হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ( ১৩ নং )

হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া দেয়ার কারণ সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক। 

তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেহিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা,প্রথমতঃ কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্মঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে।

 যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।

  খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলাদের খাছ পর্দা হলো- ১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।     অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাউযুবিল্লাহ) মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল। বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।       যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল মুলহিম)         স্মর্তব্য যে, ঐসকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে? অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ছূদের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।  আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের  দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায , (৩) যাকাত, (৪) হজ্ব  (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।  কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-  যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা  পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত  তাফসীর বা ব্যাখ্যাযে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দাফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট ও আয়াত শরীফসমূহে উল্লিখিত সকল হুকুম-আহ্কামসমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে শরয়ী হিজাব বা পর্দা।  যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের সামনেও শালীনতা বজায় রাখা, গায়রে মাহ্রামদের সামনে চেহারা, হাত, পাসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ-মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকেই অবনত রাখা, নিজেদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করা, বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শুনানো, প্রয়োজনে কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা বলা, নরম ভাষায় কথা না বলা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে এ বিষয়গুলোই মূলতঃ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।            উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে তাফসীর বা ব্যাখ্যাবিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং শরয়ী হিজাব বা পর্দারপরিচয় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের তাফসীর বা ব্যাখ্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো- (পূর্ব প্রকাশিতের পর) একজন পুরুষের জন্য মাহরামা তথা বিবাহ্ নিষিদ্ধ  মহিলা সম্পর্কিত সূরা নিসার ২২, ২৩ ও ২৪নং আয়াত  শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
ولاتنكحوا ما نكح اباؤكم من النساء الا ماقد سلف انه كان فاحشة ومقتا وساء سبيلا. (سورة النساء ২২)
حرمت عليكم امهتكم وبنتكم واخوتكم وعمتكم وخلتكم وبنت الاخ وبنت الاخت وامهتكم التى ارضعنكم واخوتكم من الرضاعة وامهت نسائكم وربائبكم التى فى حجوركم من نسائكم التى دخلتم بهن فان لم تكونوا دخلتم بهن فلاجناح عليهكم وحلائل ابنائكم الذين من اصلابكم وان تجمعوا بين الاختين الا ما قد سلف ان الله كان غفورا رحيما. (سورة النساء ২৩)
والمحصنت من النساء الا ما ملكت ايمانكم كتب الله عليهكم واحل لكم ما وراء ذلكم ان تبتغوا باموالكم محصنين غير مسافحين فما استمتعتم به منهن فاتوهن اجورهن فريضة ولا جناح عليكم فيما تراضيتم به من ابعد الفريضة ان الله كان عليما حكيما. (سورة النساء ২৪)
অর্থঃ- যে সমস্ত নারীকে তোমাদের পিতা- পিতামহ বিবাহ্  করেছেন তোমরা তাদের বিবাহ্ করোনা, কিন্তু যা বিগত হয়েছে তাতো হয়েছেই। এটা অত্যন্ত নিলর্জ্জতা, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।” (সূরাতুন্ নিসা/২২) তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের মেয়ে, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভাইয়ের মেয়ে (ভাতিজী), বোনের মেয়ে (ভাগিনী), তোমাদের সে মাতা যারা তোমাদের বুকের দুধ পান করিয়েছেন (দুধমাতা), তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা (শাশুরী), তোমারা যাদের সাথে একান্তবাস করেছ সে স্ত্রীদের মেয়ে যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে যদি তাদের সাথে একান্ত বাস না করে থাক তবে তাদের মেয়েকে বিবাহ্ করতে গুণাহ্ নেই, তোমাদের ঔরসজাত ছেলেদের স্ত্রী এবং দুবোনকে একত্রে বিবাহ্ করা। কিন্তু যা পূর্বে হয়েছে তাতো হয়েছেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরাতুন্ নিসা/২৩) সে সব নারীও তোমাদের জন্য হারাম যারা অন্য কারো বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ। অবশ্য সে সব নারী এটার অন্তর্ভুক্ত নয় যারা (যুদ্ধে) তোমাদের হস্তগত হবে। এটা তোমাদের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর হুকুম। এদেরকে ছাড়া অন্যান্য নারীদেরকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এ শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে তাকে তার নির্ধারিত হক (মোহর) প্রদান কর। তোমাদের গুণাহ্ হবেনা যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সন্তুষ্টির সাথে সমঝোতা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সুবিজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরাতুন্ নিসা/২৪)        একজন পুরুষের জন্যে যে সকল  মহিলাদের বিবাহ করা হারাম তাদের   বিস্তারিত বিবরণ- উল্লেখ্য, ২২নং আয়াত শরীফে বিমাতা বা সৎ মাকে পিতার ইন্তিকালের পর বিবাহ্ করা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে পিতার স্ত্রী, দাদার স্ত্রী এবং উর্ধ্বতমদেরকেও উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এ কাজটিকে জাহিলিয়াতের কাজ, অশ্লীল-অশালীন, ঘৃণিত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।  আর ২৩ ও ২৪নং আয়াত শরীফে একজন পুরুষ কর্তৃক যে সমস্ত মহিলাদেরকে বিবাহ্ করা হারাম তার আলোচনা করা হয়েছে। এ মাহ্রামা বা বিবাহ্ নিষিদ্ধ মহিলারা তিনভাগে বিভক্ত।  যথা- (১) রক্ত সম্পর্কিত বা বংশসূত্রে হারাম মহিলা। (২) দুধ পান সম্পর্কিত হারাম মহিলা। জানার বিষয় যে, বংশসূত্রে যা হারাম দুধ সম্পর্কের কারণেও তা হারাম।  (৩) বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে এবং অবৈধ সম্পর্কের কারণে হারাম মহিলা। নিম্নে এ আয়াত শরীফ তিনটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা নির্ভরযোগ্য তাফসীর থেকে পর্যায়ক্রমে প্রদান করা হলো- (২৩ নং আয়াত শরীফের তাফসীরের বাকী অংশ) [১৩৬৫-১৪৪০]
(وان تجمعوابين الاختين) فى محل الرفع عطفا على امهاتكم وبناتكم يعنى حرمت عليكم الجمع فى النكاح وفى الوطى بملك اليمين بين الاختين بالنسب ويلتحق بهما بنص الحديث الاختان بالرضاع سواء كانتسا لاب اولام اولهما من النسب اومن الرضاع ولايحرم الزنى باحد الاختين النكاح بالاخرى كما لايحرم نكاح الاخرى بعد موت احدهما او انقضاء العدة من الطلاق والتحقت به بالسنة او انقضاء العدة من الطلاق والتحقت به بالسنة والاجماع حرمة الجمع بين امراة وعمتها وامرأة وخالتها وكذاعمة ابيها او امها اوخالة احدهما وعمات اجدادها وجداتها وان بعدن من اى جهة كن عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لايجمع بين المرءة وعمتها ولابين المرءة وخالتها متفق عليه ورواه ابوداود والترمذى والدارمى بلفظ لاتنكح المرءة على عمتها ولا العمة على بنت اختها ولاالامراة على خالتها ولا الخالة على بنت اختها لا الكبرى على الصغرى ولاالصغرى على الكبرى ورواه النساثى الى قوله بنت اختها وصححه الترمذى وروى البخارى عن جابر نحوه قال ابن عبد البر طرق حديث ابى هريرة متواترة عنه وفى الباب عن ابن عباس رواه ابن ماجة بسند ضعيف وعن على رواه الرزار وعن ابن عمر رواه ابن حبان وفيه ايضا عن سعد بن ابى وقاص وزينب امرأة ابن مسعود وابى امامة وعائشة وابى موسى وسمرة بن جندب وروى ابن حبان فى صحيحه وابن عدى من حدث عكرمة عن ابن عباس الحديث المذكور وزاد فى اخره انكم اذا فعلتم ذلك قطعتم ارحامهن واخرج ابو داؤد فى المراسيل عن عيسى بن طلحة قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم من ان تنكح المرءة على قرابتها مخافة القطيعة ورواه ابن حبان بلفظ انكن اذا فعلتن ذلك قطعتن ارحامهن والاجماع على حرمة الجمع بين الاختين من الرضاع يدل على انه كما يحرم قطيعة وصلة الرحم يحرم قطيعة وصلة الرضاع وروى عن النبى صلى الله عليه وسلم اكرام المرضعة عن ابى الطفيل الغنوى قال كنت جالسا مع النبى صلى الله عليه وسلم اذا اقبلت امراة فبسط النبى صلى الله عليه وسلم رداءه حتى قعدت عليه فلما ذهبت قيل هذه ارضعت النبى صلى الله عليه وسلم رواه ابوداود والحاصل انه يحرم من النسب والرضاع مايكون احدهما فرعا للاخر اوذاعا لاصله القريب ومن المصاهرة يحرم على المرءة اصول الزوج وفروعة مطلقا وعلى الرجل اصول الزوجة مطلقا وفروعها بشرط الدخول بها ولايحرم من اقارب الزوج والزوجة بالمصاهرة ماعدى ممودى النسب الا الجمع بين امراة وفرع اصلها القريب للاحتراز عن قطيعة الرحم او قطيعة وصلة الرضاع والله اعلم (الا ماقد سلف) قيل استثناء من المعنى اللازم للنهى يعنى يعذبون بنكاحهن الابما قد سلف والظاهر ان الاستثناء منقطع بمعنى لكن يعنى لكن ماقد سلف فان الله يغفره ولا يؤاخذبه. (ان الله كان غفورا رحيما) يغفرهم وير حمهم لعذر الجهل عن الشرائع.
قال الله تعالى وما كان الله ليضل قوما بعد اذ هدهم حتى يبين لهم مايتقون وقال الله تعالى وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا. (التفسير المظهرى ج৫৬، ৫৭، ৫৮، ৫৯، ৬০، ৬১، ৬২، تفسير البيضاوى، تفسير البغوى، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، مسلم شريف، شرح الابى والسنوسى، فتح الملهم للشبير احمد عشمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، ابوداود شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، سنن النساثى، حاشية السيوطى، ذخيرة العقبى، ابن ماجة شريف، موطا امام مالك، مسند احمد بن حنبل، اوجز المسالك، المنتقى، الزرقانى، الفتح الربانى. ابن حبان، طبرانى، مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، مظاهرحق، لمعات، اشعة اللمعات، مراة المناجيح، الدارمى، راد قطنى، قاموس، صحاح.
অর্থঃ- وان تجمعوا بين الاختين (এবং দুই সহোদরা বোনকে একত্র করা অর্থাৎ একত্রে বিবাহ্ করা।) এ বাক্যটি امهاتكمبناتكم -এর উপর عطف হওয়ার কারণে رفع -এর স্থলে অবস্থিত। অর্থাৎ حرمت عليكم الجمع فى النكاح وفى الوطى بملك اليمين بين الاختين بالنسب. দুই সহোদরা বোনকে বিবাহে একত্রে করা এবং মালিকানা দরুন দুই সহোদরার সাথে একান্তে সাক্ষাত করা হারাম। কিন্তু এখানে দুজনই বংশগত বোন। দুই দুধ বোনকে একত্রে বিবাহ করা হারাম হওয়ার বিষয়টি হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, দুজন বংশগত বোনকে একত্রে বিবাহ করা যেরূপ হারাম তেমনি দুজন দুধ বোনকেও একত্রে বিবাহ করা হারাম। বংশগত দুবোন সহোদরা হোক কিংবা বৈমাত্রেয়া কিংবা বৈপিত্রেয়া, অনুরূপ দুধগত বোনও সহোদরা হোক কিংবা বৈমাত্রেয়া কিংবা বৈপিত্রেয়া এদের বিবাহ করা হারাম। কিন্তু এক বোনের সাথে ব্যভিচার করলে অন্য বোনকে বিবাহ করা হারাম হয়না। যেমনিভাবে এক বোন মৃত্যুবরণ করলে কিংবা তালাক দিলে ও ইদ্দত অতিবাহিত হলে দ্বিতীয় বোনকে বিবাহ করা হারাম হয়না। হাদীছ শরীফ ও ঐক্যমত (اجماع) এর দরুন নিম্নোক্ত দুই নারীকেও একত্রে বিবাহ করা জায়িয নয়। ফুফু-ভাতিজী, খালা-ভাগিনী, কোন নারী ও তার পিতা বা মাতার ফুফু কিংবা উভয়ের মধ্য থেকে কারো খালা কিংবা দাদা-নানা ও দাদী-নানীর ফুফু, তা যতই ঊর্ধ্বতন হোন না কেনো (এবং পিতার দিক থেকে হোন অথবা মাতার দিক থেকে)। হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لايجمع بين المراة وعمتها ولابين المراة وخالتها.
কোন নারীকে তার ফুফুর সাথে একত্র করা যাবে না এবং কোন নারীকে তার খালার সাথেও একত্র করা যাবেনা।’ (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ) হযরত আবূ দাউদ, তিরমিযী ও দারিমী রহমতুল্লাহি আলাইহিম বর্ণনা করেন,
لاتنكح المراة على عمتها ولا العمة على بنت اخيها ولا المراة على خالتها ولا الخالة على بنت اختها لا الكبرى على الصغرى ولا الصغرى على الكبرى.
ফুফুর সাথে ভাতিজীকে বিবাহ করা যাবেনা। না ভাতিজীর সাথে তার ফুফুকে এবং না খালার সাথে তার ভাগিনীকে। না ভাগিনীর সাথে তার খালাকে। আর না ছোটর সাথে বড়কে। না বড়র সাথে ছোটকে। নাসাঈ-এর বর্ণনায় শেষ বাক্যটি নেই। তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীছ শরীফকে ছহীহ্ বলেছেন। বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রেও এরূপ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবনে আব্দুল বার বিভিন্ন সনদে আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে এটি বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী ও ইবনে হিব্বান, আবূ সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে দুর্বল সনদ সহকারে ইবনে মাজাহ, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বায্যার এবং ইবনে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা সূত্রে হিবনে হিব্বান এ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী হযরত যয়নব রদ্বিয়াল্লাহু আনহা, হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা, হযরত আবূ মূসা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত মূসা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ইবনে জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু আনহুও এ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। ইবনে হিব্বান তাঁর ছহীহ্ গ্রন্থে এবং ইবনে আদী হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি সূত্রে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে এই গোটা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। যার শেষে এটুকু অতিরিক্ত আছে।
انكم اذا فعلتم ذلك قطعتم ارحامهن.
তোমরা যদি এরূপ করো, তবে তোমরা এই নারীদের পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে ফেলবে।হযরত আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মারাসীলগ্রন্থে হযরত ঈসা ইবনে তালহা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর উক্তি উদ্বৃত করেছেন। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন নারীকে তার আত্মীয়ার (ঊর্ধ্বতম বা অধস্তন) উপর এই আশংকায় বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন যে, তাতে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। হযরত ইবনে হিব্বান এ হাদীছ শরীফটি উদ্বৃত করেছেন এরূপ ভাষায়ঃ তোমরা যদি এরূপ করো, তবে তোমরা তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবে।’   দুই দুধ বোনকে (বিবাহ প্রভৃতিতে) একত্র করার নিষেধাজ্ঞার উপর পূর্বসূরীদের ঐক্যমত (اجماع) প্রমাণ করেছেন যে, যেরূপ বংশগত আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম। তদ্রুপ দুধপান জনিত আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করাও নিষিদ্ধ। বুকের দুধ দানকারিনীকে সম্মান করা সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। আবূ তুফায়ল গানাভী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটে উপবিষ্ট ছিলাম। ইত্যবসরে এক মহিলা আগমন করলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাদর মুবারক বিছিয়ে দিলেন এবং তিনি (মহিলা) তার উপর বসলেন। তারপর ঐ মহিলা যখন চলে গেলেন তখন বলা হলো যে, তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুধপান করিয়েছিলেন।’ (আবূ দাউদ শরীফ) মূলকথা, বংশগত ও দুধপানগত উভয়ক্ষেত্রেই স্ত্রীর জন্য স্বামীর ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনের সাথে সর্বতোভাবে বিবাহ হারাম। আর স্বামীর জন্য স্ত্রীর ঊর্ধ্বতনের সাথে তো সর্বতোভাবেই বিবাহ হারাম এবং স্ত্রীর অধস্তনের সাথে তখন হারাম যখন স্ত্রীর সাথে একান্তে সাক্ষাত করা হয়। আর স্বামী ও স্ত্রীর আত্মীয়দের মধ্য থেকে বংশগত স্তম্ভশ্রেণী ছাড়া অন্য কারো সাথে বিবাহ হারাম নয়। তবে হ্যাঁ, আত্মীয়তা কর্তন ও দুধপানজনিত আত্মীয়তা ছিন্ন হওয়ার আশংকায় এরূপ দুজন নারীকে একত্রে বিবাহ করা বৈধ নয়, যাদের মধ্যে থেকে একে অপরের নিকটাত্মীয়ের অধস্তন। الا ما قد سلف (কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে)ঃ অর্থাৎ নিষিদ্ধ নারীদের বিবাহ করলে আযাব হবে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পূর্বে যা গত হয়েছে তার জন্য আযাব হবেনা। অথবা অর্থ এই যে, যা পূর্বে গত হয়েছে তার জন্য আল্লাহ্ পাক পাকড়াও করবেন না, ক্ষমা করে দিবেন। প্রথমোক্ত অর্থের সময় مستثنى منه হবে সেই অর্থ, যা نهى (নিষেধাজ্ঞা)-এর জন্য অনিবার্য। আর শেষোক্ত অর্থের সময় হবে استثناء منقطعان الله كان غفورا رحيما. (নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু)ঃ অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক তাদের ক্ষমা করে দিবেন  এবং তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শণ করবেন। আল্লাহ্ পাক-এর বিধান না জানার ওজর কবুল করবেন। আল্লাহ্ পাক বলেছেন,
وما كان الله ليضل قوما بعد اذا هدهم حتى يبين لهم ما يتقون.
আল্লাহ্ পাক এমন নন যে,তিনি কোন সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করার পর তাদের বিভ্রান্ত করবেন- তাদের কি বিষয়ে তাক্বওয়া অবলম্বন করতে হবে তা সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত না করা পর্যন্ত।” (সূরা তওবা/১১৫) আল্লাহ্ পাক আরো বলেছেন,
وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا.
আমি রসূল (হাদী) না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেই না।’ (সূরা বণী ইসরাঈল/১৫) (আত্ তাফসীরুল মাযহারী ২য় জিঃ ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরুল বাইযাবী, তাফসীরুল বাগবী, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল কিরমানী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল মুলহিম লিত তক্বী উছমানী, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহ্ওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহ্ওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, নাসাঈ শরীফ, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আল ফতর্হু রব্বানী, ইবনে হাব্বান, তাবারানী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মিরয়াতুল মানাযীহ্, আদ্ দারিমী, দারে কুতনী, কামুছ, ছিহাহ্ ইত্যাদি।) উল্লিখিত তাফসীরের কিতাবসমূহের  আলোচনা ছাড়াও নিম্নবর্ণিত তাফসীরের কিতাবগুলোতে আলোচনা বিদ্যমান আছে, আহকামুল কুরআন লিল জাছছাছ, আহকামুল কুরআন লিইবনিল আরাবী, আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী, আহকামুল কুরআন লিছ ছাবূনী, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরুত্ তাবারী, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল, তাফসীরে রূহুল বয়ান, যাদুল মাছীর ফী ইলমিত্ তাফসীর, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে ফতহুল ক্বদীর, আত্ তাছহীল, নাযমুদ দুরার, তাফসীরে বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শায়খ যাদাহ্, হাশিয়াতুশ্ শিহাব, তাফসীরুল কাশ্শাফ, তাফসীরুল জালালাইন, হাশিয়াতুছ ছাবী আলাল জালালাইন, হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন, কামালাইন, তাফসীরে সমরকান্দী, আদ্ দুররল মানছূর, আল মুহাররারুল ওয়াজীয্, তাফসীরুল কাসিমী, তাফসীরে ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, তাফসীরে আবিস্ সাউদ, তাফসীরে হাসান বছরী, তাফসীরে মাওয়ারাদী, তাফসীরুল লুবাব, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে যিয়াউল কুরআন, কানযুল ঈমান ওয়া খাযাইনুল ইরফান, তাফসীরে আযিযী, তাফসীরে কাদিরী, তাফসীরে আইকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী, তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন ইত্যাদি।  সূরা নিসার ২৪নং আয়াত শরীফের  তাফসীর বা ব্যাখ্যা [ ১৪৪১-১৪৫৬ ]
 (والمحصنت من النساء) عطف على امهاتكم يعنى حرمت عليكم المحصنت من النساء اى ذوات الازواج لايحل للغير نكاحهن ما لم يمت زوجها او يطلقها وتنقضى عدتها من الوفات او الطلاق سميت المتزوجت محصنات لانه احصنهن التزويج او الازواج قال البغوى قال بو سعيد الخدرى رضى الله عنه نزلت فى نسائكن يهاجرن الى رسول الله صلى الله عليه وسلم ولهن ازواج فيتزوجهن بعض المسلمين ثم يقدم ازواجهن مهاجرين فنهى الله المسلمين عن نكاحهن قلت لعل المراد من الحديث ان المرأة المهاجرة اذا كان زوجها مسلما لايحل نكاحها وان كان فى دار الحرب لعدم اختلاف الدين حقيقة والدار حكما واما اذا اسلمت وهاجرت وزجها كافر فى دار الحرب فنكاحها حلال لقوله تعالى يايها الذين امنوا اذا جاءكم المؤمنت مهجرت فامتحنوهن الله اعلم بايمانهن فان علمتموهن مؤمنت فلاترجعوهن الى الكفار لاهن حل لهم ولاهم الى قوله تعالى ولا جناح عليكم ان تنكحوهن لكن عند ابى حنيفة وصاحبيه تقع الفرقة بينها وبين زوجها بمجرد الخروج من دار الحرب لاختلاف الدارين حقيقة وحكما ولاعدة عليها بعد الفرقة عنده وعندهما عليها العدة وعند مالك والشافعى واحمد يقع الفرقة بعد ثلاث حيث من وقت اسلامها ان دخل بها وان لم يدخل بها فمن وقت اسلامها ولااثر عندهم لاختلاف الدارين (الا ما ملكت ايمانكم) قال عطاء اراد بهذه الاستثناء ان تكون امته فى نكاح عبده فيجوزله ان ينزعها منه وهذا القول مسردود بالاجماع والصحيح ماروى مسلم وابو داود والترمذى والنسائى عن ابى سعيد الخدرى قال اصبنا سبايا من سبى اوطاس لهن ازواج فكرهنا ان نقع عليهن ولهن ازواج فسالنا النبى صلى الله عليه وسلم فنزلت والمحصنت من النساء الا ما ملكت ايمانكم يقول الاما افاء الله عليكم فاستحللتم بها فروجهن واخرج الطبرانى عن ابن عباس قال نزلت يوم حنين لما فتح الله حنينا اصاب المسلمون نساء من نساء اهل الكتاب لهن ازواج وكان الرجل اذا اراد ان ياتى المرءة قالت ان لى زوجا فستل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن ذلك فانزلت هذه الاية.
فهذه الاية تدل على ان المرءة اذا سبيت مع زوجها او بدونه وقعة الفرقة بينها وبين زوجها ويحل لمن ملكها وطيها بعد الاستبراء لماروى ان متلدى رسول الله صلى الله عليه وسلم نادى يوم اوطاس الا لاتنكح الحبالى حتى يضعن حملهن ولا الحيالى حتى يحضن وكذا يحل للمالك تزويجها لغيره وظهر ان السبى يوجب الصفا للسابى فى ملك البضع كما يوجب الصفا فى ملك الرقبة وبه قال مالك والشافعى واحمد قالوا ان سبايا اوطاس سبين مع ازواجهن وقال ابوحنيفة لايقع الفرقة بالسبى الا اذا سبى احد الزوجين بدون الاخر فان الموجب للفرقة عنده احتلاف الدارين حقيقة وحكما دون السبى قالت الحنفية ان مع اختلاف الدارين لاينتظم مصالح النكاح فشابه المحرمية والسبى يوجب الصفا فى ملك الرقبة دون ملك البضع لعدم الاستلزام بينهما وهذا استدلال فى مقابلة النص قال ابن دمام روى فى سبايا اوطاس ان النساء سبين وحدهن ورواية الترمذى يفيد ذلك روى عن ابى سعيد قال اصبنا سبايا اوطاس ولهن ازواج فى قومهن فذكروا ذلك لرسول الله صلى الله عليه وسلم فنزلت هذه الاية قلت وليس فى لفظ الترمذى ما يدل قطعا انهن كالهن سبين بغير ازواج والظاهر فيه قول الشافعى ولوصح انهن سبين كلهن بغير ازواج فالعبرة لعموم اللفظ دون خصوص السبب وقد ذكر الله سبحانه الاستثناء من ذوات الازواج بعنوان ملك اليمين لابعنوان اختلاف الدارين وقالت الحنفية الاية ليست على عمومها اجماعا فان مقتضى اللفظ حل المملوكة مضلقا سواء ملكت بالسبى او الشراء او الارث او نحوذلك ولاشك ان المشتراة المتجوجة خارجة عن هذا الحكم اجماعا فخصصنا عنها المسبية مع زوجها ايضا قلت لابد لتخصيص بالرأى على ان الاجماع على كون الامة المشتراة المتزوجة خارجة عن هذا الحكم ممنوع قال البغوى قال ابن مسعود اراد الله تعالى بهذاه الاية ان الجارية المتزوجة اذا بيعت يقع الفرقة بينها وبين زوجها ويكون بيعها طلاقا رواه ابن ابى شيبة وابن جرير وعبد بن حميد عنه قلت يماكن ان يقال المراد بالمحصنات الحراثر ذوات الازواج والتحق بهن بالقياس الاماء ذوات الازواج فمعنى الاية حرمت عليكم الحرائر ذوات الازواج الا ما ملكت ايمانكم بالسبى والاستيلاء عليهن فحينئذ لايجتاج الى تخصيص المملوكة بالشراء او الارث من حكم الحل لان قبل الشراء ليست من المحصنات بل من المملوكات بخلاف المسبية فانها كانت قبل السبى حرة.
