সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফযীলত মুবারক-১ম অংশ-পর্ব-৬.১১১ই ফিলরুদ শরীফ, ১৪৪১ হিজরী (ইয়াওমুল খমীস)
খলিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ٣٣) سورة الاحزاب
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে অর্থাৎ উনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! [সূরা আহযাব শরীফ: ৩৩]
এই আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্রতার কথা ঘোষণা মুবারক করেছেন। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
فَأَنَا وَأَهْلُ بَيْنِي مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوبِ. (رواه ترمذی، طبرانی، بیهقی)
আমি এবং আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, আমরা সকলেই যুনুব তথা সমস্ত প্রকার কবীরা-ছগীরা এবং যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে পূতপবিত্র। সুবহানাল্লাহ! [তিরমিযী, ত্ববারানী, বাইহাকী শরীফ]
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফ থেকে বুঝা যায় যে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল পবিত্রতার অধিকারী। এখানে আরও ফিকিরের বিষয় হলো, হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন মা'ছুম (নিষ্পাপ) ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হচ্ছেন মাহফুয (সংরক্ষিত) আর হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারক হলো মুত্বহহার-মুত্বহহির (পূতপবিত্র ও পবিত্রতা দানকারী)।
জানা আবশ্যক যে, সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা কারা? এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ أُمِّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلامُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَّلَ عَلَى الْحَسَنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَالْحُسَيْنِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَعَلِيّ عَلَيْهِ السَّلامُ وَفَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلامُ كِسَاءٌ ، ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ هُؤُلَاءِ أَهْلُ بَيْتِي وَخَاصَّتِيْ اِذْهَبْ عَنْهُمُ الرِّجْسَ وَطَهِّرْهُمْ تَطْهِيرًا ، فَقَالَتْ حَضْرَتْ أُمُّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَأَنَا مَعَهُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ : مَكَانُكِ إِنَّكِ إِلَيَّ خَيْرٌ. (رواه الترمذى، هذا حديث حسن صحيح)
হযরত উম্মুল মু'মিনীন আস সাদিসা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুছ ছানী হযরত হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে, ইমামুছ ছালিছ হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে, ইমামুল আউওয়াল হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে এবং হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে একখানা চাদর মুবারকে আবৃত করে নিলেন। অতঃপর বললেন, আয় বারে ইলাহী! উনারা আমার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম এবং আমার খাছ ব্যক্তিত্ব। উনাদের থেকে সব অপবিত্রতা দূর করুন এবং উনাদেরকে পবিত্র করার মত পবিত্র করুন। তখন উম্মুল মু'মিনীন হযরত আস সাদিসা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমিও উনাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, আপনার অবস্থান আমার নিকট আরও উত্তম। [তিরমিযী শরীফ]
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা কারা? যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের খিদমত মুবারক করা আমাদের জন্য আবশ্যক (ফরয-ওয়াজিব করা হয়েছে)। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম, হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং উনার পূতপবিত্র সম্মানিত সন্তানদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনারা হলেন আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! [ত্ববারানী শরীফ]
বিশিষ্ট রাবী হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, হে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবার কারা? হযরত উম্মাহাতুল মু'মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ কি উনার পরিবার নয়? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই উনারা আহলু বাইত শরীফের অন্তর্ভুক্ত। উনার পরিবার হচ্ছেন, উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর যাদের জন্য সদকা গ্রহণ করা হারাম। তিনি বললেন, উনারা কারা? তিনি বলেন, উনারা হচ্ছেন- হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার বংশধর, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার বংশধর, হযরত জাফর আলাইহিস সালাম উনার বংশধর, হযরত আকীল আলাইহিস সালাম উনার বংশধর। তিনি বললেন, উনাদের সকলের জন্য কি সদকা গ্রহণ হারাম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। [মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম শরীফ]
উপরোক্ত বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম, হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম, হযরত জাফর আলাইহিস সালাম, হযরত আকীল আলাইহিস সালাম, হযরত হারিছ বিন আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনারাসহ উনাদের বংশধরগণও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম তথা সম্মানিত পরিবার-পরিজন আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
স্মর্তব্য যে, সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্তর হচ্ছে তিনটি।
১ম স্তরে রয়েছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত ওয়ালিদাইন শরীফাইন তথা আব্বা ও আম্মা আলাইহিমাস সালাম।
২য় স্তরে রয়েছেন, সম্মানিতা হযরত উম্মাহাতুল মু'মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম।
৩য় স্তরে রয়েছেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আবনা (পুত্র) আলাইহিমুস সালাম ও সম্মানিতা বানাত (কন্যা) আলাইহিন্নাস সালাম।
মূলত, এই তিন স্তরে যাঁরা রয়েছেন উনারা এবং উনাদের সম্মানিত আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম সকলেই এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পরিবারে যাঁরা ছিলেন প্রত্যেকেই সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য যে, শিয়াদের আক্বীদা হচ্ছে, সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন পাঁচ জন তথা পাক পাঞ্জাতন। উনারা হলেন- ১. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২. সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ আন নুরুর রবিয়া হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম ৩. সাইয়্যিদুনা ইমামুল আউওয়াল হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম ৪. সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম ৫. সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম।
কিন্তু যারা সুন্নি দাবিদার উনারাও বছরের পর বছর ধরে এই সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র উপরোক্ত ৫ জন উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক, সাওয়ানেহ উমরী মুবারকই আলোচনা করে আসছেন। আর অন্যান্য হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিষয়গুলো ছিল আলোচনার বাইরে। কিন্তু আমরা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে দেখতে পাই মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা তওবা শরীফের ১২৮ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন,
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوْفٌ رَّحِيمٌ (۱۲۸) سورة التوبة
তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ মুবারক এনেছেন। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার জন্য বেদনাদায়ক। তিনি তোমাদের ভালাই চান। মু'মিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়ালু।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমত মুবারক উনাকে একশত ভাগে বিভক্ত করেন। ৯৯ ভাগ রহমত মুবারক উনার নিকট রেখে বাকী ১ ভাগ রহমত মুবারককে আবার ১০০ ভাগে বিভক্ত করেন। আর সেখান থেকে ৯৯ ভাগ রহমত মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেন এবং ১ ভাগ রহমত মুবারক গোটা মাখলুকাতের মাঝে বন্টন করে দেন। [বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ]
ফিকিরের বিষয় হলো, একভাগ রহমত মুবারক সমস্ত মাখলুকাতের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে এক যাররা পরিমাণ রহমত মুবারক লাভ করার কারণে আমরা একে অপরকে মুহাব্বত করি। এমনকি এই মুহাব্বত মানুষ থেকে শুরু করে একটা ক্ষুদ্রতম প্রাণীর মাঝেও পরিলক্ষিত হয়। আমরা এই মুহাব্বতের কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একজন থেকে অপরজনকে আলাদা করতে পারিনা। তাহলে যিনি সমস্ত রহমত মুবারকের মালিক তিনি কিভাবে উনার পরিবারের একজন থেকে অপরজনকে আলাদা করে দেখতে পারেন! মূলত, এভাবে চিন্তা করাটাও উনার শান মুবারক উনার খিলাফ তথা কুফরী হবে। মূলত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারের সকল সদস্যগণই সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে অসংখ্যভাবে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ফাযায়িল ফযীলত গুরুত্ব তাৎপর্য সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا (۵۶) سورة الاحزاب
নিশ্চয়ই খলিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করে থাকেন। কাজেই হে ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার পবিত্রতম নূরানী শান মুবারকে দরূদ শরীফ পাঠ করো এবং সালাম দেয়ার যথার্থ নিয়মে সালাম দাও। [সূরা আহযাব শরীফ: ৫৬]
এই আয়াত শরীফের তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে-
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত কা'ব বিন উজরাতা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কিভাবে আপনার মুবারক শানে দরূদ শরীফ পাঠ করবো? তখন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি উনাকে দরূদে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পাঠ করে শুনিয়েছেন।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ سَيِّدِنَا إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
উল্লেখ্য যে, বর্ণিত 'দরূদে ইবরাহীম' শরীফ সাধারণভাবে পবিত্র নামাযের মধ্যেই পাঠ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাহলে এ থেকে বুঝা যায় যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই পবিত্র নামাযের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাথে উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস উনাদের শানেও দরূদ শরীফ পাঠ করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।
অর্থাৎ হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর দরূদ শরীফ পাঠ না করলে নামায পূর্ণরূপে আদায় হয় না। উনাদের প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করা ইবাদত এবং দোয়া পরিপূর্ণ ও কবুল হওয়ার প্রধান উসীলা। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
عَنْ حَضْرَتْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَجَلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَأَهْلُ بَيْتِي شَجَرَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَأَغْصَانُهَا فِي الدِّيْنِ فَمَنْ تَمَسَّكَ دِيْنًا إِتَّخَذَ رَبَّهُ سَبِيلًا.
হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল বাযালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি এবং আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হলাম পবিত্র জান্নাত উনার একটি বৃক্ষ। পবিত্র দ্বীন ইসলাম হচ্ছে উহার শাখা। যে ব্যক্তি পবিত্র দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে, সে ব্যক্তিই মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাওয়ার সঠিক পথ পেয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!
[তাফসীরে রুহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে কবীর]
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي ذَرٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ وَهُوَ أَخِذْ بِبَابِ الْكَعْبَةِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ أَلَّا إِنَّ مَثَلَ أَهْلِ بَيْتِي فِيْكُمْ مَثَلُ سَفِينَةِ نُوحٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَمَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا هَلَكَ رواه أحمد والحاكم والطبراني ومسند الشهاب وجامع الاحاديث وجمع الجوامع أو الجامع الكبير للسيوتي وكنز العمال)
হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহ আনহু তিনি বর্ণনা করেন। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, সাবধান! নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে আমার হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের মেছাল হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতী মুবারকের ন্যায়। যারা কিশতী মুবারকে আরোহণ করেছেন উনারা নাজাত লাভ করেছেন আর যারা আরোহণ করেনি তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। [আহমাদ শরীফ, তবারানী শরীফ]
অর্থাৎ যারা হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করবে এবং উনাদের অনুসরণ করবে তারাই নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! আর যারা হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করবে না, উনাদের অনুসরণ করবে না তারা নাজাত লাভ করতে পারবে না। নাঊযুবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন, হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যবর্তী 'খোম' নামক পানির নালার নিকট দাঁড়িয়ে আমাদেরকে খুতবা মুবারক প্রদান করলেন। প্রথমে মহান আল্লাহ পাক উনার হামদ ও ছানা মুবারক বর্ণনা করলেন, এরপর নছীহত মুবারক করলেন। অতঃপর বললেন, "সাবধান! হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি একজন নবী ও রসূল, অচিরেই আমার নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার দূত (হযরত মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম) আসবেন। তখন আমি আমার রব তায়ালা উনার পবিত্র আহবানে সাড়া দিব। আমি আপনাদের মাঝে দু'টি মূল্যবান নিয়ামত মুবারক রেখে যাচ্ছি। তন্মধ্যে প্রথম নিয়ামত মুবারক হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব। উনার মধ্যে রয়েছে পবিত্র হিদায়েত ও নূর। অতএব, আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাবকে খুব মজদ্ভুতভাবে আঁকড়ে ধরুন এবং দৃঢ়তার সাথে উনার বিধি-বিধান মেনে চলুন।" (বর্ণনাকারী বলেন,) মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব শরীফের নির্দেশনাবলী দৃঢ়ভাবে মেনে চলার জন্য তিনি খুব বেশি উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করলেন। অতঃপর বললেন, "দ্বিতীয় নিয়ামত মুবারক হলো- আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। আমি আপনাদেরকে আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিশেষভাবে সতর্ক তথা নছীহত করছি। আমি আপনাদেরকে আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিশেষভাবে সতর্ক তথা নছীহত করছি। [মুসলিম শরীফ]
অন্যত্র পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّتِهِ يَوْمَ عَرَفَةَ وَهُوَ عَلَى نَاقَتِهِ الْقَصْوَاءِ يَخْطُبُ فَسَمِعْتُهُ يَقُوْلُ يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا كِتَابَ اللهِ وَعِتْرَتِي أَهْلَ بَيْتِي. (رواه ترمذى وابن ماجه والطبراني وجامع الاحاديث وجمع الجوامع أو الجامع الكبير للسيوتي وكنز العمال و الجامع الاصول من احاديث الرسول)
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হজ্জের সময় আরাফার দিন কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর উপর আরোহণ করা অবস্থায় খুতবা দিতে দেখলাম। অতঃপর উনাকে বলতে শুনলাম, হে মানব জাতি। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে এমন নিয়ামত রেখে যাচ্ছি; যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনো গোমরাহ হবে না। প্রথম হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব। আর দ্বিতীয় হলো, আমার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ত্ববারানী শরীফ ইত্যাদি]
অর্থাৎ আখেরী যামানার ফিতনা ফাসাদ থেকে নাজাত লাভের একমাত্র উপায় হলো হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা তথা অনুসরণ অনুকরণ করা, জীবনের সকল ক্ষেত্রে উনাদেরকে আদর্শ রূপে গ্রহণ করা। উনাদের অনুসরণ করতে হলে উনাদের সম্পর্কে জানতে হবে, আলোচনা করতে হবে। যে যাকে মুহাব্বত করে তার আলোচনাই অধিক করে। তাই উনাদের আলোচনা করলে, উনাদের আদর্শ মুবারক গ্রহণ করলেই উনাদের প্রতি মুহাব্বত বুঝা যাবে। অন্যথায় মুহাব্বত বুঝা যাবে না।
বলা হয়ে থাকে, মুহাব্বতে তিতাটাও মিষ্টি হয়ে যায়। কেউ যখন হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহাব্বত করবে তখন উনাদের আদর্শ মুবারকও পালন করতে ভালো লাগবে। আর উনাদের প্রতি মুহাব্বত না থাকলে অন্য দিকে রুজু হয়ে যাবে, ফলে উনাদের আদর্শ মুবারকও গ্রহণ করা হবে না। বর্তমান যামানায় দেখা যায়, মানুষ ফাসিক-ফুজ্জার, কাফির-মুশরিকদের আদর্শ নিয়ে ব্যাতিব্যস্ত। মুসলমানগণ হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের আদর্শ মুবারক উনার অনুসরণ করা থেকে দূরে সরে গেছে। আসলে উনাদের মুহাব্বত ও অনুসরণের প্রতি গুরুত্ব বর্তমান যামানার নামসর্বস্ব মুসলমানদের অন্তরে নেই বলেই তাদের ঈমানী শক্তিও নেই। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أسَاسُ الْإِسْلَامِ حُبِّى وَحُبُّ أَهْلِ بَيْتِي. (رواه تاريخ دمشق وجامع الاحاديث وجمع الجوامع او الجامع الكبير للسيوتي وكنز العمال)
দ্বীন ইসলাম উনার মূল ভিত্তি-ই হলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারক। [তারীখে দামেশক, জামেউল আহাদীছ, জামিউল কাবীর লিস সুয়ূতী, কানযুল উম্মাল ইত্যাদি]
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ أَبِي لَيْلَى رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ نَفْسِهِ وَأَهْلِي اَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَهْلِهِ وَ عِتْرَتِيْ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ عِتْرَتِهِ وَذَاتِي أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ ذَاتِهِ. (معجم الاوسط)
হযরত আবু লায়লা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। কোনো বান্দা ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষন পর্যন্ত না তার নফস থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ওয়া সাল্লাম উনাকে বেশি মুহাব্বত করতে পারবে এবং তার পরিবার থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারকে অধিক মুহাব্বত করবে এবং তার বংশধর যারা আছে তাদের থেকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারকে অধিক মুহাব্বত করবে এবং উনার জাত বা সত্তা মুবারককে তার নিজের সত্তা থেকে থেকে বেশি মুহাব্বত করবে। [মু'জামুল আওসাত্ব]
এ থেকে প্রতিভাত হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক পেতে হলে এবং পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে হলে উনাকে আমাদের নিজ সত্তা, পরিবার, বংশধর থেকেও বেশি মুহাব্বত করার পাশাপাশি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকেও সর্বক্ষেত্রে অধিক মুহাব্বত করতে হবে। কেননা উনাদেরকে মুহাব্বত করা ব্যতীত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী মুহাব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা এবং মু'মিন হওয়া কখনোই সম্ভব হবে না। পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِي عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَهْلُ بَيْتِي أَمَانٌ لِأَهْلِ الْأَرْضِ كَمَا أَنَّ النُّجُوْمَ أَمَانٌ لِأَهْلِ السَّمَاءِ فَوَيْلٌ لِمَنْ خَذَلَهُمْ وَعَانَدَهُمْ.
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন সমস্ত যমীনবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী যেমন তারকারাজিরা আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং যারা আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে দূরে সরে যাবে, মানহানী করবে এবং উনাদের বিরোধিতা করবে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ! [তারতীবুল আমালী ১/২০০, আল ঈমা ৫/১৭৮] অপর বর্ণনায় রয়েছে,
النُّجُومُ أَمَانٌ لِأَهْلِ السَّمَاءِ وَأَهْلُ بَيْتِيْ آمَانٌ لِأَهْلِ الْأَرْضِ فَإِذَا ذَهَبَ أَهْلُ بَيْتِي ذَهَبَ أَهْلُ الْأَرْضِ.
তারকারাজিরা আসমানবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। আর আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন যমীনবাসীর জন্য নিরাপত্তাদানকারী। যখন আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বিদায় নিবেন, তখন সমস্ত যমীনবাসী সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
[ফাদ্বায়িলুছ ছাহাবাহ ২/৬৭১, আছ ছওয়ায়িকুল মুহরিক্কহ ২/৬৭৫, আল মু'জাম ১/৪০৪, মিরক্কাত শরীফ ৯/৩৯৮৮, যাখায়িরুল 'উকবাহ ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭]
প্রকৃতপক্ষে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হচ্ছেন তারকারাজিসহ আসমানবাসী-যমীনবাসী, সমস্ত কুল কায়িনাতের জন্য নিরাপত্তাদানকারী। সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উসীলায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত কায়িনাতবাসী নিরাপত্তা লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! উক্ত হাদীছ শরীফ হতে আরো বুঝা যায় যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত সবসময় দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা অবস্থান মুবারক করবেন। আর উনাদের সম্মানার্থেই ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত কায়িনাত টিকে থাকবে। অতঃপর যখনই উনারা দুনিয়ার যমীন থেকে বিদায় নিবেন, তখনই সমস্ত কায়িনাত ধ্বংস হয়ে যাবে। পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اجْعَلُوا أَهْلَ بَيْتِي مِنْكُمْ مَكَانَ الرَّأْسِ مِنَ الْجَسَدِ وَمَكَانَ الْعَيْنَيْنِ مِنَ الرَّأْسِ وَلَا يَهْتَدِى الرَّأْسِ إِلَّا بِالْعَيْنَيْنِ. (رواه البيهقي في شعب الايمان)
শরীর থেকে মাথার স্থান ও মাথা থেকে দুই চোখের স্থান যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন তোমরা আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করো। যেমন দুই চোখ ব্যতীত মাথা সঠিক পথে চলতে পারে না। সুবহানাল্লাহ! [বাইহাক্বী শরীফ]
এভাবে আরো অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ক্বওল শরীফে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল খমিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
إِنَّا أَهْلُ الْبَيْتِ لَا يُقَاسُ بِنَا أَحَدٌ مَنْ قَاسَ بِنَا أَحَدًا فَقَدْ كَفَرَ.
নিশ্চয়ই আমরা সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো ক্বিয়াস বা তুলনা করা যাবে না। যে ব্যক্তি আমাদের সাথে অন্য কাউকে তুলনা করবে, সে কুফরী করবে।
অর্থাৎ উনারা হচ্ছেন আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ, উনাদের সাথে কারো তুলনা করা যায় না। সুবহানাল্লাহ! উনারাই হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে হাছিল করার একমাত্র উসীলা বা মাধ্যম। উনারা ব্যতীত খলিব্ধ মালিক রব মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে হাছিল করার দ্বিতীয় কোনো উসীলা বা মাধ্যম নেই। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
نَحْنُ أَلُ بَيْتِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (نَحْنُ أَهْلُ بَيْتِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) وَنَحْنُ الْوَسِيْلَةُ إِلَى اللَّهِ وَلَا وَسِيْلَةَ إِلَى اللَّهِ إِلَّا عَنْ غَيْرِ طَرِيْقِنَا أَوْ مِنْ سِوَانًا.
আমরা সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাওয়ার একমাত্র উসীলা মুবারক। আমাদের পথ বা আমরা ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে পাওয়ার দ্বিতীয় কোনো উসীলা বা মাধ্যম নেই। সুবহানাল্লাহ! [শরহে আক্বাইদে ত্বহাবী]
মূলকথা হলো, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত না করা পর্যন্ত কেউ হাক্বীক্বী মু'মিন হতে পারবে না। উনাদের মুহাব্বতই ঈমান। উনাদের মুহাব্বত ব্যতীত ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। আর মুহাব্বত তখনই অন্তরে জাগ্রত হবে যখন সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহ উমরী বা জীবনী মুবারক সম্পর্কে জানা হবে, আলোচনা করা হবে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় উনাদের অসামান্য অবদান, অকল্পনীয় ত্যাগ তিতিক্ষার কথা স্মরণ হবে। ফিকির করলে দেখা যায়, কারো আলোচনা করতে করতে কিংবা শুনতে শুনতেও অন্তরে মুহাব্বত চলে আসে। আবার দেখা যায়, যে যাকে মুহাব্বত করে তার আলোচনাই সে বেশি করে। যত বেশি উনাদের আলোচনা করা হবে তত বেশি মুহাব্বত অন্তরে পয়দা হবে। তাই হাক্বীক্বী মু'মিন হতে হলে আমাদেরকে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জীবনী মুবারক সম্পর্কে বেশি বেশি আলোচনা করে, উনাদের সম্পর্কে জেনে সেই অনুযায়ী নিজেদের জীবনে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। উনাদের আদর্শ মুবারক নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে না পারলে কোনো কামিয়াবী থাকবে না। অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হলো, মুসলমানদের গাফিলতির কারণে, দ্বীন থেকে সরে যাওয়ার কারণে, দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহামূল্যবান ইতিহাস মুবারক গায়েব হয়ে গিয়েছে। কাফির মুশরিকরা হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জীবন ইতিহাস গায়েব করে ফেলেছে কারণ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও পবিত্র দ্বীন ইসলামের বিরোধীতা করা। কেননা মুসলমানগণ যদি উনাদের জীবন ইতিহাস জানে তাহলে উনাদের ঈমানী কুওওয়াত বৃদ্ধি পাবে। কোনোভাবেই যাতে মুসলমানদের ঈমানী কুওওয়াত বৃদ্ধি না পায় কাফির-মুশরিক, ইহুদীরা সুদূর অতীতকাল হতে সেই চেষ্টাই চালিয়ে এসেছে, এখনও তাদের এসব ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। তাদের ষড়যন্ত্র ও অনুসরণ থেকে মুসলিম উম্মাহকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই পবিত্র হাদীছ শরীফ-এর কথা অনুযায়ী চলতে হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَدِبُوا أَوْلَادَكُمْ عَلَى ثَلَاثِ خِصَالٍ حُبِّ نَبِيِّكُمْ وَحُبِّ أَهْلِ بَيْتِهِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنَ.
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে যথাযথ শিক্ষা প্রদান করো।
১. তোমাদের যিনি নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহাব্বত মুবারক,
২. উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহাব্বত মুবারক এবং
৩. পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত। সুবহানাল্লাহ!
[আল ফাতহুল কাবীর লিস সুয়ূত্বী ১/৫৭, জামিউল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২/৮৯, দায়লামী শরীফ ইত্যাদি]
এই পবিত্র হাদীছ শরীফে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রত্যেক পিতা-মাতার উপর স্বীয় সন্তানদেরকে তিনটি বিষয় শিক্ষা দেয়া ফরয করে দিয়েছেন। এখানে প্রথমেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুহাব্বত মুবারক শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তারপর উনার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মুহাব্বত মুবারক শিক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর সর্বশেষ বলা হয়েছে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শিক্ষা দেয়ার কথা। সুবহানাল্লাহ!
প্রথমোক্ত দুইটি বিষয় হচ্ছে সরাসরি সম্মানিত ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত। আর শেষোক্ত বিষয়টি আমলের সাথে সম্পৃক্ত। প্রথমোক্ত দুইটি বিষয় শিক্ষার মাধ্যমে ঈমান লাভ হবে। আর শেষোক্ত বিষয়টি শিক্ষার মাধ্যমে আমল সুন্দর হবে। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কারো ঈমান পরিশুদ্ধ না থাকলে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাতসহ সমস্ত আমলই বরবাদ হয়ে যাবে। আর ঈমান ঠিক থাকলে, আমলে কিছু ত্রুটি থাকলেও সে এক সময় নাজাত পাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর যেহেতু সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা ঈমানের মূল; তাই কারো অন্তরে যদি উনাদের মুহাব্বত মুবারক থাকে, নিঃসন্দেহে সে নাজাত পাবে। যদিও তার আমলে কিছু ত্রুটি থাকুক না কেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই উনাদের মুহাব্বত ও অনুসরণের জন্য উনাদের জীবনী মুবারক সম্পর্কে জানা জরুরী। অন্যথায় উনাদেরকে মুহাব্বত করা আদৌ সম্ভব নয়। সুতরাং প্রত্যেক পিতা-মাতার জন্য ফরয ওয়াজিব হচ্ছে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক এবং বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে নিজেরা শিক্ষা গ্রহণ করে স্বীয় সন্তানদেরকে শিক্ষা দেয়া এবং এর পাশাপাশি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দাবী জানানো।