমি বা আপনি অর্থে, You এর সাথে are এবং I এর সাথে am এর ব্যবহার হলো Royal Plural বা রাজকীয় বহুবচনের উদাহরণ।
অধিকিন্তু শুধুমাত্র আলোচিত বহুবচনবাচক শব্দ মুবারক নয় বরং আরবী ভাষার সাথে অন্যান্য ভাষার সাদৃশ্য অপেক্ষা পার্থক্যই অধিক। কারণ একেকটি ভাষা সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা-গোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। তাই আরবী ভাষার গঠন-প্রণালী ও ব্যাকরণ নানা দিক দিয়ে অন্যান্য ভাষার গঠন-প্রণালী ও ব্যাকরণ হতে ভিন্ন। যেমন-
* অনেক আরবী বর্ণের বিশুদ্ধ আরবী উচ্চারণ অনুসারে প্রতিবর্ণীকরণ সম্ভব নয়।
* আরবীতে ও সংস্কৃতে ক্রিয়ার তিনটি বচন আছে, যথা- একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন। কিন্তু বাংলায় ক্রিয়ার বচনভেদ নেই। একবচন ও বহুবচনে ক্রিয়ার রূপ অভিন্ন।
* আরবী ও ইংরেজিতে সর্বনামের লিঙ্গভেদ রয়েছে, কিন্তু বাংলা ভাষায় সর্বনাম শব্দে নারী-পুরুষবাচক পার্থক্য করা হয় না। আমি, তুমি, সে, তারা, এটা, ওটা ইত্যাদি সর্বনাম স্ত্রী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে একই রূপে ব্যবহৃত হয়।
* আরবী ও সংস্কৃত ভাষায় সংখ্যা অনুযায়ী বিশেষ্যপদের বচন পাল্টে যায়। তাই আরবীতে বলা হয় রজুলুন, রজুলানি, রিজালুন। সংস্কৃতে বলা হয়, নর:, নরৌ, নরা:। কিন্তু বাংলায় সংখ্যা যা-ই হোক, সেই অনুযায়ী বিশেষ্যপদের বচন পাল্টানোর দরকার হয় না। তাই বাংলা ভাষায় ১-এর ক্ষেত্রে যা ‘মানুষ’, সংখ্যাটা ১-এর বেশি হলেও তা মানুষই থেকে যায়, ‘দুজন মানুষেরা’ বা ‘তিনজন মানুষেরা’ লেখার দরকার হয় না। ইংরেজিতে দ্বিবচনের বিশেষ রূপ নেই, আছে শুধুই Singular বা একবচন Plural বা বহুবচন। সংখ্যাটা ১ হলে Man, ১-এর বেশি হলেই Men এ ধরনের আরো অনেক পার্থক্যই রয়েছে, যা বাংলা ভাষায় অবিকল নকল করা সম্ভব নয়।
* আরবী বাকরীতি বাংলায় অপ্রচলিত হওয়ার কারণে তরজমার ক্ষেত্রে তা পরিবর্তন করে বাংলা ভাষার স্বাভাবিক বাকরীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে তরজমা করার অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন-
১. বক্তা ও শ্রোতার অন্তরে ভবিষ্যতে ঘটিতব্য কোনো ঘটনার সুনিশ্চয়তার বিশ্বাস বদ্ধমূল করার উদ্দেশ্যে ‘ছিগায়ে মুসতাকবিল’ বা ভবিষ্যত কালের পরিবর্তে ‘ছিগায়ে মাদ্বী’ বা অতীত কাল ব্যবহার হয়। এ ধরনের ‘ছিগায়ে মাদ্বী’-র বাংলা তরজমা কোথাও কোথাও ‘মাদ্বী’ বা অতীত কালের ক্রিয়া দিয়ে করা সম্ভব। কিন্তু সব জায়গায় তা খাটবে না। উদাহরণস্বরূপ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ৪৩ ও ৪৪ নং আয়াত শরীফ।
وَنَزَعْنَا
مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ تَـجْرِي مِن تَـحْتِهِمُ الْاَنْهَارُ ۖوَقَالُوا الْـحَمْدُ
لِلّٰهِ الَّذِي هَدَانَا لِـهٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا اَنْ
هَدَانَا اللهُ ۖ لَقَدْ
جَاءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْـحَقِّ ۖ وَنُوْدُوا
اَن تِلْكُمُ الْـجَنَّةُ اُورِثْتُمُوهَا بِـمَا كُنتُمْ تَعْمَلُوْنَ ◌
نَادٰى
اَصْحَابُ الْـجَنَّةِ اَصْحَابَ النَّارِ اَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا
رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدتُّـم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ۖ قَالُوا
نَعَمْ ۚ فَاَذَّنَ
مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ اَن لَّعْنَةُ اللّٰـهِ عَلَى الظَّالِمِيْنَ ◌
উপরোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের মধ্যে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের কিছু অবস্থা ও সংলাপ তুলে ধরা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ঘটবে। কিন্তু ঘটনার সুনিশ্চয়তা বোঝানোর জন্য ‘ছিগায়ে মাদ্বী’ ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য ভাষায় এই ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যবহারের প্রচলন নেই বলেই সকল নির্ভরযোগ্য তরজমায় ভবিষ্যতের ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়াও পবিত্র সূরা নামল শরীফ উনার ৮৭ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও একই পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
وَيَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللهُ ۚ وَكُلٌّ أَتَوْهُ دَاخِرِينَ ◌
২. আরবী ভাষায় অনেক সময় মর্যাদাগত দূরত্ব ও সুউচ্চতার প্রতি ইঙ্গিত করার উদ্দেশ্যে নিকটবর্তী জিনিসের জন্য দূরবর্তী ‘ইসমুল ইশারাহ’ ذلك، أولئك ব্যবহার হয়ে থাকে। এই প্রকাশরীতি অন্য ভাষায় অপ্রচলিত। তাই এই দূরবর্তী ‘ইসমুল ইশারাহ’-র তরজমা নিকট-নির্দেশক সর্বনাম দ্বারাই করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২য় ও ৫ম আয়াত শরীফ উল্লেখ করা যেতে পারে -
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ
اُولٰئِكَ عَلٰى هُدًى مِّن رَّبِّـهِمْ ۖ وَاُولٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ◌
সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারকে বর্র্ণিত প্রত্যেকটি বহুবচনের সর্বনাম হচ্ছে উনার শান-মান মুবারক, ইজ্জত-জালালিয়ত মুবারক উনাদের বহিঃপ্রকাশ। এই বহুবচনের সর্বনাম কখনোই সংখ্যাবাচক বহুবচন নয় বরং সম্মানার্থক বা গুণবাচক বহুবচন।