(كتاب الله عليكم) مصدر مؤكد اى كتاب الله عليكم كتابا تحريم من ذكرنا اخرج ابن جرير من طريق عبيدة عن عمربن الخطاب فى قوله تعالى كتاب الله عليكم قال الاربع وابن المنذر من طريق ابن جريج عن ابن عباس قال واحدة الى اربع فى النكاح.
(واحل لكم) ... ... (ما وراء ذلكم) يعنى ما سوى المحرمات المذكورات فى الايات السابقة وخص عنه بالسنة والاجماع والقياس ماذكرنا من المحرمات فى الشرح وما فوق الاربع من النساء.
(التفسير المظهرى جص৬৪، ৬৫، ৬৬، مسلم شريف، شرح النووى، فستح الملهم، شرح الابى والسنوسى، المفهم. ابو دواود شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، نسائى شريف، حاشية السيوطى، ذخيرة العقبى)
অর্থঃ- والمحصنت من النساء. আর নারীদের মধ্যে সধবাগণ তথা বিবাহিতাগণঃ এ ব্যাক্যাংশ عطف হয়েছে امهاتكم এর উপর। অর্থাৎ حرمت عليكم المحصنت من النساء সধবা নারীদের সাথে তোমাদের অন্য কারো বিবাহ তখন পর্যন্ত হালাল নয়, যে পর্যন্ত তাদের স্বামী মারা না যায় কিংবা তালাক না দেয় এবং মৃত্যুর ইদ্দত বা তালাকের ইদ্দত অতিবাহিত না হয়। সধবা নারীদের محصنات বলার কারণ হচ্ছে বিবাহ-শাদী তাদের সুরক্ষিত করে ফেলে। হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, এ আয়াত শরীফ সেই সব মুহাজিরা নারী সম্পর্কে নাযিল হয়, যারা স্বয়ং স্বামী ছাড়া মুসলমান হয়ে হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট হিজরত করে আসতেন এবং কোন কোন মুসলমান তাদের বিবাহ করতেন। এরপর তাদের স্বামী মুসলমান হয়ে হিজরত করে আসতেন। আল্লাহ্ পাক মুসলমানদের এরূপ নারীদের বিবাহ করতে এ আয়াত শরীফে নিষেধ করেন। (গ্রন্থকার বলেন) আমার মতে, সম্ভবত এ হাদীছ শরীফের অর্থ হচ্ছে, আযাদ নারী যদি হিজরত করে আসে এবং তার স্বামী মুসলমান হয়,তবে তার স্বামী দারুল হরবে থাকলেও তার নতুন ভাবে বিবাহ করা হালাল নয় বা বৈধ নয়। কেননা, দীন বস্তুত উভয়েরই অভিন্ন এবং দৃশ্যত দেশও এক। কিন্তু কোন নারী যদি মুসলমান হয়ে হিজরত করে আসে এবং তার  স্বামী মুসলমান না হয়, আর সে দারুল হরবে অবস্থান করে, তবে এরূপ নারীর নতুন ভাবে বিবাহ করা হালাল বা বৈধ। কেননা, আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “হে মুমিনগণ! তোমাদের নিকট মুমিনা নারীরা দেশত্যাগী হয়ে আসলে তাদের পরীক্ষা করবে। আল্লাহ্ পাক তাদের ঈমান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জানতে পারো যে, তারা মুমিনা, তবে তাদের কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠাবেনা। মুমিনা নারীগণ কাফিরদের জন্য হালাল নয় বা বৈধ নয় এবং কাফিররা মুমিন নারীদের জন্য হালাল নয় বা বৈধ নয়। কাফিররা যা ব্যয় করেছে, তা তাদের ফিরিয়ে দিবে। এরপর তোমরা তাদেরকে বিবাহ করলে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না। (সূরা মুম্তাহিনা ১০ নং আয়াত) হযরত ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম  আবূ ইউসুফ এবং ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর মতে, দারুল হরব থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই মুমিন নারী তার কাফির স্বামী থেকে বিছিন্ন হয়ে যায়। কেননা, তখন দেশ বস্তুত ও দৃশ্যত উভয়ভাবেই  পরিবর্তিত হয়ে যায়। হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে বিচ্ছেদের পর তার কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না। কিন্তু ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমা-এর মতে ইদ্দত  জরুরী। ইমাম মালিক, ইমাম  শাফিঈ ও ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর মতে মুসলমান হওয়ার সময় থেকে তিন স্বাভাবিক মাজুরতাঅতিক্রম করার পর বিচ্ছেদ কার্যকর হবে যদি স্বামী তার সাথে একান্ত সাক্ষাত  করে থাকে। আর একান্ত সাক্ষাত না করে থাকলে মুসলমান হওয়ার সাথে সাথেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। দেশের বিচ্ছিন্নতা, তাদের মতে কোন প্রভাব ফেলবে না। الا ما ملكت ايمانكم তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়, তাদের ছাড়া)ঃ হযরত আতারহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ ব্যতিক্রমের (استثناء) অর্থ হচ্ছে, কারো দাসী যদি তারই দাসের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকে, তবে দাসের বিবাহ বন্ধন থেকে  ছিনিয়ে নেয়ার অধিকার তার আছে। কিন্তু এ মতামত যে ভুল, সে ব্যাপারে ইমামগণ একমত। সঠিক অভিমত হচ্ছে তা, যা হযরত মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহিম হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আওতাস যুদ্ধে আমরা কিছু সংখ্যক নারী বন্দী করেছিলাম। তাদের স্বামী বর্তমানে ছিল। তাই আমরা তাদের সাথে একান্ত সাক্ষাত করা সমীচীন মনে করলাম না। আমরা নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন والمحصنت من النساء الا ما ملكت ايمانكم. এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়। আল্লাহ্ পাক বলেন, যে নারীদের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে আল্লাহ্ পাক তোমাদের দান করেছেন, তোমরা যদি তাদের সাথে হালাল মনে করে একান্ত সাক্ষাত করো তবে তাতে কোন পাপ নেই। ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, এ  আয়াত শরীফ হুনাইনের যুদ্ধের দিন নাযিল হয়। হুনাইন বিজয়ের দিন কিছু সংখ্যক নারী মুসলমানদের হস্তগত হয়। তারা ছিল আহলে কিতাব এবং তাদের স্বামীগণ জীবিত ছিল। কোন মুসলমান যদি তাদের কারো সাথে একান্ত সাক্ষাত করতে চাইতো, তখন সে বলতো, আমার স্বামী আছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তখন এ আয়াত শরীফ  নাযিল হয়। আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন নারী যদি বন্দী হয়ে আসে স্বামীর সাথে হোক বা স্বামী ছাড়া, সর্বাবস্থায়ই সে তার স্বামী থেকে আলাদা হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি এই নারীর মালিক হবে, তার পক্ষে এই নারীর সাথে একান্ত সাক্ষাত করা জায়িয বা দুরস্ত হবে। অবশ্য পবিত্রতা লাভের পর। কেননা, আওতাস যুদ্ধের দিন রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘোষণাকারী ঘোষণা করেছিলেন যে, গর্ভবতী নারীদের সন্তান প্রসব করার পূর্বে এবং অগর্ভবতী নারীদের স্বাভাবিক মাজুরতা হওয়ার পূর্বে বিবাহ করা যাবেনা। আর  মালিক তার ঐ দাসিকে অপর কারো কাছে বিবাহ দেয়ারও অধিকারী। এখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কোন নারীকে যুদ্ধবন্দিনী নারীরূপে বন্দী করার দাবীই হচ্ছে, বন্দীকারী যেরূপ বন্দিনীর সমগ্র সত্তার মালিক হয়ে যায়, তদ্রƒপ তার সাথে একান্ত সাক্ষাত করারও পূর্ণ অধিকার সে লাভ করে। ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম শাফিঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এ মতই পোষণ করেন। তাঁরা বলেন, আওতাস যুদ্ধে নারীদের তাদের স্বামীদেরসহ বন্দী করা হয়েছিল। ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কেবলমাত্র বন্দী হলেই কোন নারীকে বিচ্ছিন্ন ভাবা যাবে না। তবে হ্যা, যদি একজন বন্দী হয়, আর অপরজন বন্দী না হয়, তবে কেবল এই বন্দীত্বের দরুনই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কেননা, তাঁর মতে, বস্তুত ও দৃশ্যত দেশের বিভিন্নতাই বিচ্ছিন্নতার কারণ, বন্দীত্ব নয়। হানাফীগণ বলেন, দেশ বিভিন্নতার দরুন বিবাহ ব্যবস্থার দাবী পূরণ হতে পারে না। যেন দেশ বিভিন্নতাই বিবাহ হারামকারীর সমতুল্য। আর বন্দীত্বের দাবী হচ্ছে বন্দী সত্তার পূর্ণ মালিকানা লাভ। গুপ্তাঙ্গের মালিকানা নয়। কেননা, সত্তার মালিকানার জন্য সম্ভোগের মালিকানা জরুরী নয়। কিন্তু এ হচ্ছে স্পষ্ট ভাষ্যের মুকাবিলায় ধারণা মাত্র, (যা গ্রহণযোগ্য নয়)। হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আওতাস যুদ্ধে স্বামীবিহীন নারীদের বন্দী হওয়া বর্ণিত হয়েছে এবং তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর বর্ণনায় এর সমর্থন পাওয়া যায়। আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা আওতাস  যুদ্ধে  কিছু সংখ্যক নারীকে বন্দী করলাম, যাদের স্বামীরা  তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে গিয়েছিল। লোকেরা বিষয়টি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবহিত করলে তখন এই আয়াত শরীফ নাযিল হয়। (গ্রন্থকার বলেন), আমাদের তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণনায় এমন কোন স্পষ্ট শব্দ নেই, যদ্বারা নিশ্চিতরূপে কেবল স্বামীবিহীন নারীদের বন্দী হওয়া প্রমাণিত হয়। এক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি এর উক্তি সুস্পষ্ট। আর যদি কেবল স্বামীবিহীন নারীদের বন্দী হওয়া প্রমাণিতও হয়, তবু শব্দের ব্যাপকতা বিবেচ্য, কারণের বিশেষত্ব বিবেচ্য নয়। তাছাড়া এটাও বিবেচ্য যে, আল্লাহ্ পাক আয়াতে সধবা নারীদের ব্যতিক্রম উল্লেখ করেছেন সত্তার মালিকানা শব্দ দ্বারা, দেশের বিভিন্নতার শব্দ দ্বারা নয়। হানাফীগণ বলেন, সর্বসম্মতভাবে আয়াত তার ব্যাপকতা ও অবিশেষতার উপর নেই। কেননা, শব্দের ব্যাপকতা তো সব মালিকানাধীন দাসীকেই শামিল করছে। যুদ্ধে বন্দী করা হোক কিংবা খরিদ করা হোক অথবা মীরাছের মাধ্যমে লাভ করা হোক অথবা অন্য যে কোন উপায়ে। নিঃসন্দেহে সর্বসম্মত ভাবে কোন বিবাহিতা নারীকে খরিদ করা হলে তার ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য নয়। সুতরাং আয়াত যদিও ব্যাপক, কিন্তু তার থেকে ব্যাপক অর্থ নেয়া হয়নি। বরং কোন কিছুকে খাছ করা হয়েছে। তাই সধবা নারীকে যদি যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে পাওয়া যায়, তবে শব্দের  ব্যাপকতা থেকে তাকেও আমরা খাছ করে নিলাম। (কেননা, সধবা নারীকে যদি খরিদ করা হয়, তবে সে সর্বসম্মতভাবে منصوص তার উপর আমরা বিবাহিতা বন্দীকে قياس করলাম) গ্রন্থকার বলেন, আমার মতে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার যদি ধারণামূলকও হয়, তার জন্য শরয়ীদলীল প্রয়োজন। তা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ভাষ্য ইজমা হোক বা কিয়াস হোক। কেবলমাত্র নিজস্ব মতামতের দ্বারা খাছ করা জায়িয নয়। তাছাড়া, খরিদকৃত বিবাহিতা দাসীকে সর্বসম্মতভাবে আয়াতের অর্থের ব্যাপকতা থেকে খাছ করা গ্রহণযোগ্য নয়। এরূপ কোন সর্বসম্মত মত পাওয়া যায় না। হযরত বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ তায়ালার অভিপ্রায় হচ্ছে, বিবাহিতা দাসীকে যখন বিক্রি করা হবে, তখন কেবল বিক্রির দরুনই স্বামী থেকে তার বিচ্ছেদ ঘটে এবং নিছক বিক্রয়ই তার জন্য তালাকে পরিণত হয়।  উহা ইবনে আবূ শাইবা, ইবনে জারীর ও আব্দ ইবনে হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণা করেছেন। গ্রন্থকার বলেন, আমার মতে এটা সম্ভব যে, আয়াতে محصنات অর্থ শুধু সেই সব স্বাধীন স্ত্রীলোক, যারা সধবা এবং তাদের উপর কিয়াস বা ধরাণা করে সধবা-দাসীদেরকেও তাদের সাথে যুক্ত করা হবে। তখন আয়াতের অর্থ হবেঃ বিবাহিতা স্বাধীন স্ত্রীলোকগণ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে- সেই সব স্ত্রীলোক ছাড়া, যাদের বন্দী করে দাসী বানানো হয়েছে। তখন খরিদকৃত বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দাসীকে হালাল হওয়ার বিধান থেকে খাছ করার প্রয়োজন হবে না। কেননা, ক্রয় করার (এবং উত্তরাধিকার সূত্রে আসার) পূর্বে তারা সধবাই ছিল না, ছিল মালীকানাধীন দাসী। তবে সেই বন্দিনী নারী, যাকে বন্দী করে বাঁদী বানানো হয়েছে। বন্দীর পূর্বে বাদী ছিল না, বরং সে ছিল আযাদ। كتب الله عليكم তোমাদের জন্য এটা আল্লাহ্ পাক-এর বিধানঃ كتاب শব্দটি تاكيد - مصدر এর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। মূল বাক্যটি এরূপ- كتب الله عليكم كتاب تحريم من ذكرنহযরত উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি كتاب الله عليكم এর ব্যাখ্যায় হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর উক্তি বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, চার (স্ত্রী আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন)। ইবনে জুরাইজ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে ইবনে মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর উক্তি বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, এক থেকে চারজন পর্যন্ত নারীকে এক সাথে বিবাহ বন্ধনে রাখার অনুমতি রয়েছে। واحل لكم তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে ... ... ... ...। ماوراء ذلكم এদেরকে ছাড়া অন্যদেরকে) অর্থাৎ পূববর্তী আয়াত সমূহে উল্লেখিত হারামকৃত নারীগণ এবং হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা যেসব নারী হারাম হাওয়ার কথা উপরের ব্যাখ্যায় আমরা বর্ণনা করেছি এবং একই সময়ে চারের অধিক নারীকে বিবাহ করা হারাম হওয়ার এই সাধারণ বিধান থেকে পৃথক করা হয়েছে। (আত্ তাফসীরুল মাযহারী ২য় জিঃ ৬৪, ৬৫, ৬৬ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল্ মুফহিম, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল্ মাবুদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, নাসায়ী শরীফ, হাশিয়াতুস্ সুয়ূত্বী, যখীরাতুল্ উক্ববা) উল্লিখিত আয়াত শরীফগুলির তাফসীর ছাড়াও নিম্ন বর্ণিত সূরা নূরের ৬১নং আয়াত শরীফে মাহরামা তথা যাদেরকে বিবাহ করা হারাম তবে দেখা জায়িয তাদের কিঞ্চিৎ বর্ণনা এসেছে। তাতে তাদের ঘরে মাহরাম পুরুষরা যে খাদ্য গ্রহণ করতে পারবে তাই উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, [১৪৫৭]
ليس على الاعمى حرج ولاعلى الاعرج حرج ولا على المريض حرج ولا على انفسكم ان تاكلوا من بيوتكم او بيوت ابائكم او بيوت امهتكم او بيوت اخوانكم او بيوت اخوتكم او بيوت اعمامكم او بيوت عمتكم او بيوت اخوالكم او بيوت خلتكم او ما ملكتم مفاتحه او صديقكم ليس عليكم جناح ان تاكلوا جميعا او اشتاتا فاذا دخلتم بيوتا فسلموا على النفسكم تحية من عند الله مبركة طيبة كذلك يبين الله لكم الايت لعلكم تعقلون. (سورة النور ৬১)
অর্থঃ- অন্ধের জন্য দোষ নেই, খঞ্জের জন্য দোষ নেই, রোগীর জন্য দোষ নেই এবং তোমাদের নিজেদের জন্যও দোষ নেই যে, তোমরা আহার করবে তোমাদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতাদের গৃহে, অথবা তোমাদের মাতাগণের গৃহে; অথবা তোমাদের ভাইগণের গৃহে, অথবা তোমাদের বোনদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতৃব্যদের গৃহে অথবা তোমাদের ফুফুগণের গৃহে অথবা তোমাদের মামাদের গৃহে অথবা তোমাদের খালাদের গৃহে অথবা সে গৃহে যার চাবি আছে তোমাদের হাতে অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে। তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথকভাবে আহার কর, তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। অতঃপর যখনই তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখনই তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম দিবে। এটা আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্যে আয়াত বা নিদর্শন ও আদেশ-নির্দেশসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন। যাতে তোমরা বুঝে নাও। (সূরাতুন্ নূর ৬১ নং আয়াত শরীফ) উপরোক্ত আয়াত শরীফগুলো এবং তার তাফসীর থেকে যে সমস্ত মহিলা একজন পুরুষের জন্য হারাম প্রমাণিত হলো তারা হচ্ছেন নিম্নোক্তগণ- (ক) বংশ সম্পর্কিয় বা রক্ত সম্পর্কিয় ৭ প্রকার মহিলা হলেন, (১) মা, দাদী বা পিতার মা, নানী বা মায়ের মা এরূপ যত উর্ধে যাক। (২) মেয়ে, মেয়ের মেয়ে বা নাতনী (দৌহিত্রী), পুত্রের মেয়ে বা পুৎনী (পৌত্রী)। (৩) তিন প্রকার বোনঃ সহোদরা বোন, বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রীয় বোন। (৪) ভাইয়ের মেয়েঃ ভাইঝি বা ভাতিজী বা ভ্রাতুষ্পুত্রী এরূপ যতই নিম্নে আসুক। (৫) বোনের মেয়েঃ বোনঝি বা ভাগিনী এরূপ যতই নিম্নে আসুক। (৬) তিন প্রকার ফুফুঃ পিতার সহোদরা বোন, বৈমাত্রেয়া বোন এবং বৈপিত্রীয়া বোন। এরূপ পিতার, দাদার, পরদাদার, মায়ের, নানীর তিন প্রকার ফুফু। এরূপ যত উর্ধে যাক। (৭) তিন প্রকার খালাঃ মায়ের সহোদরা বোন, বৈমাত্রেয়া বোন, বৈপিত্রীয়া বোন। এরূপ পিতা ও মায়ের তিন প্রকার খালা। (খ) দুধ পান সম্পর্কিত হারাম মহিলা। বংশ সম্পর্কের কারণে যারা যারা হারাম, দুধপান সম্পর্কিত কারণেও তারা তারা হারাম। আড়াই বছরের বেশী বয়স্ক না হয় এরূপ বালক বালিকাকে কোন স্ত্রীলোক বুকের দুধ পান করালে সে স্ত্রীলোকটি উক্ত বালক বালিকার দুধ মা হবেন এবং তার স্বামী তাদের দুধ পিতা হবেন। তার ছেলে মেয়েগণ তাদের দুধ ভাই-বোন হবেন। দুধ পিতার ভাই, বোন তাদের দুধ চাচা ও দুধ ফুফু হবেন। অনুরূপ এদের দুধমায়ের ভাই বোন তাদের দুধ মামা ও দুধ খালা হবেন। এরূপ দুধ পিতার পিতা-মাতা তাদের দুধ দাদা ও দুধ দাদী হবেন, দুধ মায়ের পিতা-মাতা তাদের দুধ নানা ও দুধ নানী হবেন। দুধ ছেলের পক্ষে দুধ মা, দুধ নানী, দুধ দাদী, দুধ খালা, দুধ ফুফু ও দুধ বোন হারাম হবেন। দুধ মেয়ের পক্ষে দুধ পিতা, দুধ দাদা, দুধ চাচা, দুধ মামা ও দুধ ভাই হারাম হবেন। দুধ পিতার পক্ষে দুধ ছেলের স্ত্রী, তার মেয়ে ও নাতনী হারাম হবে। ফতওয়ায়ে আলমগীরী।  (গ) নিকাহ বা বিবাহ এবং মুছাহিরা সম্পর্কিত হারাম মহিলা। (১) শাশুড়ী, দাদী শাশুড়ী, নানী শাশুড়ী এরূপ যত উর্ধে যাক। (২) যে স্ত্রীর সাথে একান্তবাস করা হয়েছে তার অন্য পক্ষের মেয়ে, পুতনী ও নাতনী এরূপ যত নিম্নে আসুক। (৩) পুত্রের স্ত্রী, পৌত্রের স্ত্রী, দৌহিত্রের স্ত্রী বা নাতনী বউ এরূপ যতই নিম্নে  আসুক। (৪) সৎ মা, সৎ দাদী, সৎ নানী এরূপ যত উর্ধে যাক। (৫) যদি কেউ নয় বছর বা তদুর্দ্ধ বয়স্কা স্ত্রীলোকের সহিত ব্যভিচার করে তবে এ স্ত্রীলোকটির মা, দাদী, নানী যতই উর্ধে যাক এবং তার কন্যা ও নাতনী যতই নিম্নে আসুক উক্ত পুরুষের জন্য হারাম হবে। এরূপ উক্ত ব্যভিচারী পুরুষের পিতা, দাদা, পুত্র, পৌত্রের প্রতি এ ব্যভিচারিনী স্ত্রীলোকটি হারাম হবে। (৬) যদি কেউ নয় বছর অথবা তদুর্দ্ধ বয়স্কা স্ত্রীলোককে শাহওয়াত বা কামভাবের সাথে স্পর্শ করে অথবা শাহওয়াতের সাথে শরমগাহের দিকে দৃষ্টিপাত করে, তবে এ স্ত্রীলোকটির মা, দাদী, নানী, মেয়ে ও নাতনী তার প্রতি হারাম হবে। আর এ স্ত্রীলোকটি ঐ পুরুষের পিতা, দাদা, পুত্র বা  পৌত্রের প্রতি হারাম হয়ে যাবে। আলমগীরী, শামী। (৭) যদি কেউ ছেলের স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে তবে পুত্রের পক্ষে তার ঐ স্ত্রী চিরতরে হারাম হবে। আলমগীরী। (৮) যদি কেউ শাশুড়ীর সাথে ব্যভিচার করে বা শাহওয়াতের সাথে তাকে চুম্বন করে কিংবা স্পর্শ করে। তবে তার স্ত্রী তার জন্য চিরতরে হারাম  হয়ে যাবে। আলমগীরী, শামী। (৯) যদি কেউ স্ত্রীর বর্তমানে স্ত্রীর বোনকে বিবাহ করে, তবে এ দ্বিতীয় বিবাহ বাতিল হবে। যদি বিবাহ অন্তে তার সহিত একান্তবাস না করে থাকে, তবুও প্রথম স্ত্রীর সাথে অবস্থান করা হারাম হয়ে যাবে। অবশ্য দ্বিতীয় বোনকে ত্যাগ করলে প্রথম স্ত্রী হালাল হবে। আর যদি দ্বিতীয় বোনের সহিত অবস্থান করে, তবে যতক্ষন তাকে ত্যাগ না করে এবং ইদ্দত গত না হয় ততক্ষন প্রথমা স্ত্রীর সহিত অবস্থান করা হালাল হবে না। কাযীখান, আলমগীরী ও শামী। (১০) একই সময় চারের অধিক বিবাহ করা হারাম। এ চারের একজনকে তালাক দিলে, যতক্ষন তার ইদ্দত গত না হবে ততক্ষন অন্য বিবাহ হারাম হবে।  শরহে বিকায়াহ। (১১) মুরতাদ (ইসলামচ্যুত) পুরুষের সহিত ঈমানদার স্ত্রীলোকের বা ঈমানদার পুরুষের সহিত মুরতাদ্দা (ইসলাম ত্যাগ কারিনী) স্ত্রী লোকের বিবাহ জায়িয নেই। আলমগীরী। (১২) অপরের স্ত্রীর সহিত নিকাহ বা বিবাহ হারাম। (১৩) যদি কেউ আপন স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, পৃথক পৃথক সময়ে ক্রমান্বয়ে তিন তালাক দিয়ে থাকুক অথবা একই সময়ে তিন তালাক দিয়ে থাকুক, তবে উক্ত স্ত্রী তার জন্য একেবারে হারাম হয়ে যাবে। যদি এ স্ত্রীলোকটি তালাকের ইদ্দত অন্তে অন্য নিকাহ করে এবং এ দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে একান্তবাস করে অতঃপর মৃত্যুপ্রাপ্ত হয় অথবা একে তালাক দেয়, অবশেষে মৃত্যু বা তালাকের ইদ্দত শেষ হয়, তবে প্রথম স্বামী তার সাথে নিকাহ  বা বিবাহ করতে পারে। যতক্ষন উপরোক্ত শর্তগুলি পাওয়া না যায়, ততক্ষন এ স্ত্রীলোকটি প্রথম স্বামীর সহিত কিছুতেই বিবাহ করতে পারবে না। আমি তোমাকে তালাক দিলাম, আমি তোমাকে তালাক দিলাম, আমি তোমাকে তালাক দিলাম। এরূপ বলাতে ফতওয়াদাতার ফতওয়া মুতাবিক তিন তালাক  হবে। আমি তোমাকে তিন তালাক দিলাম বললে তিন তালাক হয়ে যাবে। যদি তিন মাসে পৃথক পৃথকভাবে এক একবার করে তালাকে রাজয়ী বা বায়েন দেয়, তবে এতেও তিন তালাক হয়ে যাবে। আমি তোমাকে তালাক দিলাম, অথবা তোমাকে এক তালাক দিলাম কিংবা তোমাকে রাজয়ী তালাক দিলাম বললে, এক তালাক হবে। ইদ্দতের  মধ্যে বিনা নিকাহে তাকে গ্রহণ করতে পারে, ইদ্দত অন্তে নিকাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে, ইদ্দত অন্তে নিতে হলে নিকাহ করে নিতে হবে। আমি তোমাকে এক তালাক বায়েন দিলাম বললে নিকাহ ভঙ্গ হয়ে যায়। স্বামী ইচ্ছা করলে ইদ্দতের মধ্যে অথবা ইদ্দতের পরেও নিকাহ করে তাকে নিতে পারে। কিন্তু তিন তালাক দিলে একেবারে হারাম হয়ে যাবে। আলমগীরী, কাযীখান, হিদায়াহ ও শামী। (১৪) স্বামীহীনা তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীলোকের ইদ্দত শেষ না হলে, অন্য লোকের সঙ্গে বিবাহ বা নিকাহ করা হারাম। (১৫) হামিলা স্ত্রীলোকের স্বামী মৃত্যুপ্রাপ্ত হলে অথবা ঐ স্ত্রীলোকটি তালাকপ্রাপ্তা হলে সন্তান প্রসবকাল পর্যন্ত তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে। প্রসব অন্তে নিকাহ করা হালাল হবে। হামিলা ব্যতীত নাবালেগা ও বৃদ্ধা সকল প্রকার স্ত্রীলোক স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করবে। নিকাহ অন্তে স্বামী যে স্ত্রীর সহিত নির্জনবাস করে নাই, এরূপ স্ত্রীকে তালাক দিলে তাকে ইদ্দত পালন করতে হবেনা। আর যদি স্বামী তার সাথে নির্জনবাস করে থাকে তৎপর তাকে তালাক দিয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রে উক্ত স্ত্রীলোকটি নাবালেগা বা স্বাভাবিক মাজুরতা মুক্ত অতিবৃদ্ধা হলে তিন মাস কাল ইদ্দত পালন করবে। আর স্বাভাবিক মাজুরতা বিশিষ্ট হলে তিন ঋতু অবধি ইদ্দত পালন করবে। দুররুল্ মুখতার, শামী, আলমগীরী। (১৬) কুরআন শরীফে ইদ্দতের মধ্যে নিকাহ করা নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ আছে। বরং ইদ্দতের মধ্যে নিকাহ করার কথা স্পষ্টভাবে উত্থাপন করাই নিষিদ্ধ হয়েছে। (১৭) মনে রাখতে হবে যে, ইদ্দতের মধ্যে নিকাহ বা বিবাহ করা হালাল জানলে কাফির হতে হয়। যে খতীব বা স্বাক্ষীরা উহা হালাল বিশ্বাসে সম্পাদন করে দিবে তারা কাফির হয়ে যাবে। তাদের স্ত্রীর বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। যদি হারাম বিশ্বাসে সম্পাদন করে তবে ফাসিক বা মহাপাপী হবে, কাফির হবে না। (১৮) যদি কোন বিধবা বা অবিবাহিতা স্ত্রীলোক ব্যভিচার করার কারণে হালিমা হয়ে থাকে, তবে তাকে নিকাহ দেয়া জায়িয হবে। কিন্তু যার দ্বারা হালিমা হয়েছে সে লোক তার সহিত নিকাহ করলে সন্তান প্রসবের আগেও তার  সহিত নির্জনবাস করতে পারে। আর অন্যলোক তাকে নিকাহ করলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তার সহিত একান্তবাস করতে পারবে না। দুররুল্ মুখতার, আলমগীরী।  একজন মহিলাকর্তৃক যতজন পুরুষকে দেখা বা দেখা দেয়া এবং একজন পুরুষ কর্তৃক যতজন মহিলাকে দেখা জায়িযসম্পর্কিত আয়াত শরীফ সমূহ এবং তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা এ সম্পর্কিত কুরআন শরীফে কয়েকটি আয়াত শরীফ বিদ্যমান আছে। যথা (১) সূরা নিসার ২৩নং  আয়াত শরীফ, (২) সূরা নূরের ৩১নং আয়াত শরীফ (৩) সূরা আহযাবের ৫৫নং আয়াত শরীফ ও (৪) ৬১নং  আয়াত শরীফ। ১. সূরা নিসার ২৩নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন, [১৪৫৮]
حرمت عليكم امهتكم وبنتكم واخوتكم وعمتكم وخلتكم وبنت الاخ وبنت الاخت وامهتكم التى ارضعنكم واخوتكم من الرضاعة وامهت نسائكم وربائبكم التى فى حجوركم من نسائكم التى دخلتم بهن فان لم تكونوا دخلتم بهن فلاجناح عليكم وحلائل ابنائكم الذين من اصلابكم وان تجمعوا بين الاختين الا ما قد سلف ان الله كان غفورا رحيما.
অর্থঃ- তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের মেয়ে, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, তোমাদের সে মাতা যাঁরা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন, তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে একান্তবাস করেছ সে স্ত্রীদের মেয়ে যারা তোমাদের লালন পালনে আছে, যদি তাদের সাথে একান্তবাস না করে থাক তবে তাদের মেয়েকে বিবাহ করতে গুনাহ নাই, তোমাদের ঔরষজাত ছেলেদের স্ত্রীদেরকে এবং দুবোনকে একত্রে বিবাহ করা। কিন্তু যা পূর্বে হয়েছে তাতো হয়েছেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল, দয়ালু। ২. সূরা নূরের ৩১নং আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, [১৪৫৯]
وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولايبدين زينتهن الا ماظهر منها وليضربن بخمرهن على جيوبهن ولايبدين زينتهن الا لبعولتهن او ابائهن اواباء بعولتهن او ابنائهن او ابناء بعولتهن او اخوانهن او بنى اخوانهن او بنى اخوتهن او نسائهن او ما ملكت ايمانهن او التبعين غير اولى الاربة من الرجال او الطفل الذين لم يظهروا على عورة النساء ولايضربن بارجلهن ليعلم مايخفين من زينتهن وتوبوا الى الله جميعا ايه المؤمنون لعلكم تفلحون.
অর্থঃ (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শণ না করে। তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত এবং তারা যেন তাদের মাথার  ওড়না বুকের উপর ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, সহধর্মিনী স্ত্রীলোক, অধিকারভূক্ত বাদী, আর পুরুষদের মধ্যে যারা অবুঝ, আর বালকদের মধ্যে ঐ সমস্ত বালক যাদের কাছে মেয়েদের পর্দার বিষয়টা এখনো স্পষ্ট হয় নাই তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন এমন  ভাবে পদচারনা না করে যাতে তাদের চুপানো সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ে। মুমিনগণ তোমরা সকলেই আল্লাহ্ পাক-এর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ৩. সূরা আহযাবের ৫৫নং আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, [১৪৬০]
لاجناح عليهن فى ابائهن ولاابنائهن ولا اخوانهن ولا ابناء احوانهن ولا ابناء اخو تهن ولا نسائهن ولا ما ملكت ايمانهن واتقين الله ان الله كان على كل شئ شهيدا.
অর্থঃ- নবী পতœী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণের জন্য তাদের পিতা, পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, সহধর্মিনী নারী এবং অধিকারভূক্ত দাসীগণের সামনে যাওয়ার ব্যাপারে গুনাহ নাই। নবী পতœীগণ আল্লাহ পাককে ভয় করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সর্ব বিষয় প্রত্যক্ষ করেন। ৪. সূরা আহযাবের ৬১নং আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, [১৪৬১]
ليس على الاعمى حرج ولا على الاعرج حرج ولا على المريض حرج ولا على انفسكم ان تاكلوا من بيوتكم او بيوت ابائكم او بيوت امهتكم او بيوت اخوانكم او بيوت اخوتكم او بيوت اعمامكم او بيوت عمتكم او بيوت اخوالكم او بيوت خلتكم او ما ملكتم مفاتحه او صديقكم ليس عليكم جناح ان تاكلوا جميعا او اشتاتا فاذا دخلتم بيوتا فسلموا على انفسكم تحية من عند الله مبركة طيبة كذلك يبين الله لكم الايت لعلكم تعقلون.
অর্থঃ- অন্ধের  জন্যে দোষ নেই, খঞ্জের জন্যে দোষ নেই, রোগীর জন্যে দোষ নেই এবং তোমাদের নিজেদের জন্যেও দোষ নেই যে, তোমরা আহার করবে তোমাদের গৃহে, অথবা তোমাদের পিতাগণের গৃহে অথবা তোমাদের মাতাগণের গৃহে অথবা তোমাদের ভাইগণের গৃহে অথবা তোমাদের বোনগণের গৃহে অথবা তোমাদের চাচাগণের গৃহে অথবা তোমাদের ফুফুদের গৃহে অথবা তোমাদের মামাদের গৃহে অথবা তোমাদের খালাদের গৃহে অথবা সে গৃহে যার চাবি আছে তোমাদের হাতে অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে। তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথকভাবে আহার কর, তাতে তোমাদের কোন দোষ নাই। অতঃপর যখনই তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখনই তোমাদের স্বজনদের প্রতি  সালাম দিবে। এটা আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে কল্যানময় ও পবিত্র দোয়া। এমননিভাবে আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্যে আয়াত বা নিদর্শন ও আদেশ নির্দেশ সমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন। যাতে তোমরা বুঝে নাও। সুরা নিসার ২৩নং আয়াত শরীফে امهتكم দ্বারা দাদী ও নানীকে মায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং بنتكم দ্বারা নাতনী ও পুতনীকে মেয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই তাদেরকে বিবাহ করা হারাম কিন্তু  দেখা করা জায়িয।  অনুরূপভাবে সূরা নূরের او ابانهن সূরা আহযাবের فى ابانهناوبيوت ابانكم দ্বারা দাদা এবং নানাকে পিতার অন্তুর্ভুক্ত এবং যথাক্রমে সূরা নূরের او ابنانهن ও সূরা আহযাবের ولا ابنائهن এবং èব্জৈঞ্জম্লৈঞ্জব্জশুল্পঃরূহৃঞ্জ দ্বারা নাতীদেরকে ও (চাই ছেলের ঘরে অথবা মেয়ের ঘরের হোক) ছেলের অন্তুর্ভুক্ত করা হয়েছে। যে বিষয়ে সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ, উলামায়ে কিরাম, ফুক্বাহায়ে কিরাম, মুফাস্সিরীন ও মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ একমত। তাই উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহের ভিত্তিতে যতজন পুরুষ কতৃক মহিলাদেরকে এবং মহিলা কর্তৃক পুরুষকে দেখা করা বা দেখা দেয়া জায়িয তার একটি তালিকা দেয়া হলো- ক. একজন পুরুষ কর্তৃক যতজন মহিলাকে দেখা জায়িয। (১) মা (আপন ও সৎ উভয়েরই দেখা করা জায়িয)। (২) দাদী, পরদাদী (এভাবে যত উর্ধে যাক)। (৩) নানী, পরনানী (এভাবে যত উর্ধে যাক) (৪) মেয়ে (বৈপিত্রেয়া, বৈমাত্রিয়া মেয়ে ও দুধ মেয়েও শামিল) (৫) পুতনী (এখানে দুধ ছেলে ও বৈমাত্রেয়া ও বৈপিত্রেয় ছেলের মেয়েও শামিল) (৬) নাতনী (এখানে দুধ মেয়ে ও বৈপিত্রেয়া মেয়ের মেয়েও শামিল) (৭) বোন (তিন প্রকারঃ আপন, বৈমাত্রিয়া বোন ও বৈপিত্রিয়া বোন শামিল) (৮) ফুফু (আপন ফুফু, বৈমাত্রিয়া ফুফু, বৈপিত্রিয়া ফুফু ও দুধ ফুফু শামিল) (৯) খালা (আপন খালা, বৈমাত্রিয়া খালা, বৈপিত্রিয়া ও দুধ খালা শামিল) (১০) ভাতিজী (ভাতিজীর মেয়ে যত নিম্নে যাক) (১১) ভাগ্নী (ভাগ্নীর মেয়ে যত নিম্নে যাক) (১২) দুধ মা (আড়াই বছরের মধ্যে যার দুধ পান করা হয়েছে)। (১৩) দুধ বোন (আপন বোনের মত দুধ বোনকে দেখা জায়িয) (১৪) শাশুড়ী (এখানে শুধু আপন শাশুড়ী উদ্দেশ্য, সৎ শাশুড়ীকে দেখা হারাম) (১৫) যে স্ত্রীর সাথে মিলামিশা করা হয়েছে তার অন্য পক্ষের মেয়ে। (১৬) ঔরষজাত পুত্রের বধু বা স্ত্রী (এখান থেকে পালক পুত্রের স্ত্রীকে বাদ দেয়া হয়েছে) (১৭) দুধ  পুত্রের বধু বা স্ত্রী। (১৮) অতি বৃদ্ধা মহিলা, যাদের প্রতি তাকালে আকর্ষন বিকর্ষনে পরিণত হয়। খ.একজন মহিলা যতজন পুরুষকে দেখতে পারে বা দেখা দিতে পারে। (১) পিতা (আপন ও মায়ের পূর্বের স্বামী উভয়েরই দেখা করা  জায়িয) (২) দাদা (পর দাদা এভাবে যত উর্ধে যাক) (৩) নানা (পর নানা এভাবে যত উর্ধে যাক) (৪) ছেলে (বৈপিত্রেয়, বৈমাত্রেয় ও দুধ ছেলে সকলেই শামিল) (৫) নাতী বা পৌত্র (এখানে দুধ ছেলে, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ছেলের ছেলেও শামিল) (৬) নাতী বা দৌহিত্র (এখানে দুধ মেয়ে, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় মেয়ের ছেলেও শামিল) (৭) ভাই (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাই শামিল) (৮) চাচা (আপন, বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় ও দুধ চাচা শামিল) (৯) মামা (আপন, বৈমাত্রেয়, বৈপিত্রেয় ও দুধ মামা শামিল) (১০) ভাতিজা (ভাতিজার ছেলে যত নিম্নে যাক)  (১১) ভাগিনা (ভাগিনার ছেলে যত নিম্নে যাক) (১২) দুধ পিতা (আড়াই বছরের ভিতরে যার স্ত্রীর দুধ পান করা হয়েছে) (১৩) দুধ ভাই (আপন ভাইয়ের মত দুধ ভাইকেও দেখা দেয়া জায়িয) (১৪) শশুর। (শুধু আপন শশুর উদ্দেশ্য) (১৫) যে স্বামীর সাথে মিলামিশা করা হয়েছে তার অন্য পক্ষের বা স্ত্রীর ছেলে। (১৬) ঔরষজাত মেয়ের স্বামী বা জামাতা (এখান থেকে পালিত মেয়ের স্বামী বাদ যাবে) (১৭) দুধ মেয়ের স্বামী বা জামাতা। (১৮) পুরুষদের মধ্যে যারা অবুঝ, মহিলার প্রতি যাদের কোন আকর্ষণ নাই। (১৯) বালকদের মধ্যে ঐ সমস্ত বালক যাদের কাছে এখনো মেয়েদের বিষয়টি স্পষ্ট হয় নাই। (২০) অতি বৃদ্ধ পুরুষ, যাদের দিকে তাকালে আকর্ষণ বিকর্ষনে পরিণত হয়। (অসমাপ্ত) 

0 Comments: