হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ( ৪ নং )

হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার
প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন।

 অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেহিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। 

কেননা, প্রথমতঃ কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্মঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মূখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক)

অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।
মূলতঃ মহিলারা সমস্ত শরীর ঢেকে বা পর্দা করে বের হবে এটাই শরীয়তের নির্দেশ। 

অতএব তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
দ্বিতীয়তঃ কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, শাইখুল হাদীস, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে।

যেমন, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।

বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, শাইখুল হাদীস, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীস শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।
যেমন হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كءذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী)

স্মর্তব্য যে, ঐসকল দাজ্জালের চেলা নামক পীর, আমীর, শাইখুল হাদীস, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে?

অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ছূদের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।

অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।

আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজ্মাও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন

দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায , (৩) যাকাত, (৪) হজ্ব  (৫) রমযানের রোযা।অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন। 
কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হিজাব বা পর্দা ফরয হওয়ার  সময় সনসম্পর্কে অনুসরণীয় মুফাস্সির ও মুহাদ্দিস রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অভিমত
          হিজাব বা পর্দা ফরয হওয়ার সময় বা সনসম্পর্কে অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ বা মুফাস্সির ও মুহাদ্দিস রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য অভিমত হচ্ছে, ‘হিজাব বা পর্দাফরয হয়েছে পঞ্চম হিজরী সনের যিলক্বদ মাসে।
কেননা, এ ব্যাপারে সকল উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ একমত যে, ‘হিজাব বা পর্দাসম্পর্কিত প্রথম আয়াত শরীফখানা নাযিল হয়েছিল উম্মুল মুমিনীন হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বিবাহের ওলীমাকে কেন্দ্র করে। আর তা সংঘটিত হয়েছিল পঞ্চম হিজরীতে।” ‘হিজাব বা পর্দাফরয হওয়ার সময় বা সনসম্পর্কে অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ বা মুফাস্সিরীন ও মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যে অভিমত পেশ করেছেন নির্ভরযোগ্য তাফসীর ও হাদীস শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে তার প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো-
হিজাব বা পর্দা ফরয হওয়ার সময় ও সনসম্পর্কে অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অভিমত
[২৬৪-২৬৫]
ونزل الحجاب على ما اخرج ابن سعد عن انس سنة خمس من الهجرة واخرج عن صالح بن كيسان ان ذلك فى ذى القعدة منها. (تفسير روح المعانى ج12 ص 72، احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص 403)
অর্থঃ- হিজাব বা পর্দার হুকুম সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়, সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করে যা হযরত ইবনু সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন। যা পঞ্চম হিজরী সনে সংঘটিত হয়েছিল। হযরত ছলিহ্ ইবনে কাইসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয়ই পর্দার বিধান নাযিল হয় পঞ্চম হিজরীর যিলক্বদ মাসে।” (তাফসীরে রূহুল্ মায়ানী ১২ জিঃ ৭২ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪০৩ পৃষ্ঠা)
[২৬৬]
واخرج ابن سعد عن انس قال نزل الحجاب مبتنى رسول الله صلى الله عليه وسلم بزينب بنت جحش، وذلك سنة خمس من الهجرة. وحجب نسائه من يومئذ وانا ابن خمس عشرة سنة. وكذا اخرج ابن سعد عن صالح بن كيسان. وقال نزل الحجاب على نسائه فى ذى القعدة سنة خمس من الهجرة، وبه قال قتادة والواقدى. وزعم ابو عبيدة وخليفة بن خياط ان ذلك كان فى سنة يثلاث. (تفسير فتح القدير ج4 ص 299)
অর্থঃ- হযরত ইবনু সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন; হিজাব বা পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর বিবাহের ওলীমাকে ভিত্তি করে, আর তা পঞ্চম হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল। সেদিন থেকে তাঁর স্ত্রী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণ পর্দা করা শুরু করেন, তখন আমার বয়স ছিল পনের (১৫) বছর। অনুরূপ হযরত ইবনু সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ছলিহ ইবনু কাইসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণের উপর পর্দার বিধান নাযিল হয় পঞ্চম হিজরীর যিলক্বদ মাসে। যা হযরত ক্বতাদা ও ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহিমাও বলেন। হযরত আবূ উবাইদা ও খলীফাহ্ ইবনু খিইয়াত রহমতুল্লাহি আলাইহিমা মনে করেন, নিশ্চয়ই পর্দার বিধান নাযিল হয় তৃতীয় হিজরীতে।” (তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর ৪র্থ জিঃ ২৯৯ পৃষ্ঠা)
