হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ( ৬ নং )

হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে
 ফতওয়া দেয়ার কারণ

 সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র-

মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।

তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেহিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা,প্রথমতঃ কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্মঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। 

যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)

অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে। 
মূলতঃ মহিলারা সমস্ত শরীর ঢেকে বা পর্দা করে বের হবে এটাই শরীয়তের নির্দেশ।


 অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
দ্বিতীয়তঃ কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, শাইখুল হাদীস, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাউযুবিল্লাহ)

মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুযাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।

বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, শাইখুল হাদীস, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। 
সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীস শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা। যেমন হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী)   
                     স্মর্তব্য যে, ঐসকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, শাইখুল হদস, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে?
অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ছূদের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।

অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো। 

আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন

দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায , (৩) যাকাত, (৪) হজ্ব (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন। কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-

যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা

যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দাফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট ও আয়াত শরীফসমূহে উল্লিখিত সকল হুকুম-আহ্কামসমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে শরয়ী হিজাব বা পর্দাযেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের সামনেও শালীনতা বজায় রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ-মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকেই অবনত রাখা, নিজেদের লজ্জাস্থানকে হিফাজত করা, বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শুনানো, প্রয়োজনে কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা বলা, নরম ভাষায় কথা না বলা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে এ বিষয়গুলোই মূলতঃ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে তাফসীর বা ব্যাখ্যাবিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং শরয়ী হিজাব বা পর্দারপরিচয় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের তাফসীর বা ব্যাখ্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো-

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা সংক্রান্ত আয়াত শরীফসমূহের বিস্তারিত
তাফসীর বা ব্যাখ্যা

يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوتأ غير بيوتكم حتى تستانسوا وتسلموا على اهلها ذلك خيرلكم لعلكم تذكرون.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করোনা, যে পর্যন্ত অনুমতি না নাও এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা স্মরণ রাখ। (সূরা নূর/২৭)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক আমভাবে সকলকেই যে  কোন কারো ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে ঘরওয়ালাদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটাও মূলতঃ হিজাব বা পর্দারএকটি অংশ।
অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা সংক্রান্ত উল্লিখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় ইমাম-মুজতাহিদ তথা অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদের তাফসীর গ্রন্থসমূহে যে ফায়সালা দিয়েছেন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-

অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা সংক্রান্ত
সূরা নূরের ২৭ নং আয়াত শরীফের তাফসীর বা ব্যাখ্যা

সূরা নূরের ২৭ নং আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁদের বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ সমূহে যে ফায়ছালা দিয়েছেন তার কিয়দ্বাংশ গত সংখ্যায় পত্রস্ত্র হয়েছে, বাকি অংশ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
الثالثة عشرة- روى ابو داؤد عن كلدة بن خنبل ان صفوان بن أمية بعثه الى رسول الله صلى الله عليه وسلم بلبن وجداية وضغابيس والنبى صلى الله عليه وسلم بأعلى مكة، فدخلت ولم اسلم فقال "ارجع فقل السلام عليكم" وذلك بعد ما اسلم صفوان بن أمية. وروى ابو الزبير عن جابر ان النبى صلى الله عليه وسلم قال "من لم يبدأ بالسلام فلا تأذنوا له". وذكر ابن جريج اخبرنى عطاء قال سمعت ابا هريرة يقول اذا قال الرجل ادخل؟ ولم يسلم فقل لا حتى تأتى بالمفتاح، فقلت السلام عليكم؟ قال نعم.

ত্রয়োদশ মাসয়ালা
অনুমতি প্রার্থনাকারী সালাম না দিলে ঘরওয়ালা  তাকে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া প্রসঙ্গে

হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত কালাদা বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই হযরত ছাফওয়ান বিন উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে দুধ এবং কিছু খিরা নিয়ে পাঠানো হলো। তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা শরীফের এক উপত্যকায় ছিলেন। আমি প্রবেশ করলাম কিন্তু সালাম দেইনি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি ফিরে যাও এবং বলো السلام عليكم আস্সালামু আলাইকুম।এ ঘটনা হযরত ছাফওয়ান বিন উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইসলাম গ্রহণের পর সংঘটিত হয়েছিল। হযরত আবূয্ যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথমে সালাম না দিবে, তোমরা তাকে প্রবেশের অনুমতি দিওনা।
হযরত ইবনু জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত আত্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বলেছেন, আমি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছ থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি বলে ادخل আমি প্রবেশ করব? কিন্তু সালাম না দেয়, তখন তুমি বলো তুমি প্রবেশ করবেনা।
আমি বললাম: السلام عليكم আস্সালামু আলাইকুমতিনি বললেন হাঁ।
الرابعة عشرة - .................... مارواه ابو داؤد عن ابى هريرة ان النبى صلى الله عليه وسلم قال "رسول الرجل الى الرجل اذنه" اى اذا ارسل اليه فقداذن له فى الدخول. يبينه قوله عليه السلام. "اذا دعى احدكم (الى طعام) فجاء مع الرسول فان ذلك له اذن" اخرجه ابو داود ايضا عن ابى هريرة.

চতুর্দশ মাসয়ালা
কোন ব্যক্তির পাঠানো দূতই তার
জন্যে প্রবেশের অনুমতি স্বরূপ

হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কোন ব্যক্তির নিকট কোন ব্যক্তির পাঠানো দূত-ই তার জন্য অনুমতিস্বরূপ।অর্থাৎ যখন তার কাছে ডেকে আনতে কোন ব্যক্তিকে পাঠানো হবে, তখন আহূত ব্যক্তির প্রবেশের জন্য এটিই অনুমতি স্বরূপ। যার স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফের মধ্যে, “যখন তোমাদেরকে আহবান করা হয় (খাওয়ার জন্য) তখন দূতের সঙ্গেই আসবে, কেননা নিশ্চয়ই এটাই তার জন্য অনুমতি স্বরূপ।হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীস শরীফটি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন।
الخامسة عشرة – فان وقعت العين على العين فالسلام قد تعين، ولاتعد رؤيته اذنالك فى دخولك عليه، فاذا قضيت حق السلام لانك الوارد عليه تقول ادخل؟ فان اذن لك والا رجعت.

পঞ্চদশ মাসয়ালা
শুধু দেখা হলেই চলবেনা বরং
প্রবেশের অনুমতি চাইতে হবে

যদি চোখে চোখ পড়ে তবে সালাম দেয়া নির্দিষ্ট হয়। শুধু দেখা তোমার জন্য তার কাছে প্রবেশ করার অনুমতি নয়। যখন সালামের হক্ব পূরণ করবে, কেননা তুমি তার কাছে অনুমতি প্রার্থনাকারী। তুমি বলবে, আমি কি প্রবেশ করব? যদি তোমাকে অনুমতি দেয়া হয় প্রবেশ করবে নতুবা ফিরে যাবে।
السادسة عشرة – هذه الاحكام كلها انما هى فى بيت ليس. فاما بيتك الذى تسكنه فان كان فيه اهلك فلا اذن عليها. الا انت تسلم اذا دخلت. قال قتادة اذا دخلت بيتك فسلم على اهلك، فهم احق من سلمت عليهم. فان كان فيه معك امك او اختك فقالوا تنحنح واضرب برجلك حتى ينتبها لدخولك، لان الاهل لاحشمة بينك وبينها.
واما الام واخت فقد يكونا على حالة لاتحب ان تراهما فيها. قال ابن القاسم قال ملك ويستاذن الرجل على امه واخته اذا اراد ان يدخل عليهما، وقد روى عطاء بن يسار ان رجلا قال للنبى صلى الله عليه وسلم استأذن على امى؟ قال "نعم" قال انى اخدمها؟ قال "استأذن عليها" فعاوده ثلاثا، قال "اتحب ان تراها عريانة"؟ قال لا، قال "فاستاذن عليها". ذكره الطبرى.

ষষ্ঠদশ মাসয়ালা
নিজ ঘরের অধিবাসী যেমন মা-বোন প্রমুখগণের  ঘরে প্রবেশের সময়
অনুমতি নেয়া সম্পর্কে

অনুমতি সম্পর্কিত এসমস্ত বিধান এমন ঘর বাড়ীর জন্য, যার বসবাসকারী তুমি নও। তুমি তোমার যে বাড়ীতে বাস কর সেখানে যদি তোমার আহ্ল-পরিবার থাকে, তার কাছে অনুমতি নিতে হবে না, তবে অবশ্যই প্রবেশের সময় তুমি সালাম দিবে। হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন তুমি তোমার ঘরে প্রবেশ করবে, তখন তোমার অধিবাসীকে-আহ্লকে সালাম দিবে। তারা তোমার সালাম পাবার অধিক হক্বদার। যদি তুমি তোমার মা, বোনের সাথে একই ঘরে বাস কর, তখন গলা খাকড়াবে, পা মাটিতে মারবে তোমাকে অনুমতির সংবাদ দেয়া পর্যন্ত। কেননা, তোমার মধ্যে এবং তোমার স্ত্রীর মধ্যে কোন লজ্জা নাই।, কিন্তু তোমার মা এবং বোন এমন অবস্থায় থাকবেন, যে অবস্থায় তাঁদেরকে সেথায় দেখা তুমি পছন্দ করনা।
হযরত ইবনুল্ কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, কোন লোক তার মা এবং বোনের কাছে প্রবেশ করার ইচ্ছা করলে তাদের কাছে অনুমতি নিবে।
হযরত আত্বা বিন ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই একব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমি কি আমার মায়ের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হ্যাঁসে ব্যক্তি বলল, আমি তাঁর খিদমত করে থাকি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নাও।তিনি এটা তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। ইরশাদ করলেন; “তুমি কি তোমার মাকে বস্ত্রহীন অবস্থায় দেখতে পছন্দ কর?” সে ব্যক্তি বলল, না। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তবে তুমি তোমার মায়ের কাছে অনুমতি প্রার্থনা কর।ত্ববারী এটা বর্ণনা করেছেন।
السابعة عشرة – فان دخل بيت نفسه وليس فيه احد، فقال علماؤنا يقول السلام علينا، من ربنا التحيات الطيبات المباركات، لله السلام. رواه ابن وهب عن النبى صلى الله عليه وسلم، وسنده ضعيف. وقال قتادة اذا دخلت بيتا ليس فيه احد فقل السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، فانه يؤمر بذلك. قال وذكرلنا ان الملائكة ترد عليهم. قال ابن العربى والصحيح ترك السلام ولاستئذان، والله اعلم. قلت قول قتادة حسن.

সপ্তদশ মাসয়ালা
নিজ গৃহ যে গৃহে কেউ নেই সে ঘরে
প্রবেশের সময়ও সালাম দিবে

যখন নিজের ঘরে প্রবেশ করবে, যেখানে কেউ নেই; আমাদের উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, তখন বলবে السلام علينا আস্সালামু আলাইনাএবং ربنا التحيات الطيبات المباركات لله السلام. আমাদের পুত, পবিত্র, বরকতময় রব আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি সালাম।হযরত ইবনু ওহ্হাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইহা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। এর সনদ দুর্বল। হযরত ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে, যেখানে কেউ নেই, তখন বলবেالسلام علينا وعلى عباد الله الصالحين. আমাদের উপর এবং আল্লাহ্ পাক-এর নেককার বান্দাগণের প্রতি সালাম।কেননা সে এ বিষয়ে আদিষ্ট। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই ফেরেশ্তা আলাইহিমুস্ সালামগণ তাদের সালামের জবাব দেন। হযরত ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ অবস্থায় সালাম এবং অনুমতি গ্রহণ তরক করাই ছহীহ্। আল্লাহ্ পাক অধিক জ্ঞাত। আমি বলি, হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি -এর মতটিই হাসান (উত্তম)। সূরা নূরের ২৭ নং আয়াত শরীফের যে তাফসীর বা ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রমাণ নিম্নোক্ত কিতাব সমূহে রয়েছে।          (তাফসীরুল কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২১২-২১৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৫৮-১৩৬২ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উসমানী, ফতহুল্ মুলহিম্ লিশ্ শিব্বীর আহমদ উসমানী, আল্ মুফহিম, আবূ দাউদ্ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল্ মাবূদ, শরহু বদরিদ্দীন আইনী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, নাসায়ী শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ, মুয়াত্তা লিল্ ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, আউজাযুল্ মাসালিক, আয্ যুরক্বানী লিল্ মুয়াত্তা, আল্ মুনতাক্বা, মুসনাদু আহমদ বিন হাম্বল, আল্ ফতহুর রব্বানী, ত্ববারানী শরীফ, মুছান্নাফ লি আব্দির রয্যাক, মুছান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ্ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তানযীমুল্ আশতাত, মিরয়াতুল্ মানাজীহ ইত্যাদি।)
এছাড়াও বর্ণনা, ভাষা, ভাব ইত্যাদির পার্থক্য সহ নিম্নবর্ণিত তাফসীরসমূহেও উল্লেখ আছেঃ তাফসীরে রূহুল্ মায়ানী ১০ম জিঃ ১৩৩-১৩৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল বয়ান ৬ষ্ঠ জিঃ, তাফসীরুল খাযিন ৫ম জিঃ ৬৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ৬৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৩২৪ পৃষ্ঠা, যাদুল মাসীর ফী ইল্মিত্ তাফসীর ৫ম জিঃ ৩৫২, ৩৫৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর ৪র্থ জিঃ ১৯, ২০ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩য় জিঃ ৪৪৫-৪৪৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ৮৬-৮৯ পৃষ্ঠা, আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৮৭, ৪৮৮ পৃষ্ঠা, আত্ তাফসীরুল্ কবীর ল্ িইমাম ফখরির রাযী, আত্ তাসহীল লি উলূমিত তানযীল ২য় জিঃ ৮৮ পৃষ্ঠা, নাযমুদ্ দুরার ৫ম জিঃ ২৫০, ২৫১ পৃষ্ঠা, তাফসীরুস্ সমরকন্দী ২য় জিঃ ৪৩৫, ৪৩৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আদ্ দুররুল্ মাছূন ৫ম জিঃ ২১৫, ২১৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আদ্ দুররুল্ মানছূর, আল্ মুর্হারারুল্ ওয়াজীয, তাফসীরুল্ কাসিমী ৫ম জিঃ, তাফসীরে বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শাইখ যাদাহ আলাল্ বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল বাইযাবী, তাফসীরুল্ কাশ্শাফ, তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল্ আলাল্ জালালাইন, তাফসীরে কামালাইন আলাল্ জালালাইন, তাফসীরে ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাফসীরে আবীস্ সাঊদ, তাফসীরে হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরুল্ মাওয়ারাদী, তাফসীরুল্ লুবাব, তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন, কানযুল্ ঈমান, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী, তাফসীরে মায়ারিফুল্ কুরআন ইত্যাদি।
উপরোক্ত সূরা নূরের ২৭নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা মূলতঃ হিজাব বা পর্দারগুরুত্বই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অর্থাৎ হিজাব বা পর্দা রক্ষার লক্ষ্যেই মহান আল্লাহ্ পাক অন্যের ঘরে প্রবেশের পূর্বে ঘর ওয়ালার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন, এমনকি নিজ গৃহের অধিবাসী যেমন মা-বোন প্রমুখগণের ঘরে প্রবেশের পূর্বেও অনুমতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সুতরাং কারো বিনা অনুমতিতে কারো ঘরে প্রবেশ করা সম্পূর্ণই হারাম। কেননা এতে হিজাব বা পর্দারব্যাঘাত হয়ে থাকে। তাই অনুমতি নিয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশ করাটাও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত।

অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা সংক্রান্ত সূরা নূরের ২৮নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা

[৪০২]
فان لم تجدوا فيها احدا فلاتدخلوها حتى يؤذن لكم وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا هو ازكى لكم والله بما تعملون عليم.
অর্থঃ- তোমরা যদি ঘরে কাউকে না পাও, তবে অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করোনা। যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এতে তোমাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ্ পাক তা ভালভাবে জানেন।” (সূরা নূর/২৮)
উল্লিখিত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক আমভাবে সকলকেই যে কোন ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে ঘরওয়ালাদের অনুমতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। চাই ঘরওয়ালা ঘরের ভিতর থাকুক অথবা নাই থাকুক। কখনো ঘর ওয়ালার তরফ থেকে ফিরে যেতে বললে ফিরে যাওয়াই অধিক পবিত্রতার কারণ। এ বিষয়টিও হিজাব বা পর্দারএকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ বিষয়ে উল্লিখিত আয়াত শরীফের তাফসীরে হযরত ইমাম-মুজতাহিদ তথা অনুস্বরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদের তাফসীর গ্রন্থ সমূহে যে ফায়ছালা দিয়েছেন, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-
[৪০৩-৪০৫]
قوله عز وجل (فان لم تجدوا فيها) اى فى البيت (احدا) اى ياذن لكم فى دخولها (فلاتدخلوها حتى يؤذن لكم) اى فى الدخول (وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا) يعنى اذاكان فى البيت قوم وكرهوا دخول الداخل عليهم فقالوا ارجع فليرجع ولايقف على الباب ملازما (هو ازكى لكم) اى الرجوع هو اطهر واصلح لكم فان للناس احوالا وحاجات يكرهون الدخول عليهم فى تلك الاحوال واذا حضر الى الباب فلم يستاذن وقعد على الباب منتظرا جاز. كان ابن عباس ياتى دورالانصار لطلب الحديث فيقعد على الباب ولايستاذن حتى يخرج اليه الرجل فاذا خرج وراه قال ياابن عم رسول الله صلى الله عليه وسلم لواخبرتنى بمكانك فيقول هكذا امرنا ان نطلب العلم. واذا وقف على الباب فلاينظر من شقه اذا كان الباب مردودا.
"عن سهل بن سعد" قال "اطلع رجل من حجر فى باب النبى صلى الله عليه وسلم ومع رسول الله صلى الله عليه وسلم مدرى يرجل وفى رواية يحك به راسه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لوعلمت انك تنظر لطعنت به فى عينك انما جعل الاذن من اجل البصر".
"عن ابى هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم" قال "من اطلع فى بيت فوم بغير اذنهم فقد حل لهم ان يفقئوا عينه". وفى رواية النسائى قال "لوأن امرا اطلع عليك بغير اذن فحذفته ففقأت عينه ماكان عليك حرج" وقال مرة اخرى جناح. (والله بما تعملون عليم) يعنى من الدخول بالاذن. (تفسير الخازن ج5 ص 67. تفسير البغوى ج5 ص 67. تفسير مدارك التننريل ج3 ص 325)
অর্থঃ- আল্লাহ্ আয্যা ওয়া জাল্লা-ইরশাদ করেন, (তোমরা যদি ঘরে না পাও) অর্থাৎ ঘরের ভিতরে (কাউকে) অর্থাৎ যে তোমাদেরকে ঘরের ভিতর প্রবেশের অনুমতি দিবে (তবে, অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করো না) অর্থাৎ প্রবেশের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত। (যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে) অর্থাৎ যখন ঘরের ভিতর তার অধিবাসী থাকে, আর তারা তাদের মধ্যে প্রবেশকারীর প্রবেশ অপছন্দ করে এবং বলে, আপনি ফিরে যান, তখন সে যেন ফিরে যায়। জেদ ধরে দরজায় যেন অবস্থান না করে। (এতে তোমাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে।) অর্থাৎ ফিরে যাওয়ার মধ্যে। তাতে তোমাদের জন্য অধিক পবিত্রতা ও আত্মশুদ্ধির বিষয় রয়েছে। কেননা, নিশ্চয়ই মানুষের কোন কোন সময় এমন অবস্থা এবং হাজত হয়, যাতে তারা সে অবস্থায় অন্য কেউ তাদের মধ্যে প্রবেশ করুক তা পছন্দ করেনা। কারো ঘরের দরজায় উপস্থিত হয়ে তার কাছে অনুমতি না নিয়ে তার অপেক্ষায় দরজায় বসে থাকা জায়িয আছে।   হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একজন আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বাড়ীতে ইল্মে হাদীস শিক্ষার জন্য আসতেন এবং দরজায় অপেক্ষায় বসে থাকতেন। যতক্ষণ সেই ছাহাবী বের হয়ে না আসতেন তিনি অনুমতি নিতেন না। যখন তিনি বের হয়ে এসে তাঁকে এ অবস্থায় অপেক্ষারত দেখতেন, তখন তিনি বলতেন; হে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাচার পুত্র! আপনি আপনার আসার খবর আমাকে কেন দিলেন না? তখন তিনি বলতেন, এভাবেই আমাদেরকে ইল্ম শিক্ষা করতে আদেশ করা হয়েছে।           দরজা বন্ধ থাকার কারণে কারো দরজায় এসে ফাঁক দিয়ে দৃষ্টি দিবে না। হযরত সাহল বিন সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “এক ব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরের ভিতর উঁিক দিয়ে দেখলেন। তখন হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে ক্ষুরধার লৌহখণ্ড ছিল। অন্য রিওয়ায়েতে রয়েছে যা তাঁর মাথা মুবারকে ছিল। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যদি আমি জানতাম যে সে দেখছে, তাহলে তার চোখে লৌহখণ্ড প্রবেশ করাতাম। কারো ঘরে প্রবেশের নির্দেশ ঘরের দিকে না দেখার জন্যেই দেয়া হয়েছে।
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে কারো ঘরে তাদের অনুমতি ছাড়া দৃষ্টি করে, তবে তাদের জন্য সে ব্যক্তির চক্ষু ফুটা করে দেয়া বৈধ হবে।”           নাসায়ী শরীফের এক রিওয়ায়েতে আছে। তিনি বলেন, “যদি নির্দেশ দেয়া হয়, যে তোমার ঘরে অনুমতি ছাড়াই দৃষ্টি দিয়েছে তার চক্ষুকে ফুটা করে দিতে। এতে তোমার জন্য কোন অপরাধ হবেনা।
অন্য সময় তিনি বলেছেন, কোন অন্যায় বা গুণাহ্ হবেনা। (তোমরা যা কর, আল্লাহ্ পাক তা ভালভাবে জানেন) অর্থাৎ অনুমতি নিয়ে প্রবেশের ব্যাপারে।” (তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৩২৫ পৃষ্ঠা)
[৪০৬]
(فان لم تجدوا فيها احدا فلاتدخلوها حتى يؤذن لكم وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا هو ازكى لكم والله بما تعملون عليم)
يقول تعالى ذكره فان لم تجدوا فى البيوت التى تستاذنون فيها احدا يأذن لكم بالدخول اليها فلاتدخلوها لانها ليست لكم فلايحل لكم دخولها الاباذن اربابها فان اذن لكم اربابها ان تدخلوها فادخلوها وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا يقول وان قال لكم اهل البيت التى تستاذنون فيها ارجعوا فلاتدخلوها فارجعوا عنها ولاتدخلوها هو اركى لكم يقول رجوعكم عنها اذاقيل لكم ارجعوا ولم ياذن لكم بالدخول فيها اطهر لكم عند الله ......... حدثنى محمدبن عمروقال ثنا ابو عاصم قال ثنا عيسى عن ابن ابى نجيح عن مجاهد فان لم تجدوا فيها احدا قال ان لم يكن لكم فيها متاع فلاتدخلوها الا باذن وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا، حدثنى الحرث قال ثنا الحسن قال ثنا ورقاء عن ابن ابى نجيح عن مجاهد مثله.
قال ثنا الحسن قال ثنا هاشم بن القاسم المزنى عن قتادة قال قال رجل من المهاجرين لقد طلبت عمرى كله هذه الاية فما ادركتها ان أستاذن على بعض اخوانى فيقول لى ارجع فارجع وانا مغتبط لقوله وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا هو ازكى لكم. (تقسير الطبرى ج9 ص89)     
অর্থঃ- “(তোমরা যদি ঘরে কাউকে না পাও, তবে অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করো না। যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও তবে ফিরে যাবে। এতে তোমাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। তোমরা যা কর, আল্লাহ্ পাক তা ভালভাবে জানেন।) আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর কালামে পাকে বলেছেন। তোমরা যদি ঘরে অনুমতি নেয়ার কাউকে না পাও যে তোমাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিবে, তবে সেখানে প্রবেশ করবে না। কেননা তা তোমাদের বাড়ী নয়। আর তোমাদের জন্য বাড়ীর মালিকের অনুমতি ছাড়া সেথায় প্রবেশ করা হালাল নয়। যদি বাড়ীর মালিক তোমাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দেয়, তবে তোমরা সেথায় প্রবেশ করো। যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। তোমরা যার কাছে অনুমতি চেয়েছো সে বাড়ীর মালিক যদি বলেন ফিরে যাও, তবে তোমরা সেথায় প্রবেশ করবেনা , সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করো। সেখানে প্রবেশ করো না, এটাই তোমাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। যখন তোমাদেরকে বলা হবে ফিরে যাও, তখন তোমাদের জন্য সেখানে প্রবেশের অনুমতি নেই। এটাই আল্লাহ্ পাক-এর কাছে তোমাদের জন্য অনেক পবিত্রতার বিষয়।          ..... আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ বিন আমর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ আছিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, হযরত ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত ইবনু আবূ নাজীহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি তোমরা যদি ঘরে কাউকে না পাও”-এর তাফসীরে বলেন, ঘরে যদি তোমাদের কোন সামগ্রী-আসবাবপত্র না থাকে, তবে অনুমতি ছাড়া সেথায় প্রবেশ করোনা। যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে।আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন বিরক্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত ইবনু আবূ নাজীহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ক্বাছীম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদরে কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হাজ্জাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত জুরাইজ থেকে, তিনি হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে অনুরূপ ভাবে বর্ণনা করেছেন।      তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হাশিম ইবনুল্ কাসিম আল্ মুঝনী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি বলেন, মুহাজিরীনগণের মধ্যে এক লোক বলেছেন, আমি আমার গোটা জীবন এই আয়াত শরীফের উপর আমল করতে খোঁজ করেছি যে, আমি আমার ভাইয়ের কাছে অনুমতি চাবো, আর সে ব্যক্তি আমাকে বলবে আপনি ফিরে যান, তখন আমি ফিরে যাবো, এমন আমি কোন দিন পাইনি। যাতে আমি ফিরে এসে এ আয়াত শরীফের আমলের ছওয়াব পাবো। আল্লাহ্ পাক বলেছেন, “যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও, তবে ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য পবিত্রতার কারণ।” (তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ৮৯ পৃষ্ঠা)
[৪০৭-৪৬৮]
(فان لم تجدوا فيها) اى فى البيت (احدا) ياذن لكم (فلاتدخلوها حتى يؤذن لكم) يعنى حتى ياتى ساكنها وياذن لكم فى الدخول فان المانع من الدخول ليس الاصلاع على العورات فقط بل وعلى مايخفيه الناس من الناس مع ان التصرف فى ملك الغير بغير اذنه محظور واستثنى مااذا عرض فيه حرق اوغرق او كان فيه منكر ونحوها (وان قيل لكم ارجعوا فارجعوا) ولاتلحوا فى الدخول (هو ازكى لكم) اى الرجوع ازكى لكم من الالحاح فى الدخول والوقوف على الباب لما فيه من الكراهة وترك المروة. وفى حكم الامر بالرجوع ان لايأذن له صاحب البيت بعد الاستيذان ثلاث مرات لحديث ابى سعيدن الخدرى قال اتانا ابو موسى فقال ان عمر ارسل الى ان اتيه فاتيت بابه فسلمت ثلاثا فلم يرد على فرجعت فقال مامنعك ان تاتينا فقلت الى اتيت فسلمت على بابك ثلاثا فلم ترد على فرجعت وقد قال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا استاذن احدكم ثلاثا فلم يؤذن له فليرجع فقال عمر اقم عليه البينة قال ابو سعيد فقمت معه فذهبت الى عمر فشهدت، متفق عليه. وعن ابى ايوب الانصارى مرفوعا التسليم ان يقول السلام عليكم اادخل ثلاث مرات فان اذن له دخل والا رجع. رواه ابن ماجة.
قال البغوى ورواه بشربن سعيد عن ابى سعيد الخدرى وفيه قال قال ابو موسى الاشعرى قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا استاذن احدكم ثلاثا فلم يؤذن له فليرجع. قال الحسن الاول اعلام والثانى مؤامرة والثالث استئذان بالرجوع. وعن انس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم استاذن على سعدبن عبادة فقال السلام عليكم ورحمة الله فقال سعد وعليكم السلام ورحمة الله ولم يسمع النبى صلى الله عليه وسلم حتى سلم ثلاثا ولم يسمهه فرجع النبى صلى الله عليه وسلم فاتبعه سعد فقال يارسول الله بابى انت وامى ماسلمت تسليمة الا هى باذنى ولقد رددت عليك ولم اسمعك احببت ان استكثر من سلامك ومن البركة.
ثم دخلوا البيت فقرب له زبيبا فاكل النبى صلى الله عليه وسلم. فلما فرغ قال اكل طعامكم الابرار وصلت عليكم الملائكة وافطر عندكم الصائمون. رواه البغوى فى شرح السنة. مسئلة اذا حضر احد على باب احد فلم يستاذن وقعد على الباب منتظرا حتى يخرج جاز. كان ابن عباس ياتى باب الانصارى لطلب الحديث فيقعد على الباب حتى يخرج ولايستاذن فيخرج الرجل ويقول ياابن عم رسول الله صلى الله عليه وسلم لو اخبرتنى فيقول هكذا امرنا ان نطلب العلم. قلت ويدل على هذا قوله تعالى ولو انهم صبروا حتى تخرج اليهم لكان خيرالهم.
مسئلة : اذا وقف احد على باب احد للاستئذان لايستقبل الباب من تلقاء وجهه اذا لم يكن هناك ستر ولاينظر من شق الباب اذا كان مردودا لحديث عبد الله بن بسر قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا اتى باب قوم لم يستقبل الباب من تلقاء وجهه ولكن من ركنه الايمن او الايسر فيقول السلام عليكم السلام عليكم وذلك ان الدور لم يكن يومئذ عليها ستور، رواه ابو داؤد. وعن سهل بن سعد الساعدى ان رجلا اطلع على النبى صلى الله عليه وسلم من ستر الحجرة وفى يد النبى صلى الله عليه وسلم مدرى فقال لو اعلم ان هذا ينظرنى لطعنت بالمدرى فى عينه. وهل جعل الاستئذان الامر اجل البصر، رواه البغوى. وعن ابى هريرة رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لوان امرا اطلع عليك بغير اذن فحذفته بحصاة ففقات عينه ماكان عليك جناح رواه احمد والشيخان فى الصحيحين.
(والله بما تعملون عليم) فيعلم ماتاتونه وماتذرونه مما خوطبتم به. (تفسير المظهرى ج6 ص 488، 489، 49. تفسير البغوى. مسند احمد بن حنبل. بخارى شريف. مسلم شريف. ابو داؤد شريف. شرح السنة. مشكوة شريف)
অর্থঃ- “(তোমরা যদি সেখানে না পাও) অর্থাৎ ঘর সমূহের মধ্যে (কাউকে) যে তোমাদেরকে অনুমতি দিবে, এমন (তবে অনুমতি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করো না) অর্থাৎ যতক্ষণ ঘরের বসবাসকারী না আসবে এবং তোমাদেরকে প্রবেশের অনুমতি না দিবে। প্রবেশে নিষেধকারী মহিলাদের থেকে হলে হবে না, যেখানে শুধু মহিলাই-বসবাস করে থাকে। বরং শুধু পুরুষই কোন গৃহে বাস করে, সে গৃহে প্রবেশের জন্য অনুমতি একান্ত প্রয়োজন। নিশ্চয়ই অনুমতি অবিভাবকের কাছ থেকে নিতে হবে, অপর কারো কাছ থেকে নিলে হবে না। তবে যদি বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয় যেমন; বাড়ীতে আগুন লাগলো, কেউ পানিতে ডুবতেছে, চোর প্রবেশ করেছে ইত্যাদি ব্যাপারে অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ বৈধ। (যদি তোমাদের বলা হয় ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে) প্রবেশের জন্য জেদ ধরবে না (এটাই তোমাদের জন্য পবিত্রতার কারণ) অর্থাৎ প্রবেশের জন্য কাকুতি-মিনতি না করে এবং দরজায় অবস্থান না করে ফিরে যাওয়াই তোমাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। প্রবেশ করার জন্য বারবার চেষ্টা করা অনুচিত। ফিরে যাওয়ার নির্দেশের হুকুম, তিনবার অনুমতি প্রার্থনার পর ঘর ওয়ালা যখন তাকে অনুমতি না দিবে তখনই।          হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমার নিকট হযরত আবূ মুছা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এসেছিলেন এবং বলেছেন, নিশ্চয়ই হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমার নিকট একজন লোক পাঠিয়েছেন যে, আমি যেন তাঁর কাছে যাই। তাই, আমি তাঁর (হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর) বাড়ীতে এলাম এবং তিনবার সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব না দেয়ায় আমি ফিরে এসেছি। (অন্য সময় হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে) তিনি আমাকে বললেন, কিসে আপনাকে আমার কাছে আসা থেকে নিষেধ করেছিল? জবাবে আমি বললাম, আমি আপনার কাছে (আপনার বাড়ীতে) এসেছিলাম এবং আপনার বাড়ীর দরজায় তিনবার সালাম দিয়েছিলাম। আমার সালামের জবাব দেয়া হয়নি, তাই আমি ফিরে এসেছি। কেননা, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, যখন তোমাদের কাছে কেউ তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করে, আর তাকে অনুমতি না দেয়া হয়, তখন সে যেন প্রত্যাবর্তন করে ফিরে যায়। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আপনি আপনার কথার উপর সাক্ষী (দলীল) পেশ করুন। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি তখন তাঁর সাথে দাঁড়ালাম এবং হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে গিয়ে সাক্ষ্য (দলীল) প্রদান করলাম। মুত্তাফাকুন আলাইহি তথা হাদীস শরীফটি বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে আছে।                  হযরত আবূ আইউব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত। সালাম দিতে তিনবার বলবে السلام عليكم اادخل. আস্সালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? যদি তাকে অনুমতি দেয়া হয় প্রবেশ করবে, আর যদি না দেয়া হয় ফিরে যাবে। হযরত ইবনু মাজাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা বর্ণনা করেছেন।
হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত বিশর বিন সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। সেখানে তিনি বলেন, হযরত আবূ মুছা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন যে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কাছে যখন কেউ তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করে, তাকে যদি অনুমতি দেয়া না হয়, সে যেন ফিরে যায়।
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, প্রথমবার সালামের মাধ্যমে আগমনকারীর আগমনের খবর দেয়া হয়। দ্বিতীয়বার সালামের মাধ্যমে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করা হয়। আর তৃতীয়বার সালামের মাধ্যমে ফিরে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করা হয়।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। একদা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সাদ বিন উবাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট তাশরীফ নিয়ে ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি চাইলেন এই বলে যে السلام عليكم ورحمة الله তোমাদের   উপর শান্তি এবং আল্লাহ্ পাক-এর রহমত বর্ষিত হোক।হযরত সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (নিম্ন আওয়াজে) জবাব দিলেন وعليكم السلام ورحمة الله ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ওয়া রহমতুল্লাহি। এতে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাব শ্রবণ করেননি। এমনকি তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার সালাম দিলেন। (হযরত সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিম্ন আওয়াজে জবাব দেয়ায়) তিনি তার জবাব শুনতে পাননি। তাই, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলেন। তখন হযরত সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পিছন দিক থেকে দ্রুতবেগে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আসলেন এবং বললেন ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি যতবার সালাম দিয়েছেন আমি তা শ্রবণ করেছি এবং সাথে সাথে জবাবও দিয়েছি। আর এত অল্প আওয়াজে জবাব দিয়েছি যাতে আপনি শ্রবণ না করেন। আমার আন্তরিক আকাঙ্খা ছিল যে, আপনার পক্ষ থেকে সালাম এবং বরকতের দোয়া অধিক পরিমাণে আমাদের উপর বর্ষিত হতে থাক। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণসহ তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন, তাঁর কাছে কিসমিস পেশ করা হলো। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা খেলেন। যখন খাবার থেকে ফারেগ হলেন তখন ইরশাদ করলেন, তোমার খাবার নেককার তথা সর্বোৎকৃষ্ট লোকগণ খেয়েছেন, ফেরেশতা আলাইহিমুস্ সালামগণ তোমার উপর রহমত নাযিলের জন্য দোয়া করছেন এবং রোযাদারগণ তোমাদের এখানে ইফতার করেছেন। হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীস শরীফটি শরহুস্ সুন্নাহ্তে বর্ণনা করেছেন।
মাসয়ালাঃ যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়ে অনুমতি না নিয়ে তার বের হওয়ার অপেক্ষায় বাড়ীর বাইরে বসে থাকে, তবে তা জায়িয (বৈধ)।
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একজন আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট হাদীস শরীফ শিক্ষা করার জন্য আসতেন এবং তিনি বের হওয়া পর্যন্ত বাইরে বসে থাকতেন, কিন্তু প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করতেন না। যখন হযরত আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বাইরে বের হয়ে এসে দেখতেন, তখন বলতেন, হে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাচার পুত্র! আপনি যদি আমাকে আপনার আগমনের খবর দিতেন। তখন তিনি বলতেন, আমাদেরকে এভাবে আদবের সাথে ইল্ম শিক্ষা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি বলি, এ বিষয়ের দলীল হলো, আল্লাহ্ তায়ালার বাণী: যদি তারা ছবর করতো। আপনি তাদের কাছে বের হয়ে আসা পর্যন্ত, অবশ্যই তা তাদের জন্য মঙ্গলজনক হতো।
মাসয়ালাঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন ব্যক্তির ঘরের দরজায় অনুমতির জন্য উপস্থিত হয়, তখন দরজাকে মুখোমুখি করে যেন না দাঁড়ায়, যখন দরজায় কোন পর্দা না থাকে তখনই। ঘরের ভিতর যেন না তাকায়, যখন দরজা বন্ধ থাকে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুস্র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কারো বাড়ীতে আসতেন, তখন তার দরজার মুখ বরাবর দাঁড়াতেন না। বরং ডান দিকে অথবা বাম দিকে দাঁড়াতেন এবং বলতেন السلام عليكم السلام عليكم. আস্সালামু আলাইকুম, আস্সালামু আলাইকুম।কেননা, সে যুগে সাধারণতঃ ঘরের দরজায় পর্দা দেয়া থাকতো না। আবূ দাউদ এটা বর্ণনা করেছেন।
হযরত সাহল বিন সাদ সায়িদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত যে, একদা একব্যক্তি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুজরা শরীফে উঁকি দিয়ে দেখলো। তখন হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারকে একটি লৌহখণ্ড ছিল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যদি জানতে পারতাম যে সে আমাদের দেখছে, তাহলে আমি তার চোখে লৌহখণ্ড প্রবেশ করাতাম। কারো ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতির নির্দেশ ঘরের দিকে না তাকানোর জন্যই দেয়া হয়েছে। বাগবীর রিওয়ায়েত।
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কোন ব্যক্তি তোমার অনুমতি ব্যতীত উকি মেরে তোমাকে দেখে, আর তুমি তার প্রতি কঙ্কর (পাথর) নিক্ষেপ কর, যার কারণে তার চোখ নষ্ট-ফুটা হয়ে যায়। তাতে তোমার কোন গুণাহ হবে না। মুসনাদে আহমদ, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত রয়েছে।
(তোমরা যা কর, আল্লাহ্ পাক তা ভালভাবে জানেন) অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে যে আদেশ দিয়েছেন, তোমরা তার প্রতি কতখানি আমল কর আর কতখানি আমল করনা সে সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক সম্পূর্ণ অবগত।” (তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৮৮, ৪৮৯, ৪৯০ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ বাগবী, মুসনাদু আহমদ বিন হাম্বল, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, শরহুস্ সুন্নাহ, মিশকাত শরীফ)
উল্লিখিত তাফসীরের কিতাবের আলোচনা ছাড়াও নিম্ন বর্ণিত তাফসীর এবং হাদীছ শরীফের কিতাব সমূহেও বর্ণনা, ভাষা, ভাব ইত্যাদির পার্থক্য সহ আলোচনা এসেছে: তাফসীরুল কুরতুবী, তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, যাদুল মাসীর ফী ইল্মিত্ তাফসীর, তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর, তাফসীরে ইবনু কাছীর, আত্ তাফসীরুল্ কবীর লি ইমাম ফখরির রাযী, আত্ তাসহীল লি উলুমিত তানযীল, নাযমুদ্দুরার, তাফসীরুস্ সমরকন্দী, তাফসীরে আদ্ দুররুল মাছূন, তাফসীরে আদ্ দুররুল্ মানছূর, আল্ মুহাররারুল্ ওয়াজীয, তাফসীরুল্ কাসিমী, তাফসীরে বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শাইখ যাদাহ আলাল বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল্ বাইযাবী, তাফসীরুল্ কাশ্শাফ, তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল জালালাইন, তাফসীরে ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাফসীরে আবীস্ সাউদ, তাফসীরে হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরুল্ মাওয়ারাদী, তাফসীরুল লুবাব, তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন, কানযুল ঈমান, তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী, তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন, তাফসীরে তাফহীমুল্ কুরআন, মুসনাদু আহমদ বিন হাম্বল, ফতহুল বারী, উমদাতুল্ কারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উসমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উসমানী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, শরহে বদরুদ্দীন আইনী, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তানযীমূল আশতাত, মিরয়াতুল্ মানাজীহ্ ইত্যাদি।)
সূরা নূরের ২৮ নং আয়াত শরীফ ও তার বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ্ পাক আমভাবে সকলকেই যে কোন ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে ঘরওয়ালাদের অনুমতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। চাই ঘরওয়ালা ঘরের ভিতর থাকুক অথবা নাই থাকুক। কখনো ঘর ওয়ালার তরফ থেকে ফিরে যেতে বললে ফিরে যাওয়াই অধিক পবিত্রতার কারণ। এ বিষয়টিও হিজাব বা পর্দারএকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা সংক্রান্ত সূরা নূরের ২৯নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
[৪৬৯]
ليس عليكم جناح ان تدخلوا بيوتا غير مسكونة فيها متاع لكم والله يعلم ما تبدون وما تكتمون.
অর্থঃ- তোমাদের জন্য কোন গুণাহ্ নেই, সেই ঘরে প্রবেশ করতে যে ঘরে কেউ বসবাস করে না, যেখানে তোমাদের দ্রব্য সামগ্রী থাকে। তোমরা যা প্রকাশ কর এবং গোপন কর, আল্লাহ্ পাক সমস্ত কিছুই জানেন।” (সূরা নূর/২৯)
অত্র আয়াতে কারীমায় মহান আল্লাহ্ পাক যে সমস্ত ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হয় না, সে সমস্ত ঘরের বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ যে সমস্ত ঘরে তথা মসজিদ, মাদ্রাসা, লঙ্গরখানা, সরাইখানা, বিরান ঘর যেখানে কেউ বসবাস করেনা ইত্যাদি এমন ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে কোন গুণাহ্ নেই। নিম্নে উল্লিখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় ইমাম মুজতাহিদ তথা অনুসরণীয় মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদের তাফসীরগ্রন্থ সমূহে যে ফায়ছালা দিয়েছেন তা উল্লেখ করা হলো- [৪৭০-৫০৮]
اخرج ابن ابى حاتم عن مقاتل بن حيان قال لما نزلت اية الاستئذان فى البيوت قال ابو بكر يا رسول الله كيف بتجار قريش الذين يختلفون بين مكة والمدينة والشام ولهم بيوت معلومة على الطريق فكيف يستاذنون ويسلمون وليس فيها سكان فانزل الله عز وجل (ليس عليكم جناح ان تدخلوا) اى فى ان تدخلوا متعلق بجناح لتضمنه معنى المؤاخذة او بعليكم (بيوتا غير مسكونة) من غير است عذان (فيها متاع) اى منفعة (لكم) حال من بيوتا قال البغوى اختلف فى هذه البيوت قال قتادة هى الخانات والبيوت والمنازل المبنية للسايلة ليأووا اليها ويأووا اليها امتعتهم جاز دخولها بغير استئذان فالمنفعة فيها النزول وايواء المتاع والاتقاء من الحر والبرد. وقال ابن زيد هى بيوت التجار وحوانيتهم التى بالاسواق يدخلها الناس للبيع والشراء وهو المنفعة.
وقال ابراهيم النخعى ليس على حوانيت السوق اذن. وكان ابن سيرين اذا جاء الى الحانوت التى فى السوق يقول السلام عليكم اادخل تم يلج. وقال عطاء هى البيوت النربة والمتاع هى قضاء الحاجة فيها من البول والغائط. وقيل هى جميع البيوت التى لاساكن لها لان الاستئذان انما شرع لئلا يطلع على عورة احد فاذا لم يخف ذلك فله الدخول من غير استئذان (والله يعلم ماتبدون وما تكتمون) وعيد  لمن دخل لفساد او اطلاع على عورات الناس. (التفسير المظهرى ج6 ص 490-491، تفسير الخازن ج5 ص68. تفسير البغوى ج5 ص68، مدارك التنزيل ج3 ص325)
অর্থঃ- হযরত ইবনে আবূ হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুক্বাতিল বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, যখন কারো ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি সংক্রান্ত আয়াত শরীফ (হুকুম) নাযিল হলো, তখন হযরত আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কুরাইশগণের অনেক ব্যবসায়ী মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ ও শাম-সিরিয়ার পথে যাতায়াত করে থাকেন। পথিমধ্যে তাদের অবস্থানের ঘর নির্দিষ্ট হয়। যেসব ঘরে কেউ বসবাস করে না, সেখানে কার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করবে এবং কাকে সালাম দিবে? এ কথার সমাধানে আল্লাহ্ আয্যা ওয়া জাল্লা অত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন। (তোমাদের জন্য প্রবেশ করতে কোন গুণাহ্ নেই, সে সমস্ত ঘরে যেখানে কেউ বসবাস করে না) অনুমতি ছাড়াই (যাতে সামগ্রী থাকে) অর্থাৎ যা উপকারে আসে (তোমাদের জন্য) এটি بيوتا শব্দ থেকে حال হয়েছে।           হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ সমস্ত ঘরের ব্যাপারে উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইখতিলাফ করেছেন। হযরত ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তা হচ্ছে সে সব ঘর-বাড়ী, দোকান, কক্ষ যা পথিকদের জন্য তৈরি করা হতো, তারা ঐ সব স্থানে অবস্থান করতো, তাদের মালামাল রাখতো। এসব বাড়ী ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা জায়িয। উপকার লাভ করা দ্বারা বুঝানো হয়েছে, সেখানে অবস্থান করা, মাল-সামগ্রী রাখা এবং গরম ও ঠাণ্ডা থেকে হিফাযত হওয়া।
হযরত ইবনু যায়েদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, এর দ্বারা ঐসব ঘর-বাড়ী উদ্দেশ্য যা ব্যবসায়ীদের ঘর এবং তাদের বাজারের দোকান। যাতে মানুষেরা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রবেশ করে থাকে। আর এটাই উপকার।
হযরত ইবরাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, বাজারের দোকান সমূহে প্রবেশের জন্য কোন অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই।
হযরত ইবনু সিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন কোন বাজারের দোকানে গমন করতেন, তখন বলতেন- السلام عليكم اأدخل. আস্সালামু আলাইকুম’, আমি কি প্রবেশ করতে পারি? অতঃপর জবাবের অপেক্ষা না করেই তাতে ঢুকে পড়তেন।
হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলোচ্য আয়াত শরীফে যে ঘর সমূহের কথা বলা হয়েছে তাহলো বিরান বাড়ী-ঘর। আর যে উপকৃত হওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাহলো সেখানে পেশাব-পায়খানা করার মাধ্যমে হাজত পূরণ করা।
কেউ কেউ বলেছেন, সে সমস্ত ঘর উদ্দেশ্য, যাতে কোন মানুষ বসবাস করে না। কেননা নিশ্চয়ই অনুমতির বিধান এজন্য যে, যেন কারো আওরাতের (পর্দার বিষয়ের) দিকে দৃষ্টি না দেয়, অর্থাৎ পর্দার ব্যাঘাত না হয়। যখন তা আর উপস্থিত নয় তখন অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করবে। (তোমরা যা প্রকাশ কর এবং গোপন কর, আল্লাহ্ পাক তা ভালভাবে জানেন)
এ সতর্কবাণী তাদের উদ্দেশ্যে উচ্চারিত হয়েছে, যারা ফিত্না-ফাসাদের উদ্দেশ্যেই প্রবেশ করে এবং অন্য মানুষের আবরনীয় জিনিসের দিকে দৃষ্টি দেয়। (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯০, ৪৯১ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৩২৫ পৃষ্ঠা)
নিম্ন বর্ণিত তাফসীরের কিতাব গুলোতেও বর্ণনা, ভাষা, ভাব ইত্যাদির তারতম্যে উল্লেখ আছে, তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ৮৯, ৯০ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২১ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৬৩, ১৩৬৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১০ জিঃ ১৩৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল্ বয়ান, যাদুল মাসীর ফী ইল্মিত্ তাফসীর ৫ম জিঃ ৩৫৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫০ পৃষ্ঠা, আত্ তাফসীরুল্ কবীর লিল ইমামিল্ ফখরির রাযী, তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর ৪র্থ জিঃ ২০, ২১ পৃষ্ঠা, তাফসীরে নাযমুদ্ দুরার ৫ম জিঃ ২৫৪, ২৫৫ পৃষ্ঠা, আত্ তাসহীল লি উলূমিত্ তানযীল ২য় জিঃ ৮৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরুস্ সমরকন্দী ২য় জিঃ ৪৩৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আদ্ দুররুল্ মানছূর, আল্ মুহাররাতুল্ ওয়াজীয ৪র্থ জিঃ ১৭৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ কাসিমী ৫ম জিঃ ২৯৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শাইখ যাদাহ্ আলাল্ বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল বাইযাবী, তাফসীরুল্ কাশ্শাফ, তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়াতুছ্ ছবী আলাল জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল্ আলাল্ জালালাইন, তাফসীরে কামালাইন আলাল জালালাইন, তাফসীরে ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাফসীরে আবীস্ সাউদ, তাফসীরে হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্  তাফাসীর, তাফসীরুল্ মাওয়ারাদী, তাফসীরুল্ লুবাব, তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন, কানযুল্ ঈমান, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লিশ শফী ওয়াত্ থানূবী, তাফসীরে মায়ারিফুল্ কুরআন ইত্যাদি।
সূরা নূরের ২৯নং আয়াত শরীফের বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ্ পাক যে সমস্ত ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হয় না, সে সমস্ত ঘরের ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ যে সমস্ত ঘরে তথা মসজিদ, মাদ্রাসা, লঙ্গরখানা, সরাইখানা, বিরান ঘর যেখানে কেউ বসবাস করেনা ইত্যাদি এমন ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে কোন গুণাহ্ নাই।

অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা সংক্রান্ত সূরা নূরের ৫৮ নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
[৫০৯]
يايها الذين امنوا ليستاذنكم الذين ملكت ايمانكم والذين لم يبلغوا الحلم منكم ثلث مرات من قبل صلوة الفجر وحين تضعون ثيابكم من الظهيرة ومن بعد صلوة الشاء. ثلث عورت لكم ليس عليكم ولا عليهم جناح بعدهن طوفون عليكم بعضكم على بعض كذلك يبين الله لكم الايت والله عليم حكيم.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজর নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা কাপড় আলগা করে রাখ এবং ইশার নামাযের পর। এ তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়। এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্য কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়। এমনিভাবে আল্লাহ্ পাক তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতগুলো বর্ণনা করেন। আল্লাহ্ পাক সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।” (সূরা নূর/৫৮)
অত্র আয়াত শরীফে দাস-দাসী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কাদেরকে তিন সময়ে ঘরে আসতে অনুমতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফজর নামাযের পূর্বে যখন মানুষেরা ঘুমের কাপড় পাল্টিয়ে নামাযের কাপড় পরিধান করে, দুপুরে যখন মানুষেরা কাপড় আলগা করে বিশ্রামের জন্য শুয়ে থাকে এবং ইশার নামাযের পর যখন মানুষেরা কাপড় পাল্টিয়ে ঘুমানের জন্য আলাদা কাপড় পরিধান করে থাকে। এ তিন সময় ছাড়া অন্য সময়ে অুনমতি ছাড়াই প্রবেশ করতে অসুবিধা নেই। এ সকল বিষয়ও হিজাব বা পর্দারঅন্তর্ভুক্ত।
নিম্নে এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় ইমাম মুজতাহিদ তথা মুফাস্সিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদের তাফসীর গ্রন্থে যে ফায়ছালা দিয়েছেন তা উল্লেখ করা হলো- [৫১০-৫১৩]
قوله تعالى (يايها الذين امنوا ليستاذنكم الذين ملكت ايمانكم) الاية قال ابن عباس رضى الله عنهما وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم غلاما من الانصار يقال له مدلج ابن عمرو الى عمربن الخطاب رضى الله عنه وقت الظهيرة ليدعوه فدخل فرأى عمر بحالة كره عمر رؤيته ذلك فانزل الله هذه الاية. وقال مقاتل نزلت فى اسماء بنت مرثد كان لها غلام كبير. فدخل عليها فى وقت كرهته فاتت رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت ان خدمنا وغلماننا يدخلون علينا فى حال نكرهها فانزل الله تعالى "يايها الذين امنوا ليستاذنكم" اللام لام الامر الذين ملكت ايمانكم يعنى العبيد والاماء (والذين لم يبلغوا الحلم منكم) من الاحرار ليس المراد منهم الاطفال الذين لم يظهروا على عورات النساء بل الذين عرفوا امر النساء ولكن لم يبلغوا (ثلاث مرات) اى ليستاذنوا فى ثلاث اوقات (من قبل صلاة الفجر وحين تضعون ثيابكم من الظهيرة) يريد المقيل (ومن بعد صلاة العشاء) وانما خص هذه الاوقات لانها ساعات الخلوة ووضع الثياب فربما يبدو من الانسان مالايحب ان يراه احد، امر العبيد والصبيان بالاستئذان فى هذه الاوقات واما غيرهم فليستاذنوا فى جميع الاوقات (ثلاث عورات لكم) قرا حمزة والكسانى ثلاث بنصب الثاء بدلا من قول ثلاث مرات وقرأ الاخرون بالرفع اى هذه الاوقات ثلاث عورات لكم سميت هذه الاوقات عورات لان الانسان يضع فيها ثيابه فتبدو عورته (ليس عليكم) جناح (ولا عليهم) على العبيد والخدم والصبيان (جناح) فى الدخول عليكم من غير استئذان (بعدهن) اى بعد هذه الاوقات الثلاثة (طوافون عليكم) اى العبيد والخدم يطوفون عليكم فيترددون ويدخلون ويخرجون فى اشغالهم بغير اذن بعضكم على بعض اى يطوف (بعضكم على بعض كذلك يبين الله لكم الايات والله عليم حكيم) اختلاف العلماء فى حكم هذه الاية فقال قوم منسوج قال ابن عباس رضى الله عنه لم يكن للقوم ستور ولا حجاب فكان الخدم والولائد يدخلون فربما يرون منهم مالايحبون، فامروا بالاستئذان وقد بسط الله الرزق واتخذ الناس الستور فرأى ان ذلك اغنى عن الاستئذان وذهب قوم الى انها غير منسوخة روى سفيان عن موسى بن عائشة قال سألت الشعبى عن هذه الاية ليستاذنكم الذين ملكت ايمانكم: أمنسوخة هى؟ قال لا والله. قلت ان الناس لايعملون بها قال الله المستعان وقال سعيدبن جبير فى هذه الاية ان ناسا يقولون نسخت والله مانسخت ولكنها مما تهاون به الناس. (تفسير البغوى ج5 ص87، 88، مدارك التنزيل ج3 ص338، 339، التفسير المظهرى ج6 ص554، 555، 556، 557 تفسير الخازن ج5 ص87-88)
অর্থঃ- “(হে ঈমানদারগণ! তোমাদের দাস-দাসী যেন তোমাদের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে) আয়াত শরীফ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা তাঁর আনছারী গোলাম যাকে মুদলিজ ইবনু আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলা হতো, তাকে দ্বিপ্রহরের সময় হযরত উমর ইবনুল্ খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে তাঁকে ডেকে আনতে পাঠালেন। গোলাম প্রবেশ করে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এমন অবস্থায় দেখলেন যা হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে অপছন্দনীয় মনে হলো। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ পাক অত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।
হযরত মুকাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আয়াত শরীফ নাযিল হয় হযরত আসমা বিনতে মারছাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তাঁর একজন বয়স্ক গোলাম ছিল। সে এমন সময় তাঁর ঘরে এসে প্রবেশ করতো, যা তাঁর কাছে অপছন্দনীয় ছিল। হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে আরজ করলেন, নিশ্চয়ই আমাদের খাদিম ও আমাদের গোলাম এমন সময় আমাদের কাছে প্রবেশ করে, যা আমরা অপছন্দ করি। তখন আল্লাহ্ পাক নাযিল করলেন, يايها الذين امنوا ليستاذنكم. হে ঈমানদারগণ! তারা যেন তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে।আয়াত শরীফে ليستاذنكم এর لام লামটি لام الامر লামুল্ আমর তথা নির্দেশ জ্ঞাপক লাম।যারা তোমাদের দাস্-দাসী অর্থাৎ অপ্রাপ্ত বয়স্ক দাস ও দাসী। (এবং যারা তোমাদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারাও) আযাদ তথা স্বাধীনদের মধ্য থেকে। এখানে সে সমস্ত শিশু উদ্দেশ্য নয় যাদের কাছে মহিলাদের গোপনীয় বিষয় এখনো প্রকাশমান হয়নি। কিন্তু যারা মহিলাদের বিষয়ে পরিচিত তবে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি। (তিন সময়ে) অর্থাৎ তারা যেন তিনটি সময়ে অনুমতি প্রার্থনা করে (ফজর নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা কাপড় আলগা করে রাখ এবং ইশার নামাযের পর) তিনটি সময়কে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কেননা, এ তিন সময় অন্য মানুষ থেকে একাকীত্ব-নির্জনে থাকার, কাপড় আলগা করার সময়, যাতে সে পছন্দ করে না যে তাকে কেউ দেখে ফেলুক। তাই, অপ্রাপ্ত বয়স্ক গোলাম, বালকদেরকে এ তিন সময়ে অনুমতি নিতে নির্দেশ করা হয়েছে। আর প্রত্যেক সময়েই এ কয়েক প্রকার ব্যক্তি ছাড়া অন্যান্যরা যেন অনুমতি গ্রহণ করে। (এ তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়) হামযা এবং কাসানী ثلاث শব্দের শেষে ثاء বর্ণে যবরসহ পড়েছেন, পূর্বে উল্লিখিত ثلاث مرات এর بدل হিসেবে। আর অপরাপর সকলেই পেশযোগে পড়েছেন। অর্থাৎ এই সময় গুলো তোমাদের দেহ খোলার সময়। কেননা এ সময়ে মানুষেরা তাদের কাপড় আলগা করে দেহকে খোলা রাখে। (তোমাদের জন্য নেই) কোন দোষ (এবং তাদের জন্যও নেই) অপ্রাপ্ত বয়স্ক দাস, খাদিম ও বালকদের (কোন দোষ) নেই তোমাদের কাছে তোমাদের ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে। (এ তিন সময়ের পর) অর্থাৎ আয়াতে উল্লিখিত তিনটি সময়ের পর। (তারা তোমাদের কাছে আসা-যাওয়া করে) অর্থাৎ অপ্রাপ্ত বয়স্ক দাস, খাদিম তোমাদের কাছে আসে যায়, প্রবেশ করে বের হয়ে যায় তোমাদের পরস্পরের অনুমতি ছাড়াই অর্থাৎ সব সময় আসা যাওয়া করে। (তোমাদের পরস্পরের কাছে, আল্লাহ্ পাক এমনিভাবে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতগুলো বর্ণনা করেন। আল্লাহ্ পাক সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।)
হযরত উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম এ আয়াত শরীফের হুকুম নিয়ে ইখতিলাফ করেছেন। একদল বলেন, এ আয়াতের হুকুম মানছূখ হয়েছে।   হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যখন এ আয়াত শরীফ নাযিল হয় তখন দরিদ্রতার কারণে মানুষের ঘরে পর্দা ও আবরণের ব্যবস্থা হতো না। এ কারণে খাদিম, সন্তান-সন্তুতি অসময়ে প্রবেশ করে তাদেরকে এমতাবস্থায় দেখতো যা তারা পছন্দ করতো না। তাই তাদেরকে অনুমতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে যখন আল্লাহ্ পাক মুসলমানগণকে সম্পদশালী করেছেন, মানুষ পর্দা-হিজাব ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছে, এজন্য অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে নাই। উলামা-ই-কিরামের এক দলের মতে, এ আয়াতের হুকুম মানছূখ (রহিত) হয়নি।
হযরত সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসা বিন আয়িশা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আমি হযরত ইমাম শাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ليستاذنكم الذين ملكت ايمانكم এ আয়াত শরীফের হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, এ আয়াত শরীফ কি মানছূখ হয়ে গেছে? তিনি জবাবে বলেছেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর শপথ, মানছূখ হয়নি। আমি বললাম: নিশ্চয়ই মানুষেরা এ আয়াত শরীফের আমল ছেড়ে দিয়েছে। তিনি বললেন: আল্লাহ্ পাক আমলের তাওফীক দান করুন।
হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ আয়াত শরীফের হুকুম সম্পর্কে বলেছেন, মানুষেরা বলে এ আয়াত শরীফ মানছূখ হয়েছে। আল্লাহ্ পাক -এর কসম! বরং মানুষেরা গাফলতী করে এ আয়াতের আমল ছেড়ে দিয়েছে। (তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ৮৭, ৮৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৩৩৮, ৩৩৯ পৃষ্ঠা, আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৫৫৪, ৫৫৫, ৫৫৬, ৫৫৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ৮৭, ৮৮ পৃষ্ঠা)
[৫১৪-৫৫১]
مسئلة : مقتضى هذه الاية انه لايجوز لعبد وان كان صغيرا عاقلا ان يدخل على سيده ولا لامة ان تدخل على سيدتها واما دخول العبد البالغ او المراهق على سيدته فممنوع فى جميع الاوقات لقوله تعالى "قل للمؤمنين يقضوا من ابارهم." ولايبدين .ينتهن الا لبعولتهن" الاية والمماليك المستشهاة منها قد ذكرنا ان المراد به الاناث دون الذكور واما دخول الامة على سيدها التى يجوزله وبها فجائز فى كل وقت كالزوجة. ولايجوز لصغير عاقل ان يدخل فى احد هذه الاوقات يغير استئذان ويجوزلهم ان يدخلوا بغير الاستئذان فى غيرهذه الاوقات. (تفسير المظهرى ج6 ص556)
অর্থঃ- মাসয়ালাঃ- এ আয়াত শরীফের হুকুম হলো যে, দাস যদি জ্ঞান সম্পন্না বালক হয় তার জন্য অনুমতি ছাড়া মনিবের কাছে প্রবেশ করা জায়িয নেই। অনুরূপ ভাবে দাসী যদি জ্ঞান সম্পন্ন বালিকা হয় তার জন্যও অনুমতি ছাড়া মহিলা মনিবের কাছে প্রবেশ করা জায়িয নেই। বালেগ দাস অথবা সবেমাত্র বালেগ দাসের জন্য তাঁর মহিলা মনিবের কাছে সর্ব সময়েই প্রবেশ করা নিষেধ। আল্লাহ্ পাক-এর বাণী হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে নিম্নগামী করে।সূরা নূর ৩০ আয়াত। তারা যেন তাদের স্বামী ছাড়া অন্য কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।সূরা নূর ৩১ আয়াত। ক্রীত-দাসী তার প্রভূর নিকট সর্বদা গমনাগমন করতে পারবে। কারণ, সে তার প্রভূর স্ত্রীর মতোই।
জ্ঞান সম্পন্ন ছোট বালকের জন্য এই তিন সময়ে কারো কাছে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তবে এ তিন সময় ব্যতীত সর্বসময়ে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা তাদের জন্য জায়িয।” (তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৫৫৬ পৃষ্ঠা)  
এছাড়াও নিম্ন বর্ণিত তাফসীর গুলোতে বর্ণনা, ভাষা, ভাব এবং আলোচনার কম-বেশী সহ উল্লেখ রয়েছে- তাফসীরুল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ৩০২, ৩০৩, ৩০৪, ৩০৫, ৩০৬ পৃষ্ঠা, আহকামুল্ কুরআন লি ইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৯৫, ১৩৯৬, ১৩৯৭, ১৩৯৮, ১৩৯৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ১২৩, ১২৪, ১২৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১০ম জিঃ ২০৯, ২১০, ২১১, ২১২, ২১৩, ২১৪, ২১৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল বয়ান, যাদুল্ মাসীর ফী ইল্মিত্ তাফসীর ৫ম জিঃ ৩৭৩, ৩৭৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩য় জিঃ ৪৮৪, ৪৮৫, ৪৮৬ পৃষ্ঠা, আত্ তাফসীরুল্ কবীর লিল্ ফখরির রাযী, তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর, আত্ তাসহীল লি উলূমিত্ তানযীল, নাযমুদ্ দুরার, তাফসীরুস্ সমরকন্দী, তাফসীরে আদ্ দুররুল মানছূর, তাফসীরে আদ্ দুররুল মাছূন, আল্ মুহাররারুল ওয়াজীয, তাফসীরুল্ কাসিমী, তাফসীরে বাইযাবী, হাশিয়াতুছ্ ছাবী আলাল্ জালালাইন, হাশিয়াতুশ্ শাইখ যাদাহ্ আলাল্ বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল্ বাইযাবী, তাফসীরুল্ কাশ্শাফ, তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল্ জালালাইন, তাফসীরে কামালাইন, তাফসীরে ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাফসীরে আবীস্ সাউদ, তাফসীরে হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরুল্ মাওয়ারাদী, তাফসীরুল্ লুবাব, তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে আযিযী, তাফসীরে ক্বাদিরী, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন, কানযুল্ ঈমান, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানূবী, তাফসীরে মায়ারিফুল্ কুরআন ইত্যাদি।
সূরা নূরের ৫৮ নং আয়াত শরীফের উপরোক্ত বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, দাস-দাসী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কাদেরকে তিন সময়ে ঘরে আসতে অনুমতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফজর নামাযের পূর্বে যখন মানুষেরা ঘুমের কাপড় পাল্টিয়ে নামাযের কাপড় পরিধান করে, দুপুরে যখন মানুষেরা কাপড় আলগা করে বিশ্রামের জন্য শুয়ে থাকে এবং ইশার নামাযের পর যখন মানুষেরা কাপড় পাল্টিয়ে ঘুমানের জন্য আলাদা কাপড় পরিধান করে থাকে। এ তিন সময় ছাড়া অন্য সময়ে অুনমতি ছাড়াই প্রবেশ করতে অসুবিধা নেই। এসকল বিষয়ও হিজাব বা পর্দারঅন্তর্ভুক্ত।

অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা সংক্রান্ত সূরা নূরের ৫৯ নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
[৫৫২]
واذا بلغ الاطفال منكم الحلم فليتساذنوا كما استاذن الذين من قبلهم كذلك يبين الله لكم ايته والله عليم حكيم.
অর্থঃ- তোমাদের সন্তান-সন্ততি যখন প্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কা হবে, তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি নেয়। এমনিভাবে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি উনার আয়াত শরীফসমূহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন। মহান আল্লাহ তিনি পাক সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নূর/ ৫৯)
অত্র আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক নিজেদের সন্তানদের ব্যাপারে বলেছেন যে, তারা যদি প্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কা হয়, তবে তাদের জন্যও অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা ওয়াজিব। অন্যান্য মানুষ অথবা বড়রা যে রকম অনুমতি নিয়ে থাকে। এটাও হিজাব বা পর্দারঅংশ। 
উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় ইমাম, মুজতাহিদ তথা মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাদের তাফসীরগ্রন্থ সমূহে যে ফায়ছালা দিয়েছেন।
নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-
[৫৫৩-৬১৬]
(واذا بلغ) اى قارب البلوغ (الاطفال منكم الحلم فليستاذنوا كما استاذن الذين من قبلهم) فى الاوقات كلها لذوال المبيح للدخول بغير استئذان وهو المخالطة وكثرة الدخول. وحكم هذه الاية يعم كل من يريد الدخول على الرجال او النساء محرمات كن او اجنبيات ويؤيده ماروى عن ابى سعيد الخدرى قال اتانا ابوعوسى فقال ان عمر رضى الله عنه ارسل الى ان اتيه فاتيت بابه فسلمت ثلاثا فلم يرد على فرجعت وقد قال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا استاذن احدكم ثلاثا فلم يؤذن له فليرجع.
قال عمر اقم عليه البينة قال ابو سعيد فقمت معه فذهبت الى عمر فشهدت. متفق عليه. وعن عطاء بن يسار ان رجلا سال رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال استاذن على امى فقال نعم فقال الرجل انى معها فى البيت فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم استاذن عليها فقال الرجل انى خادمها فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم استاذن عليها اتحب ان تراها عريانة قال لا قال فاستأذن عليها. رواه مالك مرسلا. قال البغوى قال سعيدبن المسيب يستاذن الرجل على امه فانما انزلت هذه الاية فى ذلك وسئل حذيفة ايستاذن الرجل على والته قال نعم ان لم يفعل راى منها مايكره. قلت لعل الامر بالاستئذان فى هذه الاية للاستحباب دون الوجوب فمن اراد الدخول فى بيت نفسه وفيه محرماته يكره له الدخول فيه من غير استئذان تنزيها لاحتمال رؤيته واحدة منهن عريانة وهوا حتمال ضعيف ومقتضاه التنزه عنه. واما الدخول فى بيت غيره من غير استئذان فمحرم لايجوز لقوله تعالى "يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوتا غير بيوتكم حتى تستانسوا" وكذا فى بيت فيه نساء اجنبيات لايجوز للرجل الدخول عليهن من غير استئذان لقوله تعالى "قل للمؤمنين يغضوا من اصارهم" والله اعلم.
وقال البيضاوى استدل بهذه الاية من اوجب استئذان العبد البالغ على سيدته وجوابه ان المراد بهم المعهودون الذين جعلوا قسيما للمماليك فلايندرجون فيهم. وكلام البيضاوى هذا يشعر باختلاف العلماء فى وجوب استئذان العبد البالغ على سيدته بناء على اختلافهم فى ان العبد هل هو محرم لسيدته كما قال به مالك والشافعى اولا كما قال به ابو حنيفة فمن قال بكونه محرما فالاستئذان عنده مستحب كالاستئذان على غيرها من المحرمات. ومن لم يقل بكونه محرما قال بوجوبه. والله اعلم. (التفسير المظهرى ج6 ص557، 558، تفسير البغوى، مؤطا امام ملك، اوجز المسالك، الزرقانى، المنتقى. بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشأد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، شرح الابى والسنوسى، المفهم. مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهر حق، تنظيم الاشتات، مراة المناجيح)
অর্থঃ- “(যখন উপনীত হবে) অর্থাৎ যখন (তোমাদের সন্তান-সন্তুতি, প্রাপ্ত বয়স্ক হবে, তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তী বড়দের মত অনুমতি প্রার্থনা করে) অর্থাৎ তোমাদের সন্তান-সন্ততি যৌবনে পদার্পন করলে অথবা যৌবন প্রাপ্ত হলে তাদেরকে তাদের বড়দের মত ঘরে অবাধ যাতায়াত বন্ধ করে দিতে হবে। এ আয়াত শরীফের হুকুম আমভাবে প্রত্যেক মাহরাম ও গাইরে মাহ্রাম পুরুষ এবং মহিলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, একবার হযরত আবূ মুছা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমার কাছে এসে বললেন, নিশ্চয়ই হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমার কাছে এক লোককে পাঠিয়েছেন যে, আমি যেন তাঁর কাছে যাই। আমি যথারীতি তাঁর বাড়ীতে গিয়ে তিনবার সালাম দিলাম। কিন্তু আমি কোন জবাব পেলাম না, তাই ফিরে এলাম। (অন্য সময়, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ায় তিনি বললেন, আমার কাছে আসতে তোমাকে কিসে নিষেধ করেছে?) আমি বললামঃ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন; যখন তোমাদের কেউ তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করবে, যদি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হয় তবে ফিরে যাবে। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তোমার কথার সত্যতা সম্পর্কে দলীল পেশ কর। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তখন আমি তাঁর সাথে দাঁড়ালাম এবং হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে গেলাম এবং এ বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করলাম। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)   হযরত আত্বা ইবনু ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো, আমি কি আমার মায়ের ঘরে প্রবেশের জন্যও অনুমতি প্রার্থনা করবো? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, অনুমতি প্রার্থনা করবে। সে ব্যক্তি বললো, আমি তো আমার মায়ের সাথে একই ঘরে থাকি। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তবুও তাঁর কাছে অনুমতি নাও। লোকটি আবার বললো, আমি তো তাঁর খাদিম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, তবুও তুমি তাঁর কাছে প্রবেশের জন্য অনুমতি নাও। তুমি কি তোমার মাকে বস্ত্রহীন অবস্থায় দেখতে পছন্দ কর? সে ব্যক্তি বললো, না। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বললেন, তাহলে তুমি তাঁর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে প্রবেশ কর। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীসটি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, কোন লোক তাঁর মায়ের ঘরে প্রবেশের পূর্বে অনুমতি গ্রহণ প্রয়োজন। আলোচ্য আয়াতে কারীমা অনুমতি গ্রহণের বিধান জানানোর জন্যই অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন ব্যক্তি তাঁর পিতা-মাতার ঘরে প্রবেশের জন্য কি অনুমতি প্রার্থনা করবে? তিনি জবাবে বলেছিলেন, হ্যাঁ, অনুমতি প্রার্থনা করবে। যদি সে অনুমতি না নেয় তাহলে সে তাদেরকে এমতাবস্তায় দেখতে পাবে, যা সে অপছন্দ করে থাকে।           আমি বলি সম্ভবত, আলোচ্য আয়াতে কারীমায় প্রদত্ত অনুমতি প্রার্থনার বিধানটি মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। তাই কেউ যদি নিজ ঘরে প্রবেশ করতে চায় এবং সেখানে যদি এমন নারীও উপস্থিত থাকে, যার সাথে পর্দা অত্যাবশ্যক, তবুও সে যদি বিনা অনুমতিতে সেখানে প্রবেশ করে, তবে তা হবে মাকরূহ তানযীহী। কারণ অন্যের বস্ত্রহীন হওয়ার সম্ভাবনা এমতাবস্থায় নেই। তবুও এমন পরিস্থিতিতে অনুমতি প্রার্থনা করা মুস্তাহাব। কিন্তু অন্যের গৃহে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা সর্বাবস্থায় হারাম, যা জায়িয নেই। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমারা তোমাদের নিজেদের ঘর ব্যতীত অন্যের ঘরে অনুমতি না নেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করো না
অনুরূপ ভাবে যে ঘরে অপরিচিতা নারী থাকে, সেখানেও তার নিকট অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা জায়িয নেই। আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে পরনারী থেকে নিম্নগামী করে।আল্লাহ্ পাক অধিক জানেন।
হযরত ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন; যারা বলেন, প্রাপ্ত বয়স্ক গোলাম যদি তার প্রভূপতœীর নিকট যেতে চায়, তাঁর জন্য অনুমতি প্রার্থনা করা ওয়াজিব। তারা তাদের অভিমতের পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করেন অত্র আয়াত শরীফকে। কিন্তু অভিমতটি যথাযথ নয়। কারণ আলোচ্য আয়াতে গোলামের কথা বলাই হয়নি। বলা হয়েছে, প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান-সন্তুতির কথা। তবে বাইযাবীর বক্তবে  এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, প্রাপ্ত বয়স্ক গোলামের পক্ষে তার প্রভূ পতœীর নিকটে অবাধ গমনাগমনের বিষয়টি উলামা-ই-কিরামের নিকট ইখতিলাফী বিষয়। আর ইখতিলাফের ভিত্তি হচ্ছে গোলাম তার প্রভূপতœীর মাহ্রাম (বিবাহ নিষিদ্ধ পুরুষ) কিনা? ইমাম মালিক ও ইমাম শাফী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বলেন, সে মাহ্রাম। আর ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সে মাহরাম নয়। যদি মাহরাম হয়, তবে প্রভূ পতœীর কক্ষে প্রবেশের জন্য তার অনুমতি প্রার্থনা হবে মুস্তাহাব, যেমন অন্যান্য মাহরাম নারীদের বেলায় মুস্তাহাব। আর যদি মাহ্রাম না হয়, তবে অনুমতি প্রার্থনা হবে ওয়াজিব। আল্লাহ্ পাক অধিক জানেন। (এমনিভাবে তাঁর আয়াত সমূহ আল্লাহ্ পাক তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন। আল্লাহ্ পাক সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়)॥ (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৫৫৭, ৫৫৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ বাগবী, মুয়াত্তা ইমাম মালিক, আউজাযুল্ মাসালিক, আয্ যুরক্বানী, আল্ মুনতাক্বা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্কারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উসমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উসমানী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল্ মুফহিম, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ্, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তানযীমুল্ আশতাত, মিরয়াতুল্ মানাজীহ)
এছাড়াও নিম্ন বর্ণিত তাফসীরগুলোতে বর্ণনা, ভাষা, ভাব, সংক্ষিপ্ত বা বিস্তারিত সহ বর্ণিত রয়েছে, তাফসীরুল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ৩০৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লি ইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৪০০ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ৮৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ, ৮৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৩৩৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ১২৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১০ম জিঃ ২১৫, ২১৬, ২১৭ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল্ বয়ান, যাদুল্ মাসীর ফী ইলমিত্ তাফসীর ৫ম জিঃ ৩৭৩, ৩৭৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩য় জিঃ ৪৮৫, ৪৮৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর, তাফসীরে কবীর লি ইমাম ফখরির রাযী, আত্ তাসহীল লি উলুমিত্ তানযীল ২য় জিঃ, নাযমুদ্ দুরার ৫ম জিঃ, তাফসীরুস্ সমরকন্দী ২য় জিঃ, তাফসীরে আদ্ দুররুল্ মানছূর, তাফসীরে আদ্ দুররুল্ মাছূন ৫ম জিঃ, আল্ মুহাররারুল্ ওয়াজীয, তাফসীরুল্ কাসিমী ৫ম জিঃ, তাফসীরে বাইযাবী, হাশিয়ায়ে শাইখ যাদাহ আলাল্ বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল বাইযাবী, তাফসীরুল্ কাশ্শাফ, তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল্ আলাল জালালাইন, তাফসীরে কামালাইন আলাল্ জালালাইন, হাশিয়াতুছ্ ছাবী আলাল্ জালালাইন, তাফসীরে ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাফসীরে আবীস্ সাউদ, তাফসীরে হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরুল্ মাওয়ারাদী, তাফসীরুল্ লুবাব, তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন, কানযুল্ ঈমান ওয়া খাযাইনুল্ ইরফান, তাফসীরে মায়ারিফুল্ কুরআন ইত্যাদি।
সূরা নূরের ৫৯ নং আয়াত শরীফের উপরোক্ত বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো যে,      মহান আল্লাহ্ পাক নিজেদের সন্তানদের ব্যাপারে বলেছেন যে, তারা যদি প্রাপ্ত বয়স্ক-বয়স্কা হয়, তবে তাদের জন্যও অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করা ওয়াজিব। অন্যান্য মানুষ অথবা বড়রা যে রকম অনুমতি নিয়ে থাকে। এটাও হিজাব বা পর্দারঅংশ। 

হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা আহযাব-এর  ৫৩ নং আয়াত শরীফ ও তার
তাফসীর বা ব্যাখ্যা
 [৬১৭]
واذا سألتموهن متاعا فسألوهن من وراء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن.
অর্থঃ- তোমরা তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল্ মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব/ ৫৩)

গায়রে মাহরামদের নিকট বিশেষ প্রয়োজনে কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকেই চাইতে হবে

অত্র আয়াত শরীফ যদিও খাছভাবে হযরত উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে উপলক্ষ্য করে নাযিল হয়েছে। কিন্তু আমভাবে এর হুকুম কিয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলমান নর-নারীর জন্য অপরিহার্য। আয়াত শরীফে হযরত উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইতে বলা হয়েছে। মূলতঃ সমস্ত মুসলমান, মুমিনগণকে বলা হয়েছে যে, তোমরা অপর কোন গায়রে মাহরাম মুসলিমা, মুমিনা নারীর কাছে বিশেষ প্রয়োজনে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে শালীনতার মাধ্যমে চাইবে। বেপর্দা হয়ে সামনা সামনি দেখা করে চাওয়া যাবে না। মূলতঃ এর দ্বারা হিজাব বা পর্দারগুরুত্বকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ বিশেষ প্রয়োজনেও বেপর্দা হওয়া যাবেনা বরং পর্দায় থেকেই প্রয়োজন মিটাতে হবে। এটাই মহান আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ।
নিম্নে এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় মুফাস্সিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যে আলোচনা করেছেন, তা বিশ্ব বিখ্যাত, সর্বজনমান্য তাফসীর গ্রন্থ সমূহ থেকে উল্লেখ করা হলো- [৬১৮]
(واذا سالتموهن) اى نساء النبى صلى الله عليه وسلم لدلالة بيوت النبى عليهن لان فيها نساؤه (متاعا) اى شيئا ينتفع به استعارة او استهابا او ردا للعارية (فسئلوهن) المتاع (من وراء حجابا الستر الجملة الشرطية معطوفة على قوله "لاتدخلوا بيوت النبى" قال البغوى فبعد اية الحجاب لم يكن لاحد ان ينظر الى امرأة من نساء رسول الله صلى الله عليه وسلم منتقبة كانت او غير منتقبة.
(ذلكم) اى السوال من وراء الحجاب (اطهر لقلوبكم وقلوبهن) من الخواطر الشيطانية الجملة تعليل لما سبق. (التفسير المظهرى ج7 ص372)
অর্থঃ- “(তোমরা যখন উম্মুল্ মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের কাছে কিছু চাবে) অর্থাৎ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের কাছে। এখানে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরকে দালালত করা হয়েছে। কেননা, তাঁর ঘরেই তাঁর স্ত্রীগণ বসবাস করেন। (কোন কিছু) অর্থাৎ নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু ধার বা অনুদান চাইলে অথবা ধার নেয়া কোন কিছু ফেরত দিতে চাইলে। (তখন তাদের কাছে চাবে) সামগ্রী (পর্দার আড়াল থেকে) অর্থাৎ আবরণের আড়াল থেকে। এ বাক্যটি আয়াত শরীফের প্রথমাংশ لاتدخلوا بيوت النبى. থেকে الجملة الشرطية معطوفة হয়েছে।
ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহধর্মিনীগণের দিকে দৃষ্টিপাত করা আর বৈধ ছিলো না। তাঁরা নিকাব তথা পর্দা অবস্থায় থাকুন অথবা না থাকুন। (এটা তোমাদের জন্য) অর্থাৎ পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া (তোমাদের জন্য এবং তাঁদের জন্য অনেক পবিত্রতার কারণ) শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে বাঁচার ব্যাপারে।” (আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৭ম জিঃ ৩৭২ পৃষ্ঠা) [৬১৯-৬২১]
(واذا سألتموهن متاعا فاسئلوهن من وراء حجاب) اى من وراء ستر فبعد اية الحجاب لم يكن لاحد ان ينظر الى امراة رسول الله صلى الله عليه وسلم متنقبة كانت او غير متنقبة (ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن) من الريب. وقد صح فى سبب نزول اية الحجاب ..... عن ابن شهاب عن عروة عن عائشة "ان ازواج النبى صلى الله عليه وسلم كن يخرجن بالليل اذا تبرزن الى المناصع وهو صعيد افيح وكان عمر يقول للنبى صلى الله عليه وسلم احجب نسائك فلم يكن رسول الله صلى الله عليه وسلم يفعل فخرجت سودة بنت زمعة زوج النبى صلى الله عليه وسلم ليلة من الليالى عشاء وكانت امراة طويلة فناداها عمر ألا قدعرفناك ياسودة حرصا على ان ينزل الحجاب فانزل الحجاب. (تفسير البغوى ج5 ص 273. تفسير الخازن ج5 ص 273. تفسير مدارك التنزيل ج3 ص476)
অর্থঃ- “(তোমরা যখন উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের কাছে কিছু চাবে, তখন তা তাদের কাছে পর্দার আড়াল থেকে চেয়ো) অর্থাৎ পর্দার আড়াল থেকে। এ আয়াতুল্ হিজাব তথা পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণের দিকে চোখ তুলে তাকানোর কেউ ছিল না, তাঁরা নিকাব তথা পর্দা আবৃত থাকুন অথবা নাই থাকুন। (এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের জন্য অন্তরের অধিক পবিত্রতার কারণ) সন্দেহ মুক্ত হওয়া থেকে। আয়াতুল হিজাব তথা পর্দার আয়াত শরীফ নাযিলের বিশুদ্ধ শানে নুযূল হচ্ছে যে, ......... হযরত ইবনু শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত উরওয়াহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, “নিশ্চয়ই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণ অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ রাতের বেলায় হাজত পূরণের জন্য বাইরে যেতেন। আর হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রায়ই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতেন, আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে পর্দায় রাখলে ভালো হতো। কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করেননি (যেহেতু তিনি ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত)। একরাতে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন হযরত সাওদা বিনতে যাময়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হাজত পূরণে বের হলেন। তিনি ছিলেন লম্বা আকৃতির মহিলা। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁকে ডেকে বললেন, হে হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আমি কিন্তু আপনাকে চিনে ফেলেছি। এটা ঐ উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, যাতে পর্দার বিধান নাযিল হয়। হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, অতঃপর পর্দার বিধান সম্বলিত আয়াত শরীফ নাযিল হয়।” (তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ২৭৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ২৭৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৪৭৬ পৃষ্ঠা)
[৬২২-৬৫৯]
(واذا سألتموهن) ....... اى واذا طلبتم منهن (متاعا) اى شيئا يتمتع به من الماعون وغير (فاسالوهن) فاطلبوا منهن ذلك (من وراء حجاب) اى ستر ..... (ذلكم) الظاهرانه اشارة الى السؤال من وراء حجاب ..... (اطهر لقلوبكم وقلوبهن) اى اكثر تطهرا من الخواطر الشيطانية التى تخطر للرجال فى امر النساء وللنساء فى امر الرجال فان الرؤية سبب التعلق والفتنة. وفى بعض الاثار النظر سهم مسموم من سهام ابليس. (تفسير روح المعانى ج12 ص 71، 72)
অর্থঃ- “(যখন তোমরা উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের কাছে চাবে) অর্থাৎ তাঁেদর কাছে তলব করবে (কোন কিছু) অর্থাৎ এমন কিছু যা অত্যাবশ্যকীয় অথবা অন্য কিছু (তখন তা চেয়ো) তখন তা তাঁদের কাছে তলব করো (পর্দার আড়াল থেকে) অর্থাৎ আবরণের মধ্যে থেকে। ...... (এটা তোমাদের জন্য) এটা দ্বারা পর্দার আড়াল থেকে কিছু সুওয়াল করার দিকে ইশারা করা হয়েছে। .......  (তোমাদের অন্তরের এবং তাঁদের অন্তরের পবিত্রতার কারণ।) অর্থাৎ শয়তানদের ওয়াস্ওয়াসা থেকে বাঁচার জন্য অধিক পবিত্রতার কারণ। যে পুরুষদেরকে মহিলাদের কাজের ব্যাপারে এবং মহিলাদেরকে পুরুষদের কাজের ব্যাপারে ধোকা দেয়। আর নিশ্চয়ই অবৈধ দৃষ্টির কারণে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে ফিৎনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে, ‘চোখের দৃষ্টি শয়তানের তীর সমূহের মধ্যে অন্যতম তীর।” (তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১২তম জিঃ ৭১, ৭২ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত তাফসীর গ্রন্থের আলোচনা ছাড়াও নিম্ন বর্ণিত তাফসীর গুলোতে বর্ণনা ও ভাষার তারতম্যে উল্লেখ রয়েছে, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লিল্ কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন ল্ িজাছছাছ্, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লি ইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৫৭৮, ১৫৭৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুত্ ত্ববারী ১০ম জিঃ ২৮, ২৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল বয়ান ৭ম জিঃ ২১৫, ২১৬ পৃষ্ঠা, যাদুল্ মাসীর ফী ইলমিত্ তাফসীর ৬ষ্ঠ জিঃ ২১৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনু কাছীর ২য় জিঃ ৮০৪ পৃষ্ঠা, আত্ তাফসীরুল্ কবীর লিল্ ইমাম ফখরির রাযী ২৪জিঃ, ২২৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর ৪র্থ জিঃ ২৯৮ পৃষ্ঠা, আত্ তাসহীল লি উলূমিত্ তানযীল, নাযমুদ্ দুরার, তাফসীরুস সমরকন্দী, তাফসীরে দুররুল্ মানছূর, তাফসীরে দুররুল মাছূন, তাফসীরুল কাসিমী, তাফসীরুল্ জালালাইন, তাফসীরে হাশিয়াতুশ্ শাইখ যাদাহ্ আলাল জালালাইন, হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল্ বাইযাবী, হাশিয়াতুছ্ ছবীহ্ আলাল্ জালালাইন তাফসীরুল্ কাশ্শাফ, তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল জালালাইন, তাফসীরে কামালাইন আলাল জালালাইন, তাফাসীরে ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আল্ মুহাররারুল ওয়াজীয, তাফাসীরে আবীস্ সাঊদ, তাফসীরে হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফসীর, তাফসীরুল্ মাওয়ারাদী, তাফসীরুল্ লুবাব, তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন, কানযুল্ ঈমান ওয়া খাযাইনুল্ ইরফান, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন্ লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী, তাফসীরে মায়ারিফুল্ কুরআন, তাফহীমুল কুরআন ইত্যাদি।
সূরা আহযাবের ৫৩ নং আয়াত শরীফের বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবেই প্রমাণিত হলো যে,অত্র আয়াত শরীফ যদিও খাছভাবে হযরত উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে উপলক্ষ্য করে নাযিল হয়েছে; কিন্তু আমভাবে এর হুকুম কিয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলমান নর-নারীর জন্য অপরিহার্য। আয়াত শরীফে হযরত উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইতে বলা হয়েছে।
মূলতঃ সমস্ত মুসলমান, মুমিনগণকে বলা হয়েছে যে, তোমরা অপর কোন গায়রে মাহরাম মুসলিমা, মুমিনা নারীর কাছে বিশেষ প্রয়োজনে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে শালীনতার মাধ্যমে চাইবে। বেপর্দা হয়ে সামনা সামনি দেখা করে চাওয়া যাবে না। মূলতঃ এর দ্বারা হিজাব বা পর্দারগুরুত্বকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ বিশেষ প্রয়োজনেও বেপর্দা হওয়া যাবেনা বরং পর্দায় থেকেই প্রয়োজন মিটাতে হবে। এটাই মহান আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ।

হিজাব বা পর্দাসম্পর্কিত সূরা আহযাব-এর ৫৯নং আয়াত শরীফ ও তার
তাফসীর বা ব্যাখ্যা
 [৬৬০]
يايها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن ذلك ادنى ان يعرفن فلايؤذين وكان الله غفورا رحيما. (سورة الاحزاب 59)
অর্থঃ- হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীনগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখে। এতে তাদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে তাঁদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব/৫৯)

মহিলাদের জন্য গায়রে মাহরামদের
সম্মুখে মুখমন্ডল বা চেহারাসহ সমস্ত
শরীরই ঢেকে রাখা ফরয

উল্লিখিত আয়াত শরীফের মূল বিষয় হলো يدنين عليهن من جلابيبهن. তারা যেন তাদের মুখমন্ডলের উপর জিলবারجلباب চাদর বা পর্দা ঝুলিয়ে রাখে। جلباب জিলবাবআরবী শব্দ, যা বড় চাদরকে বলা হয়। আর ادناء ইদনাঅর্থ নিকটবর্তী ও পেঁচিয়ে রাখা। কিন্তু এরপর على আলাশব্দ আসলে এর অর্থ হবে ارخاء ইরখাঅর্থাৎ উপর দিক হতে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেয়া। তাই আয়াত শরীফের স্পষ্ট অর্থ হবে, ‘মহিলাগণ যেন তাদের শরীরে পরিহিত চাদরটিকে ভালভাবে পরিধান করে এর একটি অংশ নিজের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে দেয়।যাতে মুখমন্ডল অন্য পুরুষের দৃষ্টি গোচর না হয়। কারণ বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে, সমস্ত শরীর ঢেকে রাখার সাথে সাথে মুখমন্ডলও ঢেকে রাখা প্রত্যেক মুমিনা ও মুসলিমা মহিলার জন্য ফরযে আইন।
নিম্নে এ আয়াত শরীফের হুকুম সম্পর্কিত আলোচনা বিশ্ববিখ্যাত নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ সমূহ থেকে উল্লেখ করা হলো।
[৬৬১-৬৬৯]
اخرج ابن سعد فى الطبقات عن ابى مالك واخرج نحوه عن الحسن ومحمد بن كعب القرظى قال كان نساء النبى صلى الله عليه وسلم يخرجن بالليل لحاجتهن وكان ناس من المنافقين يتعرضون لهن فيؤذين فشكون ذلك فقيل ذلك للمنافقين فقالوا انما نفعله بالاماء فنزلت (يايها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين) امر بتقدير اللام اى ليدنين (عليهن من جلابيبهن) جمع جلباب وهى الملحفة التى تشتمل بها المرءة فوق الدرع والخمار. روى البخارى عن عائشة قالت خرجت سودة بعد ماضرب الحجاب لحاجتها وكانت امراة جسيمة لاتخفى على من يعرفها فراها عمربن الخطاب رضى الله عنه فقال ياسودة اما والله ماتخفين علينا فانظرى كيف تخرجين قالت فانكفات راجعة ورسول الله صلى الله عليه وسلم فى بيتى وانه ليتعشى وفى يده عرق فدخلت فقالت يارسول الله انى خرجت لبعض حاجتى فقال عمر كذا وكذا قالت فاوحى الله تعالى اليه ثم رفع عنه وان العرق فى يده ما وضعه فقال انه قد اذن لكن ان تخرجن لحاجتكن. قلت يعنى اذن لكن ان تخرجن متجلببات قال ابن عباس وابو عبيدة امر نساء المؤمنين ان يغطين رؤسهن ووجوههن بالجلابيب الا عينا واحدا ليعلم انهن الحرائر وم للتبعيض لان المرءة ترخى بعض جلبابها (ذلك ادنى ان يعرفن) باضمار الى متعلق بادنى اى اقرب الى ان يعرفن اوبتقدير المضاف اى ادنى اسباب معرفتهن انهن حرائر (فلايؤذين) عظف على يعرفن اى فلايتعرضهن اهل النفاق والفسق (وكان الله غفورا) لما سلف (رحيما) بعباده حيث يراعى مصالحهم حتى الجزئيات منها. (التفسير المظهرى ج7 ص383، 384، تفسير الخازن، تفسير البغوى ج5 ص 286-277، تفسير مدارك التنزيل ج3 ص 478)
অর্থঃ- হযরত ইবনু সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ত্ববাক্বাতনামক তারিখ গ্রন্থে হযরত আবূ মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে লিখেছেন। এ রকম হাদীস শরীফ হযরত হাসান ও মুহম্মদ বিন কাব কুরযী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা থেকেও বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ যখন হাজত পূরণের জন্য রাতের বেলায় বের হতেন, তখন তাঁদেরকেও মুনাফিকরা বিরক্ত করা শুরু করলো। তাঁরা এ ব্যাপারটি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে জানালেন। তাই, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই মুনাফিকদেরকে ডেকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তারা বললো, আমরা তো তাঁদেরকে দাসী মনে করেছিলাম। আর এ প্রেক্ষিতে অত্র আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হয়। (হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে) এখানে يدنين শব্দটি উহ্য لام এর সাথে امر আমরএর শব্দ। অর্থাৎ ليدنين তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে। (তাদের মুখমন্ডলের উপর নিজেদের চাদরের কিয়দাংশ) جلابيب জালাবীবশব্দটি جلباب জিলবাবশব্দের جمع বা বহুবচন। জিলবাবএমন চাদরকে বলে, যা মহিলারা কামিছ ও ওড়নার উপর সংযুক্ত করে পরিধান করে।
হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, পর্দার আয়াত শরীফ অবতীর্ণের পর এক রাতে হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হাজত পূরণের জন্য বাইরে গেলেন। তিনি ছিলেন স্বাস্থ্যবান মহিলা। তাই তাঁকে পর্দাবস্থায় থাকলেও চিনতে পারা যেত। হযরত উমর ইবনুল্ খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে দেখে বললেন, হে হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আল্লাহ্ পাক-এর শপথ, আপনি আমাদের থেকে গোপন থাকতে পারেন নি, আমি আপনাকে চিনেছি। এখন বলুন আপনারা কিভাবে বের হবেন? হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, তিনি ঘরে ফিরে আসলেন তখন হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে অবস্থান করছিলেন, তিনি খাবার খাচ্ছিলেন, তখন তাঁর হাত মুবারকে ছিল একটি হাড্ডি। হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁর কাছে প্রবেশ করে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আমার প্রয়োজন বশতঃ বাইরে বের হয়েছিলাম। আর হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাকে এমন এমন কথা বলেছেন। হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, তখন আল্লাহ্ পাক তাঁর উপর ওহী অবতীর্ণ করলেন। ওহী অবতীর্ণ শেষ হলো। আর তাঁর হাত মুবারকে হাড্ডিটি তখনও ছিল। তিনি সেটি রেখে বললেন, তোমাদেরকে বিশেষ প্রয়োজন বশতঃ বাইরে বের হতে অনুমতি দেয়া হলো।আমি বলি- বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার অর্থ হচ্ছে; তোমাদেরকে বড় চাদরে আবৃত হয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে বের হতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মুমিনগণের স্ত্রীগণকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাঁরা যেন তাদের মাথা, মুখমন্ডল, সম্পূর্ণ শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যায়। তবে শুধু চোখ খোলা রাখা যাবে। যাতে পরিচয় করা যায় যে, তারা স্বাধীনা। বাক্যে من মিনঅব্যয়টি আংশিক অর্থ প্রকাশক। কেননা, মহিলারা সম্পূর্ণ চাদরের কিয়দাংশ উপর দিক থেকে তাদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলায়। (এতে তাঁদেরকে চেনা সহজ হবে) অর্থাৎ আবৃত হওয়ার কারণে তাঁদেরকে স্বাধীনা হিসেবে চিনতে সহজ হবে। (ফলে তাঁদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।) অর্থাৎ তারা যদি আবৃত হয়ে চলাচল করে, তবে মুনাফিক ও দুষ্টলোকেরা তাদেরকে উত্যক্ত করার সাহস পাবেনা। (আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল) যা পূর্বে হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে (পরম দয়ালু) তাঁর বান্দাগণের প্রতি। (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৭ম জিঃ ৩৮৩, ৩৮৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন, তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ২৭৬, ২৭৭ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী)
[৬৭০]
(يايها النبى قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن) الجلباب ما يستر الكل مثل الملحفة عن المبرد ومعنى يدنين عليهن من جلابيبهن يرخينها عليهن ويغطين بها وجوههن واعطافهن. يقال اذا زال الثوب عن وجه المرأة ادن ثوبك على وجهك. (تفسير مدارك التنزيل ج3 ص 478)
অর্থঃ- “(হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীনগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখে।) জিলবাবহচ্ছে, যা সমস্ত শরীর ঢেকে নেয়। যা বড় ধরণের চাদরের অনুরূপ।
يدنين عليهن من جلابيبهن. এর অর্থ হলো- তারা যেন তাদের উপর থেকে চাদর ঝুলিয়ে রাখে, তাদের চেহারা সমূহকে চাদর দ্বারা আবৃত করে রাখে। বলা হয়, যখন মহিলাদের চেহারা থেকে কাপড় সরে যাবে, তখন তোমরা কাপড় দ্বারা তার চেহারা ঢেকে দিবে।” (তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৪৭৮ পৃষ্ঠা)
[৬৭১]
(يايها النبى قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن) ......... ثم اختلاف اهل التاويل فى صفة الادناء الذى امرهن الله به فقال بعضهم هو ان يغطين وجوههن ورؤسهن فلايبدين منهن الا عينا واحدة. ذكر من قال ذلك حدثنى على قال ثنا ابو صالح قال ثنى معاوية عن على عن ابن عباس قول يايها النبى قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبرهن امر الله نساء للمؤمنين اذا خرجن من بيوتهن فى حاجة ان يغطين وجوههن من فوق رؤسهن بالجلابيب ويبدين عينا واحدة ....... حدثنى يعقوب قال ثنا هشيم قال اخبرنا هشام عن ابن سيرين قال سألت عبيدة عن قوله قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن قال فقال بثوبه فغطى رأسه ووجهه وابرز ثوبه عن واحدى عينيه. (تفسير الطبرى ج 10 ص 33)
অর্থঃ- “(হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মূল মুমিনীনগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ উপর দিক থেকে চেহারার উপর ঝুলিয়ে রাখে।) ........ আল্লাহ্ পাক তাঁদেরকে যে চেহারা ঢাকার নির্দেশ দিয়েছেন এ ব্যাপারে মুফাস্সিরগণের মধ্যে ইখতিলাফ আছে। অধিকাংশ উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে তাঁরা এমন ভাবে তাদের মাথা, চেহারা আবৃত করবে যাতে একটি চোখ ছাড়া কিছু প্রকাশ না পায়। যারা এ মত পোষণ করেন, তাদের দলীল হচ্ছে, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ ছালিহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে
يايها النبى قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن.
এর তাফসীরে বলেন; এখানে আল্লাহ্ পাক মুমিনগণের স্ত্রীগণকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন তারা বিশেষ কোন প্রয়োজনে তাদের ঘর থেকে বাইরে যাবে, তখন তারা যেন বড় ধরণের চাদর দিয়ে তাদের মাথার উপর দিক থেকে তাদের চেহারা ঢেকে রাখে। তবে একটি চোখ খোলা রাখতে পারবে। ...........    আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ইয়াকূব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, হাশীম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনু সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি বলেন, আমি হযরত উবাইদা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে
قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن.
এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জবাবে এমনভাবে কাজে পরিণত করে দেখিয়ে দিলেন যে, নিজের গায়ের চাদর এমনভাবে পরলেন যাতে সমস্ত মাথা, কপাল ও চেহারা ঢেকে গেল। শুধু একটি চোখ খোলা থেকে গেল। (তাফসীরুত্ ত্ববারী ১০ জিঃ ৩৩ পৃষ্ঠা)
[৬৭২]
(يدنين عليهن) يرخين عليهن يقال للمرأة اذا زل الثوب عن وجهها ادنى ثوبك على وجهك ومعنى التبعيض فى (من جلابيبهن) ان يكون للمرأة جلابيب. (تفسير غرائب القران ورغائب الفرقان للنيسابورى ج 10 ص 32)
অর্থঃ- “(তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে) মহিলারা যেন নিজের উপর দিয়ে চাদরের একটা অংশ ঝুলিয়ে রাখে। যখন তাদের মুখের উপর থেকে কাপড় সরে যাবে, তখন তোমার তোমাদের কাপড় তার চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিবে। অর্থাৎ কাপড়ের অংশ। (চাদরের কিয়দাংশ) এভাবে মহিলাদেরকে মাথা ও চেহারা ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে।” (তাফসীরে গারাইবুল্ কুরআন ওয়া রাগাইবুল্ ফুরক্বান লিন্ নীশাপুরী ১০ম জিঃ ৩২ পৃষ্ঠা)
[৬৭৩]
(يدنين عليهن من جلابيبهن) ...... والجلباب ثوب اوسع من الخمار دون الرداء تلويه المرأة على رأسها وتبقى منه ماترسله الى صدرها بالفارسية (ار) ومن للتبعيض لان المراة ترخى بعض جلبابها وتتلفع ببعض (والتلفع : جامه بسر تاپاى در كرفت) والمعنى يغطين بها وجوههن وابدانهن وقت خروجهن من بيوتهن لحاجة ولايخرجن مكشوفات الوجوه والابدان كالاماء حتى لايتعرض لهن السفهاء ظنا بانهن اماء. (تفسير روح البيان ج7 ص 240)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ চেহারার উপর ঝুলিয়ে রাখে।) জিলবাবএমন কাপড় যা প্রশস্ত ওড়না, যা চাদর নয়। যা মহিলারা মাথায় পরিধান করে, যার একটা অংশ মুখের উপর দিয়ে বুক পর্যন্ত ঝুলে থাকে। من جلابيبهن এর من মিনঅব্যয়টি আংশিক  অর্থজ্ঞাপক। কেননা মহিলারা প্রশস্ত ওড়নার একটা অংশ সামনে ঝুলিয়ে রাখে যার অর্থ হলো, মহিলারা বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় যা দ্বারা তাদের মুখমন্ডল এবং সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। তারা দাসীদের মত তাদের মুখমন্ডল ও সমস্ত শরীর খোলা রাখে না। যাতে অজ্ঞ লোকেরা ধারণা করার সুযোগ না পায় যে, তারা দাসী।” (তাফসীরে রূহুল্ বয়ান ৭ম জিঃ ২৪০ পৃষ্ঠা)
[৬৭৪]
(قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن) ...... الجلابيب جمع جلباب وهو على ماروى عن ابن عباس الذى يستر من فوق الى اسفل، وقال ابن جبير : المقنعة، وقيل : الملحفة، وقيل كل ثوب تلبسه المرأة فوق ثيابها، وقيل كل ما تستربه كساء او غيره وانشدوا تجلببت من سواد الليل جلباب، وقيل هو ثوب وسع من الخمار ودون الرداء. (تفسير روح المعانى ج 12 ص 88)
অর্থঃ- “(আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ তাদের চেহারার উপর ঝুলিয়ে রাখে) جلابيب জালাবীবশব্দটি جلباب জিলবাবশব্দের বহুবচন। এর মর্ম সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন যে, ‘জিলবাবহচ্ছে এমন চাদর যা মাথা থেকে পাঁ পর্যন্ত আপদমস্তক ঢেকে রাখে। হযরত ইবনু জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মাথার আবরণ। কেউ বলেন, চাদর মুড়ানো। কেউ কেউ বলেন, এমন কাপড় যা মহিলারা তাদের পোশাকের উপর পরিধান করে থাকে। কারো মতেঃ চাদর বা অন্য কিছু দ্বারা যা শক্ত ভাবে আবরণ করা হয়। আবার কারো মতেঃ এমন কাপড় যা প্রশস্ত ওড়না, কিন্তু চাদর নয়।” (তাফসীরে রূহুল মায়ানী ১২ জিঃ ৮৮ পৃষ্ঠা) [৬৭৫]
وفى الكشاف معنى (يدنين عليهن) يرخين عليهن ..... وفسر ذلك سعيدبن جبيريسدلن عليهن، وعندى ان كل ذلك بيان لحاصل المعنى والظاهر ان المراد بعليهن على جميع اجسادهن، وقيل على رؤسهن او على وجوههن لان الذى كان يبدو منهن فى الجاهلية هو الوجه. واختلاف فى كيفية هذا التستر فاخرج ابن جرير وابن المنذر وغيرهما عن محمدبن سيرين قال سالت عبيدة السلمانى عن هذه الاية (يدنين عليهن من جلابيبهن) فرفع ملحفة كانت عليه فتقنع بها وغطى راسه كله حتى بلغ الحاجبين وغطى وجهه واخرج عينه اليسرى من شق وجهه الايسر ....... ومن للتبعيض ويحتمل ذلك على ما فى الكشاف وجهين، احدهما ان يكون المراد بالبعض واحدا من الجلابيب وادناء ذلك عليهن ان يلبسنه على البدن كله. (تفسير روح المعنى ج12 ص 89)
অর্থঃ- তাফসীরে কাশ্শাফে (يدنين عليهن) এর  ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের উপর থেকে চেহারার উপর পর্দা ঝুলিয়ে রাখে। ......... হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তারা যেন তাদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখে,’ এভাবে তাফসীর করেছেন। আমার নিকট মর্মার্থের মূল ভাষ্য হচ্ছে- প্রকাশ্য যে, তারা যেন তাদের উপর ঝুলিয়ে নেয় এর দ্বারা সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা উদ্দেশ্য। কারো মতে, তাদের মাথার উপর অথবা তাদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখা উদ্দেশ্য। কেননা জাহিলীয়াত যুগে তারা মুখকে খোলা রাখতো। এই আবরণের পদ্ধতি সম্পর্কে মুফাস্সিরীনগণের মধ্যে ইখতিলাফ বিদ্যমান। হযরত ইবনু জারীর, ইবনু মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহিমা এবং অন্যান্যগণ হযরত মুহম্মদ বিন সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আমি হযরত উবাইদা আস্ সালমানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে يدنين عليهن من جلابيبهن এ আয়াত শরীফের  ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করায়, তিনি একটা বড় ধরণের চাদর যা তাঁর নিকট ছিল, তা দ্বারা নিজের মাথা, মুখ এবং সম্পূর্ণ শরীর এমনভাবে ঢাকলেন যাতে সমস্ত শরীর আচ্ছাদিত হয়ে গেল। তবে তাঁর বাম দিকের চোখটি খোলা রাখলেন।  ....... আয়াত শরীফে من جلابيبهن এর من অব্যয়টি আংশিক অর্থজ্ঞাপক। তাফসীরে কাশ্শাফে এর দুটি দিক আলোচনা করা হয়েছে। একটি হচ্ছে, আংশিক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, চাদরের একটি অংশ মাথার উপর থেকে মুখের উপর ঝুলাবে, আর সম্পূর্ণ শরীর পুরো অংশটি দ্বারা ঢেকে রাখবে।” (তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১২তম জিঃ ৮৯ পৃষ্ঠা)
[৬৭৬]
وقال ابو حيان نساء المؤمنين يشمل الحرائر والاماء والفتنة بالاماء اكثر لكثرة تصرفهن بخلاف الحرائر فيحتاج اخراجهن من عموم النساء الى دليل واضح ..... وقال القهستانى منع النظر من الشابة فى زماننا ولو بلا شهوة واما حكم امة الغير ولومدبرة او ام ولد فكحكم المحرم فيحل النظر الى راسها ووجهها وساقها وصدرها وعضدها ان امن شهوته وشهوتها. (تفسير روح المعانى ج 12 ص 89)
অর্থঃ- হযরত আবূ হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মুমিনগণের স্ত্রীগণের হুকুমে প্রত্যেক স্বাধীন এবং দাসীরা শামিল। অর্থাৎ স্বাধীনাদের মত দাসী-বাঁদীদেরকেও চেহারা ঢেকে বের হতে হবে। কেননা, ফিৎনা-ফাসাদ দাসীদের থেকেই বেশী সংঘটিত হয়। কেননা দাসীরা বাইরে যাওয়া আসা করে, স্বাধীনার বিপরীত। তাই দলীলের দ্বারা প্রমাণিত হয়, দাসীদের বাইরে যাওয়ার হুকুম আম মহিলাদের হুকুমের মত। .......... হযরত কাহেস্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের যামানায় যুবতীদের দিকে দৃষ্টি দিতে নিষেধ করা হয়েছে, যদিও কাম উত্তেজনা ছাড়া হয়। অন্যের দাসীর হুকুম যদিও পিছন দিকেও হয় দেখা নিষেধ। আর সন্তানের মা এমন দাসী মাহরামের হুকুমের মতই। সুতরাং তার মাথা, চেহারা, পায়ের গোছা এবং বাহুর দিকে দৃষ্টি দেয়া হালাল, যদি পুরুষ-মহিলা উভয়েই শাহ্ওয়াত্ মুক্ত থাকে।” (তাফসীরে রুহুল্ মায়ানী ১২তম জিঃ ৮৯ পৃষ্ঠা) [৬৭৭]
(يايها النبى قل لا زواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن) فيها ست مسائل المسالة الثانية اختلف الناس فى الجلباب على الفاظ متقاربة.
عمادها انه الثوب الذى يستربه البدن، لكنهم نوعوه ههنا، فقد قيل انه الرداء وقيل انه القناع، المسألة الثالثة قوله تعالى (يدنين عليهن). قيل معناه تغطى به راسها فوق خمارها. وقيل تغطى به وجهها حتى لايظهر منها الا عينها اليسرى. (احكام القران لابن العربى ج3 ص1086)
অর্থঃ- “(হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ তাদের উপর থেকে চেহারার উপর ঝুলিয়ে রাখে।) এ আয়াত শরীফে ছয়টি মাসয়ালা রয়েছে। দ্বিতীয় মাসয়ালা মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম কাছাকাছি শব্দের ভিত্তিতে جلباب জিলবাবশব্দের মর্মার্থের ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন। জিলবাবএমন কাপড় যার দ্বারা সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা যায়।কেননা তারা অনুরূপ ভাবেই এটার বিশ্লেষণ করেছেন। কেউ কেউ বলেন; ‘জিলবাবহচ্ছে বড় ধরণের চাদর। কারো মতেঃ জিলবাবহচ্ছে যা দ্বারা মাথা, মুখমন্ডল আবৃত হয় এমন কাপড়।
তৃতীয় মাসয়ালাঃ আল্লাহ্ পাক-এর বাণীঃ (তারা যেন তাদের উপর কাপড় ঝুলিয়ে নেয়) কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হচ্ছে যার দ্বারা মহিলার ওড়নার উপর থেকে মাথা মুখ সহ আবৃত হয়। আবার কারো মতেঃ যার দ্বারা চেহারা এবং সমস্ত শরীর এমনভাবে ঢাকা যায়, যাতে বাম চোখ ছাড়া কিছু প্রকাশ না পায়। অর্থাৎ শুধু বাম চোখই খোলা থাকে।” (তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লি ইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৫৮৬ পৃষ্ঠা)
[৬৭৮]
قوله تعالى : (يدنين عليهن من جلابيبهن) قال ابن قتيبة يلبسن الاردية. وقال غيره يغطين رؤوسهن ووجوههن ليعلم انهن حرائر. (زاد المسير فى على التفسير ج6 ص216)
অর্থঃ- আল্লাহ্ পাক-এর বাণী (তারা যেন তাদের উপর থেকে চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে নেয়।) হযরত ইবনুল্ কুতাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন; যেন বড় ধরণের চাদর পরিধান করে। অন্যান্যগণ বলেন, তারা তাদের মাথা সমূহ এবং চেহারা সমূহ ঢেকে রাখবে, যাতে পরিচয় লাভ করা যায় যে তারাই স্বাধীনা রমনী।” (যাদুল্ মাসীর ফী ইল্মিত্ তাফসীর ৬ষ্ঠ জিঃ ২১৬ পৃষ্ঠা)
[৬৭৯]
قال على بن ابى طلحة عن ابن عباس امر الله نساء المؤمنين اذا خرجن من بيوتهن فى حاجة ان يغطين وجوههن من فوق رووسهن بالجلابيب ويبدين عينا واحدة.
قال محمد بن سيرين سألت عبيدة السلمانى عن قول الله عز وجل (يدنين عليهن من جلابيبهن) فغطى وجهه ورأسه وايرز عينه اليسرى. وقال عكرمة تغطى ثغرة نحرها بجلبابها تدنيه عليها. (تفسير ابن كثير ج3 ص 824)
অর্থঃ- হযরত আলী ইবনু আবী তলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহ্ পাক মুমিনগণের স্ত্রীগণকে যখন তারা বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাবে তখন তাদেরকে চাদর দ্বারা মাথার উপর থেকে মুখমন্ডল পর্যন্ত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে একটি চোখ খোলা রাখতে পারবে। হযরত মুহম্মদ বিন সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হযরত উবাইদা আস্ সালমানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে আল্লাহ্ পাক-এর বাণী يدنين عليهن من جلابيبهن. এর তাফসীর জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি তাঁর একটি চাদর দিয়ে নিজের চেহারা, মাথা ও সমস্ত শরীর ঢাকলেন, শুধু বাম চোখটি খোলা রাখলেন। হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মহিলা তার মাথা মুখমন্ডল বুক পর্যন্ত চাদর দ্বারা আবৃত করবে।” (তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩য় জিঃ ৮২৪ পৃষ্ঠা)
[৬৮৩]
ان يقال المراد يعرفن انهن لايدنين لأن من تستر وجهها مع انه ليس بعورة لايطمع فيها انها تكشف عورتها فيعرفن انهن مستورات لايمكن طلب الزنا منهن. (التفسير الكبير ج24 ص230)
অর্থঃ- এ রকম হুকুম দিয়ে মানুষদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এরা চরিত্রহীনা মহিলা নয়। কেননা, চেহারা বা মুখ মন্ডল (নামাযের) সতরএর শামিল না হওয়া সত্ত্বেও যে মহিলা তার মুখমন্ডল ঢেকে রাখবে, সে অপর কোন ব্যক্তির সামনে তার মুখমন্ডল খুলতে রাযী হবে, এমন ধারণা কোন ব্যক্তি করতে সাহস পাবে না। বরং এটা দেখে সকলেই বুঝতে পারবে যে, এরা পর্দানশীন মহিলা, তাই তাদের সাথে কোনরূপ দুষ্কৃতির আশা পোষণ করা যায় না।” (আত্ তাফসীরুল্ কবীর ২৪ জিঃ ২৩০ পৃষ্ঠা)
[৬৮১]
(يدنين عليهن من جلابيبهن) من للتبعيض، والجلابيب جمع جلباب، وهو ثوب اكبر من الخمار. قال الجوهرى الجلباب الملحفة، وقيل القناع، وقيل هوثوب يستير جميع بدن المرأة. .......... قال الواحدى قال المفسرون يغطين وجوههن ورؤوسهن الا عينا واحدة، فيعلم انهن حرائر فلايعرض لهن بأدى. (فتح القدير ج4 ص 304)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের উপর চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে রাখে) من অব্যয়টি আংশিক অর্থজ্ঞাপক। جلابيب জালাবীবশব্দটি جلباب জিলবাবশব্দের বহুবচন। তা হচ্ছে ওড়না জাতীয় বড় ধরণের কাপড়। জাওহারী বলেন, জিলবাব হচ্ছে আবরণের কাপড়। কেউ বলেন, মাথা, মুখমন্ডল আবৃত করার ওড়না। কারো মতে; ‘জিলবাবএমন কাপড় যা দ্বারা মহিলার সমস্ত শরীর আচ্ছাদিত হয়। .......ওয়াহিদী বলেছেনঃ হযরত মুফাস্সিরুন্ রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় মহিলাদের মুখমন্ডল, মাথা ও সমস্ত শরীর আবৃত করা। তবে একটা চোখ খোলা থাকবে। যাতে জানতে পারা যায় যে, নিশ্চয়ই এরা স্বাধীনা। আর তাদেরকে উত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকে।” (তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর ৪র্থ জিঃ ৩০৪ পৃষ্ঠা)
[৬৮২]
(يدنين عليهن) اى على وجوههن وجميع ابدانهن ...... (من جلابيبهن) تفسير نظم الدرر ج6 ص 135)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের উপর ঝুলিয়ে রাখে) অর্থাৎ তাদের মুখমন্ডলের উপর এবং সমস্ত শরীরের উপর যেন ..... (চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে রাখে)।” (তাফসীরে নাযমুদ্ দুরার ৬ষ্ঠ জিঃ ১৩৫ পৃষ্ঠা)
[৬৮৩]
(يدنين عليهن من جلابيبهن) ..... والجلابيب جمع جلباب وهوثوب اكبر من الخمار، وقيل هو الرداء وصورة ادنائه عند ابن عباس ان تلويه على وجهها حتى لايظهر منها الا عين واحدة تبصربها. (التسهيل لعلوم التنزيل ج2 ص 196)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের উপর চাদরের কিছু অংশ ঝুলিয়ে নেয়)  ...... الجلابيب আল্ জালাবীবশব্দটি جلباب জিলবাবশব্দের বহুবচন। যা ওড়না সাদৃশ্য বড় ধরণের কাপড়কে বলে। কেউ বলেন, তা হচ্ছে চাদর, যা ঝুলানো হয়। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, বাইরে বের হওয়ার সময় এমনভাবে মুখমন্ডল এবং সমস্ত শরীর ঢাকবে, যাতে পথদেখার জন্য একটি চক্ষু ছাড়া কিছুই প্রকাশ না পায়।” (আত্ তাসহীল লি উলূমিত্ তানযীল ২য় জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠা)
[৬৮৪]
فامر الله تعالى المومنات ان يدنين عليهن من جلابيبهن. وقال القتبى يلبسن الاردية ويقال يعنى يرخين الجلابيب على وجوههن. وقال مجاهد يدنين عليهن من جلابيبهن يعنى متجلببين. (تفسير السمر قندى ج3 ص 60)
অর্থঃ- বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় আল্লাহ্ পাক মুমিন নারীগণকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ তাদের চেহারার উপর ফেলে রাখে। কুতাবী বলেন, চাদর পড়বে অর্থাৎ তারা তাদের চাদর মাথা থেকে তাদের মুখমণ্ডলের উপর ঝুলিয়ে দিবে। হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তারা তাদের মাথার কাপড়কে মুখের উপর ফেলে দিবে অর্থাৎ তারা পর্দায় আবৃত হয়ে বাইরে বের হবে।” (তাফসীরুস্ সমরকন্দী ৩য় জিঃ ৬০ পৃষ্ঠা)
[৬৮৫]
امر الله تعالى رسوله عليه السلام بامرهن بادناء الجلابيب. ....... والجلباب ثوب اكبر من الخمار، وروى عن ابن عباس وابن مسعود انه الرداء واختلف الناس فى صورة ادنائه، فقال ابن عباس وعبيدة السلمانى ذلك ان تلويه المراة حتى لايظهر منها الا عين واحدة تبصربها. (المحرر الوجيز فى تفسير الكتاب العزيز ج4 ص 399)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আপনি মুমিন নারীগণকে বাইরে বের হওয়ার সময় চাদরের অংশ মুখমণ্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখতে বলুন। ........... জিলবাবহচ্ছে ওড়না জাতীয় বড় ধরণের কাপড়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয়ই জিলবাবহচ্ছে চাদরের নাম। ঝুলানোর পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষেরা ইখতিলাফ করেছে। হযরত ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উবাইদা সালমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মাথা, মুখমণ্ডল এবং সমস্ত শরীর মহিলারা এমনভাবে ঢাকবে যাতে রাস্তা দেখার জন্য একটি চোখ ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ প্রকাশ না পায়।” (আল্ মুহাররারুল্ ওয়াজীয ফী তাফসীরিল্ কিতাবিল্ আযীয ৪র্থ জিঃ ৩৯৯ পৃষ্ঠা)
[৬৮৬]
(يدنين عليهن من جلابيبهن) جمع جلباب كسرداب، وهوالرداء فوق الخمار، تتغلى به المرأة ....... وعن ابن عباس رضى الله عنهما الرداء الذى يستر من فوق الى اسفل. ثم قال ومعنى (يدنين عليهن من جلابيبهن) يرخينها عليهن ويغطين بها وجوههن واعطافهن. (تفسير القاسمى ج5 ص 541)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের উপর চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে রাখে) جلابيب জালাবীবশব্দটি جلباب জিলবাবশব্দের বহুবচন। যেমন سرداب সিরদাবশব্দটি। জিলবাববলা হয় এমন চাদরকে যা ওড়নার উপর পড়া হয়। যার দ্বারা মহিলারা শরীর ঢেকে রাখে। ............ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে; ‘জিলবাবএমন চাদর যার দ্বারা মহিলারা মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে, যখন তারা বিশেষ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হয়। অতঃপর তিনি يدنين عليهن من جلابيبهن. এর ব্যাখ্যায় বলেন; তারা মাথা থেকে মুখের উপর কাপড় ঝুলাবে, তার দ্বারা মুখমণ্ডল এবং সমস্ত শরীর আবৃত করবে।” (তাফসীরুল কাসিমী ৫ম জিঃ ৫৪১ পৃষ্ঠা)
[৬৮৭]
(يدنين عليهن من جلابيبهن) يغطين وجههن وابدانهن بملاحفهن اذا برزن لحاجة ومن للتبعيض فان المراة ترخى بعض جلبابها وتتلفع ببعض. (تفسير البيضاوى ج3 ص 186)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের চেহারার উপর চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে রাখে।) যখন মহিলা কোন বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যাবে, তখন মুখমণ্ডল ঢেকে এবং সমস্ত শরীর পর্দা আবৃত করে বের হবে। আয়াত শরীফে من মিনঅব্যয়টি আংশিক অর্থজ্ঞাপক। কেননা, মহিলারা চাদরের কিয়দাংশ মুখমণ্ডলের উপর ঝুলায় এবং বাকী অংশ দ্বারা মাথা আবৃত করে। (তাফসীরুল্ বাইযাবী ৩য় জিঃ ১৮৬ পৃষ্ঠা)
[৬৮৮]
الجلباب ثوب واسع اوسع من الخمار ودون الرداء تلوبه المرأة على راسها وتبقى منه ما ترسله على صدرها وعن ابن عباس رضى الله عنهما الرداء الذى يستر من فوق الى اسفل وقيل الملحفة وكل مايستتربه من كساء او غيره. (تفسير الكشاف ج3 ص246)
অর্থঃ- “‘জিলবাবএমন প্রশস্ত কাপড় যা ওড়না সদুশ তবে চাদর নয়। যা মহিলারা মাথায় পরিধান করে আর তার বাকী অংশ তার বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখে। হযরত ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত যে, ‘জিলবাবএমন চাদর যা দ্বারা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রেখে বাইরে বের হওয়া যায়। কেউ বলেন; ملحفة যা পরিধেয় কাপড় এবং অন্যান্য কিছুর উপর পড়া হয়।” (তাফসীরুল্ কাশ্শাফ ৩য় জিঃ ২৪৬ পৃষ্ঠা)
[৬৮৯]
ومعنى (يدنين عليهن من جلابيبهن) يرخينها عليهن ويغطين بها وجوههن واعطافهن يقال اذا زال الثوب عن وجه المراة ادنى ثوبك على وجهك. (تفسير الكشاف ج3 ص 246)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের উপর চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে নেয়) এর অর্থ হলোঃ তারা যেন তাদের মাথার উপর থেকে কাপড় ঝুলিয়ে নেয় এবং মুখ মণ্ডল আবৃত করে রাখে। বলা হয়, যখন স্ত্রীর চেহারা থেকে কাপড় সরে যাবে, তখন তুমি তোমার কাপড় তার চেহারায় ঝুলিয়ে দিবে।” (তাফসীরুল্ কাশ্শাফ ৩য় জিঃ ২৪৬ পৃষ্ঠা)
[৬৯০]
(يايها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن) جمع جلباب وهى الملاءة التى تستمل بها المرأة يرخين بعضها على الوجوه اذا خرجن لحاجتهن الا عينا واحدة. (تفسير الجلالين)
অর্থঃ- হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের উপর চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে রাখে) جلابيب জালাবীবশব্দটি جلباب জিলবাবশব্দের বহুবচন। জিলবাবহচ্ছে এমন চাদর, যা মহিলারা পরিধান করে। অর্থাৎ তারা যখন বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হবে, তখন চাদরের অংশ মুখমন্ডলের উপর ঝুলাবে, যাতে মাত্র একটি চোখ খোলা থাকে।” (তাফসীরুল্ জালালাইন)
[৬৯১]
(قوله الا عينا واحدة) قال ابن عباس امر نساء المؤمنين ان يغطين رؤسهن ووجوههن بالجلابيب الاعينا واحدة ليعلم انهن حرائر وهوقوله تعالى ذلك ادنى ان يعرفن. (حاشية الجمل على الجلالين ج3 ص 455)
অর্থঃ- “(জালালাইনের উক্তিঃ একটি চোখ ছাড়া পুরো মুখমণ্ডল ঢাকবে) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মুমিনগণের স্ত্রীগণকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে তারা যেন সমস্ত শরীর ঢাকার সাথে সাথে মাথা ও মুখমণ্ডল চাদর দিয়ে ঢেকে নেয়, একটি চোখ ছাড়া। যেন বুঝা যায় যে, এ মহিলাগণ স্বাধীনা। যেমন, আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ যাতে তাদের পরিচয় লাভ করা যায়।” (হাশিয়াতুল্ জামাল্ আলাল্ জালালাইন ৩য় জিঃ ৪৫৫ পৃষ্ঠা)
[৬৯২]
اے نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم اپنی ازواج مطھر ات اور اپنی ص حبز ادیوں اور دوسرے  مسلمانوں کی عور توں سے بھی فرما دیجئے کہ اپنے  چھرے اور سینوں پر سرسے چادریں نیچی کر لیا کریں. (تفسیر ابن عباس رضی اللہ عنہ ج 5 ص 26)
অর্থঃ- হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আযওয়াজে মুতাহ্হারাত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে, ছাহেবযাদীগণকে এবং সকল মুসলমানগণের স্ত্রীগণকে বলুন, আপনাদের চেহারা এবং সীনা পর্যন্ত যেন চাদর ঝুলিয়ে ঢেকে রাখেন। যখন কখনো বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যেতে ইহবে, তখনই।” (তাফসীরে ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ৫ম জিঃ ২৬ পৃষ্ঠা)
[৬৯৩]
(يدنين عليهن من جلابيبهن) الجلباب ثوب اوسع من الخمار ودون الرداء تلويه المرأة على راسها وتبقى منه ماترسله على صدرها. وقيل هى الملحفة وكل ما يتستربه أى يغطين بها وجوههن وابدانهن اذا برزن لداعية من الدواعى. (تفسير ابى السعود ج 7 ص115)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের উপর চাদরের কিছু অংশ ঝুলিয়ে নেয়) জিলবাবএমন প্রশস্ত ওড়না আকৃতির কাপড়কে বলা হয়, যা আবার চাদর নয়। যার দ্বারা মহিলারা মাথা ঢাকে, আর বাকী অংশ তার বুকের উপর ঝুলিয়ে রাখে। কেউ কেউ বলেন, এটা এমন চাদর যা দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত করা যায়। অর্থাৎ যার দ্বারা মহিলাদের যখন বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তখন চেহারা এবং সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে।” (তাফসীরে আবিস্ সাউদ ৭ম জিঃ ১১৫ পৃষ্ঠা)
[৬৯৪]
قوله تعالى (يدنين عليهن من جلابيبهن) فيه ثلاثة اقاويل احدها ان الجلباب الرداء، قاله ابن مسعود والحسن، الثانى انه القناع، قاله ابن جبير. الثالث انه كل ثوب تلبسه المرأة فوق ثيابها، قاله قطرب. وفى ادناء جلابيبهن عليهن قولان احدهما ان تشده فوق رأسها وتلقيه فوق خمارها حتى لاترى ثغرة نحرها، قاله عكرمة، الثانى أن تغطى وجهها حتى لاتظهر الا عينها اليسرى، قاله عبيدة السلمانى. (تفسير الماوردى ج4 ص 423- 424)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণী (তারা যেন তাদের উপর চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে নেয়) আয়াত শরীফে তিনটি মতামত রয়েছে। প্রথম মতঃ নিশ্চয়ই জিলবাবহচ্ছে চাদর। যা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন। দ্বিতীয় মতঃ নিশ্চয়ই জিলবাবহচ্ছে মাথা আবৃত করার কাপড়। যা হযরত ইবনু জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন। তৃতীয়ত মতঃ জিলবাবএমন কাপড় যা মহিলারা তাদের পোষাকের উপর পরিধান করে থাকে। তারা যেন তাদের উপর ঝুলিয়ে নেয়এর হুকুম সম্পর্কে দুটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথম পদ্ধতি হলোঃ যা মাথায় বাঁধবে এবং ওড়নার উপর ঝুলাবে, যাতে বুকের কোন অংশ দেখা না যায়। এটা হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন। দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো মুখমণ্ডল এমনভাবে ঢেকে রাখবে, যাতে বাম চোখ ছাড়া কিছু প্রকাশ না পায়। যা হযরত উবাইদা আস্সালমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন। (তাফসীরুল মাওয়ারাদী ৪র্থ জিঃ ৪২৩, ৪২৪ পৃষ্ঠা)
[৬৯৫]
(يايها النبى قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن) اى قل يا محمد لزوجاتك الطاهرات. امهات المؤمنين. وبناتك الفضليات الكريمات، وسائر نساء المؤمنين، قل لهن يلبسن الجلباب الواسع الذى يستر محاسنهن وزينتهن، ويدفع عنهن السنة السوء.
ويميزهن عن صفات نساء الجاهلية. روى الطبرى عن ابن عباس انه قال فى هذه الاية؛ امر الله نساء المؤمنين اذا خرجن من بيوتهن فى حاجة ان يغطين وجوههن من فوق رؤوسهن بالجلابيب ويبدين عينا واحدة. وروى ابن كيثر عن محمد بن سيرين قال سألت عبيدة السلمانى عن قول الله عزوجل (يدنين عليهن من جلا بيبهن) فغطى وجهه ورأسه وابرز عينه اليسرى. (صفوة التفاسير ج2 ص493-494)
অর্থঃ- “(হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনগনের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে নেন) অর্থাৎ হে আমার নবী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার পুতপবিত্র স্ত্রীগণকে তথা উম্মুল মুমিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে এবং সম্মানিতা, ফযীলতপূর্ণ আপনার কন্যা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে এবং মুমিনগণের সকল স্ত্রীগণকে বলুন, বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় তারা যেন প্রশস্ত চাদর পরিধান করে। যাতে তাদের সৌন্দর্য, রূপলাবন্য চুপিয়ে থাকে, তাদের থেকে যেন খারাপ আদর্শ দমন হয় এবং জাহিলিয়াত যুগের সমস্ত বদ্গুণ তাদের থেকে যেন আলাদা হয়ে যায়। ত্ববারী বর্ণনা করেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি এ আয়াত শরীফের তাফসীরে বলেছেন: আল্লাহ্ পাক মুমিনগণের স্ত্রীগণকে নির্দেশ দিয়েছেন, যখন তারা ঘর থেকে বিশেষ প্রয়োজনে বের হবে তখন যেন তাদের মাথা থেকে মুখমণ্ডল পর্যন্ত এমনভাবে চাদর দ্বারা ঢাকে যাতে মাত্র একটি চোখ খোলা থাকে। হযরত ইবনু কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুহম্মদ বিন সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমি হযরত উবাইদা আস্সালমানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে يدنين عليهن من جلابيبهن. আল্লাহ্ তায়ালার এই আয়াত শরীফের হুকুম জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি আমল করে দেখিয়ে দিলেন যে, তিনি একটি বড় চাদর নিয়ে নিজের মুখমণ্ডল এবং মাথা এমনভাবে ঢাকলেন যাতে তাঁর বাম চোখ ছাড়া অন্য কিছু প্রকাশ পায় নাই।” (ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর ২য় জিঃ ৪৯৩, ৪৯৪ পৃষ্ঠা)
[৬৯৬]
قوله (يدنين) ....... (الجلابيب) جمع الجلباب وهو الملاءة التى تشتمل بها المراة فوق الدرع والخمار، قال ابن عباس و (ابو) عبيدة من نساء المؤمنين ان يغطين رؤوسهن ووجوههن بالجلابيب الا عينا واحدة ليعلم انهن حرائر. (تفسير اللباب ج 15 ص 589)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে) جلابيب শব্দটি جلباب জিলবাবশব্দের বহুবচন। তা এমন চাদরকে বলা হয়, যা মহিলারা চাদর এবং ওড়নার উপর পরিধান করে। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত (আবূ) উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মুমিনগণের স্ত্রীগণ যেন তাদের মাথা; মুখমণ্ডল এবং সম্পূর্ণ শরীর চাদর দ্বারা এমনভাবে ঢেকে নেয় যাতে একটি চোখ ছাড়া কিছু দেখা না যায়। যাতে পরিচয় করা যায় যে, এ মহিলারা স্বাধীনা।” (তাফসীরুল্ লুবাব ১৫তম জিঃ ৫৮৯ পৃষ্ঠা) [৬৯৭]
جلابيبهن جمع جلباب، وهو الثوب الذى يسترجميع البدن ..... وقيل هو الملحفة وكل ما يغطى سائر البدن. (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج2 ص 374)
অর্থঃ- جلابيب জালাবীবশব্দটি جلباب জিলবাবশব্দের جمع বা বহুবচন। জিলবাবএমন কাপড়কে বলা হয়, যা সমস্ত শরীর ঢেকে নেয়। কারো মতেঃ তা এমন বড় ধরণের চাদর, যা সমস্ত দেহ আবৃত করে নেয়।” (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ৩৭৪ পৃষ্ঠা)
[৬৯৮]
قال ابن عباس امر المؤمنين ان يغطين رعوسهن ووجوههن بالجلابيب الا عينا واحدة ليعلم انهن حرائر. والخلاصة فان الجلباب هو الذى يستر جميع بدن المرأة، وهو يشبه الملاءة (الملحفة) المعروفة فى وماننا. (تفسير ايات الاحكام ج2 ص 375)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন; মুমিনগণের স্ত্রীগণকে নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা যেন তাদের মাথা, চেহারা এবং সমস্ত শরীর চাদর দ্বারা আবৃত করে বাইরে বের হয়। তবে একটি চক্ষু খোলা রাখতে পারবে। যাতে বুঝা যায় যে, তারা স্বাধীনা। মূল বক্তব্য হচ্ছে; নিশ্চয়ই জিলবাবহচ্ছে এমন কাপড় যা দ্বারা মহিলাদের সমস্ত শরীর আবৃত হয়ে যায়। আর তা আমাদের যামানায় বোরকা হিসেবে পরিচিত।” (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম ২য় জিঃ ৩৭৫ পৃষ্ঠা)
[৬৯৯-৭০২]
الحكم الثانى ماهى كيفية الحجاب؟ امر الله المؤمنات بالحجاب وارتداء الجلباب صبانة لهن وحفظا. وقد اختلف اهل التأويل فى كيفية هذا التستر على اقوال فاخرج ابن جرير الطبرى عن ابن سيرين انه قال سالت عبيدة السلمانى عن هذه الاية (يدنين عليهن من جلابيبهن) فرفع ملحفة كانت عليه فتقنع بها. وغطيراسه كله حتى بلغ الحاجبين. وغطى وجهه واخرج عينه اليسرى من شق وجهه الاسر (تفسير ايات الاحكام ج2 ص ....... تفسير الطبرى. تفسير الخازن، حاشية الجمل على الجلالين)
অর্থঃ- দ্বিতীয় হুকুমঃ হিজাব বা পর্দা করার পদ্ধতি কি?
জাওয়াবঃ আল্লাহ্ পাক মুমিন মহিলাগণকে হিজাব বা পর্দার নির্দেশ এবং বাইরে বের হওয়ার সময় পুরো শরীর ঢেকে থাকে এমন কাপড় পরিধান করার নির্দেশ দিয়েছেন তাদের ইজ্জত-সম্মান, মর্যাদা রক্ষা বা হিফাযত করার জন্যই। ব্যাখ্যা কারকগণ এই পর্দার পদ্ধতি সম্পর্কে ইখতিলাফ করেছেন। অর্থাৎ এ ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে।
হযরত ইবনু জারীর ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনু সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (ইবনু সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন: আমি হযরত উবাইদা সালমানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে يدنين عليهن من جلابيبهن. এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি একটি বড় ধরণের চাদর নিয়ে যা নিজের কাছে ছিলো তা মাথায় দিলেন, তা দ্বারা পুরো মাথা আবৃত করলেন এবং তাঁর পুরো শরীর আচ্ছাদিত হয়ে গেল এবং তার মুখমণ্ডলও ঢাকলেন শুধু বামদিকের একটি চোখ বের করে রাখলেন।” (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ৩৮১ পৃষ্ঠা, তাফসীরুত্ ত্ববারী, তাফসীরুল্ খাযিন, হাশিয়াতুল জামাল্ আলাল্ জালালাইন)
[৭০৩-৭০৪]
الحكم الثالث : هل يجب على المرأة ستر وجهها؟
ان المرأة منهية عن ابداء زينتها الا للمحارم (ولا يبدين زينتهن الا لبعولتهن اوابائهن .....) الاية ولما كان الوجه اصل الزينة، ومصدر الجمال والفتنة، لذلك كان ستره ضروريا عن الاجانب، .... فاذا لم تؤمن الفتنة فيحرم كشفه.
ومما لاشك فيه ان الفتنة فى هذا الزمان غير مأمونة، اذا نرى وجوب ستر الوجه حفاظا على كرامة المسلمة. وقد ذكرنا يعض الحجج الشرعية على وجوب ستره فى بحث (بدعة كشف الوجه) من سورة النور. (تفسير ايات الاحكام للصابون ج2 ص382، الفقه على المذاهب الاربعة ج1 ص 188-192)
অর্থঃ- তৃতীয় হুকুমঃ মহিলাদের জন্য কি তাদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা ফরয?
জাওয়াবঃ মহিলাদেরকে মাহরাম (যাদেরকে দেখা দেয়া জায়িয) পুরুষরা ছাড়া অন্য কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ্ পাক বলেন, (তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তবে স্বামী, পিতা ...... ইত্যাদি মাহরামদের কাছে প্রকাশ করতে পারবে) সূরা নূর ৩১ নং আয়াত শরীফ। যখন মুখমণ্ডলই সৌন্দর্যের মূল। মুখমণ্ডল থেকেই সৌন্দর্য এবং ফিৎনার সূচনা হয়। এজন্যই সবদিক থেকে মুখমণ্ডলের পর্দা জরুরী অর্থাৎ ফরযে আইন। .... যদি ফিৎনা থেকে বাঁচাটা নিরাপদ না হয়, তবে মুখমণ্ডল খোলা রাখা হারাম হবে। এতে কোন সন্দেহ নাই যে, এ আখিরী জামানায় মুখমণ্ডল খোলা রাখার ফিৎনার বিষয়টি নিরাপদ নয়। এজন্যই মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা ওয়াজিব (ফরয) মুসলিম নারীদের সম্মান-মর্যাদা হিফাযত করার লক্ষ্যে। সূরা নূরে (মুখমণ্ডল খোলা রাখা বিদয়াত) নামক অধ্যায়ে আমরা অনেক শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে উল্লেখ করেছি যে, মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা ওয়াজিব তথা ফরয। যখন বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যাবে। (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ৩৮২ পৃষ্ঠা, আল্ ফিক্হু আলাল্ মাযাহিবিল আরবায়াহ ১ম জিঃ ১৮৮-১৯২ পৃষ্ঠা)
[৭১৪]
الحكم الرابع : ماهى شروط الحجاب الشرعى؟
يشترط فى الحجاب الشرعى بعض الشروط الضرورية وهى كالاتى اولا ان يكون الحجاب ساترا لجميع البدن لقوله تعالى (يدنين عليهن من جلابيبهن) ........ وقد عرفت معنى (الجلباب) وهو الثوب السابع الذى يستر البدن كله، ومعنى (الادناء) وهو الارخاء والسدل فيكون الحجاب الشرعى ما ستر جميع البدن. (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج2 ص 384، 385)
অর্থঃ- চতুর্থ হুকুম: শরয়ী হিজাব বা পর্দার জন্য শর্ত কি?
জাওয়াবঃ হিজাব বা শরয়ী পর্দার ব্যাপারে কিছু জরুরী শর্ত-শারায়েত রয়েছে। যা নিম্নে আলোচিত হলোঃ
প্রথম শর্তঃ হিজাব বা পর্দা এমন হবে, যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, (তারা যেন তাদের উপর চাদরের কিয়দাংশ ঝুলিয়ে রাখে) ..... পরিচিত অর্থ (الجلباب জিলবাব’) বলা হয় এমন লম্বা কাপড়কে, যা সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। (الادناء ইদ্না’) হচ্ছে ارخاء ইরখাالسدل সদ্লঅর্থাৎ বুঝানো। তাই শরীয়তের পরিভাষায় হিজাব বা পর্দা হচ্ছে; যা সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ৩৮৪, ৩৮৫ পৃষ্ঠা)
[৭০৬]
الحجاب مفروض على جميع نساء المؤمنين وهو واجب شرعى محتم. (2) بنات الرسول ونساؤه الطاهرات هن الاسوة والقدوة لسائر النساء. (3) الجلباب الشرعى يجب ان يكون ساترا للزينة والثياب ولجميع البدن. (4) الحجاب لم يفرض على المسلمة تضييقا عليها، وانما تشريفا له وتكريما. (5) ارتداء الحجاب الشرعى صيانة للمرأة، وحماية للمجتمع من ظهور الفساد، وانتشار الفاحشة. (6) على المسلمة ان تتمسك باوامر الله. وتتأدب بالادب الاجتماعية التى فرضها الاسلام. (7) الله رحيم بعباده يشرع لهم من الاحكام مافيه خيرهم وسعادتهم فى الدارين. (تفسير ايات الاحكام للصابونى ج2 ص376، 387)
অর্থঃ- “(১) সকল মুমিনগণের স্ত্রীগণের অর্থাৎ মহিলাগণের জন্য পর্দা করা ফরযে আইন। এটা শরীয়তের স্তির সিদ্ধান্তে ওয়াজিব। (২) হযরত রসূলুল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কন্যাগণ এবং তাঁর স্ত্রী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ সমস্ত মহিলাদের জন্য আদর্শ এবং নমুনা। (৩) শরয়ী জিলবাববা আবরণ বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মহিলার জন্য ওয়াজিব। যা মহিলার সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে বা ঢেকে রাখে। (৪) এমন মুসলমান মহিলার উপর হিজাব বা পর্দা করা (মাজুরতার কারণে) ফরয নয়, যে অনেক সংকটে, কঠিন অবস্থায় নিপতিত হয়েছে। তবে এটা তার জন্য সম্মান ও মর্যাদার কারণ। (৫) শরয়ী হিজাব পালন করার মধ্যে মহিলাদের জন্য সতীত্ব সংরক্ষণ রয়েছে। আর ফিৎনা-ফাসাদ ছড়ানো থেকে এবং অশ্লীলতা-অশালীনতার প্রসার থেকে সমাজ হিফাযত হয়ে থাকে। (৬) মুসলমান মহিলার জন্য আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশসমূহ আকড়ে ধরা ফরয। আর সেগুলো আদবের সাথে পালন করা, যা দ্বীন ইসলামে ফরয করা হয়েছে। (৭) আল্লাহ্ পাক তাঁর বান্দাগণের প্রতি দয়াশীল যে, তাদেরকে এমন সমস্ত শরয়ী আহকাম দিয়েছেন যাতে তাদের জন্য কল্যাণ এবং ইহ্ ও পরকালের মঙ্গল নির্দিষ্ট রয়েছে। (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ৩৮৬, ৩৮৭ পৃষ্ঠা) [৭০৭-৭০৮]
الجلابيب جمع جلباب وهو على ماروى عن ابن عباس رضى الله عنه الذى يستر من فوق على اسفل. وقال ابن جبير المقنفة (ماتغطى به المرأة راسها- قاموس) وقيل الملحقة (اللباس فوق سائر اللباس من دثار البرد ونحوه كاللحاف- قاموس). وقال ابن حزم فى المحلى (3؛ 217) والجلباب فى لغة العرب التى خاطبنا بها رسول الله صلى الله عليه وسلم هو ما غطى جميع الجسم لابعضه. قيل كل ثوب تلبسه المراة فوق ثيابها. .....
الملحفة وكل ما يتستربه- اى يغطين بها- وجوههن وابدانهن اذا برزن لداعية من الدواعى. (احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص 410، 411، محلى ج3 ص 317)
অর্থঃ- جلابيب জালাবীবশব্দটি جلباب জিলবাবশব্দের বহুবচন। আর তা হচ্ছে যা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, জিলবাব হচ্ছে যা মাথা থেকে পাঁ পর্যন্ত ঢেকে রাখে। হযরত ইবনু জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, জিলবাব হলো, যার দ্বারা মহিলারা তাদের মাথা ঢেকে রাখে- কামূস। কেউ কেউ বলেন, এমন পোশাক যা শরীরের সমস্ত কাপড়ের উপর পড়া হয়, যেমন ঠাণ্ডার দিনে কম্বল পড়া হয়। কামূস। ইবনু হাযম  তাঁর মাহাল্লীনামক কিতাবে ৩য় জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠায় বলেন, আরবী পরিভাষায় জিলবাবহলো- যা পরিধান করে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে খুত্ববা দিতেন। যা সমস্ত শরীর ঢেকে নিত। আংশিক নয়। কারো মতেঃ প্রত্যেক ঐ কাপড়কে জিলবাববলে, মহিলারা যা তাদের পোশাকের উপর পরিধান করে থাকে। অর্থাৎ বোরকা। ..... আবার কারো মতে, তা হচ্ছে যা দ্বারা ঢাকা হয় অর্থাৎ আবৃত করে রাখা হয় তাদের মুখমণ্ডল এবং সমস্ত শরীর। যখন বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বেড়াতেই হয়।” (আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত থানুবী ৩য় জিঃ ৪১০, ৪১১ পৃষ্ঠা, মাহাল্লী ৩য় জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠা)
[৭০৯]
دلت الاية على مسائل الاولى وجوب التجلبب او التبرقع للنساء بحيث يستر جميع البدن اذا مست الحاجة الى الخروج من البيت. الثانى وجوب ستر الوجه للنساء اذا خيف الفتنة. الثالثة جواز الخروج من البيت للنساء عند الضرورات الطبعية او الشرعية. (تفسير احكام القران للشفيع والتهانوى ج3 ص 416، 417)
অর্থঃ- এই আয়াত শরীফ যে সমস্ত মাসয়ালা দালালত করে তা হচ্ছে, প্রথম মাসয়ালাঃ- যখন বিশেষ কোন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার জরুরত হবে, তখনই মহিলাদের জন্য সমস্ত শরীর আপাদমস্তক ঢেকে বের হওয়া ওয়াজিব। দ্বিতীয় মাসয়ালাঃ যদি ফিৎনার আশঙ্খা হয়, (কোন সময়েই মহিলাদের চেহারা ফিৎনা থেকে খালি নয়) তবে মহিলাদের মুখ ঢেকে রাখা ওয়াজিব। তৃতীয় মাসয়ালাঃ মহিলাদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে অথবা শরয়ী প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া জায়িয।” (তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪১৬, ৪১৭ পৃষ্ঠা) সূরা আহযাব-এর ৫৯ নং আয়াত শরীফ এবং তার অসংখ্য তাফসীরমূলক ব্যাখ্যা থেকে যে বিষয়গুলো প্রমাণিত হয়েছে। তা হচ্ছে, (১) সাধারণভাবে মহিলারা বাইরে যেতে পারবে না। (২) বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারবে, তবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত অর্থাৎ চেহারা, হাত, পা সহ সমস্ত শরীর ঢেকে বাইরে যেতে হবে। এটা ফরযে আইনের অন্তর্ভুক্ত। (৩) কেননা চেহারা, হাত, পা ইত্যাদি ও হিজাব বা পর্দারঅন্তর্ভুক্ত।

হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা
নূরের ৩১ নং  আয়াত শরীফ ও
তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
 [৭১০]
ولايبدين زينتهن الا ما ظهر منها وليضربن بخمرهن على جيوبهن.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ঈমানদার নারীগণকে বলুন) তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখে।” (সূরা নূর/৩১)

মাহরামদের সম্মুখে মহিলাদের মুখমণ্ডল হাত-পা খোলা রাখা জায়িয, গায়রে মাহরামদের সম্মুখে জায়িয নয়

এ আয়াতাংশের তাফসীর বুঝতে হলে প্রথমে সতরএবং হিজাব বা পর্দা’-এর পার্থক্য জানতে হবে। কারণ, ‘সতরএবং পর্দারমধ্যে অনক পার্থক্য বিদ্যমান। যথা- সতরএর পরিচয়ঃ সতরবলা হয়, যা মাহ্রাম পুরুষদের (যাদের সাথে দেখা করা জায়িয এবং বিবাহ হারাম) সম্মুখেও উম্মুক্ত বা খোলা জায়িয নয়।মহিলাদের সতরবিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম। যেমন (১) মহিলাদের সামনে মহিলাদের সতরহচ্ছে নাভির উপর থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত, (২) মাহ্রাম পুরুষদের সামনে মাথা হাত, পা, গলা ইত্যাদি খোলা রাখতে পারবে, (৩) নামাযের সময় চেহারা, হাতের কব্জি ও পায়ের গিড়া পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবে। কারণ এগুলো সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। হিজাব বা পর্দাশব্দটি মাহ্রামদের ব্যাপারে ব্যবহৃত হবেনা। বরং গাইরে মাহরামদের ব্যাপারে ব্যবহৃত হবে।    হিজাব বা পর্দার পরিচয়ঃ নারী গাইরে মাহ্রাম পুরুষদের থেকে এবং গাইরে মাহ্রাম পুরুষ (যাদের সাথে বিবাহ হালাল কিন্তু দেখা করা হারাম) নারীদের থেকে সম্পূর্ণভাবে অন্তরায় থাকাকেই হিজাব বা পর্দাবলা হয়।তাই একজন মহিলার আপাদমস্তক তথা সম্পূর্ণ শরীরের সামান্য অংশও বেগানা পুরুষদের জন্য দেখা হারাম। মহিলাদের কণ্ঠস্বর অন্য পুরুষদেরকে শুনানো হারাম। একজন পুরুষেরও আপাদমস্তক তথা সম্পূর্ণ শরীরের সামান্য অংশ বেগানা মহিলার জন্য দেখা হারাম। তবে প্রয়োজনে বেগানা পুরুষদের কণ্ঠস্বর মহিলারা শুনতে পারবে। যেমন: পর্দার আড়াল থেকে ওয়াজ, নছীহত শুনা ইত্যাদি।
উল্লিখিত আয়াতাংশে গাইরে মাহ্রাম (যাদের সাথে দেখা দেয়া হারাম কিন্তু বিবাহ হালাল)-দের সাথে হিজাব বা পর্দাকরতে বলা হয়েছে। সতর’-এর আলোচনা এ আয়াতাংশে নেই। নিম্নে উল্লিখিত আয়াতের সঠিক তাফসীর বা ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো।
[৭১১]
(ولا يبدين زينتهن الا ماظهر منها) اى لايظهرن شيئا من الزينة للاجانب الا ما لايمكن اخفاؤه. قال ابن مسعود كالرداء والثياب يعنى على ماكان يتعاطاه نساء العرب من المقنعة التى تجلل ثيابها وما يبدو من اسافل الثياب، فلا حرج عليها فيه لان هذا لايمكنها اخفاؤه ونظيره فى زى النساء ما يظهر من ازارها وما لايمكن اخفاؤه وقال بقول ابن مسعود الحسن وابن سيرين وابو الجوزاء وابراهيم النخعى وغيرهم. ........ وفى رواية عنه بهذا الاسناد قال الزينة زينتان فزينة لايراها الا الزوج الخاتم والسوار، وزينة يراها الاجانب وهى الظاهر من الثياب. وقال الزهرى لايبدو لهؤلاء الذين سمى الله ممن لاتحل له الا الاسورة والاخمرة والاقرطة من غير حسر. (تفسير ابن كثير ج3 ص 453، 454)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে চলাচলের কারণে অনিচ্ছা সত্বে যা প্রকাশ পায় তা ব্যতীত) অর্থাৎ পর পুরুষের সামনে নিজেদের সৌন্দর্যের কোন অংশই যেন প্রকাশ না করে, তবে ইচ্ছা থাকার পরও যা ঢেকে রাখা সম্ভব নয় সেটা ভিন্ন কথা। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন; যেমন চাদর, উপরের কাপড় ইত্যাদি। অর্থাৎ আরবী মহিলারা যে আবরণী দ্বারা তাদের শরীর ঢেকে থাকে, সেই কাপড় বা বোরকার উপর দেখতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এতে উপর থেকে মহিলাদের আকৃতি গোপন করা সম্ভব হয় না। হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হাসান বছরী, ইবনে সীরীন, আবুল্ জুযা, ইব্রাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম এবং অন্যান্যরাও এরকম বক্তব্য দিয়েছেন। ........ অন্য রিওয়ায়েতে আছে, তিনি বলেছেন; زينة তথা আকর্ষণীয় পোষাক দুপ্রকারের রয়েছে। এক, যা শুধু স্বামীই দেখে। যেমন আংটি ও বালা বা চুড়ি। দ্বিতীয় আবরণ হলো সেটাই যা সকলেই দেখে থাকে। যেমন উপরের কাপড়। যুহরী বলেছেন, এ আয়াতের মধ্যে যেসব আত্মীয়দের কথা বলা হয়েছে তাদের সামনে চুড়ি, ওড়না এবং বালা প্রকাশিত হয়ে গেলে কোন অসুবিধা নেই।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৩, ৪৫৪ পৃষ্ঠা)
[৭১২-৭২২]
وقوله تعالى (وليضربن بخمرهن على جيوبهن) يعنى المقانع يعمل بها لها صفات ضاربات على صدورهن لتوارى ما تحتها من صدرها وترائبها ليخالفن شعار نساء اهل الجاهلية فانهن لم يكن يفعلن ذلك بل كانت المراة منهن تمربين الرجال مسفحة بصدرها لايواريه شيئ وربما اظهرت عنقها وذوائب شعرها واقرطة أذانها، فامر الله المؤمنات ان يستترن فى هيئاتهن واحوالهن كما قال تعالى "يايها النبى قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن ذلك ادنى ان يعرفن فلايؤذين. قال فى هذا الاية الكريمة (وليضربن بخمرهن على جيوبهن) والخمر جمع خمار وهو ما يخمر به اى يغطى به الرأس وهى التى تسميها الناس المقانع.
قال سعيدبن جبير (وليضربن) وليشددن (بخمرهن على جيوبهن) يعنى على النحر والصدر فلايرى منه شيئ وقال البخارى حدثنا احمدبن شبيب حدثنا ابى عن يونس عن ابن شهاب عن عروة عن عائشة رضى الله عنها قالت يرحم الله نساء المهاجرات الاول لماانزل الله "وليضربن بخمرهن على جيوبهن" شققن مروطهن فاختمرن بها. وقال ايضا حدثنا ابو نعيم حدثنا ابراهيم بن نافع عن الحسن بن مسلم عن صفية بنت شيبة أن عائشة رضى الله عنها كانت تقول لما نزلت هذه الاية "وليضربن بخمرهن على جبوبهن" اخذن أزرهن فشققنها من قبل الحواشى فاختمرن بها.
وقال ابن ابى حاتم حدثنا ابى حدثنا احمدبن عبد الله بن يونس حدثنى الزنجى بن خالد حدثنا عبد الله بن عثمان بن خيثم عن صفية بنت شيبة قالت بينا خحن عند عائشة قالت فذكرنا نساء قريش وفضلهن، فقالت عائشة رضى الله عنها ان لنساء قريش لفضلا وانى والله مارايت افضل من نساء الانصار اشد تصديقا لكتاب الله والاايمانا بالتنزيل لقد انزلت سورة النور "وليضربن بخمرهن على جيوبهن" انقلب رجالهن اليهن يتلون عليهن ما انزل الله اليهم فيها ويتلو الرجل على امرأته وابنته واخته وعلى كل ذى قرابته فمامنهن امراة الاقامت الى مرطها المرحل فاعتجرت به تصديقا وايمانا بما انزل الله من كتابه، فاصبحن وراى رسول الله صلى الله عليه وسلم معتجرات كان على رؤوسهن الغراب.
رواه ابو داود من غير وجه عن صفية بنت شيبة به. وقال ابن جرير حدثنا يونس اخبرنا ابن وهب ان قرمبن عبد الرحمن اخبره عن ابن شهاب عن عروة عن عائشة قالت يرحم الله نساء لمهاجرات الاول لما انزل الله "وليضربن بخمرهن على جيوبهن" شققن اكتف مروطهن فاختمرن بها، رواه ابو داؤد من حديث ابن وهب به. (تفسير ابن كثير ج3 ص 454، 455. بخارى شريف. فتح البارى. عمدة القارى. ارشاد السارى، تيسير البارى، شرح الكرمانى، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر الدين العينى)  
অর্থঃ- আল্লাহ্ পাক বলেন, (তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখে) অর্থাৎ তারা যেন ওড়না দিয়ে তাদের গলা ও বক্ষদেশ ঢেকে রাখে। ফলে তাদের বক্ষ এবং অলংকারাদী ঢাকা থাকবে। জাহিলিয়াত যুগের মহিলারা-এ আমলের বিপরীত করতো। কেননা, সেসময় তাদের এ আমলের অভ্যাস ছিল না। তাই, তাদের বক্ষের উপর কিছু ছিলো না, এভাবেই পুরুষদের সামনে বের হতো। কখনো কখনো তাদের গলা, ঘাড়, চুল, বালা, চুড়ি, কান পরিষ্কারভাবে দেখা যেত। আল্লাহ্ পাক মুমিন মহিলাদেরকে তাদের সে অবস্থা থেকে পর্দা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। যেমন, আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ তাদের মুখমণ্ডলের উপর ঝুলিয়ে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব ৫৯ আয়াত)। আল্লাহ্ পাক এ আয়াত শরীফে বলেন, “তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখে।এখানে خمر শব্দটি خمار শব্দের বহুবচন। খিমার হচ্ছে, যা দ্বারা মাথা ঢাকা হয়ে থাকে। যাকে মানুষেরা مقانع ও বলে থাকে।
হযরত সাদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, (وليضربن তারা যেন ঝুলায় বা ফেলে রাখে) এর অর্থ وليشددن তারা যেন বেঁধে রাখে” (তাদের মাথার ওড়না বুকের উপর) অর্থাৎ তাদের গলা, ঘাড় এবং বক্ষদেশ, যাতে তার থেকে কোন অংশই দেখা না যায়। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আহমদ বিন শাবীব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন আমার পিতা হযরত ইউনুছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইবনু শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে, হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আল্লাহ্ পাক সেই মহিলাগণের উপর রহম করুন যারা প্রথম প্রথম হিজরত করেছিলেন। যখন আল্লাহ্ পাক তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখেআয়াত শরীফ নাযিল করলেন, তখন তারা তাদের চাদর ফেড়ে তা দ্বারা ওড়না বানিয়েছিলেন। ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন আবূ নঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ইবরাহীম বিন নাফিরহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান বিন মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ছুফিয়া বিনতে শাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহা থেকে। তিনি বলেন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেছেন, যখন এই আয়াত শরীফ তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখেনাযিল হলো, তখন তারা তাদের তহবন্দ ছিড়ে তার এক অংশ দিয়ে মাথার ওড়না তৈরি করে নেন।
হযরত ইবনে আবূ হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, আমার পিতা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আহমদ বিন আব্দুল্লাহ বিন ইউনুছ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত যানজী বিন খালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন উছমান বিন খাইছাম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ছুফিয়া বিনতে শাইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে। তিনি বলেন, আমরা একদা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর কাছে বসা ছিলাম। তিনি বলেন, আমরা কুরাইশ মহিলাগণের ফাযাইল-ফযীলত আলোচনা করছিলাম। হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, নিশ্চয়ই কুরাইশ মহিলাগণের মর্যাদা রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্ পাক-এর শপথ! আমি আনছারী মহিলাগণের মত অধিক ফযীলতপূর্ণ কোন মহিলা দেখিনি। তাদের অন্তরে আল্লাহ্ পাক-এর কিতাবের সত্যতা এবং তার উপর পূর্ণ ঈমান অধিক পরিমাণে আছে। যখন সূরা নূরের তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখেএ আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হলো, তখন তাদের পুরুষেরা তাদের কাছে আল্লাহ্ পাক যা নাযিল করেছেন তা পাঠ করে শুনালেন। যখনই পুরুষ তার স্ত্রী, মেয়ে, বোন ও নিকট আত্মীয়দের কাছে এ আয়াত শরীফ পাঠ করে শুনালেন, তখনই মহিলারা তাদের চাদর দিয়ে ওড়না তৈরি করে মাথা, বুক ঢেকে নেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক যা নাযিল করেছেন তা সত্যতা এবং ঈমানের সাথে আমল করলেন। তারা ফজরের নামাযে হাজির হলে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন, তাদের মাথায় ওড়না বিদ্যমান রয়েছে। যেন মহিলাগণের মাথায় বালতি রাখা আছে। হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন মাধ্যম ছাড়াই হাদীসটি হযরত ছুফিয়া বিনতে শাইবাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন।   হযরত ইবনু জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ইউনুছ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত ইবনে ওহ্হাব রহমতুল্লাহি আলাইহি। নিশ্চয়ই কুররা বিন আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে হযরত ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে খবর দিয়েছেন যে, তিনি হযরত উরওয়াহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন। আল্লাহ্ পাক প্রথম হিজরতকারী মহিলাগণের উপর রহম করেছেন যে, যখন আল্লাহ্ পাক নাযিল করেন, “তারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখেএই আয়াত শরীফ, তখন তারা তাদের চাদর ছিড়ে তা দিয়ে ওড়না তৈরি করে পড়া শুরু করেন। আবূ দাউদ এ হাদীস শরীফ হযরত ইবনে ওহ্হাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৪, ৪৫৫ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ কারী, ইরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল্ বারী, শরহুল্ কিরমানী, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল্ মাবূদ, শরহু বদরিদ্দীন আইনী)
[৭২৩]
(وليضربن بخمرهن) اى يضعن خمرهن من ضرب يده على الحائط اى وضعها (على جيوبهن) سترا لشعورهن وصدورهن واعناقهن وقرطهن. قال البغوى قالت عائشة رضى الله عنها رحم الله النساء المهاجرات الاول لما انزل الله تعالى "وليضربن بخمرهن على جيوبهن" شققن مروطهن فاختمرن به. قرانافع وعاصم وهشام بضم الجيم والباقون بكسرها. (التفسير المظهرى ج6 ص 497)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের ওড়না দ্বারা আবৃত করে) অর্থাৎ তাদের ওড়না দ্বারা আবৃত করে। যেমন, ضرب يده على الحائط অর্থাৎ সে দেয়ালের উপর  হাত রেখেছে। (তাদের বুককে) আবৃত করে রাখে তাদের মাথার চুল, বক্ষদেশ, ঘাড়, গলা ইত্যাদি। ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেছেন, আল্লাহ্ পাক প্রথম হিজরতকারী মুহাজির মহিলাগণের উপর রহম করেছেন যে, যখন তাদের উপর তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের উপর ফেলে রাখে।এ আয়াত শরীফ নাযিল হলো, তখন তারা তাদের চাদর সমূহ ছিড়ে তার দ্বারা ওড়না তৈরি করে নিলেন। হযরত নাফি’, আছিম এবং হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম جيوبهن এর جيم বর্ণে পেশযোগে পড়েছেন। আর অন্যান্যগণ যেরযোগে পড়েছেন। (তাফসীরুল মাযহারী ৬ ষ্ঠ জিঃ ৪৯৭ পৃষ্ঠা)
[৭২৪-৭৬৯]
(وليضربن بخمرهن) يعنى ليلقين بمقانعهن (على جيوبهن) يعنى موضع الجيب وهو النحر والصدر يعنى ليسترن بذلك شعورهن واعناقهن واقهن واقراطهن وصدورهن عن عائشة قالت "يرحم الله نساء المهاجرات الاول لما انزل الله وليضربن بخمرهن على جيوبهن شققن مروطهن فاختمرن بها" المرط كساء من صوف او خز اوكتان وقيل والازار وقيل هو الدرع. (تفسير الخازن ج5 ص69، تفسير البغوى ج5 ص 69، بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد الشارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের মাথার ওড়না ফেলে রাখে) অর্থাৎ তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে তাদের মাথা ঢাকার আবরণ। (তাদের বুকের উপর) অর্থাৎ বুকের স্থানে আর তা হচ্ছে বক্ষদেশ, সীনা। অর্থাৎ তারা যেন তাদের ওড়না দ্বারা তাদের চুল, ঘাড়, গলা, বক্ষদেশ ইত্যাদি ঢেকে রাখে। হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আল্লাহ্ পাক প্রথম মুহাজির মহিলাগণের উপর রহম করেছেন যে, যখন আল্লাহ্ পাক তারা যেন তাদের ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখেএ আয়াত শরীফ নাযিল করেন, তখন তারা তাদের চাদর সমূহ ছিড়ে তা দ্বারা ওড়না তৈরি করে নেন।مرط মিরত্বহচ্ছে পশমী অথবা রেশমী অথবা কাতনের তৈরি চাদর। কেউ বলেন, তা হচ্ছে তহবন্দ। কেউ বলেন, তা হচ্ছে ছোটজামা বা ব্লাউজ।” (তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ৬৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ৬৯ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল বারী)
উল্লিখিত তাফসীরের আলোচনা ছাড়াও নিম্নবর্ণিত তাফসীরের কিতাবগুলোতে বর্ণনা, ভাষা ইত্যাদির তারতম্যে আলোচনা এসেছে। যেমন তাফসীরুল্ কুরতুবী, আহকামুল্ কুরআন লি ইবনিল্ আরাবী, আহকামুল কুরআন লিল্ জাছ্ছাছ, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল, যাদুল্ মাসীর ফী ইল্মিত তাফসীর, তাফসীরে দুররুল্ মানছুর, তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর, তাফসীরুত্ ত্ববারী, তাফসীরুল্ কবীর লি ইমাম ফখরির রাযী, আত্ তাসহীল লি উলূমিত্ তানযীল, নাযমুদ দুরার, তাফসীরুস্ সমরকন্দী, তাফসীরে দুররুল্ মাছূন, আল্ মুহাররারুল্ ওয়াজীয, তাফসীরুল্ কাসিমী, তাফসীরে বাইযাবী, হাশিয়াতুশ্ শাইখ যাদাহ্ আলাল বাইযাবী, হাশিয়াতুছ্ ছবী আলাল জালালাইন, হাশিয়াতুশ্ শিহাব আলাল্ বাইযাবী, তাফসীরুল্ কাশ্শাফ, তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল জালালাইন, তাফসীরে কামালাইন আলাল জালালাইন, তাফসীরে ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, তাফসীরে আবিস্ সাউদ, তাফসীরে হাছান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরুল্ মাওয়ারাদী, তাফসীরুল্ লুবাব, তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন, কানযুল্ ঈমান ওয়া খাযাইনুল ইরফান, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানূবী, তাফসীরে মায়ারিফুল্ কুরআন, তাফহীমুল্ কুরআন ইত্যাদি। সূরা নূরের ৩৯ নং আয়াত শরীফের তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ‘নারী গাইরে মাহ্রাম পুরুষদের থেকে এবং গাইরে মাহ্রাম পুরুষ (যাদের সাথে বিবাহ হালাল কিন্তু দেখা করা হারাম) নারীদের থেকে সম্পূর্ণভাবে অন্তরায় থাকাকেই হিজাব বা পর্দাবলা হয়।তাই একজন মহিলার আপাদমস্তক তথা সম্পূর্ণ শরীরের সামান্য অংশও বেগানা পুরুষদের জন্য দেখা হারাম। মহিলাদের কণ্ঠস্বর অন্য পুরুষদেরকে শুনানো হারাম। একজন পুরুষেরও আপাদমস্তক তথা সম্পূর্ণ শরীরের সামান্য অংশ বেগানা মহিলার জন্য দেখা হারাম। তবে প্রয়োজনে বেগানা পুরুষদের কণ্ঠস্বর মহিলারা শুনতে পারবে। যেমন: পর্দার আড়াল থেকে ওয়াজ, নছীহত শুনা ইত্যাদি।

হিজাব বা পর্দাসম্পর্কিত সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতাংশের তাফসীর বা ব্যাখ্যা

[৭৭০]
ولا يضربن بارجلهن ليعلم مايخفين من زينتهن.
অর্থঃ- তারা যেন এমনভাবে পদচারনা না করে যাতে তাদের চুপানো সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ে।” (সূরা নূর/ ৩১)

মহিলাদের জন্য জোরে পদচারণা করা, অন্যকে  গলার আওয়ায শুনানো,সুগন্ধি মেখে বাইরে বের  হওয়া ইত্যাদি বেগানা পুরুষকে আকৃষ্ট করার  কার্যকলাপ সবই হারাম

অত্র আয়াত শরীফে মহিলাদের এমন সমূহ কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে, যে সমস্ত কাজ বেগানা পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করে থাকে। যেমন (১) মহিলাদের জন্য চলাচলের সময় জোরে পদচারণ করা, পাঁয়ে ঝুমুর বা নুপুুর পড়া হারাম। (২) মহিলারা তাদের কণ্ঠস্বর অপর কোন পুরুষকে শুনাতে পারবে না। কারণ তার কণ্ঠস্বরও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। তাই মহিলারা কখনোই বেগানা পুরুষকে তাঁর কণ্ঠস্বর শুনাবেনা, তবে যদি প্রয়োজনে কখনো বেগানা পুরুষের সাথে কথা বলতেই হয় তবে কথা বলার সময় মুখে নিজ অঙ্গুলী প্রবেশ করে কথা বলবে যেন আওয়াজ স্পষ্ট না হয়, আর নছীহত বা তালীমের ক্ষেত্রে শক্ত ভাষায় কথা বলবে। এটাই মহিলাদের কণ্ঠস্বর এর ব্যপারে শরীয়তের ফায়সালাও। (৩) এমনকি পুরুষদের ইচ্ছাকৃত মহিলাদের কণ্ঠস্বর শুনা জায়িয নয়। (৪) তবে পুরুষের কণ্ঠস্বর প্রয়োজনবশতঃ মহিলারা শুনতে পারবে। যেমন, ওয়াজ, নছীহত, তালীম, সাক্ষ্য প্রদান ইত্যাদি ব্যাপারে। (৫) মহিলারা আতর বা যেকোন সুঘ্রাণ জাতীয় জিনিষ মেখে বাইরে বের হতে পারবে না। কেননা, তা মেখে বইরে বের হওয়া হারাম বা নাজায়িয।
নিম্নে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীরের কিতাব থেকে এ বিষয়গুলোর উপর অত্র আয়াতাংশের নির্ভরযোগ্য তাফসীর বা ব্যাখ্যা আলোচনা করা হলো-
[৭৭১-৭৯২]
اخرج ابن جرير عن حضرمى ان امراة اتخذت صرتين من فضة واتخذت جذعا فمرت على قوم وضربت برجلها فوقع الخلخال على الجذع فصوتت فانزل الله تعالى. (ولا يضربن بارجلهن ليعلم مايخفين من زينتهن) قال البغوى كانت المرئة اذا مشت ضربت برجلها لتسمع صوت خلخالها فنهيت عن ذلك لانه يورث فى الرجال ميلا اليها. قال البيضاوى وهو ابلغ من النهى عن ابداء الزينة وادل على المنع من رفع الصوت لها ولذا صرح فى النوازل بان نغمة المرءة عورة وبنى عليها ان تعلمها القران من المرءة احب الى لان نغمتها عورة ولذا قال عليه السلام التسبيح للرجال والتصفيق للنساء. متفق عليه. من حديث سهل بن سعد فلايحسن ان يسمعها الرجل قال ابن همام وعلى هذا لوقيل اذا جهرت المرءة بالقراءة فى الصلوة فسدت كان متجها. ولذا منعها عليه السلام من التسبيح بالصوت لاعلام الامام بسهوه الى التصفيق وهذا الاية تدل على ان القدم عورة.
التفسير المظهرى ج6 ص 502، بخارى شريف. فتح البارى. عمدة القارى. ارشاد السارى. شرح الكرمانى، تيسير البارى، مسلم شيرف، شرح النووى، فتح الملهم للشبير احمد عثمانى، فتح الملهم للتقى عثمانى، شرح الابى والاسنوسى، المفهم، مشكوة شريف، شرح الطيبى، مر قاة، التعليق الصبيح، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهر حق، تنظيم الاشتات، مراة المناجيح، تفسير البغوى، تفسير البيضاوى)
অর্থঃ- হযরত ইবনু জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাযরামী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন, এক মহিলা পায়ে পড়তো দুটি রূপার নুপুর এবং পথ চলার সময় করতো সজোরে আওয়াজ। ফলে শুনা যেত তার ঝুমুর ঝুমুর আওয়াজ। তার এ রকম আচরণের প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ পাক নাযিল করেছেন, (তারা যেন এমনভাবে পদচারণা না করে যাতে তাদের চুপানো সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ে।) হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কোন কোন মহিলা এমন ছিল যে, পথ চলার সময় নুপুরের আওয়াজ শুনানোর উদ্দেশ্যে জোরে জোরে পা ফেলতো। তাদেরকে বিরত রাখাই আলোচ্য আয়াত শরীফের উদ্দেশ্য। হযরত বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সৌন্দর্য, সাজ-সজ্জা প্রকাশ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা উচ্চ আওয়াজ-এর ব্যাপারেও দলীল সম্মত। এজন্য বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর, ‘আন্ নাওয়াযিলনামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, নিশ্চয়ই নারীদের কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত। এর উপর ভিত্তি করে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, নারীদের কুরআন শরীফ শিক্ষা করা নারীদের নিকট থেকেই উত্তম। কেননা, মহিলার কণ্ঠস্বরও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পুরুষেরা তাছবীহ্ (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে এবং মহিলারা হাতের উপর হাত মারবে। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ। হাদীসে সাহ্ল ইবনে সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুতে আছে যে, পুরুষের জন্য মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা শোভনীয় নয়। হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদি মহিলা নামাযের কিরায়াত উচ্চস্বরে পাঠ করে তাহলে তার নামায ফাসিদ-নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদেরকে উচ্চ শব্দে তাছবীহ্ পাঠ করতে নিষেধ করেছেন, যখন ইমাম ছাহেব নামাযে ভুল করবেন। বরং নারীদেরকে হাতে হাত মারার নির্দেশ দিয়েছেন। এ আয়াত শরীফ প্রমাণ করে যে, মহিলাদের পা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। (আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৫০২ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ কারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল্ মুলহিম লিশ্ শিব্বীর আহমদ উছমানী, ফতহুল্ মুলহিম লিত্ তক্বী উছমানী, শরহুল্ উবাই ওয়াস্ সিনূসী, আল্ মুফহিম, মিশকাত শরীফ, শরহুত্ ত্বীবী, মিরকাত, আত্ তালীকুছ ছবীহ্, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তানযীমুল্ আশতাত, মিরয়াতুল্ মানাজীহ)
[৭৯৩-৮৪৪]
وقوله تعالى (ولا يضربن بارجلهن) الاية كانت المراة فى الجاهلية اذا كانت تمشى فى الطريق وفى رجلها خلخال صامت لايعلم صوتها ضربت برجلها الارض، فيسمع الرجال طنينه. فنهى الله المؤمنات عن مثل ذلك، وكذالك اذاكان شئ من زينتها مستورا فتحركت بحركة لتظهر ماهو خفى دخل فى هذا النهى لقوله تعالى (ولا يضربن بارجلهن) الى اخره ومن ذلك انها تنهى عن التعطر والتطيب عند خروجها من بيتها فيشم الرجال طيبها. فقد قال ابو عيسى الترمذى حدثنا محمد ابن بشار حدثنا يحى بن سعيد القطان عن ثابت بن عمارة الحنفى عن غنيم بن قيس عن ابى موسى رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال "كل عين زانية والمرأة اذا استعطرت فمرت بالمحلس فهى كذا وكذا" يعنى زانية.
وفى الباب عن ابى هريرة وهذا حسن صحيح. رواه ابو داود والنسائى من حديث ثابت بن عمارة به. وقال ابو داود حدثنا محمد بن كثير اخبرنا سفيان عن عاصم بن عبيد الله عن عبيد مولى ابى رهم عن ابى هريرة رضى الله عنه قال لقيته امراة شم منها ريح الطيب ولذيلها اعصار، فقال يا امية الجبار جئت من المسجد؟
قالت نعم. قال لها تطيب؟ قالت نعم قال انى سمعت حبى ابا القاسم صلى الله عليه وسلم يقول "لايقبل الله صلاة امراة طيبت لهذا المسجد حتى ترجع فتغسل غسلها من الجنابة." ورواه ابن ماجة عن ابى بكر بن ابى شيبة عن سفيان هوابن عيينة به. وروى الترمذى ايضا من حديث موسى بن عبيدة عن ايوب بن خالد عن ميمونة بنت سعد ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال "الرافلة فى الزينة فى غيراهلها كمثل ظلمة يوم القيامة لانور لها" ومن ذلك ايضا انهن ينهين عن المشى فى وسط الطريق لمافيه من التبرج.
قال ابو داود : حدثنا الثعلبى حدثنا عبد العزيز يعنى ابن محمد عن ابن ابى اليمان عن شداد بن ابى عمروبن حماس عن ابيه عن حمزة بن ابى اسيد الانصارى عن ابيه انه سمع النبى صلى الله عليه وسلم وهو خارج من المسجد، وقد اختلط الرجال مع النساء فى الطريق، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم للنساء "استاخرن فانه ليس لكن ان تحتضن الطريق، عليكن بحافات الطريق" كانت المرخاة تلصق بالجدار حتى أن ثوبها ليتعلق بالجدار من لصوقهابه. (تفسير ابن كثير ج3 ص 457، 458، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشاذى، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر الدين العينى، نسائى شيريف، ذخيرة عقبى، حاشية السيوطى، ابن ماجة شريف)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, (তারা যেন এমনভাবে পদচারণা না করে যাতে তাদের চুপানো সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ে) আয়াত শরীফ। জাহিলিয়াত যুগে মহিলারা যখন রাস্তায় চলতো, তখন যমীনের উপর সজোরে পা ফেলতো যাতে পায়ের নুপুর বেজে উঠে। আর পুরুষেরা তা শুনতে পেতো। আল্লাহ্ পাক মুমিন মহিলাগণকে তাদের অনুরূপ করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে যে সৌন্দর্য লুকানো তা তারা প্রকাশ করার জন্য সজোরে চলতো এ বিষয়টি আয়াত শরীফে নিষেধ করা হয়েছে যে, (তারা যেন এমনভাবে পদচারণা না করে যাতে তাদের চুপানো সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ে) আয়াত শরীফের শেষ পর্যন্ত। এ আয়াত শরীফের ভিত্তিতে মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় আতর, সুগন্ধি মেখে বের হওয়া নিষেধ তথা হারাম করা হয়েছে। যাতে পুরুষেরা ঘ্রান নিতে না পারে।  হযরত আবূ ঈসা তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ ক্বত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ছাবিত বিন আম্মারাতাল্ হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি গানীম বিন কায়েছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আবূ মুসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে, তিনি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক চোখ ব্যভিচারী, যখন মহিলা আতর, সুগন্ধি মেখে পুরুষদের কোন মজলিসের পাশ দিয়ে গমন করে তখন সে এরূপ এরূপ।অর্থাৎ ব্যভিচারিনী। একই ভাবে হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। এটি হাসান ছহীহ্। আবূ দাউদ এবং নাসায়ী হযরত ছাবিত বিন আম্মারা থেকে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ বিন কাছীর, তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আছিম বিন উবাইদুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে যিনি আবূ রহম এর মনীব। তিনি হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি বলেন, এমন একজন মহিলার সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো যে সুগন্ধি ছড়িয়ে চলছিল। তিনি বললেন, হে প্রতাপশালী আল্লাহ্ পাক-এর দাসী! তুমি কি মসজিদ হতে আসছো? মহিলা বললো, হ্যাঁ। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি সুগন্ধি মেখেছো? সে উত্তরে বললো, হ্যাঁ। এবার তিনি বললেন, আমি আমার প্রাণ প্রিয় আবুল্ কাসিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন; “আল্লাহ্ পাক এমন মহিলার নামায কবুল করবেন না যে এ মসজিদে আসার জন্য সুগন্ধি মেখেছে। যে পর্যন্ত না সে ফিরে গিয়ে অপবিত্রতার তথা ফরয গোসলের ন্যায় গোসল না করবে।ইবনু মাজাহ্ হাদীস শরীফটি হযরত আবূ বকর বিন আবী শাইবাহ্ থেকে, তিনি সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। যিনি ইবনু উয়াইনা হিসেবে পরিচিত।
ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বর্ণনা করেছেন, হযরত মুসা বিন উবাইদা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আইউব বিন খালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত মাইমূনা বিন সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে। নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “অস্থানে (মাহ্রাম ছাড়া অন্য স্থানে) সৌন্দর্য প্রদর্শন কারিনী নারী কিয়ামতের দিনের ঐ অন্ধকারের মত যেখানে কোন আলো নেই।এ হাদীস শরীফ থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, ব্যাপকভাবে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে রাস্তায় চলাচলকারিনী মহিলাদেরকে তা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন তাগলাবী। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল আযীয অর্থাৎ ইবনু মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনু আবিল ইয়ামান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত শাদ্দাদ বিন আবী আমর বিন হাম্মাস রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি হযরত হামযা বিন আবী উসাইদ আনছারী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে। তিনি হযরত আবূ উবাইদ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন যে, যখন তিনি মসজিদের বাইরে ছিলেন। একদা কিছু পুরুষ এবং মহিলা রাস্তায় মিলেমিশে চলছিল। তা দেখে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে মহিলারা! তোমরা এদিক ওদিক হয়ে যাও। মাঝ পথ দিয়ে তোমাদের জন্য চলা উচিৎ নয়। তোমাদের জন্য রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলা দরকার।একথা শুনে মহিলারা দেয়াল ঘেষে চলা শুরু করে। এমনকি দেয়ালের সাথে তাদের কাপড় ঘর্ষণ লেগেছিল।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৭, ৪৫৮ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, আবু দাউদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, শরহু বদরিদ্দীন আইনী, নাসায়ী শরীফ, যখীরায়ে উক্বরা, হাশিয়াতুস্ সুয়ূতী, ইবনু মাজাহ্ শরীফ)
এছাড়াও নিম্ন বর্ণিত তাফসীরের কিতাব সমূহে বর্ণনা, ভাষা এবং কমবেশী সহ উল্লেখ আছে। যথাঃ- তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল, যাদুল্ মাসীর ফী ইল্মিত্ তাফসীর, তাফসীরে ফতহুল ক্বদীর, তাফসীরে ত্ববারী, তাফসীরে কবীর, আত্ তাসহীল লি উলূমিত্ তানযীল, নাযমুদ্ দুরার, তাফসীরে সমরকন্দী, তাফসীরে দুররুল মানছূর, তাফসীরে দুররুল মাছূন, আল্ মুহাররারুল্ ওয়াজীয, তাফসীরুল্ কাসিমী, তাফসীরে বাইযাবী, হাশয়াতুছ্ ছাবী আলাল জালালাইন, তাফসীরে শাইখ যাদাহ্, হাশিয়াতুশ্ শিহাব, তাফসীরে কাশ্শাফ, তাফসীরে জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল, কামালাইন, তাফসীরে ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, তাফসীরে আবী সাউদ, তাফসীরে হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরে মাওয়ারাদী, আহকামুল কুরআন লিইবনিল আরাবী, তাফসীরুল্ লুবাব, তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ্ ছাবূনী, তাফসীরে হক্কানী, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন, কানযুল্ ঈমান ওয়া খাযাইনুল ইরফান, তাফসীরে আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী, তাফসীরে মারিফুল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন ইত্যাদি। 
সূরা নূরের ৩১নং আয়াতাংশের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের জন্য চলাচলের সময় জোরে পদচারণ করা, পাঁয়ে ঝুমুর বা নুপুুর পড়া হারাম। মহিলারা তাদের কণ্ঠস্বর অপর কোন পুরুষকে শুনাতে পারবে না। কারণ তার কণ্ঠস্বরও হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। (অসমাপ্ত) 

0 Comments: