মহান আল্লাহ পাক উনার ছূরত মুবারক নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দালীলিক জাওয়াব

মহান আল্লাহ পাক উনার ছূরত মুবারক নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের দালীলিক জাওয়াব

নাস্তিকদের আপত্তি ৫ : মহান আল্লাহ পাক উনার অবস্থান প্রকৃতপক্ষে কোথায়? উনার জন্যে নির্ধারিত আরশে (Quran 57:4, 11:7)? পূর্ব-পশ্চিম সর্বত্র (Quran 2:115)? কা’বা ঘরে (Quran 14:37)?  আমাদের খুব নিকটে (Quran 50:16)?

নাস্তিকদের আপত্তি ৬ : মহান আল্লাহ পাক উনার কতগুলো cardinal point রয়েছে? এক (Quran 2:115) নাকি দুই (Quran 55:17)?

নাস্তিকদের আপত্তি ৭ : মহান আল্লাহ পাক উনার কি মানুষের মত কোন আকার আছে? না (Quran 112:4)  এবং হ্যাঁ (Quran 42:51, 38:75, 39:67, 69:17, 53:1-18)!

নাস্তিকদের আপত্তি ৮ : মহান আল্লাহ তিনি উনার তৈরি আরশ পাকে সমাসীন হয়ে লাওহে মাহফুজে সবকিছু লিখে রাখেন, যিনি হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে তৈরি করেছেন নিজের হাতে এবং নিজের আদলে (Sahih Bukhari 9:93:607, 8:74:246 Sahih Muslim 1:378, 32:6325, 40:6809), কিয়ামতের দিন যাঁর হাতের মুঠোয় থাকবে গোটা পৃথিবী (Sahih Bukhari 9:93:607, 8:74:246 Sahih Muslim 1:378, 32:6325, 40:6809),  আপনি কি করে দাবি করেন আপনার মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন ব্যাক্তি বিশেষ নন?

নাস্তিকদের আপত্তি ৯ : কিয়ামতের সময় আটজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার আরশ পাককে উনাদের উর্ধ্বে বহন করবেন (Quran 69:17)! এই পবিত্র আয়াত শরীফ পড়েও কি আপনার মনে হয় মহান আল্লাহ পাক তিনি আসলেই নিরাকার এবং সর্বশক্তিমান?

খণ্ডণ: মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে নিতান্তই মূর্খ হওয়ার কারণে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে তাদের মতো চিন্তা করার কারণেই নাস্তিকরা এ ধরণের প্রশ্নের অবতারণা করেছে।

অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُـحِيْطُوْنَ بِهِ عِلْمًا ◌

অর্থ : “তিনি জানেন যা কিছু তাদের সামনে ও পশ্চাতে আছে এবং উনাকে তারা তাদের জ্ঞান দ্বারা আয়ত্ত করতে পারে না।” (পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১০)

মূলত মহান আল্লাহ পাক তিনি যাত বা সত্ত্বাগতভাবে সম্মানিত আরশ পাকে অবস্থান করছেন। আর তাই তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

هُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُـمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ◌

অর্থ : “তিনি আসমানসমূহ ও যমীনসমূহ সৃষ্টি করেছেন ছয় ধাপে, অতঃপর সম্মানিত আরশ পাকের উপর সমাসীন হয়েছেন।” (পবিত্র সূরা হাদীদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ 

অর্থ : “তিনিই আসমান ও যমীন ছয় ধাপে সৃষ্টি করেছেন, উনার সম্মানিত আরশ পাক ছিল পানির উপরে।” (পবিত্র সূরা হূদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

الرَّحْمَـٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى ◌

অর্থ : “তিনি পরম দয়াময়, সম্মানিত আরশ পাকে সমাসীন রয়েছেন।” (পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

اِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ فِي سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُـمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ ◌

অর্থ : “নিশ্চয়ই তোমাদের মহান রব তায়ালা তিনি আল্লাহ। তিনি আসমান ও যমীনসমূহকে ছয় ধাপে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন।” (পবিত্র সূরা আরাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)

তবে তিনি সম্মানিত আরশ পাকে কিভাবে সমাসীন রয়েছেন তার পদ্ধতি কারো জানা নেই। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন নিরাকার। উনার কোন ছূরত বা আকৃতিই নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার মানুষের মতো আকার আকৃতি বা দেহ নেই। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি আকৃতি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, অবয়ব বা দেহ বিশিষ্ট হওয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে পুতঃপবিত্র। উক্ত বৈশিষ্টগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টি।

আর তাই এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ ◌ اَللهُ الصَّمَدُ ◌ لَـمْ يَلِدْ وَلَـمْ يُوْلَدْ ◌ وَلَـمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا اَحَدٌ◌

অর্থ : “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন- মহান আল্লাহ পাক তিনি এক। মহান আল্লাহ পাক তিনি বেনিয়াজ বা অমুখাপেক্ষী। মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে কেউ জন্ম নেয়নি এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ কেউ নেই।” (পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَىْءٌ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনার মিছাল বা অনুরূপ কোন কিছুই নেই।” (পবিত্র সূরা শুরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)

এই আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আক্বাইদের কিতাব ও অন্যান্য কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে যে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি দেহ বা আকার-আকৃতি বিশিষ্ট নন। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি দেহ বা আকার-আকৃতি বিশিষ্ট একথা বিশ্বাস করা সুস্পষ্ট কুফরী। যেমন- এ প্রসঙ্গে হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম ফী ইল্মিল কালাম আল্লামা ইমাম গাযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সুপ্রসিদ্ধ কিতাব “ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন”-এর ১ম খন্ড ৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন-

مع كونه منزها عن الصورة والـمقدار مقدسا عن الـجهات والاقطار

অর্থ: “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি “ছুরত” অর্থাৎ আকার-আকৃতি এমনকি সমস্ত “জিহাত” বা দিক হতেও পবিত্র।”

প্রসিদ্ধ, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “শরহে আক্বায়িদে নাসাফীতে” উল্লেখ করা হয়েছে-

ولا جسم ولا جوهر ولا مصور اى ذى صورة وشكل مشكل مثل صورة الانسان او الفرس بان لـها بواسطة الكميات تلك من خواص الاجسام جص ذى حد ونـهاية.

অর্থ: “তিনি জিসিম বা দেহ বিশিষ্ট নন। (কারণ দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে এবং দেহ স্থান দখলকারী)। মানুষ ও প্রাণীর ছুরত বা আকার-আকৃতি হলো- দেহের বৈশিষ্ট্য, যা দেহের প্রান্তসীমা ও পরিধি তথা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বেধ দ্বারা অর্জিত অর্থাৎ আয়তন ও পরিমাণ হতে সৃষ্টি হয়ে থাকে। তিনি প্রান্ত, সীমা ও পরিধি বিশিষ্ট নন।”

এ উপমহাদেশের সুপ্রসিদ্ধ ও প্রখ্যাত হাদীছ বিশারদ ইমামুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিছে দেহলভী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর নির্ভরযোগ্য কিতাব “আল ক্বাওলুল জামীল”-এর ৩১ পৃষ্ঠায় লিখেন-

منزه من جـميع سـمات النقص والزوال من الـجسمية والتجيز والعرضية والـهة والاالوان والاشكال.

অর্থ: মহান আল্লাহ্ পাক অপূর্ণতা ও নশ্বরতার যাবতীয় ছিফ্ত বা গুণ হতে সম্পূর্ণই মুক্ত। তিনি দেহ বিশিষ্ট, স্থান দখলকারী, কোন জিহাত বা দিকে অবস্থানকারী, বর্ণ ও আকৃতিধারী এবং দেহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যধারী নন।”

মহান আল্লাহ্ পাক-এর “জাতের পরিচয়” সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ্ পাক-এর “জাত” ওয়াজিবুল ওয়াজূদ, উনার জাত হাদিছ বা সৃষ্ট নয়, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি জিস্ম বা দেহ, ছূরত বা আকার-আকৃতি এবং দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ভেদ ও তাশবীহ্ বা সাদৃশ্য ইত্যাদি হতে সম্পূর্ণরূপেই পবিত্র।

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত আরশ পাকে সমাসীন রয়েছেন, তবে কিভাবে সমাসীন আছেন তার পদ্ধতি কারো জানা নেই। কেননা যখন সম্মানিত আরশ পাক সৃষ্টি হয়নি, তখনও মহান আল্লাহ পাক তিনি ছিলেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু নিরাকার, তাই তিনি উনার ছিফত মুবারক বা গুণ-বৈশিষ্ট্য মুবারক দ্বারা সর্বত্র বিরাজমান।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلِلّٰهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ ۚ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللهِ ۚ اِنَّ اللهَ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ ◌

অর্থ : “পূর্ব ও পশ্চিম মহান আল্লাহ পাক উনারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই মহান আল্লাহ পাক তিনি বিরাজমান। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৫)

اِنَّه بِكُلِّ شَىْءٍ مُحِيْطٌ.

অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।” (পবিত্র সূরা হা-মীম সিজদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ اللهَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ.

অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২০)

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ.

অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্তরের অন্তঃস্থলের খবরও জানেন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ ۖ وَنَـحْنُ اَقْرَبُ اِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيْدِ ◌

অর্থ : “আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।” (পবিত্র সূরা ক্বাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬)

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِ ۖ مَا يَكُوْنُ مِن نَّـجْوٰى ثَلَاثَةٍ اِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَـمْسَةٍ اِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا اَدْنٰـى مِن ذٰلِكَ وَلَا اَكْثَرَ اِلَّا هُوَ مَعَهُمْ اَيْنَ مَا كَانُوا ۖ ثُـمَّ يُنَبِّئُهُم بِـمَا عَمِلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ اِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ◌

অর্থ : “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি দেখেননি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান ও যমীনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা সবই অবগত রয়েছেন। এমনকি কোন স্থানে তিনজন ব্যক্তি একত্রিত হয়ে কোন গোপন পরামর্শ করলে মহান আল্লাহ পাক তিনি হন সেখানে চতুর্থজন, পাঁচজন হলে মহান আল্লাহ পাক তিনি হন তাদের ষষ্ঠ জন। এর চেয়ে কমবেশি যতজনই তারা হোক না কেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের সাথেই থাকেন তারা যেখানেই থাকুক। তারা যে কোন আমলই করুক মহান আল্লাহ পাক ক্বিয়ামতের দিন তাদের সমস্ত আমলের সংবাদ দিবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণরূপে অবগত রয়েছেন।” (পবিত্র সূরা মুজাদালা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

হযরত তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সময়ে একদিন রোমের রাজা একজন দূতকে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে তিনটি প্রশ্নসহ বাগদাদে পাঠালো।

দূত শহরে এসে খলীফাকে জানালো যে, সে রোমের রাজার কাছ থেকে তিনটি প্রশ্ন এনেছে এবং মুসলিমদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে তার উত্তর দেওয়ার জন্য।

খলীফা সকল আলিমদের একত্র হতে বললেন। রোমান দূত একটি উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে বললো, আমি এসেছি তিনটি প্রশ্ন নিয়ে যদি আপনারা এর উত্তর দিতে পারেন আমি এ স্থান ত্যাগ করবো প্রচুর সম্পদ রেখে যা আমাকে রোমের রাজা সঙ্গে দিয়ে দিয়েছে।

প্রশ্নগুলো হলো-

১) মহান আল্লাহ পাক উনার আগে কি ছিলো?

২) মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন দিকে মুখ করে আছেন?

৩) মহান আল্লাহ পাক তিনি এই মুহুর্তে কোন কাজে নিয়োজিত আছেন?

সবাই চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলেন; এর মধ্যে একটি ছোট বালক খলীফার কাছে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার জন্য অনুমতি চাইলেন; খলীফা উনাকে অনুমতি দিলো।

প্রশ্নোত্তর শুরু হলো :

বালক : তুমি কি গুনতে জানো?

দূত : হ্যাঁ।

বালক : তাহলে ১০ থেকে উল্টো দিকে গণনা করো।

দূত : (দূতটি গণনা শুরু করলো) ১০, ৯, ৮, ...... ১।

বালক : ১- এর আগে কি?

দূত : ১- এর আগে কিছুই নেই।

বালক : ঠিক আছে, গাণিতিক একের আগে যদি কিছুই না থাকে তাহলে তুমি কিভাবে আশা করো কি থাকবে এই ‘এক’-এর আগে যা নিশ্চিত সত্য, শাশ্বত, চিরস্থায়ী, সুস্পষ্ট।

বালকটির স্পষ্ট উত্তরে দূতটি হতবিহ্বল হয়ে গেল, কিছু অস্বীকার করতে পারল না।

দূত : তাহলে এখন বলুন, মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন দিকে মুখ করে আছেন?

বালক : একটি মোমবাতি আনো এবং তাতে আগুন জ্বালাও।

(মোমবাতি জ্বালানো হলো)

বালক : এখন বলো আগুনের শিখা কোন দিকে মুখ করে আছে?

দূত : এটাতো চতুর্দিকেই আলো ছড়াচ্ছে; এটা কোন এক দিকে নির্দিষ্ট নেই।

বালক : যদি এই বস্তু চতুর্দিকেই আলো ছড়াতে পারে; তাহলে তুমি কিভাবে এরকম অনুমান করতে পারো মহান আল্লাহ উনার সম্পর্কে যে তিনি নির্দিষ্ট কোন একটি দিকে মুখ করে থাকবেন, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর অধিপতি; সকল আলোর আলো।

(রোমান দূত বোকা বনে গেল। সে অবাক বিস্ময়ে অভিভূত হলো। এতটুকু একটি বালক তার সব প্রশ্নের এত সাবলীলভাবে উত্তর দিচ্ছেন যে, উনার যুক্তি-প্রমাণের কাছে কোনরূপ দ্বিমত পোষণ করা যাচ্ছে না। অবশেষে সে তার শেষ প্রশ্ন করার জন্য মুখ খুলতে গেল।)

বালক : থামুন। এখানে প্রশ্ন করছো তুমি আর জবাব দিচ্ছি আমি। আর যেহেতু উত্তরদাতা প্রশ্নকর্তা থেকে বড়। তাই তুমি নিচে নেমে আসো আর আমাকে উপরে আসন গ্রহণ করতে দাও ।

এরপর দূত নিচে নেমে এল এবং বালকটি উচু স্থানে আসন গ্রহন করার পর দূত তার শেষ প্রশ্নটি করল।

দূত : বল এখন আল্লাহ কি করছেন?

বালক : এই মুহুর্তে আল্লাহ তোমাকে উচু স্থান থেকে নিচে নামিয়ে অপমান করেছেন এবং আমাকে নিচু স্থান থেকে উচু স্থানে উঠিয়ে সম্মানিত করেছেন। আর এভাবেই যে মহান আল্লাহ উনার একত্ব বিশ্বাস করে তিনি তাকে উপরে উঠিয়ে সম্মানিত করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার একত্বে অবিশ্বাসীদেরকে অপদস্থ করেন।

অতঃপর রোমান দূতের আর কিছু বলার থাকল না, সেই স্থান ত্যাগ করা ছাড়া।

এই ছেলেটি পরবর্তীতে বড় হয়ে ইসলামের এক মহান জ্ঞানী পন্ডিত হিসেবে আবির্ভূত হন এবং তিনিই হলেন ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে, নিরাকার মহান আল্লাহ পাক তিনি জাত বা সত্ত্বাগতভাবে সম্মানিত আরশ পাকে সমাসীন। আর উনার ছিফত মুবারক বা গুণ-বৈশিষ্ট্য মুবারক দ্বারা তিনি সর্বত্র বিরাজমান।

আদর তাই ছিফত মুবারক বা গুণ-বৈশিষ্ট্য মুবারক দ্বারা সর্বত্র বিরাজমান মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কখনো বলেছেন তিনি পূর্ব-পশ্চিম সর্বত্র আছে, কখনো বলেছেন তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মধ্যে আছে কিংবা কখনো বলেছেন আমাদের খুব নিকটে আছেন। আবার তিনি কখনো বলেছেন তিনি দুই উদায়াচল ও দুই অন্তাচল উভয়ের মালিক। প্রত্যেকটি বিষয়ই উনার ছিফত মুবারক বা গুণ-বৈশিষ্ট্য মুবারক দ্বারা সর্বত্র বিরাজমানের বহিঃপ্রকাশ।

 

0 Comments: