অনাগত সন্তান ছেলে না মেয়ে জানুন শরীয়তসম্মত পন্থায়

অনাগত সন্তান ছেলে না মেয়ে জানুন শরীয়তসম্মত পন্থায়

****************************
ছেলে মেয়ে তথা সন্তান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। এটার ক্ষেত্রে নারী পুরুষের কারো এখতিয়ার নেই। অনেকে অনাগত সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে সেটা পরীক্ষা করার জন্য আল্ট্রাস্নোগ্রাম, টেস্ট ও পরীক্ষা করে থাকে। 

কিন্তু এটা শরীয়ত পরীপন্থী না হলেও কাছাকাছি। কারন অনেকে ছেলে না চাইলে বা মেয়ে না চাইলে বীপরিত হলে দুনিয়ায় আসার আগেই মেরে ফেলে। এটা হারাম। 

তবে পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সময় বেপর্দা হতে হয়। এসব কারনে পরীক্ষা করার চেয়ে শরীয়তসম্বমত পদ্ধতি বুজুর্গগন বর্ণনা করেছেন।
তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে


-قال الجاحظ :وإذا أردت أن تعلم هل المرأة حامل بذكر أو أنثى فخذ قملة واحلب عليها من لبنها في كف إنسان فإن خرجت من اللبن فهي جارية وإن لم تخرج فهو ذكر-বিশিষ্ট মুফাসসির হযরত জাহিয রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- আর তা হলো- যদি তোমাদের জানার ইচ্ছা জাগে যে গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে তাহলে নিন্মের কাজ করতে হবে-

কোন মহিলা হামেলা অবস্থায় তার স্তনের থেকে কয়েক ফোটা দুধ নিয়ে হাতের তালুতে নিয়ে সেই দুধের মধ্যে একটা উকুন ছেড়ে দিতে হবে। যদি উকুনটি বের হয়ে তাহলে কন্যা সন্তান হবে আর বের হতে না পারলে বুঝে নিতে হবে ছেলে সন্তান। বর্ননাটি রয়েছে- (তাফসীরে রুহুল বায়ান/সুরা আরাফ/২৩৪, তাফসীরে হাক্কী, হায়াতুল হাইওয়ান- ইবনে সিনা)


কাজেই বর্তমান শরীয়তবহির্ভুত নামে ডিজিটাল বেপর্দা পন্থায় পরীক্ষা না করে শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে পরীক্ষা করুন। আর ছেলে বা মেয়ে সন্তান হলে শুকরিয়া আদায় করুন।
ইমানদারদের পরীক্ষা
Image result for পরীক্ষাইমানদারদের পরীক্ষা

১. মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। যারা মন্দ কাজ করে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? তাদের ফয়সালা খুবই মন্দ। যে আল্লাহর সাক্ষাত কামনা করে, আল্লাহর সেই নির্ধারিত কাল অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।যে কষ্ট স্বীকার করে, সে তো নিজের জন্যেই কষ্ট স্বীকার করে। আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে বে-পরওয়া। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব। [ সুরা আনকাবুত ২-৭ ]

২. আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব (কখনও) ভয়-ভীতি, (কখনও) ক্ষুধা দ্বারা এবং (কখনও) জানমাল ও ফলফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা, আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। -সূরা বাকারা (২) : ১৫৫ ৩. তোমরা তোমাদের জান-মালের ক্ষেত্রে অবশ্যই পরীক্ষার মুখোমুখি হবে আর তোমরা আহলে কিতাব ও মুশরিকদের পক্ষ থেকে অনেক পীড়াদায়ক কথা শুনবে। তোমরা যদি সবর ও তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে অবশ্যই তা বড় হিম্মতের কাজ। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৮৬

৪. আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদে আক্রান্ত করেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৪৫

৫. আল্লাহ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণ চান তখন দুনিয়াতে তার শাস্তি ত্বরান্বিত করেন, আর যখন কোনো বান্দার অকল্যাণ চান তখন তার পাপগুলো রেখে দিয়ে কিয়ামতের দিন তাঁর প্রাপ্য পূর্ণ করে দেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৯৬




কুলখানী করে মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো শরিয়ত সম্মত আমল
কুলখানী করে মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো শরিয়ত সম্মত আমল

কুলখানি ফারসি শব্দ। আভিধানিক অর্থ কুল পড়া—পবিত্র কুরআনের ত্রিশতম পারার যে সকল সূরার শুরুতে কুল শব্দ রয়েছে সেগুলো পাঠ করা। কিন্তু পরিভাষায় কুলখানির অর্থ একটু ভিন্ন: কোন ব্যক্তির ইন্তেকালের তিন দিনের মাথায় তার মাগফিরাত ও আত্মার শান্তি কামনা করে মীলাদ বা কুরআন খতম অথবা অন্য কিছু পাঠের মাধ্যমে দুআ-মুনাজাতের অনুষ্ঠান করা। অনুষ্ঠান শেষে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য খাবার বা মিষ্টি মুখের ব্যবস্থা করা হয়, যাকে বলা হয় তাবারুক।
মৃত ব্যক্তির জন্য রুহের মাগফেরাতের জন্য কোন বিশেষ খাবার তৈরি করা ও মানুষকে খাওয়ানো শরীয়তসম্মত। যারা এটাকে বিদয়াত বা নাজায়িয বলে থাকে তাদের কথা মোটেও শরীয়তসম্মত ও গ্রহণযোগ্য নয়।

১. মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা আদ দাহর শরীফ’ ৮ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “উনারা মহান আল্লাহ তায়ালা মুহব্বতে আহার করান অভাবগ্রস্ত ইয়াতীম ও বন্দিদেরকে।”

২. মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা আদ দাহর শরীফ’ উনার ৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, ‘(উনারা বলেন) নিশ্চয়ই আমরা কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্যেই তোমাদেরকে আহার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করিনা।’

৩. মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ’ উনার ২৮ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে মহান আল্লাহ তায়ালা নাম মুবারক স্মরণ করে দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করো। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং দুস্থ অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।”

৩. পবিত্র হাদীছ শরীফ মধ্যে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” সুবহানাল্লাহ!(তিরমিযী ১৮৫৫, ইবনে মাযাহ্ ১৩৯৫, আদাবুল মুফাররাদ ৯৮১, আবদ ইবনে হুমাইদ ৩৫৫, দারিমী

৪. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হ’তে বর্ণিত,"একদা এক ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করলেন, ইসলামে কোন কাজটি শ্রেষ্ঠ? হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইসলামে সবচেয়ে ভাল কাজ হচ্ছে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার খাওয়ানো’।[বুখারী হা/১২; মুসলিম হা/৩৯; মিশকাত হা/৪৬২৯।]

৫. ঐ ব্যক্তি ক্বিয়ামতকে অস্বীকারকারী যে ব্যক্তি ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করে না এবং খাদ্য দান করতে উৎসাহিত করে না। কেননা মহান আল্লাহ বলেন,তুমি কি দেখেছ তাকে, যে বিচার দিবসে মিথ্যারোপ করে? সে হ’ল ঐ ব্যক্তি, যে ইয়াতীমকে গলাধাক্কা দেয় এবং অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দানে উৎসাহিত করে না’ (মাঊন ১০৭/১-৩)।

৬. মহান আল্লাহ বলেন, ‘ঐ ব্যক্তিকে ধর এবং গলায় রশি লাগিয়ে দাও অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে, সে তো ঈমান আনেনি মহান আল্লাহর উপরে আর সে অভাবী-ক্ষুধার্তদেরকে খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করেনি’ (হাক্কাহ ৩০-৩৪)।


পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মানুষকে খাওয়ানো অবশ্যই শরীয়তসম্মত ও ফযীলতের কাজ। শুধু তাই নয় বরং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের মাধ্যম ও কারণ। এখন তা যখনই খাওয়ানো হোক বা যাই খাওয়ানো হোক না কেন। কারণ পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মানুষকে খাওয়ানোর জন্য কোনো সময় ও প্রকার নির্ধারণ করে দেননি। যদি তাই হয়ে থাকে তবে এটাকে কী করে বিদয়াত বা নাজায়িয বলা যেতে পারে? তাছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে তো সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে, “যে ব্যক্তি পবিত্র ইসলাম উনার মধ্যে কোন উত্তম (শরীয়তসম্মত) পদ্ধতি উদ্ভাবন করলো তার সে উদ্ভাবিত পন্থা যারা অনুসরণ বা আমল করবে তাদের সমপরিমাণ বদলা যে উদ্ভাবন করেছে সেও পাবে।” সুবহানাল্লাহ
মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো একটা ইবাদত। যারা এ বিষয়কে টিটকারী তুচ্ছ্য তাচ্ছিল্য করে তারা কুরআন শরীফ হাদীস শরীফ এহানতকারী।

অনুমতি চাওয়া ও তার আদবসমূহ
Image result for আদব
অনুমতি চাওয়া ও তার আদবসমূহ
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
﴿لَا تَدۡخُلُواْ بُيُوتًا غَيۡرَ بُيُوتِكُمۡ حَتَّىٰ تَسۡتَأۡنِسُواْ وَتُسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَهۡلِهَاۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٢٧ ﴾ [النور: ٢٧]
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রশে করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর”। [সূরা নূর, আয়াত: ২৭]
আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَإِذَا بَلَغَ ٱلۡأَطۡفَٰلُ مِنكُمُ ٱلۡحُلُمَ فَلۡيَسۡتَٔۡذِنُواْ كَمَا ٱسۡتَٔۡذَنَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۚ ٥٩ ﴾ [النور: ٥٩]
“আর তোমাদের সন্তান-সন্ততি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তারাও যেন অনুমতি প্রার্থনা করে যেমনিভাবে তাদের অগ্রজরা অনুমতি প্রার্থনা করত”। [সূরা নূর, আয়াত: ৫৯]
এক- আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«الاستئذان ثلاث، فإن أذن لك وإلا فارجع» متفق عليه
“অনুমতি চাওয়া তিনবার। তারপর যদি তোমাকে অনুমতি দেয়, প্রবেশ কর, অন্যথায় ফেরত চলে আসবে”। [বুখারি মুসলিম ]
দুই- সাহাল ইবন সাআদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إنما جعل الاستئذان من أجل البصر» متفق عليه.
“অনুমতি চাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে, চোখের কারণে”। [বুখারি ও মুসলিম ]
তিন: রিব‘য়ী ইবন হিরাশ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী আমের গোত্রের এক লোক আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন,
استأذن على النبي  وهو في بيت فقال: «أألج؟» فقال رسول الله  لخادمه: «اخرج إلى هذا فعلمه الاستئذان فقل له: قل: السلام عليكم أأدخل؟ فسمعه الرجل فقال: السلام عليكم أأدخل؟ فأذن له النبي  فدخل. رواه أبو داود بإسناد صحيح».
“একদিন সে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর নিকট ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চায়, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ ঘরে অবস্থান করছিল। লোকটি বলল, আমি কি প্রবেশ করব? তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ খাদেমকে ডেকে বলল, তুমি যাও এবং লোকটিকে অনুমতি চাওয়ার পদ্ধতি শেখাও। তুমি তাকে বল, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব? লোকটি এ কথা শোনে বলল, আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব? তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিল এবং সে ঘরে প্রবেশ করল”। ইমাম আবু-দাউদ হাদিসটিকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেন ।
চার- কালদা ইব্‌ন হাম্বল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أتيت النبي  فدخلت عليه ولم أسلم فقال النبي  «ارجع فقل السلام عليكم أأدخل؟» رواه أبو داود والترمذي وقال: حديث حسن.
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর দরবারে এসে সালাম না দিয়ে তার নিকট প্রবেশ করলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাকে বললেন, ফিরে যাও! এবং বল, আসসালামু আলাইকুম আমি কি প্রবেশ করব”? বর্ণনায় আবু-দাউদ ও তিরমিযী , ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান।
স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে উভয়ের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে
Image result for কর্তব্যস্বামী ও স্ত্রী উভয়ে উভয়ের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে-
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তারা (আহলিয়া) তোমাদের আবরণ (পোশাক) এবং তোমরা (আহাল)তাদের আবরণ (পোশাক)।”
হাদীছ শরীফ মধ্যে স্বামীদের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, “যদি আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদা করা যেত, তাহলে আমি স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীদের সিজদা করার আদেশ দিতাম।” সুবহানাল্লাহ! আর অন্য হাদীছ শরীফ মধ্যে স্ত্রীদের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার আহলিয়া তথা স্ত্রীর নিকট উত্তম।” সুবহানাল্লাহ! {কিমিয়ায়ে সাআদাত}
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্ট যে আল্লাহ পাক তিনি এবং হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যেভাবে স্বামীদের মর্যাদা, অধিকার দিয়েছেন ঠিক সেভাবেই স্ত্রীদের মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছেন। যা সাধারণ মানুষ বুঝে না। যদিও স্বামীদের মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে এবং স্বামীদের প্রতি স্ত্রীদের কি কর্তব্য সে সম্পর্কে বহু কিতাবাদিতে রয়েছে কিন্তু স্ত্রীদের মর্যাদা ও অধিকার ও স্ত্রীদের প্রতি স্বামীর কি কর্তব্য তা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ। তাই কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ এর মুবারক আলোকে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এবং স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কিছু কর্তব্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. স্ত্রীর সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলবে না, অনুরূপ স্ত্রীও স্বামীর সাথেও কর্কশ বা রুক্ষ ভাষায় কথা বলবে না। যদি উভয়ের মধ্যে একজন রাগবশত কর্কশ বা রুক্ষ ভাষায় কথা বলে অপরজন ধৈর্যধারণ করবে।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ এর মধ্যে ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি স্ত্রীর কর্কশ ভাষা সহ্য করবে সে ব্যক্তি হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম উনার বিপদরাশি সহ্য করার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, অনুরূপভাবে কোনো স্ত্রী যদি স্বামীর কর্কশ ভাষা সহ্য করে, সে স্ত্রী ফেরআউনের স্ত্রী হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম উনার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।” সুবহানাল্লাহ!
২. স্ত্রীর ভালো ভালো গুণাবলী বলে স্ত্রীকে উৎসাহিত করা অনুরূপ স্বামীর প্রশংসনীয় দিকগুলো স্বামীর নিকট বর্ণনা করে অনুপ্রাণিত করা।
৩. স্ত্রীর প্রয়োজনীয় বিষয়াদির দিকে ভালোভাবে খেয়াল করা অনুরূপ স্বামীর প্রয়োজনীয় বিষয়াদির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা।
৪. স্ত্রীর পোশাক, খাওয়া-দাওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ রাখা ঠিক তদ্রপ স্বামীর উপরোক্ত বিষয়গুলোর উপর লক্ষ্য রাখা। মনে রাখতে হবে উভয় উভয়ের আবরণ এবং দুইজন দুইজনের পরিচয়।

৫. স্ত্রীর যা পছন্দ তা পূরণ করার চেষ্টা করা অনুরূপ স্বামীর যা পছন্দ তা পূরণ করার চেষ্টা করা।
৬. সন্তানের সামনে স্ত্রীর প্রশংসা করা, ভালো গুণাগুণ বলা অনুরূপ স্বামীর প্রশংসা করা, ভালো গুণাগুণ বর্ণনা করা। যাতে সন্তানরা বাবা-মায়ের ভালো গুণগুলো অর্জন করতে সক্ষম হয়। তাদের সামনে উভয় উভয়ের দোষ বর্ণনা করবে না।
৭. স্ত্রীর মাতা-পিতাকে সাধ্য অনুযায়ী হাদিয়া, তোহফা দেয়া অনুরূপ ভাবে স্বামীর পিতা-মাতাকে সাধ্য অনুযায়ী হাদিয়া তোহফা দেয়া।
৮. অভাব অনটন থাকুক বা না থাকুক উভয় অবস্থাতেই স্ত্রীর ভরণ পোষণ দিতে হবে এবং স্ত্রীরাও স্বামীদের অভাব অনটনের সময় সাধ্য অনুযায়ী স্বামীকে সহযোগিতা করবে। এই ক্ষেত্রে উভয় উভয়কেই অনুপ্রাণিত করা, উৎসাহিত করা।
৯. দান খয়রাত ও হাদিয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রীকে সহযোগিতা করা অনুরূপ দান খয়রাত ও হাদিয়ার ক্ষেত্রে স্বামীকে সহযোগিতা করা। এই ক্ষেত্রে উভয় উভয়কেই অনুপ্রাণিত করা, উৎসাহিত করা।
১০. উভয় উভয়ের ভুল-ভ্রান্তি মেনে নেয়া এবং তা থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করা।
১১. উভয়কে তাদের নিজ অবস্থার উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং নিয়ামত এর শুকরিয়া আদায় করা।
১২. পরষ্পর পরষ্পরকে নেক আমলে উৎসাহিত করা। শরিয়তসম্মত জীবন-যাপনে পরষ্পরকে সহযোগীতা করা



“অবশ্যই তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ কোরনা।”
Image result for মৃত্যু“অবশ্যই তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ কোরনা।”

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
অর্থাৎ;-হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয়করা উচিৎ তেমনই ভাবে ভয় করতে থাক, এবং অবশ্যই মুসলমান নাহয়ে মৃত্যু বরণ কোরনা।

এ আয়াতে তাকওয়া শব্দের অর্থ ভয় বলা হয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় কয়েকটি আচরণের সমাহারকেই তাকওয়া বলে, যেমন;-ধর্মানুরাগ, খোদাভীতি, সংযমশীলতা ইত্যাদি। এ সমস্ত গুনাবলীর শিখরে অবস্থানকারীকেই মুত্তাকী বলে। মুমিনগনকে মুসলীম না হয়ে মৃত্যু বরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে, মুমিন অপেক্ষা মুসলীমের গুরুত্ব বেশী। শব্দদ্বয় একটির জায়গায় অন্যটি ব্যবহার হয়ে থাকে। ইমান অন্তরের বস্তু আর ইসলাম আচরণের বস্তু। ইমানকে আচরণে প্রকাশ করাতেই পূর্ণাঙ্গতা। সে কথাই বলা হয়েছে।


কলেমা নামাজ, রোজা প্রভৃতি যথাযত পালন করেই আমরা ভাবি ইসলাম পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেছে, কিন্তু আসলে কি তাই?আল্লাহ বলেন, তিনি জ্বীন ও ইনসানকে শুধুই তার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সঙ্গে দিয়েছেন পার্থিব চাহিদা। শুধুমাত্র ইবাদত করতে গেলে এগুলোর কি হবে। অতএব আমাদের সেই ইবাদতের তাৎপর্য বুঝতে হবে। ফরজ ইবাদতের বাইরে প্রতিটা কাজই যদি আমরা আল্লার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে তারই উপর ভরসা করে করি তবে তাও হবে ইবাদত। আর এখানেই হল সম্পূর্ণ আত্মসমর্পন, তখনই হব আমরা মুসলীম। মৃত্যু যখনই আসুক আমরা যেন এ অবস্থার বাইরে না থাকি।

وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُواْ وَاذْكُرُواْ نِعْمَةَ اللّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاء فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىَ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
অর্থাৎ;-আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়হস্তে ধারণ কর, পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা, আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরষ্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। অতএব তারই অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের কিনারায় অবস্থান করছিলে, অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদের মুক্তি দিয়েছেন। এ ভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শন সমুহ তোমাদের জন্য্য প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হও।“

মুত্তাকী হওয়ার পরই একতাবদ্ধ হওয়ার পালা। মানুষকে একতাবদ্ধ করতে প্রয়োজন, সহমত, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও মাধ্যম। এআয়াতে আল্লাহ সেই মাধ্যমের সন্ধান দিলেন। সুরা বাক্বারায় আমরা দেখেছি কোরআনকে মজবুত হাতল বলা হয়েছে, এখানে মজবুত রশি বলা হচ্ছে। যার এক প্রান্ত আল্লাহর কাছে, অপর প্রান্ত মানুষের কাছে, হাদীশে বলা হয়েছে।এই কোরআনের মাধ্যমেই আল্লাহ মদীনার আওফ ও খাজরাজ গোত্রের দীর্ঘ দিনের শত্রুতাকে সম্প্রীতিতে বদলে দিলেন। তারা আপোষে ভাই ভাই হয়ে গেল। এ যেন তারা ধ্বংসের প্রান্তসীমা থেকে ফিরে এল। শুধু তাই নয় মোহাজীর ও আনসারগনের ভ্রাতৃত্ব নজির বিহীন হয়ে আছে।

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অর্থাৎ;-“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম”।

মুত্তাকীগন কোরআনের এর মাধ্যমে জমাত বদ্ধ হওয়ার পর তাদের সামনে তিনটি কাজের দায়িত্ব এসে গেল;-
প্রথমটি সৎকর্মের প্রতি আহবান।
দ্বিতীয়টি ভাল কাজের নির্দেশ ও
তৃতীয়টি অন্যায় হতে অন্যকে বিরত রাখা বা বাধা দেওয়া।
অন্যায় হতে বিরত রাখার তিনটি স্তর আছে। প্রথমটি শক্তি প্রয়োগে বাধা দেওয়া। প্রথমটি সম্ভব নাহলে দ্বিতীয়টি, অর্থাৎ ভাল কথায় বুঝিয়ে অথবা প্রতিবাদী ভাষায় বাধা দেওয়া। যদি এটিও অসম্ভব হয় তবে, তৃতীয়টি, অন্তরে ঘৃণা পোষন করা। সাথে সাথে দ্বিতীয়টির জন্য তৈরী ও পরে প্রথমটির উপযুক্ত হয়ে শক্তি প্রয়োগে বাধা দেওয়া। তৃতীয় অবস্থাটিকে ইমানের দূর্বলতম অবস্থান বলা হয়েছে। আর যারা একাজ যথাযত পালন করবে তারাই হবে সার্থক বা সফলকাম। আর এভাবেই কোরআনের বানী বা ইসলামকে বিশ্বের দরবারে বিস্তৃত করতে হবে। ‘মিনকুম’ শব্দ দ্বারা ইসলামের বৃহত গোষ্টি হতে ক্ষুদ্র দলে আনা হয়েছে।

وَلاَ تَكُونُواْ كَالَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَاخْتَلَفُواْ مِن بَعْدِ مَا جَاءهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُوْلَـئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
অর্থাৎ;-আর তাদের মত হয়োনা, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শণ সমুহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে; তাদের জন্য রয়েছে ভয়ঙ্কর আজাব।
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكْفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ فَذُوقُواْ الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ
অর্থাৎ;-সেদিন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন মুখ হবে কালো।। বস্তুতঃ যাদের মুখ কালো হবে, তাদের বলা হবে, তোমরা কি ইমান আনার পর কাফের হয়ে গিয়েছিলে?এবার সে কুফরীর বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহন করো।

যারা ইমান আনার পর ইসলাম ত্যাগ করবে বা কাফের হয়ে যাবে, কেয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে। এখান থেকেই তাদের আজাব শুরু হবে। অপর পক্ষে ইমানদারদের চেহারা উজ্জ্বল হবে।
وَأَمَّا الَّذِينَ ابْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِي رَحْمَةِ اللّهِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থাৎ;-আর যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে, তারা থাকবে রহমতের মাঝে, তাতে তারা অনন্তকাল অব্থান করবে।
تِلْكَ آيَاتُ اللّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ وَمَا اللّهُ يُرِيدُ ظُلْمًا لِّلْعَالَمِينَ
অর্থাৎ;-এ গুলো হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ, যা আপনাদের যথাযত পাঠ করে শোনানো হচ্ছে। আর আল্লাহ বিশ্ব জাহানের প্রতি উৎপীড়ন করতে চান না।।
وَلِلّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ وَإِلَى اللّهِ تُرْجَعُ الأُمُورُ

অর্থাৎ;-আর যা কিছু আসমান ও জমিনে রয়েছে, সে সবই আল্লাহর এবং আল্লাহর প্রতিই সব কিছু প্রত্যাবর্তনশীল।



বিসমিল্লায় গলদ শব্দ ব্যবহার কর যাবেনা

বিসমিল্লায় গলদ শব্দ ব্যবহার কর যাবেনা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’—এ বাক্যটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছেন হজরত সুলায়মান সালাইহিস সালাম। সাবা নগরীর রানি বিলকিস আলাইহাস সালাম কাছে লেখা চিঠিতে তিনি এ বাক্যটি ব্যবহার করেছেন। পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ২৯-৩০ নম্বর আয়াতে সেই চিঠির বিবরণ উল্লেখ রয়েছে। এরপর রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া আর কোনো নবীকেই বিসমিল্লাহর বিধান দেওয়া হয়নি। প্রাথমিক যুগে রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ লিখতেন। তারপর সুরা হুদের ৪১তম আয়াতে ‘বিসমিল্লাহি মাজরেহা’ নাজিল হলে তিনি শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ লিখতে শুরু করেন। এরপর সুরা বনি ইসরাইলের ১০ নম্বর আয়াতে ‘কুলিদ্য়ুল্লাহা আওয়িদ্উর রাহমান’ অবতীর্ণ হলে তিনি ‘বিসমিল্লাহির রহমান’ লিখতে শুরু করেন। এরপর সুরা নামলের ৩০তম আয়াতে পুরো বিসমিল্লাহ নাজিল হলে তিনি পুরো ‘বিসমিল্লাহ’ লেখার রীতি প্রচলন করেন। (রুহুল মাআনি ও আহকামুল কোরআন লিল জাস্সাস)
পবিত্র কোরআন শুরু করা হয়েছে বিসমিল্লাহর মাধ্যমে। শ্রেষ্ঠতম ইবাদত নামাজের প্রতিটি রাকাত শুরু হয় বিসমিল্লাহ দিয়ে। শ্রেষ্ঠতম স্থান মসজিদে প্রবেশ করতে হয় বিসমিল্লাহ পড়ে। রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জিবরাঈল আলাইহিস সালাম যখনই আমার কাছে অহি নিয়ে আসতেন, তিনি বিসমিল্লাহ পড়তেন।’ (দারা কুতনি) কোরআনের একটি সুরা ছাড়া সব সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ রয়েছে। হাদিসের কিতাবগুলো শুরু করা হয়েছে বিসমিল্লাহ দিয়ে। রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমকালীন সব রাজা-বাদশাহর কাছে চিঠি লিখেছেন বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করে। এরপর হুদাইবিয়ার ঐতিহাসিক সন্ধিপত্রে রাসুলছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো বিসমিল্লাহ লিখতে বলেছেন। অবশ্য লেখার পর কাফেরদের আপত্তির কারণে শুধু ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ রাখা হয়। (আহকামুল কোরআন লিল জাস্সাস, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮) ঐতিহাসিক ‘মদিনা সনদ’ও শুরু হয়েছে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’-এর মাধ্যমে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২২৩)

বিসমিল্লাহ পবিত্র কোরআনের একটি অংশবিশেষ হওয়ার ব্যাপারে কারোই দ্বিমত নেই। তাই তারাবির নামাজে একবার উচ্চৈঃস্বরে বিসমিল্লাহ না পড়লে খতমে কোরআন আদায় হবে না।
কোনো কিছুর শুরুতে ভুল হলে বাগধারা হিসেবে ‘গোড়ায় গলদ’, ‘বিসমিল্লায় গলদ’ ব্যবহার করা হয়। অথচ ‘বিসমিল্লাহ’ শব্দটি পবিত্র কোরআনের আয়াতের অংশ। তাই ঈমানদারের কাছে ‘বিসমিল্লাহ’র গুরুত্ব বর্ণনাতীত। ‘বিসমিল্লাহ’ শুধু একটি বাক্য নয়, এর মাধ্যমে আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ পায়। একত্ববাদের সাক্ষ্য দেওয়া হয়। আল্লাহর নিয়ামতের স্বীকার করা হয়। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। আল্লাহর নাম নিয়ে শয়তানকে বিতাড়িত করা হয়। মুসলমানিত্বের জানান দেওয়া হয়।
‘বিসমিল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর নামে। আর ‘গলদ’ শব্দের অর্থ ভুল। তাই ‘বিসমিল্লায় গলদ’ কথাটার এমন অর্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যে ‘বিসমিল্লায়’ অর্থাৎ আল্লাহর নামে ভুল আছে! (নাউজুবিল্লাহ)
কোনো কিছুর শুরুতে ভুল হলে ‘বিসমিল্লায় গলদ’ বাগধারাটি কেউ কেউ ব্যবহার করেন। বই-পুস্তকেও বাগধারাটি বিদ্যমান। অসাবধানতার কারণে হয়তো এটির ব্যবহার চলে আসছে। অথচ অজ্ঞতাবশত এ ধরনের বাক্য ব্যবহার করলে ঈমান চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। হাদিস শরিফে এসেছে, আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনো কখনো পরিণাম চিন্তা না করে এমন কথা বলে ফেলে, যার ফলে সে নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামের এমন গভীরে, যার দূরত্ব পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যকার দূরত্বের চেয়ে অধিক।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬০৩৩)
অন্য হাদিসে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনো আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কোনো কথা বলে, অথচ এ সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই থাকে না। এর ফলে আল্লাহ তার মর্যাদা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেন। আবার বান্দা কখনো বেপরোয়াভাবে আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কোনো কথা বলে, যার পরিণতি সম্পর্কে সে সচেতন নয়। অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬০৩৪)
বাগধারা হিসেবে যাঁরা উল্লিখিত বাক্য ব্যবহার করেন, তাঁরা কিন্তু খুব সহজেই অন্য শব্দ ব্যবহার করতে পারেন। বাংলা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ভাষা। এ ভাষার শব্দভাণ্ডারও সমৃদ্ধ। যেমন—‘বিসমিল্লায় গলদ’-এর পরিবর্তে ‘গোড়ায় গলদ’, ‘শুরুতেই সমস্যা’সহ আরো একাধিক শব্দ ব্যবহার করা যায়। ‘বিসমিল্লায় গলদ’-এর চেয়েও ‘গোড়ায় গলদ’, ‘শুরুতেই সমস্যা’—এ দুটি বাক্যের সাহিত্যমান খুবই চমৎকার। কেননা এগুলোতে ‘অনুপ্রাস’ ব্যবহৃত হয়েছে।
এ বিষয়ে ভাষাবিদ, লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ধর্ম মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পুস্তকপ্রণেতা ও প্রকাশকদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।











যে নেক কাজ চালু করবে সে কিয়ামত পর্যন্ত নেকি পাবে
Image result for নেকিযে নেক কাজ চালু করবে সে কিয়ামত পর্যন্ত নেকি পাবে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন-
«مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً، فَلَهُ أَجْرُهَا، وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً، كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ»
‘‘যে ব্যক্তি কোনও সুন্দর আদর্শের প্রচলণ করবে সে সেটার প্রতিফল (সাওয়াব) তো পাবেই তদুপরি কিয়ামত পর্যন্ত যারা তার অনুসরণে আমল করবে তাদের সকলের সম্মিলিত ‘আমলের সাওয়াবও ঐ প্রচলনকারী পাবে(অথচ) ঐ সকল অনুসরণকারীদের সাওয়াবে কোনরূপ ঘাটতি হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি কোন খারাপ আদর্শের প্রচলন করবে সে সেটার ফলে পাপী তো হবেই তদুপরি কিয়ামত পর্যন্ত যারা তার অনুসরণে আমল করবে তাদের সকলের সম্মিলিত পাপরাশির পরিমাণ পাপের দায়ীও সে ব্যক্তি হবে, (অথচ) ঐ সকল অনুসরণকারীদের পাপে এতটুকুও ঘাটতি হবে না।
(মুসলিম: কিতাবুল ‘ইলম: ৮/৬১, কিতাবুল যাকাত: ৩/৮৭, আন- নাসায়ী: ৫/৭৮; ইবনে হাম্বল: ৪/৩৫৭-৩৫৯)
যদি কেউ কোনো ভাল কর্মের দিকে নির্দেশনা প্রদান করে তবে তিনি কর্মটি পালনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবেন। (মুসলিম)।



মৃত ব্যক্তির জন্য আপনার কি করনীয় ?
Image result for মৃতমৃত ব্যক্তির জন্য আপনার কি করনীয় ?
২১ শে ফেব্রুয়ারী , স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবসে দেখা যায় দলে দলে লোক যেয়ে ফুল দিয়ে আসে। কিন্তু এই ফুল কি কাজে আসবে ? মৃত ব্যক্তির রুহে কি এই ফুল যাবে ? একজন মুসলমান যিনি দেশের জন্য মারা গেছেন তিনি জীবিত ব্যক্তির কাছে নেকি আশা করেন যাতেউনার রুহের মাগফেরাত হয়। সে হিসেবে একজন মুসলমান হিসেবে আপনি যা যা করতে পারেন -

১. মৃত ব্যক্তিদের জন্য দুআ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা :
আল-কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে—
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ. (الحشر :১০)
‘যারা তাঁদের পরে এসেছে তারা বলে ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ও আমাদের যে সকল ভাই পূর্বে ঈমান গ্রহণ করেছেন তাদের ক্ষমা করুন।’[সূরা হাশর : ১০]

এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সকল মুসলিম দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, তাদের মাগফিরাতের জন্য প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন। তাই বুঝে আসে মৃত ব্যক্তিদের জন্য মাগফিরাতের দুআ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। এমনিভাবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মৃত ব্যক্তিদের জন্য দুআ-প্রার্থনা করার কথা কুরআনের একাধিক আয়াতে উল্লেখ করেছেন।
হাদীসে এসেছে—
عن أبي أسيد الساعدي قال سأل رجل من بني سلمة فقال يارسول الله هل بقي من بر أبواي شيء أبرهما بعد موتهما، فقال نعم، الصلاة عليهما والاستغفار لهما وإنفاذ عهدهما بعد موتهما وصلة الرحم التي لا توصل إلا بهما وإكرام صديقهما.رواه أبو داود وابن ماجة
—সাহাবী আবু উসাইদ আস-সায়েদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক বর্ণিত যে, বনু সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রাসূল ! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর এমন কোন কল্যাণমূলক কাজ আছে যা করলে পিতা-মাতার উপকার হবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন : হ্যাঁ, আছে। তাহল, তাদের উভয়ের জন্য আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করা। উভয়ের মাগফিরাতের জন্য দুআ করা। তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা ও তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা।[আবু দাউদ ও ইবনে মাজা]
হাদীসে এসেছে—
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله إلا من ثلاث: إلا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له.رواه مسلم ১৬৩১ والنسائ ৩৫৯১
আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে পেতে থাকে—

১. সদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে) ২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম (বিদ্যা) ৩. সৎ সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে।[মুসলিম ও নাসায়ী]
এ হাদীস দ্বারা বুঝে আসে যে : সন্তান যদি সৎ হয় ও পিতা-মাতার জন্য দুআ করে তবে তার ফল মৃত পিতা-মাতা পেয়ে থাকেন।

২-মীলাদ
ইমাম জালালুদ্দিন আস সৈয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “আল উয়াছায়েল ফী শরহিশ শামাইল” গ্রন্থে উল্লেখ করেন,যে গৃহে বা মসজিদে কিংবা মহল্লায় মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। তখন অবশ্যই সে গৃহ বা মসজিদ বা মহল্লা অসংখ্য ফেরেশতা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং উক্ত স্থান সমূহে যারা অবস্থান করে তাদের জন্য তারা সালাত পাঠ করে। (অর্থাৎ তাদের গুণাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে) এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের সবাইকে সাধারণভাবে রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা ভূষিত করেন। অতঃপর নূরের মালা পরিহিত ফেরেশতাকুল বিশেষতঃ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ঈস্রাফীল ও আজরাঈল আলাইহিস সালাম মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে মাহফিল আয়োজনকারীর গুণাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন।

৩-খতমে তাহলীল
খতম শব্দের অর্থ শেষ। তাহলীল শব্দের অর্থ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অতএব খতমে তাহলীলের অর্থ হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ শেষ করা। পারিভাষিক অর্থে এক লাখ বা সোয়া লাখ বার লা-ইলা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা। এ যেমন এককভাবে আদায় করা হয়, তেমনি কিছু সংখ্যক লোক একত্র হয়ে পাথর বা কোন দানা গুনে গুনে এ খতম আদায় করে থাকে। সাধারণত: কোন লোক ইন্তেকাল করলে তার আত্মার মাগফিরাতের জন্য এ খতমের আয়োজন করা হয়।

৪-কুরআন খতম বা কুরআনখানি
মৃত ব্যক্তির প্রতি সওয়াব পাঠানোর জন্য কুরআন খতম বা কুরআন খতমের অনুষ্ঠান করা হয়।

৫- তবারুক খাওয়ানো-
মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনায় দরিদ্র অসহায় লোকদের জন্য খাবারের আয়োজন করা। আল্লাহ ও তার রাসূল মানুষকে খাদ্য দানে উৎসাহিত করেছেন এবং এর জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন।

৬. মৃত ব্যক্তির জন্য দান-সদকাহ করা ও জনকল্যাণ মূলক কাজ করা :
হাদীসে এসেছে—
عن عائشة رضي الله عنها أن رجلا أتى النبى صلى الله عليه وسلم، فقال يا رسول الله إن أمي افتلتت نفسها ولم توص وأظنها لو تكلمت تصدقت أفلها أجر إن تصدقت عنها؟ قال: نعم.رواه البخاري ১৩৮৮ و مسلم ১০০৪
আয়েশা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল যে, আমার মা হঠাৎ মৃত্যু বরণ করেছেন, কোন কিছু দান করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয় যদি তি কথা বলতে পারতেন তবে কিছু সদকা করার নির্দেশ দিতেন। আমি যদি তার পক্ষে সদকা করি তাহলে তিনি কি তা দিয়ে উপকৃত হবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : হ্যাঁ।[ বুখারী : ১৬৩১ ও মুসলিম ৩৫৯১]
হাদীসে এসেছে—
عن سعد بن عبادة رضي الله عنه أنه قال: يا رسول الله إن أم سعد ماتت فأي الصدقة أفضل؟ قال: الماء، فحفر بئرا وقال : لأم سعد. رواه النسائي ৩৫৮৯ وأحمد
সাহাবী সা’দ বিন উবাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। কী ধরনের দান-সদকা তার জন্য বেশি উপকারী হবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘পানির ব্যবস্থা কর’। অত:পর তিনি (সা’দ) একটা পানির কূপ খনন করে তার মায়ের নামে (জন সাধারণের জন্য) উৎসর্গ করলেন।[নাসায়ী ও মুসনাদ আহমদ]
হাদীসে আরো এসেছে
عن ابن عباس رضي الله عنهما أن رجلا قال يا رسول الله إن أمه توفيت أفينفعها إن تصدقت عنها، قال نعم، قال فإن لي مخرفا فأشهدك أني قد قد تصدقت به عنها. رواه النسائي ৩৫৯৫
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা মৃত্যু বরণ করেছে। যদি আমি তার পক্ষে ছদকাহ (দান) করি তাহলে এতে তার কোন উপকার হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। এরপর লোকটি বলল, আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি আমার একটি ফসলের ক্ষেত তার পক্ষ থেকে সদকাহ করে দিলাম।[নাসায়ী, ৩৫৯৫]

৭) ফাতেহা পাঠ
সূরা ফাতেহা পাঠ করা। তবে, পরিভাষায় মৃত ব্যক্তির কবরে উপস্থিত হয়ে তার জন্য সূরা ফাতেহা বা সংক্ষিপ্ত দুআ-প্রার্থনা করা।

৮) কুরবানী করা :
যেমন হাদীসে এসেছে—
عن عائشة وأبي هريرة رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا أراد أن يضحي اشترى كبشين عظيمين سمينين أقرنين أملحين موجوئين ( مخصيين)، فذبح أحدهما عن أمته لمن شهد لله بالتوحيد وشهد له بالبلاغ، وذبح آخر عن محمد وعن آل محمد صلى الله عليه وسلم . (رواه ابن ماجة ৩১১৩ وصححه الألباني)
আয়েশা আলাইহাস সালাম ও আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কুরবানী দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দুটো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিং ওয়ালা, সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটা তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কুরবানী করলেন, যারা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিয়েছে ও তার রাসূলের রিসালাত পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবার বর্গের জন্য কুরবানী করেছেন।[ইবনে মাজা]


৯) মৃতদের পক্ষ থেকে তাদের অনাদায়ি হজ উমরা, রোযা আদায় করা :
বহু সংখ্যক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত ব্যক্তির অনাদায়ি হজ, উমরা, রোযা—ইত্যাদি আদায় করা হলে তা মৃতের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যায়। যেমন তাদের পক্ষ থেকে তাদের পাওনা আদায় করলে তা আদায় হয়ে যায়।[মুসলিম, ১৯৩৫]

উল্লেখিত হাদীসসমূহে মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয় সম্পর্কে যে দিক-নির্দেশনা আমরা পেলাম তা হল মৃত ব্যক্তির জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দুআ করা। কুরআন ও হাদীসে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাদের ইছালে ছাওয়াবের জন্য অধিকতর স্থায়ী জনকল্যাণ মূলক কোন কাজ করা। যেমন মানুষের কল্যাণার্থে নলকূপ, খাল-পুকুর খনন, বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, মাদরাসা-মসজিদ, পাঠাগার নির্মাণ। দ্বীনি কিতাবাদী-বই-পুস্তক দান, গরিব-দু:খী, অভাবী, সম্বলহীনদের দান-সদকা করা। মসজিদ, মাদরাসা, ইসলামী প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা হয়—এমন সদকা বা দান। মৃত মাতা-পিতার বন্ধু বান্ধবদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা। তাদের রেখে যাওয়া অঙ্গীকার পূর্ণ করা।

আমাদের বিদায়ি আপনজনদের জন্য এমন কিছু করা উচিত যা সত্যিকারার্থে তাদের কল্যাণে আসে। এবং এ ব্যাপারে প্রচলিত সকল প্রকার কুসংস্কার, বিদআত, মনগড়া অনুষ্ঠানাদি পরিহার করে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনায় কাজ করা কাম্য। কেননা, তা যতই চাকচিক্যময় হোক না কেন, তা মৃত ব্যক্তির কোন উপকারে আসে না। বরং, আয়োজনকারীরা গুনাহগার হয়ে থাকেন।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن مما يلحق المؤمن من عمله وحسناته بعد موته علماً علمه ونشره وولدا صالحا تركه ومصحفا ورثه أو مسجدا بناه أو بيتا لابن السبيل بناه أو نهرا أجراه أو صدقة أخرجها من ماله في صحته وحياته من بعد موته. رواه ابن ماجه رقم ২৪৯


আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘মুমিনের ইন্তেকালের পর তার যে সকল সৎকর্ম তার কাছে পৌঁছে তা হল, সে জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে যাওয়া যার প্রচার অব্যাহত থাকে, সৎ সন্তান রেখে যাওয়া, কুরআন শরীফ দান করে যাওয়া, মসজিদ নির্মান করে যাওয়া, মুসাফিরদের জন্য সরাইখানা নির্মান করে যাওয়া, কোন খাল খনন করে প্রবাহমান করে দেওয়া অথবা এমন কোন দান করে যাওয়া যা দ্বারা মানুষেরা তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর উপকার পেতে থাকে।’[ইবনে মাজা, হাদীসটি সহীহ]