হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ২৭৬-৩৭৭) (ঙ)
মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এর “সূরা শুরা”-এর ৫২নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন,
وكذلك اوحينا اليك روحا من امرنا ما كنت تدرى ما الكتب ولاالايمان.
অর্থ: “এমনিভাবে আমি আপনার কাছে কুরআন শরীফ ওহী করেছি আমার আদেশক্রমে। আপনি কি জানেন না? কিতাব কি ও ঈমান কি? অর্থাৎ আপনার জানা রয়েছে তাওহীদ, রিসালত, কিতাব, ঈমান, ইসলাম ও শরীয়ত ইত্যাদি সর্ববিষয় সম্পর্কে।”
অত্র আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে “তাফসীরে রূহুল বয়ান”-এর মধ্যে বর্ণিত আছে যে,
فان اهل الوصول اجتمعوا على ان الرسول عليهم السلام كانوا مؤمنين قبل الوحى معصومين من الكبائر ومن الصغائز الموجبة لنفرة الناس عنهم قبل البعثة وبعدها فضلا عن الكفر.
অর্থ: “আহলে উছূল ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এ ব্যাপারে ইজমা করেছেন যে, নিশ্চয়ই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা ওহী প্রাপ্তির পূর্বেও নবী ছিলেন। উনারা সর্বাবস্থায় কবীরা গুনাহ এবং সাধারণ মানুষের কাছে যা অপছন্দনীয় এমন ছগীরা গুনাহ থেকেও মা’ছূম বা পূর্ণভাবে পূতঃপবিত্র এমনকি পবিত্র থেকে পবিত্রতম ছিলেন। আর কুফর থেকেও পূতঃপবিত্র ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
“তাফসীরে রূহুল বয়ান” কিতাবে উক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে আরো বর্ণিত আছে যে,
يدل عليه انه عليه السلام قيل له هل عبدت وثنا قط قال لا، قيل هل شربت خمرا قط قال لا، فمازك اعرف ان الذى هم عليه كفر.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, আতহারুল কলব ওয়াল জিসম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজ করা হয়েছিলো, আপনি কি কখনো মূর্তিপূজা করেছিলেন? উত্তরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছিলেন? আমি কখনো মূর্তিপূজা করিনি। আরো আরজ করা হয়েছিল, আপনি কি কখনো শরাব বা মদ পান করেছিলেন? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, না আমি কখানো শরাব বা মদ পান করিনি। আমি তো ভালোভাবেই জানতাম যে, দুনিয়াবাসীদের এ কাজ বা আচরণ কুফরী।”
উক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “তাফসীরে আহমদিয়াহ” কিতাব-এর মধ্যে উল্লেখ আছে,
انهم معصومون عن الكفر قبل الوحى وبعده بالاجماع وكذا عن تعمد الكبائر عند الجمهور.
অর্থ: “সমস্ত মুফাসসিরীন তথা ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের ইজমা মতে, নিশ্চয়ই সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা আনুষ্ঠানিকভাবে ওহী প্রাপ্তির আগে ও পরে কুফরী (নাফরমানী) থেকে মা’ছূম তথা পূতঃপবিত্র ছিলেন। জমহুর উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মতে, কবীরা অথবা ছগীরা গুনাহের ইচ্ছা করা বা খেয়াল করা থেকেও পূতঃপবিত্র ছিলেন।”
ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, মসনবী শরীফ, আক্বাইদে নাসাফী, শরহে আক্বাইদে নাসাফী, আক্বীদাতুত ত্বহাবী, আক্বাইদে হাক্কা এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ-এর অন্যান্য আকাইদের কিতাবসমূহে বর্ণিত রয়েছে যে,
الانبياءعليهم السلام كلهم معصو مون
অর্থঃ- “সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা মা’ছূম বা নিষ্পাপ তথা পূতঃপবিত্র।”
আরো বর্ণিত আছে যে,
الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح.
অর্থ: “সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনারা ছগীরা কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পূতঃপবিত্র।”
উপরোক্ত দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের বিলাদত মুবারকের পূর্বে ও পরে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ও রিসালাত প্রাপ্তির পূর্বে ও পরে তথা সৃষ্টির সময় থেকে সর্বাবস্থায় মা’ছূম বা পূতঃপবিত্র।
তাই যারা বলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ-এর পর থেকে মা’ছূম বা পবিত্র ছিলেন না, তাদের বক্তব্য কুফরীমূলক। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াস এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত-এর ফতওয়া মতে তারা কাফির তথা চির জাহান্নামী।
এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু মা’ছূম বা নিষ্পাপ তথা পূতঃপবিত্রই নন, বরং তিনি অপরকে মা’ছূম তথা গুনাহ থেকে নিষ্পাপ, মাহফুয তথা গুনাহ থেকে সংরক্ষিত পূতঃপবিত্র করনেওয়ালা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ফায়ছালা।
এতক্ষণের আলোচনা থেকে যে সমস্ত ছহীহ মাসয়ালা বের হয়েছে নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-
(১) মু’মিন, মুসলমানগণের দলীল তথা ইসলামী শরীয়ার মূল উছূল হচ্ছে চারটি। যথা (ক) কুরআন শরীফ, (খ) হাদীছ শরীফ তথা সুন্নাহ শরীফ, (গ) ইজমায়ে উম্মত এবং (ঘ) ক্বিয়াস।
(২) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকে এমন কিছু ছিল না, যা ফেলে দেয়ার মতো।
(৩) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক হয়েছিল চার বার। প্রথমবার- তিন থেকে পাঁচ বছর বয়স মুবারকের মধ্যে, দ্বিতীয়বার- দশ থেকে চৌদ্দ বছর বয়স মুবারকের মধ্যে, তৃতীয়বার- আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ঘোষণার পূর্বে এবং চতুর্থবার- মি’রাজ শরীফ-এর রাত্রিতে মি’রাজ শরীফ-এ গমনের পূর্বে।
(৪)
هذاحظ الشيطان منك
এর অর্থ হলো-
هذاحظ الشيطان من امتك
অর্থাৎ “এটা শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়ার স্থান, যা আপনার জন্য নয়। কারণ আপনি শয়তানি ওয়াসওয়াসা থেকে সম্পূর্ণরূপে মাহফুয। আপনার উম্মতের এই স্থানে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে।”
(৫)
اخرج الغل و الحسد
এর অর্থ হলো- “হিংসা-বিদ্বেষের স্থানটি বের করুন অর্থাৎ আপনার উম্মতের জন্য এই স্থানটি হিংসা-বিদ্বেষের জায়গা। যা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য নয়। কারণ তিনি এ সকল দোষত্রুটি থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। কেননা তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত।”
(৬) মুলকথা হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভিতর থেকে শয়তানের অংশ বা হিংসা-বিদ্বেষ বের করা হয় নাই। কেননা তিনি তো মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত বা মহান আল্লাহ পাক উনার চরিত্রে চরিত্রবান। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভিতরে শয়তানের অংশ বা হিংসা-বিদ্বেষ থাকার প্রশ্নই উঠে না। অতএব, উনার ভিতর নাপাক কিছু থাকার কল্পনা করাও কুফরী।
(৭) সিনা মুবারক চাক করে ঈমান ও হিকমত প্রবেশের অর্থ এই নয় যে, উনার ভিতরে অপূর্ণতা ছিল, তা পূর্ণ করা হয়েছে (নাঊযুবিল্লাহ)। বরং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঈমান ও হিকমত যে পরিপূর্ণ রয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া।
(৮) সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সৃষ্টিগতভাবে মা’ছূম বা নিষ্পাপ।
(৯) সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা বিলাদত মুবারক-এর পূর্বে ও পরে এবং নুবুওওয়াত-রিসালত শরীফ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়ার পূর্বে ও পরে সর্বাবস্থায় ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শিরকী এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও সম্পূর্ণভাবে মা’ছূম বা নিষ্পাপ তথা পূতঃপবিত্র, পবিত্রতম।
(১০) অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভিতর থেকে সিনা মুবারক চাক-এর সময় নাপাক কিছু বের করা হয়নি। বরং সিনা মুবারক চাক-এর মাধ্যমে মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে।
বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পায়ের তলা মুবারক থেকে মাথার তালু মুবারক পর্যন্ত যা কিছু রয়েছে অর্থাৎ সমস্ত কিছুই শুধু পবিত্রতমই নয়; বরং এতটুকু পবিত্র যে, যা অপবিত্রকে পবিত্র করে দেয়। এমনকি উনার শরীর মুবারক থেকে নিঃসৃত কোনো কিছু যদি কেউ খায় বা পান করে তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতা সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে,
(المطهر) نقله ابن دحية عن كعب، قال السيوطى- يحتمل انه بكسر الهاء اسم فاعل، لانه طهر غيره من دنس الشرك وبفتحها اسم مفعول، لانه طهر ذاتا ومعنى ظاهرا وباطنا.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্রকারী এবং স্বয়ং পূতঃপবিত্র, যা হযরত ইবনু দাহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, المطهر শব্দখানার هاء বর্ণে যের পড়লে اسم فاعل হয়, যার অর্থ পবিত্রকারী, যেহেতু তিনি অন্যান্যদেরকে শিরকের অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতাকারী। আর هاء বর্ণে যবর যোগে পড়লে اسم مفعول হয়, যার অর্থ তিনি নিজেই পূতঃপবিত্র। কেননা নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাতগতভাবে সম্পূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র। এর অর্থ হলো, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সর্বদিক থেকে পূতঃপবিত্র, পবিত্রতম। (শরহুল আল্লামাতিয যারক্বানী ৪র্থ জিলদ ২১৮ পৃষ্ঠা)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক পূতঃপবিত্র; যা পানে বেহেশত নছীব হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن حكيمة بنت اميمة بنت دقيقة عن امها انها قالت- كان النبى صلى الله عليه وسلم يبول فى قدح عيدان ثم يرفع تحت سريره فبال فيه ثم جاء فاراده فاذا القدح ليس فيه شيئ فقال لامرأة يقال لها بركة، كانت تخدم ام حبيبة جائت بها من ارض الحبشة اين البول الذى كان فى القدح؟ قالت شربته، فقال لقد احتظرت من النار بحظار.
অর্থ: “হযরত হাকীমা বিনতে আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার মাতা হযরত আমীমা বিনতে দাক্বীক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি বলেছেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি পাত্রে ইস্তিঞ্জা মুবারক করলেন এবং তা খাটের নিচে রেখে দিলেন। এরপর তার একটা ব্যবস্থা করার ইচ্ছা করলে এসে দেখলেন পাত্রের মধ্যে কিছু নেই। তখন তিনি বারাকা নামের এক মহিলা, যে হাবশা হতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম উনার খাদিমা হিসেবে এসেছিলেন, উনাকে বললেন, পাত্রের মধ্যে যে ইস্তিঞ্জা মুবারক ছিল তা কোথায় গেল? উত্তরে তিনি বললেন, আমি উহা পান করে ফেলেছি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, অবশ্যই তুমি তোমার নিজেকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ রাখলে।” (দালাইলুন নুবুওওয়াহ ২য় জিলদ ৬৫৪, ৬৫৫ পৃষ্ঠা, আত ত্ববারানী ফিল মু’জামিল কবীর ২৪ জিলদ ১৮৯ পৃষ্ঠা, ২৫ জিলদ ৮৯ পৃষ্ঠা, আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনু হাব্বান হাদীছ ন- ১৪১৩, আল মুসতাদরিক লিল হাকিম ১ম জিলদ ২৭২ পৃষ্ঠা ৫৯৩নং হাদীছ ৪র্থ জিলদ ৭১ পৃষ্ঠা ৬৯১২নং হাদীছ শরীফ, আদদারু কুতনী, আবূ ইয়ালা, মুসনাদে আব্দুর রাযযাক, আল খাছাইছুল কুবরা লিস সুয়ূতী ১ম জিলদ ১২২ পৃষ্ঠা)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক পূতঃপবিত্র; যা পানে জান্নাত ওয়াজিব হয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক পূতঃপবিত্র। যা পানে জান্নাত ওয়াজিব ও ফরয হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত-এর গ্রহণযোগ্য ফতওয়া। যার উপর ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা ইজমা করেছেন। উহুদ যুদ্ধে হযরত মালিক বিন সিনান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত মুবারক পান করায় তিনি বলেছিলেন, তোমার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল তথা জাহান্নাম হারাম হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
যেমন, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
فقال عليه الصلاة والسلام من مس دمى لمتصبه النار.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, আমার রক্ত মুবারক যার রক্তের সাথে মিশেছে, উনাকে জাহান্নামের আগুন কখনো স্পর্শ করবে না।” (আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ বিল মিনাহিল মুহম্মদিয়া লিল আল্লামাতিল কুসত্বলানী ২য় জিলদ ৪২৬ পৃষ্ঠা)
“শরহুল আল্লামাতিয যারক্বানী আলাল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়াহ” নামক কিতাবের ২য় জিলদ ৪২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
فقال له اتشرب الدم فقال نعم يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال عليه الصلاة والسلام من مس دمى لم تصبه وفى رواية لم تمسه النار، وسيأتى ان شاء الله تعالى حكم دمه عليه الصلاة والسلام وهو الطهارة على الراجح.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মালিক বিন সিনান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে বললেন, তুমি কি আমার রক্ত মুবারক পান করে ফেলেছ? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হ্যাঁ, আমি পান করে ফেলেছি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমার রক্ত মুবারক যার রক্তের সাথে মিশেছে তাকে স্পর্শ করবে না অন্য বর্ণনায় আছে, তাকে জাহন্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না জাহান্নামের আগুন।” সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক-এর সবকিছুই ছিলো পবিত্র থেকে পবিত্রতম। উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক, রক্ত মুবারক পান করে সকলেই জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছেন। তাহলে উনার সিনা মুবারক চাক করে নাপাক বের করা এবং উনার জিসিম মুবারকে কোনো কিছু নাপাক রয়েছে ইত্যাদি আক্বীদা পোষণ করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের সময় অসংখ্য আগণিত মু’জিযা শরীফ সংঘটিত হয়েছে। যেমন-
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
وأخرج حضرت البيهقى رحمة الله عليه من طريق حضرت إبن اسحاق رحمة الله عليه قال- حدثنى حضرت عبد الملك بن عبد بن أبى سفيان بن العلاء بن جارية الثقفى رحمة الله عليه، عن بعض أهل العلم ان رسول الله صلى الله عليه وسلم حين أراد الله كرامته وابتدأه بالنبوة كان لا يمر بحجر ولا شجر إلا سلم عليه وسمع منه، فيلتفت رسول الله صلى الله عليه وسلم خلفه وعن يمينه وعن شماله ولا يرى إلا الشجر وما حوله من الحجارة، وهى تحييه بتحية انبوة السلام عليك يا رسول الله صلى الله عليه وسلم،
অর্থ: হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল মালিক ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ সুফিয়ান ইবনে আলা ইবনে জারিয়া আছ ছাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং জনৈক আলিম থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক বিশেষ মু’জিযা শরীফ প্রকাশ করার ইচ্ছা করলেন, তখন উনার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের সূচনা করলেন। এ সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে কোনো বৃক্ষ ও পাথরের নিকট দিয়ে গমন করতেন সেটাই উনাকে সালাম দিতো; যা তিনি শুনতে পেতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পিছনে ও ডানে-বামে তাকালে বৃক্ষ ও পাথর ছাড়া অন্য কিছু দেখতে পেতেন না। বৃক্ষ ও পাথর উনাকে ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে সালাম দিতো।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম খ- ১৫৯ পৃষ্ঠা)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
وأخرج حضرت البيهقى رحمة الله عليه من طريق حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه، حدثنى حضرت إسماعيل بن أبى حكيم مولى الزبير رحمة الله عليه انه حدث، عن حضرت خديجة عليها السلام انها قالت لرسول الله صلى الله عليه وسلم، فيها تثبته يا ابن عم تستطيع ان تخبرنى بصاحبك هذا الذى يأتيك اذا جاءك؟ قال نعم قالت إذا جاءك فأخبرنى، فبينا رسول الله صلى الله عليه وسلم عندها إذ جاءه حضرت جبرئيل عليه السلام، فقال يا حضرت خديجة عليها السلام هذا حضرت جبرئيل عليه السلام- قالت أتراه الان؟ قال نعم قالت فاجلس إلى شقى الأيمن فتحول فجلس، قالت هل تراه الان؟ قال نعم قالت فاجلس فى حجرى فتحول فجلس، قالت هل تراه الان؟ قال نعم فحسرت عن رأسها فألقت خمارها ورسول الله صلى الله عليه جالس فى حجرها. قالت هل تراه الان قال لا قالت ما هذا شيطان إن هذا لملك يا ابن عم، فاثبت وابشر، ثم امنت به وشهدت ان الذى جاء به لحق.
অর্থ: হযরত বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত ইসমাইল ইবনে আবী হাক্বীম মাওলায়ে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে; নিশ্চয়ই তিনি বর্ণনা করেছেন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, সেই যুবক তথা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি যখন আপনার নিকট আসেন বলে আপনি মনে করেন অর্থাৎ যখন উনাকে আপনি দেখতে পান তখন আমাকে তা অবগত করতে পারেন কি? মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ! যখন সেই ছূরত তথা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে দেখবো তখন আমি আপনাকে জানাবো। সে মতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট অবস্থান করতেছিলেন, এমতাবস্থায় যখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আগমন করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম! ইনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি উনাকে দেখতে পাচ্ছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমি উনাকে দেখতে পাচ্ছি। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনি আমার ডান দিকে বসুন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে বসলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনি এখন উনাকে দেখতে পাচ্ছেন? মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমি উনাকে দেখতে পাচ্ছি। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনি আমার কোল মুবারকে বসুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার কোল মুবারকে বসলেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি এখনও কি উনাকে দেখতে পাচ্ছেন? মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাওয়াব দিলেন, হ্যাঁ! এখনো দেখতে পাচ্ছি। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি স্বীয় মাথা মুবারক খুলে দিলেন এবং উনার উড়না মুবারক সরিয়ে ফেললেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার কোল মুবারকে অবস্থান করছিলেন। এবার সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এখন কি আপনি উনাকে দেখতে পাচ্ছেন? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না! এখন উনাকে দেখতে পাচ্ছি না। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইনি শয়তান নন, বরং মহান আল্লাহ পাক উনার ফেরেশতা।
আপনি সুসংবাদ নিন। এসব কথোপকথনের মধ্যেই সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ঈমান গ্রহণ করলেন এবং সাক্ষী দিলেন- মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যা নাযিল হয়েছে তা হক্ব বা সত্য। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৬০ পৃষ্ঠা)
হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি উপরোক্ত হাদীছ শরীফখানা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আল হাসান উনার নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, আমি হাদীছ শরীফখানা হযরত ফাতিমা বিনতে হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে শুনেছি। তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমার কামিস মুবারক-এর ভিতর দাখিল করলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি চলে গেলেন। এই বর্ণনাটি হযরত তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আওসাতের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৬০ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
واخرج حضرت البيهقى رحمة الله عليه و حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه، عن حضرت أبى ميسرة عمرو بن شرحبيل رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لخديجة عليها السلام- إنى اذا خلوت وحدى سمعت نداء وقد والله خشيت ان يكون هذا أمرا، فقالت معاذ الله ما كان الله ليفعل بك، فوالله انك لتؤدى الأمانة وتصل الرحم، وتصدق الحديث،
অর্থ: হযরত বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত মাইসারা আমর ইবনে শুরাহবীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে বলেন, নিশ্চয়ই আমি যখন নিরিবিলি নির্জনে একাকী থাকি তখন আমি এমন নিদা বা আওয়াজ শুনি, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম যাতে আমি এমন কিছু আশঙ্কা করি যা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভালো জানেন। অতঃপর উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আশ্রয় চাই! মহান মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার কখনও অমঙ্গল চান না। আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! অবশ্যই আপনি আমানতদার, আত্মীয়তার সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার করেন এবং সদাসর্বদাই সত্য ও বিশুদ্ধ কথা মুবারক বলেন। সুবহানাল্লাহ!
فلما دخل حضرت ابو بكر رضى الله تعالى عنه ذكرت حضرت خديجة عليها السلام حديثه له، وقالت له- اذهب مع حضرت محمد صلى الله عليه وسلم إلى حضرت ورقة رضى الله تعالى عنه فانطلقا إليه فقصا عليه، فقال إذا خلوت وحدى سمعت نداء خلفى يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم، فانطلق هاربا فى الأرض، فقال لا تفعل إذا أتاك فاثبت حتى تسمع ما يقول، ثم ائتنى فاخبرنى، فلما خلا ناداه قال يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم اشهد ان لا إله إلا الله واشهد أن محمدا عبده ورسوله،
অতঃপর যখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসলেন তখন উনাকে এসব কথা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি জানালেন। তখন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে যান এবং ঘটনা খুলে বলুন। সে মতে উনারা হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট গেলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ওয়ারাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আমি যখন নির্জনে একাকী থাকি তখন আমার পিছন দিক থেকে ইয়া মুহম্মদ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আওয়াজ শুনতে পাই। তখন আমি পথ চলতে থাকি।
হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি দয়া করে এরূপ করা থেকে বিরত থাকবেন। বরং আপনার নিকট যখন কেউ আসে তখন আপনি দাঁড়িয়ে থাকুন এবং উনার কথা শুনুন। অতঃপর আমার নিকট এসে পুনরায় খবর দিন। এ কথার পর যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নির্জনে একাকী গেলেন তখন কেউ উনাকে ইয়া মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বলে আহ্বান করলেন এবং বললেন,
اشهد ان لااله الا الله و اشهد ان محمدا عبده و رسوله صلى الله عليه و سلم
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার আবদ বা হাবীব এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
ثم قال قل بسم الله الرحمن الرحيم- (الحمد لله رب العالمين)- حتى بلغ (ولا الضالين)- ثم قال قل لا إله إلا الله، فأتى حضرت ورقة رضى الله تعالى عنه فذكر ذلك له، فقال له ورقة ابشر ثم أبشر، فأنا أشهد انك الذى بشربه ابن مريم عليها السلام، وانك على مثل ناموس حضرت موسى عليه السلام، وانك نبى، وانك سوف تؤمر بالجهاد بعد يومك هذا، وإن يدر كنى ذلك لا جاهدن معك، فلما توفى حضرت ورقة رضى الله تعالى عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لقد رأيت القس عليه ثياب الحرير لأنه امن بى وصدقنى-
অর্থাৎ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি প্রথমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনেন অতঃপর বললেন, দয়া করে আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে বলুন অর্থাৎ গ্রহণ করুন-
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين- الرحمن الرحيم- مالك يوم الدين- اياك نعبد واياك نستعين- اهدناالصراط المستقيم- صراط الذين انعمت عليهم- غير المغضوب عليهم ولا الضالين- امين
মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে শুরু করছি। যিনি পরম দয়ালু, করুনাময়। “সমস্ত প্রসংশা সেই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্য। যিনি সারা আলম বা কায়িনাতের রব বা প্রতিপালনকারী তথা ¯্রষ্টা। তিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়। তিনি বিচার দিনের মালিক। আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং একমাত্র আপনারই নিকট সাহায্য চাই। আমাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন। সেই পথ যাঁদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন। তাদের পথ দিবেন না, যারা অভিশপ্ত, গযবপ্রাপ্ত, বিভ্রান্ত।” আমীন!
অতঃপর বললেন, দয়া করে আপনি বলুন, মহান আল্লাহ পাক ছাড়া কোনো ইলাহ বা মা’বুদ নেই। এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ ঘটনা সম্পর্কে হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে অবহিত করলেন। সব কিছু শুনে হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি সুসংবাদ নিন। আরো সুসংবাদ নিন যে, নিশ্চয়ই আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে, আপনি সেই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যাঁর আগমনের সুসংবাদ হযরত ঈসা ইবনে মারিয়াম আলাইহাস সালাম তিনি দিয়েছেন। অর্থাৎ নিশ্চয়ই হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার নিকট যেই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসেছিলেন সেই হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আপনার ছোহবত শরীফ-এ আগমন করেছেন। অবশ্যই আপনি নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিস সালাম উনাদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নিশ্চয়ই আপনাকে অতি সত্বরই জিহাদের নির্দেশ দেয়া হবে। তখন আমি থাকলে আপনার সঙ্গে অবশ্যই জিহাদে শরীক হবো। হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফ-এর পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জান্নাতী রেশমী পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। কারণ তিনি আমার উপর ঈমান এনেছিলেন, আমাকে হক্ব বা সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৬১ পৃষ্ঠা)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, “হযরত বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত মায়সারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন বাইরে যেতেন তখন শুনতে পেতেন যে, কেউ উনাকে ইয়া মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি এই বিষয়টি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গোচরীভূত করেন। যিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বহু পুরানো ছহিব।” সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৬১ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে, “হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ওরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যে ভূখ-ে মূর্তি পূজা হয় সেখানে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার আলোচনা শোভনীয় নয়। তিনি মহান আল্লাহ পাক ও উনার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাঝে বিশ্বস্ত দূত। আপনি আপনার ছহিব উনাকে সেই স্থানে নিয়ে যান যেখানে তিনি এই দৃশ্য দেখেছেন। তিনি যখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে দেখবেন তখন আপনি স্বীয় মাথা মুবারক খুলে দিবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত হলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে দেখতে পাবেন না; অর্থাৎ হযরত জিবরীল আলাইহাস সালাম তিনি সেখান থেকে প্রস্থান করবেন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করলেন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই বর্ণনা করেন। যখন আমি আমার মাথা মুবারক থেকে ওড়না মুবারক সরিয়ে নিলাম তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সেখান থেকে গায়েব হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর উনাকে দেখতে পেলেন না। উম্মুল মু’মিনীন খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ফিরে এসে এ ঘটনা হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জানালে তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আগমন করেন। এরপর হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাওয়াত প্রকাশের অপেক্ষা করতে থাকেন।”
আরো বর্ণিত আছে,
واخرج حضرت الحاكم رحمة الله عليه من طريق حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه، حدثنى حضرت عبد الملك بن عبد الله بن ابى سفيان الثقفى رحمة الله عليه، وكان واعية. قال قال حضرت ورقة بن نوفل رضى الله تعالى عنه فيما كانت حضرت خديجة عليها السلام ذكرت له من أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم-
يا للرجال وصرف الدهر والقدر- وما لشئ قضاه الله من غير
حتى حضرت خديجة عليها السلام تدعونى لأخبرها- وما لها بخفى الغيب من خبر
جاءت لتسألنى عنه لأخبرها- أمرا اراه سيأتى اناس من أخر
وخبرتنى بأمر قد سمعت به- فيما مضى من قديم الدهر والعصر
بأن حضرت أحمد صلى الله عليه وسلم يأتيه ويخبره- جبرئيل انك مبعوث إلى البشر
فقلت عل الذى ترجين ينجزه- لك الإله فرجى الخير وانتظرى
অর্থ: হযরত হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্দুল মালিক ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবী সুফিয়ান আছছাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত স্মরণশক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে। সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহী নাযিল হওয়ার ব্যাপারে হযরত ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে আলোচনা করতেন। এ প্রসঙ্গে হযরত ওয়ারাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নি¤েœাক্ত কবিতা রচনা করেন।
“সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি আমাকে আহ্বান করেন, যাতে আমি বলি সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার গায়িব সম্পর্কিত ইলম রয়েছে।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি আমার নিকট আসেন আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, বেমেছাল ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে যাতে আমি শেষ যুগে যা হবে, সে সম্পর্কে উনাকে অবহিত করি।
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি আমাকে এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন, যা আমি প্রাচীনকাল থেকে শুনে আসছিলাম। তা এই যে, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আগমন করেন এবং সুসংবাদ দেন যে, আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী হিসেবে, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হিসেবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ ও মানবজাতির হিদায়েতের মূল লক্ষ্য হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।
আমি বললাম, আপনি যা আশা-আকাঙ্খা করেছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তা আপনার জন্যে পূর্ণ করবেন। অতএব, আশা রাখুন ও অপেক্ষা করুন।”
وأرسلته إلينا كى نسائله- عن أمره ما يرى فى النوم والسهر
فقال حين أتانا منطقا عجبا- يقف منه أعالى الجلد والشعر
إنى رأيت أمين الله واجهنى- فى صورة اكملت من أهيب الصور
ثم استمر فكان الخوف يذعرنى- مما يسلم ما حولى من الشجر
فقلت ظنى وما ادرى ايصدقنى- إن سوف تبعث تتلو منزل السور
وسوف اتيك إن أعلنت دعوتهم- من الجهاد بلا من ولا كدر
উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমার নিকট প্রেরণ করেছেন যাতে আমি উনাকে উনার স্বপ্ন মুবারক ও মু’জিযা শরীফ-এর বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি।
সে মতে তিনি আমার নিকট এসে এমন বিস্ময়কর আশ্চর্যজনক কালাম বা কথা বর্ণনা করলেন যা শুনে শরীর শিউরে উঠে।
তা এই যে আমি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেছি। তিনি উনার আপন আকৃতি ধারণ করে আমার খিদমতে আসেন।
অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি থেকে গেলেন আমার খিদমতের জন্য। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম সেই বৃক্ষের সামনে যা আমার চলার পথে পড়ল এবং তিনি আমাকে সালাম করলেন।
আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম আমি নিশ্চিত যে, আপনি অতিসত্বর নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করবেন এবং আপনার প্রতি অবতীর্ণ সূরাসমূহ তিলওয়াত করবেন। আমার ইলম এ নিশ্চয়তা সত্যায়ন করে।
আমি আপনার খিদমতে অধিক আগ্রহের সাথে উপস্থিত হবো, আপনি জিহাদ ঘোষণার মাধ্যমে কাফির মুশরিকদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন তখনও। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৬৫)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
أخرج حضرت الطيالسى رحمة الله عليه و حضرت الترمذى رحمة الله عليه و حضرت البيهقى رحمة الله عليه، عن حضرت جابر بن سمرة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه قال إن بمكة لحجرا- كان يسلم على ليالى بعثت أنى لأعرفه إذا مررت عليه- وأخرجه مسلم بلفظ إنى لأعرف بمكة حجرا كان يسلم على قبل ان أبعث أنى لأعرفه الان.
অর্থ: “হযরত তায়ালিসী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত জাবির ইবনে সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন- নিশ্চয়ই পবিত্র মক্কা শরীফ-এ আমার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ পায়, সে রাত্রি মুবারকে একটি পাথর আমাকে সালাম করেছিলো। এখনও আমি সেটির নিকট দিয়ে গমন করলে বিলক্ষণ চিনতে পারি।”
ছহীহ মুসলিম শরীফ-এর রেওয়ায়েতেও এভাবে বর্ণনা রয়েছে, আমি মক্কা শরীফ-এর সেই পাথরটিকে চিহ্নিত করতে পারি, যে আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ-এর পূর্বে আমাকে সালাম করত। আমি এখনও তাকে চিনি। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৬৫ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে,
أخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه و حضرت البيهقى رحمة الله عليه من طريق حضرت ابراهيم بن محمد بن طلحة رحمة الله عليه قال، قال حضرت طلحة بن عبيد الله رضى الله تعالى عنه حضرت سوق بصرى، فاذا راهب فى صومعته يقول سلوا أهل هذا الموسم هل فيهم احد من اهل الحرم؟ قال حضرت طلحة رضى الله تعالى عنه قلت نعم انا. قال هل ظهر احمد بعد؟ قلت ومن أحمد؟ قال حضرت ابن عبد الله بن عبد المطلب صلى الله عليه وسلم هذا شهره الذى يخرج فيه وهو اخر الأنبياء مخرجه من الحرم ومهاجره إلى نخل وحرة وسباخ، فإياك ان تسبق اليه. قال حضرت طلحة رضى الله تعالى عنه: فوقع فى قلبى ما قال، فخرجت سريعا حتى قدمت مكة، فقلت هل كان من حدث؟ قالوا نعم حضرت محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم الأمين قد تنبا، وقد تبعه ابن إبى قحافة، فخرجت حتى دخلت على حضرت أبى بكر رضى الله تعالى عنه، فأخبرته بما قال الراهب، فخرج حضرت ابو بكر رضى الله تعالى عنه حى دخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم فأخبره فسر بذلك، وأسلم طلحة، فأخذ نوفل بن العدوية حضرت أبا بكر رضى الله تعالى عنه وحضرت طلحة رضى الله تعالى عنه، فشدهما فى حبل واحد، فلذلك سميا القرينين.
অর্থ: “হযরত সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত ইবরাহীম ইবনে মুহম্মদ ইবনে ত্বলহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত ইবরাহীম ইবনে মুহম্মদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি একদা বছরার বাজারে গেলাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম এক রহিব বা খ্রিস্টান পাদ্রী তার ইবাদতখানায় বসে বলছিলো এই আগন্তুকদেরকে জিজ্ঞাসা করো তাদের মধ্যে পবিত্র হেরেম শরীফ-এর অধিবাসী কেউ আছেন কি?
হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি হেরেমবাসী! খ্রিস্টান পাদ্রীটি জিজ্ঞাসা করলো হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ করেছেন? আমি বললাম, কোন আহমদ? পাদ্রী বললো, হযরত আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের মাস হচ্ছে এটাই। তিনি হচ্ছেন আখিরী বা সর্বশেষ নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের স্থান হচ্ছে হেরেম শরীফ এবং উনার হিজরত শরীফ-এর স্থান হচ্ছে খর্জুর শোভিত প্রস্তরময় লবনাক্ত যা কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাশীল ভুমি। উনার প্রতি ঈমান আনায় আপনাদের অগ্রগামী হওয়া আবশ্যক। হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, পাদ্রীর এই কথা আমার অন্তরে স্থান করে নিলো। আমি দ্রুতগতিতে পবিত্র মক্কা শরীফ-এ পৌছলাম এবং মানুষদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম নতুন কিছু ঘটেছে কিনা? তারা বলল, হ্যাঁ। হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ-এর কথা ঘোষণা করেছেন। হযরত আবু বকর ইবনে আবু কুহাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার অনুসরণ ও অনুকরণ করছেন। আমি সেখান থেকে বের হয়ে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এলাম এবং খ্রিস্টান পাদ্রীর কথা-বার্তা সম্পর্কে উনাকে অবহিত করলাম। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সবকিছু শুনে বের হলেন এবং আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গমন করলেন। হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এসব কথা জানালে তিনি খুবই খুশি হলেন। সুবহানাল্লাহ! এবং আমি হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলাম। নওফিল ইবনে আদভিয়া সে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের উভয়কে ধরে রশিতে বেঁধেছিলো। এজন্য উনাদের কুরাইনাইন নামে অভিহিত করা হয়।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
أخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه من طريق حضرت عكرمة رضى الله تعالي عنه، عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه، قال قال العباس رضى الله تعالى عنه: خرجت فى تجارة إلى اليمن في ركب فيهم حضرت ابو سفيان بن حرب رضى الله تعالى عنه، فورد كتاب من حضرت حنظلة بن أبي سفيان رضى الله تعالى عنه فيه أن حضرت محمد صلى الله عليه و سلم اقام بالأبطح، فقال انا رسول الله ادعوكم إلى الله ففشا ذلك في مجالس اليمن، فجاءنا حبر من اليهود، فقال باغني ان فيكم عم هذا الر جل الذي قال ما قال قال حضرت العباس رضى الله تعالى عنه فقلت نعم، قال أنشدك هل كانب لأبن اخيك صبوة وسفهة قلت لا واله حضرت عبد المطلب رضى الله تعالى عنه ولا كذب ولا خان، وإن كان اسمه عند قريش الأمين- .... فوثب الحبر وترك رداءه، وقال ذمجت يهود و قتلت يهود، قال حضرت العباس رضى الله تعالى عنه فلما رجعنا إلى منزلنا قال حضرت أبو سفيان رضى الله تعالى عنه يا أبا الفضل إن اليهود بفزع من الن اخيك قلت قد رأيت-
অর্থ: “হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে সেই কাফিলার সঙ্গে ইয়ামান গেলাম, যাদের মধ্যে হযরত আবূ সুফিয়ান ইবনে হারব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও ছিলেন। সেই ইয়ামানে হানযালা ইবনে আবি সুফিয়ান উনার চিঠি আমাদের নিকট পৌঁছল এ মর্মে যে, “সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ-এর ঘোষণা দিয়েছেন।” আরো তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তথা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আহ্বানকারী।” এই সুসংবাদ সমগ্র ইয়ামেনেও ছড়িয়ে পড়লো। অতঃপর আমাদের কাছে জনৈক ইহুদী আলিম এসে বললেন, আমি জানতে পারলাম আপনাদের মধ্যে যিনি আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ করেছেন সেই আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন চাচা রয়েছেন? হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ! আমিই উনার চাচা। ইহুদী আলিম বলল, আমি আপনার ক্বসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি আপনার সম্মানিত ভাতিজা উনার মধ্যে যুবক বয়সের চপলতা কিংবা জ্ঞান বুদ্ধির কমতি আছে কিনা? সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! উনার মধ্যে যুবক বয়সে যে বিষয়গুলো থাকার কথা বলছো তার কোনটিই নেই। সুবহানাল্লাহ! তিনি কখনও কোনদিন বিন্দুমাত্র মিথ্যা বলেননি। তিনি কখনও আমানতের খিয়ানত বা বিশ্বাস ঘাতকতা করেননি। তিনি গোটা কুরাইশবাসীর নিকট ‘আল আমীন’ লক্বব মুবারকে ভূষিত হয়ে আছেন। সুবহানাল্লাহ!
...... এসব কথা শুনে ইহুদী আলিম আপন জায়গা থেকে লাফ দিয়ে উঠলো এবং স্বীয় চাদর ছেড়ে এ কথা বলতে বলতে চলে গেলো যে, ইহুদীদের সর্বনাশ, ধ্বংস হয়েছে, ইহুদীদের ক্বতল বা হত্যা করা হয়েছে। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান স্থলে ফিরে এলে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আবুল ফযল! আপনার সম্মানিত ভাতিজা আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইহুদী তথা কাফির, মুশরিক ও বিধর্মীরা খুবই ভয় পায়। আমি বললাম, আপনিতো দেখলেন। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৬৬ ও ১৬৭ পৃষ্ঠা)
খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৬৭ ও ১৬৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে যে,
اخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه من طريق حضرت محمد بن هشام بن مسلم المخزومى رحمة الله عليه، عن حضرت معاوية بن ابى سفيان رضى الله تعالى عنه، عن أبيه قال : خرجت انا وأمية بن أبى الصلت تجارا إلى الشام، فقال لى: هل لك فى عالم من علماء النصارى إليه يتناهى علم الكتاب نسأله؟ قلت لا إرب لى فيه، فذهب ثم رجع، فقال لى إنى جئت هذا العالم، فسألته عن أشياء ثم قلت أخبرنى عن هذا النبى صلى الله عليه وسلم الذى ينتظر قال هو رجل من العرب قلت من اى العرب؟ قال من اهل بيت تحجه العرب من إخوانكم من قريش قلت فصفه لى قال رجل شاب حين دخل فى الكهولية بدأ امره يحجتنب المظالم والمحارم، ويصل الرحم ويأمر بصلتها،
অর্থ: “হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে হিশাম ইবনে মুসলিম আল মাখযুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি এবং উমাইয়া ইবনে আবী ছালত ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে পৌঁছে উমাইয়া আমাকে বলল, আমরা সেই খ্রিস্টান আলিমের সাথে দেখা করি যিনি আসমানী কিতাবের অঘাত ইলমের অধিকারী। আমি তাকে বললাম, আমরা তাকে কিছু সুওয়াল করতে পারি। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি সেই আলিম ছাহেবের কাছে গিয়ে তাকে অনেক প্রশ্ন করেছি। আমি তাকে বলেছি যে, প্রতীক্ষিত নবী তথা আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আপনি যা জানুন, বলুন। ওই খ্রিস্টান আলিম বললেন, সেই আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন আরবী হবেন। আমি বললাম, কোন আরব? তিনি জবাবে বললেন, আরবগণ যে বাইতুল্লাহ শরীফ-এর হজ্জ করে থাকেন, তিনি সেই বাইতুল্লাহ শরীফ তথা কা’বা শরীফ-এর অধিবাসী হবেন। তিনি আরো বললেন, তিনি একজন সুমহান বেমেছাল যুবক। তিনি যখন সুমহান পৌঢ়ত্বের সীমায় পৌঁছবেন তথা উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক ৪০ বৎসর হবে তখন উনার আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ পাবে। তিনি সম্পূর্ণরূপে জুলুম-নিপীড়ন ও সর্ব প্রকার হারাম নাজায়িয বিষয়াদি থেকে দূরে থাকবেন, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদয় ব্যবহার করবেন। অন্যদেরও তা করতে আদেশ-নির্দেশ করবেন।
وهو سجوح كريم الطرفين متوسط فى العشيرة اكثر جنده الملائكة، فقلت وما اية ذلك؟ قال قد رجفت الشام منذ هلك حضرت عيسى عليه السلام ثلاثين رجفة كلها مصيبة، وبقيت رجفة عامة فيها مصائب. قال حضرت ابو سفيان رضى الله تعالى عنه فقلت هذا والله الباطل. قال امية والذى حلفت به ان هذا لهكذا، ثم خرجنا فإذا راكب من خلفنا يقول أصاب اهل الشام بعدكم رجفة دمرت أهلها وأصابتهم فيها مصائب عامة، قال ابو سفيان فأقبل على امية فقالت كيف ترى قول النصرانى؟ قلت أرى والله انه حق وقدمت مكة فقضيت ما كان معى، ثم انطلقت حتى جئت اليمن تاجرا فمكثت بها خمسة أشهر ثم قدمت مكة،
তিনি উনার সম্মানিত পিতা ও মাতা উভয়ের দিক থেকে খুবই মর্যাদাশালী, সম্ভ্রান্তশালী হবেন। তিনি গোত্রের দিক থেকে সবচেয়ে উচ্চ বংশীয় হবেন, উনার অধিকাংশ সৈন্য হবেন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, উনার আগমনের আলামত বা চিহ্ন কি হবে? তিনি বললেন, হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর সিরিয়ায় ত্রিশটি ভূমিকম্প হয়েছে। প্রতিটি ভূমিকম্প ছিলো এক মহা বিপদজনক। কেবলমাত্র একটি ভূমিকম্প বাকি রয়ে গেছে। তাতেও মানুষের প্রভূত দুঃখ-দুর্দশা হবে। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, উমাইয়া-এর নিকট এসব কথা শুনে আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! ইহা সত্য কথা নয়।
উমাইয়া বলল, আমি যাঁর ক্বসম খাই, উনার ক্বসম! এটা দিবালোকের ন্যায় সত্য। অতঃপর হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। এরপর আমরা সিরিয়া থেকে স্বদেশ অভিমুখে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে হঠাৎ শুনতে পেলাম এক অশ্বারোহী আমাদের পশ্চাতে বলছে, আপনাদের চলে আসার পরে সিরিয়ায় এক প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্প হয়েছে। এতে অনেক মানুষ নিহত হয়েছে এবং অনেকে ব্যাপক দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, উমাইয়া আমার সম্মুখে এলো এবং বললো খ্রিস্টান আলিমের বক্তব্য সম্পর্কে আপনার মত কি? আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তার কথা সঠিক। অতঃপর আমি মক্কা শরীফে ফিরে আসলাম এবং পণ্য সামগ্রী বিক্রয় করলাম। এরপর আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইয়ামেনে রওয়ানা হলাম। ইয়ামেনে ৫ মাস অবস্থান করার পর পবিত্র মক্কা শরীফ-এ ফিরে এলাম।
فجاء الناس يسلمون على ويسألون عن بضائعهم، ثم جاءنى حضرت محمد صلى الله عليه وسلم فسلم على ورحب بى، وسألنى عن سفرى ومقامى، ولم يسألنى عن بضاعته، ثم قام فقلت لهند والله إن هذا ليعجبنى ما من احد من قريش له معى بضاعة إلا وقد سألنى عنها وما سألنى هذا عن بضاعته. قالت وما علمت شأنه انه يزعم انه رسول الله فوقظتنى- وذكرت قول النصرانى. قلت لهو أعقل من ان يقول هذا. قالت بلى والله إنه ليقول ذلك.
লোকজন আমার নিকট এসে সালাম করতঃ তাদের প্রদত্ত পুঁজি সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতো। এরপর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট এসে সালাম দিয়ে আমাকে সফরের অবস্থা এবং অবস্থানস্থল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু তিনি নিজের সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই উঠে দাঁড়ালেন।
হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি হিন্দাকে বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি আশ্চর্য বোধ করি যে, কুরাইশ গোত্রের প্রতিটি ব্যক্তির পুঁজি আমার নিকট রয়েছে। তারা এসে নিজের সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ সফরে যে পুঁজি বিনিয়োগ করে ছিলেন সে সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসাই আমাকে করলেন না।
হিন্দা বলল, আপনি উনার শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে অবগত নন। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তিনি তো মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হওয়ার ঘোষণা দেন।
হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তখন খ্রিস্টান আলেমের কথা আমার মনে পড়ে গেলো। আমি হিন্দাকে বললাম, উনার সম্পর্কে তিনিই সবচেয়ে ভালো অবগত। হিন্দা বলল আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তিনি তো একথাই বলেন যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হাবীব আখিরী নবী, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
অন্য হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
أخرج حضرت الطبرانى رحمة الله عليه وحضرت أبو نعيم رحمة الله عليه من طريق حضرت عروة بن الزبير رحمة الله عليه، عن حضرت معاوية بن أبى سفيان رضى الله تعالى عنه، عن ابيه قال كنا بغزة او بإيلياء فقال لى امية بن ابى الصلت يا حضرت ابا سفيان رضى الله تعالى عنه، إيه عن عتبة بن ربيعة قلت- ايه عن عتبة بن ربيعة، قال كريم الطرفين، ويجتنب المظالم والمحارم، قلت نعم وشريف مسن. قال السن إزرى به قلت كذبت بل ما ازداد سنأ إلا ازداد شرفا قال لا تعجل على حتى اخبرك انى أجد فى كتبى نبيا يبعث من حرتنا هذه، فكنت أظن أنى هو، فلماذا ارست اهل العلم، اذا هو من بنى عبد مناف، فنظرت فى بنى عبد مناف، فلم أجد احدا يصلح لهذا الامر غير عتبة بن ربيعة، فلما اخبرتنى بسنه عرفت انه ليس به حين جاوز الأربعين ولم يوح إليه، قال حضرت ابو سفيان رضى الله تعالى عنه، فرجعت وقد اوحى الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فخرجت فى ركب فى تجارة، فمررت بأمية، فقلت له كالمستهزئ به قد خرج النبى صلى الله عليه وسلم الذى كنت تنعته. قال اما انه حق فاتبعه وكأنى بك يا حضرت ابا سفيان رضى الله تعالى عنه إن خالفته ربطت كما يربط الجدى حتى يؤتى بك اليه فيحكم فيك بما يريد.
অর্থ: “হযরত ত্বিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমরা গাজা অথবা ইলিয়া নামক স্থানে পৌঁছলাম। উমাইয়া ইবনে আবী ছলত আমাকে বলল, হে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ওতবা ইবনে রবীয়ার হাল হাকিকত বর্ননা করুন। আমি বললাম বরং তুমি বর্ননা করো। উমাইয়া বললো, ওতবা উভয় তরফ থেকে সম্ভ্রান্ত। সে জুলুম নিপীড়ন ও হারাম বিষয়াদি থেকে দূরে থাকে। আমি বললাম তাই সে ভদ্র। উমাইয়া বললো, আপনি কি ওতবাকে দোষারোপ করছেন? আমি বললাম তুমি ভুল বলছো বয়স যতই বাড়ে, ভদ্রতা ততই বাড়ে”। উমাইয়া বলল, তুমি কথাবার্তায় তরিঘড়ি করো না। আমি বলছি, আমি কিতাবে পেয়েছি যে, একজন নবী হবেন এবং তিনি হাররার মধ্য থেকে হবেন। আমার ধারণা ছিলো যে, তিনি আবদে মানাফ থেকে হবেন। আবদে মানাফের মধ্যে গভীর দৃষ্টিপাত করে দেখলাম যে, ওতবা ছাড়া অন্য কারোও মধ্যে নবী হওয়ার যোগ্যতা নেই। কিন্তু তুমি যখন ওতবার বয়স বৃদ্ধির কথা আমাকে বললে, তখন আমি বুঝলাম, ওতবা সেই সম্ভাব্য নবী নন। কেননা বয়স চল্লিশ বছর পার হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তার প্রতি ওহী নাযিল হয়নি।
হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি যখন সফর থেকে ফিরে এলাম, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহী নাযিল শুরু হয়েছে বলে শুনলাম। আমি সওদাগরদের একটি দলের সাথে আবার ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং উমাইয়া-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। আমি বিদ্রুপের ভঙ্গিতে তাকে বললাম, হে উমাইয়া! যে আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা তুমি বলতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে উনার নবুওওয়াত শরীফ-এর কথা ঘোষনা করেছেন। উমাইয়া বলল, নিশ্চয়ই তিনি সত্য নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি উনার ইত্তেবা বা অনুসরন করুন। উনার প্রতি ঈমান আনুন আমিও অবশ্যই আপনার সাথে উনার ইত্তেবা অনুসরন করবো। হে হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! যদি আপনি উনার বিরোধিতা করেন, তবে একদিন ছাগলের বাচ্চার ন্যায় বাঁধা অবস্থায় উনার কাছে উপনীত হবেন। তিনি আপনার সম্পর্কে যা ইচ্ছা ফয়সালা করবেন। (খাছায়িছুল কুবরা-১ম জিল্দ- ১৬৮ পৃষ্ঠা, শাওয়াহেদুন-নবুওয়াত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে, “একদা উমাইয়া ইবনে আবু ছালত সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাযির হয়ে উনার স্তুতিগাথা পাঠ করেন। তিনি প্রথমে ভূম-ল ও নভোম-লের গুণ বর্ণনা করেন। এরপর সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অবস্থা বিবৃত করেন। স্তুতিগাথার উপসংহারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, প্রশংসা করতঃ উনার রিসালত সত্য বলে ঘোষণা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সূরা তোয়াহা পাঠ করে শুনান। তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এটা মানুষের কালাম নয়। কিন্তু আমি আমার ভাই, বন্ধুদের সাথে পরামর্শ না করে কিছু করতে পারি না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে এর প্রতিদান দান করুন, আমার প্রতি ঈমান আনুন এবং সরল পথ অবলম্বন করুন। তিনি বলেন, আমি সত্বরই ফিরে আসব।
এরপর হযরত উমাইয়া ইবনে আবূ ছালত ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে যতদূর সম্ভব দ্রুত সিরিয়া পৌঁছলো। এক গির্জায় অনেক খ্রিস্টানপাদ্রি ইবাদতে লিপ্ত ছিলো। উমাইয়া তাদের কাছে তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করলো। তাদের একজন বলল, যার সম্পর্কে আপনি এসব কথাবার্তা বললেন উনাকে দেখলে চিনবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ! সেই পাদ্রী তাকে নিজের বাসস্থানে নিয়ে গেলো। গৃহের প্রাচীর গাত্রে পয়গম্বরগণ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ছুরত মুবারক কুদরতীভাবে ভেসে উঠেছিলো। সেই খ্রিস্টান উমাইয়াকে অন্দরে নিয়ে গিয়ে অনেক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের চেহারা মুবারক দেখালো। সর্বশেষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র চেহারা মুবারক দেখে উমাইয়া বলেন, এই যে তিনি। পাদ্রী বললেন, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে প্রতিদান দিন। তুমি দ্রুত ফিরি যাও এবং উনার প্রতি ঈমান আনো। কেননা, তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল এবং সর্বশেষ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
যখন উমাইয়া হেজায ভূমিতে পৌঁছলো, তখন বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়ে গিয়েছিলো। এতে কুরাইশদের অনেক সরদার নিহত হয়। উমাইয়া বললো, যদি তিনি পয়গম্বর হতেন তবে সম্ভবত নিজের কওমের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের হত্যা করতেন না। এরপর সে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশ সরদারদের জন্যে শোকগাথা রচনা করলো এবং তায়েফ অভিমুখে চলে গেলো। কিছুদিন সেখানে অবস্থান করার পর সে স্বপ্নে দেখল, তার ভগিনী তার সামনে উপস্থিত এবং গৃহের ছাদে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ফাটল দিয়ে দু’টি সাদা পাখি ভিতরে চলে এসেছে। একটি তার পেটের উপর বসে তার পেট থেকে কাপড় সরিয়ে দিয়েছে। পাখিটি অপর পাখিকে বললো, তুমি কিছু শুনেছ? সে বলল, না। প্রথম পাখি বলল, মহান আল্লাহ পাক আপনি একে দুর করুন। এরপর পেটের কাপড় সঠিকভাবে রেখে উভয় পাখি চলে গেলো এবং ছাদের ফাটল বন্ধ হয়ে গেলো।
তার ভগিনী এসে তাকে জাগ্রত করলে সে তাকে স্বপ্নের কথা জানিয়ে বলল, ঊর্ধ্বজগতের দু’জন দূত আমার কল্যাণের জন্যে এসেছিলো, কিন্তু আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। এ ঘটনার পর উমাইয়া কবি আল-জাযাহের কাছে চলে গেলো এবং তার প্রশংসা বর্ণনা করতে লাগলো। সে পাখিদের বুলি বুঝত। একদিন উমাইয়া আল-জাযাহের সাথে মদ্যপানের অপেক্ষায় ছিল, এমন সময় সেখানে একটি কাক এসে কা কা করতে লাগল। উমাইয়ার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেলো। আল-জাযাহ জিজ্ঞাসা করল, তোমার কি হলো? উমাইয়া বলল, এই কাক যা বলছে, তা সত্য হলে আমি শরাব হাতে আসার আগেই মারা যাব। আল-জাযাহ তার বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ করার জন্যে তাকে দ্রত শরাব দিল। যখনই শরাব তার সঙ্গে উপবিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছল, অমনি উমাইয়া জ্ঞান হারিয়ে ভূতলশায়ী হলো। আল-জাযাহ তাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দিল। কিছুক্ষণ পর কাপড় সরিয়ে দেখা গেলো যে সে মৃত্যুবরণ করেছে। মৃত্যুর সময় তার মুখে এই কবিতা ছিলো যার অর্থ-
* শতাব্দীব্যাপী দীর্ঘ জীবনও তিক্ত হয়ে যায় এবং অবশেষে খতম হয়ে যায়। হায়, আমি সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি, এর আগে যদি কোন দুর্গম পাহাড়ের চূড়ায় থাকতাম।” (শাওয়াহেদুন নুবুওয়াত)
আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের পূর্বে আমি বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ইয়ামেনে গেলাম এবং আশ কালান ইবনে আবিল আওয়ালিমের কাছে অবস্থান করলাম। তিনি ছিলেন অতিবৃদ্ধ দুর্বল ও শক্তিহীন ব্যক্তি। আমি যখনই ইয়ামেন যেতাম, উনার সাথে দেখা করে আসতাম। তিনি প্রত্যেকবার আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তিত্ব পয়দা হয়েছেন কি, যিনি গৌরব ও সম্মান-মর্যাদা অর্জন করেছেন কিংবা তোমাদের ধর্মের বিরোধিতা করছেন? আমি না সুচক উত্তর দিতাম। এবার যখন আমি উনার কাছে অবস্থান করলাম, তখন তিনি পূর্বের তুলনায় অধিক জীর্ণ-শীর্ণ ও নিঃশক্তি হয়ে গিয়েছিলেন। উনার কানও বধির ছিলো। উনার পুত্র উনার কাছে উপস্থিত থেকে উনাকে ধরে বসাত। তিনি আমাকে বললেন, নিজের বংশ তালিকা বর্ণনা করুন। আমি বললাম, আমি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ ইবনে আবদে আওফ ইবনে হারিছ ইবনে যাহরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আশকালান বললেন, এ জন্যে আপনাকে একটি সুসংবাদ দিচ্ছি, যা বাণিজ্যের তুলনায় উত্তম। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার ক্বওম থেকে গত মাসে যিনি আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন এবং উনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন। তিনি প্রতিমার পূজা করতে নিষেধ করেন, এক আল্লাহ পাক উনার পথে দাওয়াত দেন, সদাসর্বদা সত্য কথা বলেন এবং বাতিল বা খারাপ কাজ করতে নিষেধ করেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কোন গোত্র থেকে? তিনি বললেন, বনী হাশিম থেকে। আপনারা উনার অবস্থা প্রত্যক্ষ করুন। হে আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! উনাকে সত্যবাদী বিশ্বাস করে উনার খিদমত ও উনার সমর্থন করুন। এই কয়েক লাইন কবিতা আমার পক্ষ থেকে উনাকে উপহার দিবেন।
اشهد بالله ذى المعال * وفائق الليل با لصباح
اشهد بالله رب موسى * انك ارسل بالبطاح
فكن شفيعى الى مليك * يدعوا البر ابا الى الصلاح
* আমি সুমহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষ্য দেই, যিনি রাতকে ভোর দ্বারা উন্মোচন করেন। আমি হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার রব-এর সাক্ষ্য দেই। আপনি (আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তথা সারা কায়িনাতের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। অতএব, আপনি সেই রাজাধিরাজ (মহান আল্লাহ পাক) উনার কাছে আমার শাফায়াতকারী হবেন, যিনি সৃষ্টিকে হক্ব ও সত্যের দিকে আহ্বান করেন।”
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি যথাশীঘ্রই সম্ভব কাজকর্ম সেরে দ্রƒত ফিরে এলাম। মক্কা শরীফ-এ পৌঁছে আমি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে সাক্ষাত করে আশকালান ইবনে আবিল আওয়ালিম উনার কথাবার্তা উনাকে শুনালাম। তিনি বললেন, হ্যাঁ, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে মানুষের প্রতি প্রেরণ করেছেন। আপনি উনার কাছে যান। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ অবস্থান করছিলেন। আমি সেখানে গেলাম এবং ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। অনুমতি পাওয়া গেলে আমি ভিতরে চলে গেলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে দেখে মুচকি হাসলেন এবং বললেন, আমি এমন চেহারা দেখছি, যার কাছ থেকে আমি বরকত আশা করি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে তিনি ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? তিনি বললেন, তিনি সেই ব্যক্তি, যে কিছু উত্তম বাক্য উপহার দিয়েছে অথবা যার পয়গাম তুমি এনেছ। অর্থাৎ সেই হেমইয়ারী, যার মধ্যে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য আছে।
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি তখনই ঈমান আনলাম এবং বললাম-
اشهد الله اله الا الله و اشهد ان محمدا رسول الله صلى الله عليه و سلم
“আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” এরপর হেমইয়ারীর কবিতা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে পাঠ করলাম। তিনি যা যা বলেছিলেন, তাও বললাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
رب مومن بى وما رانى ومصدق بى و ما شهد زمانى اولئك حقا اخوانى-
অর্থ: “অনেক ঈমানদার আমাকে না দেখেই আমার প্রতি ঈমান আনে এবং অনেক সত্যায়নকারী আমার সময়কাল না পেয়েও আমার সত্যায়ন করে। এরাই আমার সত্যিকার ছহিব বা উম্মত।” (শাওয়াহিদুন নুবুওওয়াত)
ইনশা আল্লাহ চলবে ,