ওহুদের ময়দানে কে সেই বীর মুজাহিদা -পর্ব-৫৩
ওহুদের ময়দানে এক নারী পরাক্রমশালী বীর পুরুষের ন্যায় যুদ্ধ করেছিলেন। এই বীর মুজাহিদার নাম 'নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা'।
নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার স্বামী এবং পুত্রদ্বয় ওহুদের যুদ্ধে গমন করলে নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নিশ্চেষ্টভাবে ঘরে বসে থাকা অপেক্ষা যুদ্ধে যাওয়াই শ্রেয় বলে স্থির করলেন এবং আহত মুসলমান সৈনিকদেরকে পানি প্রদান করার দায়িত্বে নিয়োজিত হলেন। কিন্তু যখন দেখলেন মুসলমানদের করুণ অবস্থা, তখন নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আর স্থির থাকতে পারলেন না। এক আহত সৈনিকের হাত থেকে তরবারি গ্রহণ করে শত্রু সৈন্যকে আক্রমণ করতে প্রবৃত্ত হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং দূর হতে এই বীর নারীর শৌর্য্য বীর্য দর্শন করছিলেন। রণক্ষেত্রে নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার পুত্রদ্বয়কে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখেই যুদ্ধ করছিলেন। উনার হাতে ঢাল ছিল না। তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন সৈনিককে বললেন, "নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে একখানি ঢাল দিয়ে আসুন।” সৈনিক উনার আদেশ মুবারকে একখানি ঢাল নিয়ে নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার নিকটে নিক্ষেপ করলে নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা সেই ঢাল তুলে নিয়ে ক্রুদ্ধ সিংহীর ন্যায় সদর্পে পরিভ্রমণ করে কুরাইশদের অস্ত্রাঘাত করতে লাগলেন। সেই সময় একজন কুরাইশ অশ্বারোহী নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার উপরে তরবারির আঘাত করলো, কিন্তু নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা স্বীয় হস্তস্থিত ঢাল দিয়ে আঘাত ব্যর্থ করে দিলেন এবং তৎক্ষণাৎ শত্রুর অশ্বের উপর তরবারি দিয়ে আঘাত করলেন। এতে অশ্বটা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। কুরাইশ সৈন্য পতনোন্মুখ অশ্ব হতে লাফ দিয়ে ভূমিতে দণ্ডায়মান হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দূর থেকে এই ব্যাপারটা দেখে নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার পুত্র আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে মায়ের সাহায্যার্থে যেতে আদেশ মুবারক করলেন। হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দ্রুত পদে মায়ের নিকটে উপস্থিত হন। তখন নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পুত্রের সহায়তায় সেই কাফিরকে আক্রমণ করে তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেন। একজন কাফিরের অস্ত্রের আঘাতে হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অনেক রক্তপাত হওয়াতে তিনি দুর্বল হয়ে যমীনে পড়ে গেলেন। এ অবস্থা দেখে হযরত নাসিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পুত্রের নিকট গমন করে বললেন, 'বৎস! উঠো। শত্রুর সাথে যুদ্ধ করো। আমার গর্ভে জন্মগ্রহণ করে ধূলির শয্যায় শয়ন করা কখনও তোমার পক্ষে সমীচীন নয়।" কথা শুনে আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহা উৎসাহ সহকারে দণ্ডায়মান হয়ে শত্রু সংহারে প্রবৃত্ত হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিহাদের ময়দানে এই মহিলা ছাহাবীর নেক সাহস, পারদর্শীতা, তেজ আর বীরত্ব দেখে উনার জন্য প্রাণ উজাড় করে দোয়া করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
0 Comments:
Post a Comment