মহান আল্লাহ পাক তিনি কর্ম সম্পাদনে কে শ্রেষ্ঠ বা উত্তম সে বিষয়টি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে মরণ ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। যদিও শাব্দিক অর্থে এই পরীক্ষা গ্রহণকারী মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার পরীক্ষা নেয়ার কোনই প্রয়োজন নেই বরং বান্দদের পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি কর্ম সম্পাদনে কে শ্রেষ্ঠ বা উত্তম সে বিষয়টি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে মরণ ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। যদিও শাব্দিক অর্থে এই পরীক্ষা গ্রহণকারী মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার পরীক্ষা নেয়ার কোনই প্রয়োজন নেই বরং বান্দদের পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

নাস্তিকদের আপত্তি ১১ : আল্লাহ কি সর্বজ্ঞ? - হ্যা (Quran 49:16) এবং না (Quran 2:155) !

নাস্তিকদের আপত্তি ১২ : আল্লাহ যদি সর্বজ্ঞ হন (Quran 49:16)  তবে তার বান্দাদের পরিক্ষা করে দেখার কোন মানে আছে কি (Quran 2:155) ?

খণ্ডন : মহান আল্লাহ পাক তিনি অবশ্যই সর্বজ্ঞ। তিনি যেহেতু সর্বজ্ঞ তাই তিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের সকল সৃষ্টি কৃতকর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণরূপে ওয়াকিফহাল। তবে তিনি সৃষ্টিকে বিশেষ করে মানুষ ও জ্বিনকে ইচ্ছা স্বাধীনতা দান করেছেন কিন্তু হস্তক্ষেপ করেন না। এই ইচ্ছা স্বাধীনতার দ্বারা তারা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে পারে আবার অবাধ্যতাও প্রদর্শন করতে পারে। আর তাই তাদের এই কৃতকর্মের প্রতিদান প্রদান করা হবে ক্বিয়ামতের দিন। এই উদ্দেশ্যেই মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাদের পরীক্ষা নেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সর্বজ্ঞ - এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ (Quran 2:155) ? উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ اَتُعَلِّمُوْنَ اللهَ بِدِيْنِكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ ۚ وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “বলুন, তোমরা কি তোমাদের ধর্ম পরায়ণতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে অবহিত করছো? অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন যা কিছু আছে ভূ-মন্ডলে এবং যা কিছু আছে নভোমন্ডলে। মহান আল্লাহ  পাক তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬)

শুধুমাত্র অত্র আয়াত শরীফ নয়, বরং অন্যান্য আরো আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যেও মহান আল্লাহ পাক তিনি এই বিষয়ে বর্ণনা মুবারক করেছেন।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি (Quran 2:29)  ইরশাদ মুবারক করেন-

هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

 অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনিই সে মহান সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু যমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে অবহিত।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র (Quran 5:97)  ইরশাদ মুবারক করেন-

جَعَلَ اللهُ الْكَعْبَةَ الْبَيْتَ الْـحَرَامَ قِيَامًا لِّلنَّاسِ وَالشَّهْرَ الْـحَرَامَ وَالْـهَدْيَ وَالْقَلَائِدَ ۚ ذٰلِكَ لِتَعْلَمُوا اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ وَاَنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত গৃহ কা’বা শরীফ উনাকে মানুষের স্থীতিশীলতার কারণ করেছেন এবং সম্মানিত মাসসমূকে, হারাম কুরবানীর জন্তুকে ও যাদের গলায় আবরণ রয়েছে। এর কারণ এই যে, যাতে তোমরা জেনে নাও যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সব কিছু জানেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে মহাজ্ঞানী।” (পবিত্র সূরা মায়িদাহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৭)

এ ব্যাপারে আরো আয়াত শরীফ নিম্নরুপ-

بَدِيْعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ اَنّٰى يَكُوْنُ لَهُ وَلَدٌ وَلَـمْ تَكُنْ لَّهُ صَاحِبَةٌ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের আদি স্রষ্টা। কিরূপে মহান আল্লাহ পাক উনার পুত্র হতে পারে, অথচ উনার কোন সঙ্গী নেই ? তিনি যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব বস্তু সম্পর্কে সুবিজ্ঞ।” (পবিত্র সূরা আন‘আম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০১)

اَلَا اِنَّ لِلّٰهِ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ قَدْ يَعْلَمُ مَا اَنْتُمْ عَلَيْهِ وَيَوْمَ يُرْجَعُوْنَ اِلَيْهِ فَيُنَبِّئُهُمْ بِـمَا عَمِلُوْا وَاللهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “মনে রেখো নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা আছে, তা মহান আল্লাহ পাক উনারই। তোমরা যে অবস্থায় আছো তা তিনি জানেন। যেদিন তারা উনার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে, সেদিন তিনি বলে দিবেন তারা যা করেছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেক বিষয়ই জানেন।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)

لَهُ مَقَالِيْدُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ اِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “আসমান ও যমীনের চাবি উনার কাছে। তিনি যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং পরিমিত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞানী।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)

هُوَ الْاَوَّلُ وَالْاٰخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।” (পবিত্র সূরা হাদীদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

اَلَـمْ تَرَ اَنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ مَا يَكُوْنُ مِن نَّـجْوٰى ثَلَاثَةٍ اِلَّا هُوَ رَابِعُهُمْ وَلَا خَـمْسَةٍ اِلَّا هُوَ سَادِسُهُمْ وَلَا اَدْنٰـى مِنْ ذٰلِكَ وَلَا اَكْثَرَ اِلَّا هُوَ مَعَهُمْ اَيْنَ مَا كَانُوْا ثُـمَّ يُنَبِّئُهُم بِـمَا عَمِلُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اِنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “আপনি কি দেখেননি যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তা জানেন। তিন ব্যক্তির এমন কোন পরামর্শ হয় না যাতে তিনি চতুর্থ না থাকেন এবং পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে তিনি ষষ্ঠ না থাকেন, তারা এতদপেক্ষা কম হোক বা বেশী হোক তারা যেখানেই থাকুক না কেন তিনি তাদের সাথে আছেন, তারা যা করে, তিনি কিয়ামতের দিন তা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” (পবিত্র সূরা মুজাদালাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

সুতরাং এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত। উনার মহাসম্মানিত ইলম মুবারক উনার বাইরে কিছুই নেই। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কিছুই লওহে মাহ্ফূযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا مِنْ غَائِبَةٍ فِى السَّمَاءِ وَالْاَرْضِ اِلَّا فِى كِتَابٍ مُّبِيْنٍ

অর্থ : “আসমান ও যমীনে এমন কোন রহস্য নেই যা সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নেই।” (পবিত্র সূরা নামল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৫)

অত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে كِتَابٍ مُّبِيْنٍ ‘সুস্পষ্ট গ্রন্থ’ বলতে ‘লওহে মাহ্ফূয’কে বুঝানো হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

لِكُلِّ اَجَلٍ كِتَابٌ. يَـمْحُو اللهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ  ۖ  وَعِنْدَهُ اُمُّ الْكِتَابِ.

অর্থ : “প্রত্যেক নির্ধারিত কালের লিপিবদ্ধ গ্রন্থ রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি যা ইচ্ছা তা বাতিল করেন এবং যা ইচ্ছা তা বহাল রাখেন, আর উনার কাছেই আছে ‘উম্মুল কিতাব’ বা ‘মূল গ্রন্থ’।” (পবিত্র সূরা রদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮-৩৯)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যা কিছুরই ওয়াদা করেছেন, তার একটি সময় নির্ধারিত আছে, উক্ত নির্ধারিত সময়ে তা অবশ্যই ঘটবে, কেননা আল্লাহর ওয়াদা ভঙ্গ হয় না।

কেউ কেউ বলেছেন যে, বাক্যে আগে-পিছে রয়েছে, মূল বাক্য এরূপ لِكُلِّ كِتَابٍ أجَلٌ অর্থাৎ প্রত্যেক সেই বিষয় যা মহান আল্লাহ পাক তিনি লিখে রেখেছেন, তার একটা সময় নির্ধারিত আছে। অর্থাৎ বিষয়টি কাফিরদের ইচ্ছা-আকাঙ্খার উপর নয়; বরং কেবলমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা মুবারক উনার উপর নির্ভরশীল।

এর একটি অর্থ এই যে, তিনি স্বীয় ইচ্ছা মুতাবিক কোন হুকুমকে রহিত করেন এবং কোন হুকুমকে বহাল রাখেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, তিনি যে ভাগ্য লিখে রেখেছেন তাতে পরিবর্তন করতে থাকেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও এর সমর্থন পাওয়া যায়-

যেমন কতিপয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে নিম্নলিখিত দু‘আটি বর্ণিত হয়েছে,

اللّٰهُمَّ اِنْ كُنْتَ كَتَبْتَنَا أشْقِيَاءَ فَامْـحُنَا وَاكْتُبْنَا سُعَدَاءَ وَاِنْ كُنْتَ كَتَبْتَنَا سُعَدَاءَ فَأثْبِتْنَ، فَاِنَّكَ تَـمْحُوْ مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ وَعِنْدَكَ اُمُّ الْكِتَابِ

 অর্থ : “হে মহান আল্লাহ পাক! যদি আপনি আমাদেরকে দুর্ভাগ্যবান বলে লিখে দিয়ে থাকেন, তাহলে তা মিটিয়ে দিয়ে আমাদেরকে সৌভাগ্যবান বলে লিখে দিন। আর যদি সৌভাগ্যবান বলে লিখে থাকেন, তাহলে সেটাই বহাল রাখুন। কেননা আপনি যা চান মিটিয়ে দেন আর যা চান বহাল রাখেন এবং আপনার কাছেই রয়েছে লওহে মাহ্ফূয বা সংরক্ষিত ফলক।” (তাফসীরে ত্ববারী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ اَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، اَنَّ عُمَرَ بْنَ الْـخَطَّابِ قَالَ وَهُوَ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ وَيَبْكِي اللّٰهُمَّ اِنْ كُنْتَ كَتَبْتَ عَلَيَّ شِقْوَةً أَوْ ذَنْبًا فَامْـحُهُ، فَاِنَّكَ تَـمْحُو مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ، وَعِنْدَكَ اُمُّ الْكِتَابِ، فَاجْعَلْهُ سَعَادَةً وَمَغْفِرَةً.

 অর্থ : “হযরত আবূ উছমান নাহদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি তাওয়াফ কালীন সময়ে কাঁদতেন এবং এই দু‘আ পড়তেন-

اَللّٰهُمَّ إنْ كُنْتَ كَتَبْتَ عَلَيَّ شَقْوَةً أوْ ذَنْبًا فَامْـحُهُ، فَإنَّكَ تَـمْحُوْ مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ، وَعِنْدَكَ اُمُّ الْكِتَابِ، فَاجْعَلْهُ سَعَادَةً وَمَغْفِرَةً

অর্থাৎ, হে মহান আল্লাহ পাক! যদি আপনি আমার ব্যাপারে দুর্ভাগ্য বা পাপ লিখে দিয়ে থাকেন, তাহলে তা মিটিয়ে দিন। কেননা আপনি যা চান মিটিয়ে দে আর যা চান বহাল রাখেন, আর আপনি কাছেই রয়েছে লওহে মাহ্ফূয বা সংরক্ষিত ফলক। সুতরাং তা আপনি সৌভাগ্য ও ক্ষমায় পরিবর্তন করে দিন।” (তাফসীরে ত্ববারী, রূহুল মায়ানী, ইবনে কাছীর)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ বা দু‘আগুলোর ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপিত হতে পারে যে, অন্য হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنِّىْ رَجُلٌ شَابٌّ وَاَنَا اَخَافُ عَلَى نَفْسِي الْعَنَتَ وَلَا اَجِدُ مَا اَتَزَوَّجُ بِهِ النِّسَاءَ، فَسَكَتَ عَنِّي، ثُـمَّ قُلْتُ مِثْلَ ذَلِكَ، فَسَكَتَ عَنِّي ثُـمَّ قُلْتُ مِثْلَ ذَلِكَ، فَسَكَتَ عَنِّي ثُـمَّ قُلْتُ مِثْلَ ذَلِكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا اَبَا هُرَيْرَةَ جَفَّ الْقَلَمُ بِـمَا اَنْتَ لَاقٍ، فَاخْتَصِ عَلَى ذَلِكَ اَوْ ذَرْ‏.‏

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি একজন যুবক। আমার ভয় হয় যে, আমার দ্বারা না জানি কোন গুনাহ্র কাজ সংঘটিত হয়ে যায়; অথচ আমার কাছে নারীদেরকে বিয়ে করার মত কিছু নেই। এ কথা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চুপ থাকলেন। আমি আবারও কথা বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আমি আবারও কথা বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আবারও কথা বললে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উত্তর দিলেন, হে আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার ভাগ্যলিপি লেখা হয়ে গেছে আর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। আপনি খাসি হন বা না হন, তাতে কিছু আসে যায় না।” (বুখারী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৫০৭৬)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ‏ كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الْـخَلَائِقِ قَبْلَ اَنْ يَـخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضَ بِـخَمْسِيْنَ اَلْفَ سَنَةٍ قَالَ وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ‏.‏

অর্থ : “হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আম্র ইবনুল ‘আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সকল মাখলুকের তাক্বদীর বা ভাগ্যলিপি আকাশম-লী ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে লিখেছেন। তিনি বলেছেন, সে সময় মহান আল্লাহ পাক উনার ‘আশর পানির উপরে ছিল।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল ক্বদর : হাদীছ শরীফ নং ৬৬৪১)

অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই মানুষের তাক্বদীর বা ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাহলে দু‘আ করে বা কার্য সম্পাদন করে লাখ কী? এর জবাব এই দেয়া হয়েছে যে, এই পরিবর্তনও ভাগ্যে লিখিত বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাক্বদীরে লেখা আছে বলে মানুষকে কোনো কাজ করতে বাধ্য করা হয়নি। বরং মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনা প্রদত্ত ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে কাজ ভবিষ্যতে করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তা-ই লিখে রেখেছেন। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে জ্ঞাত, তাই বান্দা ইচ্ছাশক্তি দিয়ে কী কাজ করবে, তিনি তা আগে থেকে অবগত আছেন বলেই ‘তাক্বদীরে’ লিখে রেখেছেন। বান্দা অচেতন পদার্থের মতো নয় যে তার কোনো ইচ্ছা কার্যকর হবে না। বরং তাকে ভালো-মন্দ গ্রহণের শক্তি দেওয়া হয়েছে। এ জন্যই খারাপ কাজ করার কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।

মূলতঃ তাক্বদীর বা ভাগ্যলিপি দুই প্রকার; ১. তাক্বদীরে মুবরাম (অপরিবর্তনীয় ভাগ্যলিপি) ও ২. তাক্বদীরে মুআল্লাক (ঝুলন্ত ভাগ্যলিপি)। তাক্বদীরে মুবরাম কখনোই পরিবর্তিত হয় না। যেমন জন্ম, মৃত্যু ইত্যাদি বিষয়াদি। আর তাক্বদীরে মুআল্লাক বান্দার নেক আমল, দু‘আ ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ سَلْمَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏لَا يَرُدُّ الْقَضَاءَ اِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيْدُ فِى الْعُمُرِ اِلَّا الْبِرُّ‏.‏

অর্থ : “হযরত সালমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দু‘আ মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালাকে পরিবর্তন করাতে পারে। আর নেক আমল বয়সকে বৃদ্ধি করাতে পারে।” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২১৩৯)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

“মানুষকে পাপের কারণে রুযী থেকে বঞ্চিত করা হয়, দু‘আর মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয় এবং আত্মীয়তা বন্ধন বজায় রাখার কারণে আয়ু বৃদ্ধি পায়।” (মুসনাদে আহমাদ শরীফ : ৫/২৭৭)

সুতরাং বুঝা গেল যে, তাক্বদীর মানুষের কাজের কারণ নয় এবং তাক্বদীর লিপিবদ্ধ আছে বলে মানুষ ভালো-মন্দ ইত্যাদি কাজ করছে বিষয়টি এমন নয়; বরং ভবিষ্যতে মানুষ যা করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তা আগে থেকেই জানেন, ফলে তিনি তা আদিতেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আদিতে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন বলে মানুষ লেখা অনুযায়ী কর্ম করছে এমন নয়। বরং আমরা কখন কী করব, কী খাব, কোথায় কী ঘটবে এগুলো মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ব থেকেই জানেন। কারণ তিনি ইলমে গায়েবের অধিকারী। উনার পূর্বজ্ঞান অনুযায়ী তা লিখে রেখেছেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি লিখে রেখেছেন বলে তাক্বদীর পরিবর্তনের চেষ্টা করা যাবে না এমন কোন কথা নেই। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনিই ইরশাদ মুবারক করেন-

ذٰلِكَ بِاَنَّ اللهَ لَـمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِّعْمَةً اَنْعَمَهَا عَلٰى قَوْمٍ حَتّٰى يُغَيِّرُوْا مَا بِاَنْفُسِهِمْ ۙ وَاَنَّ اللهَ سَـمِيْعٌ عَلِيْمٌ.

অর্থ : “তার কারণ এই যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনও পরিবর্তন করেন না, সে সব নিয়ামত, যা তিনি কোন জাতিকে দান করেছিলেন, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেই পরিবর্তিত করে দেয় নিজের জন্য নির্ধারিত বিষয়। বস্তুতঃ মহান আল্লাহ পাক তিনি শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ اللهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتّٰى يُغَيِّرُوا مَا بِاَنْفُسِهِمْ ۗ

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” (পবিত্র সূরা রদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১) 

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন সব বিষয়েই জানেন, তাই সেটা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। কিন্তু ইখতিয়ার বা কর্মের স্বাধীনতা রহিত করেননি। তাই কাজ সম্পাদন করার জন্য উপায়-উপকরণের সহযোগিতা নেওয়া বা তদবীর করাতে কোন দোষ নেই। বরং তদবীর করতে বলা হয়েছে। আর এই তদবীর করাটাও তক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত।

আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

জনৈক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরজু করেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা যে ঝাড়-ফুঁক করে থাকি, চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহার করে থাকি কিংবা আত্মরক্ষার জন্য যেসব উপায় অবলম্বন করে থাকি, তা কি তাক্বদীরের কোনো কিছুকে পরিবর্তন করতে পারে? প্রত্যুত্তরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলািিহ ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের এসব চেষ্টাও তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত।” (বায়হাক্বী শরীফ)

আর এই জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْـخَوْفِ وَالْـجُوْعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَالْاَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ.

অর্থ : “এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দিন সবরকারীদের।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৫)

এই পরীক্ষার ফলাফলও মহান আল্লাহ পাক উনার জানা রয়েছে। কে কি করবে সেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণে মহান আল্লাহ পাক তিনি কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করেন না, যদিও মহান আল্লাহ পাক উনার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষকে ভাল-মন্দ দুটো দিক স্পষ্ট করেই বাতলে দিয়েছেন। ভাল-মন্দের পরিণাম-পরিণতি জানিয়ে দিয়েছেন। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়-দায়িত্ব মানুষের। এই পরীক্ষার দ্বারা মূলতঃ মানুষ নিজে কি সিদ্ধান্ত নেয় আর সে সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে তার জন্য কি পরিণাম-পরিণতি বয়ে আনে সেটাই মানুষকে প্রদান করা হয়। এই পরীক্ষা দ্বারা মানুষ নিজেই নিজের অবস্থান বেচে নেয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি এর দ্বারা কোন কিছুই নির্ধারণ করেন না, বরং বান্দাই তার অবস্থান নির্ধারণ করে নেয়।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ بَاتَ عَلٰى اِنْـجَارٍ فَوَقَعَ مِنْهُ فَمَاتَ، بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ، وَمَنْ رَكِبَ الْبَحْرَ حِيْنَ يَرْتَجُّ يَعْنِي يَغْتَلِمُ فَهَلَكَ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ.

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কেউ উন্মুক্ত ছাদে ঘুমালে এবং তা থেকে পতিত হয়ে নিহত হলে তার ব্যাপারে কোন দায়দায়িত্ব নেই। কেউ ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে নিহত হলে তার ব্যাপারেও কোন দায়দায়িত্ব নেই।” (আদাবুল মুফরাদ : কিতাবুন নাওম ওয়া মুবিয়াত : হাদীছ শরীফ নং ১২০৬, আহমাদ)

অত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ২টি অবস্থা অর্থাৎ উন্মুক্ত ছাদে ঘুমালে ও ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় সমুদ্র ভ্রমণের পরিণতি সম্পর্কে বলে দেয়া হয়েছে। এখন কেউ উন্মুক্ত ছাদে ঘুমালে কিংবা ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় সমুদ্র ভ্রমণ করলে মৃত্যুবরণ করবে কিনা সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার জানা রয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি কাউকেই উন্মুক্ত ছাদে ঘুমাতে কিংবা ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় সমুদ্র ভ্রমণ করতে বাধা দেন না। এখন কেউ উন্মুক্ত ছাদে ঘুমালো কিংবা ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় সমুদ্র ভ্রমণ করলো, ফলশ্রুতিতে মৃত্যুমুখে পতিত হলো। তাহলে এই মৃত্যুর জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি দায়ী নন যদিও তিনি মৃত্যুর ব্যাপারটি পূর্ব থেকেই জানেন। বরং এই মৃত্যুর জন্য বান্দাই দায়ী। কেননা, বান্দাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তাহলে এখানে যে পরীক্ষা করা হলো এই পরীক্ষা দ্বারা কি কোনভাবেই প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বজ্ঞ নন? বরং এর দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সর্বজ্ঞ সেটাই প্রমাণিত হয়। 

এছাড়াও পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

    هُوَ الْاَوَّلُ وَالْاٰخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।” (পবিত্র সূরা হাদীদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اِذَا اَوَى اِلَى فِرَاشِهِ اِللّٰهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ، فَالِقَ الْـحَبِّ وَالنَّوَى، مُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالْإِنْـجِيلِ وَالْقُرْاٰنِ، اَعُوْذُ بِكَ مِنْ كُلِّ ذِي شَرٍّ اَنْتَ اٰخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ، اَنْتَ الْاَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ، وَاَنْتَ الْاٰخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ، وَاَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ، وَاَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ، اقْضِ عَنِّي الدَّيْنَ، وَاَغْنِنِىْ مِنَ الْفَقْرِ.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শয্যাগত হয়ে বলতেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আকাশম-লী ও যমীনের মহান রব তায়ালা, প্রতিটি জিনিসের মহান রব তায়ালা, বীজ ও অঙ্কুরের মহান রব তায়ালা, পবিত্র তাওরাত শরীফ, পবিত্র ইনজীল শরীফ ও পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিলকারী! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি প্রতিটি ক্ষতিকর বস্তুর ক্ষতি থেকে, আপনিই এগুলোর নিয়ন্ত্রক। আপনিই আদি, আপনার আগে কিছুর অস্তিত্ব নেই। আপনিই অন্ত, আপনার পরে কিছু নেই। আপনি প্রকাশমান, আপনার উর্দ্ধে কিছু নেই। আপনি লুকায়িত, আপনার অগোচরে কিছু নেই। আপনি আমার পক্ষ থেকে আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিন এবং আমাকে দারিদ্রতা থেকে মুক্তি দিন।” (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, ইবনে আবী শায়বাহ শরীফ, আবু আওয়ানাসাঈ শরীফ, ইবনে হিব্বান শরীফ, আদাবুল মুফরাদ)

আর মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক الْاَوَّلُ আল-আউওয়াল এবং الْاٰخِرُ আল-আখির উনাদের অর্থেই ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি-

قَدِيْـمٌ بِلَا ابْتِدَاءٍ، دَائِمٌ بِلَا انْتِهَاءٍ

অর্থাৎ “অনাদি, অবিনশ্বর, প্রাক্তন, যার কোনো শুরু নেই এবং তিনি অনন্ত-চিরন্তন, যার কোনো অন্ত নেই’’ এ অংশটি ব্যবহার করেছেন।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, যদিও মহান আল্লাহ পাক তিনি الْاَوَّلُ আল-আউওয়াল, যার শাব্দিক অর্থ ‘আদি’। কিন্তু তিনি অনাদি, উনার কোন শুরুই নেই - فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ

আবার যদিও মহান আল্লাহ পাক তিনি الْاٰخِرُ আল-আখির, যার শাব্দিক অর্থ ‘অন্ত’। কিন্তু তিনি অনন্ত, উনার কোন শেষই নেই - فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ

একইভাবে, যদিও মহান আল্লাহ পাক তিনি الظَّاهِرُ আয-যহির, যার শাব্দিক অর্থ ‘প্রকাশমান’। কিন্তু ইহকালবাসী কেউই উনাকে দেখতে পায় না আর উনার উর্দ্ধে কিছুই নেই- فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ

আবার যদিও মহান আল্লাহ পাক তিনি الْبَاطِنُ আল-বাত্বিন, যার শাব্দিক অর্থ ‘লুকায়িত’। কিন্তু উনার অগোচরে কিছু নেই- فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারকে কোন লফয বা শব্দ মুবারক শাব্দিকভাবে যে অর্থ প্রকাশ করছে সেটা মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী বা প্রকৃত শান মুবারক প্রকাশ করছে না, বরং বান্দার উপলব্ধির সর্বোচ্চ অবস্থা প্রকাশক। আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে পরীক্ষা করেন বলতে মহান আল্লাহ পাক তিনি যাচাই-বাচাই করছেন এমন বুঝায় না বরং বান্দা নিজেই পরীক্ষিত হচ্ছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে পরীক্ষা বা যাচাই-বাছাই করার কোন প্রয়োজন নেই, তবে বান্দার পরীক্ষিত বা যাচাই-বাছাইকৃত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلَّذِىْ خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْـحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا ۚ

অর্থ : “যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ?” (পবিত্র সূরা মূলক শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

মহান আল্লাহ পাক তিনি কর্ম সম্পাদনে কে শ্রেষ্ঠ বা উত্তম সে বিষয়টি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে মরণ ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। যদিও শাব্দিক অর্থে এই পরীক্ষা গ্রহণকারী মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার পরীক্ষা নেয়ার কোনই প্রয়োজন নেই বরং বান্দদের পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বজ্ঞ। উনার কোন বিষয়েই কোন পরীক্ষা নেয়ার কোন প্রয়োজনই নেই। বরং শ্রেষ্ঠত্ব বা মর্যাদা প্রমাণের জন্য বান্দাদেরই পরীক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।


0 Comments: