আদ্ দুরারুল মুখতারাহ্ (ফী নিসবাতি সুলত্বানিন নাছীর-২য় খণ্ড) আবু সুলত্বানিন নাছীর আলাইহিস সালাম সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার একখানা মহাসম্মানিত বড় মাক্বাম মুবারক প্রকাশ-পর্ব-৪

আবু সুলত্বানিন নাছীর আলাইহিস সালাম সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার একখানা মহাসম্মানিত বড় মাক্বাম মুবারক প্রকাশ-পর্ব-৪

ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১০ই জুমাদাল ঊলা শরীফ লাইলাতুছ ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার রাত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি ওই দিন আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আব্বা আলাইহিস সালাম উনাকে স্বপ্ন মুবারক-এ দেখলাম। দেখলাম, উনি এখানে এসেছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে উনাকে একখানা বড় মাক্বাম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে।(সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) একখানা বড় দায়িত্ব মুবারক দেওয়া হয়েছে। উনি খুব দামী কাপড় পরিধান মুবারক করে এসেছেন। অনেক গাড়ি এসেছে। উনাকে গার্ড অব অনার অর্থাৎ অত্যন্ত সম্মানের সাথে পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে উনাকে একটা বড় দায়িত্ব মুবারক দেওয়া হয়েছে। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) উনি খুব দামী কাপড় মুবারক পরিধান করে আছেন। উনি যাচ্ছেন, সামনে গাড়ি আছে। অনেক হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং জিন-ইনসান সবাই উনাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি দূরে থেকে দেখতেছি। তখন রাস্তা থেকে একজন লোক আসলো, উনি ঐ লোককে বাই‘আত করালেন। তারপর গাড়িতে গিয়ে উঠতেছেন। আমি বললাম- ‘ব্যাপার কী?’ বলা হলো যে, ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে উনাকে একটা বিশেষ দায়িত্ব মুবারক দেওয়া হয়েছে। ওই দায়িত্ব মুবারক পালন করার জন্য উনি যাচ্ছেন।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) উনি অনেক দামী কাপড় মুবারক পরিধান করে আছেন। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) এমনে কোর্তা মুবারক, নিচে সম্ভবত সেলোয়ার হতে পারে, আমি যতোটুক বুঝেছি। কোর্তা মুবারক লম্বা হওয়ার কারণে বুঝা যায় না। উপরে অনেক দামী একটা জুব্বা মুবারক। অনেক সোনালী কারুকার্য করা। আর উনার দুই পাশে অত্যন্ত সম্মানের সাথে পাহাড়া দিয়ে বিরাট একটা গাড়িতে করে উনাকে নিয়ে যাচ্ছে। খুব ভালো। দেখলাম- উনাকে বিরাট একটা মাক্বাম মুবারক দেয়া হয়েছে। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) আমি তো সেটাই বলে থাকি যে, মানুষ তো আর মাক্বাম সম্পর্কে বুঝে না। অনেক দামী কাপড়। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) উপরে যে জুব্বা মুবারক পরা, অনেক দামী জুব্বা মুবারক। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) সোনালী কারুকার্য করা। আর অনেক ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা, জিন-ইনসান সবাই দাঁড়িয়ে রয়েছে। অত্যন্ত সম্মানের সাথে পাহাড়া যেরকম দেয়া হয়, ঐ রকম অত্যন্ত সম্মানের সাথে পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সামনে গাড়িটা আমি দেখলাম- অনেক বড় একটা গাড়ি। ঐটা দিয়ে নিয়ে যাবে। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) আমি বললাম- ‘কি ব্যাপার?’ বলা হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি উনাকে একটা দায়িত্ব মুবারক দিয়েছেন, একখানা সম্মানিত বড় মাক্বাম মুবারক দিয়েছেন, সেই সম্মানিত মাক্বাম মুবারক-এ গিয়ে উনি উনার দায়িত্ব মুবারক পালন করবেন, সেজন্য যাচ্ছেন।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) সেজন্যই বলে থাকি যে, নিসবত-কুরবত তো অন্য বিষয়।” সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! মূলত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ক্বায়িম মাক্বামে আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের মালিক হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! তাই উনার সম্পর্কে জানা এবং সেই অনুযায়ী উনার তা’যীম-তাকরীম মুবারক, ছানা-ছিফত মুবারক করা এবং গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য ফরযে আইন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবূ সুলত্বানিন নাছীর আলাইহিস সালাম সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রতি হাক্বীক্বী বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ ও হুসনেযন মুবারক পোষণ করার, উনার যথাযথ তা’যীম-তাকরীম মুবারক করার, ছানা-ছিফত মুবারক করার এবং গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!


আদ্ দুরারুল মুখতারাহ্ (ফী নিসবাতি সুলত্বানিন নাছীর-২য় খণ্ড) আমার সম্মানার্থে সারা পৃথিবী, সমস্ত কায়িনাতকে মসজিদ এবং পবিত্র করা হয়েছে ’-পর্ব-৩

 আমার সম্মানার্থে সারা পৃথিবী, সমস্ত কায়িনাতকে মসজিদ এবং পবিত্র করা হয়েছে ’-পর্ব-৩

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ১লা সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ লাইলাতুস সাবত শরীফ (শনিবার রাত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন,

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الَّلُ عَلَيْهِ بِيَاءِ بِسِتٍّ اُعْطِيْتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ وَسَلَّمَ قَالَ فُضِّلْتُ عَلَى الَْنْ بِلرُّعْبِ وَاُحِلَّتْ لِىَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِىَ الَْرْضُ مَسْجِدًا وَّطَهُوْرًا وَاُرْسِلْتُ اِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِىَ النَّبِيُّوْنَ

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর আমাকে বিশেষ করে ৬টি বিশেষ খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে। 

যথা: (১) আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলিম মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে, 

(২) আমাকে সম্মানিত রো’ব মুবারক হাদিয়া মুবারক করা হয়েছে, 

(৩) আমার জন্য গণীমতের মালকে হালাল করা হয়েছে, 

(৪) আমার জন্য, আমার সম্মানার্থে সারা পৃথিবী, সমস্ত কায়িনাতকে মসজিদ এবং পবিত্র করা হয়েছে, (৫) আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে প্রেরিত হয়েছি এবং 

(৬) আমার দ্বারা হযরত নবীরসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমনের ধারা বন্ধ করা হয়েছে।

অর্থাৎ আমার পরে নতুন করে কোনো নবী-রসূল আগমন করবেন না।”

সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ)

আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনেই বসা ছিলাম। তিনি বললেন,

وَجُعِلَتْ لِىَ الَْرْضُ مَسْجِدًا وَّطَهُوْرًا

“আমার জন্য, আমার সম্মানার্থে সারা পৃথিবী, সমস্ত কায়িনাতকে মসজিদ এবং পবিত্র করা হয়েছে।”

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘আমার সম্মানার্থেই এটা করা হয়েছে। আমার সম্মানার্থে এটা করা হয়েছে।’

এখন ‘মুত্বহ্হির বা পবিত্রতাদানকারী’ এটা তো স্বাভাবিক একটা কথা। উনি তো এর চেয়ে কোটিগুণ উর্ধ্বে। প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যামানায় তরতীব ছিলো- উনারা ইবাদত খানায় ইবাদত করলে ক্ববূল হতো। কিন্তু একমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি যখন যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক আনলেন, উনার সম্মানার্থে আপসেআপ সব পবিত্র হয়ে গেলো। যমীন সব মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হয়ে গেছেন। বিশেষ মাহফিল তো হচ্ছেই। আমি মাহফিলের সময় তো সব খোঁজ নেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি কতটুকু খুশি হলেন। উনি খুশি হন। কারণ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান-মান মুবারক যত প্রকাশ করা যায়, উনি তত খুশি হন।” সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!


আদ্ দুরারুল মুখতারাহ্ (ফী নিসবাতি সুলত্বানিন নাছীর-২য় খণ্ড) . ‘২৪ ঘন্টা দায়িমীভাবে আমার দুটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নিসবত মুবারক রয়েছেন ’-পর্ব-২

‘২৪ ঘন্টা দায়িমীভাবে আমার দুটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নিসবত মুবারক রয়েছেন ’-পর্ব-২

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১লা সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) লাইলাতুস সাবত শরীফ (শনিবার রাত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “অনেকগুলো বিষয় আমি বলেছি। অনেকগুলো বিষয় রয়েছে যা ভাষা দিয়ে বুঝানো যায় না। যতটুকু বুঝানো যায় ততটুকু বলা হয়। তাহলে সেটা শুনে মনে রেখো। তোমাদের ঈমানী কুওয়াত বৃদ্ধির জন্য বলা। তোমরা বাই‘আত হয়েছো কোথায়? কার কাছে বাই‘আত হলে? শুনো, জানো। ঈমানী কুওয়াত বৃদ্ধি হবে। এই জন্য বলা। না বললে জানবে কিভাবে? যেমন- একখানা ঘটনা বললাম যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি বলেছেন যে, ‘আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারক) উনার নিচে উনার মাথা মুবারক রেখেছেন। আর আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারক উনার নিচে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মাথা মুবারক রেখেছেন।’ ঠিক আছে। অনেক ফযীলত। এখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার বিশেষ সাক্ষাৎ মুবারক-এ উনাকে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তাহলে সরাসরি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারক) আমার মাথা মুবারক-এ তুলে দিন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনি সরাসরি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক আমার মাথা মুবারক-এ তুলে দিলেন। এভাবে অনেকদিন অতিবাহিত হলো অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে অতিবাহিত হলো। কিছু দিন পর মাথা ব্যাথা শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে তা প্রচণ্ড আকার ধারণ করলো। তখন আমি মাথা ব্যাথার কারণে হাজার হাজার ওষুধ খেয়েছি; কিন্তু মাথা ব্যাথা সারেনি। নাপা ট্যাবলেট মনে হয় কয়েক হাজার খেয়েছি আমি। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি আমাকে বললেন যে, ‘আরে এটা সারবে না; কোনো দিন সারবে না কারণ আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক উনার তাছীর মুবারক-এ আপনার এই মাথা ব্যাথা। আমার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক মাথা থেকে আপনার কোল মুবারক-এ নিলে সেরে যাবে।’ আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার সরাসরি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক আমার কোল মুবারক-এ নিলাম। সাথে সাথে আমার মাথা ব্যাথা সেরে গেলো। এখন তো ওষুধ খাই না। এখন এটার ফায়ছালা মুবারক কী? মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক নাযিল হলে সমস্ত শরীর জর্জরিত হয়ে যেতো। মনে হয় যে, চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সেই রকম হয়েছিলো। এখন তো আমার ওষুধ খেতে হয় না। এই বিষয়গুলি মানুষ কি বুঝবে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনি সরাসরি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক আমার মাথা মুবারক-এ তুলে দিলেন। আমার অনেক দিন মাথা ব্যাথা ছিলো। উনি বললেন, ‘কোনো দিন সারবে না মাথা ব্যাথা। কোল মুবারক-এ নিতে হবে।’ আমি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক আমার কোল মুবারক-এ নিলাম। নেওয়ার সাথে সাথে আমার মাথা ব্যথা সেরে গেলো। এখন আর ওষুধ খাই না আমি। মনে হয় কয়েক বান্ডেল বা প্যাকেট নাপা খেয়েছি। এরকম বড় বড় প্যাকেট শেষ হয়ে গেছে। দিনে ৬টা-৮টা করে নাপা খেয়েছি। এখন তো আর ব্যাথা নেই। এখন এটার কী ফায়ছালা? এটা কী বুঝবে তোমরা? কি বুঝেছো বলো দেখি? ২৪ ঘন্টা দায়িমীভাবে আমার দুটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নিসবত মুবারক রয়েছেন- (১) একটা হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি সারাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার নূরুল ইলিম মুবারক-এ (সিনা মুবারক-এ), আর আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ইলিম মুবারক-এ (সিনা মুবারক-এ) ২৪ ঘন্টা দায়িমীভাবে। (২) আর দ্বিতীয় হচ্ছে যে, সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারক) আমার কোল মুবারক-এ। এই দুইটা দায়ীমী। এছাড়া আরো অতিরিক্ত নিসবত মুবারক আছে। অবস্থা অনুযায়ী। এখন এটা মানুষ কি ব্যাখ্যা করবে? এরা কোনো দিন আমার সাথে পারবে না।ইনশাআল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুদ দারাজাত মুবারক আমার কোল মুবারক-এ এটা হচ্ছে ২৩ জনের যেই বেষ্টনী মুবারক রয়েছেন, সেই বেষ্টনী মুবারক উনার ভিতরে। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার নূরুল ইলিম মুবারক-এ (সিনা মুবারক-এ), আর আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ইলিম মুবারক-এ (সিনা মুবারক-এ) ২৪ ঘন্টা দায়িমীভাবে। এটা হচ্ছে ২৩ জনের বেষ্টনী মুবারক উনার অনেক উপরে। অর্থাৎ দুইটা দুই দিকে।” (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) ছাহিবে নেয়ামত, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ২২শে মুহররমুল হারাম শরীফ লাইলাতুল আরবিয়া শরীফ (বুধবার রাত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি আমাকে বলেছেন, উনি আমাকে উনার সবচেয়ে বেশি নৈকট্য মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন।” (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের সাথে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার কত বেমেছাল মহাসম্মানিত তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। এক কথায় তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের মালিক হচ্ছেন তিনি। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)

 

আদ্ দুরারুল মুখতারাহ্ (ফী নিসবাতি সুলত্বানিন নাছীর-২য় খণ্ড) আমি অনেক খুশি হয়েছি। আরো বেশি করলে , আরো বেশি খুশি হবো -পর্ব-১

আমি অনেক খুশি হয়েছি। আরো বেশি করলে , আরো বেশি খুশি হবো -পর্ব-১

পৃথিবীর ইতিহাসে ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনিই একমাত্র সেই সুমহান মহাসম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক, যিনি অনন্তকালের জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক জারী করেছেন এবং লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা খরচ করে বেমেছালভাবে পালন করে যাচ্ছেন। উনার এই বেমেছালভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনে খুশি হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বলেছেন, ‘আমি অনেক খুশি হয়েছি। আরো বেশি করলে, আরো বেশি খুশি হবো।’ সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! এ প্রসঙ্গে ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১৩ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১৩ই রবীউল আউওয়াল শরীফ) লাইলাতুল খামীস শরীফ (বৃহস্পতিবার রাত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি খুশী হয়েছেন, নাকি নাখুশী হয়েছেন, কোনো দলীল আছে? দলীল তো নেই। তাহলে বুঝবে কিভাবে? হ্যাঁ? কি বুঝতে পেরেছো কেউ? উনি খুশী হয়েছেন, নাকি নাখুশী হয়েছেন, কোন্টা? বলো তো দেখি? আমি তো (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ) সারা দিন অপেক্ষায় ছিলাম, দেখি উনি কি বলেন। উনি তো কিছু বলেন না। যখন ছলাতুল মাগরিব উনার পবিত্র আযান মুবারক হলো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বললেন- ‘আমি খুশী হয়েছি।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) যখন দিন শেষ হয়ে গেলো, আযান হলো, তখন আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, উনি বলেছেন- ‘হ্যাঁ; খুশী হয়েছি।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) আমি বললাম- ‘আমি কি এটা বলে দিবো?’ উনি বললেন- ‘হ্যাঁ; বলে দেন।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ, ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বললেন- ‘আরো করলে, আরো বেশী খুশী হবো।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)উনি সারা দিন কিছু বলেননি। আমি দেখলাম সারা দিন। আমি তো চিন্তিত ছিলাম। যখন ছলাতুল মাগরিব উনার পবিত্র আযান মুবারক হয়ে গেলো, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি বললেন যে, ‘হ্যাঁ; আমি খুশী হয়েছি।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) আমি বললাম- ‘জানিয়ে দেই।’ বললেন- ‘হ্যাঁ; জানিয়ে দেন।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) উনি বললেন‘আরো বেশী করলে, আরো বেশী খুশী হবো।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) তাহলে আরো বেশী করো। সামনে আমরা আরো বেশী করবো। এখন ৯০ দিনের প্রস্তুতি নিতে হবে। ১ লক্ষ ১২ হাজার প্যাকেটের প্রস্তুতি নিতে হবে।” (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১৪ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশশুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১৪ই রবীউল আউওয়াল শরীফ) লাইলাতুল জুমু‘আহ্ শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “সেদিন দেখলাম মাগরিবের আযানের সময় উনি খুশী হয়েছেন। ঐ দিনই (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১৩ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম লাইলাতুল খামীস শরীফ) ভোর রাত্রে দেখলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি অনেক খুশী। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) ভোর রাত্রে উনি বললেন যে, ‘আমি অনেক খুশী হয়েছি।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) সন্ধ্যার চেয়ে অনেক বেশী হাসি-খুশী, হাস্যোজ্জ্বল। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) উনি বললেন, ‘আরো বেশী করলে, আরো বেশী খুশি হবো।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) এখন যতো করা যায়। নূরুত তাক্বরীর, নূরুশ শাহাদাত, দুইটা তো। নূরুত তাক্বরীর মানে তাবাস্সুম (মুচকি হাসি)। এটা সন্ধ্যার সময়। আর ভোর রাত্রে এর চেয়ে বেশী, অনেক, অনেক বেশী হাসি-খুশি মুবারক। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) যতো করা যায়, ততো বেশী খুশি হবেন। সময়সীমা তো দেড়গুণ বাড়ানো হচ্ছে। আর তাবারুক ডাবলের কাছাকাছি।” (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১৪ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ ইয়াওমুল জুমু‘আহ্ শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আলোচনা মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ অতিবাহিত হলো, বললে মানুষ তো সব বুঝবে না। আমি পুরোটা সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওখানে ছিলাম। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) উনি একটু খুশি হন, খুশি মুবারক প্রকাশ করেন। ছলাতুল মাগরিব উনার পবিত্র আযান হয়ে গেলো। তখন তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত তাক্বরীর মুবারক (তাবাস্সুম বা মুচকি হাসি মুবারক) দিয়ে বললেন যে, ‘আমি খুশি হয়েছি।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) রাত্র গভীর হলো। ভোর রাত্রে তিনি অনেক খুশি মুবারক প্রকাশ করলেন। উনি বললেন, ‘আরো করলে, আমি আরো খুশি হবো।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) আমি বলেছিলাম, ‘আমি কি এটা বলে দিবো?’ উনি বললেন, ‘হ্যাঁ; বলে দিন।’ উনি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন, আমি জানিয়ে দিলাম।” (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪৩ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১৫ই সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ লাইলাতুস সাব্ত শরীফ (শনিবার রাত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সন্তুষ্টি মুবারক ছাড়া আর কিছু আছে? কিছু নেই। আমি তো সেটাই বললাম যে, আমি সারা দিন ফিকির করলাম যে, কি বলেন। ঠিক পবিত্র ছলাতুল মাগরিব উনার পবিত্র আযান মুবারক হলো, তিনি খুশি প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যে খুশি হয়েছেন এটা কি আমি বলে দিবো? উনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) আবার ঠিক ভোর রাতে দেখলাম, উনি অনেক বেশি খুশি। উনি বললেন, ‘আমার জন্য আরো করলে, আমি আরো বেশি খুশি হবো।’ (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) যে, আরো বেশি করলে আরো বেশি খুশি হবেন। (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) তাহলে আরো করতে হবে। সেটাই বললাম, আমরা দেড় গুণ করতেছি। দেড় গুণের প্রস্তুতি গ্রহণ করো। সবাই কোশেশ করো। এখন তোমরা শত শত, হাজার হাজার গাড়ীর ব্যবস্থা করো।” (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!) ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি এই ঘোষণা মুবারক দিয়েছেন যে, তিনি এক সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে সারা ঢাকা শহর, সারা দেশ, সারা পৃথিবী; এমনকি সম্মানিত জানড়বাত মুবারকসহ সারা কায়িনাত সাজাবেন এবং এ দেশবাসী ও পৃথিবীর সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সবাইকে মেহমানদারী করে খাওয়াবেন; এমনকি জানড়বাতবাসী উনাদেরকেও খাওয়াবেন। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, “পৃথিবীতে ৬০০ কোটি মানুষ রয়েছে। যেদিন আমরা শুধু কোটি কোটি কন্ঠে পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিল মুবারক উপলক্ষে ১২০০ কোটি তাবারুকের প্যাকেট করবো, সেদিন থেকে হাক্বীক্বীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা শুরুহবে।” (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)


আদ্ দুরারুল মুখতারাহ্ (ফী নিসবাতি সুলত্বানিন নাছীর-২য় খণ্ড)  * (আল মুকাদ্দিমাহ্)  اَلْمُقَدِّمَةُ

 * (আল মুকাদ্দিমাহ্)  اَلْمُقَدِّمَةُ

اَلْحَمْدُ وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَمُ لِشَيْخِنَا خَلِيْفَةِ اللهِ حَضْرَتْ سُلْطَانٍ نَّصِيْرٍ عَلَيْهِ السَّلَمُ وَلِحَضْرَتْ اَهْلِ بَيْتِهِ الْكَرِيْمِ عَلَيْهِمُ السَّلَمُ وَالصَّلٰوةُ وَالسَّلَمُ عَلٰى بِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلٰى حَضْرَتْ اَهْلِ بَيْتِهِ سَيِّدِ الَْنْ الْكَرِيْمِ عَلَيْهِمُ السَّلَمُ وَالْحَمْدُ لِِّٰ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ. اَمَّا بعَْدُ

যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاللهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهٖ مَنْ يَّشَآءُ.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা স্বীয় রহমত মুবারক দ্বারা খাছ করে নেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৫)

এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা আখাছ্ছুল খাছভাবে মনোনীত করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে উনাদের পরে সর্বোচ্চ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাক্বাম হাদিয়া মুবারক করেই সম্মানিত সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িলফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের মালিক। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! এই বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে যায়- খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার

এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনাহযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার যে বেমেছাল মহাসম্মানিত তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক সম্পনড়ব মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াক্বেয়াহ্ মুবারক রয়েছেন, সে সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াক্বেয়াহ্ মুবারক উনাদের মাধ্যমে। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! বক্ষমান কিতাব মুবারক-এ সে সকল অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াক্বেয়াহ্ মুবারক থেকে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াক্বেয়াহ্ মুবারক সন্নিবেশিত হয়েছেন। এই কিতাব মুবারকখানা এক অমূল্য কিতাব মুবারক।

উনার নামকরণ মুবারক করা হয়েছে- ‘আদ্ দুরারুল মুখতারাহ্ ফী নিসবাতি খলীফাতিল্লাহ হযরত সুলত্বানিন নাছীর আলাইহিস সালাম’ হিসেবে। উনার অর্থ- ‘(খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে) আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক সম্পর্কে বাছাইকৃত মুক্তাসমূহ।’ সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! এটা ‘দ্বিতীয়খণ্ড। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরো কিতাব মুবারক প্রকাশ করা হবে। ইনশাআ মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!

মূলত এটা আমাদের জন্য, সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য সবচেয়ে বড় বুলন্দ নছীব যে, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনাকে আমরা এই যামানায় পেয়েছি। আমাদের জন্য, সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে- আলোচ্য কিতাব মুবারক উনার মধ্যে বর্ণিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াক্বেয়াহ্ মুবারকগুলো অত্যন্ত আদব-শরাফত ও মুহব্বতের সাথে পাঠ করা এবং উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার বিষয়টি উপলব্ধি করার কোশেশ করতঃ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে উনাকে মুহব্বত মুবারক করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনার গোলামী মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া এবং উনার ছানা-ছিফত মুবারক করা অর্থাৎ উনার সম্মানার্থে দায়িমীভাবে দুনিয়ার যমীনে, কবরে, হাশরে-নশরে, মীযানে, পুলছিরাতে এবং সম্মানিত জানড়বাত মুবারক-এ যেয়েও অনন্তকালব্যাপী মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক্ব দান করুন এবং উনার হাক্বীক্বী মুহব্বত-মা’রিফত, তা‘য়াল্লুক-নিসবত, কুরবত, রেযামন্দি- সন্তুষ্টি মুবারক, দায়িমী দীদার, যিয়ারত-ছোহবত ও গোলামী মুবারক আবাদুল আবাদের তরে নছীব করুন। আমীন!

* ‘আদ দুরারুল মুখতারাহ শরীফ’ পাঠের আবশ্যকতা

যে উম্মাত তার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী-রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত পরিচয় মুবারক জানলো না, সে উম্মত হওয়ার উপযুক্ত না। ঠিক একইভাবে যে মুরীদ তার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত পরিচয় মুবারক জানলো না, সে মুরীদ হওয়ার উপযুক্ত না। কেননা মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,

اَلشَّيْخُ لِقَوْمِهٖ كَالنَّبِىِّ فِىْ اُمَّتِهٖ

“উম্মত মাঝে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যেমন, মুরীদ মাঝে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শায়েখ আলাইহিস সালাম তিনি তেমন।” (দায়লামী শরীফ, মকতূবাত শরীফ)

আর আমাদের প্রাণের আক্বা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক উনি এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি অর্থাৎ উনারা দু’জন ব্যতীত সকলের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শায়েখ আলাইহিস সালাম। তাই সমস্ত জিন-ইনসান, তামামম কায়িনাতবাসী সকলের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে- মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলাম আলাইহিস সালাম উনার হাক্বীক্বী পরিচয় মুবারক জানার জন্য ওযীফার ন্যায় এই কিতাব মুবারকখানা বার বার পাঠ করা ও ফিকির করা এবং প্রত্যেকটি ওয়াক্বেয়াহ্ মুবারক উনার হাক্বীক্বত মুবারক উপলব্ধি করার কোশেশ করা। রহমতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি আমাদের সবাইকে ক্ববূল করুন। আমীন!

* ‘আদ দুরারুল  মুখতারাহ শরীফ ’ পাঠের ফযীলত

মছনবী শরীফ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “যারা ‘মছনবী শরীফ’ পাঠ করবেন, উনারা ওলীআল্লাহ না হলেও ‘মছনবী শরীফ’ পাঠ করা অবস্থায় উনাদের নামগুলো ‘ওলীআল্লাহ উনাদের দফতরে’ লিখা থাকবে।” আর মাকতূবাত শরীফ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “কেউ যদি ‘মাকতূবাত শরীফ’ পাঠ করেন, ‘মাকতূবাত শরীফ’ পাঠ করা অবস্থায় নবী না হওয়া সত্ত্বেও উনার নাম ‘সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক’ উনার দফতরে লিখা থাকবে।” আর আমাদের প্রাণের আক্বা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক সম্বলিত এই ‘আদ দুরারুল মুখতারাহ্ শরীফ’ কিতাব মুবারকখানা যাঁরা পাঠ করবেন, পাঠ করা অবস্থায় ছমাদিয়তের উপযুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও উনাদের নাম ‘ছমাদিয়াত’ উনার তবক্বায় লিখা থাকবেন। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! শুধু তাই নয়; এই কিতাব মুবারকখানা পাঠ করার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পাঠককে মা’ছুম বা নিষ্পাপ করে দিবেন। পাঠক মা’ছুম অবস্থায় অত্র কিতাব মুবারকখানা পাঠ করবেন। সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি আমাদের সবাইকে ‘আদ্ দুরারুল মুখতারাহ্ শরীফ’ উনার মহামূল্যবান নূরানী মুক্তাসমূহ দ্বারা নিজেদেরকে আলোকিত করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!


মহান আল্লাহ পাক তিনি কর্ম সম্পাদনে কে শ্রেষ্ঠ বা উত্তম সে বিষয়টি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে মরণ ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। যদিও শাব্দিক অর্থে এই পরীক্ষা গ্রহণকারী মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার পরীক্ষা নেয়ার কোনই প্রয়োজন নেই বরং বান্দদের পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি কর্ম সম্পাদনে কে শ্রেষ্ঠ বা উত্তম সে বিষয়টি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে মরণ ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। যদিও শাব্দিক অর্থে এই পরীক্ষা গ্রহণকারী মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার পরীক্ষা নেয়ার কোনই প্রয়োজন নেই বরং বান্দদের পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

নাস্তিকদের আপত্তি ১১ : আল্লাহ কি সর্বজ্ঞ? - হ্যা (Quran 49:16) এবং না (Quran 2:155) !

নাস্তিকদের আপত্তি ১২ : আল্লাহ যদি সর্বজ্ঞ হন (Quran 49:16)  তবে তার বান্দাদের পরিক্ষা করে দেখার কোন মানে আছে কি (Quran 2:155) ?

খণ্ডন : মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই সর্বজ্ঞ। তিনি যেহেতু সর্বজ্ঞ তাই তিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের সকল সৃষ্টি কৃতকর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণরূপে ওয়াকিফহাল। তবে তিনি সৃষ্টিকে বিশেষ করে মানুষ ও জ্বিনকে ইচ্ছা স্বাধীনতা দান করেছেন কিন্তু হস্তক্ষেপ করেন না। এই ইচ্ছা স্বাধীনতার দ্বারা তারা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে পারে আবার অবাধ্যতাও প্রদর্শন করতে পারে। আর তাই তাদের এই কৃতকর্মের প্রতিদান প্রদান করা হবে ক্বিয়ামতের দিন। এই উদ্দেশ্যেই মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদের পরীক্ষা নেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সর্বজ্ঞ - এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ (Quran 2:155) ? উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ اَتُعَلِّمُوْنَ اللهَ بِدِيْنِكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ ۚ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “বলুন, তোমরা কি তোমাদের ধর্ম পরায়ণতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে অবহিত করছো? অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন যা কিছু আছে ভূ-মন্ডলে এবং যা কিছু আছে নভোমন্ডলে। মহান আল্লাহ  পাক তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬)

শুধুমাত্র অত্র আয়াত শরীফ নয়, বরং অন্যান্য আরো আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যেও মহান আল্লাহ পাক তিনি এই বিষয়ে বর্ণনা মুবারক করেছেন।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি (Quran 2:29)  ইরশাদ মুবারক করেন-

هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

 অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনিই সে মহান সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু যমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে অবহিত।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র (Quran 5:97)  ইরশাদ মুবারক করেন-

جَعَلَ اللهُ الْكَعْبَةَ الْبَيْتَ الْـحَرَامَ قِيَامًا لِّلنَّاسِ وَالشَّهْرَ الْـحَرَامَ وَالْـهَدْيَ وَالْقَلَائِدَ ۚ ذٰلِكَ لِتَعْلَمُوا اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ وَاَنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত গৃহ কা’বা শরীফ উনাকে মানুষের স্থীতিশীলতার কারণ করেছেন এবং সম্মানিত মাসসমূকে, হারাম কুরবানীর জন্তুকে ও যাদের গলায় আবরণ রয়েছে। এর কারণ এই যে, যাতে তোমরা জেনে নাও যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সব কিছু জানেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে মহাজ্ঞানী।” (পবিত্র সূরা মায়িদাহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৭)

এ ব্যাপারে আরো আয়াত শরীফ নিম্নরুপ-

بَدِيْعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ اَنّٰى يَكُوْنُ لَهُ وَلَدٌ وَلَـمْ تَكُنْ لَّهُ صَاحِبَةٌ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের আদি স্রষ্টা। কিরূপে মহান আল্লাহ পাক উনার পুত্র হতে পারে, অথচ উনার কোন সঙ্গী নেই ? তিনি যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব বস্তু সম্পর্কে সুবিজ্ঞ।” (পবিত্র সূরা আন‘আম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০১)

اَلَا اِنَّ لِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ قَدْ يَعْلَمُ مَا اَنْتُمْ عَلَيْهِ وَيَوْمَ يُرْجَعُوْنَ اِلَيْهِ فَيُنَبِّئُهُمْ بِـمَا عَمِلُوْا وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “মনে রেখো নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা আছে, তা মহান আল্লাহ পাক উনারই। তোমরা যে অবস্থায় আছো তা তিনি জানেন। যেদিন তারা উনার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে, সেদিন তিনি বলে দিবেন তারা যা করেছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেক বিষয়ই জানেন।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)

لَهُ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ اِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “আসমান ও যমীনের চাবি উনার কাছে। তিনি যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং পরিমিত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞানী।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)

هُوَ الْاَوَّلُ وَالْاٰخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।” (পবিত্র সূরা হাদীদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مَا يَكُوْنُ مِن نَّـجْوٰى ثَلَاثَةٍ اِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَـمْسَةٍ اِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا اَدْنٰـى مِنْ ذٰلِكَ وَلَا اَكْثَرَ اِلَّا هُوَ مَعَهُمْ اَيْنَ مَا كَانُوْا ثُـمَّ يُنَبِّئُهُم بِـمَا عَمِلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “আপনি কি দেখেননি যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তা জানেন। তিন ব্যক্তির এমন কোন পরামর্শ হয় না যাতে তিনি চতুর্থ না থাকেন এবং পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে তিনি ষষ্ঠ না থাকেন, তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন তিনি তাদের সাথে আছেন, তারা যা করে, তিনি কিয়ামতের দিন তা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” (পবিত্র সূরা মুজাদালাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

সুতরাং এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত। উনার মহাসম্মানিত ইলম মুবারক উনার বাইরে কিছুই নেই। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কিছুই লওহে মাহ্ফূযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا مِنْ غَائِبَةٍ فِى السَّمَاءِ وَالْاَرْضِ اِلَّا فِى كِتَابٍ مُّبِيْنٍ

অর্থ : “আসমান ও যমীনে এমন কোন রহস্য নেই যা সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নেই।” (পবিত্র সূরা নামল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৫)

অত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে كِتَابٍ مُّبِيْنٍ ‘সুস্পষ্ট গ্রন্থ’ বলতে ‘লওহে মাহ্ফূয’কে বুঝানো হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

لِكُلِّ اَجَلٍ كِتَابٌ. يَـمْحُو اللهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ  ۖ  وَعِنْدَهُ اُمُّ الْكِتَابِ.

অর্থ : “প্রত্যেক নির্ধারিত কালের লিপিবদ্ধ গ্রন্থ রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যা ইচ্ছা তা বাতিল করেন এবং যা ইচ্ছা তা বহাল রাখেন, আর উনার কাছেই আছে ‘উম্মুল কিতাব’ বা ‘মূল গ্রন্থ’।” (পবিত্র সূরা রদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮-৩৯)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যা কিছুরই ওয়াদা করেছেন, তার একটি সময় নির্ধারিত আছে, উক্ত নির্ধারিত সময়ে তা অবশ্যই ঘটবে, কেননা আল্লাহর ওয়াদা ভঙ্গ হয় না।

কেউ কেউ বলেছেন যে, বাক্যে আগে-পিছে রয়েছে, মূল বাক্য এরূপ لِكُلِّ كِتَابٍ أجَلٌ অর্থাৎ প্রত্যেক সেই বিষয় যা মহান আল্লাহ পাক তিনি লিখে রেখেছেন, তার একটা সময় নির্ধারিত আছে। অর্থাৎ বিষয়টি কাফিরদের ইচ্ছা-আকাঙ্খার উপর নয়; বরং কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা মুবারক উনার উপর নির্ভরশীল।

এর একটি অর্থ এই যে, তিনি স্বীয় ইচ্ছা মুতাবিক কোন হুকুমকে রহিত করেন এবং কোন হুকুমকে বহাল রাখেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, তিনি যে ভাগ্য লিখে রেখেছেন তাতে পরিবর্তন করতে থাকেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও এর সমর্থন পাওয়া যায়-

যেমন কতিপয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে নিম্নলিখিত দু‘আটি বর্ণিত হয়েছে,

اللّٰهُمَّ اِنْ كُنْتَ كَتَبْتَنَا أشْقِيَاءَ فَامْـحُنَا وَاكْتُبْنَا سُعَدَاءَ وَاِنْ كُنْتَ كَتَبْتَنَا سُعَدَاءَ فَأثْبِتْنَ، فَاِنَّكَ تَـمْحُوْ مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ وَعِنْدَكَ اُمُّ الْكِتَابِ

 অর্থ : “হে মহান আল্লাহ পাক! যদি আপনি আমাদেরকে দুর্ভাগ্যবান বলে লিখে দিয়ে থাকেন, তাহলে তা মিটিয়ে দিয়ে আমাদেরকে সৌভাগ্যবান বলে লিখে দিন। আর যদি সৌভাগ্যবান বলে লিখে থাকেন, তাহলে সেটাই বহাল রাখুন। কেননা আপনি যা চান মিটিয়ে দেন আর যা চান বহাল রাখেন এবং আপনার কাছেই রয়েছে লওহে মাহ্ফূয বা সংরক্ষিত ফলক।” (তাফসীরে ত্ববারী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ اَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، اَنَّ عُمَرَ بْنَ الْـخَطَّابِ قَالَ وَهُوَ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ وَيَبْكِي اللّٰهُمَّ اِنْ كُنْتَ كَتَبْتَ عَلَيَّ شِقْوَةً أَوْ ذَنْبًا فَامْـحُهُ، فَاِنَّكَ تَـمْحُو مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ، وَعِنْدَكَ اُمُّ الْكِتَابِ، فَاجْعَلْهُ سَعَادَةً وَمَغْفِرَةً.

 অর্থ : “হযরত আবূ উছমান নাহদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তাওয়াফ কালীন সময়ে কাঁদতেন এবং এই দু‘আ পড়তেন-

اَللّٰهُمَّ إنْ كُنْتَ كَتَبْتَ عَلَيَّ شَقْوَةً أوْ ذَنْبًا فَامْـحُهُ، فَإنَّكَ تَـمْحُوْ مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ، وَعِنْدَكَ اُمُّ الْكِتَابِ، فَاجْعَلْهُ سَعَادَةً وَمَغْفِرَةً

অর্থাৎ, হে মহান আল্লাহ পাক! যদি আপনি আমার ব্যাপারে দুর্ভাগ্য বা পাপ লিখে দিয়ে থাকেন, তাহলে তা মিটিয়ে দিন। কেননা আপনি যা চান মিটিয়ে দে আর যা চান বহাল রাখেন, আর আপনি কাছেই রয়েছে লওহে মাহ্ফূয বা সংরক্ষিত ফলক। সুতরাং তা আপনি সৌভাগ্য ও ক্ষমায় পরিবর্তন করে দিন।” (তাফসীরে ত্ববারী, রূহুল মায়ানী, ইবনে কাছীর)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ বা দু‘আগুলোর ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপিত হতে পারে যে, অন্য হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنِّىْ رَجُلٌ شَابٌّ وَاَنَا اَخَافُ عَلَى نَفْسِي الْعَنَتَ وَلَا اَجِدُ مَا اَتَزَوَّجُ بِهِ النِّسَاءَ، فَسَكَتَ عَنِّي، ثُـمَّ قُلْتُ مِثْلَ ذَلِكَ، فَسَكَتَ عَنِّي ثُـمَّ قُلْتُ مِثْلَ ذَلِكَ، فَسَكَتَ عَنِّي ثُـمَّ قُلْتُ مِثْلَ ذَلِكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا اَبَا هُرَيْرَةَ جَفَّ الْقَلَمُ بِـمَا اَنْتَ لَاقٍ، فَاخْتَصِ عَلَى ذَلِكَ اَوْ ذَرْ‏.‏

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি একজন যুবক। আমার ভয় হয় যে, আমার দ্বারা না জানি কোন গুনাহ্র কাজ সংঘটিত হয়ে যায়; অথচ আমার কাছে নারীদেরকে বিয়ে করার মত কিছু নেই। এ কথা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চুপ থাকলেন। আমি আবারও কথা বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আমি আবারও কথা বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আবারও কথা বললে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উত্তর দিলেন, হে আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার ভাগ্যলিপি লেখা হয়ে গেছে আর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। আপনি খাসি হন বা না হন, তাতে কিছু আসে যায় না।” (বুখারী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৫০৭৬)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ‏ كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الْـخَلَائِقِ قَبْلَ اَنْ يَـخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضَ بِـخَمْسِيْنَ اَلْفَ سَنَةٍ قَالَ وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ‏.‏

অর্থ : “হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আম্র ইবনুল ‘আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সকল মাখলুকের তাক্বদীর বা ভাগ্যলিপি আকাশম-লী ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে লিখেছেন। তিনি বলেছেন, সে সময় মহান আল্লাহ পাক উনার ‘আশর পানির উপরে ছিল।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ক্বদর : হাদীছ শরীফ নং ৬৬৪১)

অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই মানুষের তাক্বদীর বা ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাহলে দু‘আ করে বা কার্য সম্পাদন করে লাখ কী? এর জবাব এই দেয়া হয়েছে যে, এই পরিবর্তনও ভাগ্যে লিখিত বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাক্বদীরে লেখা আছে বলে মানুষকে কোনো কাজ করতে বাধ্য করা হয়নি। বরং মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনা প্রদত্ত ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে কাজ ভবিষ্যতে করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তা-ই লিখে রেখেছেন। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে জ্ঞাত, তাই বান্দা ইচ্ছাশক্তি দিয়ে কী কাজ করবে, তিনি তা আগে থেকে অবগত আছেন বলেই ‘তাক্বদীরে’ লিখে রেখেছেন। বান্দা অচেতন পদার্থের মতো নয় যে তার কোনো ইচ্ছা কার্যকর হবে না। বরং তাকে ভালো-মন্দ গ্রহণের শক্তি দেওয়া হয়েছে। এ জন্যই খারাপ কাজ করার কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।

মূলতঃ তাক্বদীর বা ভাগ্যলিপি দুই প্রকার; ১. তাক্বদীরে মুবরাম (অপরিবর্তনীয় ভাগ্যলিপি) ও ২. তাক্বদীরে মুআল্লাক (ঝুলন্ত ভাগ্যলিপি)। তাক্বদীরে মুবরাম কখনোই পরিবর্তিত হয় না। যেমন জন্ম, মৃত্যু ইত্যাদি বিষয়াদি। আর তাক্বদীরে মুআল্লাক বান্দার নেক আমল, দু‘আ ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏لَا يَرُدُّ الْقَضَاءَ اِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيْدُ فِى الْعُمُرِ اِلَّا الْبِرُّ‏.‏

অর্থ : “হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দু‘আ মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালাকে পরিবর্তন করাতে পারে। আর নেক আমল বয়সকে বৃদ্ধি করাতে পারে।” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১৩৯)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

“মানুষকে পাপের কারণে রুযী থেকে বঞ্চিত করা হয়, দু‘আর মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয় এবং আত্মীয়তা বন্ধন বজায় রাখার কারণে আয়ু বৃদ্ধি পায়।” (মুসনাদে আহমাদ শরীফ : ৫/২৭৭)

সুতরাং বুঝা গেল যে, তাক্বদীর মানুষের কাজের কারণ নয় এবং তাক্বদীর লিপিবদ্ধ আছে বলে মানুষ ভালো-মন্দ ইত্যাদি কাজ করছে বিষয়টি এমন নয়; বরং ভবিষ্যতে মানুষ যা করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তা আগে থেকেই জানেন, ফলে তিনি তা আদিতেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আদিতে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন বলে মানুষ লেখা অনুযায়ী কর্ম করছে এমন নয়। বরং আমরা কখন কী করব, কী খাব, কোথায় কী ঘটবে এগুলো মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ব থেকেই জানেন। কারণ তিনি ইলমে গায়েবের অধিকারী। উনার পূর্বজ্ঞান অনুযায়ী তা লিখে রেখেছেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি লিখে রেখেছেন বলে তাক্বদীর পরিবর্তনের চেষ্টা করা যাবে না এমন কোন কথা নেই। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনিই ইরশাদ মুবারক করেন-

ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ لَـمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِّعْمَةً اَنْعَمَهَا عَلٰى قَوْمٍ حَتّٰى يُغَيِّرُوْا مَا بِاَنْفُسِهِمْ ۙ وَاَنَّ اللهَ سَـمِيْعٌ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “তার কারণ এই যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনও পরিবর্তন করেন না, সে সব নিয়ামত, যা তিনি কোন জাতিকে দান করেছিলেন, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেই পরিবর্তিত করে দেয় নিজের জন্য নির্ধারিত বিষয়। বস্তুতঃ মহান আল্লাহ পাক তিনি শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ اللهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتّٰى يُغَيِّرُوا مَا بِاَنْفُسِهِمْ ۗ

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” (পবিত্র সূরা রদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১) 

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন সব বিষয়েই জানেন, তাই সেটা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। কিন্তু ইখতিয়ার বা কর্মের স্বাধীনতা রহিত করেননি। তাই কাজ সম্পাদন করার জন্য উপায়-উপকরণের সহযোগিতা নেওয়া বা তদবীর করাতে কোন দোষ নেই। বরং তদবীর করতে বলা হয়েছে। আর এই তদবীর করাটাও তক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত।

আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

জনৈক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরজু করেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা যে ঝাড়-ফুঁক করে থাকি, চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহার করে থাকি কিংবা আত্মরক্ষার জন্য যেসব উপায় অবলম্বন করে থাকি, তা কি তাক্বদীরের কোনো কিছুকে পরিবর্তন করতে পারে? প্রত্যুত্তরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলািিহ ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের এসব চেষ্টাও তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত।” (বায়হাক্বী শরীফ)

আর এই জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْـخَوْفِ وَالْـجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ.

অর্থ : “এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দিন সবরকারীদের।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৫)

এই পরীক্ষার ফলাফলও মহান আল্লাহ পাক উনার জানা রয়েছে। কে কি করবে সেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণে মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করেন না, যদিও মহান আল্লাহ পাক উনার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে ভাল-মন্দ দুটো দিক স্পষ্ট করেই বাতলে দিয়েছেন। ভাল-মন্দের পরিণাম-পরিণতি জানিয়ে দিয়েছেন। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়-দায়িত্ব মানুষের। এই পরীক্ষার দ্বারা মূলতঃ মানুষ নিজে কি সিদ্ধান্ত নেয় আর সে সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে তার জন্য কি পরিণাম-পরিণতি বয়ে আনে সেটাই মানুষকে প্রদান করা হয়। এই পরীক্ষা দ্বারা মানুষ নিজেই নিজের অবস্থান বেচে নেয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি এর দ্বারা কোন কিছুই নির্ধারণ করেন না, বরং বান্দাই তার অবস্থান নির্ধারণ করে নেয়।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ بَاتَ عَلٰى اِنْـجَارٍ فَوَقَعَ مِنْهُ فَمَاتَ، بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ، وَمَنْ رَكِبَ الْبَحْرَ حِيْنَ يَرْتَجُّ يَعْنِي يَغْتَلِمُ فَهَلَكَ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ.

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কেউ উন্মুক্ত ছাদে ঘুমালে এবং তা থেকে পতিত হয়ে নিহত হলে তার ব্যাপারে কোন দায়দায়িত্ব নেই। কেউ ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে নিহত হলে তার ব্যাপারেও কোন দায়দায়িত্ব নেই।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুন নাওম ওয়া মুবিয়াত : হাদীছ শরীফ নং ১২০৬, আহমাদ)

অত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ২টি অবস্থা অর্থাৎ উন্মুক্ত ছাদে ঘুমালে ও ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় সমুদ্র ভ্রমণের পরিণতি সম্পর্কে বলে দেয়া হয়েছে। এখন কেউ উন্মুক্ত ছাদে ঘুমালে কিংবা ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় সমুদ্র ভ্রমণ করলে মৃত্যুবরণ করবে কিনা সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার জানা রয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি কাউকেই উন্মুক্ত ছাদে ঘুমাতে কিংবা ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় সমুদ্র ভ্রমণ করতে বাধা দেন না। এখন কেউ উন্মুক্ত ছাদে ঘুমালো কিংবা ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় সমুদ্র ভ্রমণ করলো, ফলশ্রুতিতে মৃত্যুমুখে পতিত হলো। তাহলে এই মৃত্যুর জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি দায়ী নন যদিও তিনি মৃত্যুর ব্যাপারটি পূর্ব থেকেই জানেন। বরং এই মৃত্যুর জন্য বান্দাই দায়ী। কেননা, বান্দাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তাহলে এখানে যে পরীক্ষা করা হলো এই পরীক্ষা দ্বারা কি কোনভাবেই প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বজ্ঞ নন? বরং এর দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সর্বজ্ঞ সেটাই প্রমাণিত হয়। 

এছাড়াও পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

    هُوَ الْاَوَّلُ وَالْاٰخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।” (পবিত্র সূরা হাদীদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اِذَا اَوَى اِلَى فِرَاشِهِ اِللّٰهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، فَالِقَ الْـحَبِّ وَالنَّوَى، مُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْـجِيلِ وَالْقُرْاٰنِ، اَعُوْذُ بِكَ مِنْ كُلِّ ذِي شَرٍّ اَنْتَ اٰخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، اَنْتَ الْاَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَاَنْتَ الْاٰخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَاَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَاَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنِّي الدَّيْنَ، وَاَغْنِنِىْ مِنَ الْفَقْرِ.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শয্যাগত হয়ে বলতেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আকাশম-লী ও যমীনের মহান রব তায়ালা, প্রতিটি জিনিসের মহান রব তায়ালা, বীজ ও অঙ্কুরের মহান রব তায়ালা, পবিত্র তাওরাত শরীফ, পবিত্র ইনজীল শরীফ ও পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলকারী! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি প্রতিটি ক্ষতিকর বস্তুর ক্ষতি থেকে, আপনিই এগুলোর নিয়ন্ত্রক। আপনিই আদি, আপনার আগে কিছুর অস্তিত্ব নেই। আপনিই অন্ত, আপনার পরে কিছু নেই। আপনি প্রকাশমান, আপনার উর্দ্ধে কিছু নেই। আপনি লুকায়িত, আপনার অগোচরে কিছু নেই। আপনি আমার পক্ষ থেকে আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিন এবং আমাকে দারিদ্রতা থেকে মুক্তি দিন।” (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, ইবনে আবী শায়বাহ শরীফ, আবু আওয়ানাসাঈ শরীফ, ইবনে হিব্বান শরীফ, আদাবুল মুফরাদ)

আর মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক الْاَوَّلُ আল-আউওয়াল এবং الْاٰخِرُ আল-আখির উনাদের অর্থেই ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি-

قَدِيْـمٌ بِلَا ابْتِدَاءٍ، دَائِمٌ بِلَا انْتِهَاءٍ

অর্থাৎ “অনাদি, অবিনশ্বর, প্রাক্তন, যার কোনো শুরু নেই এবং তিনি অনন্ত-চিরন্তন, যার কোনো অন্ত নেই’’ এ অংশটি ব্যবহার করেছেন।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, যদিও মহান আল্লাহ পাক তিনি الْاَوَّلُ আল-আউওয়াল, যার শাব্দিক অর্থ ‘আদি’। কিন্তু তিনি অনাদি, উনার কোন শুরুই নেই - فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ

আবার যদিও মহান আল্লাহ পাক তিনি الْاٰخِرُ আল-আখির, যার শাব্দিক অর্থ ‘অন্ত’। কিন্তু তিনি অনন্ত, উনার কোন শেষই নেই - فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ

একইভাবে, যদিও মহান আল্লাহ পাক তিনি الظَّاهِرُ আয-যহির, যার শাব্দিক অর্থ ‘প্রকাশমান’। কিন্তু ইহকালবাসী কেউই উনাকে দেখতে পায় না আর উনার উর্দ্ধে কিছুই নেই- فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ

আবার যদিও মহান আল্লাহ পাক তিনি الْبَاطِنُ আল-বাত্বিন, যার শাব্দিক অর্থ ‘লুকায়িত’। কিন্তু উনার অগোচরে কিছু নেই- فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারকে কোন লফয বা শব্দ মুবারক শাব্দিকভাবে যে অর্থ প্রকাশ করছে সেটা মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী বা প্রকৃত শান মুবারক প্রকাশ করছে না, বরং বান্দার উপলব্ধির সর্বোচ্চ অবস্থা প্রকাশক। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে পরীক্ষা করেন বলতে মহান আল্লাহ পাক তিনি যাচাই-বাচাই করছেন এমন বুঝায় না বরং বান্দা নিজেই পরীক্ষিত হচ্ছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে পরীক্ষা বা যাচাই-বাছাই করার কোন প্রয়োজন নেই, তবে বান্দার পরীক্ষিত বা যাচাই-বাছাইকৃত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلَّذِىْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْـحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا ۚ

অর্থ : “যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ?” (পবিত্র সূরা মূলক শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

মহান আল্লাহ পাক তিনি কর্ম সম্পাদনে কে শ্রেষ্ঠ বা উত্তম সে বিষয়টি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে মরণ ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। যদিও শাব্দিক অর্থে এই পরীক্ষা গ্রহণকারী মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার পরীক্ষা নেয়ার কোনই প্রয়োজন নেই বরং বান্দদের পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বজ্ঞ। উনার কোন বিষয়েই কোন পরীক্ষা নেয়ার কোন প্রয়োজনই নেই। বরং শ্রেষ্ঠত্ব বা মর্যাদা প্রমাণের জন্য বান্দাদেরই পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।


হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের উভয়কেই শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়ার চেষ্টা করেছে।

হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের উভয়কেই শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়ার চেষ্টা করেছে।

নাস্তিকদের আপত্তি ১০ : শয়তান কাকে কুমন্ত্রনা দিয়েছিল ? - শুধু আদম কে (Quran 7:20) নাকি আদম-হাওয়া উভয় কে (Quran 20:120)  

খণ্ডন : গণ্ডমূর্খ নাস্তিকরা তাদের উদ্বৃতিতে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে। তারা শুধু হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে উল্লেখ করে যে আয়াত শরীফ উপস্থাপন করেছে তা মূলতঃ পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ উনার ১২০ নং আয়াত শরীফ (Quran 20:120)  কিন্তু তারা উপস্থাপন করেছে (Quran 7:20)  আর হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের উভয়কেই উল্লেখ করে যে আয়াত শরীফ উপস্থাপন করেছে তা মূলতঃ পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ২০ নং আয়াত শরীফ (Quran 7:20 কিন্তু তারা উপস্থাপন করেছে (Quran 20:120)

হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের উভয়কেই শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়ার চেষ্টা করেছে। তবে পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ উনার ১২০ নং আয়াত শরীফ (Quran 20:120)  উনার মধ্যে শুধু হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে বিধায় মূর্খ নাস্তিকরা ফিতনা বিস্তারের পাঁয়তারা করছে।

পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ উনার উনার পরবর্তী আয়াত শরীফ অর্থাৎ ১২১ নং আয়াত শরীফ উনার আলোকে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ১২০ নং আয়াত শরীফ (Quran 20:120) উনার মধ্যে হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনার বিষয়টি উহ্য রয়েছে। তাই পরের আয়াত শরীফ (Quran 20:121 উনার মধ্যে হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের উভয়ের বিষয়টিই উল্লেখ রয়েছে।

যেমন পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ উনার উনার ১২১ নং আয়াত শরীফ (Quran 20:121) উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا

 অর্থ : “অতঃপর উনারা উভয়েই এর ফল ভক্ষণ করলেন।” (পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২১)

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের উভয়কেই শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়ার চেষ্টা করেছে।


মহান আল্লাহ পাক তিনি অমুখাপেক্ষী আর মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার মুখাপেক্ষী। তাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে মানুষের প্রয়োজন কিন্তু শুধুমাত্র মানুষ নয় কোন সৃষ্টিরই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রয়োজন নেই।

মহান আল্লাহ পাক তিনি অমুখাপেক্ষী আর মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার মুখাপেক্ষী। তাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে মানুষের প্রয়োজন কিন্তু শুধুমাত্র মানুষ নয় কোন সৃষ্টিরই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রয়োজন নেই।

নাস্তিকদের আপত্তি ৯ : আল্লাহকে মানুষের প্রয়োজন (Quran 35:15) নাকি মানুষই আল্লাহর প্রয়োজন (Quran 51:56)?

খণ্ডন : মহান আল্লাহ পাক তিনি অমুখাপেক্ষী আর মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার মুখাপেক্ষী। তাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে মানুষের প্রয়োজন কিন্তু শুধুমাত্র মানুষ নয় কোন সৃষ্টিরই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রয়োজন নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষ সহ সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন উনার রুবুবিয়ত প্রকাশার্থে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক (Quran 35:15) করেন-

يَا اَيُّهَا النَّاسُ اَنْتُمُ الْفُقَرَاءُ اِلَى اللهِ  ۖ  وَاللهُ هُوَ الْغَنِيُّ الْـحَمِيْدُ.

অর্থ : “হে মানুষ! তোমরা তো মহান আল্লাহ পাক উনার মুখাপেক্ষী; কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি অভাবমুক্ত, প্রশাংসার্হ।” (পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫)

অত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে- 

يا أَيُّهَا النَّاسُ أَنْتُمُ الْفُقَراءُ المحتاجون إِلَى اللَّهِ دائما فى الوجود وتوابعه وفى البقاء وفى النجاة من النار والاثابة بالجنة وغير ذلك وتعريف الفقراء نظرا إلى افتقار سائر الخلائق بالاضافة إلى فقرهم غير معتد به فانه حمل الامانة مع كونه ضعيفا ظلوما جهولا فهو أجوع من غيره وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِيُّ اللام للعهد أى المعروف بالاستغناء على الإطلاق والانعام العام على الموجودات الْحَمِيدُ (১৫) فى نفسه مستحق الحمد

‘হে মানুষ! সমগ্র সৃষ্টি তাদের অস্তিত্ব, স্থায়িত্ব ও জীবনোকরণ ইত্যাদির জন্য যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার সতত মুখাপেক্ষী, তেমনি তোমরাও। বরং তোমাদের মুখাপেক্ষীতা অন্যান্য সৃষ্টি অপেক্ষা আরো অনেক বেশী। কারণ তোমরা অগ্র-পশ্চাৎ চিন্তা না করেই আমানতের গুরুভারকে শিরোধার্য করেছো। সুতরাং তোমরা তো আপনাপন কর্মের হিসাব প্রদান, আমার অসন্তোষ ও নরাকাগ্নি থেকে নিষ্কৃতিপ্রাপ্তির জন্যও আমার মুখাপেক্ষী। আর আমি দ্যাখো, চিরঅভাবমুক্ত, চিরঅমুখাপেক্ষী, চিরপ্রশংসাভাজন।

এখানে ‘আলগানিম’ (অভাবমুক্ত) শব্দটির অঙ্গীভূত হয়েছে ‘আলিফ লাম’। এভাবে অর্থ দাঁড়িয়েছে- ওই পবিত্র সত্তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি, যাঁর অমুখাপেক্ষীতা সুবিদিত এবং উনার মুখাপেক্ষী সৃষ্টির প্রতি উনার দয়াবর্ষণের বিষয়টিও কারো অজানা নয়। আর ‘আল হামীদ’ অর্থ প্রশংসাভাজন। অর্থাৎ সত্তাগতভাবেই তিনি সমগ্র সৃষ্টির প্রশংসা লাভের যোগ্য। (তাফসীরে মাজহারী)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র (Quran 51:56)  ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَمَا خَلَقْتُ الْـجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ.

অর্থ : “আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।” (পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

অত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা নাস্তিকরা অপব্যাখ্যা করার অপচেষ্টা করছে যে, মানুষই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রয়োজন। নাঊযূবিল্লাহ! কিন্তু অত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে- 

وَما خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ أى الا لامرهم بعبادتي وادعوهم إليه يعنى للتكليف يؤيده قوله تعالى وَما أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلـهاً واحِداً كذا ذكر البغوي قول على رض قال مـجاهد الا ليعرفوا والكفار أيضا يعرفون وجوده تعالى حيث قال اللّه تعالى ولئن سالتهم من خلقهم ليقولن اللّه وقيل معناه الا ليكونوا عباد إلى أو ليخضعوا لى ويتذللوا ومعنى العبادة فى اللغة التذلل والانقياد وكل مخلوق من الجن والانس خاضع لقضاء اللّه تعالى متذلل لمشيته لا يملك أحد لنفسه خروجا عما خلق له وقيل الا ليوحدون اما المؤمنون فيوحدون فى الشدة والرخاء اما الكافرون فيوحدونه فى الشدة والبلاء دون النعمة والرخاء قال اللّه تعالى وإذا ركبوا فى الفلك دعوا اللّه مخلصين له الدين قال صاحب الـمدارك الكفار كلهم يوحدون اللّه فى الاخرة قال اللّه تعالى ثُمَّ لَمْ تَكُن فِتْنَتُهُمْ إِلَّا أَن قَالُوا وَاللَّـهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِينَ واشراكهم فى الدنيا وهى بعض أحيان وجودهم لا ينافى كونهم مخلوقين للتوحيد قلت والقول ما قال على رض ما سواه اقوال ضعيفة واهية والذي حملهم على ما قالوا ان ظاهر الآية يقتضى انهم خلقوا مرادا منهم الطاعة وتـخلف مراد اللّه تعالى محال وقد قال رسول اللّه ـ صلى الله عليه وسلم ـ كل ميسّر لـما خلق له وقال اللّه تعالى وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِـجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْـجِنِّ وَالْاِنْسِ وقال الكلبي والضحاك والسفيان هذا خاص لاهل الطاعة من الفريقين يدل عليه قراءة ابن عباس ما خلقت الجن والانس من المؤمنين الا ليعبدون وعندى تاويل الآية ما خلقت الجن والانس الا مستعدين العبادة صالحين لها نظيره قوله ـ صلى الله عليه وسلم ـ ما من مولود الا يولد على الفطرة فابواه يهود انه وينصرانه ويمجسانه كما تنتهج البهيمة جمعاء هل تحسون فيها من جدعاء ثم يقول فطرة التي فطر الناس عليها لا تبديل لخلق اللّه متفق عليه من حديث أبى هريرة وهذا التأويل يناسب تاويل على رض ومقتضى هذه الآية ذم الكفار لاجل اضاعتهم الفطرة السليمة هى اصل الخلقة.

অর্থ : “অত্র আয়াত শরীফ উনার অর্থ হচ্ছে- আমার ইবাদত করে মহাসাফল্য লাভ করবে, এই উদ্দেশ্যেই আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন জাতি ও মানবগোষ্ঠিকে।

একটি সন্দেহ : আলোচ্য আয়াতের ভাষ্যে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, জ্বিন ও মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করবে, এটাই ছিলো মহান আল্লাহ পাক উনার অভিপ্রায়। আর মহান আল্লাহ পাক উনার অভিপ্রায় অপ্রতিরোধ্য। তাহলে বহুসংখ্যক জ্বিন ও মানুষের অবাধ্য হওয়ার ঘটনা কীভাবে ঘটে চলেছে? এর রহস্য কী?

সন্দেহের নিরসন : সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আলোচ্য আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে- আমি জ্বিন ও ইনসানকে এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, আমি তাদেরকে ইবাদতের নির্দেশ দান করবো। এরকম বক্তব্যের উল্লেখ রয়েছে অন্য এক আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَما أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلـهاً واحِداً

‘তাদেরকে কেবল এক উপাস্যের ইবাদতের হুকুম দেওয়া হয়েছে।’

বাগবীও এরকম ব্যাখ্যার উল্লেখ করেছেন। আর মুজাহিদ لِيَعْبُدُونِ (ইবাদত করবে) কথাটির অর্থ করেছেন لِيَعْرِفُوْنِ (মহান আল্লাহ পাক উনার পরিচয় লাভ করবে)। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার পরিচয় তো কাফিররাও জানে।

যেমন এক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে-   

وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَّنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُوْلُنَّ اللهُ

“হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যদি তাদেরকে প্রশ্ন করেন, তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছে কে? তারা বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি।”

তাহলে বুঝতে হবে, মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে কাফিরদের ধারণা আর মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফত এক কথা নয়।

কোনো কোনো আলিম لِيَعْبُدُونِ কথাটির অর্থ করেছেন- যেনো তারা আমার সম্মুখে প্রকাশ করে তাদের অক্ষমতা। হয় অনুগত ও বাধ্য। ইবাদতের আভিধানিক অর্থ অক্ষমতা প্রকাশ করা, বিনয়ী হয়ে যাওয়া। এখানেও ‘ইবাদত’ এর অর্থ এরকমই হবে।

বলাবাহুল্য, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার সিদ্ধান্তের সম্মুখে একই রকম অক্ষম ও অসহায়। কেউ অথবা কোন কিছ্ইু তাদের সৃষ্টি উদ্দেশ্য ব্যহত করতে পারে না।

কোন কোন ব্যাখ্যাতা বলেছেন, এখানে ইবাদত অর্থ মহান আল্লাহ পাক উনার আনুরূপহীন এককত্বের স্বীকৃতি। যদি তাই হয়, তবে বক্তব্যটি দাঁড়াবে- আমি জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি আমার অসমকক্ষ এককত্বের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য।

উল্লেখ্য, বিশ্বাসীরা তো সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনাকে ডাকে। কিন্তু দুঃখ-কষ্টে পড়লে অবিশ্বাসীরাও মহান আল্লাহ পাক উনাকে না ডেকে পারে না। যেমন এক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে-

اِذَا رَكِبُوْا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللهَ مُـخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ

“যখন তারা নৌযানে আরোহণ করে, তখন যথার্থভাবেই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ডাকতে শুরু করে।”

‘মাদারেক’ প্রণেতা লিখেছেন, সকল সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীই পরকালে মহান আল্লাহ পাক উনার তাওহীদের (এককত্বের) স্বীকৃতি প্রদান করবে। এক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে একথা স্পষ্ট করে বলাও হয়েছে।

যেমন-

ثُـمَّ لَـمْ تَكُنْ فِتْنَتُهُمْ اِلَّا اَنْ قَالُوْا وَاللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ

“অতঃপর তাদের আর কোনো ফিতনা থাকবে না। তারা কেবল বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনিই আমাদের মহান রব তায়ালা। মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! আমরা কখনো অংশীবাদী ছিলাম না।”

সুতরাং তাওহীদের স্বীকৃতি দান ব্যতিরেকে জ্বিন ও মানুষের কোন উপায়ই নেই।

আমি বলি, এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বক্তব্যটিই অধিকতর বিশুদ্ধ। অন্যান্য বিশ্লেষণগুলো দুর্বল। এ সম্পর্কে বক্তব্য প্রদানকারীগণ উপস্থাপন করে থাকেন আরো একখানা আয়াত শরীফ ও একটি হাদীছ শরীফ। আয়াত শরীফখানা হচ্ছে, 

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِـجَهَنَّمَ كَثِيْرًا مِّنَ الْـجِنِّ وَالْاِنْسِ

‘আমি বহুসংখ্যক জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য’। 

আর হাদীছ শরীফ খানা হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- প্রত্যেকের জন্য ওই কাজটিই সহজ, যা সম্পাদনার্থে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কালাবী, জুহাক ও সুফিয়ান সওরী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উদ্ভুত দ্বন্দ্বের বাইরে থাকার মানসে বলেছেন, এখানে ‘ইবাদত করবে’ বলা হয়েছে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ বান্দাকে লক্ষ্য করে। অর্থাৎ জ্বিন ও মানুষের মধ্যে ইবাদত করবে তারা, যারা কামেল। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পাঠে এমতো অর্থই প্রতিধ্বনিত হয়। তিনি পাঠ করতেন-

ما خلقت الـجن والانس من الـمؤمنين الا ليعبدون

তাই আমার মতে আলোচ্য আয়াত শরীফ উনার বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা এরকম- আমি জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি ইবাদত সম্পাদনের যোগ্য করে। অর্থাৎ তাদের প্রত্যেককে দিয়েছি ইবাদতপ্রবণতা ও তা যথাসম্পাদনের ক্ষমতা। বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদীছ শরীফও এমতো ব্যাখ্যার সমর্থক। যেমন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একবার ইরশাদ মুবারক করলেন, প্রত্যেক মানবশিশু জন্মগ্রহণ করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার স্বভাব (ফিতরাত) নিয়ে। পরে তার পিতা-মাতা তাকে বানায় ইহুদী-নাছারা, অথবা মুশরিক। যেমন পশুশাবকেরা ভূমিষ্ঠ হয় নিখুঁত দেহাবয়ব নিয়ে। তোমরা কি সেগুলোকে নাসিকা-কর্ত কর্তনকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করতে দেখো? তারপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাঠ করলেন- 

فطرة التي فطر الناس عليها لا تبديل لـخلق اللّه

হাদীছ শরীফ খানা হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে। ব্যাখ্যাটি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বক্তব্য মুবারক উনার সঙ্গেও মিলে। অতএব বুঝতে হবে, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিন্দা করাই আলোচ্য আয়াত শরীফ উনার উদ্দেশ্য। তারাও জন্মসূত্রে ‘ফিতরাতে সালিমা’ অর্থাৎ অবিপর্যস্ত স্বভাব নিয়ে পৃথিবীতে আসে। কিন্তু তারা সত্যপ্রত্যাখ্যানের আঘাতে সে স্বভাবকে নষ্ট করে দেয়।” (তাফসীরে মাজহারী)

সুতরাং অত্র তাফসীরে পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ উনার ৫৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মানুষ ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হয়েছে বটে, তবে এই ইবাদত দিয়ে মানুষই সাফল্য লাভ করবে। সমস্ত সৃষ্টিও যদি মহান আল্লাহ পাক উনার কোন ইবাদত নাও করে তাতে সৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার কিছুই হবে না।

এছাড়াও পরকালে মানুষ যেখানেই যাক- জান্নাতে যাক বা জাহান্নামে যাক, কোথাও আর ইবাদতের কোন ব্যবস্থা নেই। জান্নাতে মেহমানদারী আর জাহান্নামে শাস্তির ব্যবস্থা। তখনও মহান আল্লাহ পাক উনার কোন লাভ বা ক্ষতি হবে না।

সুতরাং প্রমাণিত হলো মানুষ সর্বাবস্থায় এমনকি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার মুখাপেক্ষী। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষণিকের তরেও কোন সৃষ্টির মুখাপেক্ষী নন। বরং তিনি চিরঅমুখাপেক্ষী।


মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার পরও যখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকরা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিধান মানতে অস্বীকার করে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বরচিত বলে অজুহাত উত্থাপন করে। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন যে, তারা যেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় কোন কিতাব রচনা করে নিয়ে আসে। এ কাজে যখন তারা ব্যর্থ হলো কিন্তু তাদের চু-চেরা ঠিকই অব্যাহত রাখলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দুশমনদেরকে চ্যালেঞ্জের শর্ত সহজ করে দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় দশটি সূরা নিয়ে আসতে বললেন।

মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার পরও যখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকরা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিধান মানতে অস্বীকার করে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বরচিত বলে অজুহাত উত্থাপন করে। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন যে, তারা যেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় কোন কিতাব রচনা করে নিয়ে আসে। এ কাজে যখন তারা ব্যর্থ হলো কিন্তু তাদের চু-চেরা ঠিকই অব্যাহত রাখলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দুশমনদেরকে চ্যালেঞ্জের শর্ত সহজ করে দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় দশটি সূরা নিয়ে আসতে বললেন।

 মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার পরও যখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকরা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিধান মানতে অস্বীকার করে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বরচিত বলে অজুহাত উত্থাপন করে। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন যে, তারা যেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় কোন কিতাব রচনা করে নিয়ে আসে। এ কাজে যখন তারা ব্যর্থ হলো কিন্তু তাদের চু-চেরা ঠিকই অব্যাহত রাখলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দুশমনদেরকে চ্যালেঞ্জের শর্ত সহজ করে দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় দশটি সূরা নিয়ে আসতে বললেন।

নাস্তিকদের আপত্তি ৮ : আল্লাহ অবিশ্বাসীদের কি বলে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন? - পুরো কুরানের মতন কিছু লিখে আনতে (Quran 52:34, 17:88),  একটা সুরা লিখে আনতে (Quran 2:23, 10:38), দশটা সুরা লিখে আনতে (Quran 11:13)  নাকি কুরান এবং তৌরাতের মতন কোন গ্রন্থ লিখে আনতে (Quran 28:49)!

খণ্ডন : মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার পরও যখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকরা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিধান মানতে অস্বীকার করে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বরচিত বলে অজুহাত উত্থাপন করে। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন যে, তারা যেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় কোন কিতাব রচনা করে নিয়ে আসে। এ কাজে যখন তারা ব্যর্থ হলো কিন্তু তাদের চু-চেরা ঠিকই অব্যাহত রাখলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দুশমনদেরকে চ্যালেঞ্জের শর্ত সহজ করে দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় দশটি সূরা নিয়ে আসতে বললেন। এভাবে চ্যালেঞ্জের শর্ত সহজ করে দিতে দিতে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় অন্তত একটি সূরা নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু আজ অবধি কেউই তা পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ পারবেও না, ইনশাআল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবেই ইরশাদ মুবারক করেন-

ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيْهِ ۛ

অর্থ : “এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বলে মানতে অস্বীকৃতি জানালো পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকরা, বরং তারা অপবাদ দিতে চাইলো পবিত্র কুরআন শরীফ মানব রচিত বলে। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বরচিত বলে তারা অজুহাত উত্থাপন করলো।  তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হলেন। আর এই বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-

وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ اِنَّ قَوْمِىْ اتَّـخَذُوْا هٰذَا الْقُرْاٰنَ مَهْجُوْرًا.

অর্থ : “আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘হে আমার মহান রব তা‘য়ালা! আমার জাতির লোকেরা এই পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে পরিত্যক্ত গণ্য করছে’।” নাঊযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

এর জবাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকদের প্রতি ইরশাদ মুবারক (Quran 52:33-34)  করেন-

اَمْ يَقُوْلُوْنَ تَقَوَّلَهُ ۚ بَل لَّا يُؤْمِنُوْنَ. فَلْيَأْتُوْا بِـحَدِيْثٍ مِّثْلِهِ اِنْ كَانُوْا صَادِقِيْنَ.

অর্থ : “তারা কি বলে- ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই (পবিত্র কুরআন শরীফ) রচনা করে নিয়েছেন? আসলে তারা ঈমানই আনেনি। তারা সত্যবাদী হলে এ রকম কালাম তারা নিয়ে আসে না কেন?” (পবিত্র সূরা ত্বূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩-৩৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক (Quran 17:88)  করেন-

قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْاِنْسُ وَالْـجِنُّ عَلٰى اَنْ يَأْتُوْا بِـمِثْلِ هٰذَا الْقُرْاٰنِ لَا يَأْتُوْنَ بِـمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيْرًا.

অর্থ : “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, এ কুরআন শরীফ উনার মতো একখানা কুরআন আনার জন্য যদি সমগ্র মানব আর জ্বীন একত্রিত হয় তবুও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো তারা আনতে পারবে না, যদিও তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৮)

প্রথমোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় অর্থাৎ পবিত্র সূরা ত্বূর শরীফ উনার ৩৩-৩৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে কাফির-মুশরিকদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছে আর পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ উনার ৮৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে তারা যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করলেও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো একখানা কুরআন আনতে পারবে না, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

যেহেতু তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করলেও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো একখানা কুরআন আনতে পারবে না, তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পরবর্তীতে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জকে কিছুটা সহজ করে দিয়ে ইরশাদ মুবারক (Quran 11:13)  করেন-

اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ فَأْتُوْا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ.

অর্থ : “তারা কি বলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওটা (পবিত্র কুরআন শরীফ) রচনা করেছেন? (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, তাহলে তোমরা এ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো দশটি সূরাহ রচনা করে আনো, আর (এ কাজে সাহায্য করার জন্য) মহান আল্লাহ পাক উনাকে বাদ দিয়ে যাকে ডাকতে পারো ডেকে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়েই থাক।” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

যখন তারা এই চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করতে পারলো না, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো সহজ করে ইরশাদ মুবারক (Quran 2:23)  করেন-  

وَاِنْ كُنْتُمْ فِىْ رَيْبٍ مِّـمَّا نَزَّلْنَا عَلٰى عَبْدِنَا فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِهِ وَادْعُوْا شُهَدَاءَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ.   

অর্থ : “আমি আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার মত কোন সূরাহ এনে দাও আর তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে আহবান করো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক (Quran 10:38) করেন-

اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّثْلِهِ وَادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ.

অর্থ : “তারা কি এ কথা বলে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এটা (পবিত্র কুরআন শরীফ) রচনা করেছেন? আপনি বলুন, তাহলে তোমরাও এর মত একটা সূরাহ (রচনা করে) নিয়ে এসো আর মহান আল্লাহ পাক উনাকে বাদ দিয়ে যাকে পারো তাকে ডেকে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। ” (পবিত্র সূরা ইউনূস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮)

পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ পড়ে অনেকে প্রশ্ন করে, এখানে ‘সাক্ষী’দেরকে ডাকতে বলা হলো কেন? কিসের সাক্ষী? شُهَدَاء প্রচলিত অর্থ ‘সাক্ষী’ (বহুবচন) হলেও, কোনো বিষয়ে যে অত্যন্ত অভিজ্ঞ, যার মতের উপরে কোনো সন্দেহ নেই, তাদেরকে আরবীতে شُهَدَاء (সাক্ষী) বলা হয়। এখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলছেন যে, তাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কবি, সাহিত্যিক, প-িতরা যারা আছে, তাদেরকে ডেকে আনতে, দেখি তারা পারে কি না এরকম একটা সূরা তৈরি করতে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইসলাম বিরোধী সকলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন যে, তারা যেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো একটি সূরা রচনা করে, যার ভাষা, ছন্দ, শব্দ চয়ন, বাক্য বিন্যাস, নির্ভুলতা, অর্থ-তত্ত্ব, বিশুদ্ধ তথ্য এবং ভাষার অলংকার ও রচনার শৈলীর দিক দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো হয়।

পবিত্র কা’বা শরীফ উনার সামনে চ্যালেঞ্জ হিসাবে পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ লিখে ঝুলে রাখা হয়েছিল। যেন কাফিররা এর মুকাবিলায় একটি সূরা রচনা করতে পারে। পবিত্র কা’বা শরীফ ছিল এমন স্থান যেখানে কোন ঘটনা ঘটলে দ্রুত চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তো, সর্বশ্রেষ্ঠ পবিত্র স্থান হিসেবে আরব এবং তার বাহিরের এলাকার মানুষের তীর্থ স্থান ছিল পবিত্র কা’বা শরীফ। আর এর মত আয়াত শরীফ তৎকালীন প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদদেরকে তৈরি করতে বলা হয়। এই সূরা শরীফ যেভাবে এবং যে ব্যাকরণ ব্যবহার করে, ভাষার মৌলিকত্ব, সমীকরণ, বাচনভঙ্গি, ভাষার গঠন শৈলী রেখে রচনা করা হয়েছে, ঠিক সেইভাবে রচনা করতে বলা হয়েছিল। বহু চেষ্টার পর তারা যখন এ চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়, তখন এই চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা করার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মুশরিকরা তৎকালীন শ্রেষ্ঠ কবি হযরত লবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) উনাকে অনুরোধ করে। কবি সম্রাট হযরত লবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা চিন্তা করতেছিলেন যে, এর মুকাবিলায় কি রচনা করা যায়। শেষ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কবি হযরত লবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ উনার শেষ আয়াত শরীফ উনার নিচে, পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সাথে ছন্দ মিলিয়ে লিখে দেন-

ﻫﺬﺍ ﻟﻴﺲ ﺑﻜﻼﻡ ﺍﻟﺒﺸﺮ

অর্থ : “এটা কোন মানব রচিত কালাম নয়।”

প্রায় ১৫০০ বছর হয়ে গেল, মহান আল্লাহ পাক উনার এ চ্যালেঞ্জ আজও কেউ গ্রহণ করতে পারেনি। বরং তারা বলতে বাধ্য হয়েছে, এটি মানুষের তৈরি নয়।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কাফির-মুশরিকদের এই বলে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন যে, 

১. তারা যেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো একখানা কুরআন রচনা করে দেখায়।

২. যদি সেটা না পারে তাহলে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো দশটি সূরাহ রচনা করে আনে।

৩. আর যদি সেটাও না পারে তাহলে অন্তত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো একটি সূরাহ রচনা করে আনে।

আর এই চ্যালেঞ্জ ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি এটাও বলে দিয়েছেন, তাদের এই রচনার কাজে মহান আল্লাহ পাক উনাকে বাদ দিয়ে যাকে পারে তাকে ডেকে নিতে যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে।