হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৩১ -১৫০)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৩১)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালীন মু’জিযা মুবারক
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن حضرت مخزوم بن هانى المخزمى رضى الله تعالى عنه، عن ابيه واتت له مائة وخمسون سنة، قال لما كانت الليلة التى ولد فيها رسول الله صلى الله عليه وسلم ارتجس ايوان كسرى وسقطت منه اربعة عشرة شرفة، وخمدت نار فارس، ولم تخمد قبل ذلك الف عام، وغاضت بحيرة ساوة، فلما اصبح كسرى افزعه ذلك فتصبر عليه تشجعا، فلما عيل صبره راى ان لا يستر ذلك عن وزرائه، فلبس تاجه وقعد على سريره وجمعهم اليه واخبرهم بما راى، فبينما هم كذلك اذ ورد عليه الكتاب بخمود النار، فازداد غما الى غمه، فقال له الموبذان. وانا اصلح الله الملك رايت فى هذه الليلة ابلا صعابا تقود خيلا عرابا قد قطعت دجلة وانتشرت فى بلادها، فقال اى شىء يكون يا موبذان؟ قال حادث يكون من ناحية العرب، فكتب كسرى الى النعمان بن المنذر اما بعد، فوجه الى برجل عالم بما اريد ان اساله عنه، فوجه اليه بعبد المسيح بن عمرو ابن حسان الغسانى، فلما ورد عليه قال له الملك الك علم بما اريد ان اسألك عنه؟ قال ليخبرنى الملك، فان كان عندى منه علم والا اخبرته بمن يعلمه، فاخبره. قال علم ذلك عند خال لى يسكن مشارف الشام يقال له سطيع
অর্থ: হযরত মাখযূম ইবনে হানী আল মাখযূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন (যাঁর বয়ঃক্রম ছিলো ১৫০ বছর) তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর রাত্রি মুবারক-এ পারস্য রাজ্যের প্রাসাদসমূহে ভূকম্পন হয়। যার ফলে চৌদ্দটি গম্বুজ ধ্বংস হয়ে যায়। পারস্যের বড় বড় অগ্নিকুন্ড নির্বাপিত হয়ে যায় যা এক হাজার বছর ধরে জ্বলছিলো। সাদা পানির নদগুলো শুকে যায়। ভোর বেলায় পারস্য রাজা আতঙ্কিত হয়ে গেলো এবং ভাবলো এ বিষয়গুলো উযীরের কাছে গোপন রাখা ঠিক হবে না। কাজেই সে মুকুট পরিধান করে সিংহাসনে বসলো। সকল সভাসদকে একত্রিত করে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলো। এমনিভাবে মুহুর্তের মধ্যে সংবাদ এলো যে হাজার বছরের অগ্নিকু- নির্বাপিত হয়ে গেছে। এ খবর শুনে স¤্রাট খুবই দুঃখিত ও চিন্তিত হলো। প্রধান পুরোহিত দোয়া করলো, হে আল্লাহ পাক! আপনি স¤্রাটকে ভালো রাখুন। আমিও আজ রাত্রিতে একটি স্বপ্ন দেখেছি যে, একটি শক্ত উট আরবী ঘোড়াকে টেনে আনছে এবং দজলা নদী পার হয়ে সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। স¤্রাট জিজ্ঞাসা করলো, হে পুরোহিত! এখন কি হবে? পুরোহিত বললো, নিশ্চয়ই আরবের দিক থেকে কোন সুমহান ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
অতঃপর স¤্রাট নু’মান ইবনে মুনযির-এর নিকট একখানা চিঠি লিখলো, হে নু’মান! কোন বিজ্ঞ ব্যাক্তিকে আমার নিকট পাঠিয়ে দাও। আমি তাকে কিছু প্রশ্ন করবো। নু’মান সে আব্দুল মাসীহ ইবনে আমর ইবনে হাসসান আল গাসসানীকে পাঠিয়ে দিলো। যখন ওই বিজ্ঞ ব্যক্তি আসলো তখন স¤্রাট তাকে জিজ্ঞাসা করলো, তুমি কি জানো আমি তোমাকে কি জিজ্ঞাসা করতে চাই? সেই ব্যক্তি বললো, হে বাদশা! আপনি দয়া করে বলুন। আমার সঠিক জাওয়াব জানা থাকলে আমি বলে দিবো। নতুবা যে জানে তার ঠিকানা বলে দিবো। এবার স¤্রাট তাকে সব কিছু খুলে বললো। আব্দুল মাসীহ বললো, আমার মামা সাত্বীহ এ সমস্ত বিষয় বেশি জ্ঞাত আছেন আর তিনি সিরিয়ার প্রান্ত দেশে বসবাস করেন। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৩২)সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালীন মু’জিযা মুবারক
قال فاته فاساله فخرج عبد المسيح، حتى انتهى الى سطيح، وقد اشفى على الضريح، فسلم عليه فلما سمع سطيع سلامه رفع رأسه وقال عبد المسيح، على جمل مشيح، اقبل الى سطيح، وقد اوفى على الضريح، بعثك ملك بنى ساسان، لارتجاس الايوان، وخمود النيران، ورؤيا الموبذان، راى ابلا صعابا، تقود خيلا عرابا، قد قطعت دجلة وانتشرت فى بلادها يا عبد المسيح، اذا كثرت التلاوة، وظهر صاحب الهراوة، وفاض وادى السماوة، وغاضت بحيرة ساوة، وخمدت نار فارس، فليس الشام لسطيح شاما يملك منهم ملوك وملكات، على عدد الشرفات، وكل ما هو آت آت، ثم قضى سطيح مكانه فاتى عبد المسيح الى كسرى، فاخبره، فقال الى ان يملك منا اربعة عشر ملكا كانت امور وامور، فملك منهم عشرة فى اربع سنين وملك الباقون الى خلافة عثمان رضى الله تعالى عنه.
স¤্রাট বললো তাকে নিয়ে আসো। আমি তাকেই জিজ্ঞাসা করবো। আব্দুল মাসীহ রওয়ানা হয়ে সাত্বীহ-এর কাছে পৌঁছল তখন সাত্বীহ মৃত্যুশয্যায়। আব্দুল মাসীহ তাকে সালাম দিলে সে মাথা তুললো এবং বললো, হে আব্দুল মাসীহ একটি দ্রুতগামী উটে সাওয়ার হয়ে সাত্বীহ-এর নিকট এসেছো, অথচ যার মৃত্যু এখন আসন্ন। তোমাকে নিশ্চয়ই সাসানীর স¤্রাট প্রেরণ করেছে। কেননা রাজ প্রাসাদে ভূকম্পন হয়েছে। পারস্যের অগ্নিকু- নির্বাপিত হয়ে গেছে। প্রধান পুরোহিত স্বপ্ন দেখেছে যে শক্ত উট আরবী ঘোড়াসমূহকে টেনে নিচ্ছে এবং দজলা নদী পার হয়ে সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। হে আব্দুল মাসীহ! যখন তিলওয়াত বেশি হতে থাকে, লাঠি বাহক আত্মপ্রকাশ করেন, সামাদাহ উপত্যকা পানিতে টগবগ করতে থাকে, সাদা পুকুর বা নদী শুকিয়ে যায় এবং পারস্যের অগ্নিকু-ে শীতল হয়ে যায়, তখন সাত্বীহ-এর জন্য সিরিয়া নয়। আর তোমাদের এবং সমস্ত কায়িনাতের মালিক হচ্ছেন তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা হবার হয়ে গেছে। এ কথা বলে সাত্বীহ মৃত্যুবরণ করলো। আবুল মাসীহ ফিরে এসে স¤্রাটকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। স¤্রাট সমস্ত কিছু শুনে বললো, আমাদের চৌদ্দ জন স¤্রাট হবে ততোদিন কতোকিছু হবে কে তা জানে। কিন্তু দেখা গেলো চৌদ্দ জনের মধ্যে দশজন স¤্রাট চার বছরের মধ্যেই অতিক্রান্ত হয়ে গেলো। অবশিষ্ট চারজন হযরত উছমান যুন নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকাল পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৮৭, ৮৮ পৃষ্ঠা, বাইহাক্বী, আবূ নায়ীম, খরায়িতী ও ইবনে আসাকির) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৩৩)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালীন মু’জিযা মুবারক
আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মাদারিজুন নুবুওওয়াত’-এর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ বা বিলাদত শরীফ-এর সময়ে প্রকাশিত মু’জিযা মুবারক-এর সংখ্যা অসংখ্য-অগণিত কোটি কোটি যা বলার অপেক্ষাই রাখে না।
একাধিক হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর একখানা অন্যতম মু’জিযা শরীফ হচ্ছে- শুকিয়ে যাওয়া ছাবী দরিয়ার পানির ঝর্ণা প্রবাহিত হওয়া। তাছাড়াও সামাওওয়া নামক একটি ঝর্ণা ছিলো যা হাজার বছর পর্যন্ত ছিলো শুকনো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর সময় তা প্রবাহিত হয়েছিলো। পারস্যের হাজার বৎসরের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকু-ও সে সময় নির্বাপিত হয়েছিলো। এহেন অবস্থা দর্শনে তখনকার পারস্যের বাদশাহ-এর অন্তরে ভীতির সঞ্চার হয়েছিলো। কিন্তু সে তা জনসাধারনের মাঝে প্রকাশ করতো না। ওই সময় পারস্যের প্রধান বিচারক মুআবদান স্বপ্নে দেখলো, একটি শক্তিশালী উট এবং দ্রুতগামী একটি আরবী ঘোড়া দৌড়ে এসে দজলা নদী পার হয়ে শহরে প্রবেশ করলো। স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারীরা স্বপ্নটিকে ব্যাখ্যা করলো এভাবে- আরব দেশে এমন এক সুমহান ঘটনা ঘটবে। অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগমন করবেন। আর উনার ক্বদম মুবারক-এ অনারবসহ সকল মাখলুক লুটাবে। বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণা করার জন্য পারস্য স¤্রাট গনকদের কাছে, বিশেষ করে সে দেশের সবচেয়ে নাম করা এবং অভিজ্ঞ গনৎকার সাত্বীহ-এর নিকট লোক পাঠালো। ওই গনককারটির অবস্থা ছিলো বিস্ময়কর। কথিত আছে, তার শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গের কোনো জোড়া ছিলো না। সে দাঁড়াতে ও বসতে পারতো না। কিন্তু সে যখন রাগান্বিত হতো তখন মশকের মতো ফুলে উঠতো এবং বসে পড়তো। তার শরীরে হাত ও মস্তক ব্যতীত কোথাও হাড় ছিলোনা। তার পুরো দেহটি ছিলো একটি গোশতের স্তুপের মতো। তাকে কোথাও নিয়ে যেতে চাইলে কাপড়ের মধ্যে পেঁচিয়ে নিয়ে যেতে হতো। আরো কথিত আছে, তার মুখ ছিলো তার বুকের মধ্যে। তার মাথা ও ঘাড় আলাদা ছিলো না। একথা বর্ণিত হয়েছে যে, তার বয়স হয়েছিলো প্রায় দু’শ বৎসর। গায়িবী বিষয়ের কোনো বিষয় তার কাছে জিজ্ঞাসা করতে হলে তাকে মুক্তার মালার মতো দোলাতে হতো। তখন তার নিঃস্বাস ফুলে উঠতো এবং সে কথা বলতে শুরু করতো। স¤্রাটের দূত যখন ওই সাত্বীহ নামক ব্যক্তির কাছে গেলো, তখন সে মৃত্যু শয্যায়। দূত তাকে স¤্রাটের সালাম ও শুভেচ্ছা জানালো। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো উত্তর এসেছে বলে অনুমান করা গেলো না। দূত কিছু কবিতা পাঠ করলো, যার মধ্যে স¤্রাটের প্রসঙ্গ ছিলো। সাত্বীহ কবিতার ছন্দ গুলো শুনে মুচকি হেসে বলতে লাগলো এখন কুরআন শরীফ পাঠের এবং লাঠিধারী বা তরবারীধারী ব্যক্তির আগমণের সময়। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সময়। এখন সামাওওয়া মরুভূমিতে পানি প্রবাহিত হবে। পানি প্রবাহ শুরু হবে শুকনো ছাবী ঝর্ণাতেও। আর নিভে যাবে পারস্যের হাজার বৎসরের জ্বলন্ত অগ্নিকু-। সাত্বীহ আর দুনিয়াতে থাকবে না। এটুকু বলার সঙ্গে সঙ্গেই সে মৃত্যুবরণ করলো।” (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৩৪)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালীন মু’জিযা মুবারক
হাদীছ শরীফ-এর এসেছে,
عن حضرت عروة رضى الله تعالى عنه ان نفرا من قريش منهم ورقة بن نوفل، وزيد بن عمرو بن نفيل، وعبيد الله بن جحش، وعثمان بن الحويرث كانوا عند صنم لهم يجتمعون اليه، فدخلوا عليه ليلة فراوه مكبوبا عى وجهه، فانكروا ذلك، فاخذوه فردوه الى حاله، فلم يلبث ان انقلب انقلابا عنيفا، فردواه الى حاله، فانقلب الثالثة، فقال عثمان بن الحويرث: ان هذا لامر قد حدث وذلك فى الليلة التى ولد فيها رسول الله صلى الله عليه وسلم فجعل عثمان يقول شعرا.
أيا صنم العيد الذى صف حوله + صناديد وفد من بعيد ومن قرب
تنكس مقلوبا فما ذاك قل لنا + أأذاك شىء أم تنكس للعب
فإن كان من ذنب أسأنا فإننا + نبوء باقرار نلوى عن الذنب
وأن كنت مغلوبا تنكست صاغرا + فما أنت فى الأوثان بالسيد الرب
অর্থ: হযরত উরওয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই কুরাইশদের কয়েকজন সরদার ওরাকাহ ইবনে নওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যায়িদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়িল, উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশ, উছমান ইবনে আল হাওয়াইরিছ উনারা এক রাত্রিতে এক প্রতিমার কাছে সমবেত হন। উনারা দেখলেন যে, একটি প্রতিমা উপুড় হয়ে পড়ে আছে। উনারা একে খারাপ মনে করে সোজা করে দিলেন। কিছুক্ষন পর সেটি আবার সজোরে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে গেলো। উনারা আবার সোজা করে দিলেন। কিন্তু তৃতীয় বার আবার মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। উছমান ইবনে হুয়াইরিছ বললেন, অবশ্যই আজকে কিছু একটা ঘটেছে। আর সেই রাত্রিটি ছিলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর রাত্রি মুবারক। অতঃপর উছমান একটি কবিতা আবৃত করলো।
* হে মূর্তি! তোর কাছে দূরদূরান্ত থেকে আগত আরব সরদারগণ রয়েছেন
* আর তুই উল্টে পড়ে আছিস। ব্যাপার কি বল, তুই কি খেলা করছিস?
* আমাদের দ্বারা কোনো গুনাহ হয়ে থাকলে আমরা তা স্বীকার করি এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকি।
* আর যদি তুই লাঞ্ছিত ও পরাভূত হয়ে মাথা নত করে থাকিস, তবে তুই প্রতিমাদের সরদার ও প্রভু না।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৩৫)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালীন মু’জিযা মুবারক
قال فاخذوا الصنم فردوه إلى حاله، فلما استوى هتف بهم هاتف من الصنم بصوت جهير وهو يقول.
تردى لمولود أنارت بنوره + جميع فجاج الأرض بالشرق والغرب
وخرت له الأوثان طرا وأرعدت + قلوب ملوك الأرض طرا من الرعب
ونار جميع الفرس باخت وأظلمت + وقد بات شاه الفرس فى أعظم الكرب
وصدت عن الكهان بالغيب جنها + فلا مخبر منهم بحق ولا كذب
فيالقصى ارجعوا عن ضلالكم + وهتبوا إلى الاسلام والمنزل الرحب
অতঃপর উনারা প্রতিমাটি পুনরায় খাড়া করে দিলেন। এরপর সেই মূর্তির ভিতর থেকে আওয়াজ আসলো।
* হে কুরাইশ সরদারগণ! শুনে রাখুন এ প্রতিমা ধ্বংস হয়ে গেছে সে সন্তান-এর কারণে যাঁর নূর মুবারক-এ সারা বিশ্ব আলোকিত হয়ে গেছে। যমীনের পূর্ব-পশ্চিম-এর সমস্ত কুফরী তছনছ হয়েছে
* উনার আগমনে সকল প্রতিমাই ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। সমস্ত রাজা-প্রজাদের অন্তর উনার তাশরিফে উনার রোবে ভয়ে কেঁপে উঠেছে।
* পারস্যের অগ্নিকু- নিভে গেছে। ফলে পারস্যের স¤্রাট খুবই মর্মাহত ব্যথিত হয়েছে।
* অতিন্দ্রীয়বাদীদের কাছ থেকে তাদের জিনেরা উধাত্ত হয়ে গেছে। এখন তাদের কেউ সত্য-মিথ্যার খবর পৌঁছাবে না।
* হে বানী কুছাই! পথভ্রষ্টতা পরিত্যাগ করো এবং প্রকৃত সত্য ইসলামের শিতল ছায়াতলে সকলেই আশ্রয় নাও। (খাছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৮৮, ৮৯ পৃষ্ঠা) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৩৬)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালীন মু’জিযা মুবারক
হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে,
حضرت هشام بن عروة رحمة الله عليه، عن أبيه، عن جدته حضرت اسماء بنت ابى بكر رضى الله تعالى عنه قالت كان زيد بن عمرو بن نفيل وورقة بن نوفل يذكران انهما اتيا النجاشى بعد رجوع أبرهة من مكة، قالا فلما دخلنا عليه، قال اصدقانى أيها القرشيان هل ولد فيكم مولود أراد أبوه ذبحه فضرب عليه بالقداح، فسلم ونحرت عنه جمال كثيرة؟ قلنا نعم، قال فهل لكما علم به ما فعل؟ قلنا تزوج امرأة يقال لها حضرت امنة عليها السلام تركها حاملا وخرج. قال فهل تعلمان ولدت أم لا؟ قلا ورقة اخبرك ايها الملك انى ليلة قد بت عند وثن لنا إذ سمعت من جوفه هاتفا يقول.
ولد النبى فذلت الأملاكونأى الضلال وأدبر الإشراك ثم انتكس الصنم على رأسه،
অর্থ: হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত তিনি উনার পিতা থেকে তিনি উনার দাদী হযরত আসমা বিনতে আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণনা করেন, আমর ইবনে নুফায়িল ও ওয়ারাকা ইবনে নাওফিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা বলেছেন, আমরা মক্কা শরীফ-এ আবরাহা ও তার সৈন্যরা ধ্বংস হওয়ার পর আবিসিনিয়ার স¤্রাট নাজ্জাশির কাছে গেলাম। উনারা উভয়ে বলেলন যখন আমরা তার নিকট আগমন করলাম তখন স¤্রাট বললেন, হে কুরাইশগণ সত্য করে বলবেন, আপনাদের মধ্যে এমন কোনো সন্তান কি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন, যাকে উনার পিতা যবেহ করার ইচ্ছা করেছিলেন?
অতঃপর লটারীর মাধ্যমে অনেক উট যবেহ বা কুরবানীর মাধ্যমে উনি যমীনে অবস্থান করেছিলেন। আমরা বললাম, হ্যাঁ এমন একজন সন্তান বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। স¤্রাট নাজ্জাশি জিজ্ঞাসা করলো, আপনারা জানেন কি তিনি পরে কি করেছেন? আমরা বললাম তিনি সম্মানিতা সাইয়্যিদাহ হযরত আমীনা আলাইহাস সালাম উনাকে নিকাহ মুবারক করেছেন এবং এবং উনার রেহেম শরীফ-এর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রেখে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।
স¤্রাট আবার প্রশ্ন করলেন, আপনারা কি জানেন, সেই সম্মাণিত সন্তান বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন কি? জাওয়াবে হযরত ওয়ারাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি এক রাত্রিতে এক প্রতিমার কাছে ছিলাম। আমি সেই মূর্তির ভিতর থেকে এই আওয়াজ শুনেছি, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। রাজা-বাদশারা লাঞ্ছিত হয়ে গেছে। গোমরাহী দুরিভূত হয়েছে এবং কুফরী-শিরকী মিটে গেছে। এরপর মূর্তিটি উপুড় হয়ে পড়ে গেলো। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৩৭)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালীন মু’জিযা মুবারক
فقال زيد عندى كخبره ايها الملك أنى فى مثل هذه الليلة خرجت حتى اتيت جبل ابى قبيس إذ رأيت رجلا ينزل من السماء له جناحان أخضران، فوقف على أبى قبيس، ثم اشرف على مكة، فقال ذل الشيطان، وبطلت الأوثان، وولد الأمين ثم نشر ثوبا معه وأهوى به نحو المشرق والمغرب، فرأيته قد جلل ما تحت السماء، وسطع نور كاد يخطف بصرى، وهالنى ما رأيت، وخفق الهاتف بجناحيه حتى سقط على الكعبة، فسطع له نور أشرقت له تهامة، وقال : زكت الارض وأدت ريعها وأومى إلى الأصنام التى كانت على الكعبة فسقطت كلها. قال النجاشى ويحكما أخبر كما عما أصابنى إنى لنائم فى الليلة التى ذكرتما فى قبتى وقت خلوتى اذ خرج على من الارض عنق ورأس وهو يقول حل الويل، بأصحاب الفيل، رمتهم طيرأبابيل، بحجارة من سجيل، هلك الأثرم، المعتدى المجرم، ولد النبى صلى الله عليه وسلم الامى، الحرمى المكى، من اجابه سعد، ومن أباه عند، ثم دخل الارض فغاب، فذهبت أصيح فلم أطق الكلام، ورمت القيام فلم أطق القيام، فأتانى اهلى فقلت احجبوا عنى الحبشة فحجبهم عنى ثم اطلق عن لسانى ورجلى.
অতঃপর যায়িদ বললেন, হে বাদশা! আমার কাছেও এমন ধরনের ঘটনা আছে। আমি সেই রাত্রি মুবারক-এ স্বপ্ন যোগে আবূ কুবাইস পাহাড়ের চূড়ায় উঠে এক ব্যক্তিকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখলাম যার দুটি পাখাও ছিলো। তিনি কিছু সময় আবূ কুবাইস পাহাড়ে অবস্থান করে মক্কা শরীফ-এ এসে বললেন, শয়তান লাঞ্ছিত হয়েছে। মূর্তি পুজা খতম হয়ে গেছে। হযরত ‘আমীন’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। অতঃপর তিনি একটি কাপড় ঝুলিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমপ্রান্তে ছড়িয়ে দিলেন। আমি দেখতে পেলাম, কাপড়টি সমগ্র আসমানের নিচে তাঁবুর মতো হয়ে গেলো। অতঃপর একটি নূর মুবারক উদিত হলো, যার নূরের উজ্জ্বলতায় আমার চক্ষু ঝলসে গেলো। এসব দেখে আমি ভীত হয়ে গেলাম। এ গায়িবী আহ্বানকারী আপন পাখা নাড়া দিলেন এবং কাবা শরীফ-এর উপর পতিত হলেন। এরপর একটি নূর মুবারক উদিত হলো যার নূরে মক্কা শরীফ-এর ভূখন্ড উদ্ভাসিত হয়ে গেলো। তিনি বললেন, ভূপৃষ্ঠ পুতঃপবিত্র হয়ে গেছে এবং সে তার সজীবতা উদগীরন করেছে। এরপর তিনি কাবা ঘরের সমস্ত প্রতিমাদের দিকে ইশারা করলে সেগুলো ধুলিসাৎ হয়ে গেলো।” নাজ্জাশী বললেন, এখন আমার কথা শুনেন। আমি সেই রাত্রিতে আমার ঘরে শায়িত ছিলাম। স্বপ্নে দেখি হঠাৎ মাটি ভেদ করে একটি গ্রীবা ও মাথা বের হলো। সে বললো, হস্তিবাহিনী ধ্বংস হয়ে গেছে। আবাবিল পাখী তাদের কংকর নিক্ষেপ করে আবরাহা ও তার সৈন্যদের নিস্তানাবুদ করে দিয়েছে। পাপিষ্ট অপরাধিদের আশ্রমও খতম হয়ে গেছে। সমস্ত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, সর্বোশ্রেষ্ঠ নবী ও রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। মাক্কী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে গেছেন। এখন যারা উনার অনুসরণ করবে তারা সফলকাম হবে। আর যে অবাধ্য হবে সে ধ্বংস হবে। এতোটুকু বলে সে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি চিৎকার করতে চাইলাম কিন্তু আমার মুখ থেকে আওয়াজ বের হলো না। আমি পালাতে চাইলাম কিন্তু দাঁড়াতে পারলাম না। এরপর আমার আহল-ইয়ালরা আমার নিকট এসে গেলো। হাবশি লোকজনকে আমার নিকট থেকে দূরে নিয়ে যাও তারা তাই করলো।” (খাছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৮৯ ও ৯০ পৃষ্ঠা)
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৩৮)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফকালীন মু’জিযা মুবারক
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, আমার মায়ের নাম মুবারক ছিলো শেফা। তিনি বলেছেন, যখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার আওলাদ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমার হাত মুবারকে দেয়া হলো। তখন আমি দেখলাম তিনি খতনাকৃত। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর তিনি হাঁচি মুবারক দিলেন সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে যেনো হাঁচি মুবারক-এর জাওয়াব ধ্বনিত হলো ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। তখন পূর্ব পশ্চিম-এর সমস্ত কিছুই আলোকিত ছিলো। আর সেই নূর মুবারক-এর আলোয় আমি শাম (সিরিয়া) দেশের অট্টালিকাসমূহ দেখতে পেলাম। (মাদারেজুন নুবুওওয়াত)
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একদিন কথা প্রসঙ্গে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যখন (দুনিয়াবী) অল্প বয়স মুবারক-এ দোলনায় ছিলেন সেই সময় আমি একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলাম এবং সেই ঘটনা বারবার আমাকে আপনার দ্বীন ইসলামে দিক্ষীত হতে অনুপ্রাণিত করেছিলো। ঘটনাটি ছিলো “আপনি দোলনায় শুয়ে শুয়ে আকাশের চাঁদের সাথে কথা বলতেন। আপনার আঙ্গুল মুবারক-এর ইশারায় চাঁদকে যে দিকে সরে যেতে বলতেন, চাঁদ সে দিকে হেলে যেতো। এ ঘটনা আমাকে আকৃষ্ট করেছে। (নূর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩৫ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর রাত্রি মুবারক-এ কা’বা শরীফ-এ অবস্থান করেছিলাম। অতঃপর অর্ধ রাত্রি অতীত হওয়ার পর দেখতে পেলাম যে, পবিত্র কা’বা শরীফ মাক্বামে ইবরাহীম-এর দিকে ঝুকে সিজদা করতেছে। সেই সময় উহা হইতে তাকবীর ধ্বনিত হচ্ছিল। তা হচ্ছে আল্লাহ পাক তিনি মহান; নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ মুছত্বফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সবচেয়ে বড়। এখন আমার রব আল্লাহ পাক তিনি আমার উম্মতদেরকে মূর্তির অপবিত্রতা থেকে এবং শিরকীর নাপাকী থেকে পবিত্র করবেন। গায়িব থেকে আওয়াজ এলো, হে যমীনবাসী, সাবধান! কা’বা শরীফ-এর রব আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যিনি পবিত্র কা’বা শরীফকে মনোনিত করেছেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বিবলা ও মুবারক বসবাসের স্থান হিসেবে তা পছন্দ করেছেন। কা’বা শরীফ-এর চতুর্দিকে যতো মূর্তি ছিলো সবগুলো টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। হুবল নামীয় সর্ব বৃহৎ মূর্তিটি উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে। উচ্চারিত হতে লাগলো যে, হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। আর উনার উপর রহমত-এর বৃষ্টি অবতীর্ণ হচ্ছে অর্থাৎ তিনি রহমত বা রহমতুল্লিল আলামীন। (নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ বারো শরীফ-এর সোমবার শরীফ সুবহে ছাদিক্বের সময় আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ আনেন। উনার বিলাদত শরীফ-এর সময় অসংখ্য অগণিত মু’যিজা শরীফ সংঘটিত হয়েছে। এ সম্পর্কে আমরা সামান্য কিছু আলোচনা করলাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি যেনো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলায় সমস্ত মু’মিন-মুসলমান তথা সারা কায়িনাতবাসীকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবীইয়িন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে সঠিক আক্বীদাভিত্তিক বিশুদ্ধ তথ্যভিত্তিক পবিত্র জীবনী মুবারক জানার তাওফীক দান করুন। (আমীন) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৩৯)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবীইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মাণিত পিতা-মাতা উনাদের মাধ্যমে নূর হিসেবে যমীনে তাশরীফ আনেন। কিন্তু উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন ছিলো ব্যতিক্রম। সাধারণভাবে নারীরা গর্ভকালীন ব্যাথা অনুভব করে থাকেন এবং তাদের সন্তান জন্মের সময় প্রচ- কষ্ট, রক্তপাত ইত্যাদি হয়ে থাকে। কিন্তু সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেন তখন উনার কোনো ব্যাথা, বায়ুকষ্ট, রক্তপাত ইত্যাদি হতো না বরং রক্তের পরিবর্তে বের হয়েছে নূর মুবারক। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূর হিসেবে বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। যে নূর মুবারক-এ মক্কা শরীফ সিরিয়া তথা গোটা কায়িনাত আলোকিত হয়ে যায়। অন্যান্য সন্তানরা মায়ের নাভির মাধ্যমে গর্ভে খাদ্য গ্রহণ করেন এবং জন্ম লাভ করার পর নাভি কাটা হয়। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবাল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মাণিত মা জননী উনার নাভি মুবারক-এর সাথে যুক্ত ছিলেন না। বরং নাভি মুবারক কর্তন অবস্থায় তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদত শরীফ-এর সময় রক্ত মাখা অবস্থায় ছিলেন না তিনি ছিলেন পূতঃপবিত্র। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জান্নাতী লিবাস বা পোষাক মুবারক পড়েই যমীনে তাশরীফ এনেছেন। উনার চক্ষু মুবারক-এ ছিলো সুরমা মাখা এবং তিনি খতনাকৃত অবস্থায় বিলাদত শরীফ লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه، عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال من كرامتى على ربى انى ولدت مختونا ولم ير أحد سوأتى.
সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমার রব আল্লাহ পাক তিনি আমাকে এমন সম্মান হাদিয়া করেছেন যে, আমি খতনা করা অবস্থায় বিলাদত শরীফ লাভ করেছি। আর আমার সতর মুবারক কেউ কখনো দেখেনি।” (খাছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৯০ পৃষ্ঠা) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৪০)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন
অন্য হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه عن أبيه العباس بن عبد المطلب عليه السلام قال ولد النبى صلى الله عليه وسلم مختونا مسرورا واعجب ذلك عبد المطلب وحظي عنده. وقال ليكونن لابنى هذا شأن، فكان له شأن.
সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার সম্মাণিত পিতা হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাভি মুবারক কাটা ও খতনাকৃত অবস্থায় বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার নিকট বিষয়টি খুবই আশ্চর্যজনক মনে হতো যার ফলে উনার কাছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি খিদমত বা মুহব্বত আরো বেড়ে যায়। তিনি বলেন, আমার এই সম্মাণিত আওলাদ উনার সুমহান শান বা ফযীলত প্রকাশ পাবে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। (এই রেওয়ায়েতটি বায়হাকী, আবূ নায়ীম ও ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও বর্ণনা করেছেন। (খাছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৯০ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم ولد مختو نا.
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন, “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খতনাকৃত অবস্থায় বিলাদত শরীফ লাভ করেন। (খাছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৯০ পৃষ্ঠা)
قال الحاكم رحمة الله فى (المستدرك) تواترت الأحاديث أنه ولد مختونا.
অর্থ: হযরত হাকীম নিসাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মুসতাদরিক লিল হাকীম’ গ্রন্থে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খতনা শরীফ সংক্রান্ত রেওয়ায়েত বা হাদীছ শরীফগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। (খাছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৯০ পৃষ্ঠা) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৪১)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন
وفى (الوشاح) لابن دريد قال ابن الكلبى بلغنا عن كعب الاحبار انه قال نجد فى بعض كتبنا ان حضرت ادم عليه السلام خلق مختونا واثنى عشر نبيا من بعده من ولده خلقوا مختتنين اخرهم محمد صلى الله عليه وسلم، و حضرت شيث عليه السلام، و حضرت ادريس عليه السلام، و حضرت نوح عليه السلام، و حضرت سام عليه السلام ، و حضرت لوط عليه السلام ، و حضرت يوسف عليه السلام ، و حضرت موسى عليه السلام ، و حضرت سليمان عليه السلام ، و حضرت شعيب عليه السلام ، و حضرت يحيى عليه السلام ، و حضرت هود عليه السلام ، و حضرت صالح عليه السلام أجمعين.
অর্থ: হযরত ইবনে দু’রাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আল ওয়াশাহ’ গ্রন্থে রয়েছে, হযরত ইবনে কালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত কা’বুল আহবার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি বলেছেন, আমরা আমাদের কিতাবে পেয়েছি যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ও আরো বারোজন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা খতনাকৃত অবস্থায় বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
(মাঝখানে রয়েছেন) হযরত শীছ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত ইদরীস আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত নূহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত সাম আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত লূত্ব আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত ইউনূস আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত মূসা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত সুলাইমান আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত শুয়াইব আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত হুদ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম, হযরত ছলিহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম। (খাছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ৯০ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আমার বিলাদত শরীফ-এর সময় কেউ আমার ছতর মুবারক দেখেনি।” সুবহানাল্লাহ! (বেদায়া-নেহায়া ২য় জিলদ ২৬১ পৃষ্ঠা)
‘তারিখুল খামিছ’ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেই প্রথমেই সিজদায় চলে যান। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৪২)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন
আল বারাহিনুল ক্বতয়িয়াহ ফী খাইরিল বারিয়াহ, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ ১ খ- ২১, ২২ পৃষ্ঠা ও সীরাতে হালাবিয়াহ ১ খ- ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قالت لما ولد المولود المحمود رايته ساجداً رافعا مسبحتيه كالمتضرع والمبتهل الـى السماء تم رايت السحاب الابيض انه غشاه واغابه عن بصرى واسمع مناديا يقول طوفوه فـى مشارق الارض ومغاربها. وادخلوه فـى الابحر حتى يعرفه اهلها باسمه ونعته وشكله الابهٰى. ويعلموا ان اسمه ماحٍ يمحو اٰثار الشرك كلها.
وورد فـى حديث اخرى ان قالت اٰمنة عليها السلام لـما وضعته صلـى
الله عليه و سلم رايت سحابا عظيما نورانـيا. يسمع فـيه صهيل الـخيل وصوت ارتعار الاجنحة ومقال الناس حتـى غطه فصار عنـى غائبا. فسمعت مناديا ينادى ان طوّفوا محمدًا فـى الا رض كـلها واعرضوه علـى الروحانـيـين من الـجن والانس والملائكة وعلـى الطـيور الوحوش عرضاً.
অর্থ: হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেছেন, যখন মাওলূদুল মাহমূদ তথা প্রশংসিত আওলাদ দুনিয়ায় আগমন করলেন, তখন আমি উনাকে সিজদাহ অবস্থায় দেখেছিলাম। সে সময় উনার উভয় শাহাদাত বা তর্জ্জনী আঙ্গুল মুবারকদ্বয় দুয়া ও ক্রন্দনকারীর ন্যায় আকাশের দিকে প্রসারিত ছিল। অতঃপর দেখতে পেলাম একটি সাদা মেঘ এসে উনাকে ঢেকে ফেললো এবং আমার চোখ মুবারক-এর আড়ালে নিয়ে গেলো। এ সময় আমি শুনতে পেলাম, এক আওয়াজকারী বলছেন, এই পুতঃপবিত্র সন্তানকে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম পর্যন্ত গোটা দুনিয়া ছফর করিয়ে আনো এবং সকল সাগর ও মহাসাগর দেখিয়ে আনো। যাতে সকল স্থল ও পানিবাসী উনার নাম ও প্রশংসা এবং উজ্জ্বলতম আকৃতিসহকারে চিনে নিতে পারে এবং বরকত হাছিল করতে পারে। তারা আরো জেনে রাখতে পারবে যে, এই পুতঃপবিত্র আওলাদা বা সন্তান উনার নাম মুবারক মাহী বা বাত্বিল ধ্বংসকারী ও অন্যায়ের মুলোৎপাটনকারী। তিনি সমস্ত শিরক ও অংশীবাদীতার সকল নাম-নিশানা মিটিয়ে দিবেন।
অপর একখানা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, যখন আমার মুবারক সন্তান বিলাদত শরীফ লাভ করলেন। সে সময় নূরানী একখানা মেঘ দেখতে পেলাম। উহার ভিতর হতে ঘোড়ার আওয়াজ, পাখীর পাখার আওয়াজ ও মানুষের কথা শুনা যাচ্ছিল। মেঘমালাখানা মুবারক পুত্রকে ঢেকে নিলো এবং আমার চোখের আড়ালে চলে গেলো। এ সময় এক আওয়াজকারীকে বলতে শুনলাম যে, সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সারা পৃথিবী ছফর করিয়ে আনো। মানুষ, জিন ও ফিরিশতাদের সকল রহস্যসমূহ উনার সামনে পেশ করো, আর সকল পশু-পাখীগুলোকে উনার কাছে হাজির করো। সকলেই উনাকে দেখুক এবং রহমত-বরকত হাছিল করুক। উনাকে দেখার হক্ব সকলেরই রয়েছে। সকলেই উনাকে দেখার আকুল ইচ্ছা রাখে।” সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ছিলো ব্যতিক্রমধর্মী। যা কোনো মানুষের মতো নয়। যেহেতু আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মানুষ তথা কোনো মাখলুকাতের মতো ছিলেন না।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৪৩)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে এবং হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে পিতা-মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন। একজনকে মাটি দিয়ে অন্যজনকে বাম পাঁজরের হাঁড় মুবারক দ্বারা তৈরি করেছেন। আর হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে পিতা ছাড়াই শুধুমাত্র হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে যমীনে পাঠানো হয়েছে। আর সাধারণভাবে মানুষ পয়দা হয়ে থাকে কুদরতীভাবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে এ সমস্ত বিষয়গুলো কুদরতের অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টিও কুদরতের অধীন। যার মেছালের মেছাল নেই। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
الله يجتبى اليه من يشاء.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার দিকে মনোনীত করেন যাকে ইচ্ছা তাকেই।” (সূরা শুরা : আয়াত শরীফ ১৩)
আর তাই আল্লাহ পাক তিনি নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদেরকে উনাদের শান হেতু স্বীয় কুদরতে আলাদাভাবে সৃষ্টি করেছেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টি অন্যান্য সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং সকল মানুষের সৃষ্টি থেকে এক ভিন্ন প্রক্রিয়ায় হয়েছে।
মানবীয় আকৃতি মুবারকে তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন সত্যি কিন্তু উনার সৃষ্টির উৎস, উপাদান, মায়ের রেহেম শরীফে তাশরীফ আনয়ণ এবং রেহেম শরীফ হতে যমীনে আগমন প্রত্যেকটি ছিল আল্লাহ পাক উনার খাছ কুদরতের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক যে নূর মুবারক দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে সে নূর মুবারক কুদরতীভাবে উনার আম্মা উনার রেহেম শরীফ-এ প্রবেশ করেছে এবং কুদরতীভাবেই তিনি উনার সম্মানিত আম্মা উনার বাম পাঁজরের নিচ থেকে আগমন করেছেন। এটাই ছহীহ এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৪৪)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরনকেউ কেউ বলে থাকে যে, সমস্ত মানুষ মায়ের রেহেম শরীফ হতে যেভাবে জন্মগ্রহণ করে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও সেভাবে আগমন করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! তারা দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফদ্বয় উল্লেখ করে থাকে।
اخرج ابو نعيم وكذا ابن سعد عن بريدة عن مرضعته صلى الله عليه وسلم فى بنى سعد ان حضرت أمنة عليها السلام قالت رأيت كانه خرج من فرجى شهاب اضائت له الارض حتى رأيت قصور الشام. وعن همام بن يحيى عين اسحاق بن عن الله ان ام رسول الله صلى عليه وسلم قالت لما ولدته خرج من فرجى نور اضاء له قصور الشام فولدته نظيفا مابه قذر.
অর্থ: “আবূ নঈম এবং অনুরূপ হযরত ইবনে সা’দ বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। তিনি বনী সা’দ গোত্রীয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ মা (হযরত হালিমা আলাইহাস সালাম উনার) থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন: আমি দেখেছি যে, আমার ফারজ থেকে একটি আলোকবর্তিকা বের হলো। তার দ্বারা সমস্ত যমীন আলোকিত হলো। এমনকি আমি সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ দেখতে পেলাম।
“হুমাম ইবনে ইহাহইয়া তিনি হযরত ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আম্মা বলেন, যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে আগমন করলেন তখন আমার ফারজ থেকে একটি নূর বের হলো। যার দ্বারা সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হলো। তিনি আগমন করেছেন পাক-সাফ অবস্থায়। উনার মধ্যে কোনো নাপাকী ও ময়লা ছিল না।”
প্রকাশ থাকে যে, কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফ-এর বর্ণনাগুলো খুবই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়। এর জাহির ও বাতিন দুটা দিক রয়েছে। যে কারণে সাধারণভাবে এর অর্থ ও ব্যাখ্যা উপলব্ধি করতে অনেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এবং দিয়ে থাকে।
আবার বর্ণনাগুলোর শাব্দিক ও ব্যবহারিক অর্থের সাথে আকাইদী ও আ’মালী বিষয়টি ওতপ্রতভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে কেবল শাব্দিক কিংবা ব্যবহারিক অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করলে দেখা যাবে, তা আদৌ ছহীহ হয়না তাই তা গ্রহণযোগ্যও নয়। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৪৫)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন
কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ-এর অর্থ ও ব্যাখ্যা করা সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর ফতওয়া হলো, “শুধু আরবী ভাষা জানলেই কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের অর্থ ও ব্যাখ্যা করা যাবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা ভিত্তিক অর্থ ও ব্যাখ্যা সে না জানবে।”
মেছাল স্বরূপ বলা যেতে পারে- (১) যেমন ضالا শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে গোমরাহী। এ শব্দটি যখন কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে কাফিরদের সম্পর্কে আসবে তখন এর অর্থ হবে গোমরাহী। যেমন আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضللا مبينا.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও উনার রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার নাফরমানী করবে সে অবশ্যই প্রকাশ্য গোমরাহীতে নিপতিত হবে।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩৬)
আর এ ضالا শব্দ যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক-এ আসবে তখন এর অর্থ যদি কেউ “গোমরাহ” করে তাহলে সে কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হয়ে যাবে।
যেমন ‘সূরা ‘দ্বুহা’-এর ৭নং আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন
و وجدك ضالا فهدى
এ আয়াতে কারীমা-এর শাব্দিক অর্থ করলে অর্থ দাঁড়ায় “আর তিনি (আল্লাহ পাক) আপনাকে অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পথভ্রষ্ট বা গোমরাহ পেয়ে হিদায়েত দান করলেন।” (নাউযুবিল্লাহ)
এ অর্থ মূলত কুফরী। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন সময়ই গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট ছিলেন না। কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ما ضل صاحبكم وما غوى.
অর্থ: “তোমাদের সঙ্গী রসূল পাক গোমরাহ হয়েছেন না বিপথগামী হয়েছেন।” (সূরা নজম : আয়াত শরীফ ২)
আরো ইরশাদ করেন,
ليس بى ضللة ولكنى رسول من رب العلمين.
অর্থ: “হে আমার ক্বওম! আমার নিকট গোমরাহী বলতে কিছুই নেই বরং আমি মহান রব্বুল আলামীন উনার প্রেরিত রসূল।” (সূরা আ’রাফ : আয়াত শরীফ ৬১) অর্থাৎ তিনি তো সৃষ্টিই হয়েছেন নবী-রসূল হিসেবে।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৪৬)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন
হাদীস শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
كنت نبيا وادم بين الماء والطين.
অর্থ: “আমি তখনো নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি মাটি ও পানিতে অবস্থান করতেন।”
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم متى وجبت لك النبوة قال وادم بين الروح والجسد.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে কখন নবুওওয়ত দেয়া হয়েছে? অর্থাৎ আপনি কখন থেকে নবী? তিনি বললেন, আমি তখনো নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি রূহে এবং শরীরে অবস্থান করছিলেন। অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির পূর্ব থেকেই আমি নবী।” (তিরমীযী, মিশকাত)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার পূর্বেই নবী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাহলে এ অর্থ কি করে ছহীহ হতে পারে যে, তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট ছিলেন? মুলত এরূপ অর্থ করা হচ্ছে সম্পূর্ণ কুফরী যা ঈমান ও আমল উভয়টি বিনষ্ট হওয়ার কারণ।
এ আয়াত শরীফ-এর ছহীহ অর্থ হলো “তিনি (আল্লাহ পাক) আপনাকে কিতাবহীন পেয়েছেন অতঃপর কিতাব হাদিয়া করেছেন।”
(২) যেমন مكرশব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ধোকাবাজী বা প্রতারণা’। এ শব্দটি যখন কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ কাফিরদের সম্পর্কে আসবে তখন এর অর্থ হবে ধোকাবাজী বা প্রতারণা।
আর এ শব্দটি যখন আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে আসবে তখন এর অর্থ হবে হিকমত বা কৌশল। যেমন আল্লাহ পাক তিনি সূরা আলে ইমরান-এর ৫৪ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
ومكروا ومكر الله والله خير المكرين.
এ আয়াত শরীফ-এর শাব্দিক অর্থ হলো, “তারা (কাফিররা) ধোঁকাবাজী করল, আল্লাহ পাক তিনিও ধোঁকাবাজী করলেন। আর আল্লাহ পাক তিনি হলেন উত্তম ধোকাবাজ।” (নাউযুবিল্লাহ)।
কেউ যদি এ আয়াত শরীফ-এর শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করে তাহলে সে কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হয়ে যাবে। এর ছহীহ অর্থ হলো, “তারা অর্থাৎ কাফিররা ধোকাবাজী করলো, আর আল্লাহ পাক তিনি হিকমত করলেন। আল্লাহ পাক তিনি হলেন উত্তম হিকমতওয়ালা।” সুবহানাল্লাহ! (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৪৭)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন
(৩) যেমন يقين শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিশ্বাস। এ শব্দটি কুরআন শরীফ-এ ৮ বার এসেছে। এর মধ্যে ৬ বার বিভিন্ন অর্থে এসেছে। যেমন- নিঃসন্দেহে, নিশ্চিত, সত্য, অবশ্যই সত্য, বিশ্বাসযোগ্য ইত্যাদি। আর ২ বার এসেছে মৃত্যু অর্থে। যেমন- সূরা হিজরের ৯৯ নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
واعبد ربك حتى يأتيك اليقين.
“এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, “তোমার রব আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী কর বিশ্বাস আসা পর্যন্ত।” যদি কেউ এ অর্থ করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ তাতে বুঝা যায় বিশ্বাস আসার পর আর ইবাদত-বন্দেগী করার দরকার নেই। যা কুফরী আক্বীদা। স্বয়ং আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছাল শরীফ নেয়া পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগী করেছেন। বরং শেষ যিন্দেগী মুবারকে আরো বেশী বেশী করেছেন।
এখানে يقين শব্দের অর্থ হচ্ছে মৃত্যু। আয়াত শরীফ-এর ছহীহ অর্থ হলো “তোমার রব উনার ইবাদত-বন্দেগী কর মৃত্যু আসা পর্যন্ত।”
উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পছন্দনীয় ভাষা হচ্ছে আরবী। জান্নাতের ভাষাও আরবী। এ আরবী ভাষাকে আল্লাহ পাক তিনি এমন সমৃদ্ধ ও পরিপূরক করেছেন যে, ক্ষেত্র বিশেষে এর একটি শব্দ একাধিক ও ভিন্ন অর্থ প্রদান করে থাকে। অনুরূপ একাধিক শব্দ একই অর্থের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সুতরাং কেউ যদি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ অর্থ প্রয়োগ ও ব্যবহারের ক্ষেত্র বুঝতে অক্ষম হয় এবং এই অক্ষমতা নিয়েই ব্যাখ্যা করে তাহলে তার অবস্থা অনুরূপই হবে যেরূপ অবস্থা হয়েছে মীর্জা গোলাম কাদিয়ানীর।
কাদিয়ানী خاتم النبين আয়াতাংশে خاتم -এর ছহীহ অর্থ “শেষ” এর পরিবর্তে “মহর” ভুল অর্থ করার কারণে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়েছে।
এমনিভাবে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর ভুল অর্থ, ভুল ব্যাখ্যা, ভুল ফতওয়া, ভুল আমল ও আক্বীদার কারণে কালিমা, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি সবকিছু স্বীকার করা ও আমল করার পরও অনেকে বিভ্রান্ত বা গোমরাহ হয়ে গেছে। এর উদাহরণ হচ্ছে মু’তাজিলা, শিয়া, খারেজী, মরজিয়া, নাজ্জারিয়া, জাবারিয়া, মুশাব্বিহা ইত্যাদি ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বা।
কাজেই কুরআন শরীফ কিংবা হাদীছ শরীফ-এর বরাত দিয়ে কোন কথা বললেই যে তা ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য হবে তা নয়। বরং দেখতে হবে, উক্ত কথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদা ও আমলের খিলাফ কিনা, উক্ত কথা আল্লাহ পাক ও উনার প্রিয় বান্দা নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের শান ও মর্যাদার খেলাফ কিনা? বিশেষ করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান ও ফযীলতের খেলাফ কিনা? অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা অতঃপর হযরত আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের খিলাফ কিনা? (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৪৮)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন
স্মরণীয় যে, আমাদেরকে একদিন অবশ্যই আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয় হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে হাযির হতে হবে। এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত-শুপারিশ সবার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়বে। কাজেই এমন কথা কস্মিনকালেও বলা শুদ্ধ হবে না যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান ও মর্যাদার বিন্দুতম খেলাফ হয়।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ পূর্ববর্তী আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সকলেই সাধারণ মানুষের মতো ভূমিষ্ট হননি, যেহেতু নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ও বিশেষভাবে মনোনীত বান্দা।
যারা বলে, “সমস্ত মানুষ মায়ের রেহেম শরীফ হতে যেভাবে জন্মগ্রহণ করে থাকেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও সেভাবে আগমন করেছেন।” তাদের একথা সম্পূর্ণ ভুল। তাদের বক্তব্য ভুল হওয়ার সবচাইতে বড় কারণ হলো তারা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত "فرج" শব্দের একাধিক শাব্দিক অর্থ থেকে একটি অর্থের উপর ভিত্তি করেই বক্তব্য পেশ করেছে। অর্থটি হচ্ছে “শরমগাহ”।
অথচ এ অর্থ ব্যতীত আরো যে অর্থের বর্ণনা পাওয়া যায় বিভিন্ন লুগাত বা অভিধানে তাহলো ছিদ্র, ফাঁক, ফাটল, প্রবেশ পথ, সুড়ঙ্গ, দু’হাত কিংবা দু’পায়ের মধ্যেবর্তী স্থান, দু’জিনিসের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টিকারী বস্তু, পুরুষ-মহিলা, যুবক প্রত্যেকের শরমগাহ এবং তার চতুর্দিকের স্থান ও সন্তান মায়ের রেহেম শরীফ হতে যে স্থান দিয়ে ভুমিষ্ঠ হয় ইত্যাদি। অর্থাৎ এক কথায় فرج শব্দের অর্থ হলো ওই রাস্তা যে রাস্তা দিয়ে সন্তান ভুমিষ্ঠ হয়। فرج শব্দটি সকলের ক্ষেত্রে এক অর্থ প্রদান করবে না। যেমন সাধারণ মানুষের শানে যখন فرج শব্দটি ব্যবহার হবে তখন এর অর্থ হবে সাধারণ ও স্বাভাবিক স্থান।
আর অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের শানে যখন এ শব্দ ব্যবহার হবে তখন এর অর্থ হবে নাভি ও শরমগাহের মধ্যবর্তী স্থান। আর যখন আখিরী রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে এ শব্দ ব্যবহার হবে তখন এর অর্থ হবে ডান পাঁজরের নিচের স্থান। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৪৯)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ হওয়া সম্পর্কে কিতাবে চারটি মত বর্ণিত হয়েছে।
যেমন- এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,
اعلم ان فى موضع ولادة النبى صلى الله عليه وسلم اربعة اقوال الاول انه ولد من الخاصرة اليسرى والثانى انه ولد من نقبة بين الفرج والسرة والثالث انه ولد من فم امه – والرابع انه ولد من المخرج المعتاد.
অর্থ: “জেনে রাখ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভুমিষ্ঠ হওয়ার স্থান সম্পর্কে চারটি ক্বওল মুবারক রয়েছে।”
(১) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (স্বীয় মাতা উনার) বাম পার্শ্বের পাঁজরের নিচ থেকে আগমন করেছেন।
(২) স্বাভাবিক স্থান ও নাভির মধ্যবর্তী স্থান হতে।
(৩) উনার মাতা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার মুখ মুবারক থেকে।
(৪) স্বাভাবিকভাবে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ হওয়া সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের অভিমত হলো,
كل مولود غير الانبياء يولد من الفرج وكل الانبياء غير نبينا مولودون من فوق الفرج وتحت السرة واما نبينا صلى الله عليه وسلم فمولود من الخاصرة اليسرى تحت الضلوع.
অর্থ: “হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনারা ব্যতীত সমস্ত মানুষই (স্বীয় মায়ের) স্বাভাবিক স্থান থেকে জন্মগ্রহণ করেন। আর সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনারা স্বাভাবিক স্থানের উপর ও নাভির নিচ থেকে বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। আর আমাদের নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বাম পার্শ্বের পাঁজরের নিচ থেকে বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন।” (উমদাতুন্নুকুল ফি কাইফিয়াতে বিলাদাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সাধারণ মানুষের মতো আগমন করেননি। বরং আল্লাহ পাক উনাদেরকে খাছ কুদরতীভাবে অন্যস্থান দিয়ে বিলাদত শরীফ করিয়েছেন।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (১৫০)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর কাইফিয়াত বা ধরন
এ সম্পর্কে আরো বর্ণিত আছে যে,
ولم يصح تقل ان نبيا من الانبياء ولد من الفرج ولهذا افتى المالكية بتتل من قال ان النبى صلى الله عليه وسلم ولد من مجرى البول.
অর্থ: “হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনারা স্বীয় মাতার স্বাভাবিক স্থান থেকে বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন একথা সম্পূর্ণরূপেই অশুদ্ধ। আর এজন্যই মালিকী মাযহাবের ইমামগণ উনারা ওই ব্যক্তিকে ক্বতল করার ফতওয়া দিয়েছেন যে ব্যক্তি বলবে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (উনার মাতা উনার) স্বাভাবিক স্থান দিয়ে বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন।” (ওমদাতুন্নুকুল ফি কাইফিয়াতি বিলাদাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
উল্লেখ্য, বর্তমানে আমরা দেখতে পাই যে, সন্তান যখন স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী ভুমিষ্ট হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন সে সন্তানকে অপারেশন করে মায়ের রেহেম শরীফ থেকে বের করে আনতে হয়। এ অবস্থায় নাভির নিচে ও স্বাভাবিক স্থানের উপর অপারেশন করতে হয়। অর্থাৎ এ অবস্থায়ও সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক পথে জন্ম লাভ করেন না।
অতএব, এ বিষয়ে সকলকেই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মোতাবেক আক্বীদা পোষণ করতে হবে। আর তাহলো “আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনারা ব্যতীত সমস্ত মানুষই (স্বীয় মায়ের) স্বাভাবিক স্থান থেকে জন্ম গ্রহণ করেন। আর সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনারা স্বাভাবিক স্থানের উপর ও নাভির নিচ থেকে বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন। আর আমাদের নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানীতা আম্মা (হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার) বাম পার্শ্বের পাঁজরের নিচ থেকে বিলাদত শরীফ লাখ করেছেন।”
সুতরাং এর খেলাফ আক্বীদা পোষণ করার অর্থ হলো আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইহানত করা যা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
0 Comments:
Post a Comment