প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের
নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী,
শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক
এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র-
“মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে
এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” এমন সব লিখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” হিজাব বা পর্দার শরয়ী আহকাম ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ
বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা, প্রথমতঃ কিছু
লোক “কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্ম” অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে
বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন
কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মূখ বা চেহারা,
হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি
মিন যালিক)
অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ
রূপেই কুরআন শরীফ,
সুন্নাহ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ
কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর
বক্তব্য পেশ করেছে।
মূলতঃ মহিলারা সমস্ত শরীর ঢেকে
বা পর্দা করে বের হবে এটাই শরীয়তের নির্দেশ। অতএব তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই
পর্দা তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। দ্বিতীয়তঃ কতিপয়
নামধারী পীর, আমীর, শাইখুল হাদীস,
মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে
দেখা-সাক্ষাৎ করে,
ইফতার করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে
জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী
উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে।
যেমন, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে
‘ছূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা
লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে
হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।
বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত পীর, আমীর, শাইখুল হাদীস, মুফতী, মুফাস্সিরে
কুরআন ও তার গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে
এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে
সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীস শরীফে বর্ণিত
দাজ্জালের চেলা।
যেমন হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من
الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونك ولايفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী
দাজ্জাল বের হবে,
তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা
কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং
তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায়
ফেলতে পারবেনা।”
(মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী)
স্মর্তব্য যে, ঐসকল দাজ্জালের চেলা নামক পীর, আমীর, শাইখুল হাদীস, মুফতী, মুফাস্সিরে
কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক, বিভ্রান্তিতে
পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা
বেপর্দা হয় কি করে?
অতএব, উল্লিখিত
উলামায়ে ‘ছূ’দের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে
বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
অতএব,
সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব
তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে
বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত
ও পর্দার ভিতর আসতে পারে,
তাই “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ
ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়া হলো। আল্লাহ্
পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজ্মা’ ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন
দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম
ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্ব (৫) রমযানের রোযা।”
অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল
কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন। কুরআন
শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও
ফযীলত বর্ণিত হয়েছে,
পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও
বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া ও লুগাতের
কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-
(পূর্ব প্রকাশিতের
পর)
যে সকল আয়াত শরীফ সমূহ দ্বারা
হিজাব বা পর্দা ফরয প্রমাণিত হয়েছে
তার বর্ণনা ও শানে নুযূল
মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফের
অসংখ্য বা একাধিক স্থানে হিজাব বা পর্দা করার ব্যাপারে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে “হিজাব বা পর্দা”
ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে অসংখ্য বা একাধিক আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।
তবে সকল উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন যে, হিজাব বা
পর্দা সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে আয়াত শরীফ নাযিল হয় তাহলো সূরা আহযাব-এর ৫৩ নম্বর আয়াত
শরীফ। যা উম্মুল মু’মিনীন হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ওলীমাকে কেন্দ্র করে
নাযিল হয়েছিল।
যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীরে উল্লেখ
আছে যে,
اتفق العلماء قاطبة على ان
الامر بالحجاب اول مانزل فى وليمته علىه الصلوة والسلام بأم المؤمنين زينب بنت جحش
رضى الله تعالى عنها. (احكام القران للشفيع والعهانوى ج3 ص403)
অর্থঃ- “সকল উলামা-ই-কিরাম
রহমতুল্লাহি আলাইহিম এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, হিজাব বা
পর্দার নির্দেশ (ফরয) সম্পর্কিত আয়াত সর্ব প্রথম নাযিল হয়েছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বিবাহের
ওলীমাকে কেন্দ্র করে।(আহকামুল কুরআন লিশ্ শাফী ওয়াত থানুবী ৩য় খন্ড, ৪০৩পৃষ্ঠা)
অতঃপর পর্যায়ক্রমে হিজাব বা
পর্দা সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াত সমূহ নাযিল হয়।
নিম্নে ‘হিজাব বা
পর্দা’ সম্পর্কে নাযিলকৃত আয়াত শরীফ সমূহের ধারাবাহিক বর্ণনা ও শানে নুযূল উল্লেখ করা
হলো-
প্রথম নাযিলকৃত আয়াত শরীফ ও
তার শানে নুযূল
আয়াতুল হিজাব বা পর্দার আয়াত যা সর্ব প্রথম নাযিল
হয়েছিল। তা হচ্ছে সূরা আহযাব-এর ৫৩ নম্বর আয়াত শরীফ। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন,
[১৮১]
يايها الذين امنوا لاتدخلوا
بيوت النبى الا ان يؤذن لكم الى طعام غير نظرين انه ولكن اذا دعيتم فادخلوا فاذا
طعمتم فانتشروا ولا مستأنسين لحديث ان ذلكم كان يؤذى النبى فيستحى منكم والله
لايستحى من الحق واذا سالتموهن متاعا فسألوهن من وراء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم
وقلوبهن وما كان لكم ان تؤذوا رسول الله ولا ان تنكحوا ازواجه من بعده ابدا ان
ذلكم كان عند الله عظيما. (سورة الاحزاب 53)
অর্থঃ- “হে মু’মিনগণ! তোমাদেরকে
অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার রন্ধনের অপেক্ষা না করে হযরত নবী করীম
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ
করো, অতঃপর খাওয়া শেষ করে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথা-বার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয়ই
এটা নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে
(কিছু বলতে) সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ্ পাক সত্যকথা বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা
তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার
আড়াল থেকে চাবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার
কারণ। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর
স্ত্রী (অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন) রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য জায়িয নয়। আল্লাহ্
পাক-এর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।” (সূরা আহযাব/৫৩)
উক্ত আয়াত শরীফের ‘শানে নুযূল’ সম্পর্কে
তাফসীর ও হাদীস শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ সমূহে উল্লেখ আছে যে, [১৮২-২২১]
فيها ثمان عشرة مسألة المسألة
الاولى- فى سبب نزولها، وفى ذلك ستة اقوال الاول- روى عن انس فى الصحيح وغيره كتاب
البخارى، ومسلم، والترمذى-
...... قال انس بن مالك تزوج
رسول الله صلى الله عليه وسلم، فدخل باهله، فصنعت ام سليم امى حيسا- فجعلته فى تور
وقالت لى يا انس اذهب الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقل بعثت به اليك امى وهى
تقرئك السلام، وتقول لك ان هذا لك منا قليل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال
فذهبت به الى رسول الله صلى الله عليه وسلم وقلت ان امى تقرئك السلام وتقول لك ان
هذا لك منا قليل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال ضعه ثم قال اذهب فادع لى
فلانا وفلانا، ومن لقيت- وسمى رجالا- فدعوت من سمى ومن لقيت. قال قلت لانس عددكم
كانوا؟ قال زهاء ثلاث مائة. فقال قال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم يا انس هات
التور قال فدخلوا حتى امتلأت الصفة والحجرة، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم
ليتحلق عشرة عشرة ليأكل كل انسان مما يليه. قال فاكلوا حتى شبعوا. قال فخرجت طائفة
ودخلت طائفة، حتى اكلوا كلهم. قال قال لى يا انس ارفع، قال (فرفعت) فما ادرى حين
وضعت كان اكثر ام حين رفعت. قال وجلس منهم طوائف يتحدثون فى بيت رسول الله صلى
الله عليه وسلم، ورسول الله صلى الله عليه وسلم جالس وزجته مولية وجهها الى الحائط
فثقلوا على رسول الله صلى الله عيه وسلم فخرج رسول الله صلى الله عليه وسلم على
نسائه. ثم رجع فلما رأوا رسول الله صلى الله عليه وسلم قد رجع ظنوا انهم قد ثقلوا
عليه، فابتدروا الباب وخرجوا كلهم. وجاء رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى ارخى
الستر. ودخل وانا جالس فى الحجرة، فلم يلبث الا يسيرا حتى خرج على، وانزل الله هذه
الاية. فخرج رسول الله صلى الله عليه وسلم فقراها على الناس. (يايها الذين امنوا
لا تدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم الى طعام غير ناظرين انه .........) الى
اخرالاية.
قال انس رضى الله عنه انا احدث
الناس عهدا بهذه الايات. وحجب نساء النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “অত্র আয়াতের
মধ্যে ১৮টি মাসয়ালা আছে,
প্রথম মাসয়ালা এ আয়াত শরীফের শানে নুযূল সম্পর্কে। আর এর শানে
নুযূল সম্পর্কে ৬টি মত বা বর্ণনা উল্লেখ রয়েছে।
প্রথম মত বা বর্ণনা
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। ছহীহ্ বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফে
রয়েছে, ............. হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হযরত যয়নব
বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে) বিবাহ করেন এবং তাঁর কাছে গেলেন। হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমার মা উম্মু সুলাইম হাইস (খেজুর, ঘি ইত্যাদী
দিয়ে তৈরী এক প্রকার খাদ্য) তৈরী করেছিলেন এবং তা একখানি ছোট পাত্রে রেখে আমাকে বললেন, হে আনাস!
এটা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাও এবং তাঁকে বল, এটা আমার
মা আপনার খিদমতে পাঠিয়েছেন এবং আপনাকে সালাম পৌঁছিয়েছেন। (আরো বলো যে,) তিনি বলেছেন, ইয়া রসূলাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ সামান্য (হাইস) আপনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে দেয়া
হল। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হাইস্ নিয়ে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট গেলাম এবং বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! আমার মা আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং বলেছেন এ সামান্য হাইস আমাদের পক্ষ
থেকে আপনাকে দেয়া হল। তিনি বললেন, এটা রাখ। তারপর বললেন, তুমি যাও, অমুক অমুককে
দাওয়াত দাও এবং সেসব লোককেও যাদের সঙ্গে তোমার দেখা হবে। এ বলে তিনি লোকদের নাম বললেন।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি তখন বর্ণিত লোকদের দাওয়াত দিলাম
এবং তাঁদেরও যাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। হযরত সাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমন্ত্রিত লোকদের সংখ্যা কত ছিল? তিনি বললেন, প্রায় তিনশত।
হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে আনাস!
হাইস-এর পাত্রটি নিয়ে এসো। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, দাওয়াত প্রাপ্ত
লোকজন এসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে ও তাঁর চতুর্পার্শ্বে
ভীড় করলো। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা দশ
দশজন করে একত্রিত হয়ে প্রত্যেকেই পাত্র থেকে নিজের সামনের স্থান থেকে খাদ্য গ্রহণ কর।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সকলেই খেয়ে তৃপ্ত হলেন। তিনি বলেন, একদল গেল
আর একদল প্রবেশ করল। এভাবে সকলেই খাওয়ার কাজ সেরে নিল। তারপর তিনি আমাকে বললেন, হে আনাস, হাইসের পাত্র
উঠাও। তিনি বলেন,
এরপর আমি পাত্রটি তুলে নিলাম। পাত্রটি রাখার সময় এতে খাদ্য বেশী
ছিল, নাকি উঠাবার সময়,
তা আমি বুঝতে পারিনি। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তাঁদের কিছু
লোক রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে বসে কথাবার্তা বলতে লাগলো। রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে বসা ছিলেন এবং উম্মুল মু’মিনীন (হযরত
যয়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) দেয়াল মুখী হয়ে পিছনে ফিরে রইলেন। তাদের উপস্থিতি
তাঁর কাছে কষ্টকর মনে হলো। তারপর তিনি অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুন্নাগণের কাছে বেরিয়ে গেলেন এবং কিছুক্ষণপর ফিরে এলেন। তারা যখন দেখল যে, রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এসেছেন, তারা বুঝতে পারল যে, তাদের উপস্থিতি
তার জন্য কষ্টকর হয়েছে। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তখন তারা
তাড়াতাড়ি দরজার দিকে এগিয়ে গেল এবং সবাই বেরিয়ে গেল। তখন রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এলেন এবং পর্দা টেনে দিলেন এবং পর্দার ভিতরে প্রবেশ করলেন। আমি ঘরে বসে
রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি আমার কাছে ফিরে এলেন। তখন এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়। রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হয়ে আয়াত শরীফখানা লোকদের কাছে পাঠ করলেন, “হে মু’মিনগণ! তোমাদের
অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবী করীম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গৃহে প্রবেশ করনা” হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বলেন, এ আয়াত শরীফ নাযিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আমি সবচেয়ে বেশী জানি। আর তখন থেকেই হযরত
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুন্নাগণ পর্দা করা শুরু করলেন।”
الثانى : روى مجاهد عن عائشة
قالت كنت اكل مع رسول الله صلى الله عليه وسلم حيسا، فمر عمر فدعاه فاكل فاصاب
اصبعه اصبعى. فقال حينئذ لو اطاع فيكن ماراتكن عين فنزل الحجاب.
দ্বিতীয় মত বা বর্ণনা
হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি
হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা) বলেন,
একদা আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সঙ্গে হাইস্ (এক প্রকার খাদ্য) খাচ্ছিলাম। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু সেদিক
দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ডাকলেন। তিনিও খেলেন। হঠাৎ
তাঁর (হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর) আঙ্গুল আমার আঙ্গুলে লেগে যায়। সে সময়
তিনি বললেন, আপনাদের থেকে চক্ষু যা দেখে, তা থেকে যদি চক্ষু অনুগত হতো অর্থাৎ চক্ষু যদি আপনাদের না দেখতো, কতইনা ভাল
হতো। তখনই পর্দার আয়াত নাযিল হয়।”
الثالث : ماروى عروة عن عائشة
ان ازواج النبى صلى الله عليه وسلم كن يخرجن بالليل الى المناصع وهو صعيد افيح،
يتبرزن فيه، فكان عمر يقول للنبى صلى الله عليه وسلم احجب نسائك فلم يكن يفعل
فخرجت سودة ليلة من الليالى وكانت امرأة طويلة فناداها عمر قد عرفناك ياسودة حرصا
على ان ينزل الحجاب. قالت عائشة فانزل الحجاب.
তৃতীয় মত বা বর্ণনা
হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহা থেকে হযরত উরওয়াহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণ রাতের বেলায় হাজত পূরণের জন্য
বাইরে যেতেন। আর হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রায়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে বলতেন,
আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণ কে
পর্দায় রাখলে ভাল হতো। কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করেনি
(যেহেতু তিনি ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত)। একরাতে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন হযরত সাওদা বিনতে যাময়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা হাজত পূরণে বের হলেন। তিনি ছিলেন লম্বা আকৃতির মহিলা। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তাঁকে ডেকে বললেন, হে হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আমি কিন্তু আপনাকে
চিনে ফেলেছি। এটা এ উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, যাতে পর্দার বিধান নাযিল হয়। হযরত
আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, অতঃপর পর্দার আয়াত নাযিল হয়।”
الرابع : روى عن ابن مسعود امر
نساء النبى صلى الله عليه وسلم بالحجاب، فقالت زينب بنت جحش يابن الخطاب، انك تغار
علينا والوحى ينزل علينا، فانزل الله تعالى. (واذا سألثموهن متاعا فسالوهن من وراء
حجاب)
চতুর্থ মত বা বর্ণনা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বর্ণনা করেন। (হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর
পক্ষ থেকে) হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল
মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ পর্দার ব্যাপারে বললেন। তখন হযরত যয়নব বিনতে
জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু! নিশ্চয়ই আপনি আমাদেরকে পর্দায় থাকতে বলছেন, অথচ আমাদের
গৃহেই ওহী নাযিল হয়। তখন আল্লাহ্ তায়ালা আয়াত শরীফ নাযিল করেন, “যখন তোমরা
উম্মুল্ মু’মিনীনগণের কাছে কিছু চাবে, তখন তা পর্দার আড়াল থেকে চেয়ো।”
الخامس : روى قتادة ان هذا كان
فى بيت ام سلمة، أكلوا واطالوا الحديث، فجعل النبى صلى الله عليه وسلم يدخل ويخرج
ويستحى منهم، والله لايستحى من الحق.
পঞ্চম মত বা বর্ণনা
হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি
বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই পর্দার আয়াত হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ঘরে নাযিল
হয়েছিল। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সেখানে খাওয়া-দাওয়া করলেন
এবং আলোচনা দীর্ঘ করলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন
এবং বের হয়ে গেলেন। তিনি তাঁদেরকে কিছু বলতে লজ্জা বোধ করলেন। “কিন্তু আল্লাহ্
পাক সত্য কথা বলতে সংকোচ বোধ করেননা।”
السادس : روى انس ان عمر قال
قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ان نسائك يدخل عليهن البر والفاجر فلوا
امرتهن ان يحتجبن فنزلت اية الحجاب.
ষষ্ট মত বা বর্ণনা
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুন্নাগণের নিকট ভাল-ও মন্দ সব ধরণের লোক আসে। তাই আপনি যদি তাঁদেরকে পর্দায়
থাকার নির্দেশ দিতেন। (তাহলে উত্তম হত)। অতঃপর পর্দার বিধান সম্পর্কিত আয়াত শরীফ নাযিল
হয়।” (আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী ৩য় জিঃ ১৫৭৩, ১৫৭৪, ১৫৭৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আহকামুল্
কুরআন লিল্ জাছ্ছাছ,
আহকামুল্ কুরআন লিল কুরতুবী, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে রুহুল
মায়ানী, তাফসীরে রুহুল বয়ান,
তাফসীরে সমরকন্দী, তাফসীরুল্ জালালাঈন, বাইযাবী শরীফ, হাশিয়াতুল্
জামাল আলাল জালালাঈন,
হাশিয়াতুছ্ ছাবী আলাল বাইযাবী, হাশিয়ায়ে
শাইখ যাদাহ্ আলাল্ বাইযাবী,
হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল্ বাইযাবী, তাফসীরুল্
কাশ্শাফ, তাফসীরে যাদুল মাসীর ফী ইলমিত্ তাফসীর ৬ষ্ঠ জিঃ ২১২ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন
লিশ্ শফী ওয়াত্ থানূবী ৩য় জিঃ ৩৯৬, ৩৯৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে কামালাঈন, তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে মাদারিকুত্
তানযিল, তাফসীরে ইবনে কাছীর,
তাফসীরে ফতহুল ক্বদীর, তাফসীরে হক্বানী, তাফসীরে মাওয়ারাদী, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল কারী, ইরশাদুস্
সারী, শরহুল্ কিরমানী,
তাইসীরুল্ বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী
লিল্ মুসলিম, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উসমানী, ফতহুল মুলহিম লিত্ তক্বী উসমানী শরহুল্
উবাই ওয়াস্ সিনূসী,
আল্ মুফহিম, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্
আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী,
উরফুশ্ শাযী, আল্ মিছবাহ)
দ্বিতীয় নাযিলকৃত আয়াত শরীফ ও
তার শানে নুযূল
[২২২]
ان تبدوا شيئا او تخفوه فان الله
كان بكل شيئ عليما. لاجناح علينهن فى ابائهن ولا ابنائهن ولا اخوانهن ولا ابناء
اخوانهن ولا ابناء اخوا تهن ولانسائهن ولا ما ملكت ايمانهن والتقين الله ان الله
كان كل شيئ شهيدا. (سورة الاحزاب 55-54)
অর্থঃ- “তোমরা খোলাখুলি
কিছু বল অথবা গোপন রাখ,
মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ উনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম)গণের জন্যে
উনাদের পিতা, পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, সহধমির্নী নারী এবং অধিকারভূক্ত দাসদাসীগণের সামনে যাওয়ার ব্যাপারে গুণাহ্ নেই।
উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আপনারা মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে ভয় করুন। নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ্ পাক সর্ববিষয় প্রত্যক্ষ করেন।” (সুরা আহযাব/৫৪, ৫৫)
উক্ত আয়াত শরীফের শানে নুযূল
সম্পর্কে তাফসীরে উল্লেখ আছে,
[২২৩-২২৪]
روى انه لما نزلت اية الحجاب
قال الاباء والابناء والاقارب او نحن يا رسول الله صلى الله عليه وسلم نكلمهن ايضا
من وراء حجاب فنزلت. (روح المعانى ج12 ص 74، احكام القران لابن العربى ج3 ص1581)
অর্থঃ- “বর্ণিত আছে, যখন পর্দার
আয়াত নাযিল হলো তখন পিতা,
পুত্র ও নিকটাত্মীয়গণ বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! আমরা কি পর্দার আড়াল থেকে তাঁদের (মহিলাগণের) সঙ্গে কথা বলতে পারবো? অতঃপর অত্র
আয়াত শরীফ নাযিল হয়। (রূহুল মায়ানী ১২ জিঃ ৭৪ পৃষ্ঠা, আহকামূল্
কুরআন লিইবনিল আরাবী ৩য় জিলঃ ১৫৮১ পৃষ্ঠা)
তৃতীয় নাযিলকৃত আয়াত শরীফ ও
তার শানে নুযূল
[২২৫]
يايها النبى قل لازواجك وبنتك
ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن ذلك ادنى ان يعرفن فلايؤذين وكان الله
غفورا رحيما. (سورة الاحزاب 59)
অর্থঃ- “হে নবী করীম
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণকে
ও কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে
চিনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব/৫৯)
উক্ত আয়াত শরীফের শানে নুযূল
সম্পর্কে তাফসীরে উল্লেখ আছে,
[২২৬-২২৯]
سبب نزولها أن الفساق كانوا
يؤذون النساء اذا خرجن بالليل، فاذا رأوا المرأة عليها قناع تركوها وقالوا هذه
حرة، واذا رأوها بغير قناع قالوا أمة، فاذوها فنزلت هذه الاية. (زاد المسير فى علم
التفسير ج6 ص216، الدر المنثور. تفسير ايات الامكام للصابونى ج2 ص377، التفسير الكبير للفخر الرازى.
অর্থঃ- “অত্র আয়াত
শরীফের শানে নুযূল হচ্ছে,
মহিলাগণ রাত্রে প্রয়োজনে বের হলে ফাসিকরা তাঁদের বিভিন্ন ভাবে
কষ্ট দিত। যখন তারা কোন পর্দাবৃত মহিলাকে দেখতো তাকে ছেড়ে দিত এবং বলতো, এ মহিলাটি
স্বাধীনা। আর যখন কাউকে অনাবৃত দেখতো, তখন বলতো, এ মহিলাটি
দাসী, সুতরাং তাঁকে কষ্ট দাও। আর তখনই এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়। (যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর
৬ষ্ঠ জিঃ ২১৬ পৃষ্ঠা,
আদ্ দুরুল মানছুর, তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী ২য়
জিঃ ৩৭৭ পৃষ্ঠা, আত্ তাফসীরুল কবীর লিল ফখরির রাযী)
চতুর্থ নাযিলকৃত আয়াত শরীফ ও
তার শানে নুযূল
[২৩০]
ينساء النبى لستن كاحد من النساء
ان اتقيتن فلاتخضعن بالقول فيطمع الذى فى قلبه مرض وقلن قولا معروفا. وقرن فى
بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى واقمن الصلوة واتين الزكوة واطعن الله
ورسوله انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل اليت ويطهركم تطهيرا. (سورة الاحزاب 32-33)
অর্থঃ- “হে নবী করীম
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণ!
আপনারা অন্য নারীদের মত নন। যদি আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন, তবে পুরুষদের
সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে ব্যক্তি
কুবাসনা করবে, আপনারা শক্ত করে কথা-বার্তা বলবেন। আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন। জাহিলিয়াত
যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেন না। নামায কায়িম করবেন, যাকাত প্রদান
করবেন এবং আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য করবেন।
হে আহ্লে বাইতগণ! আল্লাহ্ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে
পূত-পবিত্র রাখতে।”
(সূরা আহযাব ৩২, ৩৩)
উক্ত আয়াত শরীফের শানে নুযূল
সম্পর্কে তাফসীরে উল্লেখ আছে,
[২৩১-২৩৬]
روى عن عمربن ابى سلمة انه قال
لما نزلت هذه الاية على النبى صلى الله عليه وسلم انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس
اهل البيت ويطهركم تطهيرا فى بيت ام سلمة دعا النبى صلى الله عليه وسلم فاطمة
وحسنا وحسينا وجعل عليا خلف ظهره، وجللهم بكساء. ثم قال اللهم ان هؤلاء اهل بيتى
فاذهب عنهم الرجس وطهرهم تطهيرا، قال ام سلمة وانا معهم يا نبى الله. قال انت على
مكانك وانت على خير. (احكام القران لابن العربى ج 3 ص 1538، تفسير ابن كثير، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى،
عارضة الاحوذى، عرف الشاذى)
অর্থঃ- “হযরত উমর
ইবনে আবূ সালামাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর এ আয়াত শরীফ ...
انما يريد الله ليذهب عنكم
الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا.
অর্থঃ- “হে আহ্লে
বাইতগণ! আল্লাহ্ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে
পূত-পবিত্র রাখতে।”
নাযিল হয়, তখন তিনি
হযরত উম্মু সালামাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ঘরে অবস্থান করছিলেন। নবী করীম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত হাসান, হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমাকে ডাকলেন। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর পিছনে ছিলেন। তিনি
তাঁদেরকে একটি চাদরের মধ্যে পেঁচিয়ে নিলেন। অতঃপর বললেন, আয় আল্লাহ্
পাক! নিশ্চয়ই এরা আমার “আহলে বাইত।” তাঁদের থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূর করুন এবং তাঁদেরকে পূর্ণভাবে পূত-পবিত্র রাখুন।
হযরত উম্মু সালামাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, আমিও তাদের
অন্তর্ভুক্ত হে নবীউল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, তুমিও তাঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এবং
তোমার উপরও মঙ্গল কল্যাণ। (আহকামুল্ কুরআন লিইবনিল আরাবী ৩য় জিঃ ১৫৩৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনু
কাছীর, তিরমিযী শরীফ,
তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী)
[২৩৭-২৪২]
عن انس بن مالك رضى الله عنه
قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يمر بباب فاطمة رضى الله عنها ستة اشهر
اذا خرج الى صلاة الفجر يقول "الصلاة يا اهل البيت انما يريد الله ليذهب عنكم
الرجس اهل البيت ويطركم تطهيرا. (تفسير ابن كثير ج3
ص769 ، احكام القران لابن العربى ج 3 ص 1538، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى،
عرف الشاذى)
অর্থঃ- “হযরত আনাস
ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছয় মাস পর্যন্ত হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা-এর ঘরের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন, যখন তিনি ফজর নামাযের জন্য বের হতেন, তখন বলতেনঃ
الصلاة আছ্ ছলাহ্’ হে আহ্লে বাইত।
انما يريد الله ليذهب عنكم
الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا.
অর্থঃ- “হে আহ্লে
বাইতগণ! আল্লাহ্ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে
পূত-পবিত্র রাখতে।”
(তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৭৬৯ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন
লিইবনিল আরাবী ৩য় জিঃ ১৫৩৮ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল
আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী,
উরফুশ্ শাযী)
পঞ্চম নাযিলকৃত আয়াত শরীফ ও
তার শানে নুযূল
[২৪৩]
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم
ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبيرم بما يصنعون. (سورة النور- 30)
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’মিনগণকে বলুন, তারা যেন
তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা
আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ্ পাক তা অবহিত রয়েছেন।” (সূরা নূর/৩০, উক্ত আয়াত
শরীফের “শানে নুযূল” সম্পর্কে তাফসীরে উল্লেখ আছে, [২৪৪-২৪৫]
اخرج ابن مردوية عن على بن ابى طالب رضى الله
عنه قال : مر رجل على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم فى طريق من طرقات المدينة،
فنظر الى امرأة ونظرت اليه، فوسوس لهما الشيطان انه لم ينظر احدهما الى الاخر الا
اعجابا به، فبينما الرجال يمشى الى جانب حائط ينظر اليها اذ استقبله الحائط (صدم
به) فشق انفه، فقال والله لا اغسل الدم حتى اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم
فاعلمه امرى؟ فاتاه فقص عليه قصته، فقال النبى صلى الله عليه وسلم. (هذا عقوبة
ذنبك) وانزل الله: قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ..... الاية. (تفسير ايات الاحكام
للصابونى ج2 ص148. الدر المنثور للسيوطى ج5 ص40)
অর্থঃ- “হযরত ইবনু
মারদুবিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলী ইবনে আবী ত্বলিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জামানায়
এক ব্যক্তি মদীনা শরীফের পথ সমূহের কোন এক পথে চলছিল। সে এক মহিলার দিকে দৃষ্টি দিল
এবং মহিলাও তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সুতরাং শয়তান তাদের দু’জনকে ওয়াস্ওয়াসা
দিল যার ফলে তারা আশ্চর্যান্বিত হলো এই ভেবে যে, তাদের দু’জনের কেউ
অন্য কোন লোককে দেখছেনা। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি দেয়ালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে
(মহিলাকে) দেখলো,
যখন দেয়ালকে সম্মুখে রাখলো। (এতে সে কষ্ট, লজ্জা পেল)
তাই তার নাক সে ফেঁড়ে দিল অতঃপর সে ব্যক্তি বললঃ আল্লাহ্ পাক-এর শপথ! আমি রক্ত ধৌত করব না যতক্ষণ পর্যন্ত
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না আসবেন, এমনকি তাঁকে আমার ব্যাপারটি জানাবো।
অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলেন। লোকটি তাঁকে গটনাটি জানালো।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ (এটা তোমার গুণাহের শাস্তি।) এ পরিপ্রেক্ষিতে
আল্লাহ্ পাক উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করেন, “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) মু’মিন পুরুষগণকে বলুন,
তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে ...........।” (তাফসীরে আয়াতুল
আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৪৮ পৃষ্ঠা, আদ্ দুররুল্ মানছূর লিস্ সুয়ূত্বী
৫ম জিঃ ৪০ পৃষ্ঠা)
ষষ্ঠ নাযিলকৃত আয়াত শরীফ ও
তার শানে নুযূল
[২৪৬]
وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن
ولا يبدين زينتهن الا ما ظهر منها وليضرين بخمرهن على جيوبهن اواباء بعولتهن او
ابنائهن او ابناء بعولتهن او الخوانهن اوبنى اخوانهن او بنى اخواتهن اونسائهن اوما
ملكت ايمانهن اوالتبعين غير اولى الاربة من الرجال او الطفل الذين لم يظهروا على
عورت النساء ولا يضربن بارجلهن ليعلم ما يخفين من زينتهن وتوبوا الى الله جميعا
ايه المؤمنون لعلكم تفلحون. (سورة النور 31)
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈমানদার নারীগণকে বলুন, তারা যেন
তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য
প্রদর্শন না করে;
তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত এবং
তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের উপর ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, সহধর্মিনী
স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত বাদী আর পুরুষদের মধ্যে যারা অবুঝ আর বালকদের মধ্যে ঐ সমস্ত বালক যাদের
কাছে মেয়েদের পর্দার বিষয়টা এখনও স্পষ্ট হয় নাই তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য
প্রকাশ না করে। তারা যেন এমনভাবে পদচারণা না করে যাতে তাদের চুপানো সৌন্দর্য্য প্রকাশ
হয়ে পড়ে। মু’মিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহ্ পাক-এর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা নূর/
৩১)
উক্ত আয়াত শরীফের “শানে নুযূল” সম্পর্কে
তাফসীরে উল্লেখ আছে
[২৪৭-২৪৯]
وكان سبب نزول هذه الاية ما ذكره مقاتل بن
حيان قال بلغنا. والله اعلم - أن جابر بن عبد الله الانصارى حدث أن اسماء بنت مرثد
كانت فى محل لها فى بنى حارثة فجعل النساء يدخلن عليها غير متزرات فيبدو ما فى ارجلهن
من الخلاخل وتبدو صدورهن وذوائبهن فقالت اسماء ما اقبح هذا فانزل الله تعالى (وقل
للمؤمنت يغضضن من اصارهن) الاية، (تفسير ابن كثير ج 3
ص 453، تفسير ايات الاحكام للصابونى ج2 ص 148، الدر المنثور ج 5
ص104
)
অর্থঃ- “অত্র আয়াতের
শানে নুযূল হচ্ছে,
যা হযরত মুক্বাতিল ইবনে হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত
আছে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে পৌঁছেছে। আল্লাহ্ পাক অধিক জ্ঞাত। নিশ্চয়ই হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ
আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন। হযরত আসমা বিনতে মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহা তাঁর বাসস্থান বনু হারিছার মহল্লায় ছিলেন, এমতাবস্থায় কয়েকজন মহিলা তাঁর কাছে
আসলো। তারা ইযার পরিধান করা ছিল না। ফলে তাদের পায়ের গহনা দেখা যাচ্ছিল, তাদের বুকও
খোলা ছিল এবং চুলও খোলা ছিল। হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, কতই না নিকৃষ্ট
এ আকৃতি। তখন আল্লাহ্ তায়ালা এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন। وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ....
অর্থঃ- “(হে হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি মু’মিনা নারীগণকে বলে দিন, তারা যেন
তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে ...।” (তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আয়াতুল
আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৪৮ পৃষ্ঠা, আদ্ দুররুল্ মানছুর ৫ম জিঃ ১০৪ পৃষ্ঠা)
সপ্তম নাযিলকৃত আয়াত শরীফ ও
তার শানে নুযূল
[২৫০]
والقواد من النساء التى لايرجون نكاحا فليس
عليهن جناح ان يضعن ثيابهن غير متبرجت بزينة وان يستعففن خيرلهن والله سميع عليم.
ليس على الاعمى حرج ولا على الا عرج حرج ولا على المريص .... ولا على انفسكم ان
تاكلوا من بين.... او بيوت ابائكم اوبيوت امهاتكم اوبيود ...... وانكم او بيوت
اخواتكم او بيوت اعمامكم او بيوت عمتكم اوبيوت اخوالكم اوبيوت خلتكم او ما ملكتم
مفاتحه اوصديقكم ليس عليكم جناح ان تاكلوا جميعا او اشتاتا فاذا دخلتم بيوتا
فسلموا على النفسكم تحية من عند الله مبركة طيبة كذلك يبين الله لكم الايت لعلكم
تعقلون. (سورة النور 60-61)
অর্থঃ- “বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের
আশা রাখেনা, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে তাদের অতিরিক্ত বস্ত্র আলগা করে রাখে
তাদের জন্য দোষ নেই,
তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। মহান আল্লাহ পাক সর্ব শ্রোতা, সর্বজ্ঞ। অন্ধের জন্যে দোষ নেই, খঞ্জের জন্যে
দোষ নেই, রোগীর জন্যে দোষ নেই এবং তোমাদের নিজেদের জন্যেও দোষ নেই যে, তোমরা আহার
করবে তোমাদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতাগণের গৃহে অথবা তোমাদের মাতাগণের গৃহে অথবা তোমাদের
ভাইগণের গৃহে অথবা তোমার বোনদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতৃব্যদের গৃহে অথবা তোমাদের ফুফুদের
গৃহে অথবা তোমাদের মামাদের গৃহে অথবা তোমাদের খালাদের গৃহে অথবা সে গৃহে যার চাবি আছে
তোমার হাতে অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে। তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথকভাবে আহার কর, তাতে তোমাদের
কোন দোষ নেই। অতঃপর যখনই তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখনই তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম
দিবে। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে মহান আল্লাহ
পাক তিনি তোমাদের জন্যে পবিত্র আয়াত বা নিদর্শন ও আদেশ-নির্দেশসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা
করেন। যাতে তোমরা বুঝে নাও।” (সরা নূর/ ৬০, ৬১)
উক্ত আয়াত শরীফের “শানে নুযূল” সম্পর্কে
তাফসীরে উল্লেখ আছে,
[২৫১-২৫৪]
اولا- عن ابن عباس رضى الله عنهما لم نزل
قوله تعالى "ولا تاكلوا اموالكم بينكم بالباطل" تحرج المسلمون عن مواكلة
المرضى، والزمنى، والعمى والعرج وقالوا الطعام افضل الاموال، وقد نهى الله تعالى
عن اكل المال بالباطل، والاعمى لايبصر موضع الطعام الطيب، والمريض لايستوفى الطعام
بسبب مرضه، والاعرج لايستطيع المزاحمة على الاعمى حرج. (تفسير ايات الاحكام
للصابونى ج2 ص 224. زاد المسير لابن الحوزى ج 5
ص 375. البحر المحيط ج 6 ص 473. الدر المنثور ج 5 ص 58)
অর্থঃ- “প্রথমতঃ হযরত
আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালঅ আনহুমা থেকে বর্ণিত। যখন আল্লাহ্ তায়ালার
বাণী ولا تاكلوا
اموالكم بينكم بالباطل ‘তোমরা পরস্পর অন্যায়ভাবে কারো মাল-সম্পদ
খেয়ো না’ নাযিল হয়, তখন মুসলমান রুগ্ন ব্যক্তি, দীর্ঘ রোগগ্রস্থ ব্যক্তি, অন্ধ ব্যক্তি ও খোঁড়া ব্যক্তিরা সুস্থ
ব্যক্তিদের সাথে খেতে অসুবিধা মনে করলেন। তাঁরা বললেন, মাল-সম্পদের
থেকে খাদ্যই উত্তম। কেননা,
আল্লাহ্ তায়ালা অন্যায়ভাবে মাল ভক্ষণ করতে নিষেধ করেছেন। আর
অন্ধ ব্যক্তিরা ভাল খাবারের স্থান দেখতো না। রুগ্ন ব্যক্তি রোগের কারণে ঠিকমত খাদ্য
গ্রহণ করতে পারতো না। আর খোঁড়া ব্যক্তি বসতে বেশী জায়গার দরকার হেতু খাদ্য গ্রহণ করতে
অসুবিধা মনে করলো। তখন এ আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হয়। “অন্ধদের জন্য খাদ্য গ্রহণ করতে অসুবিধা
নেই।” (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ২২৪ পৃষ্ঠা, যাদুল মাসীর
লিইবনিল জাউযী ৫ম জিঃ ৩৭৫ পৃষ্ঠা, আল বাহরুল্ মুহীত্ব ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৭৩ পৃষ্ঠা, আদ্ দুররুল
মুনছূর ৫ম জিঃ ৫৮ পৃষ্ঠা)
ثانيا : وعن سعيد بن المسيب رضى
الله عنه انه قال ان ناسا كانوا اذا خرجوا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم وضعوا
مفاتيح بيوتهم عند الاعمى والاعرج والمريض وعند اقاربهم، وكانوا يامرونهم ان
ياكلوا مما فى بيوتهم اذا احتاجوا فكانوا يتقون ان ياكلوا منها، ويقولون نحشى ان
لاتكون انفسهم بذلك طيبة، فنزلت هذه الاية.
(تفسير ايات الاحكام للصابونى ج2 ص 224، زاد المسير لابن الجوزى ج5
ص 375، اسباب النزول للواحدى ج 190، الدر المنثور للسيوطى)
অর্থঃ- “দ্বিতীয়ত
হযরত সাঈদ ইবনুল্ মুসাইয়্যিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি
বলেন; কিছু লোক ছিলেন,
যখন তাঁরা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সাথে (কোথাও যেতেন) বের হতেন, তখন যাওয়ার সময় তাঁদের ঘরের চাবিগুলো অন্ধ, খোঁড়া, রোগাক্রান্ত
ও তাঁদের প্রতিবেশী ব্যক্তিদের কাছে জমা রাখতো। আর তাঁরা তাদেরকে প্রয়োজন মত তাঁদের
ঘর থেকে খাদ্য খেতে আদেশ করতেন। কিন্তু উক্ত ব্যক্তিরা সেখান থেকে খেতে ভয় করতেন। আর
বলতেন, আমরা আমাদের নিজেদের ব্যাপারে ভয় করি যে, আমরা তাদের উত্তম মাল-খাদ্য খেয়ে ফেলবো।
অতঃপর এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়।” (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ২২৪ পৃষ্ঠা, যাদুল মাসীর
লিইবনিল জাউযী ৫ম জিঃ ৩৭৫ পৃষ্ঠা, আসবানুন নুযূল লিল্ ওয়াহিদী ১৯০ পৃষ্ঠা, আদ্ দুররুল
মানছূর লিস্ সুয়ূত্বী)
[.২৫৯-২৬৩]
ثالثا : ورى عن مجاهد فى هذه
الاية انه قال كان رجال زمنى وعميان وعرجان جلول حاجة، يستتبغهم رجال الى بيوتهم،
فان لم يجدوا لهم طعاما ذهبوابهم الى بيوت ابائهم وامهاتهم وبعض من سمى الله عز
وجل فى هذه الاية، فكان اهل الزمانة يتحرجون من اكل ذلك الطعام، لانه الطعمهم غير
مالكه فنزلت هذه الاية. (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج2 ص224، احكام القران للجصاص ج3 ص334، زاد المنير لابن الجوزى ج5 ص 376، تفسير الطبرى، الدر المنشور)
অর্থঃ- “তৃতীয়তঃ এ
আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, অধিক রোগগ্রস্থ, অন্ধ, খোঁড়া ও হাজত্
ওয়ালা কিছু লোক ছিল। অপর কিছু লোক তাদেরকে তাদের ঘরের দায়িত্বে রাখতো। যদি তারা তাদের
জন্য কোন খাদ্য না পেত,
তাহলে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তাদের পিতা-মাতাগণের এবং আল্লাহ্ আয্যা
ওয়া জাল্লা এই আয়াতে যাদের নাম নিয়েছেন তাদের বাড়ীতে যেতো। আর এই অধিক রোগ ওয়ালা ব্যক্তিরা
উক্ত খাদ্য খেতে অপছন্দ করতো। কেননা, তাদের খাদ্যগুলো তার মালিকানাধীনে
নয়। (বরং পিতা-মাতার মালিকানাধীনে। পিতা-মাতার মালিকানাধীন মাল পুত্রের জন্য যে বৈধ, সেদিকে তারা
গুরুত্ব দিত না)। আর সে জন্য তাদের খাদ্য গ্রহণ করতে যে কোন অসুবিধা নেই, সে বিষয়ে
এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়ে যায়।” (তাফসীরে আয়াতুল আহকামুল লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ২২৪ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন
লিল্ জাছ্ছাছ্ ৩য় জিঃ ৩৩৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে যাদুল মাসীর লিইবনিল্ জাউযী ৫ম জিঃ ৩৭৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরুত্
ত্ববারী, আদ্দুররুল্ মানছূর) পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফের উল্লিখিত সাতখানা আয়াত শরীফ ও তার শানে নুযূল সম্পর্কিত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই
প্রমাণিত হলো যে,
হিজাব বা পর্দা করা সকলের জন্যেই ফরযে আইন। কেননা মহান আল্লাহ্
পাক অসংখ্য আয়াত শরীফে সরাসরী হিজাব বা পর্দার নির্দেশ দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে যে, কুরআন শরীফের
আয়াত গুলোর “নুযূল খাছ” কিন্তু “হুকুম আম” অর্থাৎ যদিও কোন বিশেষ ব্যক্তি বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়েছে কিন্তু তার হুকুম
সকলের জন্যেই প্রযোজ্য। (অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment