গবেষণা কেন্দ্র
মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
সমস্ত প্রশংসা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেস
রহমতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়ার জামায়াতের একমাত্র দলীল
ভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া অঙ্গুরী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া
মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে
সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ফরয নামাযের পর মু মুনাজাত ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইনজেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে
উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া, দাড়ী ও গোফের শরয়ী আহকাম ও তার
সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া প্রকাশ করার পর (১৫তম) ফতওয়া হিসেবে আযান ও ছানী আান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহকাম
এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে
অসংখ্য শুকরিয়া।]
ফতওয়া দানে তাক্বওয়ার
গুরুত্ব:
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য
যে, গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া
শরীফের পক্ষ থেকে- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” -এর ৯ম সংখ্যায় “জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়ার ভূমিকায় ছানী আযান সম্পর্কে
সংক্ষিপ্ত অথচ দলীল ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছিল। যার ফলে প্রায় সকলেই উক্ত ফতওয়া দ্বিধাহীন
চিত্তে মেনে নেয়, সাথে সাথে যারা
এতদিন বিভ্রান্তির কারণে মসজিদের বাইরে ছানী আযান দিত, তাদের মধ্যে যারা হক্ব তালাশী তারা অনেকেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে ছানী আযান সম্পর্কিত
নির্ভরযোগ্য অকাট্য দলীল- প্রমাণাদি পাওয়ার পর ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়া শুরু করে।
তবে পাঠকদের
পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয় যেন ছানী আযান সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে
পৃথকভাবে ও বিস্তরিত দলীল-আদিল্লাসহ ফতওয়া প্রদান করা হয়। তাতে আশা করা যায় “ছানী আযান” সম্পর্কিত ফিৎনা সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হবে। শুধু তাই নয় সাথে সাথে কিছু সংখ্যক
পাঠকের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হয় ছানী আযান সম্পর্কিত কতিপয় সুওয়াল।
মূলত: পাঠকদেরর
বিশেষ অনুরোধ ও উত্থাপিত সুওয়াল সমূহের প্রেক্ষিতে এবং মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাযতের
লক্ষ্যে তথা আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি
হাছিলের উদ্দেশ্যে ছানী আযান সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে পুনরায় বিস্তারিত ফতওয়া
পেশ করা হলো।
স্মর্তব্য যে, সমাজের কিছু লোক “কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহাম” অর্থাৎ দ্বীন সম্পর্কত জ্ঞান ও বুঝের স্বল্পতার কারণে যেরূপ নানাবিধ ফিৎনা সৃষ্টি
করছে, তদ্রƒপ “ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়া জায়িয
নেই” বলে সমাজে ফিৎনা সৃষ্টির পায়তারা চালাচ্ছে। অথচ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ফতওয়া তারা
আজো খ-ন করতে পারেনি বা তার বিপক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য দলীলও পেশ করতে পারেনি। এরপরও
তারা ছানী আযান নিয়ে ফিৎনা করছে। বস্তুত: স্পষ্টত:ই বুঝা যাচ্ছে যে, ফিৎনা করাই মূলত: তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। অথচ কুরআন শরীফ
ও হাদীছ শরীফের অসংখ্য স্থানে ফিৎনা ও ফিৎনাকারীদের সম্পর্কে কঠোর বাণী উচ্চারিত হয়েছে।
যেমন- এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন, ولا نفسدوا فى الارض. অর্থ:- “তোমরা যমীনে ফাসাদ (ফিৎনা) সৃষ্টি করো না।” (সূরা বাক্বারা/১১)
অন্য আয়াত শরীফে
আল্লাহ পাক বলেন,
الفتنة
اشد من القتل وفى ايات اخرى اكبر من القتل.
অর্থাৎ:- “ফিৎনা-ফাসাদ হত্যার চেয়েও শক্ত। অন্য আয়াত শরীফে বলা
হয়েছে, হত্যার চেয়ে বড় (গুণাহ)।”
উপরোক্ত আয়াত
শরীফসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সমাজে ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা জঘণ্যতম অপরাধ। তাছাড়া ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা ঈমানদারদের
লক্ষণ নয়। কারণ হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
المسلم
من سلم المسلمون من للسانه ويده.
অর্থ:- “মুসলমান তো ঐ ব্যক্তিই যার জবান ও হাত হতে অন্য মুসলমান নিরাপদ।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফাতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, মেরকাাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব)
মূলত: সকল ফিৎনা-ফাসাদের
মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ও মারাত্মক ফিৎনা হচ্ছে- দ্বীন সম্পর্কিত ফিৎনা। কারণ দ্বীন সম্পর্কিত
ফিৎনা অনেক সময় ঈমানহানীর কারণ হয়ে দাঁড়ায় আর তাই আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাম হুশিয়ার বাণী উচ্চারণ করে বলেন, যে,
يكون فى
اخر الزمان دجالون كذ ابون ياتونكم من الاحاديث بما لم تسمعو انتم ولا ابائكم
اياكم واياهم لا يصلونكم ولا يفتنو نكم.
অর্থ:- “আখিরী যামানায় কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদেরকে (দ্বীন সম্পর্কিত) এমনসব কথা বলবে, যা তোমর ও তোমাদের বাপ-দাদারাও কখনো শুনোনি। তোমরা তাদের
থেকে দূরে থাক এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখ, তবে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে ও ফিৎনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম, মেশকাত, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ,
মুযাাহেরে হক্ব)
উপরোক্ত হাদীছ
শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, মিথ্যাবাদী দাজ্জালের চেলা তারাই, যারা মনগড়া, দলীলবিহীন, অশুদ্ধ ফতওয়া প্রদান করে সমাজে বিশৃঙ্খলা বা ফিৎনা সৃষ্টি
করে।
অত্এব, প্রমাণিত হলো যে, দ্বীন সম্পর্কিত ফিৎনাই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক ফিৎনা, ্র এই দ্বীন সম্পর্কিত ফিৎনা সাধারণত: আধা মাওলানাদের
কাছ থেকেই অধিক প্রকাশ পায়। তাই কবি বলেছেন,
نيم حكيم
خطر جان- نيم ملا خطر ايمان.
অর্থ:- “আধা ডাক্তার জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ, আর আধা মাওলানা ঈমানের জন্য হুমকি স্বরূপ।”
এ প্রসঙ্গে একটি
ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, আর ঘটনাটি মূলত: ছানী আযানের ব্যাপারে ফিৎনা সৃষ্টিকারীদের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঘটনাটি হলো-
এক লোকের শরীরে
একটি বাগী বা ফোঁড়া হয়, সে চিকিৎসার জন্যে গ্রাম্য এক ডাক্তারের নিকট যায়। ডাক্তার চিকিৎসা স্বরূপ লোহা
গরম করে উক্ত বাগী বা ফোঁড়াতে দাগা দিয়ে দেয়। রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ীতে চলে যায়, কিন্তু রোগীর অবস্থা ক্রমেই মারাত্মক আকার ধারণ করে।
এ অবস্থা দেখে
রোগীর আত্মীয়-স্বজন ডাক্তারের নিকট এসে বলে- হে ডাক্তার সাহেব, আপনি রোগীর কেমন চিকিৎসা করলেন যে, রোগী মরে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। আর আমরা এমন চিকিৎসাও
কখনো দেখিনি যে, বাগী হলে লোহা
গরম করে দাগা দিতে হয়। একথা শুনে ডাক্তার সাহেব রাগাম্বিত হয়ে বলে উঠে- কেন! আমি কি
বই না পড়ে বা বিনা দলীলে চিকিৎসা করেছি? কাজেই আমার চিকিৎসা ঠিকই আছে। তখন রোগীর লোজজন বললো- দেখিতো আপনি কোন ডাক্তারী
বই দেখে বা কোন দলীলের ভিত্তিতে চিকিৎসা করেছেন? ডাক্তার সাহেব বইখানা বের করে তাদেরকে দেখিয়ে বলে, দেখো- এখানে লেখা আছে, “বাগী বা ফোঁড়া হলে লোহা গরম করে দাগা দিবে.......।” এখানে এসে পৃষ্ঠা শেষ হয়ে যায়। আর উক্ত লেখার পরে কমা রয়েছে বিধায় লোকেরা বললো-
পৃষ্ঠা উল্টাতে, কেননা এখানে
কমা দেখা হয়েছে, নিশ্চয় বক্তব্য
সম্পূর্ণ হয়নি। কিন্তু হাতুরে ডাক্তার পৃষ্ঠা উল্টাতে নারাজ, তার মতে এটাই মূল বক্তব্য। অনেক অনুরোরে পর যথন ডাক্তার
সাহেব পৃষ্ঠা উল্টালো তখন দেখলো, সেখানে লেখা রয়েছে- “রোগী যদি গরু হয়। অর্থাৎ গরুর যদি বাগী বা ফোঁড়া হয়,
হবে লোহা গরম করে দাগা দিবে।
অতএব, অর্ধেক পড়ে চিকিৎসা কর যেমন বিপজ্জনক। তদ্রূপ দু’চারটা চটি রেসালা পড়ে ফতওয়া দেয়াও বিপজ্জনক। কাজেই কোন
কথা বলতে হলে বা কোন ফতওয়া দিতে হলে তা ভালরূপে তাহক্বীক্ব করে দিতে হবে, নচেৎ ভুল হওয়া এবং সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
উপরোক্ত ঘটনা
দ্বারা মূলত: এটাই বুঝা যাচ্ছে যে, যে কোন বিষয়েই পূর্ণ তাহক্বীক্ব ব্যতীত সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া সম্ভব নয় বরং
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক তাই সত্যিকার অর্থে যারা হাক্কানী আলিম বা
হাক্বীক্বী ফক্বীহ, উনারা পূর্ণ তাহক্বীক্ব ব্যতীত বা বিনা তাহক্বীক্বে কোন কাজ করেন না ও কথা বলেন
না। যার উজ্জ্বল নিদর্শন দেখতে পাই আমরা, ইসলামী শরীয়তের অন্যতম মাযহাব, মালেকী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা, যিনি তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠতম আলিমে হক্কানী ও ফক্বীহুল উম্মত, যার অসংখ্য লক্ববের মধ্যে একটি লক্বব ছিল- ইমামুল আইম্মাহ, মূলত: তিনি হলেন- হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি।
এই ইমাম মালেক
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেদিন সর্ব প্রথম ফতওয়ার মসনদে আসীন হন, সেদিনেই উনার নিকট সুষ্ঠ সমাধান চেয়ে, দূরদূরান্ত থেকে আগত লোকজন চল্লিশটি মাসয়ালা পেশ করে।
কিন্তু তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠতম আলিম হওয়া সত্ত্বেও পরিপূর্ণ তাহক্বীক্ব না থাকার
কারণে মাত্র ১৮টি মাসয়ালার জাওয়াব দেন, আর ২২টি মাসয়ালার ক্ষেত্রে সরাসরি বললেন, لاادرى অর্থাৎ “আমি জানিনা।”
তখন উনার অসংখ্য
ছাত্রের মধ্য হতে কেউ বললো- হুযূর সত্যিই কি আপনি উক্ত ২২টি মাসয়ালা জানেন না? জবাবে ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “আমার মাসয়ালাগুলো জানা আছে সত্য, কিন্তু পরিপূর্ণ তাহক্বীক্ব নেই। হতে পারে বর্তমানে ২২টি
মাসয়ালা সম্বন্ধে আমার যে ফায়সালা রয়েছে, পূর্ণ তাহক্বীক্বের পর তার ব্যতিক্রমও হতে পারে, এই লোকগুলো অনেক দূর থেকে প্রায় ৬ মাসের রাস্তা অতিক্রম করে আমার নিকট এসেছে মাসয়ালা
জানার জন্য, এখন যদি আমি
বিনা তাহক্বক্বে তার জওয়াব দিয়ে দেই যা পূর্ণ শুদ্ধ নয়, তবে এর ভিত্তিতে তারা আমল শুরু করবে, ্র পরে যখন আমার পূর্ণ তাহক্বীক্ব হবে এবং তা যদি বর্তমান ফায়সালার ব্যতিক্রম
ফায়সালা হয়, তবে তাদেরকে
কে এই মাসয়ালার বিশুদ্ধ বা পূর্ণ তাহক্বীক্ব সম্বলিত ফায়সালা বা মতটি জানবে? যেহেতু আমি তাদের বিস্তারিত পরিচয় বা ঠিকানা জানিনা।
আর এজন্যে হয়তো আমাকে আল্লাহ পাক উনার কাছে জবাবদিহি ও পাকড়াও হতে হবে।” কেননা হাদীছ শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى
هريرة رضى الله عنه قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من فتى بغير علم كان
اثمه على من افتاه.
অর্থ:- হযরত
আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তিকে ইলম ব্যতীত (ভুল) ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অত:পর সে তদানুযায়ী কাজ করেছে, তার গুণাহ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে তার উপরেই পড়বে।” (আবূ দাউদ, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ মোযাহেবে হক্ব)
সুতরাং ইমাম
মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেহেতু সত্যিকার অর্থেই হাক্বীক্বী ফক্বীহ, আলিম ও সর্বোচ্চ স্তরের মুত্তাক্বী ছিলেন, সেহেতু তিনি বিশেষভাবে তাহক্বীক্ব করে ফতওয়া দিয়েছেন।
অতএব, যারা বিনা তাক্বীক্বে মনগড়া ফতওয়া
প্রদান করে তারা ফক্বীহ হওয়া তো দূরের কথা বরং তারা আলিম হওয়ারও যোগ্য নয়। কারণ আলিম
ঐ ব্যক্তিই, যে ইলমে ফিক্বাহ
ও ইলমে তাসাউফ উভয়টার অধিকারী যেমন- এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে, ইমামে রব্বানী মাহবুবে সুবহানী, কাইয়ুমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব “মকতুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন,
العلماء
ورثة الانبياء- علميكه از انبياء عليهم الصلوات والتسليمات با قى مائده است دونو ع
است علم احكام وعلم اسرار وورث كسى هست كه اورا هردو نوع علم سهم بود نه انكه اورا
ازيت نوع نصبب بودنه از نوع ديكر كه ان منافى وراثت است- ..ه وراثت را از حميع
انواع نرك مورث نصيب است نه ازبعض وانكه اورا از معين نصيب است داخل عر ما است كه
نصيب اوبجس حق او نعلق كرفته است.
অর্থ:- “আলিমগণ নবী আলাইহিমুস সালামগণের ওয়ারিছ” এ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আলিম উনারাই, যাঁরা নবী আলাইহিমুস সালামগণের রেখে যাওয়া ইলমে আহকাম
(ইলমে ফিক্বাহ) ও ইলমে আসরার (ইলমে তাছাউফ) উভয় প্রকার ইলমের অধিকারী। অর্থাৎ তিনিই
প্রকৃত ওয়ারিছ বা স্বত্বাধিকারী। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইলমের অধিকারী
সে ব্যক্তি নবী আলাইহিমুস সালামগণের প্রকৃত ওয়ারিছ নন। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল
ক্ষেত্রে অংশীদারী হওয়াকেই ওয়ারিছ বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট
অংশের অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিছ নয় গরীমের অন্তর্ভুক্ত।”
মূলত: যাঁরা
ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয়টির অধিকারী, উনারাই আলিম ও হাক্বীক্বী ফক্বীহ; উনাদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
فقيه
واحد اشمد على الشيطان من الف عايد.
অর্থ:- হযরত
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- াইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসাালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
“একজন ফক্বীহ শয়তানের নিকট এক হাজার আবেদের চেয়েও ভয়ঙ্কর।” (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, দারেমী, আহমদ, মেশকাত, মাযারেফুস সুনান, উরফুশশাজী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহেরে হক্ব।
এ হাদীছ শরীফের
ব্যাখ্যায় কিতাবে উল্লেখ আচে, শাজলী তরীক্বার পীর, হযরত আবুল হাসান শাজলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
الفقيه
هو انفقاء الحداب عن عبنى قلب به.
অর্থ:- “ফক্বীহ তিনিই যাঁর ক্বলবের চক্ষু হতে পর্দা উঠে গিয়েছে।” (তাবাকাত ২য় খ- ১২ পৃষ্ঠা) অর্থাৎ
যিনি অন্তরের দ্বার দিয়ে রূহানী জগতের অনুভূতি লাভ করতে সক্ষম, তিনিই ফক্বীহ।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নি¤েœাক্ত হাদীছ শরীফের মধ্যে উনার সম্পূর্ণ
সমর্থন পাওয়া যায়।
لا يفقه
العبد كل الفقه حتى يمقت الناس فى ذات الله ويرى للقران وجوها كثيرة.
অর্থ:- “কেউ প্রকৃত ফক্বীহ হতে পারে না, যে পর্যন্ত না সে, আল্লাহ পাক উনার মানুষের সংসর্গকে অপছন্দ করে এবং কুরআন শরীফের মধ্যস্থিত বহুবিধ
ও ব্যাপক অর্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। (ইবনে আব্দুল বার)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হাক্বীক্বী ফক্বীহ ও আলিম তারাই, যারা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয়টার অধিকারী বা ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত আর উনারা
ইলমে ফিক্বাহর সাথে সাথে ইলমে তাছাউফের অধিকারী হওয়ার কারণে তাক্বওয়ার ভিত্তিতে ফতওয়া
দিয়ে থাকেন, যে তাক্বওয়া
ফতওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। কেননা তাক্বওয়া ব্যতীত তাহক্বীকের মাদ্দা
কখনোই অর্জিত হতে পারে না, আর বিনা তাহক্বীক্বে কোন ফতওয়াও শুদ্ধ
হতে পারে না। তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতের প্রতিটি ফতওয়া সুওয়াল-জাওয়াব, মাসয়ালা-মাসায়েল ইত্যাদি বিশেষভাবে তাহক্বীক্ব করার পরই
প্রদান করা হয়। যার ফলে তা খ-ানো কারো পক্ষেই সম্ভব হয় না।
আযানের উৎপত্তি
ও ইতিহাস
ইসলামের পাঁচটি
রোকন বা ভিত্তির মধ্যে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ন রোকন বা ভিত্তি হচ্ছে নামায। আর ইসলামী
শরীয়ত প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নর-নারীর জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরযে আইন করেছে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ
শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عن ابن
عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بنى الاسلام على خمس سهادة ان لا اله
الا الله وان محمدا عبده ورسوله- اقام الصلوة وايناء الزكوة والحج وصوم رمضان.
অর্থ:- হযরত
ইবনে ওমর আলাইহিস সালাম উনার হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি- (১) সাক্ষী দেয়া যে, আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (২) নামায কায়িম করা,
(৩) যাকাত আদায় করা, (৪) হজ্জ পালন করা, ও (৫) রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখা।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফাতহুল বরী, ওমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী মেরকাত, লুময়াত আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহেরে হক্ব)
অতএব কালিমা
বা ঈমানের পর নামাযের গুরুত্বই সবচেয়ে অধিক। আর আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবেক পাঁচ
ওয়াক্ত নামায জামায়াাতের সহিত আদয় করা সুন্নতে মুয়াক্তাদাহ, করীবাতুম মিনাল ওয়াজিব বা ওয়াজিবের নিকটবর্তী।
উল্লেখ্য, মুসলমানগণ যাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে
আদায় করতে পারে, সেজন্যে আযানের
ব্যবস্থা দেয়া হয়েছে। হানাফী মাযহাব মুতাববেক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য দৈনিক পাঁচ
বার প্রত্যেক মসজিদে আযান দেয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, তরক করলে ওয়াজিব তরকের গুণাহ হবে।
“আযান” (اذان) আরবী শব্দটি –এর লোগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো- সংবাদ দেয়া, আহবান করা, ডাকা ইত্যাদি। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামে পাকে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম
উনাকে এই বলে নির্দেশ দিয়েছেন যে,
اذن فى
الناس بالحج. অর্থ:- “হে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম! আপনি লোকদেরকে হজ্জের জন্য
আহবান করুন।”
আর “আযানের” শরয়ী অর্থ হলো- নির্ধারিত ওয়াক্ত সমূহে নির্ধারিত নামাযের জন্য শরীয়ত নির্ধারিত
শব্দ সমূহ দ্বারা সংবাদ দেয়া, আহবান করা বা ডাকা।
স্মর্তব্য যে, পবিত্র মক্কা শরীফে আযান ব্যতীতই নামায আদায় করা হতো, পবিত্র মদীনা শরীফে আসর পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের সঙ্গে পরামর্শ করে বললেন যে, নামাযের জন্য লোকদেরকে সংবাদ দেয়ার বা আহবান করার জন্য
একটি উপায় বা পদ্ধতি উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। জবাবে উনাদের মধ্য হতে কেউ বললেন ঘণ্টা বাজানো
হোক। আবার কেউ বললেন, শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হোক! আবার কেউ বললেন, শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হোক! আবার কেউ কেউ বললেন, আগুণ জ্বালানো হোক! কিন্তু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণের অনেকেই এ সকল পদ্ধতির প্রতিবাদ জানালেন বা বিপক্ষে মত পেশ করলেন।
উনাদের মতে ঘণ্টা বাজানো খ্রিস্টানদের আমল এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া ও আগুণ জ্বালানো ইহুদী
ও মজুসী বা অগ্নি উপাসকদের আমলের সাদৃশ্য। তাই নামাযের জন্য আহবান করার উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো
সর্বসম্মতিক্রমেই পরিত্যাজ্য হলো।
অত:পর কিছুদিন
পর কতিপয় ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বর্তমান আযানের এ সকল বাক্যসমূহ
স্বপ্নে দেখেন।
হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ স্বপ্নের কথা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফে পেশ করেন। তখন আল্লাহ
পাক উনার নির্দেশে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ
আযানকেই লোকদেরকে নামাযের জন্য আহবান করার লক্ষ্যে গ্রহণ করেন। আর মূলত: তখন
থেকেই নামাযের জন্য আযান দেয়ার এ পদ্ধতি শুরু হয়।
আযানের উৎপত্তি
প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফের কিতাব সমূহে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে- যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ
শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن انس
بن مالك قال- ذكروا النار والناقوس فذكروا البهود والنصرى فامر بلال ان يتفغ
الاذان.
অর্থ:- “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
বলেন, (নামাযের সংবাদ দেয়ার জন্য) হযরত
ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আয়ালা আনহুমগণ আগুণ ও শিঙ্গার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু
কেউ কেউ বলেন, এটি ইহুদী ও
নাছারাদের প্রথা। তখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জোড়া জোড়া আযান দেয়ার
বা আযানের প্রত্যেক বাক্য দুইবার করে বলার নির্দেশ দেয়া হলো।”
(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ফাতহুল বারী, এমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সাবী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ
শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابن
عمر قال كان المسلمون حين فدموا المدينة يجتمعون فيتحينون للصلوة ونيس ينادى بها
احد فتكلموا يوما فى ذالك فقال بعضهم اتخذوا مثل نافوس النصرى وقال بعضهم قرنا مثل
ققرن اليهود فقال عمر اولا تبعثون رجلا ينادى بالصلوة فقال رسول الله صلى الله
عليه وسلم يا بلال قم فناد بالصلوة.
অর্থ:- হযরত
ইবনে উমর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, মুসলমানগণ যখন মদীনা শরীফে আগমণ করেন, তখন তারা অনুমান করে নামাযের জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে নেন এবং সে সময় সকলেই
নামাযের জন্য একত্রিত হতেন। নামাযের জন্য কেউ (আলাদাভাবে) আহবান করতেন না। একদিন উনারা
(নামাযের জন্য সংবাদ দেয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন করার।) ব্যাপারে আলোচনায় বসলেন। কেউ বললেন
নাছারাদের ন্যায় একটি ঘণ্টা বাজানো হোক, আবার কেউ বললেন ইহুদীদের ন্যায় শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হোক। তখন হযরত ্উমর ইবনুল খত্তাব
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তোমরা কি এমন একজন লোকে পাঠাতে পার না? যে নামাযের জন্য লোকদেরকে আহবান করবে। অত:পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
হে বেলাল উঠ এবং নামাযের জন্য আহবান করো।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফাতহুল বরী, এমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ)
মূলত: নি¤েœাক্ত হাদীছ শরীফ-এ আযানের উৎপত্তি ও ইতিহাস সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট
আলোচনা করা হয়েছে। যেমন- হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,
عن عبد
الله بن زبر بن عبد ريه قال الماامر رسول الله صلى الله عليه وسلم الناقوس يعمل
نيضرب به للناس لجمع الصلوة طاف بى وانانا نم رجل يحمز تاقوسا ف يده غقلب يا عبد
الله انبيع الناقوس قال وما تصنع به قلت ندعو به الى الصلوة فقال افلا ادلك على
ماهو خير من ذالك فقلت له بلى قال فقال تقول الله اكبر الى اخره وكذا الاقامة فلما
اصحت انبت رسول الله صلى الله عليه وسلم فا خبرته بما رايت فقال انها لروبه حق ان
شاء الله تعالى فقم مع بلال فالق عليه مارايت فليوذن به فاانه اندى صوتا منك فقمت
مع بلال فجعلت القيه عليه ويؤذن به قال فسمع بذا لك عمر بن الخطاب وهوفى بيته فخرح
يجر ردائه يقول يا رسول الله والذى بعثلك بالحق رأيت مثل اورى فقال رسول الله صلى
الله عليه وسلم فلله الحق.
অর্থ:- “হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ বিন আবদে রাব্বিহী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন, যকন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিহ ওয়া সাল্লাম তিনি লোকদেরকে নামাযের জন্য একত্রিত
হওয়ার লক্ষ্যে (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণের সঙ্গে) ঘণ্টা বাজানোর ব্যাপারে পরামর্শ করছিলেন, তখন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে,
নিজ হাতে ঘণ্টা ধারণকৃত এক ব্যক্তি আমার নিকট উপস্থিত
হয়েছেন। অত:পর আমি তাকে বললাম- হে আল্লাহর বান্দা। এ ঘণ্টাটি বিক্রয় করবেন কি? সে বললো, এটা দিয়ে আপনি কি করবেন? আমি বললাম এটা দ্বারা আমরা নামাযের জন্য আহবান করবো। সে বললো এটা হতে যা উত্তম
তা কি আপনাকে বলে দিবেন। আমি বললাম- হাঁ, (অবশ্যই বলে দিবেন)
তখন তিনি “আল্লাহ আকবার” হতে শুরু করে “আযানের” শেষ পর্যন্ত
সমস্ত শব্দ বা বাক্যগুলি বললেন। অনুরূপ এক্বামতেরও।
অত:পপর যখন আমি
ভোরবেলায় গুম থেকে উঠলাম, (ঘুম থেকে উঠে) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফে পৌঁছলাম। এবং উনার
নিকট স্বপ্নের ব্যাপারটি বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ পাক তোমার মুবারক করুন, নিশ্চয়ই এটা সত্য স্বপ্ন! তুমি যা দেখেছ, তা বেলাল উনার নিকট বর্ণনা কর। হযরত বেলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যেন
সে শব্দ বা বাক্যগুলো দ্বারা আযান দেয়। কেননা বেলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তোমার
থেকে অধিক উচ্চ স্বরধারী। সুতরাং আমি হযরত বেলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট
গেলাম এবং উনাকে আযানের বাক্যগুলো বাতলিয়ে দিলাম, তিনি তা দ্বারা আযান দিতে লাগলেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবদে রাব্বিহী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উক্ত আযান শুনলেন, তখন তিনি উনার ঘরে অবস্থান করছিলেন, তিনি নিজ চাঁদর টানতে টানতে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে
যিনি সত্য (দ্বীন) সহকারে পাঠিয়েছেন উনার কসম! নিশ্চয়ই আমিও হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবদে
রাব্বিহী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ন্যায় (আযানের উক্ত বাক্যগুলো) স্বপ্নে দেখেছি।
তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
আল্লাহ পাক উনার জন্যই সকল তারীফ বা প্রশংসা (আবু দাউদ
শরীফ, দারেমী, ইবনে মাযাহ, মিশকাত, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, লুময়াত, াশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহেরে হক্ব মিরআতুল মানাজীহ)
হাদীছ শরীফের
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারাসুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, নামাযের জন্য আহবান করার “আযানের” এ পদ্ধতি শুরু
হয় মূলত: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফে হিজযরত
করার পর।
আর তা হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে স্বপ্নের মাধ্যমে অবহিত করা হয়। অবশ্য সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহি ওয়া
সাল্লাম, আযানের এ পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ব
থেকেই অবহিত ছিলেন। হাদীছ শরীফের কিতাব দায়লামী শরীফের এক বর্ণনায় উল্লেক আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মি’রাজ শরীফে কোন এক ফেরেশতার মুখে আযানের উক্ত শব্দগুলো শুনেছিলেন।
স্মর্তব্য যে, আযানের ইতিহাস ও উৎপত্তি সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা
একটি বিষয় স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠে, তাহলো- কোন অবস্থাতেই ঈমান ও আমলে ইহুদী-নাছারা বা বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সাথে সাদৃশ্য
রাখা তাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। কারণ আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদী-নাছারা তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সাথে সাদৃশ্য হবে বিধায়, নামাযের জন্য আহবান করার লক্ষ্যে ঘণ্টা বাজানো ও শিঙ্গায়
ফুঁক দেয়ার পদ্ধতিকে সমপূর্ণরূপে পরিত্যাগ করার নির্দেশ দেন। অথচ আজকাল কিছু সংখ্যক
উলামায়ে সূ’ তথা নামধারী
পীর, শায়খুল হাদীছ, মুফতী, মুহাদ্দিস, খতীব, মুহতামিম ও মাওলানারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইহুদী-নাছারা
তথা বেদ্বীন-বদদ্বীনদের অনুকরণ করছে বা তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখছে। যেমন- তারা কমিউনিষ্ট
মাওসেতুং এর লংমার্চ, কট্টোহিনউ ও চির মুসলিম বিদ্বেষী গান্ধীর হরতাল ও কুশপুত্তলিকা, দাহ, ইহুদী-নাছারাদের গণতন্ত্র-নির্বাচন ব্লাশফেমী আইন ও মৌলবাদ ইত্যাদি অনুসরণ করছে
ও দাবী করছে। মূলত: এদের সম্পর্কেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
من تشبه
بقوم فهو منهم.
অর্থ:- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদ্যশ্য রাখবে, সে ব্যক্তি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (মসনদে আহমদ)
কাজেই এ হাদীছ
শরীফের আলোকে প্রমাণিত হলো যে, উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ যদি খালেছ তওবা না করে, তবে তাদের হাশর-নাশর ও অবস্তান নিশ্চিতরূপেই ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সাথেই হবে। তাই এ ধরণের আক্বীদা ও আমল থেকে খালেছ তওবা করা
সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব।
আরো উল্লেখ্য
যে, নামাযের জন্য প্রত্যেক মসজিদে আযান
দেয়া শুধু সুন্নতে মুয়াক্কাদাই নয়। বরং আযান (শিয়ারুল ইসলাম) ইসলামের একটি নিদর্শন।
তাই দেখা যায়
যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যখন কোন ক্বওমের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতেন, তখন যদি তাদের মধ্যে আযান শুনতে পেতেন তবে অভিযান বন্ধ করে দিতেন এবং বলতেন, উনারা মুসলমান! আর একারণেই ফক্বীহগণ, সম্মিলিতভাবে আযান ত্যাগকারীদের বিরুদ্ধে জ্বিহাদ করা
জায়িয বলেছেন।
অতএব, যারা আযান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করবে, আযানকে অস্বীকার করবে এবং আযান শুনলে যাদের কান জ্বালাপোড়া করে, তাদেরকে মুসলমান বলা যায় না। এ ধরণের লোকদের সম্পর্কেই
কালামে পাক এ ইরশাদ হয়েছে-
واذا
فاديتم الى الصلوة اتخذوها هزواولعبا.
অর্থ:- “যখন তোমরা নামাযের দিকে আহবান করা বা আযান দাও, তখন তারা (কাফির মুশরেকরা, উক্ত আযান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে এবং আযানকে খেলা-বলার পাত্র মনে করে।”
মূল কথা হলো, নামাজের উদ্দেশ্যে আহ্বান করার আযানের এ পদ্ধতি মদীনা
শরীফেই উৎপত্তি লাভ করে। আর এ আযান শুধু সুন্নতে মুয়াক্কাদাই নয়, বরং “শেয়ারুল ইসলাম” বা ইসলামের একটি বিশেষ নিদর্শন। শরীয়তের দৃষ্টিতে আযান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা
বা আযানের প্রতি বিন্দু মাত্রও বিদ্বেষ পোষণ করা সুস্পষ্ট ও অকাট্য কুফরী। আযানের মাহাত্ম
ও মুয়াজ্জিনের ফযীলত ইতিপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে
যে, আযান “শেয়ারুল ইসলাম” বা ইসলামের একটি বিশেষ বা অন্যতম নিদর্শন। শুধু তাই নয় শরীয়তের দৃষ্টিতে এ আযানের
রয়েছে বহু মাহাত্ম এবং যিনি আযান দিবেন অর্থাৎ মুয়াজ্জিন সম্পর্কেও হাদীস শরীফে বহু
ফযীলত বর্ণিত রয়েছে। যেমন- আযানের মাহাত্ম সম্পর্কে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن ابى
هريرة قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- اذا نودى للصلوة ادبر الشبطان له
ضراط حتى لا يسمع النأذين فاذا قضى النداء اقبل حتى اذا ثوب بالصلوة ادبر.................... অর্থঃ-“হযরত আবু হুরায়রা
(রাঃ) হতে বর্ণিত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন নামাজের জন্য আযান দেয়া হয়। তখন শয়তান পিঠ ফিরায়ে বাতকর্ম করতে করতে পালাতে
থাকে, যেন সে আযান না শুনে। অতঃপর যখন
আযান শেষ হয়, সে ফিরে আসে।
আবার যখন এক্বামত শুরু হয়, শয়তান পিঠ ফিরায়ে পালাতে থাকে। ...... (বোখারী, মুসলিম, মেশকাত, ফাতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ) এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে,
عن جابر
قال- سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان الشيطان اذا سمع النداء بالصلوة ذهب
حتى يكون مكان الروحاء قال الراوى والروحاء من المدينة على ستة وقلاثين ميلا. অর্থঃ- “হযরত জাবের
(রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, শয়তান যখন আযান শুনে তখন ভেগে “রাওহা” চলে যায়। রাবী
বলেন, “রাওহা”
মদীনা শরীফ হতে ৩৬ মাইল দূরে।” (মুসলিম, মেশকাত, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ) আযানের মাহাত্ম
সম্পর্কে হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে,
عن سعد
بن ابى وقاص قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قال حين سمع المؤذن اشهد ان
لا اله الا الله وحده لا شريك له وان محمدا عبده ورسوله رضيت بالله رباومحمد رسولا
وبا لا سلام دينا- غفرله ذنبه.
অর্থঃ- “হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে এ কথা বলবে যে, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই, তিনি এক তাঁর
কোন শরীক নেই এবং হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
আর আমি আল্লাহ্ পাককে প্রতিপালকরূপে, হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূলরূপে ও ইসলামকে দ্বীনরূপে
পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি।” আল্লাহ্ পাক সে ব্যক্তির গুণাহ্ খাতা ক্ষমা করে দিবেন। (মুসলিম, মেশকাত, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ) আর মুয়াজ্জিনের ফযীলত
ও মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
عن
معاوية قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول المؤذنون اطول الناس اعناقا
يوم القيامة. অর্থঃ- “হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনদের ঘাড় সর্বাপেক্ষা অধিক লম্বা
হবে। অর্থাৎ তাঁরা সর্বাপেক্ষা অধিক সম্মান লাভ করবে। (মুসলিম, মেশকাত, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ) এ প্রসঙ্গে
হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে,
عن ابى
سعيدن الخدرى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يسمع مدى صوت المؤذن جن ولا
انس ولا سى الاشهد له يوم القيامة. অর্থঃ-“হযরত আবু সাঈদ
খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে কোন মানুষ-জ্বিন অথবা অন্য কিছু মুয়াজ্জিনের আওয়াজের শেষ অংশটুকুও শুনে। তবে
সে ক্বিয়ামতের দিন (মুয়াজ্জিনের) তার জন্য সাক্ষ্য দিবে। (বোখারী, মেশকাত, ফাতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ) শুধু তাই নয়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং মুয়াজ্জিনদের জন্য মাগফেরাতের
দোয়া করেছেন। যেমন- এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে,
عن ابى
هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- الامام ضامن والمؤذن مؤتمن اللهم
ارشد الائمة واغفر للمؤذنين.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (নামাজের) ইমাম হলো নামাজের “জামিন” আর মুয়াজ্জিন
হলো- “আমানতদার।” হে আল্লাহ্ পাক আপনি ইমামদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন
এবং মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা করে দিন।” (আহ্মদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, শাফেয়ী, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, মায়ারেফুস্ সুনান, উরফুশ্ শাজী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ) মুয়াজ্জিনদের ফযীলত
ও মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى
عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من اذن ثنتى عشرة سنة وجبت له الجنة وكتب
له بتأذينه فى كل يوم ستون حسنة ولكل اقامة ثلاثون حسنة.
অর্থঃ- হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি বার বৎসর (ইখলাছের সহিত) আযান দিবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব এবং তাঁর
আমল নামায় তাঁর প্রত্যেক আযানের বিনিময়ে ষাটটি নেকী ও এক্বামতের বিনিময়ে ত্রিশটি নেকী
লেখা হবে।” (ইবনে মাযাহ্, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ) এছাড়াও আরো
অসংখ্য হাদীস শরীফে মুয়াজ্জিনদের বহু ফাযায়েল-ফযীলত ও মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করা হয়েছে।
উপরোক্ত হাদীস শরীফ সমূহের আলোচনা
দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, শরীয়তে আযানের মাহাত্ম ও মুয়াজ্জিনদের ফযীলত অপরিসীম। তাই সকলের উচিৎ আযান ও মুয়াজ্জিনদের
যথাযথ তা’যীম-তাকরীম ও মহব্বত করা। আযান
দেয়ার সহীহ্ ও সুন্নত পদ্ধতি আমাদের
হানাফী মায্হাব মোতাবেক আযান দেয়ার সহীহ্ ও সুন্নতী পদ্ধতি নিম্নরূপ- নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার পর এবং নামাজের পূর্বে
পবিত্রাবস্থায় ক্বিবলামুখী হয়ে ও উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে আযান দিবে। আযান দেয়ার সময় দু’হাতের শাহাদাত অঙ্গুলীদ্বয় উভয় কানে প্রবেশ করিয়ে দেয়া
সুন্নত। যেমন- এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
ان رسول
الله صلى الله عليه وسلم. امر يلالا ان يجعل اصبعيه فى اذنيه وقال انه ارفع لصوتك.
অর্থঃ- “নিশ্চয় সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত বেলাল (রাঃ)কে তাঁর উভয় হাতের অঙ্গুলীদ্বয় উভয় কানে প্রবেশ করানোর নির্দেশ
দিলেন এবং বললেন- এটা তোমার স্বরকে উচ্চ বা বুলন্দ করবে।”
(ইবনে মাযাহ্, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ) অতঃপর নিম্নে বর্ণিত
তরতীব মোতাবেক আযানের বাক্যগুলো উচ্চ স্বরে মিষ্টভাষায় মুখে উচ্চারণ করবে। তরতীব- চারবার
ا لله اكبر(আল্লাহু
আক্বার) অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক সর্বশ্রেষ্ঠ।” দু’বার
اشهد ان
الا اله الا الله.
(আশ্হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) অর্থঃ- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ্ বা মা’বুদ নেই।” দু’বার
ااشهد ان
محمدا رسول الله
(আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্) অর্থঃ- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্ পাক-এর রাসূল।” দু’বার حى على الصلوة(হাইয়্যা আলাছ-ছলাহ্) অর্থঃ- “নামাজের জন্য আস।” দু’বার حى على االفلاح (হাইয়্যা আলাল ফালাহ্) অর্থঃ- “কল্যাণের দিকে আস।” পুণরায় দু’বার الله اكبر (আল্লাহু আক্বার) অর্থঃ-“আল্লাহ্ পাক সর্বশ্রেষ্ঠ।” এবং একবার لا اله الا الله (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ্ বা মা’বুদ নেই।” আর শুধুমাত্র ফজরের আযানে হাইয়্যা আলাল ফালাহ্ বলার পর যেরূপ অতিরিক্তভাবে দু’বার الصلوة خير من النوم. (আচ্ছলাতু
খইরুম মিনান নাওম) অর্থঃ- “ঘুম হতে নামাজ উত্তম।” বলতে হয়, তদ্রুপ ইক্বামতে
হাইয়্যা আলাল ফালাহ্ বলার পর قدقامت الصلوة(ক্বাদ ক্বামাতিছ ছলাহ্) অর্থাৎ “নামাজ ক্বায়েম (শুরু) হয়েছে”
দু’বার বলতে হয়। অর্থাৎ সাধারণতঃ আযানে
পনর কালাম কিন্তু ফজরের আযানে সতর কালাম এবং ইক্বামতেও সতর কালাম (বাক্য)। উল্লেখ্য, মুয়াজ্জিন সাহেব حى على الصلوة) “হাইয়্যা আলাছ্ ছলাহ্” বলার সময় মুখমন্ডল ডান দিকে ফিরাবে আর (حى
على الفلاح) “হাইয়্যা আলাল ফালাহ্” বলার সময় বাম দিকে মুখমন্ডল ফিরাবে। এটাও সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
আযানের মধ্যে তরজীহ্ করার বর্ণনা স্মরণযোগ্য
যে, আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক
আযানের মধ্যে তরজীহ্ করা মাকরূহ্। তরজীহ্ বলা হয়, আশ্হাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ও “আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্” বাক্যদ্বয়কে প্রথমে নিম্নস্বরে দু’বার উচ্চারণ করার পর, পুণরায় উচ্চস্বরে দু’বার উচ্চারণ করাকে। স্মর্তব্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চারজন মুয়াজ্জিন ছিল। যথা- (১) হযরত
বেলাল (রাঃ) (২) হযরত উম্মে মাকতুম (রাঃ) (৩) হযরত সা’দ কুরজ (রাঃ) ও (৪) হযরত আবু মাহ্জুরাহ্ (রাঃ)। তন্মধ্যে শুধুমাত্র আবু মাহ্জুরাহ্
(রাঃ) আযানের মধ্যে তরজীহ্ করেছেন। তাও আবার বিশেষ ঘটনাক্রমে। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, মক্কা বিজয়ের পর হযরত আবু মাহ্জুরাহ্ (রাঃ) যখন ইসলাম
গ্রহণ করেন, তখন সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে আযান
দেয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে হযরত আবু মাহ্জুরাহ্ (রাঃ) আযান দেন। তবে ক্বওমের
লজ্জায় উক্ত বাক্যদ্বয় অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করেন। ফলে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তাঁকে ডেকে এনে বললেন, “হক্ব কথা বলতে লজ্জা করছো কেন? যাও, পুণরায় উচ্চস্বরে আশ্হাদু আল্লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহু ও আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ বাক্যদ্বয় উচ্চারণ কর।” তখন থেকে হযরত আবু মাহ্জুরাহ্ (রাঃ) আযানে তরজীহ্ করেন। প্রকাশ
থাকে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূলতঃ তা’লীমের জন্যই হযরত আবু মাহ্জুরাহ্ (রাঃ)কে উক্ত বাক্যদ্বয় পুণরায় উচ্চস্বরে উচ্চারণ
করার নির্দেশ দিয়েছেন, তরজীহ্ করার উদ্দেশ্যে নয়। কেননা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
অপর তিনজন মুয়াজ্জিন, বিশেষ করে হযরত বেলাল (রাঃ) হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত
মোবারকের পূর্ব পর্যন্ত আযান দিয়েছেন, কিন্তু তাতে তরজীহ্ করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। তাই হানাফী মায্হাবের সকল নির্ভরযোগ্য
ফিক্বাহ্রে কিতাবে আযানের মধ্যে তরজীহ্ করাকে মাকরূহ্ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, আযানের মধ্যে তরজীহ্ করা সুন্নতের খেলাফ তথা মাকরূহ্। আর আযানের উপরোল্লিখিত পদ্ধতিই
সহীহ্ ও সুন্নত পদ্ধতি। (দলীলঃ- আবু দাউদ, নাসাঈ, দারেমী, ইবনে মাজাহ্, মেশকাত, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, তাবয়ীনুল হাক্বায়েক, ফতওয়ায়ে শামী, এনায়া, কাফী, বাহ্রুর রায়েক, দুররুল মোখতার, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্, খানিয়া, হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, গায়াতুল আওতার, আরকানে আরবা, মুলতাক্বিউল
আবহুর ইত্যাদি) আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন
ও চোখে বুছা দেয়া আযানের মধ্যে মুয়াজ্জিন সাহেব
যখন “আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্” বলবে, তখন শ্রোতাদের জন্য তা শ্রবণ করা মাত্র প্রথমবার “সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্” (صلى
الله عليك يا رسول الله) বলা। আর দ্বিতীয় বার “কুররাতু আইনী বিকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্” (قرة عينىبك يا رسول الله) বলা। অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন
করতঃ উভয় চোখে মসেহ্ করা মুস্তাহাব, যা সহীহ্ হিসেবে মরফু ও মওকুফ হাদীস শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত। যেমন- এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহ্র
বিখ্যাত ও মশহুর কিতাব “মারাক্বিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
وذكر
الديلمى فى الفردوس عن حديث ابى بكر رصى الله عنه مرفوعا من مسح العين بباطن انملة
السا بتين بعدتقبيهما عند قول المؤذن اتهد ان محمدا رسول الله ..... حلت له شفا
عنى.
অর্থঃ- “ইমাম দায়লামী (রঃ) (তাঁর বিখ্যাত ও মশহুর হাদীস শরীফের
কিতাব) “ফিরদাউস লিদ্ দায়লমীতে” হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে মরফু হাদীস উল্লেখ করেন
যে, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযানের
সময় মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ শুনে অঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে বুছা দিবে ..... তার জন্য
আমার সুপারিশ ওয়াজিব।” এছাড়াও ইমাম ছাখাবী (রঃ) তাঁর “মাকাসিদুল হাসানা” কিতাবে, মুল্লা আলী ক্বারী
(রঃ) তাঁর “মওযুআতুল কবীর” কিতাবে এবং মুহাম্মদ তাহের ফাত্তানী (রঃ) তাঁর “মাজমাউল বিহার” কিতাবে আযানের সময় অঙ্গুলী চুম্বন করা সম্পর্কিত হাদীস শরীফকে মরফু হিসেবে সহীহ্
বলে উল্লেখ করেন। আর মুফতী আমীমুল ইহ্সান (রঃ) তাঁর “ফতওয়ায়ে বরকতীয়ায়” এ হাদীস শরীফকে “মওকুফ” হিসেবে সহীহ্
বলে উল্লেখ করেন। আর তাই অনুসরণীয়
ও বিশ্বখ্যাত বহু ইমাম, মুজ্তাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরাম (রঃ) তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে “আযানের মধ্যে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে বুছা দেয়ার আমলকে” মুস্তাহাব বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন এ প্রসংগে আল্লামা
কাহেস্তানী (রঃ)-এর ফতওয়া হলো-
اعلم انه
يستحب ان يقال عند سماع الاولى من الشهادة
النثانية صلى الله عليك يارسول الله وعند سماع الثانية قرة عينى بك يا رسول الله-
ثم يقال اللهم متعنى بالسمع والبصر بعد وضع ظفر الا يهاا مين على العينين فانه صلى
الله عليه وسلم يكون قائدا له الى الجنة.
অর্থঃ- “জেনে রাখ, আযানের সময় হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মোবারক শুনে প্রথমবার
“সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্” এবং দ্বিতীয়বার “র্কুরাতু আইনী বিকা ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” অতঃপর “আল্লাহুমা মুতয়িনী বিস্সাময়ি ওয়াল বাছার” পাঠ করার পর বৃদ্ধা অঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে উভয় চোখে বুছা দেয়া মুস্তাহাব। আর এরূপ
আমলকারীকে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে টেনে বেহেশ্তে নিয়ে যাবেন।
(জামিউর রুমুজ, কানযুল ইবাদ, শরহে কবীর, শরহে ইলিয়াছ) এ প্রসঙ্গে আল্লামা সাখাবী
(রঃ) হাদীস শরীফের কিতাব “দায়লামী শরীফের বরাত দিয়ে লিখেন যে,
لما سمع
ابو بكر قول المؤذن اشهد ان محمدا رسول الله قال هذا وقبل با طن الانملتين السبا
يتين ومسح على عينيه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم من فعل مثل ما فعل خليلى
فقد حلت له شفاعتى.
অর্থঃ- “হযরত আবু বকর
সিদ্দীক (রাঃ) যখন মুয়াজ্জিনকে “আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্” বলতে শুনেন, তখন তিনিও তা
বলেন এবং শাহাদত অঙ্গুলীদ্বয়ের ভিতরের দিক চুম্বন করে চোখে লাগান। এতে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার এ প্রিয় বন্ধুর ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার শাফায়াত অবধারিত।” (আল মাক্বাসিদুল হাসানাহ্-৩৮৪) আর
মক্কাতুল মুকাররমার হানাফী ওলামাদের সরদার, শায়খুল মাশায়েখ, রঈসুল মুহাক্কেক্বীন, আল্লামা, জামাল বিন আব্দুল্লাহ্
বিন ওমর মক্কী (রঃ) তাঁর বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব, “মুনীরুল আইন ফী তাক্ববীলীল ইবহামাইনে” লিখেন যে,
سألت عن
تقبيل الا يهامين ووضعهما على العينين عند ذكر اسمه صلى الله عليه وسلم فى الاذان
هل هوجأئزام لا؟ اجيب نعم بما انصته تقبيل الابها مين ووضعهما على العينين عند
ذكرا سمع صلى الله عليه وسلم فى الاذان جائز بل هو مستحب صرح به مشانحنا.
অর্থঃ- “আমাকে আযানের মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়
চুম্বন করে চোখে বুছা দেয়া জায়েয কিনা? সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি জবাব দিয়েছি, হ্যাঁ, অর্থাৎ আযানের
মধ্যে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়
চুম্বন করে চোখে বুছা দেয়া জায়েয। বরং তা মুস্তাহাবও বটে। এ ব্যাপারে আমাদের মাশায়েখগণ
বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।” এছাড়াও নিম্নোক্ত সকল কিতাবেই আযানের
সময় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে বুছা দেয়াকে জায়েয,
মুস্তাহাব, ফযীলত, শাফায়াত ও চোখের
শেফা লাভের কারণ বলা হয়েছে। যেমন- তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে রুহুল বয়ান, শরহে নেকায়া, মাজমাউল বিহার, ফতওয়ায়ে শামী, মাযমুয়ায়ে ফতওয়া, ফতওয়ায়ে খাজানাতুর রেওয়ায়েত, ফতওয়ায়ে সিরাজুম মুনীর, ফতওয়ায়ে মেফতাহুল যিনান, ফতওয়ায়ে সিদ্দীকিয়া, ফতওয়ায়ে বরকতীয়া, মাকাসিদুল হাসানা, এয়ানাতুত্ তালেবীন আলা হল্লে আলফাযে ফাত্হিল মুবীন, কেফায়াতুত্ তালেবীর রব্বানী লি রেসালতে আবি যায়িদিল কায়রুয়ানী, মুনীরুল আইন ফী তাকবীলীল ইব্হামাইন, নাহ্জুস্সালামাহ্ ফী তাকবীলিল ইবহামাইনে ফিল ইক্বামা, ছালাতে নক্শী, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, কুওয়াতুল কুলুব, কিতাবুন নেয়ামুল ইনতেবাহ্, তরীকুল ইসলাম, জা’য়াল হক্ব ও ফতওয়ায়ে আযীযিয়াহ্ ইত্যাদি
আরো অনেক কিতাবেই এটাকে জায়েয, ফযীলতের কারণ ও মুস্তাহাব বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ও আহ্সানুল ফতওয়াতেও “আযানের সময় অঙ্গুলী চুম্বনের আমলকে মুস্তাহাব বলে স্বীকার করা হয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকে যে,
উক্ত আমলের ব্যাপারে কোন মরফু সহীহ্ হাদীস বর্ণিত নেই।
তাদের এ বক্তব্য যে, সত্য নয় তা “মারাকিউল ফালাহ্”-এর বক্তব্য দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে বলা
হয়েছে এ ব্যাপারে সহীহ্ হিসেবে মরফু ও মওকুফ হাদীসও বর্ণিত রয়েছে। তবে কেউ কেউ জঈফ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। যদি
উক্ত হাদীস শরীফকে জঈফও ধরে নেয়া হয়। তবেও উক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা “আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে বুছা দেয়া মুস্তাহাব
প্রমাণিত হয়। কারণ ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব “ফাতহুল ক্বাদীরে” উল্লেখ আছে যে,
الاستحباب
يشت بالضعيف.
অর্থঃ- “জঈফ হাদীস শরীফ দ্বারা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।” ইমামুল মুহাদ্দেসীন, আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী (রঃ)-তাঁর মওজুয়াতুল কবীরে”
উল্লেখ করেন,
الضعيف
يعمل به فى فضائل الاعمال اتفاق ولذا قال انمتنا ان مسح الرقبة مستحب او سنة.
অর্থঃ- “সকলেই একমত যে, জঈফ হাদীস শরীফ ফযীলত হাছিল করার জন্য আমল করা জায়েয। আর তাই আমাদের সম্মানিত ইমামগণ
বলেন যে, ওযুর মধ্যে গর্দান মসেহ্ করা মুস্তাহাব
বা সুন্নত।” শুধু তাই নয়, যেক্ষেত্রে জঈফ
হাদীস শরীফ রয়েছে, সেক্ষেত্রে কোন প্রকার ক্বিয়াসও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সকল ইমামগণই ব্যক্তিগত রায়
বা ক্বিয়াসের উপর জঈফ হাদীস শরীফকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ইমামুল মুজ্তাহিদীন, ইমামুল বাহ্রে ওয়াল বার, ইমামুল আইম্মা, ইমামুল আ’যম, হযরত আবু হানীফা (রঃ) বলেন,
الخبر
الضعيف عن رسول الله صلى الله عليه وسلم اولى من القياس ولا يحل القياس مع وجوده.
অর্থঃ-“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত জঈফ হাদীস শরীফ ক্বিয়াস
থেকে উত্তম। আর জঈফ হাদীস শরীফ পাওয়া যাওয়া সত্ত্বেও ক্বিয়াস করা হারাম।” (মুকাদ্দমায়ে ইলাউস্ সুনান) কাজেই ইমাম-মুজ্তাহিদগণ ব্যক্তিগত রায়ের
উপর জঈফ হাদীস শরীফকে শুধু প্রাধান্যই দেননি বরং ফযীলত হাছিলের লক্ষ্যে বহু জঈফ হাদীসের
উপর আমলও করেছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن ابى ذرداء قال- سئل رسول الله صلى الله عليه
وسلم- ففيل يارسول الله ما حد العلم الذى اذا بلغه الرجل كان فقيها؟ فقال رسول
الله صلى الله عليه وسلم- من حفظ على امتى اربعين حديثا فى امر دينها بعثه الله
فقيها وكنت له يوم القيامة شافعا وشهيدا- رواه البيهقى فى شعب الايمان وقال الامام
احمد هذا متن مشهور بين الناس وليس له اسناد صحيح. অর্থঃ- হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! ইল্মের কোন সীমায় পৌঁছলে এক ব্যক্তি ফক্বীহ্ হতে পারে? জবাবে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য তাদের দ্বীনের ব্যাপারে ৪০টি হাদীস শরীফ মুখস্ত করবে
(এবং অপরকে তা পৌঁছে দিবে) ক্বিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী ও সাক্ষ্যদাতা
হবো।” (ইমাম বায়হাক্বী (রঃ) তাঁর “শো’বুল ঈমানে” এ হাদীস শরীফখানা বর্ণনা করেন। আর ইমাম আহ্মদ (রঃ) বলেন, হাদীস শরীফখানা লোকের মধ্যে মশহুর, তবে এর কোন সহীহ্ সনদ নেই। স্মর্তব্য যে, উক্ত হাদীস শরীফখানা জঈফ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিখ্যাত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়া-ই-
কিরাম (রঃ)গণ যেমন- হযরত ইমাম নববী (রঃ), ইমাম গাজ্জালী (রঃ), ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ)সহ আরো অনেকেই উক্ত হাদীস শরীফের ফযীলত হাছিল করার
লক্ষ্যে “হাদীসে আরবাঈন” নামে পৃথক একখানা কিতাব রচনা করেন। এখন
কথা হলো, “আযানের সময় বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে লাগানোর” হাদীস শরীফখানা জঈফ মনে করে যারা এটাকে বিদ্য়াত বলে ফতওয়া দেয়, তাদের ফতওয়া মোতাবেক উক্ত ইমাম-মুজতাহিদ যারা “হাদীসে আরবাঈন” লিখেছেন তারা বিদ্য়াতী। যেহেতু তারা
জঈফ হাদীস শরীফের উপর আমল করেছেন। অথচ এটা সম্পূর্ণই গোমরাহী মূলক বক্তব্য। মূল কথা হলো- আযানের মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর পবিত্র নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধা বা শাহাদত অঙ্গুলীদ্বয় বুছা বা চুম্বন দিয়ে
চোখে লাগানো সুন্নতে সাহাবা অর্থাৎ মুস্তাহাব, ফযীলত, শাফায়াত ও চোখের শেফা লাভ করার কারণ তো অবশ্যই। আর এটাকে বিদ্য়াত বলা চরম গোমরাহী
ও অজ্ঞতা। (এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৩য় সংখ্যা পাঠ
করুন) ( অসমাপ্ত
0 Comments:
Post a Comment