অত্র হাদীছ শরীফ খানা এবং অন্যান্য হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মহিলারা পর্দায় থাকবে, বাইরে বের হবে না, বের হলে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে গুনাহের কাজ সংঘটিত করাবে। তাহলে মহিলাদের জন্য কিতাবে নেতৃত্ব দেয়া জায়িয হবে।
উল্লেখিত আলোচনার ভিত্তিতে যে সমস্ত কারণে নারী নেতৃত্ব হারাম তার একটি তালিকা দেয়া হলো:
১. আল্লাহ পাক উনার বাণী নারীদের উপর পুরুষদের অভিভাবকত্ব বা নেতৃত্ব চলবে।
২. আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে ইহকাল ও পরকালীন অকল্যাণ ও কুফলতার কথা ব্যক্ত করেছেন।
৩. নারী নেতৃত্ব দিলে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বেপর্দা হতে হবেই। যা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।
৪. অকারণে বা অগ্রহণযোগ্য কারণে বাড়ীর বাইরে বের হতে হবে। এটাও আল্লাহ তায়ালার বিধানের খিলাফ কাজ।
৫. ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বেগানা পুরুষদের সাথে কথা বলতে হবে বা তাদের ফরিয়াদ শুনতে হবে। অথচ কুরআন কারীমে মহিলাদের কন্ঠস্বরকেও পর্দার আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
৬. মহিলাদের আক্বল পুরুষদের আক্বলের তুলনায় অর্ধেক।
৭. মহিলার স্বাক্ষী পুরুষদের সাক্ষীর অর্ধেক।
৮. মহিলার জন্য পুরুষের ইমামতি করা জায়িয নেই।
৯. বিবিধ উল্লেখযোগ্য কারণে মহিলাদের নেতৃত্ব জায়িয নেই। তন্মধ্যে বেপর্দা হওয়ার বিষয়টি অন্যতম।
ইছলাহে ক্বলব বা অন্তর শুদ্ধ হলেও বেগানা মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করা জায়িয হবে না
ঈমান বা আক্বীদা শুদ্ধ হওয়ার পর একটা মানুষের জন্য যেমন- নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদত ফরয হয়ে যায়। নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদত যেমন ওয়াক্ত অথবা সময় সাপেক্ষে ফরযে আইন। তেমনি পর্দাও প্রাপ্ত বয়স্ক বা বয়স্কা হওয়ার পর ইন্তিকাল পর্যন্ত ফরযে আইন। নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদতের কাযা রয়েছে কিন্তু পর্দার কোন কাযা নেই। তাই শরীয়তে পর্দার খিলাফ খুবই মারাত্মক অপরাধ ও গুনাহ।
ওলীআল্লাহ হোক, আলিম হোক, মাওলানা হোক, আবিদ হোক, আম-সাধারণ লোক হোক, ফাসিক হোক প্রত্যেকের জন্যই পর্দার বিধান সমান। বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা কথা বলা নির্জনে অবস্থান করা কারো জন্যই জায়িয নেই। সে যে শ্রেণীর ব্যক্তি হোক না কেন। তাই অন্তর শুদ্ধ বা ইছলাহে কা’লব হলেই তার জন্য পর্দা ও অনুরূপ ফরয, ওয়াজিব এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইত্যাদি ইবাদতসমূহ ছেড়ে দেয়া জায়িয হবে না। কারণ এগুলো আল্লাহ পাক ুনার বিধান, যা ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত, পালন করে চলতেই হবে। যদি আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হয়। কিন্তু আজকাল কিছু ভ- ফকীর এবং যাহিরী ফকীর বা উলামায়ে সূ’রা বলে থাকে যে, অন্তর ঠিক হলেই আর পর্দার দরকার নেই। (নাঊযুবিল্লাহ) তাই তারা মহিলাদের হাতে হাত ধরে বাইয়াত করে এবং সামনে নিয়ে বেপর্দার সাথে তা’লীম দেয়।
যারা বলে, ‘অন্তরের পর্দা বড় পর্দা, বাহ্যিক পর্দার কোন মুল্য নেই। তাদের এ রকম আক্বীদা বা বিশ্বাস গ্রহণযোগ্য নয় বরং কুফরীমূলক। এ আক্বীদা রাখা জায়িয হবে না। এর থেকে খালিছ তওবা করা ফরয-ওয়াজিব। তারা তাদের ভ্রান্ত আক্বীদার পক্ষে কুরআন শরীফ থেকে দলীল পেশ করে থাকে। অথচ তারা যে আয়াত শরীফ খানা দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে তার ব্যাখ্যা এবং মর্মার্থ সম্পর্কে না বুঝার কারণে তারা তাদের আক্বীদাকে নষ্ট করেছে বা ভ্রান্ত করেছে।
আয়াত শরীফ খানা হলো-
(২৩৪২)
فسبح بحمد ربك وكن من السجدين، واعبد ربك حتى يأتيك اليقين. (سورة الحجر ৯৯، ৯৮ ايتان)
অর্থ:- æঅতএব আপনি আপনার রব বা প্রতিপালকের তাছবীহ পাঠ করুন, প্রশংসার সাথে এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। এবং আপনার রব এর ইবাদত করুন, মউত আসা পর্যন্ত।” (সূরাতুল হিজর ৯৮, ৯৯নং আয়াত শরীফ)
ভ- ফকীররা এ আয়াতের ব্যাখ্যা করে এভাবে যে æআপনার রবের ইবাদত করুন, বিশ্বাস আসা পর্যন্ত।” নাঊযুবিল্লাহ!
অর্থাৎ তাদের মতে ঈমান আক্বীদা শুদ্ধ হলে এবং আত্মশুদ্ধি হলে আর কোন ইবাদত করা লাগবেনা। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ ব্যাখ্যা কুরাআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর সস্পূর্ণ খিলাফ, অপব্যাখ্যামূলক, মনগড়া, মিথ্যা, সুবিধাবাদী এবং ধোকা প্রসূত। যা বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজনমান্য সমস্ত তাফসীরের খিলাফ।
যেমন, তাফসীরের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে,
(২৩৪৩-২৩৫৯)
(واعبد ربك حتى يأتيك اليقين) الموت. (تفسير الجلالين، حاشية الصاوى على الجلالين، حاشية الجمل على اجلالين، تفسير المظهرى.)
অর্থ:- æ(আপনার রব-এর ইবাদত করুন ইয়াক্বীন আসা পর্যন্ত) অর্থাৎ মুত-ইন্তিকাল পর্যন্ত। (তাফসীরুল জালালাইন, হাশিয়াতুছ ছাবী আলাল জালঅলাইন, হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন, তাফসীরুল মাযহারী)
এছাড়াও তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাছছাছ, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, তাসীরুল কুরতুবী, তাফসীরুল বাগবী, তাফসীরুল খাযিন, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে ত্ববারী, তাফসীরে দূরবে মানছুর, তাফসীর ত্ববারানী, তাফসীরে বাইযাবী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, সাফওয়াতুত তাফাসীর ইত্যাদি তাফসীর এবং এছাড়াও অসংখ্য তাফসীরের কিতাবে আয়াত শরীফ-এর يقين ‘ইয়াক্বীন’ শব্দের ব্যাখ্যা করা হয়েছে, موت ‘মউত বা ইন্তিকাল’ হিসেবে।
তাই আয়াত শরীফ-এর অপব্যাখ্যা করে পর্দার বিধানকে মানুষের থেকে হালকা করার কোনই পথ নেই। অন্যান্য ইবাদতের মত পর্দাও ফরযে আইন। তাই ‘অন্তর ঠিক হলে মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়িয হবে। এমন বক্তব্য কুফরীমূলক। যে বা যারা এমন আক্বীদা রাখবে এবং বক্তব্য পেশ করবে সে বা তারা কাফির হবে।
যে সকল নামধারী পীর, মাওলানা, আলিম, ইমাম, খতীব বেগানা মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের পিছনে নামায পড়ার শরয়ী হুকুম বা বিধান
মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করা বা বেপর্দা হওয়া হারাম ও নাজায়িয। আর যারা অহরহ হারাম কাজ করে থাকে তারা হলো ফাসিক। ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তবে জামায়াতের খাতিরে জায়িয। যেমন ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
(২৩৬০-২৩৬২)
هجوز امامة الاعرابى والاعمى والعبد ورلد الزنا والفاسق كذا فى الخلاصة الاانها تكره هكذا فى المتون. (الفتاوى العالكيرية ج ১ ص ৮৫، خلاصة، متون)
অর্থ:- æঅসদাচারী লোক, অন্ধলোক, গোলাম বা দাস, ব্যভিচারের সন্তান এবং ফাসিক ব্যক্তির ইমামতী জায়িয। যেমনটি ‘খুলাছা’য় আছে। তবে নিশ্চয়ই বিশুদ্ধ মতে তা মাকরূহ তাহরীমী। অনুরূপ ‘মাত’ন’ নামক কিতাবে আছে।” (আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়া ১ম জি: ৮৫ পৃষ্ঠা, খুলাছা, মাতূন)
আর যারা বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করাকে জায়িয মনে করে থাকে, তারা কাফির কারণ শরীয়তের বিধানে যারা হারামকে হালাল বলে বা জানে এবং হালালকে হারাম বলে বা জােিন তারা কাফির। আর কাফিরের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই। যারা বাতিল ফিরকার অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু নিজেদেরকে হকব বলে দাবী করে, তাদের পিছনেও নামায পড়া জায়িয হবে না। তেমনিভাবে যারা হিজাব বা পর্দঅর মত ফরযে আইন বিধানকে অমান্য করে বেপর্দা হয় বা নারীর সাথে গোপনে, প্রকাশ্যে, মিছিল, মিটিং তথা অহরহ দেখা সাক্ষাৎ করে এবং বলে তাকে এ যুগে এত পর্দা লাগেনা, এক রকম পর্দা করলেই চলে তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই।
অনুরূপভাবে খারিজী, রাফিয়ী, ওহাবী, ‘কাদিয়ানী, শিয়া, কদরীয়া, জাবরিয়া, জাহমীয়া, মুশাব্বিহা এবং যারা কুরআন শরীফকে ‘মুখলুক’ বলে তাদের সকলের পিছনে নামায পড়া নাজায়িয-হারাম। যদি কেউ এমন ব্যক্তির পিছনে নামায পড়ে তাহলে তাকে নামায দোহরানো ফরয-ওয়াজিব। নামায না দোহরালে নামায তরকের গুনাহে গুনাহগার হবে।
ফিক্বাহের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
(২৩৬৩)
ولا تجوز خلف الرفضى وجهمى وقدرى والمشبهة ومن يقول بخلق القران. (الفتاوى العالمكيرية ج ১ ص ৮৪)
অর্থ:- æরাফিযী, জাহমী, কাদরী, মুশাব্বিহা এবং যারা কুরআন শরীফকে মাখলুক বলে, এমন ব্যক্তিদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই।” (আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়া ১ম জি: ৮৪ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল হাদীছ, শাইখুত তাফসীর, খতীব, ছুফী, দরবেশ, পীর, ওয়ায়িয ও আমীন নামধারী ব্যক্তিরা হিজাব বা পর্দাকে ফরয বলে জানে কিন্তু নিজে পর্দা করেনা; বরং বেপর্দা হয়, বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা করে, মিটিং করে, বেগানা মহিলাদের সাথে বসে ইফতার করে তারা চরম স্তরের ফাসিক। তাদের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। আর যারা বলে বর্তমানে পর্দার প্রয়োজন নেই, এত পর্দা লাগেনা, ইসলামী আইন কায়িমের জন্য বেপর্দা হওয়ার প্রয়োজন আছে, অর্থাৎ পর্দাকে অস্বীকার করে তারা কাট্টা কাফির। তাদের পিছনে নামায পড়া সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী। যেমনিভাবে কাদিয়ানী, বাহাই, শিয়া, খারিজী ইত্যাদি ইত্যাদি ফিরক্বার লোকদের পিছনে নামায পড়া হারাম ও কুফরী।
আমরাদ বা দাড়ি-মোচ বিহিন সুদর্শন বালকের প্রতি শাহওয়াতের সাথে তাকানো হারাম, নাজায়িয
(২৩৬৪)
وقد قال كثير من السلف: انهم كانوا ينهون ان يحد الرجل نظره الى الامرد، وقدشدد كثير من ائمة الصوفية فى ذلك، وحرمة طائفة من اهل العم لما فيه من الافتتان، وشدد اخرون فى ذلك كثيرا جدا. (تفسير ابن كثير ج ৩ ص ৪৫০، ৪৫১، ৪৫২)
অর্থ:- অধিকাংশ সলফে ছালিহীন ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেছেন, নিশ্চয়ই তারা পুরুষদেরকে ‘আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোচ বিহীন সুন্দর বালকদের প্রতি তাকাতে নিষেদ করেছেন অর্থাৎ শাহওয়াতের সাথে তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম। ছুফিয়ানে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ ব্যাপারে অনেক কঠোরতার সাথে নিষেধ করেছেন। আহলে ইলম তথা ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের একটা বিরাট দল আমরাদ তথা দাঁড়ি-মোচ বিহীন সুন্দর বালকদের প্রতি তাকানোকে ফিৎনার আশংকায় হারাম ফতওয়া দিয়েছেন। আর অপর কেউ কেউ এটাকে কবীরা গুণাহ বলেছেন।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জি: ৪৫০, ৪৫১, ৪৫২ পৃষ্ঠা)
(২৩৬৫)
ولايجوز انظر اليه بشهوة كوجه امرد. (تنوير الابصار)
অর্থ:- æআমরাদ’ তথা দাড়ি-মোচ বিহীন সুদর্শন বালকের চেহারা বা মুখম-লের প্রতি শাহওয়াত বা খারাপ মনোভাবের সাথে দৃষ্টি দেয়া জায়িয নেই। (তানবীরুল আবছার)
(২৩৬৬)
فانه يحرم النظر الى وجهما ووجه الامرد اذا شك فى الشهوة. (الدر المختار)
অর্থ:- æবেগানা মহিলার মুখম-ল বা চেহারার দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম। অনুরূপভাবে ‘আমরাদ’ তথা দাড়ি-মোচ বিহিন সুদর্শন বালকের মুখম-লের দিকে শাহওয়াতের সাথে তাকানোও হারাম।” (আদদুরুরল মুখতার)
(২৩৬৭-২৩৬৮)
قال السيد الامام ابو القاسم: يعنى لايحل النظر اليه عن شهوة واما الخلو والنظر اليه لا عن شهوة لاباس به، ولهذا لم يؤمر بالنقاب. (ردالمختار، شامى ج ২ ص ৮০)
অর্থ:- æহযরত সাইয়্যিদ ইমাম আবুল ক্বাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘আমরাদ-এর দিকে শাহওয়াত বা কু-দৃষ্টিতে তাকানো হালাল নয় বা জায়িয নয়। নিড়িবিলি থাকা অবস্থায় তর দিকে শাওওয়াত বা কু-দুষ্টি ছাড়া তাকালে কোন গুনাহ হবে না। এজন্য আমবাদ বা দাড়ি-মোচ বিহীন সুদর্শন বালক নেকাব বা মুখম-ল ঢাকার ব্যাপারে আদিষ্টিত নয়।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জি:, ৮০ পৃষ্ঠা)
(২৩৬৯-২৩৭০)
ويستفاد من تشبيه وجه المرأة بوحه الامرد ان حرمة النظر اليه بشهوة اعظم اثما لان خشية الفتنة به اعظم منها. (رد المحتار، شامى ج ২ ص ৮০)
অর্থ:- æআমরাদ’-এর চেহারা মহিলার চেহারার সাথে তাশবীহ বা সাদৃশ্যশীল। নিশ্চয়ই আমরাদের দিকে শাহওয়াতের সাথে দৃষ্টি দেয়ার মত হারাম কাজ বড় গুনাহের কারণ। কেননা, এতে বড় ধরনের ফিতনা-ফাসাদের ভয় রয়েছে।” (রদ্দুল মুহতার, শামী যয় জি: ৮০ পৃষ্ঠা)
‘ামরাদ এর পরিচয় এবং হুকুম সম্পর্কে ফতওয়ায়ে শামী’র ২য় খ-ের ৮০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে যে,
(২৩৭১-২৩৭৪)
قوله: (كوجه امرد) هو الشاب الذى طر شاربه ولم تبت لحيته، قاموس، قال فى الملتقط: الغلام اذا بلغ مبلغ الرجال ولم يكن صبيحا فحكمه حكم الرجال، وان كان صبيحا فحكمه حكم النساء، وهو عورة من فوقه الى قدمه. (ردالمحتار، شامى ح ২ ص ৮০، قاموس، ملتقط)
অর্থ:- æতানবীরুল আবছার মুছান্নিফের উক্তি (যেমন আমরাদের চোহারা) ‘আমরাদ’ বলা হয় এমন যুবককে, যার মোচ কেবল উঠা শুরু করেছে, কিন্তু দাঁড়ি গজায়নি। ‘কামূস’। ‘মুলতাকাত্ব’ এর মুছান্নিফ মুলতাকাত্বে লিখেছেন, বালক যখন প্রাপ্ত বয়সে পৌঁ,ে তার যদি কোন সৌন্দর্যতা না তাকে, তাহলে তার হুকুম হবে পুরুষের মত। আর যদি তার সৌন্দর্যতা থাকে, তাহেল (তাকে দেখার বিষয়ে) তর হুকুম হবে মহিলাদের দেখার মত। সে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গই আবরণীয়। (রদ্দুল মুহতর, শামী ২য় জি: ৮০ পৃষ্ঠা, কামূছ, মুলতাকাত্ব)
উল্লিখিত অসংখ্য দলীল-আদিল্লা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ‘আমরাদ’ তথা সুদর্শন বালকের দিকে শাহওয়াতের সাথে তাকানো হারাম ও নাজায়িয। কারণ আমরাদের চেহারা মহিলার চেহারার অনুরূপ। পর মহিলাদের দিকে তাকালে যেমন কবীরা গুণাহ হয়, তেমনিভাবে শাহওয়াতের সাথে আমরাদের দিকে তাকালেও কবীরা গুনাহ হয়। পার্থক্য হলো মহিলাদের দিকে তাকানো কবীরা গুণাহের কারণ হওয়ার ব্যাপারে শাহওয়াত শর্ত নয়। কিন্তু আমরাদের দিকে তাকালে কবীরা গুণাহ হওয়ার ব্যাপারে শাহওয়াত শর্ত।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লজ্জাশীলতা এবং হিজাব বা পর্দার আমল
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লজ্জাশীলতা এবং পর্দাশীলতা ছিল তুলনাবিহীন। যা চিন্তা ফিকিরের বাইরে। তিনিই তো সমস্ত মানুষকে পর্দা এবং লজ্জাশীলতা শিক্ষা দিয়েছেন। বেপর্দা হওয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে খুবই কষ্টদায়ক ছিল। তাই আল্লাহ পাক মু’মিন ও মুসলমানগণকে লক্ষ্য করে বলেছেন যে, যাতে তারা তাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘরে বেপর্দার সাথে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ না করে।
যেমন, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন,
(২৩৭৫)
يايها الذين امنوا لا تدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم. (سورة الاحزاب ৫২)
অর্থ:- æহে মু’মিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা তোমাদের নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘরে প্রবেশ করো না। (সূরাতুল আহযাব-৫৩ নং আয়াত শরীফ)
হাদীছ শরীফেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লজ্জাশীলতা এবং বেপর্দা না হওয়ার প্রতি গুরুতেবর বিষয়গুলো বর্ণিত আছে।
যেমন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে,
(২৩৭৬-২৪০০)
عن انس رضى الله عنه قال بنى على النبى صلى الله عليه وسلم بزينب ابنة جحش بخبز ولحم فارسلت على الطعام داعيا فيجئ قوم فيأكلون وخرجون ثم يجئ قوم فياكون يخرءجون فدعوت حتى مااجد احدا ادعو فقلت يأنبى الله ما اجد احدا اد عوه، قال ارفعوا طعامكم، وبقى ثلاثة رهط يتحدثون فى البيت فخرج النبى صلى اله عليه وسلم فانطلق الى حجرة عائشة، فقال السلام عليكم اهل البيت ورحمة الله فقالت وعليك السلام ورحمخة الله كيف وجدت اهلك بارك اله لك فتفرى حجر نسائه، كلهن يقول لهن كما يقول عائشة، ويقلن له كما قالت عائشة ثم رجع النبى صلى الله فاذا ثلاثة من رهط فى اليت يتحدثون وكان النبى صلى الله عليه وسلم شديد الحياء فخرج منطلقا نحوحجرة عائشة فما ادرى اخبرته اواخبر ان القوم خرجوا فرجع حتى اذا وضع رجله فى اسكفة الباب داخلة واخرى خارجة ارخى الستر بينى وبينه، وانزلت اية احجاب. (بخارى شريف كتاب التفسير سورة الاحزاب، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى، مسلم شريف، شرح النووى، فتح الملهم، المفهم، تفسير القرطبى، تفسير الطبرى، تفسيز المظهرى، تفسير الخازن، تفسير البغوى، تفسير احكام القران للجصاص، احكام القران لابن العربى، تفسير ابن كثير، تفسير شيخ زاده، حاشية الشهاب، تفسير السمرقندى، تفسير ورح اليان، تفسير روح المعانى، تفسير الماوردى، تفسير كمالين)
অর্থ:- æহযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার ওলীমা উপলক্ষে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু রুটি গোশতের ব্যবস্থা করলেন। তারপর আমাকে লোকদেরকে খাবার খাওয়ানোর জন্য ডেকে আনতে পাঠালেন। একদল লোক এসে খেয়ে বেল হয়ে গেল। এরপর আবার আমি ডাকতে গেলাম কিন্তু কাউকে আর ডেকে পেলাম না। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর কাউকে ডেকে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, খানা উঠিয়ে নাও। তখন তিন ব্যক্তি ঘরে রয়ে গেল; তারা কথাবার্তা বলছিল। তখন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হয়ে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার হুজরা শরীফ-এর দিকে গেলেন এবং বললেন, আস সালামু আলাইকুম আহলাল বাইত ওয়া রহমতুল্লাহ। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ওয়া আলাইকাস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ। আল্লাহ পাক আপনাকে বরকত দিন, আপনার আহলকে কেমন পেলেন? এভাবে তিনি পর্যয়ক্রমে সব উম্মুল মু’মিনীনগণের হুজরায় গেলেন এবং হযরত আয়িশা ছিদদীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে যেমন বলেছেন তাদেরও অনুরূপ বললেন। আর তারা উনাকে সে জবাবই দিয়েছিলেন যেমন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম দিয়েছিলেন। তারপর নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এসে তিন ব্যক্তিকেই ঘরে আলাপে মশগুল দেখতে পেলেন। হযরত নরবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব লাজুক ছিলেন। তাই তাদের দেখে লজ্জা পেয়ে আবার হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এর দিকে গেলেন। তখন ামি স্বরণ করতে পারছি না, অন্য কেউ না ামি তাকে লোকদের বের হয়ে যাওয়ার খবর দিলাম। তিনি ফিরে এসে দরজার চৌকাঠের ভিতরে এক পাক মুবারক ও বাইরে এক পা মুবারক রেখে আমার ও উনার মধ্যে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন এমনি সময় আল্লাহ পাক পর্দার ায়াত শরীফ নাযিল করেন।” (বুখারী শরীফ কিতাবুল তাফসীর সূরাতুল আহযাব, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম, আল মুফহিম, তাফসীরুল কুরতুবী, তাফসীরুত তাবারী, তাফসীরুল মাযহারী, তাফসীরুল খাযিন, তাফসীরুল বাগবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাছছাছ, আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে শাইখ যাদাহ, হাশিয়াতুশ শিহাব, তাফসীরুস সমরকান্দী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরুল মাওয়ারাদী, তাফসীরে কামলাইন)
(২৪০১-২৪১০)
عن ام سلمة انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله عنهما اذ اقب ابن ام مكتوم فد خل عيله (وذلك بعد ما امرنا بالحجاب) فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لايبصرنا فقا رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما الستما تبصرانه. (مسند احمد بن حنبل، الفتح الربانى، ابوداؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شري، تحفة ااحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، التفسير المظهرى ج ৬ ص ৪৯২)
অর্থ: æহযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। একদা তিনি এবং হযরত মাইমুনা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে বসা ছিলেন। এমনি সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত উবনু উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং উনার কাছে প্রবেশ করলেন। (এ ঘটনা আমাদের কাছে পর্দার বিধান নাযিলের পর) হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরা দু’জন উনার থেকে পর্দা কর। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরাও কি উনাকে দেখতে পাচ্ছো না?” (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, আল ফতহুর রব্বানী, আবু দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মা’বুদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, আত তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জি: ৪৯২ পৃষ্ঠা)
(২৪১১-২৪২১)
عن ابن عباس قال جائت امرأة من خثعم عام حجة الوداع قات يا رسو اله ان فريضة الله على عباده فى الحج ادركت ابى شيخا كبيرا لا يستطيع ان يستوى عى الراحلة فهل يقضى عنه ان احج عنه قال نعم قال ابن عباس كان الفضل ينظر اليها وتنظر اليه فجعل النبى صى الله عليه وسلم يصرف وجه الفضل الى الشق الاخر. (بخارى شريف، البارى، عمدة القارى، ارساد السارى، شرح الكرمانى، تيسير ابارى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، التفسير المظهرى ج ৬ ص ৪৯২)
অর্থ:- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হজ্জের বছর খাছয়াম গোত্রের একজন মহিলা ছাহাবী এসে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার বান্দাগণের উপর যে হজ্জ ফরয করেছেন, তা আমার পিতার উপরেও ফরয হয়েছে। কিন্তু তিনি অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়েছেন। কোন বাহনে আরোহী হওয়ার সামর্থ ও শক্তি তার নেই। এখন ামি যদি উনার পক্ষ থেকে হজ্জ সম্পন্ন করি। তাহলে তা কি আদায় হবে? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন হ্যাঁ, হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, সে সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আরোহী হযরত ফযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মহিলাটির দিকে দেখছিলেন, আর মহিলাটিও উনার দিকে দেখছিলেন। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার মুখম-ল বা চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, তাইসীরুল বারী, শরহুল কিরমানী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদবাতুল আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, আত তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জি: ৪৯২ পৃষ্ঠা)
(২৪২২-২৪২৩)
عن بهز ابن حكيم عن ابيه عن جده معاوية بن حيدة القشيرى قال قلت يارسول الله صلى اله عيه وسم عوراتنا ما ناتى منها وما نذر؟ قال احفظ عورتك الا من زوجك او ما ملكت يمينك فقا ارحل يكون مع الرحل؟ قال ان استطعت الايراها احد فافعل قت فالرجل يكون خاليا؟ قال الله احق ان يستحيا منه. وقد ذكرت عائشة رسو الله صلى الله عليه وسلم وحالها معه فقالت ما رايت ذلك منه ولا رأى ذلك منى. (احكام القران لابن العربى ج ৩ ص ১৩৬৫، احكام الران للقرطبى ج ৬ ص ২২৪)
মা অর্থ:- æহযরত বাহয ইবনে হাক্বীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা থেকে, তিনি উনার দাদা হযরত মুয়াবিয়া বিন হাইদা আল কুশাইরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কাছে আমাদের কিছু মহিলা আসেন। আমরা কি সর্ত থাকবো? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, তুমি তোমার স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া অন্যান্যদের থেকে ইজ্জত ও আবরুকে হিফাযত করো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এক পুরুষের সাথে অন্য পুরুষের হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ালাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, চেষ্টা করবে যাতে কেউ সতর না দেখে। অতএব, এটাই করবে। আমি আরজ করলাম যদি কোন পুরুষ একাকীত্বে অবস্থান করে তাহলে তার হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আল্লাহ পাক অধিক হক্বদার, যেন মানুষেরা তাকে লজ্জা করে চলে।
হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে যখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম একান্তবাস করতেন উনার বর্ণনা দিয়ে তিনি নিজেই বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেইনি এবং তিনিও আমার সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেননি। (আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী ৩য় জি: ১৩৬৫ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরান লিল কুরতুবী ৬ষ্ঠ জি: ২২৪ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিপূর্ণরূপেই হিজাব বা পর্দা করেছেন। অর্থাৎ তিনি পরিপূর্ণ শরয়ী হিজাব বা পর্দা পালন করে উম্মতদেরকে শরয়ী হিজাব বা পর্দার বিধান শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমাদের উচিত হিজাব বা পর্দার ক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করা।
হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণের হিজা বা পর্দা
আল্লাহ পাক হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার জন্য এমন পবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন যে, হিজাব বা পর্দঅর বিধান নাযিলের পূর্ব থেকেই উনারা লজ্জাশীলতার সাথে শালিনতা বজায় রেখে চলতেন যখন াল্লাহ পাক বিশুদ্ধ মতে পঞ্চম হিজরী সনের যিলক্বদ মাসে, মহিলাদের জন্য হিজাব বা পর্দায় থাকাকে ফরয, ওয়াজিব বা আবশ্যিক করে দিলেন, তখন থেকে হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণ যে তুলনাহীনভাবে পর্দা পালন করেছিলেন তা ভাষায় ব্যক্ত করে শেষ করার মত নয়। কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন,
(২৪২৪)
واذا سالمموهن متاعا فسألوهن من رأء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن. (سورة الاحزاب ৫৩)
অর্থ:- æ(হে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ) আপনারা উনাদের (অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণ আলাইহাস সালাম) কাছ থেকে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাবেন। এটা আপনাদের অন্তরের জন্য এবং উনাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরাতুল আহযাব ৫৩ নং আয়াত শরীফ)
(২৪২৪)
لاجناح عليهن فى ابائهن ولا ابنائهن ولا اخوانهن ولا ابناء اخوانهن ولا ابناء اخوانهن ولا ابناء اخواتهن ولا نسائهن ولا ما ملكت ايمانهن واتقين الله ان الله كان على كل شيئ شهيدا. (سورة الاحزاب. ৫৫-৫৪)
অর্থ:- æনবী-পতœী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্না)গণের জন্যে উনাদের পিতা, পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, সহধর্মিনী নারী এবং অধিকারভুকত দাসীগণের সামনে যাওয়ার ব্যাপারে গুণাহ নেই। নবী পতœীগণ আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সর্ব বিষয় প্রত্যক্ষ করেন।” (সূরা আহযাব/৪৫, ৫৫)
(২৪২৬)
يااها النبى قل لازواجك وبنتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن ذلك ادنى ان يعرفن فلايؤذين وكان اه غفورا رحيما. (سورة الاحزاب ৫৯)
অর্থ:- æহে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণকে ও কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, উনারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেন। এতে তাদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে উনাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ পাক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব/৫৯)
(২৪২৭)
ينساء انبى لستن كاحد من النساء ان اتقيتن فلاتخضعن بالقول فيطمع الذى فى قلبه مرض وقلن قولا معروفا. وقرن فى بيوتكن ولا تبرحن تبرج الحاهية الاوى واقمن اصلوة واتين الزكوة واطعن الله ورسولة انما يريد الله يذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهر كم تطهيرا. (سورة الاحزاب ৩২-৩৩)
অর্থ:- æহে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণ! আপনারা অন্য নারীদের মত নন। যদি আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন, তবে পুরুষদের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলবেন না, ফলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে ব্যক্তি কুবাসনা করবে, আপনারা শক্ত করে কথা-বার্তা বলবেন। আপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করবেন। জাহিলিয়াত যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেন না। নামায কায়িম করবেন, যাকাত প্রদান করবেন এবং আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করবেন হে আহলে বাইতগণ! আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” (সূরা আহযাব ৩২, ৩৩)
উল্লিখিত আয়াত শরীফগুলো নাযিলের পর উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণ এবং মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণ আর কখনো বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হননি। খুবই সতর্কতার সাথে পর্দার মধ্যে থাকতেন। যার প্রমাণ হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে পাওয়া যায়। যেমন, হাদীছ শরীফ-এর কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে,
(২৪২৮-২৪৩৩)
وقال عمروبن على حدثنا ابو عاصم قال ابن حريج اخبرنا قال اخبرنى عطاء اذ منع ابن هشام النساء الطواف مع الرجال قال كيف يمنعهن وقد طاف نساء النبى صلى الله عليه وسلم مع الرجال قلت ابعد الحجاب او قبل قال اى لعمرى لقد ادركته بعد الحجاب قلت كيف يخالطن الرجال قال لم يكن يخالطن كانت عانشة رضى الله عنها تطوف حجرة من الرجال لاتخالطهم فقالت امرأة انطلقى نستلم ياام المؤمنين قالت عنك وابت يخرجن متنكراب بالليل فيطفن مع الرجال ولكنهن كن اذا دخلن البيت قمن حتى يدخلن واخرج الرجال وكنت اتى عائشة انا وعبيد بن عمير وهى مجاورة فى جوف ثبير قلت وما حجابها قال هى فى قبة تركية لها غشاء وما بيننا وبينها غير ذلك. (بخارى شريف كتاب الحج باب طواف النساء مع الرجال، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تيسير البارى)
অর্থ:- æ(হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) হযরত আমর ইবনে আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন, হযরত আবূ আছিম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর পৌঁছান হযরত ইবন জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমার কাছে খবর দেন হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি। (হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) যখন হযরত ইবনু হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি মহিলাদেরকে পুরুষের সাথে তাওয়াফ করতে নিষেধ করেন, তখন হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আপনি কি করে নিষেধ করছেন? অথচ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সহধর্মীনীগণ পুরুষগণের সাথে তাওয়াফ করেছেন। আমি (ইবনু হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি) উনাকে (হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে) প্রশ্ন করলাম, তা কি পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পরে, না পূর্বে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমার জীবনের কসম, আমি পর্দার আয়াত নাযিল বা অবতীর্ণ হওয়ার পরের কথাই বলছি। আমি জানতে চাইলাম, পুরুষগণ মহিলাগণের সাথে মিশে কিভাবে তাওয়াফ করতেন? (উত্তরে বললেন) বরং হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম পুরুষগেণর পাশ কাটিয়ে তাওয়াফ করতেন, তাদের মাঝে মিশে যেতেন না। একদা জনৈকা মহিলা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, চলুন, উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম তাওয়াফ করে আসি। তিনি জবাব দিলেন, æতোমার মন চাইলে তুমি যাও” তিনি নিজে যেতে অস্বীকার করলেন। উনারা রাতের বেলা পর্দার সাথে বের হয়ে (সম্পূর্ণ না মিশে পুরুষগণের পাশাপাশি থেকে তাওয়াফ করতেন। উম্মুল মু’মিনীনগণ বাইতুল্লাহ শরীফ-এর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে চাইলে সকল পুরুষ বের করে না দেয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতেন।
হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি ালািিহ বলেন, হযরত উবাইদ ইবনে উমাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমি হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার কাছে গেলাম। তিনি তখন ‘ছবীর’ পর্বতে অবস্থান করছিলেন। (হযরত ইবনু জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) আমি প্রশ্ন করলাম, তখন তিনি কি দিয়ে পর্দা করেছিলেন? হযরত আত্বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তখন তিনি পর্দা ঝুলান তুর্কী তাঁবুতে চিলেন, এাড়া উনার ও আমাদের মাঝে অন্য কোন পর্দা ছিলোনা।” (বুখারী শরীফ কিতাবুল হজ্জ বাবু তাওয়াফিন নিসা মায়ার রিজাল, ফতহুল বারী, ুমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী।)
(২৪৩৪-২৪৩৫)
عن بهز ابن حكيم عن ابيه عن جده............ز ذكرت عائشة رسول الله صلى الله عليه وسلم وحالها معه فقالت ما رايت ذلك منه ولا رأى ذلك منى. (احكام القران لابن العربى ج ৩ ص ১৩৬৫، احكام القران للقرطبى ج ৬ ص ২২৪)
ক অর্থ:- হযরত বাহয ইবনে হাক্বীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। ....... হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললাম উনার সঙ্গে যখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াললঅহু আনহা একান্তবাস করতেন উনার বর্ণনা দিয়ে তিনি নিজেই বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেইনি বেং তিনিও আমার সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেননি। (আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী ৩য় জি: ১৩৬৫ পৃষ্ঠা) আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী ৬ষ্ঠ জি: ২২৪ পৃষ্ঠা)
(২৪৩৬-২৪৪০)
حدثنا احمدبن شبيب حدثنا ابى عن يونس عن ابن شهاب عن عروة عن عائشة رضى الله عنها قالت يرحم الله نساء المهاجرات الاول لما انزل الله وليضربن بخمرهن على جيوبهن شققن مروطهن فاختمرن بها. (بخارى شريف، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح اكرمانى)
অর্থ:- æইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আল্লাহ পাক সেই মহিলাগণের উপর রহম করেছেন যারা প্রথম প্রথম হিজরত করেছিলেন। যখন আল্লাহ পাক æতারা যেন তাদের মাথার ওড়না তাদের বুকের উপর ফেলে রাখে” আয়াত শরীফ নাযিল করলেন, তখন উনারা তাদের চাদর ফেড়ে তা দ্বারা ওড়না বানিয়েছিলেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল কিরমানী)
(২৪৪১)
(وقرن فى بيوتكن) ...... لان سودة رضى الله عنها قيل لها لما لاتخرجين فقالت امرنا الله بان نقر فى بيتنا، ةكانت عائشة اذا قرات هذه الاية تبكى على خروجها ايام الجمل. (التسهيل لعلوم اتنزيل ج ২ ص ১৮৮)
অর্থ:- æআপনারা ঘরের প্রকোষ্ঠে অবস্থান করুন) ..... হযরত সাওদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- আপনারা কেন ঘর থেকে বের হননা। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ পাক আমাদেরকে ঘরের কোণে- প্রকোষ্ঠে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন এ জন্যই। হযরত আশিয়া ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি যখন ে আয়াত শরীফ পাঠ করতেন, তখন জঙ্গে জামাল তথা উষ্ট্রের যুদ্ধে বের হওয়ার কথা স্রণ করে কাঁদতেন।” (আত তাসহীল লিউলুমিত তানযীল ২য় জি: ১৮৮ পৃষ্ঠা)
(২৪৪২-২৪৪৩)
رواه الطبرى. وغيره عن عدى بن ثابت ان امرأة من الانصار قالت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى اكون فى بيتى على حال لا احب ان يرانى عليها احد، لا الد ولا ولد فياتى الاب فيدخل على وانه لا يزال يدخل على رحل من اهلى وانا على تلك الحال فكيف اصنع؟ فنزلت الاية. (التفسير الطبرى، تفسيرالقرطبى)
অর্থ:- æহযরত মিাম ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্যগণ আদী ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয়ই একজন আনছারী মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহা এসে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আরজ করলেন যে, আমি আমার বাড়ীতে কখনো এমতাবস্থায় থাকি যে, আমি পছন্দ করিনা সে অবস্থায় কেু আমাকে দেখুক। না আমার পিতা-মাতা, আর না সন্তান সন্তুতি। কিন্তু আমার বাড়ীর কেউ না কেু বিনা বাধায় এ অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করে এবং আমাকে দেখে ফেলে। এ পরিসিথতিতে ামি কি করবো। এমন আরজের উত্তরে ( হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত অনুমতি না নাও এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা স্মরণ রাখ।) আয়াত শরীফ নাযিল হয়। (আত তাফসীরুত ত্ববারী, তাফসীরুল কুরতুবী)
উপরোক্ত আলোচনা দবারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম আনহুন্নাগণ সকলেই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা করেছেন। তাই মহিলাদের উচিৎ হিজাব বা পর্দার ক্ষেক্ষে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম আনহুন্নাগণদের পরিপূর্ণ অনুসরণ করা।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের হিজাব বা পর্দা
হিজাব বা পর্দার আমলের ব্যাপারে খুলাফায়ে রাশিদীন এবং অন্যান্য সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ গুরুত্ব দিয়েছেন। যেহেতু আল্লাহ পাক পর্দার ব্যাপারে অসংখ্য আয়াত শরীফ-এ জোর তাগিদ করেছেন। যেমন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
(২৪৪৪)
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجه ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. (سورة النور- ৩০)
অর্থ:- æ( হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) মু’মিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের উজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ পাক তা অবহিত রয়েছেন।” (সূরা নূর/৩০)
(২৪৪৫)
يايها الذين امنوا لا تدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم الى طعام غير نظرين انه ولكن اذا دعيم عادخوا فاذا طعمتم فانتشروا ولا مستانسين لحديث ان ذلكم كان يؤذى النبى فيستحى منكم والله لايستحى من الحق واذا سالتموهن متاعا فسألوهن من وراء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن وما كان لكم ان تؤذوا رسول اله ولا ان تنكحوا ازواحه من بعده ابدا ان ذلكم كان عند الله عظيما. (سورة الاحزاب ৫৩)
অর্থ:- æহে মু’মিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতের অপেক্ষা না করে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, অত:পর খাওয়া শেষ করে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথা-বার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে (কিছু বলতে) সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ পাক সত্য কথা বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা তোমাদের অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণের কাছে কিছু চাইলে পদৃঅর আড়াল থেকে চাবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং উনাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়া এবং উনার ওফাতের পর উনার আহলিয়া (অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন) আলাইহাস সালামগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য জায়িয নয়। আল্লাহ পাক উনার কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।” (সূরা আহযাব/৫৩)
অত্র আয়াত শরীফসমূহ নাযিল হওয়ার পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মত পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলা শুরু করলেন, যদিও উনারা পূর্ব থেকেি শালিনতা বজায় রেখে চলতেন। হযরত ুমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু পর্দার আয়াত শরীফ নাযিলের পূর্ব থেকেই মহিলাদেরকে পর্দায় থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের পর্দা রক্ষার বিষয়ে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
(২৪৪৬-২৪৫১)
عن عائشة رضى الله عنها ان ازواج النبى صلى الله عليه وسلم كن يخرحن بالليل اذا تبرزن الى المناصع وهو صعيد افيح فكان عمر يقول للنبى صلى الله عيله وسلم احجب نسائك فم يكن رسول الله صلى الله عليه وسلم يفعل فخرجت سودة بنت زمعة زوج النبى صلى الله عليه وسلم ليلة من اليالى عشاء وكانت امرأة طويلة فناداها عمر الا قد عرفناك ياسودة حرصا على ان ينزل الحجاب فانزل الله اية الحجاب. (بخارى سريف كتاب اوضوء باب خروج النساء الى البراز، فتح البارى، عمدة القارى، ارشاد السارى، شرح الكرمانى، تسير البارى)
অর্থ:- æহযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ রাতের বেলায় হাজত পূরণেল জন্য বাহিরে যেতেন। আর হযরত উমর আলাইহিস সালাম তিনি (প্রায়ই) নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতেন, æআপনার আহলিয়াগণকে পর্দায় রাখা দরকার।” কিন্তু হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা করেননি। হেহেতু তিনি ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত)। একরাতে ইশার সময় নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্ত্রী হযরত সাওদা বিনতে যাময়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হাজত পূরণে বের হলেন। তিনি ছিলেন লম্বা আকৃতির। হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে বললেন, হে হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম! আমি কিন্তু আপনাকে চিনে ফেলেছি।’ এটা এ আশায় বলেছিলেন, যাতে পর্দার হুকুম নাযিল হয়। অতপর আল্লাহ পাক পর্দঅর আয়াত শরীফ নাযিল করেন।” (বুখারী শরীফ কিতাবুল উযু বাবু খুরুজিন নিসা ইলাল বারায, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, রিশাদুস সারী, শরহুল কিরমানী, তাইসীরুল বারী।)
অত্র হাদীছ শরীফ-এ হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনার পর্দাশীলতায় বিষয়টি ফুটে উঠেছে। কারণ, তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুন্নাগণকে পর্দার ভিতর থাকার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর সেই পরামর্শের সমর্থনে আল্লাহ পাক পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। মূলত: হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনার প্রস্তাবিত বিষয়ে ২২টি আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছিল।
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,
(২৪৫২-২৪৫৩)
اخرج ابن مردوية عن على بن ابى طالب رضى اله عنه قال: مر رجل على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم فى طريق من طرقات المدنة، فنظر الى امراة ونظرت اليه، فوسوس لهما الشيطان انه لم ينظر احدهما الى الاخر الا اعجابابه، فبينما الرحل يمشى الى جانب حائط ينظر اليها اذ استقبله الحائط (صدم به) فشق انفه، فقال والله لا اغسل الدم حتى اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم فأعلمه امرى؟ فاتاه فقص عليه قصته، فقال النبى صلى الله عليه وسلم. (هذا عقوبة ذنبك) وانزل الله: قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم......... الاية. (تفسير ايات الاحكام لصابونى ج ص ১৪৮. الدر المنثور للسيوطى ج ه ص ৪০)
হে অর্থ:- æহযরত ইবনু মারদুবিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলী ইবনে আবী ত্বালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় এক ব্যক্তি মদীনা শরীফ-এর পথ সমূহের কোন এক পথে চলছিল। সে এক মহিলার দিকে দৃষ্টি দিল এবং মহিলাও তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সুতরাং শয়তান তাদের দু’জনকে ওয়াসওয়াসা দিল যার ফলে তারা আশ্চর্যান্বিত হলো এই ভেবে যে, তাদের দু’জনের কেউ অন্য কোন লোককে দেখছেনা। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি দেয়ালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে (মহিলাকে) দেখলো, যখন দেয়ালকে সম্মুখে রাখলো। (এতে সে কষ্ট, লজ্জা পেল) তাই তার নাক সে ফেঁড়ে দিল অত:পর সে ব্যক্তি বলল: আল্লাহ পাক উনার শপথ! আমি রক্ত ধৌত করব না যতক্ষণ পর্যন্ত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না আসবেন, এমনকি উনাকে আমার ব্যাপারটি জানাবো। অত:পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসলেন। লোকটি উনাকে ঘটনাটি জানালো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন: (এটা তোমার গুণাহের শাস্তি)। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক অত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন, æ(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) মু’মিন পুরুষগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে....।”
(তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জি: ১৪৮ পৃষ্ঠা, আদ দুররুল মানছুর লিস সুয়ূত্বী ৫ম জি: ৪০ পৃষ্ঠা)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ পুর্ণাঙ্গভাবে পর্দা করতেন এবং পর্দার বিষয়ে কঠোর ছিলেন। এ সম্পর্কে হযরত উমর আলাইহিস সালাম উনার একটি ঘটনা উলেলখ করলে আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হিজাব বা পর্দা রক্ষার বিষয়ে কত কঠোর ছিলেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে,
(২৪৫৪)
হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম, একদিন উনার মেয়ে উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসা ছিলেন। এমন সময় উনার একটি হাদীছ শরীফ মনে পড়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি দৌড় দেন এবং দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় যেহেতু তিনি সাধারণ লোকের চেয়ে কিছু লম্বা ছিলেন, সেহেতু দরজার চৌকাঠে উনার মাথা লেগে মাথা ফেটে যায়, তিনি এ অবস্থায় আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবারে আসলেন যে, উনার কপাল মুবারক থেকে ঝর ঝর করে রক্ত পড়তেছিলো। আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, æহে উমর আলাইহিস সালাম! কে তোমার মাথায় আঘাত করলো? তখন হযরত উমর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, æইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আরবের বুকে এমন কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি, যে উমর আলাইহিস সালাম উনার মাথায় আঘাত করতে পারে। তবে আপনার একটি হাদীছ শরীফ আমার মাথায় আঘাত করেছে।”
তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, æহে উমর আলাইহিস সালাম, কোন সেই হাদীছ শরীফ? যে হাদীছ শরীফ তোমার মাথায় আঘাত করেছে।” তখন হযরত উমর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি বলেছেন,
لايخلون رجل بامراة الا كان ثالثهما الشيطان.
অর্থ:- æকোন বেগানা পুরুষ মেন কোন বেগানা মহিলাদের সাথে নিরিবিলিতে একত্রিত না হয়, কেননা তখন তাদের তৃতীয় বন্ধু হয় শয়তান।” যেহেতু আমি আমার মেয়ে হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসা ছিলাম। এ হাদীছ শরীফ স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে দৌড় দিয়ে দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় চৌকাঠে মাথা লেগে মাথা ফেটে যায়।”
এবার চিন্তা ফিকির করেন, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পর্দার কতটুকু গুরুত্ব দিতেন।
(অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment