اما اذا خرجت الى السوق الى الرجال الاجانب فانه يجب عليك ان تغطى راسك ووجهك وغير ذلك من بدنك. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৪০৬)
অর্থঃ- মহিলা যখন বিশেষ প্রয়োজনে বাজারের উদ্দেশ্যে, পর পুরুষের নিকট বের হবে। তখন তার জন্য ওয়াজিব হবে তার মাথা, মুখম-ল এবং সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৪০৬ পৃষ্ঠা) [১৬৯০-১৬৯১]
قول امافى زماننا فمنع من الشابة اى فمنع نظر الوجه من الشابة ولو من غير شهوة. (حاشية الطحطاوى ص ১৭৫) অর্থঃ- “আমাদের যামানায় যুবতী মহিলাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া নিষেধ অর্থাৎ যুবতী মহিলাদের চেহারা বা মুখম-লের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম। যদিও কামভাব বা শাহওয়াতের আশংকা থাক বা না থাক।” (হাশিয়াতুত্ ত্বহতাবী ১৮৫ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৫ পৃষ্ঠা) [১৬৯২-১৬৯৩]
فحل النظر مقيد بعدم الشهوة والا فحرام وهذا فى زمانهم واما فى زماننا فمنع من الشابة (الدر المختار بيان كراهية النظر ومس ج ৫ ص ২২৪) অর্থঃ- “পূর্ববর্তী যামানায় স্ত্রীলোকের মুখম-লের দিকে শাহওয়াত ছাড়া দৃষ্টি দেয়া জায়িয ছিল, কিন্তু শাহওয়াতের সাথে হারাম ছিল। আর আমাদের বর্তমান যামানায় যুবতী মহিলার দিকে শাহওয়াত সহ ও শাহওয়াত ছাড়া উভয় অবস্থায় দৃষ্টি দেয়া হারাম বা নাজায়িয।” (আদ্ দুররুল্ মুখতার বয়ানু কারাহিয়াতিন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ ২২৪ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৫ পৃষ্ঠা) [১৬৯৪-১৬৯৫]
اما فى زماننا فمنع من الشابة لا لانه عورة بل لخوف الفتنة. (فتارى شامى)
অর্থঃ- “আমাদের বর্তমান যামানায় যুবতী মহিলার চেহারার দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম, কেননা তা পর্দার স্থান। বরং ফিতনার আশংকায় হারাম। কেননা তা ফিতনা থেকে খালি নয়। (ফতওয়ায়ে শামী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৫, ৫৬ পৃষ্ঠা) ওজরবশতঃ বেগানা মহিলার কোন অঙ্গ পরপুরুষকে দেখানোর বিধান [১৬৯৬-১৬৯৭]
لاينظر من اشتهى الى وجهها الا الحاكم والشاهد وينظر الطبيب الى موضع مرضها. (البحر الرائق)
অর্থঃ- “বেগানা মহিলার মুখম-ল বা চেহারা দেখা বা দেখানো জায়িয নেই। কিন্তু বিশেষ ওজরে হাকিম বা বিচারপতি ও সাক্ষীদাতার অন্য বেগানা মহিলার মুখম-ল দেখা মুবাহ বা বৈধ। ডাক্তার বা চিকিৎসক স্ত্রীলোকের শুধু অসুস্থ্য স্থান দেখতে পারবে।” (আল্ বাহরুর রাইক, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৬ পৃষ্ঠা) [১৬৯৮-১৭০১]
الطبيب انما يجوز له اذا لم يوجد امرأة طبيبة فلو وجدت فلايجوزله ان ينظر لان نظر الجنس اخف وينبغى للطبيب ان يعلم امرأة ان امكن وان لم يمكن ستر كل عضو منها سوى موضع الوجع ثم ينظر ويغض ببصره عن غير ذلك الموضع هكذا فى درر الحكام وجامع الرموز. (البحر الرائق، درر الحكام، جامع الرموز)
অর্থঃ- “যখন কোথাও মহিলা ডাক্তার পাওয়া যাবে না তখন পুরুষ ডাক্তার কর্তৃক মহিলা রোগীকে দেখা জায়িয হবে। মহিলা ডাক্তার পাওয়া গেলে পুরুষ ডাক্তারের দেখা জায়িয হবে না। সমজাতীয়ের দেখা সহজ হয়। সম্ভব হলে ডাক্তারের দায়িত্ব হলো কোন মহিলাকে ডাক্তারী শিখায়ে নিবে, নতুবা মহিলার রোগাক্রান্ত স্থান ছাড়া সমস্ত অঙ্গ ঢেকে নিবে। ডাক্তার শুধু রোগাক্রান্ত স্থানই দেখবে এবং চক্ষু সংযত রাখবে। সামান্য একটু বেশী অঙ্গ এবং একটু বেশী সময় দেখা জায়িয নেই। অনুরূপ দুররুল হিকাম এবং জামির্উ রমূয কিতাবে আছে। (আল বাহরুর রাইক, দুরারুল হিকাম, জামির্উ রমূয, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৬ পৃষ্ঠা) [১৭০২-১৭০৩]
ينظر لمداوى الى موضع المرض بقدر الضرورة بان يستر سائر المواضع ويغض بصره او نحو ذلك ينبغى ان يعلم الامراة تدويها لان نظرها بعد من الفتنة هكذا فى الهداية. (جامع الرموز، هداية)
অর্থঃ- “চিকিৎসক বা ডাক্তার মহিলা রোগীর রোগাক্রান্ত স্থানটি প্রয়োজন পরিমাণ দেখতে পারবে। এমতাবস্থায় অন্য সমূদয় স্থান ঢেকে নিবে এবং চোখের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে। কোন মহিলাকে ঔষধ প্রয়োগ শিক্ষা দেয়া উচিৎ কেননা মহিলা কর্তৃক মহিলাকে দেখা ফিতনার ক্ষেত্রে অনেক নিরাপদ। অনুরূপ ‘হিদায়াহ’ নামক কিতাবে আছে।” (জামিউর রুমূয, হিদায়াহ) [১৭০৪-১৭০৫]
ولو اردا ان يتزوج امرأة فلا باس ان ينظر اليها وان خاف ان يشتهيا. (فتاوى شامى ج ه ص ২৪৪)
অর্থঃ- “বিবাহ করার নিয়তে বেগানা স্ত্রীলোকের চেহারা বা মুখম-ল দেখা জায়িয। যদিও শাহওয়াতের সাথে হোক না কেন।” (ফতওয়ায়ে শামী ৫ম জিঃ ২৪৪ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৭ পৃষ্ঠা) মহিলাদের কণ্ঠস্বরও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত [১৭০৬-১৭০৭]
هل صوت المرأة عورة؟ فاجاب: مهك، المرأة مأمورة بتجنب الفتنة، فاذا كان يترتب على سماع صوتها افتتان الرجال بها. فانها تخفيه: ولذلك فانها لاترفق صوتها بالتلبية، وانما تلبى سرا. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৪৩১، المنتقى من فتاوى فضلية الشيخ صالح بن فوزان ج ৩ ص ১৯৩، ১৯৪)
অর্থঃ- মহিলাদের কক্তস্বর কি পর্দার অন্তর্ভুক্ত? জাওয়াবঃ হ্যাঁ, মহিলাদের কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহিলারা ফিতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার ব্যাপারে নির্দেশিত বা আদিষ্টিত। যদি মহিলাদের গলার আওয়াজ শুনে তাতে পুরুষদের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদের ভয় থাকে, তবে মহিলারা আস্তে চুপে চুপে কথা বলবে। এজন্যই মহিলারা হজ্জের সময় ‘তালবিয়া’ পাঠে আওয়াজ উচ্চ করবে না। বরং চুপে চুপে ‘তালবিয়া’ পাঠ করবে। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪৩১ পৃষ্ঠা, আল মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়া ফাযীলাতিশ শাইখ ছালিহ বিন ফাওযান ৩য় জিঃ ১৯৩, ১৯৪ পৃষ্ঠা) [১৭০৮]
المرأة لايموز لها مخاطبة الرجال الذين ليسوا محارم لها الا عند الحاجة. ........... اما الخضوع فى القول المنهى عنه فهو ترخيم الصوت وتحسينه بحيث يثير الفتنة فلا يجوز للمرأة ان تكلم الرجل الاجنبى بصوت رخيم ولا ان تكلمه بمثل ما تكامبه زوجها. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৪৩২)
অর্থঃ- যারা মাহরাম নয় এমন পুরুষদের সাথে মহিলাদের জন্য কথা-বার্তা বলা জায়িয নেই। তবে বিশেষ প্রয়োজনের সময় আলাদা কথা। ....... সূললিত ভাষায় কথা বলা নিষেধ। তা হচ্ছে ভাঙ্গা আওয়াজ এবং সুন্দর, মধুর কথা যা ফিতনার সৃষ্টি করে। মহিলাদের জন্য পরপুরুষদের সাথে আকর্ষণীয় মধুর কণ্ঠে আলাপ-আলোচনা করা জায়িয নেই। আর স্বামীর সাথে যেভাবে আকর্ষণীয় কথা বলে সেভাবে কথা বলাও জায়িয নেই। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল মুসলিমাহ ১ম জিঃ ৪৩২ পৃষ্ঠা) [১৭০৯]
صوت المرأة عورة عند الرحال الاجانب على الصحيح ولذلك لا تمبح فى الصلاة. (فتاوى المرأة المسلمة ج ১ ص ৪৩৪)
অর্থঃ ছহীহ বা বিশুদ্ধ মতে পরপুরুষের কাছে মহিলাদের গলার আওয়াজ পর্দার আওতাভুক্ত। এজন্য মহিলারা নামাযে জোড়ে তাসবীহ পড়বেনা। (ফাতাওয়াল্ মারয়াতিল্ মুসলিমাহ্ ১ম জিঃ ৪৩৪ পৃষ্ঠা) নিজ ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেয়া মুস্তাহাব [১৭১০-১৭১১]
من يدخل بيته يستحب له ان يسلم على اهله لانهم احق بالسلام من يرهم (مجالس الابرار بيان السلام.
অর্থঃ- “যখন কেউ নিজ ঘরে প্রবেশ করবে তখন তার জন্য তাঁর পরিবারবর্গকে সালাম দেয়া মুস্তাহাব। কেননা নিজ পরিবারবর্গ অন্যদের চেয়ে সালাম পাওয়ার অধিক হক্বদার।” (মাজালিসুল্ আবরার বয়ানুস্ সালাম, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৫, ৩৬ পৃষ্ঠা) [১৭১২-১৭১৩]
وقد روى عن انس رضى الله عنه انه عليه الصلوة والسلام قال يانبى اذا دخلت على اهلك فسلم عليهم يكون بر كة عليك وعلى اهل بيك. (مجالس الابرار) অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। নিশ্চয়ই ছাহেবে ইল্মে গাইব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে বৎস! যখন তুমি তোমার পরিবারবর্গের কাছে যাও, তখন তাদের উদ্দেশ্যে সালাম দিবে। এতে তোমার উপর এবং তোমার পরিবারবর্গের উপর রহমত, বরকত অবতীর্ণ হবে।” (মাজালিসুল্ আবরার, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৬ পৃষ্ঠা) [১৭১৪-১৭১৫]
جاء رجل الى النبى صلى الله عليه وسلم شكا اليه الفقر قال اذا دخلت بيتك فسلم وان كان فيه وان لم يكن فيه احد فسلم على نفسك واقرأ "قل هو الله اح مرة واحدة ففعل الرجل ذلك فازد الله عليه رزقا حتى افاض على خير انه. (تفسير روح البيان سورة اخلاص)
অর্থঃ- “এক ব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে অভাব-অনটনের কথা উল্লেখ করলো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন তুমি তোমার নিজ ঘরে প্রবেশ করো, তখন পরিবারবর্গকে সালাম দিও, যদি তারা সেখানে উপস্থিত থাকে। আর যদি ঘরে কেউ না থাকে, তবুও তুমি নিজের উপর সালাম দিও এবং সূরা ইখলাছ একবার পাঠ করিও। অতঃপর লোকটি অনুরূপ করলো। তাই আল্লাহ পাক তার রিযিক বৃদ্ধি করে দিলেন। এমনকি লোকটি তার পাড়া প্রতিবেশীগণকেও সাহায্য-সহযোগিতা করতে সক্ষম হলো।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান সূরা ইখলাছ, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৬ পৃষ্ঠা) [১৭১৬-১৭১৮]
فان لم يكن فيه احد يسلم على نفسه بان يقول السلام علينا وعلى عباد الله الصلالحين لانه تعالى قال فاذا دخلتم بيوتا فسلموا على انفسكم. (مجالس الابرار بيان السلام، تفسير القرطبى)
অর্থঃ- “যদি ঘরে কেউ না থাকে তবে নিজের উপর সালাম দিবে এভাবে বলে যে, ‘আস্ সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন’ অর্থাৎ আমি আমার উপর এবং আল্লাহ পাক-এর নেক বান্দাগণের উপর সালাম দিলাম। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমরা ঘর সমূহে প্রবেশ করবে তখন তোমাদের নিজেদের উপর সালাম দিও।”(মাজালিসুল্ আবরার বয়ানুস্ সালাম, তাফসীরুল কুরতুবী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৬ পৃষ্ঠা) অপরের ঘরে প্রবেশের জন্য সালাম দেয়া ওয়াজিব [১৭১৯-১৭২১]
وذكر فى قاضى خان ان من اتى دار انسان يجب عليه ان يستاذن قبل السلام ثم دخل يسلم اولاثم يتكلم. (مجالس الابرار، فتاوى قاضى خان) অর্থঃ- “ফতওয়ায়ে কাযীখান’ কিতাবে উল্লেখ আছে, যদি কারো অপর কোন ব্যক্তির ঘরে যাওয়ার দরকার হয়, তখন তার প্রতি ওয়াজিব যে সালামের পূর্বে ঘরওয়ালার অনুমিত নিবে। অতঃপর প্রবেশ করবে এবং প্রথমে সালাম দিবে তৎপর প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা করবে।” (মাজালিসুল্ আবরার, ফতওয়ায়ে কাযীখান, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৭ পৃষ্ঠা) মূলতঃ সালাম দেয়ার ব্যাপারে দু’টি নিয়ম উল্লেখ করা হয়, প্রথমতঃ যদি কোন লোক মারফত প্রবেশের অনুমতি নেয় তবে প্রবেশের পর সালাম দিবে। দ্বিতীয়তঃ যদি অনুমতি নেয়ার জন্য কাউকে না পাওয়া যায়, তবে সালামের মাধ্যমে প্রবেশের অনুমতি তলব করবে। মহিলাদের পরষ্পরে সালাম দেয়া সুন্নত, আর জাওয়াব দেওয়া ওয়াজিব [১৭২২-১৭২৩]
والنساء بعضهن مع بعض فى حكم السلام كالرجال. (مجالس الابرار)
অর্থঃ- “মেয়ে লোকের পরস্পরে সালাম আদান-প্রদানের হুকুম পুরুষের সহিত পুরুষের সালাম ও জাওয়াব দেয়ার হুকুমের মতই। অর্থাৎ মহিলাদের পরস্পরে সালাম দেয়া সুন্নত এবং জবাব দেয়াও ওয়াজিব।” (মাজালিসুল্ আবরার, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৩৯, ৪০ পৃষ্ঠা) মাহরাম ও মাহরামাদের মধ্যে সালাম ও জাওয়াব দেয়া জায়িয [১৭২৪-১৭২৫]
واما الرجل اذا سلم على امرأة فان كانت زوجته او جاريته او كانت من ملحللارمه فعليها الرد وان كانت اجنبية سابة لا يجوز للها الرد ويكون الرجل مفرطا فى السلام عليها. (مجالس الابرار بيان السلام)
অর্থঃ- “যখন কোন পুরুষ এমন মহিলাকে সালাম দিবে যে তার স্ত্রী, দাসী অথবা মাহরামা মহিলা’ তখন মহিলার জন্য তার সালামের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। যদি মহিলা বেগানা যুবতী হয়, তবে তার জন্য বেগানা পুরুষের সালামের জাওয়াব দেয়া জায়িয নেই। বেগানা যুবতীকে সালাম দেয়াও জায়িয নেই। পুরুষের এরূপ সালাম বৃথা যাবে।” (মাজালিসুল্ আবরার বায়ানুস্ সালাম, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৪০ পৃষ্ঠা) [১৭২৬-১৭২৭]
المرأة لن سلمت على رجل فاذا كانت زوجته او جاريته او كانت من محارمه او كانت عجوزا لايخاف منها الفتنة فعليه الرد وان كانت شابة تميل اليها النفس يكره له الرد وتكون المرأة مفرطة فى السلام عليه. (مجالس الابرار بيان السلام) অর্থঃ- “স্বীয় স্ত্রী, দাসী, মাহরামা মহিলা এবং অতিবৃদ্ধা স্ত্রীলোক যার থেকে কোন ফিতনার আশংকা নাই এ রকম স্ত্রীলোক যদি কোন মাহরাম পুরুষকে সালাম দেয় তবে তার সালামের জাওয়াব দেয়া পুরুষের জন্য ওয়াজিব। যদি গাইরে মাহরামা যুবতী হয় তবে অন্তরের ফিতনার আশংকায় তার সালামের জাওয়াব দেয়া মাকরূহ তাহরীমীর গুনাহ হবে।” (মাজালিসুল্ আবরার বায়ানুস্ সালাম, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া) নেককার স্ত্রীলোকের জন্য বদকার স্ত্রীলোকের সহিত দেখা করার বিধান [১৭২৮-১৭৩০]
لاينبغى للمرأة الفاجرة لانها تصفها عند الرجال فلا تضع جلبا بها وخمارها عندها هكذا الشامى. (الفتاوى العالمكيرية بيان النظر ومس ج ه فتاوى شامى)
অর্থঃ- “নেক্কার মহিলার জন্য বদকার মহিলার সহিত দেখা করা উচিৎ নয়। কেননা বদকার স্ত্রীলোক অন্য পুরুষের কাছে নেককার মহিলার গঠন-আকৃতি বর্ণনা করতে পারে। এজন্য নেককার মহিলা তার বোরকা, চাদর এবং ওড়না পর্যন্ত বদকার মহিলার সামনে খুলবে না। অনুরূপ শামী কিতাবে উল্লেখ আছে।” (আল্ ফাতাওয়াল আলমগীরিয়াহ্ বয়ানুন্ নাযর ওয়াল মাস ৫ম জিঃ, ফতওয়ায়ে শামী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৯ পৃষ্ঠা) [১৭৩১-১৭৩৩]
ولا يحل ايضا لامراة مؤمنة ان تكشف عورتها عند مشركة او كنتابية الاتكون امة لها هكذا فى الشامى. (الفتاوى العالمكرية بيان النظر ومس ج ৫) অর্থঃ- “মুশরিকা দাসীর সম্মুখে বোরকা এবং চাদর খোলা জায়িয নেই। তবে বেদ্বীন দাসী যদি নিজ খাছ বান্দী হয় তাহলে জায়িয আছে। অনুরূপ শামী কিতাবেও আছে।” (আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়াহ বয়ানুন্ নাযর ওয়া মাস্ ৫ম খ-, ফতওয়ায়ে শামী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৯ পৃষ্ঠা) বোরকার উপর উচ্ছাকৃত দৃষ্টি দেয়া হারাম। [১৭৩৪-১৭৩৫]
وان كان على المرأة بيان فلا بأس بان بتأمل جسدها وهذا اذا لم تكن ثيابها ملتز مة بها بحيث تصف ما تحتها ولم يكن دقيقها بحيث تصف ما تحته فان كانت بخلاف ذلك فينبغى له ان يغض بصره. (فتارى شامى بيان النظر ومس ج ১৪১৫)
অর্থঃ- “যে মহিলার শরীরে মোটা কাপড় এরূপ ঢিলা থাকে যে, তার শরীরের বাধন দেখা যায় না। তার প্রতি অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টি জায়িয় আছে। (বোরকার উপর ইচ্ছাকৃত দৃষ্টি দেয়াও জায়িয নেই বরং হারাম ও কবীরা গুনাহ) কিন্তু যদি কাপড় মোটা না হয় বরং পাতলা হয় যাতে ভিতরের শরীর প্রকাশ পায় অথবা কাপড় যদি পাতলা না হয় বরং কাপড় মোটা কিন্তু কাপড় এমন আটো-সাটো বা চিপানো যে যাতে শরীরের গঠন প্রকাশ পায়, এমতাবস্থায় চক্ষুর দৃষ্টিকে নিম্নগামী করা বা ফিরায়ে নেয়া ওয়াজিব। অর্থাৎ এমন কাপড়ের উপর দিয়ে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নাই, বরং হারাম ও নাজায়িয।” (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ ২৪১ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৭ পৃষ্ঠা) [১৭৩৬-১৭৩৭]
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من تأمل خلف امرأة وراء ثيابها حتى تبين له حجم عظا مها لم يرح رائحة الجنة. (فتاوى شامى بيان النظر ومس ج৫)
অর্থঃ- “হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি মহিলার প্রতি দৃষ্টি করতঃ তার কাপড়ের উপর দিয়ে শরীরের গঠন অনুভব করল। সে জান্নাতের সুবাস পর্যন্ত পাবেনা। (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৮ পৃষ্ঠা) [১৭৩৮-১৭৩৯]
اقول مفاده ان روية الشوب بحيث يصف حجم العضو لممنوء ولو كشفعا لاتر وابشرة منه. (شامى ج ৫) অর্থঃ- “পূর্ব উল্লেখিত হাদীছ শরীফ অবলম্বনে ফতওয়ায়ে শামীর মুছান্নিফ লিখেছেন যে, মোটা কাপড়ের উপর দিয়ে যদি স্ত্রী লোকের শরীরের গঠন ও রূপ-সৌন্দর্য্য প্রকাশ পায়, তাহলে তার উপর দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। বরং হারাম ও নাজায়িয।” (ফতওয়ায়ে শামী বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্ ৫ম জিঃ, ফওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৮ পৃষ্ঠা) পুরুষ এবং মহিলার আওরাত বা ছতর [১৭৪০-১৭৪২]
يحل الرجل ان ينظر من الرجل سوى ما تحت سرة الى ان يجاوز الركبته ونظر المرأة كنظر الرحل الى الرحل. والركبة عندنا عورة والسرة ليست بعورة هكذا فى العالمكيرى ايضا فيه مادون السرة الى ممنبت الشعر عورة. (فتاوى قاضى خان بيان النظر ومسى، فتاوى عالكيرى)
অর্থঃ- “একজন পুরুষ কর্তৃক অপর পুরুষের নাভির নিচ হতে হাটুর নিচ পর্যন্ত স্থান ব্যতীত অন্যান্য অঙ্গ দেখা হালাল বা জায়িয। একজন মহিলা কর্তৃক অপর মহিলার নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত স্থান ব্যতীত অন্যান্য অঙ্গ দেখা জায়িয। যেমনটি পুরুষের কাছে পুরুষের দৃষ্টির হুকুম। আমাদের হানাফী মাযহাব মতে হাটু ছতরের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু নাভি ছতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। এরূপভাবে আলমগীরীতে আছে। সেখানে আরো আছে যে, নাভি সংলগ্ন স্থান এবং চুল ছতর বা ইজ্জত-আবরুর মধ্যে গণ্য।” (ফতওয়ায়ে কাযীখান বয়ানুন্ নযর ওয়া মাস্, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৮, ৫৯ পৃষ্ঠা) মৃত স্ত্রীকে স্বামী গোসল দিতে পারবেনা, কিন্তু মৃত স্বামীকে স্ত্রী গোসল দিতে পারবে [১৭৪৩-১৭৪৪]
يمنع زوجها من غسلها وسها لا من النظر اليها على الاصح. (الدر المختار كتاب الجنازة)
অর্থঃ- “স্বামী কর্তৃক তার মৃত স্ত্রীকে গোসল করানো ও স্পর্শ করা ছহীহ কওল মতে জায়িয নাই। তবে দেখা জায়িয আছে।” (আদ্ দুররুল মুখতার কিতাবুল্ জানাযা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৫৯ পৃষ্ঠা) [১৭৪৫-১৭৪৭]
لايغسل ززجنخ تغسل زوجها الا اذا ارتفع الزوجية بوجه هكذا فى البحر الرائق. (جامع الرموز كتاب الجنازة ص ১২৩، البحر الرائق)
অর্থঃ- “স্বামী তার মৃত স্ত্রীকে গোসল করানো জায়িয নাই। কিন্তু স্ত্রী কর্তৃক তার মৃত স্বামীকে গোসল করানো জায়িয। যদি কোন কারণে ঐ স্ত্রীর সাথে বিবাহ ছিন্ন হয়ে থাকে তবে জায়িয নাই। অনুরূপ ‘আল বাহরুর রাইক’ নামক কিতাবে আছে।” (জামিউর রুমূয কিতাবুল জানাযা ১২৩ পৃষ্ঠা, আল বাহরুর রাইক, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৬০ পৃষ্ঠা) [১৭৪৮-১৭৪৯]
الزوجة تغسل زوجها دخل بها او لابشرط بقاء الزوجية عند غسل حتى لو كانت مبانة بالطلاق وهى فى العدة او محرومة ضاع او مصاهرة لم تغسله. (جامع الرموز كتاب الجنازة ص ১৭৪)
অর্থঃ- “যদি উক্ত স্ত্রী নির্জনে নিকটবর্তী হয়ে থাকে অথবা না হয়ে থাকে তবুও স্ত্রী স্বামীকে গোসল করাতে পারবে। কিন্তু গোসলের পূর্বে তালাকে বাইন, হুরমতে মুছাহিরা, দুধ সম্পর্ক ও কাফির হওয়ার দরুন যদি বিবাহ ছিন্ন হয়ে থাকে, তবে গোসল করাতে পারবে না।” (জামিউর রুমূয কিতাবুল জানাযা ১৭৪ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৬০ পৃষ্ঠা) [১৭৫০-১৭৫১]
ان ابا بكر رضى الله تعالى عنه لما مات غسلته اسماء زوجته. (حاشية تبيين الحقائق كتاب الجنازة)
অর্থঃ- “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন ইন্তিকাল করেছিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে গোসল করিয়েছিলেন।” (হাশিয়ায়ে তাবয়ীনুল্ হাক্বাইক্ব কিতাবুল্ জানাযা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৬০ পৃষ্ঠা) উল্লিখিত ইবারত থেকে প্রমাণিত হলো যে, স্ত্রী মৃত স্বামীকে স্পর্শ করতে, গোসল করাতে এবং কাফন পড়াতে পারবে। কিন্তু স্বামী মৃত স্ত্রীকে শুধু দেখতে পারবে। [১৭৫২-১৭৫৫]
كل عضو لايجوز النظر اليه قبل الانفصال لايجوز بعده ولو بعده ولو بعد الموت كشعر عاتة وشعر راسها وعظم ذراع جرة وساقها وقلامة ظفر رجلها ...... هكذا فى العالمكيرى. (الدر المختار، فتاوى عالمكيرى، ملتق الابحر)
অর্থঃ- “শরীরের যে যে অঙ্গ দেখা জায়িয নাই, মৃত্যুর পরও সেই সেই অঙ্গের কিয়াদাংশ শরীর হতে আলাদা হলে তা দেখাও জায়িয হবে না। যথা গুপ্তস্থানের লোম, স্ত্রীলোকের মাথার চুল, স্বাধীনা মহিলার বাহু, পায়ের সাক বা নলার হাড়, পর্যন্ত দেখা জায়িয নাই। স্ত্রীলোকের পায়ের নখ দেখা জায়িয নাই। ... ... ... অনুরূপ আলমগীরী কিতাবে আছে। (আদ্ দুরুল্ মুখতার, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, মুলতাকাল আবহুর, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৬১ পৃষ্ঠা) নির্জনে দুধ বোন ও শাশুরীর সহিত সাক্ষাত নিষেধ [১৭৫৬-১৭৫৭]
الا الاخت رضاع والصرة الشابة (مجمع الانهر ج ২ ص ৫৪০) অর্থঃ- “নির্জনে দুধ বোন এবং যুবতী শাশুরীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করাও নিষেধ।” (মাজমাউল আনহুর ২য় জিঃ ৫৪০ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া ৬১ পৃষ্ঠা) নিকাহে মুতয়া এবং নিকাহে মুওয়াক্কাত বা সাময়িক বিবাহ বাতিল, মানসূখ, হারাম ও নাজায়িয [১৭৫৮-১৭৫৯]
(ونكاح المتعة باطل) وهو ان يقول لامرأة اتمتع بك كذا مدة بكذا من المال وقال مالك هو جائز لانه كان سباحا فيبقى الى ان يظهر ناسخة. قلنا ثبت النسخ باجماع الصحابة رضى اله عنهم وابن عباس رضى الله عنهما صح رجوعه الى قولهم قتقرر الاجماع (والنكاح المؤقت باطل) مثل ان يتزوج امرأة بشهاداة شاهدين الى عشرة ايام. (الهداية مع الدراية ج ২ ص ৩১২، ৩১৩، فتح القدير ج ৩ ص ১৪৯، ১৫০)
অর্থঃ- (মুতয়া বিবাহ বাতিল) মুতয়া বিবাহ হচ্ছে, পুরুষ কোন স্ত্রীলোককে এভাবে বলা যে, আমি তোমাকে এত দিনের জন্য এ পরিমাণ মালের বিনিময়ে ভোগ করবো। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লহি আলাইহি বলেন, এটা জায়িয রয়েছে। কেননা মুলতঃ এটা মুবাহ বা বৈধ ছিল। তাই নাসিখ বা রহিতকারী সাব্যস্ত হওয়া পর্যন্ত বৈধতা অব্যাহত থাকবে। আমরা হানাফীগণ বলি যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের ইজমা-এর মাধ্যমে মুতয়া বিবাহের বৈধতা মানছূখ বা রহিত হওয়া সাব্যস্ত হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা নিজের মতকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের মতের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। সুতরাং মুতয়া বিবাহ বাতিল, মানছূখ ও নাজায়িয-হারাম হিসেবে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হলো। (নিকাহে মুওয়াক্কাত বা সাময়িক বিবাহ বাতিল) যেমন কেউ দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দশদিনের জন্য কোন মহিলাকে বিবাহ করলো। (আল হিদায়াহ্ মায়াদ দিরায়াহ্ ২য় জিঃ ৩১২, ৩১৩ পৃষ্ঠা, ফতহুল্ ক্বদীর ৩য় জিঃ ১৪৯, ১৫০ পৃষ্ঠা) [১৭৬০-১৭৭৫]
)قوله ونكاح المتعة با طل وهو ان يقول لامراة) ..... (اتمتع بك كذا مدة) عشرة ايام مثلا اويقول اياما او متعينى نفسك ايام اوعشرة ايام او لم يذكر اياما (بكذا من المال) قال الشيخ الاسلام فى الفرق بينه وبين النكاح الموقت ان يذكر الموق بلفظ النكاحوالتزويج وفى المتعة اتمتع او استمتع. يعنى ما اشتمل على مادة متعة والذى يظهر مع ذلك عدم اشتراط الشهود فى المتعة وتعيين المدة وفى الموقت الشهود وتعيينها ...... (قلنا قد ثبت النسخ باجماع الصحابة رضى الله عنهم) (فتح القدير ج ৩ ص ১৪৯، ১৫০، كفية ج ৩ ص ১৫০، ১৫১، شرح العناية ج ৩ ص ১৫০، حاشية سعدى .... ج ৩ ص ১৫০، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، المفهم، فتح الملهم للتقى عثمانى، وشبير احمد عثمانى)
অর্থঃ- (মুছান্নিফের উক্তিঃ মুতয়া বিবাহ বাতিল। মুতয়া বিবাহ হলোঃ কোন মহিলাকে এভাবে বলা যে,) ... ... ... (আমি তোমাকে এত দিনের জন্য ভোগ করবো) যেমন দশ দিন অথবা বলবে অনির্দিষ্ট দিন অথবা তুমি স্বয়ং আমার ভোগ্যের মধ্যে অনির্দিষ্ট দিনে, অথবা দশদিন নতুবা কোন দিনের কথা উল্লেখ করবে না। (এ পরিমান মালের বিনিময়ে) হযরত শাইখুল্ ইসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নিকাহে মুতয়া এবং নিকাহে মুওয়াক্কাত এর মধ্যে পার্থক্য আছে। নিকাহে মুওয়াক্কাতে نكاح নিকাহ ও تزويج‘তাযবীজ’ শব্দ উল্লেখ করতে হয়। আর নিকাহে মুতয়া বা মুতয়া বিবাহে اتمتعআতামাত্তাউ’ অথবা استمتع ‘আস্তাম্তিউ’ শব্দ উল্লেখ করতে হয়। অর্থাৎ নিকাহে মুতয়া’য় দু’জন স্বাক্ষী এবং দিন শর্ত নয়, কিন্তু নিকাহে মুত্তয়াক্কাতে স্বাক্ষী এবং দিনের নিদিষ্টতা শর্ত। .............. (আমরা হানাফীগণ বলি যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের ইজমা-এর মাধ্যমে মুতয়া বিবাহের বৈধতা মানছুখ বা রহিত হওয়া সাব্যস্ত হয়েছে।) ... ... ... (ফতহুল্ ক্বদীর ৩য় জিঃ ১৪৯, ১৫০ পৃষ্ঠা, হাশিয়ায়ে সা’দী চল্পী ৩য় জিঃ ১৫০ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল মুফহিম, ফতহুল মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, ওয়া শিব্বীর আহমদ উছমানী) (অসমাপ্ত) পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ সাইয়্যিদ মুহম্মদ আখতারুজ্জামান কামিল পরীক্ষার্থী/০৪ নাগেশ্বরী আলিয়া মাদ্রাসা, কুড়িগ্রাম। সুওয়ালঃ খাছ সুন্নতী লুঙ্গি তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের লুঙ্গি কি রকম ছিল? দলীল-আদিল্লাহসহ জানালে আমরা খাছ সুন্নত পালনে ধন্য হবো। জাওয়াবঃ খাছ সুন্নতী লুঙ্গি যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরিধান করেছিলেন, তা হচ্ছে, (১) সিলাইবিহীন বা ফাঁড়া, (২) দৈর্ঘ্য সাড়ে চার হাত প্রস্থ আড়াই হাত ও (৩) নিছফু সাক্ব থেকে টাখনুর উপর পর্যন্ত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিলাইযুক্ত বা ফাঁড়া নয় এমন লুঙ্গি কখনো পরিধান করেননি। যেমন, বুখারী শরীফের ২য় জিঃ ২৪ পারা ৮৬৫ পৃষ্ঠায় এবং শামায়িলুত্ তিরমিযী ৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে যে,
حدثنا مسدد قال حدثنا اسما عيل قال اخبرنا ايوب عن حميد بن هلال عن ابى بردة قال اخرجت الينا عائشة كساء اواذارا غليظا فقالت قبض روح النبى صلى الله عليه وسلم فى هذين.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত মুসাদ্দাদ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইসমাঈল রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত আইয়ূব রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হুমাইদ বিন হিলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। হযরত আবূ বুরদাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আমাদের সামনে একটি চাদর এবং একটি মোটা সিলাইবিহীন লুঙ্গি বের করে আনেন। অতঃপর তিনি বলেন, এ দু’টি কাপড় মুবারক পরিহিত অবস্থায় হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রূহ মুবারক (আল্লাহ পাক-এর কাছে) নেয়া হয়।” অনুরূপ বর্ণনা মুসলিম শরীফ ও ইবনু মাজাহ শরীফে আছে। অত্র হাদীছ শরীফের كساء وازترا ‘চাদর এবং ফাঁড়া লুঙ্গি’ এর ব্যাখ্যায় ‘শামায়িলুত্ তিরমিযী’ এর শরাহ ‘শরহে ইমাম আব্দুর রউফ মানাবী মিছরী’ এর ১ম জিঃ ২১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
وهو ما يستر اعلى اليدن ضد الازتر.
অর্থঃ- “كساء বা চাদর যা শরীরের উপরের অংশ ঢেকে রাখে। ازار ‘ইযার’ বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি এর বিপরীত। অর্থাৎ সিলাইবিহীন লুঙ্গি শরীরের নিম্নাংশ ঢেকে রাখে। “আল মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামায়িলিল্ মুহম্মদিয়া”-এর ১০২ পৃষ্ঠায় আছে,
والكساء ما يستر اعلى البدن ضد الازار.
অর্থঃ- كساء ‘কিসা’ বা চাদর যা শরীরের উপরের অংশ ঢেকে রাখে। اذار ‘ইযার’ বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি এর বিপরীত। অর্থাৎ সিলাইবিহীন লুঙ্গি শরীরের নিম্নাংশ ঢেকে রাখে। এ ইবারত দু’টি থেকে প্রমাণিত হয়, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাদর মুবারক ও লুঙ্গি মুবারক হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দেখিয়েছিলেন। তা সিলাইবিহীন তথা ফাঁড়া ছিল। একটি দিয়ে শরীরের উপরের অংশ ঢাকা হতো তা যেমন সিলাইবিহীন চাদর ছিল তেমনি অন্যটি দিয়ে নিম্নাংশ ঢাকা হতো, যার নাম হচ্ছে ইযার বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি। “শামায়িলুত্ তিরমিযী” এর ৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
حدثنا ممحمود بن غيلان انا ابو داود عن شعبة عن الاشعث بن سليم قال سمعت عمتى فحدثت عن عمها قال بينما انا امشى بالمدينة اذا انسان خلفى يقول ارفع ازارك فانه اتقى وابقى فالتفت فاذا هو رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلت يا رسول الله انما هى بردة ملحاء قال امالك فى اسوة فنظرت فاذا اذاره الى نصف ساقيه.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মাহমূদ বিন গইলান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দেন হযরত আবূ দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শু’বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আশয়াছ বিন সুলাইম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি বলেন, আমি আমার ফুফু رهم)) থেকে, তিনি হাদীছ বর্ণনা করেন, তাঁর চাচা (হযরত উবাইদ বিন খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে। তিনি বলেন, একদা আমি মদীনা শরীফে হেঁটে চলছিলাম। এমন সময় আমার পিছন দিকে একজন লোক বলে উঠলেন, ‘তোমার সিলাইবিহীন লুঙ্গি উঁচু কর, কেননা তা ধুলামাটি অধিক রক্ষাকারী ও অধিকতর স্থায়ীত্বকারী। তখন আমি চেহারা ফিরিয়ে দেখলাম, তিনি হলেন হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটা তো কালো ডোরাদার সাদা রংয়ের কাপড়। তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আমার মধ্যে কি তোমার জন্য অনুসরণীয় অনুকরণীয় নেই? অর্থাৎ আমার আদর্শ তোমার জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। তখন আমি লক্ষ্য করলাম যে, তাঁর (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর) সিলাইবিহীন লুঙ্গী মুবারক তাঁর নিসফু সাক্ব পর্যন্ত। অত্র হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় হযরত আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘জামউল্ ওসায়িল ফী শরহিশ্ শামায়িল’ নামক কিতাবের ১ম জিঃ ২১৩ পৃষ্ঠায় সুন্নতী, সিলাইবিহীন লুঙ্গী সম্পর্কে বর্ণনা করেন,
(فنظرت) اى الى لباسه (فاذا اذاره) باعتبار طرفيه (اى نصف ساقيه)
অর্থঃ- (আমি লক্ষ্য করলাম) অর্থাৎ তাঁর পোশাক মুবারকের দিকে (তাঁর তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিলাইবিহীন লুঙ্গি মুবারক) সূক্ষ্ম বিবেচনায় সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু’প্রান্ত (তাঁর নিসফু সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিল।) ازاره এর ব্যাখ্যায় অত্র ইবারতে উল্লিখিত طرفيه ‘ত্বরফাইহি’ শব্দটি দ্বারা বুঝা যায় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লুঙ্গি মুবারক ‘সিলাইবিহীন’ তথা ফাঁড়া ছিল। তাই সিলাইবিহীন বা ফাঁড়া লুঙ্গি খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও সিলাইবিহীন লুঙ্গি পরিধান করতেন। যেমন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে। বুখারী শরীফের ‘কিতাবুল লিবাস’ ২য় জিঃ ২৪ পারা ৮৬০ পৃষ্ঠায় আছে,
حدثنا احمدبن يونس قال حدثنا زهير قال حدثنا موسى بن عقبة عن سالم عن ابيه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من جر ثوبه خيلاء لم ينظر الله اليه يوم القيامة فقال ابو بكرن الصديق يا رسول الله ان احد شقى ازارى يسترخى الا ان اتعاهد ذلك منه فقال النبى صلى الله عليه وسلم لست ممن يصنعه خيلاء.
অর্থঃ- হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আহমদ বিন ইউনূস রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত যুহাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মূসা বিন উক্ববা, হযরত সালিম বিন আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি তাঁর পিতা হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে, তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরিধানের কাপড় অহংকার বশতঃ (গিরার নিচে) ঝুলিয়ে চলে, আল্লাহ পাক ক্বিয়ামতের দিন তার দিকে (রহমতের সাথে) তাকাবেন না। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু’প্রান্তের একদিক ঝুলে পড়ে, যদি না আমি তাতে গিরা দেই। তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত নন, যারা অহংকার বশতঃ তা করে।” এরূপ হাদীছ শরীফ ‘জামউল্ ওসায়িল’ নামক কিতাবের ১ম জিঃ ২১৬ পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ আছে। অত্র হাদীছ শরীফে
ان احد شقى ازارى يسترخى الا ان اتعاهد ذلك منه.
দ্বারা ‘সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু’প্রান্তের একদিক’ বুঝানো হয়েছে, যা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পরিধানে ছিল। বুখারী শরীফের বিখ্যাত শরাহ ফতহুল বারী ১০ম জিঃ ২৫৫ পৃষ্ঠায় এবং উমদাতুল ক্বারী ২১ জিঃ ২৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,
قوله (فقال ابوبكر) هو الصديق (ان احد شقى ازارى) كذا بالتشنية للنسفى والكشميهنى. ولغير هما شق با لافراد والشق بكسر المعجمة الجانب ويطلق ايضا على النصف.
অর্থঃ- “মুছান্নিফের উক্তি (হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরজ করলেন) যিনি ছিদ্দীক্ব তথা চরম সত্যবাদী (নিশ্চয়ই আমার সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু’প্রান্তের একদিক) আল্লামা নাসাফী এবং কাশমীহানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা شقى শব্দটি দ্বিবচনের সহিত পড়েছেন। অন্যান্যগণ شق শব্দটি شين বর্ণে যের দিয়ে একবচন হিসাবে পড়েছেন। যার অর্থ হলো দু’প্রান্তের একপ্রান্ত। দু’দিকের অর্ধাংশ। বুখারী শরীফের বিশ্বখ্যাত শরাহ ‘ইরশাদুস্ সারী’ ৮ম জিঃ ৪১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(ان احد شقى) ...... اى احد جنبى
অর্থাৎ (নিশ্চয়ই সিলাইবিহীন লুঙ্গির দু’প্রান্তের একদিক) ........ অর্থাৎ ফাঁড়া লুঙ্গির একদিক। উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা থেকেও স্পষ্ট হলো, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তথা ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের লুঙ্গি মুবারক ছিল সিলাইবিহীন, ফাঁড়া। যা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সুন্নতে ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অন্তর্ভুক্ত। সুন্নতী লুঙ্গির পরিমাপ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিলাইবিহীন লুঙ্গি মুবারক ছিল লম্বায় সাড়ে চার হাত এবং প্রস্থ আড়াই হাত। যেমন, ‘শামায়িলুত তিরমিযী’-এর বিশ্ববিখ্যাত শরাহ ‘শরহে ইমাম আব্দুর রউফ মানাবী মিছরী’ এর ১ম জিঃ ২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال الشهاب ابن حجر الهيتمى وكان اذاره صلى اله عليه وسلم اربعة اذرع وشبرا فى عرض ذراعين وشبر. অর্থঃ- “হযরত ইমাম শিহাব ইবনে হাযার হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিলাইবিহীন, ফাঁড়া লুঙ্গি মুবারক ছিল সাড়ে চার হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রস্থ।
وقيل اربعة اذرع ونصف فى عرض ذراعين وشبر. অর্থঃ- “কেউ কেউ বলেন, আড়াই হাত প্রস্থের সাড়ে চার হাত লম্বা কাপড়।”
وفطبقات ابن سعد من حديث ابى هريرة كان له اذار من نسج عمان طوله اربعة اذرع وشبر فى ذراعين وشبر.
অর্থঃ- ‘ত্ববাকাত ইবনে সা’দ’ নামক সীরাত গ্রন্থে আছে। হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফে রয়েছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওমান দেশের তৈরি ইযার বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি ছিল। যার দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে চার হাত, আর প্রস্থ ছিল আড়াই হাত।” অনুরূপ বর্ণনা “আল মাওয়াহিবুল্ লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামায়িলিল্ মুহম্মদিয়া’এবং ‘খাছায়িলে নববী’ নামক কিতাবেও বর্ণিত রয়েছে। কোন কোন ইমামের মতে খাছ সুন্নতী সিলাইবিহীন লুঙ্গির দৈর্ঘ্য চার হাতের কথাও উল্লেখ আছে। হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘ওয়াফা’ নামক কিতাবে, আবুশ্ শাইখ তাঁর ‘কিতাবু আখলাক্বিল মুছতফা’ নামক কিতাবে এবং ‘দিমইয়াত্বী’ দৈর্ঘ্য চার হাত হওয়ার ব্যাপারে মত পেশ করেছেন। কিন্তু বিশুদ্ধ মতে, সাড়ে চার হাত হওয়াই অধিক ছহীহ। লুঙ্গির দৈর্ঘ্যরে ব্যাপারে মতানৈক্য থাকলেও প্রস্থ যে আড়াই হাত খাছ সুন্নত এ ব্যাপারে কারো কোন ইখতিলাফ নেই। লক্ষণীয় যে, ইবারতে লুঙ্গির দৈর্ঘ্যের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তা সাড়ে চার হাত হবে। এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, সুন্নতী লুঙ্গি সিলাইবিহীন, ফাঁড়া হবে। অর্থাৎ ازار ইযার দ্বারা ফাঁড়া লুঙ্গিই উদ্দেশ্য। ازار (ইযার) শব্দের বিশ্লেষণঃ ازار ‘ইযারুন’ শব্দটি একবচন। এর বহুবচন হলো ازر‘উযুরুন’। এটি ইসমে জামিদ। যার অর্থ হলো, ইযার, লুঙ্গি, তহবন্দ, দেহের নিম্নাংশের পরিধেয় কাপড়, চাদর, দোপাট্টা, মৃত ব্যক্তির কাফনের ইযার বা লুঙ্গি ইত্যাদি। ازار অর্থ মৃত ব্যক্তির কাফনের ইযার বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি। যা সিলাইবিহীন বা ফাঁড়া দেয়া হয়। অথচ কিতাবে ফাঁড়া শব্দের আরবী উল্লেখ ছাড়াই শুধু ازار ‘ইযার’ শব্দ দ্বারা ফাঁড়া বা সিলাইবিহীন লুঙ্গি বুঝানো হয়েছে। যেমন, আল্ মুখতাছারুল্ কুদুরী কিতাবের ৪১ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে,
والسنة ان يكفن الرحل ف ثلاثة اثواب ازار وقسيص ولفافة ......... وتكفن المراة فى خسة اثواب ازار وقميص وخمار وخرقة تربط بها ثدياها ولفافه. অর্থঃ- “সিলাইবিহীন ইযার বা লুঙ্গি, ক্বমীছ ও লিফাফা। এ তিন কাপড় দিয়ে পুরুষের কাফন দেয়া সুন্নত। ..... আর স্ত্রীলোককে পাঁচটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। যথাঃ সিলাইবিহীন ইযার, ক্বমীছ, খিমার বা ওড়না, খিরক্বা বা সিনাবন্ধনী ও লিফাফা।” অনুরূপ বর্ণনা হিদায়া, ফতহুল ক্বদীর, কিফায়া, শরহুল ইনায়া, আইনী, শরহে বিক্বায়া, দুররুল্ মুখতার, রদ্দুল্ মুহতার, শামী, নূরুল ঈযাহ, মারাকিউল ফালাহ্, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ইত্যাদি ফতওয়া ও ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে রয়েছে। ازار অর্থ চাদর। যা সবসময় সিলাইবিহীন থাকে, চাদর কখনো সিলাইযুক্ত হয়না। ازار অর্থ দোপাট্টা যা মহিলারা পরিধান করে থাকে। সেটাও সিলাইবিহীন। অনুরূপভাবে লুঙ্গি, তহবন্দকে আরবীতে ازار বলা হয়। তাও সিলাইবিহীন। মুলতঃ ازار অর্থের সবকিছুই সিলাইবিহীন।। উল্লেখ্য, পৃথিবীর নির্ভরযোগ্য কোন অভিধানে ও ব্যাখ্যা গ্রন্থে ঞ্জব্জৎব্জ॥‘ইযার’ অর্থ সিলাইযুক্ত লুঙ্গি বলা হয় নাই। বরং সিলাইবিহীন, ফাঁড়া লুঙ্গি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সিলাইযুক্ত লুঙ্গি পড়েছেন এরূপ একটি দুর্বল দলীলও কেউ দেখাতে পারবেনা। অতএব, উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, (১) সিলাইবিহীন লুঙ্গি খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরিধান করতেন। (২) লুঙ্গি সুতী কাপড়ের হওয়া খাছ সুন্নত। (৩) লুঙ্গি ‘নিছফু সাক্ব’ থেকে শুরু করে’ টাখনুর উপর পর্যন্ত স্থানের মধ্যেই ঝুলানো খাছ সুন্নত। (৪) লুঙ্গি সাড়ে চার হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রস্থ হওয়া সুন্নত। (৫) পুরুষদের টাখনুর নিচে ক্বামীছ, লুঙ্গি ও সেলোয়ার পরিধান করা হারাম আর মহিলাদের জন্য পায়ের পাতাও ঢেকে রাখা ফরয। {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী শরীফ, (২) ফতহুল বারী, (৩) উমদাতুল ক্বারী, (৪) ইরশাদুস্ সারী, (৫) শরহুল্ কিরমানী, (৬) তাইসীরুল বারী, (৭) মুসলিম শরীফ, (৮) শরহুন নববী, (৯) শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, (১০) আল মুফহিম, (১১) ফতহুল্ মুলহিম, (১২) আবূ দাঊদ শরীফ, (১৩) বযলুল মাজহুদ, (১৪) আউনুল মা’বুদ, (১৫) তিরমিযী শরীফ, (১৬) তুহফাতুল আহওয়াযী, (১৭) আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, (১৮) উরফুশ্ শাযী, (১৯) শামায়িলুত তিরমিযী, (২০) জামউল ওয়াসায়িল, (২১) শরহে আব্দুর রউফ মানাবী মিছরী, (২২) আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামায়িলিল্ মুহম্মদিয়া, (২৩) খাছায়িলে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (২৪) নাসায়ী শরীফ, (২৫) ইবনু মাজাহ শরীফ, (২৬) মিশকাত শরীফ, (২৭) মিরকাত, (২৮) আশয়াতুল লুময়াত, (২৯) লুময়াত, (৩০) শরহুত ত্বীবী, (৩১) আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, (৩২) মুযাহিরে হক্ব, (৩৩) মিরয়াতুল মানাজীহ, (৩৪) মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, (৩৫) মুয়াত্তা ইমাম মালিক, (৩৬) মুওয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ, (৩৭) সুনানুদ দারিমী, (৩৮) ওয়াফা, (৩৯) কিতাবু আখলাকিল মুস্তাফা, (৪০) ত্ববাকাতে ইবনে সা’দ, (৪১) আল্ মুখতাছারুল্ কুদুরী, (৪২) হিদায়া, (৪৩) ফতহুল ক্বদীর, (৪৪) কিফায়া, (৪৫) শরহুল ইনায়া, (৪৬) আইনী, (৪৭) শরহে বিকায়া, (৪৮) দুররুল্ মুখ্তার, (৪৯) রদ্দুল্ মুহতার শামী, (৫০) নূরুল ঈযাহ, (৫১) মারাকিউল ফালাহ্, (৫২) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (৫৩) লিসানুল আরব, (৫৪) লুগাতে হীরা, (৫৫) আল মু’জামুল ওয়াজীয, (৫৬) আল মিছবাহুল মুনীর, (৫৭) মুখতারুছ্ ছিহ্হাহ্, (৫৮) জামে’ উর্দূ লুগাত, (৫৯) ফরহঙ্গে আমেরা, (৬০) ফরহঙ্গে জাদীদ, (৬১) ফীরুযুল্ লুগাত, (৬২) মিছবাহুল্ লুগাত, (৬৩) আল মুনজিদ ফিল লুগাহ্ (৬৪) বয়ানুল লিসান, (৬৫) লুগাতে কেশওয়ারী, (৬৬) আল কামূসুল ইছতিলাহীল্ জাদীদ, (৬৭) আল কামূসুল মাদারিসী, (৬৮) আল মানার, (৬৯) আল কামুষূল মুহীত, (৭০) আল্ কাওছার ইত্যাদি।}
0 Comments:
Post a Comment