[২৬৭]
اتفق العلماء قاطبة على ان الامر بالحجاب اول ما نزل فى وليمته عليه الصلوة والسلام بام المؤمنين زينب بنت حجش رضى الله تعالى عنها، ثم اختلفوا فى تاريخه. قال ابن كثير فى تفسيره وكان وقت نزولها فى صبيحة عرس رسول الله صلى الله عليه وسلم بزينب بنت جحش التى تولى الله تعالى تزويجها بنفسه، وكان ذلك فى ذى القعدة من السنة الخامسة فى قول قتادة والواقدى وغيرهما. وزعم ابو عبيدة معمربن المثنى وخليفة بن خياط ان ذلك كان فى سنة ثلاث. (احكام القران للشفيح والتهانوى ج3 ص403)
অর্থঃ- সকল উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, সর্বপ্রথম হিজাব বা পর্দার নির্দেশ জারী হয়েছিল উম্মুল মুমিনীন হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিবাহের ওলীমার দিন। কিন্তু ওলীমার সময় নিয়ে উলামা-ই-কিরাম ইখতিলাফ করেছেন। হযরত ইবনু কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তাফসীরগ্রন্থ বলেন, পর্দার আয়াত নাযিল হয়েছিল, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর বাসর (রাত্রির) শুরুতে। যার বিবাহের ওলী স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালা হয়েছিলেন। এ ঘটনা পঞ্চম হিজরীর যিলক্বদ মাসে সংঘটিত হয়েছিল। এটি হযরত ক্বতাদা, ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা এবং অন্যান্যদের মত। হযরত আবূ উবাইদা মামার ইবনু মাছনা এবং খলীফা ইবনু খিইয়াত রহমতুল্লাহি আলাইহিমা-এর মতে, নিশ্চয়ই উক্ত ঘটনা তৃতীয় হিজরী সনে সংঘটিত হয়েছিল।” (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানূবী ৩য় জিঃ ৪০৩ পৃষ্ঠা)
[২৬৮-২৭০]
وقال فى نيل الاوطار قال فى بهجة المحافل للعامرى الشافعى فى حوادث السنة الخامسة مالفظه فيهانزول الحجاب.
(احكام القران للشقيع والتهانوى ج3 ص 403 نيل 6، 112، بهجة المحافل)
অর্থঃ- নাইনুল আউতারগ্রন্থকার নাইনুল আউতারকিতাবে বলেছেন, আমিরী শাফিয়ী তাঁর বাহজাতুল্ মাহাফিলকিতাবে বলেন, হিজাব বা পর্দার বিধান নাযিল হয় পঞ্চম হিজরী সনে।” (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানূবী ৩য় জিঃ ৪০৩ পৃষ্ঠা, নাইলুল্ আউতার ৬ষ্ঠ জিঃ ১১২ পৃষ্ঠা, বাহজাতুল মাহাফিল) [২৭১-২৭২]
وقال قاضى القضاة الحافظ ابن حجر العسقلانى رحمه الله فى الاصابة تزوجها النبى صلى الله عليه وسلم سنة ثلاث. وقيل سنة خمس- فنزلت بسببها اية الحجاب. (احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص 403، الاصابة)
অর্থঃ- হযরত কাযীউল্ কুযাত, হাফিয ইবনু হাজার আস্কালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আল ইছাবাহ্নামক কিতাবে বলেছেন; হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে (হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে) তৃতীয় হিজরী সনে বিবাহ করেন। কেউ বলেন; পঞ্চম হিজরীতে। যে ঘটনাকে ভিত্তি করে পর্দার আয়াত নাযিল হয়।” (আহকামুল কুরআন্ লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪০৩ পৃষ্ঠা, আল্ ইছাবাহ)
[২৭৩-২৭৪]
وفى الاستيعاب للامام الحافظ ابن عبد البر رحمة الله تعالى تزوجها رسول الله صلى الله عليه وسلم فى سنة حمس من الهجرة، هذا قول قتادة. وقال ابو عبيدة، انه تزوجها فى سنة ثلاث من التاريخ. (احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص 403 الاستيعاب)
অর্থঃ- হযরত ইমাম হাফিয ইবনু আব্দিল বার রহিমাহুল্লাহু তায়ালা-এর আল্ ইসতীয়াবনামক কিতাবে আছে; হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে (হযরত যয়নব রদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে) পঞ্চম হিজরীতে বিবাহ করেন। এটা হযরত ক্বতাদাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্তি। হযরত আবূ উবাইদা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে তৃতীয় হিজরী সালে বিবাহ করেন।” (আহকামুল কুরআন্ লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪০৩ পৃষ্ঠা, আল্ ইসতীয়াব)
[২৭৫-২৭৭]
وفى الامتاع؛ وذكر بعض علماء الاخبار ان تزوجه صلى الله عليه وسلم زينب التى نزلت اية الحجاب بسببها، كان فى ذى القعدة سنة خمس. ولايخفى ان هذا القول ينافيه ماياتى عن عائشة رضى الله عنها من قولها. (ان زينب هى التى كانت تسامينى من ازواج النبى صلى الله عليه وسلم) اذ هو صريح انها كانت زوجة له صلى الله عليه وسلم قبل هذا الغزوة- اى المصطلق- بناء على ان هذه الغزوة كانت سنة ست. (حلبية 2: 72) قال العبد الضعيف: لاحجة فيه على نزول الحجاب فى السنة الثالثة، فانه كما لايخفى انما يدل على ان واقعة نزول الحجاب كان قبل السنة السادسة وذلك صادق على الخامسة ايضا. (احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص 404. الامتاع حلبية ج 2 ص 82)
অর্থঃ- আল ইমতানামক কিতাবে আছে, অধিকাংশ উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উল্লেখ করেন যে, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক হযরত যয়নব রদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে বিবাহের ঘটনাই হিজাব বা পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ। যা পঞ্চম হিজরী সনের যিলক্বদ মাসে হয়েছিল। অপ্রকাশ্য নয় যে, এ কাউল নিষেধ করে যা হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা এসেছে। নিশ্চয়ই হযরত যয়নব রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণের মধ্যে আমার কাছে মর্যাদাশীলা ছিলেন।এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হযরত যয়নব রদ্বিয়াল্লাহু আনহা এযুদ্ধ অর্থাৎ বণী মুছতালিক যুদ্ধের পূর্বে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী হিসেবে ছিলেন। আর এ যুদ্ধ ৬ষ্ঠ হিজরী সনে সংঘটিত হয়েছিল (হালবিয়া ২য় জিঃ ৮২ পৃষ্ঠা)।
আল আব্দুয যঈফবলেন, এতে তৃতীয় হিজরীতে হিজাবের হুকুম নাযিলের কোন দলীল নাই। কেননা, অপ্রকাশ্য নয় যে, নিশ্চয়ই হিজাবের হুকুম নাযিলের ঘটনা ৬ষ্ঠ হিজরীর পূর্বের বছরে ঘটেছিল, যা দলীল সম্মত। এটাও সত্য যে, হিজাব বা পর্দার বিধান নাযিল হয়, পঞ্চম হিজরীতে। (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪০৪ পৃষ্ঠা, আল্ ইমতা, সীরাতে হালাবিয়া ২য় জিঃ ৮২ পৃষ্ঠা)
[২৭৮]
وكان وقت نزولها فى صبيحة عرس رسول الله صلى الله عليه وسلم بزينب بنت جحش التى تولى الله تعالى تزويجها بنفسه وكان ذلك فى ذى القعدة من السنة الخامسة فى قول قتادة والواقدى وغيرهما وزعم ابو عبيدة معمر بن المثنى وخليفة بن خياط ان ذلك كان فى سنة ثلاث. (تفسيرابن كثير 3 ص801)
অর্থঃ- পর্দার আয়াত নাযিল হয়েছিল, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে হযরত যয়নব রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর বাসর (রাত্রির) শুরুতে। যার বিবাহের ওলী স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালা ছিলেন। এ ঘটনা ৫ম হিজরীর যিলক্বদ মাসে সংঘটিত হয়েছিল। হযরত ক্বতাদা, ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা এবং অন্যান্য গণের উক্তি মতে। হযরত আবূ উবাইদা মামার ইবনু মাছনা এবং খলীফা ইবনু খিইয়াত রহমতুল্লাহি আলাইহিমা-এর মতে, নিশ্চয়ই উক্ত ঘটনা তৃতীয় হিজরী সনে সংঘটিত হয়েছিল।” (তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩য় জিঃ ৮০১ পৃষ্ঠা)
হিজাব বা পর্দা ফরয হওয়ার সময় বা সনসম্পর্কে অনুসরণীয় মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অভিমত
[২৭৯]
اعلم ان الحجاب كان فى السنة الخامسة فى قول قتادة وقال ابو عبيدة فى الثالثة وقال ابن اسحق عندام سلمة وعند ابن سعد فى الرابعة فى ذى القعدة. (عمدة القارى ج2 ص 284)
অর্থঃ- জেনে রাখুন, হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে, নিশ্চয়ই হিজাব বা পর্দার আয়াত পঞ্চম হিজরীতেনাযিল হয়েছে। হযরত আবূ উবাইদা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তৃতীয় হিজরীতে। হযরত ইবনু ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত উম্মে সালামা ও ইবনু সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমা থেকে বলেন, ৪র্থ হিজরীর যিলক্বদ মাসে পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল।” (উমদাতুল্ ক্বারী ২য় জিঃ ২৮৪ পৃষ্ঠা)
[২৮০]
وكان الحجاب فى السنة الخامسة فى قول قتادة وقيل فى السنة الثالثة قاله ابو عبيدة معمربن المثنى، وعند ابن سعد فى ذى القعدة سنة اربع. (عمدة القارى ج4 ص 145)
অর্থঃ- হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্তি মতে, হিজাব বা পর্দার হুকুম নাযিল হয় পঞ্চম হিজরীতে। কেউ বলেন, তৃতীয় হিজরী সনে, যা হযরত আবূ উবাইদা মামার ইবনু মাছনা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন। আর হযরত ইবনু সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, চতুর্থ হিজরীর যিলক্বদ মাসে পর্দার হুকুম নাযিল হয়। (উমদাতুল ক্বারী ৪র্থ জিঃ ১৪৫ পৃষ্ঠা)
[২৮১]
وكان ذلك فى تزويجه عليه الصلاة والسلام بزينب بنت جحش سنة خمس من الهجرة او سنة ثلاث. (ارشاد السارى ج3 ص 172)
অর্থঃ- হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর সঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিবাহ হয় পঞ্চম হিজরী সনে। অথবা তৃতীয় হিজরীতে।” (ইরশাদুস্ সারী ৩য় জিঃ ১৭২ পৃষ্ঠা)
[২৮২-২৮৩]
(علينا الحجاب) اى نزلت ايته، وفى اسد الغابة لابن الاثيرفى سنتة خمس نزلت اية الحجاب فى ذى القعدة. (اوجز المسالك الى مؤطا ملك رحمة الله عليه ج10 ص 299، اسد الغابة لابن الاشير)
অর্থঃ- “(হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এ ঘটনা আমাদের জন্য পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর) অর্থাৎ পর্দার আয়াত শরীফ নাযিলের। হযরত ইবনুল্ আসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উসদুল গাবানামক কিতাবে আছে, পঞ্চম হিজরী সনের যিলক্বদ মাসে হিজাব বা পর্দা ফরয সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়।” (আউজাযুল্ মাসালিক ইলা মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি ১০ জিঃ ২৯৯ পৃষ্ঠা, উসদুল্ গাবা লিইবনিল্ আছীর)
[২৮৪]
(قالت عائشة وذلك بعد ماضرب علينا الحجاب) اخرسنة خمس اى حكمه او ايته. (شرح الزرقانى على موطأ للامام مالك رحمة الله عليه ج3 ص 308)
অর্থঃ- “(হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এ ঘটনা আমাদের জন্য পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর) পর্দার হুকুম পঞ্চম হিজরীর শেষের দিকে নাযিল হয়। অর্থাৎ পর্দা সম্পর্কিত হুকুম এবং আয়াত পঞ্চম হিজরীর শেষের দিকে (যিলক্বদ মাসে) নাযিল হয়। (শরহুয্ যুরকানী আলা মুওয়াত্ত্বা ল্লি ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি ৩য় জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা)       উল্লিখিত বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, অধিকাংশ অনুসরণীয় মুফাস্সিরীন ও মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী হিজাব বা পর্দার বিধান শরীফ সম্পর্কিত আয়াত পঞ্চম হিজরীর যিলক্বদ মাসেনাযিল হয়েছিল। এটাই মশহুর এবং প্রাধান্য প্রাপ্ত মত।
 
যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা

যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দাফরয প্রমাণিত হয়েছে গত সংখ্যায় সে সকল আয়াত শরীফ ও তার শানে নুযূলউল্লেখ করা হয়েছিলো। যার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর বান্দা-বান্দীদেরকে সরাসরি হিজাব বা পর্দাকরার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দারবিস্তারিত হুকুম-আহ্কাম স্পষ্টভাবেই বর্ণনা করে দিয়েছেন।
অর্থাৎ উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট ও আয়াত শরীফসমূহে উল্লিখিত সকল হুকুম-আহ্কামসমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে শরয়ী হিজাব বা পর্দা। যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের সামনেও শালীনতা বজায় রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ-মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকেই অবনত রাখা, নিজেদের লজ্জাস্থানকে হিফাজত করা, বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শুনানো, প্রয়োজনে কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা বলা, নরম ভাষায় কথা না বলা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে এ বিষয়গুলোই মূলতঃ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহের তাফসীর বা ব্যাখ্যাবিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং শরয়ী হিজাব বা পর্দারপরিচয় ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে উল্লিখিত প্রতিটি আয়াত শরীফের তাফসীর বা ব্যাখ্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো-

অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা সংক্রান্ত আয়াত শরীফসমূহের বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা

মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে সূরা আহ্যাব”-এর ৫৩নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
[২৮৫]
يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم.
অর্থঃ- হে মুমিনগণ! তোমরা অনুমতি ব্যতীত হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করোনা।
উক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক সরাসরি বা খাছভাবে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে বিনা অনুমতিতে কাউকে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। যদিও উক্ত আয়াত শরীফে খাছ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরের কথা উল্লেখ আছে। তবে আমভাবে উক্ত আয়াত শরীফের হুকুম সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কেননা, উছূল রয়েছে, কুরআন শরীফের আয়াতসমূহের নুযূল খাছআর হুকুম আমঅর্থাৎ নাযিল হয়েছে বিশেষ বিষয় বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তবে তার হুকুম সকলের জন্যেই বা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
বিশেষ করে যারা নায়েবে রসূল অর্থাৎ হক্কানী-রব্বানী আলিম-উলামা বা পীর-মাশায়িখ রহমতুল্লাহি আলাইহিম তাদের ক্ষেত্রেও উক্ত আয়াত শরীফের হুকুম খাছভাবে প্রযোজ্য।     স্মর্তব্য যে, পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফের অন্যত্র আমভাবে অন্য কারো ঘরেও অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফের সূরা নূরের২৭, ২৮ ও ২৯নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেছেন,
[২৮৬]
يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوتا غير بيوتكم حتى تستانسوا وتسلموا على اهلها ذلك خير لكم لعلكم تذكرون. فان لم تجدوا فيها احدا فلا تدخلوها حتى يؤذن لكم وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا هو ازكى لكم والله بما تعملون عليم. ليس عليكم جناح ان تدخلوا بيوتا غير مسكونة فيها متاع لكم والله يعلم ماتبدون وما تكتمون.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করোনা, যে পর্যন্ত অনুমতি না নাও এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা স্মরণ রাখ। যদি তোমরা ঘরে কাউকে না পাও, তবে অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করো না। যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যেয়ো। এতে তোমাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ্ পাক তা ভাল করে জানেন। যে ঘরে কেউ বাস করে না, যাতে তোমাদের সামগ্রী আছে এমন ঘরে প্রবেশ করতে তোমাদের কোন গুণাহ্ নেই। আল্লাহ্ পাক জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর।
[২৮৭]
يايها الذين امنوا ليستاذنكم الذين ملكت ايمانكم والذين لم يبلغوا الحلم منكم ثلث مرات من قبل صلوة الفجر وحين تضعون ثيابكم من الظهيرة ومن بعد صلوة العشاء ثلث عورت لكم ليس عليكم ولا عليهم جناح بعدهن طوفون عليكم بعضكم على بعض كذلك يبين الله لكم الايت والله عليهم حكيم. واذا بلغ الاطفال منكم الحلم فليستاذنوا كما استاذن الذين من قبلهم كذلك يبين الله لكم ايته والله عليم حكيم.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের দাসদাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজর নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা কাপড় আলগা করে রাখ এবং ইশার নামাযের পর। এ তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়। এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্যে কোন গুণাহ্ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়। এমনিভাবে আল্লাহ্ পাক তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াত গুলো বর্ণনা করেন। আল্লাহ্ পাক সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। তোমাদের সন্তান-সন্তুতি যখন বয়োপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি নেয়। এমনিভাবে আল্লাহ্ পাক, তাঁর আয়াত সমূহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন। আল্লাহ্ পাক সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা নূর ৫৮-৫৯)
উপরোক্ত আয়াত শরীফসমূহে মহান আল্লাহ্ পাক আমভাবে সকলকেই যে কোন কারো ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে ঘরওয়ালাদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটাও মূলতঃ হিজাব বা পর্দারএকটি অংশ। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা সংক্রান্ত উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহের ব্যাখ্যায় ইমাম-মুজতাহিদ তথা অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদের তাফসীর গ্রন্থসমূহে যে ফায়সালা দিয়েছেন নিম্নে ধারাবাহিকভাবে তা উল্লেখ করা হলো-

অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা সংক্রান্ত সূরা আহ্যাব-এর ৫৩নং আয়াত শরীফের তাফসীর বা ব্যাখ্যা
[২৮৮]
المعنى لاتدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم فى الدخول. (احكام القران لابن العربى ج3 ص1577)
অর্থঃ- তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করো না।এটা প্রবেশ সম্পর্কিত নিষেধ।” (তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিইবনিল আরাবী ৩য় জিঃ ১৫৭৭ পৃষ্ঠা)
[২৮৯]
قوله (بيوت النبى) صلى الله عليه وسلم هذا يقتضى أن البيت بيت الرجل. (احكام القران لابن العربى ج3 ص1575)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বানী (بيوت النبى হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘর) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এটা দ্বারা তাকিদ করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই ঘর দ্বারা মানুষের ঘর। (তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিইবনিল আরাবী ৩য় জিঃ ১৫৭৫ পৃষ্ঠা)
[২৯০]
(يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوت النبى) الاية والنهى للتحريم. (تفسير روح المعانى ج12 ص67)
অর্থঃ- “(হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করো না) আয়াত শরীফে নিষেধাজ্ঞা মূলক শব্দ لاتدخلوا তোমরা প্রবেশ করো নাদ্বারা অনুমতি ব্যতীত কারো ঘরে প্রবেশ করা যে হারাম তাই সাব্যস্ত হয়েছে।” (তাফসীরে রূহুল মায়ানী ১২ জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠা)
[২৯১]
(الا ان يؤذن) ......... اى لاتدخلوها فى حال من الاحوال الاحال كونكم مصحوبين بالاذن. ........ اى لا تدخلوها بسبب من الاسباب الا بسبب الاذن ........ اى لا تد خلوها فى وقت من الاوقات الاوقت ان يؤذن لكم. (تفسير روح المعانى ج12 ص 67)
অর্থঃ- “(অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করবে না)...... অর্থাৎ তোমরা কোন অবস্থাতেই ঘরে প্রবেশ করবে না, তবে ঘরের মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে করবে। ........ অর্থাৎ কোন কারণেই কারো ঘরে প্রবেশ করবেনা, তবে অনুমতি সাপেক্ষে পারবে। ........ অর্থাৎ কোন সময়েই কারো ঘরে প্রবেশ করবেনা, তবে যদি তোমাদেরকে কোন সময় অনুমতি দেয়া হয়।” (তাফসীরে রূহুল্ মায়ানী ১২জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠা)
[২৯২]
انه نهى عن الدخول فى جميع الاوقات الا وقت وجود الاذن المقيد. (تفسير روح المعانى ج12 ص 70)
অর্থঃ- নিশ্চয়ই আয়াত শরীফ দ্বারা কারো ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট অনুমতি সাপেক্ষের সময় ছাড়া সকল সময়েই।” (তাফসীরে রূহুল্ মায়ানী ১২ জিঃ ৭০ পৃষ্ঠা)
[২৯৩]
(يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوت النبى) حجراته فى حال من الاحوال (الا ان يؤذن لكم) الا حال كونكم مأذونا لكم .....
অর্থঃ- “(হে ঈমানদার গণ! তোমরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করবে না) তাঁর হুজরা শরীফে কোন অবস্থাতেই (তবে যদি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়) তবে তোমরা যদি অনুমতি প্রাপ্ত হও ..। (তাফসীরে রূহুল বয়ান ৭ম জিঃ ২১৩ পৃষ্ঠা)
[২৯৪]
(يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم) يعنى الا ان تدعوا (الى طعام) فيؤذن لكم فتأكلون. (تفسير الخازن ج5 ص 272)
অর্থঃ- “(হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ঘরে প্রবেশ করবে না) অর্থাৎ তোমাদেরকে ডাকা না হলে (খাদ্য গ্রহণের জন্য) অতঃপর যখন তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয় তখন তোমরা আহার কর।” (তাফসীরুল খাযিন ৫ম জিঃ ২৭২ পৃষ্ঠা) [২৯৫]
قيل لاتدخلوا بيوت النبى الا وقت الاذن وتدخلوها الا غير ناظرين اى غير منتظرين. (تفسير مدارك التنزيل ج3 ص 475)
অর্থঃ- বলা হয়েছে, অনুমতির সময় ছাড়া হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করবে না এবং খাদ্য প্রস্তুতের জন্য অপেক্ষা না করে তথা অপেক্ষাকারী না হয়ে তাঁর ঘরে প্রবেশ করবে না।” (তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৪৭৫ পৃষ্ঠা)
[২৯৬]
قوله تعالى (الا أن يؤذن لكم طعام) اى ان تدعوا اليه. (زاد المسير فى علم التفسير ج6 ص 213)
অর্থঃ- আল্লাহ তায়ালার বাণী: (খাদ্য গ্রহণের জন্য অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত) অর্থাৎ খাদ্য গ্রহণের জন্য আহবান করা হলে প্রবেশ করবে।” (যাদুল মাসীর ফী ইল্মিত্ তাফসীর ৬ষ্ঠ জিঃ ২১৩ পৃষ্ঠা)
[২৯৭]
قوله (يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوت النبى) هذا نهى عام لكل مؤمن ان يدخل بيوت رسول الله صلى الله عليه واله وسلم الا باذن منه. ....... (الا ان يؤذن لكم) ...... اى لاتدخلوها فى حال من الاحوال الا فى حال كونكم مأذونا لكم. (تفسير فتح القدير للشوكانى ج4 ص 297)
অর্থঃ- “(হে মুমিনগণ! তোমরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করোনা) এ আয়াত শরীফ আমভাবে সকল মুমিনগণকে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে তাঁর বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছে। ...... (যদি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হয়) ...... অর্থাৎ তোমরা তাঁর ঘরে কোন অবস্থাতেই অনুমতি প্রাপ্ত না হয়ে প্রবেশ করবে না।” (তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর লিশ্ শাউকানী ৪র্থ জিঃ ২৯৭ পৃষ্ঠা)
[২৯৮-৩০১]
فقوله تعالى (لاتدخلوا بيوت النبى) حظر على المؤمنين ان يدخلوا منازل رسول الله صلى الله عليه وسلم بغير اذن كما كانوا قبل ذلك يصنعون فى بيوتهم فى الجاهلية وابتداء الاسلام، حتى غار الله لهذه الامة فامرهم بذلك، وذلك من اكرامه تعالى هذه الامة ولهذا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "اياكم والدخول على نساء" الحديث. (تفسير ابن كثير ج3 ص 804. مسند احمد بن حنبل ج 4 ص 149، الفتح الربانى، تحفة الاحوذى ج 4 ص 334)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (তোমরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করোনা) মুমিনগণকে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন পূর্ববর্তী উম্মতগণ তাঁদের নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ঘরে প্রয়োজনীয় কাজ করত এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগেও। এমনকি আল্লাহ্ পাক এ উম্মতগণকে তথা উম্মতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পর্দা করতে বলেন, অতঃপর উক্ত আয়াতের মাধ্যমে তাদেরকে নির্দেশ দেন। আর এ পর্দা আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে এ উম্মতের জন্য সম্মান, মর্যাদার বিষয়। আর তাই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বিশেষভাবে তোমরা মহিলাদের কাছ থেকে বেঁচে থাক।হাদীস শরীফ।” (তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩য় জিঃ ৮০৪ পৃষ্ঠা, মুসনাদু আহমদ ইবনে হাম্বল ৪র্থ জিঃ ১৪৯ পৃষ্ঠা, আল্ ফাতর্হু রব্বানী, তুহফাতুল্ আহওয়াযী ৪র্থ জিঃ ৩৩৪ পৃষ্ঠা)
[৩০২]
(الا أن يوذن لكم) يعنى لاتدخلوا فى وقت الاوقت ان يؤذن لكم او لاتدخلوا دخولا الا دخولا مأذونا لكم او لاتدخلوا فى حال الا حال ان يؤذن لكم. (التفسير المظهرى ج7 ص 371)
অর্থঃ- “(তোমাদের অনুমতি দেয়া না হলে) অর্থাৎ তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে কোন সময়েই প্রবেশ করবে না। অথবা তোমরা অনুমতি প্রাপ্ত না হলে প্রবেশ করবেনা। অথবা তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে কোন অবস্থাতেই (হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে) প্রবেশ করবে না।” (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৭ম জিঃ ৩৭১ পৃষ্ঠা) [৩০৩]
وقوله (الى طعام غير ناظرين اناه) اى لا تدخلوا بيوت النبى الى طعام الا ان يؤذن لكم. (التفسير الكبير ج23 ص 223)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (খাদ্য প্রস্তুতের অপেক্ষা না করে খাদ্য গ্রহণের জন্য) অর্থাৎ তোমাদেরকে খাদ্য গ্রহণের অনুমতি দেয়া না হলে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করো না।” (আত্ তাফসীরুল্ কবীর ২৪ জিঃ ২২৩ পৃষ্ঠা)
[৩০৪]
وقول ابن عباس أليق بما فى الاية من النهى عن الدخول حتى يؤذن لهم فعلى قول ابن عباس فى النهى عن الدخول حتى يؤذن لهم. (التسهيل لعلوم التنزيل ج2 ص 194)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াত শরীফে তাদেরকে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।” (আত্ তাসহীলু লিউলূমিত্ তানযীল ২য় জিঃ ১৯৪ পৃষ্ঠা)
[৩০৫]
(يايها الذين امنوا لا تدخلوا) مع الاجتماع .... (بيوت النبى) اى الذى يأتيه الانباء من علام الغيوب. (نظم الدرر ج 6 ص 125)
অর্থঃ- “(হে ঈমানদারগণ! তোমরা প্রবেশ করো না) সম্মিলিতভাবে ......... (হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে অনুমতি ব্যতীত) অর্থাৎ আল্লামুল্ গুয়ূব আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে যার নিকট ওহী আসে।” (তাফসীরে নাযমুদ্ দুরার ৬ষ্ঠ জিঃ ১২৫ পৃষ্ঠা)
[৩০৬]
(لا تدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم  الى طعام) يعنى الا أن يدعوكم وياذن لكم فى الدخول. (تفسير السمر قندى ج 3 ص 58)
অর্থঃ- “(খাদ্য গ্রহণের জন্য অনুমতি প্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করবে না) অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদেরকে ডাকা না হবে এবং প্রবেশ করতে অনুমতি না দেয়া হবে।” (তাফসীরুস্ সামরকন্দী ৩য় জিঃ ৫৮ পৃষ্ঠা)
[৩০৭-৩০৯]
(الا ان يؤذن) فى معنى الظرف تقديره الا وقت ان يؤذن لكم (غير ناظرين) ........ قيل لاتدخلوا بيوت النبى الاوقت الاذن ولا تدخلوا الا غير ناظرين اناه. (تفسير الدر المصون ج5 ص 424، تفسير الكشاف ج 3 ص 244، تفسير اللباب ج15 ص 580)
অর্থঃ- “(অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করবেনা) এখানে ظرف যরফঅর্থে এসেছে। উহ্য রয়েছে الا وقت ان يؤذن لكم অর্থাৎ তোমাদের অনুমতির  সময় না হলে। (অপেক্ষা না করে) ....... বলা হয়েছে, অনুমতির সময় এবং খাদ্য প্রস্তুতের অপেক্ষা ছাড়া হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করবেনা।” (তাফসীরে আদ্ দুররুল্ মছূন ৫ম জিঃ ৪২৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ কাশ্শাফ ৩য় জিঃ ২৪৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ লুবাব ১৫ জিঃ ৫৮০ পৃষ্ঠা)
[৩১০]
كذلك فنهى الله تعالى المؤمنين عن امثال ذلك فى بيت النبى صلى الله عليه وسلم ودخل فى النهى سائر المؤمنين والتزم الناس أدب الله تعالى لهم فى ذلك فمنعهم من الدخول الا باذن. (المحرر الوجيز فى تفسير كتاب العزيز ج4 ص 395)
অর্থঃ- ঐ ঘটনা দ্বারা মহান আল্লাহ্ তায়ালা মুমিনগণকে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গৃহে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সমস্ত মুমিনগণকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর এর মধ্যে মানুষদের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা সম্পর্কিত আদব ওয়াজিব করা হয়েছে এবং অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে তাদেরকে নিষেধ করেছেন।” (আল্ মুর্হারারুল্ ওয়াজীয ফী তাফসীরি কিতাবিল আযীয ৪র্থ জিঃ ৩৯৫ পৃষ্ঠা)
[৩১১]
(ايايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم) الا وقت ان يؤذن لكم او الا ماذونا لكم. (تفسير البيضاوى ج 3 ص 185)
অর্থঃ- “(হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করোনা) কোন সময়ে তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে, অথবা তোমরা অনুমতি প্রাপ্ত না হলে। (তাফসীরুল্ বাইযাবী ৩য় জিঃ ১৮৫ পৃষ্ঠা)
[৩১২]
(قوله اوالا مأذونالكم) ...... والمعنى على الاول لاتدخلوا منازله التى فيها نساؤه فى وقت من الاوقات الا وقت كذا وعلى الثانى لاتدخلوا منازله عليه اى حال من الاحوال الا حال. (حاشية الشيخ زاده على تفسير البيضاوى ج4 ص 73)
অর্থঃ- “(ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্তিঃ তোমরা অনুমতি প্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত) ......... প্রথম অর্থ হচ্ছে, অনুমতির সময় ছাড়া কোন সময়েই তাঁর ঘরে প্রবেশ করো না যে ঘরে তাঁর স্ত্রী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণ বাস করেন। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, অনুমতির অবস্থা ছাড়া কোন অবস্থাতেই তাঁর ঘরে প্রবেশ করোনা। (হাশিয়াতুশ্ শাইখ যাদাহ্ আলা তাফসীরিল্ বাইযাবী ৪র্থ জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠা)
[৩১৩]
(يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم) فى الدخول بالدعاء (الى طعام) فتدخلوا (غير ناظرين) منتظرين. (تفسير الجلالين ص 356)
অর্থঃ- “(হে ঈমানদারগণ! তোমরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করবে না। তবে তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হলে) প্রবেশ করবে, যখন আহবান করা হয় (খাদ্য গ্রহণের জন্য) তখন প্রবেশ করো (অপেক্ষা না করে) অপেক্ষাকারী না হয়ে।” (তাফসীরুল্ জালালাইন ৩৫৬ পৃষ্ঠা)
[৩১৪-৩১৭]
(قوله الا ان يؤذن لكم) ...... قيل لاتدخلوا بيوت النبى الا وقت الاذن لكم ولا تدخلوا الا غير ناظرين اناه اه سمين. (قوله بالدعاء الى طعام). ..... بانه لايحسن الدخول على الطعام من غير دعوة اليه .... كرخى. (حاشية الجمل على الجلالين ج3 ص 393)
অর্থঃ- “(আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হলে) ..... বলা হয়েছে, অনুমতির সময় ছাড়া তোমরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করবেনা এবং খাদ্য প্রস্তুতের অপেক্ষা না করেও সেথায় প্রবেশ করবেনা। সামীন নামক কিতাবে আছে। (জালালাইন শরীফের মুছান্নিফের উক্তিঃ খাওয়ার জন্য আহবান করা হলে) ..... কেননা, দাওয়াত ছাড়া খাদ্য গ্রহণ করতে প্রবেশ করা শোভনীয় নয়।” ‘কারখী। (হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল্ জালালাঈন ৩য় জিঃ ৪৫২ পৃষ্ঠা, সামীন, কারখী, আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানূবী ৩য় জিঃ ৩৯৩ পৃষ্ঠা)
[৩১৮]
(الا أن يؤذن لكم) ...... اى لاتدخلوها فى حال من الاحوال الاحال كونكم مأذونا لكم وقيل من اعم الاوقات اى لاتدخلوها فى وقت من الاوقات الا وقت ان يوذن لكم ...... (تفسير ابى السعود ج7 ص 112)
অর্থঃ- “(তোমাদেরকে যদি অনুমতি দেয়া হয়) ...... অর্থাৎ তোমরা অনুমতি প্রাপ্তির অবস্থা ছাড়া কোন অবস্থাতেই তাঁর ঘরে প্রবেশ করো না। আর কেউ বলেন, সাধারণভাবে সকল সময়েই অর্থাৎ তোমাদেরকে যে সময়ের অনুমতি দেয়া হয় তাছাড়া অন্য কোন সময়ে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করো না।” .... (তাফসীরু আবীস্ সাঊদ ৭ম জিঃ ১১২ পৃষ্ঠা)
[৩১৯]
(يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم) ..... والمعنى لاتدخلوا بيوت النبى فى حال من الاحوال الا فى حال الاذن لكم منه عليه السلام، مراعاة لحقوق نسائه، وحرصا على عدم ايذاءه والاثقال عليه. (صفوة التفاسير ج2 ص 491)
অর্থঃ- “(হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে, তোমরা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করোনা) ...... তোমাদেরকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে কোন অবস্থায় অনুমতি দেয়া হলে এ ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে প্রবেশ করবেনা। তোমরা তাঁর স্ত্রীগণের হক্বের ব্যাপারে খেয়াল রাখ। আর তাঁর উপর কষ্ট ও বোঝা না চাপানোর আকাঙ্খা-আশা কর।” (ছাফওয়াতুত্ তাফসীর ২য় জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা)
[৩২০]
قال الامام ابوبكر الجصاص فانتظمت الاية احكام منها النهى عن دخول بيت النبى صلى الله عليه وسلم الا باذن. (احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص 397)
অর্থঃ- হযরত ইমাম আবূ বকর জাছ্ছাছ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি আয়াত শরীফ থেকে যে বিধান সমূহ শৃঙ্খলার সাথে বের করে বলেছেন, তা হলো- অনুমতি ছাড়া হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ঘরে প্রবেশ করা নিষেধ তথা জায়িয নেই।” (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৩৯৭)
[৩২১]
لايجوز دخول بيت احد الاباذنه. حرمة دخول بيت احد الا باذنه. (احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص400)
অর্থঃ- কারো ঘরে তার অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা জায়িয নেই। কারো ঘরে তার অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করাকে হারাম করা হয়েছে।” (আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শাফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪০০ পৃষ্ঠা)           উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হলো যে, অন্যের ঘরে বিশেষ করে হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা হারাম বা নাজায়িয। কেননা, অন্যের ঘরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। (অসমাপ্ত)

0 Comments: