নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত ইলম্ (জ্ঞান-বিজ্ঞান) মুবারক উনাদের একচ্ছত্র অধিকারী। সৃষ্টি জগতের সকল সৃষ্টিই উনার মাধ্যম দিয়ে বা উনার কাছ থেকেই ইলম্ হাছিল করেছে, করছে এবং করবে। সমস্ত সৃষ্টিজগত তাদের সমস্ত প্রশ্ন উনার সামনে পেশ করে, তবে তাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে উনার কোনই বেগ পেতে হবে না। বরং এতে প্রশ্নকারীই ক্লান্ত হয়ে যাবে এবং তাদের অন্তরের মূর্খতা ও বক্রতাই প্রকাশ পেয়ে যাবে।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত ইলম্ (জ্ঞান-বিজ্ঞান) মুবারক উনাদের একচ্ছত্র অধিকারী। সৃষ্টি জগতের সকল সৃষ্টিই উনার মাধ্যম দিয়ে বা উনার কাছ থেকেই ইলম্ হাছিল করেছে, করছে এবং করবে। সমস্ত সৃষ্টিজগত তাদের সমস্ত প্রশ্ন উনার সামনে পেশ করে, তবে তাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে উনার কোনই বেগ পেতে হবে না। বরং এতে প্রশ্নকারীই ক্লান্ত হয়ে যাবে এবং তাদের অন্তরের মূর্খতা ও বক্রতাই প্রকাশ পেয়ে যাবে।

নাস্তিকদের আপত্তি ২ : আল্লাহ বার বার নির্দেশ দেন মুহম্মদ কে খুব বেশী প্রশ্ন না করার জন্যে (Quran 5:101, 5:102, 2:108) ! এটা কি এই ইঙ্গিতই দেয়না যে, যেসকল প্রশ্ন করা হত তার যথার্থ উত্তর দিতে মুহম্মদ অপারগ ছিলেন, যার ফলে তিনি প্রশ্ন করা ব্যাপার টাই এড়িয়ে যেতে চাইতেন ?

নাস্তিকদের আপত্তি ৩ : কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা আল্লাহ ও তার নবীর পছন্দ নয় (Quran 5:101, 5:102, Sahih Bukhari 2:24:555)! কেন এই চিন্তার পরাধীনতা ? এর কারন কি এই যে তাতে করে ধর্মের মিথ্যা দিক গুলো প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে?

খণ্ডন : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সমস্ত ইলম্ (জ্ঞান-বিজ্ঞান) মুবারক উনাদের একচ্ছত্র অধিকারী। সৃষ্টি জগতের সকল সৃষ্টিই উনার মাধ্যম দিয়ে বা উনার কাছ থেকেই ইলম্ হাছিল করেছে, করছে এবং করবে। সমস্ত সৃষ্টিজগত তাদের সমস্ত প্রশ্ন উনার সামনে পেশ করে, তবে তাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে উনার কোনই বেগ পেতে হবে না। বরং এতে প্রশ্নকারীই ক্লান্ত হয়ে যাবে এবং তাদের অন্তরের মূর্খতা ও বক্রতাই প্রকাশ পেয়ে যাবে।

বস্তুত মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশি বেশি প্রশ্ন করতে বান্দাদেরকে বারণ করার কারণ হচ্ছে বান্দা যাতে অনর্থক, অবাঞ্চিত বা অযথা প্রশ্ন না করে। অনর্থক প্রশ্ন করার মাধ্যমে বান্দা-উম্মত তাদের নিজেদের প্রতি আরোপিত সহজ বিধি-বিধানকে যেমন অত্যন্ত জটিল বা কষ্টসাধ্য করে তুলতে পারে, তেমনি তাদের অন্তরের বক্রতা বা কুফরীও সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠতে পারে। নাস্তিকদের অন্তরের বক্রতা ও কুফরীও তাদের প্রশ্নের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। তাই বান্দা যাতে নিজেদের বারংবার প্রশ্ন করার মাধ্যমে সহজ বিষয়কে কষ্টসাধ্য বা জটিল না করে তুলে ও কুফরীর দিকে ধাবিত না হয়, সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি বনী ইসরাঈলের দৃষ্টান্ত টেনে ইরশাদ মুবারক করেন- 

اَمْ تُرِيْدُوْنَ اَنْ تَسْأَلُوْا رَسُوْلَكُمْ كَمَا سُئِلَ مُوْسٰى مِنْ قَبْلُ  ۗ  وَمَنْ يَّتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالْاِيْـمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيْلِ.

অর্থ : “তোমরা কি তোমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রশ্ন করতে চাও যেমন হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে ইতিপূর্বে প্রশ্ন করা হয়েছিল? আর যে কেউ ঈমানের পরিবর্তে কুফরীকে গ্রহণ করে, সে নিশ্চয়ই সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৮)

বনী ইসরাঈলীদের মধ্যে আমীল নামে এক বিত্তশালী লোক ছিল। তার আত্মীয় বলতে ছিল এক চাচতো ভাই। সে চাচাতো ভাই কুচিন্তা করলো, সে ছাড়া আর কোন অংশীদার যখন নেই, তখন আমীলকে হত্যা করলেই তার সম্পূর্ণ সম্পদ তার অধিকারে এসে পড়বে। সে সুযোগ বুঝে একদিন আমীলকে হত্যা করে, লাশ গোপনের উদ্দেশ্যে অন্য এক গ্রাম সংলগ্ন মাঠে রেখে আসলো। পরদিন সে চিৎকার করে লোক জড়ো করে জানিয়ে দিলো, আমীলের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। লাশের সন্ধান যখন পাওয়া গেল, তখন সে ওই মাঠ সংলগ্ন গ্রামের কয়েকজনকে হত্যাকারী বলে অভিযুক্ত করলো। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি এই ঘটনাটি জানতে পেরে অভিযুক্তদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। কিন্তু তারা কোনক্রমেই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানালো। তখন জনতার আরজুর প্রেক্ষিতে হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এ সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থাৎ প্রকৃত হত্যাকারীর সন্ধান লাভের জন্য দু‘আ করলেন। ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি একটি গরু জবাই করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। বিষয়টি বনী ইসরাঈলীদের জানিয়ে দেয়া হলে তারা উপহাস-ঠাট্ট-বিদ্রুপ শুরু করলো।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِذْ قَالَ مُوْسٰى لِقَوْمِهِ اِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ اَنْ تَذْبَـحُوْا بَقَرَةً  ۖ  قَالُوْا اَتَتَّخِذُنَا هُزُوًا  ۖ  قَالَ اَعُوْذُ بِاللهِ اَنْ اَكُوْنَ مِنَ الْـجَاهِلِيْنَ.

অর্থ : “যখন হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের একটি গরু জবাই করতে আদেশ মুবারক করেছেন। তারা বলল, আপনি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছেন? হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৭)

মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিটি নির্দেশ মুবারকই হিকমতপূর্ণ। কিন্তু  তারা হত্যাকারী সনাক্ত করার বিষয়ের সঙ্গে গরু জবাইয়ের বিষয়টিকে কিছুতেই মেলাতে পারছিলো না। তাই তারা জবাইযোগ্য গরুর বয়স, গায়ের রং, আকৃতি-প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন রকম প্রশ্নের অবতারণা করলো। যা তাদের নিদারুণ মূর্খতার পরিচায়ক। আর তাদের এই মূর্খতার দরুণ তাদের উপর আরোপিত হলো কষ্টসাধ্য বিধি-বিধান।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا هِىَ ۚ قَالَ اِنَّهُ يَقُوْلُ اِنَّـهَا بَقَرَةٌ لَّا فَارِضٌ وَلَا بِكْرٌ عَوَانٌ بَيْنَ ذٰلِكَ  ۖ  فَافْعَلُوْا مَا تُؤْمَرُوْنَ. قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا لَوْنُـهَا ۚ  قَالَ اِنَّهُ يَقُوْلُ اِنَّـهَا بَقَرَةٌ صَفْرَاءُ فَاقِعٌ لَّوْنُـهَا تَسُرُّ النَّاظِرِيْنَ. قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا هِىَ اِنَّ الْبَقَرَ تَشَابَهَ عَلَيْنَا وَاِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ لَمُهْتَدُوْنَ. قَالَ اِنَّهُ يَقُوْلُ اِنَّـهَا بَقَرَةٌ لَّا ذَلُولٌ تُثِيرُ الْاَرْضَ وَلَا تَسْقِى الْـحَرْثَ مُسَلَّمَةٌ لَّا شِيَةَ فِيْهَا ۚ قَالُوْا الْاٰنَ جِئْتَ بِالْـحَقِّ  ۚ  فَذَبَـحُوْهَا وَمَا كَادُوْا يَفْعَلُوْنَ.

অর্থ : “তারা বললো, আমাদের জন্য আপনার রব তায়ালা উনাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলুন- উহা কী? হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উহা এমন গরু যা বৃদ্ধও নয়, অল্প বয়স্কও নয়- মধ্য বয়সী। সুতরাং যা আদিষ্ট হয়েছ তা করো।

তারা বললো, আমাদের জন্য আপনার রব তায়ালা উনাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলুন- উহার রং কী? হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উহা হলুদ বর্ণের গাভী, উহার রং উজ্জ্বল গাঢ়, যা দর্শনার্থীদের জন্য চিত্তকর্ষক।

তারা বললো, আমাদের জন্য আপনার রব তায়ালা উনাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বলুন- গরুটি কী? আমাদের নিকট গরুতো একই রকম এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছা মুবারক করলে নিশ্চয়ই আমরা এবার পথপ্রাপ্ত হবো।

হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উহা এমন গরু যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি- সুস্থ নিখুঁত। তারা বলল, এবার সঠিক তথ্য এনেছেন। অতঃপর তারা সেটা জবাই করল, যদিও জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৮-৭১)

সুতরাং দেখা গেল যে, সাধারণ একটি গরু জবাই করে দিলেই যেখানে তাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক পালন হয়ে যেত, কিন্তু সেখানে তারা শেষ পর্যন্ত গরুর নানান বৈশিষ্ট্য খোঁজ করে নিজেদের জন্য বিষয়টি জটিল করে নিয়েছিল। শুধুমাত্র ইনশাআল্লাহ বলার কারণে তারা আরো অতিরিক্ত জটিলতায় পড়েনি।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

قَالَ ابْنُ جُرَيْجٍ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّـمَا اُمِرُوْا بِأَدْنٰـى بَقَرَةٍ وَلَكِنَّهُمْ لَمَّا شَدَّدُوْا عَلٰى اَنْفُسِهِمْ شَدَّدَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَايْـمُ اللهِ لَوْ اَنَّـهُمْ لَـمْ يَسْتَثْنُوْا لَمَا بُيِّنَتْ لَـهُمْ اٰخِرَ الاَبَدِ.

অর্থ : “হযরত ইবনে জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নির্দেশ পাওয়া মাত্রই যদি তারা যে কোন গরু যবেহ করতো তাহলে তাই যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু তারা ক্রমাগত প্রশ্ন করতে থাকে এবং তার ফলে কাজে কাঠিন্য বৃদ্ধি পায়। এমনকি যদি তারা ‘ইনশা’আল্লাহ’ না বলতো তাহলে কখনো এ কাঠিন্য দূর হতো না এবং এটা তাদের কাছেও প্রকাশিত হতো না।” (তাফসীরে ত্ববারী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, দূররে মানছুর)

সুতরাং অনাবশ্যক প্রশ্নের কারণে যাতে জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি বনী ইসরাঈলের দৃষ্টান্ত টেনে বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিলেন।

আবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হজ্জ বিষয়ে আলোচনাকালে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত উক্কাশা বিন মুহসিন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সুওয়াল প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-

 عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ خَطَبَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فَرَضَ اللهُ عَلَيْكُمُ الْـحَجَّ فَحُجُّوا‏ فَقَالَ رَجُلٌ اَكُلَّ عَامٍ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَكَتَ حَتّٰى قَالَـهَا ثَلَاثًا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏ لَوْ قُلْتُ نَعَمْ لَوَجَبَتْ وَلَمَا اسْتَطَعْتُمْ ثُـمَّ قَالَ ذَرُوْنِـىْ مَا تَرَكْتُكُمْ فَاِنَّـمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِـهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ عَلٰى اَنْبِيَائِهِمْ فَاِذَا اَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ فَأْتُوْا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاِذَا نَـهَيْتُكُمْ عَنْ شَىْءٍ فَدَعُوْهُ.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা মুবারক দিলেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, হে মানুষেরা! আপনাদের উপর হজ্জ ফরয করা হয়েছে। অতএব আপনারা হজ্জ করুন। একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সুওয়াল করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তা কি প্রতি বছর? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নীরব থাকলেন এবং উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তিনবার কথাটি বললেন। এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি হ্যাঁ বললে তা ওয়াজিব হয়ে যেত (প্রতি বছরের জন্য) অথচ আপনারা তা পালন করতে সক্ষম হবেন না। তিনি পুনরায় ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা আমাকে ততটুকু কথার উপর থাকতে দিন যতটুকু আমি আপনাদের জন্য বলি। কারণ আপনাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাদের নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিরোধিতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি আপনাদের যখন কোন কিছু করার নির্দেশ দেই- আপনারা তা যথাসাধ্য পালন করুন এবং যখন আপনাদের কোন কিছু করতে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ করুন।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুল হজ্জ : বাবু ফারদ্বিল হাজ্জি র্মারাতা ফিল ‘উমুর)

অত্র হাদীছ শরীফ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত উক্কাশা বিন মুহসিন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সুওয়ালের উত্তরে হ্যাঁ বলতেন, তাহলে হজ্জে ব্যাপারে নাযিলকৃত বিধান রহিত হয়ে নতুন করে আরো কঠিন কোন বিধান নাযিল হয়ে যেত, যা উম্মতের জন্য পালন করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে যেত। অর্থাৎ বেশি বেশি প্রশ্ন করার মাধ্যমে নিজেদের জন্য কাঠিন্য বা জটিলতা যাতে উপস্থিত না সেজন্যই অতিরিক্ত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

আর তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ (Quran 5:101, 5:102)  উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْأَلُوْا عَنْ اَشْيَاءَ اِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ وَاِنْ تَسْأَلُوْا عَنْهَا حِيْنَ يُنَزَّلُ الْقُرْاٰنُ تُبْدَ لَكُمْ عَفَا اللهُ عَنْهَا ۗ وَاللهُ غَفُوْرٌ حَلِيْمٌ. قَدْ سَأَلَـهَا قَوْمٌ مِّنْ قَبْلِكُمْ ثُـمَّ اَصْبَحُوْا بِـهَا كَافِرِيْنَ.

অর্থ : “হে মু’মিনগণ! সেসব বিষয় সন্বন্ধে প্রশ্ন করো না যা তোমাদের কাছে প্রকাশিত হলে তোমাদের অসুবিধা হতে পারে। যদি পবিত্র কুরআন শরীফ অবতরণকালে তোমরা এসব বিষয় জিজ্ঞেস কর, তবে তা তোমাদের জন্যে প্রকাশ করা হবে। অতীত বিষয় মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করেছেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল, সহনশীল। এরূপ কথা বার্তা তোমাদের পূর্বেও এক সম্প্রদায় জিজ্ঞেস করেছিল। অতঃপর তারা এসব বিষয় প্রত্যাখ্যান করে।” (পবিত্র সূরা মায়িদাহ্ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০১-১০২)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ (Sahih Bukhari 2:24:555) উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتِ الشَّعْبِيِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَدَّثَنِىْ كَاتِبُ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ كَتَبَ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةُ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اِلَى الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنِ اكْتُبْ اِلَىَّ بِشَىْءٍ سَـمِعْتَهُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏‏ فَكَتَبَ اِلَيْهِ سَـمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ‏ اِنَّ اللهَ كَرِهَ لَكُمْ ثَلَاثًا قِيْلَ وَقَالَ وَاِضَاعَةَ الْمَالِ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ‏.

অর্থ : “হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। হযরত মুগীরা ইব্নে শু’বাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাতিব (একান্ত সচিব) বলেছেন, হযরত মু‘আবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুগীরা ইব্নু শু’বাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে লিখে পাঠালেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে আপনি যা শুনেছেন তার কিছু আমাকে লিখে জানান। হযরত মুগীরা ইব্নু শু’বাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মু‘আবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে লিখলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তোমাদের তিনটি কাজ অপছন্দ করেন- (১) অনর্থক কথাবার্তা, (২) সম্পদ নষ্ট করা এবং (৩) অত্যধিক সুওয়াল করা।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুয যাকাত)

কিন্তু অত্যধিক সুওয়াল বা বেশি প্রশ্ন করতে বারণ করার উদ্দেশ্য এই নয় যে, কোন প্রয়োজনীয় প্রশ্নও করা যাবে না। বরং প্রয়োজনীয় প্রশ্ন অবশ্যই করতে হবে এবং এর মাধ্যম দিয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়াদির ফায়ছালাও করতে হবে। আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ خَرَجْنَا فِىْ سَفَرٍ فَأَصَابَ رَجُلًا مِنَّا حَجَرٌ فَشَجَّهُ فِىْ رَأْسِهِ ثُـمَّ احْتَلَمَ فَسَأَلَ اَصْحَابَهُ فَقَالَ هَلْ تَـجِدُوْنَ لِىْ رُخْصَةً فِىْ التَّيَمُّمِ فَقَالُوْا مَا نَـجِدُ لَكَ رُخْصَةً وَاَنْتَ تَقْدِرُ عَلَى الْمَاءِ فَاغْتَسَلَ فَمَاتَ فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اُخْبِرَ بِذَلِكَ فَقَالَ قَتَلُوْهُ قَتَلَهُمُ اللهُ اَلَّا سَأَلُوْا اِذْ لَـمْ يَعْلَمُوْا فَاِنَّـمَا شِفَاءُ الْعِىِّ السُّؤَالُ اِنَّـمَا كَانَ يَكْفِيْهِ اَنْ يَتَيَمَّمَ وَيَعْصِرَ‏ اَوْ يَعْصِبَ شَكَّ مُوْسٰى عَلٰى جُرْحِهِ خِرْقَةً ثُـمَّ يَـمْسَحَ عَلَيْهَا وَيَغْسِلَ سَائِرَ جَسَدِهِ‏.

অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা কোন এক সফরে বের হলে আমাদের মধ্যকার একজনের মাথা পাথরের আঘাতে ফেটে যায়। ঐ অবস্থায় উনার ইহতিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে তিনি সাথীদের জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি আমার জন্য তায়াম্মুমের সুযোগ গ্রহণের অনুমতি পান? উনারা বললেন, যেহেতু আপনি পানি ব্যবহার করতে সক্ষম, তাই আপনাকে তায়াম্মুম করার সুযোগ দেয়া যায় না। অতএব তিনি গোসল করলেন। ফলে উনার ইন্তিকাল ঘটল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারকে আসলে উনাকে বিষয়টি জানানো হলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এরা অন্যায়ভাবে উনাকে হত্যা করেছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের বদলা দান করুন। উনাদের যখন (সমাধান) জানা ছিল না, উনারা কেন জিজ্ঞেস করে তা জেনে নিলেন না। কারণ না জানার প্রতিষেধক হচ্ছে জিজ্ঞেস করা। ঐ লোকটির জন্য তায়াম্মুম করাই যথেষ্টে ছিল। আর যখমের স্থানে ব্যান্ডেজ করে তার উপর মাসাহ্ করে শরীরের অন্যান্য স্থান ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট হত।” (আবূ দাঊদ শরীফ : কিতাবুত্ ত্বহারাহ্ : বাবু ফিল মাযরূহি ইয়াতাইয়াম্মাম)

অত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট করেই বলা হচ্ছে-

اِنَّـمَا شِفَاءُ الْعِىِّ السُّؤَالُ

অর্থাৎ না জানার প্রতিষেধক হচ্ছে জিজ্ঞেস করা।

সুতরাং সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, কোন অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে খুব বেশী প্রশ্ন করা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের পছন্দনীয় না হওয়ার কারণ হচ্ছে এতে বান্দা-উম্মতের জন্য কষ্টসাধ্য বিধান নাযিল হতে পারে এবং এমনকি বেশি বেশি প্রশ্ন করার মাধ্যমে নাযিলকৃত বিধানকে বান্দা-উম্মত প্রত্যাখ্যান করে কুফরীতেও নিমজ্জিত হতে পারে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করতে মোটেও বারণ করেনি বরং উৎসাহিত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فَاسْأَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ.

অর্থ : “যদি তোমাদের কোন বিষয় জানা না থাকে; তাহলে আহলে যিক্র বা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)

তাহলে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা অপছন্দনীয় হলো কিভাবে? বরং উনারা বান্দা-উম্মতকে প্রশ্ন করে জেনে নেয়ার আদেশ মুবারক করেছেন। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত বিষয়ে ইল্ম্ বা জ্ঞানের অধিকারী ও সকল প্রশ্নের যথার্থ উত্তর প্রদানে সক্ষম বিধায় তিনি মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা প্রদান করেছেন ও প্রশ্ন করার মাধ্যমে না জানা বিষয় জেনে নিতে বলেছেন। আর এভাবে প্রশ্ন করে জেনে নেয়ার মাধ্যমে সমস্ত মিথ্যা ও কুসংস্কারচ্ছন্নতা থেকে মানুষকে মুক্ত থাকার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।


0 Comments: