বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ১ নং )

পিডিএফ লিংক- https://drive.google.com/open?id=1a1HeE3IicD8BG6kLtzUs7G88JJAPC8aR
তারাবিহ ২০ রাকাত বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ও  তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ১ নং ) 
বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ও তার সংশ্লষ্টি বিষয় সর্ম্পকে ফতওয়া
গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
 সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীন উনার এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,  খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক উনার অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, ‘মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ’-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামায ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইনজেকশন নেয়া রোজা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর দ্বাদশ ফতওয়া হিসাবে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।

نحمده ونصلى على رسوله الكريم

তারাবীহ্ নামাযের ফতওয়া দেয়ার প্রয়োজন হলো কেন?

          সমাজের কিছু বিদ্য়াতী লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্ম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, রমযান মাসে আট রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়া সুন্নত, যা ছহীহ্ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। এর বিপরীত বিশ রাকায়াত পড়া বিদ্য়াত ও নাজায়িয, যা সিহাহ্ সিত্তাহ বা ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত নেই।

          উপরোক্ত বক্তব্যের দ্বারা তারা সাধারণ মুসলমানদেরকে, বিশেষ করে আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত তথা হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী মায্হাবের অনুসারীদেরকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। মূলতঃ বিদ্য়াতীদের উপরোক্ত ফিৎনাটি আজ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্যে আ’মালী (اعمالى) ও ই’তেক্বাদী (اعتقادى) উভয় দিক হতেই ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

আ’মালী বা আমলগত ক্ষতি ঃ- যেখানে হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর শরাহ্, ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার অসংখ্য ও অকাট্য, নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং যার উপর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও ইমাম-মুজতাহিদ তথা সকল উম্মতগণের ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে রমযান মাসের মত ফযীলতপূর্ণ মাসে, যে মাসে একটি নফল আদায় করলে একটি ফরজ আদায়ের ফযীলত পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্র পরিবর্তে যে ব্যক্তি আট রাকায়াত তারাবীহ্ পড়বে, সে ব্যক্তি যেরূপ বারো রাকায়াতের ফযীলত হতে মাহ্রুম হবে, তদ্রুপ বারো রাকায়াত নামায তরক করার কারণে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক করার গুণাহে গুণাহ্গার হবে। অতএব, এদিক থেকে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ যেরূপ বরকতময় ও ফযীলতপূর্ণ রমযান মাসে তারাবীহ্ নামাযের অফুরন্ত সাওয়াব হতে বঞ্ছিত হচ্ছে, তদ্রুপ সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহে গুণাহ্গার হয়ে মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীন উনার সন্তুষ্টি লাভে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন,

رضوان من الله اكبر.

অর্থঃ- “মহান আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টিই হচ্ছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ।”

          সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ নামায সম্পর্কে বিদ্য়াতীদের উক্ত বক্তব্যের দরুন, ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আ’মালী বা আমলের ব্যাপারে বিরাট ক্ষতির সম্মুখিন।

ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ক্ষতি ঃ- সহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, শাফিউল উমাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ পড়েছেন। অতএব, যারা বলে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আট রাকায়াত তারাবীহ্ পড়েছেন, বিশ রাকায়াত পড়েননি! তবে এটা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ নয় কি? এটা অবশ্যই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ করার শামিল, যেটা সম্পূর্ণই কুফরীর নামান্তর। কেননা এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

قال النبى صلى الله عليه وسلم- من كذب على متعمدا فاليتبوأ مقعده من النار.

অর্থঃ- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা বলবে, সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।”

          তাছাড়া সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক (ফে’ল) বা আমল দ্বারা প্রমাণিত বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায সুন্নত হওয়ার উপর, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমসহ প্রায় সকল উম্মতগণের ইজমা তথা ইজমায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এ ইজমা সম্পর্কে বিখ্যাত ফক্বীহ্ ও মুফাস্সির, রঈসুল উছুলিয়্যীন, শায়খ আহ্মদ ইবনে আবূ সাঈদ মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

فجعلت مخالفة المؤمنين مثل مخالفة الرسول- فيكون ادما عهم كخبر الرسول حجة قطعية. (نور الانوار)

অর্থঃ- “মূলতঃ মু’মিণগণের বিরোধিতা করা, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করারই নামান্তর। সুতরাং উনাদের ইজমা ও হাদীছ শরীফ-এর ন্যায় প্রামান্য ও অকাট্য দলীল।” (নূরুল আনোয়ার)

          তিনি ইজমার আহ্কাম সম্পর্কে আরো বলেন,

فيكون الاجماع حدة يكفر جاحده كالكتاب والسنة. (تفسير احمد يات)

অর্থঃ- “ইজমায়ে আযীমত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর মতই একটি অকাট্য দলীল। যে ব্যক্তি এ ইজমায়ে আযীমতকে অস্বীকার করলো, সে মূলতঃ কুফরী করলো।” (তাফসীরে আহ্মদীয়াত)

          সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত নয় বরং আট রাকায়াত হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল দ্বারা প্রমাণিত, একথা বলার অর্থই হলো- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ করা ও উম্মতের ইজমায়ে আযীমতকে অস্বীকার করা। মূলতঃ উভয়টাই শরীয়তের দৃষ্টিতে কুফরীর নামান্তর। অতএব, এটা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, বিদ্য়াতীদের উপরোক্ত বক্তব্যের দরুন, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আমলের সাথে সাথে ঈমানী বা আক্বীদাগত দিক থেকেও বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

          অতএব, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে সর্বপোরি বিদ্য়াতীদের সঠিক ও সহীহ্ বুঝ দেয়ার উদ্দেশ্যেই বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার প্রায়োজন দেখা দেয়।





রমযান মাসের ফযীলত ও গুরুত্ব

            তারাবীহ্ নামাযের সম্পর্ক যেহেতু রমযান মাসের সাথে, সেহেতু তারাবীহ্ নামাযের গুরুত্ব, ফাযায়েল ও তার আহ্কাম বুঝতে হলে আমাদেরকে সর্ব প্রথম রমযান মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফাযায়েল জানতে হবে বা অনুধাবন করতে হবে।

          মূলতঃ মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীন তিনি পবিত্র রমযান মাসকে অনেক দিক দিয়েই বরকতময় ও ফযীলতপূর্ণ করে রেখেছেন। আর রমযানুল মুবারকের অনেক ফাযায়েল-ফযীলত হাদীছ শরীফেও আলোচিত হয়েছে। পবিত্র রমযান মাসের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীন তিনি কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

شهر رمضان الذى انزل فيه القران هدى للناس وبينات من الهدى والفرقان.

অর্থঃ- “রমযান এমন একটি (বরকতময়) মাস, যে মাসে মানুষের জন্যে হিদায়েতকারী কুরআন শরীফ অবতীর্ণ হয়েছে এবং যেটা হিদায়েতের স্পষ্ট দলীল ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্যকারী।”

          আর হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,

الرمضان شهرالله من اكرم شهر الله اكرمه الله تعالى بالجنة.

অর্থঃ- “রমযান মাস হলো- মহান আল্লাহ্ পাক উনার খাছ মাস, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ্ পাক উনার খাছ মাসকে সম্মান করবে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তাকে জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন।”

          রমযান মাসের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- فيقول الله تعالى فى كل ليلة من رمضان ثلث مرأت- هل من سائل فا عطيه سواله وهل من تائب فاتوب عليه وثل من مستغفر فاغفرله. (درة الناصحين)

অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীন রমযান মাসের প্রতি রাতের বেলায় তিনবার বলতে থাকেন, কোন সুওয়ালকারী আছো কি? আমি তার সুওয়াল পূর্ণ করবো, কোন তওবাকারী আছো কি? আমি তার তওবা কবুল করবো। আর কোন ক্ষমা প্রার্থণাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” (দুররাতুন নাছেহীন)    আর নিম্মোক্ত হাদীছ শরীফ খানা আলোচনা করলে রমযান শরীফের ফযীলত-ফাযায়েল, মর্যদা-মর্তবা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,

عن سلمان فارسى رضى الله عنه قال- خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فى اخر يوم من شعبان- فقال يا ايها لناس قد اظل كم شهر عظيم-فيه ليلة خير من الف شهر- جعل الله صيامة فريضة وقيام ليله تطوغ- من تقرب فيه بخصلة من الخير كان كمن ادى فريضة فيما سواه- ومن ادى فيه فريضة كان كمن ادى سبعين فريضة فيما سواه- وهو شهر الصبر والصبر ثوابه الجنة وشهر المراساة وشهريزاد فيه رزق الؤمن- من فطرفيه صائماكن له مغفرة لذنوبه وعتق رقبته من النار وكان له مصل ادره من غير ان ينتقص من ادره شئ- قلنا يا رسول الله ليس كلنا نجد ما نفطر به الصائم- فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم يعطى الله هذا الثواب من فطر صائما على مذقة لبن اوتمرة اوشربة من ماء ومن اشبح صائما سقاه الله من حوضى شرية لا يطماء حتى يدخل الجنة وهو شهر اوله رحمة- اوسطه مغفرة واخره اتق من النيران- من خقف عن عملو كه فيه غفر الله له واتقه من النار. (بيهقى فى شعب الايمان)

অর্থঃ- হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শা’বান মাসের শেষ দিন আমাদের নিকট খুৎবা দিতেন বা ওয়াজ করতেন। (উক্ত খুৎবায়) তিনি বলেন, “হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের নিকট এক মহান মাস (রমযান মাস) উপস্থিত। এ মাসে এমন একটি রাত্র রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ্ পাক রমযান মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন ও রমযান মাসের রাত্রি বেলায় কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তারাবীহ্ নামাযকে সুন্নত করেছেন। যে ব্যক্তি রমযান মাসে একটি নফল আমল করলো, সে যেন অন্য সময়ের একটি ফরজ আদায় করলো, আর যে ব্যক্তি একটি ফরজ আদায় করলো, সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করলো। রমযান মাস হলো সবরের মাস, আর সবরের বিণিময় হলো জান্নাত, ওটা সহানুভূতীর মাস। ওটা এমন মাস, যে মাসে মু’মিনের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোজাদারকে ইফ্তার করাবে, ওটা তার জন্যে গুণাহ্ মাফ ও দোযখের আগুন হতে মুক্তির কারণস্বরূপ হবে। আর সে রোজাদারের সমান সাওয়াব পাবে, অথচ রোজাদারের সাওয়াবও কম হবেনা। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের প্রত্যেকের তো এমন সামর্থ নেই, যদ্বারা রোজাদারকে ইফ্তার করাবো। তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহ্ পাক এ সাওয়াব দান করবেন তাকে, যে এক চুমুক দুধ দ্বারা অথবা একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক চুমুক পানি দ্বারা কোন রোজাদারকে ইফ্তার করাবে। আর যে ব্যক্তি তৃপ্তি সহকারে রোজাদারকে খাদ্য খাওয়াবে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তাকে আমার হাউজে কাওছার হতে পানি পান করাবেন, যার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত তার পিপাসা লাগবেনা।’ ওটা এমন এক মাস, যে মাসের প্রথম দশদিন “রহ্মত” দ্বিতীয় দশদিন “মাগফিরাত” আর তৃতীয় দশদিন হচ্ছে জাহান্নাম হতে নাযাত পাওয়ার। আর যে ব্যক্তি রমযান মাসে তার কর্মচারীর কাজ কমায়ে দিবে, মহান আল্লাহ্ পাক তাকে ক্ষমা করবেন ও জাহান্নাম থেকে নাযাত দিবেন।” (বায়হাক্বী ফি শু’বিল ঈমান)

          উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র রমযান মাসের ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা অপরিসীম। কাজেই মহান  আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীনের দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া এজন্য যে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র, বরকতময় ও ফযীলতপূর্ণ মাস রমযান মাসে আমাদেরকে তারাবীহ্ নামায দান করে, তারাবীহ্ নামাযের ফাযায়েল-ফযীলত ও গুরুত্বকে আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। (আল্ হামদুলিল্লাহ্)



তারাবীহ্ নামাযের ফযীলত ও

রমযান মাসে ইবাদতের গুরুত্ব

            তারাবীহ্ নামাযের ফাযায়েল-ফযীলত আলোচনা করে শেষ করার মত নয়, কারণ রমযান মাসের ফাযায়েল-ফযীলত যেরূপ অবর্ণনীয়, তদ্রুপ রমযান মাসের প্রতিটি ইবাদতের ফাযায়েল-ফযীলতও অবর্ণনীয়। আর তাই দেখা যায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসে এতবেশী ইবাদত-বন্দেগী করতেন, যেটা অন্য কোন মাসে কল্পনাও করা যায়না। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عائشة رضى الله عنها قالت- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجتهد فى رمضان ما لا يجتهد فى غيره. (رواه مسلم)

অর্থঃ- হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসে বাদতে যতটুকু কোশেশ করতেন, অন্য সময় তা করতেন না।” (মুসলিম শরীফ)

          এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن عائشة رضى الله عنها قالت- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجتهد فى رمضان ما لا يجتهد فى غيره. (رواه مسلم)

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে মরফূ হিসাবে বর্ণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন রমযান মাস আসতো, তখন কোমর বেঁধে নিতেন (অর্থাৎ ইবাদতের জন্যে ভালরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন) অতঃপর নিজ বিছানায় আসতেন না, রমযান মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত।” (বায়হাক্বী শরীফ)

          বিশেষ করে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসের শেষ দশ দিন অন্যান্য দশ দিনের চেয়ে আরো অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দিগী করতেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,

عن عا ئشة رضى الله عنها مر فوعا- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا دخل شهر رمضان شدمئزره ثم لم يأت فراشه حتى ينسلخ- اسناده حسن- (رواه البيهقى فى شعب الايمان)

অর্থঃ- “হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন রমযানের (শেষ) দশ দিন আসতো, নিজ কোমর বেঁধে নিতেন, রাত্রে নিজে জাগ্রত থাকতেন ও পরিবারবর্গকেও জাগ্রত রাখ্তেন।” (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী শরহে বুখারী)

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, রমযান মাসের ইবাদতের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম অপরিসিম।

          আর মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসে যে সকল ইবাদত বন্দেগী করেছেন, তম্মধ্যে অন্যতম ও ফযীলতপূর্ণ ইবাদত হলো তারাবীহ্ নামায।

          তারাবীহ্ নামাযের ফযীলত প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,

عن عائشة رضى الله عنها قالت كان النبى صلى الله عليه وسلم اذا دخل العشر شد مئزره واحيى ليله وايقظ اهله- اخرجه البخارى، فتح البارى)

অর্থঃ- হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে রমযান মাসে তারাবীহ্ নামায পড়ার জন্যে (ফরজ হতে যাওয়ার ভয়ে) বেশী তাক্বীদ করতেন না, তবে তারাবীহ্ নামায পড়ার জন্যে (তার ফযীলত বর্ণনা করে) উৎসাহ প্রদান করতেন। তিনি বলতেন, “যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমানের সহিত ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে তারাবীহ্ নামায আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করে দেযয়া হবে।” ............. । (মুসলিম শরীফ)

          হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে যে,

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يرغب فى قيام رمضان من غير ان يأمرهم فيه بعزيمة فيقول من قام رمضان ايمانا واحتساب غفرله ما تقدم من ذنبه- الخ- (رواه مسلم)

অর্থঃ- হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত ও সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমযান মাসের রোজা রাখবে, তারাবীহ্ নামায আদায় করবে ও লাইলাতুল ক্বদরে দাঁড়িয়ে ইবাদত করবে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তার পূর্ববর্তী সকল গুণাহ্সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

          তারাবীহ্ নামাযের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে যে,

عن ابى هريرة قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- من صام رمضان ايمانا واحتسابا غفرله ما تقدم من ذنبه ومن قام رمضان ايمانا واحتساب غفرله ما تقدم من ذنبه- (منفق عليه)

অর্থঃ- হযরত আব্দুর রহ্মান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ পাক তাবারুকু তায়ালা তিনি তোমাদের জন্যে রমযান মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন। আর আমি তোমাদের জন্যে তারাবীহ্ নামাযকে সুন্নত করে দিলাম। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত ও সাওয়াবের লক্ষ্যে রমাযানের রোজাগুলো আদায় করবে ও রাত্রে তারাবীহ্ নামায পড়বে, সে গুণাহ্ হতে এরূপ পবিত্রতা লাভ করবে, যেন সে আজই মায়ের পেট হতে ভূমিষ্ট হয়েছে। (সুনানে নাসাঈ)

          সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা তারাবীহ্ নামাজের ফযীলত ও রমাযানে ইবাদত করার গুরুত্ব ও ফযীলত সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়। তাছাড়া তারাবীহ্ নামাযের অসংখ্য ও অবর্ণনীয় ফাযায়েল-ফযীলতের মধ্যে অন্যতম ও বিশেষ ফযীলত হলো এই যে, তারাবীহ নামায স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীনয হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। আর এ সুন্নত পালন করার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الرحمن بن عوف- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- ان الله تيارك تعالى فرض صيام رمضان عليكم وسننت لكم قيامه فمن صامه وقامه ايمانا واحتسابا- خرج من ذنوبه كيوم ولدته امه- (نساى شريف)

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিৎনার সময়ে আমার একটি সুন্নত আঁকড়িয়ে ধরবে বা পালন করবে, তাকে একশত শহীদের ফযীলত দান করা হবে।” (মিশকাত শরীফ)

          অতএব, তারাবীহ্ নামাজের ফাযায়েল-ফযীলত ও রমজানে ইবাদত করার গুরুত্ব যে কত বেশী, সেটা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।

তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া সুন্নতে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

            অনেকে বলে থাকে যে, রমযান মাসে তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত নয়, বরং এটা আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত। মূলতঃ উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই অবান্তর ও অশুদ্ধ এবং পাগলের প্রলাপ বৈ কিছুই নয়। কারণ, ছহীহ্ হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের সাথে তারাবীহ্ নামায জামায়াতের সহিত আদায় করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,

عن عائشة قالت- ان رسول الله صلى الله عليه وسلم- صلى ذات ليلة فىالمسجد فصلى بصلوته ناس- ثم صلى صلى القابلة فكثر الناس ثم اجتمتو من الثالثة- فلم يخرج اليهم رسول الله صلى الله عليه وسلم- وقال لم يمتعتى من الخروج اليكم الا انى خشيت ان يفرض عليكم. (بخارى شريف)

অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একরাত্রে মসজিদে তারাবীহ্ নামায পড়লেন, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও উনার সাথে নামায পড়লেন। অতঃপর পরবর্তী রাত্রেও নামায পড়লেন। লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। অতঃপর তৃতীয় রাত্রেও সকলে মসজিদে একত্রিত হলেন কিন্তু রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তারাবীহ্ নামায পড়ার জন্য তাদের নিকট আসলেন না এবং বললেন যে, আমি তোমাদের নিকট তারাবীহ্ নামায পড়ার জন্য না আসার কারণ এই যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছে তোমাদের উপর এটা ফরজ হয়ে যায় কিন।” (বুখারী শরীফ)

          উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- দু’রাত্র তারাবীহ্-এর নামায জামায়াতে পড়েছেন।

          এ প্রসঙ্গে অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,

عن ابى ذر قال سمنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم- فلم يقم بنا شيئا من ااشهر حتى بقى سبع- فقام بنا حتى ذهب ثلث الليل- فلما كانت السادسة لم يقم بنا- فلما كانت الخامسة قام بنا حتى ذهت شطر الليل- فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لو نفلتنا قيام هذه الليلة فقال ان الرجل اذا صلى مع الامام حتى بيصرف حسب له قيام ليلة فلما كانت الثالشة جمع اهله ونساءه والناس- فقام بنا حتى خشينا ان يفو تنا الفلاح- قلت وما الفلاح قال السحور- ئم لم يقم بنا يقية الشهر. (ابودود والنسائ)

অর্থঃ- হযরত আবূজর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমরা রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে (রমযান মাসে) রোজা রেখেছি কিন্তু তিনি রমযান মাসের কোন অংশেই আমাদেরকে নিয়ে তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়েননি। যাবৎ না রমযান মাসের সাত রাত্র বাকি রইল। সপ্তম রাত্রে তিনি আমাদেরকে নিয়ে রাত্রের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত (তারাবীহ্) নামায পড়লেন। যখন ষষ্ঠ রাত্র আসলো, তিনি আমাদেরকে নিয়ে নামায পড়লেন না। অতঃপর যখন পঞ্চম রাত্র আসলো, তিনি আমাদেরকে নিয়ে অর্ধরাত্র পর্যন্ত জামায়াতে (তারাবীহ্) নামায আদায় করলেন। তখন হযরত আবূজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ রাত্রে যদি আমাদেরকে নিয়ে আরো নামায পড়তেন? (উত্তরে) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোন ব্যক্তি যখন ইমামের সাথে নামায পড়ে, ইমামের শেষ করা পর্যন্ত উহা তার জন্য পূর্ণ রাত্রি নামায পড়ার সমান গণ্য করা হয়।” যখন চতুর্থ রাত্র আসলো, তখন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে (তনি একাই নিজের নামায পড়লেন) আমাদেরকে নিয়ে নামায পড়লেন না। আবার যখন তৃতীয় রাত্র আসলো, তিনি তাঁর পরিবারবর্গ ও সকল লোকদেরকে একত্রিত করলেন ও আমাদেরকে নিয়ে সারা রাত্র নামায পড়লেন। তখন আমরা (ফালাহ্) অর্থাৎ সেহ্রী ফউত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করতে লাগলাম। বলা হলো- ফালাহ্ কি? তিনি বলেন, “সেহ্রী”। অতঃপর অবশিষ্ট রাত্রগুলো তিনি আর আমাদেরকে নিয়ে নামায পড়েননি। (আবূ দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ)

          এ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- চার রাত্র তারাবীহ্ নামায জামায়াতে আদায় করেছেন।

          সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, তারাবীহ্ নামায জামায়াতের সহিত আদায় করেছেন, নিম্মোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারাও তা প্রমাণিত হয়-

عن زيد بن ثابت قال- ان النبى صلى الله عليه وسلم اتخذ حجرة فى المسجد من حصير- فصلى فيها ليالى حتى اجتمغ عليه ناس- ثم فقدوا صوته ليلة وظنوا انه قدنام فجعل بعضهم يتنحنح ليخرج اليهم فقال مازال بكم الذى رأيت من صنيعكم حتى خشيت ان يكتب عليكم ولوكتب عليكم ماقمتم به- الخ. (متفق عليه)

অর্থঃ- হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একবার ই’তিকাফ করার জন্যে মসজিদে নববীতে মাদুর বা চাটাই দ্বারা একটি হুজরা বানালেন এবং সেখানে কয়েক রাত্র তারাবীহ্ নামায পড়লেন, যার কারণে বহুলোক (তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়ার জন্য) উনার নিকট জমা হতে লাগলো। অতঃপর একরাত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনার কোন সাড়া শব্দ পেলেন না, উনারা ধারণা করলেন, তিনি হয়তো বা ঘুমিয়ে আছেন, অতএব উনাদের মধ্যে কেউ কেউ আওয়াজ করতে লাগলেন, যেন তিনি উনাদের নিকট জামায়াতের জন্য ভিতর হতে বের হয়ে আসেন। এটা দেখে তিনি বললেন, “আমি তোমাদের আগ্রহের অবস্থা দেখেছি এবং আশঙ্কা করতেছি যে, এটা (তারাবীহ্ নামায) যেন তোমাদের উপর ফরজ হয়ে না যায়। আর যদি উহা ফরজ হয়ে যায়, তবে তোমরা তা আদায় করতে সক্ষম হবেনা। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, রমযান মাসে তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। যদিও তিনি মাত্র চার রাত্র তা জামায়াতে আদায় করেছেন।

          কাজেই তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত নয়, একথা বলার অর্থই হলো- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপ করা, যেটা সম্পূর্ণই কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।

          মূলকথা হলো- তারাবীহ্ নামায যেরূপ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত, তদ্রুপ তারাবীহ্ নামায জামায়াতে আদায় করাও হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা, আর পুরুষের জন্য বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া।



বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায

ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত

          

কেউ কেউ বলে থাকে যে, বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাজের স্বপক্ষে কোন ছহীহ্ হাদীছ শরীফ-এর প্রমাণ নেই। মূলতঃ হাদীছ শরীফ ও তার উসূল সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবেই তারা একথা বলে থাকে। কারণ বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের স্বপক্ষে যে হাদীছ শরীফগুলো পেশ করা হয়, তার প্রায় প্রত্যেকটিই ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত। কেউ কেউ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে জঈফ বলে থাকে, অথচ এটা সম্পূর্ণই ভুল। কারণ হাদীছ শাস্ত্রের উসূল মোতাবেক হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা ছহীহ্ প্রমাণিত হয়। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,



ঊদূ লেখা ঢুকবে....................................................................................



অর্থঃ- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হাদীছ শরীফকে, রাবী ইব্রাহীম ইবনে ওসমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জন্যে নিম্নোক্ত কারণে জঈফ বলা শুদ্ধ হবেনা।

(১) রাবী ইব্রাহীম ইবনে ওসমান রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে, আল্লামা ইবনে আদ্দী বলেন, তিনি (ইব্রাহীম ইবনে ওসমান) ইব্রাহীম ইবনে আবী হাইয়্যাহ হতেও উত্তম রাবী।

          এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইব্রাহীম ইবনে ওসমান রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইব্রাহীম ইবনে আবী হাইয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হতেও অধিক ত্মরুƒল্ফশ্চত্র ছেক্বাহ্ রাবী। (তাহ্যীব, লোময়াতুল মাছাবীহ্) অর্থাৎ ইব্রাহীম ইবনে আবী হাইয়্যা তো অবশ্যই ছেক্বাহ্ রাবী, তার চাইতেও উত্তম ছেক্বাহ্ রাবী হলেন- ইব্রাহীম ইবনে ওসমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। অতএব, বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ সামাজ সম্পর্কিত হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে, রাবী ইব্রাহীম ইবনে ওসমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কারণে জইফ বলার কোন অবকাশ নেই। কারণ প্রমাণিত হয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম ইবনে ওসমান রহমতুল্লাহি আলাইহি জঈফ নন বরং ছেক্বাহ্ রাবীর অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানাও ছহীহ্ হাদীছ শরীফের অন্তর্ভূক্ত।

          বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাজের স্বপক্ষে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা যে সহীহ্, তা নিন্মোক্ত কিতাবের বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয়। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,



ঊদূ লেখা ঢুকবে....................................................................................



অর্থঃ- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ও হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উভয়েই (জলীলুল ক্বদর) ছাহাবী। ওনাদের মধ্যখানে কোন জঈফ রাবী নেই, যার কারণে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাদীছ শরীফকে জঈফ বলা যেতে পারে এবং এটা বুঝা যেতে পারে যে, ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের আমলের ভিত্তি জঈফ হাদীছ শরীফের উপর। কেননা খোলাফা-ই-রাশেদীন ও অন্যান্য সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিশ রাকায়াতের উপর নিয়মিত আমল ও ঐক্যমত হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা সহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার অকাট্য দলীল। আল্লামা বাহ্রুল উলূম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাজের উপর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের মুয়াযেবাত (নিয়মিত আমল) ও ঐক্যমত, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা সহীহ্ হওয়ার ক্বরীনা বা স্পষ্ট দলীল। (রাসায়েলুল আরকান)

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত, এর স্বপক্ষে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা মোটেও জঈফ নয়, বরং তা সম্পূর্ণই সহীহ্। অতএব, সহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- রমযান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়তেন। আর এ বিশ রাকায়াতের উপরই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়।

          এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى تنهما قال- ان رسول الله صلى الله عليه وسلم- كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة والوتر= امجه ابن ابى شيبة فى مصنفة والبغوى فى معجمه والطيرانى فى الكبير له والبيهقى فى سننه. التعليق الحسن)

অর্থঃ- “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- রমযান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ও তিন রাকায়াত বিত্র নামায পড়তেন।” এটা ইবনে আবী শায়বা, বাগবী, তিবরানী ও বায়হাক্বী তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে বর্ণনা করেছেন। (তা’লীকুল হাসান)

          হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

نقل حافظ الحديث ابن حجرا لعسقلانى- انه صلى الله عيه وسلم- صلى بالناس عشرين ركعة ليلتين- فلما كان فى الليلة الثالثة اجتمع الناس فلم يخرج اليهم ثم قال من الغد انى خشيت ان تفرض عليكم فلا تطيقونها- متفق على صحته (لا مع الدرارى شرح سحيح البخارى)

অর্থঃ- “হাফিজুল হাদীছ, আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- দুই রাত্র হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণকে নিয়ে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করেন। তৃতীয় রাত্র যখন আসলো, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ একত্রিত হলেন, কিন্তু হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায পড়ার জন্যে উনাদের নিকট বের হয়ে আসলেন না। অতঃপর বললেন, আমার ভয় হচ্ছে, এটা তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যায় কিনা। আর ফরজ হয়ে গেলে তোমরা তা আদায় করতে সক্ষম হবেনা।” এটা সহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত। (লামিউদ্ দুরারী শরহে বুখারী)

          এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল ওলামা ওয়াল মাশায়েখ, হযরত শাহ্ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

فالظاهر انه نبت عندهم صلوة النبى صلى الله عليه وسلم عشرين ركعة كماجاء فى حديث ابن عباس فاختاره عمر رضى الله عنه. (فتح المنان)

অর্থঃ- প্রকাশ থাকে যে, বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফে এসেছে। আর আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এটাই গ্রহণ করেন। (ফাতহুল মানান)

          আর আল্লামা তাহ্তাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তারাবীহ্ নামায সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার পর রায় দেন যে,

فعلى هذا يكون عشرون ثابتا من فعله صلى الله عليه وسلم. (طحطاوى، درالمختار)

অর্থঃ- (তাহ্তাবী কিতাবে বর্ণিত) বিস্তারিত আলোচনার ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো যে, বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফে’ল বা আমল দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত। (তাহ্তাবী, দুররুল মুখ্তার)

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- রমযান মাসে জামায়াত, গায়রে জামায়াত উভয় অবস্থাতেই বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়েছেন। এটা সহীহ্ হাদীছ শরীফ ও অকাট্য, নির্ভরযোগ্য, অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। কাজেই বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের স্বপক্ষে কোন সহীহ হাদীছ নেই, একথা সম্পূর্ণই অজ্ঞতা ও গোমরাহীর নামান্তর।











সিহাহ্ সিত্তাই শুধু ছহীহ্ হাদীছ শরীফ-এর

কিতাব নয়, সিহাহ্ সিত্তায়ও

জঈফ হাদীছ শরীফ রয়েছে

          

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়েছেন। এটা ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত থাকা সত্বেও কিছু অজ্ঞ লোক, সাধারণ লোকদের বিভ্রান্ত করার জন্যে বলে থাকে যে, বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের বর্ণনা বোখারী শরীফ বা সিহাহ্ সিত্তার কোন কিতাবে নেই, আর সিহাহ্ সিত্তায় যার বর্ণনা নেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো- সিহাহ্ সিত্তাই শুধু সহীহ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব, আর অন্য যে সকল হাদীছ শরীফের কিতাব রয়েছে, তা সহীহ্ বা নির্ভরযোগ্য নয়।

          মূলতঃ উপরোক্ত বক্তব্য বা ধারণা অশুদ্ধ তো বটেই বরং পাগলের প্রলাপ বৈ কিছুই নয়। কারণ শরীয়তের দলীল হলো কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস। সিহাহ্ সিত্তাহ্ বা বুখারী শরীফ শরীয়তের দলীল নয়। কেননা কেউ প্রমাণ করতে সক্ষম হবেনা যে, শরীয়তের কোথাও সিহাহ্ সিত্তাহ্ বা বুখারী শরীফকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। বরং বলা হয়েছে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফকে অনুসরণ করতে। সুতরাং সহীহ্ হাদীছ তা সিহাহ্ সিত্তার হোক অথবা অন্য কোন কিতাবের হোক, তা অবশ্যই অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য। কারণ পৃথিবীতে সিহাহ্ সিত্তাই শুধু ছহীহ্ হাদীছ শরীফের কিতাব নয়। সিহাহ্ সিত্তার বাইরেও অসংখ্য ছহীহ্ হাদীছ শরীফের কিতাব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ইমাম নববী, ইবনুস সালাহ্, শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ বলেন যে, সিহাহ্ সিত্তাহ্ ছাড়াও ৫০-এর অধিক সহীহ্ বা বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফের কিতাব রয়েছে। নিম্নে সহীহ বোখারী ও মুসলিমের ন্যায় কতগুলো সহীহ্ হাদীছ শরীফের কিতাবের নাম উল্লেখ করা হলো। যেমন- (১) সহীহ্ ইবনে খোযায়মা, (২) সহীহ্ ইবনে হাব্বান, (৩) সহীহ্ ইবনে ওয়ায়না, (৪) সহীহ্ ইবনুস সাকান, (৫) সহীহ্ মোন্তাকা, (৬) মুখ্তাসারেজিয়াহ, (৭) সহীহ্ জুরকানী, (৮) সহীহ্ ইস্ফেহানী ও (৯) সহীহ্ ইসমাঈলী, (১০) মোস্তাদ্রেক ইবনে হাকিম, (১১) মসনদে ইমাম আযম, (১২) মুওয়াত্তায়ে ইমাম মালেক (১৩) মুওয়াত্তায়ে ইমাম মুহম্মদ, (১৪) কিতাবুল আছার, (১৫) কিতাবুল খেরাজ, (১৬) কিতাবুল হেজাজ, (১৭) কিতাবুল আ’মালী, (১৮) মসনদে শাফেয়ী, (১৯) মসনদে আবূ ইয়ালী, (২০) মসনদে আব্দুর রাজ্জাক, (২১) মসনদে আবূ বকর ইবনে আবী শায়বা, (২২) মসনদে আব্দ ইবনে হুমায়েদ, (২৩) মসনদে আবূ দাউদ তায়লাসী, (২৪) সুনানে দারে কুত্নী, (২৫) সুনানে দারেমী, (২৬) সুনানে বায়হাক্বী, (২৭) মা’রেফাতু সুনানে বায়হাক্বী, (২৮) মা’য়ানিয়ূল আছার-তাহাবী, (২৯) মুশ্ফিক্বিয়ুল আছার-তাহাবী, (৩০) মু’জামুল কবীর-তিব্রানী, (৩১) মু’জামুল আওসাত-তিবরানী, (৩২) মু’জামুস সগীর-তিব্রানী, (৩৩) কিতাবুল ই’তিকাদ্, (৩৪) কিতাবুদ্ দোয়া, (৩৫) মসনদে হারেস ইবনে উমামা, (৩৬) মসনদে বাজ্জাজ, (৩৭) সুনানে আবী মুসলিম, (৩৮) সুনানে সাঈদ বিন মনছূর, (৩৯) শরহুস্ সুন্নাহ, (৪০) শিফা, (৪১) হুলইয়া, (৪২) তাহ্যীবুল আছার ও (৪৩) আল মুখাতারা ইত্যাদি কিতাবসমূহ হাদীছ শরীফের সহীহ্ কিতাবের অন্তর্ভূক্ত।

          অতএব, প্রমাণিত হলো যে, সিহাহ্ সিত্তার বাইরেও বহু সহীহ্ হাদীছ শরীফের কিতাব রয়েছে। তাছাড়া সিহাহ্ সিত্তার সকল হাদীছ শরীফই সহীহ্ নয় বরং তাতে জঈফ এমনকি মওজু হাদীছও রয়েছে।

          মূলকথা হলো- এমন কোন হাদীছ শরীফের কিতাব নেই, যে কিতাবের সকল হাদীছ শরীফ সহীহ্ বা বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিসগণ একমত হয়েছেন। বরং কোন একখানা হাদীছ শরীফকে কোন একজন সহীহ্ বলেছেন, অন্য একজন সেটাকে জঈফ বা হাসান বলেছেন। যেমন- ইমাম বোখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি এমন বহু হাদীছ শরীফ সহীহ্ নয় বলে ছেড়ে দিয়েছেন, অথচ সেগুলোকেই ইমাম আবূ দাউদ, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসাঈ, ইমাম ইবনে মাজা, ইমাম দারে কুতনী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ ইমামগণ সহীহ্ বলে গ্রহণ করেন। (সায়েকাতুল মুসলিমীন)

          আবার এমন অনেক হাদীছ শরীফ রয়েছে, যেগুলো ইমাম বোখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি সহীহ বলে গ্রহণ করেন, কিন্তু সিহাহ্ সিত্তার অন্যান্য ইমামগণ সেগুলো সহীহ্ নয় বলে পরিত্যাগ করেন।

          আর তাই বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আলফিয়া” কিতাবের হাশিয়ায় উল্লেখ করেন যে, “সহীহ্ বুখারীর ৮০ জন ও সহীহ্ মুসলিমের ১৬০ জন রাবীর বর্ণনাকৃত হাদীছ জঈফ বলে প্রমাণিত হয়েছে।” (নুয্হাতুন্ নাজার)

          হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “ইমাম দারে কুত্নী, আবূ আলী ও আবূ দাউদ দামেস্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি সহীহ্ বোখারী ও মুসলিমের ২০০ হাদীছকে জঈফ বলে উল্লেখ করেন।” (মুকাদ্দিমায়ে শরহে মুসলিম)

          হযরত ইমাম কুস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “সহীহ্ বুখারীতে এরূপ হাদীছও রয়েছে, যা কারো মতে সহীহ্, আর কারো মতে জঈফ।” (শরহে বুখারী)

          কাশ্ফুয্যুনূন, মুকাদ্দিমায়ে ফাতহুল বারী ইত্যাদি কিতাবে সহীহ্ বোখারী শরীফের কিছু কিছু হাদীছকে জঈফ বলে প্রমাণ করা হয়েছে।

          শুধু তাই নয়, সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম শরীফে ২০ জন মরজিয়া, ২৩ জন কদ্রিয়া, ২৮ জন শিয়া, ৪ জন রাফেজী, ৯ জন খারেজী, ৭ জন নাসেবী ও ১জন জহ্মিয়া কর্তৃক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। (সায়েকাতুল মুসলিমীন)

          অতএব, প্রমাণিত হলো যে, সকল সহীহ্ হাদীছ শরীফ-এর কিতাবেই কারো কারো মতে কিছু সংখ্যক জঈফ হাদীছ রয়েছে। কাজেই জঈফ হাদীছ মাত্রই পরিত্যাজ্য বা বাতিল নয়। কারণ কোন হাদীছ শরীফকে কেউ জঈফ বললো ও অন্য আরেকজন সেটাকে সহীহ্ বলেছেন। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা দু’টি বিষয় স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো-

(১) সিহাহ্ সিত্তাই শুধু সহীহ্ হাদীছের কিতাব নয় বরং সিহাহ্ সিত্তার বাইরেও বহু সহীহ্ হাদীছ শরীফের কিতাব রয়েছে।

(২) সিহাহ্ সিত্তার সকল হাদীছ শরীফ সহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিসীনে কিরাম একমত নন বরং কারো মতে সিহাহ্ সিত্তাসহ সকল সহীহ্ হাদীছ শরীফের কিতাবেই জঈফ হাদীছ রয়েছে। কাজেই যারা বলে সিহাহ্ সিত্তাহ ব্যতীত অন্যকোন হাদীছ শরীফ-এর কিতাব সহীহ্ বা নির্ভরযোগ্য নয়, তাদের একথা নিতান্তই অজ্ঞতার পরিচায়ক।

          তবে একথা সত্য যে, তুলনামূলকভাবে অন্যান্য হাদীছ শরীফের কিতাব হতে সিহাহ্ সিত্তায় সহীহ হাদীছ শরীফের সংখ্যা বেশী রয়েছে। আর একথাও সত্য যে,

اصح الكتاب بعد كتاب الله الصحيح البخارى.

অর্থঃ- “কুরআন শরীফ-এর পর সর্বাধিক ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব হলো সহীহ বুখারী।”

          তাই বলে সিহাহ্ সিত্তাহ্ বা বুখারী শরীফে শরীয়তের কোন বিষয় উল্লেখ না থাকলে যে তা পরিত্যাজ্য বা অশুদ্ধ, একথা মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ সিহাহ্ সিত্তার মধ্যে শরীয়তের সকল বিষয়ের বর্ণনা না থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা সিহাহ্ সিত্তার মধ্যে তাকরার বাদ দিয়ে সর্ব মোট প্রায় দশ হাজার হাদীছ শরীফ রয়েছে। তবে কি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২৩ বৎসর নুবুওওয়তী হায়াত মুবারকে মাত্র দশ হাজার কথা বলেছেন?

          এখানে লক্ষনীয় বিষয় এই যে, যারা সর্বদা সিহাহ্ সিত্তার দোহাই দেয়, তারাই আবার এমন অনেক আমল করছে, যার বর্ণনা সিহাহ্ সিত্তায় নেই, এর বহু প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। আর মূলতঃ এরূপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ শরীয়তের সকল বিষয়ের ফায়সালা কখনোই সিহাহ্ সিত্তায় পাওয়া যাবেনা।

          সুতরাং সিহাহ্ সিত্তাহ্ বা বোখারী শরীফের সহীহ্ হাদীছ শরীফের যেরূপ হুকুম, অন্যান্য কিতাবের সহীহ্ হাদীছ শরীফেরও তদ্রূপ হুকুম। কারণ কেউ প্রমাণ করতে সক্ষম হবেনা যে, শরীয়তের কোথাও কোন নির্দিষ্ট হাদীছ শরীফের কিতাবকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে বরং আম বা সাধারণভাবে সকল হাদীছ শরীফকেই অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

          মূলকথা হলো- বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাজের বর্ণনা সিহাহ্ সিত্তায় না থাকলেও তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়, কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- যে রমযান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়েছেন, তা অন্যান্য সহীহ্ হাদীছ শরীফের কিতাবে, সহীহ্ রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, যার প্রমাণ ইতিপূর্বে দেওয়া হয়েছে।

বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ইজমায়ে আযীমত দ্বারাও প্রমাণিত

            রমযান মাসে তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াতই পড়তে হবে, কারণ এটার উপর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণসহ সকল উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়তেন এবং বিশ রাকায়াত তারাবীহ্র স্বপক্ষীয় হাদীছ শরীফখানা যে সহীহ্, তার একটি জলন্ত ও বলিষ্ঠ দলীল হলো- বিশ রাকায়াতের উপর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণসহ সকল উম্মতের ইজমা। কারণ, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের পক্ষে, আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কোন আমলের ব্যাপারে স্পষ্ট বর্ণনা থাকা সত্বেও অর্থাৎ আট রাকায়াতের সহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ থাকা সত্বেও বিশ রাকায়াতের উপর ইজমা বা ঐক্যমতে পৌঁছা কখনো সম্ভব নয়। কেননা, ফিক্বাহ্ শাস্ত্রের উসূল হলো- ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

الخبر الضعيف عن رسول الله صلى الله عليه وسلم- اولى من القياس- ولا يحل القياس مع وجوده. (مقدمهء اعلاء السنن)

অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত হাদীছ (যদিও রাবীদের কারণে) জঈফ হয়, ওটা ক্বিয়াস হতে বহুগুণে উত্তম। যেক্ষেত্রে জঈফ হাদীছ পাওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ক্বিয়াস হালাল বা জায়িয নয়। (মুকাদ্দিমায়ে ইলাউস্ সুনান)

          অতএব, যেখানে কোন বিষয়ে জঈফ হাদীছ শরীফ বিদ্যমান থাকা সত্বেও ক্বিয়াস করা হারাম, সেখানে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল অর্থাৎ আট রাকায়াতের বিপরীতে বিশ রাকায়াতের উপর সকল হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণসহ ইমাম-মুজতাহিদগণের ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা লাভ করা কি করে সম্ভব? ইজমা তো হয়ে থাকে কোন প্রমাণিত বিষয়কে আরো মজবুত বা অকট্যভাবে প্রমাণিত করার জন্য অথবা কুরআন ও হাদীসে যার সুস্পষ্ট ফায়সালা নেই, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে ওটার ফায়সালা বের করার পর ওটাকে শক্তিশালী ও মজবুত করার জন্য ওটার উপর ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা। কেননা, হাদীছ শরীফ বা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, কোন বিষয়ের বিপরীতে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এরূপ কোন নজীর বা দৃষ্টান্ত কেউ পেশ করতে পারবেনা।

দ্বিতীয়তঃ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের পক্ষে কখনো জঈফ হাদীছ শরীফ-এর উপর ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব নয়। কাজেই যারা বলে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত বিশ রাকায়াতের হাদীছ শরীফখানা জঈফ, তাদের একথা সম্পূর্ণই অবান্তর, কাল্পনিক ও অজ্ঞতাপ্রসূত।

          অতএব, বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের উপর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণসহ সকল উম্মতের ইজমা এ কথাই প্রমাণ করে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়তেন ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা সহীহ্।

          এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

وذكر فى الاختيار- ان ابايوسف سئل ابا خيفة رحمهما الله تعالى- وما فعله عمر رضى الله عنه- فقال التراويح سنة مؤكدة ولم يتخرجه عمر من تلقاء نفسه ولم يكن فيه مبتدعا ولم يامر به الاعن اصل لديه وعهد من رسول الله صلى الله عليه وسلم. (بحرالرأئق)

অর্থঃ- “ইখতিয়ার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের জামায়াত প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। তখন ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, (বিশ রাকায়াত) তারাবীহ্ নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি ওটা নিজ হতে উদ্ভাবন করেননি এবং এ ব্যাপারে তিনি বিদ্য়াত উদ্ভবকও নন। আর তিনি বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের আদেশ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কোন ভিত্তি বা দলীল না পেয়ে দেননি। (অর্থাৎ তিনি বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের ভিত্তি বা দলীল পেয়েছেন বিধায় বিশ রাকায়াত পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (বাহ্রুর রায়েক)

          উক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায মনগড়া উদ্ভাবন করেননি বরং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল ও সহীহ্ হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে করেছেন। আর তাই সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ বিনা বাক্যে তা মেনে নিয়েছেন ও এর উপর ইজমা বা ঐক্যমতে পৌঁছেছেন।

          বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের উপর যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণসহ সকল উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নিম্নে তার প্রমাণ পেশ করা হলো-

قال ابن حجر المكى الشا فعى اجمعت الصحابة رضى الله عنهم على ان الترايح عشرون ركعة. (مر قاة المفاتيح)

অর্থঃ- হযরত ইবনে হাজর মক্কী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত, এ ব্যাপারে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ্)

          এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে যে,

التراويح سنة مؤكدة وهى عشرون ركعة با جماع الصحابة رضى الله تعالى عنهم. (مراقى الفلاح)

অর্থঃ- “বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজমা দ্বারা সুন্নতে মুয়াক্কাদা সাব্যস্ত হয়েছে।” (মারাক্বিউল ফালাহ্)

          ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

وبهذا ناخذ .................... لان المسلمين قد اجمعوا على ذالك وروه حسنا- وقدروى عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال مارأه المسلمون حسنا فهو عند الله حسن. (مؤطا امام محمد)

অর্থঃ- আমরা বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের মতকেই গ্রহণ করেছি। কেননা সকল মুসলমানগণ বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমতে পৌঁছেছেন এবং ওটাকে উত্তম বলেছেন। আর হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যেটাকে মুসলমানগণ ভাল বা উত্তম মনে করেন, সেটাকে মহান আল্লাহ পাক তিনিও ভাল বা উত্তম মনে করেন।” (মুয়াত্তায়ে ইমাম মুহম্মদ)

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায যেরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল দ্বারা সুন্নত প্রমাণিত, তদ্রুপ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণসহ সকল উম্মতের ইজমায়ে আযীমত দ্বারাও প্রমাণিত। অতএব, তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত, এটাকে অস্বীকার করা মূলতঃ হাদীছ শরীফ ও ইজমায়ে আযীমতকে অস্বীকার করারই নামান্তর। যেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই কুফরী।

ইজমার সংজ্ঞা ও আহ্কাম

          الاجماع - (ইজমা) শব্দের লোগাতী বা  আভিধানিক অর্থ হলো- (الاتفاق) অর্থাৎ ঐক্যমত।

          আর (اجماع) ইজমার শরয়ী অর্থ হলো-

اتفاق مجتهدين صالحين امة محمد صلى الله عليه وسلم فى عصر واحد على امر قولى رفعلى. (نورالانوار فى شرح المنار)

অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের সালেহ্ (নেক্কার) মুজ্তাহিদগণ উনাদের একই সময়ে কোন কথা বা কাজের মধ্যে ঐক্যমত পোষণ করা।” (নূরুল আনোয়ার ফি শরহিল মানার)

          এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, মুজ্তাহিদ অর্থাৎ যিনি ইজতিহাদ করবেন, উনাকে অবশ্যই সালেহীনগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে, আদেল হতে হবে, সুন্নতের পূর্ণ পাবন্দ হতে হবে, সগীরাহ্ গুণাহ হতেও বেঁচে থাকার চেষ্টা থাকতে হবে। অতএব, কোন বিদ্য়াতী ও হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তির ইজ্তিহাদ গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন বর্তমানে অনেক উলামায়ে ‘সূ’[ বা দুনিয়াদার তথাকথিত আলেমরা আধুনিকতার দোহাই দিয়ে ছবি তোলার কাজে লিপ্ত, অথচ শরীয়তে ছবি তোলা সম্পূর্ণ হারাম। আর ইসলামী হুকুমত জারী করার দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলনে জড়িত অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। এ ধরণের কোন তথাকথিত আলেম বাহ্যিক দৃষ্টিতে যতই ইল্মের দাবিদার হোক না কেন, সে যদি কোন শরঈ মাসয়ালার ইজ্তিহাদ করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবেনা। সুতরাং "مجتهدين صالحين বাক্য দ্বারা বিদ্য়াতী ও ফাসেক তথা উলামায়ে ‘সূ’দের ইজ্তিহাদ বাতিল বলে গণ্য হবে।

ইজমার রোকন বা প্রকারভেদ

ও তার সংজ্ঞা

          ইজমার রোকন দু’টি- (১) (عزيمت) আযীমত, (২) (رخصت) রোখসত।

১। ইজমায়ে আযীমতের সংজ্ঞাঃ- মুজ্তাহিদ ইজ্তিহাদ করার পর তাঁর যুগের কেউ যদি, যে কথা বা কাজের উপর ইজ্তিহাদ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোন দ্বিমত পোষণ না করে অর্থাৎ সকলেই তা শরীয়তের হুকুম হিসাবে মেনে নেয়। যেমন এরূপ বলে যে, আমরা সকলেই এটা মেনে নিলাম অথবা ওটা যদি فعلى বা কাজ হয়, আর সকলেই ঐ কাজ করতে শুরু করে দেয়, তবে এ ধরণের ইজমাকেই ইজমায়ে আযীমত বলে।

          এ প্রকার ইজমার মধ্যে সর্বত্তোম ও সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ইজমা হলো- হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ইজমা বা ঐক্যমত। এ ধরণের ইজমা কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ ও মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফের মতই হুজ্জত বা দলীল। যেমন- হযরত আবূ বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার খেলাফত বা খলীফা হওয়ার ব্যাপারে সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ইজমা বা ঐক্যমত, জুমুয়ার সানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সামনে দেয়ার ব্যাপারে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের সর্বসম্মত রায় বা ইজমা। অনুরূপ বর্তমান আলোচ্য ফতওয়া অর্থাৎ তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত হওয়ার ব্যাপারে সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ইজমা বা ঐক্যমত। মূলতঃ এ ধরণের ইজমাকে অর্থাৎ ইজমায়ে আযীমতকে অস্বীকার করা কুফরীর নামান্তর।

২। ইজমায়ে রোখ্সতের সংজ্ঞাঃ- ইজ্তিহাদের বিষয় নিয়ে মুজ্তাহিদগণের মধ্যে ইখ্তিলাফ বা মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়া, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের কোন বিষয়ে ইমামগণের মধ্যে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হওয়া। কোন মুজ্তাহিদ কোন বিষয়ে মত প্রকাশের পর অন্য কোন মুজ্তাহিদ সে বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করা বা না করা অথবা চুপ করে থাকা। আর এটাকেই ইজমায়ে রোখসত বলে। ইজমায়ে রোখসতকে ইজমায়ে সুকূতীও বলে। আমাদের হানাফীদের নিকট ইজমায়ে রোখসত বা সুকূতী গ্রহণযোগ্য, আর ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটার বিপরীত মত পোষণ করেন।

ইজমার শরয়ী আহ্কাম

          মূলতঃ ইজমাকে অর্থাৎ ইজমায়ে আযীমতকে অস্বীকার করা, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করারই নামান্তর, যেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই কুফরী। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

ومن يشاقق الرسول من ععد ماتبين له الهدى ويتبع غيرسبيل المؤمنين نوله ماتولى ..... الخ.

অর্থঃ- “কারো নিকট হিদায়েত বিকশিত হওয়ার পরও যদি সে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করে, আর মু’মিনগণের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথের অনুসরণ করে, আমি তাকে সে দিকেই ফিরাবো, যে দিকে সে ফিরেছে।”

          বিখ্যাত মুফাস্সির, আলেমে হক্কানী, শায়খে রাব্বানী, শায়খ আহ্মদ ইবনে আবূ সাঈদ মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে বলেন যে,

فجعلت مخالفة المؤمنين مثل مخالفة الرسول فيكون اجماعهم كخبر الرسول حجة قطعية. (نورالانوار)

অর্থঃ- উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো যে, মু’মিনগণের বিরোধীতা করা মূলত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করারই নামান্তর। অতএব, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফের ন্যায় মু’মিনগণের ইজমাও অকাট্য ও প্রামান্য দলীল বলে পরিগণিত হবে। (নূরুল আনোয়ার)

          আর তাই মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গন্থ “তাফসীরে আহমদী”-এ ইজমার আহ্কাম সম্পর্কে চূড়ান্ত রায় পেশ করে বলেন,

فيكون الاجماع حجة يكفر جا حده كا لكتاب وسنة.

অর্থঃ- “ইজমায়ে আযীমত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের মতই একটি অকাট্য দলীল। যে ব্যক্তি এ ইজমাকে অস্বীকার করলো, সে মূলতঃ কুফরী করলো।”

          মোটকথা হলো- ইজমা সম্পর্কিত উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত, এটা শুধু ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত নয় বরং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণসহ সকল উম্মতের ইজমায়ে আযীমত দ্বারাও প্রমাণিত। কারণ, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি যখন ওনার খিলাফতের সময়, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণকে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়ার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন জলীলুল ক্বদর ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণসহ অসংখ্য ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ জীবিত ও উপস্থিত ছিলেন, অথচ একজন সাহাবীও উহার বিরোধীতা করেননি বরং প্রত্যেকেই তা মেনে নিয়ে নিয়মিতভাবে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়তে থাকেন এবং পরবর্তী ইমাম, মুজতাহিদগণও এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন ও বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলে রায় দেন।

          এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

قد ثبت ان ابى بن كعب كان يقوم بالناس عشرين ركعة فى رمشان ويوتر بثالاث- فراى كشير من العلماء ان ذالك هواا سنة لا نه قام بين المهاجرة والانصار لم ينكره منكرا. فتا ... ابن تيميه)



অর্থঃ- প্রমাণিত হলো যে, হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রমযান মাসে জামায়াতে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ ও তিন রাকায়াত বিত্র নামায পড়েছেন। তাই অধিকাংশ আলেমগণ বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা রায় দেন। কেননা তিনি (উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) মুহাজির ও আনছার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের উপস্থিতিতেই (বিশ রাকায়াত তারাবীহ্  নামায) পড়েছেন, অথচ একজনও ওটার এনকার বা প্রতিবাদ করেননি। (ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াহ্)

          সুতরাং তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত, এটা যেহেতু ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও ইজমায়ে আযীমত দ্বারা সুন্নতে মুয়াক্কাদা প্রমাণিত, সেহেতু এটাকে অস্বীকার করা ও এর বিপরীত মত পোষণ করা মূলতঃ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করা ও কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফ-এর বিপরীতে মত পেশ করার নামান্তর, যেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই কুফরী। কাজেই তারাবীহ্ নামায আট রাকায়াত, এ দাবী বা বক্তব্য সম্পূর্ণই অমূলক, বিভ্রান্তিকর ও কুফরী মতবাদের নামান্তর। যার থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর জন্য অপরিহার্য ফরজ।

( অসমাপ্ত )


0 Comments: