প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের
অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
তাজদীদী মুখপত্র-
“মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে
এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” এমন সব লিখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই।
কেননা,প্রথমতঃ কিছু লোক “কিল্লতে
ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্ম”
অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে
পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি
দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা,
হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহি
মিন যালিক)
অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য
সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ,
সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা
মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ
বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।
মূলতঃ মহিলারা সমস্ত শরীর
ঢেকে বা পর্দা করে বের হবে এটাই শরীয়তের নির্দেশ।
অতএব, তাদের
উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে তা আর
বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
দ্বিতীয়তঃ কতিপয় নামধারী
পীর, আমীর, শাইখুল হাদীছ,
মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের
সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে,
ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা
ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাউযুবিল্লাহ)
মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া
লোভী উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে
আসছে।
যেমন, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায়
উলামায়ে ‘ছূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু
ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও
হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।
বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত
পীর, আমীর, শাইখুল হাদীছ,
মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই
পূর্ণ মিছদাক।
দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায়
তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে
ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ
হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من
الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা
তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা
কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে
এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে।
তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না
এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।”
(মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী) স্মর্তব্য যে, ঐসকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, শাইখুল
হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক
বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে
নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে? অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ‘ছূ’দের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের
ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক
আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা
অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে
তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়া
হলো। আল্লাহ্
পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন
দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা
প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্ব
(৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে
হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা
পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে
কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত
উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ,
হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও
লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-
যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার
বিস্তারিত ‘তাফসীর বা ব্যাখ্যা’
যে সকল আয়াত শরীফসমূহ
দ্বারা ‘হিজাব বা পর্দা’
ফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু
বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে
সংশ্লিষ্ট ও আয়াত শরীফসমূহে উল্লিখিত সকল হুকুম-আহ্কামসমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে “শরয়ী
হিজাব বা পর্দা”। যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে
অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের
সামনেও শালীনতা বজায় রাখা,
চলাচলের সময় পুরুষ-মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকেই অবনত রাখা, নিজেদের
লজ্জাস্থানকে হিফাজত করা,
বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শুনানো, প্রয়োজনে
কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা
বলা, নরম ভাষায় কথা না বলা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ্
পাক উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে এ বিষয়গুলোই মূলতঃ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে ‘তাফসীর
বা ব্যাখ্যা’ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং শরয়ী ‘হিজাব বা
পর্দার’ পরিচয় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের তাফসীর বা ব্যাখ্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো-
(পূর্ব
প্রকাশিতের পর)
হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা আহযাব-এর ৩২ নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
[৮৪৫]
ينساء النبى لستن كاحد من
النساء ان التقيتن فلاتخضعن بالقول فيطمع الذى فى قلبه مرض وقلن قولا معروفا.
অর্থঃ- “হে নবী
করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ! আপনারা অন্য নারীদের মত নন। যদি আল্লাহ্ পাককে
ভয় করেন, তবে পুরুষগণের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না, ফলে যার
অন্তরে ব্যাধি বা রোগ রয়েছে সে ব্যক্তি কু-বাসনা করবে। আপনারা শক্ত স্বরে
কথা-বার্তা বলবেন।”
(সূরা আহযাব/৩২) জরুরতে বেগানা বা পরপুরুষের সাথে কথা বলতে
হলে কঠোর বা শক্তস্বরে কথা বলতে হবে, কোমল ও আকর্ষণীয় স্বরে কথা বলা জায়িয নেই অত্র
আয়াতে কারীমায় ‘বিশেষ প্রয়োজনে পর পুরুষের সাথে যদি কথা বলতেই হয়, তাহলে
কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলা যাবেনা। বরং কঠোরভাবে, শক্তভাবে
কথা বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উক্ত আয়াত শরীফের
হুকুম পালনের জন্য জরুরতে কথা বলার সময় নিজ হাত মুবারক মুখে রেখে কথা বলতেন, যেন
কক্তস্বর কোমল ও অকর্ষণীয় না হয়ে কঠোর ও শক্ত হয়। এ হুকুম বা নির্দেশ শুধু উম্মুল
মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের জন্যই খাছ নয়। বরং আমভাবে সকল মু’মিন-মুসলমান
মহিলাগণের জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য। যা পালন করা ফরযে আইন। কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের
নুযূল তথা যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে বা যাকে উপলক্ষ করে অবতীর্ণ হয়েছে তা খাছ। কিন্তু
এর হুকুম আমভাবে সকলের জন্যই প্রযোজ্য।
আলোচ্য আয়াত শরীফটিও সে পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে
কিরাম তথা ইমাম-মুজাতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যা যেভাবে
করেছেন, তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
[৮৪৬]
هذه اداب امر الله تعالى بها
نساء النبى ونساء الامة تبع لهن فى ذلك. فقال تعالى مخاطبا لنساء النبى صلى الله
عليه وسلم بانهن اذا اتقين الله عز وجل كما امرهن، فانه لايشبههن احد من النساء
ولايلحقهن فى الفضيلة والمنزلة، ثم قال تعالى: (فلاتخضعن بالقول) قال السدى وغيره
يعنى بذلك ترقيق الكلام اذا خاطبن الرجل، ولهذا قال تعالى (فيطمع الذى فى قلبه
مرض) اى دخل (وقلن قولا معروفا) قال ابن زيد قولا حسنا جميلا معروفا فى الخير،
ومعنى هذا انها تخاطب الاجانب بكلام ليس فيه ترخيم، اى لاتخاطب المراة الاجانب كما
تخاطب زوجها. (تفسير ابن كثير ج3 ص 768)
অর্থঃ- “এ আয়াত
শরীফে আল্লাহ্ পাক নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী তথা উম্মুল
মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ এর মাধ্যমে সকল মুসলিম মহিলাগণকে
আদব-কায়দা ও শালীনতা শিক্ষা দিয়েছেন। অর্থাৎ সকল মুসলিম মহিলাগণ এ বিষয়ে উম্মুল মু’মিনীন
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকেই অনুসরণ করবে।” আয়াত শরীফে আল্লাহ্ তায়ালা হযরত
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণকে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু
আয়াত শরীফের নির্দেশাবলী বা হুকুম সমস্ত মুসলিম নারীগণের জন্যই প্রযোজ্য। আল্লাহ্
আয্যা ওয়া জাল্লা যেভাবে তাঁদেরকে নির্দেশ করেছেন, সেভাবেই আল্লাহ্ পাককে ভয় করবে।
কেননা, উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ অন্যান্য কোন মহিলার মত নন। কোন মহিলাই
ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবায় তাঁদের সমকক্ষ নয়। বরং সকল মহিলার উপরে তাঁদের
মর্যাদা-মর্তবা।
অতপর আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, (আপনারা
অন্য পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না) হযরত সুদ্দী
রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্যগণ বলেন, এর অর্থ হলো, পুরুষদের
সাথে কথা বলার সময় কোমলভাবে বলা। আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন বলেন, (ফলে যার
অন্তরে ব্যাধি-রোগ রয়েছে,
সে ব্যক্তি কুবাসনা করবে) অর্থাৎ যার অন্তর দোষযুক্ত, ক্রুটিপূর্ণ।
(আপনারা শক্ত করে কথা বলবেন) হযরত ইবনু যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনঃ
উত্তম, সুন্দর, অনুগ্রহ মূলক কথা,
যার মধ্যে খায়ের বরকত রয়েছে। যার অর্থ হলো এমন কথা বলা যাতে
কোন অস্পষ্টতা নেই। স্ত্রীলোকদের পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় সূরে কথা বলা
জায়িয নেই। মহিলারা নিজ স্বামীর সাথে যেভাবে আকর্ষণীয় সূরে কথা বলে তেমনি অন্য
পুরুষের সাথে কথা বলা যাবে না।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৩য় জিঃ ৭৬৮ পৃষ্ঠা)
[৮৪৭-৮৫১]
(ان اتقيتن)
مخالفة حكم الله ورضاء روسوله شرط استغنى عن الجزاء بما مضى (فلا تخصعن بالقول)
الفاء للسببية يعنى اذا ثبت فضلكن على سائر النساء بشرط التقوى فلابد ان لايظهرن
منكن ماينافى التقوى من الخضوع بالقول للرجال يعنى ان تكلم المرءة مع الرجل
الاجنبى كلاما لينا بما تطمعه منها. وذكر الجزرى فى النهاية نهى رسول الله صلى
الله عليه وسلم ان يخضع الرجل لغير امراته ان يلين لها بالقول بما يطمعها منه.
والخضوع والانقياد والمطاوعة
وذكر ايضا فى النهاية ان رجلا مر فى زمان عمر رضى الله عنه برجل وامراة قدخضعا
بينهما حديثا فضربه حتى شجه فاهدره عمر رضى الله عنه اى لينا بينهما الحديث وتكلما
بما يطعم كلا منهما من الاخر وروى الطبرانى بسند حسن عن عمروبن العاص ان النبى صلى
الله عليه وسلم نهى ان يكلم النساء الا باذن ازواجهن. وروى الدار قطنى فى الافراد
عن ابى هريرة انه صلى الله عليه وسلم نهى ان يتمطى الرجل فى الصلوة او عند النساء
الا عند امراته وجواريه (فيطمع) فى الفجور منصوب فى جواب النهى بان المقدرة بعد
الفاء (الذى فى قلبه مرض) اى شاءبة من النفاق فان المؤمن الكامل الذى مطمئن
بالايمان ويرى برهان ربه لايطمع فيها حرمه الله تعالى والذى ايمانه ضعيف كان فيه
شائبة النفاق يشتهى الى ماحرم الله عليه. وفى غير المتواتر من القرائة فيطمع مجزوم
عطفا على محل النهى فهو نهى لم ريض القلب عن الطمع عقيب نهيهن عن الخضوع بالقول.
(التفسير المظهرى ج7 ص337-338. طبرانيشريف، الدار قطنى، النهاية، افراد)
অর্থঃ- “(আপনারা
যদি আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন) যদি আল্লাহ্ পাক-এর হুকুমের অবাধ্যতা ও রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি থেকে ফিরে থাকেন। বাক্যটি
শর্তযুক্ত। পূর্ববর্তী বাক্য-এর جزا ‘জাযা’ বা পরিপূরক। (তবে পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে
কথা বলবেন না) এখানে فلاتخضعن এর فاء ‘ফা’ বর্ণটি ‘ফায়ে
সববিয়া’ বা উদ্দেশ্য জ্ঞাপক ‘ফা’। অর্থাৎ তাক্বওয়া বা পরহিযগারীতার শর্তে সমস্ত মহিলাগণের
উপরে আপনাদের মর্যাদা। সুতরাং এমন কোন আমল আপনারা কখনো করবেননা, যা
পরহিযগারীতার খিলাফ বা বিপরীত। পরপুরুষদের সাথে বেগানা মহিলাদের কোমল বা আকর্ষণীয়
কণ্ঠস্বর অশুদ্ধ অন্তকরণ বিশিষ্ট লোকদের অন্তরে সৃষ্টি করে মন্দক্রিয়া। হযরত ইমাম
জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘আন্ নিহায়া’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হযরত
রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদেরকে বেগানা মহিলাদের সাথে কোমল
বা আকর্ষণীয় কণ্ঠে কথা বলতে নিষেধ করেছেন, যে কথায় মহিলারা আকৃষ্ট হয়। خضوع ‘খুযূ’ শব্দের
অর্থ হলো কোমলতা এবং নমনীয়তা, বশ্যতা ইত্যাদি।
হযরত ইমাম জাযরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘আন্ নিহায়া’ কিতাবে আরো উল্লেখ করেছেন যে, নিশ্চয়ই হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফত কালে
একদা এক ব্যক্তি পথ অতিক্রমকালে দেখতে পেলেন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা কোমল কণ্ঠে
কথা বলছে। তিনি লোকটির মাথায় এমনভাবে আঘাত করলেন, যাতে তার মাথা ফেটে গেল। লোকটি
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে বিচার প্রার্থী হলে তিনি পুরুষটিকে
কোন ক্ষতিপূরণ দেননি। অর্থাৎ তারা দুজন আকর্ষণীয় কণ্ঠে কথা বলছিল, তাদের
কথার কারণে একে অপরের মধ্যে কুভাব বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি
আলাইহি হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সনদে বর্ণনা করেছেন। তিনি হযরত
আমর ইবনুল্ আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই হযরত নবী
করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর বিনা অনুমতিতে পরপুরুষের সাথে
মহিলাদেরকে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
ইমাম দারা কুতনী
রহমতুল্লাহি আলাইহি তার ‘আফরাদ’ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষদেরকে নামাযের মধ্যে অশুভ কথা বলতে নিষেধ
করেছেন। অনুরূপ ভাবে নিজ স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্য মহিলাদের সাথেও আকর্ষণীয়
কথা বলতে নিষেধ করেছেন। (ফলে কুবাসনা করবে) গুণাহ্গারদের মধ্যে কুবাসনা সৃষ্টি
হবে। (যার অন্তরে ব্যাধি বা রোগ রয়েছে) অর্থাৎ যাদের মুনাফিকী দোষ রয়েছে, তারা
কুবাসনা করবে। নিশ্চয়ই যারা মু’মিনে কামিল বা পূর্ণ মু’মিন তাদের ঈমানের কারণে অন্তর
পরিশুদ্ধ, এতমিনান, তারা তাঁদের রব-এর দলীল-প্রমাণাদী বুঝতে পারেন। আল্লাহ্ পাক যা হারাম করেছেন, তার
প্রতি তাদের আকর্ষণ থাকে না। আর যাদের ঈমানের শক্তি দুর্বল তাদের ভিতরে মুনাফিকী
বা কপটতা বিদ্যমান,
তারা আল্লাহ্ পাক-এর হারাম কৃত জিনিষে আকর্ষিত থাকে। যাদের
অন্তর পরিশুদ্ধ, রোগমুক্ত, তারা সমস্ত কুবাসনা থেকে মুক্ত থাকেন। (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৭ম জিঃ ৩৩৭, ৩৩৮
পৃষ্ঠা, ত্ববারানী শরীফ,
আদ্ দারু কুতনী, আন্ নিহায়া, আফরাদ)
[৮৫২]
(فلاتخضعن
بالقول) اى لاتلن بالقول للرجال ولاترققن الكلام (فيطمع الذى فى قلبه مرض) اى فجور
وشهوة وقيل نفاق والمعنى لاتقلن قولا يجد المنافق والفاجر به سبيلا الى الطمع فيكن
والمرأة مندوبة الى الغلظة فى المقال اذا خاطبت الاجانب لقطع الاطماع فيهن (وقلن
قولا معروفا) اى يوجبه الدين والاسلام عند الحاجة اليه ببيان من غير خضوع وقيل القول
المعروف ذكر الله تعالى. (تفسير الخازن ج5 ص257-258)
অর্থঃ- “(পর
পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না) পুরুষদের সাথে কথা বলার সময়
কোমলতা, মাধুর্যতা ও আকর্ষণীয়তার সাথে কথা বলবেন না। (ফলে যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তারা
কুবাসনা করবে) অর্থাৎ পাপী এবং কামভাবাপন্ন ব্যক্তিরা, কেউ বলেন, মুনাফিকরা
কুমতলব করবে। এর অর্থ হলোঃ এমনভাবে কথা বলবেন, যাতে মুনাফিক এবং গুণাহ্গার
ব্যক্তিরা কোন কুমতলব বা চক্রান্তের পথ খুঁজে না পায়। নারীদের জন্য অবশ্য কর্তব্য
যে, তারা পরপুরুষের সাথে প্রয়োজনীয় বাক্যালাপ করবে কর্কশকণ্ঠে, শক্তভাবে।
যাতে পুরুষের মধ্যে আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যায় তথা বিকর্ষণ সৃষ্টি হয়। (আপনারা শক্ত করে
কথা বলুন) অর্থাৎ তাদের কাছে দ্বীন ইসলামের প্রয়োজনীয় কথা কোমলতা ত্যাগ করে বলুন।
কেউ বলেছেন, আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরের কথা বলবেন। (আত্ তাফসীরুল খাযিন ৫ম জিঃ ২৫৭, ২৫৮ পৃষ্ঠা)
[৮৫৩]
(فلا تخضعن
بالقول) لا تكن بالقول للرجال ولاترققن الكلام (فيطمع الذى فى قلبه مرض) اى فجور
وشهوة وقيل نفاق والمعنى لاتقلن قولا يجد منافق او فاجربه سبيلا الى الطمع فيكن
والمرأة مندوبة الى الغلظة فى المقالة اذا خاطبت الاجانب لقطع الاطماع (وقلن قولا معروفا)
مايوجبه الدين والاسلام بتصريح وبيان من غير خضوع. (تفسير البغوى ج5 ص257- 258)
অর্থঃ- “(আপনারা
পর পুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না) পুরুষদের সাথে কথা বলার
সময় কোমলতা, মাধুর্যতা ও আকর্ষণীয়তার সাথে কথা বলবেন না। (ফলে যার অন্তরে রোগ রয়েছে সে
ব্যক্তি ক-ুবাসনা করবে) অর্থাৎ ফাসিক-ফুজ্জার, কামভাবাপন্ন, কেউ বলেন, মুনাফিকরা
কু-মতলব করবে। এর অর্থ হলোঃ এমনভাবে কথা বলবেন না, যাতে মুনাফিক, ফাসিক-ফুজ্জার
লোকেরা তার মধ্যে কোন কুভাবনা বা কুমতলব করার কোন রাস্তা না পায়। মহিলাদের জন্য
অবশ্য কর্তব্য যে,
বিশেষ প্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে কথা বলার সময় কর্কশ কণ্ঠে, শক্তভাবে
কথা বলবে। যাতে পুরুষের আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়। (আপনারা শক্ত করে কথা-বার্তা
বলবেন।) দ্বীন ইসলামের কোন প্রয়োজনীয় বয়ান করতে হলে কোমলতা ত্যাগ করে তথা কঠোরভাবে
করুন। (তাফসীরুল বাগবী ৫ম জিঃ ২৫৭, ২৫৮ পৃষ্ঠা) [৮৫৪]
(فلا تخضعن
بالقول) اى اذا كلمتن الرجال من وراء حجاب فلا تجئن بقولكم خاضعا اى لينا خنثا مثل
كلام المريبات (فيطمع) بالنصب على جواب النهى (الذى فى قلبه مرض) ريبة وفجور (وقلن
قولا معروفا) حسنا مع كونه خشنا. (تفسير مدارك التنزيل ج3 ص465- 466)
অর্থঃ- “(আপনারা
পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না) অর্থাৎ যখন পর্দার আড়াল
থেকে পুরুষদের সাথে কথা বলবেন তখন কোমলকণ্ঠে, আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না।
(ফলে কুবাসনা করবে) فيطمع এর শেষে যবর সহযোগে পড়তে হবে, পূর্বে বর্ণিত فلاتخضعن এর جواب نهى হিসেবে।
(যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে) যে গুণাহ্গার, ফাসিক-ফুজ্জার ও যার অন্তরে
সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। (আপনারা শক্ত করে কথা-বার্তা বলবেন) মঙ্গলজনক কথা কঠোরভাবে, কর্কশভাবে
বলবেন। (তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৪৬৫, ৪৬৬ পৃষ্ঠা)
[৮৫৫]
عن ابن عباس قوله يانساء النبى لستن
كاحد من النساء ان اتقيتن فلا تخضعن بالقول يقول لاترخصن بالقول ولا تخضعن
بالكلام. ........ قال ابن .يد فى قوله فلاتخضعن بالقول قال خضح القول مايكره من
قول النساء للرجال ممايدخل فى قلوب الرجال وقوله فيطمع الذى فى قلبه مرض يقول
فيطمع الذى فى قلبه ضعف فهو لضعف ايمانه فى قلبه اما شاك فى الاسلام منافق .......
عن قتادة فيطمع الذى فى قلبه مرض قال نفاق (تفسير الطبرى ج10 ص3(
অর্থঃ- “হযরত
আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ্ তায়ালার বাণী “হে নবী
করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ! আপনারা অন্য নারীদের মত নন। যদি আল্লাহ্ পাককে
ভয় করেন, তবে পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না।” এ আয়াত
শরীফের তাফসীরে বলেন,
আপনারা কোমল, আকর্ষণীয় এবং সুললিত কণ্ঠে
পরপুরুষের সাথে কথা বলবেন না। ...... হযরত ইবনে যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি “আপনারা
পর পুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না।” এ
আয়াতাংশের তাফসীরে বলেন,
মহিলাদের পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলা
মাকরূহ তাহ্রীমী। কেননা,
তা পর পুরুষদের অন্তরে ওয়াস্ ওয়াসার সৃষ্টি করে থাকে।
আল্লাহ্ পাক-এর বাণী “ফলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে ব্যক্তি কুবাসনা করবে” এর
তাফসীরে বলেন, সে ব্যক্তি কুবাসনা করবে, যার অন্তরে দুর্বলতা রয়েছে। যার অন্তরে ঈমানী কুওয়াত বা
শক্তি দুর্বল। ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে, মুনাফিক। ............. হযরত
ক্বাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি “ফলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে ব্যক্তি কুবাসনা করবে” এ
আয়াতাংশের তাফসীরে বলেন,
যে মুনাফিক সেই কুবাসনা করবে। (তাফসীরুত্ ত্ববারী ১০ ম জিঃ
৩য় পৃষ্ঠা)
[৮৫৬]
واخرج ابن المنذر عن ابن عباس
رضى الله عنهما فى قوله قلا تخضعن بالقول قال مقاربة الرجل فى القول حتى يطمع الذى
فى قلبه مرض. واخرج ابن ابى حاتم عن السدى رضى الله عنه فى قوله فلاتخضعن بالقول
قال لا ترفثن بالقول.
واخرج ابن جرير وابن مردويه عن
ابن عباس رضى الله عنهما فلا تخضعن بالقول يقول لاترخصن بالقول ولاتخضعن بالكلام.
.............. واخرج ابن المنذر وابن ابى حاتم عن زيد بن على رضى الله عنه قال
المرض مرضان فمرض زنا ومرض نفاق.
واخرج ابن سعد عن عطاء بن يسار
رضى الله عنه فى قوله فيطمع الذى فى قلبه مرض يعنى الزنا وقلن قولا معروفا يعنى
كلاما ظاهرا ليس فيه طمع لاحد. واخرج ابن سعد عن محمدبن كعب رضى الله عنه فى قوله
وقلن قولا معروفا يعنى كلاما ليس نيه طمع لاحد. (الدر المنثور للسيوطى ج4 ص196)
অর্থঃ- “হযরত
ইবনুল্ মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি “পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয়
ভঙ্গিতে কথা বলবেন না”
এর তাফসীরে বলেন, আকর্ষণীয় কণ্ঠে পুরুষের সাথে
এমনভাবে কথা বলা,
যাতে যে ব্যক্তির অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে কুবাসনা করে।
হযরত ইবনু আবী হাতিম
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত সুদ্দী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
তিনি “পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না” এর
তাফসীরে বলেন, অশ্লীল-অশালীন কথা বলবেন না।
হযরত ইবনু জারীর ও ইবনু
মারদুবিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি “পরপুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে
কথা-বার্তা বলবেন না।”
এর তাফসীরে বলেন, কথার মধ্যে কোমলতা আনবেন না এবং
বাক্য উচ্চারণে আকর্ষণীয় ভঙ্গি করবেন না। ............. হযরত ইবনুল মুনযির ও ইবনু
আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত যায়েদ বিন আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ব্যাধি দু’প্রকার এক. যেনা-ব্যভিচারের ব্যাধি, দুই.
মুনাফিকী তথা কপটতার ব্যাধি।
হযরত ইবনে সা’দ
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আত্বা বিন ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা
করেছেন। তিনি ‘ফলে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে ব্যক্তি কুবাসনা করবে” এর
তাফসীরে বলেন, অর্থাৎ যার অন্তরে ব্যভিচারের কুবাসনা রয়েছে। “আপনারা শক্ত করে কথা-বার্তা বলবেন” অর্থাৎ
কর্কশভাবে স্পষ্টকণ্ঠে কথা বলুন, যাতে কারো মধ্যে কুচিন্তার সৃষ্টি না হয়। হযরত ইবনু সা’দ
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুহম্মদ বিন কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণনা করেছেন। তিনি “আপনারা শক্ত করে কথা-বার্তা বলবেন”-এর তাফসীরে বলেন, অর্থাৎ
এমন কঠোরভাবে কথা বলবেন,
যার মধ্যে কারো জন্য কুবাসনা করার কোন সুযোগ না থাকে।
(তাফসীরে আদ্ দুররুল্ মানছূর লিস্ সূয়ূত্বী ৪র্থ জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠা)
[৮৫৭]
(فلا تخضعن
بالقول) عند مخاطبة الناس اى لاتجبن بقولكن خاضعا لينا مثل قول المطمعات والخضوع
التطامن والتواضع والسكون والمرأة مندوبة الى الغلظة فى المقالة اذا خاطبت الاجانب
لقطع الاطماع.
فاذا اتى الرجل باب انسان وهو
غائب فلايجوز للمرأة ان تلين بالقول معه وترفق الكلام له فانه يهيج الشهوة ويوزث الطمع.
(تفسير روح البيان ج7 ص169)
অর্থঃ- “(পর
পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না) মানুষের নিকট আলোচনা করার
সময় আপনাদের কথাকে লোভনীয় করবেন না, আকর্ষণীয় কথার মত। মহিলাদের জন্য
অবশ্য কর্তব্য যে,
যখন বিশেষ প্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে কথা বলবেই তখন কথাকে
কর্কশভাবে, কঠোরতার সাথে,
শক্ত করে বলবে। যাতে লোভ নস্যাত হয় অর্থাৎ আকর্ষণ বিকর্ষণে
পরিণত হয়ে যায়। যখন কোন ব্যক্তি কোন মানুষের বাড়ীতে আসে, আর সে
(স্বামী) অনুপস্থিত। তখন মহিলার জন্য কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলা জায়িয
হবেনা। কেননা, এতে কামপ্রবৃত্তি জাগ্রত হবে এবং খারাপ বাসনার সৃষ্টি হবে।(তাফসীরে রুহুল্
বয়ান ৭ম জিঃ ১৬৯ পৃষ্ঠা) [৮৫৮-৮৫৯]
(فلا تخضعن
بالقول) ...... وفى البحر انه بمعنى الاستقبال اى ان استقبلتن احدا فلاتخضعن
........ روى عن بعض امهات المؤمنين انها كانت تضع يدها على فمها اذا كانت اجنبيا
تغير صوتها بذلك خوفا من ان يسمع رخيما لينا. ...... (فيطمع الذى فى قلبه مرض) اى
فجور وزنا (تفسير روح المعانى ج12 ص6.5، البحر)
অর্থঃ- “(পরপুরুষদের
সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না) ..... ‘বাহর’ নামক
কিতাবে আছে, যখন কাউকে পর্দার আড়াল থেকে
অভ্যর্থনা জানাবেন তখন কোমল কণ্ঠে কথা বলবেন না। .......... কতিপয় হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না থেকে বর্ণিত। তাঁরা কথা বলার সময় তাঁদের
হাত মুবারক মুখের উপর রাখতেন, যাতে আওয়াজ পরিবর্তন হয়ে যায়। এটা এই ভয়ে করেছিলেন, যাতে
কোমলতা ও আকর্ষণীয় শব্দ শুনা না যায়। ........ (ফলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে
ব্যক্তি কুবাসনা করবে) অর্থাৎ ফাসিক-ফুজ্জার ও ব্যভিচারী ব্যক্তিরা।” (তাফসীরে
রুহুল্ মায়ানী ১২ জিঃ ৫,
৬ পৃষ্ঠা, আল্ বাহর)
[৮৬০]
قوله تعالى (فلا تخضعن بالقول) اى لاتلن
بالكلام (فيطمع الذى فى قلبه مرض) اى فيجوز والمعنى لا تقلن قولا يجد به منافق او
فاجر سبيلا الى موافقتكن له،
অর্থঃ- “আল্লাহ্
তায়ালা বলেন, (পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না) অর্থাৎ কথার মধ্যে
মধুরতা করবেন না। (ফলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে ব্যক্তি কুবাসনা করবে) এর
মর্মার্থ হলোঃ এমনভাবে কথা বলবেন না, যাতে মুনাফিক ও ফাসিক-ফুজ্জাররা
কুচিন্তা করার কোন পথ পায়। মহিলাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য যে, বিশেষ
প্রয়োজনে পরপুরুষের সাথে শক্তভাবে, কর্কশকক্তে কথা বলতে হবে। কেননা
এতে লোভ, আকর্ষণ ও কুবাসনা দূরির্ভূত হয়ে যায়। (আপনারা শক্ত করে কথা-বার্তা বলবেন)
অর্থাৎ সততার সাথে সঠিক কথা বলুন, যাতে পাপী-গুণাহ্গার লোকেরা কোন কুবাসনা করতে না পারে।
(যাদুল্ মাসীর ফী ইল্মিত তাফসীর ৬ষ্ঠ জিঃ ১৯৬, ১৯৭ পৃষ্ঠা)
[৮৬১-৮৯৩]
فدلت الاية على انه لايجوز للنساء اذا كلمن
اجنبيا الالانة فى القول. (احكام القران للشقيع والتهانوى ج3 ص316)
অর্থঃ- “অত্র
আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে পর পুরুষের সাথে কোমল ও
আকর্ষণীয় কণ্ঠে কথা বলা জায়িয নেই।” (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্
থানূবী ৩য় জিঃ ৩১৬ পৃষ্ঠা)
নিম্ন বর্ণিত
তাফসীরগুলোতেও এ বিষয়ে অনুরূপ আলোচনা বিদ্যমান রয়েছে। যথা- তাফসীরে আহকামুল কুরআন্
লিল্ কুরতুবী, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, তাফসীরে ফতহুল ক্বদীর, তাফসীরে
কবীর লির রাযী, আত্ তাসহীল লি উলুমিত্ তানযীল, নাযমুদ্ দুরার, তাফসীরুস্
সমরকন্দী, তাফসীরে দুররুল মাছূন,
আল্ মুহাররারুল ওয়াজীয, তাফসীরুল্ ক্বাসিমী, তাফসীরুল্
বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শাইখ যাদাহ্ আল্ বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল বাইযাবী, তাফসীরুল্
কাশ্শাফ, তাফসীরে জালালাইন,
হাশিয়াতুছ্ ছাবী আলাল্ জালালাইন, হাশিয়াতুল্
জামাল আলাল জালালাইন,
তাফসীরে কামালাইন আলাল্ জালালাইন, তাফসীরে
ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাফসীরে আবিস্ সাঊদ, তাফসীরে
হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর,
তাফসীরুল্ মাওয়ারাদী, তাফসীরুল্ লুবাব, তাফসীরে
আয়াতুল্ আহকাম লিছ ছাবূনী,
তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে আযীযী, তাফসীরে
ক্বাদিরী, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন,
কানযুল ঈমান ওয়া খাযাইনুল ইরফান, তাফসীরে
মায়ারিফুল কুরআন,
তাফহীমুল্ কুরআন ইত্যাদি।
সূরা আহযাব-এর ৩২নং আয়াত
শরীফ এবং তার তাফসীর থেকে প্রমাণিত হলো যে, (১) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর কারণেই উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের ফযীলত এত বেশী যে, তাঁরা
পৃথিবীর অন্যান্য কোন মহিলাদের মত নন। বরং তাঁদের মর্যাদা-মর্তবা অনেক উর্ধ্বে।
(২) বিশেষ প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে পরপুরুষের সাথে কথা বলা জায়িয রয়েছে। (৩) তবে
কথা এমনভাবে বলতে হবে,
যাতে পরপুরুষ কুচিন্তা-বাসনা করার সুযোগ না পায়। (৪) কোমল ও
আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলা যাবেনা। কেননা তা হারাম, নাজায়িয। (৫) শক্ত করে, কঠোরভাবে, কর্কশকণ্ঠে
কথা বলতে হবে। যাতে পুরুষের মনে কুবাসনা সৃষ্টি না হয়। (৬) কথা বলার সময় মুখে হাত
দিয়ে কর্কশভাবে কথা বলতে হবে।
হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা
আহযাব-এর ৩৩ নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা
ব্যাখ্যা
[৮৯৪]
وقرن فى بيوتكن ولاتبرجن تبرج
الجاهلية الاولى واقمن الصلوة واتين الزكوة واطعن الله ورسوله انما يريد الله
ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا.
অর্থঃ- “আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন। জাহিলিয়াত যুগের মত
নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেন না। নামায কায়িম করবেন, যাকাত প্রদান করবেন এবং আল্লাহ্
পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য করবেন। হে আহলে
বাইতগণ! আল্লাহ্ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে
পূত-পবিত্র রাখতে।”
(সূরা আহযাব/৩৩) মহিলাদের সর্বদাই ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান
করা ফরয, বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া
এবং জাহিলী যুগের ন্যায় নিজ সৌন্দর্য
প্রদর্শন করা হারাম অত্র আয়াতে কারীমাখানা খাছভাবে আহ্লে বাইতগণকে উপলক্ষ্য করে
নাযিল হয়েছিল। কিন্তু এর হুকুম আমভাবে সকল মু’মিন-মুসলমান মহিলাদের জন্যও
প্রযোজ্য। এটা সকল অনুস্বরণীয় মুফাস্সিরীন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মত। সকল
মুসলমান নারীর জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের ভিতর অবস্থান করা ফরযে আইন। অপর পক্ষে
পর্দাকে লঙ্ঘন করে জাহিলী যুগের মত বেপর্দা হয়ে সৌন্দর্য প্রদর্শন করা নাজায়িয বা
হারাম। কেউ যদি ঘরের ভিতর অবস্থানের পরও পরপুরুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে তবে
সেটাও হবে বেপর্দা,
যা হারাম। অর্থাৎ ঘরে-বাইরে প্রত্যেক অবস্থায় পরপুরুষ থেকে
বেঁচে থাকার নামই শরয়ী হিজাব বা পর্দা। নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত, নির্ভরযোগ্য
তাফসীরের কিতাব থেকে উক্ত আয়াত শরীফের ধারাবাহিক আলোচনা করা হলোঃ-
[৮৯৫]
(وقرن فى
بيوتكن) ........ امر بالقرار فى البيوت وعدم الخروج بقصد المعصية كما يدل عليه
قوله تعالى (ولا تبرجن) ....... وليس فى الاية نهى عن الخروج من البيت مطلقا وان
كان للصلوة او الحج او لحاجة الانسان كما زعمه الذين فى قلوبهم مرض من الروافض حتى
طعنوا فى الصديقة الكبرى بنت الصديق الاكبر حبيبة رسول الله صلى الله عليه وسلم
انها خرجت من بيتها الى مكة وذهبت منها الى البصرة فى وقعة الجمل وكان خروجها الى
مكة للحج وبعد خروجها ان تشهد عثمان رضى الله عنه واظهر اهل المصر فتنة فى المدينة
حتى هرب منها طلحة وزبير رضى الله عنهما ولحقا بعائشة واشارا بالخروج للاصلاح ذات
البين ولما ابت احتجا بقوله تعالى "لاخير فى كثير من نجوهم الا من امر بصدقة
او معروف او اصلاح بين الناس" فخرجت الى البصرة ووقع الصلح بين من كان معها
ومن كان مع على رضى اله عنهما ثم اثار نار الفتنة عبد الله بن سبا اليهود المنافق
الذى تزى بزى سيعة على رضى الله عنه حتى وقع القتال بين المسلمين فى وقعة الجمل
وقد ذكرنا القصة فى كتابنا السيف المسلون.
والتبرج من البروج بمعنى الظهور
والمراد بها اظهار الزينة وابراز المحاسن للرجال وقال ابن نجيح التبرج التبختر قال
البيضاوى فى تفسيره لاتبخترن فى عشيتكن (تبرج الجاهلية الاولى) منصوب على المصدرية
اى تبرجا مثل تبرج الجاهلية الاولى والمراد بالجاهلية الاولى جاهلية الكفر قبل
الاسلام والجاهلية الاخرى جاهلية الفسوق بعد الاسلام. قال الشعبى هى مابين عيسى
ومحمد عليهما الصلوة والسلام وقال ابو العالية هى زمن داؤد وسليمان عليهما السلام
كانت المرءة تلبس قميصا من الدر غير مخيط للجانبين فيرى خلقها فيها وقال الكلبى
كان ذلك فى زمن نمرود الجبار كانت المرءة تتخذ الدرع من اللؤلؤ فتلبسه وتمشى وسط
الطريق ليس عليها شئ غيره وتعرض نفسها على الرجال وروى عكرمة عن ابن عباس الجاهلية
الاولى فيما بين نوح واديس وكان الف سنة وكان سبطين من ولد ادم كان احدهما يسكن
السهل والاخر يسكن الجبل وكان رجال الجبال صباحا وفى النساء دمامة وكان نساء السهل
صباحا وفى الرجال دمامة وان ابليس اتى رجلا من اهل السهل واخر نفسه منه فكان يخدمه
والتخذ شيئا مثل الذى يدمو الرعاء فجاء بصوت لم يسمع الناس مثله فبلغ ذلك من حولهم
فانتا بوهم يسمعون اليه واتخذوا عيدا يجتمعون اليه فتبرج النساء للرجال وتزين
الرجال لهن وان رجلا من اهل الجبل هجم عليهم فى عيدهم ذلك فراى الرجال والنساء
وصباحتهن فاتى اصحابه فاخبرهم بذلك فتحولوا اليهم فنزلوا معهم فظهرت الفاحشة فيهن
فذلك قوله تعالى "ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى" وقد تذكر الاولى وان
لم يكن لها اخرى كقوله تعالى اهلك عادن الاولى ولم يكن لها اخرى اولمعنى الجاهلية
التى كانت قبل زمانكم. (التفسير المظهرى ج7 ص338-339، تفسير البيضاوى، تفسير البغوى ج5 ص 258، تفسير الخازن ج5 ص258 ، مدارك التنزيل ج 3 ص466)
অর্থঃ- “(আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন) ........ আপন ঘরে অবস্থান আপনাদের জন্য নির্দেশ, এটিই
উত্তম। যদিও বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার অনুমতি রয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ্
তায়ালা বলেছেন, (নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) ......... এ আয়াতাংশে সাধারণ ভাবে আপন
ঘরের বাইরে বের না হওয়ার বিধান রয়েছে। নামায, হজ্ব ও অন্যান্য মানবিক প্রয়োজনেও
তারা ঘরের বাইরে যেতে পারবেন না। অন্তর রোগে আক্রান্ত রাফিযী সম্প্রদায় এ রকম
ধারণা করে থাকে। এ কারণেই তারা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
প্রিয়তমা সহধর্মিনী হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর পূত-পবিত্র
চরিত্র সম্পর্কে অসঙ্গত আলোচনার অবতারণা করে থাকে। বলে যে, তিনি তো
মদীনা শরীফ থেকে চলে গিয়েছিলেন মক্কা শরীফে। সেখান থেকে বছরায়, যা ছিল
উষ্ট্রের যুদ্ধের ঘটনাস্থল (জঙ্গে জামাল)। তারা কি জানে না যে, তিনি
মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফের দিকে বের হয়েছিলেন হজ্বের উদ্দেশ্যে। তিনি মদীনা
শরীফ থেকে বের হওয়ার অল্পকাল পর হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শহীদ করা
হয়েছিল। মিছরের বিদ্রোহীরা তখন মদীনা শরীফে এমন বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল যে, হযরত
ত্বলহা এবং হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা মদীনা শরীফ থেকে বের হতে
বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁরাই মক্কা শরীফে পৌঁছে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহাকে বছরায় গিয়ে মুসলমানগণের গৃহ যুদ্ধ থামাবার পরামর্শ দিয়েছিলো। হযরত
আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা প্রথমে তাঁদের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান
করেছিলেন। তারা তখন দলীল হিসেবে পেশ করলেন এই আয়াত শরীফ “তাদের
পরামর্শে কোন মঙ্গল নেই। তবে হ্যাঁ, ছদকার বিষয়ে অথবা সৎ কাজে কিংবা
মানুষের মধ্যে মিমাংসার উদ্দেশ্যে।” এ দলীল শুনার পর তিনি অমত করতে
পারলেন না। চলে গেলেন বছরায়। তিনি চেষ্টা করলেন, তাঁর নিজের সাথে যারা আছেন এবং
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে যারা আছেন তাদের মধ্যে একটা আপোষ
করতে। তাঁর চেষ্টা প্রথম দিকে সফল হলো। কিন্তু ইহুদী মুনাফিক আব্দুল্লাহ বিন সাবা’র ঘৃণ্য
চক্রান্তে আপোষ-মিমাংসা ভেঙ্গে গেল। এমনকি মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হলো, উষ্ট্রের
যুদ্ধ (জঙ্গে জামাল)। মুছান্নিফ বলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে আমি ‘সাইফুল
মাসলুল’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
تبرج ‘তাবাররুজ’ শব্দটি بروج ‘বুরুজ’ থেকে উৎপত্তি। যার অর্থ ظهور ‘যুহুর’। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, সৌন্দর্য-রূপ
প্রদর্শন, পুরুষদের সামনে রূপ সজ্জা করে বের হওয়া। হযরত ইবনু নাজীহ রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, ‘তাবাররুজ’ অর্থ تبختر তাবাখ্তুরুন’
গর্বভরে চলা। হযরত ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি تبرج তাবাররুজ’ এর তাফসীরে
বলেন, তোমরা গর্বভরে,
চমক লাগিয়ে চলাচল করবে না। (তোমরা জাহিলী যুগের মত সৌন্দর্য
প্রদর্শন করে বেড়াবে না) تبرج শব্দের শেষে মাছদারী মানছূব বা যবর। ‘জাহিলিয়াতিল ‘ঊলা’ দ্বারা
মুরাদ হচ্ছে ইসলাম আগমনের পূর্বে অজ্ঞতা-বর্বরতার যুগ। আর ‘জাহিলিয়াতুল
উখরা’ বলতে ইসলাম আসার পর পাপে লিপ্ত হওয়ার যুগ। হযরত ইমাম শা’বী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর আবির্ভাবের পর থেকে সাইয়্যিদুনা
হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমনের পূর্ব সময় হচ্ছে প্রাচীন
অজ্ঞতার যুগ। হযরত আবুল্ আলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত
দাউদ ও হযরত সুলাইমান আলাইহিমাস্ সালাম-এর যুগই হচ্ছে মুর্খতার প্রাচীন যুগ।
তখনকার মহিলারা এক ধরণের সিলাইবিহীন কোর্তা পরিধান করতো, যা ছিল
উভয় দিকে উম্মুক্ত। এতে তাদের আকৃতি-গঠন দৃষ্টি গোঁচর হতো। হযরত কালবী রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন, অত্যাচারী শাসক নমরূদের যামানাকে প্রথম জাহিলিয়াত যুগ বলা হয়। সেসময় মহিলারা
মুক্তার তৈরি ছোট পোষাক পরিধান করে প্রশস্ত রাস্তায় চলাচল করতো, তাদের
সাথে এটা ছাড়া অন্য কিছু থাকতো না। এতে তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করতো। হযরত ইকরামা
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণনা করেছেন যে,
প্রথম জাহিলিয়াত যুগ হলো হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম এবং হযরত
ইদ্রীস আলাইহিস্ সালাম-এর মধ্যবর্তী যুগ। আর তা ছিল এক হাজার বছর। হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর সন্তানগণ
হয়ে গিয়েছিল দুটি ধারায় বিভক্ত। একদল বাস করতো সমতল ভূমিতে, আর অপর
দল বসবাস করতো পাহাড়ের উপরে। পাহাড়ে বসবাসকারী পুরুষেরা ছিল সুন্দর আকৃতির আর
মহিলারা ছিল কুদর্শন। সমতল ভূমিতে বসবাসকারী মহিলারা ছিল সুদর্শনা আর পুরুষরা ছিল
কুদর্শন। একদিন অভিশপ্ত ইবলিস মানব আকৃতিতে সমতলভূমিতে আসলো। এক পরিবারে সে খাদিম
হিসেবে যোগ দিল। কিছুদিন পর সে তৈরি করলো একটি বাঁশের বাঁশী। বাঁশীতে তুললো
মনমাতানো, মনভুলানো সূর। সে সূরের আকর্ষণে মোহিত হলো সমতল ভূমির নর-নারীরা। এভাবে শরু
হলো গানের আসর। নির্দিষ্ট দিনে গানের আসরে নারীরাও সেজে গুঁজে আসতে লাগলো পুরুষদের
সাথে। এরকম এক আসরে একদিন এসে পড়লো পাহাড়ী সুদর্শন একজন পুরুষ। আসর শেষে ফিরে গিয়ে
বিষয়টির আলোচনা করলো অন্যান্য স্বজাতীয় পাহাড়ীদের কাছে। তারাও ক্রমে ক্রমে এসে জড়ো
হতে লাগলো সমতল ভূমির গানের আসরগুলোতে। শুরু হলো নর-নারীর অবাধ মিলামিশা। এতে
অশ্লীল, অশালীন, ফাহেশা কাজ তাদের মধ্যে সংঘটিত হতে শুরু করলো। আল্লাহ্ তায়ালা এ দিকেই ইঙ্গিত
করে বলেছেন, “তোমরা প্রথম জাহিলিয়াত যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবে না।”
আয়াতে প্রথম যুগ উল্লেখ
আছে কিন্তু অপর বা দ্বিতীয় যুগ উল্লেখ নেই। কারণ, দ্বিতীয় ব্যতীতই এরকম প্রথমের
উল্লেখ কুরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। যেমন, আল্লাহ্ তায়ালার বাণী, اهلك عادن الاولى ‘তোমরাই প্রথম আ’দ পরিবার’। এখানে দ্বিতীয় আদের কোনো অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও বলা হয়েছে প্রথম আ’দের কথা।
তাই, মূর্খতার দ্বিতীয় যুগ বিশ্বাস করা যাবে না।” (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৭ম জিঃ ৩৩৮, ৩৩৯
পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ বাইযাবী,
তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ২৫৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্
বাগবী ৫ম জিঃ ২৫৮ পৃষ্ঠা,
মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৪৬৬ পৃষ্ঠা)
[৯০০-৯০৪]
وقوله تعالى (وقرن فى بيوتكن)
اى الزمن بيوتكن فلا تخرجن لغير حاجة، ومن الحوائج الشرعية الصلاة فى المسجد بشرطه
كما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "لا تمنعوا اماء الله مساجد الله
وليخرجن وهن تفلات". وفى رواية "وبيوتهن خيرلهن" .... عن انس رضى
الله عنه قال جئن النساء الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلن يا رسول الله ذهب
الرجال بالفضل والجهاد فى سبيل الله تعالى، فمالنا عمل ندرك به عمل المجاهدين فى
سبيل الله تعالى، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم" من قعدت او كلمة نحوها-
منكن فى بيتها، فانها تدرك عمل المجاهدين فى سبيل الله تعالى "ثم قال
........ عن عبد الله رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال" ان
المرأة عورة فاذا خرجت استشرفها الشيطان واقرب ماتكون بروحة ربها وهى فى
قعربيتها" ورواه الترمذى عن بندار عن عمروبن عاصم به نحوه. وروى البزار
باسناده المتقدم وابو داؤد ايضا عن النبى صلى الله عليه وسلم قال" صلاة
المرأة فى مخدعها افضل من صلاتها فى بيتها وصلاتها فى بيتها افضل من صلاتها فى حجرتها"
وهذا اسناد جيد.
وقوله تعالى (ولاتبرجن تبرج
الجاهلية الاولى) قال مجاهد كانت المرأة تخرج تمشى بين يدى الرجال، فذلك تبرج
الجاهلية. وقال قتادة (ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى) يقول اذا خرجتن من بيوتكن
وكانت لهن مشية وتكسر وتغنج، فنهى الله تعالى عن ذلك. وقال مقاتل بن حيان (ولا
تبرجن تبرج الجاهلية الاولى) والتبرج انها تلقى الخمار على راسها ولاتشده، فيوارى
قلائدها وقرطها وعنقها، ويبدو ذلك كله منها، وذلك التبرج، ثم عمت نساء المؤمنين فى
التبرج. (تفسير ابن كثير ج2 ص768-769، ابو دواد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر
الدين العينى)
অর্থঃ- “আল্লাহ্
তায়ালা বলেছেন, (আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন) অর্থাৎ আপনারা আপনাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে
থাকবেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কখনো বের হবেন না। শরয়ী প্রয়োজন যেমন মসজিদে নামায পড়ার
জন্য যাওয়া। যেমন,
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন, “আল্লাহ্
পাক-এর বাঁদীগণকে আল্লাহ্ পাক-এর মসজিদে যেতে বাঁধা দিওনা। তারা যেন সাদাসিধা
পোশাক পরেই গমন করে।”
অন্য রিওয়ায়েতে আছে, “স্ত্রীলোকের নামাযের জন্য তাঁর
বাড়ীই সর্বোত্তম।”
[ আমীরুল
মু’মিনীন হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকালে
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়াও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যার উপর হযরত আয়িশা
ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা সহ সকল ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণ একমত হয়ে ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে
বের হওয়া মাকরূহ তাহরীমী। আর বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতকের ইমাম, মুজতাহিদ
ও মুজাদ্দিদ, আওলাদুর রসূল রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর
ফতওয়া হলো- মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী এটা হচ্ছে আম
ফতওয়া, আর খাছ ফতওয়া মতে,
তা কুফরী। কেননা, এর দ্বারা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিরোধিতা করা হয়। আর তাঁদের বিরোধিতা সকলের মতেই
কুফরীর শামিল। -বি. সম্পাদক ] হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদা মহিলারা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন,
ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পুরুষ
লোকেরা আল্লাহ্র পথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করে তার ফযীলত লাভ করছেন। আমাদের জন্য কি
এমন আমল আছে যার দ্বারা আমরা মুজাহিদগণের মত ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা লাভ করতে পারি? উত্তরে
হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যারা
নিজেদের ঘরে পর্দার সাথে বসে থাকবে, তারা আল্লাহ্ পাক-এর পথে
জিহাদকারী মুজাহিদগণের সমমর্যাদা-ফযীলত লাভ করবে।” অতঃপর তিনি বলেন, ......হযরত
আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“নিশ্চয়ই মহিলা পর্দার অধীন, যখন সে ঘর থেকে বাইরে বের হয় তখন
শয়তান তার দিকে উঁকি-ঝুকি মারে। সে তার রব আল্লাহ্ পাক-এর রহমতের নিকটবর্তী হয়
তখনই যখন ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে থাকে।” ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি
হাদীছটি বিনদার রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি আমর বিন আছিম রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। হাফিয আবূ বকর বায্যার রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বর্ণনা
করেছেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “মহিলা
মানুষের অন্দর মহলের নামায তার বাড়ীর নামায হতে উত্তম, তার
বাড়ীর নামায হুজরার-আঙ্গিনার নামায হতে উত্তম।” এ সনদটি উৎকৃষ্ট। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, (জাহিলিয়াত
যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেন না) হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, জাহিলিয়াত
যুগে মহিলারা বাড়ীর বাইরে বেরিয়ে পুরুষদের সামনে চলাচল করতো, আর
জাহিলিয়াতের সৌন্দর্য প্রদর্শন করতো। হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি (জাহিলিয়াত
যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেন না) এর তাফসীরে বলেন, যখন তারা
তাদের বাড়ী থেকে বের হতো তখন সৌন্দর্য প্রদর্শন করে নেচে নেচে চলাফেরা করতো।
আল্লাহ্ পাক এ সমস্ত আচরণ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন। হযরত মুকাতিল বিন হাইয়ান
রহমতুল্লাহি আলাইহি(জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) এর
তাফসীরে বলেন, তারা তাদের মাথার ওড়না পিঠের উপর ফেলে রাখতো, তা বেঁধে রাখতো না, আর এতে
তাদের গলা, গলার হাড়, ঘাড়, কান ইত্যাদি সব দেখা যেত। এতে তারা সব কিছু খোলা রাখতো। আর এটাকেই বলা হয়
প্রদর্শন। অতপর ব্যাপকভাবে সকল মু’মিন মহিলাদেরকে প্রদর্শন করা হতে
নিষেধ করা হলো। (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৭৬৮, ৭৬৯ পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ
শরীফ, বযলুল মাজহুদ,
আউনুল মা’বূদ,
শরহে আবু দাউদ লি বদরিদ্দীন আইনী) [৯০৫]
(وقرن فى
بيوتكن) ....... قال المفسرون ومعنى الاية الامرلهن بالتوقر والسكون ومعنى الاية
الامرلهن بالتوقر والسكون فى بيوتهن وأن لايخرجن.
قوله تعالى (ولا تبرجن) قال ابو
عبيدة التبرج ان يبرزن محاسنهن. وقال الزجاج التبرج اظهار الزينة وما تستدعى به
شهوة الرجل. وفى (الجاهلية الاولى) اربعة اقوال احدها انها كانت بين ادريس ونوح
وكانت الف سنة، رواه عكرمة عن ابن عباس.
والثانى انها كانت على عهد
ابراهيم عليه السلام، وهو قول عائشة رضى الله عنها. والثالت بين نوح وادم، قاله
الحكم. والرابع ما بين عيسى ومحمد عليهما السلام، قاله الشعبى.
قال الزجاج : وانما قيل
ّالاولى" لان كل متقدم اول، وكل متقدمة اولى، فتاويله انهم تقدموا امة محمد
صلى الله عليه وسلم وفى صفة تبرج الجاهلية الاولى ستة اقوال احدها ان المراة كانت
تخرج فتشى بين الرجال، فهو التبرج، قاله مجاهد.
والثانى : انها مشية فيها تكسر
وتغنج، قاله قتادة. والثالث انه التبختر، قاله ابن ابى نجيح.
والرابع : ان المرأة منهن كانت
تتخذ الدرع من اللؤلؤ فتلبسه ثم تمشى وسط الطريق ليس عليها غيره، وذلك فى زمن
ابراهيم عليه السلام، قاله الكلبى.
والخامس : انها كانت تلقى
الخمار عن راسها ولاتشده، فيرى قرطها وقلائدها، قاله مقاتل.
والسادس : انها كانت تلبس
الثياب تبلغ المال، لاتوارى جسدها، حكاه الفراء. (زاد المسير فى علم التفسير ج6 ص 197)
অর্থঃ- “(আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন) ......মুফাস্সিরুন রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, আয়াত
শরীফের অর্থ হলোঃ তাদের জন্য নির্দেশ হচ্ছে তারা তাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান
করবে, যেন বের না হয়।
আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ
(সৌন্দর্য প্রদর্শন করবেন না) হযরত আবূ উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, التبرج অর্থঃ
সৌন্দর্য, সাজ-সজ্জা প্রদর্শন করার জন্য বাইরে যাওয়া। হযরত যুজাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, التبرج ‘তাবাররুজ’ অর্থ
সৌন্দর্যকে প্রকাশ করা,
যাতে পুরুষের কামোত্তেজনার সৃষ্টি হয়। (প্রথম মূর্খ যুগ)
এখানে চারটি মত আছেঃ প্রথম মত- হযরত ইদ্রীস আলাইহিস্ সালাম এবং হযরত নূহ আলাইহিস্
সালাম-এর মধ্যবর্তী সময় জাহিলিয়াতে ঊলা। তা এক হাজার বছর ছিল। হযরত ইকরামা
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
বর্ণনা করেছেন।
দ্বিতীয় মত- জাহিলিয়াতে
ঊলা হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর যামানা। তা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর উক্তি। তৃতীয় মত- হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম এবং
হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর মধ্যবর্তী সময়। হিকাম আলাইহিমুস্ সালাম তা বলেছেন। চতুর্থ মত- জাহিলিয়াতে উলা হলো হযরত ঈসা
আলাইহিস্ সালামের পর থেকে হযরত
সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আবির্ভাবের পূর্ব সময়।
ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি এরকম বলেছেন। যুজাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কেউ কেউ
বলেন, الاولى ‘ঊলা’ কেননা
প্রত্যেক অগ্রবর্তীই প্রথম। অতঃপর তার ব্যাখ্যায় বলেন, নিশ্চয়ই
তাঁরা উম্মতে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে অগ্রগণ্য। জাহিলিয়াত
যুগের প্রদর্শন’
-এর বর্ণনায় ৬টি মতামত বিদ্যমান- প্রথম মত- নিশ্চয়ই মহিলারা বেপর্দা হয়ে পুরুষদের সামনে বেড়িয়ে
চলাচল করতো, এটাই সৌন্দর্য প্রদর্শন। হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এরকম বলেছেন।
দ্বিতীয় মত- সেসময় তারা
চাকচিক্যের সাথে,
অভিনয়ের ভঙ্গিতে চলাচল করতো। হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি
আলাইহি এভাবে বলেছেন। তৃতীয় মত-
গর্বভরে, দম্ভভরে চলতো। হযরত ইবনু আবী নাজীহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা বলেছেন। চতুর্থ
মত- সেসময় মহিলারা ছোট মুক্তার কাপড় পরিধান করে প্রশস্ত রাস্তায় চলাচল করতো, তাদের
মধ্যে আর কোন কিছুই ছিলো না। এরকম হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর যামানায়
হয়েছিল। হযরত কালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন।
পঞ্চম মত- তারা তাদের
মাথার ওড়না পিঠের উপর ঝুলিয়ে রাখতো, তা বুকের উপর বেঁধে রাখতো না। এতে
তাদের কানের লোম,
সুভ্রতা ও গলা, গলার হাড় দেখা যেত। হযরত মুকাতিল
রহমতুল্লাহি আলাইহি এভাবে বলেছেন।
ষষ্ঠ মত- তারা সম্পদের
লোভে এরূপ পোষাক পরিধান করতো বা তাদের শরীরকে আবৃত করতো না। হযরত ফাররা
রহমতুল্লাহি আলাইহি এরূপ বর্ণনা করেছেন। (যাদুল মাসীর ফী ইল্মিত্ তাফসীর ৬ষ্ঠ জিঃ
১৯৭ পৃষ্ঠা)
[৯০৬]
قوله تعالى : (وقرن فى بيوتكن)
يعنى اسكن فيها ولاتتحركن، ولاتبرجن منها. (احكام القران لابن العربى ج3 ص1535)
অর্থঃ- “আল্লাহ্
তায়ালার বাণীঃ (আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন) এর অর্থ হলো, ঘরের
ভিতরেই বসবাস করুন,
সেখান থেকে বের হবেন না, সেখান থেকে বেরিয়ে সৌন্দর্য
প্রদর্শন করবেন না।”
(আহকামুল কুরআন লি ইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৫৩৫ পৃষ্ঠা)
[৯০৭]
(وقرن فى
بيوتكن) ....... بمعنى كن اهل وقار وسكينة فى بيوتكن. (تفسير الطبرى ج10 ص3)
অর্থঃ- “(আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন) ...... যার অর্থ হলো, তারা তাদের ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠে
অবস্থান করবে।” (তাফসীরুত্ ত্ববারী ১০ম জিঃ ৩ পৃষ্ঠা)
[৯০৮]
قوله تعالى : (وقرن فى بيوتكن)
....... واخرج ابن ابى حاتم عن ام نائلة رضى الله عنها قالت جاء ابو برزة فلم يجد
ام ولده فى البيت وقالوا اذهبت الى المسجد فلما جائت صاح بها فقال ان الله نهى
النساء ان يخرجن وامرهن يقرن فى بيوتهن ولايتبعن جنازة ولاياتين مسجدا ولا يشهدن
جمعة. (الدر المنثور ج4 ص196)
অর্থঃ- “আল্লাহ্
তায়ালার বাণীঃ (আপনারা আপনাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ..... হযরত ইবনু আবী
হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত উম্মু নাইলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কাছ থেকে
বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একদা আবু বারযা এসে বাড়ীতে তার সন্তান ওয়ালা দাসীকে পেলেন
না। তারা বললেন, তিনি মসজিদে গেছেন। যখন তিনি মসজিদ থেকে ফিরে আসলেন, তখন আবু
বারযা রহমতুল্লাহি আলাইহি তার সাথে জোরে চিৎকার করলেন অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই
আল্লাহ্ পাক মহিলাগণকে বাড়ী থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন এবং তাদেরকে তাদের ঘরের
প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ জারী করেছেন। তারা জানাযা নামাযে যাবে না, মহিলারা
মসজিদে নামাযের জন্য আসবে না এবং জুমুয়ার জন্যও উপস্থিত হবে না।” (তাফসীরে
আদ্ দুররুল্ মানছূর ৪র্থ জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠা)
[৯০৯-৯১০]
قوله تعالى (ولا تبرجن تبرج
الجاهلية الاولى) ......... واخرج البيهقى فى سننه عن ابى اذينة الصدفى رضى الله
عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال شر النساء المتبرجات وهن المنافقات
لايدخل الجنة منهن الامثل الغراب الاعصم. (الدر المنثور ج4 ص197، بيهقى)
অর্থঃ- “আল্লাহ্
তায়ালার বাণীঃ (জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) ........
ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘সুনানের’ মধ্যে
হযরত আবু আযীনা ছদাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই হযরত
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বাইরে সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী
মহিলারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট,
তারাই মুনাফিক মহিলা। তাদের থেকে কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে না। তবে যে মহিলার রং কাকের মত কালো সে ব্যতীত।” (তাফসীরে
দুররুল্ মানছূর ৪র্থ জিঃ ১৯৭ পৃষ্ঠা, বাইহাক্বী শরীফ) [৯১১]
(وقرن فى
بيوتكن) ......... والمعنى الزمن يانساء النبى بيوتكن واثبتن فى مساكنكن والخطاب
وان لنساء انلى فقد دخل فيه غيرهن. (تفسير روح البيان ج7 ص170، 171)
অর্থঃ- “(আপনারা
আপনাদের ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ....... এর অর্থ হলো; হে নবী
করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ আপনারা আপনাদের ঘরের প্রকাষ্ঠে অবস্থান করে
থাকুন। আপনারা আপনাদের ঘরের গহীনে থাকুন। এখানে যদিও হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণকে খেতাব বা উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, তার পরেও
এ হুকুম বা নির্দেশের মধ্যে অন্যান্য সকল মহিলা সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।
(তাফসীরে রুহুল্ বয়ান ৭ম জিঃ ১৭০, ১৭১ পৃষ্ঠা) [৯১২]
(وقرن فى
بيوتكن) ....... والمراد على جميع القراعات امرهن رضى الله عنهن بملازمة البيوت
وهو امر مطلوب من سائر النساء. اخرج الترمذى. والبزار عن ابن مسعود عن النبى صلى
الله عليه وسلم قال ان المرأة عورة فاذا خرجت من بيتها استشرفها الشيطان واقرب
ماتكون من رحمة ربها وهى فى قعر بيتها.
(تفسير روح المعانى ج12 ص6)
অর্থঃ- “(আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ..... قرن শব্দের সমস্ত কিরয়াত থেকে
মুরাদ বা উদ্দেশ্য হচ্ছে- উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুন্নাগণকে ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়া। এ আমল বা নির্দেশ সমস্ত
মু’মিন মহিলাদের জন্য। ঘরের ভিতরে প্রকোষ্ঠে অবস্থান করা ফরযে আইন। তিরমিযী এটা
বর্ণনা করেছেন। আবূ বকর বায্যার রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে
বর্ণনা করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন.“নিশ্চয়ই
মহিলা পর্দার অধীন,
যখন সে ঘর থেকে বাইরে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি-ঝুকি
মারে। সে তার রব আল্লাহ্ পাক-এর রহমতের নিকটবর্তী হয় তখনই যখন ঘরের প্রকোষ্ঠে
অবস্থান করতে থাকে।”
(তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১২ জিঃ ৬ পৃষ্ঠা)
[৯১৩]
وقد يحرم عليهن الخروج بل قد
يكون كبيرة كخروجهن لزيارة القبور اذا عظمت مفسدته وخروجهن ولو الى المسجد وقد
استعطرن وتزين اذا تحققت الفتنة اما اذا ظنت فهو حرام غير كبيرة، وما يجوز من
الخروج كالخروج للحج وزيارة والوالدين وعيادة المرضى، وتعزية الاموات من الاقارب
ونحو ذلك، فانما يجوز بشروط مذكورة فى محلها. (تفسير روح المعانى ج12 ص6)
অর্থঃ- “মহিলাদের
জন্য বাইরে বের হওয়া হারাম করা হয়েছে। কেননা এটা কবীরা গুণাহ্, যেমন
অনেক ফিৎনার আশঙ্কা নিয়ে কবর যিয়ারত করতে যাওয়া, আতর মেখে সেজে-গুঁজে মসজিদে যাওয়া
যাতে ফিৎনার সম্ভাবনা আছে,
এগুলো সবই কবীরা গুণাহ্। হজ্বের উদ্দেশ্যে, পিতা-মাতার
সাক্ষাতের জন্য, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করতে এবং নিকটাত্মীয়ের ইন্তিকালে শোকপ্রকাশ করার জন্য
পর্দার সাথে বাইরে বের হওয়া জায়িয রয়েছে। এগুলো স্থান-কাল পাত্রের শর্ত সাপেক্ষে
জায়িয হবে।” (তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১২ জিঃ ৬ পৃষ্ঠা)
[৯১৪]
(ولا تبرجن
تبرج الجاهلية الاولى) قيل معناه لاتتكسرن ولا تتغنجن، ويحتمل ان يكون المراد
لاتظهرن زينتكن. (التفسير الكبير للامام الفخر الرازى ج24 ص209)
অর্থঃ- “(জাহিলিয়াত
যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবেন না) কেউ বলেন, সৌন্দর্য
নিয়ে গর্ব ভরে বেড়াবেন না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, তোমরা
তোমাদের সৌন্দর্য-রূপ প্রকাশ করোনা।” (আত্ তাফসীরুল্ কবীর লিল্ ইমাম
ফখরির রাযী ২৪ জিঃ ২০৯ পৃষ্ঠা)
[৯১৫]
(وقرن فى
بيوتكن) ........ لان سودة رضى الله عنها قيل لها لما لتخرجين فقالت امرنا الله
بان نقر فى بيتنا، وكانت عائشة اذا قرات هذه الاية تبكى على خروجها ايام الجمل،
وحينئذ قال لها عمر ان الله امرك ان تقرى فى بيتك. (التسهيل لعلوم التنزيل ج2 ص188)
অর্থঃ- “(আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ..... হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে
জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- আপনারা কেন ঘর থেকে বের হননা। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ্
পাক আমাদেরকে ঘরের কোণে- প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন এ জন্যই। হযরত
আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন এ আয়াত শরীফ পাঠ করতেন, তখন
জঙ্গে জামাল তথা উষ্ট্রের যুদ্ধে বের হওয়ার কথা স্মরণ করে কাঁদতেন। সে সময় হযরত
উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বলতেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক আপনাকে আপনার
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন।” (আত্ তাসহীল লিউলূমিত্ তানযীল ২য়
জিঃ ১৮৮ পৃষ্ঠা)
[৯১৬-৯১৯]
(وقرن فى
بيوتكن ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى) اى ماقبل الاسلام من اظهار النساء محاسنهن
للرجال والاظهار بعد الاسلام مذكور فى اية ولايبدين زينتهن الا ماظهر منها. (تفسير
الجلالين، حاشية الجمل على الجلالين ج3 ص436، حاشية الصاوى على الجلالين. كما كين على الجلالين)
অর্থঃ- “(আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন। জাহিলিয়াত যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবেন
না) অর্থাৎ ইসলাম আসার পূর্বে মহিলারা সেজে-গুঁজে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে পুরুষদের
সামনে বেড়াতো, সেটিই ছিল জাহিলিয়াত যুগ। ইসলাম আসার পর পাপাচারীরা এমন করতো। যেমন আয়াত শরীফে
আছে “তোমরা তোমাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াবে না, তবে চলাচলের কারণে স্বাভাবিকভাবে
অনিচ্ছাসত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত।” (তাফসীরুল্ জালালাইন, হাশিয়াতুল্
জামাল্ আলাল্ জালালাইন ৩য় জিঃ ৪৩৬ পৃষ্ঠা, হাশিয়াতুছ্ ছাবী আলাল্ জালালাইন, কামালাইন
আলাল্ জালালাইন)
[৯২০]
(وقرن فى
بيوتكن) اى الزمن بيوتكن ولاتخرجن لغير جاجة. ولاتفعلن كما تفعل الغافلات،
المتسكعات فى الطرقات لغير ضرورة (ولاتبرجن تبرج الجاهلية الاولى) اى لاتظهرن
زينتكن ومحاسنكن للاجانب مثل ماكان نساء الجاهلية يفعلن، حيث كانت تخرج المراة الى
الاسواق مظهرة لمحاسنها، كاشفة مالايليق كشفه من بدنها، قال قتادة كانت لهن مشية
فيها تكسر وتغنخ فنهى الله تعالى عن ذلك. (صفوة التفاسير للصابونى ج2 ص481)
অর্থঃ- “(আপনারা
ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) অর্থাৎ ঘরে অবস্থান করুন, প্রয়োজন
ছাড়া বাইরে বেড়াবেন না। গাফিল মহিলারা যেরকম করে সেরকম করবেন না। জরুরত ছাড়া
রাস্তায় বেড়াবেন না। (জাহিলিয়াত যুগের নারীদের মত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে
বেড়াবেন না) অর্থাৎ নিজেদের রূপ, সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করবেন না, যেমনিভাবে
জাহিলিয়াত যুগের মহিলারা করেছিল। সেসময়ের মহিলারা প্রকাশ্যভাবে সেজে-গুঁজে, সৌন্দর্য
প্রদর্শন করে বাজারে যেত। তাদের শরীরের আবরণীয় অঙ্গগুলো খোলা রাখতো। হযরত ক্বতাদা
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
সেসময়ের মহিলারা রূপ চর্চা করে অহংকার-গর্বভরে চলাচল করতো।
আল্লাহ্ তায়ালা আয়াত শরীফ নাযিল করে এগুলো থেকে মুসলিম নারীদেরকে নিষেধ করলেন।
অর্থাৎ সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বাইরে বের হওয়া হারাম বা নাজায়িয করে দিলেন।” (ছাফওয়াতুত্
তাফাসীর ২য় জিঃ ৪৮১ পৃষ্ঠা)
[৯২১-৯২৩]
قال المفسرون وقرن اى الزمن
بيوتكن ........ (ولا تبرجن) قال مجاهد وقتادة التبرج هو التكسر والتغنج، وقال ابن
ابى نجيح هو التبختر، وقيل هو الظهار الزينة. وابراز المحاسن للرجال. (تفسير
اللباب ج15 ص546، تفسير القرطبى، معانى القران للزجاج ج4 ص225)
অর্থঃ- “হযরত
মুফাস্সিরুন্ রহমতুল্লাহি আলাইহিম قرن ‘ক্বরনা’ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, অর্থাৎ আপনারা আপনাদের ঘরে অবস্থান করুন। .......... এবং
(আপনারা সৌন্দর্য প্রদর্শন করবেন না) হযরত মুজাহিদ ও ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা
বলেন, تبرج তাবাররুজ’ হলো চাকচিক্য হয়ে অভিনয়ের ছূরতে চলাচল করা। হযরত ইবনু আবী
নুজাইহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, গর্বভরে
বুক ফুলিয়ে চলা। কেউ বলেন, সৌন্দর্য প্রদর্শন বা
প্রকাশ করে চলা এবং তার মাধ্যমে পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করা।” (তাফসীরুল্ লুবাব ১৫ জিঃ ৫৪৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ কুরতুবী, মায়ানিল্ কুরআন লিল্ যুজাজ ৪র্থ জিঃ ২২৫ পৃষ্ঠা) সূরা আহযাব-এর ৩৩নং আয়াত শরীফ এবং তাফসীরের
বিশ্ববিখ্যাত কিতাবের আলোচনা থেকে যা প্রমাণিত হলো, তা হচ্ছে- (১) আয়াত শরীফটি খাছভাবে উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে লক্ষ্য করে নাযিল
হয়েছে। কিন্তু এর হুকুমের মধ্যে সমস্ত মু’মিন, মুসলমান মহিলাগণ শামিল।
(২) মহিলাদের জন্য ঘরের মধ্যে অবস্থান করা ফরযে আইন। (৩) বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে
যেতে পারবে। তবে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বের হতে পারবেনা। (৪) সৌন্দর্য প্রদর্শন
করে বের হওয়া জাহিলিয়াতের আমল। যা হারাম ও নাজায়িয। (৫) বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যেতে
হলে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বাইরে যেতে হবে। সামান্য একটু অঙ্গ
খোলা রাখা নাজায়িয, হারাম। (৬) মহিলারা
জুমুয়াহ্, ঈদগাহ, মসজিদে নামাযের জন্য উপস্থিত হতে পারবেনা। কারণ তা মাকরূহ্
েতাহরীমী। (৭) মহিলাদের ঘরের গহীন কোটরীর নামায সাধারণ ঘর থেকে উত্তম। (৮) মহিলারা
বাইরে বের হলে শয়তান তাদের মাধ্যমে গুণাহ্র কাজ সংঘটিত করার জন্য লেগেই থাকে। (৯)
মহিলাদের জন্য সর্বাবস্থায় পর্দা-পুশিদায় থাকা ফরযে আইন। (অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment