মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার পরও যখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকরা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিধান মানতে অস্বীকার করে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বরচিত বলে অজুহাত উত্থাপন করে। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন যে, তারা যেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় কোন কিতাব রচনা করে নিয়ে আসে। এ কাজে যখন তারা ব্যর্থ হলো কিন্তু তাদের চু-চেরা ঠিকই অব্যাহত রাখলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দুশমনদেরকে চ্যালেঞ্জের শর্ত সহজ করে দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় দশটি সূরা নিয়ে আসতে বললেন।
নাস্তিকদের আপত্তি ৮ : আল্লাহ অবিশ্বাসীদের কি বলে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন? - পুরো কুরানের মতন কিছু লিখে আনতে (Quran 52:34, 17:88), একটা সুরা লিখে আনতে (Quran 2:23, 10:38), দশটা সুরা লিখে আনতে (Quran 11:13) নাকি কুরান এবং তৌরাতের মতন কোন গ্রন্থ লিখে আনতে (Quran 28:49)!
খণ্ডন : মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার পরও যখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকরা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিধান মানতে অস্বীকার করে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বরচিত বলে অজুহাত উত্থাপন করে। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন যে, তারা যেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় কোন কিতাব রচনা করে নিয়ে আসে। এ কাজে যখন তারা ব্যর্থ হলো কিন্তু তাদের চু-চেরা ঠিকই অব্যাহত রাখলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দুশমনদেরকে চ্যালেঞ্জের শর্ত সহজ করে দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় দশটি সূরা নিয়ে আসতে বললেন। এভাবে চ্যালেঞ্জের শর্ত সহজ করে দিতে দিতে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ন্যায় অন্তত একটি সূরা নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু আজ অবধি কেউই তা পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ পারবেও না, ইনশাআল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবেই ইরশাদ মুবারক করেন-
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيْهِ ۛ
অর্থ : “এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বলে মানতে অস্বীকৃতি জানালো পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকরা, বরং তারা অপবাদ দিতে চাইলো পবিত্র কুরআন শরীফ মানব রচিত বলে। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্বরচিত বলে তারা অজুহাত উত্থাপন করলো। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হলেন। আর এই বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ اِنَّ قَوْمِىْ اتَّـخَذُوْا هٰذَا الْقُرْاٰنَ مَهْجُوْرًا.
অর্থ : “আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘হে আমার মহান রব তা‘য়ালা! আমার জাতির লোকেরা এই পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে পরিত্যক্ত গণ্য করছে’।” নাঊযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
এর জবাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাফির-মুশরিকদের প্রতি ইরশাদ মুবারক (Quran 52:33-34) করেন-
اَمْ يَقُوْلُوْنَ تَقَوَّلَهُ ۚ بَل لَّا يُؤْمِنُوْنَ. فَلْيَأْتُوْا بِـحَدِيْثٍ مِّثْلِهِ اِنْ كَانُوْا صَادِقِيْنَ.
অর্থ : “তারা কি বলে- ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই (পবিত্র কুরআন শরীফ) রচনা করে নিয়েছেন? আসলে তারা ঈমানই আনেনি। তারা সত্যবাদী হলে এ রকম কালাম তারা নিয়ে আসে না কেন?” (পবিত্র সূরা ত্বূর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩-৩৪)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক (Quran 17:88) করেন-
قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْاِنْسُ وَالْـجِنُّ عَلٰى اَنْ يَأْتُوْا بِـمِثْلِ هٰذَا الْقُرْاٰنِ لَا يَأْتُوْنَ بِـمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيْرًا.
অর্থ : “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, এ কুরআন শরীফ উনার মতো একখানা কুরআন আনার জন্য যদি সমগ্র মানব আর জ্বীন একত্রিত হয় তবুও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো তারা আনতে পারবে না, যদিও তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৮)
প্রথমোক্ত আয়াত শরীফদ্বয় অর্থাৎ পবিত্র সূরা ত্বূর শরীফ উনার ৩৩-৩৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে কাফির-মুশরিকদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছে আর পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ উনার ৮৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে তারা যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করলেও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো একখানা কুরআন আনতে পারবে না, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
যেহেতু তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করলেও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো একখানা কুরআন আনতে পারবে না, তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পরবর্তীতে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জকে কিছুটা সহজ করে দিয়ে ইরশাদ মুবারক (Quran 11:13) করেন-
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ فَأْتُوْا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ.
অর্থ : “তারা কি বলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওটা (পবিত্র কুরআন শরীফ) রচনা করেছেন? (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, তাহলে তোমরা এ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো দশটি সূরাহ রচনা করে আনো, আর (এ কাজে সাহায্য করার জন্য) মহান আল্লাহ পাক উনাকে বাদ দিয়ে যাকে ডাকতে পারো ডেকে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়েই থাক।” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
যখন তারা এই চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করতে পারলো না, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো সহজ করে ইরশাদ মুবারক (Quran 2:23) করেন-
وَاِنْ كُنْتُمْ فِىْ رَيْبٍ مِّـمَّا نَزَّلْنَا عَلٰى عَبْدِنَا فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِهِ وَادْعُوْا شُهَدَاءَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ.
অর্থ : “আমি আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার মত কোন সূরাহ এনে দাও আর তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে আহবান করো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক (Quran 10:38) করেন-
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّثْلِهِ وَادْعُوْا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ.
অর্থ : “তারা কি এ কথা বলে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এটা (পবিত্র কুরআন শরীফ) রচনা করেছেন? আপনি বলুন, তাহলে তোমরাও এর মত একটা সূরাহ (রচনা করে) নিয়ে এসো আর মহান আল্লাহ পাক উনাকে বাদ দিয়ে যাকে পারো তাকে ডেকে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। ” (পবিত্র সূরা ইউনূস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮)
পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ পড়ে অনেকে প্রশ্ন করে, এখানে ‘সাক্ষী’দেরকে ডাকতে বলা হলো কেন? কিসের সাক্ষী? شُهَدَاء প্রচলিত অর্থ ‘সাক্ষী’ (বহুবচন) হলেও, কোনো বিষয়ে যে অত্যন্ত অভিজ্ঞ, যার মতের উপরে কোনো সন্দেহ নেই, তাদেরকে আরবীতে شُهَدَاء (সাক্ষী) বলা হয়। এখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলছেন যে, তাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কবি, সাহিত্যিক, প-িতরা যারা আছে, তাদেরকে ডেকে আনতে, দেখি তারা পারে কি না এরকম একটা সূরা তৈরি করতে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইসলাম বিরোধী সকলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন যে, তারা যেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো একটি সূরা রচনা করে, যার ভাষা, ছন্দ, শব্দ চয়ন, বাক্য বিন্যাস, নির্ভুলতা, অর্থ-তত্ত্ব, বিশুদ্ধ তথ্য এবং ভাষার অলংকার ও রচনার শৈলীর দিক দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো হয়।
পবিত্র কা’বা শরীফ উনার সামনে চ্যালেঞ্জ হিসাবে পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ লিখে ঝুলে রাখা হয়েছিল। যেন কাফিররা এর মুকাবিলায় একটি সূরা রচনা করতে পারে। পবিত্র কা’বা শরীফ ছিল এমন স্থান যেখানে কোন ঘটনা ঘটলে দ্রুত চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তো, সর্বশ্রেষ্ঠ পবিত্র স্থান হিসেবে আরব এবং তার বাহিরের এলাকার মানুষের তীর্থ স্থান ছিল পবিত্র কা’বা শরীফ। আর এর মত আয়াত শরীফ তৎকালীন প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদদেরকে তৈরি করতে বলা হয়। এই সূরা শরীফ যেভাবে এবং যে ব্যাকরণ ব্যবহার করে, ভাষার মৌলিকত্ব, সমীকরণ, বাচনভঙ্গি, ভাষার গঠন শৈলী রেখে রচনা করা হয়েছে, ঠিক সেইভাবে রচনা করতে বলা হয়েছিল। বহু চেষ্টার পর তারা যখন এ চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়, তখন এই চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা করার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মুশরিকরা তৎকালীন শ্রেষ্ঠ কবি হযরত লবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননি) উনাকে অনুরোধ করে। কবি সম্রাট হযরত লবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা চিন্তা করতেছিলেন যে, এর মুকাবিলায় কি রচনা করা যায়। শেষ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কবি হযরত লবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ উনার শেষ আয়াত শরীফ উনার নিচে, পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সাথে ছন্দ মিলিয়ে লিখে দেন-
ﻫﺬﺍ ﻟﻴﺲ ﺑﻜﻼﻡ ﺍﻟﺒﺸﺮ
অর্থ : “এটা কোন মানব রচিত কালাম নয়।”
প্রায় ১৫০০ বছর হয়ে গেল, মহান আল্লাহ পাক উনার এ চ্যালেঞ্জ আজও কেউ গ্রহণ করতে পারেনি। বরং তারা বলতে বাধ্য হয়েছে, এটি মানুষের তৈরি নয়।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি কাফির-মুশরিকদের এই বলে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন যে,
১. তারা যেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো একখানা কুরআন রচনা করে দেখায়।
২. যদি সেটা না পারে তাহলে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো দশটি সূরাহ রচনা করে আনে।
৩. আর যদি সেটাও না পারে তাহলে অন্তত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মতো একটি সূরাহ রচনা করে আনে।
আর এই চ্যালেঞ্জ ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি এটাও বলে দিয়েছেন, তাদের এই রচনার কাজে মহান আল্লাহ পাক উনাকে বাদ দিয়ে যাকে পারে তাকে ডেকে নিতে যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে।
0 Comments:
Post a Comment