৪৮২ নং - সুওয়াল :- নামাযের নিষিদ্ধ সময় যেমন সূর্য উদয়কালে, দ্বিপ্রহরের সময় এবং সূর্যাস্তের সময়, এ তিন সময় নামায পড়া নিষেধ হওয়ার কারণ ও তার রহস্য বা হাক্বিক্বত কি? জানতে ইচ্ছে হয়।
সুওয়াল :- নামাযের নিষিদ্ধ সময় যেমন সূর্য উদয়কালে, দ্বিপ্রহরের সময় এবং সূর্যাস্তের সময়, এ তিন সময় নামায পড়া নিষেধ হওয়ার কারণ ও তার রহস্য বা হাক্বিক্বত কি? জানতে ইচ্ছে হয়।


জাওয়াব :- কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, উল্লিখিত তিন সময় নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কারণস্বরূপ বলা হয়েছে, সূর্য পূজারীরা উল্লিখিত তিন সময় সূর্যকে সিজদা করে থাকে। আরো বলা হয়েছে, শুক্রবার দিন ব্যতীত দ্বিপ্রহরের সময় দোযখের আগুনকে তীব্র করা হয়। (হাশিয়ায়ে তাহতাবী, ফতহুল ক্বাদীর, শামী ইত্যাদি।)
উল্লেখ্য যে, শরীয়তের কোন হুকুম-আহকামের ব্যাপারে কোন কারণ তালাশ করা নিষিদ্ধ। শুধু এতটুকুই জানার জন্য কোশেশ করতে পারবে, যতটুকু মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বর্ণনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, একজন মহিলা তাবেয়ী হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, মেয়েরা অসুস্থ (হায়েজ) অবস্থায় রোযা ক্বাযা করে, কিন্তু নামায ক্বাযা করে না, এর কারণ কি? তার জাওয়াবে হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আমাদের কাছে এরূপই পৌঁছেছে এবং আমরা এরকমই আদিষ্ট হয়েছি। তাই আমরা রোযা কাযা করার আদেশ দেই, আর নামায ক্বাযা করার আদেশ দেইনা এবং আমরা কখনো এর কারণ তালাশ করিনি। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই এ সম্পর্কে ভালো জানেন। (মুসলিম শরীফ)
আবা-২৯
৪৮১ নং- সুওয়াল :- বিধর্মী শিক্ষককে সালাম দেয়া জায়েয কি? যদি জায়েয না হয় তবে সম্মানের খাতিতে তাদেরকে কি বলতে হবে?
সুওয়াল :- বিধর্মী শিক্ষককে সালাম দেয়া জায়েয কি? যদি জায়েয না হয় তবে সম্মানের খাতিরে তাদেরকে কি বলতে হবে?

জাওয়াব :- মুসলমান ব্যতীত কাউকে সালাম দেয়া জায়িয নেই। আর যদি কোথাও মুসলমান এবং বিধর্মী একইস্থানে দাঁড়ানো বসা বা শোয়া অবস্থায় থাকে, তখন সেখানে-
*


উচ্চারণ- আসসালামু আলা মানিত্তাবায়াল হুদু বলতে হবে।
অর্থ:- “যে হিদায়েতের উপর রয়েছে, তার প্রতি সালাম।”
শিক্ষক যদি বিধর্মী হয়, তবে তাকে সালাম দেয়া জায়িয নেই এবং তাদের ধর্মমতে আদাব বা নমস্কার ইত্যাদি কোনটি বলা জাযেয নেই। এমনকি যদি এ ধরনের সম্বোধনের প্রয়োজন না হয়, তবে কোন কিছুই বলার দরকার নেই। শুধু ভাল-মন্দ জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেই কথাবার্তা শুরু করতে হবে। আর যদি কোনো সম্বোধন না করলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অথবা ক্ষতি করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে যদি দূরবর্তী স্থান হয়, তখন হাত ইশারা করে মুখে বললে, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে হিদায়েত দান করুন। আর যদি নিকটবর্তী স্থান হয়, তখন হাত ইশরা করে উক্ত কথা মনে মনে বলবে। আর যদি স্পষ্ট করে না বললে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তখন এমন শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করে সম্বোধন করবে, যেটা কোনো বিধর্মীদের শেয়ার অর্থাৎ ধর্মীয় কোনো চিহ্ণ নয্ যেমন, আরবীতে আস সুবহুল খায়ের, ইংরেজিতে গুডমর্নিং, বাংলাতে সু-প্রভাত। (নাওয়াদেরুল ফতওয়া)
আবা-২৯
৪৮০ নং- সুওয়াল :- নামাযের বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার স্থলে যদি অন্য কিছু পড়ে ফেলে, যেমন সূরা ক্বিরায়াত বা দোয়া ইত্যাদি তাহলে কি সিজদাহে সাহু দিতে হবে?
সুওয়াল :- নামাযের বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার স্থলে যদি অন্য কিছু পড়ে ফেলে, যেমন সূরা ক্বিরায়াত বা দোয়া ইত্যাদি তাহলে কি সিজদাহে সাহু দিতে হবে?
জাওয়াব :- হ্যাঁ, নামাযের বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ারস্থলে যদি অন্য কিছু পড়ে এবং তা যদি তিন তাছবীহ কিংবা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব।)
আবা-২৯
৪৭৯ নং- সুওয়াল :- নামায যদি মাকরূহ তাহরীমীর সাথে অথবা মাকরূহে তানযীহীর সাথে আদায় করে, তবে সেই নামায কি দোহরাতে হবে?
সুওয়াল :- নামায যদি মাকরূহ তাহরীমীর সাথে অথবা মাকরূহে তানযীহীর সাথে আদায় করে, তবে সেই নামায কি দোহরাতে হবে?

জাওয়াব :- নামায মাকরূহে তাহরীমীর সাথে আদায় করে ফেললে নামায দোহরায়ে পড়া ওয়াজিব। আর মাকরূহে তানযীহীর সাথে আদায় করে ফেলে তা দোহরায়ে পড়া মোস্তাহাব। (আলমগীরী, শামী।)
আবা-২৯
৪৭৮ নং- সুওয়াল :- কেউ যদি নামাযরত অবস্থায় কোন দুঃসংবাদ শুনে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্ন ইলাহী রাজিউন পাঠ করে তবে কি তার নামায বাতিল হবে?

সুওয়াল :- কেউ যদি নামাযরত অবস্থায় কোন দুঃসংবাদ শুনে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্ন ইলাহী রাজিউন পাঠ করে তবে কি তার নামায বাতিল হবে?

জাওয়াব :- হ্যাঁ, নামাযরত অবস্থায় ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক কেউ যদি ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহী রাজিউন পাঠ করে, তাহলে তার নামায বাতিল হবে। (মারাকিউল ফালাহ)
আবা-২৯
৪৭৭নং- সুওয়াল :- কোন নামাযী ব্যক্তি যদি নামাযরত অবস্থায় ক্বিরয়াত পাঠের সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক পরে বা শুনে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করে, তবে কি তার নামায বাতিল হবে?
সুওয়াল :- কোন নামাযী ব্যক্তি যদি নামাযরত অবস্থায় ক্বিরয়াত পাঠের সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক পরে বা শুনে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করে, তবে কি তার নামায বাতিল হবে?
জাওয়াব :-  কোন নামাযী ব্যক্তি যদি নামাযরত অবস্থায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক পড়ে বা শুনে জাওয়াব দেয়ার খেয়ালে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করে, তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি উত্তর দেয়ার নিয়ম ব্যতীত এমনি বলে, তবে তার নামায বাতিল হবে না। (খুলাছাতুল ফতওয়া।)
আবা-২৯
৪৭৬ নং- সুওযাল : - একমাত্র পাঠা ও ষাঁড় ব্যতীত অন্য কোন প্রাণী জন্তু যেমন খাসী, বলদ ইত্যাদি কুরবানী দিয়ে কুরবানী হবে না। এটা কতটুকু শুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত, দলীলসহ বিস্তারিত জানতে চাই।
সুওযাল- আলী আকবর রেজভী ফতওয়া দিয়েছে যে, একমাত্র পাঠা ও ষাঁড় ব্যতীত অন্য কোন প্রাণী জন্তু যেমন খাসী, বলদ ইত্যাদি কুরবানী দিয়ে কুরবানী হবে না। এটা কতটুকু শুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত, দলীলসহ বিস্তারিত জানতে চাই।


জাওয়াব : হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো প্রাণীর কোনো এক অঙ্গের এক তৃতীয়াংশের বেশি নষ্ট হয়ে গেলে তা কুরবানী করা জাযিয নেই। যেমন কান, লেজ ইত্যাদি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেমন, দাঁত অর্ধেকের বেশি যদি থাকে, তাহলে তা দিয়ে কুরবানী দুসস্ত রয়েছে। এ উসূলের উপর ক্বিয়াস করে আলী আকবর রেজভী ফতওয়া দিয়েছে যে, খাসী ও বলদ ইত্যাদি এ ধরনের প্রাণী কুরাবানী করলে কুরবানী দুরস্ত হবে না। আর এ ক্বিয়াস অশুদ্ধ, নাজায়িয এবং হাদীছ শরীফ বিরোধী য়েছৈ। কেননা, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  নিজে খাসি কুরবানী করেছেন। যা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে,
*
অর্থ:- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক কুরবানীর দিন সাদা কালো মিশ্রিত রংয়ের খাসিকৃত দুটি দুম্বা কুরবানী করলেন।” (্আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ, দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত ও লুময়াত।)
কাজেই এ হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়, খাসি এবং খাসিকৃত প্রাণী কুরবানী করা জায়েয তো বটেই বরং খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। খাসি করার কারণে প্রাণীর মধ্যে সূরতান (প্রকাশ্য) যে ত্রুটি বা খুত হয়, সেটা শরয়ী ত্রুটি বা খুঁতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
অতএব, কোন ব্যক্তি যদি জানা সত্ত্বেও সুন্নতের বিরুদ্ধে ফতওয়া দেয়, তাহলে সে কুফরী করলো এবং সে কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ, মহান আল্লাহ পাক সূরা আহযাব-এর ৩৬ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
*
অর্থ:- “ কোনো মু’মিন পুরুষ-মহিলার জন্য জায়িয হবে না, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো বিষয়ে যে ফায়ছালা করেছেন, সে বিসয়ে বিরোধী কোনো মত পেশ করে। আর যে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাফরমানী করে, সে প্রকাশ্য গুমরাহে গুমরাহী। 
আর বিনা তাহক্বীক্বে ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। যে বিনা তাহক্বীক্বে ফতওয়া দিবে, তার ফতওয়ার কারণে যারা শরীয়তের খিলাফ আমল করবে, তাদের সকলের গুনাহ ফতওয়া দানকারীর উপর বর্তাবে। কেননা, হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে,
*
অর্থ:- “যাকে বিনা ইলমে ফতওয়া দেয়া হয়েছে তার গুনাহ, যে ফতওয়া দিয়েছে তার উপর বর্তাবে।” (আবু দাউদ শরীফ) আবা-২৯
৪৭৫ নং- সুওয়াল :-জুমার দ্বিতীয় আজানের জবাব দেয়া এবং আজানের দোয়া পড়া জায়েয হবে কি? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
সুওয়াল :- “মাসিক আত তাওহীদ নভেম্বর ১৯৯৫ ঈসায়ী সংখ্যায় নিম্নোক্ত সমস্যা ও তার সমাধান ছাপানো হয়-
সমস্যা:- জুমার দ্বিতীয় আজানের জবাব দেয়া এবং আজানের দোয়া পড়া জায়েয হবে কি? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
সমাধান:- জুমার খুতবার জন্য ইমাম প্রস্তুত হওয়ার পর কোন ধরনের নামাজ, তাসবীহ-তাহলীল ও কথাবার্তা বলা মাকরূহ, অপছন্দনীয়। সুতরাং মুক্তাদীর জন্য দ্বিতীয় আজানের উত্তর দেওয়া ও দোয়া পড়া মাকরূহ। (শামী, ফতওয়া দারুল উলুম।)
এখন আমার প্রশ্ন হলো- মাসিক আত তাওহীদের উপরোক্ত সমাধান কি শুদ্ধ হয়েছে? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহ সহকারে জানাবেন। কারণ, আমরা সানী আজানের জাওয়াব দিয়ে থাকি এবং মুনাজাতও করে থাকি। 

জাওয়াব :- মাসিক আত তাওহীদের উপরোক্ত সমাধান শুদ্ধ হয়নি। কেননা, জুমুয়ার সানী বা দ্বিতীয় আযান যা জুমুয়ার মূল আযান। যেটা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় ছিলো। আর তিনি স্বয়ং নিজেই এ আযানের জাওয়াব দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ ও নাসাঈ শরীফ-এ হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে রেওয়ায়েত রয়েছে যে, তিনি বলেন, আমি শুনেছি ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জুমুয়ার দিন মিম্বরের উপর বসে মুয়াজ্জিনের আযানের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও আযানের শব্দসমূহকে উচ্চারণ করেন এবং আযান শেষে বলেন, হে লোক সকল! আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জুমুয়ার দিন মিম্বরে বসা অবস্থায় মুয়াজ্জিনের আযান শ্রবণে এরূপ বলতে শুনেছি, যেরূপ তোমরা আমার থেকে শুনতে পেলে।
আর আযান ও ইক্বামতের দোয়ার ব্যাপারে বুখারী শরীফ-এ বর্ণিত আছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আযানের পরে দোয়া পাঠ করবেন, আমি তার জন্য শুপারিশ করবো।”
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পাঠ করা সুন্নত ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত।
এখানে উল্লেখ্য যে, তিবরানী শরীফ-এ একটি হাদীছ শরীফ-এর মাফহুম ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে বা বুঝতে ভুল করার কারণে শুধু মাসিত আত তাওহীদ-ই নয়, এ ধরণের আরো অনেক পত্রিকা ও কিতাবাদীতে জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পড়া মাকরূহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফটি হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
*
অর্থ:- “ইমাম যখন (খুৎবার জন্য) বের হয়, তখন নামায পড়া ও কথা বলা নিষেধ।”
এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, 
*
অর্থ:- “ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য হুজুরা থেকে বের হন, তখন কোন নামায নেই। আর যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বরে দাঁড়িয়ে যান, তখন কোন কথা নেই।”
অর্থাৎ ইমাম ছাহবে যখন খুৎবা দেয়ার জন্য হুজরা শরীফ থেকে বের হন, তখন কেউ যদি নামায শুরু করে, তবে তার পক্ষে এ অল্প সময়ের মধ্যে অর্থাৎ খুৎবা শুরু করার পূর্বে নামায শেষ করা সম্ভব নয়। তাই কোন নামায নেই এবং নামায শুরু করা মাকরূহ। আর যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বরে দাঁড়াবেন অর্থাৎ খুৎবা শুরু করবেন, তখন কোন কথাবার্তা বলা নিষেধ।
অতএব, খুৎবা শুরু করার পূর্বে দোয়া-দুরুদ, তাসবীহ-তাহলীল, দ্বীনি কথাবার্তা বলা জায়িয রয়েছে। অনুরূপ দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পড়া জায়িয বরং সুন্নত ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত। 
(দলীলসমূহ : বুখারী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মুয়াত্তা শরীফ, তিবরানী শরীফ, আইনী শরহে বুখারী, উমদাতুর রেওয়াইয়াহ, আলমগীরী, কাফী, সিরাজুল ওয়াহহাজ, তাহতাবী, হিদায়া, নূরুল হিদায়া, নূরুদ দেরায়াহ, এনায়া, নেহায়া, হামিয়ায়ে হিদায়া, শরহে বিকায়াহ ইত্যাতি।)
[বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১৮তম সংখ্যা পড়ুদন।]
আবা-২৯

আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-

৪৭৪ নং- সুওয়াল :-  নাবালিকা শিশু যারা, শিশু অবস্থাতেই মারা যায় তারা কি সকলেই বেহেশতে যাবে?
 মাসিক রহমানী পয়গামের নভেম্বর ১৯৯৫ ঈসায়ী ১ম বর্ষ ১১শ সংখ্যার নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসার জবাব সম্পর্কে দ্বিধান্বিত হয়েছি, এ ব্যাপারে সঠিক উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।
জিজ্ঞাসা : নাবালিকা শিশু যারা, শিশু অবস্থাতেই মারা যায় তারা কি সকলেই বেহেশতে যাবে?
জবাব : মুসলমানদের নাবালেগ সন্তানদের বেহেশতে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, তারা বেহেশতে যাবে। তবে এতটুকু শর্ত আছে যে, তার মাতা-পিতা মৃত্যু ঈমানের সাথে হতে হবে।


জাওয়াব  (বাইয়্যিনাত) : উক্ত জবাবের একাংশ শুদ্ধ হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমানদের নাবালেগ সন্তানদের বেহেশতে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। কিন্তু দ্বিতীয় অংশে শর্ত আরোপ করা হয়েছে যে, মাতা-পিতার মৃত্যু ঈমানের সাথে হতে হবে। এটা মোটেও শুদ্ধ নয় বরং পবিত্র কুরআন শরীফ-এর হুকুমের পরিপন্থী ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা বহির্ভুত।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
*
অর্থ :- “যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজের জন্যই পথভ্রষ্ট হয়। আর কেউ অন্যের (পাপের) বোঝা বহন করবে না।” (সূরা বনি ইসরাইল- ১৫)
এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে হযরতুল আল্লামা কাজি সানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
*
অর্থ :- “এ আয়াত শরীফ হতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, শিশুদের ও পাগলদের আযাব হবে না, যদিও তারা মুশরিকদের সন্তান হয়।” (তাফসীরে মাযহারী, ৩য় খ-)
হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে,
*
অর্থ:- “মুনামা বিন মুয়াবিয়া বিন মরিয়ম বলেন, আমার চাচা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সাইিিয়্যদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল! কে জান্নাতে যাবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নবীগণ জান্নাতী, শহীদগণ জান্নতী, সদ্য ভুমিষ্ট শিশু জান্নাতী আর জাহিলী যুগে জীবিত কবর দেয়া বালিকারা জান্নাতী।”
এ হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিহ তিনি ‘মুসনদে আহমদ’ কিতাবে বর্ননা করেছেন।
হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ আছে,
*
অর্থ:- “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি দীর্ঘ স্বপ্নের হাদীছ শরীফ হযরত সামুরা বিন জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি গাছের নিচে এক বৃদ্ধের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, আর তার চতুর্পার্শ্বে ছোট শিশুরা ছিলো। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি হচ্ছেন হযর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আর এরা হচ্ছে মুসলমানরে সন্তান, তিনি বললেন, হ্যাঁ- মুশরিকদের সন্তানও।” (আছ ছহিহুল বুখারী)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদী শরীফ-এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে, মাতা-পিতার ঈমানের সাতে মুত্যু হওয়া ও ঈমানহীন অবস্থায় মৃত্যু হওয়া সন্তানের জান্নাতী না হওয়া নির্ভর করে না।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক আরো বলেন,
*
অর্থ: - “প্রত্যেক ব্যক্তি যা উপার্জন করে (গুনাহ করে) তা নিজের জন্যই করে, কেউ অন্যের বোঝা বহন করবে না।” (সূরা আনআম/১৬৪)
এর থেকে বুঝা যাচ্ছে, রাহমানী পয়গামের উক্ত শর্তযুক্ত জবাব মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের পরিপন্থী। (তাফসীরুল কবীর, রুহুল মা’আনী, ইবনে কাসীর, দুররুল মনসুর, আহকামুল কুরআন কুরতুবি, রুহুল বয়ান, আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস, তাফসীরুল মাযহারী, বুখারী শরীফ, ইবনু হিব্বান, মুস্তাদারিকে হাকিম, উমদাতুল ক্বারি ও ফতহুল বারী ইত্যাদি।)
আবা-২৯
৪৭৩ নং- সুওয়াল :- খানার প্রারম্ভে এবং শেষে লবণ ব্যবহার সুন্নত না মুস্তাহাব, জানতে আগ্রহী।
সুওয়াল : মাসিক মুঈনুল ইসলাম অক্টোবর/৯৫ ঈসায়ী সংখ্যায় নিম্ন বর্ণিত জিজ্ঞাসা ও তার সমাধান ছাপানো হয়-
জিজ্ঞাসা : খানার প্রারম্ভে এবং শেষে লবণ ব্যবহার সুন্নত না মুস্তাহাব, জানতে আগ্রহী। 
সমাধান : খানার শুরু ও শেষে লবণ ব্যবহার সুন্নত নয়, তবে দুর্বল বর্ণনা মতে শারীরিক রোগ নিরাময়ে এর যথেষ্ট অবদান রয়েছে বিধায় লবন ব্যবহার মুস্তাহাব হতে পারে। (ইমদাদুল ফতওয়া, ৪/১১২)
এখন আমার প্রশ্ন হলো, উপরোক্ত জিজ্ঞাসার সমাধান কতটুকু সঠিক হয়েছে, তা জানায়ে সন্দেহ দূরীভূত করবেন। কারণ, আমরা জানি যে, খাওয়ার শুরুতে ও শেষে লবন খাওয়া সুন্নত?

জাওয়াব : মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার উক্ত জিজ্ঞাসার সমাধান শুদ্ধ হয়নি। মূলত তারা অজ্ঞতার কারণে এবং সুন্নতের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছে যে, লবন ব্যবহার সুন্নত নয়। তবে ফায়দার জন্য মোস্তহাব হতে পারে। অথচ ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, খাওয়ার শুরুতে ও শেষে লবন খাওয়া সুন্নত অর্থাৎ সুন্নতে যাওয়দা। খাওয়ার আগে পরে লবন খাওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নয়, অর্থাৎ খাওয়ার আগে পরে লবন না খেলে গুনাহ হবে না। তবে অবশ্যই সুন্নতের খেলাফ হবে। তারা যে বলেছে, লবন ব্যবহার করা মোস্তাহাব হতে পারে, মোস্তাহাব তো অবশ্যই, বরং সুন্নতে যায়েদার অন্তর্ভুক্ত। কাজেই তাদের উক্ত সমাধান শুধু ভুলই নয়, বরং জনসমাজে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কারণও বটে। (খুলাছাতুল ফতওয়া ও জরুরী ফতওয়া)
আবা-২৯
৪৭২ নং- সুওয়াল :-এক ব্যক্তি বললেন, নবী করীম (সা:) বলেছেন, বেতের নামায বাদ যে দুই রাকাত নফল নামায পড়া হয়, সেই নামায বসে পড়লে প্রতি রাকাতে একশত রাকাতের ছওয়াব পাওয়া যায়। আবার অন্য একজন বললেন, দাঁড়িয়ে নামায পড়ার ছওয়াব বেশি, কোনটা ঠিক?
সুওয়াল : মাসিক মদীনা নভেম্বর/৯৫ সংখ্যায় নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়-
প্রশ্ন :  এক ব্যক্তি বললেন, নবী করীম (সা:) বলেছেন, বেতের নামায বাদ যে দুই রাকাত নফল নামায পড়া হয়, সেই নামায বসে পড়লে প্রতি রাকাতে একশত রাকাতের ছওয়াব পাওয়া যায়। আবার অন্য একজন বললেন, দাঁড়িয়ে নামায পড়ার ছওয়াব বেশি, কোনটা ঠিক?

উত্তর : সব নামাযই বসে পড়ার চাইতে দাঁড়িয়ে পড়াতে ছওয়াব বেশি। রসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “ .... এটুকু বললেই তো হবে না, কখন কি উপলক্ষে বলেছেন, কোন কিতাবে তার প্রমাণ আছে এটাও অবশ্যই বলতে হবে।”
মাসিক মদীনার উপরোক্ত উত্তর কতটুকু সঠিক হয়েছে, তা জানতে আগ্রহী।


জাওয়াব : মাসিক মদীনার সম্পাদক যে বলেছে, সব নামাযই বসে পড়ার চাইতে দাঁড়িয়ে পড়াতে ছওয়াব বেশি, তার একথা শুদ্ধ হয়নি। কেননা, হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে,
*
অর্থ: - “হযরত উম্মে সালমা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত রয়েছে, নিশ্চয়ই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিতরের নামাযের পর দু’রাকায়াত নামায সংক্ষিপ্তভাবে বসে আদায় করতেন।”
একারণে বিতরের পরে দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়া সুন্নত এবং পূর্ণ ছওয়াব ও ফযীলতের কারণ। এছাড়া বাকি অন্যান্য নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব আর বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব।
বিতরের পরের এ দু’রাকায়াত নামায যেহেতু হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করেছিলেন, তাই এটাকে হালক্বী নফলও বলা হয়। (ইবনে মাযাহ, আহমদ, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, আকাবের কা রমাযান)
আবা-২৯
৪৭১ নং- সুওয়াল : আমাদের খুলনা এলাকায় একটি মহিলা মসজিদ হওয়ার কথা ছিলো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর সৌজন্যে গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ-এর তরফ হতে হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে বিলি করা হয়েছিলো, যা আমরাও পেয়েছিলাম। অবশ্য এ হ্যান্ডবিলের কারণে অনেক মহিলা জামায়াতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং অনেক জায়গায় মহিলা জামায়াত অনুষ্ঠিত হতো, সে জামায়াতও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
সুওয়াল : আমাদের খুলনা এলাকায় একটি মহিলা মসজিদ হওয়ার কথা ছিলো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর সৌজন্যে গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ-এর তরফ হতে হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে বিলি করা হয়েছিলো, যা আমরাও পেয়েছিলাম। অবশ্য এ হ্যান্ডবিলের কারণে অনেক মহিলা জামায়াতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং অনেক জায়গায় মহিলা জামায়াত অনুষ্ঠিত হতো, সে জামায়াতও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। 
এখন আমাদের আরজু হচ্ছে, আপনারা যদি সেই হ্যান্ডবিলটি আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ হুবহু ছাপিয়ে দিতেন, তাহলে আমরা জরুরতে সেখান থেকে নিয়ে হুবহু ছাপিয়ে প্রচার করতে পারতাম এ উদ্দেশ্যে যে, যাতে এলাকার মা-বোনেরা এবং দেশ-বিদেশের নারী সমাজ মাকরূহ তাহরীমী ও হারাম গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারেন।


জাওয়াব : আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর  সৌজন্যে গবেষনা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ-এর তরফ হতে ‘মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী’- এ শিরোনামে যে হ্যান্ডবিলটি প্রকাশ করেছিলাম, তা শুধু কোনো এলাকা বিশেষের জন্য নয়। বরং সমগ্র বিশ্বের মুসলিম নারীদেরকে মাকরূহ তাহরীমী গুনাহ থেকে এবং মসজিদে যাওয়ার কারণে যে বেপর্দা হয়, সে হারাম গুনাহ থেকে হিফাজতের জন্য। আর মহিলাদের জন্য পৃথক মসজিদে তৈরী করা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ, এ গুনাহ থেকেও বেঁচে থাকার জন্য উক্ত হ্যান্ডবিলটি দেশ বিদেশে বিলি করেছিলাম। শুধু তাই নয়, এরপরেও আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ১১তম সংখ্যায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করেছি। এখন আপনাদের আরজু মোতাবেক উক্ত হ্যান্ডবিলটি হুবহু নিম্নে ছাপিয়ে দিলাম-

নারায়ে তাকবীর   ৭৮৬   আল্লাহু আকবার
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী
(পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া ও ঈদের নামায)

মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ-এর গবেষনা কেন্দ্রের তরফ থেকে এ লিফলেট/হ্যান্ডবিল প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ অসংখ্য শুকরিয়া। এর পূর্বেও আমরা অনুরূপভাবে ‘তাহাজ্জুদের নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ’ সম্বন্ধে লিফলেট প্রকাশ করেছিলাম। তা ছাড়া আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার মাধ্যমে সব সময় ইখতেলাফী বিষয়ের উপর ফতওয়া, মাসয়ালা-মাসায়িল প্রকাশ করে থাকি। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই অর্থাৎ এর দ্বারা সমস্ত ইখতিলাফের অবসানের মাধ্যমে সকলে শরীয়তী ফায়সালা অবগত হোক এবং সাথে সাথে সমস্ত বিদয়াত, বেশরা, হারাম তথা নাজায়িয কাজের মূলোৎপাটনের দ্বারা দ্বীনে হক্ব জিন্দা হোক।
আজকাল আমাদের দেশের কোনো কোনো স্থানে মহিলাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযসহ ঈদ ও জুমুয়ার নামায মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করতে দেখা যায়। অথচ তা আমাদের হানাফী মাযহাব মোতাবিক মাকরূহ তাহরীমী।

মহিলারা যদিও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার সময় মসজিদে গিয়ে  জামায়াতে নামায পড়তেন, তা ছিলো প্রথম যুগের ইসলামের বিশেষ ব্যবস্থা। 
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই বলেছেন, যা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে যে, মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে একাকি নামায পড়া সর্বোত্তম।
আর মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়া ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা কোনটাই নয়। অথচ মহিলাদের জন্য পর্দা করা ফরযে আইন।

মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশের (পর্দার) ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ (মহিলাদের একাকি নামায পড়ার উৎসাহ)Ñএর হাদীছ শরীফ (মহিলাদের একাকী নামায পড়ার উৎসাহ)-এর প্রতি লক্ষ্য করে আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম ইজতিহাদ করত মহিলাদেরকে মসজিদে এসে জামায়াতে নামায পড়তে নিষেধ করেন। তখন কিছু সংখ্যক মহিলা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার নিকট এসে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম মহিলাদেরকে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।
তখন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,
*
অর্থ:- “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি মহিলাদেরকে বর্তমান অবস্থান দেখতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি (মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে) নিষেধ করতেন।” (বুখারী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব ‘দুররুল মুখতার’-এর শরাহ ‘গায়াতুল আওতার’-এ বর্ণনা নিম্নরুপ :
*
অর্থ:- “মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমুয়া ও ঈদের নামাযের জামায়াতের উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী, যদিও প্রাপ্তা বয়স্কা ও বৃদ্ধা হোক, ফিতনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায়। তাই পরবর্তী ফক্বীহগণ ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের জামায়াতের জন্য বের হওয়া মাকরূহ তাহরীমী। অনুরূপভাবে তাহতাবী কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে।” (গায়াতুল আওতার ১ম জি:, ২৬৩ পৃষ্ঠা।)
তদ্রƒপ ‘ফতওয়ায়ে রহিমীয়া’ কিতাবে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহর কিতাব ‘দুররুল মুখতার’-এর বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়-
*
অর্থা:- “ফক্বীহগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামায়াত হোক অথবা ঈদ ও জুমুয়ার নামাযের জামায়াত হোক। ( যেমন, দুররুল মুখতার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে) মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাযসহ ঈদ ও জুমুয়ার নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ তাহরীমী।” (দুররুল মুখতার, ১ম জি:, পৃষ্ঠা ৩৮৩)
ফতওয়ার কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় এখানে মাত্র কয়েকটি কিতাবের ইবারত পেশ করা হলো, এগুলো ছাড়াও নিম্নোক্ত সমস্ত কিতাবসমূহে মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী বলে উল্লেখ আছে। 

যেমন, 
(১) উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী শরীফ, 
(২) ফায়জুল বারী শরহে বুখারী শরীফ, 
(৩) ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম, 
(৪) বযলুল মাযহুদ শরহে আবূ দাউদ, 
(৫) মিরকাত শরহে মিশকাত, 
(৬) আশয়াতুল লুময়াত, 
(৭) মোহাযেরে হক্ব, 
(৮) দরসে তিরমীযী, 
(৯) মায়ারিফে মাদানিয়া, 
(১০) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, 
(১১) তাতারখানিয়া, 
(১২) বাদায়েউস সানায়ে, 
(১৩) বাহরুর রায়েক, 
(১৪) আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, 
(১৫) আইনী শরহে হিদায়া, 
(১৬) শামী, 
(১৭) রদ্দুল মোহতার,
(১৮) মারাকিউল ফালাহ, 
(১৯) খোলাছাতুল ফতওয়া, 
(২০) শরহে বেকায়া, 
(২১) ইলাউস সুনান, 
(২২) হিদায়া, 
(২৩) আইনুল হিদায়া, 
(২৪) কুদুরী, 
(২৫) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, 
(২৬) আহসানুল ফতওয়া, 
(২৭) মাদানুল হাকায়েক, 
(২৮) আহসানুল মাসায়েল, 
(২৯) কিফায়াতুল মুফতী, 
(৩০) ফতওয়ায়ে রহীমীয়া, 
৩১) ইমদাদুল আহকাম, 
(৩২) মাশারিকুল আনওয়ার, 
(৩৩) ফতওয়ায়ে নঈমিয়া ইত্যাদি।

শুধু এতটুকুই নয়, বরং এর উপর সমস্ত ইমাম মুজতাহিদগণ একমত হয়েছেন। যেমন, ‘ইমদাদুল আহকাম’ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
*
অর্থ:- “মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” (ইমদাদুল আহকাম ১ম জি:, পৃষ্ঠা ৪২৫)
হাদীছ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
*
অর্থ:- “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত এবং হিদায়েত প্রাপ্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সুন্নত অবশ্যই পালনীয়।” (মিশকাত শরীফ)
সুতরাং যেখানে আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার ইজতিহাদ এবং হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার সমর্থন রয়েছে এবং যার উপর সমস্ত উলামায়ে মুতাআখখিরীনগণ উনাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমুয়া ও ঈদের নামায (ঈদগাহে হলেও) পড়া মাকরূহ তাহরীমী। সেখানে মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয বলা বা কার্যত: উৎসাহ প্রদান কর সম্পূর্ণ জিহালত, বিভ্রান্তিকর, বানোয়াট ও নফসানিয়াত, যা সম্পূর্ণই শরীয়ত বিরোধী কাজ।

 যেখানে জামায়াতে জাওয়াই মাকরূহ তাহরীমী সেখানে মহিলাদের জন্য আলাদাভাবে মসজিদ তৈরি করা জায়িয হয় কি করে? মূলত মহিলাদের জন্য আলাদা বা পৃথক কোনো মসজিদ তৈরি করাও সম্পূর্ণ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। কেননা, খাইরুল কুরুনে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এমনকি তৎপরবর্তী সময়েও মহিলাদের জন্য আলাদা বা পৃথক কোনো মসজিদ তৈরি হয়েছে বলে কোনো দলীল কেউ পেশ করতে পারবে না। কাজেই মহিলাদের জন্য আলাদা বা পৃথক মসজিদ তৈরি করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
*
অর্থ:- “প্রত্যেক বিদয়াতই (সাইয়্যিয়াহ) গুমরাহী ও প্রত্যেক গুমরাহ লোক জাহান্নামে যাবে।” (মিশকাত শরীফ)
অনেকে বলে থাকেন যে, অতীতে বা বর্তমানে অনেক আলেম নামধারী ব্যক্তিবর্গ মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া জায়িয বলেন এবং কার্য়ত উৎসাহ প্রদান করে থাকেন তাদের ফায়ছালা কি?
এর জবাবে সংক্ষেপে এতটুকু বললেই চলে যে, ইসলামী শরীয়তে কোনো ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোককে দলীল বা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র বা অধিকাংশ লোক কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের উপর প্রতিষ্ঠিত না থাকবে। অর্থাৎ যে কেউ ইসলামের খিদমত করলেই যে সে ইসলামের আদর্শ বা দলীল হবে তা নয়, বরং যে বিষয়ে ফতওয়া দিবে সে বিষয়ে তাকে দলীল পেশ করতে হেব। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
*
অর্থ:- “যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে দলীল পেশ করো।”
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের প্রত্যেককে সকল শরীয়ত বিরোধী ও বিদয়াত কাজ থেকে হিফাযত করুন এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের উপর পরিপূর্ণ কায়িম থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন!
(বি: দ্র: ফতওয়ার কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় সংক্ষিপ্ত করা হলো। প্রয়োজনে আরো বিস্তারিতভাবে ও অধিক দলীল প্রমাণসহ ফতওয়া দেয়ার সামর্থ আমরা রাখি ইনশাআল্লাহ!)
[এ প্রসঙ্গে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ১১তম সংখ্যায় অসংখ্য ও অকাট্য দলীল দ্বারা বিস্তারিত ফতওয়া প্রকাশ করা হয়েছে।] আবা-২৯

মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমীর ফতওয়া- ১. https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_840.html




 

৪৭০ নং- সুওয়াল - উমরি ক্বাজা নামায আদায় করার নিয়ম কি?
সুওয়াল - উমরি ক্বাজা নামায আদায় করার নিয়ম কি?
জাওয়াব - প্রত্যেক ওয়াক্তের ফরজ ও বিত্রসহ মোট বিশ রাকয়াতের দৈনিক ক্বাজা আদায় করতে হয়। এই বলে নিয়ত করবে- আমি আমার অমুক ওয়াক্তের ক্বাজা ফরজগুলির প্রথমটি আদায় করছি। অনুরূপ পর্যায়ক্রমে আদায় করবে। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া) । 
আবা-২৮
৪৬৯ নং- সুওয়াল - সুব্হে সাদিকের পরে ফজরের নামাযের পূর্বে কোন নফল নামায পড়া জায়েয কিনা?
সুওয়াল - সুব্হে সাদিকের পরে ফজরের নামাযের পূর্বে কোন নফল নামায পড়া জায়েয কিনা?

জাওয়াব - জায়েয নয়, মাকরূহে তাহ্রীমি। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া) আবা-২৮

৪৬৮ নং- সুওয়াল - জুমুয়ার নামায আদায় করে না এরূপ ইমামের পিছনে ওয়াক্তিয়া নামাযের ইক্তেদা করা জায়েয হবে কিনা?
সুওয়াল - জুমুয়ার নামায আদায় করে না এরূপ ইমামের পিছনে ওয়াক্তিয়া নামাযের ইক্তেদা করা জায়েয হবে কিনা? 
জাওয়াব - যে স্থানে জুমুয়া ফরজ, এমন স্থানে যারা জুমুয়া না পড়ে, তারা ফাসেক, তাদের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমি। কোনভাবে পড়ে ফেললে উক্ত নামায দোহ্রায়ে পড়বে। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
আবা-২৮
৪৬৭ নং- সুওয়াল - কোন মুসলমান দ্বীনি ইল্ম শিক্ষার কেন্দ্র বা কোন মসজিদ মাদ্রাসার বিরোধীতা করলে তার পরিণাম কি হবে?
সুওয়াল - কোন মুসলমান দ্বীনি ইল্ম শিক্ষার কেন্দ্র বা কোন মসজিদ মাদ্রাসার বিরোধীতা করলে তার পরিণাম কি হবে?

জাওয়াব - কঠিন গুণাহ্গার হবে, ইল্ম আমলের ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলে ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। (ফতওয়ায়ে বাজ্জাজিয়া, আশবাহু ওয়ান্নাযায়ের ও ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
আবা-২৮
৪৬৬ নং- সুওয়াল - অনেক মসজিদের মিম্বরে তিনের অধিক সিঁড়ি দেখা যায়। ইহা কি সুন্নত? কোন্ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে খুৎবা দেয়া সুন্নত?
সুওয়াল - অনেক মসজিদের মিম্বরে তিনের অধিক সিঁড়ি দেখা যায়। ইহা কি সুন্নত? কোন্ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে খুৎবা দেয়া সুন্নত? 

জাওয়াব - মসজিদের মিম্বর তিন সিঁড়ি বিশিষ্ট হওয়াটাই সুন্নত। তার বেশী হওয়াটা সুন্নতের খেলাফ। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় মিম্বরে তিন সিঁড়ি ছিল এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজে প্রথম সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। অতঃপর হযরত আবু বকর সিদ্দিক আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আদব ও তা’যিমের কারণে তিনি দ্বিতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিয়েছেন। 

পরবর্তীতে হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তৃতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি খুৎবা দিতেন। এরপর হযরত ওসমান  আলাইহিস সালাম, হযরত আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর আলাইহিস সালাম উনাদের অনুসরণের জন্য প্রথম খুৎবা দ্বিতীয় সিঁড়িতে ও দ্বিতীয় খুৎবা তৃতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আদায় করেন। উনাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করায়, হযরত ওসমান আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “যদি আমিও উনাদের সম্মানার্থে চতুর্থ আর এক সিঁড়ি বৃদ্ধি করি, তাহলে এভাবে বৃদ্ধি করতে থাকলে দেখা যাবে, কোন এক সময় মসজিদ থেকে মিম্বর বড় হবে এবং মুসল্লিদের স্থান সংকীর্ণ হয়ে যাবে।

 তাই আমি হযরত আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর ফারুক আলাইহিস সালাম উনাদের অনুসরণ করে পর্যায়ক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিয়েছি।” পরবর্তীতে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও ইমাম মুজতাহিদগণ এটাই অনুসরণ করেছেন। কাজেই মিম্বর তিন সিঁড়িবিশিষ্ট হওয়াই সুন্নাত ও প্রথম খুৎবা দ্বিতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, আর দ্বিতীয় খুৎবা তৃতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দেয়াই সুন্নত ও আফজল। তবে যদি কেউ দ্বিতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে উভয় খুৎবা অথবা তৃতীয় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে উভয় খুৎবা পাঠ করে, তবে সেটাও হযরত খোলাফা-ই-রাশেদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত হবে। কিন্তু প্রথম সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে খুৎবা দেয়া আদবের খেলাফ। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
আবা-২৮
৪৬৫ নং- সুওয়াল - কোন ইমাম দু’এক অঙ্গুলি পরিমাণ দাড়ি রাখে, লম্বাজামা পরিধান করে না, তার পিছনে এক্তেদা করা জায়েয হবে কি?
সুওয়াল - কোন ইমাম দু’এক অঙ্গুলি পরিমাণ দাড়ি রাখে, লম্বাজামা পরিধান করে না, তার পিছনে এক্তেদা করা জায়েয হবে কি? 
জাওয়াব - একমুষ্টি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখা ফরজ, এর কমে দাড়ি রাখা ফাসেকী। আর ফাসেকের পিছনের নামায পড়া মাকরূহে তাহ্রীমি। (বোখারী শরীফ, বাহ্রুর রায়েক, শরাম্বালালিয়া, তাবয়ীনুল হাক্বায়েক, ফতহুল ক্বাদীর, গায়াতুল আওতার, ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
আবা-২৮
৪৬৪ নং- সুওয়ালঃ জুমুয়ার আযানের আওয়াজ ছোট বড় হবে কি? দ্বিতীয় আযান কোথায় দিবে?

সুওয়ালঃ জুমুয়ার আযানের আওয়াজ ছোট বড় হবে কি? দ্বিতীয় আযান কোথায় দিবে?

জাওয়াব - উভয় আযান একই প্রকার উচ্চ আওয়াজে দিতে হবে। দ্বিতীয় আযান ইমামের সামনে দিতে হবে। (আইনি শরহে বোখারী, আহ্কামুল কুরআন, রুহুল মায়ানী, সিরাজুম মুনীর, ফতওয়ায়ে আমিনিয়া) বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাত পড়ুন) 
আবা-২৮

আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-

৪৬১ নং- সুওয়াল - সুব্হে সাদিকের পূর্বে ফজর নামাযের আযান দিলে তা গ্রহনযোগ্য হবে কি?
সুওয়াল - সুব্হে সাদিকের পূর্বে ফজর নামাযের আযান দিলে তা গ্রহনযোগ্য হবে কি?
জাওয়াব - হানাফী মায্হাব মতে উক্ত আজান গ্রহণযোগ্য নয়, তবে ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি মতে উক্ত আজান গ্রহণযোগ্য। কিন্তু অন্যন্য নামাযের জন্য ওয়াক্তের পূর্বে আজান দিলে তা গ্রহণীয় হবেনা। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
আবা-২৮
৪৬০ নং- সুওয়াল - বিড়ি-সিগারেট খাওয়ার জন্য কোন লোককে দিয়াশলাই দেয়া যাবে কিনা?
সুওয়াল - বিড়ি-সিগারেট খাওয়ার জন্য কোন লোককে দিয়াশলাই দেয়া যাবে কিনা?
জাওয়াব - যাবে না। কারণ মাকরূহ্ কাজে সহায়তা করাও মাকরূহ্। (সমূহ ফিকাহ্র কিতাব)
আবা-২৮
৪৫৯ নং- সুওয়াল - ইংরেজী ও বাংলা সংবাদপত্র দ্বারা শিশুর মলমূত্র পরিস্কার করা বা ওটা দ্বারা জুতা জড়ায়ে বা মুড়িয়ে রাখা যাবে কি?
সুওয়াল - ইংরেজী ও বাংলা সংবাদপত্র দ্বারা শিশুর মলমূত্র পরিস্কার করা বা ওটা দ্বারা জুতা জড়ায়ে বা মুড়িয়ে রাখা যাবে কি?

জাওয়াব - এতে কাগজের অসম্মান করা হয়, কাজেই এটা করা ঠিক নয়। এরূপ কাগজে কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ লেখা হয় বিধায় ঐরূপ কাগজের অসম্মান করা নিষিদ্ধ। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া) 
আবা-২৮
৪৫৮ নং- সুওয়াল - টিকটিকি জাতীয় এক প্রকার প্রাণী আছে, তা মারলে নাকি সওয়াব হয়, এটা কি সত্য?
সুওয়াল - টিকটিকি জাতীয় এক প্রকার প্রাণী আছে, তা মারলে নাকি সওয়াব হয়, এটা কি সত্য? 

জাওয়াব - গিরগিটি যাকে আরবীতে -- বলা হয়, এটা হিংস্র জীব, ওটা মারলে সাওয়াব হয়, কিন্তু টিকটিকি যাকে জেটি বলা হয়, এটা টিক টিক শব্দ করে, সেটা মারা জায়েয নেই বরং গুণাহের কারণ। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)

আবা-২৮

৪৫৭ নং- সুওয়াল - সুতি মোযার উপর মসেহ্ করা জায়েয হবে কি?
সুওয়াল - সুতি মোযার উপর মসেহ্ করা জায়েয হবে কি?
জাওয়াব - জায়েয নেই, চামড়া, রাবার ইত্যাদি মোজাতে মাসেহ্ জায়েয। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)
আবা-২৮
৪৫৬ নং- সুওয়াল - বয়স্ক দেবরের সাথে তার ভাইয়ের স্ত্রী বা বৌ-এর সাথে দেখা দেওয়া জায়েয কিনা?
সুওয়াল - বয়স্ক দেবরের সাথে তার ভাইয়ের স্ত্রী বা বৌ-এর সাথে দেখা দেওয়া জায়েয কিনা?

জাওয়াব - না, জায়েয নেই, বরং সম্পূর্ণই হারাম। হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-
ارايت الحمرى
অর্থঃ- “হে আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দেবরের সাথে দেখা দেওয়া যাবে কি? উত্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- 
الحموى الموت
অর্থঃ- দেবর মৃত্যুর ন্যায় অর্থাৎ দেবরকে মৃত্যুর ন্যায় ভয় কর। (আহ্কামুল কুরআন, আবু বকর জাসসাম, কুরতুবী, বোখারী, মুসলিম এবং সমূহ ফিক্বাহের কিতাবসমূহ)
আবা-২৮
৪৫৫ নং- সুওয়াল - নামায পড়া অবস্থায় চক্ষু বন্ধ করে রাখলে নামায হবে কি?
সুওয়াল - নামায পড়া অবস্থায় চক্ষু বন্ধ করে রাখলে নামায হবে কি? 
জাওয়াব - চক্ষু বন্ধ করে নামায আদায় করা মাকরূহ্, কিন্তু মন ঠিক করার জন্য এরূপ করলে মাকরূহ্ হবে না। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া) আবা-২৮