হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৫১ -২৭৫) (জ)
নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে স্বীয় চাচা আবূ তালিব উনার থাকা অবস্থায় প্রকাশিত মু’জিযা শরীফ
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনারই সন্তান আবূ ত্বালিব ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সহোদর ভাই। উনি দীর্ঘ সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত করেন।
উল্লেখ্য যে, আবূ তা¡লিব উনারা ছিলেন মোট দশ ভাই। আর আবূ ত্বালিব উনার আপন ভাই ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম। যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা ছিলেন। আর আবূ তা¡লিব ছিলেন আপন চাচা। আবূ তা¡লিব তিনি স্বীয় সম্মানিত ভাতিজা উনার খিদমতে মাল-জান তথা সমস্ত কিছুই ব্যয় করেছেন।
কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, আবূ তা¡লিব তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীর্ঘ ৪২ বৎসর খিদমতের আঞ্জাম দিয়েছেন যা বর্ণনা করার অপেক্ষাই রাখে না। আবূ ত্বালিব তিনি উনার সম্মানিত ভাতিজা উনাকে নিজ সন্তানের চেয়ে অনেক অনেক বেশি মুহব্বত করতেন। তিনি স্বীয় ভাতিজা উনাকে আদর,স্নেহ ইন্তিকাল পর্যন্ত দিয়েছেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার চাচা আবূ ত্বালিব উনার বাড়িতে উনার ইন্তিকাল পর্যন্ত অবস্থান করেছেন। আবূ ত্বালিব উনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে থাকাকালে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনেক শান-মান, মু’জিযা শরীফ প্রকাশ পেয়েছে যা স্বয়ং আবূ ত্বালিব তিনি তা অবলকন করেছেন।
আবূ ত্বালিব তিনি উনার সম্মানিত ভাতিজা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছাড়া কখনও খাবার গ্রহণ করতেন না এবং সব সময় উনাকে উনার ডান পার্শ্বে রাখতেন। বিছানায় শোয়ার সময়ও ডান দিকে রাখতেন। সদা সর্বত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সঙ্গে রাখতেন, খিদমতের আঞ্জাম দিতেন। আবূ ত্বালিব তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে অনেক না’ত শরীফ পাঠ করেছেন; তন্মধ্যে একটি না’ত শরীফ হলো-
وشق له من اسمه ليجعله +
فذوالعرش محمود وهذا محمد
صلى الله عليه و سلم
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যই এবং উনার ইসম বা নাম মুবারক উনার বরকতের কারণেই চন্দ্র দ্বিখ-িত হয়েছে। সুতরাং আরশের অধিকারী মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন মাহমূদ বা প্রশংসনীয় আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মুহম্মদ বা প্রশংসিত।”
বিশিষ্ট কবি হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উক্ত নাত শরীফখানা অন্যভাবে প্রকাশ করেছেন-
الم تر ان الله ارسل عبده +
باياته و الله اعلى و ا مجد-
وشق له من اسمه ليجله +
فذوا العرش محمود وهذا محمد
صلى الله عليه و سلم
অর্থ: “তুমি কী লক্ষ করোনি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা অর্থাৎ হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নবী-রসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন, অসংখ্য অগণিত মু’জিযা শরীফ দিয়ে। মহান আল্লাহ পাক তিনি মহিমান্বিত ও বেমেছাল মহাসম্মানিত।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য এবং উনার ইসম বা নাম মুবারক-এর বরকতেই চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়েছে। সুতরাং আরশের অধিপতি হচ্ছেন মাহমূদ বা প্রশংসনীয় আর তিনি হচ্ছেন মুহম্মদ বা প্রশংসিত।” সুবহানাল্লাহ! (মাদারিজুন নুবুওওয়াত, রওজাতুল আহবার)
আবূ ত্বালিব তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লালন-পালন তথা উনার খিদমত করছিলেন তখন মক্কা শরীফ-এ ভীষণ অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা দিয়েছিলো। হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আরুত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, এই খরার সময় আমি মক্কা শরীফ-এ এসেছিলাম। তখন মক্কা শরীফ-এর সমস্ত লোকজন বৃষ্টির জন্য দুয়া করার উদ্দেশ্যে আবূ ত্বালিব উনার বাড়িতে জমা হলেন। বড়দের সঙ্গে ছিলেন অনেক শিশু সন্তানগণ। সকলের মধ্যে একজন বালক সন্তান উনাকে দেখা যাচ্ছিলো সূর্যের চেয়েও সমুজ্জ্বল। আমরা দেখলাম সেই সুমহান সন্তান উনার চেহারা মুবারক উনার উপর মেঘের ছায়া পতিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! আবূ ত্বালিব তিনি সেই সন্তান উনার পৃষ্ঠমুবারক কাবা শরীফ-এর দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর সেই সম্মানিত সন্তান তিনি উনার আঙ্গুল মুবারক দিয়ে আসমানের দিকে ইশারা করলেন ফলে চতুর্দিক থেকে মেঘমালা এসে সমস্ত যমীনকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে ফেললো। অথচ ইতোপূর্বে আকাশে একখ- মেঘের চিহ্নও ছিলো না। অতঃপর এতো অধিক বৃষ্টি হলো যে, সমস্ত নদ-নদী, খাল-বিল ভরে গেলো। আবূ ত্বালিব তিনি তখন সেই সন্তান অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে একখানা নাত শরীফ পাঠ করলেন-
وا بيض يستقى الغمام بوجهه +
شما ئل اليتا مى عصمة للارامل-
অর্থ: “কত সুন্দর সেই চেহারা মুবারক, যার মাধ্যমে মেঘের নিকট পানি চাওয়া হয়। তিনি তো অসহায়, অনাথদের অভিভাবক, বিধবাদের আশ্রয়দাতা।”
আবূ ত্বালিব তিনি স্বীয় সম্মানিত ভাতিজা উনার শান মুবারক-এ উক্ত নাত শরীফ পাঠ করেছে, এ নাত শরীফ খানা হচ্ছে, অন্য আরেক খানা নাত শরীফ-এর অংশ। হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সেই নাত শরীফ খানায় ৮০টির অধিক পংক্তি রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আবু ত্বালিব তিনি এ নাত শরীফখানা তখন পাঠ করেছিলেন, যখন কাফির-মুশরিকরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করেছিলো। আবূ ত্বালিব তিনি অত্র ক্বাছীদায় কাফির মুশরিকদের নিন্দা করেছেন। প্রতিহত করতে চেয়েছেন তাদের শত্রুভাবাপন্নতাকে।
আবূ ত্বালিব উনার ক্বাছীদা বা না’ত শরীফ ছিলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আনুগত্যমূলক ও উনার মুহব্বতের বহিঃপ্রকাশ। হযরত ইবনুল আলকীন তিনি বলেন, আবূ ত্বালিব উনার কবিতা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল তথা হাবীবুল্লাহ। আর সে সম্পর্কে আবূ ত্বলিব পূর্ণ অবহিত ছিলেন। (মাদারিজুন নুবুওওয়াত ৭ম জিলদ ৭৭ ও ৭৮ পৃষ্ঠা)
আবূ ত্বালিব তিনি স্বীয় ভাতিজা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেমেছাল মুহব্বত করতেন। ততক্ষণ পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ করতো না যতক্ষণ না, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই খাবারে উপস্থিত হতেন।
এ সম্পর্কে ‘খছায়িছুল কুবরা’ ১ম জিলদ ১৪০ ও ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
واخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه وحضرت أبو نعيم رحمة الله عليه وحضرت ابن عساكر رحمة الله عليه من طريق حضرت عطاء رحمة الله عليه، عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه ومن طريق حضرت مجاهد رحمة الله عليه وغيره قالوا- كان إذا اكل عيال أبى طالب جميعا او فرادى لم يشبعوا، وإذا اكل معهم رسول الله صلى الله عليه وسلم شبعوا، فكان إذا أراد ان يغديهم او يعشيهم قال- كما انتم حتى يحضر ابنى فيأتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فيأكل معهم فيفضلون من طعامهم، وإن لم يكن معهم لم يشبعوا، وإن كان لبنا شرب أولهم يتناول القعب العيال، فيشربون منه فيروون عن اخرهم من القعب الواحد، وإن كان احدهم ليشرب قعبا وحده فيقول إنك لمبارك،
অর্থ:- হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা ও হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যদের থেকে বর্ণনা করেন। উনারা বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছাড়া যখন আবূ ত্বালিব উনার আহাল-ইয়াল বা পরিবারের সকলকে নিয়ে খাবার খেতেন বা একা একা খাবার খেতেন তখন তাদের কারও খাবারের মধ্যে তৃপ্তি হতো না এবং তাদের কারও পেট ভরতো না। কিন্তু যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের মধ্যে অবস্থান করতেন তখন সকলেই খাবার খেয়ে পরিতৃপ্ত হতো এবং অল্পতেই পেট ভরে যেতো। সুবহানাল্লাহ! সেজন্য দেখা যেতো সকাল-সন্ধ্যা তথা যখনই খাবারের সময় হতো তখন আবূ ত্বলিব তিনি বলতেন, সকলেই অপেক্ষা করুন আগে আমার সন্তান (ভাতিজা) তিনি আসুন। কিছুক্ষণের মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ নিতেন বা উপস্থিত হতেন উনার সঙ্গে সকলেই খাবার শুরু করতেন। দেখা যেতো, সকলেই তৃপ্তি সহকারে খাবার খেতেন, সকলের পেটও ভরে যেতো। সুবহানাল্লাহ! এমনকি অনেক খাবারও অবশিষ্ট থেকে যেতেন। পক্ষান্তরে তিনি উপস্থিত না থাকলে সকলেই অতৃপ্ত থেকে যেতো এবং ক্ষুধার্তও থেকে যেতেন। দুধ সর্বপ্রথম চাচা আবূ ত্বালিব তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পান করাতেন। অতঃপর সেই পেয়ালা মুবারক থেকে পরে সকলেই পান করতেন এবং পরিতৃপ্ত হয়ে যেতেন। সে অবস্থা দেখে আবূ ত্বালিব তিনি বলতেন, আপনি খুবই বরকতময়।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৪০ ও ১৪১ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
وأخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه من طريق حضرت الواقدى رحمة الله عليه ، حدثنى حضرت محمد بن الحسن بن أسامة بن زيد رحمة الله عليه، عن أهله، عن حضرت أم ايمن رضى الله تعالى عنه قالت ما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم شكا جوعا قط ولا عطشا، وكان يغدو وإذا اصبح فيشرب من ماء زمزم شربة، فربما عرضنا عليه الغداء، فيقول- لا أريد أنا شبعان- وأخرجه ابن سعد من وجه اخر عنها وفيه لا صغيرا ولا كبيرا.
অর্থ: হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে হাসান ইবনে উসামা ইবনে যায়িদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি আপন আহাল বা পরিবারবর্গ উনাদের থেকে এবং উনারা হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি, তিনি ক্ষুধা ও পিপাসা লেগেছে এ কথা কখনও বলেননি।
তিনি সকাল সকাল যমযম কুপের পানি পান করতেন। আমরা উনাকে সকালের নাস্তা দিলে তিনি বলতেন, আমার এখন নাস্তা খাওয়ার প্রয়োজন নেই তাই খেতে চাচ্ছি না। হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অন্য সনদে বর্ণনা করেছেন, যার মধ্যে এই বাক্যগুলোও সংযোজিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্ষুধা ও পিপাসার কথা কখনও বলেননি। না আনুষ্ঠানিক অল্প বয়স মুবারক-এ, না বেশি বয়স মুবারক-এ। সুবহানাল্লাহ! উল্লেখ্য যে, আবূ ত্বলিব স্বয়ং ভাতিজা উনার খিদমতের জন্য যথাযথভাবে কোশেশ করতেন। ভাতিজা তিনি সুখে-শান্তিতে অবস্থান করলে তিনি ইতমিনান হতেন
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
وأخرج ابن حضرت سعد رحمة الله عليه، عن حضرت ابن القبطية رحمة الله عليه قال كان أبو طالب توضع له وسادة بالبطحاء مثنية يتكئى عليها، فجاء النبى صلى الله عليه وسلم فبسطها ثم استلقى عليها، فجاء ابو طالب فأخبر فقال وحل البطحاء.
অর্থ:- “হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে ক্বিবতিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবূ ত্বালিব উনার জন্য বাতহায় তাকিয়া রাখা হতো, যাতে তিনি হেলান বা ঠেস দিয়ে বসতেন। আর ভাঁজ করা থাকতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে সেটা খুলে তার উপর শুয়ে পড়তেন। অতঃপর আবূ তা¡লিব তিনি এসে খুশি হয়ে বলতেন, ‘আমার প্রিয় ভাতিজা তিনি খুবই আরামে ঘুমাচ্ছেন।’ অর্থাৎ আবূ ত্বালিব তিনি ভাতিজা উনার খুশিতে খুশি হতেন উনার অসন্তুষ্টিতে পেরেশান ও কষ্ট পেতেন।” (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৪১ পৃষ্ঠা)
আরো উল্লেখ রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন অল্প বয়স মুবারক থেকে অত্যন্ত পাক পবিত্র, সুউচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র। কেননা সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা সব হারাম, নাজায়িয, কুফরী, শিরকী এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পূতঃপবিত্র।
এ সম্পর্কে আকাইদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
الانبياء عليهم السلام كلهم معصومون-
অর্থ:- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা মা’ছূম বা নিস্পাপ।” (শরহে আকাইদে নাসাফী) আরো উল্লেখ রয়েছে যে,
الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصغائر والكبائر والكفر والقبائح-
অর্থ:- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ থেকে পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! (আল ফিক্বহুল আকবার লি ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সব গুনাহখতা থেকে পবিত্র তো অবশ্যই এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র। যদিও উনাদের বয়স মুবারক কম হোক বা বেশি হোক না কেনো। কারণ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ছোট থেকেই নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। এ প্রসঙ্গে শরীয়তের একটি উছূল রয়েছে,
النبى نبيا و لو كان صبيا
অর্থ: যিনি নবী তিনি শিশু অবস্থা থেকেই নবী। সুবহানাল্লাহ! (শরহে আকাইদে নাসাফী) কাজেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেই বেমেছাল শরাফত উনার অল্প বয়স মুবারক থেকেই প্রকাশ পেয়েছিলো।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
وأخرج حضرت الطبرانى رحمة الله عليه، عن حضرت عمار رضى الله تعالى عنه قال- كان أبو طالب يصنع الطعام لأهل مكة، وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل لم يجلس حتى يأخذ شيئا فيضعه تحته، فقال ابو طالب- إن ابن اخى ليحس بكرامة.
অর্থ: হযরত তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবূ ত্বালিব তিনি মক্কাবাসীদের জন্য খাবারের আয়োজন করতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত সেই মজলিসে প্রবেশ করে বসতেন না, যতক্ষণ না উনার জন্য কোনো বিছানা বা আসন মুবারক বিছিয়ে দেয়া হতো। এজন্য আবূ ত্বালিব তিনি খুশি হয়ে বলতেন আমার সম্মানিত ভাতিজা তিনি অনেক অনেক সম্মানিত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও সুউচ্চ শরাফতের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৪১ পৃষ্ঠা)
মূলত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম, এমনকি উনার মুবারক সংস্পর্শে যা এসেছে তাও পবিত্র থেকে পবিত্রতম হয়েছে। তিনি ঘুম থেকে উঠলে উনার চেহারা মুবারক-এ কোনো মলিনতা দেখা যেতো না, বিন্দুমাত্র কোনো মলিনতা ছিলো না। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
اخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه، و حضرت أبو نعيم رحمة الله عليه، و حضرت ابن عساكر رحمة الله عليه من طريق حضرت عطاء بن أبى رباح رحمة الله عليه، عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال- كان بنو أبى طالب يصبحون غمصا رمصا ويصبح محمد صلى الله عليه وسلم صقيلا دهينا. قال- وكان ابو طالب يقرب إبى الصبيان بصحفتهم فيجلسون وينتهبون ويكف رسول الله صلى الله عليه وسلم يده لا ينتهب معهم، فلما رأى ذلك عمه عزل له طعامه على حدة.
অর্থ: হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত আত্বা ইবনে আবী রিবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে উনারা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আবূ ত্বালিব উনার সন্তানরা সকালে ঘুম থেকে চোখে ময়লা, মালিন্য নিয়ে উঠতেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাক-সাফ, সজীবতা তথা আরো নূরানী চেহারা মুবারক নিয়ে ঘুম থেকে উঠতেন। সুবহানাল্লাহ! আবূ তালিব তিনি শিশুদের সামনে খাবারের পাত্র রেখে দিতেন। শিশুরা তা ক্ষুধা নিবারণের জন্য পেট ভরে খেয়ে নিতেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাড়াতাড়ি বা ক্ষুধা নিবারণের জন্য খেতেন না। উনার শরাফত এতো বেমেছাল ছিলো যে, তিনি কখনো খাবারের জন্য ব্যাস্ত হতেন না বা কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলতেন না। এজন্য আবূ ত্বালিব তিনি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার পেশ করতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য তা খেতেন। সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৪০ পৃষ্ঠা)
নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে চাচা আবু ত্বালিব উনার সিরিয়া ছফর এবং পাদ্রী বুহাইরার সাক্ষাত লাভ
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
اخرج حضرت الحافظ أبو بكر الخرائطى رحمة الله عليه عن حضرت أبى بكر بن أبى موسى الاشعرى رحمة الله عليه عن أبيه قال خرج أبو طالب الى الشام ومعه رسول الله صلى الله عليه وسلم فى أشياخ من قريش. فلما أشرفوا على الراهب- يعنى بحيرى- هبطوا فحلوا رحالهم فخرج اليهم الراهب وكانوا قبل ذلك يمرون به، فلا يخرج ولا يلتفت اليهم قال فنزل وهم يحلون رحالهم. فجعل يتخللهم حتى جاء فاخذ بيد النبى صلى الله عليه وسلم فقال هذا سيد العالمين. وفى رواية البيهقى زيادة هذا رسول رب العالمين، بعثه الله رحمة للعالمين. فقال له أشياخ من قريش- وما علمك؟ فقال إنكم حين أشرق تم من العقبة لم يبق شجرة ولا حجر الاخر ساجدا، ولا يسجدون الا لنبى، وإنى أعرفه بخاتم النبوة أسفل من غضروف كتفه.
অর্থ: হাফিয আবূ বকর আল খারায়াতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবূ বকর ইবনে আবূ মুসা আল আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ ত্বালিব তিনি সিরিয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। আর উনার সঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ কুরাইশদের কয়েকজন ব্যক্তিও ছিলেন। এক পাদ্রীর এলাকায় গিয়ে উনারা ছফর বিরতি করেন। উনাদেরকে দেখে পাদ্রী তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এর পূর্বেও উনারা এ পথে চলাচল করতেন। কিন্তু পাদ্রী কখনো বেরিয়ে আসেননি। তাদের দিকে ফিরে তাকাননি। যা হোক কুরাইশ কাফিলা যখন সেই এলাকায় অবতরণ করে তখন পাদ্রী ঘর থেকে বেরিয়ে উনাদের নিকট চলে আসেন। অবশেষে সেই পাদ্রী এসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক ধরে বলেন, ইনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল আলামীন (সারা আলমের সাইয়্যিদ), ইনি হচ্ছেন, রব্বুল আলামীন উনার রসূল (ইনি হচ্ছেন সারা আলমের যিনি রব খালিক্ব, মালিক উনার প্রেরিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আর মহান আল্লাহ পাক উনাকে রহমাতুল্লিল আলামীন তথা সারা কায়িনাতের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! একথা শুনে কুরাইশদের কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি বলে উঠলেন, আপনি কিভাবে তা জানতে পারলেন? পাদ্রী বললেন, আপনারা যখন পাহাড়ের পিছনে পাদদেশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন ওই সময় প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পাথর উনার উপর সিজদায় লুটিয়ে পড়েছিলো। আর তিনি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হওয়ার কারণে উনাকে সকলেই সিজদা করেছিলো। আর আমি উনাকে উনার কাঁধ মুবারকে স্থাপিত মোহরে নুবুওওয়াত দেখে সনাক্ত করতে পেরেছি।
رعية الابل- فقال أرسلوا اليه فاقبل وعمامة تظله. فلما دنا من القوم قال انظروا اليه عليه غمامة فلما دنا من القوم وجدهم قد سبقوه الى فى الشجرة فلما جلس مال فى الشجرة عليه. قال انظروا الى فى الشجرة مال عليه قال فبينما هو قائم عليهم وهو ينشدهم ألا يذهبوا به الى الروم فان الروم فان الروم إن رأوه عرفوه بالصفة فقتلوه فالتفت فاذا هو بسبعة نفر من الروم قد اقبلوا. قال فاستقبلهم فقال ما جاء بكم؟ قالوا جئنا أن هذا النبى خارج فى هذا الشهر فلم يبق طريق الا بعث اليه ناس وإنا أخبرنا خبره الى طريقك هذه.
অতঃপর পাদ্রী ঘরে ফিরে গিয়ে খাবার প্রস্তুত করেন এবং খাবার নিয়ে এসে দেখতে পেলেন একখ- মেঘ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছায়া মুবারক দিচ্ছে। তিনি তখন উট দেখাশুনা করছিলেন। পাদ্রী কাফিলার নিকট এসে বললেন, ওই দেখুন মেঘ উনাকে ছায়া দিচ্ছে। লোকজন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গাছের নিচে নিয়ে এলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গাছের নিচে বসা মাত্র গাছের ছায়া উনার দিকে ঝুঁকে পড়লো। পাদ্রী বললেন, লক্ষ করুন, গাছের ছায়া উনার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, পাদ্রী তখন কাফিলার লোকজন উনাদেরকে ক্বসম দিয়ে বললেন, যেনো উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে রোমে না যান। কারণ রোমকরা উনাকে দেখলে লক্ষণ দেখে চিনে ফেলবে এবং উনাকে পেলে শহীদ করবে। একথা বলেই পাদ্রী মুখ ফিরিয়ে দেখতে পেলেন যে, ৭ জন রোমক উনাদের দিকে এগিয়ে আসছে। বর্ণনাকারী বলেন, তাদেরকে দেখে পাদ্রী এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের আগমনের উদ্দেশ্য কি? জবাবে তারা বললো, আমরা সেই নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খোঁজে এখানে এসেছি। কারণ আমরা জানতে পেরেছি তিনি এই নগরীতে এ মাসেই তাশরীফ আনবেন। তাই উনার খোঁজে প্রতিটি স্থানে চতুর্দিকে লোক পাঠানো হয়েছে। আর আমরা আপনার এ পথ দিয়ে উনার আগমনের সুসংবাদ পেয়েছি।
قال فهل خلفكم أحذ هو خير منكم؟ قالوا لا إنما اخبرنا خبره الى طريقك هذه. قال أفرأيتم أمرا أراد الله أن يقضيه هل يستطيع أحد من الناس رده؟ فقالوا لا. قال فبايعوه وأقاعوا معه عنده. قال فقال الراهب أنشدكم الله أيكم وليه؟ قالوا أبو طالب. فلم يزل يناشده حتى رده وبعث معه حضرت أبو بكر رضى الله تعالى عنه حضرت بلالا رضى الله تعالى عنه وزوده الراهب من الكعك والزيت.
পাদ্রী বললেন, আচ্ছা, তোমাদের পিছনে কি কেউ আছে তোমাদের চাইতে উত্তম? তারা বললো, না। আমরা কেবল আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সুসংবাদ পেয়ে এখানে এসেছি। পাদ্রী বললেন, আচ্ছা বলতো, মহান আল্লাহ পাক তিনি যে কাজ সম্পাদন করার ইরাদা বা ইচ্ছা করেন তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কি কোনো মানুষের আছে? তারা বললো, না। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা বলার পর রোমকরা পাদ্রীর হাতে বাইয়াত হয়ে উনার নিকট অবস্থান করলো।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর পাদ্রী কুরাইশ কাফিলাকে লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি আপনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম দিয়ে বলছি, বলুন তো, এই সম্মানিত সন্তান উনার অভিভাবক কে? জবাবে উনারা বললেন, আবূ ত্বালিব। পাদ্রী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে পুনঃপুনঃ অনুরোধ করায় হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে উনার সঙ্গে দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মক্কা শরীফ-এ ফেরত পাঠালেন। পাদ্রী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কিছু পিঠা ও যায়তুনের তেলও হাদিয়া হিসেবে দিলেন।” (দালায়িলুন নুবুওওয়াত ২য় জিলদ ২৪ ও ২৫ পৃষ্ঠা, খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৪১ ও ১৪২ পৃষ্ঠা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৮৪ ও ২৮৫ পৃষ্ঠায়, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, সীরাতুল মুস্তাফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইবনে আবী শায়বা, তিরমিযী শরীফ, হাকিম, বায়হাকী শরীফ, আবূ নায়ীম ইত্যাদি)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه- ثم إن أبا طالب خرج فى ركب تاجرا إلى الشام- فلما نهبأ للرحيل وأجمع السير صب به رسول الله صلى الله عليه وسلم- فيها يزعمون- فرق له أبوطالب وقال والله لأخرجن به معى ولا أفارقه ولا يفارقنى أبدا- أو كما قال- فخرج به. فلما نزل الركب بصرى من أرض الشام وبها راهب يقال له بحيرى فى صومعة له. وكان اليه علم أهل النصرانية، ولم يزل فى تلك الصومصه منذ قط راهب فيما اليه يصير علمهم عن كتاب فيما يزعمون- يتوارثونه كابرا كن كابر. فلما نزلوا ذلك العام ببحيرى- وكانوا كثيرا ما يمرون به فلا يكلمهم ولا يعرض لهم- حتى كان ذلك العام. فلما نزلوا قريبا من صومعته صنع لهم طعاما كثيرا وذلك فيما يزعمون عن شئ راه وهو فى صومعته، بزعمون أنه رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الركب حتى أقبل وغمامة تظلله من بين القوم. ثم أقبلوا فتزلوا فى ظل شجرة قريبا منه. فنظر إلى الغمامة حين أظلت الشجرة وتهصرت أغصان الشجرة على رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى استظل تحتها. فلما رأى ذلك بحيرى نزل من صومعته وقد أمر بطعام فصنع.
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অতঃপর আবূ ত্বালিব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে একটি কাফিলার সঙ্গে সিরিয়ার দিকে ছফর করেন। কাফেলা সিরিয়ার বুশরা নামক স্থানে গিয়ে যাত্রা বিরতি করে। সেখানে একটি গীর্জায় এক পাদ্রী অবস্থান করতো। যার নাম ছিলো বুহাইরা। খ্রিস্টান ধর্মের তিনি একজন বড় আলিম ছিলেন। পাদ্রীত্ব গ্রহণ অবধি তিনি ওই গীর্জায়ই সব সময় অবস্থান করতেন। খ্রিষ্টানদের ধারণা মতে, খ্রিষ্টীয় ধর্মগ্রন্থে তিনিই ছিলেন শীর্ষস্থানীয় আলিম। উত্তরাধিকার সূত্রে এই ইলম তারা পেয়ে থাকেন। মক্কা শরীফ-এর এই বণিক কাফিলা এর আগেও বহুবার এ পথ দিয়ে চলাচল করেছেন। কিন্তু পাদ্রী বুহাইরা এতকাল পর্যন্ত উনাদের সঙ্গে কোন কথাও বলেননি এবং উনাদের প্রতি ফিরেও তাকাননি। কিন্তু এই ছফরকালে কাফেলা পাদ্রীর গীর্জার নিকট অবতরণ করলে পাদ্রী উনাদের জন্য খাবারের আয়োজন করলেন। কাফেলার লোকজন উনাদের ধারণা ছিলো নিশ্চয়ই পাদ্রী আমাদের কাফেলায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে ফেলেছিলেন। ফলে একখ- মেঘ আমাদের মধ্য থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছায়া দিচ্ছিলো। কাফেলার লোকজন উনারা যখন আরো অগ্রসর হয়ে পাদ্রীর কাছাকাছি একটি গাছের ছায়ায় অবস্থান নেন। পাদ্রী তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মেঘের ছায়া প্রদান এবং উনার প্রতি গাছের ডাল-পালা ঝুকে থাকছে লক্ষ করলেন। এসব দেখে পাদ্রী উনার গীর্জা থেকে বেরিয়ে আসেন। এদিকে উনার নির্দেশে খাবারেরও প্রস্তুতি চলছিলো।
ثم أرسل اليهم. فقال إنى صنعت لكم طعاما يا معشر قريش فأنا أحب أن تحضروا كلكم، كبيركم وصغيركم، وعبدكم وحركم. فقال له رجل منهم والله يا بحيرى إن لك لشأنا اليوم. ما كنت تصنع هذا بنا وقد كنا نمربك كثيرا فما شأنك اليوم؟ قال له بحيرى صدقت قد كان ما نقول ولكنكم ضيف وقد أحببت أن أكرمكم وأصنع لكم طعاما فتأ كلون منه كلكم فاجتمعوا اليه وتخلف رسول الله صلى الله عليه وسلم من بين القوم لحدانة سنه فى رحال القوم تحت الشجرة فلما راهم بحيرى لم ير الصفة التى يعرف ويجده عنده فقال يا معشر قريش لايتخلف أحد منكم من طعامى قالوا يا بحيرى ماتخلف أحد ينبغى له أن يأتيك إلا غلام وهو أحدثنا منا فخلف فى نرسالنا. قال لا تفعلوا ادعوه فليحضر هذا الطعام معكم. قال فقال رجل من قريش مع القوم- واللات والعزى إن كان للؤم بنا أن يتخلف حضرت محمدبن عبد الله بن عبد المطلب صلى الله عليه وسلم عن طعام من بيننا.
এবার তিনি কাফেলার নিকট লোক প্রেরণ করলেন। অতঃপর কাফেলার প্রতিনিধি দল পাদ্রীর নিকট উপস্থিত হন তখন পাদ্রী বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়গণ! আমি আপনাদের জন্য মেহমানদারী (খাবারের) ব্যবস্থা করেছি। আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনাদের কাফেলার প্রত্যেকে আমার এই আয়োজনে উপস্থিত হবেন। ছোট-বড়, গোলাম-আযাদ সকলেই। জবাবে একজন বললেন, হে বুহাইরা! আজ আপনি ব্যতীক্রম কিছু করছেন দেখছি। ইতঃপূর্বে কখনো তো আপনি আমাদের জন্য এরূপ আয়োজন করেননি। অথচ এর আগেও আমরা এ পথ দিয়ে যাতায়াত করেছি। আজ এমনকি হলো, দয়া করে একটু বলবেন কি? বুহাইরা বললেন, আপনি সত্য কথাই বলেছেন, আপনার কথা যথার্থ। তবে ব্যাপার তেমন কিছু নয়। আর আপনারা তো মেহমান। একবেলা আপনাদের খাবার দিয়ে মেহমানদারী ও খিদমত করতে আমি আশা প্রকাশ করছি। অতঃপর কুরাইশ কাফেলা উনাদের সকলেই পাদ্রীর নিকট উপস্থিত হলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক বয়স মুবারক কম হওয়ার কারণে তিনি গাছের নিকটে উটগুলোর নিকট বসে রইলেন। পাদ্রী তখন দেখলেন যে, কাফেলার সব লোকই এসেছেন। কিন্তু তিনি যে ছিফত ও লক্ষণসমূহের কথা জানতেন তা উনাদের কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। তখন পাদ্রী আবার বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আমার এই খাবার বা মেহমানদারী থেকে আপনাদের একজনও যেনো বাদ না পড়ে যায়। কাফেলার লোকজন উনারা বললেন, হে বুহাইরা আপনার নিকট যাদের আসা উচিত ছিলো উনাদের একজনও অনুপস্থিত নেই। কেবলমাত্র বয়স মুবারক-এ আমাদের মধ্যে কম একজন সম্মানিত বালক বা সন্তান তিনি তাঁবুতে রয়ে গেছেন। পাদ্রী বললেন না, তা আপনারা করবেন না। উনাকেও আনুন, তিনিও যেনো আমার মেহমান হিসেবে আপনাদের সঙ্গে খাবারে শরীক থাকতে পারেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরূপ জবাবে কুরাইশ উনাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো, লাত-উজ্জার শপথ! হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই খাবারে আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত থাকা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যই বটে। নাউযুবিল্লাহ!
ثم قام اليه فاحتضنه وأجلسه مع القوم، فلما رأى بحيرى جعل يلحظه لحظا شديدا وينظر الى أشياء من جسده، قد كان يجدها عنده من صفته، حتى إذا فرغ القوم من طعامهم وتفرقوا قام اليه بحيرى وقال له يا غلام- أسألك بحق اللات والعزى الا أخبر تنى عما أسألك عنه. وانما قال له بحيرى ذلك لانه سمع قومه يحلفون بهما. فزعموا أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال له- لا تسألنى باللات والعزى شيئا فو الله ابغضت شيئا قط بغضهما- فقال له بحيرى فبالله الا مااخبر حتى عما اسئالك عنه؟ فقال له سلنى عما بدا لك. فجمل يسأله عن أشياء من حاله من نومه وهيئته وأموره. فجعل رسول الله صلى الله عليه وسلم يخبره. فوافق ذلك ما عند بحيرى من صفته. ثم نظر إلى ظهره فرأى خاتم النبوة بين كتفيه موضعه من صفته التى عنده،
অতঃপর সে মজলিস থেকে উঠে গিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোলে করে এনে মজলিসের সকলের সামনে বসিয়ে দিলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে পাদ্রী বুহাইরা গভীর দৃষ্টিতে দেখতে লাগলেন এবং উনার শরীর মুবারক-এ আলামত বা লক্ষণগুলো তালাশ করতে লাগলেন, যা তিনি উনার কিতাবে ইতঃপূর্বে পেয়েছিলেন। খাবারপর্ব শেষ করে সকলে এদিক সেদিক ছড়িয়ে পড়লেন। তখন এই সুযোগে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে পাদ্রী বুহাইরা বললেন, হে সম্মানিত বালক! আমি আপনাকে লাত উজ্জার শপথ দিয়ে জানতে চাচ্ছি, আমি আপনাকে যা জিজ্ঞাসা করবো, তার জবাব দিবেন কি? বুহাইরা লাত উজ্জার নামে এই জন্য ক্বসম খেয়েছিলেন যে, তিনি মক্কার যারা কাফির তাদেরকে এই দুই নামের শপথ করতে অভ্যস্ত বলে শুনেছিলেন। যা হোক জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি আমাকে লাত উজ্জার নামে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি এই দু’টোর মতো অন্য কিছুকে এতো ঘৃণা করি না। তখন পাদ্রী বুহাইরা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি আপনাকে যা যা জিজ্ঞাসা করবো তার জবাব দিবেন কি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনার যা ইচ্ছা হয় জিজ্ঞেস করুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘুম মুবারক, আকার-আকৃতি মুবারক ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে পাদ্রী বুহাইরা আদবের সাথে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক এক করে সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলেন। উনার প্রদত্ত বিবরণ পাদ্রী বুহাইরা-এর পূর্ব থেকেই জানা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলামত বা ছানা-ছিফত সম্পর্কে হুবহু মিলে যায়। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিঠ মুবারকের দিকে পাদ্রী বুহাইরা দৃষ্টিপাত করে পূর্ব থেকে জানা বিবরণ অনুযায়ী উনার দু’কাঁধ মুবারক-এর মধ্যবর্তী স্থানে নুবুওওয়াতী মহর দেখতে পান।
فلما فرغ أقبل على عمه أبى طالب فقال ما هذا الغلام منك؟ قال ابنى قال بحيرى ما هو بابنك وما ينبغى لهذا الغلام أن يكون أبوه حيا، قال فانه ابن أخى. قال فما فعل أبوه؟ قال مات وأمه حبلى به قال صدقت ارجع بابن أخيك إلى بلده واحذر عليه اليهود. فوالله لئن رأوه وعرفوا منه ما عرفت ليبغنه شرا، فانه كائن لابن أخيك هذا شأن عظيم فاسرع به إلى بلاده، فخرج به عمه أبو طالب سريعا حتى أقدمه مكة حين فرغ من نجارته بالشام.
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه- فزعموا فيما روى الناس أن زريروثماما، ودريسما- وهم نفر من أهل الكتاب- قد كانوا رأوا رسول الله صلى الله عليه وسلم مثالما رأى بحيرى فى ذلك السفر الذى كان فيه مع عمه أبى طالب فارادوه فردهم عنه بحيرى. فذكرهم الله ومايجدون فى الكتاب من ذكره وصفته وأنهم اجمعوا لما أرادوا به لم يخلصوا اليه حتى عرفوا ما قال لهم وصدقوه بما قال فتركوه وانصرفوا عنه.
পাদ্রী বুহাইরা এবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা আবূ তা¡লিব উনার দিকে ফিরে বললেন, এ সম্মানিত সন্তান আপনার কী হয়? আবূ ত্বালিব তিনি বললেন, আমার পুত্র সন্তান। বুহাইরা বললেন, না তিনি আপনার পুত্র নন। কারণ এই সন্তান উনার পিতা জীবিত থাকতে পারেন না। এবার আবূ ত্বলিব তিনি বললেন, তিনি আমার ভাতিজা। পাদ্রী বললেন, উনার পিতা কী হয়েছে? আবূ ত্বালিব তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উনার সম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ ছিলেন তখনই উনার সম্মানিত পিতা তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন।
পাদ্রী বললেন, আপনি সত্যি কথাই বলেছেন। আপনি আপনার সম্মানিত ভাতিজা উনাকে নিয়ে দেশে ফিরে যান। আর উনার ব্যাপারে ইহুদীদের থেকে খুবই সতর্ক থাকবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! ইহুদীরা যদি উনাকে দেখতে পায়, তাহলে উনার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। আপনার এই সম্মানিত ভাতিজা উনার শান-মান, মর্যাদা অতি শীঘ্রই প্রকাশ পাবে। আপনি উনাকে নিয়ে অনতিবিলম্বে দেশে ফিরে যান। আবূ ত্বালিব সিরিয়ার বাণিজ্য তাড়াতাড়ি শেষ করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে মক্কা শরীফ-এ ফিরে আসেন।
হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যারীরা, ছামামা ও দারীসমা আহলে কিতাবের এই তিন ব্যক্তিও পাদ্রী বুহাইরা উনার মতো উক্ত ছফরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছিলো এবং উনাকে সনাক্ত করতে পেরেছিলো এবং তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষতি করার চেষ্টা করে। পাদ্রী বুহাইরা তাদেরকে নিবৃত্ত করেন। তিনি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার কথা এবং তাওরাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে যে বর্ণনা রয়েছে সে সবের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ওই সমস্ত ব্যক্তিরা উনার কথা বুঝে ফেলে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সত্য বলে মেনে নেয়। ফলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মেনে নিয়ে সম্মান করে তারা প্রত্যাবর্তন করে।
وقال ابو طالب فى ذلك ابيا تا منها:
فما رجعوا حتى رأوا من محمد +
أحاديث تجلو غم كل فؤاد
وحتى رأوا أحبار كل مدينة +
سجودا له من عصبة وفراد
زبيرا وتما ما وقد كان شاهدا +
دريسا وهمو كلهم بفساد
فقال لهم قولا بحيرا وأيقنوا +
له بعد تكذيب وطول بعاد
كما قال للر هط الذين تهودوا +
وجاهدهم في الله كل جهاد
فقال ولم يترك له النصح رده +
فإن له أرصاد كل مصاد
فإني أخاف الحاسدين وأنه +
لفي الكتب مكتوب بكل مداد
আবূ ত্বালিব এ সম্পর্কে নিম্নোক্ত না’ত শরীফ পাঠ করেন-
* নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে তারা বিষণœ মনের বিষণœতা হওয়ার মতো বিষয়াদি প্রত্যক্ষ করলো।
* তারা দেখতে পেলো প্রত্যেক শহরের আহবার রাহবার উনাকে সিজদা করে যাচ্ছে।
* যুবাইর, তাম্মাম ও দারীসা যখন এসব বিষয় দেখলো তখন তাদেরও ধারণা পাল্টে গেলো। অথচ তারাও কুমতলব নিয়ে এসেছিলো।
* পাদ্রী বুহাইরা তাদেরকে অনেক বুঝানোর পর তারা অনেক তর্ক-বিতর্ক করে পরিশেষে সব মেনে নিলো।
* অনুরূপভাবে তিনি ইহুদীদেরকে বুঝালেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পথে তাদের সাথে জিহাদ করলেন।
* উনার উপদেশে বিভুল হয়নি বরং, উপকারও সিদ্ধ হয়েছে।
* তিনি আরো বললেন, আমি উনার বিরুদ্ধে হিংসুকের ভয় করি। কেননা, উনার নাম মুবারক সমস্ত আসমানী কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ২৮৩ ও ২৮৪ পৃষ্ঠা, খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৪২, ১৪৩, ১৪৪ পৃষ্ঠা, দালায়িলুন নুবুওওয়াত ২য় জিলদ ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ পৃষ্ঠা, বাইহাক্বী শরীফ)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
وأخرج حضرت ابو نعيم رحمة الله عليه، عن حضرت الواقدى رحمة الله عليه، عن شيوخه مثله. وفيه- وجعل ينظر الى الحمرة فى عينيه، ثم قال لقومه- أخبرونى عن هذه الحمرة تأتى وتذهب أو لا تفارقه. قالوا- ما رأيناها فارقته قط. وسأله عن نومه، فقال- تنام عيناى ولا ينام قلبى وفيه بعد قوله- كائن لابن أخيك هذا شأن نجده فى كتبنا وما ورثنا من ابائنا، وقد اخذ علينا مواثيق. قال ابو طالب- من اخذ عليكم المواثيق. قال- الله أخذ علينا نزل به حضرت عيسى ابن مريم عليها السلام، وأخرج ابن سعد مثله بطوله عن حضرت داود بن الحصين رحمة الله عليه، وفيه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان ابن اثنتى عشرة سنة.
অর্থ:- হযরত আবূ নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি স্বীয় শায়েখগণ উনাদের থেকে এমনিভাবে বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনায় এ কথাগুলোও আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চক্ষু মুবারক-এর লালিমা তথা নূর মুবারক দেখে পাদ্রী বুহাইরা জিজ্ঞাসা করলেন, এই লালিমা বা নূর মুবারক সবসময় থাকে, না থাকে না? তখন কাফিলার লোকজন উনারা বললেন, ইহা সবসময়ই থাকে। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নিদ্রা মুবারক সম্পর্কে পাদ্রী বুহাইরা জিজ্ঞাসা করলেন। জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমার চক্ষু মুবারক নিদ্রিত হয়; তবে আমার ক্বলব মুবারক জাগ্রত থাকেন। এ কথা বলার পর নি¤œক্ত বাক্য রয়েছে, পাদ্রী বললেন, আমরা আমাদের কিতাবে এবং বাপ-দাদা উনাদের নিকট থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ইলম-এর ভা-ারে উনার বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা দেখতে পেয়েছি। এমনকি আমাদের কাছ থেকে উনার সম্পর্কে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। আবূ ত্বালিব তিনি প্রশ্ন করলেন, কেনো আপনার নিকট থেকে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে? তখন পাদ্রী বুহাইরা বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং এই অঙ্গীকার সহকারে হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম তিনিও আগমন করেছেন।
হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রেওয়ায়েতটি হযরত দাউদ ইবনে হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তাতে এ কথা উল্লেখ রয়েছে যে, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক ছিলো ১২ বৎসর। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ১৪৪ পৃষ্ঠা) আরো উল্লেখ রয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ তিনি যখন পাদ্রী বুহাইরা উনার দাওয়াতে উপস্থিত হলেন এবং খ্রিস্টানদের ইবাদতখানায় প্রবেশ করলেন তখন সেই ইবাদতখানা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক-এর আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো। এ অবস্থা দেখে পাদ্রী বুহাইরা চিৎকার দিয়ে বললেন, ইনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মহান আল্লাহ পাক উনাকে আরব দেশে সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য প্রেরণ করেছেন।
হাদীছ শরীফ-এ আরো এসেছে, “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গী হিসেবে সিরিয়ার এক বাণিজ্যিক ছফরে ছিলেন। তখন উনার বয়স মুবারক ছিলো ১৮ বছর এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক ছিলো ২০ বৎসর। পথিমধ্যে উনারা এক কুল বৃক্ষের নিকট অবতরণ করেন। তিনি বৃক্ষের ছায়ায় বসে গেলেন এবং হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বুহাইরা নামক জনৈক ব্যক্তি উনার সাথে কথা বলার জন্য চলে গেলেন।
বুহাইরা প্রশ্ন করলেন, বৃক্ষের ছায়ায় কে অবস্থান করছেন? তিনি বললেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বুহাইরা বললেন, আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নিশ্চয়ই তিনি আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কেননা, এই কুল বৃক্ষের ছায়ায় হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার পর অদ্যাবধি কেউ বসেননি। (খছায়িছুল কুবরা)
হযরত ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আছাবা’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, এটি হযরত আবূ ত্বালিব উনার সঙ্গে ছফরের পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বিতীয় ছফর মুবারক।
স্মরণীয় যে, হযরত সুহাইল যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, বুহাইরা ছিলেন একজন ইহুদী আলিম। ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে এবং উপরোক্ত আলোচনা থেকে যা বুঝা গেলো তা হলো, বুহাইরা ছিলেন একজন খ্রিস্টান পাদ্রী। তিনি ছিলেন আব্দুল কায়ীস গোত্রের লোক। উনার আসল নাম ছিলো জারসীস।
এ সম্পর্কে হযরত হাফিয ইরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আল ফিয়াতুস সিয়ার’ গ্রন্থে লিখেন,
وكان يدعى بالا مين ور جل مع عمه بالشام حتى اذ و صل بضرى راى منه بحيرا الراهب ما د ل انه النبى صلى الله عليه و سلم العاقب محمد نبى صلى الله عليه و سلم هذهالامة فرده تخوفا من ثمه من ان يرى بعض اليهود امره و عمره اذ ذلك ثنتا كثره
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আল আমীন বলে সম্বোধন করা হতো। যখন তিনি উনার চাচা উনার সঙ্গে সিরিয়া সফর করেন। যখন তিনি বসরায় পৌঁছলেন তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারক-এর গোড়ালি মুবারক দেখে পাদ্রী বুহাইরা উনাকে চিনতে পারেন। পাদ্রী বুহাইরা তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন আখিরী নবী, আখিরী উম্মতের রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পাদ্রী বুহাইরা তিনি ভয় পেলেন যে, উনার কেউ ক্ষতি করে কি-না, তাই তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মক্কা শরীফ-এ ফিরে যেতে বললেন, যাতে ইহুদীরা উনাকে চিনতে না পারে। তখন উনার বয়স মুবারক ছিলো ১২ বছর মুবারক।” (সীরাতুল মুস্তাফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাহিলিয়াতের সমস্ত প্রকার মূর্খতা, অশালীনতা ও মন্দ থেকে সম্পূর্ণরূপে পুতঃপবিত্র ও মাহফুয ছিলেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের পূর্ব যামানাটি ছিলো খুবই খারাপ, সর্বত্র অশ্লীলতা, বেহায়া, বেপর্দা, খুন-খারাবি, যুলুম-নির্যাতন ও মন্দ কর্মে ভরপুর। সমগ্র আরব দেশ ধর্মহীনতা, নানা প্রকার অত্যাচার ও অনাচারে ভরে উঠেছিলো। পৌত্তলিকতা, জড়পূজা ও অংশীদার বহু দিন থেকে তাদের মাঝে প্রসার লাভ করেছিলো। পবিত্র কা’বা শরীফ-এ ৩৬০টি মূর্তি পূজিত হচ্ছিলো। মানুষ প্রস্তর খ- ও বড় বড় বৃক্ষেরও পূজা করতো। মন্ত্র-তন্ত্র, যাদু-টোনার সাহায্যে উপরিদৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সর্বদাই ব্যস্ত থাকতো। নাঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ সর্বত্রই কুসংস্কার, অন্ধত্ব, মদ পান, জুয়া খেলায় তারা মেতে উঠেছিলো। লুণ্ঠন, নরহত্যা তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছিলো। এছাড়াও হাজারো ধর্মীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে চরম জিহালতী ছিলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার যিনি হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যমীনে প্রেরণ করে সেই জাহিলিয়াতের সর্বপ্রকার অশ্লীলতা মন্দ ও অন্ধকার দূর করে দেন। আর সেই জাহিলিয়াতের অন্ধকার, বেহায়াপনা ও মন্দ কর্ম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারেনি। কেননা তিনি ছিলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে মাহফূয তথা হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনাকে জাহিলিয়াতের অজ্ঞতা ও মূর্খতা স্পর্শ করেছিলো বিশ্বাস করা কাট্টা কুফরীর শামিল।
জাহিলিয়াত যুগে দেখা যেতো কাফির মুশরিকরা তথা বালকেরা তাদের ইযার (চাদর) বা লুঙ্গি খুলে রেখে তাওয়াফ করতো বা চাদর অথবা লুঙ্গি খুলে মাথায় বেঁধে নিতো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন এর ব্যতিক্রম। ইনশা আল্লাহ চলবে ,
0 Comments:
Post a Comment