(১) মহিলাদের মুখম-ল তথা চেহারা, হাত ও পা সহ সমস্ত শরীর পরপুরুষ থেকে ঢেকে রাখা বা পর্দা করা ফরযে আইন।
(২) মহিলাদের গুপ্ত সৌন্দর্য যেমন হাতের চুড়ি বা বালা, পায়ের নুপুর বা ঝুমুর, হাতের আংটি, বাজু বন্ধ, মাথার মুকুট, কানের দুল, গলার হারা বা মালা এবং অন্যান্য সকল সৌন্দর্য পরপুরুষকে দেখানো জায়িয নেই।
(৩) বাহ্যিক সৌন্দর্য যা চুপানো সম্ভব নয় যেমন বড় চাদর বা বোরকার উপর থেকে আকার আকৃতি দৃশ্যমান হলে তা ক্ষমাযোগ্য। الا ما ظهر منها এর তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং অন্যান্য অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ রকম তাফসীর করেছেন।
(৪) ইমাম বাইযাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, অত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নামাযের মধ্যে ছতরের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ নামাযের মধ্যেই শুধু হাত, পা ও মুখ খোলা রাখতে পারবে। গায়রে মাহরামদের সামনে খোলা রাখতে পারবেনা বা খোলা রাখা জায়িয হবে না।
(৫) মাজুরের হুকুম তখনই ধর্তব্য হবে যখন পুরুষ ও মহিলা উভয়েই শাহওয়াত মুক্ত হবে।
(৬) শাহওয়াতের সাথে যে কোন অঙ্গ এমনকি উপরের কাপড়, চাদর বা বোরকা দেখা ও দেখানোও জায়িয হবে না।
(৭) স্বামী স্ত্রীর সমস্ত শরীর দেখতে পারবে।
(৮) তবে নিকটাত্মীয় যেমন, ভাই, ছেলে, পিতা ইত্যাদিকে শুধু হাত, পা, মুখম-ল দেখাতে পারবে। তাদের জন্যও মাহরামা মহিলাকে শাহওয়াতের সাথে স্পর্শ করা এবং দেখা জায়িয হবেনা।
(৯) মহিলাদের অযথা বাইরে বের হওয়া ও চলাচল করা জায়িয নেই। বিশেষ জরুরতে জায়িয রয়েছে।
(১০) মূলকথা হলো, মহিলাদের হাত, মুখম-ল, পা এবং শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আবরণীয় বা পর্দার যোগ্য। যার প্রদর্শন বা প্রকাশ হারাম বা নাজায়িয।
সূরা নিসা’র ২২, ২৩ ও ২৪ নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
[১৩৫৪]
ولاتنكحوا ما نكح اباؤكم من النساء الا ماقد سلف انه كان فاحشة ومقتا وساء سبيلا حرمت عليكم امهتكم وبنتكم واخوتكم وعمتكم وخلتكم وبنت الاخ وبنت الاخت وامهتكم التى ارضعنكم واخوتكم من الرضاعة وامهت تسائكم ورباتبكم التى فى حجوركم من نسانكم التى دخلتم بهن فان لم تكونوا دخلتم بهن فلاجناح عليكم وحلائل ابنائكم الذين من اصلابكم وان تجمعوا بين الاختين الا ما قد سلف ان الله كان غفورا رحيما. والمحصنت من النساء الا ما ملكت ايمانكم كتب الله عليكم واحل لكم ما وراء ذلكم ان تبتغوا باموالكم محصنين غير مسافحين فما استمتعتم به منهن فاتوهن اجورهن فريضة ولا جناح عليكم فيما تراضيتم به من بعد الفريضة ان الله كان عليما حكيما.
)سورة النساء ২২، ২৩، ২৪ ايات)
অর্থ: “যে সমস্ত নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছেন তোমরা তাদের বিবাহ করোনা, কিন্তু যা বিগত হয়েছে তাতো হয়েছেই। এটা অত্যন্ত নিলর্জ্জতা, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।” (সূরাতুন নিসা/২২)
তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের মেয়ে, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভাইয়ের মেয়ে (ভাতিজী), বোনের মেয়ে (ভাগিনী), তোমাদের সে মাতা যারা তোমাদের বুকের দুধ পান করিয়েছেন (দুধমাতা), তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা (শাশুরী), তোমরা যাদের সাথে একান্তবাস করেছ সে স্ত্রীদের মেয়ে যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে, যদি তাদের সাথে একান্তে বাস না করে থাক তবে তাদের মেয়েকে বিবাহ করতে গুণাহ নেই, তোমাদের ঔরসজাত ছেলেদের স্ত্রী এবং দু’বোনকে একত্রে বিবাহ করা। কিন্তু যা পূর্বে হয়েছে তাতো হয়েছেই। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরাতুন নিসা/২৩)
সে সব নারীও তোমাদের জন্য হারাম যারা অন্য কারো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। অবশ্য সে সব নারী এটার অন্তর্ভুক্ত নয় যারা (যুদ্ধে) তোমাদের হস্তগত হবে। এটা তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম। এদেরকে ছাড়া অন্যান্য নারীদেরকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এ শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, ব্যভিচারের জন্য নয়। তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ব্যবহার করবে তাকে তার নির্ধারিত হক (মোহর) প্রদান কর। তোমাদের গুণাহ হবেনা যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সন্তুষ্টির সাথে সমঝোতা করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সুবিজ্ঞা, প্রজ্ঞাময়।” (সূরাতুন নিসা/২৪)
একজন পুরুষের জন্য যে সকল মহিলাদের বিবাহ করা হারাম তাদের বিস্তারিত বিবরণ
২২নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বিমাতাকে পিতার ইন্তিকালের পর বিবাহ করা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে পিতার স্ত্রী দাদার স্ত্রী এবং উর্ধ্বতমদেরকেও উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এ কাজটিকে জাহিলিয়াতের কাজ, অশ্লীল-অশালীন, ঘৃণিত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২৩ ও ২৪ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে একজন পুরুষ কর্তৃক যে সমস্ত মহিলাদেরকে বিবাহ করা হারাম তার আলোচনা করা হয়েছে। এ মাহরামা বা বিবাহ নিষিদ্ধ মহিলারা তিনভাগে বিভক্ত। যথা-
(১) রক্ত সম্পর্কিত বা বংশসূত্রে হারাম মহিলা।
(২) দুধ পান সম্পর্কিত হারাম মহিলা। জানার বিষয় যে, বংশসূত্রে যা হারাম দুধ সম্পর্কের কারণেও তা হারাম।
(৩) বৈবাহিক সম্পর্কে কারণে এবং অবৈধ সম্পর্কের কারণে হারাম।
নি¤েœ এ আয়াত শরীফ তিনটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাব থেকে প্রদান করা হলো-
সূরা নিসার ২২নং আয়াত শরীফ
উনার তাফসীর
[১৩৫৫-১৩৬৪]
اخرج ابن ابى سعد عن محمد بن كعب القرظى قال كان الرجل اذا توفى عن امراته كان ابنه احق بها ان ينكحها ان شاء ان لم تكن امه اوينكحها من شاء فلما مات ابو قيس بن سلمة قام ابنه محصن فورث نكاح امراته ولم يورثها من المال شيئا فاتت النبى صلى الله عليه وسلم فذكرت ذلك له فقال رجعى لعل ينزل فيك شئ. ورواه ابن ابى حانم والفريانى والطبرانى عن عدى بن ثابت عن رجل من الانصار نحوه بلفظ توفى ابو قيس بن الاسلمة وكان من صالحى الانصار فخطب ابنه قيس امراته فقالت انما اعدك ولدا وانت من صالحى قومك فاتت النبى صلى الله عليه وسلم اخبرته فقال ارجعى الى بيتك فنزلت (ولاتنكحوا ما نكح اباؤكم) ما موصولة يعنى التى نكحها اباؤكم وانما ذكر مادون من لانه اريد به الصفة وقيل ما مصدرية بمعنى المفعول (من النساء) بيان مانكح على الوجهين وفائدة البيان مع ظهور ان منكوحات الاباء لاتكون الا من النساء التعميم (الا ما قد سلف) الظاهر ان الاستثناء منقطع ومعناه لكن ماقد سلف فانه لامؤاخدة عليه وقيل استثناء من المعنى. اللازم للنهى كانه قيل تعذبون بنكاح مانكح اباؤكم الا يما قد سلف (انه كان فاحشة) يعنى اقبح المعاصى عند الله لم يرخص فيه لامة من الامم (ومقتا) ممقوتا لله وعند ذى المروات كان العرب يقول لواد الرجل من امرأة ابيه مقيت وكان منهم شعث بن قيس وابو معيط عمروبن امية والمقت اشد البغض (وساء سبيلا) (২২) سبيل من يفعله عن البراء بن عازب رضى الله عنه قال مربى حالى ومعه لواء فقلت اين تذهب قال بعثنى النبى صلى الله عليه وسلم الى رجل تزوج بامراة ابيه اتيه برأسه رواه الترمذى وابو داؤد وفى رواية له وللنسانى وابن ماجة والدارمى فامرنى ان اضرب عنقه واخذ ماله وفى هذه الرواية قال مربى عمى بدل خالى.
(فائدة) المراد بالاباء الاصول بعموم المجاز اجماعا حتى يحرم منكوحة الجد وان علا سواء كان الجد من قبل الاب او من قبل الام والنكح قيل معناه الوطى حقيقة كذا قال ابن الجوزى فى التحقيق وبناء على هذا احتج بهذه الاية على ثبوت حرمة المصاهرة فى الزنى ومعنى الاية على هذا لاتطؤا موطوات الاباء سواء كان الوطى بنكاح صحيح اوفاسد اوملك يمين او سبهة او بزنى وفى القاموس التكاح الوطى والعقد له وهذه العبارة تفيد الاشتراك وفى الصحاح اصل النكاح العقد ثم استعير للجماع ومحال ان يكون فى الاصل للجماع ثم استعير للعقد لا اسماء الجماع كلها كنايات لاستقباحهم ذكره كاستقباحهم تعاطيه ومحال ان ستعير من لايقصد فحشا اسم مايستقبحونه بما يستحسنوه قال الله تعالى وانكحوا الايامى منكم الى غير ذلك من الايات والصحيح عندى ان المراد بالتكاح فى هذه الاية العقد دون الجماع للاجماع على ان منكوحة الاب التى وقع عليها عقد النكاح ولم بطأها يحرم على الابن لاخلاف فى ذلك وثبوت حرمة المصاهرة بالزنى مختلف فيه فحمل الاية على معنى يوجب حكما مجمعا عليه اولى من خلاف ذلك فان قيل اذا اريد بالنكاح فى الابة العقد فما وجه القول بتحريم موطوءة الاب بملك اليمين مع ان حرمتها ايضا مجمع عليه قلنا وجه ذلك دلالة النص فان المقصود من النكاح انما هو الوطى وهوسبب للجزنية فاذا كان النكاح الذى هو سبب للوطى الحلال موجبا لحرمة المصاهرة كان الوطى الحلال موجبالها بالطريق الاولى.
অর্থ: “হযরত ইবনে আবূ সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুহম্মদ বিন কা’ব কুরযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, (জাহিলিয়াত যুগের নিয়ম ছিল) কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার বড় ছেলে তার স্ত্রীর অধিকারী হতো। সে ইচ্ছা করলে তাকে বিবাহ করতো যদি সে তার আপন মা না হতো, আর ইচ্ছা করলে অপর পুরুষের কাছে বিয়ে দিয়ে দিত। আবূ কাইস ইবনে সালামা ইন্তিকাল করলে (জাহিলী যুগের রীতিনীতি অনুযায়ী) আবূ কাইসের পুত্র মিহছান তার পিতার স্ত্রীকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার অধিকারী হলো এবং সে আবূ কাইসের স্ত্রীকে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির কোন অংশই দিলোনা। তখন স্ত্রী লোকটি হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সব কথা জানালেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এখন তুমি চলে যাও, সম্ভবত তোমার ব্যাপারে আয়াত শরীফ নাযিল হবে।
হযরত ইবনে আবু হাতিম, ফারইয়ানী ও তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহিম হযরত আদী ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে এ ঘটনা জনৈক আনছারী ছাহাবী থেকে রিওয়ায়েত করেন। এর ভাষা এরূপ- হযরত আবূ কাইস ইবনে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন ইন্তিকাল করলেন তিনি ছিলেন আনছারগণ উনাদের মধ্যে একজন অত্যন্ত নেককার ব্যক্তি। তার পুত্র কাইস হযরত আবূ কাইসের ইন্তিকালের পর তার স্ত্রীকে বিবাহ করতে চাইল। তখন স্ত্রীলোকটি কায়েসকে বললেন, আমি তোমাকে আমার পুত্র মনে করি। আর তুমি তোমার গোত্রের নেককার ব্যক্তিও বটে। (সুতরাং তুমি আমাকে কিভাবে বিবাহ করবে?) এরপর স্ত্রী লোকটি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। তখন হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এখন তুমি তোমার ঘরে চলে যাও। (মহান আল্লাহ পাক উনার বিধানের অপেক্ষা করো।) তখন নি¤েœাক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হলো-
ولاتنكحوا مانكح ابائكم من النساء.
(আর মহিলাদের মধ্যে তোমাদের পিতা- পিতামহগণ যাদেরকে বিবাহ করেছেন, তোমরা তাদেরকে বিবাহ করোনা।) আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ما টি موصولة অর্থাৎ التى نكحها ابائكم তোমাদের পিতা- পিতামহগণ যাদেরকে বিবাহ করেছেন। যেহেতু وصقى অর্থ উদ্দেশ্য, তাই من এর স্থলে ما শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, ما এখানে مصدرى আর مصدر এখানে مفعول অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ পিতার বিবাহকৃত স্ত্রীকে তোমরা বিবাহ করবেনা।
পিতা-পিতামহ যাদের বিবাহ করবেন তারা নারী হবেন এটাই স্বাভাবিক। তারপরও من النساء দ্বারা ما এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে ব্যাপকতা বুঝানোর জন্য। الا ما قد سلف (কিন্তু যা পূর্বে গত হয়ে গেছে) বাহ্যত الا টি استثناء منقطع অর্থাৎ যা পূর্বে হয়ে গেছে তার শাস্তি হবেনা। কেউ কেউ বলেন, এটি نهى এর জন্য استثناء متصل যে অর্থ لازم ছিল, তার থেকে استثناء যেন এরূপ বলা হয়েছে যে, بنكاح مانكح اباؤكم الا بما قد سلف তোমাদের পিতা-পিতামহরা যাদেরকে বিবাহ করেছেন তাদের যদি তোমরা বিবাহ করো তবে তোমাদের শাস্তি হবে। কিন্তু যা পূর্বে সংঘটিত হয়েছে তার জন্য শাস্তি হবে না।
انه كان فاحشة (এটা অশ্লীল কাজ) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নিকৃষ্টতম পাপ। মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন পূর্ববর্তী উম্মতকে এর অনুমতি দেননি।
ومقتا (ও অতিশয় ঘৃণ্য) অর্থাৎ এমন কাজ মহান আল্লাহ পাক তায়ালা উনার নিকট ঘৃণ্য এবং সৎ লোকের নিকটও। مفت অর্থ অত্যন্ত ঘৃণ্য, জঘন্য। পিতার মৃত্যুর পর স্ত্রীর গর্ভে যদি কারো কোন সন্তান হতো তবে আরবরা তাকে مقيت মাকীত অত্যন্ত ঘৃণ্য বলতো। আশআছ ইবনে কায়েস ও আবূ মুঈত আমর ইবনে উমাইয়া مقيت মাকীত ছিলো। المقت এর অর্থ অতিশয় ঘৃণ্য।
وساء سبيلا (ও নিকৃষ্ট আচরণ) অর্থাৎ মন্দ পন্থা। হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমার মামা ঝা-া বা পতাকা নিয়ে আমার নিকট দিয়ে গমন করেছিলেন। আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন, জনৈক ব্যক্তি তার পিতার স্ত্রীকে বিবাহ করেছে তার শিরচ্ছেদ করার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন। এ হাদীছ শরীফটি তিরমিযী ও আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বর্ণনা করেছেন। আর আবূ দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও দারিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় এ শব্দগুলোও এসেছে যে, তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তার শিরচ্ছেদ করার জন্য এবং তার মাল-সম্পদ নেয়ার জন্য। এক বর্ণনায় خال (মামা) এর স্থলে عم চাচা উল্লেখ আছে।
ফায়দা: উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম এ ব্যাপারে একমত যে, اباء অর্থ এখানে عموم مجاز ব্যপক রূপক হিসেবে। সকল উৎস বা মূল দাদার দিকের হোক বা নানার দিকের হোক। কাজেই পৌত্রের, দৌহিত্রের জন্য এদের বিবাহিতা স্ত্রীকে বিবাহ করা হারাম। কারো কারো মতে, نكاح (বিবাহ)-এর প্রকৃত অর্থ ওতী বা স্বামী স্ত্রীর একান্ত সাক্ষাত। আর এখানে এ অর্থই উদ্দেশ্য। হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘তাহক্বীক্ব’ গ্রন্থে এটাই লিখেছেন। আর এ আয়াত শরীফ দ্বারা ব্যভিচারকৃত নারীর কন্যা ও মাতাকে বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত করেছেন। এ অবস্থায় আয়াত শরীফ উনার অর্থ হবে এরূপ যে নারীদের সাথে তোমাদের পিতা, পিতাসহ, মাতাসহ প্রমুখ একান্ত সাক্ষাত করেছেন তাদেরকে তোমরা বিবাহ করবে না। বৈধ বিবাহের পর একান্ত সাক্ষাত করুক বা ফাসিক বিবাহের পর কিংবা মালিকানা অধিকারের দরূণ অথবা স্ত্রী হওয়ার সন্দেহবশতঃ অথবা ব্যভিচার হিসেবে।
কামূস নামক অভিধানে نكاح অর্থ লেখা হয়েছে وطى বা একান্ত সাক্ষাত এবং عقد বা বিবাহ বন্ধন। এতে বুঝা যায় যে, نكاح শব্দটি দ্ব্যর্থবোধক। ‘ছিহাহ’ অভিধানে জাওহারী লিখেছেন, نكاح শব্দের আসল ও প্রকৃত অর্থ বিবাহ বন্ধন এবং রূপকভাবে وطى বা একান্ত সাক্ষাত। এর বিপরিত সম্ভব নয়। কেননা, একান্ত সাক্ষাতকে আরবরা যেমন লজ্জাজনক মনে করতো তেমনি তার প্রকাশ্য উচ্চারণও খারাপ মনে করতো। তাই যে সব শব্দ পরোক্ষভাবে একান্ত সাক্ষাত অর্থ প্রকাশ করতো তারা আকার ইঙ্গিতে সে সব শব্দ ব্যবহার করতো। এরূপ অবস্থায় এটা অসম্ভব যে, অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে সেই অর্থ গ্রহণ করা হবে যা অশ্লীল নয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, وانكحو الايامى منكم প্রভৃতি।
গ্রন্থকার বলেন, আমার মতে বিশুদ্ধ কথা এই যে, এ আয়াত শরীফ উনার মধ্যে نكاح অর্থ عقد ‘আকদ’ বা বিবাহ বন্ধন, جماع ‘জিমা’ বা একান্ত সাক্ষাত নয়। কেননা, সর্বসম্মতভাবে পিতার বিবাহিতা স্ত্রী পুত্রের জন্য হারাম। পিতা তার সাথে একান্ত সাক্ষাত করে থাকুক বা না করে থাকুক। আর পিতার ব্যভিচারকৃত নারীর মাতা ও কন্যাকে বিবাহ করা হারাম হওয়া সর্বসম্মত নয় বরং মতভেদজনক (হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে হারাম নয়।) তাই আয়াত শরীফ থেকে সর্বসম্মত অর্থ গ্রহণ করাই উত্তম।
সুওয়াল ঃ যদি আয়াত শরীফ উনার মধ্যে نكاح অর্থ বিবাহ বন্ধনই হয় তাহলে যে নারীর সাথে পিতা মালিকানার দরুণ একান্ত সাক্ষাত করেছেন তাকে বিবাহ করা পুত্রের জন্য সর্বসম্মতভাবে হারাম হওয়ার কারণ কি? সে তো পিতার বিবাহিতা নয়?
জাওয়াব ঃ এই হারাম হওয়া دلالة النص এর কারণে। কেননা, বিবাহের মূল লক্ষ্য একান্ত সাক্ষাত। আর একান্ত সাক্ষাতই হচ্ছে সন্তান হওয়ার কারণ। সুতরাং যে বিবাহ হালাল একান্ত সাক্ষাতের কারণ হয়, সে বিবাহ যখন حرمت مصاهرة বা বিবাহ হারামের কারণ হয় তখন হালাল একান্ত সাক্ষাত তো আরো উত্তমরূপেই বিবাহ হারামের কারণ হবে।”
مسئلة الزنى لايوجب حرمة المصاهرة عند الشافعى ومالك وقال ابو حنيفة واحمد يوجب وهى رواية عن مالك وزاد احمد عليه فقال اذا اتى رجل امرأة فى دبرها اواتى رجلا فى دبره حرمت على الواطى ام المفعول به وبنته رجلا كان او امرأة وقد ذكرنا ان الاستدلال على حرمة المصاهرة بهذه الاية ضعيف فالاولى الاستدلال عليه بالقياس على الوطى الحلال لان علة التحريم كون الوطى سببا للولد ووصف الحل ملعاة شرعا بان وطى الامة المشتركة وجارية الابن والمكاتية والمظاهر منها وامة المجوسية والحائض والنفساء ووطى المحرم والصائم فان كله حرام وبثبت به حرمة المصاهرة اجماع فعلم ان المعتبر فى الاصل هو ذات الوطى من غير نظر لكونه حلالا اوحراما قال ابن همام قدروى اصحابنا فيه احاديث منها قال رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى زنيت بامراة فى الجاهلية افانكح ابنتها قال لا ارى ذلك ولايصلح ان تنكح امراة تطلع من ابنتها على ما تطلع عليه منها وهو مرسل منقطع وفيه ابو بكربن عبد الرحمن بن ابنة حكيم وم طريق ابن وهب عن ابى ايوب عن ابن جريح ان النبى صلى الله عليه وسلم قال فى الذى يتزوج المرءة فيغمز لايزيد على ذلك لايتزوج ابنتها وهومرسل منقطع الا ان هذا ................ عندنا اذا كانت الرجال ثقات انتهى كلامه احتج الشافعى بحديثين احدهما حديث عائشة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الحرام لايفسد الحلال رواه الدار قطنى وفيه عثمان بن عبد الرحمن الوقاضى قال يحيى بن معين ليس بشئ كان يكدب ضعفه ابن المدينى جدا وقال البخارى والنسائى والرازى وابو داؤد ليس بشئ وقال الدار قطنى متروك وقال ابن حبان كان يروى عن الثقات الموضوعات لايجوز الاحتجاج به ثانيهما حديث ابن عمر نحو حديث عائشة رواه الدار قطنى وابن ماجة وفيه عبد الله ابن عمر اخو عبيد الله قال ابن حبان فحش خطاؤه فاستحق الترك وفيه اسحاق بن محمد العروى قال يحبى لبس بشئ كذاب وقال البخارى تركوه.
مسئلة ابن المزتية يحرم عليه منكوحة ابيه الزانى كما يحرم بنت المزنية على ابيها الزانى لانهما ابنه وبنته حقيقة لغة والخطاب انما هو باللغة العربية مالم يثبت نقل كلفظ الصلوة ونحوه فيصير منقولا شرعيا وكذا اذا لا عن رجل امراته بنفى نسب ابنه وبنته فنفى القاضى نسبهما من الاب والحقهما بالام لايجور لابن الملاعنة ان ينكح منكوحة الملاعن ولا للملاعن ان ينكح ابنة الملاعنة لانه يحتمل ان يكذب الملاعن نفسه ويدعيها فيثبت نسبهما منه. مسئلة مس الرجل امرأة والمرأة رجلا بشهوة له حكم الوطى عند ابى حنيفة فى وجوب حرمة المصاهرة وكذا نظره الى فرجها الداخل ونظرها الى ذكره بشهوة يوجب حرمة المصاهرة عنده ولومس فانزل او نظر الى فرجها فانزل او اولج مرأة فى دبرها فانزل قيل يوجب حرمة المصاهرة عنده والصحيح انه لايوجب الحرمة عنده ايضا وعند الائمة الثلاثة المس والنظر لايوجبان الحرمة وجه قول ابى حنيفة ان المس والنظر سببان داعيان الى الوطى فيقامان مقامه فى موضع الاحتياط واذا انزل لم يبق داعيا الى الوطى والمس بشهوة ان ينتشر الالة اويزداد انتشارا هو الصحيح.
(التفسير المظهرى ২ ج৩৫، ৫৪، ৫৫، ابو داؤد شريف. بذل المجهود، عون المعبود، نساثى شريف سنن الكبرى للنسائى، ابن ماحمة. سنن الدارمى. قاموس، صحاح.)
অর্থ: “মাসয়ালা : হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে ব্যভিচার দ্বারা حرمت مصاهرت হয়না। অর্থাৎ (ব্যভিচারকৃত নারীর মাতা বা কন্যাকে বিবাহ করা হারাম হয় না।) হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে ব্যভিচার বিবাহ হারাম হওয়ার কারণ। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারও একটি উক্তি এরূপ বর্ণিত হয়েছে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এরূপ বলেছেন যে, কোন ব্যক্তি যদি কোন নারী বা পুরুষের সাথে লাওয়াতাতে লিপ্ত হয় তবে ঐ লাওয়াতাতকৃত পুরুষ ও নারীর মাতা ও কন্যার সাথে ঐ লাওয়াতাতকারীর বিবাহ পারে না। আমরা পূর্বেই বলেছি যে, বিবাহ হারাম সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে এই আয়াত শরীফ দুর্বল দলীল। সবল দলীল হচ্ছে, হালাল বা বৈধ একান্ত সাক্ষাতের উপর ব্যভিচারকে ক্বিয়াস করা। হারাম হওয়ার কারণ হলো, একান্ত সাক্ষাত সন্তান জন্মের কারণ হয়ে থাকে। হালাল ও হারাম একান্ত সাক্ষাতের বাধ্যবাধকতা এখানে নেই। যেমন, যৌথ মালিকানার দাসী, পুত্রের দাসী, মুকাতাব দাসী, যিহারকৃত নারী, মাজুসী দাসী, স্বাভাবিক মাজুরতা এমন নারী, সন্তান হওয়ার কারণে মাজুরতা এমন নারীর সাথে কিংবা ইহরাম ও রোযা অবস্থায় একান্ত সাক্ষাত করা হারাম। উপরোক্ত নারীদের সাথে একান্ত সাক্ষাত হারাম বা নিষিদ্ধ। কিন্তু সর্বসম্মতভাবেই এগুলো দ্বারা বিবাহ হারাম সাব্যস্ত হয়। এতে প্রতিয়মান হয় যে, আসল কারণ وطى ওতী বা একান্ত সাক্ষাত-হারাম না হালাল তা বিবেচ্য নয়।
হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমাদের আলিম সমাজ এর সমর্থনে কতিপয় হাদীছ শরীফ উনার উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে একটি এই যে, একদা এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জাহিলী যুগে আমি একটি নারীর সাথে ব্যভিচার করেছিলাম। এখন তার কন্যাকে কি আমি বিবাহ করতে পারি? তিনি বললেন,
لا ارى ذلك ولايصلح ان تنكح امراة تطلع من ابنتها على ما تطلع عليه منها.
(আমি তা জায়িয বা সঙ্গত মনে করিনা। যে নারীর সাথে তুমি পরিচিত হয়েছো তার কন্যার সাথেও তোমার পরিচিত হওয়া সমীচীন নয়।) বর্ণনাটি মুরসাল মুনকাতি। এ সনদের একজন রাবী হচ্ছেন হযরত আবূ বকর ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে বিনতে হাকিম।
হযরত ইবনে ওয়াহহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবূ আইয়ূব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সূত্রে ইবনে জুরাইহ থেকে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন নারীকে স্পর্শ করে এর বেশি কিছু করে না তার কন্যাকে সে বিবাহ করতে পারবেনা। এ বর্ণনাটিও মুরসাল মুনকাতি। কিন্তু আমাদের মতে, মুরসাল মুনকাতি হাদীছ শরীফ গ্রহণ করায় কোন ক্ষতি নেই, যদি এর সকল রাবী নির্ভরযোগ্য হয়। হযরত ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথা এখানেই শেষ।
হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতের স্বপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ দু’টি হাদীছ শরীফ তিনি বর্ণনা করেন। একটি হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হাদীছ শরীফ। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন- الحرام لا تفسد الحلال
(হারাম হালালকে নষ্ট করে না)।
দারাকুতনী এ হাদীছ শরীফটি বর্ণনা করেছেন। এ সনদে একজন রাবী হচ্ছে হযরত উছমান ইবনে আব্দুর রহমান ওয়াক্কাসী। হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন ও রাবীকে বাজে বলে মন্তব্য করে বলেন, তিনি মিথ্যা কথা বলতেন। হযরত ইবনে মাদীনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে অত্যন্ত দুর্বল সাব্যস্ত করেন। বুখারী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, রাযী ও আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমও তাকে বাজে বলেছেন। দারাকুতনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সে প্রত্যাখ্যাত। হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সে ছিকাহ রাবীদের বরাত দিয়ে জাল হাদীছ শরীফ বর্ণনা করতো। তার বর্ণনাকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা ঠিকনয়। দ্বিতীয় হাদীছ শরীফ হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার মতই হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। এ হাদীছ শরীফ দারাকুতনী ও ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন। এর সনদে উবায়দুল্লাহর ভ্রাতা আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আছেন। হযরত হিব্বান রহমতুল্লাহি উনার সম্পর্কে বলেন, উনার ভ্রান্তি মারাত্মক। তাই সে পরিত্যাজ্য। আরেকজন রাবী হচ্ছেন ইসহাক ইবনে মুহম্মদ আরূবী। ইয়াহইয়া তাকে অপদার্থ ডাহা মিথ্যুক বলে অভিহিত করেছেন। হযরত বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মুহাদ্দিসগণ তাকে ত্যাগ করেছেন।
মাসয়ালা : ব্যভিচারকৃত নারীর পুত্রের জন্য ব্যভিচারকারী পিতার বিবাহিতা স্ত্রী হারাম। অনুরূপভাবে ব্যভিচারকৃত নারীর কন্যা তার ব্যভিচারকারী পিতার জন্য হারাম। কেননা, প্রথম অবস্থায় সে ব্যভিচারকারীর পুত্র ও দ্বিতীয় অবস্থায় সে ব্যভিচারকারীর কন্যা। আরবী ভাষায় তাদের পুত্র-কন্যাই বলা হয় (যদিও বিবাহগত নয়)। আর যে পর্যন্ত অভিধানের বিপরীত কোন শরীয়তী নির্দেশ না থাকে তখন পর্যন্ত আভিধানিক অর্থই ধর্তব্য হবে। হ্যাঁ, শরীয়তী নির্দেশ থাকলে শরীয়তী অর্থই ধর্তব্য হবে। যেমন সালাত (صلوة) প্রভৃতি শব্দ। (শরীয়তে সালাত বলা হয় নির্দিষ্ট প্রকৃতির ইবাদতকে এবং সালাতেরা এ অর্থই শরীয়ত গ্রাহ্য।) আর যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে কসম দিয়ে বলে যে, তোমার পুত্র আমার ঔরসজাত পুত্র নয় এবং কাযীও তার এ দাবী স্বীকার করে নেন এবং তার সাথে সে সন্তানের রক্ত সম্পর্ক বাতিল করে দেন এমতাবস্থায় তার বিবাহিতা স্ত্রীকে ঐ সন্তানের জন্য বিবাহ করা বৈধ নয় এবং তার পক্ষে ঐ নারীর কন্যাকে বিবাহ করা জায়িয বা দুরস্ত নয়। কেননা, হতে পারে সে তার দাবীকে স্বয়ং নাকচ করে দেবে এবং তখন পূর্বের দাবী ও হাকিমের ফায়সালা ভুল সাব্যস্ত হয়ে তাদের মধ্যে রক্ত সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
মাসয়ালা : কোন পুরুষ যদি কোন নারীকে এবং কোন নারী যদি কোন পুরুষকে শাহওয়াতের সাথে স্পর্শ করে তবে এই স্পর্শই একান্ত সাক্ষাতের সমতুল্য। হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, এতে বিবাহ হারাম সাব্যস্ত হয়। অনুরূপভাবে উনার মতে পুরুষ যদি নারীর আর নারী যদি পুরুষের শরমগাহ শাহওয়াতের সাথে দর্শন করে তবে তাতেও বিবাহ হারাম হওয়া সাব্যস্ত হয়।
পুরুষ যদি নারীকে স্পর্শ করে এবং তাতে মনি নির্গত হয় কিংবা শরমগাহ দর্শনে মনি নির্গত হয় কিংবা কোন নারীর গুহ্যদ্বারে উপগত হয় এবং তাতে মনি নির্গত হয় তবে এক বর্ণনা অনুযায়ী হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতেও তাতে বিবাহ হারাম হওয়া সাব্যস্ত হবে। কিন্তু বিশুদ্ধ মত এই যে, তাতে বিবাহ হারাম হওয়া সাব্যস্ত হয়না। অবশিষ্ট তিন ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের মতে স্পর্শ ও দর্শন দ্বারা বিবাহ হারাম হওয়া সাব্যস্ত হয়না। হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি উনার দলীল হচ্ছে স্পর্শ ও দর্শন একান্ত সাক্ষাতকে সক্রিয় করে। সুতরাং সাবধানতার লক্ষ্যে এদু’টি কাজকে একান্ত সাক্ষাত মনে করা উচিত। কিন্তু মনি বের হওয়ার পর একান্ত সাক্ষাতের বাসনা নিঃশেষ হয়ে যায়। এজন্য মনি বের হওয়ার পর বিবাহ হারাম হওয়া প্রতিপন্ন হবেনা। আর শাহওয়াতের সাথে স্পর্শ করার অর্থ, শরমগাহের বিস্তৃতি ঘটা কিংবা বেশি বিস্তৃত হওয়া।”
(আত তাফসীরুল মাযহারী ২য় জি ৫৩, ৫৪, ৫৫ পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মা’বুদ, নাসাঈ শরীফ, সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, ইবুন মাজাহ শরীফ, সুনানুদ দারিমী, কামূছ, ছিহাহ)
সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ সাইয়্যিদ মুহম্মদ তীতুমীর, সাতক্ষীরা মুহম্মদ নুরুল্লাহ্ খন্দকার, সিরাজগঞ্জ। মুহম্মদ ফয়জুল্লাহ্, হাতিবান্দা, লালমনিরহাট। সুওয়ালঃ আমরা আগে আলিমগণের মুখে শুনতাম যে, টিভি দেখা জায়িয নেই। কিন্তু বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি অনেক মাওলানা ছাহেবরা টিভিতে অনুষ্ঠান করছে। বিশেষ করে মানুষ যাদেরকে বড় মাওলানা মনে করে তারাই সেটা করছে। তাদের সে অনুষ্ঠানগুলো এ.টি.এন টিভি, এন.টি.ভি চ্যানেলসহ আরো অনেক চ্যানেলে প্রায়ই দেখানো হয় এবং তাতে ইসলামের অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে বলে অনেকেই তা দেখে থাকে। এছাড়া মাসিক মদীনা মে/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার ২১নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “টেলিভিশন একটি যন্ত্রমাত্র। খোলা চোখে যা কিছু দেখা জায়িয বা মুবাহ টেলিভিশনের পর্দাতেও সেগুলি দেখা জায়িয বা মুবাহ। শিক্ষণীয় কিছু দেখলে বা শুনলে পূণ্য হওয়ারই কথা। অপর দিকে পাপযুক্ত যেসব দৃশ্য দেখানো হয় সেগুলি দেখা ও শোনাতে অবশ্যই গোনাহ্ হবে।” অনুরূপ মাসিক রাহমানী পয়গাম জুলাই/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যার এক জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে, “টিভি দেখার শরয়ী মূলনীতি হলো, যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী (টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদির মাধ্যম ছাড়া) সরাসরি দেখা ও শুনা জায়িয সেগুলো টিভির পর্দা, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা বা শুনা জায়িয। আর যে সকল বস্তু বা বিষয়াবলী সরাসরি দেখা ও শুনা জায়িয নেই সেগুলো টিভি, রেডিও ইত্যাদিতেও দেখা-শুনা জায়িয নেই।” এখন আমার জানার যে বিষয় তাহলো- (১) মাসিক মদীনার পত্রিকার প্রশ্নের উত্তর ও মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাব শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা? (২) ছবি কাকে বলে ও ছবির সংজ্ঞা কি? (৩) শরীয়তে টি.ভি দেখা জায়িয কিনা? (৪) নাজায়িয পদ্ধতিতে ইল্মে দ্বীন শিক্ষা করা অর্থাৎ ইল্মে দ্বীন শিক্ষার জন্য টিভি দেখা, শোনা ও টিভি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত কিনা? (৫) নাজায়িয হলে যে সকল মাওলানা ছাহেব অনুষ্ঠান করে ও দেখে তাদের সম্পর্কে শরীয়তের ফতওয়া কি? এদেরকে আলিম বলা যাবে কিনা? এদের পিছনে নামায পড়া যাবে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল সহকারে জাওয়াব দিলে খুবই উপকৃত ও খুশী হব। জাওয়াবঃ সুওয়ালে বর্ণিত সুওয়ালকারীর পাঁচটি সুওয়ালের জাওয়াবই ধারাবাহিকভাবে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ্। (১) মাসিক মদীনা পত্রিকার প্রশ্নের উত্তর ও মাসিক রাহমানী পয়গাম পত্রিকার জিজ্ঞাসার জবাব শরীয়ত সম্মত হয়েছে কিনা? এর জবাবে বলতে হয়, এদের উত্তর ও জবাব শরীয়তসম্মত তো হয়নি বরং গোমরাহীমূলক ও কুফরী হয়েছে। কারণ, শরীয়তে হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম বলা উভয়ই কুফরী। শরীয়তে ছবি আঁকা ও তোলা সম্পূর্ণই হারাম। হালাল জানা কুফরী। আর টেলিভিশন এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে ছবি প্রদর্শণ করা হয়। অর্থাৎ ছবি তুলে টেলিভিশনের পর্দার মাধ্যমে ছবিগুলো দর্শককে দেখানো হয়। কাজেই খালি চোখে যেটা দেখা জায়িয টেলিভিশনে সেটা দেখা জায়িয নেই। যেমন, একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষকে খালি চোখে দেখা জায়িয এবং একজন পুরুষের জন্য খালি চোখে ঐ সকল মহিলাকেও দেখা জায়িয যারা তার মাহ্রাম অর্থাৎ যাদের সাথে তার চিরতরে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম। এছাড়া অন্য কোন বেগানা মহিলাকে দেখা তার জন্য জায়িয নেই। আবার একজন মহিলা আরেকজন মহিলাকে খালি চোখে দেখা জায়িয এবং একজন মহিলার জন্য খালি চোখে ঐ সকল পুরুষকেও দেখা জায়িয যাদের সাথে তার বিবাহ্ বন্ধন চিরতরের জন্য হারাম। এছাড়া অন্য কোন বেগানা পুরুষকে দেখা তার জন্য জায়িয নেই। কিন্তু পুরুষ হোক অথবা মহিলা হোক তাকে যখন টিভিতে দেখানো হবে তখন তাকে দেখা জায়িয নেই। কারণ, প্রথমতঃ তার ছবি তুলে ছবি দেখানো হচ্ছে যা হারাম ও কবীরা গুণাহ্। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
ان من اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يشبهون بخلق الله تعالى.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর আকৃতি তৈরি করে।” (মুসলিম ২য় জিঃ ২০০ পৃষ্ঠা) এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে,
قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر.
অর্থঃ- “আমাদের মাশায়িখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণির ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম। এটা কবীরাহ্ গুনাহ্।” (শরহে মিরকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৯ পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ, ১০৫ পৃষ্ঠা) দ্বিতীয়তঃ হারাম কাজে সহযোগিতা করা হচ্ছে এটাও হারাম ও কবীরা গুণাহ্। এ সম্পর্কে কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
تعاونوا على البر والتقوى ولاتعاونوا على الاثم والعدوان.
অর্থঃ “তোমরা নেকী এবং পরহিযগারীর মধ্যে পরস্পর পরষ্পরকে সাহায্য কর। পাপ এবং শত্রুতার মধ্যে পরষ্পর পরষ্পরকে সাহায্য করো না।” (সূরা মায়িদা/২) শুধু তাই নয়। বরং কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা বা সমর্থনও করা যাবে না। তাই আল্লাহ্ পাকের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
اذا عملت الخطيئة فى الارض من شهدها فكرهها كان كمن غاب عنها ومن غاب فرضيها كان كمن شهدها.
অর্থঃ- “পৃথিবীতে যখন কোন স্থানে অন্যায় বা পাপ সংঘঠিত হয়, তখন যে ব্যক্তি ঐস্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও ওটাকে ঘৃণা করে সে যেন সেস্থানে উপস্থিত ছিল না। আর যে ব্যক্তি অনপুস্থিত থেকেও পাপের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে যেন তথায় উপস্থিত ছিল।” (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ) তৃতীয়তঃ চরম বেপর্দা হচ্ছে যা শক্ত হারাম ও শক্ত কবীরা গুণাহ্র অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ টিভিতে বেগানা পুরুষ বেগানা মহিলাকে এবং বেগানা মহিলা বেগানা পুরুষকে ঢালাওভাবে দেখে বেপর্দা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে পর্দা করার জন্য নির্দেশ করেছেন এবং বেপর্দা হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون وقل للمؤمنت يغضصن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولايبدين زيتتهن.
অর্থঃ- “হে রসূল! (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি মু’মিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তারা যা করে সে সম্পর্কে খবর রাখেন। এবং আপনি মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে এবং তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে। (সূরা নূর/৩০, ৩১) হাদীছ শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لاتتبع النظرة التظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থঃ- “দৃষ্টিকে অনুসরণ করনা। প্রথম দৃষ্টি (যা আনিচ্ছা সত্বে পতিত হয়) তা ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না। অর্থাৎ পরবর্তী প্রতি দৃষ্টিতে একটি করে কবীরা গুনাহ লিখা হবে।” (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, দারিমী, মিশকাত, মিরকাত) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
العسينان زناهما النظر الاذنان زناهما الاستماع اللسان زناه الكلام اليدان زناهما البطش والرجلان زناهما الخطى والقلب يهوى ويتمنى يصدق ذالك الفرج يكذبه.
অর্থঃ- “চোখের যিনা দেখা, কানের যিনা শ্রবণ করা, মুখের যিনা কথা বলা, হাতের যিনা স্পর্শ করা, পায়ের যিনা ধাবিত হওয়া, অন্তর সেটাকে চায় আর লজ্জাস্থান তা সত্য-মিথ্যায় (বাস্তবে) পরিণত করে।” (বুখারী শরীফ) বেপর্দা হওয়া এতই শক্ত গুণাহ্ যে এ প্রসঙ্গে অন্য হাদীছ শরীফে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
الديوث لايدخل الجنة.
অর্থঃ- “দাইয়্যূছ বেহেশ্তে প্রবেশ করবেনা।” উল্লেখ্য, দাইয়্যূছ হলো ঐ ব্যক্তি, ‘যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধীনস্থদের পর্দা করায়না।’ তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে যে, খালি চোখে যা দেখা জায়িয রয়েছে টিভিতেও তা দেখা জায়িয রয়েছে? অতএব, উপরোক্ত কুরআন-সুন্নাহ্র আলোচনা দ্বারা এটাই স্পষ্টভাবে ছাবিত বা প্রমাণিত হলো যে, খালি চোখে যা দেখা জায়িয রয়েছে তা টিভিতে দেখা কস্মিনকালেও জায়িয নেই। সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। একে জায়িয বলা কাট্টা কুফরী। কাজেই তাদের এ কথা কুফরী হয়েছে। কারণ, তারা হারামকে হালাল করেছে যা কুফরী। শরীয়তের মাসয়ালা বা ফতওয়া হচ্ছে কেউ কুফরী করলে সে কাফির হয়। আর কোন মুসলমান কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। মুরতাদের হুকুম হলো, তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যায়। বিয়ে করে থাকলে স্ত্রী তালাক হয়ে যায়, হজ্ব করে থাকলে হজ্ব বাতিল হয়ে যায়, তার ওয়ারিছী সত্ত্ব বাতিল হয়ে যায় এবং সে মারা গেলে তার জানাযার নামায পড়াও হারাম হয়ে যায়। কেউ যদি মুরতাদের জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় তার উপরও মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। কোন মুরতাদ মারা গেলে তাকে কোন মুসলমানের কবরস্থানে দাফন করাও জায়িয নেই। শরীয়তের হুকুম হচ্ছে মৃত মুরতাদকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তে পুঁতে রাখতে হবে। এখন তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো, খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা। অন্যথায় তাদের উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। (চলবে) মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা। সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না? জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খেলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ। অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭) উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- (১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য? (৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- (ধারাবাহিক)
ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খণ্ডনমূলক জবাব- (৩)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো-
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২
মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের “মাল্ফূযাত”সহ আরো কিছু কিতাবে লেখা আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা, যা সকল দ্বীনী আন্দোলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত, যার থেকে ভাল তরীক্বা আর হতে পারেনা। অনুরূপ তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৫, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন পৃষ্ঠা-৪৯ লেখক- ওবায়দুল হক, তাবলীগ জামায়াতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা-৫৬, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা-২৯, লেখক- মৌলবী মুঃ ইব্রাহীম, কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে। এর জবাবে বলতে হয় যে, তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত কথা সম্পূর্ণই মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর। উল্লেখ্য যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে যে দ্বীনী তা’লীম দেয়া হয়, তা পরিপূর্ণ দ্বীনী তা’লীম হতে নিতান্তই কম এবং সেটাকেই তারা পরিপূর্ণ ও যথেষ্ট মনে করে থাকে। অথচ দ্বীন ইসলাম ও তার শিক্ষা অত্যন্ত ব্যাপক ও পূর্ণাঙ্গ। যেমন, পরিপূর্ণ দ্বীনী শিক্ষার বিষয় উল্লেখপূর্বক আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান,
لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم يتلوا عليهم ايته ويزكيهم ويعلمهم الكتب والحكمة وان كانوا من قبل لفى ضلل مبين.
অর্থঃ- “মু’মিনদের প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর ইহ্সান, তাদের মধ্য থেকে তাদের জন্য একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি কিতাব শিক্ষা দিবেন, হিকমত শিক্ষা দিবেন ও তাদেরকে তায্কিয়া (পরিশুদ্ধ) করবেন। যদিও তারা পূর্বে হিদায়েতপ্রাপ্ত ছিলনা।” (সূরা আলে ইমরান/১৬৪, তাফসীরে জালালাইন, কামালাইন, বায়যাবী, কুরতুবী, তাবারী, রুহুল মায়ানী, রহুল বয়ান, ইবনে কাছীর, আবী সউদ, মাযহারী, মাআরিফুল কুরআন, দুররে মানছুর ) এ আয়াত শরীফে, আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনানো কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ইল্মে জাহির বা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও হুনরের অন্তর্ভুক্ত। যা দ্বীনের যাবতীয় হুকুম-আহ্কাম পালন করার জন্য ও দৈনন্দিন জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজন। আর (তায্কিয়া) পরিশুদ্ধ ও সংশোধন করার দ্বারা ইল্মে বাতিন বা ইল্মে তাছাউফ উদ্দেশ্য। যার মাধ্যমে মানুষের ক্বাল্ব বা আভ্যন্তরীণ দিক শুদ্ধ হয়। অনুরূপ সূরা বাক্বারার ২৯ ও ১৫১নং আয়াত শরীফে এবং সূরা জুমুয়ার ২নং আয়াত শরীফে উপরোক্ত আয়াত শরীফের সমার্থবোধক আরো তিনখানা আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে। (তাফসীরে মায্হারী, রুহুল বয়ান, কবীর, খাযিন, বাগবী, কুরতুবী, ইবনে কাছীর, দুররে মানছূর, আবী সউদ, রুহুল মায়ানী, তাবারী, মায়ারিফুল কুরআন ইত্যাদি) মূলতঃ এ ক্বাল্ব বা অন্তর পরিশুদ্ধ করার শিক্ষাই হচ্ছে মূল শিক্ষা। কেননা ক্বাল্ব শুদ্ধ না হলে মানুষের কোন ইবাদত-বন্দেগী, ধন-সম্পদ, প্রতিপত্তি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কবুলযোগ্য নয়। ফলে সে পরকালে কোন ফায়দা বা উপকারও হাছিল করতে পারবেনা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
يوم لاينفع مال ولا بنون الا من اتى الله بقلب سليم.
অর্থঃ- “ক্বিয়ামতের দিন কেউ তার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা উপকার বা ফায়দা হাছিল করতে পারবেনা। একমাত্র ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে প্রশান্ত বা পরিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে উপস্থিত হবে।” (সূরা শুয়ারা/৮৮, ৮৯) আর অন্তর বা ক্বাল্ব প্রশান্ত ও পরিশুদ্ধ হয় একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরের মাধ্যমে। আল্লাহ্ পাক বলেন,
الا بذكر الله تطمئن القلوب.
অর্থঃ- “সাবধান! আল্লাহ্ তায়ালার যিকিরের দ্বারাই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা রা’দ/২৮) হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
ان فى الجسد مضغة اذا صلحت صلح الجسد كله واذا فسدت فسد الجسد كله الا وهى القلب.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই (মানুষের) শরীরে এক টুকরা গোশ্ত রয়েছে। সেটা যদি পরিশুদ্ধ হয়, তবে গোটা শরীরই পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। আর সেটা যদি বরবাদ হয়ে যায়, তবে গোটা শরীরই বরবাদ হয়ে যায়। সাবধান! সেই গোশ্তের টুকরাটির নাম হচ্ছে ক্বাল্ব বা অন্তর।” (বুখারী শরীফ) অর্থাৎ ক্বাল্ব শুদ্ধ হলে মানুষের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব, সীরত-ছূরত সবকিছু শুদ্ধ হয়ে যায়। আর ক্বাল্ব অশুদ্ধ বা বরবাদ হলে সবকিছুই বরবাদ হয়ে যায়। মূলতঃ তখন বান্দার কোন কিছুই আল্লাহ্ পাক কবুল করেননা। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, অনন্য, শ্রেষ্ঠ, সম্মানিত ও প্রকৃত কামিয়াব তারাই, যাঁরা ইল্মে ফিক্বাহ্র সাথে সাথে ইল্মে তাছাউফ চর্চা করার মাধ্যমে নিজেদের ক্বাল্ব বা অন্তর ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধ করেছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে ক্বাল্ব শুদ্ধকরণ ইল্ম বা ইল্মে তাছাউফ ব্যতীত শুধুমাত্র যৎসামান্য ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করে কিভাবে দাবী করতে পারে যে, “প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা, যা সকল দ্বীনী আন্দোলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত, যার থেকে ভাল তরীক্বা আর হতে পারেনা।” মূলতঃ তাদের উপরোক্ত দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত ও কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ। অপর পক্ষে শুদ্ধ ও সঠিক দাবী হলো তাদের, যারা উপরোল্লিখিত দু’প্রকার ইল্ম তথা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফের যথার্থ ও পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জন পূর্বক দ্বীনের তা’লীম-তাল্ক্বীন ও তাবলীগের কাজে নিয়োজিত। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
العلم علمان علم فى القلب فذالك العلم النافع علم على اللسان فذالك حجة الله عزوجل على ابن ادم.
অর্থঃ- “ইল্ম দু’প্রকার, একটি হচ্ছে- ক্বাল্বী ইল্ম (ইল্মে তাছাউফ)- যা উপকারী ইল্ম। অপরটি হচ্ছে- যবানী ইল্ম (ইল্মে ফিক্বাহ)- যা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে বান্দার প্রতি দলীল স্বরূপ।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত) এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় মালিকী মায্হাবের ইমাম, ইমামুদ্ দাহ্র, ফখরুদ্দীন, শায়খুল মাশায়িখ, রাহ্নুমায়ে শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত, ইমামুল আইম্মা, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা করলো না, সে ব্যক্তি ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। আর যে তাছাউফ করে অর্থাৎ মা’রিফত চর্চা করে অথচ ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করেনা অর্থাৎ শরীয়ত মানেনা বা অস্বীকার করে, সে কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। আর যে উভয়টাই শিক্ষা করলো, সেই মুহাক্কিক অর্থাৎ সেই নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ বা হাক্বীক্বী আলিম। সুতরাং প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সম্পূর্ণ তাসাউফ শুন্য হয়ে শুধুমাত্র যৎসামান্য ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করে কি করে দাবী করতে পারে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতই শ্রেষ্ঠ, সম্মানিত ও অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা? মূলতঃ তাদের এ দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর ও কল্পনাপ্রসূত। প্রকৃতপক্ষে ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফ সমন্বিত শিক্ষাই হচ্ছে- অনন্য, শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ শিক্ষা, যা হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ শিক্ষা দিয়ে থাকেন। কাজেই একমাত্র হক্কানী-রব্বানী পীরানে তরীক্বত, আওলিয়া-ই-কিরামগণ-এর দরবারেই পূর্ণ ইসলাম বা ইসলামী শিক্ষা হাছিল করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে অবিস্মরণীয় আলিম, মহা দার্শনিক ও প্রখ্যাত ইমাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাঁর ইল্মের তীব্রতা এত বেশী ছিল যে, সে তেজোচ্ছটায় সবাই তটস্থ থাকতো। যাঁর সমঝের ব্যাপকতা ও ক্ষুরধার যুক্তি উপস্থাপনার এত দক্ষতা ছিল, যে কারণে সারা জীবনে সকলেই তাঁর কাছে বাহাছে পরাজিত হয়েছে। অপরদিকে যিনি এত অল্প সময়ে তৎকালীন বিশ্ববিখ্যাত ও সমাদৃত বাগদাদের ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদ অলংকৃত করেছিলেন। তার পূর্বে ও পরে কেউ এত অল্প বয়সে উক্ত পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি এবং এক কথায় এতসব গুণের অধিকারী হওয়ার উছিলায় যাঁর দ্বারা তৎকালে ইসলাম ছেড়ে প্রায় সর্বোতভাবে গ্রীক দর্শনের দিকে ঝুঁকে পড়া মুসলমানদেরকে যিনি সারগর্ভ হিদায়েতের বাণী শুনিয়ে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়ে “হুজ্জাতুল ইসলাম” লক্বব দ্বারা অদ্যাবধি সমগ্র বিশ্বে বিশেষভাবে সম্মানিত। সে মহান পুরুষের ইল্মে তাছাউফের তাৎপর্য উপলব্ধি ও তার গুরুত্ব অনুধাবনের ঘটনাটি বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য। যা তিনি নিজেই যথার্থভাবে প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রখ্যাত “আল মুনকিযু মিনাদ্দালাল” বা “ভ্রান্তির অপনোদন” কিতাবে। উল্লেখ রয়েছে, তিনি প্রথমে ইল্মে কালাম বা মুতাকাল্লিমদের বিষয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সে বিষয়ে ব্যাপক পর্যালোচনার দ্বারা তার গুঢ়মর্ম উপলব্ধিতে সক্ষম হন এবং তাকে তিনি অপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেন। অতঃপর তিনি দর্শনের দিকে মনযোগী হন এবং অল্প সময়েই (দু’বছরে) পরিপূর্ণভাবে দর্শন শাস্ত্র আয়ত্ত করেন। আর এরপরেও এক বছর ধরে তিনি অর্জিত জ্ঞানের বিশেষ উপলব্ধি দ্বারা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে, দর্শনের অনেকটাই প্রবঞ্চনাপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর। তাই দর্শনও তাঁকে আশ্বস্ত করলোনা। আর এরপরে তিনি তা’লীমী শিয়া সম্প্রদায়ের বাতিনী মতবাদ নিয়ে গবেষণা করেন। কিন্তু এ সম্প্রদায়ের স্থানে- অস্থানে বাতিনী ইমামের বরাত তাঁকে এ সম্প্রদায়ের প্রতি বিরূপ করে তোলে। এমনিতর অবস্থায় তিনি এক সময় হাজির হন- তাঁর ভাই হযরত আহ্মদ গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এক মাহ্ফিলে এবং সেখানে হযরত আহমদ গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি পরিবেশিত একটি কাছীদা শুনে তাঁর ভাবাবেগের সৃষ্টি হয়। কাছীদাটির ভাবার্থ ছিল নিম্নরূপ - “আর কতকাল জাহিরী ইল্মের ফখর ধরে রাখবে? অন্তরের কলুষতা হিংসা, রিয়া, ফখর থেকে কবে আর মুক্ত হবে।” অন্তরের অস্থিরতার এ সময়ে ইমাম ছাহেবের মানসপটে ভেসে উঠে দু’টি স্মৃতি, যা সংঘটিত হতো বাদশাহ্র দরবারে। একটি হলো- যখন ইমামুল হারামাইন, যিনি বিশ্ববিখ্যাত আলিম এবং তৎকালীন সকল উলামাদের শ্রদ্ধেয় ইমাম, যিনি হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উস্তাদ, তিনি যখন বাদশাহ্র দরবারে যেতেন তখনকার স্মৃতি। অপরটি হলো- বাদশাহর দরবারে অপর একজন ছূফী ও শায়খ, হযরত আবূ আলী ফারমুদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি ছিলেন তৎকালে আল্লাহ্ পাক-এর লক্ষ্যস্থল, তিনি যখন হাজির হতেন তখনকার স্মৃতি। প্রথম ক্ষেত্রে ইমাম ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন তাঁর উস্তাদের সাথে বাদশাহ্র দরবারে তাশ্রীফ রাখতেন, তখন বাদশাহ্ ইমামুল হারামাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিকে তা’যীম করে স্বীয় সিংহাসনের পাশে অন্য আসনে বসাতেন। অন্যদিকে যখন শায়খ হযরত আবূ আলী ফারমুদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি ছিলেন বিশিষ্ট ছূফী, তিনি যখন বাদশাহ্র দরবারে তাশ্রীফ রাখতেন, তখন বাদশাহ্ তাঁকে অধিকতর তা’যীম-তাক্রীম করে নিজ সিংহাসনে বসাতেন এবং বাদশাহ্ স্বয়ং নীচে বসতেন। এ ঘটনার স্মৃতি ইমাম ছাহেবের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে এবং তাঁকে ছূফী সম্প্রদায়ের প্রতি অনুপ্রাণিত করে তোলে। ছূফী তত্ত্ব বা ইল্মে তাছাউফের দিকে মনযোগ দিয়েই তিনি বুঝতে পারেন যে, পূর্ণাঙ্গ ছূফী তরীক্বার মধ্যেই রয়েছে বুদ্ধিবৃত্তির (ইল্মী আক্বীদা) এবং ব্যবহারিক কার্যক্রম (আমল ও রিয়াযত)-এর সমন্বয়। তিনি বলেন, “আমলের চেয়ে বুুদ্ধিবৃত্তির আক্বীদা ও বিশ্বাস আমার কাছে অনেক সহজ মনে হয়েছে।” তবে তিনি উল্লেখ করেন, “সূফীবাদের যে দিকটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা কেবল পড়াশোনা বা অন্যকিছু দ্বারা সম্ভব নয় বরং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা (যওক বা স্বাদ) মোরাকাবা-মোশাহাদা এবং অন্তর তথা ক্বলবী ইছলাহ্র মাধ্যমেই তা অর্জন করা সম্ভব।” তিনি উদাহরণ পেশ করেন, “স্বাস্থ্য ও স্বস্তির সংজ্ঞা জানা এবং এগুলোর কারণ ও শর্তাবলী নির্ধারণ করা, আর স্বাস্থ্য ও স্বস্তিলাভের মধ্যে বড় প্রভেদ।” তিনি উল্লেখ করেন, “আমি পরিস্কারভাবে বুঝতে পারলাম, ছূফীগণ কথায় মানুষ নন, তাঁদের প্রকৃত অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং পড়াশোনার মাধ্যমে যতটা অগ্রসর হওয়া সম্ভব তা আমি করেছি। এখন আমার বাকী রয়েছে, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বা আস্বাদন এবং তাছাউফ সাধনার পথ প্রত্যক্ষভাবে অতিক্রমের দ্বারাই তা লাভ করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, এরপরে তাছাউফ শিক্ষার পেছনে বা ছূফী হওয়ার বাসনায় তিনি দীর্ঘ দশ বছর কাটিয়ে দেন। এবং ইল্মে তাছাউফ বা ছূফীদের সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেন, সে সম্পর্কে বলেন, “আমি নিশ্চিতভাবে বুঝতে পেরেছি যে, কেবল ছূফীরাই আল্লাহ্ পাক-এর পথের যথার্থ পথিক। তাঁদের জীবনই হলো সর্বোত্তম জীবন, তাঁদের তরীক্বাই নিখুঁত তরীক্বা, তাঁদের চরিত্রই সুন্দরতম চরিত্র। বুদ্ধিজীবিদের সকল বুদ্ধি, জ্ঞানীদের সকল জ্ঞান এবং পন্ডিতদের সকল পান্ডিত্য, যাঁরা খোদায়ী সত্যের প্রগাঢ়তা সম্পর্কে দক্ষ, তাদের সকলের জ্ঞান-বুদ্ধি একত্র করলেও তা দিয়ে ছূফীদের জীবন এবং চরিত্র উন্নততর করা যাবেনা বা সম্ভব নয়। ছূূফীদের অন্তরের বা বাইরের সকল গতি এবং স্থৈর্য নুবুওওয়াতের (প্রত্যাদেশ) নূরের জ্যোতি দ্বারা উদ্ভাসিত, নুবুওওয়াতের নূরের জ্যোতি ছাড়া ধরার বুকে অন্য কোন আলো নেই, যা থেকে জ্যোতির ধারা পাওয়া যেতে পারে।” তিনি লিখেন, “ছূফী তরীক্বার প্রথম স্তর থেকেই শুরু হয় ইল্হাম ও দীদার (দর্শন)। ছূফীগণ এ সময়ে জাগ্রত অবস্থায় ফেরেশ্তা এবং নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের রূহের দর্শন লাভ করেন। শুনতে পান তাঁদের বাণী এবং নির্দেশ। অতঃপর তাঁরা আরো উচ্চ স্তরে উপনীত হন। আকার ও প্রতীকের উর্ধ্বে এমন এক পরিমন্ডলে তাঁরা পৌঁছে যান, ভাষায় যার বর্ণনা দান সম্ভব নয়।” তিনি লিখেন, “যারা ছূফীদের মাহ্ফিলে বসে, তারা তাঁদের নিকট থেকে বিশেষ ধরণের রূহানিয়াত হাছিল করে।” তিনি ছূফীদের এই বিশেষ মর্তবা সম্পর্কে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ পেশ করেন,
يرفع الله الذين امنوا منكم والذين اوتوا العلم درجت.
অর্থঃ- “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইল্ম (ইল্মে তাছাউফ) দেয়া হয়েছে, আল্লাহ্ পাক তাদের সম্মান ও মর্যাদাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিবেন।” (সূরা মুজাদালাহ্/১১) আর যারা ছূফীদের বিরোধিতা করে অথবা তা থেকে গাফিল থাকে, তাদেরকে তিনি নেহায়েত অজ্ঞ বলে মন্তব্য করেন এবং তাদের প্রতি কুরআন শরীফের নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ প্রযোজ্য বলে মন্তব্য করেন,
ومنهم من يستمع اليك حتى خرجوا من عندك قالوا للذين اوتوا العلم ماذا قال انفا اولئك الذين طبع الله على قلوبهم والتبعوا اهواءهم.
অর্থঃ- “তাদের মধ্যে কেউ কেউ আপনার কথা শুনতে আসে, অতঃপর আপনার নিকট থেকে বের হবার পর যারা জ্ঞান লাভে সমর্থ হয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করে এই ব্যক্তি এখন কি বললো? ওরা ঐসব লোক, যাদের হৃদয়ে আল্লাহ্ তায়ালা সীলমোহর মেরে দিয়েছেন। এরা তাদের প্রবৃত্তির দাসত্ব করে যাচ্ছে। অর্থাৎ তারা মুক, বধির এবং অন্ধ হয়ে গেছে।” (সূরা মুহম্মদ/১৬) হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই মন্তব্য করেন যে, “দ্বীনের সকল পথের পথিকদের মধ্যে একমাত্র ছূফীরাই পরিপূর্ণ।” তিনি উদাহরণ দেন, “জাহিরী ইল্ম হলো- খোসা মাত্র। আর ছূফীতত্ত্ব অথবা ইল্মে তাছাউফ হলো তার অভ্যন্তরীস্থিত শাস বা মূল বস্তুর ন্যায়।” তাই তিনি আরো মন্তব্য করেন যে, “যদি কিছু থেকে থাকে, তবে ছূফীগণের কাছেই তা রয়েছে।” উল্লেখ্য, তাই তিনি ছূফীগণের ছোহ্বত ইখ্তিয়ার করা বা তাঁদের কাছে বাইয়াত হওয়া ফরযের অন্তর্ভুক্ত বলে তাঁর রচিত কিমিয়ায়ে সায়াদাত কিতাবে উল্লেখ করেছেন এবং নিজেও হযরত আবূ আলী ফারমুদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত হয়ে তাক্মীলে পৌঁছেন। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ইল্মে তাছাউফের পথই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত পথ এবং এর মধ্যেই পূর্ণতা রয়েছে। আর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের মাধ্যমে কস্মিনকালেও ইসলামের পূর্ণ শিক্ষা হাছিল করে তাক্মীলে পৌঁছা সম্ভব নয়। ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া প্রসঙ্গে কুরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,
يايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও।” (সূরা বাক্বারা/২০৮) অর্থাৎ প্রত্যেক বান্দাকে ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হতে হবে তথা ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। তাহলে যারা প্রচলিত তাবলীগ করবে, তাদের পক্ষে কি করে সম্ভব ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হওয়া বা পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে অনুসরণ করা? আর এ প্রচলিত তাবলীগই কিভাবে সবচেয়ে উত্তম, শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত আন্দোলন এবং একমাত্র পথ হতে পারে? সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মনগড়া, বানোয়াট ও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। আর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত কখনো সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আন্দোলন বা উত্তম তরীক্বা হতে পারেনা। যেহেতু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের মাধ্যমে ইসলামের পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়। কাজেই তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলেছে, “প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা, যা সকল দ্বীনী আন্দোলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত, যার থেকে ভাল তরীক্বা আর হতে পারেনা।” তাদের এ কথাটি সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী, বিভ্রান্তিকর, ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে। এর থেকে তওবা করা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে
0 Comments:
Post a Comment