“হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার
প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন
হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের
অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের
আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক
তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”
পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে
এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” এমন সব লিখাই পত্রস্থ হয়, যা
মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।
তদ্রুপ “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতে” হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা,প্রথমতঃ কিছু লোক “কিল্লতে
ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্ম”
অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে
পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি
দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে, “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা,
হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহি
মিন যালিক)
অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য
সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ,
সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা
মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ
বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।
খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা
মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে
মহিলাদের খাছ পর্দা হলো-
১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে
অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের
সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা
পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল
ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে
মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা
বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম সূরে কথা বলবে না। এটাই খাছ
শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।
অতএব, তাদের
উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে তা আর
বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, কতিপয়
নামধারী পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ,
মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের
সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে,
ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা
ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাউযুবিল্লাহ)
মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া
লোভী উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে
আসছে। যেমন, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায়
উলামায়ে ‘ছূ’ আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু
ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও
হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।
বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত
পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ,
মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই
পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায়
তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে
ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ
হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা
তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা
কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে
এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না
এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।”
(মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল
মুলহিম)
স্মর্তব্য যে, ঐসকল
দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে
কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে।
সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা
বেপর্দা হয় কি করে?
অতএব, উল্লিখিত
উলামায়ে ‘ছূ’দের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের
ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
অতএব, সকলেই
যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম
অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি
ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার
ভিতর আসতে পারে, তাই “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে”
“হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”
দেয়া হলো।
আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে
প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্
শরীফ,
ইজ্মা ও ক্বিয়াসের
দৃষ্টিতে
পর্দা করা ফরযে আইন
দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা
প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায , (৩) যাকাত, (৪)
হজ্ব (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের
জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ
ফরযে আইন।
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা
পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে
কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে
হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ
শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ
করা হলো-
যে সকল আয়াত শরীফসমূহ
দ্বারা
হিজাব বা পর্দার নির্দেশ
দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত ‘তাফসীর বা ব্যাখ্যা’
যে সকল আয়াত শরীফসমূহ
দ্বারা ‘হিজাব বা পর্দা’
ফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু
বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে
সংশ্লিষ্ট ও আয়াত শরীফসমূহে উল্লিখিত সকল হুকুম-আহ্কামসমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে “শরয়ী
হিজাব বা পর্দা”।
যেমন, কারো ঘরে
প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা, মাহরামদের
সামনেও শালীনতা বজায় রাখা,
গায়রে মাহ্রামদের সামনে চেহারা, হাত, পাসহ
সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা,
চলাচলের সময় পুরুষ-মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকেই অবনত রাখা, নিজেদের
লজ্জাস্থানকে হিফাযত করা,
বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শুনানো, প্রয়োজনে
কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা
বলা, নরম ভাষায় কথা না বলা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ্
পাক উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে এ বিষয়গুলোই মূলতঃ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে ‘তাফসীর
বা ব্যাখ্যা’ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং শরয়ী ‘হিজাব বা
পর্দার’ পরিচয় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। তাই নিম্নে নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের তাফসীর বা ব্যাখ্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো-
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
একজন পুরুষের জন্য মাহরামা
তথা বিবাহ্ নিষিদ্ধ মহিলা সম্পর্কিত সূরা নিসা’র ২২, ২৩ ও
২৪নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা
ولاتنكحوا ما نكح اباؤكم من النساء الا ماقد سلف انه كان فاحشة ومقتا وساء سبيلا (سورة النساء ২২)
حرمت عليكم امهتكم وبنتكم واخوتكم وعمتكم وخلتكم وبنت الاخ وبنت الاخت وامهتكم التى ارضعنكم واخوتكم من الرضاعة وامهت نسائكم وربائبكم التى فى حجوركم من نسائكم التى دخلتم بهن فان لم تكونوا دخلتم بهن فلاجناح عليكم وحلائل ابنائكم الذين من اصلابكم وان تجمعوا بين الاختين الا ما قد سلف ان الله كان غفورا رحيما (سورة النساء ২৩)
والمحصنت من النساء الا ما ملكت ايمانكم كتب الله عليكم واحل لكم ما وراءذلكم ان تبتغوا باموالكم محصنين غير مسافحين فما استمتعتم به منهن فاتوهن اجورهن فريضة ولا جناح عليكم فيما تراضيتم به من بعد الفريضة ان الله كان عليما حكيما. (سورة النساء২৪)
অর্থঃ- “যে সমস্ত
নারীকে তোমাদের পিতা- পিতামহ বিবাহ্
করেছেন তোমরা তাদের বিবাহ্ করোনা, কিন্তু যা বিগত হয়েছে তাতো
হয়েছেই। এটা অত্যন্ত নিলর্জ্জতা, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।” (সূরাতুন্ নিসা/২২)
তোমাদের জন্য হারাম করা
হয়েছে তোমাদের মাতা,
তোমাদের মেয়ে, তোমাদের বোন, তোমাদের
ফুফু, তোমাদের খালা,
ভাইয়ের মেয়ে (ভাতিজী), বোনের মেয়ে (ভাগিনী), তোমাদের
সে মাতা যারা তোমাদের বুকের দুধ পান করিয়েছেন (দুধমাতা), তোমাদের
দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা (শাশুরী), তোমারা যাদের সাথে একান্তবাস করেছ
সে স্ত্রীদের মেয়ে যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে যদি তাদের সাথে একান্ত বাস না করে
থাক তবে তাদের মেয়েকে বিবাহ্ করতে গুণাহ্ নেই, তোমাদের ঔরসজাত ছেলেদের স্ত্রী
এবং দু’বোনকে একত্রে বিবাহ্ করা। কিন্তু যা পূর্বে হয়েছে তাতো হয়েছেই। নিশ্চয়ই
আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল,
দয়ালু।” (সূরাতুন্ নিসা/২৩)
সে সব নারীও তোমাদের জন্য
হারাম যারা অন্য কারো বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ। অবশ্য সে সব নারী এটার অন্তর্ভুক্ত নয়
যারা (যুদ্ধে) তোমাদের হস্তগত হবে। এটা তোমাদের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর হুকুম। এদেরকে
ছাড়া অন্যান্য নারীদেরকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এ শর্তে যে, তোমরা
তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, ব্যভিচারের
জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে তাকে তার নির্ধারিত হক (মোহর)
প্রদান কর। তোমাদের গুণাহ্ হবেনা যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সন্তুষ্টির সাথে
সমঝোতা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সুবিজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরাতুন্
নিসা/২৪)
একজন পুরুষের জন্যে যে সকল
মহিলাদের বিবাহ করা হারাম
তাদের
বিস্তারিত বিবরণ-
উল্লেখ্য, ২২নং
আয়াত শরীফে বিমাতা বা সৎ মাকে পিতার ইন্তিকালের পর বিবাহ্ করা হারাম ঘোষণা করা
হয়েছে। এখানে পিতার স্ত্রী,
দাদার স্ত্রী এবং উর্ধ্বতমদেরকেও উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এ
কাজটিকে জাহিলিয়াতের কাজ,
অশ্লীল-অশালীন, ঘৃণিত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা
হয়েছে।
আর ২৩ ও ২৪নং আয়াত শরীফে
একজন পুরুষ কর্তৃক যে সমস্ত মহিলাদেরকে বিবাহ্ করা হারাম তার আলোচনা করা হয়েছে। এ
মাহ্রামা বা বিবাহ্ নিষিদ্ধ মহিলারা তিনভাগে বিভক্ত।
যথা- (১) রক্ত সম্পর্কিত
বা বংশসূত্রে হারাম মহিলা।
(২) দুধ পান সম্পর্কিত হারাম
মহিলা। জানার বিষয় যে,
বংশসূত্রে যা হারাম দুধ সম্পর্কের কারণেও তা হারাম।
(৩) বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে এবং
অবৈধ সম্পর্কের কারণে হারাম মহিলা।
নিম্নে এ আয়াত শরীফ তিনটির
বিস্তারিত ব্যাখ্যা নির্ভরযোগ্য তাফসীর থেকে পর্যায়ক্রমে প্রদান করা হলো-
সূরা নিসার ২৩নং আয়াত
শরীফের তাফসীর বা ব্যাখ্যা
[১৩৬৫-১৪৪০]
(حرمت عليكم امهتكم) يعنى اصولكم على عموم المجاز وقيل الام يطلق على الاصل لغة حقيقة فى القاموس ام كل شئ اصله ومنه ام القرى مكة وام الكتاب الفاتحة او اللوح المحفوظ فيشتمل الجدات من قبل الاب او الام وان علون اجماعا (وبنتكم) يعنى فروعكم كذلك على عموم المجاز فيشتمل بنات الابن وبنات البنت وان سفان اجماعا (واخوتكم) تعم ما كانت منها لاب او لام اولهما (وعمتكم وخلتكم) تعم اخوات الاب لاحد الابوين اولهما واخوات الام لاحد الابوين اولهما وتلحق بهن جماعا عمات الاب وعمات الام وخالاتهما والعمات والخالات للجد والجدة وان علون سواء كن من قبل الاب او من قبل الام وسواء كن اخت ابيه او امه او جده اوجدته لاحد الابوين اولهما كان المراد بهما على عموم المجاز الفرع القريب للاصل البعيد ويحل الفرع البعبد للاصل البعيد اجماعا كبنت العم او العمة او الخال والخالة، (وبنت الاخ وبنت الاخت) يعنى فروع الاخ والاخت بناتهما وبنات ابنائهما وبنات بناتهما وان سفلن سواء كان الاخ والاخت لابوين او لاحدهما ذكر الله سبحانه المحرمات من النسب سبعا ويؤل امرهن الى اربعة اصناف اصله وفرعه وفرع اصله القريب وان بعد والفرع القريب للاصل البعيد واخصر من ذلك ان يقال يحرم النكاح بين الشخصين ان يكون بينهما ولاداو يكون احدهما فرعا لاحد ابوى الاخر.
অর্থঃ- حرمت عليكم امهتكم. তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাগণ) মাতা অর্থ এখানে عموم مجاز ব্যাপক রূপক হিসেবে পিতা, পিতামহ কিংবা মাতা, মাতামহী-মাতামহের
দিকের সকল মূল নারী। যেমন,
মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহী, প্রমাতামহী
প্রমূখ। কেউ কেউ বলেন,
ام শব্দের আভিধানিক অর্থ মূল। কামূস অভিধানে লিখা হয়েছে, ام كل شئ اصله. প্রত্যেক জিনিসের মূলকে তার মা
বলা হয়। এ কারণেই মক্কাকে ام القرى, সূরা
ফাতিহা বা লাওহে মাহ্ফুযকে ام الكتاب বলা হয়। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী امهات শব্দ সর্বসম্মতভাবে পিতা ও মাতার দিক থেকে সকল পিতামহী-মাতামহীকে, তা যতই
ঊর্ধ্বতন হোক না কেন,
শামিল করবে।
وبنتكم (তোমাদের
কন্যাগণ)ঃ بنات শব্দটিও عموم مجاز যা ব্যাপক রূপক হিসেবে সকল
শাখা-প্রশাখাকে শামিল করেছে। পৌত্রী ও দৌহিত্রী যত নীচের দিকেরই হোক, সর্বসম্মতভাবে
এই শব্দের অন্তর্ভুক্ত।
واخوتكم (তোমাদের
ভগ্নীগণ)ঃ অর্থাৎ তোমাদের ভগ্নীগণ সহোদরা হোক কিংবা বৈমাত্রেয় ভগ্নী বা বৈপিত্রেয়
ভগ্নী।
وعمتكم وخلتكم (তোমাদের
ফুফুগণ ও তোমাদের খালাগণ)ঃ عمات শব্দের মধ্যে
পিতার সহোদরা বোন,
বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রেয় বোন সবাই শামিল আছেন। অনুরূপ خالات শব্দের মধ্যে মাতার সহোদরা বোন, বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রেয় বোন
সবাই শামিল আছেন। এ সিদ্ধান্ত ইজমা বা সর্বসম্মত। এরই আওতায় সর্বসম্মতভাবে পিতা ও
মাতার ফুফু ও খালা এবং দাদা-দাদী, নানা-নানীর ফুফু ও খালা এবং অনুরূপ সকল মূল পুরুষ ও নারীর
ফুফু ও খালাও শামিল আছেন। যেন عموم مجاز বা ব্যাপক রূপক হিসেবে দূরবর্তী মূলের সকল নিকটবর্তী শাখা
হারামের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু দূরবর্তী মূলের দূরবর্তী শাখা ইজমা বা সর্বসম্মতভাবে বৈধ। যেমন, চাচা বা
ফুফু কিংবা খালা বা মামার কন্যা।
وبنت الاخ وبنت الاخت (ভ্রাতৃকন্যা
ও ভগিনী কন্যাগণ) ঃ অর্থাৎ ভ্রাতা ও ভগ্নীর সকল শাখা প্রশাখা- কন্যা, পৌত্রী, দৌহিত্রী
যত নীচের দিকে হোক। ভ্রাতা ও ভগ্নী শব্দ ব্যাপক (عام)। সহোদর সহোদরা হোক বা বৈমাত্রেয়
বৈপিত্রেয় হোক। আল্লাহ্ পাক বংশগত মাহরামাদের সংখ্যা সাত উল্লেখ করেছেন। যার
সারকথা হচ্ছে- চার শ্রেণীর নারী হারাম। বিবাহ্কারীর মূল ও বিবাহ্কারীর শাখা।
নিকটবর্তী মূলের শাখা- নিকটবর্তী হোক কিংবা দূরবর্তী। দূরবর্তী মূলের নিকটবর্তী
শাখা। এর চেয়েও সংক্ষিপ্ত ভাষায় এরূপ বলা যায়, এমন দুই পুরুষ ও নারীর পারস্পরিক
বিবাহ্ হারাম। যাদের পরস্পরের মধ্যে জন্মগত সম্পর্ক রয়েছে কিংবা একে অপরের পিতা বা
মাতার শাখা।”
(وامهتكم التى ارضعنكم واخوتكم من الرصاعة) وكذا العمات والخلات وبنات الاخ وبنات الاخت من الرضاعة اجماعا على حسب ما فصلناه فى النسب لقوله صلى الله عليه وسلم يحرم من الرضاع مايحرم من النسب ويروى ما يحرم من الولادة متفق عليه من حديث عائشة وعن على انه قال يارسول الله صلى الله عليه وسلم هل لك فى بنت عمك حمزة فانها اجمل فتاة فى فريش فقال له اما علت ان حمزة اخى من الرضاعة وان الله حرم من الرضاعة ما حرم من النسب رواه مسلم وعن عائشة قالت جاء عمى من الرضاعة فاستاذن على فابيت ان اذن له حتى السنل رسول الله صلى الله عليه وسلم فجاء رسول الله صلى الله عليه وسلم فسالته فقال انه عمك فاذنى له قالت فقلت يارسول الله ايما ارضعتنى المرءة ولم يرضعنى الرجل فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم انه عمك فيلج عليك وذلك بعد ماضرب علينا الحجاب متفق عليه وعن عائشة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان عدها وانها سمعت صوت رجل يستأذن فى بيت حفصة فقالت عائشة قلت يا رسول الله هذا رجل يستأذن فى بيتك فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اراه فلانا لعم حنصة من الرضاع فقلت يا رسول الله لوكان فلان حيا لعمها من الرضاعة ادخل فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم نعم ان الرضاعة يحرم ما يحرم من الولادة رواه البغوى.
فائدة : احتج ابوحنيفة ومالك بهذه الاية وبقوله عليه السلام مطلقا يحرم من الرضاعة مايحرم من النسب على ان الرضاع قليل اوكثر يحرم ما يحرم من النست وهو احد اقوال احمد وقال الشافعى لايحرم الا خمس رضعات مشبعات فى خمس اوقات جانعات متفاصلات عرفا وهو القول الثانى لاحمد وعن احمد ثلاث رضعات وبه قال ابو ثور وابن المنذر وداود وابو عبيد وجه التقدير بثلاث حديث بن الزبير عن عائشة ان نبى الله صلى الله عليه وسلم قال لاتحرم المصة والمصتان وعن ام الفضل مرفوعا بلفظ لايحرم الرضعة اوالرجعتان وفى رواية اخرى عنها لايحرم الاملاجة والاملاجتان وفيه قصة وهذه الروايات رواها مسلم وكذا روى احمد والنسائى وابن حبان والترمذى من حديث ابن الربير عن ابيه عن عائشة واعه الطبرى بالاضطراب
............ قالوا ثبت بهذا الحديث ان الرضعة الرضعتان لاتحرمان فبقى التحريم فى ثلاث رضعات ووجه القول بالخمس حديث عائشة فالت كان فيما انزل من القران عشر رضعات معلومات يحر من ثم نسخ بخمس معلومات فتوفى رسول الله صلى الله عليه وسلم وهى فيما يقرا من القران رواه مسلم ورواه الترمذى بلفظ فى القران عشر رضعات فنسخ من ذلك خمس وصار الى خمس رضعات فتوفى رسول الله عليه وسلم والامر على ذلك قلنا حديث الاحاد لايعارض تص الكتاب المتواتر وعند التعارض يقدم التحريم احتياط وايضا حديث عائشة كان فيما انزل من القران الحديث وان كان صحيحا سندا لكنه متروك لانقطاعه باطنا فانه يدل على انه صلى الله عليه وسلم توقى وهى فيما يقرأ مع انه ليس كذلك قطعا والاثبت قول الروافض ذهب كثير من القران بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم وهذا القول كفر لاستلزامه انكار قوله تعالى انا له لحفظون والتاويل بان معنى قولها توفى رسول الله صلى الله عليه وسلم يعنى قارب الوقاة يقتضى نسخ الخمس قبيل الوقاة كما نسخ العشر قبل ذلك وهو الصحيح قال ابن عباس حين قيل له ان الناس يقولون الرضعة لايحرم قال كان ذلك ثم نسخ وعن ابن مسعود ال امر الرضاع الى ان قليله وكثيره يحرم وروى عن ابن عمر ان القليل يحرم وعند قيل له ابن الزبير يقول لاباس بالرضعة والرضعتين فقال قضاء الله خير من قضاء ابن الزبير قال الله تعالى وامهتكم التى ارضعنكم والتاويل بن مضاه توفى صلى الله عليه وسلم وهى فيما يقرأ تعنى حكمها فيما يقرأ غير مرضى لان القراءة انما يتعلق باللفظ دون الحكم.
مسئلة : اجمعوا على ان الرضاع بعد مدة الرضاع لايوجب التحريم لانه لايحصل التوليد والنمو بالرضاع الا فى المدة فلا يطلق بعد تلك المدة على المرضعة اما وقال دواد يوجب التحريم ابدا لحديث عائشة قالت جائت سهلة بنت سهيل امراة ابى حذيفة الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت يا رسول الله انى ارى فى وجه ابى حذيفة من دخول سالم وهو حليفه فقال صلى الله عليه وسلم ارضعى سالماخمسا تحرمى عليه رواه الشافعى ورواه مسلم وغيره بغير ذكر العدد والجواب ان الاجماع يدل على كون الحديث منسوخا ........ وعند عليه السلام لايحرم من الرضاع الا ما انبت اللحم والنشر العظم رواه ابو دواود من حديث ابن مسعود فى الصحيحين عن عائشة قالت دخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم وعندى رجل فقال ياعائشة من هذا قالت اخى من الرضاعة قال يا عائشة انظرن من اخوانكن فانما الرضاعة من المجاعة.
مسئلة : مدة الرضاع التى يوجب فيها التحريم سنتان ةبه قال ابويوسف ومحمد ين الحسن والشافعى واحمد ومالك وسعيد بن المسيب وعروة والشعبى وهو المروى عن عمر وابن عباس رواهما الدار قطنى عن على وابن مسعود اخرجهما ابن ابى شيبة وفى رواية عن ملك سنتان وشهر وفى اخرى عنه سنتان وشهران وفى اخرى عنه مادام محتاجا الى اللبن وقال ابو حنيفة سنتان وستة الشهر وقال زفر ثلاث سنين لنا قوله تعالى والولدت يرضعن اولادهن حولين كاملين لمن اراد ان يتم الرضاعة جمل الله تعالى التمام بهما ولامزيد على التمام وقوله تعالى وحمله وفصاله ثلثون شهرا وادنى مدة الحمل ستة اشهر فبقى للفصال سنتان وقوله تعالى وفصاله فى عامين وقوله صلى الله عليه وسلم لا رضاع الا ما كان فى الحولين رواه الدار قطنى من حديث ابن عباس وقال تفرد برفعه الهيثم بن جميل وكان ثقة حافظا وكذا وثقه احمد والعجلى وقال ابن عدى كان يغلط ورواه سعيد بن منصور عن ابن عيينة فوقفه وجه قول ابى حنيفة انه تعالى قال وحمله وفصاله ثلثون شهرا ذكر شيئين وضرب لهما مدة فكان لكل واحد منهما بكمالها كالاجل وقال ابن عدى كان يغلط ورواه سعيد بن منصور عن ابن عيينة فوقفه وجه قول ابى حنيفة انه تعالى قال وحمله وفصاله ثلثون شهرا ذكر شيئين وضرب لهما مدة فكان لكل واحد منهما بكمالها كالجل المضروب للدينين على شخصين الا انه قام المنقص فى مدة الحمل قول عائشة الولد لايبقى فى بطن امه اكثر من ستتبن ولو بقدر فلكة معزل وفى رواية ولو بقدر ظل معزل ومثله لايقال الاسماعا لان المقدرات لاتدرك بالراى فبقى مدة الفصال على الظاهر وهذا ليس بشى بوجوه احدها ان جعل قول عائشة منقصا لمدة الحمل ليس اولى من جعل قوله عليه السلام لارضاع بعد حولين قوله تعالى يرضعن اولادهن حولين كاملين لمن اراد ان يتم الرضاعة منقصا لمدة الرضاع ثانيها انه يلزم حيئذ الجمع بين الحقيقة والمجاز فى لفظ ثلاثين ثهراحيث اريدبه باعتبار الحمل اربعة وعشرون شهرا وباعتبار الفصال ثلاثون ثالثها انه يلزم من هذا التاويل استعمال ثلاثين فى اربعة وعشرين باعتبار الحمل مع انه لايتجوز شئ من اسماء العدد فى الاخر نص عليه كثير من المحققين لانها بمنزلة الاعلام فى مسمياتها وذكر لقول ابى حنيفة وغيره وجه اخرانه لابد من تغيير العذا لينقطع الانبات باللبن وذلك بزيادة مدة يتعود الصبى فيها بغيره ولم يحد ذلك الزيادة مالك وحده زفربحول لانه يشتمل على فصول اربعة وقدره ابو حنيفة بستة الشهر لانه ادنى مدة الحمل نظرا الى ان غذاء الجنين يغائر غذا الرضيع قلنا ان الشرع لم يحرم اطعام الرضيع غير اللبن قبل الحولين ليلزم اعتيار زيادة مدة التعود على الحولين فجاز ان يتعود بالطعام مع اللبن قبل الحولين وهو مختار ابن همام والطحاوى.
অর্থঃ- وامهتكم التى ارضعنكم واخوتكم من الرضاعة (তোমাদের সেসব মাতা, যারা তোমাদের বুকের দুধ পান
করিয়েছে এবং তোমাদের দুধ বোন)ঃ আলিমগণ এ ব্যাপারেও একমত যে, বুকের
দুধ পানজনিত ফুফু,
খালা, ভাতিজী ও ভাগিনীকে বিবাহ্ করা হারাম। আর বংশের কারণে যার সাথে বিবাহ্ হারাম। বুকের দুধ পানের
কারণেও তার সাথে বিবাহ্ বৈধ নয়। কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বুকের দুধ পান দ্বারাও তাই হারাম
হয় যা বংশের দ্বারা হারাম হয়। অপর এক বর্ণনায় বংশ (نسب) -এর স্থলে জন্ম (ولادت) শব্দ এসেছে। এ হাদীছ শরীফ বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা
বর্ণনা করেছেন। হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা সূত্রে হযরত আলী
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। একদা তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি আপনার চাচা হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর কন্যাকে
বিবাহ্ করবেন। কেননা সে কুরাঈশ বংশের সবচেয়ে সুন্দরী নারী। তিনি বললেন, তুমি কি
জান না, হামযা আমার দুধ ভাই। আর আল্লাহ্ পাক বংশের দ্বারা যা হারাম করেছেন, বুকের
দুধ পান দ্বারাও তাই হারাম করেছেন। এ হাদীছ শরীফ হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি
আলাইহি বর্ণনা করেছেন।
হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আমার দুধ চাচা এলেন এবং আমার কাছে ঘরের মধ্যে আসার অনুমতি
চাইলেন। আমি রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা না করা
পর্যন্ত তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। ইত্যবসরে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করলেন। আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, সে তোমার চাচা। তাকে অনুমতি দিতে
পারো। আমি বললাম,
ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে তো
স্ত্রীলোক বুকের দুধ পান করিয়েছেন, কোন পুরুষ লোক পান করাননি। হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিঃসন্দেহে সে তোমার চাচা। তোমার
কাছে ঘরের মধ্যে সে আসতে পারে। এটা ছিল পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা। এ
হাদীছ শরীফ হযরত ইমাম বুখারী, হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমা বর্ণনা করেছেন।
হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপস্থিতিতে আমি একজন পুরুষের আওয়ায শুনতে
পেলাম। তিনি হাফসা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি প্রার্থনা
করছিলেন। আমি বললাম,
ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এক
ব্যক্তি আপনার গৃহে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করছেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হাফসা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর দুধ চাচার নাম উল্লেখ করে
বললেন, আমার মনে হয় সেই ব্যক্তিই হবেন। আমি (এ কথা শুনে) আমার দুধ চাচার নাম উল্লেখ
করে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অমুক ব্যক্তি যদি জীবিত
থাকতেন তবে তিনিও কি আমার কাছে গৃহাভ্যন্তরে আসতে পারতেন? হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
نعم ان الرضاعة يحرم مايحرم من الولادة
হ্যাঁ, জন্মসূত্রে
যা হারাম বুকের দুধপানও তাই হারাম করে দেয়।” হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি
আলাইহি এ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন।”
ফায়দাঃ হযরত ইমাম আবু
হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে বুকের দুধ
পান অল্প হোক কি বেশী (এক চুমুকই হোক না কেন) তাই হারাম করে দেয় যা বংশসূত্রে
হারাম হয়। কেননা,
এ আয়াত শরীফ ব্যাপক ও শর্তহীন مطلق। তাছাড়া يحرم من الرضاعة ما يحرم من النسب এ হাদীছ শরীফও ব্যাপক ও শর্তহীন। অর্থাৎ আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফে
কমবেশীর কোন সীমা উল্লেখ নেই। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর
একটি মতও এরূপ। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বুকের
দুধ পান করা দ্বারা কেবল তখনই বিবাহ্ হারাম হবে যখন ক্ষুধার্থ অবস্থায় বা বিভিন্ন
সময়ে পাঁচবার পেট ভরে দুধ পান করবে। এটি হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি
আলাইহি-এর দ্বিতীয় মত। অপর এক বর্ণনা মতে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি
আলাইহি পাঁচবাবের স্থলে তিনবারের কথা বলেছেন। আবূ ছাওর, ইবনে
মুনযির, দাঊদ ও আবূ উবায়দ রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর মতও এটাই। তিনবার নির্ধারণ করার কারণ
হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা সূত্রে বর্ণিত হযরত ইবনে জুবায়ের
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর হাদীছ। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এক চুমুক
ও দুই চুমুক দুধ পান করলে হারাম হয়না। হযরত উম্মু ফযলের মারফূ হাদীছ শরীফে এক
চুমুক ও দুই চুমুকের স্থলে একবার দুধ পান ও দুইবার দুধ পান উল্লিখিত হয়েছে। তাঁর
অন্য বর্ণনায় املاجة (একবার চুমুক
দেয়া) ও املاجتان (দুইবার চুমুক দেয়া) শব্দদ্বয়ও
এসেছে। সবগুলোর অর্থ একই। এসব বর্ণনা হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উদ্বৃত
করেন।
হযরত আহমদ, নাসাঈ, ইবনে
হিববান ও তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহিম এ হাদীছ শরীফ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে জুবায়ের
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর মাধ্যমে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে
বর্ণনা করেন। কিন্তু হযরত তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটাকে مضطرب (সন্দেহ যুক্ত) বলেছেন।
হাম্বলী মাযহাবের
অনুসারীগণ এ হাদীছ শরীফকে তাঁদের মতের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করেন। কেননা, হাদীছ
শরীফে কেবলমাত্র এক বা দুইবার দুধপানকে হারাম না করার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং
তিনবার দুধ পান করলে হারাম হয়ে যাবে। যারা কমপক্ষে পাঁচবার দুধ পানকে হারাম হওয়ার
কারণ সাব্যস্ত করেছেন তাদের দলীল হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত
হাদীছ শরীফ। তিনি বলেন,
কুরআন শরীফে প্রথম عشر رضعات معلومات يحرمن (নির্দিষ্ট দশবার দুধপান করলে বিবাহ্ হারাম হবে) নাযিল হয়েছিল।
এরপর তা خمش معلومات (নির্দিষ্ট
পাঁচবার) দ্বারা রহিত হয়ে যায়। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত মুবারকের সময় কুরআন শরীফে তাই পাঠ করা হত।
হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণিত, হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি
বর্ণিত হাদীছ শরীফের ভাষা এরূপ-
انزل فى القران عشر رضعات فنسخ من ذلك خمس وصار الى خمس رضعات فتوفى رسول الله صلى الله عليه وسلم والمر على ذلك.
কুরআন শরীফে
ম্লষ্ক্র॥ঞ্জ॥ম্ভম্লব্জণ্ড (দশবার দুধপান) নাযিল হয়েছিল। তারপর তা থেকে ম্পহৃঃ
(পাঁচবার) রহিত হয়ে গেছে এবং ঞ্জম্পহৃঃঞ্জ॥ম্ভম্লব্জণ্ড (পাঁচবার দুধপান) অবশিষ্ট
রয়েছে। আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন
ওফাত মুবারক পেয়েছেন তখনো অবস্থা এরূপই ছিল। অর্থাৎ অনুরূপই পাঠ করা হত।” আমাদের
বক্তব্যঃ কুরআন শরীফের শুম্বঞ্জহৃণ্ডèব্জণ্ড॥ এর মুকাবিলায় ঞ্জম্নম্ফ“রুঞ্জব্জম্নব্জম্ফঞ্জ গ্রহণযোগ্য নয় এবং ণ্ডম্লব্জ॥ম্ভ
(বৈপরীত্য)-এর সময় সাবধাণতাবশতঃ হারামকেই প্রাধান্য দিতে হবে। এছাড়া হযরত আয়িশা
ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর হাদীছ শরীফ যদিও সনদের দিক থেকে ছহীহ্ কিন্তু বাস্তবে
তা পরিত্যাজ্য। অন্যথায় বলতে হবে যে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত মুবারক পর্যন্ত কুরআন শরীফে ম্পহৃঃঞ্জ॥ম্ভম্লব্জণ্ডঞ্জহৃম্লèৈহৃব্জণ্ড পাঠ করা হত। (অর্থাৎ
হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত মুবারকের পর কুরআন শরীফ
সংকলন করার সময় এই শব্দগুলো বাদ দেয়া হয়েছে।) এমতাবস্থায় রাফিযীদের কথাই সঠিক বলে
মেনে নিতে হবে। তাদের মতে,
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর কুরআন শরীফের অনেকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ এ
হচ্ছে কুফরী কথা। এতে èব্জশুব্জঞ্জশ্চৈঞ্জম্নৈব্জল্পম্মèশু আল্লাহ্ পাক-এর এ বাণী মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়। আর হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর উক্তির ব্যাখ্যা যদি এরূপ করা হয় যে, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত মুবারক হওয়ার অর্থ ওফাত মুবারকের সময়
নিকটবর্তী হওয়া, তবে তা এভাবে ছহীহ্ হতে পারে যে, ম্পহৃঃঞ্জহৃম্লèৈহৃব্জণ্ড দ্বারা তো
ম্লষ্ক্র॥ঞ্জহৃম্লèৈহৃব্জণ্ড
রহিত হয়ে গিয়েছিল। এরপর হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওফাত
মুবারকের কিছু পূর্বে হৃম্লèৈহৃব্জণ্ড ম্পহৃঃ ও রহিত হয়ে গেছে। আর এটাই সঠিকমত। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুকে যখন বলা হলো যে, লোকেরা বলছে যে, একবার
দুধপান করলে তাতে বিবাহ্ হারাম সাব্যস্ত হয়না। তখন তিনি বললেন, প্রথমে
এরূপ ছিল তারপর তা রহিত হয়ে গেছে। হযরত ইবনে মাসউদ রহমতুল্লাহি রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুমা বলেন, দুধপানের বিষয়টি শেষে এ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে যে, অল্প দুধ
পান হোক বা অধিক তা সবই হারামের কারণ হবে। হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অল্প
দুধপানও বিবাহ্ হারামের কারণ। হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমাকে যখন বলা হলো
যে, হযরত ইবনে যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, এক-দুইবার দুধপানে বিবাহ্ হারাম
হয়না। তখন তিনি বললেন,
আল্লাহ্ পাক-এর ফায়সালা হযরত ইবনে যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুমা-এর ফয়সালার চেয়ে উত্তম। আল্লাহ্ পাক বলেন, èব্জহৃশ্চণ্ডরূহৃঞ্জব্জণ্ডৈ‘ঞ্জব্জ॥ম্ভম্লশুরূহৃ (এ আয়াত শরীফে এক-দুইবার দুধ পানকে বাদ দেয়া হয়নি) হযরত
আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর উক্তি ণ্ডèল্প‘ঞ্জ॥ঃèঞ্জৈব্জৈৈষ্ফশ্চঞ্জèশ্চ‘ঞ্জল্প“হৃব্জঞ্জ“ল্ফ॥প্ট
এর অর্থ যদি এই করা হয় যে,
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত মুবারকের
সময় ম্পহৃঃঞ্জ॥ম্ভম্লব্জণ্ড এর বিধান ক্বিরায়াতে বিদ্যমান ছিল তাহলে তা হবে
অনভিপ্রেত। কেননা,
কিরায়াতের সম্পর্ক হচ্ছে শব্দের সাথে, বিধানের
সাথে নয়।
মাসয়ালাঃ এ ব্যাপারে
উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ একমত যে, দুধপানের মিয়াদ শেষ হওয়ার পর দুধপান করা বিবাহ্ হারামের
কারণ নয়। কেননা, তা দ্বারা না উৎপাদন হয়, না শরীর বর্ধন হয়। দুধপান সময়ের পর দুধদানকারিনীকে এ কারণে
মাতা বলা যাবেনা। হযরত দাঊদ যাহিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে সব সময়ই দুধপান
দ্বারা বিবাহ্ হারাম হয়। কেননা, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে, হযরত আবূ
হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী সাহালা বিনতে সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু আনহা
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া
রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সালিম (হযরত আবূ হুযাইফা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর মিত্র) আগমন করলে আমি আবূ হুযাইফার চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ
দেখতে পাই। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ব্জ॥ম্ভম্ল‘ঞ্জঃব্জƒৈহৃব্জঞ্জম্পহৃঃব্জঞ্জণ্ডম্ন॥হৃ‘ঞ্জম্ল“ৈশ্চ
(সালিমকে তুমি পাঁচবার দুধপান করিয়ে দাও তাহলে তুমি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে।)
হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীছ শরীফটি বর্ণনা করেছেন। হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ এ
হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন কিন্তু দুধ পান করানোর সংখ্যা উল্লেখ করেননি।
আমাদের জাওয়াব এই যে, আলিম-উলামাগণ
এ ব্যাপারে একমত যে,
এ হাদীছ শরীফ রহিত হয়ে গেছে। ... ... ... হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর বরাত
দিয়ে হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর একটি হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন,
ব্জৈ“ম্ন॥হৃঞ্জহৃশুঞ্জব্জ॥ৈম্ভব্জম্লঞ্জব্জব্জৈঞ্জহৃব্জঞ্জব্জশুব্দণ্ডঞ্জব্জৈৈম্নহৃঞ্জèব্জশৈুষ্ক্র॥ঞ্জব্জম্লৈম্মহৃ
(কেবলমাত্র সেই দুধ পানই বিবাহ্
হারামের কারণ হয় যাতে গোশ্ত সৃষ্টি হয় এবং হাড্ডি বৃদ্ধি পায়।) বুখারী শরীফ ও
মুসলিম শরীফে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে একটি হাদীছ শরীফ বর্ণিত
হয়েছে, তিনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছে আগমন করেন। তখন আমার
কাছে এক ব্যক্তি বসা ছিল। তিনি বললেন, হে আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু
আনহা! এ ব্যক্তি কে?
আমি বললাম, আমার দুধ ভাই। তখন তিনি বললেন,
ঞ্জ“ব্জঞ্জম্লব্জুষ্ক্রব্ধঞ্জব্জশুম্ম॥শুঞ্জহৃশুঞ্জব্জম্পèব্জশুরূশুঞ্জল্পব্জশুহৃব্জঞ্জব্জ॥ৈম্ভব্জম্লব্ধঞ্জহৃশুঞ্জব্জƒৈহৃভ্রব্জম্লব্ধ
(হে আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু
আনহা! তুমি তোমার ভাইদের দেখে নাও। কেননা, সেই দুধপানই (বিবাহ্ হারাম হওয়ার
কারণ হয়, যা) ক্ষুধার্ত অবস্থায় হয় (অর্থাৎ দুধপান করার মিয়াদের মধ্যে হয়।)
মাসয়ালাঃ যে দুধ পান
বিবাহ্ হারাম হওয়ার কারণ হয় তার মিয়াদ দু’বছর। হযরত ইমাম আবূ ইউছূফ, ইমাম
মুহাম্মদ ইবনে হাসান,
হযরত ইমাম শাফিয়ী, হযরত ইমাম মালিক, হযরত
সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব,
হযরত উরওয়া ও হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর অভিমত
এটাই। হযরত দারা কুত্নী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবনে আবূ শাইবা
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুমা থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আরো তিনটি
উক্তি বর্ণিত আছে। এক উক্তিতে দু’বছর এক মাস, দ্বিতীয় উক্তিতে দু’বছর দু’মাস এবং
তৃতীয় উক্তিতে কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। শিশুর যতদিন প্রয়োজন ততদিন দুধ পানের
মিয়াদ। হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে, দু’বছর ছয়
মাস। হযরত ইমাম যুফার রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে তিন বছর। আমাদের প্রথমোক্ত মতের
স্বপক্ষে এই দলীল পেশ করা হয়। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
èব্জèৈব্জম্ফৈণ্ডঞ্জ“॥ম্ভম্লশুঞ্জব্জèব্জৈম্ফশ্চশুঞ্জম্নè“ৈশুঞ্জরূব্জহৃ“ৈশুঞ্জƒৈহৃশুঞ্জব্জ॥ব্জম্ফঞ্জব্জশুঞ্জ“ণ্ডহৃঞ্জব্জ॥ৈম্ভব্জম্লব্ধদ্ব
(যে দুধপান কাল পূর্ণ করতে চায় তার
জন্য জননীগণ তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে।) আল্লাহ্ পাক
এ আয়াত শরীফে দুধ পানের পূর্ণ মিয়াদ দু’বছর বর্ণনা করেছেন। সুতরাং মিয়াদ
পূর্ণ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময় বাড়ানোর অবকাশ নেই। আল্লাহ্ পাক অন্য এক আয়াত শরীফে
বলেন, èম্নহৃশ্চৈঞ্জèল্পম্বব্জশ্চৈঞ্জরুরৈুèশুঞ্জষ্ক্রশ্চ॥ব্জ তাকে গর্ভে
ধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়াতে লাগে ত্রিশ মাস। (সূরা আহ্কাফ/১৫) আর যেহেতু গর্ভের
ন্যূনতম সময়কাল ছয় মাস তাই দুধ পানের মিয়াদ দু’বছরই অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহ্ পাক
তৃতীয় এক আয়াত শরীফে বলেছেন, èল্পম্বব্জশ্চৈঞ্জল্প‘ঞ্জম্লব্জহৃ“শু (এবং
তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে।(সূরা
লুকমান/১৪)
এ আয়াত শরীফে দুধপানের সময়কাল
পরিস্কার দু’বছর বলা হয়েছে। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ব্জৈ॥ম্ভব্জম্লঞ্জব্জব্জৈঞ্জহৃব্জঞ্জরূব্জশুঞ্জল্প‘ঞ্জব্জম্নৈè“ৈশু (সেই দুধপানই ধর্তব্য হবে যা দুই বছরের মধ্যে হবে।)
হযরত দারা কুতনী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীছ শরীফ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুমা সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, শুধু হাইছাম ইবনে জামীল
রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীছ শরীফকে মারফূ ত্মহৃ॥ল্পèম্লত্র রূপে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হায়ছাম রহমতুল্লাহি
আলাইহি ছিকাহ্ ও হাফিয ছিলেন। হযরত আহমদ ও আজলী রহমতুল্লাহি আলাইহিমাও তাঁকে
ছিকাহ্ বলেছেন। হযরত ইবনে আদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি ভুল
করে ফেলতেন। হযরত সাঈদ ইবনে মানছুর ইবনে উয়াইনা সূত্রে এটি মাওকুফ ত্মহৃèল্ফèল্পত্র রূপে বর্ণনা করেছেন মারফূ
ত্মহৃ॥ল্পèম্লত্র
করেননি।
হযরত আবূ হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দলীল হচ্ছেঃ আল্লাহ্ পাক বলেন, èম্নহৃশ্চৈঞ্জèল্পম্বব্জশ্চৈঞ্জরুরৈুèশুঞ্জষ্ক্রশ্চ॥ব্জ । এ আয়াত
শরীফে আল্লাহ্ পাক গর্ভ এবং দুধ ছাড়ানো এ
দু’টি জিনিসের মেয়াদ ত্রিশ মাস নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং উভয়েরই সময় কাল ত্রিশমাস
হওয়া উচিত। যেমন,
কোন ব্যক্তি যদি দু’জন লোককে ঋণ দান করে আর তা আদায়ের
সময়কাল ত্রিশ মাস হয় তবে প্রত্যেক ঋণী ব্যক্তিরই ঋণ আদায়ের সময়কাল ত্রিশমাস
সাব্যস্ত হয় (এরূপ নয় যে পনের মাসএকজনের এবং পনের মাস অপরজনের) কিন্তু গর্ভের
মেয়াদ আয়াত শরীফ থেকে ত্রিশ মাস বুঝা গেলেও আমরা দু’বছর সাব্যস্ত করেছি। কেননা, হযরত
আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা এরূপই বলেছেন। তাঁর উক্তি হচ্ছেঃ
ব্জèৈম্ফৈঞ্জব্জৈ“ব্দল্ফ‘ঞ্জল্প‘ঞ্জব্দম্ভ্রশুঞ্জব্জহৃশ্চঞ্জব্জরূরু॥ঞ্জহৃশুঞ্জঃশুণ্ড“শুঞ্জèèৈব্দল্ফম্ফ॥ঞ্জল্পরৈূব্ধঞ্জহৃম্লৎৈ
শিশু মায়ের উদরে দু’বছরের
বেশী থাকে না যদিও তা চরকার চাকুর সমান হয়। অন্য এক বর্ণনায় এসেছেঃ èèৈঞ্জব্দল্ফম্ফ॥ঞ্জম্মঞ্জৈহৃম্লৎৈ
(যদিও তা টাকুর ছায়া সমান হয়।) এ অভিপ্রায়
যদিও হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর। কিন্তু সময়ের সীমা নির্ধারণ শুধু
অভিপ্রায় দ্বারা হতে পারে না। বাকি রইল দুধ ছাড়ানোর সময় কাল। আর তা আয়াত শরীফের
স্পষ্ট অর্থ অনুযায়ী ত্রিশ মাসই থাকবে।
এ দলীল কয়েক কারণে সঠিক
নয়। প্রথমতঃ আখিরী রসূল,
হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেনঃ ঞ্জব্জৈ॥ম্ভব্জম্লঞ্জব্দম্লম্ফঞ্জম্নè“ৈশু দু’বছরের পর
দুধ পানের বিধান কার্যকর নয়।
আর আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন,
“॥ম্ভম্লশুঞ্জব্জèব্জৈম্ফশ্চশুঞ্জম্নè“ৈশুঞ্জরূব্জহৃ“ৈশুঞ্জƒৈহৃশুঞ্জব্জ॥ব্জম্ফঞ্জব্জশুঞ্জ“ণ্ডহৃ
ব্জ॥ৈম্ভব্জম্লব্ধ
তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু’বছর দুধ
পান করাবে যে দুধ পানকাল পূর্ণ করতে চায়। এ দু’টিই দুধপানের সময়কাল (ত্রিশ মাস
থেকে কমিয়ে) দু’বছরে সীমিত করছে। এরপর একথা বলা হয় যে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর উক্তি গর্ভের সময়কাল কমিয়ে দিয়েছে। এ উক্তি অগ্রাধিকার
পাওয়ার যোগ্য নয়। দ্বিতীয়ঃ তখন রুরৈুèশুঞ্জষ্ক্রশ্চ॥ শব্দের মধ্যে ম্নল্ফ“ল্ফণ্ড ও হৃভ্রব্জৎ এর সমন্বয় অনিবার্য হয়ে পড়বে। গর্ভের প্রেক্ষিত
হবে চব্বিশ মাস ত্মহৃভ্রব্জৎব্জত্র এবং দুধপানের সময়কালের দিক থেকে হবে ত্রিশ মাস
ত্মম্নল্ফ“ল্ফব্ধত্র । তৃতীয়তঃ রুরৈুèশু শব্দের অর্থ করতে হবে চব্বিশ মাস।
অথচ সংখ্যাবাচক পদে ত্মব্জঃহৃঞ্জম্লম্ফম্ফত্র একটি সংখ্যা রূপক বলে অন্য সংখ্যার
অর্থ গ্রহণ করা যায় না। নির্দিষ্ট নামবাচক পদে
ত্মব্জঃহৃঞ্জব্জম্লৈহৈৃত্র যেমন, ব্যক্তি, প্রাণী
বা বস্তুর নির্দিষ্ট নাম বুঝায়, সংখ্যাবাচক পদও তদ্রুপ। বহু তত্ত্বাভিজ্ঞ ব্যক্তিই এরূপ
ব্যাখ্যা করেছেন। হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর অভিমতের একটি কারণ
এও বর্ণনা করা হয়েছে যে,
মায়ের দুধে দু’বছর পর্যন্ত শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ
বাড়তে থাকে। তারপর খাদ্য পরিবর্তনের প্রয়োজন এবং তজ্জন্য আরো একটুকু সময়ের প্রয়োজন
যাতে শিশু খাদ্য পরিবর্তনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি
এই আপেক্ষিক সময়ের কোন সীমারেখা টানেননি। হযরত ইমাম জুফার রহমতুল্লাহি আলাইহি এক
বছর নির্ধারণ করেছেন। যাতে চারটি ঋতুই অতিক্রম করে এবং হযরত ইমাম আবু হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি ছয় মাস নির্ধারণ করেছেন। কেননা, এটাই গর্ভের স্বল্পতম সময়। আর
গর্ভস্থ সন্তানের খাদ্য হচ্ছে দুধপোষ্য শিশুর চেয়ে ভিন্নতর। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে
দু’বছরের মধ্যে শিশুকে দুধ ছাড়া অন্য কোন খাদ্য দিতে শরীয়ত নিষেধ করেননি। সুতরাং
দুই বছরের অধিক সময় নির্ধারণ প্রয়োজন কি? দু’বছর শেষ হওয়ার পূর্বেও শিশু দুধের
সাথে অন্য খাদ্যে অভ্যস্ত হতে পারে। তাই হযরত ইবনে হুমাম ও হযরত তাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত ইমাম আবূ ইউছূফ ও হযরত ইমাম মুহাম্মদ রহমতুল্লাহি
আলাইহিমা-এর অভিমতই গ্রহণ করেছেন।”
(এবং তোমাদের স্ত্রীদের মাতাগণ)ঃ এ আয়াতাংশের মধ্যে সকল দাদী-নানী শামিল। সকল
দূরবর্তী ও নিকটবর্তী দাদী-নানী এর অন্তর্ভুক্ত। আর হাদীছ শরীফ অনুযায়ী স্ত্রীদের
দুধমা ও দুধনানী ও দুধদাদীও বংশগত দাদী-নানীর সাথে শামিল। যে নারীদের সাথে
মালিকানা বা মালিকানা সন্দেহের কারণে একান্ত সাক্ষাত করা হয়েছে সর্বসম্মতভাবে
তাদের মাতাগণও এই বিধানের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি
আলাইহি-এর মতে ব্যভিচারকৃত নারীর মাতাগণও এই বিধানভুক্ত। কোন পরনারীকে যদি
শাহ্ওয়াতের সাথে স্পর্শ করা হয় তবে তার মাতাগণও ব্যভিচারকৃত নারীর মাতাদের মত
হারাম হয়ে যাবে।
è॥ব্দব্জুব্দরূহৃ
(আর তোমাদের লালিত-পালিত কন্যাগণ)ঃ ॥ব্দব্জুব্দ বহুবচন একবচন ঞ্জ॥ব্দ“ব্দব্ধ -
॥ব্দ“ব্দ বলা হয় সেই শিশুকে যে প্রথম স্বামীর ঔরসজাত এবং মায়ের সাথেচলে আসে। ॥ব্দব্জুব্দশব্দে ম্লহৃèহৃঞ্জহৃভ্রব্জৎ কিংবা ল্ফ“ব্জঃ এর ভিত্তিতে সর্বসম্মতভাবে স্ত্রীদের সকল পৌত্রী ও দৌহিত্রী
নিকটবর্তী হোক বা দূরবর্তী শামিল। আর সেসব নারীর সন্তান-সন্ততিও এই শব্দে শামিল
রয়েছে যাদের সাথে মালিকানা কিংবা মালিকানা সন্দেহের কারণে একান্ত সাক্ষাত করা হয়েছে।
হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ব্যভিচারকৃত নারীর সকল মেয়ে
সন্তানদের ক্ষেত্রে এই বিধান কার্যকর।
ব্জণ্ডৈ‘ঞ্জল্প‘ঞ্জম্নভ্রè॥রূহৃ
(যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে)ঃ সর্বসম্মতভাবে এ শর্ত ব্জম্নণ্ড॥ব্জৎ‘ বা
নিবৃত্তিমূলক নয় (যে,
অভিভাবকত্বে না থাকলে তারা হালাল হয়ে যাবে) বরং সাধারণ
যেহেতু ইয়াতীম বালিকারাও বিপিতার অভিভাবকত্বে থাকে, তাই এই শর্তটির উল্লেখ করা হয়েছে।
হযরত দাঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে এটি নিবৃত্তিমূলক শর্ত। অর্থাৎ যে
রাবায়িবগণ ত্ম॥ব্দব্জুব্দত্র বিপিতার
অভিভাবকত্বে নেই তারা হালাল। হযরত আব্দুর রায্যাক ও হযরত ইবনে হাতিম রহমতুল্লাহি
আলাইহিমা ছহীহ্ সনদে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর এরূপ উক্তি বর্ণনা করেছেন।
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর এই উক্তি যদি রিওয়াইয়াতগত ভাবে সঠিক হয় তবে সব রকম
রাবায়িবগণ হারাম হওয়ার উপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণের ঐক্যমত
ত্মব্জভ্রহৃব্জম্লত্র প্রমাণিত হবে না। বরং তখন ঐক্যমত দ্বারা প্রথম যুগের পরের
ঐক্যমত বুঝাবে।
হৃশুঞ্জশুঃব্জুরূহৃঞ্জব্জণ্ডৈ‘ঞ্জম্ফম্পণ্ডৈহৃঞ্জব্দশ্চশু
(তোমরা যাদের সাথে একান্ত সাক্ষাত করেছ সে
স্ত্রীদের)ঃ ম্বশ্চৈঞ্জƒঞ্জব্জণ্ডৈ‘ঞ্জƒঞ্জম্ফম্পণ্ডৈহৃঞ্জব্দশ্চশুঞ্জ
ও হৃèম্বèৈ সহ
ছিফাত হয়েছে শুঃব্জপ্ট শব্দের। সর্বসম্মতভাবে এ শর্তটি ব্জম্নণ্ড॥ব্জৎ‘ বা নিবৃত্তিমূলক (অর্থাৎ যে
নারীদের সাথে একান্ত সাক্ষাত হবে না তাদের কন্যাগণ হারাম হবে না) এটি উভয় ঞ্জ
শুঃব্জুরূহৃএর ছিফাত বা বিশেষণ হবে না। কেননা, দু’টির ম্লব্জহৃৈ ভিন্ন ভিন্ন। আর
একটি হৃম্লহৃèৈ এর উপর দু’টি ভিন্ন
ভিন্ন ম্লব্জহৃৈ এর ম্লহৃৈ হতে পারে না।
কেবলমাত্র র্ফারার একটি উক্তি মতে তা হতে পারে। ... ... ... ... ... ... ... ...
...।
হযরত ইমাম তিরমিযী
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি তাঁর পিতা
থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন নারীকে বিবাহ্
করবেএবং তার সাথে একান্ত সাক্ষাত করবে তার জন্য ঐ নারীর কন্যাকে বিবাহ্ করা হালাল
নয়। আর যদি সে একান্ত সাক্ষাত না করে থাকে তবে তার কন্যাকে বিবাহ্ করতে পারবে। আর
যে ব্যক্তি কোন নারীকে বিবাহ্ করবে তার জন্য ঐ নারীর মাতাকে বিবাহ্ করা হালাল নয়-
একান্ত সাক্ষাত করুক বা না করুক। হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সনদের
দিক থেকে এ হাদীছ ছহীহ্ নয়। হযরত ইবনে লুহাইয়াহ্ ও মুছান্না ইবনে সাব্বাহ্
রহমতুল্লাহি আলাইহিম এই হাদীছ শরীফ হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি
সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদীছ শরীফ বর্ণনার ক্ষেত্রে তারা উভয়ই দুর্বল রাবী।
হযরত শায়খ হাজার
রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
হযরত ইবনে হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তাফসীরে শক্তিশালী
সনদে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর এই উক্তি উদ্বৃত করেন যে, কোন
ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে তালাক দেয় কিংবা স্ত্রী মারা যায় এবং সে তার সাথে একান্ত
সাক্ষাত করার সুযোগ না পায় তবুও ঐ স্ত্রীর মাতাকে তার পক্ষে বিবাহ্ করা বৈধ নয়।
হযরত তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই মাসয়ালার উপর ঐক্যমত ত্মব্জভ্রহৃব্জম্লত্র পোষণ করেছেন। কিন্তু হযরত
যায়দ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর উক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনায় মতভেদ
রয়েছে। হযরত ইবনে শাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুসনাদে আছে, যদি
একান্ত সাক্ষাত না করে থাকে এবং তালাক দিয়ে দেয় তবে হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু-এর মতে তালাকপ্রাপ্তার মাতাকে বিবাহ্ করায় কোন দোষ নেই। কিন্তু একান্ত
সাক্ষাতের পূর্বে স্ত্রী মারা গেলে তার মাতাকে বিবাহ্ করাকে তিনি মাকরূহ্ মনে
করতেন। হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে সাঈদ রহমতুল্লাহি
আলাইহি-এর বর্ণনা উদ্বৃত করেন যে, হযরত যায়িদ
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা
হয় যে, কারো স্ত্রী যদি একান্ত সাক্ষাত করার পূর্বেই মারা যায় তবে তার মাতাকে বিবাহ্
করা তার পক্ষে জায়িয আছে কি? তিনি জবাব দেন, না। মাতার কোন অবস্থা স্পষ্টভাবে
বর্ণনা করা হয়নি। (একান্ত সাক্ষাতের) শর্ত হচ্ছে রাবায়িবদের ত্ম॥ব্দব্জুব্দত্র সম্পর্কে। হযরত ইবনে হাতিম
রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর এ
উক্তি উদ্বৃতি করেন যে,
উভয়ের হারাম হওয়াই (একান্ত সাক্ষাত দ্বারা) শর্তযুক্ত। হযরত
মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতও এরূপ। হযরত ইবনে আবূ শাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহি
প্রমুখ হযরত যায়িদ ইবনে ছাবিত
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা-এরও এরূপ উক্তি
বর্ণনা করেছেন। হযরত আর্ব্দু রায্যাক ও হযরত ইবনে হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর
বর্ণনায় হযরত ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এরও এরূপ উক্তি বিধৃত আছে। যদি হযরত
আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উল্লিখিত উক্তি
ছহীহ্ প্রমাণিত হয়,
তবে হযরত তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি যে ঐক্যমতের ত্মব্জভ্রহৃব্জম্লত্র কথা বলেছেন, তার অর্থ
হবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও তাবিঈনের যুগের পর আলিম
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমত। অর্থাৎ আলিমগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, শাশুড়ীকে
কোন অবস্থায়ই বিবাহ্ করা জায়িই নয়, স্ত্রীর সাথে একান্ত সাক্ষাত করা
হোক বা না হোক।
ম্ফম্পণ্ডৈহৃঞ্জব্দশ্চশু এর মধ্যে ব্দব্জপ্ট অব্যয় ণ্ডম্লম্ফ“শ্চ এর জন্য। অর্থাৎ তোমরা তাদের
(স্ত্রীদেরকে) পর্দার মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছো। কিংবা
ব্দব্জপ্ট ব্যবহৃত হয়েছে
হৃম্বব্জম্নব্দণ্ড বা সাহচর্য বুঝাবার জন্য। অর্থাৎ তোমরা তাদের নিয়ে পর্দার
মধ্যে প্রবেশ করেছো। এখানে পর্দার মধ্যে ঢোকার পরোক্ষ অর্থ একান্ত সাক্ষাত করা।
যেমন, আবরদের
বাকবিধিতে আছে,
ব্দশুুঞ্জম্ল“ৈশ্চব্জঞ্জèম্ভ॥ব্দঞ্জম্ল“ৈশ্চব্জঞ্জব্জম্নৈভ্রব্জব্দ
ঐ নারীর উপর তাঁবু
খাটিয়েছে এবং পর্দা টানিয়েছে। অর্থাৎ একান্ত সাক্ষাত করেছে। কোন নারীকে শাহ্ওয়াতের
সাথে স্পর্শ করা এবং শরমগাহ্র দিকে শাহ্ওয়াতের সাথে তাকানো হযরত ইমাম আবূ হানীফা
রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে একান্ত সাক্ষাত সমতুল্য।
ল্পব্জশুঞ্জহৈৃঞ্জণ্ডরূèশুèব্জম্ফম্পণ্ডৈহৃঞ্জব্দশ্চশুঞ্জল্পব্জৈঞ্জভ্রশুব্জম্নঞ্জম্ল“ৈরূহৃ
(কিন্তু যদি তাদের সাথে একান্ত সাক্ষাত না করে থাকে তবে (এ বিবাহ্)ে তোমাদের কোন
অপরাধ নেই)ঃ একান্ত সাক্ষাতহীন নারীকে একান্ত সাক্ষাতকৃত নারীর সাথে তুলনা করে
একান্ত সাক্ষাতহীন নারীদের কন্যাদেরকেও বিবাহ্ করা হারাম মনে করার সম্ভাবনা ছিল।
এই তুলনা পরিহার করার জন্য স্পষ্টরূপে বলে দেয়া হয়েছে যে, একান্ত
সাক্ষাতহীন স্ত্রীর কন্যাদের বিবাহ্ করায়
কোন অপরাধ নেই।
èম্নব্জৈুৈ (আর স্ত্রীদের) ঃ ম্নব্জৈুৈ বহুবচন ম্ন“ৈশ্চৈ এর। ম্ন“ৈশ্চৈ অর্থ স্ত্রী। স্ত্রীকে ম্ন“ৈশ্চৈ বলার কারণ হচ্ছে স্ত্রী
স্বামীর জন্য হালাল (তখন ল্পম্ল“ৈ
অর্থ হৃল্পম্লèৈ হবে)। কিংবা স্ত্রী স্বামীর বিছানায়
অবস্থান করে।
যে নারীদের সাথে পুত্রগণ
মালিকানা সূত্রে কিংবা মালিকানা সন্দেহে একান্ত সাক্ষাত করবে তারাও স্ত্রীদের
পর্যায়ভুক্ত হবে। এ বিষয়ে সবাই একমত। আর যে নারীদের সাথে পুত্রগণ ব্যভিচার করবে
হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে পিতার জন্য তারাও পুত্রের
বিবাহিতাদের মত হারাম।
ব্জব্দশুব্জপ্টঞ্জরূহৃ (তোমাদের পুত্রদের)
ঃ ম্লহৃèহৃঞ্জহৃভ্রব্জৎ বা ব্যাপক রূপক অর্থে ব্জব্দশুব্জপ্টশব্দ সকল শাখা-প্রশাখাকে শামিল
করছে। পৌত্র হোক,
দৌহিত্র হোক মোটকথা অধস্তন পুত্র ও কন্যাদের সকল পুত্রগণ
এতে শামিল।
ব্জৈৈ“শুঞ্জহৃশুঞ্জব্জম্বব্জৈব্দরূহৃ
(যারা তোমাদের ঔরসজাত)ঃ এ কথার দরূন পোষ্য
পুত্র বের হয়ে গেছে। আরববাসীরা
পোষ্যপুত্রকেও পুত্র সমতুল্য মনে করতো, যদিও তা রূপকভাবেই হতো। হযরত ইবনে
জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “হযরত ইবনে জুবাইহ্ রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলতেন, একদা আমি হযরত আতা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে
èম্নব্জৈুঞ্জৈব্জব্দশুব্জুরূহৃঞ্জব্জৈৈ“শুঞ্জহৃশুঞ্জব্জম্বব্জৈব্দরূহৃ
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বলেন, আমরা
পরস্পরে বলাবলি করতাম যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত যায়দ
ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রীকে বিবাহ্ করেন তখন মুশরিকরা কানাঘুষা
করা শুরু করলো। তখন এই আয়াত শরীফ নাযিল হয় এবং এ আয়াত èহৃব্জঞ্জভ্রম্লঞ্জৈব্জম্ফম্ল“ব্জপ্টঞ্জরূহৃঞ্জব্জব্দশুব্জপ্টঞ্জরূহৃ এবং তোমাদের পোষ্য পুত্র যাদের তোমরা পুত্র বলো, আল্লাহ্
পাক তাদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি (সূরা আহ্যাব/৪) ও নাযিল হয়।
আর এ আয়াত
হৃব্জঞ্জরূব্জশুঞ্জহৃম্নহৃম্ফঞ্জব্জব্দব্জঞ্জব্জম্নম্ফঞ্জহৃশুঞ্জ॥ভ্রব্জরৈূহৃ
মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন (সূরা
আহযাব/৪০)ঞ্জও নাযিল হয়। বংশগত পৌত্র ও দৌহিত্র মাধ্যমে হোক কিংবা বিনা মাধ্যমে
একথা দ্বারা বাদ পড়েনি। কেননা, এরা সবাই ঔরসজাত, যদিও তা কারো মাধ্যমে হোক। তবে
দুধপুত্র ও তার শাখা-প্রশাখা একথা ত্মহৃশুঞ্জব্জম্বব্জৈব্দরূহৃত্র দ্বারা অবশ্যই
বাদ পড়েছে। কিন্তু তাদের স্ত্রীদের বিবাহ্ হারাম হওয়া হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
অর্থাৎ নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“ম্ন॥হৃঞ্জহৃশুঞ্জব্জ॥ৈম্ভব্জম্লঞ্জহৃব্জঞ্জ“ম্ন॥হৃঞ্জহৃশুঞ্জব্জশৈুঃব্দ
(বংশ দ্বারা যা হারাম হয় দুধ পান
দ্বারাও তা হারাম হয়)। আর একথার উপরই ঐক্যমত ইজমা অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
(অসমাপ্ত)
0 Comments:
Post a Comment