“হিজাব বা পর্দা
ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে
অসংখ্য শুকরিয়া।
হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল
জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায়
এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার
প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লিখাই
পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ
সহায়ক। তদ্রুপ
“মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা, প্রথমতঃ কিছু লোক “কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্ম” অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও
লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন
পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক) পাশাপাশি কিছু বাতিল
ফিরকাভূক্ত অখ্যাত নামধারী ইসলামী মাসিকেও অনুরূপ মন্তব্য করা হয়। এছাড়া অনেক
নামধারী ওয়ায়েযও এরূপ বলে থাকে। অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই কুরআন
শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন
শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ
বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে। খাছ শরয়ী
হিজাব বা পর্দা মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে
মহিলাদের খাছ পর্দা হলো- ১. মহিলারা
সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই
গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে।
৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী
রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে
গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা
পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ। অতএব,
তাদের
উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুনাহে গুনাহ্গার হবে তা আর
বলার অপেক্ষাই রাখেনা। প্রসঙ্গতঃ
উল্লেখ্য, কতিপয় নামধারী পীর, আমীর,
খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন
ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে,
মিটিং-মিছিল
করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে।
(নাঊযুবিল্লাহ) মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা
লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ‘ছূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট
করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু
হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল। বর্তমান
যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন
ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের
প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে
হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤيكم فاياكم وايأهم لايضلونكم ولا يفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
হযরত
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল
বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব
(মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে,
যা
তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে
থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে
পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।”
(মুসলিম
শরীফ, শরহুন্ নববী) স্মর্তব্য যে, ঐ সকল দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর,
খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন
ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে।
সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা
বেপর্দা হয় কি করে? অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ‘ছূ’দের বেপর্দা হওয়ার
কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির
সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ
করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও
নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন
বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা
ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়া হলো।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত
ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুরআন
শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের
দৃষ্টিতে পর্দা করা ফরযে আইন দ্বীন
ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায, (৩) যাকাত, (৪) হজ্জ (৫)
রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব
বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন। কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই
হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত
বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা
হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা
সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ,
হাদীছ
শরীফ, তাফসীর, শরাহ,
ফিক্বাহ, ফতওয়া,
ইতিহাস
ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-
(পূর্ব প্রকাশিতের
পর) ফিক্বাহ ও ফতওয়ার আলোকে হিজাব বা
পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ
পুর্ববর্তী সংখ্যাগুলোতে
উল্লেখকৃত যে সমস্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা ‘হিজাব বা পর্দা’
ফরয
প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা
পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহে উল্লিখিত এবং সংশ্লিষ্ট
সকল হুকুম-আহকাম সমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে ‘শরয়ী হিজাব বা
পর্দা।’ যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার
পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত
অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা,
মাহরামদের
সামনেও শালীনতা বজায় রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ
মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকে অবনত রাখা, নিজেদের
লজ্জাস্থানকে হিফাযত করা, বিনা প্রয়োজনে
গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শোনানো,
প্রয়োজনে
কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা
বলা, গাইরে মাহরামের সামনে
মহিলাদের চেহারা হাত ও পা সহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা, ঘরে-বাইরে যে কোন খানে পরপুরুষ থেকে পূর্ণ সংরক্ষণে থাকা
ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ কুরআন শরীফের আলোকে যেরূপ
উল্লিখিত বিষয়গুলো ফরযে আইন প্রমাণিত হয়েছে। তদ্রুপ হাদীছ শরীফের আলোকেও তা ফরযে
আইন প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয়, ফিক্বাহ বা ফতওয়ার
কিতাবের বর্ণনা দ্বারাও হিজাব বা পর্দা এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ ফরযে আইন
প্রমাণিত হয়। হিজাব বা পর্দা সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য
ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহের বর্ণনা
বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ ও
ফতওয়ার কিতাব সমূহ থেকে হিজাব বা পর্দা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহের বর্ণনা তুলে
ধরলে ‘শরয়ী হিজাব বা পর্দার’ পরিচয় ও হুকুম-আহকাম আরো উজ্জলভাবে ফুটে উঠবে।
তাই নিম্নে বিশ্বখ্যাত, নির্ভরযোগ্য, অকাট্য,
প্রামাণ্য
ও সর্বজনমান্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে হিজাব বা পর্দা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পর্দার গুরুত্বের কারণেই মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে বা ঈদগাহে যাওয়া
হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে বা ঈদগাহে
যাওয়া হারাম। মহিলাদের জুমুয়ার জন্য মসজিদে,
ঈদের
নামাযের জন্য ঈদগাহে, যে কোন নামাযের
জন্য মসজিদে যাওয়া আম ফতওয়া মতে হারাম। আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী। নিম্নে এ
সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার হাক্বীক্বত কেউ
কেউ বলে থাকে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
যামানায় মহিলারা মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়তেন এবং এখনও মক্কা শরীফ ও মদীনা
শরীফে মহিলাগণ জামায়াতে উপস্থিত হন,
তবে
এর ফায়সালা কি? এর জবাব হলো, শরীয়তে এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর যামানায় ছিলনা কিন্তু ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের সময় তা
উৎপত্তি লাভ করে। যেমন “জুমুয়ার ছানী আযান” এ ছানী আযান সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা। হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মুসলমান ও ইসলামের
বৃহত্তর স্বার্থে ইজতিহাদ করতঃ উক্ত ছানী আযানের প্রচলন করেন এবং এর উপর সকল
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুরূপভাবে যদিও
প্রথম যুগে ইসলাম ও মুসলমানদের বৃহত্তর স্বার্থে মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার
অনুমতি ছিল কিন্তু হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর খিলাফতকালে তা নিষিদ্ধ ঘোষণা
করা হয় এবং পরবর্তীতে ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মহিলাদের মসজিদে গিয়ে
জামায়াতে নামায পড়া হারাম ফতওয়া দেন এবং এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়। কেননা
প্রথম যুগে মহিলাদের জামায়াতে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়ার কারণ সম্পর্কে কিতাবে
উল্লেখ করা হয়, [১৮৯৫]
উদূ লেখা
ঢুকবে.....................................................
অর্থঃ- ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “মহিলাদের ইসলামের প্রথম যুগে জামায়াতে উপস্থিত
হওয়ার অনুমতি প্রদান করার কারণ হলো,
বেদ্বীনদের
সম্মুখে মুসলমানদের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি করা। ইমাম আইনী রহতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, (শুধু তাই নয়) সে যুগ ফিৎনা, ফাসাদ হতেও সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল, কিন্তু বর্তমানে তার কোন কারণই অবশিষ্ট
নেই। (মায়ারিফে মাদানী শরহে তিরমিযী) শুরুহাতের (ব্যাখ্যার) অধিকাংশ কিতাবেই
প্রথম যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার কারণ হিসেবে তা’লীম বা ইলম অর্জন করাকেই উল্লেখ করা হয়েছে। এবং তা আরো
স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বুখারী শরীফের
হাদীছ শরীফের বর্ণনা দ্বারা। এ হাদীছ শরীফে ইরশাদ করা হয়, হযরত উম্মে আতিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, “ঈদের দিন আমাদেরকে
বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হতো, আমরা কুমারী
মেয়েদেরকে, এমনকি স্বাভাবিক মাজুরতা
বিশিষ্ট মহিলাদেরকেও ঘর থেকে বের করতাম। অতঃপর পুরুষদের পেছনে থেকে তাদের তাকবীরের
সাথে সাথে তাকবীর পড়তাম এবং তাদের দোয়ার সাথে সাথে আমরাও ঐ দিনের বরকত ও পবিত্রতা
লাভের আশায় দোয়া করতাম।” এ হাদীছ শরীফে এবং অন্যান্য আরো হাদীছ শরীফে
স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে যে, স্বাভাবিক মাজুরতা
বিশিষ্ট মহিলাগণও ঈদগাহে উপস্থিত হতো। অথচ শরীয়তে স্বাভাবিক মাজুরতা বিশিষ্ট
মহিলাদের জন্য নামায সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং তাদের ঈদগাহে বা জামায়াতে উপস্থিত
হওয়ার অনুমতি যদি শুধুমাত্র নামাযের জন্য হতো, তবে স্বাভাবিক মাজুরতা বিশিষ্ট মহিলাগণ ঈদগাহে উপস্থিত
হতোনা। মূলতঃ প্রথম যুগে নামাযসহ সকল অনুষ্ঠানাদিতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়ার মুখ্য
উদ্দ্যেশ্য ছিল, তা’লীম গ্রহণ করা। তদুপরি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন এবং সে সময় ফিৎনার
আশংকা কল্পনাও করা যায় না। তথাপি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম মহিলাদেরকে সুসজ্জিতভাবে,
সুগন্ধি
ব্যবহার করে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন এবং তিনি আরো বলেন, “সুগন্ধি ব্যবহারকারীনী মহিলা ব্যভিচারকারীনী।” হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে “যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে, সে যেন ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে আমার সাথে
নামাযে আসে।” শুধু তাই নয়, সাথে সাথে পর্দারও গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই দেখা
যায়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম, ফজরের নামায এত
অন্ধকার থাকতে শেষ করতেন যে, মহিলাগণ নামায পড়ে
যখন চলে যেতেন, তখন তাদেরকে
স্পষ্টভাবে চেনা যেত না। আর এ পর্দার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়েই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, “মসজিদে নববীর এ
দরজাটি যদি মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিতাম, তবে খুবই উত্তম হতো। অর্থাৎ পর্দার জন্য খুবই সুবিধা হতো।” (হাদীছ শরীফ) কিন্তু বর্তমান যামানায় ঐরূপ
ব্যবস্থা বা কঠোরতা কল্পনাও করা যায় না। আর এদিকে লক্ষ্য করেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম অসংখ্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেন,
“মহিলাদের
মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে গোপন প্রকোষ্টে নামায পড়া সর্বোত্তম।” সুতরাং উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে,
মহিলাদের
প্রথম যুগে জামায়াত বা ঈদগাহে অথবা অন্যান্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার একমাত্র
উদ্দেশ্য ছিল, তা’লীম গ্রহণ করা। আর আমরা প্রথমেই উল্লেখ করেছি, আমাদের দলীল হলো- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াছ। কোন দেশ, ব্যক্তি আমাদের দলীল নয়। কাজেই যেখানে মহিলাদের মসজিদে গিয়ে
জামায়াতে নামায পড়া হারাম এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে এ ইজমার বিরোধিতা করে মক্কা শরীফ-মদীনা
শরীফের অনুসরণ করা মোটেও জায়িয হবেনা বরং হারাম ও কুফরী। তাছাড়া হযরত উমর ইবনুল
খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যে মহিলাদের জামায়াত নিষেধ করেন তা মদীনা শরীফেই নিষেধ
করেন।
পর্দার গুরুত্ব ও তাৎপর্য আল্লাহ্ পাক
কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ ফরমান, [১৮৯৬]
وقرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى. (سورة الاحزاب ৩৩ اية) অর্থঃ- (হে মহিলাগণ) “তোমরা তোমাদের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক, জাহিলিয়াত যুগের মেয়েদের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন
করোনা।” (সূরা আহযাব ৩৩নং আয়াত
শরীফ) অন্য আয়াত শরীফে উল্লেখ আছে,
[১৮৯৭]
واذا سالتموهن متاعا فسألوهن من وراء حجاب. (سورة الاحزاب اية)
অর্থঃ- “যখন তোমরা
মহিলাদের নিকট কোন জিনিস চাও, তখন পর্দার আড়াল
হতে চাও।” (সূরা আহযাব ৫৩নং আয়াত
শরীফ) হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, [১৮৯৮-১৯০৭]
المرأة عورة فاذا خرجت استشرفها الشيطان. (ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، مشكوة شريف، مرقاة، شرح الطيبى، لمعات، اشعة اللمعات، مظاهرحق)
অর্থঃ- “মেয়েলোক হলো
পর্দার অধীন। যখনই তারা বেপর্দায় রাস্তায় বের হয়, শয়তান উঁকি-ঝুঁকি মারে তাদের দ্বারা পাপ কাজ সংঘঠিত করার
জন্য।” (তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, মিশকাত শরীফ,
মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, [১৯০৮]
لعن الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থঃ- “হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে দেখে এবং যে দেখায় উভয়ের উপর আল্লাহ্ পাক-এর লা’নত।” (বাইহাক্বী শরীফ) হাদীছ
শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, [১৯০৯-১৯১৮]
عن ام سلمة انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله عنهما اذ اقبل ابن ام مكتوم فدخل عليه (وذلك بعد ما امرنا بالحجاب) فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لا يبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما الستما تبصرانه. (مسند احمدبن حنبل، الفح الربانى، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، التفسير المظهرى ج ৬ ص ২৯৪)
অর্থঃ- হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা
থেকে বর্ণিত। একদা তিনি এবং হযরত মাইমুনা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। এমনি সময় সেখানে উপস্থিত হলেন
অন্ধ ছাহাবী হযরত ইবনু উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর কাছে প্রবেশ
করলেন। (এঘটনা আমাদের কাছে পর্দার বিধান নাযিলের পর) হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা দু’জন তাঁর থেকে পর্দা কর। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে
দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরাও কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো না? (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, আল ফতহুল রব্বানী, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ,
আউনুল
মা’বুদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী,
আরিদ্বাতুল
আহওয়াযী, উরফুশ শাযী, আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯২ পৃষ্ঠা) এ
হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, কোন পুরুষকর্তৃক
বেগানা মহিলাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া যেরূপ কবীরা গুণাহ্, তদ্রূপ মহিলারাও বেগানা পুরুষের দিকে দৃষ্টি
দেয়া কবীরা গুনাহ্। যা হারাম।
[১৯১৯] এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, একদিন তাঁর মেয়ে উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফছা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর সাথে বসা ছিলেন।
এমন সময় তাঁর একটি হাদীছ শরীফ মনে পড়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি দৌড় দেন এবং দরজা
দিয়ে বের হওয়ার সময় যেহেতু তিনি সাধারণ লোকের চেয়ে কিছু লম্বা ছিলেন, সেহেতু দরজার চৌকাঠে তাঁর মাথা লেগে মাথা ফেটে
যায়, তিনি এ অবস্থায় আল্লাহ
পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে আসলেন যে, তাঁর কপাল মুবারক থেকে ঝর ঝর করে রক্ত
পড়তেছিলো। আল্লাহ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, “হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু!, কে তোমার মাথায় আঘাত করলো?” তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম, আরবের বুকে এমন কোন সন্তান
জন্মগ্রহণ করেনি, যে উমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর মাথায় আঘাত করতে পারে। তবে আপনার একটি হাদীছ শরীফ আমার
মাথায় আঘাত করেছে।” তখন সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“হে
উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কোন সেই হাদীছ
শরীফ? যে হাদীছ শরীফ তোমার মাথায়
আঘাত করেছে।” তখন হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনি বলেছেন,
لايخلون رجل بامراة الاكان ثالثهما الشيطان.
অর্থঃ- “কোন বেগানা পুরুষ
যেন কোন বেগানা মহিলাদে সাথে নিরিবিলিতে একত্রিত না হয়, কেননা তখন তাদের তৃতীয় বন্ধু হয় শয়তান।” যেহেতু আমি আমার মেয়ে হযরত হাফসা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর সাথে বসা ছিলাম। এ হাদীছ শরীফ স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে দৌড়
দিয়ে দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় চৌকাঠে মাথা লেগে মাথা ফেটে যায়।” এবার চিন্তা ফিকির করেন, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ পর্দার
কতটুকু গুরুত্ব দিতেন। আর এ পর্দার গুরুত্বের জন্যই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম মহিলাদের ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম ও অধিক ফযীলতপূর্ণ বলে উৎসাহ
প্রদান করেন। আর তাই দেখা যায় পর্দা ফরয হওয়ার পূর্বে মহিলাগণ যেভাবে মসজিদে যেতেন
কিন্তু পর্দা ফরয হওয়ার পর ক্রমেই তা কমতে থাকে। আর আমিরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর
খিলাফতকালে পর্দার গুরুত্বের কারণেই তা পরিপূর্ণ বন্ধ বা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার উৎসাহ ও ফযীলত হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, [১৯২০-১৯২২]
عن ام سلمة
قالت قال رسول الله
صلى الله عيه وسلم
خير مساجد النساء
فعر بيوتهن. (سنن الكبرى، احمد، موطا امام مالك)
অর্থঃ- “হযরত উম্মু সালামা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
“মহিলাদের
জন্য উত্তম মসজিদ হলো, তার ঘরের গোপন
প্রকোষ্ঠ।”(সুনানুল কুবরা, আহমদ,
মুয়াত্তা
ইমাম মালিক) অন্য হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, [১৯২৩]
عن عبد الله
عن النبى صلى الله
عليه وسلم ما صلت
امراة صلاة احب الى
الله من صلاتها
فى اشد بيتها ظلمة.
(سنن الكبرى للبيهقى)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের অন্ধকার কুঠরীর নামায আল্লাহ্ পাক-এর নিকট অধিক
প্রিয়।” (সুনানুল কুবরা লিল
বাইহাক্বী) হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে,
[১৯২৪-১৯২৬]
عن عبد الله
عن النبى صلى الله
عليه وسلم صلاة المرأة فى بيتها افضل من
صلاتها فى حجرتها
وصلاتها فى مخدعها
افضل من صلاتها
فى بيتها. (ابودود
شريف، المجهود، عون المعبود)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের ঘরে নামায পড়া, হুজরা ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম এবং সাধারণ ঘরে নামায পড়ার
চেয়ে গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়া সর্বোত্তম।”
(আবূ
দাউদ শরীফ, বুযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মা’বূদ) কেউ কেউ এ হাদীছ শরীফের
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, দেখুন এ হাদীছ
শরীফে মসজিদের উল্লেখ নেই, তাই তুলনাহীনভাবে
মসজিদ শ্রেষ্ঠ। এটা তাদের সম্পূর্ণ মনগড়া ও বিভ্রান্তিমূলক ব্যাখ্যা। কেননা, তারা এমন একখানা হাদীছ শরীফও পেশ করতে পারবে না, যে হাদীছ শরীফে মহিলাদের মসজিদে নামায পড়া
উত্তম বলা হয়েছে। অথচ নিম্মোক্ত হাদীছ শরীফসমূহে মহিলাদের মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে
গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়া উত্তম বলা হয়েছে। এ হাদীছ শরীফগুলো কি তাদের চোখে পড়েনা? হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, [১৯২৭]
عن عائشة قال
النبى صلى الله عليه
وسلم لان تصلى المراة فى بيتها خير من
ان تصلى فى حجرتها ولان تصلى فى حجرتها خيرلها من ان تصلى
فى الدار ولان تصلى
فى حجرتها خيرلها
من ان تصلى فى
الدار ولان تصلى فى
الدار خيرلها من ان
تصلى فى المسجد.
(سنن الكبرى للبيهقى)
অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু
আনহা হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“কোন
মহিলার জন্য তার খাছ ঘরে নামায পড়া সাধারণ ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম এবং সাধারণ
ঘরে নামায পড়া বাইরের ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম এবং বাইরের ঘরে নামায পড়া মসজিদে
নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।” (সুনানুল কুবরা লিল
বাইহাক্বী) অন্য হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
[১৯২৮-১৯২৯]
عن ام حميد
قالت يا رسول الله
صلى الله عليه وسلم
انا نحب الصلاة
معك فيمنعنا ازواجنا
فقال رسول الله صلى
الله عليه وسلم صلاتكن فى بيوتكن خير من
صلاتكن فى دور كن
وصلاتكن فى دوركن افضل
من صلاتكن فى مسجد
الجماعة. (سنن الكبرى
للبيهقى، الجوهرالنقى)
অর্থঃ- হযরত উম্মু হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা
হতে বর্ণিত। তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমরা মহিলারা
আপনার সাথে নামায পড়তে ইচ্ছুক কিন্তু আমাদের স্বামীরা আমাদেরকে নিষেধ করেন। অতঃপর
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের জন্য সাধারণ ঘরে নামায পড়ার চেয়ে, খাছ ঘরে নামায পড়া উত্তম এবং সাধারণ ঘরে নামায
পড়া জামে মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে সর্বোত্তম।” (সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, জাওহারুন নক্বী) এ সমস্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম স্বামী কর্তৃক মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার নিষেধকে সমর্থন করেন। যদি তিনি
সমর্থন না করতেন, তবে অবশ্য তিনি
বলতেন, বাঁধা দেওয়া ঠিক হবে না।
এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের মসজিদে
যেতে নিষেধ করা নাজায়িয নয় বরং জায়িয। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ করা
হয়েছে, [১৯৩০-১৯৩২]
عن ام حميد
انها جائت الى النبى صلى الله عليه وسلم
فقالت يا رسول الله
صلى الله عليه وسلم
انى احب الصلاة
معك فقال النبى صلى
الله عليه وسلم قد
علمت انك تحبين الصلاة معى وصلاتك فى حجرتك وصلاتك فى ججرتك خير
من صلاتك فى دارك
وصلاتك فى دارك خير
من صلاتك فى مسجد
قومك وصلاتك فى مسجد
قومك خير من صلاتك فى مسجدى. (احمد، ابن
حبان، طبرانى)
অর্থঃ- হযরত উম্মু হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা
হতে বর্ণিত। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম, আমি আপনার সাথে নামায পড়তে
অধিক আগ্রহী। অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “অবশ্যই আমি জানি তুমি আমার সাথে নামায পড়তে
ভালবাস বা অধিক আগ্রহী। কিন্তু তোমার,
আমার
মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে তোমার গোত্রের মসজিদে নামায পড়া উত্তম এবং গোত্রের মসজিদে
নামায পড়ার চেয়ে হুজরায় নামায পড়া আরো উত্তম এবং হুজরায় নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায
পড়া সর্বোত্তম।” (আহমদ, ইবনে হাব্বান, ত্ববারানী) এ
হাদীছ শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায
পড়া উত্তম বলা হয়েছে। যেখানে মহিলাদের জন্য ঘরে নামায পড়া আল্লাহ পাক-এর রসূল
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম, সেখানে অন্য মসজিদে নামায পড়তে যাওয়া কি করে
ফযীলতের আশা করা যায়? অথচ আল্লাহ পাক-এর
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে এক রাকায়াত নামায পড়া লক্ষ-কোটিগুণ
রাকায়াত নামাযের চেয়েও সর্বোত্তম। কাজেই যদি জামায়াতের ফযীলতের জন্য মহিলাদের
মসজিদে আসার অনুমতি দেওয়া হতো, তবে ঘরে নামায পড়া
রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম বলা
হতোনা। মূলতঃ এর দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে,
মহিলাদের
মসজিদে বা ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি ইলম অর্জনের জন্যই দেওয়া হয়েছিল। হাদীছ শরীফে আরো
উল্লেখ রয়েছে যে, [১৯৩৩]
عن ابى عمرو
شيبانى انه رأى عبد
الله يخرج النساء
من المسجد يوم الجمعة ويقول اخرجن الى بيوتكن خيرلكن.
অর্থঃ- হযরত আবু আমর শাইবানী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি দেখেছেন হযরত
আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে জুমুয়ার দিন মহিলাদেরকে মসজিদ হতে একথা বলে বের
করে দিত যে, “হে মহিলারা!
তোমারা তোমাদের ঘরে চলে যাও, কারণ নামাযের জন্য
তোমাদের ঘরই উত্তম।” (ত্ববারানী শরীফ)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহের আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম শুধু মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার জন্য কার্যতঃ উৎসাহ প্রদান করেননি বরং
ঘরে নামায পড়ার বহু ফযীলতও বর্ণনা করেছেন। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, [১৯৩৪]
عن ابن عمر
عن النبى صلى الله
عليه وسلم صلاة المراة تفضل على صلاتها
فى الجمع خمساو عشرين درجة (فردوس للديلمى
شريف ج ২ صفه ৩৮৯)
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্
ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে
বর্ণনা করেছেন যে, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে একা নামায
পড়ায় ২৫ গুণ বেশী ফযীলত পাওয়া যায়।”(ফিরদাউস লিদ্
দাইলামী২য় জিঃ ৩৮৯পৃঃ) যেখানেঞ্জমহিলাদের জন্য ঘরে একাকি নামায পড়ায় ২৫গুণ ফযীলত, সেখানে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়ার হেতু
কি? বিদ্য়াতীদের কাছে এর জবাব
আছে কি? নিশ্চয়ই নেই। হযরত উমর
ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর নিষেধাজ্ঞা ও
হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর সমর্থন পর্দার গুরুত্ব ও মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার
উৎসাহ ও ফযীলতপূর্ণ হাদীছ শরীফের দিকে লক্ষ্য রেখে আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইজতিহাদ করতঃ মহিলাদেরকে
মসজিদে এসে জামায়াতে নামায পড়তে নিষেধ করে দেন। মহিলারা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন, তখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা
বলেন, “যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদেরকে এ অবস্থায় পেতেন, যে অবস্থায় হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু পেয়েছেন, তবে অবশ্য তিনিও তোমাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ
করতেন।” হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর এ কথার আসল অর্থ হলো,
হযরত
উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যা করেছেন,
ঠিকই
করেছেন। অর্থাৎ আমি এটাকে পূর্ণ সমর্থন করি। আর এটাকে সমর্থন করার অর্থই হলো, মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা। আর বিশেষ করে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর
ফাযায়িল-ফযীলত যেটা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। যাঁর সম্পর্কে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা
হয়েছে, [১৯৩৫-১৯৩৬]
افضل امة النبى بعده ابو بكر ثم
عمر ثم عثمان رضوان الله تعالى عليهم اجمعين. (ابوداود شريف، مشكوة شريف) অর্থঃ- “(হযরত ইবনে উমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন,) হযরত নবী করীম
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতের মধ্যে তাঁর পরে সর্বোচ্চ মর্যাদান
ব্যক্তি হলেন হযরত আবূ বকর, তারপর হযরত উমর, তারপর হযরত উছমান রিদ্বওয়ানুল্লাহি তায়ালা
আলাইহিম আজমাঈন।” (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ) হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে, [১৯৩৭-১৯৩৮]
لوكان بعدى نبى
لكان عمربن الخطاب.
(ترمذى شريف، مشكوة شريف) অর্থঃ- “(হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,)
যদি
আমার পরে কেউ নবী হতো তবে হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহুই নবী হতেন।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) অন্য হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, [১৯৩৯-১৯৪১]
ان الله جعل
الحق على لسان عمر
وقلبه. (ترمذى شريف، ابوداؤد شريف، مشكوة شريف) অর্থঃ- “স্বয়ং আল্লাহ্ পাক
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর জবানে এবং অন্তরে হক কথা রেখে দিয়েছেন।”ঞ্জ(তিরমিযী শরীফ,
আবূ
দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ । অর্থাৎ হযরত
উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর কথার সমর্থনে আল্লাহ পাক ২২ খানা আয়াত শরীফ নাযিল
করেছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, “শয়তান হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দেখলে, তার মাথা খারাপ হয়ে যেত, কোন্ রাস্তা দিয়ে পালাবে।” আর হযরত আয়িশা
ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর ফাযায়িল,
ফযীলত
সম্পর্কে হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে,
হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, [১৯৪২]
خذوا نضف دين
كم من هذه الحميرة
অর্থঃ- “তোমরা অর্ধেক
দ্বীন গ্রহণ করবে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে।” (মিশকাত শরীফ) অতএব, সেই আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যেখানে মহিলাদের জামায়াত বন্ধ করে
দিলেন। এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা
ছিদ্দীক্বা দ্বিয়াল্লাহু আনহা তা
পূর্ণভাবে সমর্থন করলেন এবং সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ তা মেনে
নিলেন সেখানে তাঁদের বিরোধিতা করে এবং তাদের ফতওয়াকে উপেক্ষা করে মহিলাদের
জামায়াতকে জায়িয বলা ও মহিলা জামায়াত পুনরায় চালু করা সম্পূর্ণই কুরআন-সুন্নাহ্র
খিলাফ তথা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে
অনুসরণ করার আদেশ দেয়া হয়েছে এবং তাঁদের বিরোধিতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন, পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,
[১৯৪৩]
اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى اامر منكم.
অর্থঃ- “তোমরা আল্লাহ পাক, আল্লাহ পাক-এর হাবীব এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা ‘উলিল আমর’ তাদেরকে অনুসরণ
কর।” (সূরা নিসা ৫৯নং আয়াত শরীফ)
হযরত মুফাস্সিরীনে কিরামগণ সকলেই একমত যে, আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘উলিল আমর’ দ্বারা প্রথমঃ
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণই হচ্ছেন প্রথম স্তরের ‘উলিল আমর’। আর হাদীছ শরীফে
ইরশাদ হয়েছে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
[১৯৪৪]
عليكم بشنتى وسنة
الخلفء الرشدين المهدين.
অর্থঃ- “তোমাদের জন্যে
আমার সুন্নত ও খুলাফায়ে রাশিদীন তথা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের
সুন্নত অবশ্যই পালনীয়।” (মিশকাত শরীফ) সুতরাং উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ
দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে অনুসরণ করা উম্মতের জন্য ফরয,ওয়াজিব। পক্ষান্তরে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুমগণের বিরোধিতা করা ও তাঁদের প্রতি
বিদ্বেষ পোষণ করা হচ্ছে, কুফরী।
অর্থাৎ যার ভিতরে কুফরী রয়েছে সে ব্যক্তিই
শুধুমাত্র হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের বিরোধিতা করে কাফির হয়ে
যাবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তাঁর কালামে পাকে ইরশাদ করেন [১৯৪৫]
ليغيظبهم الكفار.
অর্থাৎ,
“কাফিরেরাই
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের বিরোধিতা করে বা তাঁদের প্রতি
বিদ্বেষ পোষণ করে।” (সূরা ফাত্হ ২৯ নং
আয়াত শরীফ) আর আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেন, [১৯৪৬]
من غاظه اصحاب محمد صلى الله عليه
وسلم فهو كافر.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি হযরত
ছাহাবায়ে কিরামগণের বিরোধিতা করে বা তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে কাফির।” হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
[১৯৪৭]
حب ابى بكر
وعمر رضى الله عنهما ايمان وبغضهما كفر.
অর্থঃ- “হযরত আবূ বকর ও
উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা এর প্রতি মুহব্বত করা হচ্ছে ঈমান। আর তাঁদের বিরোধিতা
করা হচ্ছে কুফরী।” (বুখারী শরীফ) তাই অনুসরণীয় ইমাম-মুজাতাহিদগণ
উল্লিখিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফের উপর ভিত্তি করে ফতওয়া দেন যে, মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, দু’ ঈদ ও তারাবীহ নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ ও
ঈদগাহে যাওয়া আম ফতওয়া মুতাবিক হারাম। আর খাছ ফতওয়া মুতাবিক কুফরী। কারণ খাছভাবে
ফিকির করলে এটাই ছাবিত হয় যে, মহিলাদের
জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া এবং এটাকে জায়িয বলার অর্থই হলো- (১) মহান আল্লাহ্ পাক-এর আয়াত শরীফকে
অস্বীকার ও অবজ্ঞা করা, (২) তাঁর হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফকে অস্বীকার ও অমান্য করা, (৩) উম্মুল মু’মিন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা
অবজ্ঞা করা, (৪) হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা করা, (৫) উম্মুল মু’মিনীন ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে নাক্বেছ বা অপূর্ণ বলে
সাব্যস্ত করা, (৬) নিজেকে হযরত
উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,
হযরত
আয়েশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাসহ সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুম থেকে বেশী জ্ঞানী ও বড় মনে করা,
(৭)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ জায়িযকে নাজায়িয করেছেন বলে দোষারোপ
করা, (৮) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের প্রকাশ্য বিরোধীতা করা ও বিদ্বেষী হওয়া, (৯) কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত
পর্দার ফরযকে অস্বীকার করা ও বেপর্দাকে প্রশ্রয় দেয়া, (১০) কুরআন শরীফে বর্ণিত ‘উলিল আমর’ বা অনুসরণীয়
ইমাম-মুজতাহিদগণের বিরোধীতা করা ও তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা, (১১) শরীয়তের একটি অন্যতম দলীল ‘ইজ্মা’কে অস্বীকার করা
বা ইজ্মার বিরোধীতা করা। যার সবগুলোই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যে কুফরী করে সে মুরতাদ
হয়ে যায়। কাজেই মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদ বা ঈদগাহে যাওয়া এবং এটাকে জায়িয
বলা যে, খাছ ফতওয়া মুতাবিক কুফরী
তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। স্মর্তব্য যে,
যারা
মহিলা জামায়াতকে জায়িয বলে ফতওয়া দেয় তারা নিজেদের কুফরী ও গোমরাহীকে ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে বলে থাকে
যে, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু কখনো মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেননি।
মূলতঃ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা। আর তাদের এ চির সত্যকে
অস্বীকার করার কারণ দু’টির একটি তো
অবশ্যই হবে, (১) তারা এ
ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ, তাই তারা মুর্খতাসূচক
প্রলাপ বকছে। (২) তারা মনে করে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর নিষেধাজ্ঞাকে
মিথ্যা প্রমাণিত করতে পারলে তাদের পক্ষে মসজিদে যেতে আর কোন বাধা নিষেধ থাকবে না
এবং তাদের উপর কুফরীর ফতওয়াও পড়বেনা। মূলতঃ এতে তারা মোটেও সফলকাম হবেনা। হযরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যে মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন, নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ
হতে তার দলীলসমূহ পেশ করা হলো, [১৯৪৮-১৯৫৯]
ولقد نهى عمر
رضى الله عنه النساء عن الخروج الى المساجد فشكون الى عائشة رضى
الله عنها فقالت لوعلم النبى صلى الله عليه
وسلم مما علم عمر
رضى الله عنه مااذن لكن فى الخروج.
(فتح القدير ج১ صفه ৩১৪، دار العلوم ديوبند، فتاو......................)
অর্থঃ- হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন,
তখন
মহিলারা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ
করলেন। তখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন, “হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তোমাদের এখন যে
অবস্থায় দেখছেন, এরূপ অবস্থায় যদি
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতেন, তবে তোমাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিতেন না।” (ফতহুল ক্বদীর ১ম জিঃ ৩১৪ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ফতওয়ায়ে রহিমীয়া, গায়াতুল আওতার ১মঃ ২৩৬ পৃষ্ঠা, তাহ্তাবী, শামী, দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, আইনুল হিদায়া,
ফতওয়ায়ে
হিন্দীয়া, হিদায়া, নিহায়া) আর হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর
নিষেধাজ্ঞাকে যে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা পূর্ণ সমর্থন করেছেন, তা হাদীছ শরীফেও উল্লেখ আছে। যেমন, [১৯৬০-১৯৬২]
لوان رسول الله
صلى الله عليه وسلم
رأى ما احدثت النساء لمنعهن. (بخارى شريف، مسلم
شريف، ابو دؤد شريف)
অর্থঃ- “যদি হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন, তবে অবশ্যই নিষেধ করতেন।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ,
আবু
দাঊদ) সুতরাং উপরোক্ত কিতাবসমূহের আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মহিলাদেরকে
মসজিদে যেতে নিষেধ করেন এবং হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তা পূর্ণ
সমর্থন করেন। এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হলো যে, যারা বলে হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিষেধ করেননি, তারা হয় অজ্ঞ, জাহিল অথবা নিরেট মিথ্যাবাদী। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো
যে, বর্তমানে মহিলাদের
জামায়াতের জন্য মসজিদ বা ঈদগাহে যাওয়া বা এটাকে জায়িয বলার অর্থই হলো, হযরত উমর ইব্নুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও
হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর আদেশকে অমান্য করা বা তাদের
বিরুদ্ধাচারণ করা যা কাট্টা কুফরী। আম ফতওয়া মুতাবিক মহিলা জামায়াত হারাম হওয়ার
ব্যাপারে ইজমায়ে উম্মত আর পরবর্তীতে
ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ
পর্দার গুরুত্ব, মহিলাদের ঘরে
নামায পড়ার উৎসাহ, ফযীলতপূর্ণ হাদীছ
শরীফ, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু-এর নিষেধাজ্ঞা ও হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর সমর্থনের
দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ মাকরূহ্ তাহ্রীমী ফতওয়া দেন এবং উক্ত ফতওয়ার উপর উম্মতের
ইজমা তথা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা লাভ করে,
বিশেষ
করে হানাফী মাযহাবের ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্যে। যেমন, কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, [১৯৬৩] قد اجمعت الامة على كرأهة خروج النساء الى الجمعة. (امداد الاحكام)
অর্থঃ- “মহিলাদের
জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” (ইমদাদুল আহ্কাম) কাজেই যেখানে অনুসরণীয় অসংখ্য ইমাম-মুজতাহিদ মহিলাদের মসজিদে
যাওয়া নাজায়িয অর্থাৎ হারাম ফতওয়া দেন,
সেখানে
এর বিরোধিতা করে এটাকে জায়িয বলা গোমরাহী ছাড়া কিছুই নয়। আর এদের ব্যাপারে আল্লাহ
পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ ফরমান,
[১৯৬৪]
ومن يشاقق الرسول من بعد ما تبين
له الهدى ويتبع غير
سبيل المؤمنين نوله ماتولى. (سورة النساء ১১৫ اية)
অর্থঃ- “যে কারো নিকট
হিদায়েত বিকশিত হবার পর রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধাচরন
করবে, আর মু’মিনদের পথ রেখে ভিন্ন পথের অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে।” (সূরাতুন্ নিসা ১১৫ নং আয়াত শরীফ) শায়খ আহমদ
ইবনে আবু সাঈদ মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি এ আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেছেন, [১৯৬৫]
فجعلت مخالفة
المؤمنين مثل مخالفة
الرسول فيكون اجماعهم
كخبر الرسول حجة قطعية. (نور الانوار)
অর্থঃ- “এ আয়াতে মু’মিনদের বিরোধিতাকে
রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
অতএব, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফের মতো তাদের ইজমাও অকাট্য এবং প্রামাণ্য দলীল
বলে পরিগণিত হবে। (নুরুল আনওয়ার) উপরোক্ত
আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম-মুজতাহিদগণের মতের বিরোধিতা করার অর্থ
হলো, আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধিতা করা, যা স্পষ্টই গোমরাহী। আর এটাও যেনে রাখা দরকার যে, ইমাম-মুজতাহিদগণ যে ফতওয়া দিয়েছেন, তা কুরআন-সুন্নাহ্র বিপরীত নয় বরং
কুরআন-সুন্নাহ্ ভিত্তিক। তাই ইমামে আ’যম আবূ হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, “আমার কোন কথা যদি
তোমরা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফের
খিলাফ পাও, তবে তা প্রাচীরে ছুড়ে ফেলে
দিও। এর অর্থ হলো তাঁর কোন কথাই কুরআন
শরীফ, হাদীছ শরীফের খিলাফ ছিলনা।
কারণ তিনি ছিলেন হাফিযুল কুরআন, হাকিমে হাদীছ
অর্থাৎ সকল হাদীছ শরীফই তাঁর মুখস্ত ছিল। তাই দেখা যায় পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ অগণিত
ইমাম, মুজতাহিদ, আলিম,
মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক এবং
পৃথিবীর অধিকাংশ লোক যুগ যুগ ধরে সর্বশ্রেষ্ট মাযহাব হানাফী মাযহাবের অনুসরণ করে
আসছে এবং অনেকেই হানাফী মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে আল্লাহ পাক-এর দরবারে অশেষ
শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। ইমামে রব্বানী,
ক্বাইয়্যূমে
আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ‘মাকতুবাত শরীফে”
লিখেন, হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম যখন পৃথিবীতে তাশরীফ
আনবেন, তখন উনি যে ইজতিহাদ করবেন, উনার সেই ইজতিহাদকৃত মাসয়ালাগুলো হানাফী
মাযহাবের মাসয়ালার সাথে হুবহু মিলে যাবে। এবার চিন্তা করে দেখুন, হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাইহি-এর
ইজতিহাদ কত সুক্ষ্ম। আর ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে ইমাম শাফী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, [১৯৬৬-১৯৬৮]
الناس كلهم عيال
ابى حنيفة فى الفقه.
অর্থঃ-“সমস্ত মানুষ ইলমে
ফিক্বাহ্রে দিক দিয়ে ইমাম আ’যম আবূ হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট সন্তান তুল্য।”(তারীখে বাগদাদ, মানাকিবে আবু হানীফা, ইলাউস্ সুনান) কাজেই
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের দৃষ্টিতে সঠিকভাবে পর্যালোচনা
করলে দেখা যায় যে, ইমাম-মুজতাহিদগণের
কোন মাসয়ালার বিরোধিতা করা (সেটা যে কোন মাযহাবেরই হোক না কেন) মূলতঃ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফেরই বিরোধিতা করা। সুতরাং মূল কথা
হলো, মহিলাদের মসজিদে যাওয়া
হারাম হওয়ার উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বে তা
অনুসৃত হয়ে আসছে। ইজমা ও কিয়াছ যেহেতু কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফেরই অন্তর্ভূক্ত ও
সমর্থিত, সেহেতু উক্ত ইজমাকে
অস্বীকার করা বা মু’মিনদের প্রচলিত
পথের বিরোধিতা করা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে প্রকাশ্য গোমরাহী। নিম্নে
আম ফতওয়া মুতাবিক মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম বা নিষিদ্ধ হওয়ার দলীলসমূহ পেশ করা হলো- আম
ফতওয়া মুতাবিক মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া হারাম বা নিষিদ্ধ হওয়ার
অকাট্য দলীলসমূহ [১৯৬৯-১৯৭৩]
قال صاحب الهداية ويكره لهن حضور الجماعات يعنى الشواب منهن وقوله الجماعة يتناول الجمع والاعياد والكسوف والاستسقاء قال اصحابنا لان
فى خروجهن خوف الفتنة وهو سبب للحرام
وما يقضى الى الحرام فهو حرام فعلى هذا
قولهم يكره مرأدهم
يحرم. (عمدة القارى
شرح البخارى جه صفه
১৫৬،
فتح اللهم شرح مسلم
ج ২ صفه ৪২৮، تفهيم المسلم ج ১৪ صفه ২১، هداية)
অর্থঃ- “হিদায়ার লেখক বলেন, যুবতী মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ্
তাহ্রীমী। তিনি আরো বলেন, জামায়াত বলতে
এখানে (পাঁচ ওয়াক্তসহ) জুমুয়া, ঈদাইন, কুসূফ,
ইস্তিস্কা
ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত। আমাদের হানাফী ফকীহগণ বলেন, কেননা তাদের (মহিলাদের) জামায়াতের জন্য বের
হওয়ায় ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে, আর ফিৎনা হারামের
অন্তর্ভুক্ত, আর যা হারাম কাজে
সহায়তা করে তাও হারাম, এ কারণেই মাকরূহ্
তাহরীমীর দ্বারা মূলতঃ মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া সম্পূর্ণ হারাম হওয়াই উদ্দেশ্য।” (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ ১৫৬ পৃঃ, ফতহুল মুলহিম, শরহে মুসলিম ২য় জিঃ ৪২৮পৃঃ, তাফহীমুল মুসলিম ১৪ জিঃ ২১পৃঃ, হিদায়াহ) [১৯৭৪-১৯৭৫]
উদূ লেখা
ঢুকবে..................................................
অর্থঃ- “ইমাম ত্বহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মহিলাদের ইসলামের
প্রথম যুগে জামায়াতে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করার কারণ হলো বেদ্বীনদের সম্মুখে
মুসলমানদের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি করা। হযরত ইমাম আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, সে যুগ ফিৎনা ফাসাদ থেকে
সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা একেবারেই বিপরীত। বাদায়িউছ্ ছানায়ে-এর
লিখক বলেন, যুবতী মহিলাদের (পাঁচ
ওয়াক্তসহ) জুমুয়া, ঈদাইন ইত্যাদিতে
যোগদান করার অনুমতি নেই বা জায়িয নেই অর্থাৎ হারাম। কেননা আল্লাহ্ পাক বলেন, (হে মহিলাগণ) তোমরা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক। এ
ছাড়াও মহিলাদের ঘর হতে বের হওয়ার মধ্যে ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে।”(মায়ারিফে মাদানিয়াহ শরহে তিরমিযী ৮ম জিঃ
১০৮পৃঃ, আল বাদায়িউছ্ ছানায়ে) [১৯৭৬-১৯৭৭]
وحب على الامام اونائبه منعهن من ذالك
قال المظهر فيه دليل
على جواز خروجهن
الى المساجد للصلاة
لكن فى زماننا
مكروه عمم المتأ خرون
المنع للعجائز والشواب
فى الصلوات كلها. سنن
النسائى شرح امام السيوطى ج২ صفه ২৮২، مرقاةشرح
مشكوة ج২ صفه ৫৭-৬৭)
অর্থঃ- ইমাম অথবা তার প্রতিনিধির জন্য জরুরী যে, তারা যেন মহিলাদেরকে জামায়াতের জন্য মসজিদে
আসতে নিষেধ করে। হযরত মাযহার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদিও হাদীছ শরীফ দ্বারা মহিলাদের (প্রথম যুগে)
মসজিদে যাওয়া প্রমাণিত কিন্তু আমাদের সময়ে তা মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ।
(কেননা) উলামায়ে মুতায়াখ্খিরূন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যুবতী ও বৃদ্ধা মহিলাদের যে
কোন নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ বা হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।
(সুনানুন নাসাঈ শরহে ইমামুস সুয়ুতী ২য় জিঃ ২৮২পৃঃ, মিরকাত শরহে মিশকাত ৩য় জিঃ ৫৭, ৬৭পৃঃ) [১৯৭৮-১৯৮০] উদূ লেখা
ঢুকবে..................................................
অর্থঃ- “বর্তমান
ফিতনা-ফাসাদের সময়ে মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা
নিষিদ্ধ। মহিলাদের সর্ব অবস্থায় পর্দায় (ঘরে) থাকা সর্বোত্তম তথা ফরযে আইন।” (আশয়াতুল লুময়াত শরহে মিশকাত ১ম জিঃ ৪৬২পৃঃ,
মুযাহিরে
হক্ব, লুময়াত শরহে মিশকাত)
[১৯৮১-১৯৮২] উদূ লেখা
ঢুকবে..................................................
অর্থঃ- জুমহুর উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণের নিকট যুবতী মহিলাদের যেমনিভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়া
নিষিদ্ধ, তদ্র্রুপ জুমুয়া ও ঈদাইনেও
নিষিদ্ধ। কেননা আল্লাহ্ পাক বলেন, তোমরা মহিলাগণ
ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক। শুধু তাই নয়,
তাদের
বের হওয়ার মধ্যে ফিৎনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই উলামায়ে মুতায়াখ্খিরীনগণের ফতওয়া হলো
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নাজায়িয বা হারাম।” (দরসে তিরমিযী ২য় জিঃ ৩২১ পৃঃ, মায়ারিফে সুনান ৪র্থ জিঃ ৪৪৫পৃঃ) [১৯৮৩-১৯৮৭]
উদূ
লেখা ঢুকবে..................................................
অর্থঃ-
“যুবতী মহিলাদের জামায়াতে
যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ। উলামায়ে মুতায়াখ্খিরীনগণের ফতওয়া হলো
বৃদ্ধাদেরও যুবতী মহিলাদের ন্যায় মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ বা হারাম, যে কোন নামাযেই হোক না কেন।” (আওজাযুল মাসালিক শরহে মুয়াত্তায়ে মালিক ৪র্থ
জিঃ ১০৬পৃঃ, আল বুরহান, নাইলুল মায়ারিব, শরহুল কবীর,
আত্তাওশীহ্)
[১৯৮৮-১৯৮৯]
دل الحديثان
الاولان على كون صلوة
المرأة فى غير المسجد افضل منها فى المسجد ويكره لهن حضور الجماعة يعنى الشواب منهن واختار المتأخرون كراهة خروج
العجائز ايضا ليلا اوكان نهارا. (اعلاء السنن ج
৪ صفه ২৩১، مجمع الزوائد)
অর্থঃ- “প্রথমোক্ত
হাদীছদ্বয় দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে,
মহিলাদের
মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম। (কেননা) মহিলাদের (যুবতী)
জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী যা নিষিদ্ধ। আর উলামায়ে
মুতায়াখ্খিরীনদের ফতওয়া হলো বৃদ্ধাদের জন্যও রাত্রে হোক অথবা দিনে হোক মসজিদে
যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ।”(ইলাউস সুনান ৪র্থ
জিঃ ২৪১পৃঃ, মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ)
[১৯৯০-১৯৯২]
سالت ابا حنيفة عن النساء هل يرخص
لهن فى حضور المساجد؟ فقال العجوز تخرج للعشاء والفجر ولا خرج لغيرهما والشابة لاتخرج فى شئ
من ذالك وقال ابو
يوسف والعجوز تخرج فى
صلوات كلها والفتاوى
اليوم على الكراهة
فى كل الصلاوات
لظهور الفساد. (تاتارخانيه
ج
১ صفه ৬২৮، خلاصة الفتاوى ج ১ صفه ১৫৫، البدائع
الصنائع ج১ صفه ১৫৭)
অর্থঃ- মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে সুওয়াল করা হলে
তিনি বলেন, যুবতী মহিলাগণ কোন নামাযেই, তা যে কোন সময়েই হোক না কেন বের হতে পারবে না।
(অর্থাৎ মসজিদে জামায়াতে উপস্থিত হতে পারবে না) আর বৃদ্ধা মহিলাগণ ফজর ও ইশার
নামায ব্যতীত কোন নামাযেই উপস্থিত হতে পারবে না। হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন, বৃদ্ধা মহিলাগণ
প্রত্যেক নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হতে পারবে। (কিন্তু উলামায়ে মুতায়াখ্খিরীনদের
ফতওয়া হলো) বর্তমানে যুবতী হোক অথবা বৃদ্ধা উভয়ের জন্যই প্রত্যেক নামাযের জামায়াতে
উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ,
ফিৎনা
প্রকাশ পাওয়ার কারণে। (তাতার খানিয়া ১ম জিঃ ৬২৮পৃঃ, খুলাছাতুল ফতওয়া ১ম জিঃ ১৫৫পৃঃ, আল বাদায়িউছ সানায়ে ১ম জিঃ১৫৭ পৃঃ)
[১৯৯৩-২০০১]
ويكره لهن حضور
الجماعة يعنى الشواب
منهن ولا باس للعجوز والفتاوى اليوم على كراهة حضورهن فى الصلاوات
كلهما. (عينى شرح هدايه ج১ صفه ৭৩৯، هدايه مع
الدرايه ج১ صفه ১২৬، المبسوط
للسرخسى ج১ صفه ১৪، فتح القدير ج১ صفه ৩১৭، عالمكيريه،
نهايه، عناية، الكفايه
ج১ صفه ৩১৭،
نورالهدايه ج১ صفه ১০১)
অর্থঃ- “যুবতী মহিলাদের
মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী, তবে বৃদ্ধাদের কোন নিষেধ নেই। কিন্তু বর্তমানে পরবর্তি
আলিমদের ফতওয়া মুতাবিক যুবতী ও বৃদ্ধা উভয়ের জন্য যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত
হওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ।”
(আইনী
শরহে হিদায়া ১ম জিঃ ৭৩৯ পৃঃ, হিদায়া মায়াদ্
দিরায়া ১ম জিঃ ১২৬পৃঃ, মাবসূত
লিস্সারাখসী ২য় জিঃ ৪১পৃঃ, ফতহুল ক্বদীর ১ম
জিঃ ৩১৭ পৃঃ, আলমগীরী, নিহায়া,
ইনায়া, কিফাইয়া ১ম জিঃ ৩১৭পৃঃ, নূরুল হিদায়া ১ম জিঃ১০১পৃঃ) [২০০২-২০০৫]
উদূ লেখা
ঢুকবে..................................................
অর্থঃ- “প্রাপ্তা বয়স্কা
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ এবং মুতায়াখখিরীনদের
মত হলো বৃদ্ধাদেরও যে কোন সময় যে কোন নামাযে উপস্থিত হওয়া নিষেধ বা হারাম।” (আইনুল হিদায়া ১ম জিঃ ৪৫৮পৃঃ, কাফী,
তাব্য়ীন, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১ম জিঃ ১৩২পৃঃ) [২০০৬-২০১০]
ولايحضرن الجماعة
لقوله تعالى وفرن فى
بيوتكن وقال النبى صلى
الله عليه وسلم صلاتها فى قعر بيتها افضل
من صلاتها فى صحن
دارها وصلاتها فى صحن
دارها افضل من صلاتها فى مسجدها وبيوتهن
خيرلهن لايؤمن الفتنة
من خروجهن اطلقه فشمل
الشابة والعجوز وصلاة النهارية والليلبة والفتوى اليوم على
الكراهة فى الصلاوات
كلها. (البحرالرائق شرح كنز
الدقائق ج১ صفه ৩৫৮، معدن الحقائق ج১ صفه ১৪৩، احسن المسائل صفه ৩৮، منحة الخالق، المجمع الانهر)
অর্থঃ- আল্লাহ্ পাক বলেন, মহিলাগণ তোমরা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাক।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহিলাদের মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে ঘরের বারিন্দায় নামায পড়া
উত্তম এবং ঘরের বারিন্দায় নামায পড়ার চেয়ে ঘরের গোপন প্রোকেষ্ঠে নামায পড়া
সর্বোত্তম। তাই মহিলাগণ জামায়াতে উপস্থিত হবে না, প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা, রাত্রে হোক অথবা দিনে। কারণ সাধারণতঃ তাদের
বের হওয়া ফিৎনা থেকে নিরাপদ নয়। তাই পরবর্তি ফকীহ্দের ফতওয়া হলো প্রাপ্তা বয়স্কা
হোক অথবা বৃদ্ধা প্রত্যেক নামাযে জামায়াতের জন্য উপস্থিত হওয়াই মাকরূহ্ তাহ্রীমী
বা নিষিদ্ধ। (বাহ্রুর রায়িক শরহে কানযুদ দাক্বায়িক্ব ১ম জিঃ ৩৫৮পৃঃ, মাদানুল হাকায়িক ১ম জিঃ ১৪৩পৃঃ, আহসানুল মাসায়িল ৩৮পৃঃ, মিনহাতুল খালিক, আল মাজ্মাউল আন্হুর) [২০১১-২০১৩]
উদূ লেখা
ঢুকবে..................................................
অর্থঃ- প্রাপ্তা বয়স্কা মহিলাদের জামায়াতে
উপস্থিত হওয়া, মাকরূহ্ তাহ্রীমী
হওয়ার ব্যাপারে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি
আলাইহি ও সাহিবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিম একমত। মতবিরোধ শুধুমাত্র বৃদ্ধাদের বেলায়, ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেন, বৃদ্ধা মহিলাগণ
যোহর, আছর ও জুমুয়ায় উপস্থিত হতে
পারবে না, সাহিবাইন বলেন সকল নামাযেই
উপস্থিত হতে পারবে। কিন্তু মুতায়াখ্খিরীন ফকীহ্গণ এর বিপরীত মত প্রকাশ করেন অর্থাৎ
প্রাপ্তা বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়াই নিষেধ তথা
হারাম। নহরুল ফায়িক কিতাবে উল্লেখ আছে,
মুতায়াখ্খিরীনদের
উক্ত মত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি
আলাইহি থেকেই নেওয়া হয়েছে। (শরহে বিকায়া ১ম জিঃ ১০৮পৃঃ, শরহে সিকায়া ১ম জিঃ ১৮৭পৃঃ, নাহরুল ফায়িক। [২০১৪-২০১৭]
ويكره للنساء
حضور الجماعة يعنى الشواب منهن لمافيه خوف الفتنة والفتاوى اليوم على الكراهة فى الصلاوات كلها لظهور الفسق فى هذا الزمان. (الجوهرة النيرة
صفه
৭৮،
مراقى الفلاح صفه ২০৫، محيط، قدورى صفه ৩৬)
অর্থঃ- প্রাপ্তা বয়স্কা মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে আসা মাকরূহ্
তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ। ফিৎনার আশঙ্কায়। বর্তমান জামানায় ফাসেকী প্রকাশ পাওয়ার কারণে
উলামায়ে মুতায়াখ্খিরীনগণ ফতওয়া দেন যে,
প্রাপ্তা
বয়স্কা হোক অথবা বৃদ্ধা উভয়ের জন্য যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্
তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ। (আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ ৭৮পৃঃ, মারাকিউল ফালাহ ২০৫পৃঃ, মুহীত্ব,
কুদূরী
৩৬পৃঃ) [২০১৮-২০২০]
উদূ লেখা
ঢুকবে..................................................
অর্থঃ- (আলোচিত) উপরোক্ত কারণে পরবর্তী ফকীহ
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ফতওয়া দেন যে,
মহিলাদের
পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া, ঈদসহ যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া
মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ। এ ফতওয়া সকল স্থানের জন্যই প্রযোজ্য অর্থাৎ চাই
হেরেম শরীফে হোক অথবা মসজিদে নববীতে। হিন্দুস্থানে হোক অথবা আরব দেশে সকল স্থানেই
মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ। (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ্ ১ম জিঃ ১৭৩পৃঃ, ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ্ ৩৫পৃঃ, তরীকুল ইসলাম ৭ম জিঃ ৩৩ পৃঃ) [২০২১-২০২৪]
উদূ লেখা
ঢুকবে..................................................
অর্থঃ- “মহিলাদের মসজিদে
গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর সময় মহিলাদের মসজিদে আসা এবং পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ তথা হারাম হয়ে
যাওয়া হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়ে দুররুল মুখতার কিতাবে ইঙ্গিত রয়েছে।” (আযীযুল ফতওয়া ১ম জিঃ ২১৩পৃঃ, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ৩য় জিঃ ৪৯ পৃঃ, মাশারিকুল আনওয়ার ১৩৭পৃঃ, ইমদাদুল আহ্কাম ১ম জিঃ ৪২৫ পৃঃ, দুররুল মুখতার) [২০২৫-২০২৭]
উদূ
লেখা ঢুকবে..................................................
অর্থঃ- (প্রাপ্তা বয়স্কা) মহিলাদের মসজিদে
গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। বৃদ্ধা মহিলাদের রাত্রে হলেও জামায়াতে
যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী বা নিষিদ্ধ। (আহসানুল ফতওয়া ৩য় জিঃ ২৮৩পৃঃ, কিফায়াতুল মুফতী ৩য় জিঃ ২৪৪পৃঃ, বেহেস্তী জিওর ৭ম জিঃ ২৯পৃঃ) [২০২৮]
الفتاوى فى زمننا على انهن لاتخرجن
وان كن عجائز الى
الجماعات لا فى الليل ولا فى النهار
لغلبة الفتنة. (فتاوى محموديه ج২ صفه ২৩৯)
অর্থঃ- “বর্তমান
যামানার ফতওয়া হলো- মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ, যদিও বৃদ্ধা হোক না কেন। রাত্রে হোক অথবা দিনে (প্রত্যেক
অবস্থায়ই) ফিৎনার আশঙ্কায় হারাম।” (ফতওয়ায়ে
মাহমূদিয়াহ্ ২য় জিঃ ২৩৯পৃঃ) সুতরাং
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য, অকাট্য ও বিস্তারিত
আলোচনা দ্বারা এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, (১) কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের বাইরে কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। (২) প্রথম
যুগে মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল তা’লীম গ্রহণ করা। (৩) মহিলাদের ঘরে নামায পড়ায় পঁচিশগুণ বেশী
ফযীলত। (৪) হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন ও হযরত
আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা তা পূর্ণ সমর্থন করেন। (৫)ঞ্জপরবর্তিতে ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মহিলাদের জামায়াতের জন্য
মসজিদে যাওয়া হারাম ফতওয়া দেন এবংঞ্জএর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
অর্থাৎ আম ফতওয়া মুতাবিক মহিলা জামায়াত হারাম। (৬) আর খাছ ফতওয়া মুতাবিক মহিলাদের
জামায়াত কুফরী। কারণ এতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের বিরোধিতা
করা হয়। (৭) মূলকথা হলো, পর্দার গুরুত্বের কারণেই অর্থাৎ পর্দা রক্ষা ও বেপর্দা থেকে
বাঁচার উদ্দেশ্যেই মহিলাদের জামায়াত হারাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ পর্দা করা
হচ্ছে ফরযে আইন। আর মহিলাদের জামায়াত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে
মুয়াক্কাদা কোনটাই নয় বরং নিষিদ্ধ বা হারাম। কাজেই আল্লাহ্ পাক যেন আমাদের সকলকে
হক্ব মত ও হক্ব পথে কায়িম রাখেন এবং উক্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে আল্লাহ্ পাক ও
তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ মারিফত ও মুহব্বত হাছিল
করার তাওফীক দান করেন। (আমীন) (অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment