হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ( ৯ নং )

হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও
তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ        

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। 

অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।       প্রসঙ্গতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেহিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মাকছূদ বা উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। কেননা,প্রথমতঃ কিছু লোক কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহ্মঅর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বক্তব্য ও লিখনীর মাধ্যমে পর্দা সম্পর্কে সমাজে নানাবিধ বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। যেমন কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকায় পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছে যে,

 “....... মহিলারা মুখ বা চেহারা, হাত ও পা খোলা রেখে বাহিরে বের হতে পারবে।” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের খিলাফ। তারা মূলতঃ কুরআন শরীফের একখানা আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণেই এরূপ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য পেশ করেছে।

৯  খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলাদের খাছ পর্দা হলো- ১. মহিলারা সর্বদাই ঘরে অবস্থান করবে। ২. ঘরে অবস্থানকালে হোক অথবা বাইরে হোক কোন অবস্থাতেই গায়রে মাহ্রামদের সাথে দেখা দিতে পারবেনা। ৩. প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে বোরকা, হাত মোজা, পা মোজা পরিধান করতঃ চেহারা ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। ৪. বোরকা কালো রংয়ের হওয়াই আফযল ও অধিক পর্দার কারণ। ৫. সর্বদা দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখবে। ৬. বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলবে না। ৭. প্রয়োজনে গায়রে মাহ্রাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে শক্ত স্বরে কথা বলবে, নরম স্বরে কথা বলবে না। এটাই খাছ শরয়ী হিজাব বা পর্দা। আর এটাই শরীয়তের নির্দেশ।       অতএব, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যে অনেকেই পর্দা তরক করে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা। দ্বিতীয়তঃ কতিপয় নামধারী পীর, আমীর, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মাওলানারা প্রকাশ্যে বেগানা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, ইফতার করে, ঘরোয়া বৈঠক করে, মিটিং-মিছিল করে। আর এটাকে তারা ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থের দোহাই দিয়ে জায়িয বলে প্রচার করছে।(নাউযুবিল্লাহ) অথচ এ আক্বীদা পোষণ করা কুফরী।          মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ছূরা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে। যেমন, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যামানায় উলামায়ে ছূআবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশাহ্ আকবরকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন-সুন্নাহর মনগড়া অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল।     বর্তমান যামানার উলামায়ে ছূতথাকথিত পীর, আমীর, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক। দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। সাথে সাথে হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে। বস্তুতঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা।  যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ايأؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল মুলহিম)                                স্মর্তব্য যে, ঐসব দাজ্জালের চেলা নামক তথাকথিত পীর, আমীর, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাস্সিরে কুরআন ও মৌলভীদের প্রকাশ্যে বেপর্দা হওয়ার কারণে আজ সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ছে। সাধারণ লোক মনে করছে পর্দার কোন প্রয়োজন নেই। যদি থাকতোই তবে নামধারী মৌলভীরা বেপর্দা হয় কি করে?    অতএব, উল্লিখিত উলামায়ে ছূদের বেপর্দা হওয়ার কারণে যে সাধারণ লোকেরা পর্দা সম্পর্কীয় বিষয়ে ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।        অতএব, সকলেই যেন পর্দা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা পোষণ করতে পারে বা হিজাব তথা পর্দার ছহীহ্ আহকাম অবগত হতে পারে এবং যারা অজ্ঞতাহেতু ও নফ্সের তাড়নায় পর্দা সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং বেপর্দা হচ্ছে তারাও যেন বিভ্রান্তি ও বেপর্দা হতে হিদায়েত ও পর্দার ভিতর আসতে পারে, তাই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।           আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক দান করুন। (আমীন) কুরআন শরীফ, সুন্নাহ্ শরীফইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে  পর্দা করা ফরযে আইন         দ্বীন ইসলামের ভিত্তি বা প্রধানতম ফরয হচ্ছে পাঁচটি (১) ঈমান বা আক্বীদা, (২) নামায , (৩) যাকাত, (৪) হজ্ব  (৫) রমযানের রোযা। অতঃপর পুরুষদের জন্যে হালাল কামাই করা ফরয। আর মহিলাদের জন্যে হিজাব বা পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ ফরযে আইন।    কুরআন  শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের বহু স্থানেই হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, পাশাপাশি বেপর্দা হওয়ার কারণে কঠিন আযাব ও অসন্তুষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত উল্লিখিত বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর, শরাহ, ফিক্বাহ, ফতওয়া, ইতিহাস ও লুগাতের কিতাবসমূহ থেকে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হলো-            যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা
পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তাফসীর বা ব্যাখ্যা’        যে সকল আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা হিজাব বা পর্দাফরয প্রমাণিত হয়েছে তা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু বোরকা বা পর্দা করে রাস্তায় বের হওয়ার নাম হিজাব বা পর্দা নয়। বরং তার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট আয়াত শরীফসমূহে উল্লিখিত সকল হুকুম-আহ্কামসমূহ মেনে চলার নামই হচ্ছে শরয়ী হিজাব বা পর্দা।            যেমন, কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে অনুমতি নেয়া, মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে দেখা-সাক্ষাৎ না করা, মাহরামদের সামনেও শালীনতা বজায় রাখা, গায়রে মাহ্রামদের সামনে চেহারা, হাত, পাসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা, চলাচলের সময় পুরুষ-মহিলা উভয়ের দৃষ্টিকেই অবনত রাখা, নিজেদের লজ্জাস্থানকে হিফাজত করা, বিনা প্রয়োজনে গলার আওয়াজ বা কক্তস্বর পরপুরুষকে না শুনানো, প্রয়োজনে কথা বলতে হলে ও কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে বলা ও চাওয়া এবং শক্ত ভাষায় কথা বলা, নরম ভাষায় কথা না বলা ইত্যাদি সবই হিজাব বা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ্ পাক উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহে এ বিষয়গুলোই মূলতঃ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।       উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ে তাফসীর বা ব্যাখ্যাবিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে বিষয়গুলো আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং শরয়ী হিজাব বা পর্দারপরিচয় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে।          তাই নিম্নে নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের তাফসীর বা ব্যাখ্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো- (পূর্ব প্রকাশিতের পর) হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা নূরের ৩০নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা [১১০৮]
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ্ পাক তা অবহিত রয়েছেন।” (সূরা নূর/৩০) পুরুষদের সতর সর্বভাবে পরদৃষ্টি  থেকে হিফাযত করা ফরযে আইন অত্র আয়াতে কারীমায় ويحفظوا فروجهم. অংশ দ্বারা পুরুষদেরকে তাদের সতরকে হিফাযত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আপন স্ত্রী ও বৈধ দাসী ব্যতীত অন্য কোন স্ত্রী লোকদের নিকটবর্তী হওয়া, দেখা এবং দেখানো জায়িয নেই। ইজ্জত-আবরু হিফাযত করার অর্থ হলো ব্যভিচার থেকে মুক্ত থাকা। পুরুষদের সতর হলো, নাভীর নিচ থেকে হাটুর নিচ প্রর্যন্ত অঙ্গ। পুরুষ ও নারীদের দৃষ্টি থেকেও উক্ত স্থানগুলো হিফাযত করাও এ আয়াত শরীফের উদ্দেশ্য। নিম্নে এ সম্পর্কে তাফসীরকারগণের বিশুদ্ধ অভিমত দলীল-আদিল্লাহসহ বর্ণনা করা হলো- [১১০৯-১১১৬]
ولذلك امر الله بحفظ الفروج كما امر بحفظ الابصار التى هى بواعث الى ذلك، فقال تعالى : (قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ريحفظوا فروجهم) وحفظ الفرج تارة يكون بمنعه من الزنا، كما قال تعالى (والذين هم لفروجهم حافظون) الاية وتارة يكون بحفظه من النظر اليه كما جاء فى الحديث فى مسند احمد والسنن "احفظ عورتك الا من زوجتك اوماملكت بمينك" (ذلك ازكى لهم) اى اطهر لقلوبهم وانقى لدينهم. (تفسير ابن كثير جص ৪৫১، مسند احمد بن حنبل جص، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر الدين العينى، تحفة الاحوذى. احكام القران للشفيع والتهانوى جص ৪১৯)
অর্থঃ- আল্লাহ্ পাক সতর বা ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করতে নির্দেশ করেছেন; যেমনিভাবে দৃষ্টিকে সংযত রাখতে নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী করে এবং ইজ্জত ও আবরুকে হিফাযত করে) ব্যভিচার থেকে ফিরে থাকার মাধ্যমে ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে। যেমন, আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন, (যারা তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) আয়াত শরীফ। দৃষ্টি থেকেও সতরকে হিফাযত করতে হবে। যেমন, ‘মুসনাদে আহমদএবং সুনানে আবু দাউদেরহাদীছ শরীফে আছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইজ্জত ও আবরু হিফাযত করো, তোমার স্ত্রী এবং তোমার অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত (সকলের নিকটবর্তী হওয়া থেকে।)” (এতে তাদের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে।) অর্থাৎ চক্ষুনিম্নগামী এবং ইজ্জত-আবরু হিফাযত করার মধ্যে তাদের অন্তরের জন্য অনেক পবিত্রতা আছে এবং তাদের দ্বীন,ঈমানের পরিচ্ছন্নতাও আছে।”             (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫১ পৃষ্ঠা, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ৫ম জিঃ ৩য় পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মাবূদ, শরহে বদরুদ্দীন আইনী, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আহকামুল কুরআন লিশ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪১৯ পৃষ্ঠা) [১১১৭-১১১৯]
(ويحفظوا فروجهم) عما لايحل قال ابو العالية كل ما فى القران من حفظ الفرج فهو عن الزنا والحرام الا فى هذا الموضع فانه اراد به الاستتار حتى لايقع بصر الغير عليه (ذلك) يعنى غض البصر وحفظ الفرج (ازكى لهم) يعنى خيرلهم واطهر (ان الله خبيربما يصنعون) يعنى عليم بما يفعلون. (تفسير البغوى جص ৬৮، تفسير الخازن جص৬৮، تفسير مدارك التنزيل جص ৩২৬)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের ইজ্জত, আবরুকে হিফাযত করে) যা তাদের জন্য হালাল নয় বা জায়িয নয় তার থেকে। হযরত আবুল আলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কুরআন শরীফের প্রত্যেক জায়গায় ইজ্জত-আবরু হিফাযতের ব্যাপারে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যভিচার এবং হারাম থেকে হিফাযত করা। শুধু অত্র আয়াতে কারীমা ব্যতিক্রম। কেননা, এতে ইজ্জত-আবরু হিফাযতের দ্বারা সতরঢাকার কথা বলা হয়েছে। এমনকি অন্য কারো দৃষ্টি যেন এ সতরের মধ্যে না পড়ে। (এটা) অর্থাৎ চক্ষু নিম্নগামী করা এবং ইজ্জত-আবরু হিফাযত করা। (তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ) অর্থাৎ তাদের জন্য মঙ্গল, কল্যাণ এবং অধিক পাক-পবিত্রতার কারণ। (নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ্ পাক তা অবহিত আছেন) অর্থাৎ তারা মুসলমানগণ যা কাজ-কর্ম করে  সে বিষয়ে তিনি সবকিছুই জানেন।” (তাফসীরুল বাগবী ৫ম জিঃ ৬৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল খাযিন ৫ম জিঃ ৬৮ পৃৃষ্ঠা, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৩২৬ পৃষ্ঠা) [১১২০-১১২৯]
(ويحفظوا) اى ليحفظوا (فروجهم) الا على ازواجهم اوما ملكت ايمانهم فانهم غير ملومين ولما كان الاستثناء معلوما بالضرورة عقلا ونقلا حذف من اللفظ قال ابو العالية كل ما وقع فى القران من حفظ الفرج فهر عن الزنى والحرام الا فى هذا الموضع فانه اراد به الاستتار حتى لا يقع البصر عليه عن بهزبن حكيم عن ابيه عن جده قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم احفظ عورتك الا من زوجتك اوما ملكت يسينك قلت يا رسول الله افرايت اذا كان الرجل خاليا قال فالله احق ان يستحيى منه. رواه الترمذى وابو داؤد وابن ماجة.
وعن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اياكم والتعرى فان معكم من لايفارقكم الا عند الغائط وحين يفضى الرجل الى اهله فاستحيوهم واكرمو هم رواه الترمذى (ذلك) اى غض البصر وحفظ الفرج (ازكى لهم) اى انفع لهم او اطهر لما فيه من التباعد عن الزنى (ان الله خبير بما يصتعون) لا يخفى عليه اجالة ابصارهم واستعمال سائر حواسهم وتحريك جوارحهم وما يقصدون بها فليكونوا على حذر منه.
(التفسير المظهرى جص৪৯১ ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى، ابوداؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح بدر الدين العينى، ابن ماجة شريف.)
অর্থঃ- “(তারা যেন হিফাযত করে) অর্থাৎ তারা পুরুষেরা যেন হিফাযত করে (তাদের ইজ্জত-আবরুকে) তাদের স্ত্রী এবং অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত।   আক্বলী এবং নকলী দলীলের ভিত্তিতে স্ত্রী এবং দাসীকে আলাদা করা জরুরী।   হযরত আবুল আলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কুরআন শরীফের অন্যান্য আয়াত শরীফে ইজ্জত ও আবরু হিফাযতের অর্থ ব্যভিচার ও হারাম থেকে বেঁচে থাকা। কিন্তু অত্র আয়াত শরীফ ব্যতিক্রম। এ আয়াত শরীফ দ্বারা সতর ঢাকার কথা বলা হয়েছে, যাতে সতরের মধ্যে দৃষ্টি না পড়ে।            হযরত বাহ্য বিন হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তুমি তোমার স্ত্রী এবং দাসী ব্যতীত অন্যান্য নারীদের থেকে ইজ্জত-আবরু তথা সতরকে হিফাযত করবে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি কোন ব্যক্তি একাকী থাকে তাহলে তার হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, আল্লাহ্ পাক অধিক হক্বদার, যেন তাঁকে লজ্জা করা হয় এ বিষয়ে। হযরত তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনু মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম হাদীছ শরীফটি রেওয়ায়েত করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের বস্ত্রহীনতা থেকে নিজেদের রক্ষা কর। কেননা, নিশ্চয়ই তোমাদের সাথে সর্বাবস্থায় ফেরেশ্তা বিদ্যমান থাকেন। তারা তোমাদের থেকে প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও স্ত্রীর নিকটবর্তী হওয়ার সময় ছাড়া পৃথক হননা। তাই তোমরা তাঁদেরকে লজ্জা করো এবং তাদেরকে সম্মান দেখাও। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফটি বর্ণনা করেছেন।            (এটা) অর্থাৎ চক্ষু নিম্নগামী করা ও ইজ্জত-আবরু হিফাযত করা (তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ) অর্থাৎ এতে তাদের জন্য অনেক উপকার, কল্যাণ এবং পরিচ্ছন্নতা আছে। ব্যভিচার থেকে বেঁেচ থাকার মাধ্যমে। (নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ্ পাক তা অবহিত রয়েছেন।) তাদের চক্ষু এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ-কর্ম তাঁর কাছে অপ্রকাশ্য নয় এবং তাদের আকাঙ্খাও অপ্রকাশ্য নয়। ” (আত্ তাফসীরুল মাযহারী ৬ষ্ঠ জিঃ ৪৯১ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহ্ওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহ্ওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, শরহু বদরিদ্দীন আইনী, ইবনু মাজাহ্ শরীফ) [১১৩০-১১৩১]
 وقوله تعالى (وتحفظوا فروجهم) وقوله (ويحفظن فروجهن) فانه روى عن ابى العالية انه قال كل اية فى القران يحفظوا فروجهم ويحفظن فروجهن من الزنا الا التى فى النور (يحفظوا فروجهم) (ويحفظن فروجهن) أن لاينظر اليها احد قال ابوبكر هذا تخصيص بلا دلالة والذى يقتضيه الظاهر ان يكون المعنى حفظها عن سائر ماحرم عليه من الزنا واللمس والنظر. (احكام القران للجصاص جص১৭২ احكام القران للشفيع والتهانوى جص ৪১৯)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (তারা পুরুষরা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) আল্লাহ্ পাক-এর বাণী (তারা মহিলারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) হযরত আবুল আলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, কুরআন শরীফে পুরুষ এবং মহিলাগণের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত দ্বারা ব্যভিচার থেকে মুক্ত থাকতে বলা হয়েছে। তবে সূরা নূরের يحفظوا فروجهم এবং ويحفظن فروجهن আয়াতদ্বয় দ্বারা সতর ঢাকার কথা বলা হয়েছে। যেন সেদিকে কেউ দৃষ্টি না দেয়। হযরত আবু বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এটা দলীল ছাড়াই খাছ করা হয়েছে। প্রকাশ্য স্পষ্ট কথা হলো, ইজ্জত-আবরু হিফাযতের অর্থ হচ্ছে যা হারাম করা হয়েছে তার থেকে। যেমন, ব্যভিচার, স্পর্শ করা ও দৃষ্টি দেয়া।” (আহকামুল কুরআন লিল্ জাছ্ছাছ ৫ম জিঃ ১৭২ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪১৯ পৃষ্ঠা) [১১৩২]
 فان ستره واجب فى الملا والخلوة. لحديث بهز ابن حكيم عن ابيه عن جده معاوية بن حيدة القشيرى قال قلت يارسول الله صلى الله عليه وسلم عوراتنا ماناتى منها ومانذر؟ قال احفظ عورتك الامن زوجك اوما ملكت يمينك فقال الرجل يكون مع الرجل؟ قال ان استطعت الايراها احد فافعل قلت فالرجل يكون خاليا؟ الله احق ان يستحيا منه. وقد ذكرت عائشة رسول الله صلى الله عليه وسلم وحالها معه فقالت مارايت ذلك منه ولارأى ذلك منى. (احكام القران لابن العربى جص১৩৬৫.)
অর্থঃ- নিশ্চয়ই মানুষের সাক্ষাতে এবং একাকীত্বে সতর ঢাকা ওয়াজিব বা ফরয। হযরত বাহ্য ইবনে হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা হযরত মুয়াবিয়া বিন হাইদা আল কুশাইরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কাছে আমাদের কিছু মহিলা আসেন। আমরা কি সতর্ক থাকব? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া অন্যান্যদের থেকে ইজ্জত ও আবরুকে হিফাযত করো।তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এক পুরুষের সাথে অন্য পুরুষের হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘চেষ্টা করবে যাতে সতর কেউ না দেখে। অতএব, এটাই করবে।আমি বললাম, যদি কোন পুরুষ একাকীত্বে অবস্থান করে তাহলে তার হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ্ পাক অধিক হক্বদার, যেন মানুষেরা তাঁকে লজ্জা করে চলে।
হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে যখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা একান্তে বাস করতেন তাঁর বর্ণনা দিয়ে তিনি নিজেই বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেইনি এবং তিনিও আমার সতরের দিকে কোন দিন নজর দেননি।”    (আহকামুল কুরআন লিইবনিল্ আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৬৫ পৃষ্ঠা) [১১৩৩]
قوله (ويحفظوا فروجهم) .... وقال ابو العالية. المراد به هاهنا حفظها عن الابصار حتى لايراها احد وقد تقدم وجوب سترها وشئ من احكامها ........ (احكام القران لابن العربى جص ১৩৬৫)
অর্থঃ- আল্লাহ্ পাক-এর বাণীঃ (তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) ............ হযরত আবুল আলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অত্র আয়াত শরীফ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সতরকে দৃষ্টি থেকে হিফাযত করা যাতে কেউ তা দেখতে না পারে। সতর ঢাকা ফরয, ওয়াজিব ..........।”             (আহকামুল কুরআন লিইবনিল আরাবী ৩য় জিঃ ১৩৬৫ পৃষ্ঠা) [১১৩৪]
 قوله تعالى : (ويحفظوا فروجهم) اى يستروها عن ان يراها من لايحل وقيل "ويحفظوا فروجهم" اى عن الزنا وعلى هذا القول لو قال "من فروجهم" لجاز. الصحيح ان الجميع مراد واللفظ عام وروى بهزبن حكيم بن معاوية القشيرى عن ابيه عن جده قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم عورتنا ما ناتى منها وما نذر؟ قال "احفظ عورتك الا من زوجتك او ماملكت يمينك" قال الرجل يكون مع الرجل؟ قال "ان استطعت الا يراها فافعل" قلت فالرجل يكون خاليا؟ فقال "الله احق ان يستحيا منه من الناس وقد ذكرت حضرت عائشة عليها السلام رسول الله صلى الله عليه وسلم وحالها معه فقالت مارايت ذلك منه ولارأى ذلك منى. (احكام القران للقرطبى جص২২৩، ২২৪)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ (তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে।) অর্থাৎ তারা যেন তাদের সতর ঢেকে রাখে যাদের জন্য দেখা হালাল নয় তাদের থেকে। কেউ বলেন, তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে অর্থাৎ ব্যভিচার থেকে হিফাযত করে। যদি কেউ من فروجهم. এভাবে বলে তাহলে জায়িয হবে।    হযরত বাহ্য বিন হাকীম বিন মুয়াবিয়া আল্ কুশাইরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা থেকে তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার কাছে আমাদের কিছু মহিলা আসেন, আমরা কি সতর্ক থাকব? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, তুমি তোমার স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া অন্যান্যদের থেকে নিজ সতরকে হিফাযত করো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এক পুরুষের সাথে অন্য পুরুষের হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপ্রাণ চেষ্টা করবে যাতে সতর অন্য কেউ না দেখে। অতএব, এটাই করবে। আমি বললাম, যদি কোন পুরুষ একাকিত্বে অবস্থান করে তাহলে তার হুকুম কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ্ পাক অধিক হক্বদার। যেন মানুষেরা তাঁকে লজ্জা করে চলে।           হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা একান্তবাস করতেন তাঁর বর্ণনা দিয়ে তিনি নিজেই বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সতরের দিকে কোন দিন দৃষ্টি দেইনি এবং তিনিও আমার সতরের দিকে কোন দিন নজর দেননি।”          (আহকামুল কুরআন লিল্ কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৩, ২২৪ পৃষ্ঠা)    [১১৩৫-১১৪৩]
 الخامسة : بهذه الاية حرم العلماء نصا دخول الحمام بغير مئزر وقد روى عن ابن عمر انه قال اطيب ما انفق الرجل درهم يعطيه للحمام فى خلوة وصح عن ابن عباس انه دخل الحمام وهو محرم بالجحفة فدخوله جائز للرجال بالمئزر وكذلك النساء للضرورة كغسلهن من الحيض او النفاس اومرض .......... قلت : اما دخول الحمام فى هذه الازمان فحرام على اهل الفضل والدين لغلبة الجهل على الناس واستسهالهم. (احكام القران للقرطبى جص২২৩، ابو داود شريف، بذل المجهود، عون المعبود، شرح يدر الدين العينى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى)
অর্থঃ- পঞ্চম মাসয়ালাঃ এ আয়াত শরীফকে দলীল গ্রহণ করে উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইযার ছাড়া হাম্মাম খানায় তথা গোসলখানায় প্রবেশ করাকে হারাম ফতওয়া দিয়েছেন।     হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নির্জন গোসলের জন্য নির্জন গোসলখানা তৈরী করতে এক দিরহাম ব্যয় করে তা অধিক পবিত্র।       হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে ছহীহ্ সনদে বর্ণিত যে, নিশ্চয়ই তিনি গোসলখানায় প্রবেশ করে গোসল করলেন। যখন তিনি যুহ্ফা নামক মীকাতে ইহ্রাম বেঁধে মুহরিম হলেন। ইযার পড়ে এক পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে গোসল করা জায়িয। অনুরূপভাবে মহিলারাও প্রয়োজনে ইযার পড়ে গোসল করতে পারবে। যেমন, স্বাভাবিক মাজুর ও সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর ও রোগমুক্ত হওয়ার পর গোসল। .....         আমি বলি, এ যামানায় হাম্মাম খানায় ইযার ছাড়া প্রবেশ করা হারাম ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে।  মানুষের মধ্যে অধিক জিহালতী ও গাফলতী আসার কারণে।     (আহকামুল কুরআন লিল কুরতুবী ৬ষ্ঠ জিঃ ২২৪ পৃষ্ঠা, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, শরহে বদরুদ্দীন আইনী, তিরমিযী শরীফ, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহ্ওয়াযী, উরফুশ্ শাযী) [১১৪৪]
 (ويحفظوا فروجهم) اى عما لايحل لهم من الزنا واللواطة ..... (ذلك) اى ماذكر من الغض والحفظ (ازكى لهم) اى اطهر من دنس الريبة. (تفسير روح المعانى ج১০ ص১৩৯)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) অর্থাৎ ব্যভিচার ও লাওয়াতাত যা তাদের জন্য হালাল নয় তার থেকে। ... (এটা) অর্থাৎ উল্লিখিত চক্ষু নিম্নগামীকরণ ও ইজ্জত-আবরু হিফাযত করণের মধ্যে(তাদের জন্য অনেক পবিত্রতার কারণ) অর্থাৎ এতে সন্দেহ-সংশয়মূলক অপবিত্রতা থেকেও পরিচ্ছন্নতা আছে। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১০ জিঃ ১৩৯ পৃষ্ঠা) [১১৪৫-১১৪৭]
 والمراد بحفظ الفروج حفظ الذكر من الجماع ولابد من استثناء ازواجهم وما ملكت ايمانهم .... وقيل المراد ستر الفروج ذكره القاضى فى تفسيره اى سنر الفروج مع لواحقها من تحت سرته الى تحت ركبته لا الفروج خاصه وفى الكشاف عن ابن زيد كل مافى القران من حفظ الفروج فهو عبارة من الزنا الا هذا فانه اراد به الاستتار ومثله فى الزاهدى ... (ذلك ازكى لهم) اى غض البصر وحفظ الفروج اطهر عن دنس الاثام وقوله تعالى (ان الله خبير بما يصنعون) ترغيب وترهيب فيكونون منه على تقوى. (التفسيرات الاحمدية ص ৩৭১، تفسير الكشاف، زاهدى)
অর্থঃ- ইজ্জত-আবরুর হিফাযতের দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে জিমাতথা নারী-পুরুষের অবৈধভাবে নিকটবর্তী হওয়া থেকে বেঁচে থাকা। তবে নিজ স্ত্রী এবং অধিকারভুক্ত দাসীর সাথে প্রয়োজনীয় নিটকবর্তী হওয়া এর আওতাভুক্ত নয়। ... কারো মতে, হযরত কাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তাফসীরের কিতাবে ستر الفرج তথা সতরের কথাই উল্লেখ করেছেন, সতর হলো, নাভীর নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ।  فروجফুরূজশব্দটি খাছ নয়। তাফসীরে  কাশ্শাফে হযরত ইবনু যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে যে, কুরআন শরীফের যতস্থানে حفظ الفروج ইজ্জত  আবরু হিফাযতের কথা উল্লেখ আছে তাদ্বারা ব্যভিচার থেকে বেঁচে থাকা উদ্দেশ্য। কিন্তু অত্র আয়াত শরীফ তার ব্যতিক্রম। কেননা, এ আয়াত শরীফ দ্বারা সতরকে হিফাযত ও ঢাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাহিদীর মধ্যেও অনুরূপ বর্ণিত আছে।      (আত্ তাফসীরুল আহমদিয়াহ্ ৩৭১ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল কাশ্শাফ, যাহিদী) [১১৪৮-১১৪৯]
 (وحفظوا فروجهم) قال بعض المفسرون المراد سترها من النظر اليها اى النظر الى العورات وقال اخرون المراد حفظها من الزنا والصحيح ماذكره القرطبى ان الجميع مراد لان اللفظ عام فيطلب سترها عن الابصار وحفظها من الزنى ... (ازكى لهم) اى اطهر لقلوبهم وانقى لدينهم.  (تفسير ايات الاحكام للصابونى جص ১৪৩، تفسير القرطبى)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে।) হযরত মুফাস্সিরুনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের কতকের মতে আয়াত শরীফ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে দৃষ্টি থেকে সতর ঢেকে রাখা। অর্থাৎ সতরের দিকে নজর পড়া থেকে হিফাযত করা। অপর কিছু মুফাস্সিরুনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন, হিফাযত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ব্যভিচার থেকে মুক্ত করা বা থাকা। ছহীহ্ কথা হলো, যা হযরত ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেছেন, তাহলো এখানে সবগুলোই উদ্দেশ্য হবে। কেননা, শব্দটি আম ও ব্যাপকার্থক। দৃষ্টিসমূহ থেকে সতরকে হিফাযত করা এবং ব্যভিচার থেকেও হিফাযত করা। ... (এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ) অর্থাৎ এতে তাদের জন্য অন্তরের পবিত্রতা এবং দ্বীন, ঈমান, আক্বীদার বিশুদ্ধতা ও পরিচ্ছন্নতা আছে।   (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল কুরতুবী) [১১৫০-১১৯২]
 الحكم الثانى ماهو حد العورة بالنسبة للرجل والمرأة؟ (الجواب) اشارت الاية الكريمة (ويحفظوا فروجهم) الى وجوب ستر العورة فان حفظ الفرج كما يشمل حفظه عن الزنا يشمل ستره عن النظر كما بيناه فيما سبق وقد اتفق الفقهاء عن حرمة كشف العورة ولكنهم اختلفوا فى حدودها وسنوضح ذلك بالتفصيل ان شاء الله مع ادلة كل فريق فنقول ومن الله نستمد العون (ا) عورة الرجل مع الزجل (২) عورة المرأة مع المرأة (৩) عورة الرجل مع المرأة وبالعكس.
اما عورة الرجل مع الرجل : فهى من (السرة الى الركبة) فلايحل للرجل ان ينظر الى عورة الرجل فيما بين السرة والركبة وماعدا ذلك فيجوز له النظر اليه وقد قال صلى الله عليه وسلم (لاينظر الرجل الى عورة الرجل ولا تنظر المرأة الى عورة المرأة) وجمهور الفقهاء على ان عورة الرجل ما بين السرة الى الركبة كماصح فى الاحاديث الكثيرة وقال مالك رحمة الله الفخذ ليس بعورة ومما يدل لقول الجمهور ماروى عن (جرهد الاسلمى) وهو من اصحاب الصفة انه قال (جلس رسول الله صلى الله وسلم عندنا وفخذى منكشفة فقال اما علمت ان الفخذ عورة). وقال صلى اله عليه وسلم لعلى رضى الله عنه (لاتبرز فخذك) وفى رواية (لاتبرز فخذك ولاتنظر الى فخذ حى ولا ميت) بل انه صلى الله عليه وسلم نهى ان يتعرى المرء ويكشف عورته حتى اذا لم يكن معه غيره فقال (اياكم والتعرى فان معكم من لايفارقكم الا عند الغائط وحين يفضى الرجل الى اهله)
واما عورة المراة مع المرأة : فهى كعورة الرجل مع الرجل اى من (السرة الى الركبة) ويجوز النظر الى ماسوى ذلك ماعدا المرأة الذمية اوالكافرة فلها حكم خاص .......
واما عورة الرجل بالنسبة للمرأة : ففيه تفصيل فان كان من (المحارم) ك (الاب والاخ والعم والخال) فعورته من السرة الى الركبة وان كان (اجنبيا) فكذلك عورته من السرة الى الركبة وقيل جميع بدن الرجل عورة فلايجوز ان تنظر اليه المرأة وكمايحرم نظره اليها يحرم نظرها اليه والاول اصح. واما اذا كان (زوجا) فليس هناك عورة مطلقا لقوله تعالى (الا على ازواجهم او ما ملكت ايمانهم فانهم غير ملومين)
واما عورة المرأة بالنسبة للرجل : فجميع بدنها عورة على الصحيح وهو بذهب (الشافعية والحنابلة) وقدنص الامام احمد رحمه الله على ذلك فقال (وكل شيئ من المرأة عورة حتى الظفر) وذهب (مالك وابو حنيفة) الى ان بدن المرأة كله عورة. (تفسير ايات الاحكام للصابونى جص ১৫২، ১৫৩، ১৫৪، تفسير ابن الجوزى جص ৩১، تفسير الكبير للفخر الرازى، الموطأ مالك رحمة الله عليه، اوجز المسالك، الزرقانى، المنتقى، مسند احمدبن حنبل، الفتح الربانى، مسلم شريف، شرح النووى، شرح الابى والسنوسى، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود شرح بدر الدين العينى، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عايضة الاحوذى، عرف الشاذى، ابن ماجة شريف)
অর্থঃ- দ্বিতীয় হুকুম বা বিধানঃ পুরুষ ও মহিলাগণের সম্পর্কের দিক থেকে সতর বা আবরণীয় অঙ্গের সীমা কতটুকু? (জাওয়াব)ঃ (তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে ঢেকে রাখে) এ আয়াতে কারীমা সতর ঢাকাকে ওয়াজিব হওয়ার দিকে ইশারা-ইঙ্গিত করে। নিশ্চয়ই সতর হিফাযতের মধ্যে ব্যভিচার ও নজর বা দৃষ্টি থেকে হিফাযত শামীল। যেমন, আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি, সমস্ত ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ সতর উন্মুক্ত করা হারাম হিসেবে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু এর পরিসীমা নিয়ে ইখতিলাফ করেছেন। এখন আমরা প্রকারসমূহকে উল্লেখ করে দলীলসহ ব্যাখ্যা করবো ইনশাআল্লাহ্। (১) একজন পুরুষের কাছে একজন পুরুষের সতর। (২) মহিলার কাছে মহিলার সতর বা আবরণ। (৩) মহিলার কাছে পুরুষের সতর। (৪) পুরুষের কাছে মহিলার সতর বা আবরণীয় অঙ্গ। ১. পুরুষের কাছে পুরুষের সতর      পুরুষের কাছে পুরুষের সতর হলো (নাভীর নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ।) অন্য পুরুষের সতর তথা নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া হালাল নয়। এছাড়া অন্যান্য অঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, (কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সতরের দিকে দৃষ্টি দিবেনা এবং কোন মহিলাও অন্য কোন মহিলার সতরের দিকে দৃষ্টি দিবেনা।) মুসলিম আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী।              জমহুর উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে পুরুষের সতর বা আবরণীয় অঙ্গ হলো নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ যা অসংখ্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে।     হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উরু বা রান সতরের আওতাভুক্ত নয়। আর জমহুর উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মত হলো, যা বর্ণনা করেছেন (হযরত জারহাদ আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) যিনি আছহাবে ছূফ্ফা-এর সদস্য ছিলেন। নিশ্চয়ই তিনি বলেন, (একদা হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে বসা ছিলেন। মজলিসে আমার উরু বা রান উন্মুক্ত ছিল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সাবধান হয়ে যাও, নিশ্চয়ই উরু বা রান সতরের অন্তর্ভুক্ত।) (আবূ দাউদ, তিরমিযী শরীফ ও মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক) আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছেন, (তুমি তোমার উরু বা রানকে উন্মুক্ত করবেনা) আবূ দাউদ শরীফ ও ইবনু মাজাহ্ শরীফ।            অন্য রেওয়ায়েতে আছে (তুমি তোমার উরু বা রানকে উন্মুক্ত করবে না এবং জীবিত ও মৃত ব্যক্তির উরুর দিকে দৃষ্টি দিবে না।) আল ফখর্রু রাযী। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষদেরকে বিবস্ত্র হতে এবং সতর উন্মুক্ত করতে নিষেধ করেছেন যদিও তার সাথে কেউ না থাকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (সাবধান! তোমরা কখনো বিবস্ত্র হবেনা। কেননা, তোমাদের সাথে সবসময় এমন ফেরেশ্তা থাকেন যারা কখনই তোমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হননা দুসময় ছাড়া। এক. প্রাকৃতিক প্রয়োজনের সময়, দুই. স্ত্রীর নিকটবর্তী হওয়ার সময়।) (তিরমিযী শরীফ) ২. মহিলার কাছে মহিলার  সতর বা আবরণ           মহিলার কাছে মহিলার সতর হচ্ছে পুরুষের কাছে পুরুষের সতরের অনুরূপ। অর্থাৎ (নাভীর নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ) এছাড়া অন্য অঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয। তবে যিম্মি ও কাফিরা মহিলারা ব্যতীত। কেননা, তাদের হুকুম খাছ ....।৩. মহিলার কাছে সম্পর্কের দিক থেকে পুরুষের সতর বা আবরণ             এখানে হুকুমের পার্থক্য রয়েছে। যদি পুরুষ(মাহ্রাম) হয় যেমন, (পিতা, ভাই, চাচা ও মামা) তাহলে মাহরামা মহিলার সামনে তাদের সতর হবে নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ। আর পুরুষ যদি (গাইরে মাহ্রাম হয়) তাহলে গাইরে মাহরামা মহিলার সামনে তাদের সতর অনুরূপভাবে নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত হবে। কারো মতে, বেগানা মহিলার সামনে পুরুষের সতর হলো সমস্ত শরীর। তাই মহিলা কর্তৃক বেগানা পুরুষের দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয হবেনা। যেমনিভাবে পুরুষ কর্তৃক বেগানা মহিলার দিকে দেখা হারাম তেমনিভাবে মহিলাকর্তৃক পুরুষের দিকেও দেখা হারাম। প্রথম মতটিই অধিক ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ। যদি পুরুষ লোকটি হয় (স্বামী) তাহলে স্ত্রীর কাছে সাধারণভাবে তার কোন সতর নেই। মহান আল্লাহ্ তায়ালার কালামঃ (তবে যারা তোমাদের স্ত্রী এবং অধিকারভুক্ত দাসী তারা ব্যতীত ....) ৪. পুরুষের কাছে সম্পর্কের দিক  থেকে মহিলার সতর বা আবরণ             পুরুষের সামনে বেগানা মহিলার সতর ছহীহ্ মত অনুসারে সমস্ত শরীর। এটি শাফিয়ী ও হাম্বলী) মাযহাব মতে। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দলীল হলো, তিনি বলেছেন, (মহিলার সমস্ত শরীর পরপুরুষের সামনে আবরণীয়, এমনকি হাত-পায়ের নখও।) তাফসীরে ইবনে জাওযী ৬ষ্ঠ জিঃ ৩১ পৃষ্ঠা।          আর (ইমাম মালিক ও ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আরাইহি-এর) মাযহাব মতেও মহিলার সমস্ত শরীর আবরণীয়। (তাফসীরে আয়াতুল আহ্কাম লিছ্ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৫২, ১৫৩, ১৫৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনুল জাওযী ৬ষ্ঠ জিঃ ৩১ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল কবীর লিল্ ফখরির রাযী, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, আওজাযুল মাসালিক, আয্ যুরক্বারী, আল মুন্তাকা, মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, আল ফতহুর রব্বানী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, শরহুল উবাই উয়াস্ সিনূসী,আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল মাজহুদ, আউনুল মাবুদ, শরহে বদরুদ্দীন আইনী, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহ্ওয়াযী, আরিদ্বাতুল আহ্ওয়াযী, উরফুশ্ শাযী, ইবনু মাজাহ্ শরীফ)             উল্লিখিত তাফসীরের কিতাবের আলোচনা ছাড়াও নিম্নবর্ণিত তাফসীরের কিতাবগুলোতেও আলোচনা বিদ্যমান রয়েছে। ১. তাফসীরে রুহুল বয়ান, ২.তাফসীরুত্ ত্ববারী, ৩. আদ্ দুররুল মানছুর লিছ ছূয়ূতী, ৪. তাফসীরে ফতহুল ক্বদীর, ৫. তাফসীরুল বাইযাবী, ৬. হাশিয়াতুশ্ শাইখ যাদাহ্ আলাল বাইযাবী, ৭. তাফসীরুল কাশ্শাফ, ৮. তাফসীরে জালালাইন, ৯. হাশিয়াতুছ্ ছবী আলাল জালালাইন, ১০. হাশিয়াতুল জামাল আলাল জালালাইন, ১১. তাফসীরে কামালাইন, ১২. তাফসীরে ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, ১৩. তাফসীরে হাসান বছরী, ১৪. ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, ১৫. তাফসীরে মাওয়ারাদী, ১৬. তাফসীরুল লুবাব, ১৭. তাফসীরে যিয়াউল কুরআন, ১৮. কানযুল ঈমান ওয়া খাযাইনুল ইরফান, ১৯. তাফসীরে আযীযী, ২০. তাফসীরে ক্বাদিরী, ২১. তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন, ২২. তাকহীমুল্ কুরআন ইত্যাদি।       হিজাব পা পর্দা সম্পর্কিত সূরা নূরের৩০নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা যে সকল হুকুম-আহ্কাম বের হলো তাহচ্ছে- (১) পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্য শরয়ী পর্দা করা ফরযে আইন। তবে উভয়ের পর্দার  মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। (২) আয়াত শরীফে ইজ্জত-আবরু হিফাযতদ্বারা ব্যভিচার, লাওয়াতাত এবং পর দৃষ্টি থেকে হিফাযত সবটাই উদ্দেশ্য। (৩) একজন পুরুষের সামনে অপর পুরুষের, একজন স্ত্রীর সামনে অন্য স্ত্রীলোকের এবং একজন শাহ্ওয়াতহীন স্ত্রীলোকের সামনে একজন বেগানা পুরুষের, মাহরামা মহিলার সামনে একজন মাহ্রাম পুরুষের ছতর বা ফরয পরিমাণ আবরণীয় অঙ্গ হলো নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। (৪) শাহ্ওয়াতের সাথে একজন স্ত্রী লোক কর্তৃক অন্য পুরুষের কোন অঙ্গ দেখা হারাম বা নাজায়িয। চাই মাহরাম বা গাইরে মাহরাম হোক। (৫) মহিলাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ পর পুরুষের থেকে ঢেকে রাখা ফরযে আইন। এমনকি হাত ও পায়ের নখ পর্যন্ত দেখানো জায়িয নেই। (৬) মহিলা ও পুরুষের উরু বা রান আওরাত বা সতরের অন্তর্ভুক্ত। (৭) মাহরামের সামনে (মা, বোন, মেয়ে) ইত্যাদি মাহরামাদের সতর হলো নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত তৎসঙ্গে পেট ও পিঠ শামিল। (৮) স্বামী স্ত্রীর সমস্ত অঙ্গই দেখতে পারবেন। সাধারণভাবে যা জায়িয। (৯) তবে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সতরের দিকে দৃষ্টি না দেয়াই উত্তম। যে সম্পর্কে হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা রয়েছে। (১০) পর্দার ব্যাপারে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর ফেরেশ্তাগণকে লজ্জা করে পর্দানশীন হওয়া অবশ্য করণীয়। হিজাব বা  পর্দা  সম্পর্কিত সূরা  নূরের ৩১ নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা [১১৯৩]
 وقل للمؤمنت يقضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن.
অর্থঃ “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) মুমিনা নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং ইজ্জত আবরুকে হিফাযত করে।” (সূরা নূর ৩১নং আয়াত শরীফ) মহিলাদের ইজ্জত ও আবরু তথা  সতরকে পরদৃষ্টি ও ব্যভিচার থেকে  হিফাযত করা ফরযে আইন             মহিলাদের ইজ্জত-আবরু এবং সতরকে পরদৃষ্টি ও ব্যভিচার থেকে হিফাযত করা ফরযে আইন। এর খিলাফ করা হারাম ও কবীরা গুণাহ্। এ আয়াত শরীফে বিশেষভাবে সতরের কথা আলোচনা করা হয়েছে। আর কুরআন শরীফের অনুরূপ অন্যান্য আয়াত শরীফের দ্বারা শুধু ব্যভিচার, অশ্লীল-অশালীন, কাজ-কর্ম থেকে সতরকে হিফাযত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।         নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরের কিতাব থেকে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা আলোচনা করা হলো- [১১৯৪-১২০২]
 (ويحفظن فروجهن) عمن لايحل وقيل ايضا يحفظن فروجهن يعنى يسترنها حتى لايراها احد وروى عن ام سلمة انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة اذ اقبل ابن ام مكتوم فدخل عليه وذلك بعد ما امرنا بالحجاب فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجنا منه؟ فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لايبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما اليستما تبصرانه. (نفسير تلبعوة جص৬৯، تفسير الخازن جص৬৯، ابو داؤد شريف، بذل المجهود، عون المعبود، ترمذى شريف، تحفة الاحوذى، عارضة الاحوذى، عرف الشذى)
অর্থঃ- “(তারা মহিলারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) যারা তাদের জন্য হালাল  নয়, তাদের থেকে। কেউ কেউ আরো বলেছেন, يحفظن فروجهن. এর অর্থ হলো তারা যেন সতরকে ঢেকে রাখে। এমনকি তা যেন কেউ না দেখে। হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, একদা তিনি এবং হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। এমন সময়ে হযরত ইবনু উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আসলেন এবং তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন। এটা আমাদের কাছে পর্দার নির্দেশ আসার পরের ঘটনা। হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের দুজনকে বললেন, তোমরা তাঁর থেকে পর্দা কর? আমি (হযরত উম্মু সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পারছেননা। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা দুজনও কি অন্ধ, যে তোমরা তাঁকে দেখতে পাচ্ছ না?”              (তাফসীরুল বাগবী ৫ম জিঃ ৬৯ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন ৫ম জিঃ ৬৯ পৃষ্ঠা, আবূ দাঊদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল্ মাবুদ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল আহওয়াযী, আরিদ্বাতুল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী) [১২০৩-১২০৫]
 وقوله (يحفظن فروجهن) قال سعيد بن جبير : عن الفواحش. وقال قتادة وسفيان. عما لايحل لهن. وقال مقاتل عن الزنا. وقال ابو العالية كل اية نزلت فى القران يذكر فيها حفظ الفروج فهو من الزنا الا هذه الاية "ويحفظن فروجهن" ان لايراها احد. (تفسير ابن كثير جص৪৫৩، احكام القران للجصاص جص১৭২، احكام القران للشفيع والتهانوى جص৪২৩)
অর্থঃ- আল্লাহ্ পাক-এর বাণীঃ (তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) হযরত সাঈদ বিন জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, অশ্লীল-অশালীন, ফাহেশা কাজ থেকে সতরকে হিফাযত করবে। হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং সুফইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তাদের জন্য যা হালাল বা জায়িয নয় তার থেকে হিফাযত করবে। হযরত মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ব্যভিচার থেকে সতরকে হিফাযত করবে। হযরত আবুল্ আলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কুরআন শরীফে যত স্থানে حفظ الفروج সম্পর্কিত  আয়াত শরীফ নাযিল  হয়েছে, সেগুলোর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সতরকে ব্যভিচার থেকে হিফাযত করা। তবে অত্র ويحفظن فروجهن আয়াত শরীফ দ্বারা উদ্দেশ্য  হলো, যাতে সতর কেউ দেখতে না পারে।” (তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩য় জিঃ ৪৫৩ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন ল্ িজাছছাছ্ ৫ম জিঃ ৪২৩ পৃষ্ঠা, আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪২৩ পৃষ্ঠা) [১২০৬]
 (ويحفظن فروجهن) يقول ويحفظن فروجهن عن ان يراها من لايحل له رؤيتها بلبس ما يسترها عن ابصارهم. ما يسترها عن ابصارهم. (تفسير الطبرى جص৯২)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) এর অর্থ হচ্ছে, তারা যেন তাদের সতরকে তাদের দৃষ্টি থেকে হিফাযত করে, যারা তাদের জন্য হালাল নয়। লিবাসের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি থেকে যেন আবরণে রাখে।” (তাফসীরুত্ ত্ববারী ৯ম জিঃ ৯২ পৃষ্ঠা) [১২০৭-১২০৮]
 (ويحفظن فروجهن) اى مما لايحل لهن من الزنا والسحاق او الابداء او ممابعم ذلك والابداء. (تفسير روح المعانى ج১০ ص ১৪০، احكام القران للشفيع والتهانوى جص৪২৩)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) অর্থাৎ তাদের জন্য যা হালাল নয়। যেমন, ব্যভিচার, অশ্লীলতা এবং উন্মুক্ততা থেকে সতরকে হিফাযত করবে।” (তাফসীরে রূহুল মায়ানী ১০ জিঃ ১৪০ পৃষ্ঠা, আহকামুল্ কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪২৩ পৃষ্ঠা) [১২০৯-১২১১]
 (ويحفظن فروجهن) بالتستر او التحفظ عن الزنا. (تفسير البيضاوى جص৭৮، حاشية الشيخ زاده، جاشية الشهاب)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের ইজ্জত ও আবরুকে হিফাযত করে) অর্থাৎ ব্যভিচার থেকে হিফাযত এবং পর্দায় থাকার মাধ্যমে।” (তাফসীরুল্ বাইযাবী ৩য় ৭৮ পৃষ্ঠা, হাশিয়াতুশ্ শায়খ যাদাহ্, হাশিয়াতুশ্ শিহাব) [১২১২-১২১৫]
 (ويحفظن فروجهن) عما لايحل لهن فعله بها. (تفسير الجلالين، حاشية الجمل على الجلالين. حاشية الصابوى على الجلالين، كمالين)
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) অর্থাৎ তাদের জন্য যে সমস্ত কাজ হালাল নয় তার থেকে।” (তাফসীরুল্ জালালাইন, হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল্ জালালাইন, হাশিয়াতুছ্ ছাবী আলাল্ জালালাইন, কামালাইন) [১২১৬]
 واما عورة المرأة مع المرأة : فهى كعورة الرجل مع الرجل اى من (السرة الى الركبة) ويجوز النظر الى ما سوى ذلك ماعدا المرأة الذمية او الكافرة فلها حكم خاص ....... (تفسير ايات الاحكام للصابونى جص ১৫৩)
অর্থঃ- মহিলাদের কাছে মহিলার সতর বা আবরণঃ মহিলাদের কাছে মহিলাদের সতর হচ্ছে পুরুষের কাছে পুরুষের সতরের অনুরূপ। অর্থাৎ (নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ) এছাড়া অন্য অঙ্গের  দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়িয। তবে যিম্মী ও কাফির মহিলারা ব্যতীত। কেননা তাদের হুকুম খাছ ....।” (তাফসীরে আয়াতুল্ আহকাম লিছ ছাবূনী ২য় জিঃ ১৫৩ পৃষ্ঠা) [১২১৭-১২১৮]
 واما عورة المرأة بالنسبة للرجل فجميع بدنها عورة على الصحيح وهو مذهب (الشافعية والحنابلة) وقدنص الامام احمد رحمه الله على ذلك فقال : (وكل شئ من المرأة عورة حتى الظفر)، وذهب (مالك وابوحنيفة) الى ان بدن المرأة كله عورة. (تفسير ايات الاحكام جص ১৫৪، تفسير ابن الجوزى جص৩১)
অর্থঃ- পুরুষের কাছে সম্পর্কের দিক থেকে মহিলাদের সতর বা আবরণঃ পুরুষের সামনে বেগানা মহিলার ছতর ছহীহ্ মত অনুসারে সমস্ত শরীর। এটি (শাফিয়ী ও হাম্বলী) মাযহাব মতে। হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহিমাহুল্লাহ-এর দলীল হলো, তিনি বলেছেন,(মহিলার সমস্ত শরীর পরপুরুষের সামনে আবরণীয়, এমনকি হাত-পাঁয়ের নখও।) তাফসীরে ইবনে জাওযী ৬ষ্ঠ জিঃ ৩১ পৃষ্ঠা। আর  (ইমাম মালিক ও ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর) মাযহাব মতেও মহিলার সমস্ত শরীর আবরণীয়।।” (তাফসীরে আয়াতুল আহকাম ২য় জিঃ ১৫৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে ইবনে জাওযী ৬ষ্ঠ জিঃ ৩১ পৃষ্ঠা) [১২১৯-১২৩৮]
 وقوله تعالى (ويحفظوا فروجهم) وقوله (ويحفظن فروجهن) فانه روى عن ابى العالية انه قال كل اية فى القران يحفظوا فروجهم ويحفظن فروجهن من الزنا الا التى فى النور (يحفظوا فروجهم) (ويحفظن فروجهن) أن لاينظر اليها احد قال ابو بكر هذا تخصيص بلا دلالة والذى يقتضيه الظاهر ان يكون المعنى حفظها عن سائر ماحرم عليه من الزنا واللمس والنظر. (احكام القران للجصاص جص১৭২ احكام القران للشفيع والتهانوى جص৪১৯)
অর্থঃ- আল্লাহ্ তায়ালার কালামঃ (তারা পুরুষরা যেন তাদের ইজ্জত ও আবরুকে হিফাযত করে) আল্লাহ্ পাক-এর কালামঃ (তারা মহিলারা যেন তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাযত করে) হযরত আবুল আলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, কুরআন শরীফে পুরুষ এবং মহিলাগণের ইজ্জত ও আবরু হিফাযত দ্বারা ব্যভিচার থেকে মুক্ত থাকতে বলা হয়েছে। তবে সূরা নূরের يحفظوا فروجهم এবং ويحفظن فروجهن আয়াতদ্বয় দ্বারা সতর ঢাকার কথা বলা হয়েছে। যেন সেদিকে কেউ দৃষ্টি না দেয়। হযরত আবু বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এটা দলীল ছাড়াই খাছ করা হয়েছে। প্রকাশ্য স্পষ্ট কথা হলো, ইজ্জত-আবরু হিফাযতের অর্থ হচ্ছে যা হারাম করা হয়েছে তার থেকে। যেমন, ব্যভিচার, ম্পর্শ করা ও দৃষ্টি দেয়া।” (আহকামুল কুরআন লিল্ জাছ্ছাছ ৫ম জিঃ ১৭২ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন লিশ্ শফী ওয়াত্ থানুবী ৩য় জিঃ ৪১৯ পৃষ্ঠা)    উল্লিখিত তাফসীরের কিতাবের আলোচনা ছাড়াও নিম্ন বর্ণিত তাফসীরের কিতাবগুলোতেও আলোচনা বিদ্যমান রয়েছে, তাফসীরে কুরতুবী, আহকামুল কুরআন লিল্ জাছ্ছাছ, তাফসীরে রূহুল বায়ান, যাদুল্  মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর লিল জাওযী, আদ দুররুল মানছূর লিছ ছুয়ূতী, তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর, তাফসীরে ইবনে আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা, তাফসীরে হাসান বছরী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর, তাফসীরে মাওয়ারাদী, তাফসীরুল লুবাব, তাফসীরে যিয়াউল্ কুরআন, কানযুল ঈমান ওয়া খাযাইনুল ইরফান, তাফসীরে আযীযী, তাফসীরে ক্বাদিরী, তাফসীরে আহমদী, তাফসীরে মায়ারিফুল্ কুরআন, তাফহীমুল্ কুরআন ইত্যাদি। হিজাব বা পর্দা সম্পর্কিত সূরা নূরের৩১নং আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারা যা প্রমাণিত হলো তা হচ্ছে- (১) পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্য শরয়ী পর্দা করা ফরযে আইন। তবে উভয়ের পর্দার মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। (২) আয়াত শরীফে ইজ্জত-আবরু হিফাযতেরদ্বারা ব্যভিচার, লাওয়াতাত  এবং পর দৃষ্টি থেকে সতরকে হিফাযত উভয়েই উদ্দেশ্য। (৩) একজন পুরুষের সামনে অপর পুরুষের, একজন মহিলার সামনে অন্য মহিলার, একজন শাহ্ওয়াতহীন মহিলার সামনে একজন বেগানা পুরুষের, মাহরামা মহিলার সামনে একজন মাহরাম পুরুষের ছতর বা ফরয পরিমাণ আবরণীয় অঙ্গ হলো- নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ। (৪) মহিলা মানুষের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ পরপুরুষ থেকে ঢেকে রাখা ফরযে আইন। এমনকি হাত ও পায়ের নখ পর্যন্ত দেখানো জায়িয নেই। (৫) মহিলা ও পুরুষের উরু বা রান আওরাত বা সতরের অন্তর্ভূক্ত। (৬) মাহরামের সামনে মা, বোন, মেয়ে ইত্যাদি মাহরামাদের ছতর হলো নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ। তৎসঙ্গে পেট ও পিঠ শামিল। (৭) স্বামী স্ত্রীর সমস্ত শরীর দেখতে পারবে। সাধারণতঃ এটা জায়িয। (৮) স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সতরের দিকে দৃষ্টি না দেয়াই উত্তম। যা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। (৯) শাহ্ওয়াতের সাথে পুরুষ কর্তৃক মাহ্রামা ও গায়রে মাহ্রামার দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম বা নাজায়িয। অনুরূপভাবে শাহ্ওয়াতের সাথে মহিলা কর্তৃক মাহ্রাম ও গায়রে মাহ্রামের দিকে দৃষ্টি দেয়াও হারাম ও নাজায়িয। (অসমাপ্ত) 

0 Comments: