জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব ( ১ নং )


জুমুয়া ও ঈদাইনের খুবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।


জুমুয়া ও ঈদাইনের খুবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরকী ও বিদ্য়াতের মূলোপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- æমাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাব যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থা æমাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ওহাবী সম্প্রদায়। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ছূরা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
অনুরূপভাবে তারা এখন জুমুয়ার খুবা বাংলায় দেয়ার কথা বলছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্যে হলো মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ জুমুয়ার নামাযকে নষ্ট করে দিয়ে তাদেরকে জাহান্নামী করে দেয়া। কাজেই বাতিলপন্থীরা যেন মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে মুসলমানদেরকে জাহান্নামী করতে না পারে অর্থা মুসলমানগণ যেন তাদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে সেজন্যই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে æজুমুয়া ও ঈদাইনের খুবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপ্রকাশ করা হলো।
আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সমস্ত ইমাম, মুজতাহিদগণ এ ব্যাপারে (ইজমায়) ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে, খুবা আরবী ভাষায়ই দিতে হবে। কারণ খুবা আরবীতে দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় দেয়া নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ অর্থা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।
এমনিভাবে দুই খুবার একটি আরবী ভাষায় অপরটি অন্য কোন ভাষায় অথবা এক খুবার অংশ বিশেষ আরবী ভাষায় এবং  অংশ  বিশেষ অন্য  কোন ভাষায় দেয়া  অথবা  আরবী খুবা প্রদানকালে বাংলা, উর্দু, ইংরেজি, ফারসী অর্থা এক কথায় পৃথিবীর অন্য যে কোন আজমী (অনারবী) ভাষায় অনুবাদ করা বা আরবীতে খুবা দেয়াকালে অন্য কোন ভাষায় মাঝে মধ্যে শের বা কাসিদা পাঠ করাও শরীয়তের দৃষ্টিতে সুন্নত পরিপন্থী, নাজায়িয ও বিদয়াত। সুতরাং জুমুয়া ও ঈদাইনের উভয় খুবা সম্পূর্ণটাই আরবী ভাষায় দিতে হবে।

বাতিলপন্থীদের ভ্রান্ত ক্বিয়াস

যারা জুমুয়ার খুবা আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় দেয়ার পক্ষে তাদের বক্তব্য হলো (خطبة) খুবা শব্দের লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ হলো বক্তৃতা, ভাষণ বা ওয়াজ। সুতরাং বক্তৃতা, ভাষণ বা ওয়াজ যেমন যে কোন ভাষায় দেয়া যেতে পারে তদ্রুপ জুমুয়ার খুবা ও যেকোন ভাষায়ই দেয়া যেতে পারে। এর উপর ক্বিয়াস করে আমাদের দেশের কোন কোন স্থানে জুমুয়ার খুবা বাংলা ভাষায় দেয়া হয়ে থাকে। মূলতঃ তাদের উক্ত কিয়াস সম্পূর্ণই ভ্রান্তমূলক ও বাতিল।
কেননা শরীয়তে এমন কতক শব্দ রয়েছে, যাদের শুধু লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করলে তা যথার্থ হবে না বরং তার প্রচলিত শরয়ী অর্থের উপরই আমল করতে হবে। তার মধ্যে একটি হলো জুমুয়ার খুবা। লুগাতে খুবা শব্দের অর্থ যদিও বক্তৃতা, ভাষণ বা ওয়াজ কিন্তু শরীয়তে খুবা শব্দের অর্থ ব্যাপক। খুবার আহ্কাম, গুরুত্ব ও তাপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলেই সকলের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, খুবা শুধু বক্তৃতা, ভাষণ বা ওয়াজ নয় বরং জুমুয়ার নামাযের একটি বিশেষ অঙ্গ।

খুবার আহ্কাম, গুরুত্ব ও তাপর্য

মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন শরীফে খুবাকে ذكر বলে সম্বোধন করেন, যেমন ইরশাদ হয়েছে,
يايها الذين امنوا اذا نودى للصلوة من يوم الجمعة فاسعوا الى ذكر الله.
অর্থ: æহে ঈমানদারগণ, যখন জুমুয়ার দিন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা আল্লাহ পাক উনার যিকরের দিকে ধাবমান হও (অর্থা খুবা শুনার জন্য আস)।” (সূরা জুমুয়াহ- ৯ )
উক্ত আয়াত শরীফে অধিকাংশ মুফাস্সিরীনে কিরাম একমত যে, ذكرযিক্রশব্দ দ্বারা খুবাকে বুঝান হয়েছে। তাফসীরে ইবনে কাছীর ৯ম খ- পৃষ্ঠা ৪৫৬, বুখারী শরীফ ১ম জিঃ পৃষ্ঠা ১২৭, মাবছুত লিস সারাখসী ২য় জিঃ পৃষ্ঠা ২৬-৩১, কবীরী পৃঃ ৮৭, হিদায়া ১ম জিঃ পৃষ্ঠা ১৩৯)

দুই খুবাহ দুই রাকায়াত
নামাযের স্থলাভিষিক্ত

এমনিভাবে ফুক্বাহায়ে কিরামের অনেকেই খুবাকে আল্লাহ পাক উনার যিক্র ও ইবাদতের দিক দিয়ে নামাযের ন্যায় বলেছেন। যেমন হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
انما قصرت الجمعة لاجل الخطبة
অর্থ: জুমুয়ার নামাযকে (চার রাকায়াতের স্থলে দুই রাকায়াতে) সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে একমাত্র খুবার কারণেই। (ইযালাতুল খফা)
وبعض مشايخنا قالوا: الخطبة تقوم مقام ركعتين
অর্থ: কতক মাশায়িখে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, খুবাহ দুরাকায়াত নামাযের স্থলাভিষিক্ত। (আল ফাতাওয়াত তাতারখানিয়াহ লিল আলায়িল আনছারী আনদারীতী হানাফী দিহলবী হিন্দী কিতাবুছ ছলাত আল ফছল ফী ছলাতিল জুমুয়াত ২য় খ- ৫৯ পৃষ্ঠা)
وبعض مشايخنا رحمهم الله قالو: الخطبة تقوم مقام ركعتين, ولهذا لايجوز الا بعد دخول وقت الجمعة, وفى حديث ابن عمر و عائشة رضى الله عنهم "انما قصرت الصلوة لمكان الخطبة" دليل على ان الخطبة شطر الصلوة.
অর্থ: কতক মাশায়িখে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, খুবাহ দুরাকায়াত নামাযের স্থলাভিষিক্ত। এজন্য ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে খুবাহ জায়িয হবে না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, æজুমুয়ার নামাযকে খুতবাহ-এর জন্য সংক্ষেপ করা হয়েছে।এ থেকে প্রমাণিত হয় নিশ্চয়ই খুবাহ নামাযেরই অংশ। (আল মুহীতুল বুরহানী ফিল ফিকহিন নুমানী লিল আল্লামাহ ইমাম মাহমূদ ইবনে আহমদ বুখারী হানাফী কিতাবুছ ছলাহ আল ফাছলুল খমীছ ওয়াল ইশরূনা ফী ছলাতিল জুমুয়াহ ২য় খ- ১৮৪ পৃষ্ঠা)
হযরতুল আল্লামাহ্ আলাউদ্দীন আল কাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি æআল বাদায়ে”-এর হাওলা æআল বাহরএ উল্লেখ করেন যে, জুমুয়ার খুবা হলো দুই রাকায়াত জুমুয়ার নামাজের স্থলাভিষিক্ত। অনুরূপভাবে আলমগীরী, বাহরুর রায়েক, নিযামুল ফতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে।

নামাযে যে সমস্ত কাজ হারাম খুবাতেও তা হারাম

আবার খুলাছাতুল ফতওয়ায় উল্লেখ আছে-
كل عمل حرم فى الصلاة حرم فيها اى فى الخطبة فيحرم اكل وشرب وكلام ولو تسبيحا او رد سلام.
অর্থ: æযে সকল কাজ-কর্ম নামাযের মধ্যে হারাম সেগুলো খুবার মধ্যেও হারাম ও নিষিদ্ধ। সুতরাং খুবা দানকারী ও শ্রবণকারীদের জন্য খাওয়া, পান করা, কথা-বার্তা বলা যদিও তা তাসবীহ্ হোক না কেন এবং সালামের জবাব দেয়াও জায়িয নয়।
اعلم بان ما يحرم فى الصلوة يحرم فى الخطبة حتى لا ينبغى يأكل او يشرب الامام فى الخطبة ويحرم الكلام سواء.
অর্থ: জেনে রাখুন নিশ্চয়ই নামাযে যা হারাম খুতবাতেও তা হারাম। অতএব, খতীবের জন্য খুবাহ অবস্থায় খাওয়া ও পান করা জায়িয হবে না। অনুরূপ (খুবাহ-এর বাইরের) অন্য কথা বলাও হারাম। (খূলাছাতুল ফাতাওয়া লিল ইমাম ত্বাহির ইবনে আব্দুর রশীদ বুখারী হানাফী কিতাবুছ ছলাহ আল ফাছলুছ ছালিছ ওয়াল ইশরূনা ফী ছলাতিল জুমুয়াহ ১ম খ- ২০৬ পৃষ্ঠা)
অনুরূপ বর্ণনা æআল বাহরুর রায়িক শরহু কানযিদ দ্বাক্বায়িক্ব কিতাবুছ ছলাহ বাবু ছলাতিল জুমুয়াহ এবং আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়াহ কিতাবুছ ছলাহ আল বাবুস সাদিস আশার ফী ছলাতিল জুমুয়াহকিতাবে বর্ণিত আছে-
(وكل ما حرم فى الصلوة حرم فيها) اى فى الخطبة خلاصة وغيرها فيحرم اكل وشرب وكلام ولو تسبيحا او رد سلام او امرا بمعروف بل يجب عليه ان يستمع ويسكت.
অর্থ: নামাযে যা হারাম খুতবাতেও তা হারাম) সেসময় খাওয়া, পান করা, কথা বলা ইত্যাদি হারাম। এমনকি তাসবীহ পাঠ করা, সালামের জাওয়াব দেয়া, কাজের আদেশ দেয়া ইত্যাদি হারাম। বরং মুছল্লীদের জন্য ওয়াজিব হলো, খুবাহ শ্রবণ করা এবং চুপ থাকা। (আদ দুররুল মুখতার আলা তানবীরিল আবছার কিতাবুছ ছলাহ বাবুল জুমুয়াহ)
(الصحيح) ويشترط ان لا يفصل بين الخطبة والصلوة يأكل وعمل قاطع.
অর্থ: (এটাই বিশুদ্ধ কথা যে) খুবাহ-এর একটি শর্ত হলো- খুবাহ ও নামাযের মধ্যে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করবে না। খাওয়া-দাওয়া ও ভঙ্গকারী আমল করবে না। (মারাক্বিউল ফালাহ শরহু নূরিল ঈদ্বাহ কিতাবুছ ছলাহ বাবুল জুমুয়াহ)

নামাযে ক্বিরাআত শোনা যেরূপ ওয়াজিব খুবা শোনাও তদ্রুপ ওয়াজিব

এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
واذا قرء القران فاستمعوا له وانصتوا لعلكم ترحمون.
অর্থ: æযখন কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা অতি মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ করো। অবশ্যই তোমরা রহমত প্রাপ্ত হবে।” (সূরা আরাফ- ২০৪)
অনেক মুফাস্সিরীনে কিরাম এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, উক্ত আয়াত শরীফ খুবাকে উদ্দেশ্য করে অবতীর্ণ হয়েছে।
আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আযম, ইমামুল আইম্মাহ হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বলেন, নামাযে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শ্রবণ করা যেরূপ ওয়াজিব, তদ্রুপ সর্বপ্রকার খুবাও মনোযোগসহকারে শ্রবণ করা ওয়াজিব। তাফসীরে কামালাইনের লেখক আল্লামা সালামুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতেও উক্ত অভিমত নকল করেন। অনুরূপভাবে তাফসীরে মায়ারেফুল কুরআনেও উল্লেখ রয়েছে।
হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে যে-
وقد روى البيهقى بسند صحيح اذا خرج الامام فلا صلاة ولا كلام, فتح الودود اى اذا خرج الامام فلا صلوة واذا صعد المنبر فلا كلام.
অর্থ: হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন, ইমাম ছাহেব যখন খুবা দেয়ার জন্য হুজরা হতে বের হবেন, তখন সর্বপ্রকার নামায পড়া ও কথাবার্তা বলা নিষিদ্ধ। অর্থা ইমাম ছাহেব যখন খুবার জন্য বের হবেন তখন সর্বপ্রকার নামায পড়া নিষিদ্ধ। আর যখন খুবা দেয়ার জন্য মিম্বরে উঠবেন তখন সর্বপ্রকার কথাও নিষিদ্ধ। (আবূ দাউদ শরীফ-এর ১ম খ- ১৬৬ পৃষ্ঠা ৪ নং হাশিয়া)
হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মুয়াত্তা শরীফে উল্লেখ করেন, হযরত ইবনে শিহাব জুহুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
خروج الامام يقطع الصلوة وخطبته يقطع الكلام
অর্থ: ইমামের আগমন নামাযকে বন্ধ করে দেয়, আর তাঁর খুবা কথা-বার্তাকে বন্ধ করে দেয়।অর্থা ইমাম ছাহেব যখন খুবার জন্য হুজরা (রুম) থেকে বের হবেন, তখন নামায (সুন্নত বা নফল) পড়া নিষেধ। আর যখন খুবা শুরু করে দিবেন, তখন নামাযের সাথে সাথে কথা-বার্তা বলাও নিষেধ।

নামাযে যেরূপ কথা বলা নিষেধ তদ্রুপ খুবাতেও কথা বলা নিষেধ

 এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من قال لصاحبه يوم الجمعة والامام يخطب انصت فقد لغا.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, জুমুয়ার দিন ইমামের খুবা প্রদানকালে যদি কেউ অন্যকে বলে চুপ কর, তবে সেটাও অন্যায় হবে। (নাসাঈ শরীফ ১ম খ- ২০৭ পৃষ্ঠা)
অনুরূপভাবে জুমুয়ার নামায যেমন ওয়াক্ত হবার পর পড়তে হয়, খুবাও তদ্রুপ ওয়াক্ত হবার পর দিতে হয়। ওয়াক্ত হবার পূর্বে বা পরে খুবা দিলে খুবা দুরস্ত হবে না।  জুমুয়ার নামাযে যেরূপ ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ রয়েছে, জুমুয়ার খুবায়ও তদ্রুপ ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ রয়েছে।

æখুবার ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ

খুবার ফরয:
(১) জুমুয়ার ওয়াক্ত হওয়া অর্থা জুমুয়ার ওয়াক্তের মধ্যে খুবা দিতে হবে। এর পূর্বে ও পরে খুবা দিলে খুবা দুরস্ত হবে না। (২)  ذكرالله আল্লাহ পাক উনার যিকির করা। যেকোন আরবী শব্দে আল্লাহ পাক উনার যিকির করলে খুবার ফরয আদায় হয়ে যাবে।
হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে উক্ত যিকির দীর্ঘ না হয়ে সংক্ষিপ্ত হলেও ফরয আদায় হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে যিকির কমপক্ষে এতটুকু দীর্ঘ হতে হবে, যাকে সাধারণভাবে খুবা বলে আখ্যায়িত করা যায়।
(৩) খুবা দেয়া আলাদা একটি ফরয। কারণ খুবা ব্যতীত জুমুয়ার নামায শুদ্ধ হবে না।
খুবার ওয়াজিব:
(১)  আরবীতে খুবা দেয়া ওয়াজিব। যেহেতু আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় খুবা দেয়া কাট্টা বিদয়াত ও মাকরূহ তাহরীমী।
খুবার সুন্নতসমূহ:
(১) ওযু সহকারে খুবা দিতে হবে। ওযূ ছাড়া খুবা   দেওয়া মাকরূহ্। হযরত ইমাম আবু ইউসূফ                       রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে নাজায়িয । (২) দাঁড়ায়ে খুবা দিতে হবে। বিনা ওজরে বসে খুবা দেয়া মাকরূহ্। (৩) উপস্থিত মুসল্লীদের দিকে মুখ করে খুবা দিতে হবে। (৪) খুবার পূর্বে চুপে চুপে তাউয ও তাসমিয়া পাঠ করা। (৫) এতটুকু আওয়াজে খুবা দেয়া যাতে করে উপস্থিত সকলেই শুনতে পায়। (৬) আল্লাহ পাক উনার হাম্দ (حمد) প্রশংসা দ্বারা খুবা আরম্ভ করা। (৭) আল্লাহ পাক উনার ছানা ছিফত অর্থা গুণাবলী বর্ণনা করা। (৮) কালিমা শাহাদত পাঠ করা। (৯) নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত বা দরূদ শরীফ পাঠ করা। (১০) ওয়াজ নছীহত করা। (১১) দুই খুবার মধ্যে অল্প সময় বসা। (১২) দ্বিতীয় খুবায় পুনরায় হাম্দ, ছানা ও দরূদ শরীফ পাঠ করা। (১৩) কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা। (১৪) সকল মুসলিম নর-নারীর জন্য দোয়া করা।

খুবার সময় লাঠি ব্যবহার করা খাছ সুন্নত

(১৫) খুবা  দেয়ার  সময় লাঠি  ব্যবহার  করা খাছ সুন্নত।  কেউ  কেউ খুবার সময় লাঠি ব্যবহার করা বিদয়াত বলে থাকে। তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ অশুদ্ধ ও কুফরীমূলক। কেননা ছহীহ হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবার সময় লাঠি ব্যবহার করেছেন। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
عن الحكم بن حزن الكلفى رضى الله تعالى عنه قال اياما شهدنا فيها الجمعة مع رسول الله صلى الله عليه وسلم متوكئا على عصا او قوس فحمد الله واثنى عليه.
অর্থ: হযরত হাকাম বিন হাযান কুলাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখনই সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে জুমুয়ার নামায আদায় করতাম। আমরা দেখতাম সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া  সাল্লাম (খুবার সময়) লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর করে দাঁড়াতেন। অতঃপর আল্লাহ পাক উনার হামদ ও ছানা পড়ে খুবা পড়তেন। (আবু দাউদ শরীফ ১ম খ- ১৬৩ পৃষ্ঠা)
ফিক্বাহের নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব গায়াতুল আওতারে উল্লেখ আছে-
جیسے کھرا ہونا خطبہ میں سنت ھے اسی طرح عصاء کا لینا بھی مسنون ھے .
অর্থ: খুবার মধ্যে দাঁড়ানো যেরূপ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত তদ্রূপ খুবার সময় লাঠি ব্যবহার করাও খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। (গায়াতুল আওতার ১ম জিঃ পৃষ্ঠা ৩৮১, রদ্দুল মুহতার ১ম জিঃ পৃষ্ঠা ৮৬২, শামী, মুহীত্ব, ইমদাদুল ফতওয়া ইত্যাদি আরো অনেক ফিক্বাহের কিতাবসমূহে খুবার সময় লাঠি ব্যবহার করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এটাকে বিদয়াত বলা গুমরাহী ও কুফরী ছাড়া কিছুই নয়। (১৬) নামায বড় করা ও উভয় খুবা নামাযের তুলনায় ছোট করা। কেননা খুবা নামাযের চেয়ে দীর্ঘ করা সুন্নতের খিলাফ বা মাকরূহ।

(অসমাপ্ত)

0 Comments: