খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( নং ১ )

খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর খাছ রহমতে সুন্নতের বার্তা বাহক, দ্বীন ইসলামের নির্ভিক মশালধারী, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক, উলামায়ে ছূএবং বিদ্য়াত, শিরেকের সমস্ত জাল ছিন্নকারী, বাতিলের কলিজা কাঁপানো হুংকার, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র মুখপত্র, মাসিক আল বাইয়্যিনাতের অগনিত পাঠকের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং হক্ব তালাশী ও সুন্নতের আশিক্ব, মুসলমানগণের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন,হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী হাছিলের উদ্যেশ্যে বর্তমান বিশেষ সংখ্যায় বিশেষ ফতওয়া হিসেবে খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তাসম্পর্কে দলীলভিত্তিক বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হলো।
কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ করেন,

فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.

অর্থঃ- যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল- ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া/৭) অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো, প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
         
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.

অর্থঃ- যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুণের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আহ্মদ, মিশকাত, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাযী, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারিফুস্ সুনান, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
অন্য হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুণের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
কাজেই উপরোক্ত হাদীছ শরীফে যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারঅগণিত পাঠক-পাঠিকা, গ্রাহক-গ্রাহিকা ও হক্ব তালাশী বা সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের বিশেষ অনুরোধের প্রেক্ষিতে খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কেশরীয়তসম্মত তথা কোরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে ফতওয়া দেয়া হলো।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে

من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.

অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বযলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাযী, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারিফুস্ সুনান, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, লুময়াত, মিরয়াতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” “খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার  সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্র্কেসঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান করার মুল মাকছুদ হলো- সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যেন  প্রত্যেকেই খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা সম্পর্কে অবগত হতে পারে এবং সুন্নত মোতাবেক আমল করে ইহ্লৌকিক ও পরলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,

المؤمن مرأة المؤمن.

অর্থঃ- এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় খিলাফতকালে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মুহাজির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত উমর ইব্নুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারিফুল মায়ারিফ)
অতএব, খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা সম্পর্কিত বিষয়ে যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মিছদাক হওয়াই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করার মূল কারণ।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ,হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর
প্রতি মিথ্যারোপ করার পরিণাম
বর্তমানে কিছু তথাকথিত ইসলামী  কিতাবাদী ও পত্র-পত্রিকায় এবং কিছু সংখ্যক নামধারী ওয়ায়েয তাদের বক্তৃতায় ক্বমীছ বা কোর্তা সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের বক্তব্য হলো- ক্বমীছ বা কোর্তা-এর নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা শরীয়তে নেই। যেকোন ধরণের পোশাক বা কোর্তা পরিধান করলেই সুন্নত আদায় হয়, কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব ধরণের পোশাকই পরিধান করেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ)
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ইতিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আমালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হচ্ছে।
তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ক্ষতি 
তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ এটাই মনে করবে যে, দ্বীন ইসলাম অপূর্ণ, কেননা ইসলাম যদি পরিপুর্ণ দ্বীন হতো, তবে অবশ্যই ক্বমীছ বা পোশাক সম্পর্কিত নির্দিষ্ট বর্ণনা ইসলামে থাকতো। অতএব তারা যে বলেছে, ইসলামে ক্বমীছ বা পোশাকের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই। তাদের এই বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, ইসলাম অপূর্ণ। কাজেই তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “ইসলাম অপূর্ণতারা ঈমান হারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে।
তাছাড়া তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে কেউ যদি মনে করে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব ধরনের পোশাক পরিধান করেছেন। তবে সেটাও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরী হবে। কেননা একখানা দলীলও কেউ পেশ করতে পারবেনা যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসলীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব ধরণের পোশাক পরিধান করেছেন।
অথচ হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর প্রতি মিথ্যারোপ করার ভয়াবহ পরিণাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.

অর্থঃ- যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা কথা বলবে, সে যেন তার স্থান (দুনিয়ায় থাকতেই) জাহান্নামে নির্ধারন করে নেয়” (বুখারী, মিশকাত, ফতহুলবারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)
হাদীছ শরীফের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল যে, সাইয়্যিদূল মুরসালীন, ইমামূল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পোশাক পরিধান করেননি, তা পরিধান করেছেন বলা সুষ্পষ্ট কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
অতএব বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমাদের জন্য বিশেষভাবে হুমকীস্বরূপ। অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দিগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত। তাই মহান আল্লাহ পাক, পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

والعصر ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا وعملوا الصالحات.

অর্থঃ- আছরের বা সময়ের কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে, একমাত্র তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে।” (সূরা আছর)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক মানব জাতির ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম উপায় হিসেবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন। অতঃপর আমলের প্রশ্ন। কারণ ঈমানহীন ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ পাক-এর নিকট নেই। কাজেই বান্দার জন্যে প্রধানতম ফরয এই যে, সে সর্ব প্রথম তার ঈমান ও আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে, আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা  পোষণ করবে।
কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফিরক্বার আবির্ভাব হয়েছে। যদিও তাদের কথাবার্তা, চাল-চলন, ছূরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের ন্যায় বা ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত আক্বীদা পোষণ করে থাকে, যা সুস্পষ্ট কুফরী।
 যেমন- ক্বদরিয়া সম্প্রদায়- তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে, অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা ফরয।
খারিজী সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা হলো- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কাফির (নাউযুবিল্লাহ্), অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরয।
রাফিজী বা শিয়া সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা মতে শিয়াদের ইমামদের মর্যাদা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের চেয়েও বেশী, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ব্যতীত খুলাফায়ে রাশিদীনের সকলেই মুরতাদ। (নাউযুবিল্লাহ)
অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা- কাদিয়ানী সম্প্রদায়। তাদের আক্বীদা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী নন, তাঁর পর আরো নবী পৃথিবীতে আসবে, তাই তারা গোলাম কাদিয়ানীকে নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী।
অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের কথা বলে, টুপি, ক্বমীছ, পাগড়ী পরিধান করে। এতকিছুর পরও তারা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মোতাবেক কাফির বা অমুসলিম। কারণ তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী।
আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,

ستفترق امتى على ثلاث وسبعين فرقة كلهم فى النار الا ملة واحدة قيل من هى يارسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه واصحابى.

অর্থঃ- অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা কোন দল? ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে (মত-পথের) উপর আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ রয়েছি, তার উপর যারা থাকবে, তারাই সেই নাযাত প্রাপ্ত দল।” (আহ্মদ, আবু দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের  যে কোন আমলই করা হোক না কেন এবং যে কেউই করুক না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ত্রুটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন খারিজী, রাফিজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল।
মালী বা আমলগত ক্ষতি
সব ধরণের পোষাক পরিধান করাই সন্নতবিদ্য়াতীদের এ বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা সব ধরণের পোশাক পরিধান করলে কখনোই সুন্নত আদায় হবেনা। বরং এমন কিছু পোশাক রয়েছে, যা বে-দ্বীন  বা বিধর্মীদের জন্য খাছ, অর্থাৎ যা তারা ধর্মীয় শেয়ার বা নিদর্শন হিসেবেই ব্যবহার করে থাকে। যেমন শার্ট, প্যান্ট, টাই ইত্যাদি।
অতএব, কেউ যদি তা পরিধান করে, তাতে সুন্নতের অনুসরণ তো হবেইনা বরং তা বেদ্বীনদের সাথে সদৃশ হওয়ার কারণে কাট্টা হারাম হবে। কেননা বেদ্বীন বা বিধর্মীদের সাথে কোন ব্যাপারে সাদৃশ্য রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পুর্ণ হারাম। যেমন এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব তাহ্তাবী৩য় জিঃ ৪৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে

والتشبه بهم حرام.

অর্থাৎ- ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ ও বেদ্বীন, বদ্দ্বীনদের সাথে সাদৃশ্য রাখা হারাম।
কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইব্নে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রাখবে, সে ব্যক্তি তাদেরই দলভুক্ত হবে। অর্থাৎ তাঁর হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)
অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বিদ্য়াতীদের উক্ত বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তার আমল পরিত্যাগ করে, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের পোশাক পরিধান করে তাদেরই দলভুক্ত হবে, যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
সুতরাং যারা বলে, সব ধরণের পোশাকই পরিধান করা সুন্নত, ইসলামে পোশাকের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই, তাদের এ বক্তব্য যেরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করার শামিল। তদ্রুপ দ্বীন ইসলামকে নাক্বিছ বা অপুর্ণ সাব্যস্তকারী। অথচ উভয়টাই শরীয়তের দৃষ্টিতে কাট্টা কুফরী।
কাজেই যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তাদের ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানদের ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং সুন্নত মোতাবিক আমল করে আল্লাহ্ পাক-এর রেযামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।
দ্বীন ইসলাম কি নাক্বিছ বা অপূর্ণ ?
কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহামঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, দ্বীন ইসলামে পোশাকের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৌসুমের চাহিদা মোতাবেক যখন যে ধরণের পোশাক পেতেন তাই পরিধান করতেন।
যদি তাই হয়ে থাকে, তবে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, তবে কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিলেন না? তবে কি কুরআন শরীফের আয়াত মিথ্যা? (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহ্ পাক তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন,

وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى.

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী ব্যতিত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না।” (সূরা নজম/৩-৪)
কাজেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৌসুমের চাহিদা মোতাবেক সব ধরণের টুপি বা পোশাক পরিধান করতেনএ কথা বলার অর্থই হলো উপরোক্ত আয়াত শরীফকে অস্বীকার করা, যা সকলের মতেই কাট্টা কুফরী।
দ্বিতীয়তঃ ইসলামে পোশাকের নির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই।তাদের এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন জাগে- তবে কি দ্বীন ইসলাম নাক্বিছ বা অপূর্ণ? তাদের উক্ত বক্তব্য একথাই প্রমাণ করে যে, দ্বীন ইসলাম নাক্বেছ বা অপূর্ণ। অথচ আল্লাহ্ পাক দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ পাক এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে পাকে ঘোষণা দিয়ে বলেন,

اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيت لكم الاسلام دينا.

অর্থঃ- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকেই তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়েদা/৩) অতএব, প্রমাণিত হলো যে, “দ্বীন ইসলামপরিপূর্ণ অর্থাৎ দ্বীনী ও দুনিয়াবী সকল বিষয়ের ফায়সালা বা সব সমস্যার সমাধান দ্বীন ইসলামে রয়েছে। নিম্মোক্ত ঘটনা দ্বারা বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।
একবার কিছু ইহুদী সম্প্রদায়ের লোক খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মুমিনীন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দরবারে আসলো, এসে বললো- হে আমীরুল মুমিনীন, আল্লাহ পাক আপনাদের দ্বীন-ইসলামে তথা আসমানী কিতাব পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে একখানা আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন, সে আয়াত শরীফখানা যদি আমাদের ইহুদী ধর্মে বা আমাদের কোন আসমানী কিতাবে নাযিল হতো, তবে আমরা যেদিন এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে, সেদিনকে ঈদের দিন বা খুশির দিন হিসাবে ঘোষণা করতাম।
তখন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন- হে ইহুদী সম্প্রদায়, সেটি কোন আয়াত শরীফ? যে আয়াত শরীফখানা তোমাদের ধর্মে নাযিল হলে তোমরা সেদিনকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতে? ইহুদী সম্প্রদায় বললো- তা সূরা মায়িদা’-এর ৩নং আয়াত শরীফ, যেখানে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন

اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيت لكم الاسلام دينا.

অর্থঃ- আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে পূর্ণ করলাম, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হলাম।
এ আয়াত শরীফ শুনে আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে ইহুদী সম্প্রদায় তোমাদের কি জানা আছে? এ আয়াত শরীফখানা কোথায়, কবে, কখন নাযিল হয়েছে?        তারা  বললো নাআমাদের তা জানা নেই। তখন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “দেখ এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে বিদায় হজ্বের সময়, আরাফার ময়দানে, শুক্রবার দিন, আছরের ওয়াক্তে। সুতরাং হজ্বের দিন আমাদের জন্যে খুশির দিন, শুক্রবার দিনও আমাদের জন্যে খুশির দিন, কাজেই আয়াত শরীফের শুকরিয়া আদায় করতে গিয়ে আমাদের (মুসলমানদেরকে) আলাদাভাবে কোন খুশির দিনের ব্যবস্থা করতে হবেনা।” (সুবহানাল্লাহ্) (বুখারী)
উপরোক্ত ঘটনা বা ওয়াকেয়া হতে আমরা এ কথাই বুঝতে পারলাম যে, মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন উম্মতে মুহম্মদীর জন্যে দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন বা ধর্মই পরিপূর্ণ নয়। অর্থাৎ সবই অপূর্ণ ছিল এবং বর্তমানেও অপূর্ণ রয়েছে। একমাত্র দ্বীন ইসলামই পরিপূর্ণ।
আর তাই আল্লাহ্ পাক বলেন,

كل فى كتاب مبين.

অর্থঃ- সুস্পষ্ট কিতাবে (অর্থাৎ কুরআন শরীফে) সব কিছুই রয়েছে।” (সূরা হুদ/৬)

مافرطنا فى الكتاب من شئ.

অর্থঃ- আমি এ কিতাবে কোন কিছুই বর্ণনা করতে ছেড়ে দেইনি।” (সূরা আনয়াম/৩৮)
আল্লাহ পাক এ প্রসঙ্গে আরো বলেন,

ولا رطب ولا يابس الا فى كتاب مبين.

অর্থঃ- শুকনা এবং ভিজা এমন কিছুই নেই, যা এ স্পষ্ট কিতাবে উল্লেখ করা হয়নি।” (সূরা আন্য়াম/৫৯)
এ প্রসঙ্গে কিতাবে একটি ওয়াক্বেয়া উল্লেখ আছে- হানাফী মায্হাবের ইমাম, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার কিতাব মুতালায়াহ করার সময় পিপাসিত হয়ে যান। তাঁর হুজরা শরীফের পাশেই এক ব্যক্তি শরবত বিক্রি করতো। তিনি পানি পিপাসা নিবারনের জন্য শরবত ওয়ালাকে গিয়ে বললেন- ভাই শরবত ওয়ালা, তুমি আমাকে এক গ্লাস শরবত পান করাও, এর বিনিময়ে আমি তোমাকে একটি জরুরী মাসয়ালা শিক্ষা দিব। শরবত ওয়ালা বললো- মাসয়ালার বিনিময়ে আমার শরবত বিক্রি হয়না, আমার শরবত পান করতে হলে পয়সা লাগবে। হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট যেহেতু কোন পয়সা ছিলনা, সেহেতু তিনি শরবত পান না করেই চলে গেলেন।
এদিকে শরবতওয়ালা তার মেয়েকে বিবাহ দিবে, বিবাহের বিষয়াদি নিয়ে ছেলে পক্ষের অভিবাবকদের সাথে আলোচনা হচ্ছিল। ছেলের পক্ষ শরবত ওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলো- আপনি মেয়ের বিয়েতে কি কি দিবেন? শরবতওয়ালা বললো- যা চান, তাই দিব। ছেলের পক্ষ বললো- আপনি সাধারণ শরবতওয়ালা, আমরা যা চাই, তা কি করে দিবেন? কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পর শরবত ওয়ালা রাগ হয়ে বলে উঠলো- আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সব দিব। যদি না দিতে পারি, তবে আমার স্ত্রী তালাক। ছেলের পক্ষ বললো- প্রথমে নিজ স্ত্রীর ব্যাপারে ফায়সালা করুন, অতঃপর মেয়ের বিয়ের ব্যপারে আলোচনা হবে।
শরবতওয়ালা তার স্ত্রীর তালাক সংক্রান্ত বিষয়ের ফায়সালার জন্য আলিমদের দরবারে ঘুরতে লাগলো, কিন্তু কেউ তার ফায়সালা দিতে পারলোনা। শেষ পর্যন্ত ঘুরতে ঘুরতে শরবতওয়ালা হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবারে উপস্থিত হলো এবং উক্ত বিষয়ের ফায়সালা কামনা করলো। হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, সে দিন শরবতের বিনিময়ে এই মাসয়ালাটিই তোমাকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। তুমি সেদিন শরবতের বিনিময়ে পয়সা চেয়েছিলে, আজ আমার কাছ থেকে ফতওয়া নিতে হলে এক হাজার দিরহাম লাগবে। শরবতওয়ালা এক হাজার দিরহাম নিয়ে আসলো। ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন ফতওয়া দিলেন, “তোমার মেয়ের বিয়েতে এক জিল্দ কুরআন শরীফ দিয়ে দাও, তোমার স্ত্রী তালাক হবেনা। কারণ আল্লাহ পাক কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

ولا رطب ولا يابس الا فى كتاب مبين.

অর্থঃ- শুকনা এবং ভিজা এমন কিছুই নেই, যা এ স্পষ্ট কিতাবে উল্লেখ করা হয়নি।” (সূরা আন্য়াম/৫৯)
অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, তার চাইতেও বেশী কুরআন শরীফে রয়েছে। (সুবহানাল্লাহ্)
অতএব  প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ তথা দ্বীন ইসলামে সব বিষয়ের ফায়সালাই রয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করা। কেননা আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

يايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة ولا تتبعوا خطوت الشيطان انه لكم عدو مبين.

অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশ কর, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাক্বারা/২০৮)
অর্থাৎ জিন ও মানব জাতির জন্যে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুম মুতাবিক চলতে হলে যা কিছুর দরকার অর্থাৎ তার ব্যক্তিগত পর্যায় হতে শুরু করে, ইসলামী খিলাফত পর্যায় পর্যন্ত এবং তার পায়ের তলা হতে মাথার তালু পর্যন্ত, তার হায়াত হতে মৃত্যু পর্যন্ত, এক কথায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত সমস্যারই উদ্ভব হোক না কেন, সকল বিষয়েরই ফায়সালা বা সমাধান দ্বীন-ইসলামের মধ্যে অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের মধ্যে রয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্ট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ, অর্থাৎ ক্বমীছ বা কোর্তাসহ সকল বিষয়ের সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট ফায়সালা দ্বীন ইসলামে রয়েছে। কাজেই যারা বলে দ্বীন ইসলামে পোশাকের সুনির্দিষ্ট কোন বর্ণনা নেই, আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৌসুমের চাহিদা মোতাবেক যখন যে পোশাক পেতেন, তাই পরিধান করতেন।তাদের এ বক্তব্য সম্পুর্ণই মিথ্যা ও কুফরীমূলক। এ ধরণের বক্তব্য থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের খালিছ তওবা করা ফরয ও ওয়াজিব।
মূলকথা হলো, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যে পোশাক পরিধান করেছেন সেটাই ইসলামী পোশাক বা সুন্নতী পোশাক। আর সেই পোশাকের বর্ণনা সুস্পষ্টভাবেই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে রয়েছে। তাই প্রত্যেকের উচিৎ তা জেনে পোষাক বা ক্বমীছের ক্ষেত্রেও সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করা। অর্থাৎ যে ধরণের ক্বমীছ বা কোর্তা পরিধান করা খাছ সুন্নত সে ধরণের ক্বমীছ বা কোর্তা পরিধান করে সুন্নতের ইত্তিবা করা। কারণ, সুন্নতের অনুসরণ ছাড়া কোন বান্দার জন্য আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন, কুরআন শরীফের সূরা আলে ইমরান”-এর ৩১নং আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم والله غفور رحيم.

অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি সারাবিশ্বের মানুষ ও জ্বিনদেরকে বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহ পাককে ভালবাসতে চাও তাহলে আমাকে অনুসরণ-অনুকরণ করো। তাহলে আল্লাহ পাক তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুণাহ্খতাগুলো ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল, দয়ালু করুণাময়।
মিশকাত শরীফে” ‘কিতাবুল ঈমানেবর্ণিত আছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل امتى يدخلون الجنة الا من ابى قيل ومن ابى قال من اطاعنى دخل الجنة ومن عصانى فقد ابى. رواه البخارى.

অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার সকল উম্মতই জান্নাতে যাবে, যে জান্নাতে যেতে অসম্মত সে ব্যতীত। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে অসম্মত? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে আমাকে ইত্তিবা (অনুসরণ-অনুকরণ) করে সে জান্নাতে যাবে আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে সে জান্নাতে যেতে অসম্মত। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা বর্ণনা করেছেন।
মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুল ঈমানেবর্ণিত আছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب سنتى فقد احبنى ومن احبنى كان معى فى الجنة. رواه الترمذى.

অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে (অনুসরণের মাধ্যমে) ভালবাসে যে যেন আমাকেই ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালবাসে, সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা বর্ণনা করেছেন।

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تمسك بسنتى عند فساد امتى فله اجر مائة شهيد. رواه البيهقى فى كتاب الجهاد.

অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিৎনা-ফাসাদের যুগে একটি সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে, তার জন্য একশত শহীদের ছওয়াব রয়েছে। হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি কিতাবুল জিহাদেএটা বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নত পালন করতে যেমন নির্দেশ দিয়েছেন তেমনিভাবে সুন্নতের খিলাফ কাজ তথা বিদ্য়াত, বেশরা, হারাম ও নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকতেও বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا.

অর্থঃ- তোমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের জন্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা তোমরা আঁকড়িয়ে ধরো। আর তোমাদেরকে যা থেকে বারণ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।” (সূরা হাশর-৭)
উল্লেখ্য যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর যা কিছু নতুন উদ্ভব হয়েছে, যার অস্তিত্ব শরীয়তে নেই তাই বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়্যাহ্ যা শরীয়তে পরিত্যাজ্য। আর যা নতুন উদ্ভব হয়েছে সত্যিই কিন্তু তার নমুনা বা অস্তিত্ব শরীয়তে বিদ্যমান রয়েছে তাই বিদ্য়াতে হাসানা বা উত্তম আবিস্কৃত। যা শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণীয়।
বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্র সম্পর্কে মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুল ঈমানেবর্ণিত আছে,

كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة.

অর্থঃ- প্রত্যেক নতুন কথাই বিদ্য়াত (যদিও হাসানা হয়।)। আর প্রত্যেক বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ গোমরাহী।” (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ)
অতএব, যারা ভুল ফতওয়া দিয়ে মানুষদেরকে খাছ সুন্নত থেকে ফিরিয়ে রাখে তাদেরকে চিনে তাদের ধোঁকা থেকে যেন নিজ ইমাম-আমলকে হিফাযত করতে পারে এবং হক্ব বা সঠিক বিষয়টা জেনে আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি ও রেযামন্দী অর্জন করতে পারে। এটাই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মূল উদ্দেশ্য বা কারণ।
আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে প্রদত্ত ফতওয়া জেনে সে অনুযায়ী আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি ও রেযামন্দী হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
ক্বমীছশব্দের তাহক্বীক্বী অর্থ ও
ক্বমীছ’-এর সঠিক পরিচয়
قميص ক্বমীছ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হলো- কোর্তা, জামা, ক্বমীছ ইত্যাদি। আর শরীয়তের পরিভাষায় ক্বমীছ বা কোর্তা হলো, যার গেরেবান আছে যা বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী লাগানো হয় যা নিছফুস্ সাক্ব। অর্থাৎ হাটু ও পায়ের গিরার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত বিলম্বিত। গোল যা কোনা ফাঁড়া নয়, যার আস্তিন আছে, যা অতি সহজেই মানুষের সতর ও ইজ্জত আবরু ঢাকে।
যেমন, ‘আবূ দাউদ শরীফেরবিশ্ববিখ্যাত শরাহ আউনুল মাবূদ’-এর কিতাবুল লিবাসের’ ‘ক্বমীছ বা কোর্তার আলোচনাপর্বে উল্লেখ রয়েছে,
[১-২]

وجه احبية القميص اليه صلى الله عليه وسلم انه استر للاعضاء عن الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن ولابسه اكثر تواضعا.

অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ক্বমীছ বা কোর্তা সবচেয়ে পছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলোঃ কেননা, ক্বমীছ ইযার বা লুঙ্গি ও রিদা বা চাদর অপেক্ষা সতরকে পরিপূর্ণভাবে ঢাকে। অথচ ক্বমীছ অল্প খরচে হয়, শরীরের জন্য হালকা এবং এটা পরিধানে অধিক বিনয়-নম্রতা প্রকাশ পায়।” (অনুরূপ জামউল ওয়াসায়িল’-এ উল্লেখ আছে।)
আবূ দাউদ শরীফেরশরাহ বযলুল মাজহুদ”-এর কিতাবুল লিবাসের’ ‘ক্বমীছ বা কোর্তারআলোচনা পর্বে উল্লেখ রয়েছে,
 [৩]

وانما كان القميص احب من غير من الثياب لانه امكن فى الستر من الرداء والازار الذين يحتاجان كثيرا الى الربط والامساك وغير ذلك.

অর্থঃ- ক্বমীছ বা কোর্তা অন্যান্য পোশাকের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় কারণ হলো, তা চাদর ও লুঙ্গী থেকেও সতর ঢাকতে অধিক উপযোগী। আর চাদর ও লুঙ্গি শরীর ঢাকতে, ছতর বাঁধতে ইত্যাদি কাজে খুবই উপযোগী।
[৪]

والظاهر انه سمى قميص لان الادمى ينقمص اى يدخل فيه وينغمس ليسشربه.

অর্থঃ- প্রকাশ্য কথা এই যে, ক্বমীছকে এজন্য ক্বমীছ বলা হয় যেহেতু তা মানুষকে ঢেকে নেয় অর্থাৎ মানুষ তার ভিতর ঢুকে পড়ে এবং তার দ্বারা নিজ সতরকে হিফাযত করে।
জামউল্ ওয়াসায়িল ফী শরহিশ্ শামায়িলকিতাবের লিবাসঅধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
[৫-৮]

والقميص على ماذكره الجوهرى وغيره ثوب مخيط بكمين غير مفرج يلبس تحت الثيابوفى القاموس القميص معلوم ...... ولايكون الا من القطن واما الصوف فلا.

অর্থঃ- হযরত জাওহারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ উল্লেখ করেছেন, ক্বমীছ হলো, সিলাই করা পোশাক যার দুটি অস্তিন আছে, যা কোনা ফাড়া নয়। অর্থাৎ গোল যা অন্যান্য পোশাক যেমন, চাদর, জুব্বা ইত্যাদির নিচে পরিধান করা হয়। কামূসঅভিধানে আছে, ক্বমীছ হলো, ..... যা সূতী কাপড়ের তৈরি। যা পশমী হবে না।” (অনুরূপ শরহুল মানাবীমিরকাত’-এ আছে।)
হযরত ইমাম মুহাদ্দিছ শাইখ আব্দুর রঊফ আল মানাবী আল মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শরহুল্ মানাবী ফী শরহিশ্ শামায়িলনামক কিতাবের লিবাসঅধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
[৯]

(القميص) لانه استر للبدن من الازار والرداء او لانه اخف مؤنة واخف على البدن ولابسه تكبرا من لابس غيره فهو احبها اليه لبسا.

অর্থঃ- “(ক্বমীছ উত্তম পোশাক) কেননা তা লুঙ্গি ও চাদর অপেক্ষা শরীরকে অধিক বেষ্টনকারী অথবা ক্বমীছ অল্প খরচে হয়, শরীরের জন্য হালকা ওজনবিশিষ্ট, অন্যান্য পোশাক পরিধানকারীদের অহংকার থাকে; কিন্তু ক্বমীছ পরিধানকারীর অহংকার থাকে না। আর ক্বমীছ উত্তম পোশাক।
[১০-১১]

قال المحقق ابو زرعة ولعله ماخوذ من الجلدة التى هى غلاف القلب فان اسمها القميص وهو اسم لما يلبس من المخيط الذى له كمان وجيب.

অর্থঃ- মুহাক্কিক আবূ যূরয়াহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মানুষের ক্বল্ব আবৃতকারী পর্দাকেও ক্বমীছ বলা হয়। কেননা, তা ক্বলবকে ঢেকে রাখে। ক্বমীছ হলোঃ যা সিলাই করে পড়া হয়, যার দুটি আস্তিন ও একটি গেরেবান বা গলাবন্ধনি আছে।” (আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া শরহে শামায়িলে অনুরূপ আছে।)
আল আলিমুল হুমাম, আল্লামা ইমাম শাইখ হযরত ইব্রাহীম বাজূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লেখা আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামায়িলিল্ মুহম্মদিয়ানামক কিতাবের লিবাসঅধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে,
[১২]

القميص اسم لما يلبس من المخيط الذى له كمان وجيب يلبس تحت الثياب ولا يكون من صوف.

অর্থঃ- ক্বমীছ বা কোর্তা বলা হয়, যা সিলাই করে পরিধান করা হয়। যার দুটি আস্তিন একটি গেরেবান আছে। যা জুব্বা, চাদর ইত্যাদি কাপড়ের নিচে পরিধান করা হয়, যা পশমী হবে না।
মুহাদ্দিছুশ্ শাহীর, ফক্বীহুন্ নাবীল, আল্লামা আলী বিন সুলতান মুহম্মদ ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহকিতাবে, হযরত আল উস্তাযুল আল্লাম, ফাযীলাতুশ্ শাইখ, মাওলানা মুহম্মদ ইদ্রীস কান্দুলুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আত্ তালীকুছ ছবীহ আলা মিশকাতিল মাছাবীহ’-এর লিবাসঅধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
[১৩-১৪]

القميص اسم لما يلبس من المخيط الذى له كمان وجيب، وقيل وجه احبية القميص اليه صلى الله عليه وسلم انه استر للاعضاء من الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن او لابسه اكثر تواضعا.

অর্থঃ- ক্বমীছ বা কোর্তা হলোঃ যা সিলাই করে পরিধান করা হয়, যার দুটি আস্তিন ও একটি গেরেবান আছে। বলা হয়, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে ক্বমীছ সর্বাধিক পছন্দনীয় কারণ হলো, তা লুঙ্গি ও চাদর অপেক্ষা  শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আবৃতকারী। তাছাড়া তা অল্প খরচে তৈরী হয়। শরীরের পক্ষে হালকা ও আরামদায়ক এবং এর পরিধানকারীর মধ্যে অনেক বিনয় নম্রতার প্রকাশ ঘটে।
উপরোক্ত সংজ্ঞা, তাহক্বীক্ব, অর্থ ও পরিচিতি থেকে স্পষ্ট হলো যে, ক্বমীছ বা কোর্তা বলা হয় যার একটি গেরেবান, দুটি আস্তিন থাকবে। গেরেবান বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী থাকবে, নিছফুস্ সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত হবে ও কোনা বন্ধ থাকবে তথা কোনা ফাঁড়া হবে না এবং সূতী কাপড় দ্বারা তৈরী হবে।
সুতরাং শার্ট, কোনা ফাড়া জামা, আস্তিন ছাড়া জামা ইত্যাদি সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
ক্বমীছ বা কোর্তার গুটলী তথা বোতাম কাপড়ের হওয়াই খাছ সুন্নত। প্লাস্টিক, স্টিল ইত্যাদি বোতাম সুন্নত নয়
ক্বমীছের গেরেবান আটকানো গুটলী বা বোতাম কাপড়ের তৈরী হওয়াই খাছ সুন্নত। যাকে আরবীতে বলা হয় زر যিররুন। এর বহুবচন ازرار আয্রারুন ও زرور যুরূরুন। যার অর্থ হলো, গুটলী, কাপড়ের তৈরী গুটলী ইত্যাদি।
যেমন, এ প্রসঙ্গে লুগাত বা অভিধানে উল্লেখ আছে, যে,
[১৫-১৭]
زر বাবে ينصر - نصر যা মূলে يزرر - زرر ছিল, زر এর جمع বা বহুবচন হল ازرار বা زرور
الزر الذى يوضع فى القميص. অর্থাৎ যা ক্বমীছ বা কোর্তায় লাগানো হয়। বা (গলায়) ব্যবহার করা হয়।” (লুগাতে কামুছ, আল মুহীত, লিসানুল আরব ইত্যাদি।)
[১৮]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থাৎ- কোর্তার মধ্যে গুটলি লাগানোা।” (মিছবাহুল লুগাত)
[১৯-২২]
 উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থাৎ- কোর্তার গেরেবান বন্ধ করার জন্য কাপড় অথবা সুতার নির্মিত গোল গুটলী।” (ফিরোযুল লুগাত, লুগাতে সাঈদী, লুগাতে হিরা, গিয়াছুল লুগাত ইত্যাদি।
আবূ দাঊদ শরীফ”-এর ছলাতঅধ্যায়ে, নাসাঈ শরীফ-এর ক্বিবলাঅধ্যায়ে, মিশকাত শরীফ-এর সতরঅধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে,
[২৩-২৫]

حدثنا القعنبى حدثنا عبد العزيز يعنى ابن محمد عن موسى بن ابراهيم عن سلمة بن الاكوع قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى رجل اصيد افاصلى فى القميص الواحد قال نعم وازرره ولو بشوكة.

অর্থঃ- “(হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,) আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত কানাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি অর্থাৎ হযরত ইবনু মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসা বিন ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত সালামা বিন আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি হযরত সালামা বিন আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি একজন শিকারী ব্যক্তি। তাই আমি এক ক্বমীছ বা কোর্তায় নামায পড়তে পারি কিনা? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, পড়তে পার। তবে গুটলী (দিয়ে গেরেবান) বন্ধ করে নাও, যদিও কাঁটা দ্বারা হয়।
অত্র হাদীছ শরীফের وازرره এর ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম আবূ মুহম্মদ মাহমূদ বিন আহমদ বিন মূসা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর লেখা শরহে আবূ দাঊদ লিবদরিদ্দীন আইনীতে উল্লেখ করেছেন,
[২৬]

قوله (وازرره) ... انما امره بالزر ليامن من وقوع النظر على عورته من زيقه حالة الركوع. ومن هذا اخذ ابن شجاع من اصحابنا ان من نظر الى عورته من زيقه تفسد صلاته.

অর্থঃ- “(গুটলী দিয়ে গেরেবান বন্ধ করে নাও) ... এখানে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুটলী দিয়ে গেরেবান বন্ধ করতে নির্দেশ করেছেন। যাতে রুকুর সময় গেরেবানের ফাঁক দিয়ে আওরাত বা সতর দেখা থেকে নিরাপদ থাকা যায়। আমাদের আছহাবগণের একজন হযরত ইবনু শুজা রহমতুল্লাহি আরাইহি ফতওয়া দিয়েছেন, যে তার গেরেবানের ফাঁক দিয়ে নিজের সতরের দিকে দৃষ্টি করবে, তার নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
আল মুহাদ্দিছুশ্ শাহীর আবুত্ তাইয়্যিব শামসুল হক আযীম আবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লেখা আউনুল মাবূদ শরহে আবূ দাউদনামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
[২৭-৩১]

(وازرره) يضم الراء اى اشدده (ولو بشوكة) قال الظيبى هذا اذا كان جيب القميص واسعا يظهر منه عورته فعليه ان يزره لئلا يكشف عورته.

অর্থঃ- “(গুটলী দিয়ে গেরেবান বন্ধ করে নাও।) وازرره শব্দটির আইন কলেমার রা’-এর উপর পেশ দিয়ে পড়তে হবে। অর্থাৎ গেরেবানকে শক্ত করে আটকায়ে দাও। (যদিও কাঁটা দ্বারা হয়) আল্লামা ত্বীবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন ক্বমীছের গেরেবান প্রশস্ত হবে তখন তার ফাঁক দিয়ে সতর দেখা যাবে। তাই অবশ্য কর্তব্য হলো ক্বমীছের গেরেবান গুটলী দিয়ে আটকিয়ে দেয়া, যাতে সতর প্রকাশ না পায়।” (অনুরূপ বযলুল মাজহুদ, শরহুত্ ত্বীবী, মিরকাত ও আত্ তালীকুছ ছবীহতেও উল্লেখ আছে।)
মাওলানা আবূ ইব্রাহীম খলীল আহমদ আইউবী আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লেখা বযলুল মাযহুদ ফী হল্লে আবী দাউদনামক কিতাবে উল্লেখ আছে,
[৩২]

(وازرره) اى شد القميص واجمع بين طرفيه لئلا تبدو العورة.

অর্থঃ- “(গুটলী দিয়ে গেরেবান বন্ধ করে নাও।) অর্থাৎ ক্বমীছের গেরেবান শক্ত করে আটকাও এবং দুপ্রান্তকে একত্র করো, যাতে সতর প্রকাশ না পায়।
নাসায়ী শরীফেরশরাহ যখীরাতুল উকবা ফী শরহিল মুজতবাকিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
[৩৩]

(وزر) .... فعل امر من الزر وهو الربط بالازرار يقال زرالرجل القميص زرا. ادخل الازرار فى العرا.

অর্থঃ- “(গুটলী দিয়ে গেরেবান বন্ধ করে নাও) .. শব্দটি زر যাররুন মাছদার থেকে امر আমর তথা নির্দেশসূচক শব্দ। অর্থ হলোঃ গুটলী দিয়ে গেরেবান লাগানো। যেমন, বলা হয়, লোকটি গুটলী দিয়ে ক্বমীছ বা কোর্তার গেরেবান আটকালো। গুটলী অপর প্রান্তের গুটলী রাখার ঘাটে প্রবেশ করাবে।
আল মুহাদ্দিছুশ শাহীর, আল ফক্বীহুল নাবীল, আলী বিন সুলতান মুহম্মদ ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহকিতাবে লিখেছেন,
[৩৪-৩৫]

وفى شرح المنية افتى بعض المشائخ بانه اذا رأى عورته تفسد صلاته وهو ظاهر الحديث.

অর্থঃ- শরহুল মুনিয়া কিতাবে আছে, অধিকাংশ মাশায়িখে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, যদি সতর দেখা যায় তাহলে নামায ফাসিদ বা ভঙ্গ হয়ে যাবে।’ (অনুরূপ বযলুল মাজহুদ কিতাবেও উল্লেখ আছে।)
হাদীছ শরীফ এবং তার ব্যাখ্যা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ক্বমীছ বা কোর্তা হবে সূতী কাপড়ের গুটলী বিশিষ্ট, যার গেরেবান হবে বুকের দিকে। আরো প্রমাণিত হলো যে, উক্ত শিকারী ছাহাবী এক ক্বমীছে নামায পড়ার অনুমতি পেয়ে এক ক্বমীছে নামায পড়েছেন। এতে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, ক্বমীছের নিম্নভাগ কোনাবন্ধ তথা গোল ছিলো। কেননা, গোল না হলে সতর দেখা যাবে। আর সতর দেখা গেলে নামায ভঙ্গ হয়ে যায়। আর নামায ভঙ্গ হয়ে যাক এমন নির্দেশ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করতে পারেন না।
আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, শামায়িলুত্ তিরমিযী শরীফ”-এর লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে,
[৩৬-৩৮]

حدثنا النفيلى واحمدبن يونس قالا حدثنا زهير حدثنا عروة بن عبد الله قال ابن نفيل ابن قشير ابو مهل الجعفى حدثنا معاوية بن قرة حدثنا ابى قال اتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى رهط من مزينة فبايعناه وان قميصه لمطلق الازرار قال فبايعناه ثم ادخلت يدى فى جيب قميصه فسست الخاتم.

অর্থঃ- হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত নুফাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আহমদ বিন ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁরা দুজন বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত যুহাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত উরওয়াহ বিন আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইবনু নুফাইল ইবনে কুশাইর আবূ মাহাল্ জুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত মুয়াবিয়া বিন কুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা (হযরত কুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)। তিনি বলেছেন, আমি একদা মুযাইনা গোত্রের একদল লোকের সাথে হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে আসলাম এবং তাঁর হাত মুবারকে বাইয়াত হলাম। সে সময় তাঁর ক্বমীছ মুবারকের কাপড়ের গুটলী খোলা ছিলো। রাবী বলেন, আমরা তাঁর হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণের পর, আমি আমার হাতখানা তাঁর ক্বমীছ বা জামা মুবারকের গেরেবানের ভিতর ঢুকালাম এবং মোহরে নুবুওওয়াত স্পর্শ করলাম।
অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আউনুল মাবূদ শরহে আবূ দাউদকিতাবে উল্লেখ আছে,
[৩৯-৪১]
 উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- যা ক্বমীছে বা কোর্তায় লাগানো হয় তাকেই যিররুন বা কাপড়ের গুটলী বলে। যেমন, কামূসে বলা হয়েছে, ‘ছিরাহকিতাবে রয়েছে, زر যিররুনকে যের সহ পড়তে হবে। যার অর্থ হলো, যা দ্বারা গেরেবানকে আটকানো হয়। হিন্দীভাষায় যাকে ঘুন্ডী তথা কাপড়ের গুটলী বলা হয়।
মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ ও আত্ তালীকুছ ছবীহ আলা মিশকাতিল মাছাবীহকিতাবে উল্লেখ আছে,
[৪২-৪৩]

(لمطلق الازرار) اى محلوها اومتروكها مركبة.

অর্থঃ- “(কাপড়ের গুটলী খোলা ছিলো) অর্থাৎ গুটলী খোলার কারণে স্থানটি খোলা ছিলো অথবা ইচ্ছা করেই গুটলী খোলা রেখেছেন।
জামউল ওয়াসায়িল ফী শরহিশ্ শামায়িলকিতাবে উল্লেখ আছে,
[৪৪]

(وان قميصه لمطلق) ... اى غير مشدود الازرار.

অর্থঃ- “(নিশ্চয়ই তাঁর ক্বমীছের গেরেবান খোলা ছিলো). অর্থাৎ ক্বমীছের কাপড়ের গুটলী লাগানো ছিলো না।
আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামায়িলিল্ মুহম্মদিয়াকিতাবে উল্লেখ আছে,
[৪৫]

(وان قميصه لمطلق) ... زر قميصه مطلق.

অর্থঃ- “(নিশ্চয়ই তাঁর ক্বমীছের গেরেবান খোলা ছিলো।) .... অর্থাৎ ক্বমীছের কাপড়ের গুটলী খোলা ছিলো।
জামউল্ ওয়াসায়িল ফী শরহিশ্ শামায়িলকিতাবে বর্ণিত আছে,
[৪৬-৪৭]

ماذكره ابن الجوزى فى الوفاء عن ابن عمر اله قال ما اتخذ رسول الله صلى الله وسلم قميصا له زر.

অর্থঃ- হযরত ইমাম ইবনু জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ওয়াফাকিতাবে উল্লেখ করেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যে ক্বমীছ মুবারক ছিল, তাতে কাপড়ের গুটলী মুবারক ছিলো।
উল্লিখিত হাদীছ শরীফদ্বয় এবং তার ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যিররুন তথা কাপড়ের গুটলীওয়ালা ক্বমীছ তথা কোর্তা ব্যবহার করতেন। তাদের গুটলী ছিলো কাপড়ের তৈরী বা সূতার তৈরী। গুটলীও ক্বমীছের একটি অংশ। তাই স্পষ্ট হলো কাপড়ের তৈরী গুটলীই খাছ সুন্নত। প্লাষ্টিকের বোতাম, বিভিন্ন ধাতুর চেইন ইত্যাদি দিয়ে গেরেবান আটকানো সুন্নত নয়।
পুরুষের ক্বমীছের গেরেবান বুক বা
সামনের দিকে ফাড়া হওয়া খাছ সুন্নত
আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, শামায়িলুত্ তিরমিযী শরীফ”-এর লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে,
[৪৮-৫০]

حدثنا النفيلى واحمدبن يونس قالا حدتنا زهير حدثنا عروة بن عبد الله قال ابن نفيل ابن قشير ابو مهل الجعفى حدتنا معروية بن قرة حدثنا ابى قال اتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى رهط من مزينة فيايعناه وان قميصه لمطلق الازرار قال فبايعناه ثم ادخلت يدى فى جيب قميصه فمسث الخاتم.

অর্থঃ- হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত নুফাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আহমদ বিন ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি। তাঁরা দুজন বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত যুহাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত উরওয়াহ বিন আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইবনু নুফাইল ইবনে কুশাইর আবূ মাহাল্ জুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত মুয়াবিয়া বিন কুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আমার পিতা (হযরত কুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু)। তিনি বলেছেন, আমি একদা মুযাইনা গোত্রের একদল লোকের সাথে হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে আসলাম এবং তাঁর হাত মুবারকে বাইয়াত হলাম।  সে সময় তাঁর ক্বমীছ মুবারকের কাপড়ের গুটলী খোলা ছিলো। রাবী বলেন, আমরা তাঁর হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহণের পর, আমি আমার হাতখানা তাঁর ক্বমীছ বা জামা মুবারকের গেরেবানের ভিতর ঢুকালাম এবং মোহরে নুবুওওয়াত স্পর্শ করলাম।
অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আউনুল মাবূদ শরহে আবূ দাঊদকিতাবে উল্লেখ আছে,
[৫১-৫৩]

قال الحافظ فى الفتح ... ان جيب قميصه كان فى صدره.

অর্থঃ- হাফিয তাঁর ফাত্হনামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, .... হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বমীছ মুবারকের গেরেবান বুক মুবারকের দিকে ছিলো।” (অনুরূপ জামউল ওয়াসায়িলনামক কিতাবে উল্লেখ আছে।)
মিরকাতআত্ তালীকুছ ছবীহনামক কিতাবে উল্লেখ আছে,
[৫৪-৫৭]

قال السيوطى فيه ان جيب قميصه كان على الصدر كما هو المعتاد الان فظن من لا علم عنده انه بدعة.

অর্থঃ- হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বমীছ মুবারকের গেরেবান মুবারক বুক মুবারকের দিকে ছিলো। যে রকম আমরা বর্তমানে পরিধান করে থাকি। যাদের ইল্ম নেই, মূর্খ তারাই এটাকে বিদ্য়াত বলে ধারনা করে থাকে।” (অনুরূপ শরহুল মানাবী মিছরী শরহে শামায়িলনামক কিতাবে আছে।) এছাড়াও বুখারী শরীফ”-এর লিবাসঅধ্যায়ে বুকের দিকে ও অন্য দিকে গেরেবান রাখবে এ সম্পর্কে পরিচ্ছেদ বাঁধা হয়েছে।
ক্বমীছআস্তিন বিশিষ্ট হওয়া খাছ সুন্নত। যা ঢিলে-ঢালা ও কব্জি পর্যন্ত বিলম্বিত হওয়া খাছ সুন্নত। আর আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত বিলম্বিত হওয়া জায়িয
আবূ দাউদ শরীফ, শামায়িলুত্ তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ”-এর লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে,
[৫৮-৬০]

عن اسماء بنت يزيد قالت كانت يدكم قميص رسول الله صلى الله عليه وسلم الى الرسغ.

অর্থঃ- হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বমীছ বা কোর্তার আস্তিন মুবারক হাতের কব্জি পর্যন্ত ছিলো।
অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আউনুল মাবূদ শরহে আবূ দাউদকিতাবে উল্লেখ আছে,
[৬১-৬৭]

وهو مفصل ما بين الكف والساعد.

অর্থঃ- رسغরুস্গতথা কব্জি হলো যা হাতের তালু ও হাতের বাহুকে পৃথককারী। অর্থাৎ কব্জির নিচে হাতের তালু আর উপরে হাতের বাহু। (অনুরূপ বযলুল মাজহুদ, জামউল ওয়াসায়িল, শরহুল মানাবী, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, শরহুত্ ত্বীবী, মিরকাত ইত্যাদি কিতাবে আছে।)
[৬৮-৭১]

ونقل فى شرح السنة ان ابا الشيخ بن حبان اخرج بهذا الاسناد بلفظ كان يد قميص رسول الله صلى الله عليه وسلم اسفل من الرسغ.

অর্থঃ- শরহুস্ সুন্নাহকিতাবে বর্ণিত আছে, হযরত আবুশ শাইখ ইবনে হাব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি এই হাদীছ শরীফের শব্দগুলি এই সনদে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বমীছ মুবারকের আস্তিন মুবারক কব্জি মুবারকের নিচে ছিলো।” (অনুরূপ জামউল ওয়াসায়িল, মিরকাত ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে)
[৭২-৭৭]

واخرج ابن حبان ايضا من طريق مسلم بن يسار عن مجاهد عن ابن عباس رضى الله عنهما قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يلبس قميصا فوق الكعبين مستوى الكمين باطراف اصابعه.

