দীর্ঘ সাধনার ফসল-পর্ব-৪৭
হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনার বয়স সম্পর্কে ইখতিলাফ ছিল। কেউ তিনশ, তিনশত পঞ্চাশ, আড়াইশ, দুইশ বছর পর্যন্ত বলেছেন। তিনি ছিলেন ইরানের এক মজুসীর সন্তান। কিন্তু তিনি সেই মজুসী ধর্ম ছেড়ে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। মুসেল, নসিবাইন ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে সফর করতে করতে, নানান পাদ্রীদের সাথে তিনি হক্ক তালাশে মশগুল ছিলেন। শেষ পাদ্রীর কাছে তিনি যখন ছিলেন, সেই পাদ্রী বললো, 'হে সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আপনি এখন আর হক্ক পাত্রী পাবেন না, আপনি অপেক্ষা করুন। আখিরী নবী হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসবেন; উনার জন্য আপনি অপেক্ষা করতে থাকুন।' তিনি কোথায় আসবেন? সেই পাদ্রী কতগুলো লক্ষণ বলে দিল যে, উনার জন্ম হবে মক্কা শরীফের ওয়াদিউল কুরায়। আর তিনি হিজরত করবেন মদীনা শরীফ নামক এক জায়গায়, যেটা কঙ্করময় এবং খেজুর গাছে পরিপূর্ণ হবে। উনার পিঠ মুবারকে মোহরে নুবুওওয়াত থাকবে। তিনি হাদিয়া গ্রহণ করবেন কিন্তু যাকাত, ছদকা, ফিতরা খাবেন না।
তারপর সেই পাদ্রী ইন্তেকাল করলো। হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে আসার জন্য এক আরবীয় কাফেলার সাথে রওনা হলেন। রাস্তায় তারা চক্রান্ত করে উনাকে গোলাম হিসেবে বিক্রি করে ফেললো। তিনি এক ইহুদীর গোলাম হয়ে মদীনা শরীফ পৌঁছলেন। উনার বয়স তখন অনেক; তবুও তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।
একদিন তিনি খেজুর গাছের উপরে ছিলেন। গাছ পরিষ্কার করছিলেন। আর উনার ইহুদী মনিব ছিল সেই গাছের গোড়ায়। এমন সময় এক লোক এসে সংবাদ দিল যে, যিনি আখিরী নবী তিনি মদীনা শরীফে এসেছেন, উনার সাথে সাক্ষাৎ করা দরকার ইত্যাদি। এটা শুনে হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খুব দ্রুত গাছের উপর থেকে নীচে নেমে আসলেন। উনার মনিবকে জিজ্ঞেস করলেন, 'লোকটা কি বললো?' মনিব উল্টো উনাকে আঘাত করলো এবং বললো, 'সেটা তোমার জানার বিষয় না। তুমি গোলাম, তুমি তোমার গোলামী করো।'
হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আর কিছু বললেন না। কিন্তু একদিন চুপি চুপি কিছু খেজুর নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফে হাযির হলেন। বললেন, 'ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটা আপনার জন্য নিয়ে এসেছি।' মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নেয়ার জন্য হাত মুবারক বাড়ালেন। তখন হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, 'হুযূর! এটা ছদক্কা।' এটা শুনে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
হাত মুবারক পিছিয়ে নিলেন। ছদক্কার হক্কদার ছাহাবী যাঁরা ছিলেন উনাদেরকে দিয়ে দিলেন এবং বললেন, 'আপনারা খেয়ে ফেলুন এটা আমার জন্য জায়েয নেই।'
হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আবার আরেকদিন কিছু খেজুর নিয়ে গেলেন। বললেন, 'হুযূর! এটা হাদিয়া। এটা আমার হালাল কামাই থেকে আপনার জন্য নিয়ে এসেছি।' মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই খেজুর খেলেন এবং সবাইকে খাওয়ালেন।
দু'টি লক্ষণ মিলানো হলো, বাকি রইলো শুধু মোহরে নুবুওওয়াত মুবারক দেখা। দেখার সুযোগ পাওয়ার জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে পিছনে হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হটিতে লাগলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকে ঐদিন একটি চাদর মুবারক ছিল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানতেন যে, হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মোহরে নুবুওওয়াত মুবারক দেখতে চান। তাই তিনি চাদর মুবারক সরিয়ে দিলেন। হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মোহরে নুবুওওয়াত মুবারক দেখলেন, চুম্বন করলেন। কোনো কোনো বর্ণনামতে আড়াইশ বছর অথবা তিনশ বছর, মতান্তরে পাঁচশো বছরের সাধনার পর, তিনি যে অবশেষে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেলেন, সেজন্য খুব কাঁদলেন। তারপরে বললেন, 'ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আজকে অনেকদিন হলো আমি আপনাকে পাওয়ার কোশেশ করছি। আমার সমস্ত আয়ু, ধন-সম্পদ, বাড়ী-ঘর, আত্মীয়-স্বজন সব আমি ত্যাগ করেছি, শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত হওয়ার জন্য, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়ার জন্য। আজকে আমি আপনাকে পেয়েছি। আপনি দয়া করে আমাকে এখনই দ্বীন ইসলামে দাখিল করে নিন।'
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে তওবা করালেন। তিনি মুসলমান হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
0 Comments:
Post a Comment