অর্থঃ- হযরত ইবনে হাব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসলিম বিন ইয়াসার রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঁয়ের গিরা মুবারক দ্বয়ের উপর পর্যন্ত লম্বা এবং আস্তিনদ্বয় দুহাতের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত সমানভাবে প্রলম্বিত ক্বমীছ বা কোর্তা পরিধান করতেন।” (অনুরূপ জামউল ওয়াসায়িল, তালীকুছ্ ছবীহ, ইবনে মাজাহ, মিরকাত ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে)
[৭৮-৮৪]

وفى الجامع الصغير برواية الحاكم عن ابن عباس رضى الله عنهما كان قميصه فوق الكعبين وكان كمه مع الاصابع.

অর্থঃ- আল জামিউছ ছগীরকিতাবে মুস্তাদারিকে হাকিমের রিওয়ায়েতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বমীছ মুবারক দুপা মুবারকের গিরার উপর পর্যন্ত ও আস্তিন হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিলো।” (অনুরূপ শরহুল মানাবী, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, আত্ তালীকুছ ছবীহ, মুসতাদারিকে হাকিম, মিরকাত ইত্যাদি)
[৮৫-৫৬]

بحمل الرسغ على بيان الافضل وحمل الرؤس على بيان الجواز.

অর্থঃ- আস্তিন কব্জি পর্যন্ত হওয়া আফযল বা উত্তম বর্ণনা করা হয়েছে। আর আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত হওয়া জায়িয বুঝানো হয়েছে। (অনুরূপ আত্ তালীকুছ্ ছবীহ কিতাবে উল্লেখ আছে)
বযলুল্ মাজহুদ ফী হল্লে আবী দাঊদকিতাবে উল্লেখ আছে,
[৮৭-৯০]

البيهقى فى شعب الايمان وروى فيه عن على رضى الله عنه كان يمد كم القميص حتى اذا بلغ الاصابع قطع ما فضل.

অর্থঃ- বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমানহাদীছ শরীফের কিতাবে আছে, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বমীছের আস্তিন হাতের আঙ্গুল অতিক্রম করতঃ তখন অতিরিক্ত কাপড় কেটে ফেলতেন।” (অনুরূপ শরহুল মানাবী, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে)
[৯১-৯২]

فيمكن ان يحمل حديث الباب عن الافضل وحديث البيهقى على بيان الجواز.

অর্থঃ- অত্র বাবের হাদীছ শরীফ তথা কব্জি পর্যন্ত আস্তিনের হাদীছ আস্তিন কব্জি পর্যন্ত হওয়া আফযল বা উত্তম বুঝায়। আর বাইহাক্বীবর্ণিত হাদীছ শরীফ তথা আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত আস্তিন হওয়া দ্বারা আস্তিন আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত হওয়া জায়িয বুঝানো হয়েছে।
জামউল্ ওসায়িল ফী শরহিশ্ শামায়িলকিতাবে উল্লেখ আছে,
[৯৩-৯৪]

قال الجزرى فيه دليل على ان السنة ان لا يتجاوزكم القميص الرسغ واما غير القميص فقالوا السنة فيه لايتجاوز رؤس الاصابع من جبة وغيرها.

অর্থঃ- হযরত ইমাম জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ক্বমীছের আস্তিনের সুন্নত হলো, তা কব্জিকে অতিক্রম করবে না। আর ক্বমীছ ব্যতীত যেমন জুব্বা ও অন্যান্য পোশাকের আস্তিনের সুন্নত হলো, তা হাতের আঙ্গুলের মাথাকে অতিক্রম করবে না।” (অনুরূপ মিরকাত শরীফে উল্লেখ আছে)
[৯৫-৯৮]

ذكره ابن الجوزى فى كتاب الوفاء نقلا عن ابن حبان فان كان لفظ الخبر كما ذكره ففيه انه يجوز ان يتجاوز بكم القممص الى رؤس الاصابع.

অর্থঃ- হযরত ইমাম জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাবুল ওয়াফাতে হযরত ইবনে হাব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে নকল করেছেন যে, নিশ্চয়ই ক্বমীছ বা কোর্তার আস্তিন (কব্জি থেকে) আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত বাড়ানো জায়িয।” (অনুরূপ মিরকাত শরীফেও আছে)
শামায়িলুত্ তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ শরহুল মানাবী মিছরীকিতাবে উল্লেখ আছে,
[৯৯-১০০]

قال الحافظ زين الدين العراقى فلو اطال اكمام قميصه حتى خرجت على المعتاد كما يفعله بعض المتكبرين فلا شك فى حرمة.

অর্থঃ- হযরত হাফিয যয়নুদ্দীন ইরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদি ক্বমীছের আস্তিন স্বাভাবিক অবস্থা থেকে লম্বা হয়ে বাইরে বের হয়ে যায় যেমনটি অহংকারী লোকেরা করে থাকে, তাহলে তা হারাম হওয়াতে কোন সন্দেহ নেই।” (অনুরূপ আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)
রদ্দুল মুহতার (শামী)”-এর কিতাবুল হাযর ওয়াল্ ইবাহাহ্তে উল্লেখ আছে,
[১০১]

اعلم ان الكسوة منها فرض وهو مايستر العورة ويدفع الحر والبرد والاولى كونه من القطن اوالكتان اوالصوف على وفاق السنة بان يكون ذيله لنصف ساقه وكمه لرؤوس اصابعه وفمه قدر شبر.

অর্থঃ- “(হযরত ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) জেনে রাখুন, পোশাক পরিধান করা ফরয। যা ছতর আবৃত করে এবং ঠান্ডা ও গরম নিবারণ করে। পোশাক তুলার সূতার, সূতা জাতীয় অথবা পশমী কাপড়ের হওয়া উত্তম। এর দৈঘ্য নিসফুস্ সাক্ব পর্যন্ত। আস্তিন আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত এবং আস্তিনের পরিধি এক বিঘত হওয়া সুন্নত।
উল্লিখিত হাদীছ শরীফ এবং তার ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, সুন্নতী ক্বমীছের আস্তিন হাতের কব্জি থেকে আঙ্গুলের মাথার ভিতরেই রাখা খাছ সুন্নত। কব্জির উপরে এবং আঙ্গুলের মাথা পার করা খিলাফে সুন্নত।
খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা নিছফুস্ সাক্ব তথা হাটু থেকে গিরার মাঝামাঝি পর্যন্ত হওয়া খাছ সুন্নত।গিরার নিচে নামা হারাম।
আবূ দাউদ শরীফের” ‘কিতাবুল লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
[১০২-১০৫]

عن يزيد ابن سمية قال سمعت ابن عمر يقول ما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الازار فهو فى القميص.

অর্থঃ- হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবূ সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইযার বা লুঙ্গির ব্যাপারে যা বলেছেন, তা ক্বমীছ বা কোর্তার ব্যাপারেও প্রযোজ্য।” (অনুরূপ বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, শরহে বদরুদ্দীন আইনী কিতাবেও উল্লেখ আছে)
আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ, “মিশকাত শরীফ-এর লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
[১০৬-১০৯]

عن سالم بن عبد الله عن ابيه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال الاسبال فى الازار والقميص والعمامة من جرمنها شيئا خيلاء لم ينظر الله اليه يوم القيامة.

অর্থঃ- হযরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনইযার বা লুঙ্গি, ক্বমীছ বা কোর্তা (গিরার নীচে) ও ইমামাহ বা পাগড়ী (এক হাতের) অতিরিক্ত ঝুলানো নিষেধ। সুতরাং যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ এর কোন একটি ছেচঁড়িয়ে চলে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না।
 অত্র হাদীছ শরীফ দুটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, লুঙ্গি যেমন নিছফুস্সাক্ব থেকে গিরার উপর পর্যন্ত স্থানে পড়া সুন্নত। তেমনি ক্বমীছও নিছফুস্ সাক্ব থেকে গিরার উপর পর্যন্ত পড়া সুন্নত।
মিশকাত শরীফের” ‘কিতাবুল লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে
[১১০-১১২]

وعن ابى سعيد الخدرى رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ازرة المؤمن الى انصاف ساقيه لاجناح عليه فيما بينه وبين الكعبين وما اسفل من ذلك ففى النار قال ذلك ثلث مرات ولا ينظر الله يوم القيامة الى من جر ازاره بطرا، رواه ابو داؤد وابن ماجة.

অর্থঃ- হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি। তিনি ইরশাদ করেছেন, মুমিনগণের ইযার বা লুঙ্গি নিছফুস্ সাক্ব পর্যন্ত হবে। আর নিছফুস্ সাক্ব থেকে গিরার উপর পর্যন্ত ঝুলাতে কোন গুণাহ্ নেই। টাখনুর নিচে কাপড়ের যে অংশই যাবে তা জাহান্নামে যাবে। একথাটি তিনি তিনবার বললেন। আরো ইরশাদ করলেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ ইযার ছেঁচড়িয়ে চলে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না।” (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ এটা বর্ণনা করেছেন।)
মিশকাত শরীফের” ‘কিতাবুল লিবাসঅধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
[১১৩-১১৫]

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنهما ان النبى صلى الله عليه وسلم قال من جر ثوبه خيلاء لم ينظر الله اليه يوم القيامة. متفق عليه.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন। যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলাবে, আল্লাহ পাক ক্বিয়ামতের দিন তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে।)
মিশকাত শরীফ”-এর লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
[১১৬-১১৭]

وعن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مااسفل من الكعبين من الازار فى النار. رواه البخارى.

অর্থঃ-হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, টাখনুর নিচে ইযারের যে অংশ থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। (অর্থাৎ ঐ অংশ জাহান্নামে যাওয়ার অর্থ হলো লোকটিই জাহান্নামে যাবে।) (বুখারী এটা বর্ণনা করেছেন।)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফগুলোর ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত শরাহ-এর কিতাবসমূহে যা উল্লেখ রয়েছে তা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ
বুখারী শরীফেরবিশ্ববিখ্যাত শরাহ শরহুল কিরমানী”-এর লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
[১১৮-১২৬]

القدر المستحب فيما ينزل اليه طرف القميص والازار لنصف الساقين والجانز بلا كراهة ما تحته الى الكعبين وما نزل عنهما ان كان للخيلاء فهو ممنوع منع تحريم.

অর্থঃ- ক্বমীছ এবং লুঙ্গি প্রলম্বিত করার সুন্নত সীমা হচ্ছে নিছফুস্ সাক্ব। নিছফুস্ সাক্ব থেকে গিরার উপর পর্যন্ত স্থানে ঝুলানো মাকরূহ ছাড়াই জায়িয। আর অহংকারবশতঃ গিরার নিচে ঝুলানো নিষেধ তথা হারাম।” (অনুরূপ শরহুন্ নববী, মিরকাত, শরহত্ ত্বীবী, জামউল ওয়াসিল, শরহুল মানাবী, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবূদ ইত্যাদি কিতাবে রয়েছে)
মুসলিম শরীফেরশরাহ শরহুন্ নববী”-এর লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
[১২৭-১৩১]

انه لايجوز اسباله تحت الكعبين ..... واجمع العلماء على جواز الاسبال للنساء.

অর্থঃ- গিরার নিচে ক্বমীছ বা লুঙ্গি ঝুলানো জায়িয নেই। ... উলামায়ে কিরাম ইজমা করেছেন যে, মহিলাদের জন্য গিরার নিচে কাপড় ঝুলানো জায়িয।” (অনুরূপ মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, জামউল ওয়াসায়িল, শরহুল মানাবী ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে)
ফতহুল মুলহিম বিশ্রহিল মুসলিমকিতাবে উল্লেখ আছে,
[১৩২-১৩৪]

وجاء فى الفتاوى الهندية ৫ : ৩৩৩ ينبغى ان يكون الازار فوق الكعبين الى نصف الساق وهذا فى حق الرجال، واما النساء فيرخير ازارهن اسفل من ازار الرجال ليستر ظهر قدمهن.

অর্থঃ- ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া (আলমগীরী)-এর ৫ম জিঃ ৩৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, লুঙ্গি পায়ের গিরার উপর থেকে নিছফুস্ সাক্ব পর্যন্ত হওয়া উচিৎ। এটা পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট। আর মহিলারা পুরুষদের লুঙ্গি থেকে তাদের দোপাট্টা বা সেলোয়ার আরো নিচে ঝুলাবে। যাতে পায়ের পাতা আবৃত বা ঢেকে যায়।” (অনুরূপ জামউল ওয়াসায়িলেও উল্লেখ আছে)
রদ্দুল মুহতারকিতাবের কিতাবুল হাযর ওয়াল্ ইবাহাহ্-এর মধ্যে উল্লেখ আছে,
[১৩৫]

اعلم ان الكسبوة منها فرض وهو مايستر العورة ويدفع الحر والبرد والاولى كونه من القطن اوالكتان اوالصوف على وفاق السنة بان يكون ذيله لنصف ساقه وكمه لرؤوس اصابعه وفمه قدر شبر.

অর্থঃ- “(হযরত ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) জেনে রাখুন, পোশাক পরিধান করা ফরয। যা ছতর আবৃত করে এবং ঠান্ডা ও গরম নিবারণ করে। পোশাক তুলার সূতার, সূতা জাতীয় অথবা পশমী কাপড়ের হওয়া উত্তম। এর দৈর্ঘ্য নিসফুস্ সাক্ব পর্যন্ত। আস্তিন আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত এবং আস্তিনের পরিধি এক বিঘত হওয়া সুন্নত।
আল্লামা হযরত জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মছনবী শরীফেলিখেছেন,
[১৩৬]
 উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ ক্বমীছ বা কোর্তা নিছফুস্ সাক্ব পর্যন্ত এবং ফাঁড়াবিহীন অর্থাৎ কোনাবন্ধ, গোল হওয়াই খাছ সুন্নত। এর ব্যতিক্রম হলে তা খিলাফে সুন্নত হওয়ায় উত্তম হবে না।
দেওবন্দ মাদ্রাসার মুহাদ্দিছ, মাওলানা আছগর হুসাইন দেহলবী ছাহেব তাঁর গুলজারে সুন্নতকিতাবে লিখেন,
[১৩৭]
 উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তার বর্ণনা- হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ক্বমীছ অধিক পছন্দনীয় ছিল। ক্বমীছ হাটুর নীচ ও টাখনুর উপর পর্যন্ত প্রলম্বিত হওয়া চাই। যে ক্বামীছ বা কোর্তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরিধান করতেন, তা কোনা ফাড়া ছিলনা। তাই গোল, নিছফুস্ সাক্ব ক্বমীছ বা কোর্তাই সুন্নতী কোর্তা। কোনা ফাড়া কোর্তা যতই লম্বা হোকনা কেন, তাতে কখনোই সুন্নত আদায় হবেনা।
প্রমাণিত হলো যে, ক্বমীছ বা কোর্তা নিছফুস্ সাক্ব তথা হাটু ও গিরার মাঝামাঝি ঝুলানো খাছ সুন্নত। তবে নিছফুস্ সাক্ব থেকে গিরার উপর পর্যন্ত ঝুলানোও জায়িয। কিন্তু গিরা পার করে ঝুলানো হারাম বা নাজায়িয।
মহিলাদের ক্বমীছ নিছফুসাক্ব পর্যন্ত হওয়াও খাছ সুন্নত। তবে তাদের ইজার বা দোপাট্টা বা সেলোয়ার পায়ের পাতা পর্যন্ত ইসবাল বা ঝুলানো ফরয। যাতে পায়ের কোন অংশ দেখা না যায়।
খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা গোল
বা কোনাবন্ধ হওয়া খাছ সুন্নত।
কোনা ফাড়া হলে, চাই তা যত
লম্বাই হোক; বিদ্য়াত হবে
আবূ দাঊদ শরীফের’ ‘ছলাতঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
[১৩৮]

عن محمدبن عبد الرحمن بن ابى بكر عن ابيه قال امنا جابربن عبد الله فى قميص ليس عليه رداء فلما انصرف قال ابنى رأيت رسول الله صلى عليه وسلم يصلى فى قميص.

অর্থঃ- হযরত মুহম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবূ বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একদা হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামাযে আমাদের ইমামতি করলেন এক ক্বমীছ পরিহিত অবস্থায়, সে অবস্থায় তাঁর শরীর মুবারকে কোন চাদরও ছিলো না। যখন তিনি সালাম ফিরালেন, তখন বললেন, নিশ্চয়ই আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক ক্বমীছ পরিহিত অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি।
এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বযলুল্ মাজহুদ ফী হল্লে আবী দাঊদকিতাবে উল্লেখ আছে,
[১৩৯]

يظهر فى قوله قميص ليس عليه رداء فاما انه لم يكن عليه ازار ..... ان جابر بن عبد الله كان يصلى فى قميص واحد لم يكن عليه غيره لاازار ولارداء.

অর্থঃ- এক ক্বমীছে নামাযের ইমামতি করেছেন, যে অবস্থায় তাঁর শরীর মুবারকে কোন চাদরও ছিলো না।এর দ্বারা প্রকাশমান যে, তাঁর পরিধানে কোন ইযারও ছিলোনা। ... নিশ্চয়ই হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এক ক্বমীছে নামায পড়েছেন। যাতে এক ক্বমীছ ছাড়া অন্য কোন কাপড় ছিলো না। এমনকি ইযার ও চাদরও ছিলো না।
আবূ দাউদ শরীফের নির্ভরযোগ্য শরাহ শরহে বদরুদ্দীন আইনীতে উল্লেখ আছে,
[১৪০]

واستفيد من هذا الحديث جواز الصلاة فى قميص واحد، وعن ابن عباس رضى الله عنهما لاباس بالصلاة فى القميص الواحد اذا كان ضيقا، وبهذا اخذ اصحابنا حتى اذا كان القميص رفيعا بحيث انه يرى منه جسده لاتجوز الصلاة فيه.

অর্থঃ এ হাদীছ শরীফ থেকে ফতওয়া হলোঃ এক ক্বমীছে নামায পড়া জায়িয। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেছেনঃ এক ক্বমীছে নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই, অভাব বা সংকটের সময়। এ হাদীছ শরীফ থেকে আমাদের আছহাবগণ ফয়সালা দিয়েছেন যে, ক্বমীছ যদি উপরে উঠে বা ছোট হয় বা কোনা ফাড়া হয় আর এতে শরীর (ছতর) দেখা যায়, তাহলে নামায শুদ্ধ হবে না।
উক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যে এক ক্বমীছে নামায পড়েছেন সে ক্বমীছ লম্বা, নিছফুস্সাক্ব ও গোল তথা কোনা বন্ধ ছিল। কখনোই কোনা ফাড়া ছিল না। কারণ, কোনা ফাড়া হলে ছতর প্রকাশ হওয়া অনিবার্য হয়।
যেমন, ‘আবূ দাঊদ শরীফ’-এর ছলাতঅধ্যায়ে, ‘নাসাঈ শরীফ’-এর ক্বিবলাঅধ্যায়ে, ‘মিশকাত শরীফ’-এর সতরঅধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে,
[১৪১-১৪৩]

حدثنا القعنبى حدثنا عبد العزيز يعنى ابن محمد عن موسى بن ابراهيم عن سلمة بن الاكوع قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى رجل اصيد افاصلى فى القميص الواحد قال نعم وازرره ولو بشوكة.

অর্থঃ- “(হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,) আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত কানাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি অর্থাৎ হযরত ইবনু মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসা বিন ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত সালামা বিন আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি (হযরত সালামা বিন আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি একজন শিকারী ব্যক্তি। তাই আমি এক ক্বমীছ বা কোর্তায় নামায পড়তে পারি কিনা? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, পড়তে পার। তবে গুটলী দিয়ে গেরেবান বন্ধ করে নাও, যদিও কাঁটা দ্বারা হয়।
অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় আল মুহাদ্দিছুশ্ শাহীর আবুত্ তাইয়্যিব শামসুল হক আযীম আবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লেখা আউনুল মাবূদ শরহে আবূ দাউদনামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
[১৪৪-১৪৮]

(وازرره) بضم الراء اى اشدده (ولوبشوكة) قال الطيبى هذا اذا كان جيب القميص واسعا يظهر منه عورته فعليه ان يزره لئلا يكشف عورته.

অর্থঃ- “(গুটলী দিয়ে গেরেবান বন্ধ করে নাও।)وازرره শব্দটির আইন কলেমার রা’-এর উপর পেশ দিয়ে পড়তে হবে। অর্থাৎ গুটলীকে শক্ত করে আটকায়ে দাও। (যদিও কাঁটা দ্বারা হয়) আল্লামা ত্বীবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন ক্বমীছের গেরেবান প্রশস্ত হবে তখন তার ফাঁক দিয়ে সতর দেখা যাবে। তাই অবশ্য কর্তব্য হলো ক্বমীছের গেরেবান গুটলী দিয়ে আটকিয়ে দেয়া, যাতে সতর প্রকাশ না পায়।” (অনুরূপ বযলুল মাজহুদ, শরহুত্ ত্বীবী, মিরকাত ও আত্ তালীকুছ ছবীহতেও উল্লেখ আছে।)
উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ থেকে প্রমাণিত হয়, যেখানে ছতর রক্ষার জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গেরেবানকে শক্তভাবে বাঁধতে বললেন, সেখানে দৈর্ঘ্য কোনা ফাড়া হলে আপছে আপ ছতর খুলে যাবে। তাই স্পষ্ট হলো যে, কোনা বন্ধ বা গোল জামাই খাছ সুন্নত। যা ছতর ঢাকতে সহায়ক।
তিরমিযী শরীফ, “আবূ দাউদ শরীফ, শামায়িলুত্ তিরমিযী, মিশকাত শরীফ”-এর লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে,
[১৪৯-১৫২]

عن ام سلمة رضى الله عنها قالت كان احب الثياب الى النبى صلى الله عليه وسلم القميص.

অর্থঃ হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় পোশাক ছিল ক্বমীছ বা কোর্তা।
অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্বমীছ লম্বা এবং গোল হবে। কখনোই কোনা ফাড়া হবে না। 
যেমন, “জামউল্ ওয়াসায়িল ফী শরহিশ্ শামায়িলকিতাবের লিবাসঅধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
[১৫৩-১৫৫]

والقميص على ماذكره الجوهرى وغيره ثوب مخيط بكمين غير مفرج يلبس تحت الثيابوفى القاموس القميص معلوم ..... ولايكون الا من القطن واما الصوف فلا.

অর্থঃ- হযরত জাওহারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ উল্লেখ করেছেন, ক্বমীছ হলো, সিলাই করা পোশাক যার দুটি আস্তিন আছে, যা কোনা ফাড়া নয়। অর্থাৎ গোল যা অন্যান্য পোশাক যেমন, চাদর, জুব্বা ইত্যাদির নিচে পরিধান করা হয়। কামূসঅভিধানে আছে, ক্বমীছ হলো, ..... যা সূতী কাড়রের তৈরি। যা পশমী হবেনা।” (অনুরূপ শরহুল মানাবীমিরকাত’-এ আছে।)
শামায়িলুত্ তিরমিযীর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ শরহুল্ মানাবী মিছরীকিতাবে উল্লেখ আছে,
[১৫৬-১৫৭]

القميص ثوب مخيط بكمين غير مفرج.

অর্থঃ ক্বমীছ সিলাইযুক্ত হবে, যার দুটি আস্তিন থাকবে। কোনা ফাড়া হবে না তথা গোল হবে।” (অনুরূপ মিরকাত শরীফেও আছে)
আল্লামা হযরত জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মছনবী শরীফেলিখেছেন,
[১৫৮]
 উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ ক্বমীছ বা কোর্তা নিছফুস্ সাক্ব পর্যন্ত এবং ফাঁড়াবিহীন অর্থাৎ কোনাবন্ধ, গোল হওয়াই খাছ সুন্নত। এর ব্যতিক্রম হলে তা খিলাফে সুন্নত হওয়ায় উত্তম হবে না।
দেওবন্দ মাদ্রাসার মুহাদ্দিছ, মাওলানা আছগর হুসাইন দেহলবী ছাহেব তাঁর গুলজারে সুন্নতকিতাবে লিখেন,
[১৫৯]
 উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তার বর্ণনা- হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ক্বমীছ অধিক পছন্দনীয় ছিল। ক্বমীছ হাটুর নীচ ও টাখনুর উপর পর্যন্ত প্রলম্বিত হওয়া চাই। যে ক্বামীছ বা কোর্তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরিধান করতেন, তা কোনা ফাড়া ছিলনা। তাই গোল, নিছফুস্ সাক্ব ক্বমীছ বা কোর্তাই সুন্নতী কোর্তা। কোনা ফাড়া কোর্তা যতই লম্বা হোকনা কেন, তাতে কখনোই সুন্নত আদায় হবেনা।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা নিছফুস্ সাক্ব এবং কোনা বন্ধ তথা গোল হবে। এর বিপরিত হলে বিদ্য়াত হবে।
খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা
সূতী কাপড়ের হওয়া খাছ সুন্নত
মুসলমানদের ক্বমীছ অথবা অন্যান্য পোশাক সুতী, পশমী, সুতা জাতীয় হওয়াই সুন্নত। যেমন কিতাবে বর্ণিত আছে,
জামউল্ ওয়াসায়িল ফী শরহিশ্ শামায়িলকিতাবের লিবাসঅধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
[১৬০-১৬২]

والقميص على ماذكره الجوهرى وغيره ثوب مخيط بكمين غير مفرج يلبس تحت الثيابوفى القاسوس القميص معلوم .... ولايكون الا من القطن واما الصوف فلا.

অর্থঃ- হযরত জাওহারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ উল্লেখ করেছেন, ক্বমীছ হলো, সিলাইকরা পোশাক যার দুটি অস্তিন আছে, যা কোনা ফাড়া নয়। অর্থাৎ গোল যা অন্যান্য পোশাক যেমন, চাদর, জুব্বা ইত্যাদির নিচে পরিধান করা হয়। কামূসঅভিধানে আছে, ক্বমীছ হলো, .... যা সূতী কাপড়ের তৈরি। যা পশমী হবে না।” (অনুরূপ শরহুল মানাবীমিরকাত’-এ আছে।)
মিরকাত শরহে মিশকাত”-এর কিতাবুল্ লিবাসঅধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
[১৬৩-১৬৪]

المذكور فى المغرب ان الثوب ان الثوب ما يلبسه الناس من الكتان والقطن والصوف.

অর্থঃ মাগরিবকিতাবে উল্লেখ আছে, মানুষেরা যে পোশাক পরিধান করে তা হবে সুতী, তুলার তৈরি, পশমী, সুতা জাতীয়।
আল মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামায়িলিল মুহম্মদিয়ানামক কিতাবে আছে,
[১৬৫]

والظاهر ان المراد فى الحديث القطن والكتان دون الصوف.

অর্থঃ হাদীছ শরীফ থেকে প্রকাশ্য কথা হলো, ক্বমীছ হবে সুতী কাপড়ের, তুলার তৈরী সুতার, কিন্তু পশমী হবে না।
রদ্দুল মুহতার”-এর কিতাবুল হাযর ওয়াল্ ইবাহাহ্-এর মধ্যে উল্লেখ আছে,
[১৬৬]

اعلم ان الكسوة منها فرض وهو مايستر العورة ويدفع الحر والبرد والاولى كونه من اتفطن اوالكتان اوالصوف على وفاق السنة بان يكون ذيله لنصف ساقه وكمه لرؤوس اصابغه وفمه قدر شبر.

অর্থঃ- “(হযরত ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) জেনে রাখুন, পোশাক পরিধান করা ফরয। যা ছতর আবৃত করে এবং ঠান্ডা ও গরম নিবারণ করে। পোশাক তুলার সূতার, সূতা জাতীয় অথবা পশমী কাপড়ের হওয়া উত্তম। এর দৈর্ঘ্য নিসফুস্ সাক্ব পর্যন্ত। আস্তিন আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত এবং আস্তিনের পরিধি এক বিঘত হওয়া সুন্নত।
উপরোক্ত ইবরাতগুলো থেকে প্রমাণিত হলো যে, পুরুষ-মহিলার ক্বমীছ হবে সুতী, তুলার সুতার বা সুতা জাতীয়। এছাড়া অন্যান্য পোশাক পশমী হওয়াতে অসুবিধা নেই। তবে পুরুষদের জন্য রেশমী কাপড় পড়া হারাম, মহিলাদের জন্য জায়িয।
যেমন, “হিদায়া”-কিতাবের কিতাবুল কারাহিয়্যাহঅধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে,
[১৬৭-১৮৩]

قال لايحل للرجال لبس الحرير ويحل للنساء لان النبى عليه السلام نهى عن ليس الحرير والديباج.

অর্থঃ হযরত ইমাম কুদূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পুরুষদের জন্য রেশমী পোশাক পরিধান করা হারাম। আর মহিলাদের জন্য হালাল। কেননা, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেশম এবং রেশমের পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। (অনুরূপ ফতহুল ক্বাদীর, কিফায়াহ, ইনায়া, হাশিয়ায়ে চলপী, শরহুল্ বিকায়াহ, কানযুদ্ দাক্বায়িক, আল বাহরুর রায়িক, মিনহাতুল খালিক, তানবীরুল আবছার, আদ্ দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, হাশিয়াতুত্ ত্বাহতাবী, গাইয়াতুল আওতার, আলমগীরী, কাযীখান, তাতারখানিয়া ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে)
ক্বমীছ বা কোর্তা অধিকাংশ সময়
সাদা রংয়ের হওয়াই খাছ সুন্নত
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদা রংয়ের পোশাক পরিধান করতেন এবং উম্মতগণকে পরিধান করতে নির্দেশ দিতেন। যেমন  বুখারী শরীফ২য় জিঃ ৮৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৮৪]

قال ابوذر اتيت النبى صلى الله عليه وسلم وعليه ثوب ابيض.

অর্থঃ- হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন। আমি একদা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আসলাম, তখন তাঁর (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শরীর মুবারকে সাদা পোশাক ছিল।” 
মাজমাউয্ যাওয়াইদ৫ম জিঃ ১২৮ পৃষ্ঠা ও আল্ লিবাসু ওয়ায যীনাহ্৫৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৮৫-১৮৬]

عن ابن عباس رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله خلق الجنة بيضاء واحب شئ الى الله البياض.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ পাক জান্নাত (বেহেশ্ত)কে সৃষ্টি করেছেন সাদা রংয়ের করে। আর আল্লাহ্ পাক-এর কাছে অধিক পছন্দনীয় হচ্ছে সাদা রংয়ের বস্তু।
মিরকাত শরীফের৪র্থ জিঃ ৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৮৭]

قال ابن حجرلان اللون الابيض افضل الالوان ..... وقد لبس عليه الصلاة والسلام غير الابيض كثيرا لبيان جوازه.

অর্থঃ- হযরত ইবনে হাজার আসকালীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নিশ্চয়ই সাদা রং-ই রং সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম রং। আর সাদা রংয়ের পোশাক ছাড়াও অন্য রংয়ের পোশাক হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিধান করতেন, জায়েয বা বৈধ প্রমাণ করার জন্য।
শরহুত্ ত্বীবী আলা মিশকাতিল্ মাছাবীহকিতাবের কিতাবুল লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
[১৮৮]

وعن ابن عمر ان االنبى صلى الله عليه وسلم رأى على عمر قميصا ابيض فقال اجديد قميصك هذا ام غسيل؟ قال بل غسيل فقال صلى الله عليه وسلم البس جديدا وعش حميدا ومت شهيدا.

অর্থ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। একদা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সাদা রংয়ের ক্বমীছ পরিহিত দেখলেন এবং বললেনঃ এটি কি নতুন ক্বমীছ না ধৌত করা ক্বমীছ? তিনি উত্তরে বললেন, ‘ধৌত করা।তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করলেনঃ নতুন পোশাক পরিধান করুন, প্রশংসনীয় হয়ে বসবাস করুন এবং শাহাদতের দরজা পেয়ে ইন্তিকাল করুন।
প্রমাণিত হলো যে, সাদা রংয়ের পোশাক যেমন ক্বমীছ, পাগড়ী, টুপি, লুঙ্গি ইত্যাদি খাছ সুন্নত।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যবহৃত চাদর মুবরাক সবুজ ও নীল রংয়েরও ছিল। যেমন  বুখারী শরীফ২য় জিঃ ৮৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৮৯]

عن قتادة عن انس رضى الله عنه قال قلت له اى اثياب كان احب الى رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الحبرة.

অর্থঃ- হযরত ক্বতাদাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (হযরত ক্বতাদাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট কোন পোশাক সবচাইতে পছন্দনীয় ছিল? তিনি জবাবে বললেন, হিবরাহ্ অর্থাৎ ইয়ামান দেশীয় বুটিদার সবুজ রংয়ের সূতী চাদর।
নাসায়ী শরীফ১ম জিঃ ২৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৯০]

عن ابى رمثة قال رأيت النبى صلى الله عليه وسلم يخطب وعليه برد اخضران.

অর্থঃ- হযরত আবু রিমছাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুত্ববাহ্ দান অবস্থায় দেখেছি যে, তখন তাঁর শরীর মুবারকে সবুজ রংয়ের দুটি চাদর ছিল।
ফতহুল বারী১০ম জিঃ ১৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
[১৯১]

وقال الداودى لونها اخضر لانها لباس اهل الجنة وقال ابن بطال هى من برود اليمن تصنع من قطن وكانت اشرف الثياب عنهم.

অর্থঃ- ইমাম দাউদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উহার (হিবরাহ-এর) রং হচ্ছে সবুজ। কেননা, নিশ্চয়ই উহা জান্নাতবাসীগণের পোশাক। ইবনে বাত্তাল বলেন, (হিবরাহ হল) ইয়ামান দেশীয় চাদর, যা সুতা দিয়ে তৈরি করা হয়। আর উহাই তাদের কাছে অতি উত্তম কাপড় হিসেবে ছিল।
[১৯২]

(الحبرة) ربما تكون بخضر او زرق (مرقاة كتاب اللباس الفصل الاول.)

অর্থঃ- “(হিবরাইয়ামানী সুতী বুটিদার চাদর) যা সবুজ অথবা নীল রংয়ের ছিল।” (মিরকাত)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো, সাদা ও সবুজ রং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট অধিক পছন্দীয় ছিল। কিন্তু তিনি সাদা বেশী ব্যবহার করতেন। সবুজ, নীল, খয়েরী ও গন্দম রংয়ের পোশাক কম ব্যবহার করতেন।
পুরুষের জন্য লাল, হলুদ, কুসুম ও জাফরানী রংয়ের পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী। আর মহিলাদের জন্য জায়িয
যেমন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, লাল, কুসুম, হলুদ ও যাফরানী রংয়ের পোশাক যেমন কোর্তা, লুুঙ্গি, চাঁদর, রুমাল ও ইমামাহ্ বা পাগড়ী ইত্যাদি পরিধান করা জায়েয নেই। বরং মাকরুহ তাহরীমী-এর অন্তর্ভূক্ত।
লাল ও কুসুম রংয়ের কাপড় সম্পর্কে হাদীছ শরীফে এসেছে,
[১৯৪]

عن عبد الله بن عمرو بن العاص اخبره قال رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم على ثوبين معصفرين فقال ان هذه من ثيابا الكفار فلا تلبسها.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পরিধানে দুটি কুসুম রংয়ের কাপড় দেখলেন। অতঃপর তিনি বললেন, এ রংয়ের কাপড় কাফিরদের হয়ে থাকে। তাই এটা পরিধান করনা।” (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ১৯৩ পৃষ্ঠা)
অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
[১৯৫-১৯৭]

والحديث نص على منع الثوب المعصفر للرجال والمختار عند الحنفية كراهته تحريما للرجال دون النساء كما فى الدر المختار৫ : ا৫৩ واشعة اللمعات ৩ : ২৯৬. والمشهور عن الشافعى اباحته. وكذلك نقل النووى عن ابى حنيفة، ولكن المختار عند لحنفية الكراهة كما ذكرنا.

অর্থঃ- অত্র হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কুসুম রংয়ের কাপড় পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ। হানাফীদের নিকট গ্রহণযোগ্য মত হল পুরুষের জন্য উক্ত রংয়ের কাপড় মাকরূহ তাহরীমী, তবে মহিলাদের জন্য নয়। যেমন, দুররুল্ মুখতার ৫ম জিঃ ৩৫১ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ২৯৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে।
          হযরত ইমাম শাফিঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট প্রসিদ্ধ মত হল এটা মুবাহ্ অর্থাৎ জায়েয। অনুরূপভাবে ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে নকল করেছেন। তবে হানাফীদের নিকটে গ্রহণযোগ্য মত হলো- কুসুম রংয়ের কাপড় মাকরূহ্ তাহরীমী। যেমন আমরা বর্ণনা করেছি।” (ফতহুল মুলহিম ৪র্থ জিঃ ১১৩ পৃষ্ঠা, আশয়াতুল্ লুময়াত ৩য় জিঃ ২৯৬ পৃষ্ঠা, দুররুল্ মুখতার ৫ম জিঃ ৩৫১ পৃষ্ঠা)
[১৯৮-২০১]

عن عبد الله بن عمرو قال مر على النبى صلى الله عليه وسلم رجل عليه ثوبان احمران فسلم عليه فلم يرد عليه النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি দুটি লাল কাপড় পরিহিত অবস্থায় হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাঁকে সালাম করলো। কিন্তু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সালামের জওয়াব দেননি।” (আবু দাউদ শরীফ ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠা, বযলুল মাজহুদ ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯ পৃষ্ঠা, আউনুল মাবূদ ৪র্থ জিঃ ৯২ পৃষ্ঠা, শরহু আবী দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী)
অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে,
[২০২]

احتج بهذا الحديث القائلون بكراهة لبس الاحمر.

অর্থঃ- এই হাদীছ শরীফ থেকে দলীল নেয়া হয় যে, লাল পোশাক মাকরূহ্ তাহরীমী।” (আউনুল মাবুদ ৪র্থ জিঃ ৯২ পৃষ্ঠা)
[২০৩]

والمختار من المذهب ان الكراهة.

অর্থঃ- হানাফী মাযহাব মতে, গ্রহণযোগ্য মত হল নিশ্চয়ই লাল পোশাক মাকরূহ তাহরীমী।” (হাশিয়ায়ে আবু দাউদ ২য় জিঃ ২০৮ পৃষ্ঠা)
সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, লাল ও কুসুম রংয়ের ক্বমীছ, টুপি, রুমাল, পাগড়ী বা যে কোন পোশাক পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী।
হলুদ ও যাফরানী রংয়ের পোশাক সম্পর্কে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
[২০৪-২১৩]

عن انس رضى الله عنه قال نهى النبى صلى الله عليه وسلم ان يتزعفر الرجل.

অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদেরকে যাফরানী রংয়ের পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৬৯ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ১০ম জিঃ ৩০৪ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ২২তম জিঃ ২২ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস্ সারী ৮ম জিঃ ৪৪৬ পৃষ্ঠা, শরহুল কিরমানী ২১ জিঃ ৯০ পৃষ্ঠা, তাইসীরুল বারী ৭ম জিঃ ৫৭১ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ১৯৮ পৃষ্ঠা, মুসলিম বিশরহিন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল মুলহিম ৪র্থ জিঃ ১৪৭ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয় যে,
[২১৪]

وكره لبس المعصفر والمزعفر والاحمر والاصفر للرجال لايكره للنساء.

অর্থঃ- কুসুম, যাফরানী, লাল এবং হলুদ রংয়ের পোশাক পুরুষদের জন্য পরিধান করা মাকরূহ তাহরীমী, তবে মহিলাদের জন্য মাকরূহ তাহরীমী নয়।” (দুররুল মুখতার ৫ম জিঃ ২৫২ পৃষ্ঠা)
তাছাড়াও, ‘বুখারী শরীফের’ ‘কিতাবুল লিবাসেরমধ্যে একটি باب (বাব) এর নাম করণ করা হয়েছে-
[২১৫]

باب النهى عن التزعفر للرجال.

অর্থঃ- পুরুষদের জন্য যাফরানী রং নিষিদ্ধ তথা হারাম সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ।
তিরমিযী শরীফেবাব নেয়া হয়েছে,
[২১৬]

باب ماجاء فى كراهية التزعفر ....... للرجف.

অর্থঃ- পুরুষদের জন্য যাফরানী রং মাকরূহ তাহরীমী সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ।
মুসলিম শরীফেরكتاب اللباس এ বাব নেয়া হয়েছে,
[২১৭]

باب نهى الرجل عن التزعفر.

অর্থঃ- যাফরানী রং পুরুষদের জন্য নিষেধ তথা হারাম সম্পর্কিত পরিচ্ছেদ।
          অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, লাল, হলুদ, যাফরানী ও কুসূম রং-এর ক্বমীছ, রুমাল, টুপি, পাগড়ী, চাদর, ইযার বা  লুঙ্গি ইত্যাদি সর্বপ্রকার পোশাক পুরুষদের জন্য মাকরূহ তাহরীমীর বা হারামের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু মহিলাদের জন্য জায়িয।
ক্বমীছ বা কোর্তা ডান দিক
দিয়ে পরিধান করা সুন্নত
তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ”-এর কিতাবুল্ লিবাসঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
[২১৮-২১৯]

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا لبس قميصا بدأ بميامنه.

অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই ক্বমীছ বা কোর্তা পড়তেন তখনই ডান দিক হতে শুরু করতেন।
অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় শরহুত্ ত্বীবী আলা মিশকাতিল্ মাছাবীহকিতাবে উল্লেখ আছে,
[২২০-২২১]

(بسيامنه) اى بجانب يمين القميص ولذلك جمعه.

অর্থঃ (ডান দিক থেকে শুরু করতেন) অর্থাৎ ক্বমীছের ডান পার্শ্ব থেকে পরিধান শুরু করতেন। এর উপর ইজমা হয়েছে।” (অনুরূপ মিরকাত শরহে মিশকাতে আছে)
পরিশিষ্ট
উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে যে বিষয়গুলো তথা মাসয়ালাগুলো বের হয়েছে তাহলোঃ
১. ক্বমীছ বা কোর্তা হলো যা সূতী কাপড়ের নিছফুস্ সাক্ব তথা হাটু থেকে গিরার মাঝামাঝি পর্যন্ত দীর্ঘ, যার আস্তিন কব্জী থেকে আঙ্গুলের মাথার ভিতরেই প্রলম্বিত, যার গেরেবান আছে, যা কোনাবন্ধ তথা গোল। এ সংজ্ঞা থেকে শার্ট, গেঞ্জী, সাইড কাটা পান্জাবী, কলার ওয়ালা পান্জাবী, কাবলী পান্জাবী বের হয়ে যায়। অর্থাৎ এগুলো সুন্নতের খিলাফ। কিন্তু বিধর্মীদের অনুসরণে পরিধান করলে হারাম ও কুফরী হবে।
২. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তার গেরেবান আটকানোর গুটলী সূতী কাপড়ের হবে। অর্থাৎ যে কাপড়ের কোর্তা তৈরী করবে সেই কাপড় দিয়ে গুটলীও তৈরী করবে। এটাই সুন্নত, আফযল বা উত্তম। প্লাস্টিক, স্টিল, পাথর ইত্যাদি ধাতুর তৈরী বোতাম সুন্নতের খিলাফ।
৩. পুরুষদের গেরেবান সামনে বুকের দিকে রাখা সুন্নত। তবে প্রয়োজনে মহিলারা সামনে অথবা পিছনে রাখতে পারে। আর মহিলাদের গেরেবান ডান কাঁধ বা বাম কাঁধের দিকে রাখা সুন্নত, যাতে পুরুষের সাথে তাশাব্বুহ না হয়।
৪. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তার আস্তিন হাতের কব্জি পর্যন্ত ঝুলানোই সুন্নত। আর কব্জি থেকে আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত স্থানের মধ্যে ঝুলানো জায়িয রাখা হয়েছে। তবে আঙ্গুলের মাথা অতিক্রম করা সুন্নতের খিলাফ।
৫. আস্তিনের মাথা এক বিঘত পরিমাণ গোল রাখাই খাছ সুন্নত। আঁট-সাট করা বিদ্য়াত।
৬. আস্তিনে গুটলী, বোতাম, রাবার, ইত্যাদি লাগানো বিদ্য়াত।
৭. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা নিছফুস্ সাক্ব তথা হাটু থেকে গিরার মাঝামাঝি হতে হবে। নিছফুস্ সাক্ব থেকে গিরার উপর পর্যন্ত স্থানে লম্বা করাও সুন্নত ও জায়িয। কিন্তু গিরার নিচে ঝুলানো হারাম। ক্বমীছ বা কোর্তা, ইযার বা লুঙ্গি, সেলোয়ার প্রত্যেকটির ব্যাপারে একই হুকুম।
৮. মহিলাদের জন্যও ক্বমীছ বা জামা নিছফুস্ সাক্ব পর্যন্ত ঝুলানো খাছ সুন্নত। এর নিচে ঝুলানো জায়িয হবে। কিন্তু তাদের ইযার তথা দোপাট্টা বা সেলোয়ার পায়ের পাতা পর্যন্ত ঝুলানো ফরয। যাতে পায়ের পাতাসহ সম্পূর্ণ অঙ্গ ঢেকে যায়।
৯. খাছ সুন্নতী কোর্তা গোল বা কোনা বন্ধ হবে। কোনা ফাড়া হলে চাই তা যত লম্বাই হোক সুন্নত হবে না। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এক ক্বমীছে নামায পড়েছেন। যাতে চাদর বা লুঙ্গি ছিলো না। যদি কোনা ফাড়া হতো তাহলে তা দিয়ে নামায পড়া সম্ভব ছিলো না। কারণ কোনা ফাড়া হলে অবশ্যই ছতর প্রকাশ পাবেই। তাই ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ফতওয়া দিয়েছেন, কোনা বন্ধ তথা গোল ক্বমীছ বা কোর্তা খাছ সুন্নত। এর ব্যতিক্রম খিলাফে সুন্নত।
১০. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা সূতী কাপড়ের হবে। টেট্রন, পলেস্টার ইত্যাদি কাপড় হিসেবে জায়িয আছে।
১১. পুরুষদের জন্য রেশমী কাপড় পরিধান করা হারাম। সেটা ক্বমীছ বা কোর্তা, ইযার বা লুঙ্গি, সেলোয়ার ইত্যাদি যাই হোক না কেন। কিন্তু মহিলাদের জন্য রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয।
১২. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা অধিকাংশ সময় সাদা রংয়ের হতে হবে। সবুজ, নীল, ঘিয়া, খয়েরী ইত্যাদি রংয়ের পোশাক পরিধান করাও সুন্নত। আফযল বা উত্তম হলো সাদা রংয়ের ক্বমীছ পরিধান করা।
১৩. পুরুষদের জন্য লাল, হলুদ, কুসূম ও যাফরানী রংয়ের পোশাক পরিধান করা মাকরূহে তাহরীমী বা নিষিদ্ধ। চাই তা ক্বমীছ বা কোর্তা, ইযার বা লুঙ্গি অথবা রুমাল ইত্যাদি যাই হোক না কেন। কিন্তু মহিলাদের জন্য এ সমস্ত রংয়ের কাপড় ব্যবহার করা জায়িয।
১৪. ক্বমীছ বা কোর্তা ডান দিক থেকে পরিধান করা সুন্নত। নিয়ম হচ্ছেঃ ক্বমীছ ডান দিকে নিয়ে প্রথমে ডান আস্তিনে ডান হাত ঢুকাবে এরপর বাম আস্তিনে বাম হাত ঢুকাবে, অতঃপর মাথার ডান পার্শ্ব দিয়ে গলায় ঢুকিয়ে নিম্নের অংশ নিছফুস্ সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত করে রাখবে। অতঃপর গেরেবানের গুটলী লাগিয়ে দিবে। এরপর মাথাকে টুপি, ইমামাহ বা পাগড়ী ও রুমাল দিয়ে ঢাকবে।
১৫. গেরেবান আটকানোর গুটলী স্বাভাবিকভাবে আটকিয়ে রাখা সুন্নত। তবে মাঝে মাঝে গুটলী খুলে রাখাও সুন্নত। যেমনটি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মাঝে করতেন।
আল্লাহ পাক যেন আমাদের সকলকে ক্বমীছ বা কোর্তার খাছ সুন্নতী পদ্ধতি জেনে তা দায়িমীভাবে আমল করার তাওফীক দান করেন। আর এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক এবং আল্লাহ পাক-এর রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেযামন্দী, সন্তুষ্টি ও নৈকট্য দান করেন। (আমীন, ছুম্মা আমীন)
(বিঃ দ্রঃ- কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় সংক্ষিপ্ত করা হলো। প্রয়োজনে আরো অধিক দলীল-আদিল্লাহসহ বিস্তারিত ফতওয়া দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

0 Comments: